instruction
stringclasses 5
values | input
stringlengths 53
24.4k
| output
stringlengths 8
818
|
---|---|---|
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | যুক্তরাষ্ট্রে বেশি ভোট পেলেই যে একজন প্রার্থী সবসময় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন তা নয়। কলেজ শব্দটি বলতে একদল লোককে বোঝায় যারা নির্বাচকের ভূমিকা পালন করেন। তাদের সবার কাজ প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা। প্রত্যেক চার বছর অন্তর অন্তর, নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ পরে ইলেকটোরাল কলেজের নির্বাচকরা একত্রিত হন তাদের দায়িত্ব পালন করার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী এই পদ্ধতিতেই একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন যা কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের আইনের জটিল এক সমন্বয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। তাত্ত্বিকভাবে বলা যায়: প্রার্থীদের মধ্যে সারা দেশে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান ইলেকটোরাল কলেজ তাকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করে থাকে। কিন্তু সবসময় যে ঠিক এরকম হয় তা নয়। কীভাবে কাজ করে ইলকেটোরাল কলেজ? ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে প্রত্যেকটি রাজ্যের হাতে থাকে কিছু ভোট। কোন রাজ্যের কতোজন ইলেকটোর বা নির্বাচক থাকবেন সেটা নির্ভর করে ওই রাজ্যের জনসংখ্যার ওপর। সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে। ফলে এই রাজ্যে ইলেকটোরের সংখ্যা সর্বোচ্চ, ৫৫। ছোট ছোট কিছু রাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অফ কলাম্বিয়ার আছে তিনটি করে ভোট। আলাস্কা এবং নর্থ ড্যাকোটা রাজ্যের হাতেও তিনটি করে ভোট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন প্রার্থীরা সারা দেশে ভোটারদের কাছ থেকে যেসব ভোট পান সেগুলোকে বলা হয় পপুলার ভোট এবং ইলেকটোরাল কলেজের ভোটকে বলা হয় ইলেকটোরাল ভোট। কোনো একটি রাজ্যে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি পপুলার ভোট পাবেন তিনি ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে যাবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টেক্সাস রাজ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী যদি ৫০.১% ভোট পান, তাহলে ওই রাজ্যের ৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট তাদের পকেটেই যাবে। ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। মাইন ও নেব্রাসকা এই দুটো অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি সবগুলো রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ দিলে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। মোট ইলেকটোরাল ভোট ৫৩৮ এর অর্ধেক ২৬৯ এবং জয়ী হয়ে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার জন্যে আরো একটি ভোট এভাবেই ২৭০টি ভোট পেতে হবে একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে যেসব তথ্য জেনে রাখতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার চাবিকাঠি কোন রাজ্যগুলোতে যেভাবে ভারতের ধর্মীয় রাজনীতির ছায়া পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে পপুলার ভোট কম পেয়েও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জর্জ ডাব্লিউ বুশ। একেক রাজ্যের হাতে একেক সংখ্যক ভোট থাকার কারণে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণার ব্যাপারে এমনভাবে ছক তৈরি করেন যেখানে তারা বেশি ভোট আছে এমন রাজ্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। গত পাঁচটি নির্বাচনের মধ্যে দুটোতেই কম পপুলার ভোট পেয়েও ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জ বুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ কম পপুলার ভোট পেয়েও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। কেন এই পদ্ধতি বেছে নেওয়া হলো অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে যখন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়, তখন দেশটির বিশাল আকার ও বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে যোগাযোগ কঠিন হওয়ার কারণে জাতীয়ভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করা প্রায় অসম্ভব ছিলো। তখনও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয় ঠিক মতো গড়ে ওঠেনি, অঙ্গরাজ্যগুলোও তাদের নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে ছিলো অনেক বেশি সোচ্চার, রাজনৈতিক দলগুলোকে সন্দেহের চোখে দেখা হতো এবং পপুলার ভোটকে মানুষ ভয় পেতো। শিল্পীর চোখে ইলেকটোরাল কলেজে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটি দৃশ্য। সংবিধান প্রনেতারা ১৭৮৭ সালে সংবিধান রচনার সময় কংগ্রেস এবং জনগণের সরাসরি ভোটে (পপুলার ভোট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুটো ধারণাই বাতিল করে দেন। তাদের যুক্তি ছিল পপুলার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে লোকেরা তাদের স্থানীয় প্রার্থীকে ভোট দেবে এবং তার ফলে বড় রাজ্যগুলো আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে। ছোট ছোট রাজ্যগুলো এই ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিকে সমর্থন করে কারণ এর ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এই পদ্ধতির পক্ষ নেয় কারণ সেসময় এসব রাজ্যে দাসের সংখ্যা ছিলো অনেক। দাসদের ভোটাধিকার না থাকা সত্ত্বেও আদম শুমারিতে তাদের গণনা করা হতো। এছাড়াও সংবিধান রচয়িতারা চাননি যে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বসে শুধু আইন প্রণেতারা দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করুক। পপুলার ভোট বেশি পাওয়ার পরেও হোয়াইট হাউজে যেতে পারেন নি এন্ড্রু জ্যাকসন। নির্বাচনের ইতিহাস ২০১৬: রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, যদিও তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ ভোট কম পেয়েছিলেন। ২০০০: রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডাব্লিউ বুশ ২৭১টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, যদিও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যাল গোর পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিলেন। ১৮৮৮: রিপাবলিকান প্রার্থী বেঞ্জামিন হ্যারিসন ২৩৩টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, যদিও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড এক লাখ ৪৫৬ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। ১৮৭৬: রিপাবলিকান রাদারফোর্ড বি হেইজ ১৮৫টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, কিন্তু ডেমোক্র্যাট প্রার্থী স্যামুয়েল জে টিলডেন দুই লাখ ৬৪ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিলেন। ১৮২৪: ইলেকটোরাল কলেজ চারজন প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে হাউজ জন কুইন্সি অ্যাডামসকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে, যদিও এন্ড্রু জ্যাকসন তার চেয়েও বেশি পপুলার ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছিলেন। কম পপুলার ভোট পেয়েও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া কতোটা ন্যায়সঙ্গত? এটা এই পদ্ধতির সবচেয়ে নেতিবাচক দিক। ইতিহাসে দেখা যাচ্ছে ১৮০৪ সালের পর পাঁচজন প্রেসিডেন্ট পপুলার ভোট বেশি না পেয়েও নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২০০০ সালের নির্বাচনে অ্যাল গোর সারা দেশের মোট ভোটের ৪৮.৩৮% অর্জন করেন। জর্জু বুশ পান ৪৭.৮৭%। তার পরেও জর্জ বুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কারণ তিনি ২৭১টি ইলেকটোরাল ভোট পান যেখানে মি. গোর পান ২৬৬টি। জয় নির্ধারণী ইলেকটোরাল ভোটগুলো এসেছিল ফ্লোরিডা থেকে। সেখানকার ২৫টি ইলেকটোরাল ভোটই গেছে জর্জ বুশের দিকে, যদিও তিনি ওই রাজ্যে মাত্র ৫৩৭টি পপুলার ভোট বেশি পেয়েছিলেন। আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো অনেক রাজ্যেই ফলাফল কী হবে সেটা আগে থেকে নিশ্চিত করে বোঝা যায়। ফলে অনেকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে তাদের উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। প্রার্থীরাও সেসব রাজ্যে প্রচারণা চালিয়ে তাদের সময় নষ্ট করতে চান না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয় এবং নিউ ইয়র্ক ডেমোক্র্যাটের এবং টেক্সাস রাজ্যটি রিপাবলিকানের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তাহলে এর সুবিধা কী? ঐতিহাসিক কারণে এই ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিকে এতোটা গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়াও বেশিরভাগ নির্বাচনে পপুলার ভোটেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ১৮০৪ সালের পর ৫৩টি নির্বাচনে ৪৮ জনই নির্বাচিত হয়েছেন পপুলার ভোটে। এছাড়াও এই পদ্ধতিতে ছোট রাজ্যগুলো গুরুত্ব পায়। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের একটি মৌলিক নীতি- চেকস এন্ড ব্যালেন্সও রক্ষিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বৃহত্তম রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ১২.০৩%। কিন্তু এই রাজ্যের হাতে আছে ৫৫টি ইলেকটোরাল ভোট যা ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের ১০.২২%। অন্যদিকে ওয়াওমিং রাজ্যের লোকসংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ০.১৮%। কিন্তু তাদের হাতে আছে তিনটি ইলেকটোরাল ভোট যা ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের ০.৫৬%। এই কলেজ সিস্টেমের আরো একটি দিক হচ্ছে একজন প্রার্থীকে সারা দেশে ভোট পেতে হবে। কোনো প্রার্থী ইলেকটোরাল কলেজের ২৭০টি ভোট না পেলে কী হবে? সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী অনুসারে হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে থাকে। প্রত্যেকটি রাজ্যের প্রতিনিধির হাতে থাকে একটি করে ভোট। তার মানে প্রত্যেক রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এই ভোট নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে জিততে হবে। সেনেট বাছাই করে ভাইস প্রেসিডেন্ট। সেজন্য সেনেটরদের হাতে থাকে একটি করে ভোট। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ১৮০৪ সালের পর এরকম ঘটনা একবারই ঘটেছে। ১৮২৪ সালে ইলেকটোরাল ভোটগুলো চারজন প্রার্থীর মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। তাদের সবাই সংখ্যগারিষ্ঠ ভোট পেতে ব্যর্থ হন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী এন্ড্রু জ্যাকসনের পক্ষে ছিল সবচেয়ে বেশি ইলেকটোরাল ভোট, পপুলার ভোটও তিনি বেশি পেয়েছিলেন। ফলে ধারণা করা হয়েছিল যে তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। কিন্তু চতুর্থ স্থানে যিনি ছিলেন সেই স্পিকার হেনরি ক্লে দ্বিতীয় স্থানে থাকা জন কুইন্সি অ্যাডামসকে নির্বাচিত করার ব্যাপারে হাউজকে প্রভাবিত করেন। অবশেষে মি. অ্যাডামসই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। | জনগণের সরাসরি বা প্রত্যক্ষ ভোটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। ইলেকটোরাল কলেজ নামে পরিচিত এক দল কর্মকর্তার পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | রজার এলিসের (ডানে) সঙ্গে ছেলে স্টিভ এলিস। রজার এলিসের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয় ২০১৯ সালে। প্রায় দু'বছর আগে রজার এলিস তার ৪০তম বিয়েবার্ষিকীতে বাড়িতে হঠাৎ খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। মি. এলিসের জন্ম নিউ ব্রান্সউইকের গ্রামীন সৌন্দর্য্যমন্ডিত আকাডিয়ান উপদ্বীপ এলাকায়। বেড়ে উঠেছেন সেখানেই। তাঁর বয়স মাত্র ষাট পেরিয়েছে তখন, সেবছরের জুন মাসেও তিনি বেশ সুস্থ-সবল একজন মানুষ। কয়েক দশক ধরে তিনি কাজ করেছেন শিল্প-কারখানার মেকানিক হিসেবে। তারপর কাজ থেকে অবসর নিয়ে তার সময়টা ভালোই কাটছিল। রজার এলিসের ছেলে স্টিভ এলিস জানান, যেদিন তার বাবা এভাবে খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে গেলেন, সেদিন থেকে দ্রুত তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে লাগলো। "তিনি দৃষ্টিবিভ্রম এবং অলীক কল্পনায় ভুগতে লাগলেন, তার ওজন কমে যেতে শুরু করলো। মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেল। একই কথা বার বার বলতে শুরু করলেন," বলছিলেন তিনি। "এক পর্যায়ে তিনি তো হাঁটতেই পারছিলেন না। মাত্র তিন মাসের মধ্যে তার অবস্থার এতটাই অবনতি ঘটলো যে আমাদের হাসপাতালে ডেকে নিয়ে ওরা বললো, তাদের বিশ্বাস আমার বাবা মারা যাচ্ছেন - কিন্তু তারা বুঝতে পারছেন না, কি রোগে।" রজার এলিসের ডাক্তাররা প্রথমে সন্দেহ করেছিলেন তিনি হয়তো 'ক্রয়েটসফেল্ট ইয়াকপ' বা সিজেডি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এটি একধরণের হিউম্যান প্রিয়ন রোগ। প্রিয়ন হচ্ছে এক ধরণের প্রোটিন, যা মস্তিস্কের স্বাভাবিক প্রোটিনকে আক্রমণ করে। সিজেডি খুবই বিরল এবং মারাত্মক এক রোগ। এটি মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস করতে থাকে। আক্রান্ত লোকের স্মৃতি লোপ পেতে থাকে, ব্যবহার বদলে যায় এবং তারা চলা-ফেরা, কাজে-কর্মে আর কোন ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না। সিজেডির অনেক ধরণের মধ্যে একটির সম্পর্ক আছে ম্যাড কাউ ডিজিজের সঙ্গে। ম্যাড কাউ ডিজিজে আক্রান্ত পশুর মাংস কেউ খেলে, এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। রোগ হিসেবে সিজেডি-কে সেই শ্রেনীভুক্ত করা হয়, যার মধ্যে আরও আছে আলঝাইমার বা পারকিনসন্সের মতো রোগ। এরকম রোগে যখন কেউ আক্রান্ত হয়, তাদের স্নায়ুতন্ত্রের প্রোটিনগুলো বিকৃতভাবে ভাঁজ হতে থাকে। কিন্তু ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখলেন রজার এলিসের আসলে সিজেডি হয় নি। তার পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসলো। ডাক্তাররা আরও নানা রকম পরীক্ষা চালালেন। সেগুলোতেও তাদের সন্দেহ অমূলক বলে প্রমানিত হলো। কোনভাবেই তারা নিশ্চিত হতে পারলেন না, মিস্টার এলিসের অসুস্থতার কারণ আসলে কী। তাঁর ছেলে জানান, ডাক্তাররা সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন তার বাবার নানা রকমের উপসর্গ উপশমের জন্য। কিন্তু একটা রহস্য থেকেই গেল- কেন মি. এলিসের স্বাস্থ্য এত দ্রুত পড়ে গেল? মংকটন শহরে কিছু লোকের মধ্যে এই রোগ দেখা দিয়েছে এ বছরের মার্চ মাসে স্টিভ এলিস এই রহস্যের একটা সম্ভাব্য বা আংশিক জবাব পেলেন। কানাডার সরকারি মালিকানাধীন রেডিও কানাডা জানালো, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক এমন একটি নির্দেশ তাদের হাতে এসেছে, যেটি প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এতে সবাইকে এই বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল যে, একটি এলাকায় এমন কিছু রোগী পাওয়া যাচ্ছে, যারা মস্তিস্কের এক অজানা রোগে আক্রান্ত, যেটি মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা ধ্বংস করে। স্টিভ এলিস বলেন, "এটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হলো, আমার বাবার তো এটাই হয়েছে।" ধারণা করা হচ্ছে রজার এলিস এই অজানা রোগে আক্রান্তদের একজন। তিনি ডাঃ এলিয়ের মারেরোর অধীনে চিকিৎসাধীন। ডাঃ মারেরো একজন নিউরোলজিস্ট। কাজ করেন মংকটন শহরের জর্জেস এল-ডুমন্ট ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল সেন্টারে। তিনি জানান, ডাক্তাররা প্রথম এই রহস্যজনক রোগের সন্ধান পান ২০১৫ সালে। তখন মাত্র একজন রোগীর মধ্যে তারা এটি দেখেছিলেন, কাজেই এটা একেবারেই বিচ্ছিন্ন এবং অস্বাভাবিক একটি কেস হিসেবে ধরা হয়েছিল। কিন্তু তারপর এরকম আরও অনেক কেস দেখা যেতে লাগলো। এখন এত বেশি মানুষের মধ্যে এই নতুন রোগ দেখা গেছে যে ডাক্তাররা এখন এটিকে একটি স্বতন্ত্র ধরণের রোগ বলে ধরে নিয়েছেন। তবে তারা এটিকে চিহ্ণিত করছেন "আগে দেখা যায়নি" এমন ধরণের এক রোগ হিসেবে। প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বতর্মানে ৪৮ টি কেসের ওপর নজর রাখছেন, এর মধ্যে ২৪ জন পুরুষ, ২৪ জন নারী। তাদের বয়স ১৮ হতে ৮৫ বছরের মধ্যে। এদের সবাই নিউ ব্রান্সউইকের আকাডিয়ান উপদ্বীপ বা মংকটন এলাকার বাসিন্দা। এই ৪৮ জনের মধ্যে ৬ জন মারা গেছেন। বেশিরভাগ রোগীর উপসর্গ দেখা দিয়েছে সম্প্রতি, ২০১৮ সাল হতে। তবে এদের একজনের মধ্যে এটির লক্ষণ দেখা দেয় ২০১৩ সালে। ডাঃ মারোরো জানান, এই রোগের লক্ষণ অনেক রকমের এবং রোগীভেদে লক্ষণ নানা রকম হতে পারে। প্রথম দিকে রোগীদের মধ্যে কিছু আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, বিষন্নতা এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া। এরপর শরীরে এমন ধরণের ব্যাথা-বেদনা শুরু হয়, যার কোন ব্যাখ্যা নেই। একেবারে পুরোপুরি সুস্থ-সবল ছিলেন এমন মানুষদেরও তখন মাংসপেশির ব্যাথা এবং খিঁচুনি শুরু হয়। রোগীদের মধ্যে ঘুম নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়- অনিদ্রা বা মারাত্মক অনিদ্রায় ভুগতে শুরু করেন তারা। এরপর শুরু হয় স্মৃতি লোপ পাওয়ার সমস্যা। এরপর খুব দ্রুতই দেখা দেয় কথা বলার সমস্যা। তারা নিজেদের মনের ভাব প্রকাশে সমস্যায় পড়েন। স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারেন না। তাদের মধ্যে তোতলানোর সমস্যা দেখা দেয়, কিংবা একই শব্দ তারা বারে বারে বলতে থাকেন। আরেকটা লক্ষণ হচ্ছে দ্রুত ওজন কমে যাওয়া। পেশি দুর্বল হতে শুরু করে, এর সঙ্গে দেখা দেয় দৃষ্টিশক্তির সমস্যা। চলাফেরায় সমস্যা তৈরি হয়। মাংসপেশিতে কোন কারণ ছাড়াই টান পড়তে থাকে। এরপর অনেক রোগীকেই হয় হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে হয়, নয়তো চলাফেরার জন্য অন্য কারও সাহায্যের দরকার হয়। অনেকে হ্যালুসিনেশনে ভুগতে থাকেন। বা এমন ধরণের স্বপ্ন থেকে জেগে উঠেন, যেটাকে তারা সত্য বলে ধরে নেন। আরও পড়ুন: অনেকের মধ্যে এরপর 'ক্যাপগ্রাস ডিলিউশন' তৈরি হয়। এটি এমন ধরণের মানসিক সমস্যা, যখন কেউ বিশ্বাস করেন যে তার ঘনিষ্ঠ কোন ব্যক্তিকে সরিয়ে দিয়ে তার জায়গায় ছদ্মবেশি কাউকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। ডাঃ মারেরো বলেন, "এটা খুবই গুরুতর এক সমস্যা। যেমন ধরুণ একজন রোগী তার স্ত্রীকে বললেন, "আমি দুঃখিত, আপনি আমার সঙ্গে একই বিছানায় শুতে পারেন না, কারণ আমি বিবাহিত। স্ত্রী যদি তখন তার নাম-পরিচয় দেন, তখনো রোগী বলতে থাকে, আপনি আসল লোক নন, নকল।" এই রোগটির ব্যাপারে গবেষণায় এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডাঃ মারেরো। তাকে সাহায্য করছেন একদল গবেষক এবং ফেডারেল সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। যাদের এই রোগ হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়, তাদের ওপর প্রিয়ন রোগের পরীক্ষা চালানো হয় তাদের জেনেটিক অবস্থা জানার জন্য। তাদের দেহের স্বয়ংক্রিয়-রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কোন সমস্যা আছে কিনা বা কোন ক্যান্সার আছে কিনা, সেটা দেখা হয়। এছাড়া নানা রকম ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, হেভি মেটাল বা কোন ধরণের অস্বাভাবিক এন্টিবডি আছে কীনা, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। রোগীরা কোন ধরণের পরিবেশে বসবাস করেছেন, কী ধরণের জীবনযাপন করেছেন, কোথায় কোথায় ভ্রমণ করেছেন, তাদের মেডিক্যাল হিস্ট্রি, পানির উৎস- সবকিছু সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এখনো পর্যন্ত এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই। যেসব লক্ষণের কারণে রোগীদের যন্ত্রণা হয়, কেবল সেটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। এখনো পর্যন্ত এই রোগটি জেনেটিক নয় বলেই ধরা হচ্ছে। চিকিৎসকরা ধরে নিচ্ছেন, এটি রোগীরা কোন না কোনভাবে পেয়েছেন। ডাঃ মারেরো বলেন, "এখনো পর্যন্ত আমরা ধরে নিচ্ছি রোগীর শরীররে এমন বিষাক্ত কিছু ঢুকেছে, যা হয়তো মস্তিকে এই বিনাশী পরিবর্তনের সূচনা করছে।" রজার এলিস থাকতেন বাথহার্স্ট শহরে এই রোগটির রহস্য উদঘাটনে আরও যারা গবেষণা চালাচ্ছেন তাদের একজন হচ্ছেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার নিউরোলজিস্ট ডঃ নীল ক্যাশম্যান। তিনি বলছেন, রোগীদের মধ্যে যদিও প্রিয়ন রোগের কোন প্রমান পাওয়া যাচ্ছে না, তারপরও এটিকে এখনো তারা একটি কারণ হিসেবে একেবারে বাদ দিচ্ছেন না। এই রোগ সম্পর্কে আরেকটি তত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভাবছেন। 'ডোমোইক এসিডের' মতো কোন 'এক্সাইটোটক্সিকের' সংস্পর্শে আসার কারণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কীনা, সেটা দেখা হচ্ছে। ১৯৮৭ সালে নিকটবর্তী প্রদেশ, প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপে ঝিনুক খেয়ে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল অনেক মানুষ। এসব ঝিনুকে এই টক্সিন ছিল। পেটের পীড়ার পাশাপাশি আক্রান্তদের এক তৃতীয়াংশের মধ্যে তখন স্মৃতি লোপ পাওয়া, মাথা ঘোরা এবং বিভ্রান্তিতে ভোগার মত লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। কোন কোন রোগী কোমায় চলে গিয়েছিল। চার জন মারা গিয়েছিল। ডাঃ ক্যাশম্যান বলেন, তারা আরেকটি টক্সিনের ব্যাপারেও দেখছেন। এটির নাম বেটা-মিথাইলামিনো-এল-আলানাাইন (বিএমএএ)। এটি থেকে আলঝেইমার বা পার্কিনসন্স রোগ হওয়ার ঝুঁকি আছে বলে মনে করা হয়। এই বিএমএএ তৈরি হয় সাইনোব্যাকটেরিয়া থেকে, এটি সাধারণত ব্লু-গ্রীন অ্যালগি, অর্থাৎ নীল-সবুজ শেওলা নামে পরিচিত। কিছু গবেষকের ধারণা, স্নায়ুবৈকল্য তৈরি করে এরকম রোগের সঙ্গে বিএমএএ'র সম্পর্ক আছে। তারা এক্ষেত্রে প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ভুখণ্ড গুয়াম দ্বীপের আদিবাসীদের মধ্যে হওয়া একটি রোগের কথা উল্লেখ করছেন। গত শতকের মাঝামাঝি এটি ছড়িয়ে পড়েছিল, এবং এর জন্য দায়ী করা হয়েছিল এই আদিবাসীরা খায় এমন এক বীজকে। সেই বীজে বিএমএএ ছিল। ডাঃ ক্যাশম্যান অবশ্য বলছেন, রহস্যময় রোগটি সম্পর্কে তালিকায় যত তত্ত্ব এখনো পর্যন্ত যোগ করা হয়েছে, সেটাই পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়। "আমাদের একেবারে গোড়া থেকে শুরু করতে হবে, কোন সম্ভাবনাই আমরা বাদ দিতে চাই না।" এই রোগে তাহলে আরও কত লোক আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে? রজার এলিসের অবস্থা এখন আগের চেয়ে স্থিতিশীল ডাঃ মারেরো বলেন, এরকম সম্ভাবনা আছে যে এই রোগ হয়তো যে দুটি অঞ্চলে এখনো পর্যন্ত দেখা গেছে, তার বাইরে অন্যান্য জায়গাতেও হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত কেবল আকাডিয়ান উপদ্বীপে, যেখানে একটি মৎস্যজীবী সম্প্রদায় আছে, সেখানে, এবং মংকটন শহরে এই রহস্যময় রোগে আক্রান্তদের দেখা গেছে। তিনি বলেন, "আমরা কি কেবল বড় কোন সমস্যার একটা সামান্য অংশ দেখছি? হতে পারে। আমরা আশা করছি দ্র্রুত আমরা এর কারণ জানতে পারবো এবং এই রোগ ঠেকাতে পারবো।" যেখানে এই রোগ দেখা যাচ্ছে, সেই অঞ্চলের মানুষ যদিও উদ্বিগ্ন, ডাঃ মারেরো তাদের উদ্বিগ্ন না হয়ে বরং আশাবাদী থেকে কাজ চালিয়ে যেতে বলছেন। তিনি বলেন, "ভয় করলে সেটা আমাদের অসাড় করে দেবে।" রজার এলিসের অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক স্থিতিশীল, জানিয়েছেন তার ছেলে। তাকে একটি বিশেষ ধরণের সেবা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। প্রতিদিনের জীবন চালিয়ে যাওয়ার জন্য তার সাহায্যের দরকার হয়। তিনি এখনো কথা বলতে গিয়ে সমস্যায় ভোগেন। অনিদ্রার সমস্যাও আছে। স্টিভ এলিস এখন এই সমস্যায় আক্রান্তদের পরিবারের জন্য একটি ফেসবুক পেজ চালান। তিনি চান, এই রোগটির ব্যাপারে সরকারী কর্মকর্তারা যেন স্বচ্ছতা বজায় রাখে। তবে সবার আগে তিনি চান, কেন তার বাবা অসুস্থ হলেন, সেটা জানতে। "আমি জানি যে তারা এটা নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু কিভাবে এটা ঘটলো", প্রশ্ন করছেন তিনি। "তিনি যে এই রোগে মারা যেতে পারেন আমরা সেটা ভালো করেই জানি। কিন্তু আমরা আশা করছি আমাদের প্রশ্নের উত্তর যেন আমরা পাই, সেটা তার মৃত্যুর আগে হোক, বা পরে হোক। তার সঙ্গে আমরা চাই জবাবদিহিতা। এটি কি এমন কিছু, যা আসলে প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল?" বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর: | কানাডার ডাক্তাররা গত কিছুদিন ধরে এমন কিছু রোগী পাচ্ছিলেন যাদের লক্ষণ মিলে যাচ্ছে মস্তিস্কের এক বিরল রোগের সঙ্গে, যেটি 'ক্রয়েটসফেল্ট ইয়াকপ রোগ' (সিজেডি) নামে পরিচিত। কিন্তু তারা আরও ভালোভাবে এসব রোগীকে পরীক্ষা করে যা দেখলেন, তাতে হতবাক হয়ে গেলেন। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে জায়গা সংকুলান হয়না অনেক রোগীর করোনা চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনায় কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেলেও যথাযথ উপকরণের অভাব, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ, হাসপাতালে সেবার অভাব, জরুরি সেবা নিশ্চিতে ব্যাপক দুর্বলতার পাশাপাশি একের পর এক দুর্নীতির খবরও গত এক বছরে মূলত সরকারি স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশাকেই তুলে ধরেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ মুশতাক হোসেন বলছেন, এই এক বছরে কোভিড-১৯ সেবা বাড়লেও সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কাঠামোগত উন্নয়ন খুব একটা হয়নি। "এটা ঠিক যে এখন ২০ হাজারের ওপর টেস্ট হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখন রোগীর সংখ্যাও কম কিন্তু এটি যদি কোন কারণে বেড়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয় তাহলে তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ বলছেন করোনা ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মীদের অভিজ্ঞতা বেড়েছে কিন্তু করোনাকে শিক্ষা হিসেবে নিয়ে সার্বিক স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন আসেনি। "এমনকি করোনার ক্ষেত্রেও জেলা উপজেলায় বরাদ্দ, স্বেচ্ছাসেবীদের অর্থ দেয়াসহ নানা কিছুতে সংকট তীব্রতর হয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যেও হতাশাজনক ক্লান্তি দেখা যাচ্ছে। আর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদারের ক্ষেত্রে অবস্থার বরং অবনতি হয়েছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ ও ব্যয়ের সংকট কী কাটবে? বিশ্ব মহামারি শেষ হতে কতদিন লাগবে? টাকা-পয়সা কি ভাইরাস ছড়ানোর মাধ্যম? করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসক, সেবিকা, টেকনিশিয়ানের সংকট রয়েছে বাংলাদেশে প্রথম করেনা সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছিলো গত বছরের ৮ই মার্চ আর প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিলো এর ১০ দিন পর, ১৮ই মার্চ। এর আগে ২০১৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য প্রকাশ করা হয় এবং ২০২০ সালের ৪ঠা জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের কথা ঘোষণা করে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৪ঠা জানুয়ারি থেকেই দেশের বিমানবন্দরসহ সব স্থল ও নৌবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করে। পহেলা মার্চ সব সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যার আনুপাতিক হারে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশ দেয়া হয় এবং ৪ঠা মার্চ সমন্বিত করোনা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়। এর সাতদিন পর ৮ই মার্চ দেশের প্রথম করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের পর তা দ্রুত নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুরের শিবচর ও ঢাকার মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দেশের নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্রটি বেরিয়ে আসে শুরুর দিকের স্বাস্থ্য অবকাঠামো স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী শুরুতে আইইডিসিআর ছাড়া দেশে করোনা পরীক্ষার জন্য আর কোথাও আরটি পিসিআর ল্যাবরেটরি ছিলো না। তা দিয়ে গত বছর ১৮ই মার্চ মাত্র দশটি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিলো আর তাতে পজিটিভ হয়েছিলেন ৪ জন। পরদিন ১৯শে মার্চ স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়মিত ব্রিফিং-এ প্রথম কোন ব্যক্তির মৃত্যুর কথা জানায় অর্থাৎ করোনায় সংক্রমিত হয়ে ১৮ই মার্চ ওই ব্যক্তি মারা গিয়েছিলেন। সেদিনই জানানো হয়েছিলো যে নতুন করে ১৬টি আরটি পিসিআর মেশিন ক্রয় করার প্রক্রিয়া চলছে যার মধ্যে সাতটি দ্রুত পাওয়া যাবে। এছাড়া চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য ৬ হাজার সেট পিপিই মজুত আছে এবং এর আগে আরও প্রায় সাত হাজার পিপিই হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছিলো বলে জানানো হয়েছিলো। ওদিকে গত বছর মার্চে সরকারি হাসপাতালে ৫০৮টি আইসিইউ শয্যা ও বেসরকারি হাসপাতালে ৭৩৭টি আইসিইউ শয্যা ছিলো এবং ভেন্টিলেটর ছিলো ১৬৪টি। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই সময় দেশে সরকারি হাসপাতালে ৬৫৪টি এবং এসব হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ছিলো ৫১,৩১৬টি। আর বেসরকারি হাসপাতাল ছিলো ৫,০৫৫টি, যেখানে মোট শয্যার সংখ্যা ছিলো ৯০ হাজার ৫৮৭টি। তখন ঢাকায় আইসোলেশন শয্যা ছিলো ১ হাজার ৫০টি । আর ঢাকা মহানগরীর বাইরে ঢাকার অন্যান্য জেলায় আইসোলেশন বিছানার সংখ্যা ২২৭, চট্টগ্রামে ৪৪১, রাজশাহীতে ৫৫৮, বরিশালে ৪২৯, রংপুরে ৫২৫, সিলেটে ৬৬৪, ময়মনসিংহ ৯০, খুলনায় ৫৩১। গত বছর ১৮ই মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগ তখন সরকারি স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত মোট চিকিৎসকের সংখ্যা ছিলো ২৫ হাজার ৬১৫ জন। আর চিকিৎসক, সেবিকা ও নানা পর্যায়ের হাসপাতাল কর্মী মিলে মোট জনবল কর্মরত রয়েছেন ৭৮ হাজার ৩০০ জন। মূলত এরপর থেকে ক্রমাগত নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা বাড়ানোর চেষ্টা চালাতে থাকে স্বাস্থ্য বিভাগ। পহেলা এপ্রিল ব্রিফিং এ জানানো হয়েছিলো যে ছয়টি প্রতিষ্ঠানে কোভিড পরীক্ষায় মোট ১৫৭ জনের কোভিড-১৯ পরীক্ষা হয়েছে। ওই দিন পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪৫০টি পিপিই এবং ২১০০০ পিসিআর কিটস বিতরণের তথ্য দেয়া হয়। একই সঙ্গে করোনা চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ওই দিন ২০ হাজার ২৪৭ চিকিৎসক নিবন্ধিত হয়েছিলো । পহেলা এপ্রিল ছয়টি প্রতিষ্ঠানে পিসিআর পরীক্ষা হয়েছে আর পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত ছিলো আরও ছয়টি প্রতিষ্ঠান। আর প্রথম মৃত্যুর দু'মাস পর ১৮ই মে স্বাস্থ্য বিভাগ ৪২টি প্রতিষ্ঠানে ৯৭৮৮টি নমুনা পরীক্ষার খবর দেয়। ওই দিন জানানো হয় যে প্রায় বিশ লাখ পিপিই বিতরণ করা হয়েছে এবং মজুদ আছে আরও প্রায় চার লাখ। এর দু'মাস পর ১৮ই জুলাই মোট ৮০টি পরীক্ষাগারে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় মোট ১০ হাজার ৯২৩টি নমুনা পরীক্ষার কথা জানিয়েছিলো স্বাস্থ্য বিভাগ। পিপিই সহ করোনা সংক্রান্ত উপকরণ সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে স্বাস্থ্য অবকাঠামো: এখন যে অবস্থা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে এখন ১৬৩টি কেন্দ্রে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা হচ্ছে যার মধ্যে আরটি পিসিআর ল্যাবরেটরি আছে ১১৮টি। তবে এর মধ্যে সরকারি ল্যাব আছে মাত্র ৫১টি। সব মিলিয়ে এ মূহুর্তে সারাদেশে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট ১০ হাজার ৩০৫টি সাধারণ শয্যা ও ৫৫৮টি আইসিইউ শয্যা আছে। পাশাপাশি এখন দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ১২ হাজার ৭৭৩টি। আর হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে ৭১৫টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে ৬৬০টি। তবে কোভিড ও নন-কোভিড মিলিয়ে এ মূহুর্তে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ২৪ হাজার ৭১১টি, আইসিইউ ৬৮৮ এবং ভেন্টিলেটর আছে ৬২০টি। আর ১১৮টি প্রতিষ্ঠানে আরটি পিসিআর টেস্ট করার তথ্য দেয়া হয়েছে ১৭ই মার্চ পর্যন্ত যাতে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৪ হাজার ২৭৫টি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এ সময়ের মধ্যে নতুন করে ২ হাজার চিকিৎসক ও ৪ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এছাড়া সারা দেশে ৫ হাজার ১০০ ডাক্তার ও ১ হাজার ৭০০ নার্সকে করোনা ভাইরাস ব্যবস্থাপনা ও ইনফেকশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ১৭ই মার্চ পর্যন্ত দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৮৫৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ১০ লাখ ২৩ হাজার ৪১২টি। বাংলাদেশে আবার বাড়ছে করোনা সংক্রমণ প্রত্যাশিত অগ্রগতি কতটা হয়েছে? করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে এ রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেলে পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই। আবার করোনার বাইরে দেশে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ নানা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে যেতে হয়। এসব হাসপাতালে জরুরি সেবা থেকে শুরু করে সার্বিক অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে নতুন কোন পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। মুশতাক হোসেন বলছেন করোনা চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতা বেড়েছে আবার উপকরণও সহজলভ্য হয়েছে। কিন্তু এই এক বছরে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কাঠামোগত কোন পরিবর্তন হয়নি। "এমনকি করোনাও যদিও ২/৩ গুণ বেড়ে যায় তাহলে সামাল দেয়া কঠিন হবে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও চিকিৎসা সুবিধা আরও অনেক বাড়াতে হবে। কোভিড-উত্তর চিকিৎসা বা পুনর্বাসনকেও প্রাতিষ্ঠানিক করা যায়নি। হাসপাতালগুলো এমনকি পরিচ্ছন্নতা শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি। এটি না করে পিপিই দিলে লাভ নেই," বলছিলেন তিনি। তিনি বলেন স্বাস্থ্য খাতের পাঁচটি বিভাগে - প্রতিরোধমূলক, অবকাঠামো উন্নয়নমূলক, চিকিৎসা, পুনর্বাসন, উপশমমূলক — এর সবগুলোতেই উন্নতির দরকার। কিন্তু এখানে রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। "দেশের সব হাসপাতালে আইসোলেশন বা যথাযথ জরুরি সেবা সুবিধাই নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি এখনো।" আর বেনজির আহমেদ বলেন অবকাঠামোগত সুবিধার আদৌ কোন উন্নতি হয়নি। "করোনা আসার পর স্বাস্থ্য খাতের যে দুর্বল ও ভঙ্গুর চিত্র প্রকাশিত হয়েছে সেটিকে বিবেচনায় নিয়ে এতে পরিবর্তন এনে সক্ষমতা বাড়াতে কোন কাজই হয়নি," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্যে সক্ষমতা বাড়েনি বরং স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতিশ্রুত অর্থ না দেয়া, মাঠ পর্যায়ে অর্থ বরাদ্দের সংকটে স্বাস্থ্য বিভাগেই ক্লান্তিকর হতাশা তৈরি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। যদিও গত ৭ই জানুয়ারি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন স্বাস্থ্য খাতে দেশে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। | বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর এক বছর হলো আজ ১৮ই মার্চ এবং এক বছর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে নাজুক চিত্র বেরিয়ে এসেছিলো তার কতটা পরিবর্তন হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | **সতর্কতা: এই প্রতিবেদনের কিছু অংশ আপনার কাছে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। শনিবার যশোরের সরকারি আড়াইশো শয্যা হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটানোর পর সোমবার ওই আয়াকে অব্যহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে একটি বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। প্রসূতি নারীর গর্ভ থেকে মৃতদেহের খণ্ডিত অংশ অবশ্য রবিবার বের করে এনেছেন চিকিৎসকেরা। তিনি এখন সুস্থ আছেন বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ বলছে, এক পর্যায়ে প্রসূতির জরায়ু থেকে মৃত সন্তানটির পা বেরিয়ে এসেছিল এবং ওই আয়া সেই পা ধরে টানাটানি করতে গিয়েই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের আয়া কেন একজন রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়েছিলেন? হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বলছেন, তারাও একই প্রশ্ন করেছিলেন ওই আয়াকে। জবাবে আয়া তাদেরকে বলেছেন, "আমি দেখার চেষ্টা করছিলাম যে কি অবস্থা। তখন দেহটি পচা থাকার কারণে ছুটে পড়ে যায়।" "যারা ক্রাইম করে বা কোন অঘটন ঘটায় তারা তো তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনে নানা কথা বলবেই। সে তোর আর বলবে না যে আমি টানাটানি করছিলাম।" বক্তব্য জানার জন্য অভিযুক্ত আয়ার সাথে অবশ্য যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। জানা যাচ্ছে, অভিযুক্ত আয়া মূলত একজন স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন, সরকারি নথিভূক্ত কোন আয়া ছিলেন না। পৌরসভাসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে এই স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা হাসপাতালে এসে বিনামূল্যে সেবা দিয়ে থাকেন বলে জানান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মি. রায়। এই ঘটনা ঘটার পর হাসপাতালটির সব স্বেচ্ছাসেবক আয়াকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযুক্ত আয়ার বিরুদ্ধে আর কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা তদন্ত বোর্ডের প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঠিক করা হবে। আরো পড়ুন: অবশ্য এ ব্যাপারে কোন পুলিশী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এখন পর্যন্ত। মি. রায় বলেন, "এটা পুলিশকে জানানোর মতো কোন ঘটনা না। কারণ এখানে কোন জীবন্ত শিশু মারা যায়নি। মৃত শিশু।" কী ঘটেছিল? যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, পেটা ব্যথা হওয়ার কারণে গত শুক্রবার এক নারীকে চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করে। পরে শনিবার হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান তাকে পরীক্ষা করে দেখেন এবং তাকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর পরামর্শ দেন। এতে দেখা যায় যে, তিনি সাড়ে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং তার সন্তান গর্ভেই মারা গেছে। পরে তাকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য চিকিৎসা দেয়া হয়। শনিবার দুপুর নাগাদ ব্যথা বেড়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে তার সন্তানের পা বের হয়ে এলে ওই আয়া কাউকে কিছু না জানিয়ে তাকে প্রসব করানোর ব্যবস্থা করে। তিনি বেরিয়ে আসা মৃত শিশুটির পা ধরে টান দিলে পুরো দেহটি মাথা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বের হয়ে আসে। মি. রায় জানান, ওই শিশুটি এরইমধ্যে মৃত এবং নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। রবিবার চিকিৎসকরা ডিএমসির মাধ্যমে ওই নারীর জরায়ু থেকে মৃত শিশুটির বিচ্ছিন্ন মাথা বের করে আনেন চিকিৎসকেরা। মি. রায় জানান, বর্তমানে ওই নারী সুস্থ রয়েছেন। | পেটে ব্যথা নিয়ে যশোরের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক প্রসূতি। পরীক্ষায় ধরা পড়ে গর্ভের শিশুটি মারা গেছে। প্রসূতিকে ঔষধ দিয়ে অপেক্ষা করা হচ্ছিল মৃত সন্তানটি প্রসবের জন্য। এক পর্যায়ে শিশুটির শরীরের কিছুটা অংশ বেরিয়ে এসেছিল। কিন্তু সেই অংশ ধরে টানাটানি করে দেহটি ছিড়ে ফেলেন হাসপাতালের এক আয়া। মৃত শিশুটির বিচ্ছিন্ন মস্তক রয়ে যায় প্রসূতির জরায়ুর ভেতর। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | ইংল্যান্ড ও ভারত মুখোমুখি যা এই দুইদল ছাড়াও আরো দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই মাঠেই ভারতের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ দুদিন পরে। তবে বাংলাদেশ দল এখন এজবাস্টনেই অবস্থান করছে, অনুশীলনও শুরু করে দিয়েছে। মূলত বাংলাদেশ ২রা জুলাই এজবাস্টনের মাঠে নামলেও, আজ সবার নজর থাকবে এই খেলার দিকে। কারণ এখানে ইংল্যান্ড হেরে গেলে বাংলাদেশ আরো নির্ভার হতে পারবে। তবে ইংল্যান্ডের হার যথেষ্ট নয়, ভারতের সাথে জয় পেলেই ইংল্যান্ডের আজকের হারের মাহাত্ম্য বাড়বে বাংলাদেশ দলের জন্য। ইংল্যান্ড যদি আজকের ম্যাচটি হেরে যায়, সাথে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও হারে আর বাংলাদেশ যদি শুধুমাত্র পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পায় সেটাই যথেষ্ট হবে। কিন্তু ইংল্যান্ড যদি যে কোনো একটি ম্যাচে জয় পায় ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে, সেক্ষেত্রে দুটো ম্যাচেই জিততে হবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের দুটো ম্যাচের একটি ২রা জুলাই ভারতের বিপক্ষে, ৫ই জুলাই লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে। আরো পড়ুন: যেসব কারণে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের আজকের ম্যাচ মাশরাফীর প্রতি সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারের আহ্বান মাশরাফী কি বিশ্বকাপে নিজের খেলা নিয়ে সন্তুষ্ট জোফরা আর্চারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ইংলিশ বোলিং লাইন আপ ভারত ও ইংল্যান্ডের শক্তিমত্তার পার্থক্য ভারত এই মুহূর্তে বিশ্বকাপের একমাত্র দল যারা একটি ম্যাচও হারেনি। মাত্র ৬ ম্যাচেই ১১ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় শক্তিশালী স্থানে আছে দলটি। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির ব্যাটিংয়ের সাথে শক্তিশালী বোলিং লাইন আপ ভারতকে দল হিসেবে কঠিন করে তুলেছে। হার্দিক পান্ডিয়ার বল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাটসম্যানরা কিন্তু এই দলটিরও দুর্বলতার জায়গা রয়েছে। ভারতের পুরো স্কোয়াডে আছেন তিনজন উইকেটকিপিং-ব্যাটসম্যান। মাহেন্দ্র সিং ধোনি খেলছেন নিয়মিত, সাথে আছেন রিশাভ প্যান্ত ও দিনেশ কার্তিক। কিন্তু রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলির পরে মিডল অর্ডার সামলাতে ধোনি ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ছাড়া ভারত এমন কোনো শঙ্কায় পড়েনি। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের শুরুটা বেশ ভালোভাবেই করে। ব্যাটিংয়ে ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রোহিত শর্মা কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪রানের হারের পর সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হার তাদের শঙ্কায় ফেলে দেয়। ইংল্যান্ড এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ ব্যাটিং নির্ভর একটি দল। বোলিংয়ে যে ফাঁক রয়েছে সেটা পূরণ করতে গিয়ে কখনো কখনো তাদের ব্যাটিংয়েও প্রভাব পড়ে। শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩০০ এর বেশ নিচের টোটাল তাড়া করতে গিয়ে হেরে যায় ইংল্যান্ড। পাকিস্তানের সাথে ৩৪৮ রান তাড়া করতে গিয়ে হেরে যায় ১৪ রানে। তবে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ওপেনিং ব্যাটসম্যান জেসন রয়ের মাঠে নামার কথা রয়েছে চোট কাটিয়ে। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: বরগুনা হত্যাকাণ্ড: 'পুলিশে চাকরির জন্য উত্তীর্ণ হয়েছিলেন গ্রেপ্তারকৃতদের একজন ' উত্তর কোরিয়ার ভেতরে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচের যত নাটকীয়তা নাগরিকত্ব তালিকায় না থাকায় কি আত্মহত্যা বাড়েছে? | ইংল্যান্ড ও ভারত মুখোমুখি হচ্ছে এজবাস্টনে। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | চেরা আঁশযুক্ত সাপ "বর্ষায় আগাছা বেড়ে ক্ষেতের মাটি ঢেকে যায়," বলছিলেন টুকারাম রাও, যিনি ভারতের কর্নাটক রাজ্যের রত্নাপুরী গ্রামের এক ক্ষেত মজুর। "রাতের বেলা ওই ক্ষেতের মধ্য দিয়ে আমাদের হেঁটে যেতে হয় পাম্প চালু করার জন্য। পানির পাইপ ঠিকমত কাজ না করলে, হাত দিয়ে সেই পাইপ টেনে বের করে তা মেরামত করতে হয়।" মি. রাও-এর মত গ্রামের বহু কৃষক ও ক্ষেত মজুর খালি পায়েই হাঁটাচলা করেন। বর্ষাকালে ঘন আগাছার মধ্যেই থাকে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আস্তানা। ভারত আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে খুবই বিষাক্ত এই সাপের ছোবলে প্রাণ যায় বহু মানুষের। এই সাপ রাতের বেলায় বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ছোবল মারার আগে নিস্তেজ অবস্থায় অনেকক্ষণ নিজেকে লুকিয়ে রাখে চন্দ্রবোড়া। দীর্ঘ সময় নড়াচড়া করে না এই সাপ, তারপর হঠাৎই ভয়ানকভাবে ছোবল বসায়। এরা সচরাচর ইঁদুরজাতীয় প্রাণী বা ছোটখাট ব্যাঙ শিকার করে খায়। মানুষ সচরাচর তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু থাকে না। তার পরেও ভারতে অন্য যে কোন জাতের সাপের তুলনায় চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনের শিকার হয় সবচেয়ে বেশি মানুষ, আর এই সাপের ছোবলে মৃত্যুও ঘটে সবচেয়ে বেশি। ভারতে সর্পদংশনে মৃত্যুর ৪৩ শতাংশই চন্দ্রবোড়ার কামড়ে মারা যায়। শ্রীলঙ্কাতেও সর্পদংশনের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের জন্য দায়ী চন্দ্রবোড়া। বাংলাদেশেও যেসব সাপ দেখা যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত চন্দ্রবোড়া। একশো' বছর আগে এই প্রজাতির সাপ বাংলাদেশে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে মনে করা হলেও গত বছর দশেক ধরে এই সাপের দংশনের ঘটনা শনাক্ত হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছে বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটি। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: চন্দ্রবোড়ার দংশন ভয়ানক - কারণ হল তাদের শিকারের ধরন। ঘাস বা আগাছার মধ্যে দিয়ে তারা চলে অতি ধীরে। এত ধীরে যে মনেই হয় না তারা নড়াচড়া করছে। গায়ের সবুজ ও বাদামী চাকা চাকা দাগের কারণে দিনের বেলা তারা ঘাস বা আগাছার রংয়ের সাথে মিশে থাকে - তাদের দেখা যায় না। আর রাতের বেলা তাদের দেখতে পাওয়া আরও কঠিন। ধানক্ষেতে বা বেড়ে ওঠা আগাছায় তাদের গায়ের ওপর অসাবধানে পা পড়লেই চন্দ্রবোড়া ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার ওপর হামলা হচ্ছে ধরে নিয়ে সে ঘনঘন ছোবল বসায়। বিশেষ করে যারা ক্ষেতখামারে কাজ করেন, তারা চন্দ্রবোড়া সাপে কাটার আশঙ্কায় থাকেন। ক্ষেত খামারে ঘন আগাছার মধ্যে লুকিয়ে থাকা রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ চট করে চোখে পড়া মুশকিল - এর আর একটা কারণ তার গায়ের রঙ সাপের দংশনে প্রতিবন্ধী ভারতে প্রতি বছর সর্পদংশনের শিকার হয় প্রায় ২৮ লাখ মানুষ, আর মারা যায় ৫০ হাজার। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, গত দুই দশকে শুধু ভারতেই সাপের কামড়ে মারা গেছে ১২ লাখের বেশি মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত সর্বশেষ এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর অন্তত পাঁচ লাখ ৮০ হাজার মানুষ সাপের দংশনের শিকার হয়, এবং মারা যায় অন্তত ছয় হাজার মানুষ। সারা বিশ্বে প্রতি বছর সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৮১ হাজার থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজারের মধ্যে। আর বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর সাপের দংশনের শিকার হয় আনুমানিক ৪৫ লাখ মানুষ। সাপে কামড়ানোর পর যারা প্রাণে বেঁচে যান, তাদের জীবনেও এর সূদুর প্রসারী প্রভাব পড়ে। দংশনের কারণে অনেকের জীবন-জীবিকা দারুণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায়। "সম্প্রতি একজন হলুদ চাষীর পায়ে সাপে ছোবল মেরেছিল। সে ক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার করছিল। তার গোড়ালির চারপাশের মাংস পচে গেছে," বলছিলেন মি. রাও। "ওই পচন তার হাঁটু পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়, এখন সে আর কোন কাজকর্ম করতে পারে না।" ডাক্তারদেরকে তার পায়ের পচে যাওয়া অংশ কেটে বাদ দিতে হয়েছে। পরিবারের খাওয়া-পরা যোগাতে এখন তার স্ত্রীকে বাড়তি কাজ খুঁজতে হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে ঘরে ঘরে, বিবিসিকে বলেন মি. রাও। "প্রতি বছর প্রায় চার লাখ সাপে কাটা মানুষ কোন না কোন ধরনের পঙ্গুত্বের শিকার হন - হয় তাদের কোন অঙ্গের কোষকলা শুকিয়ে মরে যায়, যার ফলে সেই অঙ্গ কেটে বাদ দিতে হয়, নয়ত সেই অঙ্গ নষ্ট হয়ে আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না। অনেকে সাপের কামড়ের কারণে অন্ধও হয়ে যান," বলছেন ব্রিটেনে লিভারপুল স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের সাপের বিষ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ লরা-ওয়ানা আলবুলেস্কু। "সর্পদংশনের কিন্তু একটা বিরাট মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও রয়েছে, যা নিয়ে গবেষণার কাজ সবে মাত্র শুরু হয়েছে। সাপে কাটার মানসিক প্রভাবও কিন্তু মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। "অনেকে সাপে কাটার পর কাজ করতে পারেন না - কেউ ভয়ে, আবার কেউ প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ার কারণে। প্রতিবন্ধী অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে হয় না, তারা ঘরবন্দী হয়ে যায়, অনেকে চিকিৎসার খরচ যোগাতে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়।" ভারতে বেশিরভাগ সর্পদংশনের ঘটনা ঘটে দুর্ঘটনাবশত সাপের গায়ে পা পড়লে - মোটা রাবারের তৈরি বুট জুতা কিছুটা সুরক্ষার কাজ করে সাপে কাটা একটা উপেক্ষিত রোগ প্রতি বছর সারা বিশ্বে সাপের দংশনের শিকার হয় যে ৪৫ লাখ মানুষ, তাদের মধ্যে ২৭ লাখ পুরুষ, নারী এবং শিশু শারীরিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয় বলে জানাচ্ছে বেসরকারি সংস্থা গ্লোবাল স্নেকবাইট ইনিশিয়েটিভ। সাপের কামড়ের সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করছে এই সংস্থা। "সাপের দংশন যে কতটা ব্যাপক সমস্যা, বহু মানুষই তা বোঝে না," ব্যাখ্যা করেছেন আমেরিকায় অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে সংস্থা সাপের বিষ প্রতিরোধী রসায়ন, এর ওষুধ ও জরুরি চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করছে তার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক লেসলি বয়ার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, সাপের দংশন কোন কোন সম্প্রদায়ের জন্য বিশাল একটা সমস্যা, এবং সেই বিবেচনা থেকে তারা সম্প্রতি সর্পদংশনের কারণে মানুষের শরীরে ঘটা বিষক্রিয়াকে উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের একটা উপেক্ষিত রোগ হিসাবে শ্রেণিভুক্ত করেছে। সাপে কাটাকে এখন বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে উপেক্ষিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে - যে সমস্যা বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিষক্রিয়ার চিকিৎসা লেসলি বয়ার বলেন, "প্রায় ১২০ বছর ধরে আমরা জানি সাপের বিষ কাটানোর ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম কীভাবে তৈরি করতে হয়।" অ্যান্টিভেনম বা সাপে কামড়ানোর ওষুধ তৈরি করতে সংগ্রহ করতে হয় সাপের বিষ তিনি বলেন, ফ্রান্সের পাস্তুর ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানীরা বহুকাল আগে অ্যান্টিভেনম তৈরির কিছু কাজ করেছেন। এছাড়াও ইংল্যান্ডের লিস্টার ইনস্টিটিউট এবং ব্রাজিলের বুতানতান ইনস্টিটিউটেও অ্যান্টিভেনম নিয়ে গবেষণা হয়েছে। অনেক অ্যান্টিভেনম ভাল কাজও করে। "কিন্তু সাপের বিষের চরিত্র যেহেতু বেশ জটিল, ফলে এর সফল চিকিৎসাও অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।" সঠিক অ্যান্টিভেনম যোগাড় করা এবং অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করে বিষক্রিয়া বন্ধের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে অনেকেই সাপের কামড় থেকে বাঁচার সহজ ও কার্যকর উপায়গুলোর দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। ভারতে কর্নাটক রাজ্যের টুকারাম রাও এবং তার প্রতিবেশীরা একটা প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়েছেন। ভারতে হিউমেন সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত এক কর্মসূচির আওতায় তারা এলাকার কৃষকদের সাপের দংশন থেকে বাঁচাতে মোটা রাবাবের বুট জুতা সরবরাহ করছেন। "মানুষ যখন চলতে গিয়ে অজান্তে সাপের গায়ে পাড়া দেয়, তখনই সাপের ছোবল খায় তারা। নব্বই শতাংশ সর্পদংশনের ঘটনা এভাবেই ঘটে," জানান সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা সুমন্ত বিন্দুমাধব। তার সংস্থা থেকে মি. রাও-এর গ্রামের কৃষকদের ৪০০ জোড়ার বেশি রাবারের বুট এবং ২০০ সৌরশক্তি চালিত বাতি বিলি করা হয়েছে। "চন্দ্রবোড়ার ফণা ভারতে অন্যান্য প্রজাতির অনেক সাপের চেয়ে বেশি লম্বা। কিন্তু গামবুটের রাবার ভেদ করে কামড়ানো তাদের পক্ষে খুবই কঠিন। আর সাপে কাটার পরে চিকিৎসার চেয়ে আগেই সাপের কামড় থেকে বাঁচা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ," বলেন মি. বিন্দুমাধব। কীভাবে কাজ করে সাপের বিষ সাপের বিষ নানাধরনের বিষাক্ত পদার্থের একটা জটিল সংমিশ্রণ। আর এই বিষের ধরন সাপের প্রজাতি ভেদে ভিন্ন। শরীরের যে স্নায়ু কোষগুলো মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায়, সাপের বিষে থাকা কিছু জারক রস এবং অল্প মাত্রার প্রোটিন সেই বার্তা বহন প্রক্রিয়াকে অচল করে দেয়। এর ফলে মানুষের মাংসপেশিতে দ্রুত সংকোচন শুরু হয়, পেশিতে ব্যথা হতে থাকে এবং মাংসপেশি অসাড় হয়ে যেতে থাকে। শ্বাসতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে যেসব মাংসপেশি, সেগুলো ঠিকমত কাজ না করায় মানুষের দমবন্ধ হওয়ার অবস্থা হয়। বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে বিষধর একটি সাপ ব্ল্যাক মাম্বা আফ্রিকায় ব্ল্যাক মাম্বা নামে এক ধরনের সাপ আছে, যার বিষ হৃদপিণ্ডের মাংসপেশিকে আক্রমণ ক'রে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। কোন কোন বিষের ক্রিয়ায় কাটা জায়গায় রক্ত জমাট বাধে না, ফলে প্রবল রক্তক্ষরণ হয়ে মানুষ মারা যায়। কিছু সাপের বিষ আছে যা রক্তের কোষকে এমনভাব ভেঙে দেয় যে সাপে কাটা মানুষের রক্তকোষে অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আবার কোন কোন সাপের বিষে শিরার ভেতর রক্ত জমাট বেধে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রাণ হারায়। কখনও বিষক্রিয়া আবার শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে সেসব অঙ্গ বিকল করে দেয়। আর কিছু কিছু বিষ যেখানে সাপে কেটেছে সেই স্থান ও আশপাশের কোষগুলোকে পুরো মেরে ফেলে। তখন মৃত কোষের কারণে পচে যাওয়া সেই সব প্রত্যঙ্গ কেটে বাদ দিতে হয়। অনেক সাপের শরীরে এমন বিভিন্ন ধরনের বিষের সংমিশ্রণ থাকে। ফলে সেইসব সাপ কামড়ালে একই সাথে নানাধরনের বিষক্রিয়া ঘটতে থাকে। যে কারণে সাপের দংশনের চিকিৎসা খুব সহজ নয়। "কোন একটা সাপের শরীরে ভিন্ন মাত্রায় কয়েকশো' ধরনের বিষ থাকতে পারে। ফলে একটা ওষুধ দিয়ে এত ভিন্ন ধরনের বিষ কাটানো দুঃসাধ্য ব্যাপার," বলছেন লেসলি বয়ার। অ্যান্টিভেনম তৈরি করা অ্যান্টিভেনম বা বিষের প্রতিকার ওষুধ তৈরি করা কঠিন নয়, যদি আপনি জানেন অ্যান্টিভেনম বানানোর সঠিক পদ্ধতিটা কী। এছাড়া আপনার কাছে থাকতে হবে ঘোড়া। যে সাপের বিষ কাটানোর ওষুধ আপনি বানাতে চাইছেন, সেই সাপের শরীর থেকে আপনাকে বিষ সংগ্রহ করতে হবে, সেই বিষ খুবই অল্প মাত্রায় ঘোড়ার শরীরে ঢোকাতে হবে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে। এর থেকে ঘোড়ার শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে সেই অ্যান্টিবডিকে বিশুদ্ধ করে নিয়ে তা সাপে কাটা মানুষের শরীরে দিলে সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব। কিন্তু অ্যান্টিভেনম ঠিকমত কাজ করতে হলে অনেকটা পরিমাণে এই ওষুধ সাপে কামড়ানো মানুষকে দিতে হয়। কারণ ওষুধ কার্যকর হতে গেলে বেশ অনেকটা অ্যান্টিবডির প্রয়োজন হয়। কী ধরনের সাপের দংশন হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে কতটা পরিমাণ অ্যান্টিভেনম সেই বিষ কাটাতে কার্যকর হবে। অ্যান্টিভেনম দামেও সস্তা নয়। অনেক সময় দামের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের অ্যান্টিভেনম দিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য থাকে না। এই হাঁড়ি থেকে গোখরা সাপ নিয়ে তার থেকে বিষ বের করে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয় ভারতের তামিলনাড়ুর এক অ্যান্টিভেনম কারখানায় এছাড়াও সব অ্যান্টিভেনম সব সাপের বিষ সারাতে কাজ করে না। যেমন, ভারতে মূলত চার ধরনের সাপের অ্যান্টিভেনম তৈরি হয় - কোবরা বা গোখরা প্রজাতির সাপ, ক্রেইট বা শঙ্খিনী, রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া এবং চেরা আঁশযুক্ত ভাইপার। অথচ ভারতে ৬০টির বেশি বিষাক্ত প্রজাতির সাপ রয়েছে। প্রতিটি প্রজাতির সাপের জন্য অ্যান্টিভেনম তৈরি করা খুবই খরচ সাপেক্ষ। তাই যে কোন জাতের সাপে কামড়ালে মূলত এই চারটি সাপে কামড়ানোর ওষুধ দিয়েই তার চিকিৎসা করা হয়। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশটিতে যে অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হয়, তা মূলত আসে ভারতের তামিলনাড়ু থেকে। এমন অভিযোগ রয়েছে যে আমদানি করা এই অ্যান্টিভেনম বাংলাদেশে সাপে কামড়ানোর চিকিৎসায় সবসময় কাজ করে না। বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে যে অ্যান্টিভেনম আনা হয়, সেটি মূলত চারটি সাপের বিষের একটি 'ককটেল' বা মিশ্রণ, যা কিছু সাপের দংশন নিরাময়ে কাজ করে। বাকি ক্ষেত্রে সেগুলো আংশিক কাজ করে। নতুন গবেষণা তবে সাপে কামড়ানোর ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম তৈরির জন্য এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গবেষণার কাজ শুরু হয়েছে। অ্যান্টিবডি-ভিত্তিক চিকিৎসার ওপর বিজ্ঞানীরা বেশি জোর দিচ্ছেন, যে অ্যান্টিবডি ব্যাপক সংখ্যক প্রজাতির সাপের বিষ নিরাময়ে কাজ করবে। বিভিন্ন প্রজাতির সাপের আচরণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়লে মানুষ সাপের কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করার সহজ পদক্ষেপগুলো নিতে সক্ষম হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সাপের বিষ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ লরা-ওয়ানা আলবুলেস্কু এমন ওষুধ তৈরির ব্যাপারে কাজ করছেন যা হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের এবং যা মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। তিনি বলছেন, সাপে কাটার পর সাথে সাথে এই ক্যাপসুল খেলে তা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করবে এবং সাপ কামড়ানোর সাথে সাথে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থার দ্রুত অবনতি রোধ করতে পারবে। মিজ আলবুলেস্কু এবং তার সহযোগীরা এমন উপাদান উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন, যা দিয়ে তৈরি ওষুধ বিভিন্ন প্রজাতির সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারবে। কারণ অনেক সময়ই সাপে কাটা ব্যক্তি জানতেও পারে না কোন সাপ তাকে কেটেছে। লেসলি বয়ার বলেন, "এমন একটা ওষুধ কখনই বের করা সম্ভব হবে না, যা সব সাপের বিষ নিরাময়ে একই ভাবে কাজ করবে। কিন্তু এমন ওষুধ তৈরির কাজ চলছে যা সাপে কাটা মানুষের প্রাথমিক শুশ্রুষায় কাজ করবে, যাতে রোগী চিকিৎসার জন্য হাতে সময় পায়, যাতে বিষ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে না পড়ে এবং দ্রুত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল করে দিতে না পারে।" হিউমেন সোসাইটি ইন্টারন্যাশানালের মি. বিন্দুমাধব বলছেন যে সাপে কামড়ানোর সফল চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখনও যেহেতু অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, তাই সাপের কামড় ঠেকানোর জন্য সহজ পদক্ষেপগুলোর দিকে মানুষের বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত। যেমন, তিনি বলেন, সাপখোপ থাকার সম্ভাবনা যেসব গ্রাম এলাকায় সেখানে মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো, আগাছায় ঢাকা ক্ষেতখামারে মোটা রাবারের জুতা পরে হাঁটা, ঘরের আশেপাশে জঞ্জাল না জমানো ইত্যাদি। তার আরও পরামর্শ: আপনার এলাকায় যে সাপের আনাগোনা বেশি, সেই সাপের আচরণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করাও সাপের কামড়ের হাত থেকে বাঁচার বড় একটা পথ। সাপ কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে, কীভাবে সাপ মনে করে যে সে আক্রান্ত যার কারণে সে ফণা তোলে, কোন সাপ কোন সময়ে কোথায় থাকে - এসব তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিলে সাপ এড়িয়ে চলার ব্যাপারে মানুষ আরও সচেতন হবে বলে মনে করেন মি. বিন্দুমাধব। এই প্রতিবেদনের তথ্য মূলত সংগ্রহ করেছেন বিবিসি ফিউচারের রিচার্ড গ্রে। | বিষাক্ত সাপের কামড়ে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মারা যায় প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ, কিন্তু সহজ কিছু পদক্ষেপ সর্পদংশন থেকে মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে পারে। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | কর্মক্ষেত্রে কি মেয়েরা আবারও পিছিয়ে পড়বে এই মহামারির কারণে? মিজ রামোস বেশ উচ্চপদে কাজ করেন। একটি আন্তর্জাতিক ইনস্যুরেন্স গ্রুপের রিস্ক ম্যানেজার। তিনি বলেন, ইনস্যুরেন্স ব্যবসায় পুরুষদেরই প্রাধান্য। কাজেই এরকম একটি সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে তাকে ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে শক্ত হতে হয়েছে এবং প্রতিদিন সাধ্যের অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। বিবিসিকে তিনি বলেন, “কর্মজীবনের একেবারে শুরুতেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমাকে অনেক দেরিতে অফিস থেকে বেরুতে হবে, আমাকে অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হবে, আমাকে পুরুষদের তুলনায় তিনগুণ বেশি চেষ্টা করতে হবে নিজেকে যোগ্য প্রমাণের জন্য।” মিজ রামোজ ব্রাজিলের এসোসিয়েশন অব উইমেন ইন ইনস্যুরেন্স মার্কেট নামের একটি সংস্থার উপদেষ্টা। এ বিষয়ে তিনি একটি বই লিখছেন, যেটি অক্টোবরে প্রকাশিত হবে। কম বয়সী মেয়েদের প্রতি তার উপদেশ হচ্ছে: কেউ যদি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন, মনোযোগী হন এবং সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন, তাহলে তিনি অবশ্যই শীর্ষে পৌঁছাতে পারবেন। তবে আরও অনেক বিশেষজ্ঞের মতো, তিনিও উদ্বিগ্ন। তিনি মনে করেন, এই মহামারীর সময় নারীর কেরিয়ারের ওপর যে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হচ্ছে, সেটি তাদের আবার পেছনে ঠেলে দিতে পারে। দ্বিতীয় শিফট অফিসের কাজ সামলানোর পাশাপাশি ঘরের কাজও সামলাতে হয় মেয়েদের। যেসব পরিবারে বাবা-মা দুজনকেই এখন ঘরে বসে কাজ করতে হচ্ছে এবং একই সঙ্গে ঘরেই ছেলে-মেয়েদের স্কুলের পাঠ দিতে হচ্ছে, অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকে দেখাশোনা করতে হচ্ছে, সেখানে পরিস্থিতি আসলেই বেশ কঠিন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, যে কাজের জন্য কোন পারিশ্রমিক মেলে না, সেরকম কাজের তিন চতুর্থাংশ এখনো মেয়েদেরই করতে হয়। “শিশুদের যত্ন এবং গৃহস্থালি কাজের বড় বোঝাটা যে এখনো মায়েদেরকেই টানতে হয়, এটা তো কোন গোপন ব্যাপার নয়”, বলছেন মামসনেট বলে একটি ব্রিটিশ অনলাইন নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী জাস্টিন রবার্টস। তাঁর মতে, এই বাস্তবতা নারীর ওপর আরও চাপ তৈরি করছে। "মায়েদের মধ্যে যে দুশ্চিন্তাটা কাজ করছে তা হলো- তারা সাধারণত যতটা ভালোভাবে কাজ করতে পারে, ততটা ভালোভাবে তারা করতে পারছে না, ফলে তারা ছাঁটাই হতে পারে বা সমস্যায় পড়তে পারে এমন আশংকা তৈরি হয়েছে।” “আর তাদের চাকরি বা আয় যদি নিরাপদও থাকে, অনেকে বলছে এভাবে তারা বেশিদিন চালিয়ে নিতে পারবেন না।” খুব কম সংসারেই নারী-পুরুষকে সমানভাবে গৃহস্থালি কাজের দায়িত্ব নিতে দেখা যায়। মিস রামোস বলেন, মেয়েরা কর্ম ক্ষেত্রে তাদের কাজ শেষ করার পর বাসায় ফিরে তাদের কিন্তু সাধারণত দ্বিতীয় একটা শিফট শুরু করতে হয়। তিনি বলছেন, যত নারীকে তিনি চেনেন তাদের সবাইকে এখন এই দুইটা শিফটকে একসঙ্গে চালাতে হচ্ছে এবং এর ফলে তাদের উপর একটা বিরাট বড় মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। অনেকে এমনকি এই মহামারির সময় তাদের কাজ ছেড়ে দেয়ার কথা পর্যন্ত ভাবছেন। সেকেলে কর্মক্ষেত্র অ্যালিসন জিমারম্যান হচ্ছেন ক্যাটালিস্ট নামের একটি আন্তর্জাতিক এনজিও পরিচালক। এই প্রতিষ্ঠানটি বড় বড় কর্পোরেশনের সঙ্গে মিলে কাজ করছে যাতে মেয়েদের জন্য কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ আরও ভালো করা যায়। তিনি বলছেন “আমাদেরকে আসলে খুব গভীরভাবে ভাবতে হবে কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের অভিজ্ঞতা আসলে কি।” “এই পুরো সিস্টেমটা আসলে খুব বেশি সেকেলে এবং যখন আপনি জিনিসটা একটু ভালোভাবে দেখবেন, তখন বুঝতে পারবেন যে, কর্পোরেশনগুলোর আসলে উচিত নিজেদের স্বার্থেই কর্মক্ষেত্রে একটা নতুন স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি করা।” ক্যাটালিস্ট বহু বছর ধরে দশ হাজার এমবিএ গ্রাজুয়েটের কেরিয়ার পর্যবেক্ষণ করছে। এদের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়েই আছে। এরা পাস করে বেরিয়েছে এশিয়া, কানাডা, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সব নামকরা বিজনেস স্কুল থেকে। এক মর্কিন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কোম্পানি বিপদে পড়লে শেয়ার হোল্ডাররা নারী পরিচালকের ওপর ভরসা করতে পারেন না। এই গবেষণায় তারা দেখতে পেয়েছেন যে ফ্লেক্সিবল ওয়ার্ক অপশনের অভাবে মেয়েদের ক্যারিয়ার কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে তারা মা হওয়ার পর। তবে এর বাইরেও অনেক সুপ্ত বৈষম্য রয়েছে যেগুলো মেয়েদের কেরিয়ারের অগ্রগতি থামিয়ে দেয়, তাদের সন্তান থাক বা না থাক তাতে কিছু আসে যায় না। যেমন ক্যাটালিস্ট এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, এমবিএ পাশ করে বেরোনোর পর প্রথম চাকরিতে মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় অনেক নিচের স্তর থেকে শুরু করে। আর পুরুষরা যখন অফিসে অনেক লম্বা সময় ধরে কাজ করে সেটা তাদের কেরিয়ারে সহায়ক হয়। কিন্তু মেয়েদের বেলায় সেটা ঘটে না। যখন কোন পুরুষ গ্রাজুয়েট তার চাকরি বদল করে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়, সাথে সাথে তার বেতন বাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু মেয়েদের বেলায় এটি ঘটে না ।তাদেরকে আগে ম্যানেজারের কাছে প্রমাণ করতে হয় যে তারা এর যোগ্য। মিজ জিমারম্যান বলেন, মেয়েদেরকে প্রতিনিয়ত তাদের দক্ষতা বাড়াতে হয়। আর পুরুষদেরকে কেবলমাত্র তাদের সম্ভাবনা দেখেই প্রমোশন দিয়ে দেয়া হয়। এরকম একটা ধারণা বাইরে প্রচলিত যে পুরুষরা যা করছে ঠিক সেটাই যদি মেয়েদের করতে দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়, সেটা একটা বিরাট অগ্রগতি। কিন্তু বাস্তব সত্য আসলে তা নয়। মেয়েদের বেলায় অনেক বেশি উচ্চ মানের কাজ আশা করা হয় পুরুষদের তুলনায় এবং এটা এক ধরনের বৈষম্য। অর্থনৈতিক সংকটে পরিস্থিতি আরও জটিল কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে পারে যেসব কোম্পানি তারাই সফল হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় বলা হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এই ধরনের বৈষম্য আরও জোরালো-ভাবে ফিরে আসছে। একটি প্রকাশিতব্য গবেষণায় বলা হচ্ছে মেয়েরা যখন বড় বড় কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টরস এর মতো জায়গায় যোগ দিতে যাচ্ছে তখন এটা আরও বেশী কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ বেশিরভাগ কোম্পানি এখন অর্থনৈতিক সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে। এই গবেষণায় ২০০৩ হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এক হাজারের বেশি পাবলিক লিস্টেড কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডের নির্বাচন বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষকরা দেখেছেন, যখন সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলে, তখন শেয়ারহোল্ডাররা সাধারণত নারীদের নিয়ে খুশি থাকেন। কিন্তু যখন কোম্পানিগুলো সংকটে পড়ে তখন তারা বোর্ড অফ ডিরেক্টরস এর মতো জায়গায় মেয়েদের নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধান্বিত থাকেন এবং তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। এরকম পরিস্থিতিতে পুরুষদের কাছে যে ধরনের দক্ষতা আশা করা হয় মেয়েদের বেলায় প্রত্যাশা তার চাইতে অনেক বেশি। এর ফলে অনেক মেয়ে কোম্পানি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কি? বিশ্ব মহামারি শেষ হতে কতদিন লাগবে? কোথায় কতোক্ষণ বেঁচে থাকে কোভিড-১৯ এর জীবাণু, নির্মূলের উপায় করোনাভাইরাস নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক কোরিন পোস্ট বিবিসিকে বলেন, “এটার অন্য কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া কঠিন। এর একমাত্র ব্যাখ্যা হচ্ছে বৈষম্য।” ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অর্জুন মিত্র বলেন, অনেক কোম্পানি তাদের মেধাবী নারীকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করছে না বা অবমূল্যায়ন করছে। অথচ এসব কোম্পানি এই নারী নেতৃত্ব থেকে লাভবান হতে পারত। নিম্নআয়ের নারীদের উপর প্রভাব গত পঞ্চাশ বছরে বিশ্বে লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিরাট বড় অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য সেটা পুরোপুরি মোচন করতে গেলে আরও অন্তত এক শতাব্দীর সময় লাগবে বলে বলছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। নিম্নআয়ের নারীদের বেলায় এই বৈষম্য এখনই চোখে পড়তে শুরু করেছে। করোনাভাইরাস মহামারির পর যে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে, তাতে পুরুষদের তুলনায় মেয়েরাই বেশি কাজ হারিয়েছেন। কারণ এই সংকট সেই সব সেক্টরেই আসলে বেশি প্রভাব ফেলছে, যেখানে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বেশি। যেমন, হসপিটালিটি, খাদ্য এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাত। যেমন সেন্ট্রাল আমেরিকায় ৫৯ শতাংশ নারী এসব সেক্টরে কাজ করেন। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ৪৯ শতাংশ। দক্ষিণ আমেরিকায় ৪৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে মেয়েদের মধ্যে বেকারত্বের হার পুরুষদের তুলনায় বেশি। এর আগের সংকট গুলোতে দেখা গেছে যখন মেয়েরা তাদের কাজ হারায় তখন তাদেরকে অনেক বেশি করে পারিশ্রমিকবিহীন সেবা কাজে সময় দিতে হয়। যেহেতু এরকম সংকটের সময় কাজ পাওয়া খুব কঠিন, তখন যে সমস্ত কাজ পাওয়া যায় সেগুলোতে মেয়েদের নেয়া হয়না। পুরুষরা সেগুলো পায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা একথা বলছে। অনেক দেশে এরকম দৃষ্টিভঙ্গি খুব জোরালো যে, কাজ পাওয়ার বেলায় মেয়েদের চাইতে পুরুষদেরই বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়। ৩৪টি দেশে পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে এ কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টার। লোকজনকে এই জরিপে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের সময় কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষদের বেশি অধিকার থাকা উচিত কিনা। ভারত এবং তিউনিসিয়ায় প্রায় ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আর তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিনস এবং নাইজেরিয়ায় ৭০ শতাংশ এই মত সমর্থন করেছেন। কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, লেবানন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা একই কথা বলেছেন। আর ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া, ইউক্রেন এবং মেক্সিকোতে প্রায় ৪০ শতাংশের কাছাকাছি লোক একই কথা বলেছেন। এই জরিপে বিশ্বজুড়ে এ ধরনের মত সমর্থন করেছেন গড়ে ৪০ ভাগ উত্তরদাতা। জুলিয়ানা হরোউইটয হচ্ছেন পিউ রিসার্চ সেন্টারের একজন অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর। তিনি বলেন, যেসব দেশে লোকজন মুখে বলে যে তারা লিঙ্গসমতা সমর্থন করে, কিন্তু বিশ্বাস করে যে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর তুলনায় পুরুষদের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিৎ, সেসব দেশে এটা নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব আছে। তিনি বলেন, মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে গিয়ে দেশগুলো যখন চেষ্টা করছে, তখন এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি মেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলবে। এক কদম পিছিয়ে দুই কদম সামনে কিন্তু এসবের প্রভাব যাই হোক, এক সময় এই মহামারি কেটে যাবে এবং মিজ রামোস বিশ্বাস করেন এটি এক নতুন বাস্তবতার পথ খুলে দেবে, যার সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করেছে। লুসিয়ানা ব্যারোস একটি এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানীর প্রধান নির্বাহি, যাদের পোর্টফলিও হচ্ছে একশো কোটি ডলারের বেশি। তিনি বলেন, “আমরা হয়তো এক ধাপ পিছিয়ে দুই ধাপ এগিয়ে যাব।” তিনি বলেন, নারীরা এখন আগের চাইতে অনেক বেশি সচেতন তাদের কেরিয়ারের ব্যাপারে। তার মতে, লিঙ্গ সমতার সংগ্রাম এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। তিনি বিশ্বাস করেন মহামারি পরবর্তী কাজের বাজারে নিজেদের কেরিয়ায় আঁকড়ে থাকার জন্য মেয়েদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তবে তিনি প্রশ্ন তুলছেন, যেসব কোম্পানিতে এই মেয়েরা কাজ করেন, তারা তাদের এই মেধাকে কতটা মূল্য দেয়। এই কথার সঙ্গে একমত মিজ জিমারম্যান। নতুন পাস করে বেরুনো বিজনেস গ্রাজুয়েট মেয়েদের তিনি পরামর্শ দেন, কোন কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার আগে সেটির শীর্ষ পদে কি ঘটছে সেদিকে নজর দেয়ার জন্য। “যখন আপনি চাকরি খুঁজছেন, তখন আপনি কিন্তু একটা নিখুঁত প্রতিষ্ঠান খুঁজছেন না। আপনি অগ্রগতির সুযোগ খুঁজছেন। আপনি যদি দেখেন যে কোন কোম্পানির নেতৃত্ব পর্যায়ে আপনার প্রতিনিধিত্ব করার কোন সুযোগ নেই এবং যদি দেখেন যে কোন কোম্পানি সেই লক্ষ্যে কাজ করছে না, তখন আমি হলে সেই কোম্পানিতে যোগ না দিয়ে অন্য কোথাও কাজ খুঁজবো।” | কর্মজীবনে সফল আরও অনেক নারীর মতো সিমোন রামোস বুঝতে পারেন তাকে শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছাতে হলে পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে চুক্তি সইয়ের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে ইউএই ও বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০ কিন্তু জুন মাসে যখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরের সবচেয়ে উর্বর অঞ্চল জর্ডান উপত্যকার বিশাল একটি অংশকে নিজের দেশের অংশ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন, আরব দুনিয়ায় তেমন কোন উচ্চবাচ্যই শোনা যায়নি। ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র তৈরির শেষ সম্ভাবনাও নস্যাৎ হয়ে যাবে - ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে বারবার এই আশঙ্কা জানানো হলেও, সৌদি আরব এবং তার আরব মিত্ররা মৌনব্রত পালন করছে। তারপর দু'মাস না যেতেই দুটি উপসাগরীয় আরব রাজতন্ত্র ইসরায়েলের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি করে ফেলেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং বাহরাইন মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে গিয়ে চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছে। এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেদিনই বিনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে দাবি করেন যে আরো অন্ততঃ পাঁচটি আরব দেশ ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তি চুক্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাতের সমঝোতা: 'আমাদের পিঠে ছুরি মারা হয়েছে' হতাশ, ক্রুদ্ধ ফিলিস্তিনিরা দেখছে যে গত অর্ধ শতাব্দী ধরে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ঘুচিয়ে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রতি পুরো আরব বিশ্বের যে ঐক্যবদ্ধ সমর্থন, তাতে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির বিশ্লেষকদের মধ্যে এখন আর তেমন কোনো সন্দেহ নেই যে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা-সংগ্রাম এখন আরব বিশ্বের অনেকগুলো দেশে অগ্রাধিকারের তালিকায় ক্রমশঃ নিচে নামছে। সৌদি আরবের ইরান আতঙ্ক আরব বসন্তের ধাক্কা, সিরিয়া-লিবিয়া-ইয়েমেন-ইরাকে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ, জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের হুমকি, তেলের দাম পড়ে যাওয়া - এসব কারণে অনেক আরব সরকার অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে এখন এতটাই ব্যতিব্যস্ত যে ফিলিস্তিন ইস্যু তাদের কাছে এখন আর বড় কোনো এজেন্ডা নয়। সেই সাথে যোগ হয়েছে ইরান নিয়ে জুজুর ভয়। পশ্চিম তীরের নাবলুসের কাছে একটি ইহুদি বসতির বাইরে সৈন্যদের দিকে ইট ছুঁড়ছে ফিলিস্তিনী কিশোর। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতির জনসংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বিবিসি আরবি সংবাদ বিভাগের সিনিয়র নিউজ এডিটর মোহামেদ এয়াহিয়া মনে করছেন, সৌদি আরব এবং আরো কিছু উপসাগরীয় দেশের মধ্যে ইরান-ভীতি এখন এতটাই প্রবল যে ইসরায়েলের সাথে ঘনিষ্ঠতাকে তারা তাদের রক্ষাকবচ হিসাবে দেখছে। “ইরান এখন তাদের অভিন্ন শত্রু। ফলে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ১৮ বছর আগে 'আরব ইনিশিয়েটিভ' নামে সৌদি যে উদ্যোগ ইসরায়েলের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছিল, তা এখন অনেক দুর্বল,“ বিবিসি বাংলাকে জানালেন মি. এয়াহিয়া। ইসরায়েলের সাথে শান্তিচুক্তি: আমিরাত ও বাহরাইনের পর কি সৌদি আরব? প্রয়াত সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ'র উদ্যোগে ২০০২ সালে ২২টি আরব দেশ একযোগে ঘোষণা দেয় যে যতক্ষণ না ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখল করা ফিলিস্তিনি জমি ছেড়ে দিয়ে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী মেনে নিয়ে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করতে দিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না। মোহামেদ এয়াহিয়া বলেন, সৌদি আরব নিজেরাই তাদের সেই উদ্যোগকে দুর্বল করে দিয়েছে। তার প্রথম প্রকাশ্য ইঙ্গিত পাওয়া যায় যখন ২০১৮ সালের এপ্রিলে যখন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে মার্কিন ইহুদি নেতাদের সাথে এক বৈঠকে খোলাখুলি ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের কড় সমালোচনা করে বলেন, দাবী-দাওয়া নিয়ে তাদের নমনীয় হতে হবে। ওই বৈঠক নিয়ে সে সময়কার বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্টে লেখা হয়, যুবরাজ বিন সালমান খোলাখুলি বলেন, ফিলিস্তিন সঙ্কটের সমাধান সৌদি আরব চায়, কিন্তু ‘ইরানের মোকাবেলা এখন তাদের কাছে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার।‘ সেই ১৯৯৩ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল মি. এয়াহিয়া বলেন, “ইসলামী বিশ্বে নেতৃত্ব ধরে রাখার বিবেচনায় সৌদি আরব নিজে হয়ত এখন ইসরায়েলের সাথে সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে সময় নিচ্ছে, কিন্তু আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন যে সৌদিদের অনুমোদন ছাড়া ইউএই এবং বাহরাইন ইসরায়েলের সাথে এই চুক্তি করতো না।“ অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি এবং মুসলিম দুনিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েনকে কেন্দ্র করে আরব দেশগুলো এখন কয়েকটি গ্রুপে জোটবদ্ধ হয়ে পড়েছে, যা ইসরায়েলকে তার রাজনৈতিক ইচ্ছা হাসিলে অনেক সুবিধা করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সান-ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পশ্চিম এশিয়া বিশেষজ্ঞ আহমেদ কুরু বিবিসিকে বলেন, আরব দেশগুলোর মধ্যে এখন যে বিভক্তি এবং বিরোধ তা সাম্প্রতিক ইতিহাসে আর দেখা যায়নি। “কয়েকটি ব্লকে তারা ভাগ হয়ে গেছে। একটি প্রভাব বলয়ে সৌদি আরবের সাথে রয়েছে ইউএই; ইরান-ইরাক-সিরিয়া একদিকে, আবার কাতার যোগ দিয়েছে তুরস্কের সাথে।