রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১ - ৭ আগস্ট ১৯৪১) ছিলেন একজন বাঙালি কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী এবং দার্শনিক। তিনি ভারতীয় সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। ঠাকুর পরিবারের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিবেশে জন্ম নেওয়া রবীন্দ্রনাথ শৈশব থেকেই কবিতা ও গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে এবং সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়। শৈশব ও শিক্ষা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা সারদাসুন্দরী দেবী। তিনি বাড়িতেই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। বাড়িতে সংস্কৃত, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় শিক্ষা লাভ করেন। পরে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়, কিন্তু সেখান থেকে পুরো শিক্ষা সম্পূর্ণ না করে দেশে ফিরে আসেন। সাহিত্যিক কর্ম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্মের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। তিনি ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস এবং ৯৫টি ছোটগল্প লিখেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে "গীতাঞ্জলি", "সোনার তরী", "চিত্রা", এবং "বলাকা"। "গীতাঞ্জলি" কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যা তাঁকে প্রথম অ-ইউরোপীয় হিসেবে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী করে তোলে। সংগীত ও নাটক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগীতকর্ম বাংলা সংস্কৃতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি প্রায় ২০০০ গান রচনা করেন, যা "রবীন্দ্রসঙ্গীত" নামে পরিচিত। এই গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল "আমার সোনার বাংলা", যা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। তাঁর নাটকগুলোও বাংলা থিয়েটার ও সাহিত্যে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তাঁর রচিত নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল "ডাকঘর", "রক্তকরবী", "মুক্তধারা", এবং "তাসের দেশ"। চিত্রশিল্প ও দর্শন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিত্রশিল্পেও অসামান্য অবদান রাখেন। তাঁর চিত্রকর্মগুলো আধুনিক শিল্পকলার দৃষ্টিকোণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিভিন্ন ধরণের এক্সপেরিমেন্টাল চিত্রকর্মের মাধ্যমে শিল্পকলার নতুন মাত্রা প্রকাশ করেন। তিনি নিজস্ব দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছেন, যা তাঁর রচনায় প্রতিফলিত হয়েছে। শিক্ষা ও সমাজসেবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষাক্ষেত্রেও অনন্য অবদান রাখেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে "বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়" প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় ভারতীয় এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়। ঠাকুর সমাজসেবা এবং সামাজিক সংস্কারেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মৃত্যু ও উত্তরাধিকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা ও বিশ্বসাহিত্য এক বিরাট শূন্যতা অনুভব করে। তিনি তাঁর সাহিত্যকর্ম, সংগীত, চিত্রশিল্প, এবং দার্শনিক চিন্তাধারার মাধ্যমে আজও আমাদের মাঝে জীবন্ত রয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী আমাদের জানান দেয়, তিনি শুধুমাত্র একজন সাহিত্যিক ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন সম্পূর্ণ মানুষ, যিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের মানুষকে আলোকিত করেছেন।