“ ড. কুরু বলেন, “এই বিভেদকে পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছে ইসরায়েল ... গত প্রায় বছর দশেক ধরে আস্তে আস্তে ফিলিস্তিুনি ইস্যু খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে।“ সেই সাথে ইসরায়েলের পক্ষে হোয়াইট হাউজের বর্তমান প্রশাসনের পুরোপুরি একপেশে আচরণে ফিলিস্তিনিরা এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। অভাব-অভিযোগ নিয়ে দ্বারস্থ হবে, আরব দুনিয়ায় তাদের এমন মিত্রের সংখ্যা কমছে। ফিলিস্তিন নিয়ে আবেগে ভাটা কিন্তু ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরব বিশ্বের সাধারণ জনগণের মনোভাব এখন কী? লন্ডনে গবেষণা সংস্থা চ্যাটাম হাউজের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক মোহাম্মদ এল-দাহশান বিবিসি বাংলাকে বলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে এক সময় ফিলিস্তিনি ইস্যুতে আরব দেশগুলোর রাস্তায় যতটা আবেগ চোখে পড়তো, এখন ততটা নেই। একটি কারণ, তার মতে, আরব দেশগুলোকে নতুন একটি প্রজন্মের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের ইতিহাসের প্রত্যক্ষ কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফলে, তাদের বাবা-দাদাদের ফিলিস্তিন নিয়ে যতটা আবেগ আছে, তাদের মধ্যে ততটা নেই। ইসরায়েলের সাথে ইউএই এবং বাহরাইনের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রতিবাদে গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ “কিন্তু তাই বলে আবেগ পুরোপুরি চলে যাচ্ছে, তা কোনভাবেই তা বলা যাবে না। আপনি যদি এখনও আমার জন্মস্থান মিশরে যান, দেখতে পাবেন ছোটো একটি শহরে হয়ত স্থানীয় কোনো ইস্যুতে মানুষজন জড় হয়ে প্রতিবাদ করছে এবং তাদের কয়েকজনের হাতে ফিলিস্তিনি পতাকা। ওই জমায়েতের সাথে ফিলিস্তিনের কোন সম্পর্কই হয়ত নেই, কিন্তু তাদের হাতে সেই পতাকা।“ মোহাম্মদ এল-দাহশান বলেন, অধিকাংশ আরব দেশে মানুষজন তাদের রাজনৈতিক মতামত দিতে পারে না। “ফলে ফিলিস্তিনি ইস্যুতে তারা কী ভাবছে, তা একশো' ভাগ বোঝা সম্ভব নয়।“ মিশর ও জর্ডানের অভিজ্ঞতা মি. এল-দাহশান মনে করেন, একের পর এক আরব সরকার যদিও ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করছে, কিন্তু সেই সম্পর্ক কতটা অর্থপূর্ণ হবে তা শেষ পর্যন্ত সেসব দেশের জনগণের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করবে। ‘প্যালিস্টিনিয়ান লাইভস ম্যাটার’: ইয়াদ হালাক কি ফিলিস্তিনিদের জর্জ ফ্লয়েড? তিনি মিশর এবং জর্ডানের সাথে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাসের উদাহরণ টেনে বলেন, গত কয়েক দশক ওই সম্পর্ক শুধু দুই সরকারের ভেতরেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। “৪০ বছর আগে মিশর এবং ৩০ বছর আগে জর্ডানের সাধে ইসরায়েলের একই ধরণের চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু এত দিনেও এই দুই দেশের মানুষের সাথে ইসরায়েলের বা ইসরায়েলি জনগণের কোনো সম্পর্ক হয়নি।“ তিনি আরও বলেন, “ইউএই বা বাহরাইনের সাধারণ মানুষের সাথে যদি ইসরায়েলের সম্পর্ক তৈরি না হয়, তাহলে তা শুধু দুই দেশের মধ্যে দূতাবাস স্থাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়ে যাবে।“ মি. এল-দাহশান মনে করেন, তেমন অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে ফিলিস্তিনি সংকটের সমাধান এখনও গুরুত্বপূর্ণ। ফিলিস্তিনিদের সামনে রাস্তা কী? প্রশ্ন হচ্ছে, মি. এল-দাহশান যেমনটি বলছেন সে ধরণের পরোক্ষ চাপের ভরসায় কি ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব অপেক্ষা করবে? বিবিসি আরবি বিভাগের মোহামেদ এয়াহিয়া মনে করেন, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সামনে এই মুহূর্তে বিকল্প খুব সামান্যই। ওয়াশিংটনে গবেষণা সংস্থা ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের গবেষক ওমর এইচ রহমান ওই প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক এক প্রকাশনায় লিখেছেন, এই পুরো পরিস্থিতির জন্য ফিলিস্তিনি নেতৃবৃন্দের দুর্বল নেতৃত্ব বহুলাংশে দায়ী। “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন গত দু'বছর ধরে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নস্যাৎ করতে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন, তখন ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব বিকল্প কোনো প্রস্তাব-পরিকল্পনা হাজির না করে, বন্ধু তৈরির চেষ্টা না করে, পুরনো বস্তাপচা স্লোগান দিয়ে চলেছে।“ জাতিসংঘের প্রস্তাব লঙ্ঘন করে পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি গড়ে তোলা হয়েছে মি. রহমান মনে করেন, মাহমুদ আব্বাস রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনে সবসময় ইসরায়েল এবং আমেরিকার “শুভ বুদ্ধির উদয়ের“ জন্য অপেক্ষা করেছেন, এবং তার ফলে ধীরে ধীরে এখন অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন। তাহলে কি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনা চিরতরে শেষ? মোহাম্মদ এল-দাহশান, যিনি নিজে জাতিসংঘে চাকরির সূত্রে দীর্ঘদিন পশ্চিম তীর এবং ইসরায়েলে ছিলেন, মনে করেন যে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বপ্ন ফিলিস্তিনিরাও বেশ কিছুদিন ধরেই আর দেখছেন না। “পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে এখনও নতুন নতুন ইহুদি বসতি তৈরি হচ্ছে। ওই সব বসতিতে ইহুদি জনসংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ওই সব বসতি রক্ষার নামে ফিলিস্তিনি জনবসতির মধ্যে দেয়ালে পর দেয়াল উঠেছে। গাজা ভূখণ্ড এখন একটি কারাগার। ফলে ফিলিস্তিনিরা বুঝে গেছে রাষ্ট্র গঠন আর সম্ভব নয়।“ তাহলে তারা এখন কী করবে? মি. এল-দাহশান বলেন, ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব এখনও মুখে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবি বাতিল করে দেননি। কিন্তু বিপুল সংখ্যায় সাধারণ ফিলিস্তিনিরা এখন মনে করছেন যে তাদের সামনে এখন একটাই বিকল্প, আর তা হলো - নিজেদের রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাদ দিয়ে ইসরাইল রাষ্ট্রে সমান অধিকারের দাবি তোলা। “আমি মনে করি নেতারাও ভেতরে ভেতরে ভাবছেন তাদের সামনে হয়তো আর কোনো বিকল্প রাস্তা নেই ... সুতরাং বল এখন ইসরায়েলের হাতে।“ ইসরায়েলকেই হয়তো অদূর ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কি গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনে সম্মতি দেবে, না-কি ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েল রাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার দেবে। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যকার সাম্প্রতিক উষ্ণ সম্পর্ক যে বার্তা দিচ্ছে 'বাবু খাইছো': কেন এ ধরনের গান বাংলাদেশে তরুণদের আকৃষ্ট করছে যখন ঢাকায় ব্রিটিশ দূতাবাসের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আলফার শীর্ষ নেতারা | এখন থেকে এমন কি ১০ বছর আগেও যদি কোনো ইসরায়েলি সরকার অধিকৃত পশ্চিম তীরের এক চিলতে জমি অধিগ্রহণের ঘোষণা দিত, আরব বিশ্বের ২২টি দেশেই প্রতিবাদের ঝড় উঠতো। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | ঢাকার একটি কওমী মাদ্রাসা। হাসিনা আক্তার হিসেব করে দেখেছেন, স্কুলে সবার জন্য প্রতি মাসে খরচ হতো কমপক্ষে দশ হাজার টাকা। কিন্তু মাদ্রাসায় তিনজনের জন্য তাঁর খরচ হচ্ছে দুই হাজার টাকার মতো। স্কুলে ভর্তির সময় ডোনেশনের মতো মাদ্রাসায় সে ঝামেলা তো নেই, কোন বাধ্যতামূলকভাবে কোচিংও করতে হয়নি। হাসিনা আক্তার বলছিলেন, এক দিকে ধর্মীয় চিন্তাধারা এবং অন্যদিকে কম খরচ - এ দুটি কারণে তিনি সন্তানদের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন। "আমি আমার বাচ্চাকে হাই লেভেলে দিতে চেয়েছি। কিন্তু ৪০ হাজার টাকা অ্যাডভানস করতে হবে। আমার পক্ষে সেটা সম্ভব না। এখানে তেমন একটা ব্যয় করতে হয়না। দ্বিতীয় হচ্ছে, মুসলিম হিসেবে আমার বাচ্চাকে এমন শিক্ষাই দিতে হবে যার মাধ্যমে তার ঈমান-আকিদা এবং দুনিয়াবি জিন্দেগিটা কোরআন এবং সুন্নাহর আলোকে হয়," বলছিলেন হাসিনা আক্তার। সন্তানদের কেন মাদ্রাসায় দিচ্ছেন অভিভাবকরা আরো পড়ুন: কওমী শিক্ষা বোর্ডের নেতাদের মধ্যে বিরোধ কেন? বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসায় কী পড়ানো হয়? ঢাকার বেশ কিছু মাদ্রাসা ঘুরে দেখা গেল এসব জায়গায় ছাত্র-ছাত্রীরা এসেছেন মূলত পরিবারের ইচ্ছায়। তবে সাথে-সাথে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ইচ্ছাও ছিল কিছুটা। মাদ্রাসা ছাত্রী শিফা আক্তার ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে পড়াশুনার পর কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু এর কারণ কী? শিফা আক্তার বলেন, " আমার আব্বু আগে স্কুল টিচার ছিলেন। তারপর ইসলামের দিকে ধাবিত হয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকতায় যোগ দিলেন। আমার আব্বু চাইতেছিলেন যে আমি মাদ্রাসায় পড়বো। আর আমারও ইচ্ছা ছিল মাদ্রাসায় পড়ার।" এসব মাদ্রাসায় এতিম কিংবা দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আধিক্য যেমন আছে তেমনি সমাজে আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারের সন্তানরাও আছে, যারা চাইলে নিজের সন্তানকে ব্যয়বহুল শিক্ষা দিতে পারেন। অন্যদিকে সমাজে আরেকটি অংশ আছে যারা সাধারণ শিক্ষার খরচ বহর করতে পারেন না। ফলে কওমী মাদ্রাসা হয়ে উঠে তাদের জন্য একটি ভরসার জায়গা। মাদ্রাসায় ভর্তি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা কী বলছে তবে উভয় ক্ষেত্রেই ধর্মীয় প্রভাব একটি বড় কারণ হিসেবেই দেখা যাচ্ছে। সে কথাই বলছিলেন একজন অভিভাবক শহিদুল্লাহ ভুঁইয়া। মি: ভুঁইয়ার চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে এক ছেলে ফ্যাশন ডিজাইনার, এক মেয়ে ডাক্তার এবং আরেক মেয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। ছোট ছেলে তিনি কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন। তিনি বলেন, "আমি চাই যে আমার একটা ছেলে হাফেজ হোক। আমি একজন হাফেজের বাপ হতে পারবো। তাছাড়া আমার ছেলে ইসলামের খেদমত করতে পারবে। এটাই হলো উদ্দেশ্য।" বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষে কওমী মাদ্রাসায় পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা। কওমী মাদ্রাসাগুলোর কার্যক্রম সরকারী তদারকির বাইরে। এসব প্রতিষ্ঠানে কী পড়ানো হবে সে বিষয়য়ে সরকারের কোন নজরদারি নেই। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসা ঘুরে দেখা গেল এসব জায়গায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছেই। কওমী মাদ্রাসার সবচেয়ে বড় শিক্ষা বোর্ড বেফাকের হিসেব অনুযায়ী ২০১৩ সালে বিভিন্ন শ্রেণিতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যেখানে প্রায় ৫৫ হাজার ছিল, ২০১৮ সালে সেটি দ্বিগুণ হয়েছে। ঢাকার গাবতলি এলাকায় মেয়েদের একটি কওমী মাদ্রাসা শামসুল উলুম মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১৩ সালে। শুরুতে এখানে ৩৫জন ছাত্রী থাকলেও পাঁচ বছরের ব্যবধানে এখানে ছাত্রী সংখ্যা এখন প্রায় ৩০০। শিক্ষা বিষয়ক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলছেন, অভিভাবকরা যে সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠাচ্ছেন, এর পেছনে শুধু ধর্মীয় কারণ নয় অর্থনৈতিক কারণও জড়িত। রাশেদা চৌধুরী বলেন, মূল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা ধীরে-ধীরে ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে পরিবারগুলোর জন্য। প্রাথমিক শিক্ষায় সরকার ব্যয় করার পরেও ছাত্র-ছাত্রীদের পেছনে বহু টাকা ব্যয় করতে হয় অভিভাবকদের। "আমরা গবেষণায় দেখেছি, প্রাথমিক শিক্ষায় একজন শিক্ষার্থীর পেছনে সরকার যে টাকা ব্যয় করে, তার দ্বিগুণ কখনো-কখনো তিনগুণ ব্যয় করতে হয় পরিবারগুলোকে। যেখানে মাদ্রাসাগুলোতে, বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসাগুলোতে, কোন ধরনের ব্যয় বহন করতে হয় না। বিশেষ করে বিত্তহীন বা নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো পছন্দ করেন বা বেছে নেন। বাধ্য হয়ে বলা যেতে পারে। "বলছিলেন রাশেদা কে চৌধুরী। তবে বাংলাদেশের সমাজে অনেকেই আছেন যারা মনে করেন, তাঁর তিনটি সন্তান হলে একজনকে মাদ্রাসায় দেবেন। এ ধরনের চিন্তাধারা উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত- সবার মাঝেই দেখা যায় বলে উল্লেখ করেন রাশেদা চৌধুরী। সাধারণ শিক্ষায় ব্যয়বৃদ্ধির ফলে মাদ্রাসার দিকে ঝোঁক বাড়ছে: রাশেদা কে চৌধুরী কওমী মাদ্রাসায় টাকা আসে কোথা থেকে? কওমী মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার সুযোগ পায়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষই তাদের থাকা-খাওয়া এবং পড়াশোনার খরচ বহন করে। অনেক মাদ্রাসা আছে যেখানে নির্ধারিত কোন বেতন নেই। শিক্ষার্থীদের আর্থিক সচ্ছলতার উপর নির্ভর করে বেতন নেয়া হয়। এতো বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ব্যয় বহন করছে কারা? কোত্থেকে আসছে এতো টাকা? কওমী মাদ্রাসার যারা সমালোচক তাদের মনে এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। এসব মাদ্রাসা বিদেশী সহায়তা পায় কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেউ-কেউ। কিন্তু এসব মাদ্রাসার সাথে সম্পৃক্তরা বলছেন, কোন বিদেশী সহায়তা নয়, সমাজের ভেতর থেকেই টাকার জোগান আনে। কওমী মাদ্রাসায় বহু শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ঢাকার একটি অন্যতম বড় কওমী মাদ্রাসা জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামি আরজাবাদে গিয়েছিলাম আমি। সেখানে প্রায় ১২০০ ছাত্র পড়াশোনা করছে, যাদের অধিকাংশই সেখানে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার সুবিধা পায়। মাদ্রাসায় দুটি ভবন রয়েছে। একেকটি চারতলা করে। এ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, " আমাদের যে ছাত্র সংখ্যা আছে তার দুভাগ হলো দরিদ্র ফ্যামিলির ছেলে। এ দেশের যে মুসলিম জনসাধারণ আছে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুদানে মাদ্রাসা পরিচালিত হয়। তেমন একটা সমস্যায় পড়তে হয় না আমাদের। একজন দিনমজুরও এখানে অনুদান প্রদান করেন তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী।" বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা ঘুরে দেখা গেল, অর্থের উৎস সম্পর্কে এসব মাদ্রাসা পরিচালনাকারীরা একই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। ইসলাম বিষয়ক লেখক এবং গবেষক মাওলানা শরিফ মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের সবগুলো কওমী মাদ্রাসা সমাজের ভেতর থেকে অনুদান নিয়ে পরিচালিত হয়। "জুম্মার নামাজে অংশগ্রহণ করে এমন কোন ধার্মিক মুসলমান আপনি পাবেন না যার কওমী মাদ্রাসায় ১০ টাকার অংশগ্রহণ নেই। ১০ টাকা থেকে এক কোটি টাকা অনুদান দেবার মতো মানুষ এ সমাজে আছে," বলছিলেন শরীফ মোহাম্মদ। কীভাবে পরিচালিত হয় কওমি মাদ্রাসা কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান কোথায় হয়? যে কোন শিক্ষা ব্যবসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো কর্মসংস্থান কোথায় হবে। কওমী মাদ্রাসায় যারা পড়াশুনা করছেন, তারা কর্মসংস্থানের বিষয়টি নিয়েও তাঁরা খুব একটা চিন্তিত নয়। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মনে করেন, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ যেসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আছে সেখানেই তাদের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। ঢাকার অন্যতম একটি বড় মাদ্রাসা জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামী আরজাবাদ-এর ছাত্র আজিজুর রহমান। তিনি ইসলামি উচ্চতর আইন গবেষণা শেষ করেছেন। তাঁর পড়াশুনা প্রায় শেষের দিকে। তিনি আমাকে বলছিলেন, পড়াশুনা শেষ করে কর্মসংস্থানের বিষয়ে কী ভাবছেন? " শিক্ষকতাকে আমরা সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান মনে করি। সেই সাথে ইমামতি এবং আরো অনেক জায়গা আছে যেখানে আমরা কাজ করতে পারি," বলছিলেন আজিজুর রহমান। ঢাকায় মেয়েদের একটি কওমী মাদ্রাসা । ঢাকার আরেকটি মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রী তাসনীম আক্তার জানালেন, পড়াশুনা শেষ করে তিনি 'ইসলামি শরিয়ত-সম্মত কাজে' যেতে চান। বাংলাদেশের অন্যতম একটি পুরনো মাদ্রাসা ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসা। এখানকার ছাত্র সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। এখানকার শিক্ষক আহলাল্লুাহ ওয়াসেল বলছেন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাকে তারা একটি জীবন-ধারা হিসেবে বিবেচনা করেন। সেজন্য এখানে যারা পড়ে তারা ইসলামী ভাবধারা বজায় রাখার পাশাপাশি সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও কাজ করার যোগ্যতা রাখে বলে মনে করেন মি: ওয়াসেল। বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমান মর্যাদা দিয়েছে। সাধারণত কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা যে ধরনের পেশার সাথে জড়িত থাকেন, তার বাইরে সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরিতে আসতে সরকারি স্বীকৃতি তাদের কতটা সহায়তা করবে? শিক্ষা বিষয়ক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের রাশেদা কে চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সে প্রশ্ন। রাশেদা চৌধুরী বলেন, " আমাদের জানা মতে তারা ব্যাংকে কোথাও যেতে পারেন না, তাঁরা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা কোন সরকারী চাকরীতে যেতে পারেন না।" তিনি প্রশ্ন তোলেন, যেহেতু কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রিকে সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে, তাহলে তাদের কোথায় স্থান দেয়া হবে? কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা কি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে? রাশেদা চৌধুরী বলেন, এসব বিষয় এখনো পরিষ্কার হয়নি। তবে কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা কর্মসংস্থান নিয়ে তেমন একটা চিন্তিত নয়। বিভিন্ন মাদ্রাসা ঘুরে সে ধারণাই পাওয়া গেল। তাঁরা মনে করেন, ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগ আছে। ইসলাম বিষয়ক লেখক এবং গবেষক মাওলানা শরীফ মোহাম্মদও মনে করেন, দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি দিলেও অধিকাংশ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ভিন্ন কোন-কর্মসংস্থান বেছে নেবে না। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রের জন্য সরকারি স্বীকৃতিকে বিশাল কোন প্রাপ্তি হিসেবে মনে করেন না কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। আগে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সরকারিভাবে শিক্ষাপ্রাপ্ত হিসেবে বিবেচনা করা হতো না। সরকারি স্বীকৃতির মাধ্যমে সে জায়গা থেকে উত্তরণ ঘটেছে বলে মনে করেন মাওলানা শরিফ মোহাম্মদ। তিনি বলেন, " তাদের প্রধান কর্মতৎপরতা বা অংশগ্রহণ ধর্মীয় ক্ষেত্রগুলোতেই ব্যাপক থাকবে। এখান থেকে বের হয়ে কেউ সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ধারায় চলে যাবে, এটা আমার কাছে মনে হয় না।" কওমী মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের বিশ্বাস, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বাড়তে থাকবে। কওমী মাদ্রাসা বোর্ডে এতো বিভক্তি কেন? ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স-এর সমান মর্যাদা দিয়ে ঘোষণা দিলেন, মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা ব্যাপক সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন। কথা ছিল স্বীকৃতির পর থেকে সবগুলো কওমী মাদ্রাসা একটি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা নেবে। কারণ বর্তমানে কওমী মাদ্রাসাগুলোর ছয়টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবং সেখানে সরকারি কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসার শিক্ষক আহলালুল্লাহ ওয়াসেল বলছেন, স্বীকৃতির পর থেকে দাওরায়ে হাদিস অর্থাৎ সর্বোচ্চ স্তরের পরীক্ষা একটি সম্মিলিত বোর্ডের অধীনেই হচ্ছে। দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা একটি সম্মিলিত বোর্ডের অধীনে হলেও নিচের স্তরের পরীক্ষাগুলো এখনো ছয়টি আলাদা বোর্ডের অধীনেই হচ্ছে। সম্মিলিত বোর্ডের গঠন কাঠামো নিয়ে মনক্ষুন্নতা আছে বিভিন্ন পক্ষের মাঝে। হাটহাজারি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আহম্মদ শফির নেতৃত্বাধীন বেফাকের আধিপত্য রয়েছে এ বোর্ডে। তাঁদের অনুসারী মাদ্রাসার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হওয়ার কারণে এ বোর্ডে তাদের প্রাধান্য বেশি। কওমি মাদ্রাসার একজন পর্যবেক্ষক রোকন রায়হান, যিনি নিজেও কওমি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছেন। তিনি বলেন, সম্মিলিত বোর্ডে আহমদ শফির নেতৃত্বাধীন বেফাকের আধিপত্য নিয়ে অন্যদের মাঝে অসন্তুষ্টি রয়েছে। এ কওমী মাদ্রাসায় প্রায় ১২০০ ছাত্র আছে। যদিও ৮০ শতাংশ কওমি মাদ্রাসা বেফাকের অধীনে এবং কওমী মাদ্রাসাকে প্রতিনিধিত্ব করে বেফাক নামের বোর্ডটি। এমনটাই বলছেন মি: রায়হান। অনেকে বলেন কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে প্রতিন্দন্দ্বিতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণে নিচের স্তরসহ সবগুলো মাদ্রাসাকে একটি বোর্ডের আওতায় একটি বোর্ডের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। শোলাকিয়া ঈদ জামাতের ইমাম মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদও একটি বোর্ডের নেতৃত্বে রয়েছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কওমী মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্ব পর্যায়ে বিভক্তি কতটা প্রকট? ফরিদউদ্দিন মাসউদ বলেন, " এটার মধ্যে কিছুটা সত্যতা আছে, তবে এটাই মূল কারণ না। যদি এটাই মূল কারণ হইত, তাহলে দাওরায়ে হাদিসের ক্ষেত্রে সবাই একত্রিত হয়ে গেল কিভাবে? তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো থাকতেই পারে। সামাজিক অবস্থান নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বিভিন্ন বিষয় থাকে। সেটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই।" কিন্তু এ বিষয়টিকে কোন 'প্রতিবন্ধকতা' হিসেবে দেখছেন না মি: মাসউদ। কওমী মাদ্রাসার নিচের স্তরগুলোতে পড়াশুনার সিলেবাসের ক্ষেত্রে কিছু তারতম্য আছে। কোথাও ফার্সির উপর জোর দেয়া হয়, কোথাও উর্দুর উপর জোর দেয়া হয়। কোথাও বাংলা চর্চার উপর জোর দেয়া হয়না, আবার কোথাও সীমিত আকারে বাংলা-ইংরেজি পড়ানো হয় বলে শিক্ষকরা বলছেন। এদিকে মি: রায়হান বলছেন, কওমী মাদ্রাসাগুলোতে যারা নেতৃত্বের পর্যায়ের আছেন তাদের রাজনৈতিক 'চিন্তাধারার' কারণে মতপার্থক্য রয়েছে। তিনি বলেন, " তাদের মধ্যে শ্রেণীবিন্যাস আছে। সবাই একসঙ্গে রাজনীতি করেন না। যার কারণে এতগুলো বোর্ড আমরা দেখি। " তবে কওমী মাদ্রাসার নেতারা বলছেন, কওমী মাদ্রাসার মৌলিক বিষয়বস্তু নিয়ে তাদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য নেই। এখানকার ছাত্র-শিক্ষকরা মনে করেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে এসব মাদ্রাসার গুরুত্ব ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতা সেটিই নির্দেশ করছে বলে তাদের ধারণা। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: 'শুরু করার পরে বেরিয়ে আসতে পারছে না' উত্তর কোরিয়া কেন পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করছে? চার লেন সত্ত্বেও কেন যানজট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে? | ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা হাসিনার আক্তার। তাঁর তিন সন্তানের সবাই কওমী মাদ্রাসায় পড়াশুনা করছে। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | যৌন হয়রানির প্রতিবাদে ঢাকায় মানব বন্ধন এবিষয়ে সুস্পষ্ট একটি আইন তৈরি করার জন্যে আদালতের পক্ষ থেকে আদেশ থাকা সত্ত্বেও গত আট বছরে এই আইনটি তৈরি হয়নি। এর ফলে কী ধরনের আচরণ যৌন হয়রানি বলে বিবেচিত হবে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন আইনি ধারণা পাওয়া যায় না। বর্তমানে বাংলাদেশে শুরু হওয়া মি-টু আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তারা এসংক্রান্ত একটি আইন তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন নারী সোশাল মিডিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির কিছু অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তবে আইনজীবীরা বলছেন, ঠিক কোন কোন ঘটনাকে যৌন হয়রানি বলে ধরা হবে সেবিষয়ে আদালতের একটি গাইডলাইন বা দিক নির্দেশনা রয়েছে। আদালতের ওই আদেশে বলা হয়েছে, যতদিন পর্যন্ত এবিষয়ে আলাদা করে কোন আইন তৈরি না হবে, ততদিন পর্যন্ত এই দিক নির্দেশনাই আইন বলে গণ্য হবে। তবে এই দিক নির্দেশনাটি দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ব্যাপারে। এক দশক আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষ করে জাহাঙ্গীরনগর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর দায়ের করা এক রিট পিটিশনের জবাবে এই নির্দেশনাটি দেয় হাই কোর্ট। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী সালমা আলী ২০০৮ সালে এই পিটিশনটি দায়ের করেছিলেন। তিনি বলেন, "আদালত তখন দিক নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সরকারি বেসরকারি প্রত্যেকটি অফিসে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন নারীকে প্রধান করে একটি করে কমিটি গঠন করারও আদেশ দিয়েছিল।" বাংলাদেশে যেসব মেয়েরা তাদের যৌন হয়রানির শিকার হবার অতীত অভিজ্ঞতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করছেন - তাদের সাথে সংহতি জানিয়েছেন অনেকেই। যৌন হয়রানির মধ্যে কী কী পড়ে আইনজীবীরা বলছেন, বর্তমানে যেসব আইন আছে তাতে এক কথায় যৌন হয়রানির কোন সংজ্ঞা নেই। তবে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে যেসব বিষয় যৌন হয়রানি বলে বিবেচিত হতে পারে সেগুলোর একটি লম্বা তালিকা রয়েছে। এক দশকেরও বেশি সময় আগে বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর এক যৌথ বেঞ্চের দেওয়া ওই গাইডলাইনে কোন কোন বিষয় যৌন হয়রানি হিসেবে বিবেচিত হবে তার বিস্তৃত সংজ্ঞা তুলে ধরা হয়েছে। তবে এই সংজ্ঞা প্রযোজ্য হবে শুধু কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যে। আইন ও শালিস কেন্দ্রের একজন আইনজীবী নীনা গোস্বামী বলছেন, এর আগে বাংলাদেশে যৌন হয়রানির ব্যাপারে আলাদা করে কোন সংজ্ঞা ছিল না। "এর পরেও আদালতের কাছ থেকে আরো একটি রায় পেয়েছি যেখানে আগের দিক নির্দেশনাটির সাথে আরো কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছে। সেখানেও সরকারকে এবিষয়ে খুব দ্রুত একটি আইন তৈরি করতে বলা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে সেখানে যৌন হয়রানিকে অন্তর্ভুক্ত করার কথাও বলেছিল আদালত । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনও পর্যন্ত সেটা হয়নি।" আদালতের দিক নির্দেশনা অনুসারে যেসব বিষয় যৌন হয়রানি বলে বিবেচিত হবে সেই তালিকার মধ্যে রয়েছে: আইনজীবীরা বলছেন, উপরে উল্লেখিত এসব বিষয় কারো কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত বা অগ্রহণযোগ্য হলে সেটা যৌন হয়রানি বলে বিবেচিত হবে। তারা বলছেন, প্রেম, বিবাহ, ভালোবাসা- যে কোন সম্পর্কের মধ্যেও এসব যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটতে পারে। আরো পড়তে পারেন: নারী অধিকার কর্মীরাও কি 'মি-টু' এড়িয়ে যাচ্ছেন? বাংলাদেশে #মি-টু আন্দোলন কি শুরু হলো? 'যারা যৌন হয়রানির কথা প্রকাশ করছেন তারা একা নন' মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি নামের এই নারী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরেছেন। কোথায় বিচার চাওয়া যায়? আইনজীবীরা বলছেন, আদালতের দিক নির্দেশনা অনুসারে শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলে সেটা এর আওতায় বিচার করা সম্ভব। নীনা গোস্বামী বলছেন, ওই গাইডলাইনে বলা আছে, সরকারি বেসরকারি প্রতিটি সংস্থায়, প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্যে কমপক্ষে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করতে হবে। তার মধ্যে তিনজন হবেন ওই প্রতিষ্ঠানের এবং আরো দু'জনকে ওই প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে নেওয়া হবে। এবং এই কমিটিতে নারী সদস্যদের সংখ্যা বেশি রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।" আইনজীবীরা বলছেন, তাদের জানা মতে এখনও পর্যন্ত খুব কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠানেই এধরনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে সালমা আলী বলছেন, এরকম কমিটির মাধ্যমেও বিচার পাওয়ার খুব ভাল অভিজ্ঞতা তাদের নেই। তিনি বলছেন, দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে যার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে তাতে ছুটি দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এরকম নজিরও আছে। তিনি বলছেন, কর্মক্ষেত্রে কিম্বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির শিকার হলে অভিযোগকারী ব্যক্তি প্রথমে ওই কমিটির কাছে যেতে পারেন। তবে সেটা নির্ভর করছে অভিযোগের মাত্রার ওপরে। "শাস্তি হিসেবে তাকে যে জেলে পাঠাতে হবে তা নয়। অপরাধ অনুযায়ী তার শাস্তি হবে। চাকরি থেকে তাকে সাময়িকভাবে কিম্বা চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হতে পারে। অভিযোগ গুরুতর হলে বিষয়টি থানা পুলিশের কাছে গিয়েও গড়াতে পারে," বলেন সালমা আলী। দ্যা ডেইলি স্টারের ঘোষণা সম্প্রতি একটি ইংরেজি দৈনিক দ্যা ডেইলি স্টারের একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তার একজন সহকর্মী তাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলার পর ওই কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে বিষয়টি তদন্ত করে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু অফিস কিম্বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাইরে, পরিবারের ভেতরে, অন্য একটি পরিবারে, আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে, রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলে ভিকটিম কার কাছে যাবেন? আইনজীবীরা বলছেন, সেসব ক্ষেত্রে প্রতিকার পাওয়ার বিষয়ে কিছুটা সমস্যা রয়ে গেছে। আর সেকারণেই এধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্যে যৌন হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মধ্যে সেটাকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল। নীনা গোস্বামী বলেন, "ওই কমিটি যদি দেখে যে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ধর্ষণের পর্যায়ে চলে গেছে, তখন তারা সাথে সাথে সেটাকে পাঠিয়ে দেবে পুলিশের কাছে। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ বা মৌখিক নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে সেখান থেকে প্রতিকার পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কমই থাকে।" এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, বিভিন্ন আইনের দু'একটা ধারায় যেভাবে যৌন হয়রানির কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা খুবই অস্পষ্ট। তারপরেও যেসব আইনে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে তার মধ্যে রয়েছে: ...আরো কিছু আইন। তবে পুলিশের কাছে গেলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। যেমন মোবাইল কোর্ট ডেকে তাৎক্ষণিকভাবেই এর বিচার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। অভিযোগ যখন বহু বছর পুরনো মি-টু আন্দোলনের অংশ হিসেবে নারীরা ফেসবুকে যেসব অভিযোগ তুলে ধরছেন সেগুলো কয়েক বছর আগের ঘটনা। কখনও কখনও সেটা ২০/৩০ বছরেরও বেশি পুরনো। সেসব অভিযোগের বিচারের ভবিষ্যৎ কতোখানি এব্যাপারেও আইনজীবীরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। "সেটা নির্ভর করে ওই প্রতিষ্ঠানের ওপর। তারা যদি মনে করে ব্যবস্থা নেবেন তাহলে সেটা তারা এখনও নিতে পারেন। কিন্তু এমন কোন সাধারণ আইন নেই যার আশ্রয় নিয়ে কর্মস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির বিচার পাওয়া সম্ভব," বলেন নীনা গোস্বামী। পশ্চিমা বিশ্বের এই মি-টু আন্দোলনের ঢেউ এসে লেগেছে বাংলাদেশেও। তারা বলছেন, থানায় গেলে বেশিরভাগ সময় সেখান থেকে যেসব জিনিস চাওয়া হয় সেগুলো না থাকার কারণে ঠিক মতো মামলাও করা যায় না। যৌন হয়রানি সম্পর্কে থানার পুলিশও খুব একটা সচেতন নয়। সালমা আলী বলছেন, "এতো বছর আগের একটি ঘটনা প্রমাণ করা খুব কঠিন। তবে সেসময় তিনি যদি কোন ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন, কোথাও লিখিতভাবে অভিযোগ করে থাকেন, তখন যদি কোন প্রতিবাদ হয়ে থাকে, হয়তো অভিযুক্ত ব্যক্তির চাকরি চলে গিয়েছিল কিম্বা তিনি নিজে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন, সেগুলোকেও কিন্তু তারা আজকে প্রমাণ হিসেবে হাজির করতে পারেন।" তবে তারাও এও স্বীকার করেছেন যে এতো আগের এরকম একটি অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ, কিম্বা সাক্ষী হাজির করা খুব কঠিন একটি কাজ। সালমা আলী বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, যারা পুলিশের কাছে গেছেন তারা এক পর্যায়ে মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সামাজিক চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত তারা একটা আপোষে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তবে তারা বলছেন, এই বিচারের সময় ভিকটিম যাতে আবারও দ্বিতীয়বারের মতো সমাজের কাছে ভিকটিম হয়ে যান সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আইনজীবীরা বলছেন, এজন্যে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে খসড়া করে সেটা আইন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় থেকে এধরনের আইন প্রণয়নের ব্যাপারে এখনও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সালমা আলী বলছেন, সুনির্দিষ্ট কোন আইন না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন আইনের মাধ্যমে নারীরা যৌন হয়রানির বিচার চাইতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে নারীরা সেটা করতে চায় না। কারণ এই প্রক্রিয়ায় যে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় থাকবে তার কোন নিশ্চয়তা থাকে না।" | বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে যৌন হয়রানি সম্পর্কে বিচ্ছিন্নভাবে উল্লেখ করা হলেও এ সম্পর্কে আলাদা করে সুনির্দিষ্ট কোন আইন নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | ছেলে এবং মায়ের ক্রিকেট খেলার ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু মা আর সন্তানের খেলার ওই মুহূর্তটিকে ছাপিয়ে আলোচনা শুরু হয় ওই নারীর পোশাক নিয়ে। ওই নারী বোরকা পরিহিত হওয়ার কারণে অনেকে তার সমালোচনা করেছেন এই বলে যে, তার মধ্যে তারা "বাংলাদেশি মা"কে- খুঁজে পাননি। অনেকে আবার বলেছেন যে এটা পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানের ছবি। ছবিটি কিন্তু আসলেই তোলা হয়েছে ঢাকার পল্টন এলাকা থেকে এবং এটি তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সংবাদকর্মী ফিরোজ আহমেদ, যার কাছ থেকে ছবিটি পেয়েছে বিবিসি বাংলা। সামাজিক মাধ্যমে মেহরান সানজানা নামে একজন বলেছেন, "বাঙালি মা বলে অনেকেই বাহবা দিচ্ছেন। কিন্তু ওনাকে দেখে তো মোটেও আমার বাঙালি মনে হয়নি। মনে হয়েছে আফগানি মা। উনি যদি সমাজ পরিবর্তনের জন্য ছেলের সাথে মাঠে নামতেন তাহলে বোরখা পরে নামতেন না।" অবশ্য এমন মতের বিরুদ্ধেও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে ব্যবহারকারী। তারা ওই নারীকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এমনি একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ফারহানা সেলিম সিনথিয়া। বোরকা নিয়ে বিতর্কে অনেকেই ওই নারীকে সমর্থন জানিয়েছেন। ফারহানা সেলিম সিনথিয়া তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন "ভদ্রমহিলা কি পোশাক পরেছেন সেইটা আমার কাছে বড় বিষয় না। এইটা যার যার নিজস্ব ভালো লাগা। উনার বোরকা নিয়ে সমালোচনা করার চেয়ে আমার ভালো লেগেছে ছেলেকে তার সাপোর্ট দেয়া দেখে, ভাল লেগেছে তার ব্যাটিং করার স্টাইল দেখে, মনে হচ্ছে প্রফেশনাল কেউ ব্যাট ধরেছে।" একই রকম বক্তব্য দিয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টে আব্দুন নূর তুষার বলেছেন, "আপনারা মা আর সন্তানের ভালোবাসা, সন্তানের আনন্দ দেখেন না। দেখেন পোশাক। আপনাদের সাথে তাদের কোন পার্থক্য নাই, যারা মেয়েদের জিনস-টিশার্টকে কটাক্ষ করে অন্যায় অপরাধকে জায়েজ করার চেষ্টা করে।" পোশাক নিয়ে বিতর্ক কেন? সমাজবিজ্ঞানী সামিনা লুৎফা বলেন, নারী কী পরে আছে অথবা পরে নাই সেটা সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রে। তিনি বলেন, নারীর সমাজ নির্মিত একটি চেহারা আছে এবং সেই চেহারাটা হিন্দুদের জন্য এক রকম, সেক্যুলারদের জন্য একরকম, মুসলমান ভাবাপন্নদের জন্য একরকম। এই বিষয়গুলো নিয়ে সমাজের মধ্যে এক ধরণের বিভেদ তৈরি হয়েছে। এজন্যই তর্ক-বিকর্তটা হয়েছে। বোরকা নিয়ে বিতর্কে অনেকেই ওই নারীকে সমর্থন জানিয়েছেন। আরো পড়ুন: একজন নারী বোরকা পরেই হোক আর যা পরেই হোক, তিনি তার সন্তানের সাথে খেলতেই পারে। আরেকটি কারণ হচ্ছে, নারী যে অনেক রকম চেহারা নিয়ে হাজির হতে পারে সেই সহিষ্ণুতার জায়গাটা নাই। এছাড়া নারী কী পরবে সেটাও যে সে নিজে ঠিক করবে-সেই বোধের জায়গাটাও সমাজে তৈরি হয়নি বলে মনে করেন তিনি। "আমি যেভাবে নারীকে দেখতে চাই সেভাবেই নারীকে নির্মাণের চেষ্টা চলে। যেমন বাঙালি নারী, মুসলমান নারী, নারীবাদী নারী, তাদের প্রত্যেককেই একটা নির্দিষ্ট ফ্রেমের মধ্যে থাকতে হয়।" তিনি বলেন, যারা নারীর স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেন অনেক সময় তিনিও মনে করেন যে, নারীকে তার চিন্তার মতো করে চলতে হবে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কারণ নারী কী পরবে নিজে সেই সিদ্ধান্ত নেয়াটাও স্বাধীনতার অংশ। সময়ের সাথে সাথে চিন্তায় পরিবর্তন আনতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, "এই ছবিটার বার্তা হওয়া উচিত একজন মা তার সন্তানকে উৎসাহিত করার জন্য নিজেই খেলছেন। এটাই বড় বার্তা। তার পোশাক নয়। কারণ আমাদের মায়েরা তো ক্রিকেট খেলেন না। এটাও তো একটা অনিয়মিত ঘটনাই বলা চলে।" "পোশাক নিয়ে বিতর্কটা আসলে অহেতুক বিতর্ক বলেই আমি মনে করি।" এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন এটা আমাদের তৈরি করা নারীর ইমেজের ব্যাপার। "এই বিতর্ক তৈরি হয়েছে কারণ বোরকা নিয়ে আমাদের চিন্তা-জাগতিক যে ইমেজ আমরা তৈরি করে রেখেছি সেটার সাথে খাপ খাচ্ছে না।" তিনি বলেন, সমাজে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে বোরকা মানেই রক্ষণশীলতা, বোরকা মানেই মৌলবাদিতা। এই চিত্রগুলো মানুষের মনে গেঁথে দেয়া হয়েছে। "একজন বোরকা পড়া নারীকে আমরা দেখি যে, সে রক্ষণশীল হবে, সে ঘরেই থাকবে, সে বাইরে যাবে না, সে ক্রিকেট খেলবে না। বোরকা নিয়ে আমাদের মনো-জাগতিক একটা চিত্র আছে। সেজন্যই এই আলোচনাটা তৈরি হয়েছে।" বাঙালির পোশাক কী? আদিকাল থেকে বাঙালি জাতিগোষ্ঠী কী ধরণের পোশাক পরতো সে বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক অধ্যাপক ড, মেসবাহ কামাল বলেন, আগে থেকে বাঙালি নারীদের পোশাক ছিল শাড়ি আর পুরুষের পোশাক ছিল লুঙ্গি যেটি মালকোঁচা দিয়ে পরা হতো। ভারতীয় উপমহাদেশের এই অঞ্চলে কৃষিকাজের প্রাধান্য থাকায় এমন পোশাক হওয়ার কথা জানান তিনি। নারীরা শাড়ির সাথে নানা অনুসঙ্গ ব্যবহার করেন। যার কারণে আদিকালের শাড়ির সাথে সাম্প্রতিক কালের শাড়ির অনেক পার্থক্য রয়েছে। তিনি বলেন, নব্য প্রস্তর যুগের সংস্কৃতি যেমন লাঙল চাষ, আদি বাসিন্দাদের সিঁদুর পরা-এগুলো এখনো দেখা যায়। পাহাড়পুরের পালযুগের নির্মিত বৌদ্ধ বিহার খননে যে টেরাকোটা প্লেটসগুলো আছে, সেখানে মানুষের পোশাক বলতে লুঙ্গির উল্লেখ দেখা যায়। তবে সেটা মালকোঁচা মারা লুঙ্গি। "ওদের মধ্য থেকেই বাঙালি তৈরি হয়েছে। তাই বাঙালির পোশাক হিসেবে নারী ও পুরুষের পোশাক হিসেবে আমরা শাড়ি ও লুঙ্গি দেখি," মি. কামাল বলেন। লজ্জা নিবারণ ছাড়াও জলবায়ু, পরিবেশ, আরাম, সামাজিক অবস্থা, বিশ্বায়ন- সব কিছুর সাথে পোশাক বার বার পরিবর্তিত হয়েছে। "শাড়ির দৈর্ঘ্যে পরিবর্তন এসেছে, এটা বেড়েছে। বাঙালি নারীরা ব্লাউজ পরতো না। রবীন্দ্রনাথের যুগ থেকে এটা শুরু হয়। শাড়ি এবং এর সাথে অনুষঙ্গ অন্য জিনিসের সমন্বয়ে একটা পরিশীলিত রূপ পেয়েছে।" একই মত দিয়েছেন নৃ-বিজ্ঞানের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরীনও। তিনি বলেন, বাঙালি নারীরা শাড়ি আর পুরুষরা লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পড়তো। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষের পেশা ছিল কৃষিকাজ। আর তার সাথে মানানসই পোশাকই ছিল লুঙ্গি। তবে শাড়ির সাথে ব্লাউজ এবং পেটিকোটের ধারণা অনেক বেশি সাম্প্রতিক বলে জানান তিনি। আগে বাঙালি নারীরা শাড়ির সাথে ব্লাউজ ও পেটিকোট পরতো না। তিনি জানান, ব্লাউজ ও পেটিকোটের ধারণা ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা নিয়ে এসেছে। আর এটা এসেছে ভিক্টোরিয়ান নোশন থেকে। "স্কার্টের ধারণা থেকে উপমহাদেশে এসেছে পেটিকোট আর টপসের ধারণা থেকে এসেছে ব্লাউজ," তিনি বলেন। পশ্চিমা পোশাকের একটি সংস্করণ একটা সংস্কৃতি তার নিজের সাথে সামঞ্জস্য করে নিজের মতো তৈরি করে। যার ফলশ্রুতিতে ব্লাউজ আর পেটিকোট আসে। বোরকা কীভাবে বাঙালি সংস্কৃতিতে আসলো? বাংলাদেশ বোরকা, নেকাব, পর্দা অনেকগুলো ধারণা প্রচলিত রয়েছে। নেকাব দিয়ে সাধারণত মেয়েরা মুখ ঢেকে রাখে। নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, নেকাবের ধারণা এদেশে এসেছে উচ্চবংশীয় মুসলিমদের মধ্য থেকে। "আগে বলা হতো যে সৈয়দ পরিবারের মেয়েরা নেকাব পরবে। মাথা ও মুখ ঢেকে চলাফেরা করবে। এর কারণ হচ্ছে, সে কী করছে, কোথায় যাচ্ছে সেটা যাতে অন্যরা না দেখতে পায়।" উচ্চবংশের মানুষেরা গোপনীয়তা রক্ষার জন্য নেকাব পরতো। একই রকম বোরকাও ছিল উচ্চবংশীয় নারীদের প্রতীক। আর পর্দার ধারণা আসলে মুসলিমদের সাথে এককভাবে যুক্ত নয়। এটি নানা ভাবে এসেছে এবং একে শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার উপায় নেই বলে মনে করেন নৃবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ভারতের গুজরাট এলাকার নারীরা বড় করে ঘোমটা টানে। পর্দা করে। আবার খ্রিস্টান ধর্মে নানরা মাথা ঢেকে রাখে। "সংস্কৃতির অংশ হলে দেখা যায় যে, নারীরা বয়োজ্যেষ্ঠ কারো সামনেও ঘোমটা টানতো, এটা শুধু ধর্মের সাথে যুক্ত নয়," তিনি বলেন। তিনি বলেন, ৩০-৩৬ বছর আগেও একেক জেলার মানুষ একেক ধরণের বোরকা পরতো। দক্ষিণ বঙ্গের নারীরা বোরকা পরার পর সাথে অতিরিক্ত একটি ছাতা রাখতো। পুরুষদের দেখলে তারা সেটি তাদের দিকে ধরতো আড়াল করার জন্য। তবে সমসাময়িক সময়ে নানা কারণে মানুষ বোরকা পরে বলে জানান তিনি। বছর দশেক আগে নিজের করা এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, তিনি তার গবেষণায় দেখেছেন যে, সমাজের আদর্শ নারীর চাহিদা পূরণ করতে বোরকা পরে অনেকে। অনেকে আবার নিরাপত্তার জন্য বোরকা পরেন। এটা সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছিল অ্যাসিড হামলার সময়টাতে। আর বর্তমান সময়ে অনেক নারীই অর্থনৈতিক অসঙ্গতি লুকাতেও বোরকা পরে থাকেন বলে জানান ড. জোবাইদা নাসরীন। | রাজধানীর পল্টন এলাকার একটি মাঠে ছেলের সাথে এক মায়ের ক্রিকেট খেলার একটা ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | বলছিলাম রুশ নারীদের কথা। সারা পৃথিবী ঘুরে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি, কিন্তু রাশিয়া এসে রাশিয়ান মেয়েদের দেখে আমি মুগ্ধ । তাদের চালচলনে, পোশাকে,ব্যক্তিত্বে, হাঁটা-চলায় সব কিছুর মধ্যেই একটা স্টাইল আছে। মেরুদণ্ড টান টান করে হাতে ব্যাগ, কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে রুশ কন্যাদের হেঁটে চলা। মস্কোয় এই দৃশ্য এখানে রোজকার। স্টাইল: মেরুদণ্ড টান টান করে হাতে ব্যাগ নিয়ে রুশ মেয়েদের হেঁটে চলা মস্কোতে এখন রোজকার দৃশ্য । রাস্তা-ঘাটে,মেট্রোতে, বাসে, ক্যাম্পাসে, হোস্টেলে -- সবখানেই দেখেছি এরা হেঁটে চলে নিজেদের মতো করে। কারো সাথে কোন ইন্টারেকশন নাই। মাঝেসাঝে আড় চোখে তাকায়। এটাই এখানকার নিয়ম। অপরিচিত কারো সাথে সৌজন্যমূলক হাসি বা কথা নেই। কারণ তারা মনে করে, অপরিচিত কারো দিকে তাকিয়ে নাকি বোকারা হাসে। তারা মনে করে , হাসলে নাকি তারা মনে করে হাস্যজ্জ্বল মানুষটি হয় বোকা, নয় যাকে দেখে হাসি দিচ্ছে তাকে ব্যঙ্গ করছে। তারা কখনো অচেনা কাউকে দেখে হাসি দেয়না । স্বনির্ভর রুশ নারী উনিশ শতকের কবি নিকোলাই নেক্রাসোভ একজন রুশ নারীর স্বনির্ভর এবং শক্তিশালী ইমেজ বোঝাতে বলেছিলেন, "একজন রুশ কন্যা দৌড়ানো ঘোড়া থামিয়ে দিয়ে জ্বলন্ত ঘরে প্রবেশ করতে পারে।" রুশ নারী এতোটাই স্বাবলম্বী যার সত্যি কোন সাহায্য এবং প্রোটেকশন এর দরকার হয়না পুরুষের কাছে। এদেশে নারীরা স্বনির্ভর প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে। পুরুষদের চাইতে এখানে নারীরাই বেশি কর্মঠ। পলিক্লিনিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে, এমব্যাসিতে, ব্যাঙ্কে -- বেশির ভাগ কর্মী নারী। এমনকি এখানে বাস-ট্রাক-কার নারীরাই চালায়। কবি নিকোলাই নেক্রাসোভ রুশ নারীকে শক্তিশালী এবং স্বনির্ভর হিসেবে দেখতেন। তাহলে বুঝুন তাদের প্রভাব কতটুকু রাশিয়াতে। রাশিয়ায় পুরুষের তুলনায় দুই কোটি বেশি নারী রয়েছে (অর্থাৎ, প্রতি ছয় জন পুরুষের বিপরীতে সাত জন নারী।) তবে এর পেছনে কারণও আছে । এর মুল কারণটি হল পুরুষরা নারীদের চেয়ে অনেক কম বয়সে মারা যান। দেবুশকা আর বাবুশকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পুরুষদের তুলনায় আরো অনেক নারী বেঁচে ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পুরুষদের মৃত্যুর ফলস্বরূপ, ১৯৪৬ সালে কর্মক্ষম বয়সী মহিলারা পুরুষের চেয়ে দুই কোটি বেড়েছে। আর এখানে তাই নারীদের প্রভাব বেশি। 'দেবুশকা' এবং 'বাবুশকা' এই দুটো বিশেষণে রুশ নারীদের ডাকা হয়। আমাদের দেশে নারী, মহিলা, কিশোরী, তরুণী যাই বলি না কেন। এদেশে সকল নারীদের 'দেবুশকা' বলা হয়। আর বুড়িদের ডাকা হয় 'বাবুশকা' (দিদিমা) বলে। যুদ্ধের প্রভাব: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একদল সোভিয়েত নারী ১৯৪১ সালে মস্কোর লড়াইয়ে সহায়তা করছেন। কিন্তু রুশ নারীরা বয়স বাড়লেও বুড়ি হতে চায়না। তাই অচেনা কোন বয়স্ক নারীকে আপনি বাবুশকা ডাকলেই বিপদ। রুশ ভাষায় আচ্ছা মতো আপনাকে ঝেড়ে দেবে। তারচে তাকে দেবুশকা ডাকবেন নিরাপদ থাকবেন। ফলে ৭০ বছরের বুড়িদের চাইতে একটু কম বয়স্ক মহিলাও এখানে 'দেবুশকা' । আমাদের দেশে বুড়ি কেন নারীদের জন্যও বাসে সিট ছেড়ে না দিলে মহিলারা মাইন্ড করেন। আর এখানে উলটো। আপনি যদি কোন নারীর জন্য সিট ছেড়ে তাকে বসার জন্য অফার দেন অনেক নারী মাইন্ড করেন। আর অনেকে বসবে ঠিকই, কিন্তু আবার বসতে বসতে ভাববে যে তাকে কি বুড়ি ভেবে বসতে দেয়া হলো!! বাবুশকাদের জীবন: অনেক প্রবীণ রুশ নারীকে রাস্তায় ফুল বেঁচে জীবিকা চালাতে হয়। শিল্প সাহিত্যের দেশের রুশ কন্যারা ফুল ভালোবাসে। আর ভালোবাসে চকোলেট । রুশ কন্যাদের খুশি করতে চাইলে এই দুটো জিনিস অবশ্যই তাকে দেবেন। এমনকি কোন রুশ পরিবারে আপনি নিমন্ত্রিত হলেন অবশ্যই বাসার নারী আর বাচ্চার জন্য ফুল অথবা চকোলেট নিয়ে যেতে হবে। নইলে এরা অতিথিকে অসামাজিক ভাবে। আর প্রিয়জনের জন্য ফুলের তোড়া কেনার আগে এটা মনে রাখতে হবে তারা কেবল অড নাম্বার অর্থাৎ বেজোড় সংখ্যক ফুল উপহার দেয়। তবে হলুদ ফুল ভুলেও দেবেন না। তারা মনে করে এটা বিচ্ছেদের লক্ষণ। বন্ধু, প্রতিবেশী বা সহকর্মীদের নিমন্ত্রণে রাশিয়ানরা কখনই খালি হাতে যান না। চকোলেট বক্স, মদের বোতল, কেক অথবা ফুল নিয়ে যাওয়া রুশদের ট্র্যাডিশন। আর বাইরে কোথাও দেখা করলে ক্যাফে অথবা রেস্তোরাঁতে, সেখানে নারী-পুরুষের মধ্যে খাবার বিলটা অবশ্যই পুরুষ দেবে। এটাই এখানকার রীতি। মস্কো নারী আরামের চেয়ে স্মার্ট লাগাটা বেশি জরুরী মনে করে। মস্কোর নারী সৌন্দর্য সচেতন মস্কোর নারীরা সৌন্দর্যের ব্যাপারে খুব সচেতন। তারা নিজেদের পরিপাটী ও পরিমার্জিত রাখতে ভালোবাসে । তারা নিজের আরামের চেয়ে স্মার্ট লাগাটা বেশি জরুরী মনে করে। হাই হিল পরা অসুবিধা বুঝেও তারা হাই হিল পরতে ভালোবাসে। অনেকে কর্মস্থলে এক ড্রেস দ্বিতীয়বার পরে না। মস্কো শহর জুড়ে যেখানে সেখানে আছে ম্যানিকিউর-পেডিকিউর করবার স্যালুন। রুশ নারীরা হাত এবং পা-এর খুব যত্ন নেয়। তাদের কথা হচ্ছে, 'যদি তুমি সুন্দর হয়ে থাকার সুযোগ পাও তাহলে কেন সেই অপশনটা বেছে নেবে না?' তারা মনে করে, বিউটি ইজ পাওয়ার এন্ড রেসপেক্ট। আবার অন্যদিকে রাশিয়ান নারীরা ন্যাগার (ঘ্যান ঘ্যান করা) এবং কমপ্লেইনার হিসেবে পরিচিত। মস্কোর মহিলাদের মাতাল হওয়ার জন্যও খ্যাতি রয়েছে। তবে উল্টোটাও আছে। মস্কোর অনেক রুশ পরিবারে মেয়েদের সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে হয়, তা না হলে মায়ের বকুনি খেতে হয়। আমার জানা এক মেয়ে দাশা, সে চাকরি করে পড়াশোনা করছে, কিন্তু বাসায় ফিরতে হয় রাত আটটার মধ্যে। এটাই পরিবারের নিয়ম। শুধু দাশার পরিবারই নয়, এমন অনেক রক্ষণশীল পরিবার এখানেও আছে। সুতরাং আমরা যারা ভাবি যে বিদেশি মানেই যা ইচ্ছে তাই করে, সেটা ঠিক নয়। এখানে প্রচুর চার্চ রয়েছে। প্রতি শনি ও রবিবার চার্চ ভর্তি রাশান নারীদের প্রার্থনা করতে দেখা যায়। রুশ নারীদের আবেগ বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। রুশ কন্যারা খুব সেনসিটিভ। তারা প্রবল আবেগী। বাইরে থেকে বুঝার উপায় নেই। তারা চায় তার প্রেমিক পুরুষটি পৃথিবীর অন্য সব পুরুষের চাইতে আলাদা হবে। সম্ভবত সব চেয়ে প্রতিভাবান, সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বুদ্ধিমান। প্রত্যেকটা রুশ কন্যা নিজেকে ভাবে রানীর মতো, যে কিনা বেছে নেবে এমন এক পুরুষকে যে তার স্বপ্নের পুরুষ, যে তাকে আগলে রাখবে, ভালবাসবে শ্রদ্ধা ও যত্ন করবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ সে নিজেকে মূল্যবান মনে করে ততোটাই। একই সাথে তারা ডিমান্ডিং। কোন রুশ কন্যার মন জয় করতে চাইলে ঝাঁপিয়ে পড়ুন পানিতে পড়ে যাওয়া বিড়াল ছানাটিকে বাঁচাতে, কিংবা ক্ষুধার্ত কুকুরের হাত থেকে বাঁচান দুর্বল হাঁস ছানাটিকে অথবা বাসে কোন বৃদ্ধ লোকের জন্য নিজের সিটটি ছেঁড়ে দিন। মোট কথা ইমপ্রেস করা। এটা সব দেশের নারীদেরই স্বপ্ন। তবে রুশ কন্যাদের সব কিছুতেই একটু বেশীই ডিম্যান্ড। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক তার উল্টোটাই। 'চড় মারা স্বাভাবিক' রাশান পুরুষরা ঠিক এর উল্টোটাই আশা করে। বেশিরভাগ রুশ পুরুষই মনে করে বউরা তাদের নির্যাতন সহ্য করবে, এটাই স্বাভাবিক। দস্তয়েভস্কি, চেখভ, এবং গোর্কির গল্পেও উল্লেখ আছে: একজন মহিলাকে চড় মারা স্বাভাবিক। এটি জীবনের অঙ্গ। এখানকার জনগণ গৃহস্থালি সহিংসতাকে অপরাধ বলেই মনে করেনা। তারা মনে করে এটা সোশ্যাল নর্মস। আর সে কারণেই রাশিয়ার পুরুষদের পক্ষে মহিলাদের মারধর করা স্বাভাবিক ঘটনা। ফলে ১৯৯৪ সালের আগে নির্যাতিতা মহিলাদের জন্য মস্কোতে কোন হটলাইন চালু হয়নি । একটু ধাক্কা খাওয়ার মতোই ঘটনা তাই না? আমারো মানতে কষ্ট হয়েছিল স্বনির্ভর আত্মনির্ভরশীল নারী হওয়া স্বত্বেও রুশ নারীদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে পুরুষ শাসিত সমাজ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, সমাজে রাশিয়ান নারীদের এত দাপুটে চলার আড়ালেও লুকিয়ে আছে অনেক কঠিন সত্য। আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার মতো রাশিয়ার জীবনব্যবস্থাও পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। নারীরা সামাজিকভাবে নির্ভরশীল। (আগামী সপ্তাহে শাকিলা সিমকীর লেখার দ্বিতীয় পর্বে থাকবে রুশ নারীদের ওপর পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যের প্রভাব) | মস্কোতে প্রথম যখন পা রাখি, মফস্বল থেকে আসা কোন ব্যক্তি যেমন হা-করে ঢাকার শহর দেখে, আমি এখানে এসে দেখছিলাম মস্কোর অপ্সরাদের। পুরো মস্কো জুড়ে এতো অপ্সরা ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ কারো কোন মাথা ব্যথা নেই বা মাথা নষ্ট হচ্ছে না। সব স্বাভাবিক। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | ভারতে সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি টিকা 'কোভিশিল্ড' বিভিন্ন ধরণের তথ্য ও নির্দেশনা থাকার কারণে অনেক সময়ই এগুলো বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু টিকা সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য রয়েছে যা জানা থাকলে এ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা সম্ভব। ভ্যাকসিন বা টিকা কী? টিকা মানুষের দেহকে নির্দিষ্ট কোন একটি সংক্রমণ, ভাইরাস কিংবা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত করে। টিকায় মূলত যে বস্তুটির কারণে ওই রোগটি হয় তার একটি নিষ্ক্রিয় বা দুর্বল অংশ থাকে যাকে "ব্লু-প্রিন্ট" বলা হয়। এই অংশটি দেহে একই রকমের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পরবর্তীতে ওই ভাইরাসের আক্রমণ শনাক্ত করতে সাহায্য করে এবং সেটির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। টিকার কারণে খুব বেশি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম তবে অনেকের মধ্যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন, হাতে ব্যথা বা হালকা জ্বর। তবে এর পরের ধাপ হচ্ছে, আপনি ওই রোগটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা অর্জন করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি'র মতে ভ্যাকসিন বা টিকার সবচেয়ে শক্তিশালী বিষয়টি হচ্ছে, অন্য ওষুধগুলো যখন কোন একটি রোগের প্রতিকার করে বা সারিয়ে তোলে, টিকা সেখানে ওই রোগটিকেই প্রতিরোধ করে। টিকা কি নিরাপদ? টিকার একটি আদি রূপ আবিষ্কৃত হয়েছিল ১০ম শতকে চীনে। তবে ১৭৯৬ সালের আগে এটি স্বীকৃতি পায়নি। সেবছর এডওয়ার্ড জেনার দেখেন যে, কাউপক্স বা গোবসন্ত রোগের মৃদু সংক্রমণ গুটি বসন্ত রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। তিনি তার এই তত্ত্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দুই বছর পর গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কার করেন এবং তখন থেকে ল্যাটিন শব্দ "ভ্যাকা" থেকে ভ্যাকসিন শব্দটির উৎপত্তি হয়। ল্যাটিন ভাষায় ভ্যাকা শব্দটির অর্থ হচ্ছে গরু। আধুনিক বিশ্বের চিকিৎসা দুনিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ধরা হয় ভ্যাকসিন বা টিকাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভ্যাকসিন বা টিকার কারণে সারা বিশ্বে প্রতিবছর অন্তত ২০-৩০ লাখ মৃত্যু প্রতিরোধ করা এবং ২০টির বেশি রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। সিডিসি বলছে যে, কোন টিকা বাজারে আনার আগে সেগুলো নানা ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মানবদেহে প্রয়োগের আগে সেগুলো ল্যাবে প্রাণীর উপর পরীক্ষা করা হয় এবং সেটা নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের অনুমোদন নেয়া হয়। ঝুঁকি আছে, কিন্তু ওষুধের তুলনায় ঝুঁকির চেয়ে সুবিধাই বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গুটি বসন্তের কথা যাতে কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে। যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে টিকার কল্যাণে। তবে এ ধরনের সাফল্য অর্জন করতে কয়েক দশকও লেগে যায়। গত বছরের অগাস্টে মাত্র আফ্রিকাকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এই রোগের টিকাদান কর্মসূচি সারা বিশ্বে শুরু হয়েছে আরো ৩০ বছর আগে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে, সারা বিশ্বের মানুষকে কোভিড-১৯ এর টিকা দেয়া এবং এর মাধ্যমে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে কয়েক মাস এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে। টিকা কীভাবে তৈরি হয়? কোন একটি রোগের জীবাণু যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্যারাসাইট কিংবা ফাঙ্গাস যখন শরীরে প্রবেশ করে তখন এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শরীরের অ্যান্টিজেন উপাদানটি অ্যান্টিবডির উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। সচরাচর, দৈনন্দিন জীবনাচরণের সময় কোনো দেহে জীবাণু প্রবেশ করার আগে অ্যান্টিজেনের একটি নিষ্ক্রিয় বা দুর্বল অংশ দেহে প্রবেশ করিয়ে দেয় টিকা। তখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ওই আসল জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং প্রতিহত করে। নতুন এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই আসলে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরি করা হয়েছে। কোভিডের টিকা কীভাবে তুলনা করা হয়? ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্না দুটি টিকাই মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন যা ভাইরাসের জেনেটিক কোড ব্যবহার করে। দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিজেন ব্যবহারের পরিবর্তে এই টিকাগুলো দেহের কোষকে শেখায় যে কিভাবে একটি "স্পাইক প্রোটিন" তৈরি করতে হবে। এই স্পাইক প্রোটিনটি কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপরিভাগে থাকে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যে অ্যান্টিবডি দরকার হয় সেটি তৈরি করতে সাহায্য করে এই প্রোটিন। টিকাগুলো দেহের কোষকে শেখায় যে কিভাবে একটি "স্পাইক প্রোটিন" তৈরি করতে হবে। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন আবার আলাদা- শিম্পাঞ্জিকে আক্রান্ত করতো যে সাধারণ সর্দি লাগার ভাইরাস বিজ্ঞানীরা সেটিকে কিছুটা রূপান্তরিত করে তার সাথে কোভিড-১৯ ভাইরাসের জেনেটিক কোডের কিছু অংশ জুড়ে দিয়েছেন। এই তিনটি টিকাই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের জন্য অনুমোদিত। মেক্সিকো, চিলি এবং কোস্টারিকায় ফাইজার টিকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ব্রাজিলে অক্সফোর্ড ও সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের অনুমোদন রয়েছে। আরো কী কী কোভিড ভ্যাকসিন রয়েছে? বেইজিং ভিত্তিক সিনোভ্যাক এর তৈরি করা করোনাভ্যাক নামের টিকা এরইমধ্যে চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপিন্সে দেয়া শুরু হয়েছে। এই টিকাটি প্রচলিত পদ্ধতি অর্থাৎ ভাইরাসের মৃত বা নিষ্ক্রিয় অংশ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। তবে এই ভ্যাকসিনটির কার্যক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালের তথ্য আসার পর এই প্রশ্ন ওঠে। আর ব্রাজিলের গবেষকরা এরই মধ্যে বলেছে যে এই টিকাটি মাত্র ৫০.৪% কার্যকর। ভারতে কোভিশিল্ড নামে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মিলে এই ভ্যাকসিনটি উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া ভারত বায়োটেক নামে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান কোভ্যাক্সিন নামে একটি টিকা উৎপাদন করছে। রাশিয়া তাদের নিজেদের তৈরি ভ্যাকসিন ভেক্টর ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি ব্যবহার করছে। যা ভাইরাসের একটি ভার্সন বা রূপ থেকেই বানানো হয়েছে। এই টিকাটি আর্জেন্টিনায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে। এরইমধ্যে টিকাটির ৩ লাখ ডোজ অর্ডার করেছে দেশটি। ফাইজার, ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন এন্ড জনসনের প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ডোজ টিকা কেনার অর্ডার দিয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়ন। তবে জনসন এন্ড জনসন কোম্পানির টিকাটি এখনো ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে। তবে গ্লোবাল কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় আরো ৬০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়নের। কোভ্যাক্স কর্মসূচিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং গাভি নামে একটি ভ্যাকসিন অ্যালায়্যান্সের যৌথ তত্ত্বাবধানে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য টিকা নিশ্চিত করতে পরিচালিত হয়। এখন পৃথিবীবাসীর আগ্রহের মূলে রয়েছে ভ্যাকসিন আপনার কি টিকা নেয়া উচিৎ? বিশ্বের কোথাও এখনো টিকা নেয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে কোন ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকলে সবাইকেই এই টিকা নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সিডিসি বলছে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয় এই টিকা। সেই সাথে অন্যকে সুরক্ষিত রাখতেও সহায়তা করে। এই টিকাকে মহামারি থেকে উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, সংক্রমণ ছড়ানোকে বাধাগ্রস্ত করতে হলে ৬৫% থেকে ৭০% মানুষের টিকা নিতে হবে। তার মানে হচ্ছে মানুষকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অনেক মানুষ অবশ্য যে দ্রুততার সাথে কোভিড এর টিকা উদ্ভাবন করা হয়েছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও এটা সত্য যে, বিজ্ঞানীরা একটা টিকার নকশা ও ট্রায়াল করতে কয়েক বছর পার করে দেন, তবে একটি সমাধান খুঁজে পাওয়ার পক্ষে বৈশ্বিক স্বার্থ কাজ করার কারণে করোনা টিকার উৎপাদন দ্রুততর হয়েছে। আর এই কাজটি করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিজ্ঞানী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয় করেছে। সংক্ষেপে, টিকাদান কর্মসূচি কোটি কোটি মানুষের মধ্যে কোভিডের সংক্রমণ ঠেকিয়ে দেবে এবং হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের পথ তৈরি করবে। এটা আমরা যত দ্রুত অর্জন করতে পারবো তত দ্রুত আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো। টিকা দেবার পরও হাজার হাজার লোক করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়েছেন করোনাভাইরাসের কতগুলো টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে? বৈশ্বিকভাবে ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে নেমেছে ২শ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, তাদের তালিকায় প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে ১৫৪টি ভ্যাকসিন। এছাড়া ফেস-ওয়ানে ছোট আকারে নিরাপত্তা নিয়ে ট্রায়ালে রয়েছে ২১টি ভ্যাকসিন। ফেস টু-তে নিরাপত্তা ট্রায়ালে রয়েছে ১২টি এবং ফেস-থ্রি-তে বিস্তারিত পরীক্ষা এবং কার্যকারিতার ট্রায়ালে রয়েছে আরো ১১টি ভ্যাকসিন। আরো যেসব টিকার ট্রায়াল এখনো চলছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাশিয়ার স্পুটনিক ভি। বলা হচ্ছে এটি অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের মতোই কাজ করবে এবং এটি ৯২% সুরক্ষা দেবে বলে এখনো পর্যন্ত জানানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যে ৬ হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা করা হচ্ছে জ্যানসেন'স নামের একটি টিকা। পুরো বিশ্বে এই টিকার ট্রায়ালে অংশ নিয়েছে ৩০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী। চীনের সিনোফার্ম ও উহান ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস চূড়ান্ত ট্রায়ালে রয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার গামেলিয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউটেরও একটি ভ্যাকসিন ট্রায়ালে রয়েছে। কোন কোন দেশে টিকা দেয়া হচ্ছে? করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলে এখনও পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। সারা বিশ্বে টিকা দেওয়ার এটাই সর্বোচ্চ হার। ইসরায়েলের একটি হাসপাতালে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষা ইসরায়েলে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১১.৫৫ জনকে এই টিকা দেওয়া হয়েছে। তার পরেই রয়েছে বাহরাইন। সেদেশে এই হার ৩.৪৯। তৃতীয় স্থানে ব্রিটেন, হার ১.৪৭। ফ্রান্সে ৩০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১৩৮ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট ছিল ২০২০ সালের মধ্যে দুই কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া, কিন্তু ৩০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা প্রায় ২৮ লাখ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে। আরো পড়ুন:কোন দেশে কতো মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে কোন টিকা দেয়া হচ্ছে? ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড দেয়া হবে। ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে এই টিকাটি আনা হচ্ছে। সিরাম ইন্সটিটিউট এই টিকাটি উৎপাদনে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ভারতে তারাই এই টিকাটি উৎপাদন করছে। সিরাম ইন্সটিটিউট- যারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্ততকারক, তারা প্রতিমাসে পাঁচ কোটি টিকা তৈরি করছে। ভারতে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড এর মধ্যেই বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার ও সেশেলসে পাঠানো হচ্ছে। এসব চালানের কোনটি যাচ্ছে উপহার হিসেবে, আর কোনটি সিরাম ইন্সটিটিউটের সাথে করা বাণিজ্যিক চুক্তির অধীনে। এ ছাড়াও ভারত কোভিশিল্ড পাঠাচ্ছে শ্রীলংকা, আফগানিস্তান ও মরিশাসে। ব্রাজিলে এ টিকা পাঠানো হবে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি অনুযায়ী। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কৃত এই কোভিশিল্ড নামের টিকা তৈরি করেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট কোভিশিল্ড কতটা কার্যকর? কোভিশিল্ড দেয়া হলে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে এবং যে কোন রকম করোনাভাইরাস দেহে ঢুকলে তাকে আক্রমণ করতে শিখে যায়। চার থেকে ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজটি দেয়া হয়, এবং এটি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়- ফলে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার চেয়ে এটি সহজে বিতরণযোগ্য। আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি প্রথমে আধা ডোজ এবং পরে পুরো ডোজ দেয়া হলে তার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হয়। তবে এই পদ্ধতিতে টিকাটি দেবার পক্ষে যথেষ্ট স্পষ্ট উপাত্ত নেই। সিরাম ইন্সটিটিউট বলছে, কোভিশিল্ড উচ্চ মাত্রায় কার্যকর এবং ব্রাজিল ও যুক্তরাজ্যে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের উপাত্তে তার সমর্থন মিলেছে। আরো পড়ুন: ভারতের কোভিড টিকাগুলো সম্পর্কে আমরা কতটা জানি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি? এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন একটা নিরাপদ ভ্যাকসিন। তবে ভ্যাকসিন নেয়ার পরে কারো কারো ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ভ্যাকসিন প্রয়োগের জায়গায় ফুলে যাওয়া, সামান্য জ্বর হওয়া, বমি বমি ভাব, মাথা ও শরীর ব্যথা। ফাইজার, অক্সফোর্ড ও মডার্নার টিকার ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা বলা হচ্ছে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের মধ্যে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলে বলা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, টিকার স্থানে ব্যথা, ফোলা বা লাল হওয়া, মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, জ্বর, শীতল অনুভূতি, মাথাব্যথা ও ক্লান্তি। তবে এগুলোকে টিকা শরীরে সাথে মানিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি বলেই ধরা হয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বে যেসব স্থানে টিকা দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ভারতে টিকা কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ১৮ই জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চারশো জনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। টিকা দেয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে একজনের মৃত্যুর খবরও শোনা গেছে। তবে ভারতের কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে ওই মৃত্যুর সাথে টিকার কোন সম্পর্ক নেই। বিস্তারিত খবর এখানে: ভারতে টিকা নেয়া সাড়ে চার’শ মানুষের শরীরে প্রতিক্রিয়া, একজনের মৃত্যু বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, দেশটিতে বিনামূল্যের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর টিকা গ্রহণকারী কারো মধ্যে যদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ভারতে উৎপাদিত কোভ্যাক্সিন টিকা বাংলাদেশে কারা প্রথম টিকা পাবেন? টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে ১৭টি ক্যাটাগরির নাগরিকদের নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমে তাদের টিকা নেয়ার পরে অন্যরা টিকা নেয়ার সুযোগ পাবেন। এই ১৭টি ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে: সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মী, বেসরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকল সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, সম্মুখ সারির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম-কর্মী, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, সৎকারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, নৌ-রেল-বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক। আরো পড়ুন: দাম কত হবে, আর কারা পাবেন না করোনার টিকা স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে এমন ৬৫ বছর বয়স্ক ব্যক্তিরা দ্বিতীয় ধাপে টিকা পাবেন। টিকা নেয়ার আগে কী কী জানা জরুরি? ব্রিটেন ও আমেরিকায় যে টিকাগুলো অনুমোদন পেয়েছে সেখানে টিকা সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নিতে বলা হচ্ছে। যেমন কোন কোন সমস্যা থাকলে টিকা নেয়ার আগে সতর্ক থাকতে হবে সে বিষয়গুলো জানা থাকতে হবে। টিকা নেয়ার আগে চিকিৎসককে জানাতে হবে যে আপনার কোন স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কিনা বা আপনি কোন রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন কিনা। যেমন, আগে কোন টিকায় তীব্র এলার্জি দেখা দেয়া, তীব্র জ্বরসহ অসুস্থতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা, ক্যান্সারের চিকিৎসা চলা, রক্তপাত বা আঘাতের কোন সমস্যা থাকা, গুরুতর অসুস্থতা, গর্ভবতী বা শিশুকে বুকের দুধ পান করাচ্ছে কিনা- এবিষয়গুলো জানা থাকতে হবে। আর যে টিকা আপনি নিতে যাচ্ছেন সেগুলোর সাধারণ কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা সে বিষয়টিও জেনে নেয়ার চেষ্টা করুন। এ বিষয়ে আরো জানতে চাইলে দেখুন: টিকা নিতে আগ্রহী হলে যেসব বিষয় আপনার জানা থাকা জরুরি টিকার জন্য যেভাবে নিবন্ধন করা যাবে বাংলাদেশে টিকা নিতে হলে প্রথমেই নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। এর আগে এ বিষয়ক একটি অ্যাপ চালু হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সেটি আর কাজ করছে না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক(এমআইএস) ডা. মিজানুর রহমান বলেন, অ্যাপটি এখনো তাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি বলে কাজ শুরু হয়নি। তবে এটি শিগগিরই চলে আসবে। ওয়েব সাইটে নিবন্ধন করতে হলে প্রথমে নিজের পেশার ধরন, পেশা বাছাই করার পরে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ দিতে হবে। বাংলা ও ইংরেজি, উভয় ভাষায় এই ওয়েবসাইটে তথ্য পূরণ করা যাবে। ওয়েব অ্যাপলিকেশনে নিবন্ধন করতে হলে তাদের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে। নিবন্ধন করার সময় তার নাম, বয়স, পেশা, এনআইডি নম্বর, ঠিকানা (সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভার ওয়ার্ড), যে কেন্দ্রে টিকা নিতে আগ্রহী - সেই কেন্দ্র নির্ধারণ করে দিতে হবে। তবে এজন্য কোন স্ক্যান করা কপি বা ছবি দিতে হবে না। নিবন্ধনের জন্য কোন খরচ বা ফি নেই। একটি এনআইডি নম্বর থেকে একবারই নিবন্ধন করা যাবে। যেকোনো ব্যক্তি তার কম্পিউটার ব্যবহার করে এই নিবন্ধন করতে পারবেন। নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর একটি ভ্যাকসিন কার্ড আসবে। সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। টিকা নেয়ার সময় এই কার্ডটি দরকার হবে। আরো পড়ুন: করোনাভাইরাসের টিকা নিতে হলে যেভাবে নিবন্ধন করতে হবে ওয়েবসাইটে টিকা নিতে আগ্রহীদের নাম নিবন্ধন করতে হবে। স্পট রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করবেন? করোনাভাইরাসের টিকা পেতে নিবন্ধন করা নিয়ে ঝামেলার মুখে পড়ার অভিযোগের ভিত্তিতে নিবন্ধনের কাজ সহজ করতে কিছু পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তার মধ্যে একটি হচ্ছে স্পট রেজিস্ট্রেশন বা টিকা কেন্দ্রে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন। এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক(এমআইএস) ডা. মিজানুর রহমান বলেন, নিবন্ধন নিয়ে যেহেতু কিছু সমস্যার কথা জানা যাচ্ছে তাই এই পদ্ধতিটিকে আরো সহজ করা হয়েছে। তিনি জানান, আগে থেকে নিবন্ধন করা না থাকলেও এখন সরাসরি টিকা কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করে তারপর টিকা নেয়া যাবে। সেক্ষেত্রে টিকা নেয়ার জন্য শুধু ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে গেলেই চলবে। টিকা কেন্দ্রে উপস্থিত নির্ধারিত ব্যক্তি এই নিবন্ধনের কাজে টিকা গ্রহণকারীকে সহায়তা করবেন। এছাড়া চাইলে টিকা গ্রহণকারী নিজেও টিকা কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা কেন্দ্রগুলিতে নিবন্ধনে সহায়তার জন্য আলাদা আইটি কর্মকর্তা থাকবে বলেও জানান মি. রহমান। অ্যাপের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন শুরু না হলেও সরকারি ওয়েব সাইটের মাধ্যমে আগের নিয়মে নিবন্ধন করা যাবে বলেও জানান তিনি। একবার টিকা নিলে কতদিন সুরক্ষিত থাকা যাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোন টিকাই শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারে না। আর একবার টিকা নিলে কতদিন সুরক্ষা মিলবে সেটি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আর তাই এখনো পরামর্শ হিসেবে বলা হচ্ছে যে, টিকা নিলেও যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটির প্রথম ডোজ নেয়ার চার থেকে ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজটি নিতে হবে। কয় ডোজ টিকা নিতে হবে? ফাইজার এবং বায়োএনটেকের টিকার ক্ষেত্রে দেহে সুরক্ষা তৈরি হতে দুই ডোজ টিকা দরকার হয়। ফাইজারের টিকার ক্ষেত্রে দুই ডোজের মাঝে ২১ দিন বিরতি দেয়ার কথা বলা হয়। আর মডার্নার ক্ষেত্রে ২৮ দিনের বিরতি নেয়া ভাল বলে জানাচ্ছে সিডিসি। তবে সর্বোচ্চ কতদিন পর্যন্ত বিরতি নেয়া যাবে সে বিষয়ে কোন তথ্য জানা যায় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, নির্ধারিত তিন সপ্তাহ বা এক মাসের মধ্যেই টিকার দ্বিতীয় ডোজটি নিয়ে ফেলা উচিত। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটির প্রথম ডোজ নেয়ার চার থেকে ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজটি নিতে হবে। টিকা কাজ শুরু করতে কতদিন লাগে? টিকা দেবার পর মানবদেহ করোনাভাইরাসের জেনেটিক উপাদানগুলো চিনে নিতে এবং এ্যান্টিবডি ও টি-সেল তৈরি করতে বেশ খানিকটা সময় নেয়। তার পরই এগুলো ভাইরাসের দেহকোষে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বা আক্রান্ত কোষগুলোকে মেরে ফেলতে শুরু করে। "টিকার পুরো কার্যকারিতা তৈরি হতে কমপক্ষে দু-সপ্তাহ বা সম্ভবত আরো বেশি সময় লাগে" - বলছেন ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজিস্ট অধ্যাপক ড্যানি অল্টম্যান। আরো পড়ুন: টিকা নেবার পর কোভিড সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে কত দিন লাগে? ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে টিকা দেয়া শুরু হবে। অন্য কোন টিকা নেয়ার সময় কি কোভিডের টিকা নেয়া যাবে? যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বলছে, আপনি যদি কোভিড-১৯ এর টিকা নিয়ে থাকেন তাহলে অন্য কোন টিকা নেয়ার আগে কমপক্ষে ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে। তারপর টিকাটি নিতে হবে। একইভাবে আপনি যদি অন্য কোন টিকা নিয়ে থাকেন তাহলে কোভিডের টিকা নিতে শুরু করার জন্যও ১৪দিন অপেক্ষা করতে হবে। টিকা নেয়া লোকেরা কি ভাইরাস ছড়াতে পারে? এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এ ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নন- জানাচ্ছেন বিবিসির বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদদাতা ডেভিড শুকম্যান। এর কারণ হলো, টিকার ট্রায়ালগুলোতে দু'টি জিনিস দেখা হয়েছে। একটি হলো- টিকাটি নিরাপদ কিনা, এবং অপরটি হলো- তা করোনাভাইরাস আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া কতখানি ঠেকাতে পারে। দুটি ক্ষেত্রেই ভালো ফল পাওয়া গেছে। কিন্তু ভ্যাকসিন নিলেও একজন থেকে আরেকজনে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কিনা- তার অনুসন্ধান করা হয়নি। ফলে যারা টিকা নিয়েছেন তারা অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে পারেন কিনা- এটা অজানা। টিকা নেয়ার কারণে কি কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে? যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসি বলছে, টিকা নেয়ার কারণে কেউ কোভিডে আক্রান্ত হবে না। কারণ এ পর্যন্ত যে টিকাগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাদের কোনটিতেই জীবন্ত ভাইরাস নেই। যার থেকে কোভিড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে ভ্যাকসিন বা টিকা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে সেগুলো মানুষের দেহকে করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে এবং সেটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে শেখায়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সাময়িকভাবে জ্বরের মতো উপসর্গ থাকতে পারে। তবে এর মানে হচ্ছে যে, কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা গড়ে তুলতে শুরু করেছে দেহ। তবে এই সুরক্ষা তৈরি হতে যেহেতু কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে, তাই টিকা দেয়ার পর পরই কেউ কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন। এর মানে হচ্ছে যে, সুরক্ষা তৈরি করার মতো পর্যাপ্ত সময় পায়নি টিকাটি। ২৭শে জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। আক্রান্তদেরও কি টিকা নিতে হবে? যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসি বলছে, কোভিড আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠার পরও টিকা নিতে হবে। সংস্থাটি বলছে, যেহেতু কোভিডের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে এবং দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে তাই আক্রান্ত হোন আর না হোন, টিকা নেয়া উচিৎ। তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা খুবই কম। আর এক বার সেরে ওঠার পর ৯০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার উদাহরণও আরো কম। তবে একবার কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর টিকা নিতে ৯০ দিন অপেক্ষা করা উচিৎ। এ বিষয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একবার কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর কতদিন রোগটি থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায় সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর কোভিড আক্রান্ত হওয়ার কারণে প্রাকৃতিকভাবেই যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় তা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। গর্ভবতী নারীরা কি টিকা নিতে পারবেন? বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গর্ভবতী নারীরা করোনাভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন না। কারণ কোভিড প্রতিরোধে যে টিকাটি দেয়া হচ্ছে তা গর্ভবতী নারীদের উপর ট্রায়াল করা হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসি বলছে, গর্ভবতী কোন নারী যদি কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখ সারিতে থেকে থাকে, যেমন: চিকিৎসক কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী তাহলে তাদের টিকা নেয়া উচিৎ। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারা টিকা নিতে পারবেন না? করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)। সংস্থাটি বলছে, অতীতে যাদের কোন টিকা নেয়ার পর বড় ধরনের অ্যালার্জি হয়েছে বা কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে, তাদের টিকা নিতে হলে বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে। বিশেষ করে তাদের অবশ্যই টিকা নেয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। তবে যাদের খাবার বা পরিবেশে বা মুখে খাবার ওষুধে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের টিকা নিতে কোন সমস্যা নেই। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তারাও টিকা নিতে পারবেন না। বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে চায় সরকার। টিকা নেয়ার পর কী করতে হবে? টিকা নেয়ার পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং সেগুলো দুই একদিন থাকতে পারে। এক্ষেত্রে যা করতে হবে তা হলো: •ভ্যাকসিন নেয়ার পর টিকা কেন্দ্রে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন •ভ্যাকসিন নেয়ার পর যে কোন শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে নির্ধারিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র/স্বাস্থ্যকর্মী/চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন। •ভ্যাকসিন নেয়ার পরেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন। আরো পড়ুন: বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার আগে-পরে করনীয় বাংলাদেশে টিকা কর্মসূচির সর্বশেষ অবস্থা কী? বাংলাদেশে ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে টিকার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, প্রথম দিনে মোট টিকা নিয়েছেন একত্রিশ হাজার একশ ষাট জন। এদিন সারা দেশের সহস্রাধিক হাসপাতালে চলে এই টিকাদান কর্মসূচী। তবে রবিবার বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের বয়সসীমার ক্ষেত্রে টিকা দেয়ার শর্ত কিছুটা শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এখন থেকে ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা সবাই স্থানীয় যেকোন সরকারি হাসপাতালে গিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন। নিবন্ধনও সেখানেই করানো যাবে। এর আগে বলা হয়েছিল, ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রথম দফা টিকাদান কর্মসূচীতে স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারিতে থাকা মানুষেরা এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়সীরা টিকা নিতে পারবেন। সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর শর্ত শিথিল করার নির্দেশনা আসে। বলা হচ্ছে, টিকা নেয়া সহজতর করতে এই সিদ্ধান্ত। প্রথম দফায় মোট পঁয়ত্রিশ লাখ ডোজ টিকা সরকার বিনামূল্যে বিতরণ করবে বলে জানিয়েছে। যদিও শনিবার পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন জমা পড়েছে সাড়ে তিন লাখেরও কম। এরইমধ্যে বাংলাদেশের সব জেলা উপজেলার ১০০৫টি কেন্দ্র থেকে এই টিকা কর্মসূচি একযোগে শুরু করা হয়েছে। এজন্য কাজ করছে ২৪০০টি টিম। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই টিকা কার্যক্রম চলবে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে। এরিমধ্যে ভারত থেকে টিকাটির ৭০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। চলতি মাসে এই টিকার ৩৫ লাখ টিকা দেয়া পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে, কারণ এই টিকার দুটি করে ডোজ দিতে হয়। তাই ৩৫ লাখ মানুষকে যেন সম্পূর্ণ টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা যায়। তবে প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে জুন মাস পর্যন্ত আরও আড়াই কোটি ডোজ টিকা আসার কথা রয়েছে। এছাড়া বছরব্যাপী কর্মসূচি চালিয়ে যেতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে কোভ্যাকের টিকা আনা হবে বলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন। ২১শে জানুয়ারি ভারতের উপহার দেয়া ২০ লক্ষ ডোজ টিকা ঢাকায় আসে বাংলাদেশে কত মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে? কোন একটি দেশে সাধারণত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় এলেই দেশব্যাপী সুরক্ষাবলয় তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেক্ষেত্রে সংখ্যাটি হবে সাড়ে ১৩ কোটি'রও বেশি। সেব্রিনা ফ্লোরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী টিকা সংগ্রহ এবং প্রয়োগে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যাবে। ভ্যাকসিনেই কি সংক্রমণ থেকে মুক্তি মিলবে? যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন নেয়া মানেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার গ্যারান্টি নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির সাবেক প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাজুল ইসলাম এ বারি বলছেন, টিকা মানুষের শরীরে কতদিন কার্যকর থাকবে সেটা নিশ্চিত নয় কেউই। "টিকার সুরক্ষা কি মানুষের শরীরে তিন মাস থাকবে, ছয় মাস থাকবে নাকি একবছর থাকবে সে বিষয়ে কেউই নিশ্চিত নয়। কারণ এটা অজানা। এর পরে বুস্টার ডোজ নিতে হবে কি-না, সেটাও অজানা। সুতরাং টিকা নিলেও মানুষকে আরো কিছুদিন সতর্ক থাকতেই হবে।" চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সমীর কুমার সাহা বলছেন, যে কোন টিকা আসার আগে বেশ কয়েকবছর সময় নিয়ে এর কার্যকারিতাসহ বিভিন্ন বিষয় দেখা হয়। এবার একটি নজিরবিহীন পরিস্থিতি। ফলে অনেক কিছু নিয়েই প্রশ্ন আছে। তবে তিনি এটাও বলছেন, কতদিন সুরক্ষা থাকবে সেটা অজানা হলেও সুরক্ষা যে পাওয়া যাবে এ বিষয়টা কোম্পানিগুলো পরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছে। আরো পড়ুন: ভ্যাকসিনেই কি করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্তি মিলবে? ভ্যাকসিন নিয়ে যত সন্দেহ: গত ১০০ বছরে রোগ প্রতিষেধক টিকার কারণে কোটি কোটি মানুষের জীবনরক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু অনেক দেশেই টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে অনীহা তৈরি হয়েছে, আর এই প্রবণতা এখন বাড়ছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা নেয়া না নেয়ার প্রশ্নে অনেক মানুষের মাঝেই এক ধরনের সংশয় বা আস্থার অভাব দেখা যাচ্ছে। বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা ভিআইপিরা আগে টিকা না নেয়ায় সংশয় বাড়ছে। তবে সরকার মনে করছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংশয় তৈরি করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দলটির অনেক নেতাই বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড: আহমদ কায়কাউস বলেছেন, মহামারির লড়াইয়ে সামনের সারিতে যারা ছিলেন, ভিআইপিদের বাদ রেখে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে টিকা দেয়ার পরিকল্পনাকে ভিন্নভাবে দেখা ঠিক নয়। আরো পড়ুন: টিকা নিয়ে সংশয়-অনাস্থা: জবাবে কী বলছে সরকার | কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনার অংশ হিসেবে বিশ্বজুড়েই গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও বুধবার বিকেল থেকে শুরু হওয়ার কথা আনুষ্ঠানিক টিকাদান কর্মসূচি। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | ভারতে এবারের সাধারণ নির্বাচনে ৯০ কোটি ভোটার অংশ নিতে পারবেন। দেশটির প্রতিটি নির্বাচনের সময় ভোট কর্মকর্তারা পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের সিংহ উপদ্রুত বন গির-এ যান, শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির ভোট সংগ্রহের জন্য। মূলত সেখানে পাঁচজন যান, সঙ্গে থাকেন আরও দুই পুলিশ সদস্য। তারা ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) থেকে শুরু করে ভোটের সরঞ্জাম বহন করেন। দীর্ঘ যাত্রা করার পর, তারা ভারতদাস দর্শনদাস নামে সেই ভোটারের জন্য তার বাড়ির দুই কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী একটি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করেন। নির্জন একাকী এই ভোটারের বয়স বর্তমানে ষাটের কোঠায়। তিনি মূলত এই বনভূমির ভেতরে একটি মন্দিরের দেখাশোনা করেন। "এই মন্দিরে আগে আমরা ৪৫জন থাকতাম। আমাদের বিপুল সংখ্যক তীর্থযাত্রী ছিল। এক পর্যায়ে বন কর্তৃপক্ষ এই স্থানটিতে মানুষের বসবাস অনেক কঠিন করে তোলে। তাই আমার সঙ্গে থাকা অন্য সবাই একে একে চলে যান, একমাত্র আমিই শেষ ভোটার হিসেবে এখানে টিকে আছি," বিবিসিকে দেয়া ২০০৯ সালের সাক্ষাতকারে তিনি এমনটাই বলেছিলেন। তিনি জঙ্গলে আরও ভাল রাস্তা দেখবেন বলে আশা করেন যাতে আরও তীর্থযাত্রীরা মন্দিরে আসতে পারেন। "কিন্তু আমার খুব ভাল লাগে যে কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র আমার ভোট নিতে এখানে আসে। আমি সম্মানিত বোধ করি।" ভারতদাসের গল্পটি ভারতের সাধারণ নির্বাচনের জটিলতার একটি ঝলক দেয়। আরও পড়তে পারেন: ভারতের রাজনীতিতে ত্রাস ছিলেন যে নির্বাচন কমিশনার লোকসভা নির্বাচন: যে ১১টি তথ্য জানা দরকার বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত কতটা গুরুত্বপূর্ণ? হিমালয় থেকে উপকূলে ভারত চলতি মাসেই আবারও নির্বাচনে যাবে ৯০ কোটি ভোটারকে সঙ্গে নিয়ে। এটাই হবে বিশ্বের দেখা সবচেয়ে বড় নির্বাচন। কিন্তু কিভাবে একটি দেশ এতো বড় নির্বাচন পরিচালনা করে, যেখানে কিনা সমগ্র বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১২% লোকের বসবাস? নির্বাচন কমিশন বলেছে, 'সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন' পরিচালনার মনোভাব নিয়ে কমিশনকে ২৯ টি রাজ্য এবং সাতটি ইউনিয়ন টেরিটরিতে হওয়া নির্বাচনকে সামাল দিতে হয়।" "এর মধ্যে রয়েছে উত্তরের বিশাল পাহাড়ি অঞ্চল (হিমালয়), উত্তর এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বিস্তৃত সমভূমি, পশ্চিমে একটি মরুভূমি অঞ্চল, বন জঙ্গলে ঘেরা এবং দক্ষিণে দীর্ঘ সমুদ্র উপকূল"। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার বই 'এন্ড ইনডকুমেন্টেড ওয়ান্ডার: দ্য মেকিং অফ দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ইলেকশন'-এ এভাবেই ব্যাখ্যা করেন। বিস্তৃত এই অঞ্চল-জুড়ে সবার ভোট নিশ্চিত করতে স্থাপন করা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ভোট কেন্দ্র। যার বেশ কয়েকটির অবস্থান অনেক দুর্গম স্থানে। উদাহরণস্বরূপ, উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হিমাচল প্রদেশের একটি ভোটকেন্দ্রের অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪,৪৪০ মিটার উঁচুতে। এটাকে সবচেয়ে বেশি দুর্গম ভোটকেন্দ্র বলে ধরা হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে ভোট কর্মকর্তাদের ২০ কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটে যেতে হয়। তাদের পিঠে করে ভোটদানের সরঞ্জামের পাশাপাশি অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্লিপিং ব্যাগ, খাবার এবং টর্চ বহন করতে হয়। হেলিকপ্টার থেকে উট পর্যন্ত প্রতিটি ভোটারের কাছে পৌঁছাতে কতো ধরণের কাঠখড় পোড়াতে হয় তা অনেকের কল্পনার বাইরে। "এটি প্রথমে শুনতে খুব রোমাঞ্চকর মনে হলেও একজন ভোট কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ধরণের পরিবহনে চড়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে হয়।" "সেটা আদিম থেকে অতি-আধুনিক পরিবহন মানে-হাতি, উট, নৌকা, সাইকেল, হেলিকপ্টার, ট্রেন এমনকি উড়োজাহাজও হতে পারে।" "এসব পরিবহনের মাধ্যমে ভোট কর্মকর্তাদের ভোটের সব সামগ্রী নিয়ে মরুভূমি, পর্বত, সমভূমি, বন, দ্বীপ এবং উপকূলীয় অঞ্চল পাড়ি দিয়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে হয়।" এভাবেই ভোটের পেছনের চিত্র নিজ বইয়ে ব্যাখ্যা করেন মিস্টার কুরাইশি। প্রায় এক কোটি কর্মকর্তা এই বছরের নির্বাচন পরিচালনা করবেন। আর এই সংখ্যা সুইডেনের মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান। ভোট প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আধা সামরিক বাহিনী, পর্যবেক্ষক, ভিডিওগ্রাফার, সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের একটি বহরও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সব ধরণের পক্ষপাত এড়াতে তাদের সবাইকে একটি র্যান্ডম নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেছে নিয়ে নির্দিষ্ট এলাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে এক বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে - সেটা হল তাদের প্রত্যেককে এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যেন তারা দৃঢ় সংকল্পের সাথে প্রতিটি রাজ্যের আলাদা আলাদা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। হেলিকপ্টারে হোক বা উটে চড়ে হোক প্রত্যেক ভোটারের ভোট নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে যেকোন দূরুত্ব অতিক্রম করতে হবে। জরিপ সহিংসতা থেকে জাল ভোট যেকোনো জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ভোটকেন্দ্র গুলোয় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিহারের উত্তর প্রদেশে 'বুথ ক্যাপচারিং' বা ভোটকেন্দ্র দখলের ইতিহাস রয়েছে। যখন কোন একটি দলের সদস্য জোরপূর্বক ভোটকেন্দ্র দখল করে নিবন্ধিত ভোটারদের নামে জাল ভোট দেয় এবং তা গণনা করে। এ ধরণের সহিংসতার কারণে ভোটাররা ভোট দিতে আগ্রহ পান না। ফলে ভোটারদের কেন্দ্রে আসার হার কমে যায়। বিশেষ করে নারী ভোটাররা আগ্রহ হারান। তবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এমন কারচুপির সুযোগ কম। নির্বাচন কমিশন ভোট প্রক্রিয়াকে ছয় বা সাতটি পর্যায়ে ভাগ করে পরিচালনা করে। এতে করে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা সহজ হয়। তারপরেও মণিপুর রাজ্যে জাল ভোটের ঝুঁকি রয়েছে। পরে ফেইস রিকগনিশন বা চেহারা দেখে পরিচয় শনাক্তের প্রযুক্তির মাধ্যমে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। "এই প্রযুক্তি আনার পর, তারা এমন এক নারী ভোটারকে চিহ্নিত করেন। যিনি বিভিন্ন বেশে এসে ৬০বারেরও বেশি সময় ভোট দিয়ে পড়েন," কুরাইশি তার বইয়ে এমন এক ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন। এ ধরনের সতর্কতা সত্ত্বেও, ২০১৪ সালের শেষ নির্বাচনে নির্বাচনকে ঘিরে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে কাশ্মীর, ঝাড়খন্ড ও আসাম। আসন্ন নির্বাচনে অনুরূপ দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য এখন নিরাপত্তা কর্মীরা সময়ের সাথে নিজেদের এগিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডের, কয়েকটি রুট থেকে ল্যান্ডমাইন অপসারণ করা হয়েছে। এমন মাইন সেখানকার সশস্ত্র বামপন্থী গেরিলা বাহিনী পুঁতে রেখেছিল বলে জানা গেছে। আসামের ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে যেন বিদ্রোহীদের সহিংসতা বা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এড়ানো যায়। নির্বাচনের তারিখ থেকে প্রতীক এই বছর ভারতের নির্বাচন ছয় সপ্তাহ ছাড়িয়ে যাবে, যেখানে হাজার হাজার প্রার্থী ৫৪৩টি আসনের জন্য ভোটের লড়াই করবেন। "আমরা এক বছর আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করি," সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার টি এস কৃষ্ণমূর্তি বিবিসিকে এ কথা জানান। "ভোটার নিবন্ধীকরণ ছাড়া, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।" এমনই এক নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সময়, নির্বাচন কমিশন ভারতের প্রবীণতম ভোটারদের মধ্যে একজনকে খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছিল, যার নাম শ্যাম শরণ নেগি। অবসরপ্রাপ্ত এই স্কুল শিক্ষক ১৯৫১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভারতের প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। এখন তার বয়স ১০২। তিনি এবারও হিমাচল প্রদেশ থেকে ভোট দিতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের প্রবেশের আগে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বেশ কিছু বিষয়ে নজর রাখতে হয়। সেগুলো হল - ১. সারা ভারতের ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) গ্রহণ ও অদলবদল করা; ২. নির্বাচন তারিখ যথাযথ উপায়ে বাছাই করতে হবে। ভোটের জন্য এমন একটি দিনকে বেছে নিতে হবে যেদিন কোন সম্প্রদায়ের উৎসব, পরীক্ষা, কৃষির মৌসুম বা চরম আবহাওয়া না থাকে; ৩. একটি 'বিশেষ ধরনের' অমোচনীয় কালির বিপুল পরিমাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা, যা প্রতিটি ভোটারের আঙ্গুলের উপর প্রয়োগ করা হয়। যাতে কেউ একবারের বেশি ভোট দিতে না পারে; ৪. প্রতিটি দল এবং অসংখ্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য প্রতীক বরাদ্দ করা যাতে ভোটাররা দ্রুত তাদের শনাক্ত করতে পারেন; প্রতীকের প্রসঙ্গ যেহেতু উঠেছে সেক্ষেত্রে একজনের কথা বলতেই হয়। আর তিনি হলেন, সকল প্রতীকের পেছনের ব্যক্তি এম এস শেঠি। প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য প্রতীক বরাদ্দ করা হয় যেন সহজেই তাদের চেনা যায়। তিনি ১৯৯০ এর দশকে তার দলবল নিয়ে বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে টেবিল, টেলিফোন, আলমারি এবং টুথব্রাশের মতো দৈনন্দিন বস্তুর কথা উঠে আসে। মিস্টার সেঠি সেগুলোর ছবি আঁকতেন এবং রাজনীতিবিদদের একটি পরিচয় দিতেন। ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের আগে (যা অক্টোবর ১৯৫১ থেকে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল) প্রতীক ব্যবহারের ধারণাটি রপ্ত করা হয়। কেননা তখনকার প্রায় ৮৪ শতাংশ ভোটার পড়তে এবং লিখতে অক্ষম ছিলেন। এর মধ্যে অনেক প্রতীক এখন আর ব্যবহার হয় না। তবে সেগুলোকে এখনও ফ্রি লিস্টে পাওয়া যায়। এই কাজগুলো (এবং আরও) ভারতের প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনের আগে কমিশনের প্রস্তুতির একটি মূল অংশ গঠনে সহায়তা করে। লজিস্টিকস থেকে নিয়মকানুন "কিন্তু সহায়ক এই কাজগুলো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নয়," কৃষ্ণমূর্তি বলেছেন। "এগুলো মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া।" প্রথম দফার নির্বাচনে নগদ অর্থ এবং অন্যান্য উপহারের বিনিময়ে ভোট কেনার চেষ্টাও ভারতে প্রকট। এর প্রধান কারণ হল, বর্তমানে রাজনীতি প্রচণ্ড প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৪৬৪টি দল ছিল, অথচ প্রথম নির্বাচনে ছিল ৫৫টি। দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর অস্বচ্ছ অর্থায়ন নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। "কোন ধরণের সহিংসতা বা নিয়ম লঙ্ঘন হলে আমরা দলগুলোকে সতর্ক করি, হুঁশিয়ারি দেই। কিন্তু কোন প্রার্থীকে অযোগ্য বা স্থগিত করার ক্ষমতা আমাদের নেই।" "আমরা কিছু চরম ক্ষেত্রেই তাদের প্রতীক প্রত্যাহার করতে পারি," কৃষ্ণমূর্তি বলেছেন। সুষ্ঠু ভোট গণনা নিশ্চিত করার জন্য, ভোটকেন্দ্রগুলো প্রকৃত ভোটের আগে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একটি পরীক্ষামূলক ভোট বা মক ভোট পরিচালনা করে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে, এই মেশিনগুলো নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক হয়। বিশেষ করে হেরে যাওয়া দলগুলো, প্রায়ই অভিযোগ করে যে মেশিনগুলো 'হ্যাক করে কারচুপি' হতে পারে। ভারতের নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ সবসময় এই বিষয়টি খেয়াল রাখেন যেন ভোটিং মেশিনগুলোকে বৈদ্যুতিকভাবে ট্যাম্পার করা গোপনে প্রবেশ করা না যায়। তারপরও কেউ যদি ফিজিক্যালি ট্যাম্পারিং করে থাকেন বা বাইরে থেকেই কোন পরিবর্তনের চেষ্টা করেন তাহলে সেটা সহজেই শনাক্ত করা যায়। এই মুহূর্তে, তারা দেশব্যাপী ভোট প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ের প্রয়োজনীয়তাগুলো মেটাতে কাজ করে যাচ্ছেন। দক্ষিণের তেলেঙ্গানার নির্বাচনী অঞ্চলটি একটি ভিন্ন রকম সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। আর সেটা হল তাদের একটি আসনের সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী লড়াই করছে। পুরানো ইভিএমগুলো ৬৪টি নাম ধারণ করতে পারে, তবে এই বিশেষ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীই দাঁড়িয়েছেন ১৮৫জন। এমন অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে বিপুল সংখ্যক আপডেটেড মেশিন অর্ডার করা হয়েছে। যেটি বেশি সংখ্যক নাম ধারণ করতে সক্ষম। নির্বাচন কমিশন তাদের এই সক্ষমতা অর্জনের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। "ভোট প্রক্রিয়া মসৃণ হবে," এমনই আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের জ্যেষ্ঠ উপ নির্বাচন কমিশনার উমেশ সিনহা। আসলে তিনি বিশ্বাস করেন যে এই রাজ্যটি ইতিহাস তৈরির পথে চলছে। "ইভিএম প্রবর্তনের পর থেকে এতো বিপুল সংখ্যক ব্যালট ইউনিট ব্যবহার করার জন্য তেলেঙ্গানা দেশের প্রথম কোন রাজ্য হবে।" কিন্তু এ ধরণের পদক্ষেপ কি নির্বাচনে ভোটারদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারবে? ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পারবে - এমন প্রশ্নের জন্য বিশ্ববাসীর অপেক্ষা করতে হবে ২৩শে মে পর্যন্ত। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: লোকসভা নির্বাচন: স্মার্ট হচ্ছে ভারতের শহরগুলো? লোকসভা নির্বাচন: হোয়াটসঅ্যাপে ফেক নিউজের ঝড় ভারতে 'বিতর্কিত' দেশদ্রোহ আইন বাতিল করা উচিত? | ভারতের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কিছুই বদলায়নি। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | আর এ বিষয়ে ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বেশিরভাগই এই তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন যে কোভিডের টিকা নিরাপদ ও কার্যকরী। কিন্তু প্রায় প্রত্যেক ধর্মেই কিছু নেতা আছেন যারা এসম্পর্কে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন। এ ধরনের গুজব ও মিথ্যা তথ্য রটানোর অনেক ঝুঁকি রয়েছে। | সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হচ্ছে। লোকজনের মধ্যে টিকার ব্যাপারে আস্থা তৈরি করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নেতারা। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | ডাসেস অফ সাসেক্স এবং ডিউক অফ উইন্ডসর এই নারী একটি বৈরি ব্রিটিশ গণমাধ্যমের দ্বারা হেয়-প্রতিপন্ন হয়েছিলেন। হ্যারি এবং মেগানের মধ্যে অষ্টম এডওয়ার্ড এবং ওয়ালিস সিম্পসনের প্রতিবিম্ব দেখতে পেয়েছেন কয়েকজন রাজকীয় পর্যবেক্ষক। আট দশক আগে এই দম্পতি রাজ ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া নিয়ে সংকটের কেন্দ্রে ছিলেন। তবে দুই দম্পতির মধ্যে এ ধরণের তুলনা করা কি চলে? সাসেক্সের ডিউক এবং ডাচেসকেও যদি উইন্ডসরের ডিউক এবং ডাচেসের মতো বেদনাদায়ক নির্বাসনের মুখে পড়তে হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত হয়তো এই তুলনা করা যাবে। ১৯৩৬ সালের ডিসেম্বরে, রাজা তার সিংহাসন এবং ৫০ কোটি মানুষের একটি সাম্রাজ্য ছেড়ে দিয়েছিলেন যাতে তিনি এমন এক নারীকে বিয়ে করতে পারেন যিনি তার দ্বিতীয় স্বামীকে তালাক দিতে যাচ্ছেন। তার এই হবু স্ত্রী ওয়ালিস সিম্পসনকে উদ্দেশ্য করে সাধারণ মানুষ অজস্র কটু কথা উগরে দিয়েছিল। সর্বশেষ এক মার্কিনীর, ব্রিটেনের রাজপরিবারের কাউকে বিয়ে করা এমনই কোন ঘটনার জন্ম দেবে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোর শহরের সাধারণ রো হাউজে বেড়ে ওঠা সিম্পসন আগে থেকেই নিন্দিত ছিলেন তার উচ্চভিলাশি জীবন যাপনের জন্য। তাকে একজন সস্তা হঠকারী নারী, সমকামী, একজন কাম-আসক্ত, নাৎসি গুপ্তচর এবং হিজড়া বলেও গালি দেওয়া হয়েছিল। তাকে এমন একজন যৌন জাদুকর হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল যিনি সম্ভবত সাংহাই-এর পতিতালয়গুলোতে "প্রাচীন চীনা দক্ষতা" শিখেছিলেন। এই সাংহাইতে কাজ করতেন সিম্পসনের প্রথম স্বামী, যিনি ছিলেন মার্কিন নৌবাহিনীর একজন পাইলট। তবে সিম্পসনের উপর গণমাধ্যমের এই আক্রমণ কেবল লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ডেইলি এক্সপ্রেসের সাংবাদিকরা লন্ডনের রিজেন্টস পার্কে তার ভাড়া করা বাড়ির জানালা দিয়ে ইট ছুড়ে দিয়েছিল। পত্রিকাটির মালিক লর্ড বিভারব্রুক পরে সেটা স্বীকার করেন। আরও পড়তে পারেন: রাজপরিবার ছাড়ছেন প্রিন্স হ্যারি ও মেগান উইন্ডসর প্রাসাদে হ্যারি-মেগানের রূপকথার বিয়ে ছবিতে দেখুন হ্যারি ও মেগানের বিয়ে এডওয়ার্ড এবং ওয়ালিসের সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হয়ে ওঠে। অষ্টম এডওয়ার্ডের ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া নিয়ে সঙ্কট যখন জোরালো হয়ে ওঠে, তখন সিম্পসন ফ্রান্সে পালিয়ে যান। কান শহরের সাংবাদিকরা তাঁকে খুঁজতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এসব লোলুপ সাংবাদিকদের থেকে বাঁচতে সিম্পসন রীতিমত পালিয়ে বেড়িয়েছেন। তার নিজস্ব ব্যাখ্যায় তিনি গাড়ির ধাওয়ার মুখে পড়েছিলেন এবং কখনও কখনও তাকে বাথরুমের জানালা দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এসব সাংবাদিকদের থেকে পালিয়েছেন। 'দ্যাট ওম্যান, লাইফ অফ ওয়ালিস সিম্পসন' বইয়ের লেখক অ্যান সেবা বলেছেন যে হ্যারি এবং মেগানের রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত সাংবিধানিকভাবে এতোটা কাঁপিয়ে দেয়নি, কারণ সিম্পসনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ রাজতন্ত্র এবং সাম্রাজ্যকে প্রায় ধ্বংস করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেবা বিবিসিকে বলেন: "আমরা এখন আর ১৯৩৬ সালে বাস করছি না, যখন মানুষ তালাকপ্রাপ্ত নারীদের নিয়ে আতঙ্কিত থাকবে"। "তারা ভেবেছিল এই ঘটনা সমাজকে একটি অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেবে যেখানে সবাই বিবাহবিচ্ছেদ করবে"। "তবে আসলেই বড় পার্থক্য হল এডওয়ার্ড রাজা ছিলেন এবং হ্যারি, সিংহাসনের ক্ষমতা নেয়ার সারিতে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন - তিনি কখনও রাজা হতে পারবেন না"। সিম্পসন বস্তাভর্তি মানুষের বিদ্বেষমূলক চিঠি পেয়েছিলেন। যার বেশিরভাগই ছিল ভয়াবহ নারী বিদ্বেষী। তিনি তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন: "আমার নারী পরিচয় নিয়ে এমন হাতে গোনা কয়েকটি গালাগালি ছাড়া বাকি সবই আমাকে শুনতে হয়েছিল"। তবে এর মধ্যে কিছু কঠিন আক্রমণ হয়েছিল অন্য নারীদের থেকে। হিউগো ভিকার্সের জীবনী 'বিহাইন্ড ক্লোজড ডোরস, দ্য ট্র্যাজিক, আনটোল্ড স্টোরি অব ওয়ালিস সিম্পসন' বইটিতে রানীর একটি মন্তব্য উল্লেখ করা হয়। রানী বলেছিলেন: "যে দুজন ব্যক্তি আমার দেখা জীবনে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন তারা হলেন ওয়ালিস সিম্পসন এবং হিটলার"। ব্রিটেনের রাজ পরিবারের ক্ষমতা ছাড়ার খবর ব্রিটেনের ব্রিটেনের বাইরেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এমন ঘটনার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন সিম্পসনের শৈশবের বন্ধু মেরি কির্ক। তিনি তার বান্ধবীর প্রাক্তন দ্বিতীয় স্বামী আর্নেস্ট সিম্পসনকে পরে বিয়ে করেন। তিনি নিজের একটি ডায়েরিতে তার প্রেমের এই প্রতিদ্বন্দ্বীকে উদ্দেশ্য করে লেখেন: "মানুষ হিটলারকে নিয়ে যেমনটা ভাবে, আমি তাকে ঠিক সেরকম ভাবি। একটি অশনি শক্তি... পশুর ধূর্ততায় পূর্ণ"। প্রিন্সেস মার্গারেট তার চাচার প্রেমিকাকে "সেই হিংস্র মহিলা" হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। জনপ্রিয় আখ্যানটি দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে এডওয়ার্ড - একজন উচ্চাভিলাষী এবং বিলাশবহুল চাহিদাসম্পন্ন নীচ প্রেমিকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিলেন। হ্যারি সম্পর্কেও তাই বলা হয়েছে। "রাজাকে যে নারী চুরি করেছিল" হিসাবে সিম্পসনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু ত সত্ত্বেও, এডওয়ার্ডের কাছে সবসময়ই রাজকীয় দায়িত্ব অসহনীয় বিরক্তিকর বলে মনে হতো। মেগান এবং হ্যারির মতো তিনিও পালিয়ে গিয়ে কানাডায় থাকার স্বপ্ন দেখতেন। তার সহকারী একান্ত সচিব অ্যালান টমি ল্যাসেলিস বলেছেন যে, তিনি ১৯২৭ সালে রাজপুত্রের সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতার পরে বুঝতে পেরেছিলেন যে 'শালীনতা', 'সততা', 'কর্তব্য', 'মর্যাদার' মতো শব্দগুলি তাঁর কাছে একেবারেই কিছুই নয়। এই রাজকীয় উপদেষ্টা, এডওয়ার্ডকে "একজন ধ্বংসপ্রাপ্ত ক্ষমতাবান" বলে উপসংহার টেনেছেন। হ্যারি এবং মেগান যেহেতু একটি নতুন জীবনের পথে হাল ধরেছেন। এতে সন্দেহ নেই যে তারা উইন্ডসর-এর ডিউক এবং ডাচেসের মতো লক্ষ্যহীন অস্তিত্বের পথটি এড়িয়ে চলবেন। যুদ্ধ চলাকালীন অল্প সময়ের জন্য বাহামার গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন ছাড়া এডওয়ার্ড এবং তাঁর স্ত্রী কেউই আর কখনও কাজ করেননি। অথচ মেগানের বিষয়টি আলাদা। ২০১৮ সালের মে মাসে উইন্ডজর প্রাসাদে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলের রাজকীয় বিয়ে। ব্রিটেনের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী ইতিহাসের অধ্যাপক অলিভেট ওটেল উল্লেখ করেছেন যে মেগান একজন সফল অভিনেত্রী, কর্মী এবং লাইফস্টাইল ব্লগার। সিম্পসনের জীবনে কখনও চাকরিই হয়নি। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক বলেন, "একজন ছিলেন সোশ্যালাইট," অর্থাৎ সামাজিক আমোদ প্রমোদে ব্যস্ত এবং অপরজন স্বাধীন ও সফল নারী যিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য নিজের আয়ের উপর নির্ভর করেছেন।" প্রফেসর অটেল বলেছেন যে, ডাচেস অব সাসেক্সের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নানা বর্ণবাদী আক্রমণ চালানো হয়েছে। কারণ তিনি মিশ্র জাতির। এ কারণে এই দু'জনকে একই রেখার মধ্যে ফেলা "সম্পূর্ণ নির্বোধের" মতো কাজ। "ওয়ালিস সিম্পসনের সঙ্গে ব্রিটিশ গণমাধ্যম অবশ্যই অনেক খারাপ ব্যবহার করেছিল," প্রফেসর ওটেল বলেন, "তবে এটি কখনও মেগানের মতো ছিল না।" সাসেক্সের ডিউক প্রিন্স হ্যারি এবং তাঁর স্ত্রী মেঘান, সাসেক্সের ডাচেস, মেগান মার্কল। রাজকীয় প্রতীক দ্বারা বেষ্টিত প্রবাসের একটি ছোট বাড়িতে, এডওয়ার্ড এবং ওয়ালিস তাদের ধনী বন্ধুদের থেকে দূরে সরে বাকী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। হ্যারি এবং মেগানের মতো, এডওয়ার্ড এবং ওয়ালিসও হলিউডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ফ্রান্সের ছোট শহরের বাড়িটিতে তারা রিচার্ড বার্টন এবং মারলিন ডায়েট্রিচের মতো চলচ্চিত্র তারকাদের দাওয়াত করেছেন। গল্ফ খেলা ছাড়া এডওয়ার্ডের আর কিছু করার ছিল না। তিনি তাঁর ১১-মাসের রাজত্ব সম্পর্কে কোনও অনুশোচনা প্রকাশ করেননি, যদিও তাঁর গল্পগুলি প্রায়শই এই শব্দগুলো দিয়ে শুরু হতো: "যখন আমি রাজা ছিলাম ..." প্রধানমন্ত্রী স্ট্যানলি বাল্ডউইন থেকে শুরু করে রানী মায়ের কাছে তিনি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পেছনে তিনি নিজেকে ছাড়া বাকি সবাইকে দোষারোপ করেছেন। "কুড়ি বছর আমি নিজের দেশের জন্য কাজ করেছি এবং তারা আমাকে আমার পেছনে লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে," বেশ রাগান্বিত হয়ে ডিউক তার এক বন্ধুকে এই কথাটি বলেছিলেন। সম্ভবত সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল শতাব্দীর এই তথাকথিত রূপকথার প্রেমকে ঘিরে বেশিরভাগ জীবনীবিদ একটি কথাই বলেছেন যে এডওয়ার্ড তার মুকুট এমন এক নারীর জন্য পরিত্যাগ করেছেন যিনি তাকে সত্যিকার অর্থে ভালবাসেননি। "উইন্ডসরের ডিউক এবং ডাচেজ, সন্ধ্যায় একসাথে তারা হুইস্কি খেতেন। রাতের খাবারের পর সেই হুইস্কি পরিবেশন করা হত এবং তাদের একে অপরকে কিছু বলার ছিল না এ কারণে বোতলের মদের স্তর ধীরে ধীরে নামতে থাকতো", ব্যক্তিগত সহকারী জন আটার এভাবেই তাদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেন। অ্যান্ড্রু মর্টনের 'ওয়ালিস ইন লাভ' বইটি অনুসারে, সিম্পসনের হৃদয় আসলে তার বন্ধু হারমান রজারের প্রতি দুর্বল ছিল। রজার ছিলেন ধনী এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। কথিত আছে যে ডাচেস ১৯৫০ সালে রজার্সের দ্বিতীয় স্ত্রীকে এই অত্যাশ্চর্য স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন, তাও আবার ঠিক তাদের বিয়ের দিনটিতে। একমাত্র ছেলে আর্চির নামকরণ অনুষ্ঠান করা হয়েছিল ছোট পরিসরে। যা থেকে গণমাধ্যম এবং জনসাধারণকে বাদ দেওয়া হয়েছিল ধীরে ধীরে উইন্ডসরের ডিউক এবং ডাচেজের খ্যাতি বিবর্ণ হতে থাকে। এটাও তাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৫৬ সালে ডাচেজের স্মরণে লেখা 'দ্য হার্ট হ্যাজ ইটজ রিজনস'-বইয়ের প্রকাশক চার্লস পিক বলেছেন যে তিনি তার বইটি নিয়ে আলোচনা করতে যখন প্রথম সিম্পসনের সাথে দেখা করত যান, তখন সিম্পসন তার আরাম কেদারা থেকে উঠে নালিশ করেন যে, তাকে খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠা থেকে সরিয়ে মেরলিন মোনরোকে জায়গা দেয়া হয়েছে। ১৯৬৬ সালে ডিউক ও ডাচেস ট্রেনে করে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন এবং তারা পাপারাজ্জিদের নিয়ে রাগ ঝাড়তে থাকেন। কারণ তারা আশা করেছিলেন যে পাপারাজ্জিরা হয়তো লুকিয়ে লুকিয়ে তাদেরকে গন্তব্যে খুঁজে বের করবে। একজন সহায়তাকারী লক্ষ্য করেছেন যে, যখন কোনও ফটোগ্রাফার তাদেরকে ঘিরে ধরেনি তখন তারা তাদের হতাশাকে আড়াল করতে পারেননি। হ্যারি এবং মেগান এক প্রকার আধা-নির্বাসিত জীবন বেছে নেয়ার কারণে শেক্সপিয়ারের কিছু পরামর্শের কথা মনে রাখা তাদের জন্য ভাল হবে। চতুর্থ হেনরির, প্রথম খণ্ডে, রাজা তার ছেলে প্রিন্স হ্যারিকে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তিরস্কার করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি "বদ্ধ উন্মাদের সাথে তার রাজত্বকে মিশিয়ে ফেলেছেন"। "এ কারণে আপনি আপনার রাজপুত্র হওয়ার সুযোগ সুবিধা হারিয়েছেন," রাজা তার উত্তরাধিকারীকে তিরস্কার করেন। "পৃথিবীতে এমন কোন চোখ নেই যা তোমাকে দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে যায়নি"। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: করোনাভাইরাস: আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিটি কে? প্রথম যে ভারতীয় নারী জিতেছিলেন 'মিস ওয়ার্ল্ড' শিরোপা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস, ইটালির কয়েকটি শহর অবরুদ্ধ | একজন জনপ্রিয়, আমোদপ্রিয় রাজকুমার এক প্রবল ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন মার্কিন নারীর প্রেমে পড়ে যান। যার কিনা আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল, পরে সেটি বিচ্ছেদ হয়ে যায়। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | এই ঘটনার খবর কিছু পত্রিকায় ছাপা হলেও কিছু পত্রিকা একেবারেই এড়িয়ে গেছে গত সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের এক ফ্ল্যাটে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় এক কলেজ পড়ুয়া তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় নিহতের বোন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে আসামী করা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এক শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সায়েম সোবহান আনভীরকে। ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পর হতে এ পর্যন্ত যেভাবে গণমাধ্যমে এই ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়েছে, কিংবা যেভাবে পুরো ঘটনাটির খবর কোন কোন গণমাধ্যমে একেবারে চেপে যাওয়া হয়েছে, তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে সাংবাদিকদের মধ্যে কয়েকজন সমালোচনার সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, প্রত্যেকটি মিডিয়া তাদের ''বেস্ট জাজমেন্ট'' অনুসারেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেটা সবার পছন্দ নাও হতে পারে। প্রভাবশালী শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীই নয়, তারা একই সঙ্গে বাংলাদেশে কয়েকটি সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টিভি চ্যানেল এবং এফএম রেডিও স্টেশনের মালিক। বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বসুন্ধরা গ্রুপই সবচেয়ে বড় বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি এই গ্রুপের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বিস্তৃত বিদ্যুৎ, সিমেন্ট, শিপিং, এয়ারলাইন্স, ফুড এ্যান্ড বেভারেজ- এরকম নানা ক্ষেত্রে। বসুন্ধরার মালিকানাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ এবং দ্য সান- এই তিনটি দৈনিক পত্রিকা। অনলাইন পোর্টাল বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরও তাদের মালিকানাধীন। এছাড়া এই গ্রুপের রয়েছে নিউজ টোয়েন্টিফোর নামের টিভি চ্যানেল এবং ক্যাপিটাল এফএম নামের রেডিও স্টেশন। এরকম একটি বিশাল এবং প্রভাবশালী শিল্প গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে এক তরুণীর সঙ্গে কথিত সম্পর্কের কারণে তাকে ''আত্মহত্যার প্ররোচনা'' দেয়ার অভিযোগটি গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে, কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে একেবারেই আসেনি, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই এই ঘটনার মিডিয়া কভারেজ প্রভাবিত হয়েছে কিনা সে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আরও পড়ুন: সায়েম সোবহান আনভীরের বিদেশযাত্রায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে খবরটি কেন প্রকাশ করা হয়নি সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি নিয়েই সবচেয়ে বেশি মানুষকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে সাংবাদিকদের যেমন তীব্র সমালোচনা করেছেন অনেকে, তেমনি সাংবাদিকদের মধ্য থেকেও অনেকে এসব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সাংবাদিক আনিস আলমগীর এ নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, "আজ যেসব পত্রিকায়, এবং গতকাল পর্যন্ত যেসব অনলাইনে বা টেলিভিশনে বসুন্ধরার এমডি'কে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত-প্রচারিত হয়নি, আপনি নিশ্চিত ধরে নেন, তারা মিডিয়ার মালিক হয়েছেন আপনাকে সংবাদ সরবরাহ করার জন্য নয়- নিজেদের অবৈধ ব্যবসা, নিজেদের এবং পরিবারের অপরাধ, অবৈধ কর্মকাণ্ড ঢাকার জন্য। অন্যের মিডিয়া তাকে কামড়ে দিলে পাল্টা কামড়ে দেয়ার জন্য।" বসুন্ধরা গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সায়েম সোবহান আনভীর। তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ফেসবুকে আরেকটি পোস্টে সারওয়ার ই আলম নামে একজন বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশে এক খোলা চিঠিতে লিখেছেন, "দেশে এতবড় একটা চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে গেল, অথচ আপনাদের কাগজে, পোর্টালে বা চ্যানেলে এ নিয়ে একটা খবরও চোখে পড়লো না, বিষয়টি আমার মতো পাঠককে যারপরনাই স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করেছে। আপনারা কি নিজেদের প্রশ্ন করেছেন, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার দাবিতে আপনারা আবার কলম ধরবেন কীভাবে? সুশাসন, আইনের শাসন, ন্যায়বিচারের দাবিতে বড় বড় সম্পাদকীয় লিখতে আপনাদের কি এতটুকু লজ্জা করবে না?" কেন অভিযুক্তের নাম নেই বাংলাদেশের প্রথম সারির কোন কোন সংবাদপত্রে এই খবরটি প্রথম পাতায় ছাপা হলেও কোন কোন পত্রিকায় খবরটি প্রকাশ করা হয়েছে বেশ গুরুত্বহীনভাবে ভেতরের পাতায়। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন না হওয়া সত্ত্বেও এবং সরকারের দিক থেকে এই খবর প্রকাশের ব্যাপারে কোন ধরনের বিধিনিষেধ বা চাপ না থাকার পরও কেন এমনটি হলো- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে খবরটি প্রকাশ করলেও সেখানে মামলার আসামী সায়েম সোবহান আনভীরের নাম উল্লেখ করা ছিল না, ছবিও প্রকাশ করেনি অনেকে। প্রশ্ন উঠেছে এটি নিয়েও। বাংলাদেশের গণমাধ্যম আসলে কতটা স্বাধীন সেই বিতর্ক আবার উস্কে দিয়েছে এই ঘটনা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক শরিফুল হাসান এ বিষয়ে তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, "মামলায় কারও নাম আসার মানে এই নয় যে তিনি অপরাধী। পুলিশ তদন্ত করবে, বিচার হবে। সাংবাদিকরা লিখবে, অনুসন্ধান করবে। কিন্তু দেখেন, এই ঘটনায় আসামির নাম শুনেই আটক হয়ে গেছে স্বাধীন সাংবাদিকতা। অথচ রাষ্ট্র-পুলিশ কেউ বলেনি এই অপরাধীর নাম লেখা যাবে না।" মেয়েটিকে কেন ভিলেন বানানোর চেষ্টা বাংলাদেশে মেয়েরা কোন অপরাধের শিকার হওয়ার পর এজন্যে তাকেই দোষারোপ করার যে প্রবণতা (ভিক্টিম ব্লেমিং), এক্ষেত্রেও কোন কোন গণমাধ্যমে সেই সেটি দেখা গেছে বলে সমালোচনা করেছেন অনেকে। ফাতিমা তাহসিন ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, "বাচ্চা একটা মেয়ে, তাকেও মরার পর ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলতেছে গালি দিয়ে। ভেতরের কাহিনি আমরা কতটুকু জানি? আসল কাহিনি প্রকাশ করা দূরে থাক, অভিযুক্তের নাম পর্যন্ত প্রকাশ করেনি মেইনস্ট্রিম পত্রিকাগুলো।" সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং লেখিকা সুপ্রীতি ধর লিখেছেন, "মেয়েটি লোভী না নির্লোভ, সেটা আমি, আপনি বলার কে? মেয়েটি রক্ষিতা না প্রেমিকা, সেটাও আমরা বলার কেউ নই। একটি মেয়ে মারা গেছে, মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে, তা নিয়ে কথা বলুন।" ঘটনার পর কিছু কিছু গণমাধ্যমে মৃত তরুণীর সঙ্গে সায়েম সোবহান আনভীরের একসঙ্গে তোলা ছবি যেভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, সমালোচনা হয়েছে সেটি নিয়েও। অনেকে মেয়েটির ছবি প্রকাশ করলেও সায়েম সোবহান আনভীরের ছবি প্রকাশ করেনি, কিংবা তার মুখের চেহারা ঝাপসা করে দিয়েছে। বসুন্ধরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রভাবশালী এক শিল্পগোষ্ঠী চ্যানেল আই এ নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে ফেসবুকে এক পোস্টে চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ এজন্যে দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, টেকনিক্যাল ভুলের কারণেই ভিকটিমের পরিবর্তে অভিযুক্তের ছবি ঝাপসা করে প্রচার হয়েছিল। চ্যানেল আই'র বার্তা বিভাগের এই বিবৃতিতে বলা হয়, "ভুলটি অসাবধানতার কারণে হলেও তা চ্যানেল আই'র নীতি-নিষ্ঠ সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।, আমাদের সংবাদে অভিযুক্তের নাম এবং পরিচয়ের বিস্তারিত ছিল। সুতরাং অভিযুক্তের ছবি ব্লার করার কোন কারণ বা ইচ্ছা ছিল না, অসাবধানতার কারণে ভিকটিমের বদলে অভিযুক্তের ছবি ব্লার হয়ে গেছে। আমরা আমাদের এ ভুল স্বীকার করছি।" সাংবাদিকদের দায়ী করা কতটা যুক্তিযুক্ত তবে এই ঘটনার কভারেজকে ঘিরে যেভাবে সাংবাদিকরাই এখন আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন, তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন কেউ কেউ। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের জার্নালিজম, মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন স্টাডিজের বিভাগীয় প্রধান এবং সহযোগী অধ্যাপক মোঃ সামসুল ইসলাম বলছেন, রাষ্ট্র, সমাজ, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সংস্কৃতি- এসবের আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ না করে ব্যক্তি সাংবাদিককে দায়ী করার প্রবণতা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, "সাংবাদিকরা চাকরি করেন। কোন ঘটনার মিডিয়া কভারেজের ব্যাপারে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা নিতান্তই গৌণ। বসুন্ধরার মিডিয়া সাম্রাজ্যকে নাড়া দেয়ার ক্ষমতা এখন কোন মিডিয়ারই নেই। খামাখা সব ব্যাপারে সাংবাদিকদের গালি দিয়ে কে কি অর্জন করছেন তা বুঝতে পারছি না।" অনেকটা একইভাবে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সমালোচনার জবাবে কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলি সাগর লিখেছেন, "এই ঘটনায় প্রত্যেকটি মিডিয়া তাদের 'বেস্ট জাজমেন্ট' অনুসারেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্ত কারও পছন্দ হয়েছে, কারও পছন্দ হয়নি। এই পছন্দ-অপছন্দের খেলায় যারা মিডিয়াকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চাইছেন, কিংবা দেশে কোন সাংবাদিকতা নেই বলে মত দিচ্ছেন, আমি তাদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করি।" তিনি লিখেছেন, বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় সেসব নিয়ে সম্পাদক-সাংবাদিকদের আক্রমণ করাটা অনাকাঙ্ক্ষিত। তাঁর মতে, "এখনো বাংলাদেশে মিডিয়াই জনগণের শেষ ভরসাস্থল। মিডিয়া নিয়ে সমালোচনার আগে এই কথাগুলো যেন আমরা বিবেচনায় রাখি।" | কথিত এক 'আত্মহত্যার' ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশে গতকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে, আর সেই সঙ্গে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে এই ঘটনার মিডিয়া কভারেজ নিয়ে। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসার কথা ছিল "পর্যায়ক্রমে দেশের সবাই টিকা পাবে" - প্রথম টিকা গ্রহীতা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। "এরপর আমরা সারা বাংলাদেশেই দেবো ভ্যাকসিনটা - যাতে আমাদের দেশের মানুষ তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্য সুরক্ষা পেতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করবো। বিশ্বের অনেক দেশ এখনো শুরুই করতে পারেনি। সেখানে আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশ সীমিত অর্থনৈতিক শক্তি নিয়েই আমরা কিন্তু মানুষের কল্যাণে যে কাজ করি তাই প্রমাণ হলো" - বলেছিলেন শেখ হাসিনা। বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকোর মাধ্যমে সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা কেনার চুক্তি করেছিল সরকার। গত নভেম্বরে সম্পাদিত ওই চুক্তি অনুযায়ী সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে বাংলাদেশে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসার কথা ছিল। এরপর জানুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রায় এক হাজার তিনশ কোটি টাকায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদিত তিন কোটি ডোজ টিকা সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে কেনার অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি। তবে কমিটির ওই বৈঠকে টিকা নিয়ে কোন সংকট হতে পারে কিনা, বা সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা পেতে সংকট হলে কিভাবে বাংলাদেশ টিকা পাবে - এসব প্রশ্ন নিয়ে তেমন কোন কথাবার্তা হয়নি। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: বাংলাদেশে কি করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন সম্ভব? করোনা ভাইরাস টিকা: ঘাটতি মেটাতে জোর চেষ্টা বাংলাদেশের বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ভিন্ন তথ্য চুক্তি অনুযায়ী সিরাম ইন্সটিটিউট টিকা না দেয়ায় সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির সদস্য পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলছেন, টিকার ক্ষেত্রে বিকল্প আর কোন উৎস তখনো সরকারের হাতে ছিলোনা বলেই এসব বিষয় তারা তখন বিবেচনায় নেননি। "কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রথমত প্রশ্ন ছিলো মান নিয়ে। কিন্তু যেহেতু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং সিরাম যারা বিশ্বের বৃহৎ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী হিসেবে যাদের সুনাম আছে। এছাড়া আমাদের নিকটতম দেশ। পরিবহনসহ সব ব্যাপারে সহজ ছিলো। সব মিলিয়ে এটা ছিলো ভালো ক্রয়। সেভাবেই সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। ভারতে যে এমন ভয়াবহ অবস্থা হবে কে জানতো তা?" তবে পরিকল্পনামন্ত্রীসহ ভ্যাকসিন ক্রয় প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত একাধিক কর্মকর্তারা বলছেন, আসলে ভারত থেকে ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রে দু-দেশের মধ্যকার বর্তমান সম্পর্কের কারণে - বিশেষ করে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যকার যোগাযোগকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে - তখন ধারণাই করা হয়েছিলো যে সংকট এলেও তা সহজেই সমাধান হয়ে যাবে। মি. মান্নান বলছেন, ক্রয় প্রক্রিয়ায় দু-দেশের মধ্যকার সম্পর্কও বিবেচনায় ছিলো এবং তারা এখনও মনে করেন চলমান সংকটের অবসান হবে শিগগিরই। "তাদের সরকারপ্রধান ও সরকার থেকে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেয়া নিয়ে তাদের অঙ্গীকার তারা রক্ষা করবে। একবার রপ্তানি বন্ধের কথা বলা হয়েছিলো যা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিলো। এরপর তাদের পররাষ্ট্রসচিব আসলেন। অন্যরাও বললেন যে বাংলাদেশকে যে অঙ্গীকার করা হয়েছিলো সেটি রক্ষা করা হবে।" "আমার ধারণা সেখানেই আছে বিষয়টি। আমার ধারণা, উভয় সরকার আলোচনা করে এটা উভয়ের মঙ্গলের জন্য এটার সমাধান করবে। কারণ বন্ধুত্বও সমান গুরুত্বপূর্ণ"। বাংলাদেশে সংক্রমণ ব্যাপক বেড়েছে কিন্তু বাস্তবতা হলো চুক্তির পর সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে দু'টি চালানে এ পর্যন্ত মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে। এরপর থেকে ৩২ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে এলেও চুক্তি অনুযায়ী আর কোন টিকা পায়নি বাংলাদেশ। 'টিকাদান কর্মসূচি ঝিমিয়ে পড়ছে' ফলে জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক শুরুর পর সাতই ফেব্রুয়ারি থেকে দেশজুড়ে শুরু হওয়া টিকাদান কর্মসূচি এখন স্তিমিত হয়ে আসছে পর্যাপ্ত টিকা না থাকার কারণে। আবার প্রথম ডোজ যাদের দেয়া হয়েছে তাদের সবাই এখন দ্বিতীয় ডোজ পাবেন কি-না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এর ফলে প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় থাকা বহু মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। তেমনি একজন বরিশালের মনিকা সরকার। "সদর হাসপাতাল থেকে করোনার প্রথম ডোজ নিয়েছিলাম ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ। এখন তো করোনার অবস্থা খারাপ। দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবো এমন কোন সম্ভাবনা আছে কিনা আমি জানিনা। অনিশ্চয়তার মধ্যেই আছি। মনে হয় পাবো, কিন্তু ভরসা কোথায়?" বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছিলো যে দেশে এ পর্যন্ত এমন প্রথম ডোজ নেয়া ব্যক্তির সংখ্যা ৫৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৬ জন। এর মধ্যে মাত্র ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৮ জন দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন। অন্যদিকে টিকা নেয়ার জন্য এ পর্যন্ত মোট নিবন্ধন করেছেন ৭১ লাখ ৮৪ হাজার ৪০৬ জন। কিন্তু টিকার সংকট তৈরি হওয়ায় প্রথম ডোজের টিকাদানের সংখ্যা কমিয়ে এনেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রথম ডোজের টিকা সহসা পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়েও অনেকের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনই একজন ঢাকার শ্যামলী বেগম, যার পরিবারের একজন সদস্য ইতোমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। "চলতি মাসের ১২ তারিখে রেজিস্ট্রেশন করেছি। কিন্তু টিকা দেয়ার জন্য কোন তারিখ আমি এখনো পাইনি। আশা করি যেন খুব সহজে তারিখটা পেয়ে যাই যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে টিকা দিতে পারি"। টিকা রপ্তানি বন্ধ করে রেখেছে ভারত কিন্তু শ্যামলী বেগমের এমন আশা কতটা পূরণ হবে তা বলা কঠিন। কারণ সিরাম থেকে যে বেসরকারি কোম্পানি টিকা এনে বাংলাদেশ সরকারকে দেয়ার কথা - তারাই এখন ভারত সরকারের সাথে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করছে। কারণ ভারতের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে রেখেছে দেশটির সরকার। দেশটির ১৮ বছরের বেশি প্রায় একশ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার জন্য তারা বরং অন্য দেশ থেকেও টিকা আমদানির চিন্তা করছে । এমন পরিস্থিতিতে সিরাম ইন্সটিটিউট আগামী মাসেও কোন টিকা দিতে পারবে কিনা - তা নিয়ে কোন নিশ্চয়তা নেই। অন্যদিকে ভারত থেকে টিকা পাওয়ার চুক্তি হয়ে যাওয়ার কারণে অন্য কোন দিকে দৃষ্টি দেয়নি বাংলাদেশ। করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছেই এমনকি চীনা টিকার ট্রায়াল নিয়ে যে প্রস্তাব এসেছিলো - সেটি প্রথমে সম্মত হয়েও পরে পিছিয়ে এসেছিলো বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোসহ ধনী দেশগুলো প্রায় সব টিকাই অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে বৈশ্বিক উদ্যোগ অর্থাৎ কোভ্যাক্স থেকে টিকা আসার কথা থাকলেও সেটি কবে আসবে তা চূড়ান্ত হয়নি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাওসার আফসানা বলছেন, চুক্তি করার সময় বিকল্প কম থাকলেও ক্রয়ের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়ার সময় এগুলোর সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনা করলে বাংলাদেশের জন্য এখন এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা সহজ হতো। "বাংলাদেশ তখন শুধুমাত্র অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ওপর নির্ভর করেছে। কিন্তু শুধু এটার ওপর নির্ভর না করে আরও যেসব যেমন রাশিয়া বা চীন আছে - কিন্তু এটিও সত্যি যে রাশিয়া ও চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়নি। কিন্তু মাঝে মধ্যে বাংলাদেশে যেহেতু শক্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আমার মনে হয় তেমন বোল্ড ডিসিশন এখানে নিলে দেশের জন্য ভালো হতো"। একটিমাত্র উৎস থেকে টিকা কেনা কতটা যুক্তিসঙ্গত ছিল? তিনি বলছেন, সিরাম বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের দেশে। তারপরেও ক্রয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার সময় একটি মাত্র কোম্পানিকে সুযোগ দিয়ে একটি মাত্র উৎস থেকে আমদানির পরিকল্পনা কতখানি যুক্তিসংগত হয়েছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। কি প্রক্রিয়ায় কেন এমন সিদ্ধান্ত হলো - তা নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়েছে নানা দিক থেকে। গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলছেন ভ্যাকসিন নিয়ে কাড়াকাড়ি হবে এটা ছিলো অনুমেয় এবং সে কারণেই ক্রয় পরিকল্পনায় সতর্ক থাকার দরকার ছিলো। "এক ধরণের ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম কিন্তু শুরু হয়েছে। ফলে যেসব দেশ তৈরি করতে পারছেনা তাদের কাছে এটা যাওয়া দু:সাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।" চীন ও রাশিয়ার টিকা নিয়ে ভাবনাচিন্তা? "শুধুমাত্র কোন একটি কোম্পানি বা একজন আমদানিকারককে অনুমতি না দিয়ে ব্যক্তি খাতের অনেককে অনুমতি দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি অন্য দেশের ভ্যাকসিনগুলো কিভাবে পাওয়া যাবে সেটিও দেখা উচিত"। তবে ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে ভ্যাকসিন ক্রয় প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই তখন শুধু মাত্র ভারত থেকে ভ্যাকসিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: ভারতকে বাদ রেখে চীনের টিকা স্টোরেজ উদ্যোগে বাংলাদেশের সম্মতি পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ পরিকল্পনা যেসব কারণে বাতিল হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়ের যে তিন ঝুঁকি কক্সবাজারে 'রহস্যময়' বিস্ফোরণ সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বিশ্বমানের টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে "চিকিৎসকের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে,তারাই বলেছিলো যে বিশ্ব স্বাস্থ্য অনুমোদন দেয়নি সেটা গ্রহণ করা ঠিক হবে না। একমাত্র আমেরিকানটা ছিলো - কিন্তু সেটা সংরক্ষণের সক্ষমতা আমাদের নেই। সেজন্য আমরা সেটা উপেক্ষা করেছি। সেগুলো আমরা ম্যানেজ করতে পারবো আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দিলে আমরা আনবো।" "কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে সেটার পরিবর্তন করতে হবে" - বলছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কর্মকর্তারা বলছেন, খুব শিগগিরই চীন থেকে ভ্যাকসিন আনা এবং রাশিয়ার সহায়তা নিজেরাই টিকা তৈরির কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি নিজেরাও ভ্যাকসিন আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আর চলমান সংকটের জরুরি সমাধানে টিকা রপ্তানির ওপর ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য কিছুটা শিথিল করা যায় কিনা - তা নিয়েও জোর তৎপরতা চলছে। বিবিসি বাংলায় আরো খবর: | সাতাশে জানুয়ারি ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | মানসিক রোগ সারা বিশ্বে একটা বড় স্বাস্থ্য সমস্যা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ্য আছেন এমন দুজন তাদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন বিবিসির কাছে। ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেয়ার পর মারাত্মক মানসিক সংকটে পড়া নাদিয়া সারওয়াত সপ্তাহখানেকের জন্য ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। ওই ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে নাদিয়া সুস্থ্য হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মার খাওয়ার অভিজ্ঞতা ভুলতে পারেননি। "পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস বা বেবি ব্লু নামে পরিচিত মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলাম। বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হচ্ছিলনা তাই ক্লিনিকে ভর্তি হই। যে কয়দিন ছিলাম রাতে আমার ঘুম হতো না। কোথায় আছি, কেন আছি কিছু বুঝতে পারতাম না। বাচ্চাকে খুঁজতাম ঘুরে ঘুরে। নার্সদের কাছে বার বার গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম। আসলে আমি ভুলে যেতাম যে আমি হয়তো ৫ মিনিট আগেই তাকে আরেকবার নক করেছি। তো নার্স বিরক্ত হয়ে এক পর্যায়ে আমাকে চিৎকার করে বলে যান এখান থেকে আর ঘুষি মারে আমাকে।" নিজের অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ থেকে নাদিয়া সারওয়াত বলেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হয় মানসিক রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবার করাটাই যেন স্বাভাবিক বিষয়। "রোগীকে গায়ে হাত তোলা কীভাবে সম্ভব? যেখানে আমার চিকিৎসা হচ্ছে। সেখানে চিকিৎসা নিয়েই কিন্তু আমি সুস্থ্য হয়েছি। তার মানে যে হাসপাতালটা প্রতিষ্ঠিত, রোগীদের সুস্থ্য করছে তারাও রোগীদের সঙ্গে এভাবে ট্রিট করছে। ধরেই নেয়া হয় যে মানসিক রোগী হলে গায়ে হাত তোলা যায়।" হাসপাতালে ভর্তি বেশিরভাগ রোগী দুর্ব্যবহারের শিকার হন বলে অভিযোগ পরিচয় গোপন রেখে আরেকজন ভুক্তভোগী বিবিসিকে জানান, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তাকে প্রথমেই শান্ত করতে মেঝেতে চেপে ইনজেকশন দেয়া হয়। সম্প্রতি একটি ক্লিনিকে নিহত পুলিশ কর্মকর্তার ভিডিও দেখে এই ভুক্তভোগী বলেন তাকেও একইভাবে মেঝেতে চেপে ধরা হয়েছিল। "ওনারা আমাকে একইভাবে মেঝেতে চেপে ইনজেকশন দেয়। ওই সময় এতটা বাধার সৃষ্টি হয়েছিল যে দুই তিনজন আমার দ্বারা আহত হয়েছিলেন বলে জেনেছি। ব্যাপারটা হচ্ছে এরকম, তাদের এটা তাদের একটা ট্রেডিশন বলেই মনে হয়েছে যে যখনই কোনো নতুন রোগী ভর্তি করে তাকে ফিজিক্যালি ডোমিন্যান্স নিয়ে নেয় যাতে রোগী পরে কোনোরকম বাড়াবাড়ি না করে।" ভারসাম্যহীন রোগীকে নিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা রয়েছে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি নিজেও একজন চিকিৎসক। সামর্থ্য থাকায় তিনি বিদেশে সেবা নিয়ে সুস্থ্য হয়েছেন। "আমি বলবো যে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে সেটা অত্যাধুনিক না। সাধারণত সিডেটিভ দিয়ে অথবা হিপনোটাইজিং কোনো একটা ড্রাগ দিয়ে রোগীকে সারাদিন বিছানায় ফেলে রাখাটাই হচ্ছে আমাদের দেশে একটা কমন ট্রেন্ড। দেশের বাইরে গিয়ে মনে হয়েছে যে তাদের কাউন্সিলিং এবং আচরণ আমার অর্ধেক রোগ সারিয়ে তুলেছে।" ওই ভুক্তভোগী চিকিৎসকের ভাষায়, "আমি নিজেও একজন ডাক্তার আমি বুঝেছি যে আমার কী ক্ষতিটা করা হয়েছে। বাংলাদেশে চিকিৎসায় আমার কী ক্ষতি হয়েছে সেটা আমার চেয়ে বেটার আর কেউ বুঝে নাই।" আরো পড়তে পারেন মানসিক স্বাস্থ্য: চিকিৎসা নিতে অনাগ্রহ, বিশেষজ্ঞের সংখ্যাও নগণ্য মানুষ মানসিক রোগের চিকিৎসা নিতে যায় না কেন? মানসিক স্বাস্থ্যকে কেন এত অবহেলা? ঢাকায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ভারসাম্যহীন রোগী নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এদিকে বাস্তবতা হলো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রোগীরা অনেকসময় চরম সহিংস হয়ে ওঠেন। তাদেরকে সামলাতে চিকিৎসার অংশ হিসেবেই ওষুধ প্রয়োগের পাশাপাশি কিছু বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি রয়েছে। মনরোগ চিকিৎসক মেখলা সরকার বলছেন, "ওষুধ দেয়ার পরও যখন ভায়োলেন্স নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না সেক্ষেত্রে রেস্ট্রেইনের ব্যাপার রয়েছে। ফিজিক্যাল রেস্ট্রেইনটা হলো চিকিৎসার একটা অংশ। এটা রোগীর মর্যাদা সম্মান নিশ্চিত করেই এটা করতে হয়। এক্ষেত্রে যাতে রোগী ব্যাথা না পায়, শিকল দড়ি দিয়ে বেধে নয়। রেস্ট্রেইন করার আলাদা ব্যান্ড পাওয়া যায় বা আলাদা জ্যাকেট আছে সেটা পরিয়ে রোগীকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।" মেখলা সরকার বলেন, মানসিক রোগীদের সেবার জন্য দক্ষ প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী দরকার হয়। এটা বাংলাদেশে একটা বড় সংকটের জায়গা। মানসিক হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সঙ্গে আচরণ নিয়ে প্রশ্ন "আমাদের যারা ওয়ার্ড বয়, নার্সরা আছেন যেহেতু অ্যাগ্রেসিভ রোগীদের সামলাতে হয়। তাদের ওপরেই প্রধান চাপ থাকে। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় বেশিদিন তারা এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে থাকতে চায় না। প্রতিনিয়ত বদলাতে থাকে তাই তাদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে তৈরি করার সুযোগটা কম থাকে। এটা একটা বিরাট বড় সীমাবদ্ধতা।" মানসিক স্বাস্থ্য খাতে অবহেলা আর সংকট এদিকে বাস্তবতা হলো পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না গেলে কাউকে মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয় না। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দেয়া তথ্যে বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৮.৫ শতাংশ এবং শিশু কিশোরদের ১২.৬ শতাংশ কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত। তবে কুসংস্কার অজ্ঞতা আর সুযোগ কম হওয়ায় থাকায় মানসিক রোগীদের শতকরা ৯২ ভাগই থাকেন চিকিৎসা সেবার বাইরে। সারাদেশে মানসিক রোগের চিকিৎসা দেয়ার জন্য পর্যপ্ত সুযোগ সুবিধা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার দিকটি বড় অবহেলার শিকার। "ভীষণ অবহেলা ছিল এখানে। যেমন আমাদের হেলথ বাজেটের মাত্র (দশমিক দুই শতাংশ) জাতীয় বাজেটের কথা বলছি না স্বাস্থ্যখাতের বাজেটের মাত্র .২% খরচ করা হতো। এখন কিছুটা বেড়েছে। এত বছরে আমরা মাত্র দুইশর কিছু বেশি সাইক্রিয়েটিস্ট তৈরি করতে পেরেছি। যা দরকার এটা তার তুলনায় খুবই কম"। অধ্যাপক হেদায়েতুল ইসলাম দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে মানসিক রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন মানসিক রোগের চিকিৎসায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং পাবনা মানসিক হাসপাতালের বাইরে মেডিকেল কলেজগুলোতে কিছু চিকিৎসা সুবিধা আছে যা পর্যাপ্ত নয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং পাবনা মানসিক হাসপাতালের দীর্ঘসময় পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক হেদায়েতুল ইসলাম। বাংলাদেশে অর্ধশতাব্দীর বেশি মানসিক চিকিৎসা সেবার সঙ্গে যুক্ত এই বিশেষজ্ঞ জানান মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র হিসেবে ১৬৮টি বেসরকারি ক্লিনিক মানসিক রোগেরও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে যেগুলো মানসম্মত নয়। "প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুযোগ সুবিধা বাড়ানো উচিৎ। সবচে বড় কথা হলো সেবার মাধ্যমেই আমাদের এটাকে জনপ্রিয় করতে হবে। যে কুসংস্কার এবং প্রেজুডিস যেগুলো চালু আছে সেগুলো দূর করতে বহু সময় লাগে। আমার জীবনেরতো আমি ষাট বছর কাটিয়ে দিলাম এর পেছনে। তাতে দেখা যাচ্ছে যে এখন উন্নতি বেশ কিছুটা হয়েছে কিন্তু সুযোগ নাই, সুযোগটা সীমিত", বলেন মি. ইসলাম। এদিকে যেটুকু সুযোগ সুবিধা আছে সেখানে মানসিক রোগের মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে যথাযথ নজরদারির প্রশ্ন রয়েছে। সেটি যথাযথ হচ্ছে না সেটি পুলিশ কর্মর্তার মৃত্যুর ঘটনায় স্পষ্ট। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও স্বীকার করা করা হচ্ছে যে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় যথাযথ মনিটরিং সম্ভব হচ্ছে না। | ঢাকায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মানসিক চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়ে পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর পর মানসিক রোগীদের সঙ্গে আচরণের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশে মানসিক সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, মারপিট এবং শারিরীক নির্যাতন একটা স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | ষাটের দশকে 'ব্রা বার্নিং ফেমিনিস্ট' বাক্যটির জন্ম হয় দেশটির জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও গায়িকা সিওলি ইনস্টাগ্রামে এমন একটি ছবি পোস্ট করার পর এই বক্ষবন্ধনী মুক্ত আন্দোলন বা ব্রালেস মুভমেন্ট দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ইনস্টাগ্রামে সিওলির রয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন অনুসারী। এরপর থেকে সিওলি বক্ষবন্ধনীর বিরুদ্ধে আন্দোলনের একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছেন তিনি, যার মাধ্যমে নারীরা একটি বার্তা ছড়িয়ে দিতে চান যে, ব্রা বা বক্ষবন্ধনী পরা না পরা একজন নারীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিষয়। বক্ষবন্ধনী মুক্ত আন্দোলন তবে অনেকের সমর্থন পাওয়া সত্ত্বেও অনেক নারী ও পুরুষের কাছ থেকে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার শিকারও হয়েছেন সিওলি। সমালোচনাকারীরা তাকে 'মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টাকারী' এবং উসকানিদাতা বলে অভিযোগ করেন। অনেকে মনে করেন, তিনি নিজের নামডাক কামানোর উদ্দেশ্যে নারী আন্দোলনকে ব্যবহার করছেন। ''আমি বুঝতে পারি যে, ব্রা পরা না পরার ব্যাপারটা আপনার ইচ্ছার ব্যাপার, কিন্তু তিনি সবসময়েই আটোসাঁটো জামা পরে ছবি তোলেন, সবসময়ে তিনি এটা না করলেও পারেন,'' একজন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন। একজন লিখেছেন, ''ধিক্কার তোমাকে। তুমি কি এভাবে গির্জায় যেতে পারবে? তুমি কি তোমার বোনের স্বামী বা তোমার শ্বশুর-শাশুড়ির সামনে যেতে পারবে? এতে শুধু পুরুষরাই নয়, নারীরাও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না।'' একজন মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি হাওয়াসা নামের আরেকজন বিখ্যাত গায়িকার ছবি এই হ্যাশট্যাগ নো ব্রা আন্দোলনকে আবার আলোচনায় তুলে এনেছে। আরো পড়ুন: 'শাড়ি' নিয়ে লেখা, সামাজিক মাধ্যমে তুলকালাম এ্যান লিস্টার: আধুনিক যুগের 'প্রথম লেসবিয়ান নারী' 'প্রত্যেক পুরুষ আপনার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়' সুইমিং পুলে বুরকিনি পরে নিষেধাজ্ঞা ভাঙ্গলেন নারীরা প্রসাধনী ছাড়া বাইরে বের হবার পর দক্ষিণ কোরিয়ার ইউটিউব স্টার লিনা বেই হত্যার হুমকিও পেয়েছেন ইচ্ছার স্বাধীনতা হংকংয়ের একটি কনসার্ট থেকে সোলে ফেরার পথে বক্ষবন্ধনী ছাড়া সাদা টি-শার্ট পরা অবস্থায় তার ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ নারীদের মধ্যেও এই আন্দোলনটি ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে দেশটির নারীদের মধ্যে ইচ্ছার স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১৮ সালে 'এস্কেপ দি কর্সেট' নামের আন্দোলন হয়েছিল দেশটিতে, যখন অনেক নারী তাদের লম্বা চুল কেটে ফেলেন এবং প্রসাধনী ছাড়া বাইরে বের হতে শুরু করেন। সেসব ছবিও তারা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন। এই আন্দোলনের মূল শ্লোগানটি এসেছিল নারীদের অবাস্তব সৌন্দর্য চর্চার বিরুদ্ধে, যে চর্চ্চা করতে গিয়ে নারীরা মেকআপের পেছনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন। অনেক নারী বিবিসিকে বলেছেন যে, তারা মনে করে, এই দুইটি আন্দোলনের মধ্যে অবশ্যই যোগসূত্র আছে এবং যেভাবে এই দুইটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে, সেটা নতুন ধরণের আন্দোলনের সূচনা করছে। গেজ রেপ বা চোখ দিয়ে ধর্ষণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা পুরুষ আধিপত্যের সংস্কৃতি, যৌন সহিংসতা এবং বিশ্রামকক্ষ ও জনসমাগমের স্থানে গোপন ক্যামেরার ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। ২০১৮ সালে দেশটিতে নারীদের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ ঘটে, যেখানে হাজার হাজার নারী সোলের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন এবং গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর দাবি জানান। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার কোন কোন নারী বিবিসিকে বলেছেন,তারা এখন বিষয়টি নিয়ে অনেকটা দ্বিধান্বিত। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বরিস জনসনের দফায় দফায় পরাজয় পৃথিবীর বাইরে অন্যান্য গ্রহে আবহাওয়া কেমন? রাতে ইন্টারনেট বন্ধ রোহিঙ্গা শিবিরে, বিদেশি এনজিও বন্ধ ব্রিটেনের ওলট-পালট রাজনীতি নিয়ে পাঁচটি প্রশ্ন দক্ষিণ কোরিয়ার সামাজিক মাধ্যমে # নো ব্রা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে কারণ তারা বক্ষবন্ধনী মুক্ত আন্দোলনকে সমর্থন করছেন, কিন্তু জনসম্মুখে নিজেরা বক্ষবন্ধনী ছাড়া যেতে সাহস পাচ্ছেন না। তাদের আশংকা মানুষজন হয়তো তাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। ২৮ বছর বয়সী জিয়ঙ সিয়ঙ-ইয়ুন 'নো ব্রাব্লেম' নামে একটি তথ্যচিত্রের নির্মাণ দলের সদস্য ছিলেন। তথ্যচিত্রটি বক্ষবন্ধনী ছাড়া বাইরে যাওয়া নারীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। মিজ সিয়ঙ-ইয়ুন বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি এই প্রকল্পটি শুরু করেন, যেটি করার সময় তারা নারীদের প্রশ্ন করেছিলেন, ''কেন আমরা মনে করি যে, ব্রা পড়া স্বাভাবিক একটা ব্যাপার?" পছন্দ করার অধিকার যদিও তিনি মনে করেন, নারীদের এই বিষয়টি নিয়ে জনসমক্ষে আলোচনা করার বিষয়টি ভালো। তবে তিনি এটাও বিশ্বাস করেন যে, বেশিরভাগ নারী এখনো এটা ভেবে লজ্জাবোধ করে যে জামার উপর দিয়ে তাদের স্তনবৃন্ত ফুটে উঠবে। ''তারা জানে যে, এখনো দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্রা ব্যবহার করাটা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে করা হয় এবং এ কারণেই তারা ব্রা পড়তে চায়।'' তিনি বলছেন। ২৪ বছর বয়সী পার্ক আই-সেউল দক্ষিণ কোরিয়ার একজন মডেল যিনি ইতিবাচক শারীরিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। গত বছর তিনি একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেন, যেখানে তাকে কোন বক্ষবন্ধনী ছাড়া রাজধানী সোলে তিনদিন ধরে চলাফেরার করতে দেখা যায়। ওই ভিডিওটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়, ২৬ হাজার মানুষ সেটি দেখেছেন। তিনি বলছেন, তার অনেক অনুসারী এখন মধ্যবর্তী পন্থা হিসাবে ফিতা যুক্ত ব্রার পরিবর্তে নরম কাপ ব্রালেট ব্যবহার শুরু করেছেন। ''আমার একটি ভুল ধারণা ছিল যে, যদি আমরা ফিতা যুক্ত বক্ষবন্ধনী না পরি, তাহলে আমাদের স্তন ঝুলে যাবে এবং খারাপ দেখাবে। কিন্তু আমি ওই ভিডিওটি তৈরি করার পর থেকে আমি আর সেগুলো পরি না। এখন আমি গরমের দিনগুলোয় ব্রালেট পড়ি, আর শীতের দিনগুলোয় কোন বক্ষবন্ধনীই পরি না।'' তবে আন্দোলন শুধু মাত্র রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ নয়। অনেক নারী এখন বক্ষবন্ধনীর পরিবর্তে স্তনবৃন্ত ঢেকে রাখার প্যাচ ব্যবহার করছেন এই আন্দোলন অনুপ্রাণিত করেছে ডেইগুর ২২ বছর বয়সী উদ্যোক্তা এবং ভিজুয়াল ডিজাইনার নাহয়ুন লিকেও । তিনি কেইমইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স প্রজেক্টের অংশ হিসেবে ইয়াপ্পি নামের একটি পপ-আপ ব্রান্ড শুরু করেছিলেন। গত মে মাস থেকে তিনি এই ব্রান্ডের নামে স্তনবৃন্ত ঢেকে রাখার প্যাচ বিক্রি করতে শুরু করেছেন। জেওল্লানাম-ডু প্রদেশের ২৮ বছর বয়সী ডা-কিয়ুং বলছেন, তিনি গায়িকা ও অভিনেত্রী সিওলির ছবি দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং শুধুমাত্র অফিসে যাবার সময় তিনি বক্ষবন্ধনী পরে যান, যখন বস সামনে থাকে। কিন্তু ছেলে বন্ধুর সামনে যাবার সময় আর সেটি পরেন না। ''আমার বয়ফ্রেন্ড বলেছে, যদি আমি বক্ষবন্ধনী পড়ে স্বস্তি বোধ না করি, তাহলে আর সেটি পরার দরকার নেই,'' তিনি বলছেন। তাদের বক্তব্য হলো, নারীরা কি পরবেন আর পরবেন না, সেটা বাছাই করার স্বাধীনতা তাদেরই। কিন্তু বক্ষবন্ধনী পরার ব্যাপারে গবেষণা কি বলছে? বক্ষবন্ধনী ব্যবহার না করলে কি স্বাস্থ্যের সমস্যা হয়? ড. ডেইড্রে ম্যাক গি একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এবং ইউনিভার্সিটি অফ উলনগোং-এর ব্রেস্ট রিসার্চ অস্ট্রেলিয়ার সহ-পরিচালক। '' আমি বিশ্বাস করি, নারীরা কি পরবেন, সেটা ঠিক করার অধিকার তাদের আছে। কিন্তু আপনার স্তন যদি অনেক ভারী হয়ে থাকে এবং সেজন্য শরীরে যদি যথেষ্ট সাপোর্ট না থাকে, তাহলে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সেটার প্রভাব পড়তে পারে, যার মধ্যে রয়েছে গলা এবং শরীরের পেছনের অংশ।'' তিনি বলছেন। ''বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের শারীরিক গঠনের পরিবর্তন হয়, চামড়ায় পরিবর্তন আসে এবং এ ধরণের প্রাকৃতিক সাপোর্টও কমে আসে।'' '' যখন নারীরা এ জাতীয় সাপোর্ট ছাড়া ব্যায়াম করেন, তখন স্তন নড়াচড়া করে। তখন স্পোর্টস ব্রা ব্যবহার করলে স্তনের ব্যথা কমাতে পারে, সেই সঙ্গে তাদের পেছনে ও গলায় ব্যথা হওয়া ঠেকাতে পারে।'' তিনি বলছেন। ''একইভাবে, আপনার স্তন দেখতে কেমন দেখাচ্ছে বা নড়াচড়া করছে, এ নিয়ে যদি বিব্রত হন বা আত্মসচেতন হন, তাহলে আপনিও অসহায় আচরণের ভেতর দিয়ে যাবেন। যে নারীদের স্তন কেটে ফেলতে হয়েছে, তাদের অনেককে আমি পরামর্শ দেবো বক্ষবন্ধনী ব্যবহার করার জন্য, যাতে তাদের আচরণ আর আত্মবিশ্বাসে সমস্যা না হয়।'' ''আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, এমনকি যে নারীদের স্তন থাকে না, যেমন ধরুন অপারেশন করে স্তন কেটে ফেলার মতো ঘটনার পরেও, অনেক নারী ওই জায়গাটি ঘিরে রাখতে চান, যেহেতু স্তন আমাদের লিঙ্গ পরিচয়েরও অন্যতম অংশ।'' ইউনিভার্সিটি অফ পোর্টসমাউথের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ড. জেনি বারবেজ বলছেন, বক্ষবন্ধনী ব্যবহার করে যে নারীরা অস্বস্তি বোধ করেন বা ব্যথা বোধ করেন, তার কারণ আসলে 'ঠিক মাপের বক্ষবন্ধনী' ব্যবহার না করা। ''আমাদের গবেষণা দল যতটা জানে, কোন গ্রহণযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত গবেষণায় পাওয়া যায়নি যে, বক্ষবন্ধনী ব্যবহারের সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের সম্পর্ক আছে।'' তিনি বলছেন। তবে এটাই প্রথম ঘটনা নয় যে, নারীরা বক্ষবন্ধনীর বিপক্ষে আন্দোলন করেছেন। ১৯৬৮ সালে মিস আমেরিকা সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভের পর 'ব্রা বার্নিং ফেমিনিস্ট' বাক্যটির জন্ম হয়, যার মানে বক্ষবন্ধনী পোড়ানো নারীবাদীরা। সেই আন্দোলনের সময় নারীরা যেসব জিনিস আবর্জনার বাক্সে ছুড়ে ফেলেন, তার মধ্যে ছিল বক্ষবন্ধনীও, যেটিকে তারা নারীদের দমন করার একটি প্রতীক বলে মনে করতেন। যদিও তারা আসলে কখনোই বক্ষবন্ধনী পোড়ান নি। এরপর থেকে 'বক্ষবন্ধনী পোড়ানো' শব্দ দুইটি নারী স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। এ বছর জুন মাসে, সুইজারল্যান্ডের কয়েক হাজার নারী বেতনের সমতা, যৌন হয়রানি আর সহিংসতার প্রতিবাদে আন্দোলনের অংশ হিসাবে তাদের অফিস থেকে বেরিয়ে আসেন, বক্ষবন্ধনী পোড়ান আর সড়ক অবরোধ করেন। বিশ্বজুড়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরিতে ১৩ই অক্টোবর তারিখটিকে 'নো ব্রা' বা বক্ষবন্ধনীহীন দিবস বলে পালন করা হয়। কিন্তু গত বছর ফিলিপিন্সের নারীরা ওই দিনটিকে বৃহত্তর লিঙ্গ সমতার দিন হিসাবে পালনের আহবান জানান। সাংবাদিক ভেনেসা আলমেদা বলছেন, 'নো ব্রা ডে' হচ্ছে আমাদের নারীত্ব এবং একজন নারী হিসাবে স্বীকৃতির দিবস। ''বক্ষবন্ধনী তুলে ধরছে কিভাবে নারীকে দাসত্বের মধ্যে আটকে রাখা হচ্ছে'' তিনি বলছেন। আন্দোলনকারীরা এ বছর আরো একধাপ এগিয়ে স্তনবৃন্ত নিয়ে রাখঢাকের ব্যাপারে নারী ও পুরুষের মধ্যে দ্বিমুখী আচরণের বিষয়টি সামনে তুলে এনেছেন। ২০১৪ সালে নেটফ্লিক্স একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে যার শিরোনাম ছিল 'ফ্রি দ্যা নিপল'। সেখানে দেখানো হয় নিউইয়র্কের একদল তরুণী নারীদের স্তন নিয়ে অপরাধ এবং রাখঢাকের ব্যাপারে আন্দোলন করছেন। সেটা থেকেই বিশ্ব জুড়ে 'ফ্রি দ্যা নিপল' আন্দোলনটি ছড়িয়ে পড়ে। মেয়েদের শরীর নিয়ে বিশ্বজুড়ে যে বিধিনিষেধের কথা শোনা যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক 'নো ব্রা' আন্দোলন সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সামনে নিয়ে এসেছে। যে নারীরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তাদের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি প্রমাণ করছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ায় এখনো সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশটির অনেক নারীর কাছে 'ব্যক্তি স্বাধীনতার' ব্যাপারটি এখন জরুরি একটা ব্যাপার। দক্ষিণ কোরিয়ার নারীদের মধ্যে যেভাবে আন্দোলনটির বিস্তৃতি হচ্ছে, তাতে এই হ্যাশট্যাগের ব্যবহার হয়তো ততদিন পর্যন্ত কমবে না যতদিন পর্যন্ত 'নো ব্রা' বা বক্ষবন্ধনী ব্যবহার না করার ব্যাপারটি স্বাভাবিক একটি ঘটনায় পরিণত হবে। | দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা ইদানিং ব্রা বা বক্ষবন্ধনী ছাড়াই পোশাক পরা ছবি অনলাইনে প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেশটির নারীদের মধ্যে ক্রমশঃই 'হ্যাশট্যাগ নো ব্রা' ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | পুরো উনবিংশ শতাব্দী জুড়ে পশ্চিম আফ্রিকার প্রায় প্রতিটি মানচিত্রে কং পর্বতমালা দেখানো হয়েছে। এই সুবিশাল পর্বতমালাকে উনবিংশ শতাব্দীতে পশ্চিম আফ্রিকার প্রায় সব মানচিত্রে বেশ স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে। অথচ এই পর্বতমালা যুগ যুগ ধরে ইউরোপীয় পর্যটকদের জন্য শুধুই কল্পনার খোরাক জুগিয়েছে, এর আদতে কোন অস্তিত্বই কখনও ছিল না। তাহলে মানচিত্র যা একটা বৈজ্ঞানিক দলিল, তাতে এই পর্বতমালা স্থান পেল কীভাবে? মানচিত্র তৈরিতে 'ভূতুড়ে' ঘটনা? মানচিত্র তৈরির ইতিহাসে এই পর্বতমালা একটা ''ভূতুড়ে'' ঘটনার কিংবদন্তি হয়ে আছে, বলছেন সাংবাদিক এবং অন দ্য ম্যাপ বইয়ের লেখক সাইমন গারফিন্ড। মানুষ কীভাবে বিশ্বকে দেখে এবং মানচিত্র কীভাবে পৃথিবীকে দেখায় তার মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে তিনি এই বই লিখেছেন। স্কটল্যান্ডের একজন অভিযাত্রী মাঙ্গো পার্ক পশ্চিমের মানুষের কাছে প্রথম কং পর্বতমালার বর্ণনা দেন। তিনি আফ্রিকায় গিয়েছিলেন নিজার নদীর উৎস সন্ধানে এবং ১৭৯৫ থেকে ১৭৯৭ পর্যন্ত তার ওই অভিযানে তিনি আজকের সেনেগাল আর মালিতে গিয়ে পৌঁছেছিলেন। আঠারোশ শতাব্দীর শেষ দিকে স্কটল্যান্ডের একজন অভিযাত্রী মাঙ্গো পার্ক পশ্চিমের মানুষের কাছে প্রথম কং পর্বতমালার বর্ণনা দিয়েছিলেন। তার ভ্রমণ কাহিনি লন্ডনে প্রকাশিত হয় ১৭৯৯ সালে। ওই বইয়ের সাথে ছিল একটি মানচিত্র যেটি এঁকেছিলেন ইংরেজ মানচিত্র বিশারদ (কার্টোগ্রাফার) জেমস রেনেল। ওই মানচিত্রে তিনি দেখান বিষুব রেখার দশ ডিগ্রি উত্তরে পশ্চিম আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অংশ বরাবর ছড়িয়ে আছে কং পর্বতমালা। কিন্তু কীভাবে যে তৈরি হয়েছিল সেই মানচিত্র তা একটা ভৌতিক রহস্য। এই পর্বতমালার নাম দেয়া হয়েছিল কং শহরের নামে। কং রাজত্বের রাজধানী ছিল ওই কং শহর। তাদের রাজত্বের প্রাণকেন্দ্র ছিল বর্তমানের আইভরি কোস্ট এবং তার চারপাশ ঘিরে বার্কিনা ফাসোর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। মরীচিকা নাকি আবিস্কার? এটা প্রমাণ করা খুবই কঠিন যে, মি. পার্ক কি ওই পর্বতমালা আদৌ নিজের চোখে দেখেছিলেন, নাকি এই পর্বতমালার অস্তিত্ব তিনি আবিস্কার করেছিলেন? "হয়ত তিনি পাহাড়ের মরীচিকা দেখেছিলেন, অথবা একগুচ্ছ মেঘ দেখে তার দৃষ্টিভ্রম হয়েছিল যেটাকে তিনি পর্বতমালা বলে মনে করেছিলেন,'' বলছেন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক এবং পশ্চিম আফ্রিকার ভৌগলিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ টমাস ব্যাসেট। "এরপর তিনি হয়ত অন্য পর্যটক ও বণিকদের জিজ্ঞেস করেছিলেন ওই জায়গায় কোন পর্বতমালা আছে কিনা এবং তারা হয়ত উত্তরে বলেছিলেন হ্যাঁ।" তবে অধ্যাপক ব্যাসেট বিবিসিকে বলেছেন রহস্যের ইতি এখানেই নয়। নিজার নদীর উৎপত্তি নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে তার মূলে রয়েছে কং পর্বতমালার 'আবিস্কার' পশ্চিম আফ্রিকার সেই সময়কার ভৌগলিক মানচিত্র নিয়ে অন্যতম সবচেয়ে বড় এই রহস্য বুঝতে হলে "নিজার নদীর গতিপথ নিয়ে যে তত্ত্বগত বিতর্ক রয়েছে, এই কং পর্বতমালার অস্তিত্বকে সেই বিতর্কর পটভূমিতে বিচার করতে হবে।" এই মানচিত্র বিশেষজ্ঞ মি. ব্যাসেট বলছেন, "কং পর্বতমালা যে আছে, সেটার মূল কারণ জেমস রেনেলের তৈরি মানচিত্র। এই পাহাড় নিয়ে পরস্পরবিরোধী অনেক তত্ত্ব রয়েছে। কিন্তু মি. রেনেল কং পর্বতমালাকে মানচিত্রে তুলে ধরেছেন তার নিজস্ব ব্যাখ্যার নিরিখে।" 'পশ্চিম আফ্রিকায় স্বর্ণ ভাণ্ডার' সেসময়কার অন্যতম সবচেয়ে আস্থাভাজন ও সুপরিচিত ভূগোল বিশারদ মি. রেনেল যুক্তি দিয়েছিলেন যে, নিজার নদী আতলান্তিক মহাসাগর থেকে পূব মুখ দিয়ে আফ্রিকা মহাদেশে প্রবাহিত হয়েছে, এরপর ওই নদী স্থলভাগের কোন বদ্বীপের ভেতর হারিয়ে গেছে। এখন কং পর্বতমালার অস্তিত্ব যদি সত্য হয়, তাহলে তার তত্ত্বও সত্যি বলে প্রমাণ করা সহজ হবে: অর্থাৎ বলা যাবে, এই বিশালায়াতন পাহাড়ে বাধা পাবার কারণেই নদীটি দক্ষিণ মুখে প্রবাহিত হয়ে বেনিন উপসাগরে পড়তে পারবে না। কিন্ত বাস্তব সত্য হল নিজার নদী গাল্ফ অফ বেনিন উপসাগরে গিয়ে আসলেই পড়েছে। আরও পড়তে পারেন: পশ্চিম আফ্রিকার ভূগোল নিয়ে মানচিত্র নির্মাতা জেমস রেনেল যে তত্ত্ব দেন তা কং পর্বতমালার অস্তিত্বের পক্ষে। রেনেল যে মানচিত্র এঁকেছিলেন, তা ওই এলাকায় ব্যাপক প্রভাব রেখেছিল। উনবিংশ শতাব্দীতে আফ্রিকার যত মানচিত্র আঁকা হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোতে কং পর্বতমালার অবস্থান দেখানো হয়েছে। তবে তার আকারে ও বিস্তৃতিতে বিভিন্ন মানচিত্র নির্মাতার কল্পনার প্রতিফলন দেখা গেছে। কোন কোন মানচিত্রে দেখা গেছে এই পর্বতমালা আফ্রিকা মহাদেশের পুরো পশ্চিম থেকে পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত- সাহারা মরুভূমি এবং আফ্রিকার মধ্যাঞ্চলের মধ্যে একটি দেয়ালের মত। মানচিত্রে এই পর্বতমালার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে নীল রং দিয়ে এর "খুবই উচ্চ অংশগুলো" চিহ্ণিত করা হয়েছে, এবং এর ঢাল দেখানো হয়েছে অনেকটা বন্ধ্যা অঞ্চল হিসাবে- কিন্তু পর্বতের এই বন্ধ্যা অংশকে স্বর্ণ-সমৃদ্ধ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অনেক ইউরোপীয়ান মনে করতেন এই পর্বতমালা "পশ্চিম আফ্রিকার স্বর্ণ ভাণ্ডার", বলা হতো বর্তমানের ঘানা দেশের আশান্তি সম্রাটদের বিপুল অর্থ সম্পদের উৎস ছিল এই পাহাড়ে সঞ্চিত সোনার খনিগুলো। বহু মানচিত্রে এই পর্বতমালাকে দেখানো হয়েছিল সাহারা মরুভূমি ও আফ্রিকার বাদবাকি অঞ্চলের মধ্যে একটা দেয়াল হিসাবে এরপর ১৮৮৯ সালে, ফরাসী একজন অভিযাত্রী লুই গুস্তাফ বিংগার নিজার নদী বরাবর তার নিজস্ব অভিযাত্রা নিয়ে যে খবর দেন তা চমকে দেয় মানুষকে। প্যারিসের জিওগ্রাফিকাল সোসাইটিকে তিনি জানান যে কং পর্বতমালা আদতেই নেই। কখনও এমন কোন পাহাড়ই সেখানে ছিল না। আর যাদুর মত এই বিশাল পর্বতমালা হঠাৎ করেই যেভাবে মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করেছিল, সেভাবেই হঠাৎ করে তা কর্পূরের মত উবে যায়। 'মানচিত্র সমাজের ছবি' তবে অধ্যাপক ব্যাসেট বলছেন, এই পর্বতমালার অস্তিত্ব নিয়ে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ যাই থাকুক না কেন, যে পাহাড় ছিলই না, সেই পাহাড়কে মানচিত্রে ঢোকানোর ঘটনা অন্তত এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, মানুষ তার নিজের পক্ষপাত তুলে ধরতে বা তার দৃষ্টি দিয়ে অন্যদের কোন কিছু দেখাতে এমনকি মানচিত্রকেও ব্যবহার করেছে, যে মানচিত্রকে আমরা সবসময় ধ্রুব সত্য এবং বস্তুনিষ্ঠ বলে সবসময় জেনে এসেছি। তিনি এক নিবন্ধে লিখেছেন, "ভৌগলিক মানচিত্র সাধারণভাবে সমাজের বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে সংগৃহীত ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে একটা দেশ বা শহরের সামাজিক ছবি।" ফরাসী অভিযাত্রী লুই গুস্তাফ বিংগারের এক অভিযাত্রার পর কং পাহাড় যে কল্পনাপ্রসূত সে তথ্য বাইরে আসে অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে মানচিত্রে "ভৌগলিক দিক দিয়ে আগ্রহের দারুণ দারুণ অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হতো," বলছেন অধ্যাপক ব্যাসেট। যেমন ষোড়শ শতাব্দীতে মানচিত্র নির্মাতা অর্টেলিয়াস নীল নদের উৎস হিসাবে মানচিত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার দুটি বিশাল হ্রদের ছবি অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু কং পর্বতমালার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক বিষয়টা হল শুধুমাত্র উনবিংশ শতাব্দীর মানচিত্রে এই পর্বতমালার অস্তিত্ব দেখানো হয়েছে বলে জানাচ্ছেন অধ্যাপক ব্যাসেট। তার মতে ইউরোপীয় মানচিত্র প্রকাশকরা মি. রেনেলের খ্যাতি ও সম্মানের মর্যাদা রক্ষায় এই ভুয়া তথ্যটি কখনও চ্যালেঞ্জ করেননি। তবে মি. বিংগার যিনি এই পর্বতমালার অস্তিত্ব সরকারিভাবে নাকচ করে দেন, বলা হয় তার পেছনেও রাজনৈতিক স্বার্থ কাজ করেছে। কারণ তিনি এই তথ্য ফাঁস করেন যে সময়ে ফ্রান্স পশ্চিম আফ্রিকায় তার সাম্রাজ্য বিস্তার করতে তৎপর ছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইলয়াম পিট আর নেপোলিয়ান কীভাবে বিশ্ব কেটে ভাগ করছেন উনবিংশ শতাব্দীতে প্রকাশিত তার একটি সুপরিচিত ব্যঙ্গ চিত্র ঔপনিবেশিক ক্ষমতার বিস্তার উনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় সরকারগুলোর জন্য মানচিত্রের আলাদা গুরুত্ব ছিল। মানচিত্র শুধু ভৌগলিক অবস্থানের দলিল ছিল না, মানচিত্র ছিল ঔপনিবেশিক শাসকদের আধিপত্যেরও দলিল। উনবিংশ শতাব্দীতে ভৌগলিক অবস্থানের পাশাপাশি এলাকার রাজনৈতিক মানচিত্রও গুরুত্ব পেত। যে কারণে ব্রিটিশ, ফরাসী ও পর্তুগিজদের তৈরি একই এলাকার মানচিত্রে তারতম্য থাকত। "এই মানচিত্রগুলো ছিল বিশ্ব পরিস্থিতির রাজনৈতিক প্রতিফলন।" অধ্যাপক ব্যাসেট বলছেন, পশ্চিম আফ্রিকার এই কং পর্বতমালার কাহিনি থেকে শিক্ষণীয় বিষয় হলো, "মানচিত্রকেও সমালোচকের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হবে।" | কং পর্বতমালার বিবরণে বলা আছে এই পর্বতমালার শৃঙ্গ আকাশছোঁয়া, কেউ কেউ বলেছেন এই পাহাড়ের চূড়া বছরের বেশিরভাগ সময় বরফে ঢাকা থাকে। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | তিউনিসিয়ায় রেড ক্রিসেন্টের আশ্রয় কেন্দ্রে উদ্ধার পাওয়া কয়েকজন বাংলাদেশি অনেক চেষ্টার পর বিবিসি বাংলা তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একজন কর্মকর্তা মঞ্জি স্লেমের মাধ্যমে এই বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। টেলিফোনে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা দুজন বাংলাদেশি বিবিসির কাছে বর্ণনা করেছেন, কী ভয়ংকর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে, কীভাবে সাগরে মৃত্যুর মুখ থেকে তারা ফিরে এসেছেন: সিজুর আহমেদ, সিলেট ঢাকা থেকে দুবাই। দুবাই থেকে ত্রিপলি। ছয় মাসে আগে যাত্রা শুরু করি। দালাল ধরে আসি। দালাল বলেছিল যে লিবিয়া থেকে লোকজন আবার ইটালি যাচ্ছে, তুমি কি যেতে চাও? বলেছিল, ওখানে লাইফ অনেক ভালো। আমি জমি বন্ধক রেখে সাত লাখ টাকা জোগাড় করে এখানে আসি। আমার সঙ্গে আমার মামাতো ভাই এবং খালাতো ভাইও ছিল। ওরা সাগরে মারা গেছে আমার চোখের সামনে। আমি দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলাম। সেখান থেকে বাংলাদেশে এসে বেকার হয়ে পড়ি। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকতে চাই নি। একদিন আমার চোখের সামনে আমার সামনের দোকানের লোক মারা গেল। ওর দোকানের মাল লুটপাট করে নিয়ে গেল। ভয়ে চলে আসলাম। লাইফে অনেক রিস্ক। আহমেদ বিলাল: কোন রকমে প্রাণে বেঁচে গেছেন সাগর পাড়ি দিতে যে কোন ঝুঁকি আছে, দালাল আমাদের সেটা বলে নাই। বলেছে, অনেক ভালো সুবিধা, অনেক ভালো লাইন হয়েছে। বলেছে জাহাজে করে একেবারে ইটালিতে পৌঁছে দেবে। কীসের জাহাজ? আমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছে। তিন মাস রাখছে একটা রুমে, ৮২ জন বাঙ্গালি। একটা টয়লেট। আমাদের ঠিকমত খেতে দেয় না। তিনদিনে একদিন খাবার দেয়। মারধোর করে। গোসল করি নাই তিন মাস। আমরা ছিলাম দেড়শো জন লোক। একটি মাছ ধরা ট্রলারে করে আমাদের মধ্য সাগরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ছোট নৌকায় তোলা হয়। দুইটা নৌকা ছিল। একটা নৌকা শুনেছি ইটালি চলে গেছে। একটা নৌকায় তোলা হয়েছিল ৬০ জন। আর আমাদের নৌকায় তুলেছিল ৮০ জনের ওপরে। ছোট নৌকাটি পাঁচ আঙ্গুল পানির উপর ভেসে ছিল। ঢেউ উঠার সঙ্গে সঙ্গে নৌকা উল্টে গেছে। এরপর আমরা সাগরের পানিতে আট ঘন্টা সাঁতার কেটেছি। যে নৌকাটি উল্টে যায়, সেটি ধরে আমরা ভেসে ছিলাম। আমরা যে আশি জনের মতো ছিলাম, প্রতি পাঁচ মিনিটে যেন একজন করে লোক হারিয়ে যাচ্ছিল। এভাবে একজন একজন করে অনেক লোক হারালাম। আশি জন থেকে আমরা রইলাম আর অল্প কয়েকজন। সকাল হওয়ার পর দেখলাম আমরা মাত্র ১৪/১৫ জন লোক বেঁচে আছি। তখন হঠাৎ দেখি একটা মাছ ধরার ট্রলার। আমাদের মনে হলো আল্লাহ যেন আমাদের জন্য ফেরেশতা পাঠিয়েছে। আর যদি দশ মিনিট দেরি হতো আমরা সবাই মারা যেতাম। আমাদের হাত পা আর চলছিল না। আমরা সবাই মিলে 'হেল্প, হেল্প' বলে চিৎকার করছিলাম। তারপর ওরা এসে আমাদের উদ্ধার করে। আমি এখন ভাবছি, এখান থেকে দেশে ফিরে গিয়ে কি করবো? দেশে তো অনেক টাকা-পয়সা লোকসান করে এসেছি। পরিবারকে পথে বসিয়ে এসেছি। এখন কোন মুখে দেশে যাব। মাহফুজ আহমেদ, গোলাপগঞ্জ, সিলেট ভূমধ্যসাগরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে অবৈধ অভিবাসীদের ঠেকাতে। ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখে আমি রওনা দেই। বাংলাদেশ থেকে প্রথম দুবাই যাই। সেখান থেকে আম্মান। সেখান থেকে আবার যাই তুরস্ক। তারপর তুরস্ক থেকে লিবিয়ার ত্রিপলি। আমার আপন দুই ভাইও আমার সঙ্গে ছিল। আমরা দালালকে জনপ্রতি নয় লাখ টাকা করে দেই। আমার এই দুই ভাইকে বাঁচাতে পারিনি। ওরা মারা গেছে। আমরা বুঝতে পারিনি এই পথে এত বিপদ। দালাল বলেছিল, মাছের জাহাজে করে সুন্দরভাবে আমাদের নিয়ে যাবে। আমরা অনেক টাকা খরচ করেছি। তিন ভাই মিলে ২৭ লাখ টাকা। জমি বিক্রি করে, আত্মীয়-স্বজনের কাছে থেকে এই টাকা জোগাড় করি। এখন তো এই ভুলের মাশুল তো আর দিতে পারবো না। এখন আমি দেশে চলে যেতে চাই। প্রতি বছর বিপদজনকভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার সময় পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে বহু মানুষ। যে দালালের মাধ্যমে আমরা আসি, তাকে আগে থেকে চিনতাম না। সিলেটে সাইফুল নামে এক লোক, সে আমাদের পাঠিয়েছে। বাকী দালালরা লিবিয়ায়। এরা সবাই বাংলাদেশি। এরা লিবিয়ায় থাকে। একজন দালালের নাম রুম্মান। একজনের নাম রুবেল। আরেকজনের নাম রিপন। এদের বাড়ি নোয়াখালি। এই দালালদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাদের ক্যাম্পেও আমরা ছিলাম। সেখানে আরও শ-দেড়শো বাংলাদেশি এখনো আছে। সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, মাদারিপুর, ঢাকা- বিভিন্ন জায়গার লোক আছে সেখানে। এদের সঙ্গে আবার অন্যান্য দেশের দালালরাও ছিল। আমার ধারণা, যে পরিস্থিতির শিকার আমরা হয়েছি, কয়েক মাস পর এই বাংলাদেশিরাও সেরকম অবস্থায় পড়বে। আমি বাংলাদেশ সরকারকে এটা বলতে চাই, আমাদের যেন বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেয়। আমাদের যেন দেশে ফিরিয়ে নিয়ে সাহায্য করে। | লিবিয়া থেকে ছোট্ট নৌকায় চেপে খুবই বিপদংসকুল পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল তারা। সেই নৌকাডুবিতে যারা মারা গেছে, বলা হচ্ছে তাদের মধ্যে অন্তত ৪০ জন বাংলাদেশি। তিউনিসিয়ার একদল জেলে সাগর থেকে মোট ১৬ জনকে উদ্ধার করে। এদের মধ্যে ১৪ জনই বাংলাদেশি। এদের এখন রাখা হয়েছে তিউনিসিয়ার উপকূলীয় শহর- জারজিসের একটি আশ্রয় কেন্দ্রে। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | ইসরায়েল প্রশ্নে দলের ভেতর থেকে চাপ বাড়ছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওপর বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্ম এখন ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে অনেক সহানুভূতিশীল, এবং এই পরিবর্তনের প্রতিফলন পড়ছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন আমেরিকার প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেছেন, বার বার তিনি বলেছেন আত্মরক্ষার অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে। কিন্তু দলের ভেতর তিনি বেশ বেকায়দায় পড়ছেন। কারণ ডেমোক্র্যাট শিবিরে এখন গাযা এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনদের অবস্থা নিয়ে অনেক বেশি উদ্বেগের সুর শোনা যাচ্ছে, এবং এই পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েলকে সরাসরি দায়ী করা হচ্ছে। কংগ্রেসে বৈচিত্র্য এবং তার পরিণতি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ডেমোক্র্যাট দলে যে পরিবর্তন, তার কারণ খুঁজতে হলে মার্কিন কংগ্রেসের দিকে তাকাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনসভায় ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েলের প্রতি প্রায় একতরফা সমর্থন দেখা গেছে। এর পেছনে প্রধান কারণ ছিল প্রভাবশালী ইহুদি ভোট যেটি ডেমোক্র্যাটদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টান সম্প্রদায় - যারা কট্টর ইসরায়েল-পন্থী--তারা রিপাবলিকানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোট ব্যাংক। এই দুই ভোট ব্যাঙ্কের বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের ব্যাপারে ইসরায়েলি ব্যাখ্যাই সবসময় কংগ্রেসে মেনে নেয়া হয়েছে। আমেরিকার বিদেশ নীতিতে সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের ভেতর দিনকে দিন বৈচিত্র্য আসছে, আর সেই সাথে ইসরায়েলের প্রশ্নে আমেরিকার প্রচলিত নীতি চাপের মধ্যে পড়েছে। জরিপ সংস্থা পিউ ফাউন্ডেশন স্টাডি বলছে ২০২১ সালের নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদ এবং সেনেটে নির্বাচিত সদস্যদের ২৩ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ, হিসপানিক, এশীয় এবং আদি আমেরিকান বংশোদ্ভূত । এটি একটি রেকর্ড। বিশ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১১ শতাংশ। ১৯৪৫ সালে ছিল মাত্র ১ শতাংশ। আরও পড়তে পারেন: কংগ্রেসে তিন তরুণ ডেমোক্র্যাট সদস্য (বাম থেকে ডানে) - ইলহান ওমর, আলেকজান্ডার ওকাসিও কর্টেজ এবং রাশিদা তালিব আইন সভায় প্রতিনিধিত্বে এই বৈচিত্র্যের কারণে বিভিন্ন ইস্যুতে মতামতের ভিন্নতা বাড়ছে, এবং ক্ষমতা ও প্রভাবের ভরকেন্দ্র পাল্টে যাচ্ছে। কংগ্রেসে তরুণ, প্রগতিশীল কয়েকজন সদস্যের একটি জোট - যেটি স্কোয়াড নামে পরিচিতি পেয়েছে -, তার মধ্যে রয়েছেন মিশিগান থেকে নির্বাচিত ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত রাশিদা তালিব এবং মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত সোমালিয়ান বংশোদ্ভূত ইলহান ওমর। এই স্কোয়াডের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ নিউ ইয়র্ক থেকে নির্বাচিত আলেকজান্ডার ওকাসিও কর্টেজ যিনি প্রাইমারিতে সিনিয়র ডেমোক্র্যাট জো ক্রাউলিকে হারিয়ে দলের টিকেট পেয়ে জিতেছেন। জো ক্রাউলি ছিলেন ইসরায়েলের কড়া একজন সমর্থক। ফলে, এখন নিউ ইয়র্কের ডেমোক্র্যাটদের ভোটারদের যে প্রোফাইল তার সাথে ৩১ বছরের পোর্টো-রিকান বংশোদ্ভূত ওকাসিও-কর্টেজ ৫৯ বছরের ক্রাউলির চেয়ে অনেক বেশি খাপ খান। জন যগবি বলেন, “ডেমোক্র্যাট শিবিরে এখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় অশ্বেতাঙ্গ রয়েছেন যারা অন্য অশ্বেতাঙ্গদের প্রতি আচরণ নিয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর।” “তারা ইসরায়েলকে একটি আগ্রাসী শক্তি হিসাবে দেখে…তারা ইসরায়েলের শুরুর দিকে ইতিহাস তেমন জানে না, কিভাবে এই রাষ্ট্র নানা ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে গেছে তারা তা জানে না।” তিনি বলেন, “এই প্রজন্ম ইনতিফাদা পরবর্তী পরিস্থিতি জানে। তারা দুই পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন যুদ্ধের কথা জানে, তারা ইসরায়েলি বোমা হামলা দেখছে এবং নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু দেখছে।” বার্নি ফ্যাক্টর কংগ্রেসে এই যে বৈচিত্র্য তার পেছনে প্রধান যে কারণ তা হলো যুক্তরাষ্ট্রে প্রগতিশীল বাম-ধারার একটি সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন যার পরিণতিতে ওকাসিও কর্টেজের মত রাজনীতিক নির্বাচিত হয়েছেন। এবং এই বাম-প্রগতিশীল আন্দোলনের পেছনে মূল শক্তি হিসাবে কাজ করেছেন ভারমন্টের ডেমোক্র্যাট সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। ইহুদি পরিবারে জন্ম মি. স্যান্ডার্স ষাটের দশকে বেশ কয়েক বছর ইসরায়েলে বসবাস করেছেন। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিকে তিনি ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীলও ছিলেন। ২০১৬ সালে সালে তিনি প্রথম যখন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলেন সেসময় তার মুখে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের কথা শোনা যায় যেটা ছিল ডেমোক্র্যাট শিবিরে একটি ব্যতিক্রম। ২০১৬ সালের মার্চে যখন হিলারি ক্লিনটনের সাথে প্রার্থিতার লড়াইয়ের বিতর্ক চলছিল, সেসময় হামাস ইসরায়েলে রকেট হামলা শুরু করেছিল। বার্নি স্যান্ডার্স তখন খোলাখুলি ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন – তুলে ধরেন তাদের বেকারত্ব, ‘ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরদোর, স্কুল, হাসপাতাল।’ বামপন্থী ডেমোক্র্যাট বার্নি স্যান্ডার্স। বাম-প্রগতিশীল আন্দোলনের পেছনে মূল শক্তি হিসাবে কাজ করেছেন সেসময় গার্ডিয়ান পত্রিকার এড পিলকিংটন লিখেছিলেন - ‘ফিলিস্তিনি দুর্ভোগের কথা বললে নির্বাচনে হারতে হবে বলে যে অলিখিত রীতি প্রচলিত ছিল, তা ভেঙ্গে ফেললেন বার্নি স্যান্ডার্স।’ অবশ্য মি. স্যান্ডারস প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার দুটো লড়াইতেই হেরে যান। তবে তার এই মতামত ডেমোক্র্যাট দলের অনেক বহু সমর্থক হতে তুলে নেয়। সেই সাথে , শিক্ষা, চিকিৎসা, মজুরির সাম্যতা এবং পরিবেশ ইস্যুতে আন্দোলনকারী বিভিন্ন প্রগতিশীল প্লাটফর্মগুলোতে মি. স্যান্ডার্সের ঐ অবস্থান জনপ্রিয়তা পায়। প্রার্থী হতে না পারলেও বার্নি স্যান্ডার্স তখন থেকেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা বাড়িয়ে চলেছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী কে তিনি ‘বেপরোয়া বর্নবাদী এবং একনায়ক’ বলে একাধিকবার প্রকাশ্যে নিন্দা করেছেন। গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় এক মন্তব্য প্রতিবেদনে এই সংঘাত নিয়ে যে সব কথা তিনি বলেছেন তা এখন ডেমোক্র্যাটিক দলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মতামতের প্রতিফলন। বার্নি স্যান্ডার্স লেখেন, “যেটা সত্য তা হলো ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি এলাকায় ইসরায়েল-ই একমাত্র সার্বভৌম রাষ্ট্র। এবং শান্তি এবং সুবিচারের পথে না গিয়ে তারা তাদের ভারসাম্যহীন ক্ষমতা এবং অগণতান্ত্রিক দখলদারিত্ব শক্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত।” ফিলিস্তিনি জীবনেরও দাম আছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের ঐ মন্তব্য প্রতিবেদনের শেষে মি স্যান্ডার্স লেখেন যুক্তরাষ্ট্রে “নতুন প্রজন্মের এক আন্দোলনকারী প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে।” তিনি লেখেন, “জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার রাস্তায় আমরা এই আন্দোলনকারীদের দেখেছি। আমরা ইসরায়েলে তাদের দেখেছি। আমরা ফিলিস্তিনি এলাকায় তাদের দেখেছি।” মি স্যান্ডার্সের শেষ শব্দগুলো ছিল – ‘ফিলিস্তিনি লাইভস ম্যাটার’ অর্থাৎ ফিলিস্তিনি জীবনেরও দাম রয়েছে। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ স্লোগান তুলে আমেরিকাতে যারা রাস্তা কাঁপিয়েছেন, তাদের নজর ঘুরেছে এখন ফিলিস্তিনি-ইসরায়েল সংঘাতের দিকে। তারা মনে করছেন. মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ন্ত্রণহীন নির্যাতন চলছে। বৃহস্পতিবার সেন্ট লুইস থেকে প্রথমবারের মত নির্বাচিত সদস্য কোরি বুশ কংগ্রেসের অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বলেন, সেন্ট লুইসের মানুষ আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন জীবন বাঁচাতে। “তার অর্থ আমাদের পয়সায় পুলিশের সামরিকীকরণ, অন্যের জায়গা-জীবন দখল, সহিংস দমন-পীড়নের বিরোধিতা করি আমরা। আমরা যুদ্ধ বিরোধী, দখলদারিত্ব বিরোধী এবং আ্যাপারথেইড ( জাতিভেদ) বিরোধী।” ‘পুলিশকে টাকা বন্ধ করে দাও’ স্লোগানের মত এখন ‘ইসরায়েল সেনাবাহিনীতে টাকা বন্ধ করে দাও’ স্লোগান উঠতে শুরু করেছে। ডোনাল্ড এবং বিবি আমেরিকাতে এখন প্রায় সমস্ত নীতি নিয়ে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মেরুকরণ হচ্ছে। ইহুদি রাষ্ট্রের ব্যাপারে অমেরিকার নীতিও এখন ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে ইসরায়েল সমর্থকদের জন্য বড় ধরণের অস্বস্তি তৈরি করছে।তার কারণ, দীর্ঘদিন ধরে বিনইয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় থাকা এবং আমেরিকার দক্ষিণ-পন্থীদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরির চেষ্টা অনেক ডেমোক্র্যাটের জন্য অস্বস্তি তৈরি করছে। ওবামার সময়ে ২০১৫ সালে রিপাবলিকানদের আমন্ত্রণে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে নেতানিয়াহুর ভাষণ এবং ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি যাতে কংগ্রেস অনুমোদন না করে তার সেই আহ্বান অনেক ডেমোক্র্যাট ভোলেননি। এরপর, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পুরো চার বছরের ক্ষমতাকালে নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলি ডানপন্থীদের সাথে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের মানবিক সাহায্য বন্ধ করে দেন। মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুসালেমে নিয়ে আসেন। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন আপোষ মীমাংসায় ফিলিস্তিনিদের পুরোপুরি অবজ্ঞা করেছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং বারাক ওবামা (ফাইল ফটো)। ২০১৫ সালে কংগ্রেসর অধিবেশনে এক ভাষণে মি নেতানিয়াহু ইরানের সাথে পারমানবিক চুক্তি অনুমোদন না করার আহ্বান জানিয়েছিলেন যেটি এখনও বহু ডেমোক্র্যাট ভোলেননি। এসব কারণে এমনকি মধ্যপন্থী অনেক ডেমোক্র্যাটও ফিলিস্তিনি ইস্যুতে তাদের পুরনো অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করেছেন। মি যগবি বলেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে কারণ, তার মতে, ইসরায়েলি স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করেও মি ট্রাম্প ইহুদি ভোটারদের কাছে থেকে তেমন সমর্থন আদায় করতে পারেননি। “তিনি মিথ্যা আশা করে বসেছিলেন,” মি যগবি বলেন, “আমেরিকার ইহুদিরা মূলত উদারমনা এবং প্রগতিশীল একটি সম্প্রদায়।” সনাতনী ধরার বাইডেন ওয়াশিংটনে কংগ্রেসর ভেতর ইসরায়েল নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বিতর্কের গতিধারায় বেশ কিছুদিন ধরে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে , কিন্তু হোয়াইট হাউজের কাজে তার ছিটেফোঁটা প্রতিফলন সবে দেখা দিতে শুরু করেছে। সেনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চাক শুমারের মত ঘোরতর ইসরায়েলি সমর্থকও যখন যুদ্ধবিরতির কথা বলেছেন, মি বাইডেন তখনও চুপ ছিলেন। যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবও আটকে দেয় হোয়াইট হাউজ। মি বাইডেনের সাথে মি নেতানিয়াহুর প্রথম টেলিফোন আলাপ নিয়ে যে বিবৃতি দেয়া হয়, তাতে ইসরায়েলের বিন্দুমাত্র সমালোচনা ছিলনা, বরঞ্চ ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের কথাই তুলে ধরা হয়। এবং এই সংঘাত শুরুর ঠিক আগেই ইসরায়েলকে প্রায় ৭৪ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির এক চুক্তি অনুমোদন করেন মি বাইডেন। সন্দেহ নেই মি বাইডেন একটি সরু দড়ির ওপর হাঁটছেন। কংগ্রেসে তার গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনাগুলো পাশ করাতে দলের বামপন্থী অংশের সমর্থন তার জন্য জরুরি। এখন পর্যন্ত দলের এই অংশটি প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করছে, কিন্তু ইসরায়েলের যে আচরণকে তারা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসাবে দেখে সেগুলোকে যদি প্রেসিডেন্ট পাত্তা না দেন তাহলে তাকে ত্যাগ করতে তারা দ্বিধা-বোধ করবে না। “আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই আমেরিকাতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ক্রমাগত বাড়তে দেখছি। কিন্তু এটি তত বড় কোনো ইস্যু হয়নি,” বলেন মি যগবি। “কিন্তু এখন এটি বড় ইস্যু হয়ে উঠছে, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট শিবিরে। এবং এর পেছনে শক্তি হচেছ অশ্বেতাঙ্গ এবং তরুণ প্রজন্মের ভোটাররা এবং দলের প্রগতিশীল অংশ।” বিদেশ নীতিতে, বিশেষ করে আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে, জনমতের এই প্রতিফলন এখনো তেমন নেই । মি বাইডেন এখনও বিষয়টিকে ততটা গ্রাহ্য করছেন না। কিন্তু ডেমোক্র্যাট শিবিরের ইসরায়েলি সমর্থকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। তারা ভয় পাচ্ছেন, বহু বছর ধরে জনকল্যাণের ইস্যুতে মি বাইডেনের যে গ্রহণযোগ্যতা তা নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে। রাজনীতিকরা তদের সমর্থকদের বেশিদিন অবজ্ঞা করে টিকে থাকতে পারেন না। | "এই পরিবর্তন নাটকীয়, গভীর পরিবর্তন,” বলেন আমেরিকার প্রখ্যাত জনমত জরিপকারী জন যগবি, যিনি গত কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে জনমতের ওপর নজর রাখছেন। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | গত ১১ বছরে প্রথমবারের মতো এই নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল, ফলে সে বিবেচনায় ২০১৮ সালের এই জাতীয় নির্বাচনের একটা ভিন্ন দিক ছিল। তবে দলীয় সরকারের অধীনে নিয়ন্ত্রিত এবং একচেটিয়াভাবে নির্বাচন করার অভিযোগ ওঠে। এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন এবং অভিযোগের পাল্লা অনেক ভারী হয়। অনেক প্রশ্ন এবং অভিযোগের মুখেও টানা তৃতীয় বার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মাত্র সাতটি আসন পেয়ে শেষ পর্যন্ত সংসদে গেছে। ৩০শে ডিসেম্বেরের নির্বাচনই এখনও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় অগ্রাধিকার পায়। কারণ এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু কেন এত বিতর্ক? কী ঘটেছিল সেই ভোটের দিন? - এসব প্রশ্নও রয়েছে রাজনীতিতে। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর টানা তৃতীয়বারের মত সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ ভোটের আগের রাতেই অনেক অভিযোগ ভোটের দিন সারাদেশে সব ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু অনেক নির্বাচনী এলাকা থেকে বিএনপি এবং তাদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশ কিছু প্রার্থী ভোটের আগের রাতেই ভোটকেন্দ্র নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে নানা অভিযোগ তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, রাতেই বিভিন্ন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটের প্রার্থীর সমর্থকেরা ব্যালট পেপারে সিল মেরেছে। প্রায় সারারাতই বিরোধী প্রার্থীরা বিভিন্ন মিডিয়ায় টেলিফোন করে এমন অভিযোগ করছিলেন। তবে আগের রাতে সিল মারার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনও এমন অভিযোগ মানতে রাজি হয়নি। সকালটা কেমন ছিল ভোট শুরুর আগের মুহুর্তে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি কেন্দ্রে বিবিসি বাংলার সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা পড়ে ব্যালট ভর্তি বাক্স। চট্টগ্রামে ভোটের আগে ব্যালট বাক্স ভরা পেলেন বিবিসি'র সাংবাদিক চট্টগ্রাম-১০ আসনের শহীদ নগর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। ভোট গ্রহণের প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে সকাল ৭টা ৫৪ মিনিটে ঐ কেন্দ্রে বিবিসি'র সাংবাদিক দেখতে পান, বিভিন্ন বুথে ব্যালট বাক্স নেয়া হচ্ছে। ভোট শুরুর নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ৮টা। কিন্তু ওই কেন্দ্রে বিবিসির সাংবাদিক যেসব ব্যালট বাক্স দেখেছেন, সেগুলো ছিল ব্যালট পেপার দিয়ে ভরানো। বিবিসি'র সাংবাদিক কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে গিয়েও ব্যালট ভর্তি বাক্স দেখতে পান। তিনি তার মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ব্যালট ভর্তি বাক্স কেন্দ্রের বুথে নেয়ার দৃশ্য ধারণ করেছিলেন। চট্টগ্রামের সেই ভোটকেন্দ্রের বাইরে কিন্তু ততক্ষণে অনেক ভোটার জড়ো হয়েছিলেন। ভোটের আগেই বিবিসি'র ক্যামেরায় ধরা পড়া ব্যালট ভর্তি বাক্সের ভিডিও সকালেই প্রকাশ করা হয়েছিল। পরে অবশ্য ঐ কেন্দ্রটির ভোট স্থগিত করা হয়েছিল বলে জানানো হয়। সকালেই ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকায় বিবিসি'র সাংবাদিকরা অনেক অনিয়ম, কারচুপির ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ভোট কেন্দ্রগুলো নিয়ন্ত্রিত ছিল ঢাকার কেন্দ্রগুলোতে বাইরে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সকাল থেকেই। অনেক কেন্দ্রের বাইরের পরিবেশ দেখে ভিতরের অবস্থা বোঝার উপায় ছিল না। ভোট শুরুর ঘন্টাখানেক পর থেকেই অনেক কেন্দ্রের ভিতরে আওয়ামী লীগ বা তাদের জোটের প্রার্থীর সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে দেখা যায়। দরজা বন্ধ, ভেতরে ভোট চলছে! ঢাকার বিভিন্ন আসনে অনেক কেন্দ্রে বিএনপিসহ বিরোধী জোটের প্রার্থীদের এজেন্ট ছিল না। কেন্দ্রগুলোর বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেক কেন্দ্রে বিবিসি'র সাংবাদিকরা দেখেছিলেন, পুলিশ সদস্যরা কেন্দ্রের মুল দরজা বন্ধ করে কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। আর কেন্দ্রের ভিতরে সরকার সমর্থক প্রার্থীর পক্ষে ব্যালট পেপারে সিল মারা হচ্ছে - এমন অভিযোগ ছিল দিনভর। দিন যত গড়াচ্ছিল, রাজধানীর কেন্দ্রগুলোর বাইরে শুধু ক্ষমতাসীনদের প্রার্থীর সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। অনেক কেন্দ্রে সাধারণ ভোটারেরাও দীর্ঘ অপেক্ষা করে ভোট দিতে না পারায় অনেকে তাদের ক্ষোভ তুলে ধরেন কেন্দ্রে থাকা সাংবাদিকদের কাছে। সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায় নেই বাংলাদেশ: ইকোনমিস্ট সংবাদমাধ্যমের খবর হয়, কয়েক ঘন্টা ভোট হওয়ার পরই কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ নিয়ে যখন নানান খবর বা অভিযোগ প্রকাশ হচ্ছিল, তখনই ঢাকার কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি আরও কমে গিয়েছিল। ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে যে সব খবর পাওয়া গিয়েছিল, সেই খবরের ভিত্তিতে এটি একটি নিয়ন্ত্রিত এবং একচেটিয়া নির্বাচন ছিল বলা যায়। ঢাকার শেওড়াপাড়ার একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। তবে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও অনেকে কেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি। দেশের অন্য এলাকাগুলো থেকেও ভোট নিয়ে একই রকম অভিযোগ আসে। ভোটের পুরোটা সময় ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র নিয়ে শুধুই অনিয়ম কারচুপির নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। ভোটের দিন সহিংসতাও ঘটে। চট্টগ্রামের পটিয়াসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় নির্বাচনী সহিংসতা বা সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ভোটের শুরুতে নেতাদের বক্তব্য শুরুতেই ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, "এই নির্বাচনে যেই ক্ষমতায় আসুক, বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।" সকালে বিএনপি এবং গণফোরামসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি ভোট জালিয়াতির খবর পাচ্ছেন। তিনি আশা করেন, নির্বাচন কমিশন এগুলোর দিকে নজর রাখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদকে নিয়ে ভোট দিতে এসেছিলেন বিরোধী প্রার্থীদের নির্বাচন বয়কট ভোট শুরুর পর ঘণ্টা দুয়েক যেতে না যেতেই অনেক এলাকা থেকে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয়া শুরু করেন। দুপুর দু'টার মধ্যেই ১০০টির বেশি আসনে বিএনপি প্রার্থীরা একের পর এক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। সারাদেশ থেকে শুধু তাদের নির্বাচন বয়কটের খবরই পাওয়া যাচ্ছিল। তবে বিএনপি দলগতভাবে এবং তাদের নতুন জোট ঐক্যফ্রন্ট জোটগতভাবে নির্বাচন বয়কট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে ছিল। তবে বেশিরভাগ আসনে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে তাদের প্রার্থীরা ছিলেন না। ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ড. কামাল হোসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তখন বলেছিলেন যে বয়কটের বিষয়টি ছিল প্রার্থীদের নিজেদের সিদ্ধান্ত। বিএনপির পুরোনো ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী ২২টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী দিয়েছিল। তবে ভোটের দিন দুপুর দেড়টার দিকে জামায়াত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার কররার ঘোষণা দেয়। ভোটের ফলাফলও ছিল চমকে দেয়ার মতো নির্বাচনের ফলাফলও ছিল সম্পূর্ণ এক পাক্ষিক। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জোটসঙ্গীরা ২৮৮টি আসন পায়। আর বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র সাতটি। বাকি তিনটি আসন পায় অন্যান্যরা। অনেক ভোট কেন্দ্রে একশো' ভাগ ভোট পড়ে বলে ফলাফলে দেখা যায়। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বাইরে অন্য কেউ ভোট পাননি অনেক কেন্দ্রে। নির্বাচনের ছয় মাস পরে নির্বাচন কমিশন কেন্দ্র-ভিত্তিক যে ফলাফল প্রকাশ করে, তা পর্যালোচনা করে সুজন নামের একটি সংগঠন যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে দেখা যায় যে ৭৫টি আসনের ৫৮৬টি কেন্দ্রে যত বৈধ ভোট পড়েছে, তার সবগুলোই নৌকা মার্কার প্রার্থীরা পেয়েছেন। জাতীয় সংসদের মোট আসনের একটি বাদে ২৯৯টি আসনে নির্বাচন হয়। সকালে সিলেটের একটি কেন্দ্রে ভোটারদের লাইন নির্বাচন এবং ফলাফল প্রত্যাখান ভোট শেষে কিছু ফলাফল আসার পর দেখা যায় যে ক্ষমতাসীনরা বিপুল ভোটে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই ধারার প্রেক্ষাপটে ৩০শে ডিসেম্বরই সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন এবং ফলাফল প্রত্যাখান করে। ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন নজিরবিহীন অনিয়ম এবং কারচুপির অভিযোগ তোলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, "দেশের সব জায়গা থেকে ভোট ডাকাতির খবর এসেছে। প্রহসনের এই নির্বাচন বাতিল করা হোক।" বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও নির্বাচন বাতিল করে পুননির্বাচনের দাবি তুলে ধরেন। মি. আলমগীর বলেন, "অনেকে বলে থাকেন, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে আমরা ভুল করেছিলাম। কিন্তু এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হলো যে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। আমরা পুরো নির্বাচন প্রত্যাখান করেছি।" তবে আওয়ামী লীগ পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করে, "একটি অভূতপুর্ব নির্বাচন হয়েছে। একটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে।" প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, "বিএনপি নিশ্চিত পরাজয় জেনেই ভোটের মাঝপথে নিজেদের প্রত্যাহার করেছে এবং বিভিন্ন অভিযোগ তুলছে। এগুলো তারা আগেই ঠিক করে রেখেছিলো।" নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন অভিযোগ এবং পুনঃনির্বাচনের দাবি নাকচ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন ভোটের পরদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মোট ভোটারের ৮০ শতাংশ তাদের ভোট দিয়েছেন। প্রশ্নবিদ্ধ এই নির্বাচন কি উদাহরণ হয়ে থাকবে? কয়েকটি জায়গায় সহিংসতায় কমপক্ষে ১৫ জনের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে নির্বাচন কমিশনের মতে, কয়েকটি জায়গায় সহিংসতা হলেও তারা সার্বিকভাবে সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন শেষ করতে পেরেছেন। নির্বাচন হয়ে গেছে - এমন একটা স্বস্তি দেখা গেছে আওয়ামী লীগের মধ্যেও। নির্বাচন এবং ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি এই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করে। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে যত অভিযোগ বা প্রশ্ন এসেছে, তাতে এটি গণতন্ত্রের নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দেয়ার প্রতীক হয়েছে। এই নির্বাচন বিভিন্ন সময় একটি নেতিবাচক উদাহরণ হিসেবে আসবে।" আওয়ামী লীগ নেতারা অবশ্য তা মানতে রাজি নন। দলটির নেতারা বলেন, বিএনপি যখন যে নির্বাচনেই পরাজিত হয়েছে, সেই নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। ফলে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিযোগের ব্যাপারে তারা চিন্তিত নন। | বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য আয়োজিত গত বছরের ৩০শে ডিসেম্বরের বিতর্কিত নির্বাচনের এক বছর পুরো হয়েছে। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | ঢাকার একটি রাস্তায় যান চলাচল ''অফিস থেকে রাগ করেছে, কিন্তু আমি কি করবো বলেন। তারপরেও এই কষ্ট মেনে নিতে রাজি আছি, যদি আইনটা শক্ত হয়। আমাদের এই কষ্টের বিনিময়ে যদি সড়কে মানুষের মৃত্যু বন্ধ হয়, সেটাও ভালো।'' তিনি চান, আইনটির বাস্তবায়নে যেন কোন ছাড় দেয়া না হয়। কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপের মুখে আপাতত জুন মাস পর্যন্ত আইনের কয়েকটি ধারার প্রয়োগ করা হবে না বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মালিক-শ্রমিকদের আপত্তি মূলত ওই আইনটির নয়টি ধারা নিয়ে। এসব ধারা পরিবর্তনের দাবির মুখে বিবেচনা করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু আইনটির এই ধারাগুলোয় কি রয়েছে? নতুন আইনটি চালক ও পথচারি উভয়ের জন্য কঠোর করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮, যেটি পহেলা নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে, তার নয়টি ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন মালিক ও শ্রমিকরা। তারা এসব ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। এই ধারাগুলো হলো ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৮৪, ৮৬, ৯০, ৯৮ ও ১০৫। এসব ধারার বিস্তারিত জানা যাক: ৭৪ নম্বর ধারা: মালিকানা পরিবর্তনের বৈধতা মোটরযানের মালিকানা পরিবর্তনের ৩০দিনের মধ্যে হস্তান্তরকারী নির্ধারিত ফরমে ও পদ্ধতিতে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন এবং তার অনুলিপি নতুন মালিককে দেবেন। আইনের ২১ ধারায় বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু নতুন মালিক যদি এসব বিধান ভঙ্গ করা হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং সেজন্য অনধিক এক মাস কারাদণ্ড, অনধিক পাঁচ হাজার টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আরো পড়ুন: সড়ক পরিবহন আইনে কী আছে, পক্ষে বিপক্ষে যতো কথা 'কর্মবিরতি' করে কি আইন ভাঙছেন পরিবহন শ্রমিকরা? আশ্বাসের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার মালিক-শ্রমিকদের ইলিয়াস কাঞ্চন বাস-ট্রাক শ্রমিকদের টার্গেট কেন? নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ৭৫ নম্বর ধারা: ফিটনেস সংক্রান্ত এই ধারায় বলা হয়েছে যে, ফিটনেস সনদ ছাড়া, মেয়াদ উত্তীর্ণ ফিটনেস সনদ ব্যবহার, ফিটনেসের অনুপযোগী, ঝুঁকিপূর্ণ বা ক্ষতিগ্রস্ত, রংচটা, বিবর্ণ বা পরিবেশ দূষণকারী ইত্যাদি মোটরযান ব্যবহার করা হলে তা ধারা ২৫ লঙ্ঘন করা হবে। সেক্ষেত্রে শাস্তি হিসাবে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড, অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ৭৬ নম্বর ধারা: ট্যাক্স টোকেন এই ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি ট্যাক্স টোকেন (গাড়ির ট্যাক্স প্রদাণের স্টিকার) ব্যতীত বা মেয়াদ উত্তীর্ণ ট্যাক্স টোকেন ব্যবহার করে মোটরযান চালনা করে (মোটর ভেহিকেল আইন অনুযায়ী অব্যাহতিপ্রপ্ত মোটরযান ব্যতীত) ধারা ২৬ ভঙ্গ করেন, তাহলে অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ৭৭ নম্বর ধারা: রুট পারমিট ছাড়া পাবলিক প্লেসে পরিবহন যান ব্যবহার কোন ব্যক্তি যদি ধারা ২৮ এর উপধারা-১ ভঙ্গ করেন, যেখানে বলা হয়েছে যে, সরকারের দেয়া এবং প্রতি-স্বাক্ষরিত রুট পারমিট ছাড়া কোন পরিবহন যানের মালিক পাবলিক প্লেসে পরিবহনযান ব্যবহার করতে বা ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবেন না। এছাড়া রুট পারমিটে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলে স্টেইট ক্যারিট কন্ট্রাক্ট ক্যারিজ. স্টেইট ক্যারিজে পণ্য পরিবহন, মালিক ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক প্রয়োজনে ব্যক্তি বা পণ্য পরিবহন করতে পারবেন না। এরকম কোন অপরাধ করা হলে অনধিক তিন মাসের কারাদণ্ড, অনধিক বিশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: ১১৭ টেস্টের ৪২টিতেই বাংলাদেশের ইনিংস পরাজয় গ্রামীণফোনকে ২০০০ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ চট্টগ্রামে হাতির আক্রমণে তিন গ্রামবাসীর মৃত্যু ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্ত কি স্রেফ উর্ধ্বতনদের রক্ষার হাতিয়ার বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় দাবি আদায়ের জন্য পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। ফাইল ফটো ধারা নম্বর ৮৪: কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত কারিগরি নির্দেশনা অমান্য করা মোটরযানের নির্মাণ, সরঞ্জামাদির বিন্যাস, রক্ষণাবেক্ষণ এমনভাবে করতে হবে যাতে চালক কার্যকরভাবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন। বাংলাদেশে ডান দিকে স্টিয়ারিং থাকবে। কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত কারিগরি নির্দেশনার বাইরে মোটরযানের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, আসন বিন্যাস, হুইল বেইজ, রিয়ার ওভার হ্যাংগ, ফ্রন্ট ওভার হ্যাংগ, সাইড ওভার হ্যাংগ, চাকার আকৃতি, প্রকৃতি ও অবস্থা, ব্রেক ও স্টিয়ারিং, গিয়ার, হর্ন, সেফটি গ্লাস, শব্দ নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ইত্যাদি বা সমজাতীয় অন্য কিছুর পরিবর্তন করা যাবে না। রেজিস্ট্রেশন করা মোটরযানের কারিগরি ও অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এসব বিধান লঙ্ঘন করা হলে অন্তত এক বছরের কারাদণ্ড ও অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড, অনধিক তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ধারা নম্বর ৮৬: অতিরিক্ত ওজন নিয়ে মোটরযান চালানো ধারা ৪৩ অনুযায়ী, কোন মোটরযান চালক বা কোনো ব্যক্তি সড়ক বা মহাসড়কে অনুমোদিত লেডেন ওজন, ট্রেইন ওজন বা এক্সেল ওজন এর অতিরিক্ত ওজন নিয়ে মোটরযান চালাতে পারবেন না। রেজিস্টেশন সনদে উল্লেখিত ওজন বৃদ্ধিও করতে পারবেন না। ওই ধারা লঙ্ঘন করা হলে অপরাধ হবে, সেজন্য অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড, অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। চালকের ক্ষেত্রে দোষসূচক দুই পয়েন্ট কাটা যাবে। ধারা নম্বর ৯০: মোটরযান পার্কিং, যাত্রী বা পণ্য ওঠানামার নির্ধারিত স্থান ব্যবহার এ সংক্রান্ত ধারা ৪৭-এ বলা হয়েছে, সরকার বা স্থানীয় সরকার, ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পুলিশের সাথে পরামর্শ করে মোটরযান পার্কিং এলাকা, থামানোর স্থান, যাত্রী ও পণ্য ওঠানামার স্থান ও সময় নির্ধারণ করে দিতে পারবে। নির্ধারিত সেসব স্থান ছাড়া পার্কিং করা বা যাত্রী ও পণ্য ওঠানামা করানো যাবে না বা মোটরযান থামানো যাবে না। কোন যাত্রীও এরকম অনুরোধ করতে পারবেন না। কোন ব্যক্তি যদি এই বিধান অমান্য করেন, তাহলে অনধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হবে এবং চালকের অতিরিক্ত দোষসূচক হিসাবে এক পয়েন্ট কাটা যাবে। পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে যাত্রী ভোগান্তি চরমে ধারা নম্বর ৯৮: ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীন মোটরযান চালানোর ফলে দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি যদি নির্ধারিত গতিসীমার অতিরিক্ত গতিতে বা বেপরোয়াভাবে, ওভারটেকিং বা ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীন মোটরযান চালানোর ফলে কোন দুর্ঘটনায় জীবন বা সম্পত্তির ক্ষতি হয়, তা হলে মোটরযানের চালক বা কন্টাক্টর বা সহায়তাকারী ব্যক্তির অনধিক তিন বছর কারাদণ্ড, অনধিক তিন লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। আদালত অর্থদণ্ডের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দিতে পারবেন। ধারা নম্বর ১০৫: দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধ এই আইনে যাই বলা হোক না কেন, মোটরযান চালানোর ফলে কোন দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোন ব্যক্তি আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে, এরকম অপরাধ পেনাল কোড ১৮৬০ এর অধীনে অপরাধ বলে গণ্য হবে। এছাড়া কোন ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালানোর কারণে কেউ গুরুতর আহত বা মৃত্যু হলে, উক্ত ব্যক্তির অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আপত্তি আইনের এই ধারাগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান বিবিসিকে বলেছেন, "আইন তো মেনে চলতেই হবে। কিন্তু আমাদের ওপর যে আইন দেয়া হইছে, কিছু কিছু ধারায় এমন জরিমানা ধার্য করছে যে সেটা গাড়ি চালাইয়া দেয়া সম্ভব না, জায়গা (জমি) বেইচা দেয়া লাগে এমন অবস্থা।" তিনি বলছেন, এসব গাড়ি অনেকদিন ধরে চলছে। নতুন আইন অনুযায়ী ঠিকঠাক করতে সময় লাগবে। এছাড়া অনেক ড্রাইভারের এখনো যথাযথ লাইসেন্স করা হয়নি, যার পেছনে কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রিতাকেও তিনি দায়ী করছেন। তাই তারা আইনের এসব ধারা পরিবর্তনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশে সড়কপথে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না কোনভাবেই সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান বলেছেন, পরিবহন নেতা ও শ্রমিকরা নতুন আইনের বিরোধিতা করছেন না, তবে নতুন আইনে কিছু বিষয়ে অসংগতি রয়েছে। সেগুলো সংশোধনের জন্য শ্রমিকরা আন্দোলনে গিয়েছিলেন। সেগুলোই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইনে উল্লেখ করা কারাদণ্ডের ব্যাপারে আমাদের আপত্তি নেই, তবে যে পরিমাণ জরিমানা ধরা হয়েছে, তা চালকরা কখনো দিতে পারবে না। তাই আমরা আগের আইনের অনুযায়ী জরিমানা বর্তমান টাকার অনুপাতে যা দাড়ায়, সেটা নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছি। এই নেতারা জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের তারা ৩০শে জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন, সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। তখনো যদি তাদের দাবি মানা না হয়, তাহলে তারা আন্দোলনে যাবেন। যা বলছেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীরা নিরাপদ সড়ক নিয়ে কয়েক দশক ধরে আন্দোলন করে আসছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। শ্রমিকদের এসব দাবি দাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, আইনের কোন বিষয় নিয়ে ছাড় দেয়া ঠিক হবেনা। "এবার যদি আমরা হেরে যাই, তাহলে হেরে যাবে পুরো বাংলাদেশ," বিবিসির সাথে এক সাক্ষাতকারে বলছিলেন মি: কাঞ্চন। | ফরিদপুরের বাসিন্দা বিউটি আক্তার একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে গিয়ে আটকে পড়েন পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘটে। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | কুষ্টিয়ায় শেখ মুজিবের নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা। হেফাজতে ইসলামের একজন নেতা বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাইছেন তারা। সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রীও বলেছেন, আলোচনা করেই সমস্যার সমাধান হবে । ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ইসলামপন্থী কয়েকটি দল এবং হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে সরকারের সাথে আলোচনায় বসার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এই উদ্যোগে দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ বা কথাবার্তা চলছে। তবে সরকার বা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভাস্কর্য বিরোধীদের ওপর রাজনৈতিক দিক থেকেও একটা চাপ রাখার কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে। ঢাকার দক্ষিণে ধোলাইপাড় এলাকায় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে ইসলামপন্থী কয়েকটি দল এবং সংগঠন মাঠে নামে কয়েক সপ্তাহ আগে। খেলাফত মজলিশ এবং ইসলামী আন্দোলন নামের দলগুলো এবং হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছে। এসব দল বা সংগঠনের নেতারা এবং ইসলামী চিন্তাবিদরা মিলে ভাস্কর্য বিরোধী ফতোয়াও দিয়েছেন। এখন সরকারের সাথে আলোচনার কথা বললেও তারা ভাস্কর্য বিরোধী অবস্থানে অনড় রয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমমনারা রাজপথে সমাবেশ মিছিল অব্যাহত রেখে ভাস্কর্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান তুলে ধরছে। দু'পক্ষই যখন যার যার অবস্থানে অনড় রয়েছে, তখন আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব কিনা-সেই প্রশ্নও রয়েছে। আরও পড়ুনঃ শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভাংচুর: ভিডিও দেখে শনাক্ত, চারজন আটক মুজিব ভাস্কর্য: 'আওয়ামী লীগের নিজের ঘরেই সাপ ঢুকেছে' যে কোন উদ্দেশ্যে ভাস্কর্য তৈরি 'ইসলামে নিষিদ্ধ' বলে আলেমদের বিবৃতি মুজিব ভাস্কর্য তৈরির বিপক্ষে ইসলামপন্থী দলগুলো বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ করেছে। 'এটা আমাদের ধর্মীয় ইস্যু' দেশে কওমী মাদ্রাসাগুলোর সবচেয়ে বড় শিক্ষাবোর্ড বেফাকের চেয়ারম্যান ছিলেন আহমদ শফী। তার মৃত্যুর পর বেফাকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন মাহমুদুল হাসান। ভাস্কর্য বিরোধী ইসলামপন্থী একটি দলের নেতা জানিয়েছেন, সরকারের সাথে আলোচনার বা বৈঠকের সুযোগ সৃষ্টির জন্য মাহমুদুল হাসানকে তারা দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে মি: হাসান উদ্যোগ নিয়েছেন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাথে কথাবার্তা বলতে। তিনি আরও বলেছেন, তারা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করতে চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক হলে ইসলামপন্থীদের পক্ষে কারা তাতে অংশ নেবেন, মাহমুদুল হাসান সেই তালিকাও তৈরি করছেন। তবে এর আগে সমাধানের একটা উপায় বের করতে এখন দু'একদিনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তাদের বৈঠক হতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের এমনটা জানানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। মাহমুদুল হাসান বিবিসিকে বলেছেন, তারা আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছেন। হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমীর আব্দুর রব ইউসুফী বলেছেন, "আমাদের সাথে সরকারের যোগাযোগ হচ্ছে। এটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে-তা আমরা বিশ্বাস করি।" তবে তিনি ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানকেই তুলে ধরেন। একই সাথে অবশ্য তিনি বলেছেন, "আমরা সরকারকে বোঝাতে চাচ্ছি যে, এখানে বঙ্গবন্ধু ইস্যু নয়। বঙ্গবন্ধুর নামে কোন কিছু হোক, তাতে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু ভাস্কর্য বা মূর্তি আমাদের ধর্মে নেই। এটা আমাদের ধর্মীয় ইস্যু। এই কথাটিই আমরা বলছি।" ইসলামী আন্দোলনের আমীর সৈয়দ রেজাউল করীম তাদের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেছেন, "ইসলাম বা শরিয়তের দৃষ্টিতে বিষয়টা কী-সেটা আমরা তুলে ধরেছি। এখন সরকার জনগণের মনোভাব বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু কোন কোন মহল আলেমদের বিরুদ্ধে নানা রকম বক্তব্য দিয়ে একটা অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে," তিনি মন্তব্য করেন। তিনিও মনে করেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাথে বৈঠক হতে পারে। আলোচনা নিয়ে সরকারের অবস্থান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক বিবিসির সাথে আলাপকালে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসলামপন্থী দল এবং সংগঠনগুলোর আলোচনার প্রস্তাবে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়েছে। এখন অনানুষ্ঠানিক আলোচনা বা যোগাযোগ হচ্ছে। "আলোচনা হচ্ছে ওলামা মাশায়েখদের সাথে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান করবেন। এটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। বিতর্ক সৃষ্টির কোন সুযোগ নেই। যতটুকু হয়েছে, এটা আর বেশি কিছু হওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করিনা," বলেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত সোমবার ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের মহাপরিচালক ১২জন ইসলামী চিন্তাবিদের সাথে বৈঠক করে পরামর্শ নিয়েছেন। এর ভিত্তিতে ফাউণ্ডেশন একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তা সরকারকে দেবে। একজন সিনিয়র মন্ত্রীও বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হতে পারে। একাধিক মন্ত্রীর সাথে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া যায়, যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি হয়েছে, তা তারা আর বাড়তে দিতে চান না। কিন্তু শেখ মুজিবের ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ করতেও সরকার রাজি নয়। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেছেন, ইসলামীপন্থী কয়েকটি দল এবং হেফাজতে ইসলাম হঠাৎ করে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কেন মাঠে নেমেছে, এর পেছনে রাজনৈতিক কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা- এসব প্রশ্ন তাদের দলে উঠেছে। এছাড়া তারা মনে করেন, তাদের আদর্শের প্রধান ভিত্তি শেখ মুজিবের ওপর আঘাত করা হয়েছে। এরই মাঝে কুষ্টিয়ায় শেখ মুজিবের নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রতিবাদ না করলে তাদের রাজনীতি প্রশ্নের মুখে পড়বে। আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ে এবং সিনিয়র নেতাদেরও একটা অংশ ভাস্কর্য বিরোধীদের সাথে কোন আলোচনায় না গিয়ে আইনগত এবং রাজনৈতিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার পক্ষে বলে মনে হয়েছে। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, "ভাস্কর্য বিরোধিতার পেছনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির ভূমিকা রয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। উগ্রপন্থীরা মাঠে নেমেছে। এখানে তাদের সাথে আলোচনা করা ঠিক নয়।" ফলে সরকারে আলোচনার কথা যেমন রয়েছে, একইসাথে রাজনৈতিক এবং আইনগতভাবে এগুনোর কৌশলের ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় সন্দেহভাজন চারজনকে গ্রেপ্তারের পর আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা সরকার বলেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো এবং শিক্ষক-সাংবাদিক-চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশায় থাকা তাদের সমর্থকরা সমাবেশ-মানববন্ধন করে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন। দলটির নেতারা মনে করেন, অব্যাহত প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে তারা একটা রাজনৈতিক চাপ তৈরি করতে পেরেছেন। তাদের পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে আবার একটা ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। ভাস্কর্য ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। দুই পক্ষই যেখানে স্ব স্ব অবস্থানে অনড় ভাস্কর্য বিরোধী ইসলামপন্থী দলগুলো যদিও সরকারের সাথে আলোচনায় বসার চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু তারা তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। এই দলগুলোর পক্ষে কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান আলোচনার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার অংশ হিসাবে তিনি সোমবার প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু সেই চিঠিতেও তিনি লিখেছেন, "ইসলামে ভাস্কর্য নির্মাণ করা জায়েজ নয়।" তারা ঢাকার ধোলাইপাড়ে শেখ মুজিবের ভাস্কর্যের বিকল্প কিছু করার ব্যাপারে তাদের অবস্থানকেই তুলে ধরেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, সেখানে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য হবেই। এই অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগ বা সরকার সরে এলে সেটা পরাজয় হবে বলে দলটির নেতাদের অনেকে মনে করেন। দুই পক্ষই স্ব স্ব অবস্থানে অনড় থাকার কারণে আলোচনায় সমাধান কতটা হবে-তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। ইসলাম নিয়ে লেখক ও গবেষক ওসমান গণি বলেছেন, দুই পক্ষকেই ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে আলোচনায় বসা উচিত। তবে হেফাজতে ইসলামের অন্যতম নেতা আব্দুর রব ইউসফী বলেছেন, আলোচনায় বসলে একটা উপায় বের করা সম্ভব হবে বলে তারা মনে করছেন। সেই উপায় কিভাবে বের হবে এই প্রশ্নে তিনি আলোচনার আগে তিনি পরিষ্কার করে কিছু বলতে রাজি হননি। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো অব্যাহত কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথ দখলে রাখছে। তবে কোন উস্কানিমূলক পরিস্থিতি যাতে না হয়, সে ব্যাপারেও তারা সতর্ক বলে দলটির নেতারা বলেছেন। অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের নেতা আব্দুর রব ইউসুফী দাবি করেছেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চান বলে তারা এখন মাঠে কোন কর্মসূচি নিচ্ছেন না। | বাংলাদেশে ভাস্কর্য নিয়ে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে এখন সরকার এবং ইসলামপন্থীরা-দুই পক্ষই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা বলছে। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | ইয়ালু নদীর তীরে উত্তর কোরিয়ার একজন নারী সৈনিক বাহিনীর এক সাবেক নারী সেনা আরও জানাচ্ছেন তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই ধর্ষণ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক এক ঘটনা! প্রায় দশ বছর ধরে লি সো ইয়নকে শুতে হয়েছিল একটা বাঙ্ক বেডের নিচের তলায়। ঘরটা তাকে শেয়ার করতে হত আরও জনা পঁচিশেক মহিলার সঙ্গে। তাদের প্রত্যেককে নিজস্ব ফৌজি উর্দি রাখার জন্য ছোট একটা ড্রয়ার দেওয়া হত। ড্রয়ারের ওপরে রাখতে হত ফ্রেমে বাঁধানো দুটো করে ফোটোগ্রাফ। তার একটা ছিল উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল-সুংয়ের। দ্বিতীয়টা ছিল তার উত্তরসূরী, এখন প্রয়াত কিম জং-ইলের। এক দশকেরও বেশি হল তিনি উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে এসেছেন, কিন্তু সেই কংক্রিট ব্যারাকের প্রতিটা গন্ধ, প্রতিটা স্মৃতি তার এখনও টাটকা। "আমরা খুব ঘামতাম। যে গদির ওপর আমরা শুতাম, সেটা ছিল ধানের তূষের তৈরি। ফলে আমাদের গায়ের সব গন্ধ সেই গদিতে আটকে থাকত। তুলোর গদি নয় তো, তাই ঘামের গন্ধ ও অন্য সব গন্ধ চিপকে থাকত সেখানে - একবারেই ভাল লাগত না।" এই অবস্থার একটা বড় কারণ ছিল সেখানে স্নান করা বা কাপড়চোপড় পরিষ্কার করার ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে। "একজন নারী হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল আমরা ঠিকঠাক স্নানই করতে পারতাম না", বলছিলেন লি সো ইয়ন। "গরম জল তো পেতাম না। পাহাড়ের একটা ধর্নার সঙ্গেই হোসপাইপ জুড়ে দেওয়া হত, সেই হোস দিয়েই আমাদের স্নানের জল আসত। তবে তার সঙ্গেই সেই হোস দিয়ে বেরোত সাপ, ব্যাং ইত্যাদি অনেক কিছু!" স্কার্ট পরিহিত নারী সেনাদের কুচকাওয়াজ উত্তর কোরিয়া সংক্রান্ত আরও খবর: 'নিষিদ্ধ দেশ' উত্তর কোরিয়ায় কেমন আছে মানুষ? উত্তর কোরিয়ার সৈন্যের অন্ত্রে 'বিশালাকৃতি কৃমি' খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলা করতে উত্তর কোরিয়ার মানুষ উদ্ভাবন করছে নতুন খাবার উ. কোরিয়ায় কি ধরণের আক্রমণ চালাতে পারে আমেরিকা? এখন ৪১ বছর বয়সী লি সো ইয়নের বাবা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি বড় হয়ে উঠেছেন দেশের উত্তরপ্রান্তে। তার পরিবারের অনেক পুরুষ সদস্যই ছিলেন সেনাবাহিনীতে। ১৯৯০র দশকে যখন উত্তর কোরিয়া ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে, তখন সো ইয়ন নিজে থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে এগিয়ে আসেন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান যে ভাবনাটা কাজ করেছিল তা হল বাহিনীতে দুবেলা অন্তত খাবারের চিন্তা থাকবে না। দেশের আরও অনেক মেয়ে একই কারণে সে সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। প্রথম দিকে অবশ্য দেশপ্রেমের একটা চেতনাও কাজ করেছিল, এবং ১৭ বছরের লি সো ইয়ন বাহিনীতে তার জীবন মোটামুটি উপভোগও করছিলেন। তার জন্য যেভাবে আলাদা করে একটি হেয়ার ড্রায়ার দেওয়া হয়েছিল, বিশেষ করে সেটা তো তার দারুণ লেগেছিল। কিন্তু যেহেতু প্রায়ই ব্যারাকে বিদ্যুৎ থাকত না, তাই চুল শোকানোর সেই যন্ত্র কাজে লাগত না বললেই চলে। পুরুষ ও নারী সৈনিকদের দৈনন্দিন রুটিন অবশ্য ছিল প্রায় একই ধরনের। তবে নারীদের শারীরিক প্রশিক্ষণের সময়টা ছিল পুরুষদের তুলনায় অল্প কিছুটা কম। কিন্তু তাদের কাপড়চোপড় কাচা, পরিষ্কার করা বা রান্নাবান্নার মতো বেশ কিছু গৃহস্থালির কাজ করতে হত, যা থেকে আবার পুরুষ সৈনিকদের রেহাই ছিল। কিন্তু কঠোর শারীরিক অনুশীলন ও পরিশ্রম, খাবারের রেশনে টান ইত্যাদি নানা কারণে লি সো ইয়ন ও তার সতীর্থ সেনাদের শরীরে প্রভাব পড়তে শুরু করে অল্প দিনের ভেতরেই। "বাহিনীতে ঢোকার ছমাস থেকে এক বছরের মধ্যে আমাদের আর ঋতুস্রাব হত না। চরম অপুষ্টি আর ভীষণ একটা মানসিক চাপের পরিবেশে থাকতাম বলেই সেরকমটা হয়েছিল।" "নারী সৈনিকরা অবশ্য বলত তাদের মাসিক হচ্ছে না বলে তারা খুশি। খুশি, কারণ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে তার ওপর আবার মাসিক হলে তাদের আরও শোচনীয় অবস্থার ভেতর পড়তে হত।" বাহিনীতে বন্দুকধারী নারী সৈনিকরা লি সো ইয়ন আরও জানাচ্ছেন, মাসিক ঋতুস্রাবের দিনগুলো নারী সেনারা কীভাবে পার করবে, তার কোনও ব্যবস্থাই বাহিনীতে ছিল না। এমনও হয়েছে, লি সো ইয়ন ও তার নারী সহকর্মীদের বাধ্য হয়ে অনেক সময় একজনের ব্যবহার করা স্যানিটারি প্যাড আবার অন্য একজনকে ব্যবহার করতে হয়েছে। আরও পড়তে পারেন: দিল্লিতে ১৫ দিন পর ডেঙ্গিতে শিশুর মৃত্যু, হাসপাতাল বিল চাইলো ১৭ লাখ রুপি ওসামা বিন লাদেন তার শেষ সাক্ষাৎকারে কী বলেছিলেন পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীরকে যতদূর চোখ যায়, শুধু রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গা লি সো ইয়ন যদিও স্বেচ্ছাতেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন, ২০১৫ সালে উত্তর কোরিয়া নিয়ম করেছে যে ১৮ বছর বয়সের পর সে দেশে সব মেয়েকেই বাধ্যতামূলকভাবে সাত বছর সামরিক বাহিনীতে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে সরকার সে সময় এক অস্বাভাবিক পদক্ষেপ নিয়ে ঘোষণা করেছিল যে বাহিনীর বেশির ভাগ নারী ইউনিটেই 'ডেডং' নামে একটি দামী প্রিমিয়ার ব্র্যান্ডের স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করা হবে। ২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন সে দেশের প্রসাধনী সামগ্রী নির্মাতাদের এমন প্রোডাক্ট তৈরির আহ্বান জানিয়েছিলেন যাতে তারা ল্যানকমে, শ্যানেল বা ক্রিস্টিয়ান ডিওরের মতো গ্লোবাল ব্র্যান্ডের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। এরপর 'পিয়ংইয়ং প্রোডাক্টস' নামে একটি কসমেটিক কোম্পানি সম্প্রতি বিভিন্ন নারী সেনাদের ইউনিটে তাদের কিছু পণ্য বিলি করেছে। তবে তারপরও দেশের গ্রামীণ এলাকায় মোতায়েন বহু নারী সেনার এখনও আলাদা শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ পর্যন্ত নেই। গবেষকদের তারা কেউ কেউ জানিয়েছেন, অনেক সময় পুরুষ সহকর্মীদের সামনেই তাদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয়। এর ফলে তাদের ওপর যৌন হামলার ঝুঁকিও বাড়ে, কিন্তু তাদের কিছু করার থাকে না। উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীতে যৌন নির্যাতন ও লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটে ব্যাপক হারে। উত্তর কোরিয়ার বাহিনীতে এক নারী সৈনিক লি সো ইয়ন বলছেন, ১৯৯২ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে তিনি যখন সেনাবাহিনীতে ছিলেন তখন তাকে ধর্ষিতা হতে হয়নি ঠিকই, কিন্তু তার অনেক নারী কমরেডকেই সেই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কাজের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও কোম্পানি কমান্ডার নিজের ঘরে বসে থাকতেন ও নিজের অধীনস্থ নারী সেনাদের মধ্যে কাউকে ডেকে নিয়ে সেখানে ধর্ষণ করতেন। এই জিনিস অবিরামভাবে চলত দিনের পর দিন। উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী অবশ্য দাবি করে থাকে তারা যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। কোনও পুরুষ সেনা ধর্ষণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে তার সাত বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে। "কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ধর্ষিতা নারী সেনারা কেউ ভয়ে সাক্ষ্য দিতেই এগিয়ে আসে না। ফলে ধর্ষণকারী পুরুষদেরও কোনও সাজা হয় না কখনওই", বলছিলেন জুলিয়েট মরিলট নামে এক গবেষক। লি সো ইয়ন সেনাবাহনীর একটি সিগনালস ইউনিটে সার্জেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন, যেটি ছিল দক্ষিণ কোরিয়া সীমান্তের খুব কাছেই। শেষ পর্যন্ত তিনি বাহিনীর চাকরি ছেড়ে দেন ২৮ বছর বয়সে। পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পেয়ে তার ভালই লেগেছিল - কিন্তু সেনাবাহিনীর বাইরের জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতেও তার কষ্ট হয়েছিল, সেই সঙ্গে ছিল আর্থিক টানাটানি। ২০০৮ সালে তিনি শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়াতে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রথম প্রচেষ্টার সময় চীনের সীমান্তের কাছে তিনি ধরা পড়ে যান এবং তাকে এক বছরের জন্য একটি বন্দী শিবিরে পাঠানো হয়। সেই জেল থেকে বেরোনোর কয়েকদিন পরেই তিনি দ্বিতীয়বার দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। এবারের চেষ্টায় তিনি তুমেন নদী সাঁতরে পাড় হয়ে চীনের ভেতরে ঢুকে পড়েন। সেখানে সীমান্তে তার দেখা হয় এক দালালের সঙ্গে। সেই দালালই তাকে চীনের ভেতর দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা করে দেয়। জুলিয়েট মরিয়ট ও অন্য গবেষকরা বলছেন, অন্যান্য সূত্রে তারা উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর ভেতরকার অবস্থার যে বর্ণনা শুনতে পেয়েছেন তার সঙ্গে লি সো ইয়নের এই বিবরণ মিলে যাচ্ছে। তবে উত্তর কোরিয়া ছেড়ে যারা পালিয়ে আসেন, তাদের বর্ণনা অনেক সময়ই অতিরঞ্জিত হয় এটাও তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। লি সো ইয়ন অবশ্য এই সাক্ষাৎকারের জন্য বিবিসির কাছ থেকে কোনও টাকা পয়সা নেননি। আমাদের পেজে আরও পড়ুন: যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যায় দন্ডিত বসনিয়ান সাবেক সার্ব কমান্ডার রাতকো ম্লাদিচ গ্রেস মুগাবে: স্টেট হাউজের টাইপিস্ট থেকে ফার্স্টলেডি সাভার আর মানিকগঞ্জে মাটির নিচে পানির 'খনি' | বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম সেনাবাহিনীতে একজন নারী সৈনিকের জীবন এতটাই কঠিন যে খুব তাড়াতাড়ি তাদের বেশির ভাগের মাসিক ঋতুস্রাব পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী কিন্তু মি. গান্ধীর এমন কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ছিলেন, যাঁদের সাধারণত ছবিতে খুব একটা দেখা যায় না। সেরকমই কয়েকজন নারীকে নিয়েই এই প্রতিবেদন। এই নারীদের প্রত্যেকের জীবনেই মি. গান্ধীর আদর্শ একটা বড়সড় প্রভাব ফেলেছে, যে রাস্তায় চলে পরবর্তী জীবনে তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে এগিয়েছেন। তাঁদেরই মধ্যে একজন মেডেলিন স্লেড, ওরফে মীরাবেন (১৮৯২-১৯৮২) মেডেলিন স্লেড ও গান্ধী মেডেলিন স্লেড ছিলেন ব্রিটিশ অ্যাডমিরাল স্যার এডমন্ড স্লেডের কন্যা। উচ্চপদস্থ এক ব্রিটিশ অফিসারের মেয়ে হওয়ার কারণে তাঁর প্রথম জীবনটা ছিল কঠোর অনুশাসনে বাঁধা। জার্মান সঙ্গীতকার ও প্রবাদপ্রতিম পিয়ানো শিল্পী বেঠোফেনের সাংঘাতিক রকমের ভক্ত ছিলেন মিজ স্লেড। সেই সূত্রেই তিনি ফরাসী লেখক রোম্যাঁ রোল্যাঁর সংস্পর্শে আসেন। মি. রোল্যাঁ যাঁদের নিয়ে লিখেছেন, তাঁদের মধ্যে যেমন রয়েছেন বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞরা, তেমনই ছিলেন মি. গান্ধীও। মি. রোল্যাঁর লেখা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সেই জীবনী মেডেলিন স্লেডের জীবনে এতটাই প্রভাব ফেলেছিল, যে তিনি গান্ধীর পথেই চলার সিদ্ধান্ত নেন। আরো পড়ুন: শুধু আনন্দের জন্য যৌনমিলনের বিরোধী ছিলেন গান্ধী কেমন ছিল মোহনদাস গান্ধীর জীবনের শেষ দিনগুলো এতটাই রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন মেডেলিন, যে মি. গান্ধীকে নিজের মনের কথা জানিয়ে একটা চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতেই জানিয়েছিলেন যে গান্ধী-আশ্রমে আসতে চান তিনি। মদ ছেড়ে দিয়েছিলেন, চাষবাসের কাজ শিখতে শুরু করেছিলেন, এমন কি নিরামিষাশীও হয়ে গিয়েছিলেন মেডেলিন স্লেড। নিয়মিত পড়তে শুরু করেছিলেন মি. গান্ধীর সম্পাদিত কাগজ 'ইয়ং ইন্ডিয়া'। অবশেষে, ১৯২৫ সালের অক্টোবর মাসে মুম্বাই হয়ে আহমেদাবাদে পৌঁছিয়েছিলেন মেডেলিন স্লেড। তাঁর সঙ্গে মি. গান্ধীর প্রথম দেখা হওয়ার ঘটনা মেডেলিন এইভাবে বর্ণনা করেছিলেন: "আমি দেখছিলাম সামনে থেকে একজন রোগাপাতলা মানুষ সাদা চাদর থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আমি জানতাম উনিই বাপু। মনটা শ্রদ্ধায় ভরে গিয়েছিল। সামনে একটা আশ্চর্য দিব্য জ্যোতি দেখতে পাচ্ছিলাম আমি। তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করে বসে পড়েছিলাম। 'তুমি তো আমার কন্যা!', আমাকে টেনে তুলে বলেছিলেন বাপু।" মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে সম্মান দেখিয়ে 'মহাত্মা' যেমন নামে ডাকেন বহু মানুষ, তেমনই তাঁকে 'বাপু' অথবা বাবা বলেও সম্মান করেন অনেকে। সেই দিন থেকেই দুজনের মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। পরে, মেডেলিনের নামই হয়েছিল মীরাবেন। নীলা ক্র্যাম কুক (ডানে) মি. গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন আরেক বিদেশিনী নীলা ক্র্যাম কুক (১৮৭২-১৯৪৫) আদতে মার্কিন নাগরিক মিজ কুক মাইসোরের রাজকুমারের প্রেমে পড়েছিলেন। সেখানে থাকার আগে রাজস্থানের মাউন্ট আবুতে এক ধর্মীয় গুরুর কাছেও থাকতেন তিনি। ১৯৩২ সালে প্রথমবার নীলা চিঠি লেখেন মি. গান্ধীকে। ব্যাঙ্গালোর থেকে পাঠানো সেই চিঠিতে তিনি অস্পৃশ্যতা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে সেখানে ঠিক কী হচ্ছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা জানিয়েছিলেন। তারপর থেকে শুধু চিঠিতেই দুজনের যোগাযোগ ছিল। পরের বছর মিজ কুক প্রথমবার মি. গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন পুনের ইয়ারওয়াডা জেলে। মি. গান্ধীই তাঁকে সবরমতী আশ্রমে পাঠানোর বন্দোবস্ত করেছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই আশ্রমের অন্যান্য নতুন সদস্যদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয়ে গিয়েছিল মিজ কুকের। তবে অনেকে মিজ কুককে 'নীলা-নাগিন' বলেও ডাকতে শুরু করেছিলেন তাঁর আড়ালে। উদার চিন্তাভাবনার মিজ কুকের পক্ষে গান্ধী-আশ্রমের পরিবেশে বেশী দিন মানিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় নি। একদিন হঠাৎই তিনি আশ্রম থেকে পালিয়ে যান। পরে তাঁকে বৃন্দাবনে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। নিজেকে তখন তিনি কৃষ্ণের সঙ্গিনী গোপী বলে ভাবতে শুরু করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে আমেরিকায় ফেরত যেতে হয়েছিল। সেখানে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং কোরানের অনুবাদও করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইঝি ছিলেন সরলা দেবী চৌধুরাণী (১৮৭২-১৯৪৫) সরলা দেবী চৌধুরাণী (ডানে) উচ্চ শিক্ষিত, সৌম্য দর্শন সরলা দেবী বিভিন্ন ভাষাচর্চা, সঙ্গীত আর লেখালেখির মধ্যেই থাকতে পছন্দ করতেন। তাঁর স্বামী, স্বাধীনতা সংগ্রামী রামভূজ দত্ত চৌধুরী যখন জেলে ছিলেন, সেই সময়ে একবার লাহোরে গিয়ে মি. গান্ধী তাঁর বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ মি. দত্ত চৌধুরীর বাড়িতেই উঠেছিলেন। সেই সফরের সময়েই সরলাদেবীর সঙ্গে মি. গান্ধীর ঘনিষ্ঠতা শুরু হয়। সরলাদেবীকে নিজের 'আধ্যাত্মিক পত্নী' বলে মনে করতেন মি. গান্ধী। পরে নিজেই স্বীকার করেছিলেন মি. গান্ধী, যে ওই সম্পর্কের কারণে তাঁর বিবাহ ভেঙ্গে যাওয়ার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। শেষমেশ অবশ্য মি. গান্ধীর বিয়ে ভাঙ্গে নি। খাদির প্রচার-প্রসারে সরলাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে সারা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন মি. গান্ধী। কিন্ত দুজনের সম্পর্ক নিয়ে নানা কথা পৌঁছতে শুরু করেছিল মি. গান্ধীর ঘনিষ্ঠদের কানেও। হঠাৎই নিজেকে সরলাদেবীর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেন মি. গান্ধী। কিছুদিন পরে হিমালয়ে একান্তে বসবাসের সময়ে মৃত্যু হয় সরলা দেবীর। গান্ধীর আরেক ঘনিষ্ঠ নারী ছিলেন সরোজিনী নাইডু (১৮৭৯-১৯৪৯) গান্ধী ও সরোজিনী নাউডু। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম নারী সভাপতি ছিলেন তিনি। দুজনের প্রথম সাক্ষাত হয়েছিল লন্ডনে। সেই ব্যাপারে সরোজিনী নাইডু লিখেছিলেন, "একজন ছোটখাটো চেহারার মানুষ। মাথায় একটাও চুল নেই। মেঝেতে কম্বল পেতে বসে তিনি তেলে ভেজানো টম্যাটো খাচ্ছিলেন তখন। সারা পৃথিবীর মানুষ তখন মি. গান্ধীকে চেনে। সেই মানুষটাকে ওইভাবে দেখে আমি হেসে ফেলেছিলাম। উনি চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, 'নিশ্চয়ই আপনিই মিসেস নাইডু? এতটা অশ্রদ্ধা আর কে-ই বা করতে পারে আমাকে? আসুন, আমার সঙ্গে খাবার শেয়ার করুন।" এইভাবেই সরোজিনী নাইডু আর মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল। রাজকুমারী অমৃত কৌর (১৮৮৯-১৯৬৪) ছিলেন পাঞ্জাবে, কাপুরথালার রাজা স্যার হরণাম সিং-য়ের কন্যা। রাজকুমারী অমৃত কৌর (ডানে)। রাজকুমারী পড়াশোনা করেছেন ইংল্যান্ডে। ১৯৩৪ সালে প্রথমবার দেখা হওয়ার পর থেকে মি. গান্ধী আর রাজকুমারীর মধ্যে অসংখ্য চিঠি চালাচালি হয়েছে। অমৃত কৌরকে লেখা চিঠিগুলো মি. গান্ধী শুরু করতেন এইভাবে: "আমার প্রিয় পাগলী আর বিদ্রোহী" বলে। শেষে নিজের নামের জায়গায় মি. গান্ধী লিখতেন 'তানাশাহ', অর্থাৎ স্বৈরাচারী! অমৃত কৌরকে মি. গান্ধীর সবথেকে ঘনিষ্ঠ সত্যাগ্রহীদের মধ্যে একজন বলে মনে করা হত। লবণ সত্যাগ্রহ বা ১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে জেলেও যেতে হয়েছে রাজকুমারী অমৃত কৌরকে। স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বাস্থ্য মন্ত্রী হয়েছিলেন অমৃত কৌর। ডা. সুশীলা নায়ার (১৯১৪-২০০১) ছিলেন মি. গান্ধীর ব্যক্তিগত সচিব পেয়ারেলালের বোন। দীর্ঘদিন সচিবের কাজ সামলিয়েছেন যে মহাদেব দেশাই, তাঁর পরে পাঞ্জাবী পরিবার থেকে আসা পেয়ারেলাল মি. গান্ধীর সচিব হয়েছিলেন। ডা. সুশীলা নায়ার ও গান্ধী। নিজেদের মায়ের অনেক বিরোধিতার সত্ত্বেও দুই ভাই বোন হাজির হয়েছিলেন মি. গান্ধীর কাছে। দুই ছেলে মেয়ে মি. গান্ধীর কাছে চলে গেছে বলে যে মা প্রথমে কাঁদতেন, পরে অবশ্য সেই তিনিও গান্ধীর কট্টর সমর্থক হয়ে গিয়েছিলেন। ডাক্তারী পাশ করে সুশীলা মি. গান্ধীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক হয়ে গিয়েছিলেন। মনু আর আভা ছাড়া মি. গান্ধী আর যে একজনের কাঁধে ভর দিয়ে বিভিন্ন সভায় বা প্রার্থনায় যেতেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন সুশীলা। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়ে যখন মি. গান্ধীর স্ত্রী কস্তুর্বা মুম্বাইতে গ্রেপ্তার হলেন, তখন একই সঙ্গে কারাবরণ করেছিলেন সুশীলাও। পুনেতে কস্তুর্বার শেষ সময়েতেও পাশে ছিলেন সুশীলাই। আর ব্রহ্মচর্যের যে অভ্যাস করতেন মি. গান্ধী, তাতেও সাহায্য করতেন সুশীলা। জন্মসূত্রে বাঙালী ছিলেন আভা গান্ধী (১৯২৭-১৯৯৫) আভা গান্ধী এবং মোহনদাস গান্ধী। তাঁর বিয়ে হয়েছিল মি. গান্ধীর সম্পর্কে নাতি কানু গান্ধীর সঙ্গে। মি. গান্ধীর সব প্রার্থনা সভায় ভজন গাইতেন আভা আর ছবি তুলতেন তাঁর স্বামী কানু। ৪০এর দশকে মি. গান্ধীর বহু ছবিই কানু গান্ধীর তোলা। নোয়াখালীর দাঙ্গার সময়ে মি. গান্ধীর সঙ্গেই ছিলেন আভাও। শেষমেশ, যখন নাথুরাম গডসে মি. গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করে, তখনও পাশেই ছিলেন আভা গান্ধী। খুব অল্প বয়সেই মনু গান্ধী (১৯২৮-১৯৬৯) চলে গিয়েছিলেন মি. গান্ধীর কাছে। গান্ধীর সাথে তার দুই নাতনী মনু (ডানে) ও আভা। মনু তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন, তবে মি. গান্ধী মনুকে নিজের নাতনি বলেই ডাকতেন আর পরিচয়ও দিতেন। ভারতের স্বাধীনতার সময়ে দাঙ্গা বিধ্বস্ত নোয়াখালীতে আভা গান্ধীর আর মনু গান্ধীই ছিলেন মি. গান্ধীর ছায়াসঙ্গী। মি. গান্ধীর যে অতি পরিচিত ছবিগুলো দেখতে পাওয়া যায়, তার অনেকগুলিতেই মি. গান্ধী যে দুই নারীর কাঁধে ভর দিয়ে চলতেন, সেই দুজন ছিলেন আভা গান্ধী আর মনু গান্ধী। একবার মি. গান্ধীর বিরোধীরা তাঁর যাওয়ার রাস্তায় মল-মূত্র ফেলে রেখে দিয়েছিল। ঝাড়ু হাতে সেগুলো পরিষ্কার করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন আভা আর মনু গান্ধীই। মনু গান্ধীর ডায়েরীর পাতাগুলোয় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর জীবনের শেষ কয়েক বছরের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা পাওয়া যায়। [মঙ্গলবার মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী। সেই উপলক্ষে বিবিসি হিন্দি থেকে অনুবাদ করা একটি প্রতিবেদন আটজন নারীকে নিয়ে, যাঁরা মি. গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে ছিলেন।] বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: কফি সম্পর্কে ১০টি অজানা তথ্য পরিপাকতন্ত্রকে কেন দ্বিতীয় মস্তিষ্ক বলা হয়? খালেদা বা তারেক প্রশ্ন 'নির্বাচনী ঐক্যের শর্ত নয়' | আপনি নিশ্চয়ই মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর অনেক ছবি দেখেছেন? বেশিরভাগ ছবিতেই দেখা যায় তাঁর পাশে অনেক মানুষ রয়েছেন। এঁদের মধ্যেও আবার জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বা মি. গান্ধীর স্ত্রী কস্তুর্বা গান্ধীর ছবিই বেশি দেখা যায়। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | ভাইরাস - একইভাবে ক্ষতিকারক মানুষ আর কম্পিউটারের জন্য। দেশে দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ নিয়ে হ্যাকাররাও ছড়িয়ে দিচ্ছে আতঙ্ক, বিভ্রান্তি আর সেই সাথে কম্পিউটার ভাইরাস। করোনাভাইরাস সংবাদ শিরোনামে পরিণত হওয়ার পর সাইবার নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এধরনের কিছু ইমেইল ফিশিং ষড়যন্ত্র শনাক্ত করেছে। বিবিসিও এগুলো এখন পরীক্ষা করে দেখছে। করোনাভাইরাসের আতঙ্ককে পুঁজি করে সাইবার অপরাধীরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শত শত ভুয়া ইমেইল ছাড়ছে এবং নিরীহ মানুষের কম্পিউটারে ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইমেইল ফিশিং নতুন কোন ঘটনা নয়, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন কোভিড-১৯-এর সাথে সম্পর্কিত যেসব ভুয়া ইমেইল তারা দেখেছেন সেগুলো অত্যাধুনিক মানের। এসব ইমেইলে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, জাপানি এবং তুর্কী ভাষা ব্যাবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি সাইবার অপরাধীরা পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, ইনস্যুরেন্স, বিনোদন এবং ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচয় ব্যবহার করছে। বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর: করোনাভাইরাস: সংক্রমণ ঠেকাতে কোন দেশ কী করছে করোনাভাইরাস যেভাবে কেড়ে নিল এক বাংলাদেশির প্রাণ করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন 'করোনাভাইরাসের ওষুধের জন্য এখানে ক্লিক করুন' প্রুফপয়েন্ট নামে সাইবার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা গত ফেব্রুয়ারি মাসে ছড়িয়ে পড়া কিছু ইমেইল দেখে সন্দেহ করেন। এতে রহস্যজনক এক ডাক্তার লিখেছেন, তার কাছে কোরনোভাইরাসের ভ্যাকসিন রয়েছে, যে খবরটি চীনা এবং ব্রিটিশ সরকার এখন ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। প্রুফপয়েন্ট কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এ নিয়ে বিশদ জানতে যারা ঐ ইমেইলে ক্লিক করেছেন তাদের একটি ডকুসাইন পেজে নিয়ে যাওয়া হয় যেটি দেখতে আসল। আসলে সেটি ছিল সাইবার অপরাধীদের তৈরি একটি ওয়েবপেজ যেখান থেকে মানুষের অ্যাকাউন্ট নেম আর পাসওয়ার্ড চুরি করা হয়। সেই নাম-ধাম ব্যবহার করে তারা মানুষের অন্যান্য অ্যাকাউন্টও হ্যাক করে। প্রুফপয়েন্ট বলছ, তারা এমন প্রমাণও দেখেছে যেখানে ধাপে ধাপে এরকম দুই লক্ষ ইমেইল ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রুফপয়েন্ট-এর কর্মকর্তা শেরড ডিগ্রিপো বলছেন, আমরা দেখেছি একনাগাড়ে ৩৫ দিন ধরে এইরকম ইমেইল বাইরে ছাড়া হয়েছে। প্রথমে শুরু হয়েছিল দিনে একটা করে ইমেইল, এখন প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচটি এধরনের ফিশিং মেইল ছাড়া হচ্ছে।" মুখোশধারী হ্যাকার। কোন ইমেইলের মধ্যে কোন ওয়েবসাইটের লিংক দেয়া থাকলে সেটা পরীক্ষা করার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে কার্সারটি ঐ লিংকের ওপর নিয়ে নাড়াচাড়া করলেই প্রকৃত ওয়েবসাইটের লিংকটি দেখা যাবে। 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা: আপনার জন্য পরামর্শ' করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার সময় থেকেই হ্যাকাররা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচয় ব্যবহার করে আসছে। এবং লোকজনকে নানা ধরনের ইমেইল পাঠাচ্ছে। সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানান, এধরনের ইমেইল যারা ডাউনলোড করেন তারা নিজের অজান্তেই হ্যাকারদের দেয়া কম্পিউটার ভাইরাস ডাউনলোড করেন। এ ধরনের ইমেইলে হ্যাকাররা সাধারণত গোপনে এজেন্ট টেসলা কি-লগার সফটওয়্যার ঢুকিয়ে রাখে। প্রুফপয়েন্ট-এর কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, কি-লগারটি ডাউনলোড করার পর হ্যাকাররা আপনার প্রতিটি কি-স্ট্রোক রেকর্ড করে রাখতে পারবে। এবং এগুলো ব্যবহার করে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য জেনে যাবে। এর হাত থেকে বাঁচতে এধরনের ইমেইল মোটেই খুলে দেখবেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আপনাকে কেন ইমেইল পাঠাবে, সেটাও আপনাকে ভেবে দেখতে হবে। 'সাবধান!ভাইরাসটি এখন বায়ু-বাহিত' এই ইমেইল ফিশিংটি দেখতে বেশ আকর্ষণীয় এবং এটা পড়লে আপনার ভয় লাগবে। এর শিরোনামে রয়েছে: কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাসের আনুষ্ঠানিক নাম) এখন বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে এবং মানুষকে সংক্রমিত করছে। দেখলে মনে হবে ইমেইলটি পাঠিয়েছে মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসি। কোফেন্স নামে একটি সাইবার অপরাধ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, এই ইমেইলে মানুষের আতঙ্ককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা রয়েছে। এই ইমেইল থেকেও সাইবার অপরাধীরা হাতিয়ে নিতে পারে আপনার কম্পিউটারের সব গোপন তথ্য। অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার সংস্থা ক্যাসপার্সকি বলছে, করোনাভাইরাস নাম দিয়ে ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে ৩০০০ বারেরও বেশি। এমন প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের আতঙ্ক এবং বিভ্রান্তি যত বাড়বে, হ্যাকারও তত বেশি করে কম্পিউটার ভাইরাস ছড়াতে থাকবে। | সমস্যার শুরু একটি মাত্র ক্লিক থেকে। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | রাজনৈতিক দলগুলোর রয়েছে অনেক নারী কর্মী। মিজ আক্তার যুব মহিলা লীগের একজন নেত্রী। ঢাকা মহানগরের প্রেসিডেন্ট তিনি। ছাত্রাবস্থা থেকে রাজনীতি করে আসছেন। জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। এবারের নির্বাচনে ঢাকার একটি আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। এই আসনে তার মতো আরো ১৬ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন দল থেকে। তাদের মাত্র দু'জন নারী। সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, "স্বপ্ন ছিল রাজনীতির মাঠে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়ে আসা।" কিন্তু শেষ পর্যন্ত দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম কী কারণে মনোনয়ন পাননি বলে তিনি মনে করছেন? "নারীর জন্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো তিনি একজন নারী," আক্ষেপের সুর ছিল তার কণ্ঠে, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান নারীদের ক্ষমতায় নিয়ে আসতে। কিন্তু তার চারপাশে তো সবাই পুরুষ। রাজনীতি তো এই পুরুষতন্ত্রের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।" আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাদের মাত্র পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ নারী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোট থেকে ২০ জন এবং বিএনপির জোট থেকে ১৪ জন নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ছোটখাটো অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর নারী প্রার্থীর সংখ্যাও এর চেয়ে খুব একটা বেশি নয়। আগের জাতীয় নির্বাচনগুলোতেও নারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল কমবেশি এরকমই। যুবলীগের নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিনের মতো বেশিরভাগ রাজনীতিকেরই হাতেখড়ি হয় ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে। যেসব ছাত্র সংগঠন দিয়ে তাদের কেরিয়ারের সূচনা হয় সেখানেও প্রচুর নারী সদস্য থাকা সত্ত্বেও তাদের নেতৃত্বে উঠে আসা বিরল ঘটনা। তাদেরই একজন শিরীন আখতার। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। বর্তমানে জাতীয় সংসদের একজন এমপি এবং জাসদের সাধারণ সম্পাদক। তার গল্পটা ব্যতিক্রম। তিনিও বলছিলেন, পুরুষতান্ত্রিকতার বাধা ডিঙ্গিয়ে তাকে এই পর্যায়ে আসতে হয়েছে। আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছিলেন শিরীন আখতার। তিনি বলেন, প্রথমবার তিনি যখন সাধারণ সম্পাদক হতে চেয়েছিলেন তখনও নারী নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। "আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে নারী নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু কাউন্সিলে গিয়ে দেখলাম সবাই একেবারে উল্টো কথাটা বলছে। আগের দিন তারা যা বলেছিল সেরকম বলছে না। তার পরের বছর যখন সভাপতি হতে চাইলাম তখনও সারা দেশ থেকে আসা কর্মীরা সেই একই প্রশ্ন তুললো- ছাত্রলীগের মতো একটি সংগঠনকে কিভাবে একজন নারী পরিচালনা করবে!" বলেন তিনি। শিরীন আখতার বলেন, সেসময়ে তার আশেপাশে আরো যেসব নারী ছিলেন তারাও কোন এক সময়ে রাজনীতি থেকে ঝড়ে পড়েছে। "তখন মাত্র এক ঘণ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের দুটো হল থেকে পাঁচশোর মতো মেয়ে মিছিলে চলে আসতো। কিন্তু তাদের কাউকে আমি এখন আর রাজনীতিতে দেখতে পাই না।" বিএনপির কমিটিতে রয়েছেন অনেক নারী রাজনীতিবিদ ছাত্র রাজনীতিতে যেমন বহু নারী সক্রিয় থাকেন, তেমনি ইউনিয়ন এবং উপজেলা পরিষদের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও সংরক্ষিত ও সরাসরি ভোটে অনেক নারীকে অংশ নিতে দেখা যায়। কিন্তু এর পরে জাতীয় নির্বাচনে এই নারীদেরকেই আর চোখে পড়ে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক, সমাজ বিজ্ঞানী ড. সানজিদা আখতার বলছেন, বৃহত্তর পর্যায়ে নারীরা পুরুষদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না। "নারীবান্ধব তো কতো কিছু হচ্ছে। এখন নারীবান্ধব রাজনীতির বিষয়টাও ভাববার বিষয়। যে পুরুষ চরিত্র দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি পরিচালিত হয়, তার মধ্যে নারীরা নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে না," বলেন তিনি। তিনি বলেন, "দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর মাইন্ডসেট তৈরি হয়। বিশেষ করে যখন ভোটের সময় আসে, নমিনেশন দেওয়ার বিষয় আসে, তখন যে রাজনৈতিক দলই হোক না কেন, তারা তাকেই নমিনেশন দেবে যার জিতে আসার সম্ভাবনা নিশ্চিত।" যুব মহিলা লীগের নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিনও বলেছেন একই কথা। তার মতে, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন স্থানে নারীদের বসিয়েছেন। একজন নারীকে তিনি সংসদের স্পিকারও বানিয়েছেন। কিন্তু তার চারপাশে সবাই পুরুষ। একটা জায়গায় গিয়ে তারা নারীর ক্ষমতায়ন মেনে নিতে পারেন না, প্রধানমন্ত্রী একা চাইলে হবে না। চারপাশে এখনও পুরুষদের শাসন।" বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: প্রচারণায় আওয়ামী লীগ, বিএনপির নজর কোন দিকে? সংসদ নির্বাচন: প্রচারণার শুরুতেই সহিংসতায় নিহত ১ গত ১০ বছরে কী পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশে? বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের বড় দুটো দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রধান নারী। এছাড়াও নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে গত প্রায় তিন দশক ধরে দেশের নেতৃত্বে রয়েছেন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। তারাই বারবার নির্বাচিত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় সংসদের স্পিকারও একজন নারী। তারপরেও এই দুটো দল থেকে আরো বেশি সংখ্যক নারীকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না কেন? শিরীন আখতার মনে করেন, নির্বাচনের মাঠে নারীদের হারিয়ে যাওয়ার বড় কারণ নারীর প্রতি রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিভঙ্গি। "নারীদেরকে দলের ভেতর থেকেই প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হয়। দেখা গেল একই নির্বাচনী এলাকায় একজন নারী কাজ করছেন, আবার একজন পুরুষও কাজ করছেন। সেখানে পুরুষের অগ্রাধিকার তার বিভিন্ন সুবিধার কারণেই। তবে ওই নারী যদি প্রভাবশালী কোন পুরুষের স্ত্রী বা কন্যা হন, তখন আবার তার আরেক ধরনের সুবিধা হয়।" এবারে নির্বাচনে যে সামান্য কয়েকজন নারী মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের পিতা, স্বামী কিংবা পরিবারের সূত্রে পেয়েছেন। কিন্তু শিরীন আখতারের এই কথার সাথে একমত নন বিএনপির একজন নেত্রী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। টেলিভিশনের টকশোর কারণে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। তার পিতা কে এম ওবায়দুর রহমানও ছিলেন একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক। তিনি বলছেন, নারীরা যে শুধু পিতা বা স্বামীর পরিচয়ে সামনে আসছেন তা নয়, তাদের নিজেদেরকেও রাজনীতির মাঠ তৈরি করে নিতে হয়। "পারিবারিক সূত্রে অনেকে রাজনীতিতে আসেন। কিন্তু নিজের অবস্থান ধরে রাখতে হলে সেটা রাজনৈতিক যোগ্যতা থেকে করতে হবে। আমার বাবা মারা গেছেন ১২ বছর আগে। তারপর থেকে এই নির্বাচনী এলাকা আমি ধরে রেখেছি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা যেকোনো দল যখন নমিনেশন দেবে তখন তারা যোগ্য ব্যক্তিকেই দেবেন," বলেন তিনি। তৃনমূলের নারীদেরকে রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসতে দেওয়া হয় না- এই অভিযোগের সঙ্গে একমত নন এইচ টি ইমাম। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে শেখ হাসিনার পরেই তিনি। মি: ইমাম বলেন, "আসতে দেওয়া হয় না কথাটা ঠিক না। কাঠামোটাই এমন। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে উপরে ওঠে আসা খুব কঠিন। তবে উপজেলা পর্যায়ে এলে তাদের অনেকে প্রার্থী হন। তার পেছনে শিক্ষাগত যোগ্যতা, সাংগঠনিক ক্ষমতা, পারিবারিক ঐতিহ্য এসব বিষয়ও কাজ করে।" নারীর রাজনীতিতে আসার পেছনে বড় বাধা সহিংসতা। নারী নেত্রীরা বলছেন, এসব যোগ্যতা থাকার পরেও, পুরুষ প্রার্থীদের তুলনায় তাদেরকে আরো বেশি পরীক্ষা দিতে হয়। মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ সাবিনা আক্তার তুহিন মনে করেন, প্রার্থীদের পেশী শক্তি, অর্থ- এসবই নারীর বিপক্ষে কাজ করে। এবং এই সঙ্কট বাংলাদেশের বামপন্থী থেকে দক্ষিণপন্থী প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলেই আছে। মিজ আক্তার বলেন, "আমাদেরকে বলা হয় যে নারীরা এলাকায় ভোট ধরে রাখতে পারবে না। আরেকটা হলো গায়ের জোর কম। নারীর ক্ষেত্রে অনেক যোগ্যতা চাওয়া হয়। কিন্তু পুরুষের বেলায় সেটা অনেক শিথিল। কোন এলাকায় প্রার্থী হতে চাইলে কোন একজন পুরুষ যদি ২০ শতাংশ যোগ্য হয়, নারীকে হতে হয় ১০০ শতাংশ।" বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ মনে করেন, এজন্যে দায়ী রাজনৈতিক দলের মানসিকতা বা মাইন্ডসেট। "গত কাউন্সিলের পর আমাদের দলে অনেক নারী নেতৃত্ব আছেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন একটা পর্যায়ে গিয়ে নারীরা বাধাপ্রাপ্ত হয়। আরেকটা বড় ব্যাপার হলো- বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনে প্রচুর সহিংসতা হচ্ছে, সংঘর্ষ হচ্ছে। এ কারণে যেখানে পুরুষরাই নিরাপদ নয়, সেখানে নারীরা কিভাবে নিরাপদ বোধ করবে," প্রশ্ন করেন তিনি। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা সাড়ে দশ কোটির মতো যার মধ্যে নারী ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা মাত্র ১০ লাখের মতো বেশি। তারপরেও রাজনৈতিক দলগুলোতে নারী প্রার্থীর সংখ্যা এতো কম কেন- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম বলেন, নির্বাচনে জেতার লক্ষ্য থেকে প্রার্থী বাছাই করা হয়। তখন বাদ পড়ে যান নারীরা। বাংলাদেশে ভোটারদের অর্ধেক নারী। তিনি বলেন, "এবার নির্বাচনের চেহারাটা তো পাল্টে গেছে। সবগুলো দল এসেছে। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেকারণে শুধু মহিলা হলেই হবে না, তিনি জিতে আসতে পারবেন কীনা এরকম শক্তিশালী প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এরকম নারী প্রার্থী আমরা খুব বেশি পাইনি।" মি. ইমাম বলেন, "এবারের লড়াই তো অনেক কঠিন হবে। দুই দফার পর তৃতীয় দফায় ফিরে আসা। সেগুলো চিন্তাভাবনা করে সরাসরি যারা জিতে আসবেন তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে তো মেজরিটি (সংখ্যাগরিষ্ঠতা) পেতে হবে। আর সেটা পাওয়ার জন্যে শক্তিশালী প্রার্থীদেরকেই বেছে নিতে হয়েছে।" রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে হলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২০২০ সালের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ নারী সদস্য থাকার শর্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোতে এখন অনেক নারীই হয়তো আছেন কিন্তু তার তুলনায় নারী প্রার্থীর সংখ্যা খুবই কম। কারণ হিসেবে রাজনীতিবিদরা বলছেন, রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা আর নির্বাচনের মাঠে জিতে আসা দুটো দুই জিনিস। সমাজ বিজ্ঞানী ড. সানজিদা আখতার বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে নারীদের সংখ্যা বাড়বে। "নারীরা রাজনীতিতে আসতে পারছে না তার অর্থ এই নয় যে তারা আগ্রহী নয়। রাজনীতিতে তাদেরও এখন কিছু বলার আছে। বর্তমান প্রজন্মের নারীরা রাজনীতির ব্যাপারে অনেক বেশি আগ্রহী। টেলিভিশন খুললেও এটা চোখে পড়ে।" | শুরু করা যাক জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে একজন মহিলা এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের কথা দিয়ে। তিনি বলছিলেন, তার পুরুষ সহকর্মীরা নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে সভায় ও সংসদে বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু যখন দেখেন এই নারীদের কারণে প্রতিযোগিতায় পড়ে গেছেন তখনই তারা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান। তার ভাষায়, "এটাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা।" |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | দেখা যাচ্ছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় একপ্রকার শিশু সংকট শুরু হয়েছে। যেভাবেই আপনি ভাবুন না কেন, দেখা যাচ্ছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় একপ্রকার শিশু সংকট শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহেই দুইটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের বৃহত্তম শক্তির দেশগুলো চিন্তায় পড়ে গেছে, কারণ সেখানে যথেষ্ট শিশু নেই। গত বুধবার, রাশিয়ান নারীদের বেশি করে সন্তান নিতে উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। প্রথম সন্তান নেয়ার জন্য একজন নারীকে ৭ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার দেয়া হবে। আর দ্বিতীয় সন্তান নেয়ার জন্য তিনি পাবেন ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। একই দিনে আরেকটি তথ্যে জানা যাচ্ছে যে, ২০১৯ সালে চীনে জন্ম নেয়া শিশুর সংখ্যা গত ছয় দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে এসেছে। এই দেশগুলো চিন্তায় পড়ে গেছে যে, তাদের নাগরিকরা দিনে দিনে বয়স্ক হয়ে উঠছে। তাদের উদ্বেগ, ভবিষ্যতে কাজ করার জন্য যথেষ্ট তরুণ কর্মী পাওয়া যাবে না। বেবি বোনাস তবে এই সমস্যায় শুধুমাত্র চীন এবং রাশিয়া নেই। সারা বিশ্ব জুড়েই জন্ম হার কমছে। কিন্তু কেন মানুষকে সন্তান গ্রহণে উৎসাহিত করা কঠিন? ২০০৭ সালে বেবি বোনাস ঘোষণা করে রাশিয়া। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সন্তান গ্রহণের জন্য বোনাস হিসাবে অর্থ পাবেন বাবা-মা। কিন্তু তার প্রায় কোন প্রভাবই পড়েনি। জন্মহার এখনো কমছে। ২০১৫ সালে চীনের সরকার আশা করেছিল যে, শিশু জন্মের হিড়িক পড়ে যাবে, যখন তারা কুখ্যাত 'এক সন্তান নীতি' বাতিল করে। সেই বছর শিশু জন্মের হার সামান্য বেড়েছিল, কিন্তু সে পর্যন্তই। আরো পড়ুন: জাপানে বহু শিশু স্কুলে যেতে অনাগ্রহী 'সেলফি থেকে জানলাম আমিই চুরি হওয়া শিশু' ভারতে ১৩২টি গ্রামে কোন মেয়ে শিশু জন্মায়নি? দৌড় শেষ করেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শিশুটি দক্ষিণ কোরিয়ার গুরুতর শিশু জন্ম সমস্যা রয়েছে। এশিয়ার শিক্ষা দেখা যাচ্ছে, যখন মানুষজন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, কম সন্তান নেবে, তখন তাদের বোঝানো খুব কঠিন। দক্ষিণ কোরিয়ার শিশু জন্মের সমস্যা গুরুতর পর্যায়ে পৌছেছে। গত বছর তাদের জন্মহার রেকর্ড সংখ্যায় নেমে আসে। পরিসংখ্যানের দিক থেকে বলতে গেলে, গড়ে নারীদের সন্তানের সংখ্যা একটিরও কম- মাত্রা ০.৮৯ শতাংশ। ১৯৭০ সালের পর থেকে দেশটির জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। সমস্যা সমাধানে দক্ষিণ কোরিয়া সবকিছুই করেছে-অভিভাবকদের ভর্তুকি দিতে প্রায় সাত হাজার কোটি ডলার খরচ করেছে। কোরিয়ার বাসিন্দা কিম জি-ইয়ে বলছেন, '' সন্তান নিতে আমি কখনোই আগ্রহী ছিলাম না।" কিন্তু বাবা-মায়ের অনেক চাপের কারণে তিনি একটি সন্তান নিয়েছেন। তিনি বলছেন, তার সিদ্ধান্তের পেছনে সরকারি ভর্তুকির কোন ভূমিকা নেই এবং তার আরেকটি সন্তান নেয়ার কোন পরিকল্পনা নেই। ''সন্তান জন্ম দিতে গেলে আমার শরীরের কী পরিবর্তন হবে, এটা চিন্তা করে আমি ভীত হয়ে পড়ি,'' বলছেন ইউ ইন-আয়ে। '' এরপর আমি চাকরি-বাকরি ঠিক মতো করতে পারবো কিনা, সেটাও চিন্তা হয়।' ''সন্তান না নেয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। বাড়ির দাম আকাশ ছুঁতে চলেছে, প্রাইভেট পড়াশোনার খরচ বাড়ছে।'' ''দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজে মাতৃ প্রবৃত্তি নিয়ে অনেক ধারণা চালু আছে। আমি মনে করিনা যে, সেসব আমি পূর্ণ করতে পারবো।'' সুতরাং সরকারি আর্থিক ভর্তুকি নিয়ে তার মনে কোন জায়গা নেই। সম্ভাব্য মায়েরা আগে থেকেই সরকারের কাছ থেকে সব খরচ পান। যখন শিশুর জন্ম হয়, তারা প্রথম সন্তানের জন্য মাসে ১৭০ ডলার পান এবং দ্বিতীয় সন্তানের জন্য আরো বেশি পান। শিশুদের যত্নের জন্য সরকারি কেন্দ্র রয়েছে। ভর্তুকি পাওয়া বেসরকারি কেন্দ্রও রয়েছে। কিন্তু সরকার যতই চেষ্টা করুক না কেন, এতে তেমন একটা কাজ হচ্ছে না। রাশিয়ায় এখন জন্মহার ১.৫, কিন্তু দেশটির জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে এই হার হওয়া উচিত ২.১। শিক্ষা ভীতি তিন সন্তানের মা কিম ইয়ে-ইয়ুন বলছেন, ''দক্ষিণ কোরিয়ায় শিক্ষা ভীতি আছে এবং বেসরকারি পড়াশোনার খরচ অনেক বেশি।'' তিনি বলছেন, সরকারি সহায়তা সত্ত্বেও তিনি তার সন্তানের পড়াশোনার খরচ মেটাতে পারছেন না। ''সরকার যদি এই সমস্যার সমাধান না করে, তাহলে সন্তান নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়াটা কখনোই সহজ হবে না।'' এরপরে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার তীব্র প্রতিযোগিতামূলক কাজের সংস্কৃতি। কিম জি-ইয়ে বলছেন, ''আমি কখনোই আরেকটি সন্তান নিতে চাইনি।'' তার দুই বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ''একটি সন্তান বড় করাই অনেক কঠিন, সুতরাং আমি তাকে ভালোভাবে বড় করার ব্যাপারেই মনোযোগ দিতে চাই।'' সরকারি কিছু অর্থ পেলেও, তাতে অবস্থার সামান্যই পরিবর্তন হয় বলে তিনি বলছেন। কিম জি-ইয়ে বলছেন, তিনি ভাগ্যবতী কারণ তিনি যে কোম্পানিতে কাজ করেন, সেটা বাবা-মায়েদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক। তিনি ১৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়েছিলেন এবং অফিসে শিশুদের রাখার একটি জায়গা পেয়েছিলেন- কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরকম সুবিধা পাওয়া যায় না। ''আমি আমার অনেক বন্ধুকে চিনি, যারা সন্তান জন্ম দেয়ার পরে সামান্য সময় পেয়েছেন।'' ''অনেক কোম্পানি মাতৃত্বকালীন বা পিতৃত্বকালীন ছুটিতে উৎসাহ দেয় না।'' এটা হয়তো দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য বিশেষ একটি সমস্যা বলে মনে হতে পারে, কিন্তু একই সমস্যায় ভুগছে জাপানও। চীনও এ ধরণের সমস্যার কাছাকাছি রয়েছে। সারা বিশ্ব জুড়েই সন্তান জন্ম দেয়া না দেয়ার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। যখন একজন নারী পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে ঢোকেন, তার কাছে সন্তান জন্ম দেয়ার গুরুত্ব কমে যায়। নানা কারণে সেটা তার জন্য কঠিনও হয়ে যায়। উরুগুয়ে, থাইল্যান্ড, তুরস্ক এবং ইরানের মতো দেশগুলো দেখতে পেয়েছে যে, একবার যদি কম সন্তান নেয়ার ব্যাপারটি স্বাভাবিক হয়ে যায়, তাহলে সেই পরিস্থিতি পাল্টানো কঠিন। অক্সফোর্ড ইন্সটিটিউট অব পপুলেশন এজিং এর ড. লেসন বলছেন, ''অনেক সময়েই আমি আমার ছাত্রদের জিজ্ঞেস করি, কেন মানুষ বেশি সন্তান নিতে চাইবে?'' ছোট সফলতা তবে স্থানীয়ভাবে এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করেছে কোন কোন ছোট শহরের বাসিন্দারা। গত নয় বছরে নাগি শহরের বাসিন্দারা তাদের এলাকার জন্মহার দ্বিগুণ করে তুলতে সক্ষম হয়েছে। খুব আকর্ষণীয় ভর্তুকি দেয়ার কারণে সেখানে জন্মহার এখন ১.৪ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৮। ফিনল্যান্ডের লেসটিজার্বি শহরে প্রতি শিশুর জন্মের জন্য ১১হাজার ইউরো করে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে চিন্তা করলে, এই শিশুদের একটি বড় অংশ পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা বা কাজরে জন্য বড় শহরে চলে যাবে। বড় শহরের অতিরিক্ত ব্যয়ভার বিশেষভাবে জন্মনিরোধে উৎসাহিত করে থাকে। ইউরোপের ছোট দেশ এস্তোনিয়া শিশু বোনাস হিসাবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, কিন্তু সাফল্য হাতে গোনা। জন্মহার সামান্য বেড়েছে। কিন্তু সেজন্য এস্তোনিয়ার তিন সন্তানের একটি পরিবারকে মাসে দিতে হচ্ছে ৫৭৬ ডলার। অক্সফোর্ড ইন্সটিটিউট অব পপুলেশন এজিং এর ড. লেসন বলছেন, ''আমি মনে করি, এটা পুরোপুরি অর্থের অপচয়।'' ''অনেক সময়েই আমি আমার ছাত্রদের জিজ্ঞেস করি, কেন মানুষ বেশি সন্তান নিতে চাইবে?'' তিনি বলছেন, জন্মহার কমে যাওয়া নতুন কিছু নয়। ৪০ বছর আগে ইউরোপে এটা শুরু হয়েছে এবং দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোয় নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, যারা পরিবারের চেয়ে বরং তাদের শিক্ষাকে কাজে লাগাতে চান এবং পেশা গড়তে চান। ''আমার মনে হয় না, আমরা আর সেই আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চাইবো। তবে এটাও সত্যি কেউ কেউ সেটাই করতে চান,'' তিনি বলছেন। শিশু জন্মহার বাড়ানোর চেষ্টা করছে হাঙ্গেরি তারপরেও কেন জনসংখ্যা বাড়াতে এই তোড়জোড় উন্নত দেশগুলোকে কর্মী সংকটের ব্যাপারটি সবসময়েই অভিবাসনের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। বিশ্বে এখনো অনেক তরুণ যুবক রয়েছে। আফ্রিকান বেশিরভাগ দেশে, পাকিস্তানে এবং ভারতে জনসংখ্যা এখনো বাড়ছে। তবে কিছু জাতীয়তাবাদী নেতারা এই বিষয়টির ওপরেই গুরুত্ব আরোপ করতে চান। গত সপ্তাহে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান ঘোষণা করেন যে, হাঙ্গেরির সব দম্পতিরা বিনা পয়সায় আইভিএফ সুবিধা নিতে পারবেন। গত বছর থেকে চার সন্তানের জননীদের করের বাইরে রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। মি. ওরবান পরিষ্কার করে দিয়েছেন, কেন তিনি আরো বেশি শ্বেতাঙ্গ, খৃষ্টান শিশু চান। ''আমরা নানা ধরণের বা মিশ্রিত জাতি হতে চাই না। আমরা চাই না আমাদের বর্ণ, রীতিনীতি এবং জাতীয় সংস্কৃতি অন্যদের সঙ্গে মিশে যাক,'' তিনি বলছেন। কিন্তু এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে, এসব কিছু কাজে আসছে কিনা। ২০০৫ সাল থেকে শিশু জন্মের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে আসছে হাঙ্গেরি, কিন্তু কোন প্রভাব দেখা যায়নি। আরো খারাপ হলো, তরুণদের ইউরোপের অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। যেসব পরিবারে সন্তান থাকে, তাদেরকে অর্থ দিয়ে আসল অন্তর্নিহিত সত্যটি বেরিয়ে আসছে না যে- আধুনিক অনেক নারীই তাদের পেশাজীবন চালিয়ে যেতে চান। সুইডেন এবং ফ্রান্স এই বিষয়টিকেই প্রমাণ করেছে। তারা তাদের দেশে জন্মহার ইউরোপের গড় হারের সঙ্গে ধরে রেখেছে। কারণ তারা সন্তান নেয়ার পরে কাজে ফেরার ক্ষেত্রে ভালো পিতৃত্বকালীন ছুটি, বিনা পয়সার ভালো শিশু সেবা ও কাজের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। ফলে কেউ পিতা-মাতা হতে গিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, নগদ অর্থ ছড়ানোর চেয়ে যদি ভালোভাবে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায়, তা বেশি উৎসাহ তৈরি করতে পারে। | অনেকদিন ধরে ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইরানের মতো দেশ নারীদের বেশি করে সন্তান নেয়ার জন্য উৎসাহ দিতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখানে অর্থকড়ির বিষয় সম্পৃক্ত থাকে। কিন্তু সেটা কতটা কাজ করে? |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের হাতে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির বেশ কয়েকটি অভিযোগ উঠেছে (প্রতীকী ছবি) সবাই চলে যাওয়ার পরে ঐ ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন শিক্ষক। এখন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ছাত্রী বলছেন, ''প্রথমে আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করবো? প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম। পরে যখন তাকে হুমকি দিলাম যে, আমাকে ছেড়ে দেন, না হলে চিৎকার করবো। তখন তিনি আমাকে ছেড়ে দিলে আমি দৌড়ে বের হয়ে এলাম।'' ভয়ে লজ্জায় এই কথাটি তিনি অভিভাবক, স্কুলের অধ্যক্ষ, কাউকে জানাতে পারেননি। যদিও স্কুলে এই শিক্ষকের কাছেই তাকে পড়াশোনা করতে হয়েছে। ''তার কাছে আর আমি প্রাইভেট পড়তে যাইনি, কিন্তু তিনি আমাকে স্কুলে নানাভাবে হয়রানি করতেন। ক্লাসে অকারণে বকাঝকা করতেন, নম্বর কমিয়ে দিতেন। স্কুল ছাড়ার পরে যেন আমি নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচলাম।'' তিনি বলছেন, পরবর্তী সময়ে তিনি অনেক বান্ধবীর কাছেও এভাবে স্কুলে কোন কোন শিক্ষকের কাছে হয়রানি হওয়ার কথা শুনেছেন। সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজীতে একজন মাদ্রাসা ছাত্রী অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করার পর তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষার্থী এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ফলে এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, স্কুল-মাদ্রাসায় অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীরা কতখানি নিরাপদ? অভিভাবক এবং কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপারে কতটা সচেতন? আরো পড়ুন: 'ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রীকে এখনই সিঙ্গাপুর নেয়া যাচ্ছে না' মাদ্রাসা ছাত্রীর গায়ে আগুন: যা জানা যাচ্ছে 'যৌন হয়রানি বন্ধের নীতিমালা অধিকাংশ কর্তাব্যক্তির অজানা' সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজীতে একজন মাদ্রাসা ছাত্রী অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করার পর তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কী বলছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা? চাঁদপুরের নীলকমল উসমানিয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, আমাদের স্কুলে পথেঘাটে মেয়েদের উত্যক্ত করার অভিযোগ কখনো কখনো পেলেও, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন ছাত্রী কোন অভিযোগ করেনি। তিনি বলছেন, এ ধরণের ঘটনায় নির্দেশনা আছে যে, কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে স্কুলের বোর্ড এবং প্রশাসনকে জানাতে হবে। ''আমি সবাইকে বলে রেখেছি, ছেলে বা মেয়ে যেই হোক না কেন, কোন অভিযোগ থাকলে যেন এসে সরাসরি আমাকে জানায়।'' বলছেন মি. হোসেন। কিন্তু নিয়ম কানুন যাই থাকুক না কেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বারা যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেই চলেছে। ২০১৯ সালের প্রথম তিনমাসে দেশ জুড়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এরকম অন্তত আটটি অভিযোগ পাওয়া গেছে, যেসব ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে স্থানীয় শিক্ষকরা বলছেন, কোন হয়রানির ঘটনা ঘটলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা নিজেরাই সেটি চেপে রাখে। অনেক সময় পরিবারকে জানালেও সামাজিকতার কথা চিন্তা করে পরিবার এ নিয়ে আর এগোতে চায় না। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: বিশ্বের বৃহত্তম নির্বাচন যেভাবে আয়োজন করছে ভারত সতেরো ফিট লম্বা অজগরের পেটে ৭৩টি ডিম তারেক নিয়ে ব্রিটেনের জবাবে কী বলছে বাংলাদেশ মেয়ের ধর্ষণকারীকে হত্যা করে 'সিংহী মা' হলেন যে নারী গোপালগঞ্জের ডালনিয়া আই এ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লতিফা আক্তার বলছেন, ''স্কুলের দায়িত্ব হিসাবে আমরা সবসময়েই সতর্ক থাকি। কিন্তু তারপরেও কেউ বিচ্ছিন্নভাবে যদি এ ধরণের কোন অপরাধ ঘটিয়ে ফেলে, দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াটাই কাম্য। আমার মনে হয়না, এ ধরণের ঘটনা কেউ সমর্থন করবে।'' তিনি বলছেন, এরকম ঘটনার শিকার হলে কোন শিক্ষার্থীর সেটা চেপে রাখা উচিত নয়। তবে প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ উঠলে তার প্রতিকার পাওয়া আরো কঠিন হয়ে পড়ে। তবে মিজ আক্তার বলছেন জানান, নারী প্রধান শিক্ষক হওয়ায় তাকে স্কুলের শিক্ষার্থীরা সহজে এ ধরণের ঘটনা ঘটলে জানাতে পারবে। কিন্তু এ ধরণের ঘটনা ঘটলে পুরুষ শিক্ষকদের জানাতে অস্বস্তি লাগলে, নারী শিক্ষক এবং অভিভাবকদের অবশ্যই দ্রুত জানানো উচিত, যাতে অপরাধীদের ক্ষেত্রে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া যায়। তিনি বলছেন, স্কুলে জেলার ডিসই, এসপি, ইউএনও ও ওসিদের ফোন নম্বর দেয়া আছে, যেখানে ইভটিজিংসহ যেকোনো ধরণের কোন অভিযোগ থাকলে তারা সরাসরি জানাতে পারে। তবে শিক্ষকরা স্বীকার করছেন, কেউ নিজে থেকে এগিয়ে এসে অভিযোগ না করলে এ জাতীয় ঘটনাগুলো তাদের পক্ষে জানার কোন ব্যবস্থা নেই। মেয়ে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসার কোন কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও, যার সর্বশেষ ভুক্তভোগী সোনাগাজীর ছাত্রীটি। ফেনীর ফুলগাজীর বশিতপুর বক্সী শাহ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আবু হানিফা বলছেন, ''একজন শিক্ষকের কাছে ছাত্রীরা সবচেয়ে নিরাপদ থাকার কথা। তাদের কাছে কেউ হয়রানির শিকার হবে,সেটা আশা করা যায় না।'' শিক্ষক ও গবেষকরা বলছেন, অনেক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ নিয়ে সামনে এগিয়ে আসতে চান না 'অভিভাবকের উচিত তাদের সন্তানদের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক গড়ে তোলা' সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় সন্তানদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে মামলা করেছেন অভিভাবকরা। তবে সমাজ বিজ্ঞানী ও শিক্ষকরা বলছেন, এখনো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরণের ঘটনা অভিভাবকরা চেপে রাখার চেষ্টা করেন। অনেক সময় সামাজিকভাবে অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তি করে দেয়া হয়, ফলে সেগুলো থানা-পুলিশ বা মামলা পর্যন্ত আর গড়ায় না। ফরিদপুরের বিদ্যালয় ছাত্রী দুই মেয়ের পিতা মমিনুল হক বলছেন,''আমি আমার মেয়েদের বলে রেখেছি, কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হলেই যেন আমাকে এসে তারা বলে।'' ''সব অভিভাবকের উচিত তাদের সন্তানদের সঙ্গে এরকম সহজ সম্পর্ক গড়ে তোলা, যাতে তারা যেকোনো ঘটনার কথাই এসে খুলে বলতে পারে, নিজেদের মধ্যে চেপে রাখতে না হয়। আর অভিভাবকদেরও উচিত, এরকম অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া, যাতে ওই ব্যক্তির উপযুক্ত সাজা নিশ্চিত হয়।'' তিনি স্বীকার করছেন, এখনো লোকলজ্জার কথা ভেবে অনেকে হয়তো এসব বিষয় নিয়ে সামনে এগোতে চান না। কিন্তু তাতে যেমন নিজের সন্তানের অপমানের কোন প্রতিকার হয়না, তেমনি আরো অনেক সন্তান এর শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ২০১৫ সালে ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিন যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ 'নৈতিকতার এতোখানি অবনতি কীভাবে হলো' শিক্ষা খাতের বিশেষজ্ঞ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলছেন, কেন এই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে, সেটা আগে খুঁজে দেখা দরকার। তিনি বলছেন, ''একসময়ে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত হওয়া প্রতিরোধ করতে গিয়ে শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একজন শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সেই চিত্রটা কীভাবে বদলে গেলো? কারো কারো নৈতিকতার এতোখানি অবনতি কীভাবে হলো?'' এখন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য নতুন আর গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। এজন্য তিনি যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন: শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কারিকুলাম আরেকবার খতিয়ে দেয়া উচিত এবং সেখানে নৈতিকতার বিষয়ে আরো জোর দেয়া উচিত। এসব ঘটনায় আইন আছে, নীতি আছে, কিন্তু সেটার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত, যাতে অন্যকেউ এ ধরণের ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়। অভিযোগ উত্থাপনকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা পরবর্তীতে কোনরকম হয়রানি বা সমস্যার মুখোমুখি না হন। রাশেদা কে চৌধুরী বলছেন, কোন অভিযোগই হালকা ভাবে দেখার সুযোগ নেই। এটা নিশ্চিত করা গেলে এ ধরণের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে। কিন্তু এসব ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নিয়ে থাকে? মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোঃ শাহেদুল খবির চৌধুরী বলছেন, '' যৌন হয়রানি রোধে প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করার নির্দেশনা রয়েছে। এ জাতীয় অভিযোগ পেলে এই সেল দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।'' তিনি বলছেন, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আসলে স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদন্ত করা হয়। সেখানে দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। পাশাপাশি পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়া হয়ে থাকে। তবে রাশেদা কে চৌধুরী বলছেন, উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী প্রতিটা স্কুলে এ ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে মনিটরিং সেল থাকা উচিত। কিন্তু বেশিরভাগ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় সেটা হয়নি। সেটা তৈরি করা এবং কতটা মনিটরিং হচ্ছে, সেটাও নজরদারি করা উচিত। | ফরিদপুরের একটি স্কুলে নবম শ্রেণীর একজন ছাত্রী তারই স্কুলের একজন শিক্ষকের কাছে নিয়মিত প্রাইভেট পড়তেন। একদিন পড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পরে শিক্ষক ওই ছাত্রীকে কিছুক্ষণ থেকে যেতে বলেন। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | প্রতিষ্ঠাতা জেমস অগাস্টাস হিকির নামেই পত্রিকাটির নামকরণ করা হয়েছিল। ১৭৮১ সালের ২৮শে এপ্রিলে প্রকাশিত পত্রিকাটির প্রথম পাতা। ভারতে ১৭৮০ সালে প্রকাশিত প্রথম পত্রিকাটির নাম ছিল 'হিকিজ বেঙ্গল গেজেট', বাংলা করলে 'হিকির বেঙ্গল গেজেট।' এর নির্ভীক প্রকাশক জেমস অগাস্টাস হিকির নামেই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল যা ভারতে তখনকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে তাদের পিছু নিয়েছিল। শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই পত্রিকাটি তাদের ব্যক্তিগত জীবনের ভেতরে ঢুকে পড়তো এবং তার জের ধরে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ঘুষ নেওয়া এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হতো। এরকম বহু অভিযোগের একটি ছিল ভারতে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসক গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়েছিল যে তিনি ভারতীয় সু্প্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে উৎকোচ দিয়েছেন। পত্রিকাটিতে আরো অভিযোগ তোলা হয় যে ওয়ারেন হেস্টিংস ও তার প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় ঘনিষ্ট ব্যক্তিরা ভারতে অবৈধভাবে স্বৈরশাসনের সূচনা করেছিলেন, জনগণের সাথে আলাপ আলোচনা না করে তাদের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে তারা খর্ব করেছিলেন। হিকিজ বেঙ্গল গেজেটে একইসাথে ইউরোপীয়ান নাগরিক ও ভারতীয় দরিদ্র মানুষের জীবনের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হতো। ফলে পত্রিকাটির সাথে ঔপনিবেশিক সমাজের একেবারে নিচের স্তরে যারা বসবাস করতেন তাদের একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বিশেষ করে ভারতীয় সৈন্যদের সাথে, যারা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং ওই যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে ক্ষমতা যখন একচ্ছত্র ছিল তখন তারা ভারতের একটি বৃহৎ অংশ নিয়ন্ত্রণ করতো তাদের নিজেদেরই সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে। কিন্তু ১৮৫৭ সালে এই বাহিনীর ভেতরে থাকা ভারতীয় সৈন্যরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে কোম্পানিটি ভেঙে দেওয়া হয়। হিকিজ বেঙ্গল গেজেট পত্রিকাটি বস্তুত ভারতীয় সৈন্যদেরকে বিদ্রোহ করার জন্যেও ডাক দিয়েছিল। ব্রিটিশ ভারতের শাসক ওয়ারেন হেস্টিংস। আরো পড়তে পারেন: ডিজিটাল আইনের যে তথ্যগুলো জানা থাকা দরকার রাজনৈতিক প্রচারণায় কর্মী পাঠানো বন্ধ করলো ফেসবুক গণতন্ত্র ও ডিজিটাল প্রযুক্তি: মুখোমুখি অবস্থান? কিন্তু ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে পত্রিকাটির এসব সমালোচনা যখন তীব্র হয়ে উঠলো তখন একটা পর্যায়ে সরকার আর সেসব সহ্য করতে পারছিল না। তখন ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা পত্রিকাটির সাথে যারা জড়িত তাদের সুনামহানি করতে উদ্যত হলো। পত্রিকাটির মৃত্যু হলো যেভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখন হিকিজ বেঙ্গল গেজেটের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি কাগজের পেছনে অর্থের যোগান দিতে শুরু করলো। উদ্দেশ্য ছিল তাদের বিরুদ্ধে করা সমালোচনা ও মতামতকে নিয়ন্ত্রণ করা। হিকির পত্রিকাটিকে তারা উল্লেখ করলো 'উদ্ধত' সংবাদপত্র হিসেবে এবং এই পত্রিকায় যারা লেখালেখি করতো তাদেরকে চিহ্নিত করা হলো 'দুর্বৃত্ত' হিসেবে। শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাত (নাম গোপন করা) এক লেখক পত্রিকাটিতে লিখলেন "লোকজন আর মেনে চলতে বাধ্য নয়" কারণ সরকার জনগণের কল্যানের ব্যাপারে তাদের সাথে আর আলাপ আলোচনাও করে না। এরকম এক লেখার পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিল। ওয়ারেন হেস্টিং নিজে বেশ কয়েকবার হিকির বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে আদালতে মামলা করেছিলেন। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত বিচার বিভাগের কাছে হিকির টিকে থাকার সুযোগ ছিল খুবই কম। তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেন কিন্তু তারপরেও তিনি জেলের ভেতরে থেকে আরো ন'মাস পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রাখেন। তখন সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিশেষ আদেশে পত্রিকাটির ছাপাখানা বন্ধ করে দেওয়ার জন্যে নির্দেশ দেওয়া হলো এবং তার সাথে সাথেই চিরতরে মৃত্যু ঘটলো ভারতের প্রথম প্রকাশিত সংবাদপত্রটির। পত্রিকাটি যা করতে পেরেছিল কিন্তু ভারতে ওয়ারেন হেস্টিংসের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এসে পৌঁছালো ইংল্যান্ডে। হিকির বেঙ্গল গেজেটে যেসব রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল সেগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করলেন পার্লামেন্টের সদস্যরা। সেই তদন্তের ফলাফল ছিল এরকম: তৎকালীন ভারতের প্রধান বিচারপতি এবং ওয়ারেন হেস্টিংসের ইমপিচমেন্ট বা তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং ভারত থেকে তাদেরকে প্রত্যাহার করে নেওয়া। তৎকালীন ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চাপ গড়ে তুলতে হিকির বেঙ্গল গেজেট এবং পরে ব্রিটিশ সংবাদপত্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৭৮৮ সালে ওয়ারেন হেস্টিংসের সংসদীয় বিচার বা ইমপিচমেন্ট। আরো পড়তে পারেন: 'আমি হাউজ হাজবেন্ড, অন্য লোকের সমস্যা কেন?' খেলার মাঠে যেসব মুহূর্ত অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যয় নিয়ে দিশেহারা রোগীরা ভারতের প্রথম সংবাদপত্রটির বেলায় যেরকম হয়েছে এরকমটি হচ্ছে বর্তমান সময়েও। এখনকার স্বৈরাচারী শাসকরাও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে চেষ্টা করেন সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ চেপে ধরতে। শাসকরা মনে করেন তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার একটি অস্ত্র হলো- জনগণ পত্রপত্রিকায় যা পড়েন সেসব নয়, বরং তারা যা বলেন সেসবই যাতে বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করেন। বর্তমানের সোশাল মিডিয়া এরকম রাজনীতিক, যারা স্বৈরশাসক হয়ে উঠতে চান, তারাও যেন বর্তমান কালে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছেন। নাগরিকদের মধ্যে বিভেদের বীজ বপন করার জন্যে তাদের হাতে আছে নতুন নতুন হাতিয়ার- ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারের মতো আরো কিছু সামাজিক মাধ্যম। কারণ এসব মাধ্যমের ব্যবহারকারীরা সেসব জিনিসই গ্রহণ ও শেয়ার করেন যেগুলো তারা আগে থেকেই বিশ্বাস করতেন। এর ফলাফল যা হয়েছে সেটা হলো- সারা বিশ্বেই মানুষ এখন ক্রমশই ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ছে কারণ রাজনীতিবিদরা এসব সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে সরাসরি তাদের নাগরিকদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হচ্ছেন। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়শই টুইট করে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত অনেক সংবাদকে 'ফেইক নিউজ' এবং কিছু সংবাদ মাধ্যমকে 'জনগণের শত্রু' বলে উল্লেখ করে থাকেন। ভারতে এই সোশাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাবও চোখে পড়েছে সম্প্রতি। বাচ্চাদের অপহরণ করা হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়া এরকম একটি ভুয়া খবরের জেরে দেশটির বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। অনলাইনের মাধ্যমে দেশটিতে ছড়িয়ে পড়ছে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের প্রচারণাও। ভারতে গত অগাস্ট মাসে যেসব সাংবাদিক ও অ্যাকটিভিস্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সোশাল মিডিয়াতে তাদের গায়ে 'জাতীয়তাবাদবিরোধী' তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর কারণ তারা ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করছে। ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সরকারের একটি কেন্দ্র ছিল সুপ্রিম কোর্ট। সোশাল মিডিয়ার জবাবদিহিতা এরকম একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশের মধ্যে গুগল, ফেসবুক এবং টুইটারের মতো সোশাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসার সময় এসেছে। কারণ সমাজে তাদের কর্মকাণ্ডের বড় রকমের প্রভাব পড়ছে। একারণে সংবাদপত্রগুলো দশকের পর দশক ধরে যেসব নীতিমালা মনে চলছে তাদেরকেও এখন সেরকম কিছু নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। এসব সোশাল মিডিয়া কোম্পানির দায়িত্ব মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও আলোচনাকে ত্বরান্বিত করা, বিভেদ কিম্বা ঘৃণা ছড়ানো নয়। ভারতে ওয়ারেন হেস্টিংসের মতো স্বৈরশাসক আরো এসেছেন এবং গেছেন। তারা এমন একটি রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করে গেছেন, যার উপর ভিত্তি করে ব্রিটিশদের শাসন শুরু হয়েছিল। তাদের মাধ্যমেই কোটি কোটি মানুষের একটি উপমহাদেশকে শাসন করে গেছে মাত্র কয়েকশো মানুষকে নিয়ে গঠিত একটি কোম্পানি। তারা শুধু তরবারির মাধ্যমে তাদের ক্ষমতার বৈধতা আদায় করেননি, তাদের বিষয়ে যারা লেখালেখি করতে পারেন তাদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেও তারা সেটা করেছেন। বর্তমানেও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজনীতিকরা আছেন যারা ওই একই পন্থায় সোশাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছেন। এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে তারা মুক্ত সংবাদ মাধ্যমকে খাটো করার চেষ্টা করেন এবং এক দল নাগরিককে দাঁড় করিয়ে দেন আরেক দল নাগরিকের বিরুদ্ধে। আজকের দিনে আমরা যে লড়াইটা দেখছি সেটা হেস্টিংস ও হিকির লড়াই থেকে ভিন্ন কিছু নয়। শুধু লড়াই করার হাতিয়ারের পরিবর্তন হয়েছে। | ভারতে প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্রটিতে ভারতে ব্রিটিশ রাজত্বের কিছু চিত্র তুলে ধরা হতো। ওই পত্রিকাটির ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে বোঝা যাবে স্বৈরশাসকরা কিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকে এবং একটি নিরপেক্ষ সংবাদপত্র কিভাবে তার জন্যে কাল হয়ে উঠতে পারে। এবিষয়ে লিখেছেন সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদ এন্ড্রু ওটিস। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পথে করাচি বিমানবন্দরের এই ছবিটি তৎকালীন সরকার পত্রিকায় প্রকাশ করেছিল। কথা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার কাজটা শুরু হবে ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত একটা থেকে। কিন্তু রাত সাড়ে ১১টা থেকেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে পড়ে। সেনাবাহিনীর অধিনায়করা উত্তেজিত এবং প্রস্তুত। তারা 'এইচ-আওয়ার' অর্থাৎ হামলার নির্ধারিত সময়টি এগিয়ে আনার জন্য তাগাদা দিচ্ছিল। আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতা নাটক শেষে প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান সেদিন সন্ধ্যাবেলায় লুকিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। তাকে বহনকারী বিমানটি তখনও কলম্বো আর করাচির মাঝপথে রয়েছে। সেটি করাচি না পৌঁছনো পর্যন্ত অ্যাকশন শুরু করা যাবে না। পূর্ব পাকিস্তানে মোতায়েনে সেনাবাহিনীর কোর কমান্ডার ও সামরিক শাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ওয়্যারলেসে বার্তা পাঠালেন: "ববিকে (ব্রিগেডিয়ার জেহানজেব আরবাব) বলো যতক্ষণ সম্ভব অপেক্ষা করতে।" 'খুলে গেল দোজখের দরোজা' পুর্ব পাকিস্তানে সেনা অভিযান শুরুর দু'দিন পর বিলেতের কাগজে শেখ মুজিবের গ্রেফতারের খবর। পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানের কোড-নেম ছিল 'অপারেশন সার্চলাইট'- চার পাতার এই পরিকল্পনায় ছিল ১৬টি অনুচ্ছেদ। এই পরিকল্পনায় ছিল সেনাবাহিনীর দুটি সদর দফতর থাকবে। একটির দায়িত্ব নেবেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান। তার অধীন ব্রিগেডিয়ার আরবাবের ৫৭ ব্রিগেড ঢাকা শহর ও তার আশেপাশে অপারেশন চালাবে। অন্যদিকে, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা দ্বিতীয় হেডকোয়ার্টারের দায়িত্বে থাকবেন। ঢাকা বাদে দেশের বাকি অংশে অপারেশনের দায়িত্ব তার। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে সেই রাতে ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন মেজর সিদ্দিক সালিক। তিনি তার লেখা উইটনেস টু সারেন্ডার বইতে জানিয়েছেন, "রাত সাড়ে এগারটা থেকে ওয়্যারলেসগুলো সচল হয়ে উঠলো। নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হলো হামলা। খুলে গেল দোজখের দরোজা।" "সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট যখন ঢাকা শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। তখন শুনতে বিশাল এক বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেলাম। শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির দিকে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়া ছিল। তাকে গ্রেফতারের জন্য যে কমান্ডো দল রওনা দিয়েছিল তারা রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে তা উড়িয়ে দেয়।" ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার রোডের সেই বাড়িটি যেখান থেকে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে শেখ মুজিবকে আটক করা হয়। বাড়িটি এখন জাদুঘর। সেনাবাহিনীর নিয়মমাফিক কোম্পানিতে নেতৃত্ব দেয়ার কথা একজন ক্যাপ্টেন বা মেজর পদমর্যাদার অফিসারের। কিন্তু শেখ মুজিবকে আটকের দায়িত্ব পাওয়া স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ (এসএসজি) ৩ কমান্ডো কোম্পানিতে কমান্ডিং অফিসার ছিলেন লে. কর্নেল জেড এ খান এবং কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন মেজর বিলাল রানা আহমেদ। এসএসজি কমান্ডোরা যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবের বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল তখন তখন বাড়ির রক্ষীরা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। কমান্ডোরা দ্রুত এদের থামিয়ে দেয়। একজন অস্বীকার করলে তাকে হত্যা করা হয়। বাড়িতে প্রবেশের সাথে সাথেই ৫০ কমান্ডো স্টেনগান দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি বর্ষণ শুরু করে। তারা চিৎকার করে শেখ মুজিবকে বেরিয়ে আসতে বলে। কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে তারা দোতলায় উঠে আসে। 'বিগ বার্ড ইন দ্যা কেজ' স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার পর ১৯৭২ সালে শেখ মুজিব তার গ্রেফতারের সেই মুহূর্তগুলির বর্ণনা দিয়েছিলেন নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক সিডনি শনবার্গকে। "গোলাগুলি শুরু হলে আমি সবাইকে নিয়ে ঘরের মেঝেতে শুয়ে পড়ি। তারপর যখন সিঁড়িতে তাদের পায়ের শব্দ পাই, তখন দরোজা খুলে জানতে চাই: 'গুলি থামাও, গুলি থামাও। কেন তোমরা গুলি করছো? আমাকে যদি মারতে চাও আমি তো এখানেই রয়েছি। কেন তোমরা আমার লোকজনকে মারছো?" পঁচিশে মার্চ আক্রমণ চালানোর সবুজ সঙ্কেত দেন জেনারেল টিক্কা খান পাকিস্তানি সৈন্যরা এরপরও গুলি চালালে, মেজর বিলাল তাদের থামায় এবং শেখ মুজিবকে জানায় যে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এরপর শেখ মুজিব পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নেন। তাদের তিনি বলেন: "আমাকে হয়তো ওরা মেরে ফেলবে। ফিরে আসতে পারবো কিনা জানি না। কিন্তু কোন একদিন আমাদের দেশের মানুষ মুক্ত হবে। তখন আমার আত্মা তা দেখে খুশি হবে।" একথা বলে তিনি সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু পাক সেনাবাহিনীর জিপে উঠতে গিয়ে শেষ মুজিব হঠাৎ থমকে দাঁড়ান। তিনি তার আটককারীদের বলেন, "আমি আমার পাইপ আর তামাক ফেলে এসেছি। পাইপ আমার লাগবেই।" তার কথা শুনে সৈন্যরা থমকে যায়। এরপর তারা তাকে ঘিরে আবার বাড়িতে ফিরে এলে বেগম মুজিব সেই পাইপ আর তামাক স্বামীকে এগিয়ে দেন। "এরপর এসএসজির দলটি বাড়ির সবাইকে আটক করে এবং সেনাবাহিনীর জিপে চড়িয়ে সেকেন্ড ক্যাপিটালে নিয়ে আসে," সিদ্দিক সালিক লিখছেন, "এর কয়েক মিনিটের মধ্যে ওয়্যারলেসে ৫৭ ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর জাফরের গলার শব্দ শোনা যায়। পরিষ্কার গলায় সে জানায়:'বিগ বার্ড ইন দ্যা কেজ (বড় পাখি এখন খাঁচায়) … অন্যান্য পাখিরা নীড়ে নেই, ওভার।" "এই মেসেজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমি দেখতে পেলাম শাদা সার্ট পরিহিত 'বিগ বার্ড'কে ক্যান্টনমেন্টের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেউ একজন জেনারেল টিক্কাকে জিজ্ঞেস করেছিল তিনি শেখ মুজিবের সাথে দেখা করতে চান কিনা। জবাবে তিনি বলেছিলেন: আমি তার মুখ দেখতে চাই না।" "পরে আমি মেজর বিলালকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন শেখ মুজিবকে সেদিন একেবারে শেষ করে দেয়া হলো না। সে জবাব দিয়েছিল যে জেনারেল মিঠঠা তাকে ব্যক্তিগতভাবে নির্দেশ দিয়েছিল মুজিবকে জীবিত গ্রেফতার করতে।" যে বৈষম্যের কারণে বাঙালিরা পাকিস্তান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ছয় দফা ঘোষণা করে যেভাবে নেতা হয়ে ওঠেন শেখ মুজিব ভুট্টো যেভাবে পাকিস্তানে ক্ষমতার ভাগ চেয়েছিলেন পঁচিশে মার্চের হত্যাযজ্ঞের পর যেভাবে এল স্বাধীনতার ঘোষণা ইন্দিরা গান্ধী যেদিন তাজউদ্দীনকে প্রবাসে সরকার গঠনের পরামর্শ দিলেন সিডনি শনবার্গ লিখছেন, ক্যান্টনমেন্টে শেখ মুজিব রাখা হয়েছিল আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের 'একটি নোংরা অন্ধকার ঘরে।' পরের দিন তাকে সরিয়ে নেয়া হয় ক্যান্টনমেন্টের ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউজে। আটক শেখ মুজিবকে নিয়ে একটি বিমান পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করে ১লা এপ্রিল। বিমানটি করাচিতে নামার পর সেখান থেকে আরেকটি বিমানে তাকে সরিয়ে নেয়া হয় রাওয়ালপিন্ডিতে, এবং শেষ পর্যন্ত তার জায়গা হয় উত্তর পাঞ্জাবের শহর মিয়াওয়ালির কারাগারের এক প্রকোষ্ঠে যেখানে সাধারণত রাখা হতো মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের। পাকিস্তানে শেখ মুজিবের বন্দিজীবনের বিস্তারিত খুব একটা জানা যায় না। তবে মনে রাখতে হবে যাদের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল তারা পূর্ব পাকিস্তানে কী ঘটছে তা পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণকে মোটেও জানাতে চাননি। 'ভারত-সমর্থিত বিদ্রোহী'দের কীভাবে শায়েস্তা করা হচ্ছে তার দিকেই নজর ছিল বেশি। বিশেষভাবে ৩রা ডিসেম্বর ভারত-পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জাতীয়তাবাদী জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তান। মিয়াওয়ালি জেল। পাশাপাশি সামরিক শাসনের মধ্যে দেশের সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠও ছিল রুদ্ধ। তার মাঝে মিয়াওয়ালির জেলের এক অন্ধকার সেলে আটক শেখ মুজিবের ভাগ্য নিয়ে কেউই খুব একটা চিন্তিত ছিল না। তবে তার বন্দিদশা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায় বহু পরে। কিছু তথ্য পাওয়া যায় বিদেশি পত্রপত্রিকা থেকে। আর কিছু তথ্য পাওয়া যায় কয়েক দশক পর যখন এমনকি শেখ মুজিব নিজেও ততদিনে বেঁচে নেই। 'পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা' করাচির ডন পত্রিকা ১০ই অগাস্ট এক খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসকের সদর দফতর থেকে এক প্রেসনোটের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে এক বিশেষ সামরিক আদালতে শেখ মুজিবকে বিচার করা হবে। শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে "পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা।" বিচারটি গোপনে হবে এবং এর বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে না বলে প্রেসনোটে উল্লেখ করা হয়। এ সপ্তাহ পর, নিউইয়র্ক টাইমস ঢাকা ডেটলাইনে এক খবর প্রকাশ করে, যেখানে জানানো হয় তার এক সপ্তাহ আগে শেখ মুজিবের গোপন বিচার শুরু হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পাক সামরিক সরকার তার বিরুদ্ধে মোট ১২টি অভিযোগ দায়ের করে। এর মধ্যে ছয়টি অভিযোগের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। বিচারাধীন অবস্থায় শেখ মুজিবের ভাগ্যে কী ঘটতে পারে বিদেশি সরকারগুলো সে সময় জানার চেষ্টা করে। মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্বেগ মার্কিন সরকারের গোপন দলিল যেগুলো পরে ডিক্লাসিফাই করা হয়েছে সেখান থেকেও কিছু কিছু তথ্য পাওয়া যায়। দেখা যায়, মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মার্কিন কূটনীতিকরা শেখ মুজিবের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন। কিন্তু তাদের আগ্রহ এমনিতে তৈরি হয়নি। মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা শেখ মুজিবের ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় ইসলামাবাদে মার্কিন দূতাবাস এনিয়ে তৎপর হতে শুরু করে। যেমন, ২২শে মে ইসলামাবাদে আমেরিকান দূত জো ফারল্যান্ড প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে সাক্ষাতের সময় শেখ মুজিব সম্পর্কে জানতে চান। এরপর তিনি ওয়াশিংটনে যে বার্তা পাঠান তাতে তিনি লিখছেন, "মে মাসে থেকে তার সাথে আমার যতবার সাক্ষাৎ হয়েছে, তার সবগুলিতে আমি মুজিবের বিষয়ে প্রশ্ন করেছি। আমাকে বলা হয়েছে মামলা পরিচালনার জন্য মুজিবকে একজন দক্ষ আইনজীবী দেয়া হয়েছে। এবং আমাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে যে শেখ মুজিবের প্রাণদণ্ড হবে না।" রাজা আনার খান, পাকিস্তান গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা। শেখ মুজিবের ওপর নজরদারির জন্য তাকে কারাগারের একই সেলে রাখা হয়েছিল। অগাস্টের ২০ তারিখ টেলিগ্রাম থেকে জানা যাচ্ছে, অ্যাম্বাসেডর ফারল্যান্ড বেশ সতর্কতার সাথে ইয়াহিয়া খানকে শেখ মুজিবের গোপন বিচার নিয়ে প্রশ্ন করছেন। "আমি ইয়াহিয়াকে বললাম বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এই মামলার দিকে আগ্রহভরে নজর রাখছে। এবং এর সম্ভাব্য রায় সম্পর্কে উদ্বিগ্ন...ইয়াহিয়া আমাকে জানালেন, রায় যদি মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে শেখ মুজিবের তরফ থেকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমাভিক্ষা করা হবে, এবং তিনি সেটা গ্রহণ করবেন। এরপর ইয়াহিয়া বললেন, কিন্তু তিনি সেই আবেদনের ব্যাপারে তখনই কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে 'কয়েক মাস অপেক্ষা করবেন' যাতে এই সিদ্ধান্তটা পরবর্তী বেসামরিক সরকারকে নিতে হয়।" এরপর ইয়াহিয়া মার্কিন দূতকে বলেন, "চিন্তা করবেন না। ঐ লোকটা বিশ্বাসঘাতক হলেও তাকে আমি হত্যা করবো না।" এক জেল থেকে আরেক জেলে এরপর ৩০শে সেপ্টেম্বরের টেলিগ্রামে জানানো হচ্ছে, মার্কিন কংগ্রেসম্যান ফ্রেলিংঘুসেন ইসলামাবাদে এক সাক্ষাতের সময় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে বলছেন, যে রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তার বিচার কেন গোপনে করতে হবে, তা মার্কিন কংগ্রেস বুঝতে পারছে না। "প্রেসিডেন্ট এর জবাবে জানান, শেখ মুজিব দেশকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন, তার প্রমাণ তাদের হাতে আছে। যথাসময়ে সেই বিচারের বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে। এখন বিচারের তথ্য বাইরে এলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়বে।" পাকিস্তানে নির্জন কারাবাসের মধ্যে শেখ মুজিবকে কয়েকবার এক জেল থেকে অন্য জেলে সরিয়ে নেয়া হয়। মিয়াওয়ালি, ফয়সালাবাদ, সাহিওয়াল ছাড়াও রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ১৫০ মাইল দূরে উত্তর পাঞ্জাবের বস্ত্রশিল্পের শহর লায়ালপুর। সেখানে এক নবনির্মিত একতলা জেলখানায় কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে ঐ বিচার চলে। নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক সিডনি শনবার্গের সাথে শেখ মুজিব। ১৯৭২ সালে দেশে ফেরার পর। মুজিবের ওপর নজরদারি শেখ মুজিবের কারাজীবনের একটি ঘনিষ্ঠ চিত্র পাওয়া যায় গেছে অতি সম্প্রতি। দু'হাজার পনেরো সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের এক টেলিভিশন চ্যানেল রাজা আনার খান নামে এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন পাকিস্তানের একজন সাংবাদিক মুজিবুর রহমান সামি। সেই সাক্ষাৎকারে রাজা আনার খান জানান, তিনি ১৯৭১ সালে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন সাব ইনস্পেকটর ছিলেন। তাকে কয়েদি হিসেবে সাজিয়ে মিয়াওয়ালি জেলে শেখ মুজিবের কাছে পাঠানো হয়। উদ্দেশ্য তার ওপর নজরদারি চালানো। মি. খান বলেন, প্রথম কয়েক মাস শেখ মুজিব তার সাথে খুব একটা কথাবার্তা বলতে চাননি। পুলিশের টিকটিকি হিসেবে তাকে ঠিকই সন্দেহ করছিলেন। পরে দুজনের মধ্যে এক ধরনের হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। মুজিবকে অন্ধকারে রাখা হয় তিনি জানান, আটক বন্দি হিসেবে শেখ মুজিবকে কারও সাথে কোন কথা বলতে দেয়া হতো না। কোন খবর পৌঁছনো হতো না তার কাছে। তার গ্রেফতারের পর থেকেই যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল, সেটাও তাকে জানতে দেয়া হয়নি। এমনকি বিচারে আসামী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত পাকিস্তানের খ্যাতনামা উকিল এ. কে. ব্রোহিরও কোন অনুমতি ছিল না মামলার বিষয়বস্তুর বাইরে অন্য কোন বিষয় নিয়ে শেখ মুজিবের সাথে কথা বলতে। "এরা দু'জন যখন কথা বলতো আমি একটি দূরে চেয়ার পেতে বসে থাকতাম," তিনি জানান জেলের সেলে কথাবার্তা রেকর্ড করার জন্য একটি চেয়ারের হাতলে রেডিও ট্রান্সমিটারও বসানো হয়েছিল। তেসরা ডিসেম্বর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় শেখ মুজিবকে ফয়সালাবাদ জেল থেকে মিয়াওয়ালি জেলে নেয়া হয়। কারাগার থেকে মুক্তির পর লন্ডনের হোটেলের কামরায় শেখ মুজিব। পাশে ড. কামাল হোসেন। তাকেও একই সাথে মুক্তি দেয়া হয়। সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে আনার খান জানান, যে গাড়িতে চড়িয়ে শেখ মুজিবকে মিয়াওয়ালি নেয়া হয়েছিল সেটির ভেতর লেপ-তোষক দিয়ে এমনভাবে ঢোকা দেয়া হয়েছিল যে তিনি যেন বাইরের দৃশ্য দেখতে না পারেন। আর তাকেও যেন বাইরে থেকে দেখা না যায়। এমনকি গাড়ির কাঁচও কাদা দিয়ে লেপে দেয়া হয়েছিল। শেখ মুজিব যখন জানতে চাইলেন কেন এই ব্যবস্থা তখন আনার খান তাকে জানিয়েছিলেন যে কাছেপিঠে সেনাবাহিনীর মহড়া চলছে। তাই সব গাড়ির কাঁচ ক্যামোফ্লাজ করতে হয়েছে। শেখ মুজিব তার কথা বিশ্বাস করেছিলেন কিনা তা জানা যায়না। এছাড়াও গোলাগুলির শব্দ হলে শেখ মুজিবকে নানা ধরনের বানানো গল্প শোনানো হতো। সেলের বাইরে ট্রেঞ্চ খোঁড়া হয় "যুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমান হামলা শুরু হলে আমরা নিজেদের এবং এই বিশেষ বন্দির নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করলাম। জেলে তার সেলের বাইরে মাটিতে ইংরেজি 'এল' অক্ষরের মতো একটি ট্রেঞ্চ খোঁড়া হয়েছিল। শেখ মুজিব ভেবেছিলেন তার জন্যই কবর খোঁড়া হয়েছিল। পরে তিনি সাংবাদিক (ডেভিড) ফ্রস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সে কথা উল্লেখও করেছিলেন।" "তবে সেটা ভাবাই তার জন্য স্বাভাবিক ছিল। তিনি তো জানতেন না যে বাইরে একটা প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছিল।" 'সহ-বন্দি' হিসেবে রাজা আনার খান রাতে ঘুমাতেন শেখ মুজিবের সেলের ঠিক বাইরে আরেকটি সেলে। লন্ডনে সদ্য কারামুক্ত শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন। 'খুদাকে লিয়ে দরওয়াজা খোল' ষোলই ডিসেম্বরের রাত। পাকিস্তানী বাহিনী মাত্রই ঢাকায় আত্মসমর্পণ করেছে। অঙ্গহীন পাকিস্তানে তখন চরম উত্তেজনা। আর শোক। "রাতে দরোজায় প্রচণ্ড খটখট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি জানতে চাইলাম কে? জবাব এলো আমি খাজা তুফায়েল। জলদি দরোজা খোল। আমি বললাম, খুলতে পারবো না। নিরাপত্তার ব্যাপার।" তিনি জানতেন তার বন্দীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। খাজা তুফায়েল ছিলেন মিয়াওয়ালি কারাগারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। "তিনি বললেন, খুদাকে লিয়ে দরওয়াজা খোল। তোমার আর শেখ মুজিবের জীবন সংকটে,"মি. খান বলেন, "আমি দরোজা খুলে দিলে তিনি দ্বিতীয় চাবি দিয়ে শেখ সাহেবের সেলের লক খুলে ভেতরে ঢুকলেন। তাকে ঘুম থেকে জাগাতেই তিনি কিছুটা বিচলিত হলেন। ''খাজা সাহেব তাকে তাড়াতাড়ি কাপড় পড়ে নিতে বললে তিনি জিজ্ঞেস করলেন তাকে কি ফাঁসি দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?" "সেই সময়টাতে কারাগারে মধ্যরাতের পর কয়েদিদের ফাঁসি দেয়ার নিয়ম ছিল। তাই শেখ সাহেব ভেবেছিলেন সেজন্যেই তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেজন্যে তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন তাকে কী ফাঁসি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু খাজা সাহেব তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, ফাঁসি না, অন্য একটি কারণে তাকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।" রাজা আনার খানকে দেয়া শেখ মুজিবের বিদায়ী উপহার। (দুনিয়া টিভি থেকে নেয়া)। এরপর আনার খানের সহায়তায় ঐ কারা কর্মকর্তা শেখ মুজিবকে একটি গাড়িতে বসিয়ে দ্রুত কারাগারের বাইরে নিয়ে যান এবং শহরের অন্যদিকে আরেকটি বাড়িতে নিয়ে ওঠান। মুজিবকে হত্যার ষড়যন্ত্র এই হত্যা ষড়যন্ত্রটির কথা পরে শেখ মুজিব নিজেও স্বীকার করেছেন সিডনি শনবার্গের কাছে। মিয়াওয়ালি ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জেনারেলর আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজির জেলা। মিয়াওয়ালি কারাগারের বেশিরভাগ কর্মকর্তা আর বন্দি ঐ জেলার লোক। তাই জেলের কিছু কর্মকর্তা কৌশলে শেখ মুজিবকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। তারা ১৫ই ডিসেম্বর কয়েদিদের মধ্যে প্রচার করে যে পূর্ব পাকিস্তানের লড়াইয়ে জেনারেল নিয়াজি নিহত হয়েছে, আর যার জন্য এসব ঘটেছে সেই শেখ মুজিব ঐ মিয়াওয়ালির ক্যাম্পেই আটক রয়েছেন। তাই কয়েদিদের বলা হলো জেলের তালা খুলে দেয়া হলে তারা শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারবে। কিন্তু ষড়যন্ত্রটি ফাঁস হয়ে যায়। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি। মুজিব ও ভূট্টোর সাক্ষাত ইতোমধ্যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘটে পটপরিবর্তন। ইয়াহিয়া খানকে সরিয়ে সে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন জুলফিকার আলী ভুট্টো। ঐ সেফ হাউজে কিছুদিন থাকার পর শেখ মুজিবকে সরিয়ে নেয়া হয় রাওয়ালপিন্ডির অদূরে সিহালা রেস্ট হাউজে। সেখানে শেখ মুজিব ও ভূট্টোর মধ্যে একাধিক সাক্ষাতের কথা জানিয়েছেন রাজা আনার খান। ঐ দুই নেতা যখন কথাবার্তা বলছিলেন তখন তিনি পর্দার আড়ালে লুকিয়ে সব কথা শোনেন। ভুট্টো যখন শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়ার কথা ঘোষণা করেন তখন অন্য সবার সাথে আনার খানও গিয়েছিলেন পিণ্ডির বিমানবন্দরে বাংলাদেশের নেতাকে বিদায় জানাতে। পাকিস্তান ত্যাগের আগে শেখ মুজিব ফিয়োদর দস্তয়ভস্কির উপন্যাস ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্টের একটি কপিতে সই করে রাজা আনার খানকে উপহার দিয়েছিলেন। সেখানে লেখা ছিল: "In the long war between the falsehood and the truth, falsehood wins the first battle and truth the last." (সত্য ও অসত্যের মধ্যে দীর্ঘ লড়াইয়ে প্রথম জয়লাভ করে মিথ্যে, আর শেষের জয় সত্যের।) ঠিক ১৩ মাস পর শেখ মুজিবুর রহমান আবার পাকিস্তানে ফিরে যান। কিন্তু এবার রাজবন্দী নয়, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে তাকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পাকিস্তানে পৌঁছে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি শেখ মুজিব রাজা আনার খানসহ তার আটক-কালীন জেল কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিবের সাথে ঘনিষ্ঠতার জন্য তার দেশের সরকারই তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, এই বিবেচনায় আনার খান তার প্রবাদপ্রতিম প্রাক্তন বন্দির সাথে সেদিন দেখা করতে যাননি। আরও পড়তে পারেন: | বাংলাদেশ যেদিন স্বাধীন হলো সেদিনই মিয়াওয়ালির কারাগারের মধ্যে শেখ মুজিবকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তা নি গোয়েন্দা পুলিশের ক'জন কর্মকর্তার উপস্থিত বুদ্ধির জোরে সেদিন তিনি প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | ব্রিটিশ দোকানপাটে কাজ করছেন বহু অভিবাসী ওই ব্রেক্সিট গণভোটে অন্যতম প্রধান একটি ইস্যু ছিলো অভিবাসন। এবারের নির্বাচনের প্রচারণাতেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে এবিষয়ে কথাবার্তা বলতে হচ্ছে। কিন্তু আগে দক্ষিণপন্থী ছাড়া বাকি রাজনীতিকরা বিষয়টি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। বিশ্বের প্রাচীন গণতন্ত্রের এই দেশটির নির্বাচনে অভিবাসন কিভাবে ইস্যু হয়ে উঠলো? খোঁজ নিয়েছেন বিবিসির রুথ আলেকজান্ডার। মাত্র ন'বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন ক্যামিলা স্কোফিল্ড। মিজৌরির যে এলাকায় তিনি থাকতেন সেই এলাকা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিলো। ফলে জাতিগত রাজনীতির কথা সবসময়েই তার মনে ছিলো। তারপর তোন একসময় তিনি ব্রিটেনে ফিরে আসেন। পেশা হিসেবে বেছে নেন গবেষণার। কারণ সেসময় এবিষয়টি নিয়ে খুব একটা লেখালেখি হয়নি। এখন তিনি ইস্ট এংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, "১৯৪০-এর দশকের শেষ দিকে অভিবাসন নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়। তখনকার সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনা ছিলো - উইন্ডরাশ এম্পায়ার নামের একটি জাহাজে করে জ্যামাইকা থেকে পাঁচশোর মতো শ্রমিকের ব্রিটেনে আসা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত ব্রিটেনে তখন শ্রমিকের অভাব ছিলো। সেই শূন্যতা পূরণ করতে ব্রিটিশ সরকার তখন যেসব দেশে তাদের উপনিবেশ ছিলো, সেখান থেকে লোকজনকে আসার জন্যে আমন্ত্রণ জানালো। শুরু হয়েছিলো অল্পকিছু লোকজনের আসার মধ্য দিয়ে। কিন্তু ৫০ এর দশকের শেষ দিকে আসতে লাগলো হাজার হাজার শ্রমিক। কনসারভেটিভ দলের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে প্রথম এর বড়ো রকমের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছিলো ১৯৫৮ সালের নটিং হিল দাঙ্গার ঘটনা। সেই দাঙ্গা থামাতে পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছিলো। তিনি জানান, ওই ঘটনা ছিলো এক শ্বেতাঙ্গ নারীকে কেন্দ্র করে। আফ্রো-ক্যারিবিয়ান এক পুরুষের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো। তাদের উপর হামলা হলো একটি পানশালার বাইরে। সেখান থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর একের পর এক হামলার সূত্রপাত হলো।এই আক্রমণের জন্যে শ্বেতাঙ্গ গ্যাংগুলোকে তখন কঠোর সাজা দেওয়া হয়। সারা বিশ্বেই তখন যুক্তরাজ্যের উপনিবেশ ছিলো এরকম অনেক দেশ এক এক করে স্বাধীন হচ্ছিলো। আর ব্রিটেন তখন নিজেকে নবগঠিত কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। ক্যামিলা স্কোফিল্ড বলেন, সদ্য স্বাধীন নতুন এই দেশগুলোর সাথে ব্রিটেনের যে টানাপোড়েনের সম্পর্ক তার সঙ্গে জড়িত ছিলো দেশটির অভিবাসন নীতি। কমনওয়েলথ দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার একটা আকাঙ্ক্ষাও ছিলো তাদের। ফলে বিদেশিরাও তখন প্রচুর সংখ্যায় আসতে থাকলো। ১৯৬৮ সালের ২০শে এপ্রিল। প্রখ্যাত এক ব্রিটিশ রাজনীতিক বার্মিংহামে কনসারভেটিভ পার্টি এসোসিয়েশনে ভাষণ দেন। তিনি ইনোক পাওয়েল। তিনি জানতেন তার বক্তব্য উত্তেজনার সৃষ্টি করবে। সেদিন তিনি বলেন, বছরে ৫০ হাজারের মতো মানুষ যারা অন্যের ওপর নির্ভরশীল তাদেরকে আসার অনুমতি দেওয়া হলে দেশ হিসেবে আমরা তো পাগল, আক্ষরিকভাবেই উন্মাদ হয়ে যাবো। মনে হচ্ছে, দেশটি তার নিজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্যে চিতা সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।" অভিবাসীদের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখছে পুলিশ মি. পাওয়েল এস্টাবলিশমেন্ট বা ক্ষমতা-কাঠামোর অংশ ছিলেন। তার এই ভাষণকে দেখা হলো এমন এক মুহূর্ত হিসেবে, যখন ক্ষমতাধরদের একজন এরকম সস্তা জনপ্রিয়তার ভাষায় কথা বললেন।। ব্রিটিশ রাজনীতিতে এর বড় রকমের এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়লো। তখন অভিবাসনের মতো ইস্যুর সাথে সরাসরি যুক্ত হলো জাতিগোষ্ঠীর মতো বিষয়। অর্থাৎ - অভিবাসনের বিষয়ে কথা বলা বর্ণবাদী বক্তব্যের মতো শোনাতে লাগলো। ক্যামিলা স্কোফিল্ড বলেন, তখন অভিবাসী বলতে বোঝাতো শুধু সংখ্যালঘু কৃষ্ণাঙ্গদের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দীর্ঘ এক ছায়া পড়লো এর উপর। জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য, শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ এর সবই ফ্যাসিবাদের সাথে সম্পর্কিত। তখন এমন এক ক্ষমতা-কাঠামো ছিলো যারা এ ধরনের রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চাইতো। ইনোক পাওয়েলকে বর্ণবাদী বক্তব্য দেওয়ার একদিন পরেই তার পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। কিছু পরিবর্তন আনা হয় আইনে। লোকজন যাতে অবাধে আসতে না পারেন সেজন্যে আরোপ করা হয় বিধি নিষেধ। কিন্তু মূলধারার রাজনীতিকরা তখনও অভিবাসনকে রাজনীতির ইস্যু করেননি। কারণ তারা ভয়ে ছিলেন। কারণ তারা মনে করতে অভিবাসন নিয়ে রাজনীতি করা হলে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এবং তারা নিজেরাও বর্ণবাদী হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন। ইনোক পাওয়েল যা চেয়েছিলেন তার বক্তব্যের প্রভাব হলো ঠিক উল্টো। মি. পাওয়েল চেয়েছিলেন এটা নিয়ে কথাবার্তা হোক। ঠেকানো হোক অভিবাসীদের। কিন্তু তার বক্তব্যের পর অভিবাসন ইস্যু চলে গেলো রাজনৈতিক এজেন্ডার বাইরে। নির্বাচনী প্রচারণায় লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন লন্ডনে কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক টিম বেইল রাজনীতি ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, "আপনি যখন রাজনীতিবিদদের সাথে কথা বলবেন, তখন বুঝতে পারবেন যে এটি খুব স্পর্শকাতর বিষয়। দেখবেন অনেকেই এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে খুব সতর্ক থাকেন। নিজেদের বাঁচিয়ে কথা বলেন।" ১৯৭০ এর দশকে রাজনীতিবিদরা অভিবাসনের মতো বিষয় এড়িয়ে চলতে লাগলেন। ইনোক পাওয়েলের ভাষণের ১০ বছর পর আরো একজন প্রখ্যাত রাজনীতিক এই বিষয়ে আবার মুখ খুললেন। তিনি কনসারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা মার্গারেট থেচার। ১৯৭৯ সালে, নির্বাচনের আগে টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "লোকজন ভীত হয়ে পড়েছে যে এই দেশটি ভিন্ন সংস্কৃতির লোকজনে প্লাবিত হয়ে যেতে পারে। ফলে আপনি যদি বিভিন্ন জাতির মধ্যে সুসম্পর্ক চান তাহলে এধরনের লোকের সংখ্যার ব্যাপারে লোকজনের ভয় কমাতে হবে।" যেসব ভোটার অতি দক্ষিণপন্থী রাজনীতির দিকে তাকিয়ে ছিলেন, এই বক্তব্য দিয়ে মার্গারেট থেচার তাদের মন জয় করার চেষ্টা করলেন। তিনি চেষ্টা করেছিলেন ইনোক পাওয়েলের বিদ্বেষপূর্ণ সুর এড়াতে। কিন্তু তিনিও বিভাজনের সৃষ্টি করেন এবং সমালোচিত হন। কেউ বললেন যে মার্গারেট থেচারের বক্তব্য বর্ণবাদী। কেউ কেউ তার কথার সাথে একমত হলেন। আবার কেউ বললেন যে, তিনি বর্ণবাদী ভাষায় কথা বলছেন। সমালোচনার মুখে পড়ে মার্গারেট থেচার তখন এই অভিবাসন ইস্যুটি ত্যাগ করেন। তখন রাজনীতি থেকেও বিষয়টি উধাও হয়ে যায়। তারপর ১৯৯৭ সালে সরকারের পরিবর্তন ঘটলো। তখনও রাজনীতিকদেরকে অভিবাসন বিষয়ে খুব কিছু বলতে শোনা যায়নি। ইউকিপ দলের নেতা পল নাটাল, অভিবাসন এই দলের প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ইতোমধ্যে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটলো। প্রথমত, যুদ্ধ-কবলিত বিভিন্ন দেশ থেকে ব্রিটেনে আসা আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলো। ঠিক তারপরই ঘটলো বড় একটা ঘটনা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগ দিলো আরো ১০টি দেশ। তারাও পেলো ইউনিয়নের যেকোনো দেশে বসবাস ও কাজ করার অধিকার। সরকার থেকে বলা হলো হয়তো সামান্য কয়েক হাজার লোক যুক্তরাজ্যে চলে আসতে পারে। কিন্তু মাত্র এক বছরেই পোল্যান্ড থেকে এলো ১৭ হাজার, লিথুয়ানিয়া থেকে ১০ হাজার, ৭ হাজার এলো স্লোভাকিয়া থেকে। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার। এবং তারা আসতেই থাকলো। সরকার তখন সত্যি সত্যি বুঝতে পারলো লোকজনের কাছে যুক্তরাজ্য কতো জনপ্রিয় এক গন্তব্য হতে পারে। বিরোধী কনসারভেটিভ পার্টির নেতা মাইকেল হাওয়ার্ড অভিবাসনকে ইস্যু করার সিদ্ধান্ত ছিলেন। তারা মনে করলেন, এবিষয়ে তাদের দল আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় জোরে কথা বলতে পারে। ২০০৫ সালের নির্বাচনে একটি পোস্টার ছাড়া হলো যার মূল বক্তব্য ছিলো - অভিবাসন নিয়ে কথা বলা বর্ণবাদী কিছু নয়। আমরা যা ভাবছি আপনিও কি সেটা ভাবছেন? বামপন্থী রাজনীতিকরা এই পোস্টারের তীব্র সমালোচনা করলেন। নির্বাচনে কনসারভেটিভ পার্টি জিততে পারলো না ঠিকই কিন্তু তাদের ভোট বাড়লো। তারা পরীক্ষা করে দেখলো যে, বিষয়টি আগের মতো আর ততোটা বিষাক্ত নয়। "প্রচুর সংখ্যায় শ্বেতাঙ্গ ইউরোপিয়ান ব্রিটেনে চলে এলো। এর ফলে রাজনীতিবিদদের জন্যে এবিষয়ে কথা বলা অনেক সহজ হয়ে পড়লো। কারণ তারা তখন অভিবাসনের ব্যাপারে উদ্বেগের মতো বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারছিলো। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ উঠলো না।" কনসারভেটিভ দলের নতুন নেতা নির্বাচিত হলেন ডেভিড ক্যামেরন। তিনি বুঝতে পারলেন, অভিবাসন বিষয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে দ্বিধা ঝেড়ে ফেলার এখনই সময়। নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ব্রেক্সিট মার্গারেট থেচারের বক্তব্যের সাথে তিনিও একমত কীনা জানতে চাইলে মি. ক্যামেরন বললেন, "আমি ঠিক ওই ভাষা ব্যবহার করবো না। তবে আমি মনে করি, যে মাত্রায় অভিবাসীরা আসছে তাতে লোকজনের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। ভিন্ন সংস্কৃতি বা ভিন্ন গাত্রবর্ণের লোকেরা আসছে বলে এই উদ্বেগ নয়। আমি মনে করি, লোকজনের উদ্বেগ হচ্ছে তারা যেসব সেবা পাচ্ছে সেটা নিয়ে। এর ফলে স্কুল, হাসপাতাল এবং আবাসনের উপর চাপ বাড়ছে।" ডেভিড ক্যামেরন শেষ পর্যন্ত অভিবাসনের বিষয়ে রাজনীতিকদের নীরবতা ভেঙে দিলেন। উদারপন্থী সংবাদ মাধ্যমগুলোও তাকে প্রশংসা করলো। বিরোধীরা রইলো চুপ করে। বরং তারাও একই সুরে কথা বললো। প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসন নীতিমালা আরো কড়া করলেন। তখন তার মুখে নতুন শ্লোগান শোনা গেলো- ব্রিটিশ লোকজনের জন্যেই ব্রিটিশ চাকরি। অভিবাসন প্রসঙ্গ উঠে এলো রাজনীতির এজেন্ডায়। সঙ্কোচ কেটে গেলো। মুখ খুলে গেলো ব্রিটিশ রাজনীতিকদের। জনগণের দিক থেকে চাপের মুখে পড়লো তারা। ডেভিড ক্যামেরন ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বিবিসিকে বলেছিলেন, "নেট অভিবাসীর সংখ্যা আমরা কয়েক হাজারে দেখতে চাই, কয়েক লাখে নয়। তাদের সংখ্যা কতো হবে সেটার ওপর আমরা প্রত্যেক বছরেই একটা সীমা বেধে দেই।" সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট ফোর্ড অভিবাসনের রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। বলছিলেন, গত ২০ বছরের অভিবাসন বিতর্কে এটাই ছিলো সম্ভবত সবচে তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। কারণ ডেভিড ক্যামেরন বললেন, অভিবাসীর সংখ্যা এক লাখের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। নেট মাইগ্রেশনের অর্থ হচ্ছে কতো লোক আসছে এবং কতো লোক চলে যাচ্ছে সেটার হিসেবে করে বের করা যে কতো লোক শেষ পর্যন্ত থেকে গেছে। রবার্ট ফোর্ড বলেন, "আমরা ঠিক জানি না গ্রস মাইগ্রেশনের কথা না বলে তারা কেনো নেট মাইগ্রেশনের কথা বললেন। কতো লোক ব্রিটেনে ছেড়ে চলে যাচ্ছে সেটা কিন্তু ভোটাররা দেখতে পায় না। কতো লোক আসছে সেটাই শুধু তারা দেখতে পারে।" "অভিবাসনের বিষয়ে বলতে গিয়ে তখন নানা ধরনের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো। বলা হলো কি এর অর্থনৈতিক লাভ ও ক্ষতি। পুরো বিতর্কটাই যেনো হয়ে উঠলো অ্যাকাউন্টিং এর একটা হিসেবের মতো। এর ভেতর থেকে আবেগের মতো বিষয় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হলো।" সমস্যা হলো অভিবাসীদের ঠেকানোর জন্যে সরকারের হাতে কোনো উপায় ছিলো না। ইতোমধ্যে ই ইউর সদস্য সংখ্যা আরো বেড়ে গেলো। তখন রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া থেকে লোকজনের আসার ওপর সাময়িক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হলো। কিন্তু সেটাও তুলে নেওয়া হলো ২০১৪ সালে। মি. ফোর্ড বলেন, সেসময় এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো যাতে নতুন একটা রাজনৈতিক দলের জন্যে সুযোগ সৃষ্টি হলো। ওই দলটির নাম ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি, সংক্ষেপে ইউকিপ। এই দলটি নব্বইয়ের দশক থেকেই ব্রিটেনকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের করে আনার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। তখনও তারা জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন তিনি বলেন, "ইউকিপের ওপর আমি যখন বই লিখছিলাম তখন ওই দলের প্রধানের সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, গত ১৫ বছর ধরে আমি ভোটারদের বোঝাতে চেষ্টা করছি যে ই ইউ থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া তারা অভিবাসন সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। তবে ক্যামেরনের প্রতিশ্রুতির পর এবিষয়ে ভোটারদের বোঝাতে আমাকে আর চেষ্টা করতে হয়নি। তারাই এর উপসংহার টেনে নিয়েছে।" তারপরই তাদের প্রতি সমর্থন বাড়তে লাগলো। ব্রিটেনের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো ইউকিপ। ইতোমধ্যে অভিবাসনও হয়ে উঠলো রাজনীতির কেন্দ্রীয় ইস্যুগুলোর অন্যতম। আর তখনই ব্রেক্সিট গণভোটে ভোটাররা ই ইউ থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে রায় দিলো। ৫২ শতাংশ ভোটার ভোট দিলেন ত্যাগের পক্ষে আর থেকে যাওয়ার পক্ষে ৪৮ শতাংশ। বলা হলো, এ এক ব্যতিক্রমী মুহূর্ত। এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন সবকিছুই বদলে যেতে শুরু করবে। যুক্তরাজ্যের একটি বিমান বন্দর ভোটারদের এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড়ো ভূমিকা ছিলো অভিবাসন নীতি, যার পক্ষে জোর প্রচারণা চালিয়েছে ইউকিপ। রবার্ট ফোর্ড বলেন, "এটা হলো বাঘের পিঠের ওপর বসে থাকার মতো। আপনি বাঘটিকে একদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন যে দিকটা অনেক বেশি যৌক্তিক, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে বাঘটি সেদিকেই যেতে চাইবে।" যুক্তরাজ্যে এরকমই একজন অভিবাসী হলেন এরিক কাউফমান। তিনি বড় হয়েছেন ক্যানাডায়। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বারবেক কলেজের একজন শিক্ষক। গবেষণা করেছেন অভিবাসনের বিষয়ে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। তার মতে, ইস্যুটি ব্রিটিশ রাজনীতির কেন্দ্রে উঠে এলেও, এনিয়ে এখনও কিছু ট্যাবু রয়ে গেছে। তিনি মনে করেন, অভিবাসনের বিষয়ে লোকেরা যখন কথা বলে তখন তারা নিজেদের মতো অনেক কিছু ঠিক করে নেয়। তার মনে করে, নতুন যারা আসছেন তারা ঠিক আমাদের মতো নয়। তিনি বলেন, "আমার মনে আছে, আমি একবার এক মহিলার সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম। তিনি বলছিলেন, আমি ট্রামে করে যাচ্ছিলাম। দেখলাম কেউ ইংরেজি বলছে না। মনে হলো, আমি বিদেশে এসেছি। তখন একজন তার কথার প্রতিবাদ করলো। এবং তিনি তখনই তার কথা ঘুরিয়ে ফেললেন। বললেন, ওহ আমার নাতি নাতনিরা তো চাকরি পাবে না। " রাজনীতিবিদরাও সংঘাত এড়ানোর জন্যে একই কৌশলে কথা বলতে লাগলেন। এটা যে শুধু ব্রিটেনেই তা কিন্তু নয়। বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশেই এটা বড় ধরনের এক রাজনৈতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক বিতর্কে এই অভিবাসন নিয়ে এখনও রাজনীতিবিদরা খোলামেলা আলোচনা করেন না। তারা এর অর্থনৈতিক দিক নিয়ে কথা বলেন ঠিকই কিন্তু এর সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মতপার্থক্যের মতো বিষয়ে কিছু বলেন না। বলেন না কারণ তারা এনিয়ে কথা বলতে ভয় পান। | ব্রিটেনে আর ক'দিন পরেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন কনসারভেটিভ পার্টির অবস্থানকে আরো শক্ত করতে আগাম এই নির্বাচন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | আপনি শুধু অফিসে কাজ করতে না চাইলে আর কী করে সময় কাটাতে চান। ওইসব মানুষের জন্য যাদের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য পেশাগত পরিচয় ঢাকা পড়ে যায়, কাজ ছাড়া জীবন কেবল জীবনের ফ্যাকাসে সংস্করণ। প্রদত্ত কাজ একটি সপ্তাহকে অর্থবহ করতে এবং কাঠামো গড়তে সহায়তা করে, ভবিষ্যতের অবসর সময়টিকে বিস্ময়কর এবং অস্বাস্থ্যকর মনে হতে পারে এবং এমনকি অপরাধ ও মাদক অপব্যবহারের মতো অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ার মতো মনে হতে পারে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং আমেরিকায় কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ভেনচার ফর আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্ড্রু ইয়াং বলেছেন," তথ্য, সাধারণ জ্ঞান এবং মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে এটি স্পষ্ট যে অনেক মানুষ কাজ না করার কারণে সংগ্রাম করছে।" "আমরা অলস; আমাদের বেশি সময় থাকলেও আমরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে চাইনা। আর সময়ের সাথে সাথে আমরা প্রচুর ভিডিও গেম খেলতে শুরু করি এবং বেশি মদ পান করি। সমাজ সাধারণত কর্মহীন মানুষের প্রতি সদয় হয়না," তিনি মনে করেন। কিন্তু মানুষ যদি সমাজপন্থী হয়ে যায়, তাহলে? এর জন্য একটা ধাক্কার প্রয়োজন। কিন্তু মানুষ কি আরও সৃজনশীল হয়ে উঠতে পারে, মিছিল করতে পারে বা তাদের সম্প্রদায় বা রাজনীতিতে জড়াতে পারে? আরও পড়তে পারেন: ঢাকা শহরে বস্তিবাসী: সংখ্যা কত, কেমন তাদের জীবন? যেভাবে আত্মহত্যা প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন এই নারী যে কৌশলে পিতার নির্যাতন হজম করতো মেয়েটি জাপানে মানুষের গড় আয়ু বেশি, কেননা তারা কর্মঠ ব্যস্ত থাকা আর 'কাজ করা' এক বিষয় নয় পয়সার বিনিময়ে চাকরি করা সক্রিয় জীবন যাপনের একমাত্র উপায় নয়। উদাহরণস্বরূপ, জাপানি ধারণা ইকিগাই মানুষকে জীবনের আনন্দ খোঁজার জন্য এমন সব কাজের ওপর মনোনিবেশ করতে উৎসাহ দেয় যা তাকে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে সাহায্য করবে। ২০১০ সালে জাপানি নারী এবং পুরুষদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, তাদের এক তৃতীয়াংশের কম তাদের ইকিগাই মেনে কাজ করে। এই ইকিগাই বলতে বোঝায় ব্যক্তির শখ, সম্পর্ক এবং কিছু কাজ যার জন্য পারিশ্রমিক মেলেনা ঠিকই তবে তাদের অবসরকে অর্থবহ করে তোলে। আপনি আপনার অফিসের বাইরে বেতনহীন কাজ কতোক্ষণ করেন? অবসর সময় সবসময় আলসে সময় নয় বর্তমানে, নারীদের দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত কাজ করার প্রবণতা রয়েছে, তবে তাদের সেই কাজকে বেতনভোগী কর্মক্ষেত্রগুলোর মতো যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়না। যেমন: বাচ্চাদের দেখাশোনা করা, বয়স্ক পিতামাতার খেয়াল রাখা এবং ঘরোয়া, সামাজিক এবং সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে করতে তাদের অনেক সময় লেগে যায়। বেতনভুক্ত কাজের বোঝা কমিয়ে এই বেতনহীন কাজের জন্য পর্যাপ্ত সময় এবং শক্তি বের করতে হচ্ছে- যেটা এখন অনেক দেখা যায়। ইতোমধ্যে অবৈতনিক যত্নের জন্য সময় বা শক্তি নিরস্ত করতে পারে - তবে কোম্পানি এবং সরকারের এ ধরণের সেবায় কম বিনিয়োগ করা উচিত হবে না।কেননা তারা বিনা বেতনে কাজ করা এসব মানুষের ওপর নির্ভর করে। আপনি স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার মতো সামর্থ্য রাখেন? বেশি দীর্ঘ সপ্তাহ ব্যয়বহুল হতে পারে যাদের সাপ্তাহিক ছুটি অনেক দীর্ঘ - তবে বেতন আগের মতোই - তারা নিজেদের এই বাড়তি সময় গল্ফ খেলা থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিদের সেবা দেয়ার মতো নানা কাজের মাধ্যমে কাটান। লন্ডনের বিপণন ও যোগাযোগ পরামর্শদাতা আলেকজান্দ্রা হার্টনাল আবিষ্কার করেছেন যে, ফ্রিল্যান্সিংয়ে যাওয়ার পর তার আরাম আয়েশ বিদায় নিয়েছে। তাই তিনি সপ্তাহে চারদিনের বেশি কাজ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। তিনি অতিরিক্ত অর্ধেক দিন ব্যয় করেন তার পছন্দের কাজটি করে। আর সেটি হল পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয়ে গ্যালাপাগোস কনজারভেশন ট্রাস্টের হয়ে যোগাযোগের কাজ করেন তিনি। এই অংশটি তার ব্যক্তিত্বের সাথে জুড়ে গেছে: তিনি সক্রিয় থাকতে পছন্দ করেন। তবে হার্টনাল এটাও স্বীকারও করেন যে তার আর্থিক নিরাপত্তা তার স্বেচ্ছাসেবার কাজকে সম্ভব করে তুলেছে। অনেকের জন্য মূল কাজের বাইরে আরও বাড়তি কাজ করা বিলাসিতা। এটি আরও বৈষম্য তৈরি করতে পারে জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের লেবার হিস্টারিয়ান ফিলিপ রেক জানান যে সপ্তাহে চার দিন কাজ করা, চাপমুক্তভাবে কাজ করার একটি দিক হতে পারে। যা হার্টনালের মতো সচ্ছল পেশাদার কর্মচারীদের উপকারে আসে। আবার তাদেরও উপকারে আসছে যাদের কাজের প্রয়োজন। স্বল্প বেতন বা অবসর পরবর্তী সীমিত সঞ্চয় নিয়ে যারা অনিশ্চিত কর্মক্ষেত্রে কাজ করছেন, তাদের জন্য বাইরে সখের কাজ করা অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা মনে হতে পারে। "অবসর সময়" সম্ভবত একটি বিভ্রম হতে পারে, কারণ তারা তাদের প্রধান আয়ের পরিপূরকতার জন্য অন্য কোন উপায় খুঁজতে থাকে। যেহেতু তারা আন্তরিকভাবে তাদের মূল আয়ের পাশাপাশি আয়ের আরেকটি পরিপূরক উপায় খুঁজছে তাই রিক পরামর্শ দিয়েছেন, "আমরা একসাথে একমত হতে পারি যে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার পরিবর্তে ২৮ ঘণ্টা কাজ করাই আদর্শ, এবং এই সময়ে অর্জিত আয় যথেষ্ট।" "তবে খণ্ডকালীন শ্রম, মিনি জবস বা শূন্য-ঘণ্টা চুক্তিগুলোর বিস্তৃতি দেখে ধারণা করা যায় যে শিগগিরই এ বিষয়ে ঐক্যমত্য পৌঁছানো যাবে," তিনি বলেন। সপ্তাহে যারা এরকম হাতে গোনা কয়েক দিন কাজ করতে চান তাদের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে এই সময়ের মধ্যে কাজ করে সবার জন্য আদর্শ জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করা যাবে কিনা। যার মধ্যে উঠে আসতে পারে ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম, ন্যূনতম মজুরির হার বা কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনলেও বেতন না কাটার মতো প্রসঙ্গ। আপনি অবসর পেলেই যে সেটা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যয় করেন তা ঠিক নয়। এটি অন্যদের সাহায্য করার ফল দেবে না একটি চ্যালেঞ্জ হল কাজের বাইরে কিছু সময় বের করলেই কমিউনিটির মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো সম্ভব না। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ট্রেলিয়ান স্টাডিজের অতিথি সভাপতি মেলানিয়া ওপেনহেইমার বলেছেন যে অস্ট্রেলিয়ায় "কর্মক্ষেত্রে সক্রিয় মানুষরা হলেন ৩৫ থেতে ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা" - অন্য কথায়, তারাই ব্যস্ততম ব্যক্তি - যারা সর্বাধিক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেন । এটি আংশিক কারণ হল "স্বেচ্ছাসেবা" অনেকের ধারণার চাইতে অনেক বেশি কিছু: বাচ্চাদের কোন ফুটবল ম্যাচের রেফারি হিসেবে কাজ করা, স্কুলের মেলায় অংশ নেয়া, নতুন অভিবাসীদের বসতি স্থাপনে সহায়তা করা, নাগরিক বিজ্ঞানের প্রকল্পে অবদান রাখা, ধর্মীয় উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা করা ... ওপেনহিমারের দৃষ্টিতে, সময় এই ধরণের কাজের প্রধান বাঁধা নয় - তবে সম্ভাব্য স্বেচ্ছাসেবীদের সমর্থন করা এবং তাদেরকে সুযোগ দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস। তবে সব খারাপ নয় ... সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করার পর মানুষ আসলে তাদের অবসরে কি করবে তা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে কোন জরিপ নেই। তবুও মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে সপ্তাহে কম সময় কাজ করার অনুরোধ করে যাচ্ছে যেন তারা আরও অবসর পায়। যাতে করে তারা তাদের স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা, পারিবারিক সময় এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পেছনে সময় দিতে পারে। ১৯৫৪ সালে, জার্মান রাজনীতিবিদ সপ্তাহে ছয় দিন কাজের পরিবর্তে পাঁচ দিন কাজ করা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, " যদি আমরা একবার মুক্ত শনিবার পাই, তাহলে আমাদের অনুশীলনের সময় হবে; আমরা সিনেমা, থিয়েটার বা সার্কাস ঘুরে দেখতে পারবো; আমাদের মোটরবাইক এবং স্কুটারগুলো নিয়ে গ্রামাঞ্চলে ঘুরে আসতে পারবো এবং আমাদের বাগানে কাজ করতে পারবো।" রিক বলেন, "একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হল সপ্তাহে চার দিনের কাজের ধারণাটি চাকরিজীবী এবং চাকরিদাতাদের যথেষ্ট সমর্থন পেয়েছে। স্বল্প-ঘণ্টা কাজ করার দাবি আদায়ে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় ট্রেড ইউনিয়নকে এই স্বল্প কর্মঘণ্টা কার্যকর করতে কঠোর লড়াই করতে হয়েছে। রিকের ধারণা এক শতাব্দী আগের তুলনায় বর্তমানের নিয়োগকর্তারা বেশি পরোপকারী, তবে তারা সম্ভাব্য উৎপাদনশীলতা লাভের বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন। তবে কাজের সপ্তাহ কমিয়ে আনার পক্ষে শ্রমিকদের এই আন্দোলনের একটি দিক নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যে তারা এই দাবির মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের চাইতে ব্যক্তিগত অবসর সুবিধার দিকে বেশি মনোনিবেশ করছে। নিউজিল্যান্ড তাদের গড় আয়ের চাইতে জনগণের সুস্বাস্থ্যকে বেশি গুরুত্ব দেন। সম্পদ পরিমাপের অন্যান্য উপায় দীর্ঘমেয়াদে, আমাদের এই কম কাজ করা কী আমাদের নিজেদের সংজ্ঞাকে বদলে দেবে কিংবা অন্যদের সাথে মিথস্ক্রিয়া করি সেটা বদলাতে পারে? যোগাযোগের পরামর্শদাতা হার্টনাল বলেছেন," আপনার পরিচয়টি কাজের সাথে যুক্ত বলে আমি মনে করি। এবং তিনি বেতনভুক্ত কাজের জন্য এত কম সময় ব্যয় করতে চান না। ভবিষ্যতে, তাহলে, "আপনি কী করেন?" এই প্রশ্নটি ভয়ঙ্কর হতে পারে। কেননা এই প্রশ্ন থেকে শুধু বর্তমান চাকরির কথা ছাড়াও আরও বিভিন্ন উত্তর আসতে পারে। পাশাপাশি বৃহত্তর পরিসরে, কাজের রূপান্তর মানুষকে আরও কল্পনাপ্রবণ হওয়ার ভাল সুযোগ দেয়। সারাথ দাওয়ালা ভারতের হায়দ্রাবাদের একজন সমাজবিজ্ঞানী এবং বেটার ইনকাম আর্থ নেটওয়ার্কের ভাইস-চেয়ারম্যান, এটি একটি দাতব্য সংস্থা যারা মানুষের মৌলিক আয় নিয়ে কথা বলতে উৎসাহ দেয়। তিনি বলেন, পৃথিবীতে শুধু কাজের উৎপাদনশীলতাই যথেষ্ট না। এখানে বড় ধরণের সফলতার সূচকের প্রয়োজন। যেমন ভুটানের গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস জরিপ যা দেশের সম্মিলিত সুখের হার পরিমাপ করে বা নিউজিল্যান্ডের সুস্থতা বাজেট যা পুঁজিবাদী অর্জনের চাইতে নাগরিকদের সুখকে জোর দেয়া হয়। ভারতীয় উপজাতীয় গ্রামে প্রাথমিক আয় নিয়ে দাওয়ালার কাজটি "সংহতির প্রভাব"-এর পরামর্শ দেয়, প্রতিবেশীরা একে ওপরকে অর্থ ধার দেয় যেন তাদেরকে আকাশচুম্বী সুদের ঋণের ওপর নির্ভর করতে না হয়। এজন্য তারা বিবাহের মতো বিশেষ অনুষ্ঠানে অর্থ/সম্পদ সংগ্রহ করে থাকেন। ক্লান্ত যুবক দাওয়ালা মনে করেন সমাজ যেভাবে সময়কে সংগঠিত করে তা কাজ এবং অবসর, অথবা বেতনভুক্ত কাজ এবং সম্প্রদায়ের কাজের মধ্যে যে কৃত্রিম পার্থক্য, তার সাথে সাথে পরিবর্তন হতে পারে। "ভবিষ্যৎ অনুমানযোগ্য-ভাবে অনিশ্চিত হতে চলছে," দাওয়ালা উল্লেখ করেন। এটাই আসলে যথার্থ সময় ভাববার যে আপনি ভবিষ্যতে অফিসে বেশি সময় ব্যয় করতে চান নাকি খরগোশ পেলে সময় কাটাতে চান। | অনেক পরিচিত একটি গতানুগতিক গল্প হল: একজন নিবেদিত কর্মী অবশেষে অবসর গ্রহণ করেন এবং তারপরে অলস দিনগুলো কাটানোর প্রত্যাশায় বিহ্বল হয়ে যান। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | একটি অগ্নিকাণ্ডেই ৭০জনের বেশি মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। অন্যদিকে ফেনীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনা আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান এবং পেঁয়াজের দামের ঝাঁঝ নিয়েও তোলপাড় হয়েছিল। বছরের শেষে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল রাজাকারের তালিকা। আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মত সরকার গঠণ করে ৭ই জানুয়ারি টানা তৃতীয় দফায় আওয়ামী লীগের সরকার গঠন নির্বাচন এবং তার ফলাফল নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের মধ্যে শুরু হয়েছিল ২০১৯ সাল। মাত্র ৭টি আসন পেয়ে ড: কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম এবং বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজনৈতিক সব হিসাব নিকাশ পাল্টে গিয়েছিল। তবে নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন এবং নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করার নানান অভিযোগের মুখে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করেছিল। টানা তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালের ৭ই জানুয়ারি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁকে এবং মন্ত্রীসভার সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু এবং মতিয়া চৌধুরীর মতো আওয়ামী লীগের পুরোনো রাজনীতিকরা এবং জোটের শরিকদের কেউ জায়গা পাননি এই মন্ত্রীসভায়। বেশির ভাগ নতুন মুখ নিয়ে গঠিত এই মন্ত্রীসভা তখন নির্বাচন ঘিরে আলোচনাকে ছাপিয়ে দক্ষতা-অদক্ষতার প্রশ্নে ভিন্ন আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো। মানবাধিকার কর্মি এবং বিশ্লেষক সুলতানা কামাল বলছিলেন, সরকার কোন প্রশ্ন বা বক্তব্য আমলে না নিয়ে নিজেদের মতো করে চলেছে এবং তার নেতিবাচক প্রভাবটাই বেশি পড়ছে। "যেহেতু নির্বাচনটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। তার ফলে সরকার গঠনের পর যে প্রবণতাটা তাদের মধ্যে দেখা গেছে, সেটা হচ্ছে, তারা নিজস্ব ভঙ্গিতে এবং নীতিতে সরকার চালিয়ে গেছে। সেখানে কিছু ভাল ফল হয়তো পাওয়া গেছে। কিন্তু জবাবদিহিতার জায়গাটা বিলুপ্ত হয়েছে।" বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন এবার সংসদে জাতীয় পার্টি মন্ত্রীত্ব ছাড়া বিরোধীদলে বসে একাদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হয় ২০১৯ সালের ৩০শে জানুয়ারি। শিরীন শারমিন চৌধুরীই আবার স্পিকার নির্বাচিত হন। তবে বিগত দশম সংসদে আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টি বিরোধীদলে বসেছিল এবং মন্ত্রীসভাতেও ছিল। এবার জাতীয় পার্টি থেকে কাউকে মন্ত্রীসভায় নেয়া হয়নি। জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ হয়েছিলেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। চুড়িহাট্টায় উদ্ধারকাজ করছে বিমান বাহিনী। চুড়িহাট্টায় আগুন ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে যখন ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের আয়োজন চলছিল, সে সময়ই পুরোনো ঢাকার চকবাজারে চুড়িহাট্টা এলাকায় এক ভায়বহ অগ্নিকান্ডে ৭০জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। অতীতে পুরোনো ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম বা এর ব্যবসা সরানো নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও চুড়িহাট্টায় চারতলা একটি ভবনে থাকা রাসায়নিক গুদাম থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। ঘিঞ্জি সেই এলাকায় আশে পাশের ভবনে রাসায়নিক গুদাম থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল এবং মারাত্নক রুপ নিয়েছিল। সেদিন বেঁচে যাওয়া স্থানীয় একজন বাসিন্দার বক্তব্য ছিল, সেই ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর মিছিল বা ভয়াবহতা তারা মেনে নিতে পারছিলেন না। নুসরাত জাহান নুসরাত হত্যা এবং রায় দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছিল দু'টি হত্যাকাণ্ড। এর একটি ঘটেছিল ফেনীতে মাদ্রাসায় এবং অন্যটি হয়েছে ঢাকায় বুয়েটে। ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহানের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল ৬ই এপ্রিল। চারদিন পর ১০ই এপ্রিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার সাত মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ২৪শে অক্টোবর স্থানীয় আদালতে বিচার শেষ হয়েছে। বিচারিক আদালতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ আসামী ১৬জনেরই ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে। সেই রায়ের পর তখন প্রতিক্রিয়ায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসা সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, আইনগত পরের প্রক্রিয়াগুলো যেনো দ্রুত হয়। বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছিল। বুয়েটে আবরার হত্যা:সারাদেশে প্রতিবাদ আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিলেন। বুয়েটের শেরেবাংলা আবাসিক হল থেকে আবরার ফাহাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল ৭ই অক্টোবর। তাঁকে রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা পিটিয়ে বা নির্যাতন চালিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছিল ২৫জনের বিরুদ্ধে। এই অভিযুক্তদের বেশিরভাগই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিলেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে বুয়েট প্রায় এক মাস সময় ধরে অচল ছিল। সেই প্রেক্ষাপটে ঐ বিশ্ববিদ্যারয়ে ছাত্র রাজনীতিই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অবশ্য ঘটনার মাসখানেক পরেই পুলিশ মামলার ২৫ জনকেই অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে। আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন তখন প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। ডাকসুর ভিপি নুরুল হক ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন দীর্ঘ সময় পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহের মাঝে নানা শংকাও ছিল। তবে এই নির্বাচনে মেরুকরণটা ছিল ভিন্ন রকম। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিল কোটা পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারিদের ফোরাম। সেই আন্দোলনে নেতা হিসেবে পরিচিত সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী নুরুল হক ছাত্রলীগের সে সময়ের সভাপতি রেজওয়ানুল হককে হারিয়ে ডাকসু'র ভিপি নির্বাচিত হন। তবে ডাকসু'র জিএস'সহ অন্য পদগুলোতে ছাত্রলীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। ডাকসু এবং হলগুলোর সংসদেও কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারিদের সাথেই ছাত্রলীগের প্রতিদ্বন্দিতা হয়েছে। ছাত্র সংগঠনের বাইরে কোনো ফোরামের মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকার বিষয়কে বিশ্লেষকরা একটা নজির হিসেবে দেখেন। ডাকসু'র নির্বাচন নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিল ছাত্রলীগের বিরোধীরা। শেষপর্যন্ত নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক সহ বিভিন্ন সংগঠন ফলাফল মেনে নেয়। ডাকসু'র ভিপি'র ওপর বছরের শেষেও হামলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু'র ভিপি নুরুল হকের ওপর ২২শে ডিসেম্বর ছাত্রলীগের নেতা কর্মিরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় নুরুল হকসহ কমপক্ষে ছয়জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলে। ২০১৯ সালেই এরআগেও কয়েকবার নুরুল হকের ওপর হামলার অভিযোগ আলোচনায় এসেছিল। সুলতানা কামাল মনে করেন, সরকারের সামনে যেহেতু বিরোধী দলের কোনো চ্যালেঞ্জ নেই, সেকারণে সরকার সমর্থকরা এ ধরণের বিভিন্ন ঘটনা ঘটাচ্ছে। পুলিশ বা প্রশাসনের নজরের বাইরে ঢাকায় ক্যাসিনো চলেছে কিভাবে-এই প্রশ্নও উঠেছিল। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান: আওয়ামী লীগ সমর্থক বিভিন্ন সংগঠনে আতংক নানা ইস্যুর মাঝে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। ছাত্রলীগের শীর্ষ দু'জন নেতাকে চাঁদাবাজির অভিযোগে সরিয়ে দেয়ার পর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করেছিল ৪ঠা সেপ্টেম্বর। সেই অভিযানে একের পর এক ক্লাব বা ক্রীড়া সংস্থায় অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য ধরা পড়ে। ঢাকার এসব ক্লব বন্ধ হয়ে থাকে লম্বা সময় ধরে। আওয়ামী লীগের সহযোগী যুবলীগের ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ সংগঠনটির বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কৃষকলীগ এবং সেচ্ছ্বাসেবক লীগেরও কয়েকজন ধরা পড়ে। ফলে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা কর্মীদের অনেকের মাঝে এই অভিযান নিয়ে একটা ভয় তৈরি হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে এটাকে তাদের দলের নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নিজেদের সংগঠনগুলোতে শুদ্ধি অভিযান বলে বর্ননা করে আসছিলেন। তখন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, তাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করেছেন এবং তার ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। ক্লাবগুলোতে এবং বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়িতে এই অভিযানে লাখ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়েছিল। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরের বাইরে কিভাবে এসব ক্যাসিনো চলেছে-এই প্রশ্নও অনেকে তুলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়। পেঁয়াজের বাজার নিয়ে হুলুস্থুল অক্টোবরের শেষে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে এর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে এবং এনিয়ে হুলুস্থুল লেগে যায়। প্রতি কেজি পেঁয়াজ আড়াইশ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। পেঁয়াজের ঝাঁঝ সামলাতে সরকারের পক্ষ থেকে টিসিবি ঢাকা নগরীর রাস্তায় রাস্তায় এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকে করে কমদামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। পেঁয়াজ বিক্রির এই ট্রাকগুলোকে ঘিরেও ক্রেতাদের ভিড় থাকতো চোখে পড়ার মতো। দাম বেশি হওয়ায় ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হতে পারে, এই ভয়ে দেশের অনেক এলাকায় কৃষকদের জমি পাহারা দেয়ার ঘটনাও খবর হয়েছে। লম্বা সময় ধরে পেঁয়াজের উর্ধ্বমুখী বাজারের প্রেক্ষাপটে অনেকে এর ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছিলেন। রান্নায় পেঁয়াজ বাদ দেয়া বা না খাওয়া—এমন বক্তব্য নিয়েও আলোচনা হয়। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করা নিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং তা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। জেনারেল এরশাদ মারা যান ৯০ বছর বয়সে। জেনারেল এরশাদের মৃত্যু সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন গত ১৪ই জুলাই। মৃত্যুর সময় তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। তিনি নয় বছর ক্ষমতায় ছিলেন। গণঅভ্যুত্থানে তাঁর সরকারের পতন হয়েছিল ১৯৯০ সালের শেষে। এরপরও প্রায় তিন দশক ধরে তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতা এবং ভোটের রাজনীতিতে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখতে পেরেছিলেন। ফলে তার মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় ছিলো। ৯০ বছর বয়সে জেনারেল এরশাদের মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি এবং দল জাতীয় পার্টির ভবিষ্যত কি দাঁড়াবে-তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা রয়েছে। যদিও তার মৃত্যুর পর পরই তার ভাই জি এম কাদের দলের নেতৃত্বে এসেছেন। রাজাকারসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে বিতর্কিত তালিকা স্থগিত করা হলেও আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। রাজাকারের তালিকা নিয়ে তোলপাড় বছরের শেষটা ছিল রাজাকারের তালিকা নিয়ে ক্ষোভ-প্রতিবাদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এবার বিজয় দিবস উদযাপনের আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজাকার-আলবদরসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইবুনালের প্রধান আইনজীবীসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় এনিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। প্রয়াত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা প্রতিবাদে নেমেছিলেন। তারা এমন তালিকা তৈরির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি দাবি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে অপরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করলে শেষপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তালিকা স্থগিত করা হয়। তবে এনিয়ে বিতর্কের জের রয়ে যায়। আরো খবর: শাহজালালের অত্যাধুনিক নতুন টার্মিনালে কী থাকবে ভেসে আসা 'ভুতুড়ে নৌকায়' মানুষের দেহাবশেষ কাবা অবরোধ: সৌদির ইতিহাস পাল্টে দেয়া ঘটনা বিবাদে না জড়িয়ে কীভাবে দ্বিমত প্রকাশ করবেন | অনেক ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছে ২০১৯ সাল। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর টানা তৃতীয় বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বছরের শুরুতে। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বেন স্টোকসকে আউট করার পর এভাবে উদযাপন করেছিলেন সাকিব আল হাসান মাঠে উপস্থিত কয়েকজন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, প্রথম সেশনের মাঝামাঝি সময়ে সাকিবের বোলিংয়ের সময় পূর্ব গ্যালারির কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে এক সমর্থক মাঠে ঢুকে পড়েন। বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করা সুব্রত সাহা জানান, "মাঠে ঢুকে সাকিবের কাছে গিয়ে বেশ নাটকীয় ভঙ্গিমায় সাকিবকে স্যালুট দেন ঐ তরুণ।" "এরপর হাটু গেড়ে বসে প্রেম নিবেদন করার ভঙ্গিতে সাকিব আল হাসানকে ফুল দিতে চান তরুণ।" আরো পড়তে পারেন: জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে মারা গেছেন নায়ক সালমান শাহ'র মৃত্যু: কী ঘটেছিল সেদিন ফোনে আপনার কথা কি ব্যবসায়ীরা শুনে ফেলছে 'যৌন আকর্ষণ কী জিনিস সেটা আমি জানিনা' পরিস্থিতিতে বিব্রত হয়ে বেশ কয়েকবার সাকিব ফুল নিতে অস্বীকৃতি জানান, তবে শেষপর্যন্ত ফুল হাতে নেন। মিনিটখানেকের মধ্যেই মাঠে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এবং ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা গিয়ে ঐ ব্যক্তিকে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যান। এই ঘটনায় চার-পাঁচ মিনিট বন্ধ থাকার পর আবারও খেলা শুরু হয়। | চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে নিরাপত্তা বেষ্টনি টপকে সাকিব আল হাসানকে অভিবাদন জানাতে মাঠে প্রবেশ করায় এক যুবককে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | দে বেনোস এবং উলরিখ লারসেন হাত মেলাচ্ছেন জার্মানিতে কেএফএর এক সভায় 'দি মোল' নামের এই ছবিটি মূলত একটি "স্টিং অপারেশন" বা ছদ্মবেশী প্রামাণ্য চিত্রকারের কাজ। এর ড্যানিশ পরিচালক ম্যাডস ব্রুগার বলছেন, এই জটিল স্টিং অপারেশনের জাল বিছাতে তাকে অনেক বছর ধরে কাজ করতে হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর উচ্চাভিলাষের কারণে ২০০৬ সাল থেকেই জাতিসংঘ দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ দল ২০১০ সাল থেকে নজর রাখছে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র কর্মসূচির অগ্রগতি ও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর। তারা এ বিষয়ে নিয়মিত রিপোর্টও দিচ্ছে। কিন্তু এই প্রামাণ্যচিত্রে যা দেখা যাচ্ছে, তা সত্যি নজিরবিহীন। বিবিসি বাংলার আরও খবর: ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অনুমোদিত, মঙ্গলবারই অধ্যাদেশ জারী তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিয়ে ভারত কি ‘এক চীন’ নীতি থেকে সরে আসছে? ধর্ষণ আর পোশাক নিয়ে নতুন ভিডিও-তে যা বলেছেন অনন্ত জলিল এতে দেখা যাচ্ছে, উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তারা ক্যামেরার সামনে আলোচনা করছেন, কীভাবে অস্ত্র রপ্তানি করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলোকে এড়ানো যায়। ছবিটিতে একটি মুহূর্ত আছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে দেখা যাচ্ছে, মি. জেমস নামধারী একজন ছদ্মবেশী "অস্ত্র ব্যবসায়ী" এবং উত্তর কোরিয়ার একটি অস্ত্র কারখানার প্রতিনিধি একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন। এই 'চুক্তি স্বাক্ষর'-এর দৃশ্য ভিডিও করছেন প্রামাণ্যচিত্রটির মূল চরিত্র, এবং সেখানে উত্তর কোরিয়ার কিছু সরকারি কর্মকর্তাও উপস্থিত রয়েছেন। ঘটনাটা ঘটেছে পিয়ংইয়ং-এর শহরতলীতে, একটি চটকদার রেস্তোরাঁর বেজমেন্টে। এগুলো কি বিশ্বাসযোগ্য? প্রশ্ন হলো, ছবিটিতে যা দেখানো হয়েছে, তা কি সত্যি হতে পারে? উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ একজন সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, তার মনে হয়েছে এটা "অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য।" এই ছবিটি নির্মিত হয়েছে বিবিসি এবং কয়েকটি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান সম্প্রচার কোম্পানির যৌথ প্রযোজনায়। প্রামাণ্যচিত্রটি একই সাথে মজার, বিদঘুটে এবং একেক সময় অবিশ্বাস্য। কিম জং উন ব্রুগার নিজেই এ ছবিতে এক জায়গায় বলেছেন, আমি এমন একজন ফিল্মমেকার যে সবসময় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে চায়। উত্তর কোরিয়া বিষয়ে ২০১৪-১৯ সালে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের যে প্যানেল ছিল, তার সমন্বয়কারী হচ্ছেন হিউ গ্রিফিথ। তিনি বলছেন, এ ছবিতে যা উদঘাটিত হয়েছে তা "অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য।" "চেয়ারম্যান কিম জং উনকে লজ্জায় ফেলতে পারে এমন যত কিছু আমরা আগে দেখেছি, তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে গুরুতর। এ ছবিতে এমন অনেক কিছু আছে, যা আমরা ইতিমধ্যেই যা জানি তার সাথে মিলে যায়।" বিচিত্র সব চরিত্র প্রামাণ্যচিত্রটিতে আছে বিচিত্র কিছু চরিত্র । একজন হলেন বেকার ড্যানিশ শেফ বা রাঁধুনী - যিনি কমিউনিস্ট একনায়কদের সম্পর্কে ভীষণ আগ্রহী। একজন স্প্যানিশ অভিজাত ব্যক্তি, যিনি উত্তর কোরিয়া বিষয়ে প্রচারণার সাথে জড়িত - এবং তার আগ্রহের বিষয় হলো সামরিক বাহিনীর পোশাক। আরেক জন সাবেক ফরাসী সৈন্য এবং দাগী কোকেন বিক্রেতা - যিনি একজন রহস্যময় 'আন্তর্জাতিক' ব্যক্তি। বেকার রাঁধুনীটি হচ্ছেন উলরিখ লারসেন। তিনি ব্রুগারের সাহায্য নিয়ে কোরিয়ান ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশন (কেএফএ) নামে একটি স্পেন-ভিত্তিক সংগঠনে অনুপ্রবেশ করেন - যা উত্তর কোরিয়ার শাসকগোষ্ঠীর সমর্থক। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে লারসেন ধীরে ধীরে এ সংগঠনের ওপরের কাতারের নেতা বনে যান এবং শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের 'আস্থা' অর্জন করেন। এই কেএফএ-র সদস্য হবার সূত্রেই তার সাথে যোগাযোগ হয় আলেইয়ান্দ্রো কাও দে বেনোসের সাথে। ইনি হচ্ছেন একজন স্প্যানিশ অভিজাত ব্যক্তি, যাকে সারা দুনিয়া চেনে "উত্তর কোরিয়ার দ্বাররক্ষী" হিসেবে। এই লোকটিকে কখনো কখনো ছবিতে দেখা যায় উত্তর কোরিয়ার সামরিক পোশাক পরে থাকতে। প্রামাণ্যচিত্রে তিনি গর্বের সাথেই বলেন, পিয়ংইয়ং-এর শাসকগোষ্ঠীর ভেতরে তার পরিচিতি এবং প্রভাব কতটা আছে। এর পরে আছেন জিম লাত্রাশ-কুভোরট্রাপ। তাকে বর্ণনা করা হয় ফ্রান্সের একজন সাবেক লেজিওনেয়ার বা সৈনিক হিসেবে। তিনি কোকেন নামের মাদক বেচাকেনার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। প্রামাণ্যচিত্রে তাকে নিয়ে আসা হয় দামী স্যুট পরে একজন আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ীর ভূমিকায় 'অভিনয়' করতে। এর পরে আছেন ব্রুগার নিজে। তিনি নিজেকে বলেন পাপেট মাস্টার, এবং দাবি করেন যে তিনি এই প্রামাণ্যচিত্রের জন্য ১০ বছর ধরে কাজ করছেন। ভুয়া কোম্পানির সাথে অস্ত্র বিক্রির চুক্তি ওই চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে যে নর্থ কোরিয়ানরা আছেন, তাদের সবাইকে ঠিকমত শনাক্ত করা যায়নি। লাত্রাশ-কুভোরট্রাপ বলছেন, কোরিয়ার কর্মকর্তারা যখন তাকে নানাভাবে জেরা করছিলেন, তখন তাকে একটা কোম্পানির নাম বানিয়ে বলতে হয়েছিল। এখন ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য মনে হয় যে তারা এমন একটা প্রাথমিক তথ্য আগে থেকে ভেবে রাখেননি। মি. ড্যানি এবং লাত্রাশ-কুভোরট্রাপ, উগান্ডায় তোলা ছবি তার ওপর এটাও বিশ্বাস করা কঠিন যে কোরিয়ান কর্মকর্তারা এমন একটা বৈঠক এবং দলিলপত্র স্বাক্ষর করা ফিল্মে ধরে রাখার অনুমোদন দিয়েছিলেন। দলিলে স্বাক্ষর রয়েছে যার, তিনি হলেন কিম রিয়ং-চল। তিনি হচ্ছেন নারে ট্রেডিং অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট। কোরিয়ায় এটি একটি খুবই সাধারণ নাম। কিন্তু জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে একই নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কথা আছে। ২০২০ সালের অগাস্টের ২৮ তারিখের ওই দলিলে বলা হয়, কোরিয়া নারে ট্রেডিং করপোরেশন নামে একটি কোম্পানি নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর নানা কর্মকান্ডে জড়িত আছে - যার উদ্দেশ্য উত্তর কোরিয়ার নিষিদ্ধ কর্মকান্ডের সমর্থনে অর্থ আয় করা। 'আপনি কি সিরিয়ায় অস্ত্র সরবরাহ করতে পারবেন?' সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তা গ্রিফিথ বলছেন, এটা একটা লক্ষণীয় ব্যাপার যে একজন ব্যবসায়ীর সম্পর্কে ওই কোরিয়ানরা কিছুই না জানলেও তার সাথে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে চুক্তি করতে আপত্তি করছেন না। "এতে বোঝা যায়, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় কাজ হচ্ছে। উত্তর কোরিয়ানরা তাদের অস্ত্র বিক্রি করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে", বলেন তিনি। ছবিটির এক পর্যায়ে ২০১৭ সালে কাম্পালায় অনুষ্ঠিত একটি বৈঠক দেখানো হয়। এতে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র ব্যবসায়ী বলে কথিত "মি. ড্যানি" লাত্রাশ-কুভোট্রাপকে জিজ্ঞেস করতে দেখা যায় যে তিনি সিরিয়ায় উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র সরবরাহ করতে পারবেন কি-না। দি মোলের পরিচালক ম্যাডস ব্রুগার মি. গ্রিফিথস বলেন, এ প্রশ্ন থেকে বোঝা যায় উত্তর কোরিয়া নিজে থেকে এসব কাজ করার ক্ষেত্রে অসুবিধার মধ্যে রয়েছে। অবকাশকেন্দ্রের মাটির নিচে অস্ত্র-মাদকের কারখানা? মি. জেমসকে দেখা যায় যে তিনি উগান্ডায় গেছেন এবং তার সাথে পিয়ংইয়ং-এ যে উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের দেখা গিয়েছিল, তারাও আছেন। তারা লেক ভিক্টোরিয়ায় একটি দ্বীপ কিনে সেখানে একটি বিলাসবহুল অবকাশকেন্দ্র বানাতে চান। উগান্ডার কর্মকর্তাদের কাছে এ উদ্দেশ্যের কথা বললেও কোরিয়ানরা গোপনে পরিকল্পনা করছেন, সেখানে একটি ভূগর্ভস্থ কারখানা তৈরি হবে - যাতে উৎপাদিত হবে অস্ত্র ও মাদক। শুনলে যতই কল্পকথার মত মনে হোক, উত্তর কোরিয়া এমন কাজ আগেও করেছে। নামিবিয়ার লেপার্ড ভ্যালিতে একটি পরিত্যক্ত তামার খনিতে একটি গোলাবারুদ তৈরির কারখানা বানিয়েছিল উত্তর কোরিয়ার শাসকচক্র । কোরিয়া মাইনিং ডেভেলপমেন্ট ট্রেডিং কর্পোরেশন বা কোমিড নামে সংস্থাটির কার্যকলাপ তদন্ত করেছিল জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত। পরে নামিবিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করে জাতিসংঘ, এবং হয়ত সে কারণেই উত্তর কোরিয়ানরা উগান্ডার দিকে দৃষ্টি ফেরায়, বলেন গ্রিফিথ। এই কর্মকর্তা বলছেন, "নামিবিয়ায় উত্তর কোরিয়ার প্রকল্পগুলো কার্যত বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, এবং ২০১৮ সাল নাগাদ উগান্ডা ছিল হাতেগোনা কয়েকটি আফ্রিকান দেশের একটি - যেখানে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রের দালালেরা ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়াতে পারতো।" 'দূতাবাস কিছু জানে না' ডকুমেন্টারিটিতে আরেকটি জিনিস উঠে এসেছে। তাহলো, নর্থ কোরিয়ান কূটনীতিকরা দৃশ্যত বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসে বসে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের প্রয়াসে সহযোগিতা করছেন। একটি দৃশ্যে দেখা যায়, উলরিখ লারসেন স্টকহোমে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসে গিয়েছেন। সেখানে মি. রি নামে একজন কূটনীতিকের কাছ থেকে একটি খাম পান, যাতে উগান্ডা প্রকল্পের পরিকল্পনার কাগজপত্র আছে। লারসেন গোপনে এই সাক্ষাতের চিত্র ধারণ করেন। তিনি যখন দূতাবাস থেকে বিদায় নিচ্ছেন তখন মি. রি তাকে গোপনীয়তার ব্যাপারে সতর্ক করে দিচ্ছেন। "যদি কিছু ঘটে যায়, তাহলে কিন্তু দূতাবাস বলবে আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। ঠিক আছে?" গ্রিফিথস বলছেন, এ দৃশ্যটিও বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তিনি বলেন, "জাতিসংঘের প্যানেলের তদন্তে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করা বা ভাঙার চেষ্টার সথে জড়িত আছে উত্তর কোরিয়ার কূটনৈতিক অফিসগুলো বা সে দেশের পাসপোর্টধারীরা।" যেসব চুক্তি নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রটিতে আলোচনা হয়, তার কোনোটিই বাস্তবে রূপ পায়নি। চুক্তির অংশীদারেরা এক পর্যায়ে অর্থ দাবি করতে শুরু করলে মি. জেমসকে 'উধাও' করে দেন পরিচালক ব্রুগার। চলচ্চিত্র নির্মাতারা বলছেন, তাদের সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো স্টকহোমের উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসে উপস্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু কোন জবাব আসেনি। কেএফএ-র প্রতিষ্ঠাতা কাও দে বেনোস বলেছেন যে তিনি ভান করছিলেন, এবং চলচ্চিত্রটি পক্ষপাতদুষ্ট, সাজানো এবং স্বার্থসিদ্ধির জন্য করা। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: কোরিয়া যুদ্ধে '২১ দিনে মারা যাবে ২০ লাখ লোক' উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্ব কিম জং আনের পর কার হাতে যাবে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আন কোথায়? | উত্তর কোরিয়ার ওপর অনেক রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপিত থাকলেও তারা কীভাবে আন্তর্জাতিক আইন ফাঁকি দিচ্ছে, অস্ত্র বিক্রি করছে - তা বের হয়ে এসেছে এক নতুন প্রামাণ্যচিত্রে। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নির্ভর করবে ইরান এই হামলার কী জবাব দেয় এবং কোন সংঘর্ষ হলে তার প্রকার কী রকম হয়, তার ওপরে। তবে স্বল্পমেয়াদে এর কিছু সম্ভাব্য প্রভাব পড়তে পারে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিক প্রাইমারি প্রেসিডেন্ট বাছাই পর্বে, যা মাত্র একমাসের মাথায় শুরু হতে যাচ্ছে। এ বছর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একজন যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট? প্রথাগতভাবে যখন যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্ট বড় ধরণের পররাষ্ট্রনীতির সংকটে থাকেন, সে অন্তত তাকে জনসমর্থনের দিক থেকে অন্তত কিছুদিনের জন্য কিছুটা সুবিধা এনে দেয়। 'পতাকার চারদিকে দাঁড়াও' মনোভাব ১৯৯১ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচডব্লিউ বুশের জন্য সহায়ক হয়েছিল। নাইন ইলেভেন বোমা হামলা এবং আফগানিস্তানে বোমা হামলার পর তখনি প্রেসিডেন্ট বুশের জনপ্রিয়তা রেকর্ড ছুঁয়েছিল। সেগুলো ছিল বড় ধরণের সামরিক সংশ্লিষ্টতা। তবে যখন ঘটনাগুলো ছোট হয়, তখন তার প্রভাব বোঝাও মুশকিল হয়ে পড়ে। ২০১১ সালে লিবিয়ায় বিমান হামলার পরে বারাক ওবামার জনপ্রিয়তার পারদে কোন পরিবর্তন হয়নি। যখন রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ায় মিসাইল আক্রমণ করেন, তখন তার জনপ্রিয়তার পারদ সামান্য উঠেছিল। যদিও তার প্রেসিডেন্সির পুরো সময়টা জুড়ে তার জনপ্রিয়তা প্রায় একই রকম দেখা গেছে। সোলেইমানি হত্যার পর প্রথম জরিপে দেখা গেছে যে, যেভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন, তা নিয়ে জনমনে দ্বিমত তৈরি হয়েছে। তবে মি. ট্রাম্প অন্য যা কিছুই করেছেন, সেখানেও এরকম দ্বিমত দেখা গেছে। জনসংখ্যার একটি অংশ তার পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন। আবার আরেকটি অংশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ছোট সামরিক বিজয় বা রক্তাক্ত লড়াই যাই হোক না কেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির ক্ষেত্রে সব শেষ ফলাফল অনেকটা একই রকম থাকে। আরো পড়ুন: 'মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনীদের দিন শেষ হয়ে গেছে' 'ট্রাম্প ইরানে হামলা করলে সেটি হবে যুদ্ধাপরাধ' পরমাণু চুক্তি আর না মানার ঘোষণা দিলো ইরান ইরাকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার সংক্রান্ত চিঠি নিয়ে বিভ্রান্তি ড্রোন হামলার প্রতিবাদে ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ হয়েছে রিপাবলিকান সমর্থন এক্ষেত্রে অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দলের সমর্থকদের কাছ থেকে সমর্থন পাবেন-যেটা তিনি সবসময়ে তার বিতর্কিত বা আলোচিত সব পদক্ষেপেই পেয়েছেন। হাফিংটন পোস্টের জরিপে দেখা গেছে, ৮৩ শতাংশ রিপাবলিকান ওই ড্রোন হামলাকে সমর্থন করেন। সামাজিক মাধ্যমে যারা সোলেইমানি হামলার জের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে ট্রাম্পিয়ান একপ্রকার জবাব দেয়া হচ্ছে সমর্থকদের পক্ষ থেকে ''তোমার ক্ষতির জন্য দুঃখিত।'' বেবিলন বি নামের একটি রক্ষণশীল ঘরানার ফান ওয়েবসাইটে ডেমোক্র্যাটদের নিয়ে মজা করা হচ্ছে যে, সোলেইমানির মৃত্যুতে তারা আমেরিকান পতাকা অর্ধনমিত করে রাখছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই নাটকের ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট ঘটনাবলী থেকে জাতীয় নজর অন্যদিকে সরে গেছে এবং সিনেটে শুনানি বিলম্বিত হচ্ছে। সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি টুইটেও সে বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। '' আমাদের দেশের এই ইতিহাসের সময় যখন আমি খুব ব্যস্ত, তখন রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজির মধ্যে সময় কাটানো দুঃখজনক,'' তিনি লিখেছেন। ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ সোলেইমারি হামলার পর ডেমোক্র্যাট শিবিরে যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলন আবার চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে, যা ইরাক যুদ্ধের পর থেকে স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। বার্নি স্যান্ডার্স, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে চাওয়াদের একজন, খুব দ্রুত তার শান্তিকামী মনোভাব তুলে ধরেছেন। ''আমি ভিয়েতনামের ব্যাপারে ঠিক বলেছিলাম, আমি ইরাকের ব্যাপারে ঠিক বলেছিলাম। ইরানের সঙ্গে একটি যুদ্ধ এড়াতে আমার সাধ্যমত সব কিছুই আমি করবো,'' যুদ্ধবিরোধী প্রয়াসের অংশ হিসাবে একটি টুইটে তিনি লিখেছেন। ''আমাকে কারো কাছেই ক্ষমা চাইতে হবে না।'' টুলসি গ্যাবার্ড, আরেকজন প্রার্থী জোর দিয়ে বিরোধিতা করছেন যাকে তিনি ''শাসক বদলানোর যুদ্ধ'' বলে বর্ণনা করেন, বলেছেন, সোলেইমানি হত্যাকাণ্ড হচ্ছে যুদ্ধে উস্কানি দেয়ার মতো, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান বিরোধী। তাদের এই বক্তব্য ডেমোক্র্যাট অপর প্রার্থীদের বিপরীত। অন্য প্রার্থীরা কাশেম সোলেইমানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধে সহায়তার সমালোচনা করেন তবে তবে হামলার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পিট বুটিগয়েন বলেছেন, '' কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা নিয়ে অনেক গুরুতর প্রশ্ন আছে এবং এর জের হিসাবে যা ঘটতে পারে, তার জন্য কী আমরা প্রস্তুত আছি?'' এলিজাবেথ ওয়ারেন সোলেইমানিকে একজন 'হত্যাকারী' বলে বর্ণনা করেছেন। অ্যামি ক্লোবোচার ওই অঞ্চলের থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ স্যান্ডার্সের দিকে পাল্টা তীর ছুড়েছেন এই বলে যে, তিনি ওই হামলাকে 'গুপ্ত হামলা' বলে যে বর্ণনা করেছেন, তা দেশদ্রোহিতার সামিল। তবে এই শব্দটি বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট প্রার্থীই উচ্চারণ করেছেন। ''ইনি এমন একজন ব্যক্তি যার হাতে আমেরিকানদের অনেক রক্ত লেগে রয়েছে,'' বলছেন মি. ব্লুমবার্গ। ''ওই জেনারেলকে হত্যা করে আমরা ভুল কিছু করেছি, এমন কেউ মনে করেন বলে আমি মনে করি না।'' এ নিয়ে দলের প্রগতিশীল এবং মধ্যপন্থীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এর ফলে স্বাস্থ্যখাত পেছনে ফেলে ইস্যু হয়ে উঠেছে এই হামলার ঘটনাটি। ইরান সংকট যদি আরো ঘনীভূত হয়ে ওঠে, তাহলে হয়তো তখন আলোচনার মূল বিষয় হয়ে উঠবে সামরিক শক্তি ব্যবহারের বিষয়টি। জো বাইডেনের চ্যালেঞ্জ কাশেম সোলেইমানির ওপর হামলা নিয়ে হাফিংটন পোস্টের জরিপে বেশ কয়েকটি সুসংবাদ বেরিয়ে এসেছে রিপাবলিকান পদপ্রার্থী জো বাইডেনের জন্য, যেখানে ৬২ শতাংশ ডেমোক্র্যাটিক সমর্থক বলেছেন যে, ইরান প্রসঙ্গে তারা জো বাইডেনকে বিশ্বাস করেন। ফলে তিনি স্যান্ডার্স এবং ওয়ারেনের চেয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছেন। তাদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৪৭ শতাংশ। এ ধরণের প্রতিক্রিয়া অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ জো বাইডেনের পররাষ্ট্র ইস্যুতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি আট বছর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং দীর্ঘদিন সিনেট আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির প্রধান ছিলেন। তবে এই রেকর্ড পুরোপুরিই যে আশীর্বাদ তা বলা যাবে না। মধ্যপ্রাচ্য এই ইস্যুতে আবার জো বাইডেনের ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধে প্রসঙ্গ ফিরে আসছে, যেখানে তিনি ওই যুদ্ধকে সমর্থন করেছিলেন। আইওয়ায় একজন ভোটারের প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেছেন, যখন তিনি ইরাক যুদ্ধের সমর্থনে ভোট দিলেও, শুরু থেকেই ওই সংকট সামলাতে প্রেসিডেন্ট বুশের প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বিরোধিতা করে আসছেন। ওই যুদ্ধের আগে এবং পরে সমর্থনের কথা জানিয়ে আসছেন বাইডেন। তবে ২০০৫ সালের শুরু দিকে যুদ্ধের সমর্থনে ভোট দেয়ার জন্য অনুশোচনার কথা প্রকাশ করেন। যতই তিনি ইরাক যুদ্ধ নিয়ে তালগোল পাকাবেন, ততই গণমাধ্যম প্রশ্ন তুলবে তিনি কি বিভ্রান্তিকর বা অতিরঞ্জিত তথ্য দিচ্ছেন কিনা এবং এটাকে তার একটি দুর্বলতা হিসাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে বিরোধীরা। আর কোন অক্সিজেন নয় গাদা গাদা ব্রেকিং নিউজের ভিড়ে ডিসেম্বরের ইমপিচমেন্ট নিয়ে গণমাধ্যমে ততটা মনোযোগ কাড়তে পারেননি ডেমোক্র্যাটরা। এখন যখন সেটি সিনেটে শুনানিতে যাবে, তখন আরেক আলোচনার প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ইরান। এটা রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন চাওয়া কোরি বুকার, ডেভাল প্যাট্রিক, টম স্টেয়ার এবং আরো কয়েকজন প্রার্থীর জন্য দুঃসংবাদ। যারা এখনো দৌড়ে রয়েছেন কিন্তু জরিপ বলছে, প্রাইমারির জন্য তারা বেশ পিছিয়ে পড়েছেন। ভোটাররা যদি দেশের বাইরের বিষয় নিয়ে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়ে, তখন ক্লোবুচারের মতো প্রার্থীদের তহবিল সংগ্রহেও সমস্যা তৈরি করবে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইয়ের প্রচারণায় সেই প্রার্থীই বেশি সুবিধা পাবেন যিনি শেষের দিকে বেশি আলোচনায় থাকবেন। যেখানে ইরান সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে, সেটার ফলাফল জানতে হয়তো আরো খানিকটা অপেক্ষা করতে হবে। | ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেইমানি হত্যার বিষয়টি যে মার্কিন নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠবে, তা এড়ানোর কোন উপায় নেই। এখনকার দিনে সবকিছুই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব ফেলে আর এটা তো বড় একটা বিষয়। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | হংকং-এ রোববারের বিশাল সমাবেশ শুরু হয় ভিক্টোরিয়া পার্কে তারপর সারা শহর জুড়ে মিছিল ও সমাবেশ হয়। তবে বিবিসির চীন বিভাগের সম্পাদক হাওয়ার্ড ঝ্যাং বলছেন, হংকং সঙ্কট মোকাবেলায় চীন হস্তক্ষেপের জন্য যে প্রস্তুতি নিচ্ছে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে চীন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান শক্ত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ম ভাষায় মন্তব্য করেছে, এমনকি তাদের "সন্ত্রাসীদের" সঙ্গে তুলনা করেছে। হংকংবাসীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হল উপর্যুপরি এগারো সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে হংকং-এর অর্থনীতিতে। হংকং-এর অর্থনীতির প্রায় ২০ শতাংশ পর্যটন এবং খুচরা ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল আর এই বিক্ষোভের ফলে এই দুটি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হংকং-এর বড় একজন ব্যবসায়ী বাংলাদেশি সৈয়দ ইকরাম ইলাহী। তিনি হংকং-এ ২৪ বছর ধরে বসবাস করছেন। বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তার ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসার কেন্দ্র হিসাবে হংকং-এর যে পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল, তা তার ভাষায় অনেকটাই খর্ব হয়েছে। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: হংকং বিক্ষোভে চীন কীভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে ছবিতে হংকং বিক্ষোভকারীদের পার্লামেন্ট দখল শিল্ড গার্ল':হংকং বিক্ষোভের প্রতিচ্ছবি যে নারী ভিক্টোরিয়া পার্কে রোববারের জমায়েত ছিল শান্তিপূর্ণ। "ব্যক্তিগতভাবে আমার ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের বায়াররা স্কেয়ারড্ (ভীত)। ওরা আমাদের ব্যবসা দিতে একটু ভয় পাচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে আমাদের ব্যবসা। ওরা দেখছে আমাদের এখানে এরকম সমস্যা চলছে," বলছিলেন মি: ইলাহী। "ওরা চিন্তিত যে আমরা আসলে ওদের মাল ঠিকমত রপ্তানি করতে পারব কিনা। ওরা আমাদের ফ্যাবরিক আর অ্যাকসেসরিসরের অর্ডার দিয়ে থাকেন। আমরা যদি ঠিক সময়মত ওগুলো এক্সপোর্ট করতে না পারি, ওনারা তো ওনাদের গার্মেন্ট শিপমেন্ট করতে পারবেন না"। এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীরা যে প্রশাসনের সাথে কথা বলবেন তাদের উদ্বেগ নিয়ে, তার কোন সুযোগ নেই বলে জানালেন সৈয়দ ইকরাম ইলাহী । কারণ এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তার মতে বিক্ষোভ দমনে পুলিশ বা হংকং সরকার কোন কিছুই করতে পারছে না। "স্টুডেন্টস, সাধারণ মানুষ সবাই এই আন্দোলনে সায় দিয়েছে। অনেকে প্রতিবাদে নেমেছে। যতদিন পরিস্থিতি শান্ত না হবে, ব্যবসা বাণিজ্য খারাপ থাকবে। শেয়ার সূচকও পড়তির দিকে, যা আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্বেগের কারণ।" বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, হংকং-এর আর্থিক খাতের কর্মকর্তারা, বিমানবন্দরের কর্মীরা, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মচারিরা এই বিক্ষোভকে সমর্থন করছেন- বিক্ষোভ এবং হরতালে যোগ দিয়েছেন। যার ফলে এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্য নগরীর ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। বিবিসির চীন বিভাগের সম্পাদক বলছেন, চীন যদি হংকং-এ হস্তক্ষেপ করে, বিক্ষোভকারীদের দমনে সেখানে সেনা নামায় তাহলে তার জন্য চীনকে কড়া মূল্য দিতে হবে। হংকং বাণিজ্যের একটা মূল কেন্দ্র এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় শহর "আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং মুক্ত বন্দর এলাকা বলে হংকং-এর যে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী," বলছেন হাওয়ার্ড ঝ্যাং। "চীনকে আন্তর্জাতিক স্তরে বড় ধরনের সমালোচনার মুখে পড়তে হবে, পশ্চিমা দেশগুলো চীনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাববে এবং বিশ্বে চীনের অবস্থান ও দেশটির অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।" হংকং-এ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সৈয়দ ইকরাম ইলাহীরও ধারণা চীন কড়া হাতে এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও তারা এধরনের পদক্ষেপ নেবে না। "মনে হয় না চীন সরাসরি নাক গলাবে। চীন হংকং-এ অনেক বিনিয়োগ করেছে। হংকং-এর অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য চীনের অবদান অনেক। হংকং-এ ব্যবসার ক্ষতি হয়, সেটা চীন হতে দেবে না। কারণ চীন ব্যবসার জন্য হংকং-এর ওপর নির্ভরশীল। আশা করছি একটা সমাধান নিশ্চয়ই হবে।" পাঁচ বছরের ওপর হংকং-এ থাকেন বাংলাদেশি গৃহবধূ ফাহমিদা মজুমদার। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, হংকং ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য তো বটেই এমনকী বসবাসের জন্যও শান্তির ও নিরাপদ শহর ছিল। হালের এই বিক্ষোভ তাকে এবং তার মত সেখানে বসবাসরত বহু বাংলাদেশি পরিবারের জন্য উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। "হংকং-এর এই বিক্ষোভের পরিণতি কী হয়- পরিস্থিতি কোন্ দিকে মোড় নেয় তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। মা হিসাবে আমার সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। বর্তমানে আমরা এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।" "আমার সন্তানদের অনেক বন্ধুবান্ধব হংকং-এর বাসিন্দা। তারা বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। আমার ছেলেমেয়েরা এই বিক্ষোভে জড়িয়ে পড়বে কিনা সেটা নিয়ে অবশ্যই উদ্বেগ আছে। চীন যদি হস্তক্ষেপ করে, হংকং-এর প্রশাসন যদি চীনের হাতে চলে যায়, আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত কী দাঁড়াবে এসব নিয়ে অনিশ্চয়তা আর আশংকায় দিন কাটছে আমাদের।" জুন মাসে প্রস্তাবিত প্রত্যর্পণ বিলের মৌন বিরোধিতায় যোগ দেন কালো পোশাকে শত শত আইনজীবী ফাহমিদা মজুমদার বলছেন, হংকং-এ বাংলাদেশীদের একটা বড় অংশ নানা ধরনের ব্যবসার সাথে জড়িত। এই বিক্ষোভ দীর্ঘায়িত হলে এবং তা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেললে সেটা বাংলাদেশীদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। হংকং-এ বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিষয়ক এক আইনের বিরোধিতা করে শুরু হওয়া এই আন্দোলন অবসানের আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি হংকং-এর সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী লি কা-শিং সেখানকার সংবাদপত্রে অনেকগুলো পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। উত্তেজনা প্রশমন এবং সহিংসতা বন্ধের ডাক দিয়ে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হংকং এর আরও অনেক বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একই ধরণের বিবৃতি দিয়েছে। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: কাশ্মীর: ফোন করতে থানায় দীর্ঘ লাইন- সময় ১ মিনিট ইউরিক অ্যাসিড এবং কোলেস্টেরল কমবে যেভাবে 'দ্রুত খাবার না দেওয়ায়' ওয়েটারকে গুলি করে হত্যা | হংকং-এ প্রায় তিনমাস ধরে চলা গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন দমনের জন্য চীনের হস্তক্ষেপ নিয়ে আশংকা ক্রমশ বাড়ছে। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ নিলে তা চীনের জন্য বড়ধরনের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে; এর সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে তাও এই মুহূর্তে অনুমান করা কঠিন। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | গর্ভবতী নারীরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে কী করতে হবে? করোনাভাইরাস নিয়ে এমন সব প্রশ্নের উত্তর জানতে দেখুন এই ভিডিওটি: বাংলাদেশে জেলাভিত্তিক কোভিড-১৯ সংক্রমণের মানচিত্র কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কি? | করোনাভাইরাস আক্রান্ত মায়ের গর্ভের শিশুরও কি আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা আছে? শিশু কি আক্রান্ত মায়ের দুধ খেতে পারবে? |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | বলিউডের বিখ্যাত ছবি বর্ডারের পোস্টার কিন্তু তার বেশির ভাগই ভারতের পশ্চিম সীমান্তে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে, পূর্ব রণাঙ্গণে যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলছিল তা নিয়ে সিনেমার সংখ্যা কিন্তু একেবারেই হাতেগানা। একাত্তরের যুদ্ধ নিয়ে এসব ছবিতে প্রোটাগনিস্ট বা কেন্দ্রীয় চরিত্ররা বাংলা ভাষাভাষী, এমন ঘটনাও বেশ বিরল। কিন্তু কেন বলিউডের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এভাবে উপেক্ষিত থেকে গেছে? মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গণহত্যাকে পর্দায় ধরার সাহস পাইনি : জে পি দত্তা আর ভারতের পূর্ব সীমান্তের যুদ্ধ নিয়ে বলিউড যে অল্প কয়েকটি সিনেমা বানিয়েছে সেখানেই বা মুক্তিযুদ্ধকে কোন দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে? বলিউডের আইকনিক ছবি 'বর্ডারে'র সুপারহিট গান 'সন্দেশা আতি হ্যায়' আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে - যে ছবি বানানো হয়েছিল ১৯৭১য়ে রাজস্থান সীমান্তের মরুভূমিতে বিখ্যাত 'ব্যাটল অব লঙ্গেওয়ালা'কে কেন্দ্র করে। আজও ভারতের স্বাধীনতা দিবসে টেলিভিশনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখানো হয় 'বর্ডার', যার পরিচালক জে পি দত্তা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে বহু ছবি বানিয়েছেন। কিন্তু একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছবি করার কথা কি তিনিও কখনও ভাবেননি? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিন্নমূল এক নারী মুম্বাইয়ের এই প্রবীণ পরিচালক বলছেন, "বাংলাদেশ যুদ্ধ নিয়ে ছবি বানাতে গেলে গণহত্যা দেখাতেই হবে - কিন্তু পর্দায় সেটা দেখাতে আমি কখনও স্বচ্ছন্দ বোধ করিনি।" "যার জন্য শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছিল - অসংখ্য নারী-শিশু-পরিবারের ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার সেই মর্মান্তিক কাহিনী সেলুলয়েডে তুলে ধরার সাহসটাই আমার ছিল না, স্বীকার করতে দ্বিধা নেই।" "আর সে কারণেই ওই বিষয়টা আমি কখনও ছুঁয়ে দেখেনি", জানাচ্ছেন জে পি দত্তা। কিন্তু বিষয়টা কি এতটাই সরল? গবেষক, ফিল্ম হিস্টোরিয়ান ও তথ্যচিত্র নির্মাতা পঙ্কজ বুটালিয়া এর একটা অন্য ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন। চলচ্চিত্র গবেষক পঙ্কজ বুটালিয়া "আমার ধারণা পশ্চিম সীমান্ত নিয়ে আমাদের মাতামাতিটাই এর বড় কারণ। আমরা ভারতীয়রা সবচেয়ে যাকে ঘৃণা করি, সেটা পশ্চিম পাকিস্তান। নানা কারণে তাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কটাই সবচেয়ে জটিল।" "আর দেশভাগের পর উত্তর ভারতে যারা শরণার্থী হয়ে এসেছিলেন তারা কিন্তু এসেছিলেন ওই ভূখন্ড থেকেই।" "তাদের চাওয়া-পাওয়াই কিন্তু বলিউডের ন্যারেটিভটা স্থির করে দিয়েছে - আর একাত্তরের যুদ্ধের অন্য ন্যারেটিভটা রয়ে গেছে নজরের বাইরে।" "বাংলাদেশ সৃষ্টির গুরুত্বটা তারা বুঝতেই পারেনি", বলছিলেন মি বুটালিয়া। বিবিসির সঙ্গে কথা বলছেন বর্ষীয়ান পরিচালক শ্যাম বেনেগাল বলিউডের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় পরিচালকদের অন্যতম বর্ষীয়ান শ্যাম বেনেগাল - সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারও যাকে শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক নির্মাণের জন্য মনোনীত করেছে। তিনিও বিবিসিকে বলছিলেন, "যে যা-ই ভাবুক, শেষ বিচারে একটা ফিল্ম কিন্তু দেশের গরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষের ইচ্ছারই প্রতিফলন - নইলে হয়তো সে সিনেমা কোনওদিন চলবেই না।" "সিনেমা একটা বাণিজ্য তা ভুললে চলবে না, নির্মাতারাও তা থেকে মুনাফাই করতে চান।" "একাত্তরে পূর্ব রণাঙ্গনের রাজনীতিটা হয়তো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু বলিউড চিরকাল রাজনীতির চেয়ে জনপ্রিয়তাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে", পরিষ্কার অভিমত শ্যাম বেনেগালের। বলিউডের 'গুন্ডে' ছবির পোস্টার বলিউডের প্রযোজক ও লেখক, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য 'ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ' সম্মানে ভূষিত প্রীতীশ নন্দীও অনেকটা একই মতের শরিক। তার কথায়, "আসলে আমার ধারণা দুটোর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হল ভারতের পশ্চিম সীমান্তে যে যুদ্ধ হয়েছিল সেটা ছিল ভারত বনাম পাকিস্তান। তার পলিটিক্যাল ডায়নামিক্সও ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।" "আর ইস্টার্ন ফ্রন্টে যেটা হয়েছিল সেটা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই, ওদের নিজেদের লড়াই।" "হ্যাঁ, ভারত তাতে অনেক সাহায্য করেছিল ঠিকই, কিন্তু ওরা নিজেরা লড়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। আর সেই স্বাধীনতার কেন্দ্রে ছিল বাংলা ভাষা।" প্রীতীশ নন্দী। পেছনে তার পাওয়া 'মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা' প্রীতীশ নন্দী এটাও মানেন, একাত্তরের যুদ্ধকে ঠিক কীভাবে দেখা হবে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তা নিয়ে একটা দৃষ্টিভঙ্গীর ফারাক আছেই। বছরপাঁচেক আগে রিলিজ করেছিল বলিউডের একটি হিট ছবি, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া-রণবীর সিং-অর্জুন কাপুর অভিনীত 'গুন্ডে'। একাত্তরকে কেন সেখানে 'বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ' না-বলে 'ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ' বলে বর্ণনা করা হয়েছে, তা নিয়ে বাংলাদেশে অনুযোগ ও অভিমান ছিল বিস্তর। সেটা সঙ্গত বলেই প্রীতীশ নন্দীর অভিমত - কারণ তিনি বিশ্বাস করেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের আবেগ মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দৃষ্টির আড়ালেই রয়ে গেছে। গুন্ডে ছবির প্রোমোশনে (বাঁদিক থেকে) অর্জুন কাপুর, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও রণবীর সিং তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "বলিউড ভাষার ব্যাপারটা আসলে বোঝেই না। এই ইন্ডাস্ট্রিটা একটা আলাদা লিঙ্গুইস্টিক সংস্কৃতিতে বসবাস করে, যেখানে ছবির মূল ভিত্তিটাই হল শত্রুতা।" "আজ অবধি বলিউডকে আমি এমন একটা যুদ্ধের ছবি বানাতে দেখলাম না, যেখানে বিজয়ী ও পরাজিতর মধ্যে বা দুই যুযুধান দেশের মধ্যে একটা কামারাডেরি বা মৈত্রীর বন্ধন থাকবে।" "সব ছবিতে শুধু জেনোফোবিক ননসেন্স, আর শুধু 'আমরা জিতেছি, আমরা হারিয়েছি' করে চেঁচামেচি।" "আর একটা ভিলেন থাকতেই হবে - কখনও সেটা পাকিস্তান, কখনও আলাউদ্দিন খিলজি - একটা জাতি যেন সর্বক্ষণ শুধু ভিলেন খুঁজে যাচ্ছে!" 'গাজী অ্যাটাক 'ছবিতে অভিনেত্রী তাপসী পান্নু একাত্তরে পূর্ব সীমান্তের দিকে নজর দিয়েও কিছু কিছু ছবি বলিউডে অবশ্যই হয়েছে, যার একটা হল 'গাজী অ্যাটাক' - বঙ্গোপসাগরে একটি পাকিস্তানি সাবমেরিনকে ডুবিয়ে দেওয়ার টানটান নৌযুদ্ধের কাহিনী। সে সিনেমাতেই এক বাংলাদেশী ডাক্তারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন বলিউডে আজকের নামী অভিনেত্রী তাপসী পান্নু। মাঝদরিয়ায় তাদের জাহাজ ডুবে গেলে ভারতীয় নৌবাহিনী শিশুকন্যা সমেত যাকে উদ্ধার করে। স্ক্রিনে দর্শকরা দেখেছিলেন, ভয়ার্ত গলায় 'আমার সোনার বাংলা' গেয়ে সেখানে ভারতের সাবমেরিনের ভেতরে আশ্রয় পাওয়া তাপসী পান্নু নিজেকে বাংলাদেশী প্রমাণের চেষ্টা করছেন। 'দ্য গাজী অ্যাটাক' ছবির ট্রেলারের প্রচ্ছদ গবেষক পঙ্কজ বুটালিয়া জানাচ্ছেন, "বাষট্টির ভারত-চীন যুদ্ধের পর তবু দুটো খুব ভাল ছবি হয়েছিল, 'হকিকত' আর 'উসনে কহা'।" "কিন্তু যুদ্ধ কখনওই বলিউডের প্রিয় থিম ছিল না, আর একাত্তরের যুদ্ধ নিয়ে সেভাবে তো কোনও মাস্টারপিসই তৈরি হয়নি।" "প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম বা কোরিয়ার যুদ্ধ নিয়ে দুনিয়ায় যে সব সাঙ্ঘাতিক ছবি হয়েছে বলিউডের ওয়ার ফিল্মস তার সঙ্গে তো কোনও তুলনাতেই আসবে না।" তবে পরিচালক শ্যাম বেনেগাল পাশাপাশি যোগ করছেন, "অবশ্য একাত্তরে ভারতের পশ্চিম সীমান্তে কিন্তু কিছু মারাত্মক ট্যাঙ্ক ব্যাটল হয়েছিল।" একাত্তরে রাজস্থান সীমান্তে একটি ট্যাঙ্ক যুদ্ধে জেতার পর ভারতীয় সেনারা "সেগুলোকে তখনই অনেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিখ্যাত ট্যাঙ্কযুদ্ধগুলো - বিশেষ করে উত্তর আফ্রিকায় জেনারেল রমেলের অভিযানের সঙ্গে - তুলনা করতেন।" "ফলে সেটাই বলিউডের কাছে 'সাবজেক্ট' হিসেবে বেশি আকর্ষণীয় থেকেছে।" "তুলনায় পদ্মা-ব্রহ্মপুত্রে ঘেরা নদীনালার বাংলাদেশে দাবার ছকের মতো ফর্ম্যাটে যুদ্ধের ছবি সহজে বানানো যাবে না - তাই পরিচালকরাও সেটা এড়িয়ে চলেছেন।" তবু বছরপাঁচেক আগে মুক্তিযুদ্ধের এক অতি সংবেদনশীল দিক নিয়ে বলিউডে একটি অত্যন্ত সাহসী ছবি বানিয়েছিলেন তরুণ পরিচালক মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রত। একাত্তরের যুদ্ধের সময় একটি ট্রাক্টরে চেপে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডোরা পাকিস্তানি সেনা কীভাবে ধর্ষণকে যুদ্ধের নির্মম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল সেটাই ছিল 'চিলড্রেন অব ওয়ার' নামে সেই ছবির থিম। ছবিতে বাংলাদেশের একজন 'বীরাঙ্গনা'র ভূমিকায় ছিলেন অভিনেত্রী তিলোত্তমা সোম। "এটা এমন একটা জিনিস, যেখানে পারফর্ম করাটা আমার জন্য খুব বড় দায়িত্ব ছিল - কারণ খুব সহজেই এটা প্রহসন বা অতি-অভিনয় হয়ে যেতে পারে।" "খুব বিশ্বাসযোগ্য ভাবে সেটা ফুটিয়ে তোলাটাই সেই জন্য ছিল আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।" 'চিলড্রেন অব ওয়ার' ছবির পোস্টার ধর্ষণের শিকার হয়েও কীভাবে একজন নারী পাশাপাশি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে পারেন, সেই ভাবনাই তাকে এই চরিত্রে অভিনয়ের সাহস জুগিয়েছিল - সে কথাই বিবিসিকে বলছিলেন তিনি। "তবু বলব অভিনয়ই তো, একজন অভিনেত্রীর জন্য সেটা আর কত কঠিন হতে পারে?" "কিন্তু যখনই ভাবতাম বাংলাদেশের ছয় লক্ষ নারী এই চরম যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গেছেন, তখনই মনে হত আমরা যেটা করছি সেটা তো ছেলেখেলা।" অভিনেত্রী তিলোত্তমা সোম 'চিলড্রেন অব ওয়ারে' অভিনয় করেছেন একজন বীরাঙ্গনার ভূমিকায় "তবু সে ছেলেখেলার মধ্যেই কম মিথ্যে আর বেশি সত্যিটা কীভাবে বের করে আনব, এই ছবিটা করার সময় সেটা সব সময় মাথায় ঘুরত।" "সেই অসমসাহসী মহিলাদের স্মৃতিতে এটুকু তো আমাদের করতেই হত, তাই না?", প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিলোত্তমা। তার সেই অভিনয় যদি লক্ষ লক্ষ বীরাঙ্গনার প্রতি তার শ্রদ্ধাঞ্জলি হয়ে থাকে, 'চিলড্রেন অব ওয়ারে'র আর এক অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত আবার বলছিলেন ধর্ষণের প্রভাব কী সাঙ্ঘাতিক হতে পারে - মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে এই ছবি সেটাই তাকে নতুন করে শিখিয়েছে। 'চিলড্রেন অব ওয়ার' ছবিতে অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত তার কথায়, "এই ছবিটা করার আগে আমি কোনওদিন ভেবেও দেখিনি রেপ-কে কীভাবে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।" "হ্যাঁ এটা নিশ্চয় জানতাম যে যুদ্ধের সময় যখন আর্মি ঢোকে তখন সেখানে রেপ হয় ।" "কিন্তু সেটার প্রভাব যে কী সাঙ্ঘাতিক হতে পারে, সেটা যে কী মারাত্মক 'ওয়ার টুল' হতে পারে তা আমি কখনও কল্পনাই করতে পারিনি।" "যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ধর্ষণের এই দিকটা আমি মুক্তিযুদ্ধের ওই ছবি করতে গিয়েই নতুন করে আবিষ্কার করেছি - তা বলতে আমার কোনও দ্বিধাই নেই!", বিবিসিকে সাফ জানাচ্ছেন ইন্দ্রনীল। ছবিতে একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার ভূমিকায় পবন মালহোত্রা আসলে পূর্ব পাকিস্তানে লক্ষ লক্ষ নারীকে পরিকল্পিত ধর্ষণের মাধ্যমে একাত্তরের যুদ্ধের সময় একটা পুরো প্রজন্ম ও সমাজের মেরুদন্ডকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। মুম্বাইয়ের ফিল্মি দুনিয়া তবু অনেক দেরিতে হলেও সে বিষয়টাকে কিছুটা স্পর্শ করেছে। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধর ছবি যে বিশাল ক্যানভাস জুড়ে আঁকা - সেই দুর্দান্ত লড়াই আর অসাধারণ মানবিকতার গল্প আজও বলিউডের রাডারে প্রায় পুরোটাই অধরা রয়ে গেছে। | স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ১৯৭১-র যুদ্ধ একটি অবিস্মরণীয় মাইলফলক - এবং সে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বলিউডে সেই যুদ্ধকে ঘিরে অনেক সফল চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছে। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি - ছিলেন মামলার প্রধান সাক্ষী, তবে এখন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত এই ঘটনার তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয় যখন হত্যাকাণ্ডের ২১ দিন পরে রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ছোট এই জেলা শহরে একটি হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতায় বাংলাদেশের মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যায়, যখন এর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আর এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এবং এরপর রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতা, সঙ্গে মাদক ব্যবসা জড়িত থাকার অভিযোগ, পুরো ঘটনাকে ভিন্ন এক মাত্রা দেয় - অভিযোগ ওঠে যে বড় কিছু আড়াল করতেই পেছন থেকে ক্ষমতাশালীরা কলকাঠি নাড়ছেন। আমি বরগুনায় বিভিন্ন পেশার লোকজনের সাথে কথা বলেছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা কিছু অভিযোগ তুলেছেন। যে রাজনৈতিক মহলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে জোরালো অভিযোগ উঠেছে, তাদের সামনে রয়েছেন বরগুনার একটি আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং তার আইনজীবী পুত্র সুনাম দেবনাথ। এই হত্যা মামলার প্রধান আসামী পুলিশের সঙ্গে কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে ঘটনার কয়েকদিন পরই নিহত হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে নয়ন বন্ড নামে বরগুনাবাসীর কাছে পরিচিত এই সাব্বির আহম্মেদ ওই শহরে একটি গ্যাংয়ের নেতা, যাদের মদদ দেন মিঃ শম্ভুর পুত্র। আমি বরগুনা শহরে থাকার সময়ে সুনাম দেবনাথের সঙ্গে কথা বলি, কিন্তু তিনি কোন সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি। আর তিনদিন চেষ্টা করেও তার পিতার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে বিবিসি বাংলার কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে পিতা-পুত্র দু'জনেই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। হত্যাকাণ্ডে মিন্নি ফ্যাক্টর? মিন্নির সাথে রিফাত শরীফের প্রেমের সম্পর্ক ছিল দেড় থেকে দুই বছরের মতো - বিবিসি বাংলার কাছে এমনটা দাবি করেছেন মিন্নির বাবা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। দুই পরিবারের সূত্রেই বলা হয়েছে, রিফাত শরীফের মাধ্যমেই নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির পরিচয় হয়েছিল। নিহত রিফাত শরীফ এবং নয়ন বন্ড - দুজনেই স্কুল জীবন থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং একসময় তারা দুজনেই একই গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়েন। নয়ন বন্ড-এর মা শাহিদা বেগম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তার ছেলে প্রায় আটমাস আগে মিন্নিকে বিয়ে করে। কথিত ওই বিয়ের একটি কাবিননামাও রয়েছে, কিন্তু বিয়েতে মিন্নির পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিলেন না বলে তিনি জানান। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: রিফাত হত্যা তদন্তে আস্থা নেই মিন্নির বাবার মিন্নির গ্রেফতার নিয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার যা বললেন 'মিন্নির পক্ষে দাঁড়াননি বরগুনার কোন আইনজীবী' নয়ন বন্ডের বাসা শাহিদা বেগম বলেন, বিয়ের পরে তাঁর ছেলে এবং পুত্রবধূ কুয়াকাটায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন যে মিন্নি কখনো তাদের বাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস না করলেও নিয়মিত যাতায়াত করতো। কিন্তু মাস দুয়েক আগে রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির বিয়ে হয়। এই ঘটনা নয়ন বন্ডকে ক্ষিপ্ত করে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে ধারণা দেয়া হয়। বরগুনার এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশ আয়োজন করেই রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির বিয়ে হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মিন্নি যদি নয়ন বন্ডের স্ত্রী হবেন, তাহলে রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির বিয়ের সময় নয়ন আপত্তি তোলেননি কেন? কেন তিনি নিশ্চুপ ছিলেন? এই প্রশ্ন তুলেছেন মিন্নির মা মিলি আখতার। মিন্নির পরিবার বলছে, নয়নের সঙ্গে কথিত বিয়ের বিষয়ে তারা কিছুই জানতেন না। তবে এক পর্যায়ে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, নয়ন বন্ড জোর করে মিন্নিকে আটকে রেখে একটি কাবিননামায় স্বাক্ষর আদায় করে। "ও একদিন ওর ছোট কাকার কাছে বলছে, আমার কাছে বলার সুযোগ হয় নাই ওর, এই রকম একটা কাহিনি করছে। আমি মনে করছি ও পোলাপান মানুষ, কী করছে, কী কয়, এটা আমরা তেমন একটা গুরুত্ব দেই নাই।" এই কাবিননামাকে তিনি বানোয়াট বলে দাবি করেন। মিন্নির বাবা প্রশ্ন তোলেন, "আমার কথা হইল, নয়ন বন্ডের সাথে যদি আমার মেয়ের বিবাহ হয়, তাহলে যেদিন আমার মেয়ের আনুষ্ঠানিক বিবাহ দিলাম সেদিন নয়ন বন্ড কোথায় ছিল?" নয়ন বন্ডকে চেনেন এমন কয়েকজন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, মিন্নিকে পাওয়ার জন্য নয়ন বন্ড ব্যাকুল ছিল না। যদি তাই হতো, তাহলে মিন্নির বিয়েতে নয়ন বন্ড প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারতো, কিন্তু সেটি সে করেনি। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনার পুলিশ লাইনসে আনা হয়েছিল এবং এখানেই গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে নয়ন বন্ড এবং রিফাত শরীফের মধ্যে বন্ধুত্ব একসময় শত্রুতায় রূপ নেয় বলে জানাচ্ছেন বরগুনাবাসীরা। কারণ, নয়ন বন্ডের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রিফাত শরীফ ভিন্ন আরেকটি গ্রুপে যোগ দিয়েছিল। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মাস খানেক আগে একটি মাদকের মামলায় রিফাত শরীফকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিয়েছিলেন নয়ন বন্ড। এছাড়া, এই হত্যা মামলার আরেক আসামী রিফাত ফরাজীর সাথেও রিফাত শরীফের দ্বন্দ্ব ছিল। কিছুদিন আগে রিফাত ফরাজীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে রিফাত শরীফ - এমন কথা শোনা গেছে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে। বেশ কিছুদিন আগে বরগুনা শহরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের বাড়ির সামনে একটি রেস্তোঁরায় খাবার খেতে যায় রিফাত শরীফ। তখন ওই বাড়ির সামনে মোটর সাইকেল পার্কিং করাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যানের স্ত্রীর সাথে রিফাত শরীফের বচসা হয়। এই বিষয়টি হত্যা মামলার দুই আসামী রিফাত ফরাজী এবং রিশান ফরাজী - এই দুই ভাইকে ক্ষুব্ধ করে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। কারণ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্ত্রী তাদের খালা। রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে রিফাত শরীফ তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে কিনা - এমন প্রশ্নে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্ত্রী খুকি অবশ্য বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেন, রিফাত শরীফকে তিনি কখনো দেখেননি, বাকবিতণ্ডা তো দূরের কথা। মিন্নিকে গ্রেফতারের জন্য রাজনৈতিক চাপ রিফাত শরীফকে যারা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে, তারা বরগুনা শহরে সংঘবদ্ধ অপরাধী হিসেবে পরিচিত। বরগুনা শহরে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন নয়ন বন্ড এবং রিফাত ফরাজী - এমন অভিযোগ রয়েছে। মাদকের মামলায় এরা বেশ কয়েকবার কারাগারেও গিয়েছিলেন। রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে, তাহলো এরা কার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন? কিন্তু এ আলোচনা আড়ালে চলে যেতে থাকে যখন নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ গত ১৩ই জুলাই, অর্থাৎ ঘটনার ১৮ দিন পরে পুত্রবধূ মিন্নির গ্রেফতারের দাবি তোলেন। বরগুনায় কর্মরত একাধিক সাংবাদিক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথ সংবাদ সম্মেলন করাতে দুলাল শরীফকে নিয়ে বরগুনা প্রেসক্লাবে এসেছিলেন। দুলাল শরীফ যখন সংবাদ সম্মেলন করেন, তখন সুনাম দেবনাথ অন্য আরেকটি কক্ষে অবস্থান করেন। তখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, রাজনৈতিক চাপে পড়ে দুলাল শরীফ সংবাদ সম্মেলনটি করেছেন কিনা। যদিও মিঃ শরীফ বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেন, তিনি কারো দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন না। এমপি পুত্রের তৎপরতা রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড এবং মিন্নির গ্রেফতারের পর বরগুনায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সুনাম দেবনাথ - অভিযোগ, তিনি তার পিতার রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে মামলার তদন্তে নানা রকম প্রভাব খাটাচ্ছেন। ম্যাজিস্ট্রেট-এর কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবার পর কারাগারে পাঠানো হয় মিন্নিকে। এমন অভিযোগও রয়েছে যে মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে নিহতের বাবা দুলাল শরীফকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়ে ক্ষান্ত হননি সুনাম দেবনাথ। মিন্নির গ্রেফতারের দাবিতে বরগুনা শহরে তার উদ্যোগে সমাবেশও হয়েছে। সুনাম দেবনাথ নিজেও সেখানে উপস্থিতি ছিলেন। মিঃ দেবনাথের অনুসারীরা ফেসবুক এবং ইউটিউবে এ হত্যাকাণ্ডকে নানাভাবে 'নারীঘটিত বিষয়' হিসেবে প্রমাণের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যা সবাইকে বিস্মিত করেছে, তাহলো মিন্নিকে গ্রেফতারের পরদিন যখন আদালতে উপস্থাপন করা হয়, তখন তার পক্ষে বরগুনায় কোন আইনজীবী পাওয়া যায়নি। মিন্নির পিতা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, মেয়ের পক্ষে আদালতে দাঁড়ানোর জন্য তিনি তিনজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। এদের মধ্যে একজনকে তিনি টাকাও দেন। কিন্তু তাদের সবাই শেষ মুহূর্তে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের পুত্র সুনাম দেবনাথ নিজে বরগুনার একজন আইনজীবী। গত ২৭শে জুন তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, "আমরা বরগুনার আইনজীবীরা রিফাত শরীফ হত্যাকারীদের কোন আইনি সহায়তা দিব না, একজনকেও না। আশাকরি আমার এই প্রস্তাবের সাথে সকল আইনজীবীরা একমত হবেন।" মিঃ দেবনাথের এই ফেসবুক পোস্ট আইনজীবীদের উপর এক ধরণের চাপ তৈরি করে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন আইনজীবী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরগুনার একজন সিনিয়র আইনজীবী বিবিসি বাংলাকে বলেন, মিন্নিকে যেদিন আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছিল সেদিন মিঃ দেবনাথের অনুসারীরা আইনজীবীদের ''অহেতুক ভিড় না করার'' পরামর্শ দেন। "তখনই আমরা বুঝতে পারলাম যে বিষয়টা কোন দিকে যাচ্ছে," বলছিলেন ওই আইনজীবী। তার মতে, আইনজীবীদের অনেকেই নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। সম্প্রতি কুমিল্লায় আদালতের ভেতরে একটি হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন , "যে দেশে বিচারকের সামনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, সেখানে আমার জীবনের নিরাপত্তা কোথায়?" কেন রাজনৈতিক চাপ রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর আলোচনা জোরদার হতে থাকে যে এই অপরাধের মদদদাতা কারা? রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার জন্য যারা প্রত্যক্ষভাবে দায়ী বলে অভিযোগ উঠেছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ ১৬ জন। বরগুনা শহরে মাদকসহ নানা অপরাধ তৎপরতার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এই অপরাধী চক্রের পেছনে রাজনৈতিক মদদ ছিল। এই কলেজের সামনেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এই অপরাধী চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য মাদকের মামলায় কারাগারে গেলেও তাদের বেশি দিন আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। এবং রাজনৈতিক প্রভাবেই তারা জেল থেকে বের হয়ে দ্বিগুণ উদ্যমে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, বরগুনা শহরে এমন অভিযোগ বেশ জোরালো। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে, এমন আশংকা থেকেই মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা। বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক প্রশ্ন তোলেন, "মাদকটা কে চালায়? মাদকের পিছনে কারা জড়িত? এই যে নয়ন কাদের প্রশ্রয়ে এতদূর এসেছে?" বিষয়গুলো নিয়ে সুনাম দেবনাথের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি। সাক্ষাৎকারের জন্য বিবিসির পক্ষ থেকে টেলিফোন করা হলে মিঃ দেবনাথ বলেন, "কয়েকটা মিডিয়া এরই মধ্যে এ ঘটনায় আমাকে ভিলেন বানিয়েছে। সেজন্য এই মুহূর্তে কোন সাক্ষাৎকার দিতে চাচ্ছি না।" তবে গত ১৮ জুলাই বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছিলেন, "আমার বিরোধী পক্ষের কিছু লোক আর স্থানীয় কিছু সাংবাদিক, নির্বাচনের সময় থেকে আমার বিরুদ্ধে রীতিমত উঠেপড়ে লেগেছে। রিফাত আমার বন্ধুর মতো ছিল। তার মৃত্যুতে আমি সবার আগে, সুষ্ঠু বিচার চাই।" "আমার ফেসবুকে আমি সবার বিচার চেয়ে পোস্ট দিয়েছি। আপনারা সবাই দেখেছেন। ষড়যন্ত্রে প্লিজ বিশ্বাস করবেন না," ওইদিন বলেছিলেন তিনি। স্থানীয় রাজনীতি বরগুনার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই বেশ প্রভাবশালী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তবে দলটির নেতারা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের কিছুদিন পর থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তাঁর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এখন মিঃ শম্ভুর বিপক্ষে। কয়েক বছর আগে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা একত্রিত হয়ে মিঃ শম্ভুর বিপক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অভিযোগও দাখিল করেছেন। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে বরগুনার প্রশাসনে তাঁর প্রভাব থাকলেও বরগুনা আওয়ামী লীগে তিনি অনেকের কাছেই অপছন্দের পাত্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বিবিসি বাংলাকে বলেন, দলের ভেতরে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে যাবার পর আধিপত্য ধরে রাখতে অপরাধী চক্র গড়ে তোলেন মিঃ শম্ভুর ছেলে। সেজন্য এই সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কর্মকাণ্ড আড়াল করতেই রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডকে নারীঘটিত বিষয় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিজের নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে খুব কম মানুষই আগ্রহী বরগুনা শহরে। তবে তাদের ধারণা, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডটি রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে বন্দী হয়ে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। বিষয়গুলো নিয়ে সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সাথে বারবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি টেলিফোন ধরেননি। সংসদ ওয়েবসাইটে তাঁর দুটো টেলিফোন নম্বর দেয়া আছে। এর একটি বন্ধ এবং অপরটি তাঁর স্ত্রী রিসিভ করে বলছেন যে তিনি বাড়িতে নেই। অভিযোগের বিস্তারিত জানিয়ে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর দুটো মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি। তবে তিনিও বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন গত ১৮ই জুলাই। তখন তিনি বলেছিলেন, "আমার এতো বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কোন গুন্ডা বাহিনী নিয়ে চলিনি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের সঙ্গে আমার বা আমার দলের কোন সম্পৃক্ততা নেই। সবার মতো আমিও চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। এক্ষেত্রে আমি সব ধরণের সহযোগিতা দিতে রাজি আছি।" অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেছেন ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। আর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির দাবি করেছেন, এই মামলার তদন্তে কোন রাজনৈতিক চাপ নেই। | বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বরগুনা শহরে দিনে-দুপুরে বহু মানুষের সামনে রিফাত শরীফ নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা এখন দেশজুড়ে আলোচনার বিষয়। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | সাগরদাঁড়িতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির পাশে কপোতাক্ষের ঘাট সেই কবিতা পড়ে আবেগের বশে যদি কেউ আজ কপোতাক্ষ নদ দেখতে যান, তাহলে হতাশ হয়েই তাকে ফিরে আসতে হবে। কপোতাক্ষের কোথাও শুকনো খটখটে, আবার কোথাও সরু খালের মতো জমে আছে পানি আর তার ওপর ভর করেছে রাজ্যের কচুরিপানা। * দেখুন: ইন্টার্যাকটিভ ম্যাপে বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ নদী "এই নদীর পানি আয়নার মতো চকচক করত। গভীরতা ছিল কোন জায়গায় ১৫ হাত, কোন জায়গায় ২০ হাত। একটা পাতা পড়লে স্রোতে টাইনে নিয়ে যাইত। জোয়ার-ভাটা চলত"। বলেন ষাটোর্ধ্ব জাবেদ আলী গাজী। ধীরে ধীরে কপোতাক্ষ নদের এই পরিবর্তন তিনি নিজ চোখে দেখেছেন। "কি দেখলাম আর কি হইলো। আর মাছ তো খাতি পারলাম না। ট্যাংরা মাছ, বোইল মাছ, আইড় মাছ, কতরকমের মাছ ছিল এই নদীতে।" * ক্লিক করুন: আমার নদী, বিবিসি বাংলার ফেসুবক পাতা জাবেদ আলী গাজীর ভাষ্যে ২০ বছর আগেও এই নদীতে স্রোত ছিল, ছিল জোয়ার-ভাটার খেলা। কিন্তু কপোতাক্ষের দিকে তাকালে এখন আর সেকথা বিশ্বাস করাই কঠিন। কপোতাক্ষের পাশেই বাড়ি শফিকুল ইসলামের। সত্তরোর্ধ্ব প্রবীণ মি. ইসলাম কাঠের ব্যবসা করেন। নিজ বাড়ির সামনে কাজ করতে করতে স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, একসময় তার বাড়ির সামনেই ছিল স্টিমারঘাট। সেই ঘাটে কলকাতা থেকে পণ্যবাহী জাহাজ এসে ভিড়তো, বিকেলে হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে আসতেন নদের পাড়ে। কিন্তু যে নদ নিয়ে মানুষের এত স্মৃতি, এর সৌন্দর্য্যের এত বর্ণনা পলি জমে সেই নদী এভাবে ভরাট হয়ে গেল কিভাবে? কপোতাক্ষ নদ থেকে একসময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত, কিন্তু এখন দিনভর ঘুরেও ছোটমাছের বাইরে কিছু পাওয়া কঠিন কপোতাক্ষ নদ নিয়ে গত প্রায় ১৩ বছর যাবত আন্দোলন করছে যশোরের কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন। সংগঠনটির আহ্বায়ক অনিল কুমার বিশ্বাস বলছেন, কপোতাক্ষ নদকে বাঁচানোর কথা যখন আসে, তখন অনেকেই এটি ভরাট হওয়ার মূল কারণটি এড়িয়ে যান। "নদীর আপস্ট্রিম (উজান) সংযোগ বন্ধ হয়ে আছে এক'শ বছর ধরে। উৎসমুখ যদি বন্ধ থাকে তাহলে সেটি আর নদী বলা যায় না, এটি বদ্ধ জলাশয়। যেহেতু আপস্ট্রিম সংযোগ নেই, তাই সাগর থেকে ভাসমান পলি এসে ধীরে ধীরে নদীটিকে ভরাট করে ফেলেছে। " মি. বিশ্বাস বলছেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে উজানের সাথে সংযোগ বন্ধ করার মাধ্যমে কপোতাক্ষকে অনেক আগেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এরপর বিভিন্ন সময়ে বাঁধ দিয়ে নদী কাটার চেষ্টা, পোলডার, বাঁধ, বেড়িবাঁধ তৈরি করে কপোতাক্ষ ভরাটের এই প্রক্রিয়া আরো দ্রুততর হয়েছে। সঠিক পরিকল্পনার যে অভাব ছিল সেটি স্বীকার করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডও। বর্তমানে কপোতাক্ষের প্রায় ৮৪ কি. মি. দৈর্ঘ্যে খননকাজ চলছে এবং একইসাথে টাইডাল রিভার ম্যানেজম্যান্ট বা টিআরএম পদ্ধতিতে পলি সরানোর কাজও চলছে। যশোরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত হোসেন বলছেন, উজানে মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে ভৈরবের সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বারবার ভরাট হচ্ছে কপোতাক্ষ। কপোতাক্ষ নদের ৮৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যজুড়ে পর্যায়ক্রমে খননকাজ চলছে "মাথাভাঙ্গা নদী দর্শনা থেকে ভারতে চলে গেছে। সেখানে যে ছোট একটি খাল ছিল, সেটিও ভারত দিয়ে ঘুরে আসায় তারা সেটি বন্ধ করে দিয়েছে। বন্ধ করে দেয়ায় এখন বৃষ্টির পানি ছাড়া ভৈরব বা কপোতাক্ষে পানির আর কোন উপায় নেই। এই নদীতে যখন স্রোত ছিল, তখন বঙ্গোপসাগর থেকে ৮-১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পলি আসত। কিন্তু সেই পলি এখন ১০০ কিলোমিটার উপরে চলে আসছে।" কপোতাক্ষ ভরাটের ফলে বছরের পর বছর কপোতাক্ষের পাড়ে যশোরের কেশবপুর, মণিরামপুর এবং সাতক্ষীরা জেলার কিছু এলাকায় প্রতিবছর পুরো বর্ষাজুড়ে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। বর্ষার সময়ে ভিটেমাটি ছেড়ে অনেকেই আশ্রয় নেন ভিন্ন কোন স্থানে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। খননকাজ এবং টিআরএম পদ্ধতি চালু রাখার কথা বললেও এর মাধ্যমে যে কপোতাক্ষকে আগের রূপে ফেরানো যাবে না, সেটি স্বীকার করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডও। অনিল বিশ্বাস বলছেন, এজন্যে উজানের সাথে কপোতাক্ষের সংযোগ তৈরি করা প্রয়োজন। "খনন করলে কিছু খনন হবে, কয়েক বছর থাকবে তারপর আবার পলি এসে ভরাট হয়ে যাবে। সেজন্যে আমরা বলছি উজানে নদী সংযোগটি দিলে পদ্মার পানিটি আমরা পাবো এবং পদ্মার পানিটি পেলে নদী স্বয়ংক্রিয়ভাবেই খনন হয়ে যাবে।" পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে ভৈরব নদীর একটি সংযোগ তৈরি করে উজানের পানি ভৈরব এবং কপোতাক্ষে নিয়ে আসার একটি প্রকল্প সরকারী দপ্তরে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও দীর্ঘদিন যাবত উজান থেকে ভৈরব এবং তার শাখা নদ কপোতাক্ষে পানি সরবরাহের সেই প্রস্তাবটি ফাইলবন্দী হয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। কপোতাক্ষকে আগের রূপে কতটা ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব সেটি হয়তো বলা যাবে না, কিন্ত এই নদকে যদি আবার পুনরুজ্জীবিত করতে হয়, তবে এটিই হয়তো একমাত্র উপায়। | ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে/ সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।’ – বিদেশের মাটিতে বসে নিজের শৈশবের কপোতাক্ষ নদের কথা মনে করে কালজয়ী কবিতা লিখেছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কপোতের চোখের মত স্বচ্ছ পানি আর খরস্রোতা সেই নদ স্মৃতিকাতর করে তুলেছিল কবিকে। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | নরেন্দ্র মোদী: ভারতে কোভিডের সুনামির পর তার ভাবমূর্তি কি অক্ষুন্ন আছে? একটি অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্র এই একই খবর পুনঃপ্রকাশ করেছে সঙ্গে এক কঠোর সারমর্ম জুড়ে দিয়ে: "দম্ভ, উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা মিলে ভারতে তৈরি হয়েছে এমন এক বিরাট সংকট, যখন দেশটির নাগরিকদের সত্যি সত্যি দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম, আর তার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী জনতার ভিড়ে আত্মপ্রসাদে মগ্ন।" এসব খবর আর শিরোনাম অবশ্য ভারতে তিরস্কৃত হয়েছে। কিন্তু এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সযত্ন লালিত ভাবমূর্তিতে এটি বেশ বাজে আঘাত হেনেছে। ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনাম আর সোশ্যাল মিডিয়ার টাইমলাইন দখল করে আছে: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা বিভাগের বেড কিংবা চিকিৎসার জন্য অপেক্ষায় থাকতে থাকতে কীভাবে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে, শ্বাস নেয়ার জন্য সংগ্রাম করছে; পরিবারগুলো কীভাবে মরিয়া হয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট- সবকিছুর জন্য হন্যে হয়ে ছুটছে; কীভাবে আরো বেশি সংখ্যায় আসা মৃতদেহ দাহ করার জন্য গণ দাহের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে, এমনকি কার পার্ককেও চিতায় পরিণত করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে এসবের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে মিস্টার মোদীকেই দোষারোপ করা হচ্ছে- যিনি কিনা প্রায়শই নিজেকে একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তুলে ধরেন, কোন খুঁটিনাটি যার চোখ এড়ায় না। কিন্তু ভারতে প্রতিদিনই সংক্রমণ সংখ্যা যখন নতুন রেকর্ড গড়ছে, তখন মিস্টার মোদীর এই ভাবমূর্তি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। আরও পড়ুন: ভারত কোভিড: মোদীর আসন বারাণসী বিপর্যস্ত, ক্ষোভে ফুটছে মানুষ মোদীর ভাষায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ 'ভারতীয়দের দুঃখ সইবার পরীক্ষা' ভারতে চরম এই দুর্দশা তৈরি হলো কীভাবে 'মুখোশে ফাটল ধরেছে' রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মিলন বৈষ্ণব বলেন, "দক্ষতাকে যদি তার প্রধান গুণ বলে দাবি করা হয়, অনেক মানুষই কিন্তু এখন এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। সমস্যা মোকাবেলায় সরকার যে কেবল অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বা কিছুই করেনি শুধু তা নয়, একই সঙ্গে তারা সংকটকে আরও গুরুতর দিকে নিয়ে যেতে ভূমিকা রেখেছে।" মিলন বৈষ্ণব বলছেন, মিস্টার মোদীই একমাত্র নেতা নন যিনি কোভিড সংকট মোকাবেলা করতে গিয়ে সব তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর পতনটা ঘটেছে অনেক সশব্দে, অনেক সুস্পষ্টভাবে। কারণ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেয়ার বোলসোনারোর মতো তিনি কোভিডকে অস্বীকার করেন না। কিন্তু তারপরও মিস্টার মোদী এই সংকটের অনেক আগাম সতর্কতা অস্বীকার করে এটি প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছেন। মিস্টার মোদী গঙ্গা নদীর তীরে এক পবিত্র হিন্দু ধর্মীয় উৎসব করতে দিয়েছেন, যেখানে লাখ লাখ মানুষ কয়েক সপ্তাহ ধরে সমবেত হয়েছে পুণ্য স্নানের জন্য। তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে এক মাস ধরে নির্বাচন করতে জেদ ধরেছিলেন। তারপর সেই নির্বাচনের সময় মাস্ক না পরেই বিরাট বিরাট সব জনসভায় যোগ দিয়েছেন, সেসব জনসভায় বিপুল মানুষের জনসমাগম দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। "বিশ্বের যেসব জায়গায় সম্প্রতি লকডাউন জারি করা হয়েছে, সেসব জায়গার মানুষ ভারতে এরকম অসাবধানতা আর অবজ্ঞার প্রদর্শন দেখে হতবাক হয়েছেন", বলছেন দ্য ইকনোমিস্টের ভারত সংবাদদাতা অ্যালেক্স ট্র্যাভেলি। দেশে-বিদেশে নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তোলার জন্য মিস্টার মোদি বেশ সচেতন চেষ্টা চালান। এসব দৃশ্য অবশ্য মিস্টার মোদীর ব্র্যান্ডটিকেই মনে করিয়ে দিয়েছে। তিনি নিজেকে দেখাতে চান হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশের একজন শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় নেতা হিসেবে। গত জানুয়ারিতে তিনি এমনকি ভারতকে একটি ব্যতিক্রমী দেশ বলেও বিশ্বের সামনে বড়াই করেছিলেন। "তার জাতীয়তাবাদী ঝোঁকের সঙ্গে একধরণের সুদক্ষ ব্যবস্থাপনার একটি ছবি সবসময় বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সামনে তুলে ধরা হতো। কিন্তু কোভিড সংকটে এই সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা একেবারেই অনুপস্থিত ছিল," বলছেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ক্লারি। একজন জনতোষণকারী রাজনীতিক এবং অতন্দ্র প্রশাসক হিসেবে মিস্টার মোদী নিজের যে খ্যাতি তৈরি করেছিলেন, সেটি ক্ষয় হতে শুরু করে ২০১৭ সালে। সেবছর তিনি ভারতীয় রূপির নোট বাতিল করে বিপর্যয় ডেকে আনেন, কারণ ভারতে কোটি কোটি মানুষ নগদ অর্থ দিয়েই লেন-দেন করে। এরপর গত বছর তিনি কোভিডের বিস্তার ঠেকাতে রাতারাতি লকডাউন জারি করেন। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ কাজ হারায়, অনেকের জীবন যায়। ভারতের অর্থনীতি এখনো এই লকডাউনের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। মিস্টার মোদীর যুক্তি ছিল, তিনি বড় কোন কল্যাণের জন্য এরকম পদক্ষেপ নিয়েছেন, অর্থনীতি থেকে কালো টাকা বের করে দেয়া কিংবা কোভিডকে পরাস্ত করা। "কিন্তু তার সর্বশেষ ভুল পদক্ষেপগুলোকে তিনি এই যুক্তি দিয়ে সহজে রক্ষা পাবেন না," বলছেন ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের রবি আগরওয়াল। "আপনি জিডিপি'র মতো সংখ্যার একটা ব্যাখ্যা দিতে পারেন, কিন্তু একজনের ভাই কেন মারা গেল সেটা তো ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। ভারতীয়রা সবসময় বিশ্বাস করেছিল মোদী যদিও ভুল করেন, তারপরও তিনি তাদের জন্যই লড়াই করেন, তিনি তাদের ওপর আস্থা রাখেন।" রবি আগরওয়াল বলেন, এবার মানুষ মিস্টার মোদীর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। "একটা ফাটল তৈরি হয়েছে, মিস্টার মোদীর ভাবমূর্তিতে এই ফাটল বেশ দৃশ্যমান।" যেভাবে মোদী ব্রান্ড তৈরি হলো এবং যেভাবে এর পতন "মোদী মিনস বিজনেস,"- ২০১২ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাদের একটি সংখ্যার প্রচ্ছদ করেছিল এভাবে। ২০০২ সালে ভারতের গুজরাট রাজ্যে এক দাঙ্গায় নিহত হন প্রায় এক হাজার মানুষ, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলিম। একটি ট্রেনে আগুনে ৬০ জন হিন্দু মারা যাওয়ার পর এই দাঙ্গা শুরু হয়। নরেন্দ্র মোদী তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং এই দাঙ্গা তিনি লাগাতে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং এ থেকে তিনি গায়ে কোন আঁচড় ছাড়াই বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। ২০১২ সাল নাগাদ গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী তার সমর্থকদের কাছে সুশাসন এবং কার্যকর প্রশাসকের এক উৎকৃষ্ট এবং আদর্শ প্রতীক হয়ে উঠেন। কোন কোন গণমাধ্যমে তাকে একজন 'নিঃসঙ্গ স্বৈরাচারী' বলেও বর্ণনা করা হচ্ছিল। তবে একই সঙ্গে প্রশংসা করা হচ্ছিল এই বলে যে, তার শাসনে গুজরাটের অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। ১৩ বছর গুজরাটের নেতৃত্ব দেয়ার পর তিনি যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য লড়লেন, তখন এটাকে অনেকে দেখলেন ভারতের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার এক সুযোগ হিসেবে। তার মতো একজন 'বিভাজন সৃষ্টিকারী' ব্যক্তিকে বেছে নিয়ে বিজেপি হয়তো ঝুঁকি নিচ্ছিল, কিন্তু একজন 'সোজা-সাপ্টা প্রশাসক' হিসেবে মানুষের কাছে তার একটা ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল। মিস্টার মোদীর জীবনী-লেখক এবং সাংবাদিক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, "যেভাবে তিনি গুজরাট পরিচালনা করেছিলেন, সেটা সহজে অনেকের মন জয় করেছিল।" গুজরাটে নতুন নতুন সব রাস্তা, বিদ্যুতের লাইন, আমলাতান্ত্রিক লাল-ফিতার ঝামেলা কমিয়ে আনা এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো- এসব দেখে মুগ্ধ হন মধ্যবিত্ত এবং ধনী ভোটাররা। কিন্তু মিস্টার মুখোপাধ্যায় বলেন, একটি সমৃদ্ধ এবং কম জনসংখ্যার রাজ্যে এগুলো অর্জন করা সেরকম বড় কোন ব্যাপার নয়। আর গুজরাটের সামাজিক খাতে কিন্তু সেরকম বড় কোন অগ্রগতি হয়নি। "মিস্টার মোদীর দ্যুতি দেখে সবাই মোহিত হয়ে গেলেন। আমি নিজেও এই ভুল করেছি। তিনি একবার বলেছিলেন, আমাদের এখানে কোন লাল ফিতা নেই, আছে লাল কার্পেট। এখন যে ত্রাণসামগ্রী এসে পৌঁছাচ্ছে, তার জন্য লাল কার্পেট কোথায় বিছানো আছে?" (কিছু কিছু খবরে বলা হচ্ছে, এসব ত্রাণসামগ্রী এক শুল্ক বিভাগে আটকে পড়েছে)। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মিস্টার মোদীর বর্মতে যে আসলে অনেক ছিদ্র, সেটা এই সংকটে প্রকাশ পেয়ে গেছে। তারা বলছেন, যে ধরণের এক কেন্দ্রিক স্টাইলে তিনি দেশ চালান, সেটা হয়তো গত বছর সবাইকে আশ্বস্ত করেছে, কিন্তু এবার কিন্তু সেটা বেশ ফাঁপা বলে মনে হচ্ছে। এখন তিনি ব্যর্থতায় দায় চাপাচ্ছেন রাজ্যগুলোর ওপর। যেভাবে তিনি উদারহস্তে বিভিন্ন দেশে টিকা দান করার ঘোষণা দিচ্ছিলেন, সেটি এখন নিজেকে মহৎ বানানোর একটা লোকদেখানো অসাবধানী কৌশল বলেই মনে হচ্ছে। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী দেশ ভারতকে এখন সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে হচ্ছে। আর তিনি যেরকম সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সবকিছু চালান, যদিও অনেক ভোটার পছন্দ করে, সেটি সংকট সমাধানের জন্য অন্য রাজনৈতিক দলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কুম্ভ মেলায় লাখ লাখ মানুষকে জড়ো হওয়ার সুযোগ দিয়ে সমালোচিত হন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিস্টার আগরওয়াল বলেন, "তিনি সবকিছু্তেই তার নাম এবং তার ছাপ রাখতে চান। কাজেই যখন যখন কোন ভুল হয়, সেটার দায়ও তাকে নিতে হয়। গাছেরটাও খাবেন, তলারটাও কুড়াবেন, সেটা তো হয় না।" মিস্টার মোদী বিদেশেও তার এক বিরাট ব্রান্ড গড়ে তুলেছিলেন। একটি সংবাদপত্র লিখেছিল, "তার সেরাটা তিনি দেখাতে পারেন ভারতের বাইরে।" নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন্সে তাকে দেখে জনতা বিপুল হর্ষ-ধ্বনি দেয়। টেক্সাসে 'হাউডি, মোদী!' বলে যে সমাবেশে তিনি যোগ দেন, সেখানে এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও যেন তার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছিলেন। মিস্টার আগরওয়াল বলেন, "নিজের ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য তিনি যেরকম মরিয়া চেষ্টা চালান, তাকে সেজন্যে "ভারতের সবচেয়ে লোকদেখানো নেতা" নেতা বলেও বর্ণনা করা হয়। তার পেশিশক্তি-সর্বস্ব জাতীয়তাবাদ দেশে-বিদেশে ভারতীয়দের জন্য যেন এক ধরণের মলম হিসেবে কাজ করেছে। তিনি ভারতকে একটি পরাশক্তিতে পরিণত করার অঙ্গীকার করেছেন। মিস্টার আগরওয়াল বলছেন, কিন্তু এখন ভারতীয়দের মনে জ্বালা ধরে যাচ্ছে যখন তারা দেখছে থাইল্যাণ্ড, ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশের মতো দেশও কোভিডের বিরুদ্ধে অনেক ভালোভাবে লড়াই করছে। "বিদেশে থাকা ভারতীয়রা এখন খুবই বিব্রত। বন্ধুদের কাছে যে দেশটিকে তারা এক উদীয়মান শক্তি বলে তুলে ধরেছিলেন, সেই দেশটিকে এখন যেভাবে দেখানো হচ্ছে সেটা নিয়ে তারা বিব্রত।" মোদী কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন? মিস্টার বৈষ্ণব অবশ্য বলছেন, নরেন্দ্র মোদী এটা বার বার প্রমাণ করেছেন যে তিনি খুবই ব্যতিক্রমী এক রাজনীতিক, যিনি সব প্রতিকূলতার মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। "অতীতে অনেক অবিশ্বাস্য খারাপ অবস্থা থেকে তিনি আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন, কাজেই এটা আবার যে ঘটবে না, সেটা আমি বলতে চাই না," বলছেন মিস্টার ট্রাভেলি। সরকার এরই মধ্যে তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের কাজে লেগে গেছে। যেসব গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবর যাচ্ছে, তাদের ওপর সরকার ক্ষুব্ধ। বিরোধী নেতাদের সঙ্গে সরকার বিবাদে জড়িয়েছে এবং কোভিড মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থ বলে যারা টুইটারে সমালোচনা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সরকার দাবি করছে, ভারতকে হেয় করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। যেসব টুইট সরকার পছন্দ করছে না, সেগুলো সরিয়ে নিতে বলেছে টুইটারকে। এরপর সরকার সমর্থকরা এই টুইটারেই মিস্টার মোদীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে এবং তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করা শুরু করেছেন। কোভিড সংকটে বাইরের দুনিয়া ভারতের যে ছবি দেখেছে, তা নিয়ে বিব্রত মিস্টার মোদীর প্রবাসী ভারতীয় সমর্থকরা। কিন্তু এত কাণ্ড যখন ঘটছে, তখন মিস্টার মোদী যে সবকিছুতে অনুপস্থিত, সেটা কিন্তু বেশ ভালোভাবেই ধরা পড়ছে। গত ২০ এপ্রিল তাকে কেবল একবার ভাষণ দিতে দেখা গেছে। "মহামারির শুরুতে মিস্টার মোদী জানতেন, ভারতকে এবং নিজেকে তিনি কীভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চান। তিনি নিজেকে একজন জেনারেল হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, যিনি তার জনগণকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু এখন সেরকম কোন ভূমিকা তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। কোন ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া কিংবা সাহায্যের আবেদন জানানোর কোন আগ্রহ তার নেই," বলছেন মিস্টার ট্রাভেলি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মিস্টার মোদী হাতে গোনা কয়েকটি বার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি কখনো কোন সংবাদ সম্মেলন করেননি, এমনকি কোভিডের সময়ও নয়। মিস্টার মুখোপাধ্যায় বলেন, "তিনি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চান না।" কিন্তু ভারতে সবার মনে এখন এই প্রশ্ন ছাড়া আর কিছু নেই। ভারতের দরিদ্র মানুষ, শোকে স্তব্ধ মধ্যবিত্ত, এমনকি ধনী লোকেরা, যাদের কেউই ভারতের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় যে বিরাট ফাঁক রয়ে গেছে, সেটা থেকে পালাতে পারেননি, তারা কেউই বুঝতে পারছেন না, কীভাবে প্রধানমন্ত্রী এরকমটা ঘটতে দিতে পারলেন। | "ভারতকে লকডাউন থেকে বের করে মোদী এক কোভিড কেয়ামতের দিকে নিয়ে গেলেন,"- ব্রিটেনের সানডে টাইমসের এক সাম্প্রতিক শিরোনাম এটি। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | অনেক বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা কোভিড পরবর্তী সময়ে শ্রমিকদের জন্য বাধা হবে অটোমেশন। তবে অনেকের মতে এতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আর সেকারণে কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেবার কথা বলছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা। বিবিসি ক্লিকে আফরোজা নীলার প্রতিবেদন। ভিডিওটি পাওয়া যাবে বিবিসি বাংলার ইউটিউব চ্যানেলেও। | করোনাভাইরাস মহামারিতে বিভিন্ন শিল্পেই অটোমেশন বা রোবটের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | খালেদা জিয়া তাদের এই উদ্বেগের কারণ সম্পর্কে ফখরুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন "গত দশদিন ধরে আমরা দলের নেতা কর্মীরা কিংবা তার পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে পারছিনা।" তিনি বলেন, ১৮ই তারিখ দলের পক্ষ থেকে কয়েকজন নেতা এবং শুক্রবার নেত্রীর পরিবারের পক্ষ থকে দেখা করতে গেলেও কারা কর্তৃপক্ষ সাক্ষাত করতে দেয়নি। দেখা সাক্ষাত করতে না দেয়ার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজামান খান বিবিসিকে বলেন, সাক্ষাতের ক্ষেত্রে তার (খালেদা জিয়ার) ইছাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। "তিনি আমাদের বলেছেন তার কাছে জিজ্ঞেস না করে কাউকে অ্যালাউ না করতে। সেটাও মানা হচ্ছে।" দলীয় নেতা-কর্মীরা সাক্ষাৎ পাচ্ছেননা - এই অভিযোগের প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "জেল-কোড অনুসারে দলীয় কর্মীদের দেখা করার নিয়ম নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খান বেসরকারি হাসপাতালে খালেদার চিকিৎসা বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে তাদের কারারুদ্ধ নেত্রীকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছেনা। তাকে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার দাবি করেছেন তারা। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিবিসি বাংলাকে বলেন - জেল-কোড অনুসারে চিকিৎসা চলছে। "খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মতামতও নেয়া হচ্ছে। তারা (বিএনপি নেতারা) যেটা বলছে সেটি সত্যি নয়"। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল আমাদের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল, সব ধরনের সুবিধা এখানে রয়েছে। তিনি (খালেদা) জানিয়েছিলেন তার ক্রনিক কিছু অসুবিধা আছে। তারপরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা যদি মনে করেন তাকে অন্য কোনও হাসপাতালে নিয়ে বিশেষ চিকিৎসা দরকার আছে তাহলে তিনি সেটা হবে।।" দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে মিসেস জিয়া সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে মিসেস জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা জন্য যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল তারা প্রথম কারাগারে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন চলতি মাসের শুরুতে। এরপর মিসেস জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববদ্যিালয়ে নেয়া হয়। সম্প্রতি চিকিৎসকদের যে দলটি কারাগারের মিসেস জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন, তাদের একজন অধ্যাপক ড মালিহা রশিদ। তিনি বিবিসিকে জানান, "এ মুহূর্তে বেশিকিছু বলা যাচ্ছে না, তবে উনি অসুস্থ। গাঁটে ব্যথা এবং আরও অনেক সমস্যা আগে থেকে তো ছিলই। উনি হাঁটাচলা করতে পারেননা। কিন্তু গাইনির কোনও সমস্যা নেই তার।" তবে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে কারাগার কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে কোনও বক্তব্য দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম। | শনিবার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "বিএনপি নেত্রীর অসুস্থতা সম্পর্কে সরকার ধূম্রজাল তৈরি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়, বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে এবং আসন্ন নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।" |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | কওমি মাদ্রাসার একটি ক্লাস সম্প্রতি কওমি মাদ্রাসার নিজেদের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামি'আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু দেশের বেশকিছু ইসলামপন্থী দল বা সংগঠন কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে থাকে। সেই প্রেক্ষাপটে মাদ্রাসায় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের গুরুত্ব কতটা এবং তা কার্যকর করা সম্ভব কি-না -এসব প্রশ্নে নানা আলোচনা চলছে। মাদ্রাসা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ১৪ হাজারের মতো কওমি মাদ্রাসায় ১৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার একটি মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক ফাতেহা ফারজানা। তার মাদ্রাসায় প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত সাতশ জনের মতো ছাত্রী রয়েছে। কওমি মাদ্রাসায় ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে তার অবস্থান। ফাতেহা ফারজানা বলেছেন, শিক্ষকদের কেউ কোন দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলে মাদ্রাসায় তার প্রভাব যেন না পড়ে, সেটা তিনি চান। "ইসলাম রাজনীতি সমর্থন করে। তবে আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকা যারা মাদ্রাসায় আছি, তারা এই ছাত্র বা ছাত্রীরা রাজনীতি করবে, সেটা অপছ্ন্দ করি। শিক্ষক যারা আছে, তারা ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে রাজনীতি করবে। মাদ্রাসায় ছাত্র শিক্ষকের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হলে তা কার্যকর করা উচিৎ" বলে মন্তব্য করেন মাদ্রাসা শিক্ষক ফাতেহা ফারজানা। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরও অনেকে একই ধরনের মত প্রকাশ করেন। ঢাকার মোহাম্মদপুর এবং যাত্রাবাড়ি এলাকার মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়। তাদের একজন দাওরায়ে হাদিসের ছাত্র সাইফুল হক বলেছেন, তিনি মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির বিরুদ্ধে। তবে তিনি মনে করেন, কখনও ইসলাম ধর্মকে অবমাননার অভিযোগ উঠলে তার প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে বাধা থাকা উচিৎ নয়। "যারা আদর্শ ওস্তাদ (শিক্ষক), তারা মাদ্রাসার বাইরে গিয়ে রাজনীতি করতে পারে। কিন্তু ছাত্র যারা আছে, তাদের রাজনীতি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকা উচিৎ মনে করি আমরা।" মাদ্রাসা ছাত্র সাইফুল হক আরও বলেছেন, "যখন নাস্তিক মুরতাদরা ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করে, ঐ প্রতিবাদে আমরা যাই। আর কোনো মাদ্রাসায় বাধ্যবাধকতা নেই যে ছাত্রদের রাজনীতি করতে হবে।" কওমি মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কেন? কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতির বিষয় নতুন করে আলোচনায় এসেছে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে। গত মার্চের শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে করে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা হয় এবং কমপক্ষে ১৭জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। একটি মহিলা মাদ্রাসার ক্লাসে শিক্ষার্থী। বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার ঘটনা নিয়ে একশো'র বেশি মামলায় সরকার হেফাজতে ইসলামের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে। কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠনটির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগও আনা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এমন পরিস্থিতিতে কোনঠাসা এবং বিপর্যস্ত হেফাজতের নেতৃত্ব সরকারের সাথে সমঝোতার চেষ্টায় নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে দেখাতে চাইছে। এর পক্ষে তারা তথ্য প্রমাণও তুলে ধরার চেষ্টা করছে। হেফাজতের নেতাদেরই অনেকে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বোর্ডে রয়েছেন। এখন সেই বোর্ডও বৈঠক করে কওমি মাদ্রাসায় ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। বোর্ডের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম জেহাদী হেফাজতে ইসলামেরও মহাসচিব। তিনি বলেছেন, কওমি মাদ্রাসায় আগে থেকেই রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, যেহেতু বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেজন্য তাদের বোর্ড নতুন করে মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। "কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি ফরম এর মধ্যে একটা শপথনামা বা অঙ্গীকারনামা আছে, এই অঙ্গীকারনামায় পরিস্কার লেখা আছে যে, কোন রাজনৈতিক সংগঠন বা দলীয় কোনো রাজনীতি মাদ্রাসার মধ্যে করতে পারবে না ছাত্র জীবনে।" "এটাতো কলেজ ইউনিভাসিটির মতো না। কওমি মাদ্রাসা বলতে কওমের মাদ্রাসা বা পাবলিকের মাদ্রাসা। সে হিসাবে সবাই দান করে। ফলে এখানে দলীয় রাজনীতি করার কোন অবকাশ নাই। সাম্প্রতিক ঘটনা প্রেক্ষিতে এটাকে কার্যকর করা জন্য এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষক ছাত্ররা কোনো রাজনীতি করতে পারবে না" বলেন নুরুল ইসলাম জেহাদী। ইসলামপন্থী অনেক দল মাদ্রাসাভিত্তিক হয়ে উঠছে? কিন্তু অভিযোগ রয়েছে যে, ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল কওমি মাদ্রাসা নির্ভর হয়ে উঠেছে। শিক্ষকদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করছেন এবং ছাত্রদের মিছিল সমাবেশে নিয়ে আসছেন- এমন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম জেহাদী বলেছেন, "দু'একজন শিক্ষক হয়তো রাজনীতি করে। তারা চিহ্নিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়। সব শিক্ষক করে না।" অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। ২০১৩ সালে ঢাকায় শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবরোধ বা অবস্থান কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মাদ্রাসার শিক্ষক ছাত্রদের অংশগ্রহণ বেশি দেখা গেছে। ২০১৩ সালে ঢাকায় শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে মাদ্রাসার শিক্ষক ছাত্রদের অংশগ্রহণ বেশি দেখা গেছে। সে ব্যাপারে জানতে চাইলে মি. জেহাদী বলেছেন, "এটাতো ভিন্ন বিষয়। হেফাজতে ইসলাম কোন রাজনৈতিক সংগঠন না। এটা ঈমান আকিদার ব্যাপার। এটার জন্য সব দল মত এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লোক জমায়েত হতে পারে। এটাকে রাজনীতির সাথে মেলানো যাবে না।" মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা রাজনীতিতে জড়ান যেভাবে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের অনেকে দাবি করেন যে, তাদের মাদ্রাসাগুলোতে আগে থেকেই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কওমি মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্র সংগঠনের কোনো শাখা বা ইউনিট নেই। তবে ইসলামপন্থী অনেক দলের কর্মসূচিতে মাদ্রাসার ছাত্রদের সক্রিয় অংশ গ্রহণের অভিযোগ অনেক পুরোনো। ইসলাম বিষয়ক লেখক শরীফ মোহাম্মদ বলেছেন, মাদ্রাসার ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার বিষয়টি আসে তাদের শিক্ষক বা মাদ্রাসার প্রশাসনের ইচ্ছায়। "কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক যে দলগুলো আছে, মাদ্রাসার হুজুর বা শিক্ষক, ছাত্র যারা এর সাথে সম্পৃক্ত হন, সেখানে কিন্তু উন্মুক্ত রাজনীতির চর্চা নেই।" শরীফ মোহাম্মদ আরও বলেছেন, "ধরুন আমি যে মাদ্রাসার ছাত্র, ঐ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল যদি খেলাফত মজলিস করেন, তাহলে আমাদের সব ছাত্রদের খেলাফত মজলিস করতে হবে। আমি ইসলামী আন্দোলন বা জমিয়তে উলামায়ে করতে পারবো না।" "আবার যদি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতৃত্বে মাদ্রাসাটা চলে, তাদের প্রিন্সিপাল বা বড় বড় শিক্ষক ঐ দল করে, তাহলে সব ছাত্রদের ঐ দলই করতে হবে। অর্থ্যাৎ মাদ্রাসার ছেলেদের রাজনীতিটা অনেকটা তাদের প্রশাসন এবং শিক্ষকদের ইচ্ছায় প্রবাহিত হয়। এটা মুক্ত রাজনীতির চর্চা নয়" বলেন শরীফ মোহাম্মদ। তিনি মনে করেন, "আলেমদের নেতৃত্বে ইসলামী রাজনীতি যা হয়, তাতে ছাত্রদের পাশাপাশি পাবলিক অংশগ্রহণ দরকার। তা না হলে এটা নৈতিকভাবে অথবা রাজনৈতিকভাবে অথবা মিডিয়াগতভাবে প্রশ্ন উঠবে যে আপনারা ছাত্রদের নিয়ে রাজনীতি করেন ঠিক আছে। কিন্তু ছাত্ররাতো আপনাদের ক্লাস বা শ্রেণিকক্ষের মতো ফলো করে।" তবে শরীফ মোহাম্মদ কওমি মাদ্রাসায় ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে নন। তিনি চান মুক্ত রাজনৈতিক চর্চা। তিনি বলেন, মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে সেটা সমাজের একটা অংশের প্রতি বৈষম্য করা হবে। শরীফ মোহাম্মদের মতে, বড় ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামীর মাদ্রাসার বাইরে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে। ইসলামী আন্দোলনসহ আরও দু'একটি দলের মাদ্রাসা ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে সংগঠন আছে। কিন্তু ইসলামপন্থী অন্যদলগুলো মাদ্রাসাকেন্দ্রিক। ইসলামী আন্দোলনের আমীর সৈয়দ রেজাউল করীম বলেছেন, মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকরা ইসলামী রাজনীতি করলে তিনি তাতে দোষ দেখেন না। তবে সেই রাজনীতিকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করাকে তিনি সঠিক মনে করেন না। "ইসলামী রাজনীতি বা ইসলামী দল যারা করে, তারা যে মাদ্রাসার ওস্তাদ (শিক্ষক) এবং ছাত্রদের ওপর নির্ভর করে, এটাই আসলে বাস্তবতা না।" সৈয়দ রেজাউল করীম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যেহেতু ছাত্র এবং ওস্তাদ ইসলামী নীতি ও আদর্শ নিয়ে লেখাপড়া করে, সে হিসাবে তারা এরসাথে সম্পৃক্ত থাকে। তবে ছাত্র এবং ওস্তাদদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে কেউ যদি স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে, সেটা কিন্তু ইসলাম এবং মানবতা সবদিক থেকে অযৌক্তিক একটা বিষয়" বলে মনে করেন সৈয়দ রেজাউল করীম। মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনীতির সূচনা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বা ইসলামপন্থী দলগুলোর উত্থান ও শক্তি সঞ্চয়ের বিষয়টিও সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছে। দেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষার বিস্তারের কারণে এই দলগুলোর একটা অবস্থান তৈরির সুযোগ হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা বলে থাকেন। ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের নেতা আলতাফ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে চার দশক আগে কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক রাজনীতি শুরু হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। "১৯৮১ সালে আল্লামা হাফিজ্জী হুজুর রহমতউল্লাহ আলাইহি, উনি নিজে রাজনীতি করেছেন এবং তিনি লালবাগ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন। তারপর শামসুল হক ফরিদপুরী রহমতউল্লাহ আলাইহি, শায়খুল হাদিস আজিজুল হক রহমতউল্লাহ আলাইহি এবং মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহমতউল্লাহ আলাইহি - তারাও মাদ্রাসা পরিচালনা করেছেন এবং রাজনীতি করেছেন। তখনতো প্রশ্ন ওঠেনি। এখন একটা চক্র এসব প্রশ্ন তুলছে" বলেন মি. হোসেন। মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনীতি নিয়ে সমালোচনা মাদ্রাসার বাইরে বিভিন্ন মহল থেকেই মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনীতি নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে এমন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষাকে রাজনীকিকরণ করে এক ধরনের উগ্রতার সৃষ্টি করা হচ্ছে। রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষাকে রাজনীকিকরণ করে এক ধরনের উগ্রতার সৃষ্টি করা হচ্ছে। "মাদ্রাসা শিক্ষা একটি ধারা, ধর্মীয় ধারার শিক্ষা সব দেশেই আছে। কিন্তু বিপদটা এসেছে তখনই, যখন মাদ্রাসা শিক্ষাকে রাজনীতিকিকরণ করা হয়েছে এবং এক ধরনের উগ্রবাদের সূচনা করা হয়েছে।" রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, "কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের নানাভাবে প্ররোচিত করা হয়েছে রাজনীতির মধ্য দিয়ে। কিন্তু বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে কোন ধরনের রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে তারা নাই। তারা নিজস্ব পন্থায় পরিচালিত হয়। এখন তারা বিপাকে পড়েছেন বলে হয়তো মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলছেন। কিন্তু সরকারের শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন" বলে তিনি মনে করেন। সিদ্ধান্ত কার্যকর করার প্রশ্ন মাদ্রাসার নীতি নির্ধারণী বোর্ড এখন মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা নতুন করে তুলে ধরছে। কিন্তু তারাই মানতে রাজি নয় যে, মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনীতি চলছে ব্যাপকভাবে। মাদ্রাসার সাথে সম্পৃক্ত অনেকে আবার মনে করেন, কওমি মাদ্রাসার ওপর সরকারের সেভাবে নিয়ন্ত্রণ নেই। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সুযোগে সরকার এক ধরনের চাপ তৈরি করতে পেরেছে এবং সেজন্য মাদ্রাসার নেতৃত্ব রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সামনে এনেছে। তবে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার প্রশ্নে বিশ্লেষকদের সন্দেহ রয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান সতর্ক বক্তব্য তুলে ধরেন। "সেটা কার্যকরী করতে হবেতো। সেটা মুখে বলেতো লাভ নেই। সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি, তারা যেন কার্যকর করতে পারে।" মাদ্রাসার শিক্ষকদের অনেকে মনে করেন, তাদের নীতি নির্ধারণী বোর্ড চাইলে রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব। কওমী মাদ্রাসায় বহু শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক আশরাফ আলী নিজামপুরী নিজে চট্টগ্রামের মীরেরসরাই এলাকায় একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করেন। তিনি বলেছেন, সর্বোচ্চ বোর্ডের সিদ্ধান্ত কওমি মাদ্রাসাগুলো মানতে বাধ্য। "এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কারণ এই বোর্ড হচ্ছে আমাদের কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ অথরিটি। ওখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটা সবাই মানতে বাধ্য।" মি. নিজামপুরী মনে করেন, "কিছু কিছু মাদ্রাসার শিক্ষক রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন। তবে অধিকাংশ মাদ্রাসার শিক্ষক রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। আমি মনে করি, পাঠ জীবনে কোনো ছাত্রের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া ঠিক নয়।" মাদ্রাসার নীতি নির্ধারণী বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কওমি মাদ্রাসায় ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য এবার আলেমদের নিয়ে ১৫ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, এখন সরকারের চাপ এবং পরিস্থিতি সামলানোর জন্য মাদ্রাসার নেতৃত্বের এমন সিদ্ধান্ত নেয়াটা একটা সাময়িক কৌশল হতে পারে। | বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসা নিয়ে আবারও নানা আলোচনার মুখে এই মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | বাংলাদেশে তেলাপিয়া মাছের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। মাছ চাষীরাও তেলাপিয়া চাষ করতে বেশ পছন্দ করেন, ঝামেলাবিহীন স্বল্প পরিসরে চাষ করা যায় বলে। পুকুর ছাড়াও ভাসমান জালের খাঁচাসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে তেলাপিয়া মাছ চাষ করা যায়। স্বাদু পানি ছাড়াও লবণাক্ত পানিতে এবং অন্যান্য মাছের সাথে মিশ্র পদ্ধতিতে এই মাছ চাষ সম্ভব। কম সময়ে বেশি ফলন এবং মুনাফা হওয়ার কারণে চাষিদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে তেলাপিয়ার। অথচ তেলাপিয়া বাংলাদেশের মাছই নয়। ৬৫-৭০ বছর আগে এই ভূখণ্ডের মানুষ চিনতোও না তেলাপিয়া। কবে কীভাবে এলো? মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট বলছে, আফ্রিকা থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলাদেশে তেলাপিয়া প্রথম এসেছিল। এটিকে বলা হত মোজাম্বিক তেলাপিয়া। দেখতে একটু কালো রঙের। পোনার পরিমাণ অনেক। কিন্তু বৃদ্ধি ছিল কম। ১৯৭৪ সালে থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আসে নাইলোটিকা নামে তেলাপিয়ার একটি জাত। এটি মোজাম্বিক তেলাপিয়ার তুলনায় ভাল এবং বৃদ্ধিও ভাল হয়। ১৯৯৪ সালে ফিলিপাইন থেকে বাংলাদেশে আসে গিফট তেলাপিয়া। নাইলোটিকার তুলনায় এই তেলাপিয়ার বৃদ্ধির হার ৬০ শতাংশ বেশি। এই তেলাপিয়াই পরে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আফ্রিকা অঞ্চল থেকে তেলাপিয়া মাছটি বাংলাদেশে আনা হয়েছিল। সময়ের হিসাবে বলা যায় যে, '৯০ এর দশক থেকেই বাংলাদেশে তেলাপিয়া মাছের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়। মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, "এই গিফট তেলাপিয়া আসার পরই বাংলাদেশে তেলাপিয়ার মোমেন্টাম হয়।" বর্তমানে বাংলাদেশে যে তেলাপিয়ার চাষ হচ্ছে সেটি হচ্ছে গিফট তেলাপিয়া মনোসেক্স। জেনেটিক সিলেকশন পদ্ধতির মাধ্যমে গিফট তেলাপিয়ার জাত উন্নত করা হয়েছে। এটি এখন সুপার তেলাপিয়া নামে পরিচিত। গিফট তেলাপিয়ার এই জেনেটিক জাতটি স্থানীয় জাত বা অন্য তেলাপিয়ার তুলনায় ৫০-৬০ ভাগ বেশি উৎপাদনশীল। মনোসেক্স তেলাপিয়া কী? কিভাবে করা হয়? মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ৬ থেকে ৭শটি হ্যাচারি রয়েছে যেগুলোতে তেলাপিয়া মাছের মনোসেক্স পোনা উৎপাদন করা হয়। এসব হ্যাচারি থেকে বছরে ৬-৭শ কোটি পোনা উৎপাদিত হয়। মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এইচ এম কহিনুর বলেন, হরমোন প্রয়োগ করে তেলাপিয়া মাছের সব পোনাকে মনোসেক্স করা হয়। অর্থাৎ সব পোনাকে পুরুষ পোনায় রূপান্তরিত করা হয়। তিনি বলেন, পোনার বয়স যখন শূন্য বা একদিন থাকে তখন থেকে পরের ২১-২৩ দিন পর্যন্ত হরমোন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো হয়। এই সময় পার হয়ে যাওয়ার পর, সব নারী পোনা পুরুষ পোনায় পরিণত হয়। অর্থাৎ তারা ডিম দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন এই মাছকে মনোসেক্স জাত হিসেবে উৎপাদন করা হয় বলে জানান তিনি। গিফট তেলাপিয়ার মাছের পোনাকে মনোসেক্স করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওয়াহিদা হক বলেন, বাংলাদেশে যেসব মাছ উৎপাদিত হয় তার মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য থাকে সেটি হচ্ছে সব সময় ফিমেল বা স্ত্রী প্রজাতির মাছটি আকারে বড় হয়। কারণ এগুলো ডিম দেয়। কিন্তু তেলাপিয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সম্পূর্ণ উল্টো। তেলাপিয়ার ক্ষেত্রে ফিমেল বা স্ত্রী মাছটি আকারে ছোট এবং পুরুষ মাছটি আকারে বড় হয়। ডিম না হওয়ার কারণে পুরুষ মাছের শরীরে মাসল বা পেশী বেশি থাকে। যার কারণে বেশি মাছ বা প্রোটিন পাওয়া যায়। এ কারণেই যখন পোনাগুলোর লিঙ্গ শনাক্ত করা যায় না, সেসময়েই হরমোনযুক্ত খাবার দিয়ে সব পোনাকে পুরুষে পরিণত করা হয়। এটাকেই মনোসেক্স বা সিঙ্গেল সেক্স তেলাপিয়া বলা হয়। তিনি বলেন, বেশিরভাগ প্রাণীদের মধ্যে পুরুষ হওয়ার জন্য টেসটোস্টেরন এবং স্ত্রী হওয়ার জন্য এস্ট্রোজেন হরমোন দায়ী থাকে। তেলাপিয়ার মনোসেক্স করার ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোন ব্যবহার করা হয়। খাবারের সাথে এই হরমোন মিশিয়ে খাওয়ানোর কারণে যেসব পোনার ফিমেল বা স্ত্রী হওয়ার প্রবণতা থাকে সেগুলোও আসলে পুরুষ হয়ে যায়। স্ত্রী মাছের তুলনায় পুরুষ মাছের বৃদ্ধি ২৫-৩০% বেশি হওয়ার কারণেও মাছগুলোকে মনোসেক্স করা হয়। যে কারণে জনপ্রিয় বাংলাদেশে বর্তমানে মাছের চাহিদা আছে প্রায় ৪২ লাখ মেট্রিক টন। মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্য মতে, এর মধ্যে তেলাপিয়া উৎপাদিত হয় বছরে প্রায় ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন। এক বছরে প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৩০ টন তেলাপিয়া উৎপাদিত হয়। মৎস্য কর্মকর্তা ড. এ এইচ এম কহিনুর বলেন, তেলাপিয়া যেকোনো ধরণের জলাশয় ও পুকুরে চাষ করা যায়। পুকুরের গভীরতা যেকোনো ধরণের হতে পারে। এই মাছ যেকোনো ধরণের খাবার খেতে পছন্দ করে। রোগ-ব্যাধি কম হয়। এসব কারণেই মূলত বাংলাদেশে তেলাপিয়া মাছের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়। এক বছরে প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৩০ টন তেলাপিয়া উৎপাদিত হয়। মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ওয়াহিদা হক বলেন, পানি থেকে অক্সিজেন কম গ্রহণ করে। পানির মান খুব ভাল না হলেও তেলাপিয়া মাছ বাঁচতে পারে। "পুরোপুরি লবণাক্ত পানিতে থাকতে না পারলেও পানিতে লবণের মোটামুটি একটা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত সহ্য করতে পারে এই মাছ।" তিনি বলেন, আশির দশকের দিকে তেলাপিয়া চাষের জনপ্রিয়তা শুরু হয়। এক সময় চিংড়ি খুব জনপ্রিয় থাকলেও খুব বেশি যত্ন করতে হয় বলে সেটির জনপ্রিয়তা কমে যায়। কিন্তু তেলাপিয়ার যেহেতু খুব বেশি একটা যত্ন নিতে হয় না, খুব সহজে চাষ করা যায় এবং প্রায় সব ধরণের খাবার এই মাছ খায়- এসব কারণেই এর জনপ্রিয়তা বেশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যা বেশি থাকায় একটি বিষয় মাথায় রাখা হয় যে, স্বল্প খরচে কিভাবে বেশি পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়। "যেহেতু তেলাপিয়া চাষের খরচ অনেক কম কিন্তু অন্য মাছের তুলনায় প্রোটিনের ভাল উৎস তাই এটি বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।" এছাড়া তেলাপিয়া খুব দ্রুত বর্ধনশীল মাছ, খেতেও সুস্বাদু এবং মাংসল অংশে কাটা না থাকার কারণে মানুষের মধ্যে এই মাছের চাহিদাও রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ডে তেলাপিয়া মাছ জনপ্রিয় বলে জানান ওয়াহিদা হক। একর জলাশয় বা পুকুর থেকে চার থেকে পাঁচ মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করা যায়। লাভজনক মাছ চাষের ক্ষেত্রে তেলাপিয়া খুবই লাভজনক বলে জানা যায়। তবে সম্প্রতি বাজারে এই মাছের দাম কমে যাওয়ার কারণে লাভের পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তারা। তবে এখনো এটি অন্যান্য মাছের তুলনায় খরচ ও বিক্রির ভিত্তিতে লাভজনক বলে জানান তারা। প্রতি একর জলাশয় বা পুকুর থেকে চার থেকে পাঁচ মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করা যায়। আর এই পরিমাণ জলাশয়ে তেলাপিয়া চাষে খরচ হয় দেড় লাখ টাকার মতো। এ বিষয়ে ড. এ এইচ এম কহিনুর বলেন, "দেড় লাখ টাকা বিনিয়োগ করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভ করা যায়।" চাষ পদ্ধতি মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তারা বলছেন, তেলাপিয়া মাছ চাষ শুরু করতে চাইলে মধ্যম গভীরতার একটি পুকুর বা জলাশয় থাকতে হবে। পানির গভীরতা তিন থেকে চার ফুট হলেই সেখানে তেলাপিয়া মাছ চাষ করা সম্ভব। পুকুরটি অবশ্যই ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে। পুকুরের তলায় কোন ময়লা আবর্জনা থাকলে সেটি পরিষ্কার করতে হবে। পাড় মেরামত করতে হবে। পুকুর পাড়ে কোন আগাছা বা গাছপালা থাকলে পরিষ্কার কিংবা ছেঁটে দিতে হবে। তেলাপিয়া চাষের জন্য পুকুরে ৫-৬ গ্রাম ওজনের পোনা ছাড়া হয়। পুকুরে প্রতি শতাংশে এক কেজি পরিমাণ চুন ছিটিয়ে দিতে হবে। এর তিন দিন পরে ১০০ গ্রাম টিএসপি সারের সাথে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। সার দেয়ার পর পানির রঙ যখন সবুজ হবে তখন সেখানে তেলাপিয়া মনোসেক্স জাতের পোনা ছাড়তে হবে। মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এইচ এম কহিনুর বলেন, প্রতি শতকে ২০০-২৫০টি পোনা মজুদ করা যায়। "লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে পোনার ওজন ৫-৬ গ্রাম পরিমাণ হয়।" এসব পোনাকে সপ্তাহে ৫-৬ দিন খাবার দিতে হবে। ২৫-২৮% প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত দিলে বৃদ্ধি ভাল হয় এবং চার থেকে ৫ মাসের মধ্যে প্রতিটি তেলাপিয়ার ওজন ২৫০-৩০০ গ্রাম ওজনের হয়। মাছের ওজন ৩০০ গ্রামের মতো হলেই সেটি আহরণ করতে হবে। তেলাপিয়া মাছ আহরণের ক্ষেত্রে পুরো পুকুর শুকিয়ে ফেলতে হবে। জাল দিয়ে মাছ ধরলে ৬০% মাছ ধরা সম্ভব বলে মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্যে জানা যায়। বাকি ৪০% মাছ পুকুরের তলায় থেকে যায়। যার কারণে সব মাছ ধরতে হলে পুকুর শুকিয়ে ফেলতে হবে। এ কারণে যেসব পুকুর সহজেই শুকিয়ে ফেলা যায় সেরকম পুকুরে তেলাপিয়া চাষ করা উচিৎ বলে মনে করেন মৎস্য কর্মকর্তারা। এক বার মাছ ধরার কিছুদিন পর একই পুকুরে আবার মাছ চাষ করা যায়। তবে এক্ষেত্রে যদি পুকুরের তলদেশে অর্গানিক ডিপোজিট অর্থাৎ বর্জ্য বেশি থাকে তাহলে সেগুলো পরিষ্কার করে নিতে হবে। কোন পদ্ধতি লাভজনক? তেলাপিয়া মাছ চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি, পোনা উৎপাদন এবং প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে আসছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট। বিভিন্ন ধরণের মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠানের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এইচ এম কহিনুর বলেন, বর্তমানে দেশে তেলাপিয়া মাছের খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং মাছের দাম কমে যাওয়ার কারণে নতুন একটি চাষ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তেলাপিয়ার সাথে শিং ও মাগুর মাছের চাষ লাভজনক। আর পদ্ধতিটি হচ্ছে, তেলাপিয়ার সাথে শিং এবং মাগুর মাছের চাষ। "এই পদ্ধতি খুবই লাভজনক,"তিনি বলেন। তিনি জানান, এই পদ্ধতিতে তিন ধরণের মাছ এক সাথে চাষ করা হলেও শিং এবং মাগুর মাছের জন্য আলাদা খাবার খুব কম দরকার হয়। প্রায় একই পরিমাণ বা কিছুটা বেশি খাবার দিয়ে একই পুকুর থেকে আলাদা ধরণের বেশি পরিমাণ মাছ সংগ্রহ করা সম্ভব। বাজারে শিং এবং মাগুর মাছের চাহিদাও বেশি বলে জানান তিনি। এক্ষেত্রে এক হেক্টর জমি পরিমাণ পুকুর থেকে এক ফসলে ১৪-১৫ টন মাছ আহরণ করা সম্ভব বলে জানান এই মৎস্য কর্মকর্তা। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি নয় মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন যে, হরমোন প্রয়োগ করে তেলাপিয়া মাছকে মনোসেক্সে রূপান্তরিত করা হলেও মানবদেহের জন্য এটি আসলে কোন হুমকি তৈরি করে না। বাংলাদেশে প্রোটিনের একটি অন্যতম উৎস মাছ। এরইমধ্যে এ বিষয়ে তারা গবেষণা করে দেখা হয়েছে বলে জানানো হয়। অনেকটা একই রকমের মত দিয়েছেন মৎস্য বিজ্ঞানীরাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওয়াহিদা হক বলেন, এখনো পর্যন্ত মনোসেক্স তেলাপিয়া মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে এমন কোন গবেষণা বা তথ্য জানা যায় না। তিনি বলেন, মনোসেক্সে রূপান্তরের জন্য যে টেস্টোস্টেরন হরমোন ব্যবহার করা হয় তা মানবদেহে প্রভাব ফেলে এ ধরণের কোন গবেষণা এখনো নেই। তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন যে, "এটার হয়তো কোন প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে আরো বিস্তর গবেষণা দরকার।" সেই সাথে মিসেস হক এটাও বলেছেন যে, ২১ দিন ধরে পোনাগুলোকে যে খাবারটা খাওয়ানো হয়, তখনই আসলে মাছগুলো খাওয়ার উপযোগী হয় না। "যখন খাওয়ার উপযোগী হয় এবং মাছ ধরে বাজারজাত করা হয় তখন আসলে আর আগের খাবারের কোন প্রভাব মাছে থাকে না।" বলেন তিনি। তবে এ নিয়ে ভবিষ্যতে গবেষণার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি। | সহজলভ্য ও সস্তায় কম আয়ের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারে বলে তেলাপিয়া বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় একটি মাছ। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | দেশটিতে প্রচুর মেয়ে ডাক্তারী পড়ে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশায় টিকে থাকেন খুব কম নারী। এদেরই সাহায্য করতে চালু হয়েছে নতুন একটি স্কীম। বিস্তারিত দেখুন ভিডিও-তে। | পাকিস্তানে বিয়ের বাজারে ‘ডাক্তার কনে’দের বেশ চাহিদা রয়েছে। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | শেখ মুজিবুর রহমান হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সে দাঙ্গার বর্ণনা তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তুলে ধরেছেন শেখ মুজিব। সেই দাঙ্গা শেখ মুজিবের মনে গভীর দাগ কেটেছিল তার মনে। তিনি তখন পুরোদস্তুর মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন পাকিস্তান রাষ্ট্র বাস্তবায়নের দাবিতে ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট 'ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে' পালনের ঘোষণা দেন, এর পরিপ্রেক্ষিত শুরু হয় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইতে তিনি বিষয়টি তুলে ধরেছেন এভাবে.. "হাশিম সাহেব আমাদের নিয়ে সভা করলেন। আমাদের বললেন, 'তোমাদের মহল্লায় মহল্লায় যেতে হবে, হিন্দু মহল্লায়ও তোমরা যাবে। তোমরা বলবে, আমাদের এই সংগ্রাম হিন্দুদের বিরুদ্ধে নয়, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে, আসুন আমরা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে দিনটি পালন করি।' আমরা গাড়িতে মাইক লাগিয়ে বের হয়ে পড়লাম। হিন্দু মহল্লায় ও মুসলমান মহল্লায় সমানে প্রোপাগান্ডা শুরু করলাম। অন্য কোন কথা নাই, 'পাকিস্তান' আমাদের দাবি। এই দাবি হিন্দুর বিরুদ্ধে নয়, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। ফরোয়ার্ড ব্লকের কিছু নেতা আমাদের বক্তৃতা ও বিবৃতি শুনে মুসলিম লীগ অফিসে এলেন এবং এই দিনটা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে হিন্দু মুসলমান এক হয়ে পালন করা যায় তার প্রস্তাব দিলেন। আমরা রাজি হলাম। কিন্তু হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেসের প্রোপাগান্ডার কাছে তারা টিকতে পারল না। হিন্দু সম্প্রদায়কে বুঝিয়ে দিল এটা হিন্দুদের বিরুদ্ধে।" মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি বৈঠক করছেন। পেছনে তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান। কলকাতার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় আক্রান্তদের রক্ষা করতে শহর চষে বেড়িয়েছেন তরুণ শেখ মুজিব ও তার রাজনৈতিক সঙ্গীরা। দাঙ্গার সময় শেখ মুজিব ও তার একজন রাজনৈতিক সহযোগী মোয়াজ্জম চৌধুরীর উপর অন্যতম দায়িত্ব ছিল মুসলমান অধ্যুষিত একটি বস্তি পাহারা দেবার। কারণ তারা দুজনের কাছেই বন্দুক ছিল এবং দুজনেই বন্দুক চালাতে জানতেন। শেখ মুজিবুর রহমান এমনটা লিখেছেন তার আত্মজীবনীতে। সে বস্তি পাহারা দিতে গিয়ে শেখ মুজিব জীবনের ঝুঁকিও নিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন ইতিহাসবিদ ও গবেষক আফসান চৌধুরী। মি. চৌধুরী বলেন, "তিনি ও মোয়াজ্জম চৌধুরী বন্দুক চালাতে জানতেন। এবং যথেষ্ট সাহস লাগে রাতে বেলায় কলকাতার বস্তি পাহারা দিতে। সে বস্তিতে কলকাতার আসা অভিবাসী শ্রমিকরা থাকতো। এদের বেশিরভাগ গিয়েছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে।" ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার বেশ বিস্তারিত বিবরণ আছে শেখ মুজিবের আত্মজীবনীতে। ১৯৪৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমান শেখ মুজিব এবং তার রাজনৈতিক সহযোগীরা ভাবতেই পারেননি যে দাঙ্গা বেধে যেতে পারে। মুসলিম নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘোষণা অনুযায়ী 'ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে' পালনের অংশ হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে মুসলিম লীগের পতাকাও উত্তোলন করেছেন। তখনও তিনি দাঙ্গার আঁচ মাত্র দেখেননি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে থাকে। শেখ মুজিবের বর্ণনা অনুযায়ী, এক পর্যায়ে দাঙ্গাকারীদের রুখতে তিনি তাদের সামনে দাঁড়িয়ে যান। শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীতে একটি ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছিল এভাবে, "আমাদের কাছে খবর এলো, ওয়েলিংটন স্কোয়ারের মসজিদে আক্রমণ হয়েছে। ইসলামিয়া কলেজের দিকে হিন্দুরা এগিয়ে আসছে। কয়েকজন ছাত্রকে ছাত্রীদের কাছে রেখে, আমরা চল্লিশ পঞ্চাশজন ছাত্র প্রায় খালি হাতেই ধর্মতলার মোড় পর্যন্ত গেলাম। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা কাকে বলে এ ধারণাও আমার ভালো ছিল না"। "দেখি শতশত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক মসজিদ আক্রমণ করছে। মৌলভী সাহেব পালিয়ে আসছেন আমাদের দিকে। তার পিছে ছুটে আসছে একদল লোক লাঠি ও তলোয়ার হাতে। পাশেই মুসলমানদের কয়েকটা দোকান ছিল। কয়েকজন লোক কিছু লাঠি নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়াল। আমাদের মধ্য থেকে কয়েকজন 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' দিতে শুরু করলো। দেখতে দেখতে অনেক লোক জমা হয়ে গেল"। "হিন্দুরা আমাদের সামনা-সামনি এসে পড়েছে। বাধা দেয়া ছাড়া উপায় নাই। ইঁট পাটকেল যে যা পেল তাই নিয়ে আক্রমণের মোকাবেলা করে গেল। আমরা সব মিলিয়ে দেড়শত লোকের বেশি হব না। কে যেন পিছন থেকে এসে আত্মরক্ষার জন্য আমাদের কয়েকখানা লাঠি দিল। এর পূর্বে শুধু ইট দিয়ে মারামারি চলছিল। এর মধ্যে একটা বিরাট শোভাযাত্রা এসে পৌঁছাল। এদের কয়েক জায়গায় বাধা দিয়েছে, রুখতে পারে নাই। তাদের সকলের হাতেই লাঠি। এরা এসে আমাদের সাথে যোগদান করল। কয়েক মিনিটের মধ্যে হিন্দুরা ফিরে গেল, আমরাও ফিরে গেলাম।" শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী পড়ে বিশ্লেষকদের অনেকেই তাঁর দুটো দিক লক্ষ্য করেছেন। একটি হচ্ছে, তিনি মুসলিম লীগের জন্য পাকিস্তান আন্দোলন করছেন, এবং দাঙ্গার সময় তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে আক্রান্তদের রক্ষা করছেন। এক্ষেত্রে কে মুসলমান এবং কে হিন্দু সে বিষয়টি তিনি বিবেচনা করেননি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক খুরশিদা বেগম বলেন, দাঙ্গার সময়টাতে শেখ মুজিব প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে যেতেন সহিংসতা থামানোর জন্য। "উনি মুসলিম লীগের কাজ করছেন সক্রিয় কর্মী হিসেবে। পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে আছেন, আবার তাঁর মন মানসিকতা সবটুকুই অসাম্প্রদায়িক দেখছি। উনি প্রতিদিন সকালে বের হয়ে যাচ্ছেন কিভাবে দাঙ্গা থামানো যায় সে লক্ষ্য নিয়ে," বলছিলেন খুরশিদা বেগম। কলকাতায় যখন দাঙ্গা শুরু হয় তখন বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, যিনি শেখ মুজিবের রাজনৈতিক গুরুও বটে। মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে শেখ মুজিব চেয়েছিলেন পাকিস্তান আন্দোলন বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিয়ে যখন দাঙ্গা শুরু হয়, তখন দাঙ্গা থামানোর দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন শেখ মুজিব। যেমনটা বলছিলেন গবেষণা সংস্থা এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহফুজা খানম। "তিনি সবসময় যে কথা বলেছেন যে আগে আমি মানুষ, তারপরে বাঙালী এবং তারপরে মুসলমান। রাজনৈতিক কারণে তাকে মুসলিম লীগের জন্য লড়তে হয়েছিল। কিন্তু মনে প্রাণে তিনি অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন। যে কারণে তিনি দাঙ্গা থামাতে এগিয়ে গেছেন।" শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণনায় কলকাতার দাঙ্গার ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। এই দাঙ্গায় শুধু একটি পক্ষ মার খায়নি। উভয় ধর্মের মানুষ রক্তাক্ত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রতিশোধ আর পাল্টা প্রতিশোধের মনোভাব ছিল উভয় পক্ষের মধ্যে। এমনটাই উঠে এসেছে শেখ মুজিবের আত্মজীবনীতে। "কলকাতা শহরে শুধু মরা মানুষের লাশ বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে। মহল্লার পর মহল্লা আগুনে পুড়ে গিয়েছে। এক ভয়াবহ দৃশ্য! মানুষ মানুষকে এইভাবে হত্যা করতে পারে, চিন্তা করতেও ভয় হয়।" শেখ মুজিব আরো লিখেছেন, যারা দাঙ্গা থামাতে গিয়েছে কিংবা আক্রান্তদের সাহায্য করতে গিয়েছিলেন তারাও বিপদে পড়েছিল। "মুসলমানদের উদ্ধার করার কাজও করতে হচ্ছে। দু'এক জায়গায় উদ্ধার করতে যেয়ে আক্রান্তও হয়েছিলাম। আমরা হিন্দুদেরও উদ্ধার করে হিন্দু মহল্লায় পাঠাতে সাহায্য করেছি। আমার মনে হয়েছে, মানুষ তার মানবতা হারিয়ে পশুতে পরিণত হয়েছে। প্রথম দিন ১৬ই অগাস্ট মুসলমানরা ভীষণভাবে মার খেয়েছে। পরের দুইদিন মুসলমানরা হিন্দুদের ভীষণভাবে মেরেছে। পরে হাসপাতালের হিসাবে দেখা দেখা গিয়েছে।" শেখ মুজিব লিখেছেন, একদল লোক ছিল যারা দাঙ্গাহাঙ্গামার ধার ধারেনা। দোকান ভাঙ্গা আর লুট করাই ছিল তাদের কাজ। । পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতে কারফিউ জারি করা হয়েছিল। সন্ধ্যার পর রাস্তায় নামলেই দেখামাত্র গুলির নির্দেশ ছিল। শেখ মুজিবের ছোটভাইসহ পরিবারের কিছু সদস্য কলকাতায় ছিলেন। তাদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন তিনি। এসব কিছুর মধ্যেও আক্রান্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে তিনি পিছপা হননি। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল। "একদিকে যখন মুসলমানরা আক্রান্ত হচ্ছে হিন্দু দাঙ্গাকারীদের হাতে, তখন তিনি তাদের রক্ষা করতে গিয়েছেন। আবার অন্যদিকে হিন্দুরা যখন আক্রান্ত হচ্ছে মুসলমান দাঙ্গাকারীদের হাতে তখন তিনি হিন্দুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন," বলছিলেন অধ্যাপক মেজবাহ কামাল। বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৪৬ সালের সেই দাঙ্গা শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বড় ধরণের পরিবর্তন এনেছিল। সেজন্য পরবর্তী সময়ে অসাম্প্রদায়িকতা তার রাজনীতির মূল ভিত্তি হয়ে উঠে। | বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তরুণ বয়সে যখন মুসলিম লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন সে সময় কলকাতায় ঘটে যায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। শরণার্থীদের অধিকারের বিষয় মিয়ানমার সরকারের কাছে উত্থাপনেও তিনি বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মিয়ানমারে জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার সূত্রগুলো বিবিসির কাছে এই অভিযোগ করেছে। জাতিসংঘের একজন সাবেক কর্মকর্তা এমনকি অভিযোগ করেছেন যে মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রধান কর্মকর্তা মানবাধিকার কর্মীদের রোহিঙ্গা অধ্যূষিত এলাকায় যাওয়া থেকে বিরত রাখতে চেয়েছেন। তবে মিয়ানমারে জাতিসংঘ দফতর বিবিসির এই রিপোর্টে উঠে আসা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গত মাসে যখন লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে শুরু করে, তখন থেকে এই সংকট মোকাবেলায় সামনের কাতারে আছে জাতিসংঘ। শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘ ত্রাণ সাহায্য পাঠিয়েছে এবং মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের নিন্দা করে কঠোর ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু এই সংকটের পূর্ববর্তী চার বছর ধরে মিয়ানমারে জাতিসংঘের কার্যক্রমের প্রধান রেনাটা লক ডেসালিয়েন রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে ভূমিকা পালন করেন, তা নিয়ে অনেক অভিযোগ তুলেছেন তারই প্রাক্তন সহকর্মী এবং বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার কর্মকর্তারা। উল্লেখ্য রেনাটা লক ডেসালিয়েন এর আগে বাংলাদেশেও জাতিসংঘের প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেছেন। কানাডার নাগরিক রেনাটা লক ডেসালিয়েনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে: মিয়ানমারে কাজ করেছেন এমন একজন ত্রাণ কর্মকর্তা ক্যারোলাইন ভ্যানডেনাবিলি জানিয়েছেন, জাতিগত নির্মূলের চেষ্টা কিভাবে শুরু হয়, তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তাঁর আছে। রোয়ান্ডার গণহত্যার আগে ১৯৯৩-৯৪ সালে তিনি সেখানে নিজের চোখে দেখেছেন কী ঘটেছে। তিনি যখন মিয়ানমারে এসে পৌঁছান, তখন সেখানেও এই একই প্যাটার্ন তার চোখে পড়েছে। "মিয়ানমারে একদল বিদেশী এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী রোহিঙ্গা এবং রাখাইন বিষয়ে কথা বলছিল। আমি সেখানে ছিলাম। সেখানে একজন বার্মিজ বললো, রোহিঙ্গারা যদি কুকুরের মতো হয় ওদের সবাইকে মেরে ফেলা উচিত। কোন সমাজে যখন একটি গোষ্ঠীকে আর মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয় না এবং সেটি যখন সমাজে স্বাভাবিক ব্যাপার বলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যায়, আমার কাছে এটাই জাতিগত নির্মূল শুরুর একটা আলামত।" ক্যারোলাইন ভ্যানডেনাবিলি এর আগে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, রোয়ান্ডা এবং নেপালে কাজ করেছেন। ২০১৩ সাল হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি মিয়ানমারে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের দফতরের প্রধান ছিলেন তিনি। রেনাটা লক ডেসালিয়েন হচ্ছেন বর্তমানে আবাসিক সমন্বয়ক। রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে যখন জাতিসংঘ কাজ করছে, তখন সেটি একেবারে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন ক্যারোলাইন ভেনডেনাবিলি। ২০১২ সালে রোহিঙ্গা মুসলিম এবং রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে সংঘাতে নিহত হয়েছিল প্রায় একশো এবং সিটওয়ে শহরের আশে-পাশের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেয় এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এরপর মাঝেমধ্যেই সেখানে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের চেষ্টায় বাধা দিয়েছে রাখাইন বৌদ্ধরা। এমনটি তারা রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণবাহী গাড়ি বহরের পথ রোধ করেছে। ত্রাণবাহী গাড়িতে হামলা চালিয়েছে। উত্তর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের শত শত গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ এবং ত্রাণ সংস্থাগুলোর জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠলো। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ সাহায্য পাঠানোর জন্য জাতিসংঘের একই সঙ্গে মিয়ানমার সরকার এবং স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাহায্য দরকার। অন্যদিকে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এটাও বুঝতে পারছিলেন যে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার ও নাগরিকত্ব নিয়ে কথা বললে সেটা মিয়ানমারের অনেক বৌদ্ধকে ক্ষিপ্ত করতে পারে। এ অবস্থায় জাতিসংঘ একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের সিদ্ধান্ত নেয়। রাখাইনে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, যদি সেখানে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়, তাতে রোহিঙ্গা আর বৌদ্ধদের মধ্যে উত্তেজনা কমে আসবে। কিন্তু এর ফল দাঁড়ালো এই, রোহিঙ্গা বিষয়ে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা আর প্রকাশ্যে কোন কথা বলতে চায় না। রোহিঙ্গা নিয়ে কথা বলা যেন একটা 'নিষিদ্ধ' ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো। জাতিসংঘের প্রেস বিজ্ঞপ্তিগুলোতে রোহিঙ্গা শব্দের ব্যবহারই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। মিয়ানমারের সরকারও রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করে না। তারা রোহিঙ্গাদের 'বাঙ্গালি' বলে। আমি যখন মিয়ানমার থেকে রিপোর্ট করতাম, তখন খুব কম জাতিসংঘ কর্মীই আসলে অকপটে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রকাশ্যে কথা বলতে চাইতো। কিন্তু এখন একটি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে এমনকি রুদ্ধদ্বার কক্ষেও রোহিঙ্গা ইস্যুকে একপাশে সরিয়ে রেখেছিল জাতিসংঘ। লাখ লাখ শরণার্থীর চাপ সামলাতে বাংলাদেশ হিমসিম খাচ্ছে মিয়ানমারে কর্মরত ত্রাণকর্মীদের একাধিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, উচ্চ পর্যায়ের জাতিসংঘ বৈঠকে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষকে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে কোন প্রশ্ন করা রীতিমত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ক্যারোলাইন ভ্যানডেনাবিলি বলেন, শীঘ্রই এই বিষয়টি সবার কাছে পরিস্কার হয়ে যায় যে উচ্চ পর্যায়ের জাতিসংঘ বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলা কিংবা জাতিগত নির্মূল অভিযানের ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। "আপনি হয়তো এটা করতে পারেন, কিন্তু সেটার একটা পরিণতি ভোগ করতে হবে", বলছেন তিনি। "এর অনেক নেতিবাচক পরিণতি আছে। আপনাকে আর কোন সভায় ডাকা হবে না। আপনার ভ্রমণের অনুমতিপত্র ঠিকমত পাওয়া যাবে না। অনেক কর্মী তাদের কাজ হারিয়েছেন। তাদেরকে সভার মধ্যে হেনস্থা করা হয়েছে। এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা হলো যে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথাই বলা যাবে না।" এত বিধিনিষেধের পরও যারা এই কাজ বারবার করেছেন, তাদের আলোচনা থেকেই বাদ দেয়া হয়েছে। যেমন জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ বিষয়ক দফতরের (ইউএনওসিএইচএ) প্রতিনিধি। ক্যারোলাইন ভ্যানডেনাবিলি জানান, তাকে সবসময় নির্দেশনা দেয়া হতো বৈঠকগুলো যেন এমন সময়ে আয়োজন করা হয় যখন ইউএনওসিএইচএ'র প্রতিনিধি শহরে থাকবেন না। তিনি আরও বলেন, তাকে গন্ডগোল সৃষ্টিকারি বলে চিহ্নিত করা হয় এবং রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূলের আশংকা নিয়ে বারবার সতর্ক করায় তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। মিজ ভ্যানডেনাবিলি যেসব ঘটনা বর্ণনা করেছেন, জাতিসংঘ তার কোন প্রতিবাদ জানায়নি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলতে মিয়ানমার সফরে যাওয়া জাতিসংঘ কর্মকর্তাদেরও বারণ করা হতো। টমাস কুইটানা এখন উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা। এর আগে তিনি ছয় বছর মিয়ানমার বিষয়ে ঐ একই দায়িত্বে ছিলেন। আর্জেন্টিনা থেকে বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। ইয়াংগন বিমানবন্দরে একবার তাঁর দেখা হয় রেনাটা লক ডেসালিয়েনের সঙ্গে। "তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন, আপনার উত্তর রাখাইনে যাওয়া উচিত হবে না - দয়া করে ওখানে যাবেন না। আমি তখন জানতে চাইলাম, কেন? এই প্রশ্নের কোন উত্তর ছিল না। তার অবস্থানটা ছিল এ নিয়ে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোন ঝামেলায় তিনি যেতে চান না।" "এটা মাত্র একটা ঘটনা। কিন্তু এ থেকে বোঝা যায় রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মিয়ানমারে অবস্থানরত জাতিসংঘ দলের কৌশলটা কী ছিল।" তবে রেনাটা লক ডেসালিয়েনের পরামর্শ উপেক্ষা করে মিস্টার কুইনটানা উত্তর রাখাইনে যান এবং এক্ষেত্রে তিনি মিয়ানমারের জাতিসংঘ মিশনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি। জাতিসংঘের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়ে আমরা আসলে সেখানে রাখাইন সম্প্রদায়ের মধ্যে কাজ করার চেষ্টা করছিলাম।" "সরকার আসলে খুব ভালো করেই জানে আমাদের কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, কিভাবে কাজে লাগাতে হয় - এবং তারা সেটাই করে যাচ্ছিল। অথচ আমরা কখনোই এ থেকে কোন শিক্ষা নিইনি। আমরা কখনোই মিয়ানমারের সরকারের সামনে পিঠ সোজা করে দাঁড়াতে পারিনি, কারণ তাতে নাকি মিয়ানমার সরকার ক্ষেপে যাবে।" সবকিছু ফেলে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা ২০১৫ সালে জাতিসংঘ নিজেই মিয়ানমারে তাদের দফতরের কাজ নিয়ে আভ্যন্তরীণ পর্যালোচনার পর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এই রিপোর্ট বিবিসির হাতে এসেছে। এতে মিয়ানমারে জাতিসংঘ দফতরের কাজের কঠোর সমালোচনা আছে। জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব আন্তনিও গুটেরেস দায়িত্ব নেয়ার পর তার জন্য তৈরি করা এক রিপোর্টেও বলা হয়েছে, মিয়ানমারে জাতিসংঘ একেবারেই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। রেনাটা লক ডেসালিয়েন এখনো মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রধান কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন। তার জায়গায় নতুন যে কর্মকর্তার নাম পাঠানো হয়েছিল, মিয়ানমার সরকার তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে মিজ ডেসালিয়েন এখনো তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রেনাটা লক ডেসালিয়েন এসব বিষয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। আর মিয়ানমারে জাতিসংঘের দফতরের একজন মুখপাত্র এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কথা বলার বিষয়ে রেনাটা লক ডেসালিয়েন কোন বাধা দিয়েছেন। তবে অন্য অনেকেই মিয়ানমারে জাতিসংঘের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে শ্রীলংকায় জাতিসংঘ যে ভূমিকার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল, তার অনেক মিল দেখতে পাচ্ছেন। চার্লস পেট্রি শ্রীলংকায় জাতিসংঘের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে একটি রিপোর্ট লিখেছেন। তিনি মিয়ানমারে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন। ২০০৭ সালে তাঁকে মিয়ানমার থেকে বহিস্কার করা হয়। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের জাতিসংঘের গত কয়েক বছরের ভূমিকা বিভ্রান্তিকর। জাতিসংঘ কি মিয়ানমারে কোন ভিন্ন কৌশল নিলে এই বিপর্যয় এড়ানো যেতো? ক্যারোলাইন ভ্যানডেনাবিলি মনে করেন, অন্তত তিনি যেসব আগাম সতর্কবাণীর কথা বলেছিলেন, তা আমলে নিলে হয়তো সবাই আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে পারতো কী ঘটতে চলেছে। একটি সূত্র বলছে, রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে যেভাবে মিয়ানমারে জাতিসংঘ কাজ করেছে, তার জন্য একটি আভ্যন্তরীণ তদন্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। | মিয়ানমারে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা রোহিঙ্গা সংকটে যে ভূমিকা নিয়েছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারই সাবেক সহকর্মীরা। সাবেক কয়েকজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা এবং ত্রাণ কর্মী বলেছেন, তিনি জাতিসংঘের অফিসে এমনকি রোহিঙ্গা নিয়ে কোন কথা বলতে পর্যন্ত বারণ করেছিলেন। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | অধ্যাপক ভ্রমর মুখার্জি ১৬ই মার্চ, ২০২০। মিশিগানে বাড়িতে থেকে কাজ করার নির্দেশ বেরোল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া আমরা ক'জন মিলে করোনার পরিসংখ্যানতত্ত্ব নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক সবাই মিলে একটা কাজ, নিজেদের মনের দুশ্চিন্তা কাটানোর জন্যে, কিছু একটা অর্থপূর্ণ করছি এই ভ্রান্তিবিলাস। সেই কাজ করে চলেছি আমরা এক বছরের ওপর। আমরা একটা করোনা ট্র্যাকার বানাই যেটা রোজ ভারতবর্ষ ও তার প্রতিটি রাজ্যের দৈনিক সংখ্যাভিত্তিক একটি মূল্যায়ন করে এবং ভবিষ্যতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কোথায় যেতে পারে তার একটা পূর্বাভাস দেয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভারতবর্ষের করোনা কার্ভ তার পিক বা তুঙ্গে পৌঁছয় তারপর তার অবরোহণ ২০২১ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত। ভারত ও বিশ্বের সব বিশেষজ্ঞরা এই অভূতপূর্ব ঘটনার ব্যাখ্যা খুঁজতে ব্যস্ত, দেশের লোকজন নিশ্চিন্তে হাফ ছাড়ছে করোনার কবল থেকে মুক্তি পেয়ে, ভরে উঠছে আবার ট্রেন, বাস, রেস্তোরাঁ। জমে উঠছে বিয়েবাড়ি, পালাপার্বণ, হর কি পউরিতে সমবেত পবিত্র স্নান। সঙ্গে অগ্নিময় রাজনীতি, বিরাট নির্বাচনী জমায়েত। প্রিয়জনের মৃত্যুতে লোকজনের আহাজারি যেন দিল্লির একটি স্বাভাবিক দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারই মধ্যে ভাইরাস অন্তরালে তার কাজ করে চলেছে, দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে নামার আগে, সে নিজেকে আরো সতেজ ও সবল করে তুলছে, অতর্কিতে ছোবল মারবে, যখন আমরা আমাদের মাস্ক নামিয়ে দিয়েছি, দিক দিগন্তের অবগুণ্ঠন আবার তার আক্রমণের আহবানে খোলা। অতিমারির ইতিহাস পড়লে দেখা যায় যে দ্বিতীয় ঢেউ অনেক সময়েই হয়ে ওঠে জলোচ্ছ্বাস, কারণ ঠিক এই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটে বারংবার, মনুষ্যচরিত্রে আসে বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করার স্বভাবগত প্রবৃত্তি ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী ধূর্ত ভাইরাসের ঘটে দ্রুত বিবর্তন। ভারতেও এই দুটি প্রক্রিয়ার সমাপাতন ঘটেছে। নূতন সব রূপ ধারণ করেছে ভাইরাস, তার জিনোমটাকে বদলে নিয়ে। হাসপাতালেও বেড নেই। রোগীদের বাইরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আর এক বছর সতর্কীকরণের বাধা নিষেধ মেনে ক্লান্ত আমরা বেরিয়ে পড়েছি সেই শক্তিমান ভাইরাসের সহজ শিকার হয়ে। নিঃশব্দে পা টিপে এসে ভাইরাস আজ আমাদের এই বিস্ফোরক মৃত্যু-সংখ্যায় নিয়ে গেছে। প্রতি তিনদিনে দশ হাজার মৃত্যু ঘটছে সরকারি সংখ্যা অনুযায়ী। আসল মৃত্যু-সংখ্যা এর থেকে অনেক বেশি বলেই মনে করেন বহু বিশেষজ্ঞ। অধুনাপ্রাপ্ত কিছু নথি তার অপ্রত্যক্ষ প্রমাণ। আমরা অসহায় ছিলাম না এই ভাইরাস ইনফার্নো কি অপ্রতিরোধ্য ছিল? অনতিক্রম্য ছিল কি এ অগ্নি? না, আমরা অসহায় ছিলাম না। ফেব্রুয়ারির গোড়া থেকে বোঝা গেছিল বাড়ছে আবার সংক্রমণ সংখ্যা। তখনই সমস্ত সভা সমাবেশ, সমবেত অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিলে, এ রাজ্য থেকে ও রাজ্যে যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত করলে, মাস্ক পরে থাকলে, ব্যাপক টিকা অভিযানে সামিল হলে আজ আমাদের এ অবস্থা হত না। কিন্তু আমরা ও দেশের নেতৃত্ব প্রবল বিক্রমে অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়ে গেছি। আজ আমরা বুঝতে পারছি গত বছরের দেশ জোড়া 'লকডাউন' ভাইরাস কার্ভকে প্রশমিত করতে, সময়ের ওপর বিস্তৃত করতে বা 'ফ্ল্যাটেন' করতে কতটা সাহায্য করেছিল। অক্সিজেনের অভাবেও হাসপাতালে অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু গণ-হাহুতাশ করে লাভ নেই। অতীতের একটি কণাও বদলানো যাবে না। সামনে কি আসছে? আমাদের মডেল অনুযায়ী পিক আসছে মে মাসের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে, তারপর সেটা নামতে নামতে জুনের শেষ, জুলাই। কিন্তু মনে রাখবেন এটা শেষ ঢেউ নয়। এবার যে ভুল করেছি আমরা আর যেন না হয়। টিকা নিন। এটাই আমাদের এই যুদ্ধ থেকে বেরোনোর বিজয়-টীকা। তার পরেও বাইরে বেরোলে মাস্ক পরে থাকুন। রাষ্ট্র যেখানে অনুপস্থিত, ব্যক্তিকেই তার সামাজিক কর্তব্য করতে হবে। দেখছেন না হাসপাতালের বেড, অক্সিজেনের সিলিন্ডার এসব খুঁজে দিচ্ছে কারা, টুইটারে আর ফেসবুকে? আরো পড়তে পারেন: 'মহামারি পূর্ব দিকে এগোচ্ছে', ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সতর্কবার্তা যে দুটো জিনিসের জন্য চরম হাহাকার ভারতের সেকেন্ড ওয়েভে ভারত কোভিড: মোদীর আসন বারাণসী বিপর্যস্ত, ক্ষোভে ফুটছে মানুষ মৃতদেহ দাহ করার জন্যেও পর্যাপ্ত জায়গা নেই রাজধানী দিল্লিতে। মানুষ, সাধারণ মানুষ, একে অপরকে সাহায্য করে এই তাণ্ডব থেকে ত্রাণ খুঁজছে। প্রতিরোধ গড়ছে মানুষ, মানুষের হাত ধরে। এটাই একমাত্র রুপোলী আলোর ঝিলিক এই অন্ধকারে। আমরা কয়েকজন মিলে একটা কাজ শুরু করেছিলাম এক বছর আগে। আজ কত মানুষ সেই করোনা ট্র্যাকার ব্যবহার করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি আর টাইম ম্যাগাজিনে বেরিয়েছে আমাদের এই কাজের কথা গত কয়েকদিনে। এটা একটা সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে করা বিপ্লব। সবাই মিলে কাজ করার একটা নমুনা। এই অতিমারি থেকে বেরোনোর পথে আমাদের একমাত্র সহায় বিজ্ঞান, মনুষ্যত্ব এবং জনসেবা। আসুন আমরা সম্মিলিত হয়ে যে যার দায়িত্বটুকু পালন করি, কারণ মানুষ বড় কাঁদছে, রাষ্ট্র তাহার পাশে দাঁড়ায় নাই। জনস্বাস্থ্যে জন-গণেশের দায়িত্ব সমধিক, আমরা যৌথভাবে তা পালন করি, এই মর্মান্তিক শক্তিশালী ভাইরাসকে গোহারান হারিয়ে দেই নেক্সট রাউন্ডে। | যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যর অধ্যাপক এবং রোগতত্ত্ববিদ ভ্রমর মুখার্জি ভারতের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন শুরু থেকেই। ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে এবিষয়ে একটি মডেলও তৈরি করেছেন তিনি। বিবিসি বাংলার জন্য তিনি এই লেখাটি পাঠিয়েছেন। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | মিউকোর নামের ছত্রাক দেখা যায় মাটিতে, গাছপালায়, সার এবং পচন ধরা ফলে ঐ রোগী, যিনি ডায়াবেটিক, ক্লিনিকের ভেতর সেসময় একজন কান, নাক ও গলার ডাক্তার তার নাকের ভেতর নল ঢুকিয়ে মিউকোমাইকোসিস বা বিপজ্জনক ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত কোষগুলো বের করে আনছিলেন। বিরল এই ছত্রাকের সংক্রমণ খুবই মারাত্মক যা নাক, চোখ এবং কখনও কখনও মস্তিষ্কেও আক্রমণ করে। অন্য চিকিৎসকের কাজ শেষ হলে ডা. নায়ার ঐ রোগীর চোখে অস্ত্রোপচার শুরু করবেন। ঐ রোগীর ওপর তিন ঘন্টার অস্ত্রোপচার চালিয়ে তিনি তার চোখ কেটে বাদ দেবেন। ''জীবন বাঁচাতে তার চোখ আমাকে বাদ দিতে হবে। এই রোগ থেকে বাঁচার আর কোন উপায় নেই,'' আমাকে জানান ডা. নায়ার। ভারতে যখন কোভিড-১৯ সংক্রমণের ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ কেড়ে নিচ্ছে বহু মানুষের জীবন, তছনছ করে দিচ্ছে জনজীবন, তখন ভারতের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত এখন ধরা পড়ছে কোভিড থেকে আরোগ্যের পথে বা সুস্থ হয়ে ওঠাদের শরীরে বিরল এক সংক্রমণ- যার নাম "ব্ল্যাক ফাঙ্গাস'' বা বৈজ্ঞানিক নাম মিউকোরমাইকোসিস। আরও পড়তে পারেন: মিউকোরমাইকোসিস কী ধরনের সংক্রমণ? মিউকোরমাইকোসিস খুবই বিরল একটা সংক্রমণ। মিউকোর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত এই ছত্রাক পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, সার এবং পচন ধরা ফল ও শাকসব্জিতে। "এটা মাটি এবং বাতাসে এমনিতেই বিদ্যমান থাকে। এমনকি নাক ও সুস্থ মানুষের শ্লেষ্মার মধ্যেও এটা স্বাভাবিক সময়ে থাকতে পারে," বলছেন ডা. নায়ার। এই ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা এইচআইভি/এইডস যাদের আছে, কিংবা কোন রোগের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম এই মিউকোর থেকে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। চিকিৎসকরা বলছেন মিউকোরমাইকোসিস থেকে মৃত্যুর আশংকা ৫০%। তাদের ধারণা স্টেরয়েডের ব্যবহার থেকে এই সংক্রমণ শুরু হতে পারে। কোভিড-১৯এ গুরুতরভাবে আক্রান্তদের চিকিৎসায় তাদের জীবন বাঁচাতে এখন স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। স্টেরয়েড কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। করোনাভাইরাসের জীবাণুর সাথে লড়াই করতে গিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে যেসব ক্ষতি হয় সেই ক্ষতি থামানোর জন্যও ডাক্তাররা কোভিডের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করেন। কিন্তু এই স্টেরয়েডের ব্যবহার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকি ডায়াবেটিস নেই এমন কোভিড আক্রান্তদের শরীরের রক্তে শর্করার (ব্লাড সুগার) মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে যে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণেই মিউকোরমাইকোসিস সংক্রমণ ঘটছে। কোভিড রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্য স্টেরয়েড একটা জরুরি ওষুধ কাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি? "ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সেটা আরও কমে যায়। এর ওপর কোভিড-১৯এর চিকিৎসার জন্য যখন স্টেরয়েড দেয়া হয়, তখন সেটা আগুনে ইন্ধন যোগানোর মত হয়ে দাঁড়ায়," বলছেন ডা. নায়ার। ডা. নায়ার কাজে করেন মুম্বাইয়ের তিনটি হাসপাতালে। করোনাভাইরাসের প্রাণঘাতী দ্বিতীয় ঢেউয়ের তাণ্ডবে ভারতের যেসব শহর মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত, তার একটি হল মুম্বাই। তিনি বলছেন তিনি শুধু এপ্রিল মাসেই এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণে ভোগা প্রায় ৪০ জন রোগীর চিকিৎসা ইতোমধ্যে করেছেন। এদের বেশিরভাগই ছিলেন ডায়াবেটিসের রোগী, যারা কোভিড সংক্রমণের পর বাসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এদের মধ্যে এগারোজনের চোখ অস্ত্রোপচার করে ফেলে দিতে হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের মধ্যে মাত্র ছয়টি শহর - মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদ, দিল্লি এবং পুনেতে তার মাত্র ছয়জন সহকর্মী চিকিৎসক ৫৮ জন রোগীর মধ্যে এই সংক্রমণের খবর জানিয়েছেন। এদের বেশিরভাগই সেরে ওঠার ১২ থেকে ১৫ দিনের মাথায় ছত্রাক সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। মুম্বাইয়ের ব্যস্ত সিয়ন হাসপাতালে গত দুই মাসে এই ভয়ঙ্কর ছত্রাক সংক্রমণের ২৪টি কেসের কথা জানা গেছে। ঐ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান ডা. রেণুকা ব্র্যাডু জানাচ্ছেন এর আগে এই কালো ছত্রাক সংক্রমণ বা মিউকোরমাইকোসিসের শিকার হওয়া রোগীর সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল বছরে ছয়টি। "এখন প্রতি সপ্তাহে দুটি থেকে তিনটি কেস আমরা পাচ্ছি। প্যানডেমিকের মধ্যে এটা ভয়ানক বিপর্যয়কর," তিনি বিবিসিকে জানান। দক্ষিণাঞ্চলীয় ব্যাঙ্গালোর শহরের চোখের সার্জেন ডা. রাঘুরাজ হেগড়ে একই ধরনের চিত্র তুলে ধরেছেন। গত দুই সপ্তাহে তার কাছে মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে ১৯জন রোগী এসেছে। এদের বেশিরভাগ অল্প বয়সী। "কেউ কেউ এত অসুস্থ ছিল যে আমরা তাদের অস্ত্রোপচারও করতে পারিনি।" চিকিৎসকরা বলছেন তারা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে এই ছত্রাক সংক্রমণের ভয়াবহতা এবং এত দ্রুত তা ছড়ানোর ঘটনায় খুবই বিস্মিত। গত বছর কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময় এই ছত্রাক সংক্রমণ ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ডা. নায়ার বলছেন গত দুবছরে তিনি মুম্বাইতে ১০টির বেশি কেস পাননি। "এবছর চিত্রটা খুবই আলাদা হয়ে দাঁড়িয়েছে," তিনি বলছেন। ডা. হেগড়ে বলছেন, ব্যাঙ্গালোরে তিনি তার দুই দশকের চিকিৎসা জীবনে বছরে কখনও একটা বা দুটোর বেশি কেস দেখেননি। আরও পড়তে পারেন: ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বিপর্যস্ত শহরগুলোর একটি মুম্বাই কীধরনের উপসর্গ দেখা দেয়? ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগীদের সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছে: চিকিৎসকরা বলছেন বেশিরভাগ রোগীই তাদের কাছে পৌঁছচ্ছে দেরিতে। যখন তারা দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছে। এই পর্যায়ে ডাক্তারের অস্ত্রোপচার করে চোখ ফেলে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। কারণ ছত্রাকের মস্তিষ্কে আক্রমণ ঠেকাতে চোখ বাদ দেয়া ছাড় তখন বিকল্প থাকে না। ভারতের ডাক্তাররা বলছেন, কোন কোন ক্ষেত্রে রোগীরা দুচোখেরই দৃষ্টি হারাচ্ছেন। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়ানো রুখতে চিকিৎসকদের রোগীর চোয়ালের হাড়ও কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। তবে সেগুলো একেবারে মারাত্মক সংক্রমণের ক্ষেত্রে। ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য শিরার মধ্যে ইঞ্জেকশন দেবার ওষুধের দাম ভারতীয় মুদ্রায় এক ডোজ ৩,৫০০ রুপি। আর রোগীকে এই ওষুধ দিতে হবে প্রতিদিন আট সপ্তাহ ধরে। এটাই এই রোগের চিকিৎসায় একমাত্র কার্যকর ওষুধ। প্রতিরোধ কি সম্ভব? মুম্বাইয়ের ডায়াবেটিসের চিকিৎসক ডা. রাহুল বক্সি বলছেন, "এই ছত্রাক সংক্রমণ এড়ানো একমাত্র সম্ভব কোভিড-১৯এর রোগীর চিকিৎসার সময় এবং তার সুস্থ হয়ে ওঠার সময় যদি নিশ্চিত করা যায় তাকে সঠিক পরিমাণ স্টেরয়েড দেয়া হচ্ছে, সঠিক সময় ধরে।" তিনি বলছেন গত বছর তিনি ৮০০ জন ডায়াবেটিক কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা করেছেন এবং এদের কেউ কোভিড পরবর্তী ছত্রাক সংক্রমণের শিকার হননি। "রোগী সুস্থ হবার পর বা হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর তার রক্তে শর্করার মাত্রা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা খুবই জরুরি," বলছেন ডা. বক্সি। সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন এই ছত্রাক সংক্রমণ যদিও সেভাবে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছয়নি, কিন্তু ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কেন এভাবে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে তার কারণ এখনও সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছে না। "এই ভাইরাসের ধরনটা আরও প্রাণঘাতী বলে মনে হচ্ছে। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা খুবই বেড়ে যাচ্ছে। আর সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হল আক্রান্ত হচ্ছে অনেক তরুণ," বলছেন ডা. হেগড়ে। আরও পড়তে পারেন: করোনাভাইরাস: ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাতটি পরামর্শ | শনিবার মুম্বাইয়ে চোখের ডাক্তার ডা. অ্যখশে নায়ার ২৫ বছর বয়সী এক নারীর চোখে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঐ নারী তিন সপ্তাহ আগে কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | গত ২৪ ঘণ্টায় এই ভাইরাসের নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১,১৫৩ জন। ফলে দেশটিতে গত নয় মাস জুড়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৫ লাখ ৭১৩ জনে। বাংলাদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ৭,২৮০ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও তাদের বেশিরভাগ সুস্থ হয়ে গেছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৫২৭ জন। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩১৬ নমুনা। বাংলাদেশের জনসংখ্যার হিসাবে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্তের হার ১৬.৩১ শতাংশ। নতুন রূপ নিয়েছে করোনাভাইরাস: টিকায় কি আর কাজ হবে? করোনাভাইরাস: মহামারির শুরু কি চীনে নাকি অন্য কোন দেশে হাসপাতালগুলো ফিরিয়ে দিল, মানুষ দুটি শেষ পর্যন্ত মরেই গেল দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ মোকাবেলায় রোডম্যাপ করুন - পরামর্শক কমিটি করোনার সেকেন্ড ওয়েভ কী এবং সেরকম কিছু কি আসতে যাচ্ছে? করোনাভাইরাস: বাংলাদেশে শনাক্তের প্রায় ৮০ ভাগই সুস্থ হয়েছেন শীতকালের সঙ্গে করোনাভাইরাসের কী সম্পর্ক? বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। তবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রথম কারো মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এরমধ্যেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর কয়েকটি টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের সরকার জানিয়েছে, জানুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ দেশটিতে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু হতে পারে। বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭ কোটি ৬৩ লাখ ৬ হাজার ৪৯৮ জন। আর বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ১৬ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩৪ জনের। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। | বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | বিভিন্ন পেশায় যৌন নির্যাতনের বা হয়রানির প্রতিবাদে 'মি টু' হ্যাশট্যাগ দিয়ে অনেক দেশে ক্যাম্পেইন চলছে বিভিন্ন পেশায় যৌন নির্যাতনের বা হয়রানির প্রতিবাদে 'মি টু' হ্যাশট্যাগ দিয়ে জনপ্রিয় ক্যাম্পেইন চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাংলাদেশেও অভিযোগ উঠেছে যে, পারিবারিক পরিবেশ, শিক্ষাক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র কোনো অঙ্গনেই নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা থেমে নেই। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্র বলছে, ২০১৭ সাল জুড়ে ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, সেই সাথে বেড়েছে যৌন সহিংসতায় নিষ্ঠুরতা ও ভয়াবহতা। কিন্তু বাংলাদেশে কেন জোরালোভাবে গড়ে ওঠেনি এই ক্যাম্পেইন? বাংলাদেশে টেলিকম কোম্পানির যেসব বিজ্ঞাপন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে তার একটি ছিল কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস নিয়ে নির্মিত একটি বিজ্ঞাপন, যেখানে অভিনয় করে রীতিমত তারকা হিসেবে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিলেন মডেল ফারহানা শাহরিন ফারিয়া। সম্প্রতি মিডিয়া জগতের কাজের ক্ষেত্রে নানারকম হয়রানির কথা উঠে এসেছে তার এক সাক্ষাতকারে। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন মিডিয়া জগতে কাজ করতে হলে তার ভাষায় 'স্যাক্রিফাইস' করতে হয়। ফেসবুকে লাইভ ভিডিওতে এবং একাধিক স্ট্যাটাসে হয়রানির বিষয়টিতে কথা বলেছেন ফারহানা শাহরিন ফারিয়া। "আমি ছিলাম লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৭ এর সেকেন্ড রানার আপ। মূলত যখন আমি বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ারের বিজ্ঞাপন করি তারপর থেকে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বাজে প্রস্তাব পাই", বলেন ফাারিয়া। এর আগেও তিনি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ ভিডিও তে তুলে ধরেন নানারকম হয়রানির কথা। কিন্তু এটি নিয়ে আগে মুখ খোলেননি কেন? জানতে চাইলে তিনি জানান, সবসময়ই তিনি এ বিষয়ে প্রতিবাদ করে আসছেন। যার জন্য অনেক বড় বড় কাজ হারাতে হয়েছে তাকে। "সরাসরি অফার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আমাদের সাথে 'পার্সোনাল রিলেশন' মেইনটেইন করতে হবে। কেন আমি পার্সোনাল রিলেশন রাখবো? আমার কোয়ালিটি, বিউটি দিয়ে আমি কাজ করবো। এই অফারগুলির কারণে আমাকে অনেক কাজ ছেড়ে দিতে হয়েছে। যেখানে আমার মনে হয়েছে আমার কোয়ালিটির চেয়ে 'স্যাক্রিফাইস' টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।"। কেন আমাকে কাজের অফার দেয়া হলো তার সাথে এমন শর্ত দেয়া হলো? কিন্তু বাংলাদেশে কাজ দেয়ার নাম করে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তার মত অনেকের কাছ থেকেই সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে। কিন্তু এগুলোকে কতটা গুরুত্ব দেন ইন্ডাস্ট্রির নেতৃত্ব স্থানীয় পরিচালকরা? চলচ্চিত্র পরিচালক প্রযোজক সোহানুর রহমান সোহানের কাছে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি বলেন, "এখানে ভালো খারাপ অনেক মানুষ আছে। কেউ ফিল্মকে হয়তো খারাপভাবে ব্যবহার করছে। তিনি (ফারিয়া) হয়তো এরকম কারো পাল্লায় পড়েছেন। দীর্ঘ ৪০ বছর কাজ করছি। তবে আমার ক্ষেত্রে এমন কখনো ঘটেনি। আবার অনেকসময় কেউ কেউ আমাদেরও প্রস্তাব দিয়ে সুযোগ নিতে চায়, যেটা কখনো সম্ভব না"। তবে অভিযোগ থাকলে প্রমাণ নিয়ে প্রযোজক বা পরিচালক সমিতিতে জানালে তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। হলিউডের যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর গত অক্টোবর মাসে বিবিসির এক জরিপে উঠে এসেছে, ব্রিটেনে কর্মক্ষেত্রে বা পড়াশুনার জায়গায় অর্ধেক নারীই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, এমনকি এক পঞ্চমাংশ পুরুষও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। যৌন হয়রানির শিকার প্রায় ৬৩ শতাংশ নারী বিবিসিকে জানান, ঘটনার পর তারা এ বিষয়ে কোনো রিপোর্ট করেননি বা কাউকে জানান নি। অন্যদিকে যৌন হয়রানির শিকার ৭৯ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছেন বিষয়টি তারা নিজেদের মধ্যেই চেপে রেখেছিলেন। এছাড়া, প্রতি সাত জনে অন্তত একজন অযাচিত বা অশ্লীল স্পর্শের শিকার হয়েছেন। হলিউডের এই মিছিলের মতো বিশ্বের অনেক দেশে যৌন নির্যাতন আর হয়রানির প্রতিবাদে মিছিল হয়েছে এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় 'মি টু' হ্যাশ ট্যাগে অনেক নারী-পুরুষ জানিয়েছেন কীভাবে তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। শারীরিক নির্যাতনের বা হয়রানির প্রতিবাদে 'মি টু' হ্যাশট্যাগ দিয়ে জনপ্রিয় ক্যাম্পেইন শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যৌন হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বেশ বড়সড় মিছিলও হয়েছে হলিউডে। সামাজিক মাধ্যমে হ্যাশ ট্যাগ মি টু - প্রথমে শুরু করেছিলেন সমাজকর্মী টারানা বার্ক এবং পরে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় অভিনেত্রী আলিসা মিলানো, প্রযোজক হার্ভি ওয়েনস্টিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ করার পর। এরপর বিশ্বজুড়ে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নারীদের অনেকেই এ প্রচারণায় এগিয়ে আসেন এবং নিজের ওপর ঘটে যাওয়া হয়রানির ঘটনা প্রকাশ্যে আনেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসব যৌন নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চান না কেউ। শোবিজ বা কর্পোরেট জগতের নিজেদের সাথে ঘটে যাওয়া এমন সব হয়রানির কথা জানালেও, বেশ কজনই সরাসরি বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ঢাকার বনশ্রী এলাকার একজন নারী (ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কারণে এখানে তার নামটি প্রকাশ করা হচ্ছে না।) কাজ করতেন নামকরা একটি প্রতিষ্ঠানে। কর্মক্ষেত্রেও নারীই যৌন হয়রানির শিকার। ছবিটি প্রতীকী কিন্তু কর্মক্ষেত্রে বসের দ্বারা বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে শেষশেষ চাকরি ছেড়ে দিতেই বাধ্য হন। "একদিন গিয়ে ডেস্কে বসেছি। আমার ব্রাঞ্চের একজন বস আমাকে ফোন দিয়ে বলে 'আজ কি রং এর ব্রা পড়ে এসেছো?' আমি তো শক্ড হয়ে গেলাম। পড়ে বললাম আপনাকেএকটা থাপ্পড় মারবো। সে বলে মারো, তাও ভালো ...আবার একদিন মেসেঞ্জারকে দিয়ে সিনেমার টিকেট কাটিয়ে এনে খবর দিচ্ছে'। স্যার আপনাকে নিয়ে সিনেমায় যাবে। মেসেঞ্জারদের মাধ্যমে এভাবে চাউর করা হতো, আমাকে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। পরে আমি বাধ্য হলাম চাকরিটা ছেড়ে দিতে"। কিন্তু তিনি কখনো বিষয়টি প্রকাশ করতে পারেননি। চেষ্টা করেছেন বদলির তাও না পেরে নিজেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। ২০১৬ সালে কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ সিএইচআরআই- এর গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশের পুলিশে কর্মরত নারী কনস্টেবলদের ১০ ভাগের বেশি সদস্য যৌন হয়রানির শিকার হন। আর উপ পরিদর্শক ও সহকারী উপ পরিদর্শকদের শতকরা তিন ভাগ এ ধরনের ঘটনার শিকার হন। ক্যাডার পর্যায়ের নারী পুলিশরাও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বাইরে নন-ওই রিপোর্টে বলা হয়। ২০১৭ সালের শেষে এসে আইন ও শালিস কেন্দ্র জানায়, ধর্ষণের ঘটনা ও তার ভয়াবহতা অনেক বেড়েছে। একবছরে সারাদেশ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮১৮ জন আর ধর্ষণের পর হত্যার শিকার প্রায় অর্ধশত। আত্মহত্যা করেছেন ১১ জন। বিভিন্ন অন্যায় নিপীড়ন বা নির্যাতনের খবর যারা তুলে ধরেন সেই সাংবাদিকতা পেশায় কর্মরত নারীদেরও যৌন নিপীড়নের মুখে পড়তে হয়। দীর্ঘিদন ধরে সংবাদকর্মী হিসেবে কর্মরত রুবিনা মোস্তফা খুলে বলেন তার অভিজ্ঞতা ২০১৭ সালের শেষে এসে আইন ও শালিস কেন্দ্র জানায়, ধর্ষণের ঘটনা ও তার ভয়াবহতা অনেক বেড়েছে। পুলিশ, সরকারি অফিস, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন যৌন হেনস্থার পরেও বাংলাদেশে অবশ্য ব্যাপকতা পায়নি মি টু ক্যাম্পেইন। যতটুকুই হয়েছে তাতে অবশ্য বাংলাদেশে ফেসবুক টুইটারে অনেক পুরুষও যোগ দিয়েছেন এই ক্যাম্পেইনে। অনেক পুরুষ 'আই হ্যাভনট' হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে জানিয়েছেন তারা কখনো এমন হয়রানি করেননি। এই ক্যাম্পেইনে যুক্ত ছিলেন যারা তাদের একজন পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা আফসানা কিশোয়ার। তিনি বলেন, "এর ফলে অনেকেই মুখ খুলেছেন। নিজের ওপর ঘটা যৌন নির্যাতনের কথা বলেছেন। যা দেখে আমরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছি"। আবার কোনও কোনও পুরুষও জানিয়েছেন তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনে বিষয়ে। কিন্তু এ ধরনের নির্যাতনের বর্ণনা দেয়ার পর যে প্রতিক্রিয়া আসে সেটা অনেকের কাছেই হয়ে ওঠে বিব্রতকর। ফলে অনেকেই শেষপর্যন্ত এই বিষয়টিতে আগ্রহ হারিয়েছে- যেমনটা উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর কথায়। এ সমস্ত হয়রানির ক্ষেত্রে সাহস করে মুখ খোলার যে অনীহা, তা প্রায় তিনবছর আগে পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে গণহারে যৌন হয়রানির একটি ঘটনার সময় প্রকটভাবে দেখা গেছে। ফলে সেই ঘটনার পর যে তুমুল দাবি উঠেছিল বিচারের তাও স্তিমিত হয়ে গেছে। সোশ্যাল মুভমেন্ট বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ডক্টর সামিনা লুৎফা। তিনি মনে করেন এধরনের ক্যাম্পেইন বাংলাদেশে বড় কোনো মুভমেন্ট হিসেবে গড়ে উঠতে না পারার পেছনে অনেকগুলো বিষয় কাজ করেছে। "যেকোন যৌন নিপীড়নের বিষয়ে কথা বলার বিষয় নির্ভর করে কিভাবে সমাজে নিপীড়ণকারী এবং নিপীড়িতকে দেখা হচ্ছে তার ওপরে। যদি সমাজে যৌন নিপীড়ককে একজন অপরাধী হিসেবে দেখা না হয় এবং দেখা হয় পৌরুষের অংশ হিসেবে তাহলে দুধরনের বিষয় ঘটে। একটা হচ্ছে যৌন নিপীড়নকে বুঝতে চিনতে পারেনা মানুষ। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে যে পরিস্থিতিতে আছেন সে অবস্থায় তিনি সেটা বলার সাহস পাচ্ছেন কি-না"। আর যৌন নিপীড়ন কিন্তু যৌন ইচ্ছা থেকে তৈরি হয়না, এটা কিন্তু হয় পুরুষের ক্ষমতার চর্চা থেকে। পুরুষ তার ক্ষমতাকে চর্চা করে অধীনস্ত নারীকে নানাভাবে হেনস্থা করার মধ্য দিয়ে"। তার মতে, "ক্ষমতাশালী পুরুষের বিরুদ্ধে নারী কথা তখনই বলবে যখন সে বিচারের সম্ভাবনা জানবে। কিন্তু এ সমাজ নিপীড়িত নারীকে আরো বেশি নিপীড়ন করে"। মেয়েরা যতই ঘর থেকে বের হচ্ছে এ ধরনের নির্যাতন কমার বদলে আরো বাড়ছে বলে বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের এই শিক্ষক সামিনা লুৎফা। অধ্যাপক সামিনা লুৎফা আরো বলেন, ''এ ধরনের ক্যাম্পেইনের ফলে বড় কোনো সাফল্যের উদাহরণও নেই যেটা অনুপ্রাণিত করবে। আবার এই ধরনের ক্যাম্পেইনকে সামনে নিয়ে যাবে সেরকম উদ্যম জোগানোর মত রোল মডেলও দেখা যাচ্ছেনা"। এক্ষত্রে তিনি তনু হত্যার পর সৃষ্ট বিক্ষোভ প্রতিবাদ এবং পহেলা বৈশাখে যৌন হামলার পরের প্রতিবাদের উদাহরণ টানেন। যা পরবর্তীতে আর বেশিদূর যেতে পারেনি। ফলে এই ক্যাম্পেইন সারাবিশ্বে জোয়ার তৈরি করতে পারলেও বাংলাদেশে এসে মুখ থুবরে পড়েছে। আর এরকম ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি ভাবতেই পারেননা অনেক নারী আরো বেশি সামাজিক হয়রানির আশংকায়। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতিতে বড় পরিবর্তন হলিউডে যৌন হয়রানির শিকার নারীদের মিছিল কর্মক্ষেত্রে অর্ধেক নারীই যৌন হয়রানির শিকার: বিবিসির জরিপ যৌন হয়রানির তদন্ত: পদ ছাড়লেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান শীত তাড়াতে গিয়ে যেভাবে অগ্নিদগ্ধ হচ্ছে মানুষ | সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে রাজনীতি, ব্যবসা, শিল্প-সংস্কৃতির জগতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন অত্যাচারের অনেকগুলো ঘটনা প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন বেশ কয়েকজন নারী এবং পুরুষ। হলিউডের শীর্ষ একজন প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল নীরবতা ভাঙার পালা। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | মন্দিরে চলছে পশুবলি মূল মামলাটি যারা করেছিলেন, সেই আবেদনকারীরা বলছেন শুধু হিন্দুরা নন, মুসলিমসহ সব ধর্মের মানুষ এই রায়ের আওতায় পড়বেন। হিমালয়ের কোলে পার্বত্য রাজ্য হিমাচল প্রদেশ। গোটা রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মন্দির। এই সব মন্দিরে বছরভর নানা উৎসব-পার্বণে পশুবলি দেওয়ার রীতি খুবই পুরনো। তবে এই প্রথার বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে অনেকেই সরব হচ্ছেন। পশুবলি নিষিদ্ধ করার দাবিতে ২০১০ সাল থেকে হিমাচল হাইকোর্টে অন্তত তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলাগুলি একত্র করে আদালতের ডিভিশন বেঞ্চে তার দীর্ঘ শুনানির পর হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়েছে, রাজ্যের যে কোনও ধর্মীয় স্থানে বা তার আশেপাশের এলাকায় পশুবলি সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। ভারতের বহু জায়গাতেই পশুবলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। জনস্বার্থ মামলাটিতে মূল আবেদনকারী ও স্থপতি সোনালি পুরেওয়াল বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, পশুবলির মতো নিষ্ঠুর ও বর্বর প্রথার অবসান ঘটানোই উচিত। যেমন ভারতে আরও বহু নিষ্ঠুর প্রথা আইন করে বন্ধ করতে হয়েছে। ''ঈশ্বরকে যদি সন্তুষ্ট করতেই হয় তাহলে ফুল বা মিষ্টি দিয়েও তা করা যায়, পশুর রক্তই নিবেদন করতে হবে এমন তো কোনও কথা নেই। হয়তো শত শত বছর আগে এই প্রথার প্রাসঙ্গিকতা ছিল ...আজ আমাদের আরও মানবিক হয়ে ওঠার সময় হয়েছে।'' হাইকোর্ট শুধু পশুবলি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেই ক্ষান্ত হয়নি, ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি রাজীব শর্মা রাজ্যের সব ডেপুটি কমিশনার, প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপার ও সব থানার স্টেশন হাউস অফিসারদেরও নির্দেশ দিয়েছেন এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হচ্ছে কি না, সে দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে। ব্যাপক হারে পশুবলির ফলে বিভিন্ন মন্দিরের পরিবেশ কীভাবে কলুষিত হয়ে উঠেছে, মৃত পশুদের মুন্ডু ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে – এই জাতীয় বিভিন্ন ছবি যখন আদালতে পেশ করা হয়, তখন তারাও বিচলিত বোধ করেছেন বলে বিচারপতিরা স্বীকার করেছেন। তবে এই রায়ের পর এক শ্রেণীর মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে যে আঘাত লাগতে পারে সে কথা আবেদনকারীরাও মানছেন। সোনালি পুরেওয়াল বলেন, ''দেখুন যে কোনও নতুন আইনেই ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হতে পারে। কিন্তু তাতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা শুধু বলছি যদি ধর্মীয় কারণেই এটা করা হয়ে থাকে, তাহলে যে কোনও ধর্মের যেটা মূল বিষয় – সেই শান্তি আর মানবিকতাকেই তো এখানে হত্যা করা হচ্ছে। এরকম বর্বরোচিত একটা কাজ করে আপনি আপনার ধর্মের কোনও উপকারে আসছেন না।'' তিনি আরও জানিয়েছেন, আদালতের এই রায় শুধু হিন্দুদের জন্য নয় – মুসলিমসহ যে কোনও ধর্মাবলম্বীদের জন্যই প্রযোজ্য হবে। হিমাচল প্রদেশে অবশ্য জনসংখ্যার মাত্র ১.৫% মুসলিম। তার পরও আগামী মাসে মুসলমানদের গুরুত্ত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব কোরবানির ঈদের সময় এই রায়ের কী প্রভাব পড়ে, সেটা দেখার বিষয় হবে। হিমাচল প্রদেশের রাজ্য সরকার অবশ্য এখনও এই রায়ের ব্যাপারে তাদের কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। | ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের হাইকোর্ট কোনও ধর্মীয় কারণে পশুবলি দেওয়ার প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার রায় দিতে গিয়ে আদালত বলেছে, ওই পার্বত্য রাজ্যে কোনও ধর্মীয় স্থানে বা ধর্মীয় উৎসবের সময় পশুবলি দেওয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং প্রশাসনকেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হবে। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | কলা ভবনের সামনে অপরাজেয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল কোলকাতা, বোম্বে এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে থেকেই ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা ছিল কিন্তু এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয় ইউরোপিয় মডেলে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ছিল উঁচু। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিলেন মূলত পশ্চিম বঙ্গের উঁচুতলার হিন্দু সন্তানরা। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের আগে অবিভক্ত বাংলায় ১৯টি কলেজ ছিল। তার মধ্যে পূর্ব বাংলায় নয়টি। তবে সেটাই পর্যাপ্ত ছিল বলে মনে করেননি তখনকার পূর্ব বাংলার মানুষ। কেন পূর্ববঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন ছিল: ১৯০৫ সালে বাংলা প্রেসিডেন্সি ভাগ করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে নতুন এক প্রদেশ করা হয়। যার প্রচলিত নাম বঙ্গভঙ্গ। পূর্ববঙ্গে পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসা ছিল এই উদ্যোগের একটি অংশ। বঙ্গভঙ্গের এই সময়টা ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য, মাত্র ছয় বছর। কারণ এর মধ্যেই পশ্চিম বঙ্গের হিন্দু নেতারা প্রবল আন্দোলন করেন এই বঙ্গভঙ্গের। কার্জন হলের একাংশ এদিকে মুসলমান নেতারা নতুন প্রদেশ হওয়াতে শিক্ষাসহ নানা সুবিধা পাবেন এই আশায় উজ্জীবিত হন। কিন্তু গোটা ভারতবর্ষে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং তাদের বিরোধিতার মুখে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়। ফলে মুসলমানদের ক্ষোভ আরো পুঞ্জিভূত হতে থাকে। তারা মনে করে অর্থনৈতিক বৈষম্যের সাথে সাথে শিক্ষা ক্ষেত্রেও তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। লেখক এবং গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা' বই এ লিখেছেন "কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বাঙালী মুসলমানদের ক্ষোভ ছিল ১৯০৫- এ পূর্ব বাংলা এবং আসাম প্রদেশ গঠনের অনেক আগে থেকেই। ... ক্ষোভের কারণ শুধু হিন্দু প্রাধান্য নয়, শিক্ষাক্রমে হিন্দুধর্ম প্রাধান্য পাওয়ায় মুসলমানদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়"। যারা বিরোধিতা করেছিলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নাম সৈয়দ আবুল মকসুদের 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা' বইতে উঠে এসেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোকজনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন বলে উল্লেখ করা হয়। ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালে তাঁর ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাৎ এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। এসংক্রান্ত বিভিন্ন বইতে উঠে এসেছে, লর্ড হার্ডিঞ্জ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী মূল্যে অর্থাৎ কিসের বিনিময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকবেন? শেষ পর্যন্ত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধিতার অবসান করেছিলেন। পরবর্তীতে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগে সহযোগিতা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার তার সঙ্গে ছিলেন স্যার নীলরতন সরকার। কেন এই বিরোধিতা?: কথা সাহিত্যিক এবং প্রাবন্ধিক কুলদা রায় তাঁর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও রবীন্দ্রনাথ' নামক প্রবন্ধে লিখেছেন মূলত-বিরোধিতা করেছিলেন তিন ধরনের লোকজন- এক. পশ্চিমবঙ্গের কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কোনো লাভ নেই। পূর্ববঙ্গের মুসলমানদেরই লাভ হবে। তাদের জন্য ঢাকায় নয় পশ্চিমবঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়াটাই লাভজনক। দুই. পূর্ব বাংলার কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে ১০০০০ জনের মধ্যে ১ জন মাত্র স্কুল পর্যায়ে পাশ করতে পারে। কলেজ পর্যায়ে তাদের ছাত্র সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা খুবই কম হবে। পূর্ববঙ্গে প্রাইমারী এবং হাইস্কুল হলে সেখানে পড়াশুনা করে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়বে। আগে সেটা দরকার। এবং যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে মুসলমানদের জন্য যে সরকারী বাজেট বরাদ্দ আছে তা বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যয় হয়ে যাবে। নতুন করে প্রাইমারী বা হাইস্কুল হবে না। যেগুলো আছে সেগুলোও অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় চান নি। তিন. পশ্চিমবঙ্গের কিছু হিন্দু মনে করেছিলেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ কমে যাবে। সুতরাং কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কীভাবে? এই ভয়েই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি বিরোধিতা করেছিলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা কী ছিল সেটা নিয়ে বিস্তর লেখা-লেখি হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। যারা বলেছেন তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন তারা স্বপক্ষে দালিলিক কোন তথ্য প্রমাণ দেন নি। সেই সময়কার সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা এবং রবীন্দ্রনাথের সেই সময় যাদের সাথে উঠা-বসা ছিল তাদের কয়েকজন ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে। তাই অনেকেই সহজ সমীকরণ মিলিয়ে লিখেছেন তিনিও এর বিপক্ষেই ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের জোড়াসাকোর বাড়ি সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা' বই এ লিখেছেন "শ্রেণীস্বার্থে রবীন্দ্রনাথও ছিলেন কার্জনের (লর্ড কার্জন) ওপর অতি ক্ষুব্ধ। কার্জনের উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত মন্তব্যের তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কলকাতার হিন্দু সমাজে। তাতে রবীন্দ্রনাথও অংশগ্রহণ করেন। তিনি যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন,তাতে কিছু ছিল যুক্তি, বেশির ভাগই ছিল আবেগ এবং কিছু ছিল ক্ষোভ"। আবার যারা রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করেননি বলেছেন তাঁরা এর স্বপক্ষে বেশ কিছু ঘটনা এবং এবং দিন তারিখের কথা উল্লেখ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেন " কেউ কেউ কোনো প্রমাণ উপস্থিত না করেই লিখিতভাবে জানাচ্ছেন যে, ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ কলকাতায় গড়ের মাঠে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে এক বিরাট জনসভা হয়। ও রকম একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বটে, কিন্তু তাতে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি ছিল অসম্ভব, কেননা সেদিন তিনি কলকাতাতেই ছিলেন না। ১৯১২ সালের ১৯ মার্চ সিটি অব প্যারিস জাহাজযোগে রবীন্দ্রনাথের বিলাতযাত্রার কথা ছিল। তাঁর সফরসঙ্গী ডাক্তার দ্বিজেন্দ্রনাথ মিত্র জাহাজে উঠে পড়েছিলেন, কবির মালপত্রও তাতে তোলা হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু আকস্মিকভাবে ওইদিন সকালে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে মাদ্রাজ থেকে তাঁর মালপত্র ফিরিয়ে আনা হয়। কলকাতায় কয়েক দিন বিশ্রাম করে ২৪ মার্চ রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে চলে আসেন এবং ২৮ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে সেখানে বসে ১৮টি গান ও কবিতা রচনা করেন"। তৌহিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক এবং গবেষক আবার সেই সময়কার সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গবেষক তৌহিদুল হক বলছিলেন " ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে তিন শ্রেণীর মানুষ বিরোধিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে আমরা রবীন্দ্রনাথকে তৃতীয় কাতারে রাখতে চাই। কারণ তারা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উচ্চবর্ণের কিছু হিন্দু সমাজ। তাঁদের সাথে বিশেষ করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর সাথে রবীন্দ্রনাথের একাধিকবার বৈঠক,আলোচনা হয়েছে শিলাইদহ যাওয়ার আগেও।এ থেকে আমরা অনুধাবন করতে চাই সেখানে পূর্ববঙ্গের সার্বিক উন্নতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। তবে এরও কোন স্পষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই"। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যারা পক্ষে কাজ করেছিলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা যে হয়েছিল নানা পক্ষ থেকে সেটা ইতিহাস ঘাটলে তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আবশ্যকতা রয়েছে সেটা বোঝাতে এবং প্রতিষ্ঠার ব্যাপার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন যাঁরা তাদের কথা না বললেই নয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। কিন্তু, হঠাৎ করে ১৯১৫ সালে নবাব সলিমুল্লাহের মৃত্যু ঘটলে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী শক্ত হাতে এই উদ্যোগের হাল ধরেন। অন্যান্যদের মধ্যে আবুল কাশেম ফজলুল হক উল্লেখযোগ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় পূর্ব বাংলার হিন্দুরাও এগিয়ে এসেছিলেন। এদের মধ্যে ঢাকার বালিয়াটির জমিদার অন্যতম। জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় তাঁর পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে। | ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার শুরু ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর। ১৮৫৭ সালে ভারতের বড় লাট লর্ড ক্যানিং 'দ্য অ্যাক্ট অফ ইনকরপোরেশন' পাশ করে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | রিপোর্টটিতে অবশ্য বলা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে ইচ্ছে করলে অনেকটাই খাপ খাওয়ানো সম্ভব। জাপানে এই বৈঠক থেকে বিজ্ঞানীরা এই যে রিপোর্ট দিয়েছেন - তাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে 'পৃথিবীর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সবচেয়ে ব্যাপকভিত্তিক মূল্যায়ন' হিসেবে। কি হবে এই প্রতিক্রিয়া ? আইপিসিসি বলছে, বন্যার ঝুঁকি এবং খাদ্য সংকট বাড়বে, ফসলের ফলন এবং পানির প্রাপ্যতারই ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে, হুমকির মুখে পড়বে মানুষের স্বাস্থ্য। বলা হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রতিক্রিয়া হবে তীব্র, কেউই-কোনকিছুই এর প্রভাবের বাইরে থাকতে পারবে না এবং সেই পরিবর্তনগুলোকে আর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়াও যাবে না। জাতিসংঘের এই প্যানেলের সদস্যরা বলছেন, এই পরিবর্তনের মাত্রা যে ব্যাপক হবে তার সপক্ষে তারা বহু তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন। মানুষ হয়তো এসব পরিবর্তনের মধ্যে কয়েকটির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, কিন্তু তা হবে সীমিত। জাপানের ইয়োকোহামায় আইপিসিসির এই বৈঠকে রিপোর্টটির মূল সুর কি হবে তা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে । আইপিসিসির চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র পাচাউরি সতর্ক করে দিয়েছেন যে জলবায়ুর পরিবর্তনকে উপক্ষো করা হলে তারা পরিণতি হবে গুরুতর। তিনি বলেন, "এই রিপোর্টে যা তুলে ধরা হয়েছে তাকে যেন উপেক্ষা করা না হয় । এর পক্ষে একটা বড় কারণ হলো, এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী এবং গভীর। আমি আরো একবার বলতে চাই যে আমরা এই রিপোর্টে মানুষের নিরাপত্তা ওপর যে প্রভাব পড়বে -তার সম্পর্কে খুবই স্পষ্টভাবে বলেছি। আমরা মনে করি এটা বিশ্বাস করার কারণ আছে যে - গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর জন্য বিশ্ব যদি কিছু না করে, এবং জলবায়ু পরিবর্তন যদি এভাবে বাড়তেই থাকে তাহলে মানব সমাজ কাঠামোর যে স্থিতিশীলতা সেটাই বিপন্ন হয়ে পড়বে"। আইপিসিসি'র কো-চেয়ারম্যান ড. ক্রিস্টোফার ফিল্ড হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে পড়তে শুরু করেছে। "এই রিপোর্টের একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তি হচ্ছে, 'জলবায়ু পরিবর্তন একটা কাল্পনিক ব্যাপার' এমন ধারণার যুগে আমরা আর বাস করছি না। আমরা এমন পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে এর প্রভাব ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে এবং তা ব্যাপক। আমরা বিষুবীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চল পর্যন্ত, সমুদ্রতীর থেকে পর্বত পর্যন্ত এর প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের পৃথিবী যে ইতিমধ্যেই বদলে গেছে তা প্রশ্নাতীত"। কার্বন নির্গমণ কমানোর জন্য একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আলোচকদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে এই রিপোর্টটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে মনে করা হয়। অবশ্য এই রিপোর্টটিকে প্রণেতাদের একজন বলেছেন, রিপোর্টটিতে আসন্ন বিপদের ভয় দেখানোর মানসিকতা কাজ করেছে। কিন্তু সার্বিকভাবে রিপোর্টটির বক্তব্য হলো, কার্বন নির্গমণের মাত্রা দ্রুতগতিতে কমানো গেলে সবচেয়ে গুরুতর যেসব পরিণতির কথা বলা হয়েছে তা এড়ানো সম্ভব হবে। | নতুন একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতির নানা তথ্য প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। আইপিসিসি নামে পরিচিত জাতিসংঘ প্যানেলের সবশেষ এই রিপোর্টটিতে হুঁশিয়ার করা হয়েছে, এখনই সাবধান না হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সেই সাথে খাদ্যসঙ্কট এবং রোগে-শোকে মানব সভ্যতা বিপন্ন হবে। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | কোভিড সংক্রান্ত বিধিনিষেধগুলি মানতে জনগণকে বাধ্য করার জন্য শহরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী। ঈদের আগে দেশের মধ্যে মানুষের যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছেনা। দেখুন করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে বিবিসির উমর নাঙ্গিয়ানার রিপোর্ট। | করোনা মহামারির তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় পাকিস্তানের হাসপাতালগুলো টলমল করছে। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | আলি ফৌজি পাঁচ মিনিটের মধ্যে একটা বোমা বানিয়ে ফেরতে পারেন আলি ফৌজি ছিলেন জেমা ইসলামিয়ার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। জেমা ইসলামিয়া হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার একটি জঙ্গী গোষ্ঠী - যাদের সাথে আল-কায়েদার সম্পর্ক আছে। ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গী হামলা হয়েছিল ২০০২ সালে বালিতে, যাতে ২০০ লোক নিহত হয়। ওই আক্রমণের জন্য জেমা ইসলামিয়াকে দায়ী করা হয়। “আমার ভাইয়েরা বালি দ্বীপের পর্যটন এলাকার কেন্দ্রস্থলে বোমা আক্রমণটি চালিয়েছিল। এটা ছিল একটা বড় আকারের বোমা।“ ওই গোষ্ঠীটি ইন্দোনেশিয়ায় বড় বড় হোটেল এবং কিছু পশ্চিমা দেশের দূতাবাসে আরো কয়েকটি বোমা হামলা চালায়। গোষ্ঠীটির মূল ঘাঁটি ছিল পূর্ব জাভার লামোগানে আপাতদৃষ্টিতে নিভৃত একটি গ্রাম টেঙ্গুলুনে। এখন অবশ্য আলি ফৌজির মিশন একেবারেই অন্যরকম। তিনি সাবেক জিহাদিদের সহিংসতার জীবন ত্যাগের কাজে সহায়তা করেন। তা ছাড়া দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জঙ্গী গ্রুপগুলোতে নতুন ছেলেরা যেন যোগ না দেয় – সে জন্যও কাজ করেন তিনি। আলি ফৌজি বলছেন, “বাস্তবতা হলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে নতুন লোক নিয়ে আসার কাজটা অনেক সহজ। “তাদের শুধু একটা ট্রিগার টিপতে হয়, আর অনেক লোক তাদের সাথে যোগ দেয়। কিন্তু ডি-র্যাডিক্যালাইজেশন বা উগ্রপন্থা থেকে মানুষকে সরিয়ে আনতে সময় লাগে অনেক। এটা করতে হয় ধাপে ধাপে।“ আলি ফৌজিকে তার এই নতুন মিশনের জন্য ব্যক্তিগতভোবে অনেক চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। “আমাকে যে ঝুঁকি নিতে হচ্ছে তা অত্যন্ত তীব্র। শুধু মৌখিক আক্রমণ নয়, রয়েছে হত্যার হুমকি। কিন্তু সত্যি বলতে কি আমি ভয় পাই না – কারণ আমি জানি আমি যা করছি তা সঠিক। আমি এ কাজ করার জন্য যে কোন সময় মরতে প্রস্তুত।“ বালিতে ২০০২ সালের বোমা হামলায় বিধ্বস্ত নাইটক্লাব । কীভাবে জঙ্গী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন আলি ফৌজি? আলি ফৌজি আর তার ভাইয়েরা জঙ্গী গোষ্ঠীতে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন মোবাইল ফোনে বিদেশের নানা যুদ্ধের ভিডিও দেখে। জাভার নিভৃত গ্রামে বসে তারা দেখতেন আফগানিস্তান, বসনিয়া আর ফিলিস্তিনের যুদ্ধের ভিডিও। “আমরা দেখতাম বেসামরিক লোকদের ওপর বর্বর আক্রমণের ভিডিও। আমি চাইতাম অত্যাচারীদের হাত থেকে মুসলিম জনগণকে রক্ষা করার জন্য জিহাদ করতে। তখন বয়স কম, রক্ত গরম। আমি চাইতাম পাল্টা লড়াই করতে।“ আলি ফৌজির ভাইয়েরা মুজাহিদীনের হয়ে যুদ্ধ করতে গেলেন আফগানিস্তানে। আলি ফৌজি দেশ থেকে বেশি দূরে যান নি। তিনি যোগ দিলেন দক্ষিণ ফিলিপিনে একটি মুসলিম আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইরত ইসলামী জঙ্গিদের সাথে। “আমি আসলেই চেয়েছিলাম যেন সেখানে আমার মৃত্যু হয়। আমি সব সময়ই আমার মৃত্যুর কথা কল্পনা করতাম” – বলেন তিনি। “আমি বিশ্বাস করতাম আমার যদি যুদ্ধে মৃত্যু হয় তাহলে আমি সোজা বেহেশতে চলে যাবে এবং ফেরেশতাদের সাথে আমার দেখা হবে। আমাদের ওস্তাদরা একথাই আমাদের প্রতিদিন বলতেন।“ দেশে ফেরার পর কী করলেন তারা আলি ফৌজির ভাইয়েরা দেশে ফেরার পর তারা বিদেশে যা শিখেছিলেন - তা প্রয়োগ করতে শুরু করলেন । ২০০২ সালের অক্টোবর মাসে বালির কুটা এলাকায় নাইটক্লাবগুলো লক্ষ্য করে দুটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় যে দলটি – তাতে ছিলেন তারা। এই দ্বীপটি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল। “আমি টিভিতে সেই ঘটনা, এবং এত বেশি মৃতদেহ দেখে স্তম্ভিত হলাম” বললেন আলি ফৌজি – “এ ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ সরাসরি আমাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে পড়লো।“ তার দুই ভাই আলি গুফরন এবং আমরোজির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলো ওই ঘটনায়। তৃতীয় ভাই আলি ইমরনের হলো যাবজ্জীবন কারাদন্ড। আলি ফৌজির তৃতীয় ভাই আলি ইমরন। বালির বোমা হামলার জন্য তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। আলি ফৌজি জোর দিয়ে বলেন, তিনি বালির বোমা হামলায় জড়িত ছিলেন না। তিনি অন্য কয়েকটি সন্ত্রাস-সম্পর্কিত অপরাধের জন্য তিন বছর জেল খাটলেন। আর সে সময়ই তার জীবন নাটকীয়ভাবে নতুন এক দিকে মোড় নিল। বোমা হামলার শিকারদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ “পুলিশ আমার সাথে খুবই মানবিক আচরণ করেছিল। যদি তারা আমার ওপর অত্যাচার করতো তাহলে হয়তো আমার পরের সাত প্রজন্ম ইন্দোনেশিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো'' – বলছেন আলি ফৌজি। “আমরা পুলিশকে ঘৃণা করতাম। মনে করতাম, ওরা সাক্ষাৎ শয়তান। এভাবেই আমাদের শেখানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। তখনই আমার পুরো দৃষ্টিভঙ্গী একেবারেই পাল্টে গেল।“ তার দলের চালানো আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন যারা – তাদের সাথে দেখাও করেছিলেন আলি ফৌজি। “আমি কেঁদেছিলাম। আমাদের বোমায় যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছিল তা দেখে আমার মন ভেঙে গিয়েছিল। তার পরই আমার মধ্যে যুদ্ধের দূত থেকে পরিবর্তিত হয়ে একজন শান্তির যোদ্ধায় পরিণত হবার ইচ্ছে তৈরি হয় ।“ শান্তি চক্র টেংগুলুন গ্রামের প্রধান মসজিদে থেকে মাগরেবের আজান হচ্ছে। মাসজিদের পাশে একটি চারকোণা খালি জায়গা। সেখানেও পেতে দেয়া হলো জায়নামাজ। এই জায়গাটির পাশেই ‘শান্তি চক্রের’ অফিস। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সাল থেকে গড়ে তুলছেন আলি ফৌজি। তার উদ্দেশ্য উগ্রপন্থা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনা। আজকের নামাজে ইমাম হচ্ছেন বালির বোমা হামলার শিকার হওয়া দুজন। তাদেরকে সম্মানিত অতিথি করে নিয়ে আসা হয়েছে সেই গ্রামে – যে গ্রাম ছিল সেই আক্রমণের জন্য দায়ী জঙ্গিদের এক সময়কার ঘাঁটি। টেংগুলুন গ্রামে আলি ফৌজির সংগঠনের সভা আলি ফৌজি বলছেন, “আমি প্রায়ই ওই হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের এখানে নিয়ে আসি। কারণ তাদের সাথে সাক্ষাতের মধ্যে দিয়েই আমার মনে পরিবর্তন এসেছিল।“ মঞ্চের পাশে একটি পর্দায় দেখানো হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ায় সকল বোমা হামলার পরের ভয়াবহ ধ্বংসলীলার ভিডিও। এই সভা প্রকৃতপক্ষেই নজিরবিহীন। কারণ এতে আগতদের মধ্যে আছে পুলিশের লোকেরা – যারা এই গ্রামের লোকদের গ্রেফতার করেছেন। আবার সেই লোকেরাও আছেন যারা সন্ত্রাসের দায়ে জেল খেটেছেন। তারা এখানে এসে শুনছেন সেই বোমা হামলাগুলোর শিকারদের কথা। অশ্রূসজল চোখে তারা বর্ণনা করছেন তাদের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা। শ্রোতাদের মধ্যে একজন হলেন ৩৩ বছর বয়স্ক জুলিয়া মহেন্দ্র। তার বাবা আমরোজি বালির আক্রমণে জড়িত থাকার জন্য মৃত্যুদণ্ড হয়। তার দণ্ড যখন কার্যকর করা হয় তখন জুলিয়া মহেন্দ্র ছিলেন ১৬ বছরের কিশোর। আমরোজিকে সংবাদমাধ্যম নাম দিয়েছিল ‘সহাস্য ঘাতক” –কারণ বিচারের সময় তার মধ্যে কোন গ্লানি দেখা যায়নি, তিনি হাসছিলেন এবং মৃত্যুদণ্ড নিয়েও তার কোন চিন্তা ছিল না। সভার পর জুলিয়া মহেন্দ্র বোমা হামলার দুই শিকারের সাথে কথা বললেন। তাদের আলিঙ্গন করলেন, হাত ধরলেন, বার বার দু:খ প্রকাশ করলেন। তিনি বলছেন, “আমি দু:খ প্রকাশ করছি এই জন্য নয় যে আমি কোন অপরাধ করেছি। কিন্তু তিনি ছিলেন আমার বাবা, এবং এই লোকেরা আমার পরিবারের একটা কাজের শিকার। আমার দায়িত্ব আছে আমার বাবার পক্ষ থেকে দু:খ প্রকাশ করার। “ মহেন্দ্র পিতার মৃত্যুদন্ডের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন জুলিয়া মহেন্দ্রর জীবনও বিস্ময়কর সব পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। জুলিয়া মহেন্দ্র। তার বাবা আমরোজির মৃত্যুদন্ড হয়েছে ২০০২ সালের বালি বোমা হামলার জন্য “আমার বাবার যখন মৃত্যুদন্ড কার্যকর হলো –তখন আমি চেয়েছিলাম প্রতিশোধ নিতে। আমিও চেয়েছিলাম বোমা বানানো শিখতে“ – স্বীকার করলেন তিনি। “কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এবং আমার দুই চাচা আলি ফৌজি এবং আলি ইমরনের উপদেশ-পরামর্শে আমি ধীরে ধীরে উপলব্ধি করলাম - সেটা হবে ভুল পথ। আমি তথন সন্ত্রাসীদের মধ্যে পরিবর্তন আনার যে প্রকল্প তারা শুরু করেছেন তাতে যোগ দিলাম।“ মহেন্দ্র বলছেন. “আমি অনেক পথ পেরিয়ে এখানে এসে পৌঁছেছি। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পেরেছি যে জিহাদ মানে যুদ্ধ করা বা মানুষ হত্যা নয়। নিজের পরিবারের জন্য পরিশ্রম করাটা জিহাদ হতে পারে।“ মহেন্দ্র বলছেন একদিন রাতে তার ঘুমন্ত শিশুপুত্রের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার চোখে জল আসে, তিনি তার নিজের পিতার কথা ভাবতে থাকেন। তিনি বলছেন “আমি যার ভেতর দিয়ে গেছি – আমি চাই না আমার ছেলে তার মধ্যে দিয়ে যাক। আমি যদি আমার বাবার পথ নিতাম তাহলে আমার সন্তান পরিত্যক্ত হতো। আমি বুঝেছিলাম, সত্যিকার জিহাদ হবে তাদের যত্ন নেয়া, সুরক্ষা দেয়া।“ তবে মহেন্দ্র বলেন তার কিছু বন্ধু ইন্দোনেশিয়ার কয়েকটি জঙ্গি গ্রূপে যোগ দিয়েছে – যাদর সাথে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর কিছু যোগাযোগ আছে। “কেন লোকে ওই পথে যায় তার অনেক কারণ আছে। তার অর্থনৈতিক অবস্থা, করার মতো কিছু না থাকা, তাদেরকে কি শেখানো হয়েছে, কারা তাদেরকে প্রভাবিত করেছে – এমন অনেক কিছু।“ জেলে বন্দীদের মধ্যেও কাজ করেন আলি ফৌজি লামোঙ্গান কারাগারের দরজায় টোকা দিলেন আলি ফৌজি। তার পরিচিত জায়গা এটি। এখানে তিনি প্রায়ই আসেন তার পরিবারের কারাভোগরত সদস্যদের সাথে দেখা করতে। তবে শুধু তাই নয়, নতুন বন্দীদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবার জন্যও কাজ করেন তিনি। “উগ্রপন্থা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমি যেভাবে কাজ করি তা কোন তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। আমি কাজ করি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে।“ “আমি একজন যোদ্ধা এবং সন্ত্রাসী ছিলাম। তাই আমি এখানে আসি তাদের একজন বন্ধু হিসেবে।“ এ জন্য বাধারও সম্মুখীন হয়েছেন আলি ফৌজি। যেহেতু তিনি পুলিশের সাথে কাজ করেন , তাই কিছু লোক তাকে দেখে একজন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে। “তারা বলে, আমি পুলিশ বা তারা রক্ষীদের চাইতেও বড় কাফির। অনলাইনে আমাকে নিয়মিত গালাগালি করা হয়, ফোনে হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু তাতে কিছু এসে যায় না। আমি এটা সামলাতে পারি।“ আলি ফৌজি বলছেন, ২০১৬ সাল থেকে তার প্রতিষ্ঠান ৯৮ জনের সাথে কাজ করেছে, এবং তার মধ্যে দুজন জেল থেকে বেরিয়েই আবার জঙ্গি তৎপরতায় যোগ দিয়েছে। “উগ্রপন্থা থেকে ফিরিয়ে আনা সহজ নয় কারণ আমাদের মানুষের আবেগ এবং চিন্তাধারা নিয়ে কাজ করতে হয়। তাই আপনাকে সঠিক ওষুধ দিতে হবে, এবং এ ক্ষেত্রে আমরা কখনো কখনো ভুল করি। “ সুমার্নো জেমা ইসলামিয়ার অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রেখেছিলেন তবে কখনো কখনো তারা সফলও হন। সুমার্নো হচ্ছেন – আলি ফৌজির ভাষায় - তাদের একটি সাফল্যের কাহিনি। সুমার্নোর কাহিনি সুমার্নো আমাকে তাদের গ্রামের বাইরে একটি রাস্তার পাশের শুকনো ক্ষেতে নিয়ে গেলেন। তিনি বললেন – বালি বোমা হামলার পর এখানেই তিনি জেমাহ ইসলামিয়ার অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রেখেছিলেন। সুমার্নো তিন বছর জেল খাটার পর আলি ফৌজির সহায়তা নিয়ে একটি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি ছোট ট্রাভেল কোম্পানি – যা ইন্দোনেশিয়া থেকে হজযাত্রীদের মক্কায় নিয়ে যাবার প্যাকেজ দেয়। গ্রাম থেকে গাড়িতে ২০ মিনিট দূরের পাসিরানে তাদের অফিস। সুমার্নো বলছেন, তিনি এ ব্যবসার মাধ্যমে সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দিতে চান এবং তার সহিংসতার জীবন পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চান। তিনি বলছেন, প্রথম দিকে তিনি তার মক্কেলদের তার অতীতের কথা বা এমনকি কোন গ্রামে তার জন্ম – তাও বলতেন না। তবে এখন তিনি আর এসব কথা গোপন করেন না। “আমি লোককে আমি বলি, আমি আলি গুফরন আর আমরোজির সম্পর্কীয় ভাই – যাদের বালির বোমা হামলার জন্য মৃত্যুদন্ড হয়েছে। একথাও বলি যে আমি তাদের দলে ছিলাম - কিন্তু আল্লাহকে ধন্যবাদ যে আমি সেই নষ্ট চিন্তা থেকে মুক্ত হয়েছি। সেই আমিই আপনাদের মক্কা যাত্রার গাইড।“ ‘আফটার-স্কুল’ ক্লাব এই গ্রামের মসজিদের পাশে একটি ঘরে ছেলেমেয়েরা তাদের স্কুলের সময় শেষ হয়ে যাবার পরও কোরান শিক্ষার ক্লাস করে। এখানে যারা আসে তাদের কারো কারো পিতামাতা সন্ত্রাসের অভিযোগে জেলে আছে। এই স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে আছেন আলি ফৌজির স্ত্রী লুলু, আর আলি ইমরনের স্ত্রী জুমরোত্তিন নিসা। লুলু বলেন, তারা এই ছেলেমেয়েদের শেখান যে পৃথিবীর সবাই এক মতবাদে বিশ্বাস করে না। আফটার-স্কুল কার্যক্রম চালাচ্ছেন লুলু ফৌজি “আমাদের গ্রামে এমন অনেকে আছে যারা মুসলিম নয়, এবং যতক্ষণ তারা আমাদের ধর্মে হস্তক্ষেপ না করছে – ততক্ষণ আমাদের তাদেরকে সম্মান করতে হবে ।“ তবে লুলু বলছেন, তারা সবাইকে বোঝাতে পারেননি। “আমাদের নতুন মিশনের পক্ষে বা বিপক্ষেও অনেক লোক আছে। যারা এখনো জঙ্গি তারা আমাদের পছন্দ করে না। তারা আমাদের সাথে দূরত্ব রক্ষা করে। বালির হামলায় বহু নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়েছে যাদের মধ্যে মুসলিমও ছিল। এটা আমাদের গোষ্ঠীর মধ্যে পরিবর্তন এনেছে, তবে অনেকে আছে যারা বদলায়নি।“ পূর্ব জাভার গির্জায় আত্মঘাতী বোমা হামলা গত বছর মে মাসে পূর্ব জাভার তিনটি গির্জায় আক্রমণ চালায় আত্মঘাতী হামলাকারী একটি পুরো পরিবার। একটি গির্জায় হামলা চালায় পরিবারটির পিতা। আরেকটিতে তার দুই পুত্র। আর তৃতীয়টিতে বিস্ফোরণ ঘটায় তার স্ত্রী এই ১২ ও ৯ বছরের দুই কন্যা। তারা ছিল জামাহ আরসারুত দাওলা (জে এ ডি) নামে একটি নেটওয়ার্কের সদস্য যাদের সাথে আইএসের যোগাযোগ আছে। জে এ ডি ইন্দোনেশিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। লুলু ফৌজি বলছিলেন, নারীরা এরকম আক্রমণে অংশ নিচ্ছে এটা দেখে তিনি স্তম্ভিত হয়েছেন। “আমার স্বামী সন্ত্রাসের জন্য কারাভোগরতদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে, অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। কিন্তু কিছু লোক এখনো উগ্রপন্থীই আছে, আমরা কখনো এটা সম্পূর্ণ দূর করতে পারবোনা।“ গ্রামের পথ দিয়ে গাড়িতে যাবার সময় আলি ফৌজির ফোনে একের পর এক কল আসছিল। একবার তিনি কথা বললেন, সন্ত্রাসের দায়ে জেল খেটে ছাড়া পাওয়া একজনের সাথে – যে একটা থাকার জায়গা পাবার জন্য সহায়তা চাইছে। আরেকজন মহিলা ফোন করে বললেন, তার ছেলেকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। “আমাদের এলাকার বেশ কিছু লোক সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে গেছে। ক’দিন আগে একজন আইএস সদস্যকে পুলিশ আটক করেছে। এর অর্থ – তারা আছে এবং তারা ইন্দোনেশিয়ার জন্য হুমকি। “ আলি ফৌজি বলছেন, উগ্রপন্থা এবং অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে একটা লড়াই চলছে। “ আমরা যদি পরিশ্রম করি এবং এলাকার মানুষদের আমাদের পাশে পাই তাহলে এখনো আমি এ যুদ্ধে জয়ী হবার আশা করি।“ | “আমি একজন দক্ষ বোমা প্রস্তুতকারক। আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে একটা বোমা বানিয়ে ফেলতে পারি।'' |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | বার্বি হাউজ নিয়ে এভার সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিওটি ছিয়াশি লাখ বার দেখা হয়েছে এ ধরণের ভিডিওগুলোর কী প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর? এগুলোর কী কোন ক্ষতিকারক দিক আছে? নয় বছরের ভেরেটির জন্য খেলনার বিস্তারিত পর্যালোচনার ভিডিওগুলো একটা বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে যার মাধ্যমে সে বোঝার চেষ্টা করছে যে, বড়দিনের জন্য কোন খেলনাগুলো নেবে। এসব ভিডিওতে শিশুরা, কখনো কখনো আরো কয়েকজনের সহায়তায় প্যাকেট থেকে খেলনা খুলে বের করে এবং সেগুলো নিয়ে খেলা করে। ভেরেটি বিশেষভাবে শপকিন্স, লেগো এবং হ্যারি পটার খেলনার ভিডিওগুলো ইউটিউবে দেখতে পছন্দ করে। ইউটিউব হচ্ছে এ ধরণের ভিডিওর প্রধান প্লাটফর্ম। ''এখানে একটা বিজ্ঞাপনের চেয়ে অনেক বেশি তথ্য পাওয়া যায়। এটা দেখতেও বেশি ভালো লাগে কারণ এসব ভিডিওতে জানা যায় যে এসব খেলনা কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে সেটি নিয়ে খেলতে হয়।'' আরো পড়ুন: সবচেয়ে বেশি আয় করা শীর্ষ ক্ষুদে তারকারা ইউটিউবে ১৭৬ কোটি টাকা আয় সাত বছরের রায়ানের অনলাইনের ভুল তথ্য থেকে শিশুকে যেভাবে রক্ষা করবেন মেয়েটির জন্য ১৪ বছরের উপহার রেখে গেলেন মৃত্যুপথযাত্রী ক্রিসমাসের তালিকা সংক্ষিপ্ত করতে খেলনা প্যাকেট থেকে বের করে বর্ণনা ভিডিও দেখতে পছন্দ করে ভেরেটি হার্টফোর্ডশায়ারের সেন্ট আলবানসে বসবাসকারী ভেরেটি নিজেও ভিডিও বানাতে পছন্দ করে, যদিও সেটা শুধুমাত্র তার পরিবার এবং বন্ধুদের দেখার জন্য। ''আমি চাই না সবাই আমার ভিডিও দেখুক, কারণ তাহলে হয়তো তারা সেগুলো নিয়ে মজা করবে এবং খারাপ মন্তব্য করবে।'' ভেরেটি আরো বলছে, ''অনেক সময় মানুষ নিচু আচরণ করে।'' ইউটিউবে এ ধরণের ভিডিও যে শিশুরা শুরু করেছে, তাদের মধ্যে প্রথমদিকের একজন হলো রায়ান কাজি, যখন তার বয়স ছিল মাত্র চার বছর। প্রথম দিকের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সে একটি বিশাল ডিম খুলছে, যার ভেতরে একশো ধরণের জিনিসপত্র রয়েছে। ওই ভিডিওটি একশো কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে। গত বছর ইউটিউবে সবচেয়ে আয় করা তারকা হলো রায়ান, যার আয় ছিল ১৭ মিলিয়ন পাউন্ড। মূলতঃ বিভিন্ন খেলনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি আর নিজের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সে এই অর্থ আয় করেছে। লেস্টারের বাসিন্দা আট বছর বয়সী এভা তার এই সাফল্যকে ছাড়িয়ে যেতে চায়। তিন বছর বয়সে এভা'স টয় নামে সে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালু করেছে। সেখানের একটি ভিডিও, যাতে তাকে বার্বি হাউজ খোলা এবং খেলা করতে দেখা যায়, সেটি ছিয়াশি লাখ বারের বেশি দেখা হয়েছে। তার মা লিনসে ব্রাউন বলছেন, এভা সবসময়েই একজন শিল্পী এবং ভিডিও করতে পছন্দ করে। ''এভা সিদ্ধান্ত নেয় যে কোন খেলনাগুলো নিয়ে কে খেলবে। আমরা বুঝতে পারে, যখন তারা বাবা এসব ভিডিও সম্পাদনা করেন, সেটা দেখে সে অনেক কিছু শিখছে। শিশুরা তার সঙ্গে বেশ একাত্মবোধ করে।'' সব খেলনাই স্থানীয় দাতব্য সংস্থায় দান করে দেয় এভা, যার মধ্যে রয়েছে একটি বিশেষ চাহিদার স্কুল। সে খুব ভালোভাবে জানে, তার অনেক অনুসারী, যারা ফিলিপিন্সে বাস করে, তার মতো এতটা ভাগ্যবতী নয়। ''অভিভাবক হিসাবে এটা খুব হতাশার যে, আপনি একটা খেলনার পেছনে অনেক খরচ করলেন, অথচ পরে সেটা একটা আবর্জনায় পরিণত হলো। সুতরাং আমাদের আশা, অভিভাবকদের আমরা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবো যে, বড়দিনের সময় আসলে কোন খেলনাগুলো কেনা ভালো হবে।'' তিনি বলছেন। রায়ান কাজি গতবছর ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি আয় করা তারকা। তার একটি ভিডিও একশো কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে শৈশবকালীন খেলাধুলা নিয়ে গবেষণাকারী, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী গবেষক ডেভ নেল বিশ্বাস করেন, এসব ভিডিও-র একটি ইতিবাচক দিক আছে, যদি সেটা শিশুদের খেলনা নিয়ে খেলা করতে উৎসাহিত করে এবং সেগুলো ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে। ''শৈশবে খেলা করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের ভাষা শিক্ষা দেয় এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়, কীভাবে অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি এবং যোগাযোগ করতে হয়, যা আসলে আসলে সম্পর্কের অভিজ্ঞতা তৈরি করে। সুতরাং খেলা করতে উৎসাহিত করে এমন সব কিছুই ভালো,'' তিনি বলছেন। তবে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং সামাজিকতার অভাবের বিষয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ''যখন শিশুরা খেলনা নিয়ে খেলা করে, তখন তারা সমস্যা সমাধান এবং সৃষ্টিশীল মনোভাবের থাকে, তারা নিজেরা জানার চেষ্টা করে কীভাবে খেলনাটি কাজ করে অথবা এটা নিয়ে আর কী করা যেতে পারে। এসব ভিডিও দেখার ফলে তাদের আর সেটা করা হয় না।'' এসব ভিডিওর প্রভাব যেখানে সাত বছরের যমজ অলিভার এবং টমাসের ওপর পড়েছে, তা পছন্দ করতে পারছেন না তাদের মা, সাফোকের বাসিন্দা তিন সন্তানের জননী এমা কোনেল-স্মিথ। ''এসব খেলনা খুবই দামি এবং তাদের যদি সেটা কিনে দেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে শিশুরা অপ্রাপ্তির কষ্টে ভোগে,''তিনি বলছেন। ''আর এসব ভিডিও এতো লম্বা যে শিশুটা তখন আর অন্য কোন দিকেই তাদের চোখ সরাতে চায় না।'' তার তিন বছর বয়সী কন্যা তিতলি এসব ভিডিও দেখতে চায়, কিন্তু মিসেস কোনেল-স্মিথ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তাকে আর এগুলো দেখতে দেবেন না। ''এসব খেলনার ভিডিও অল্পবয়সী শিশুদের উদ্দেশ্যে বানানো যেখানে শিশুদের অনেক ভাষা ব্যবহার করা হয়। বাচ্চারা যখন এসব ভিডিও দেখে, তারাও সেসব শব্দ বলতে থাকে, অনেক সময় তারা বুঝতে পারে না এসব শব্দের ব্যবহার কীভাবে করা উচিত।'' নিজের সন্তানদের ইউটিউবে খেলনা খোলার ভিডিও দেখতে দেন না এমা কোনেল-স্মিথ দুই সন্তানের মা এমা ওরোলোর 'শিশু সংস্কৃতি এবং খেলা' বিষয়ে লিখেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এ ধরণের বিষয়গুলো অনেক সময় আসক্তির জন্ম দিতে পারে। এই ধারা কমে যাওয়ার কোন লক্ষণও তিনি দেখছেন না। ''সারা বিশ্বের শিশুদের দৃষ্টি এসব ভিডিওর প্রতি, যারা এসব খেলনা বের করা, খেলা করার উপাদানগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। এসব ভিডিওতে কোন বর্ণনা নেই, কোন চরিত্র নেই, কোন সমাপনী নেই। ফলে একটি শিশুর পক্ষে এ থেকে বেরিয়ে আসা বা অর্থবোধকভাবে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।'' ''এই অভিজ্ঞতাটি অনেকটা সম্মোহনী শক্তির মতো এবং এসব ভিডিও দেখার ফলে শিশুদের আচরণে নেতিবাচক প্রভাব বলে অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন।'' ব্রাজিলে শিশুদের জন্য কোনরকম বিজ্ঞাপন দেয়া অবৈধ। সেখানকার সরকারি কৌঁসুলি ইউটিউবের এসব ভিডিওর বিষয় ধরে একটি মামলা করেছেন। ইউটিউবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, এর মাধ্যমে শিশুদের উদ্দেশ্যে অপব্যবহারমূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে শিশু ইউটিউবার রায়ান কাজির বিরুদ্ধে সম্প্রতি ফেডারেল ট্রেড কমিশনে (এফটিসি) একটি মামলা করেছে দেশটির ওয়াচডগ গ্রুপ। তাদের অভিযোগ, সে খুব ছোট শিশুদের ভুল বুঝিয়ে নিজের কাজে ব্যবহার করছে, যারা একটি বিজ্ঞাপন ও পর্যালোচনার পার্থক্য বুঝতে সক্ষম নয়। ইউটিউবের মালিক প্রতিষ্ঠান গুগল সম্প্রতি একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে, যার ফলে শিশুদের উদ্দেশ্যে কোন কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু হলে সেটা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকতে হবে, যাতে তারা 'টার্গেটেড অ্যাডভার্ট' (কাউকে লক্ষ্য করে প্রচারিত বিজ্ঞাপন) বন্ধ করতে পারে। এই ভিডিওটি ২৭৬ মিলিয়নবার দেখা হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে স্পাইডারম্যানের পোশাক পড়া ছোট একটি শিশু একটি খেলা গাড়ি বের করে সংযোজন করে নিচ্ছে শিশুদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনজনিত একটি মামলায় এফটিসির সঙ্গে সমঝোতার অংশ হিসাবে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাজ্যে ইউটিউবের একজন মুখপাত্র বলেছেন, টাকার বিনিময়ে প্রচারের উদ্দেশ্যে বানানো যেসব ভিডিও এটি ঘোষণা করে না বা ইউটিউবের শিশুদের অ্যাপে পাওয়া যায় না বলে ঘোষণা করে, সেসব ভিডিও তারা খুব তাড়াতাড়ি বাতিল করে দিচ্ছে। তবে ভিডিওতে দেখানোর বিনিময়ে শিশুদের যেসব খেলনা দেখা হচ্ছে, এ নিয়ে অবশ্য কোন বিধিবিধান নেই। যখন নতুন খেলনা প্যাকেট থেকে বের করার বা খেলার ভিডিও সারা বিশ্বে লাখ লাখ দেখা হচ্ছে, তখন অভিভাবকদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, এগুলো কি শিশুদের ক্রিসমাসের উপহার বাছাই করার জন্য ভালো একটি উপায় নাকি আসলে তাদের শিশুদের শোষণ করার একটি উপায় মাত্র। আরো পড়তে পারেন: রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রমাণ নিয়ে দ্য হেগে বাংলাদেশ দল 'বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন থামেনি বলেই এই বিল' পুলিশের সতর্কতা পোস্টার কি দায় এড়ানোর চেষ্টা? ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে মন্তব্য: শাজাহান খান যা বলছেন অজয় রায়ের মৃত্যু: 'বড় অধ্যায়ের সমাপ্তি' | বড়দিন যতই এগিয়ে আসছে, সারা বিশ্বের শিশুরাও বোঝার চেষ্টা করছে উপহারের তালিকায় কোন খেলনাগুলো তাদের রাখা উচিত। অনেকে হয়তো দোকানের তালিকা দেখে নিচ্ছে, কেউ কেউ হয়তো খেলনার দোকান এবং টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেখে খেলনা বাছাই করার চেষ্টা করছে। আর অনেক শিশু ইন্টারনেটে নানা খেলনার বাক্স খোলা থেকে শুরু করে বর্ণনা দেখে দেখে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | এই দুই গবেষক একই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন: পুরুষ কেন ধর্ষণ করে? ২০১৭ সালে তিনি যখন তার গবেষণা শুরু করেন, তারপর থেকেই তিনি বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে থাকেন। হঠাৎ হঠাৎ মাথা ঘুরে অচেতন হয়ে যান। কোন কোনদিন কেবল অঝোর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, দিল্লির উপকণ্ঠে নয়ডার বাসাবাড়িতে একদিন তারা নিজেকে আবিষ্কার করলেন একা তাঁর বেডরুমে, দরোজায় ভেতর থেকে খিল দেয়া। "আমার পার্টনার সাহিল তখন দরোজায় জোরে জোরে শব্দ করছে, খোলার চেষ্টা করছে। বার বার জানতে চাইছে আমি ঠিক আছেন কিনা," বলছিলেন তিনি। "আমি তখন ভেতরে জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদছি। আমি তখন বুঝতে পেরেছিলাম আমার আসলে থেরাপি দরকার।" যৌন সহিংসতার ট্রমা আসলে কী, সেটা এই গবেষণায় যুক্ত হওয়ার অনেক আগে তারা নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জেনেছেন। এ নিয়ে তিনি কথা বলতে শুরু করেছিলেন যখন তাঁর বয়স ১৬ তখন থেকে। "আমি মাত্র ৪ বছর বয়সে ধর্ষণের শিকার হই আমাদের বাগানের মালীর হাতে," নিজের পিতা-মাতাকে জানিয়েছিলেন তিনি। ঘটনা শুনে তাঁর বাবা-মা একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। কিন্তু তারার জন্য এটি যেন একটা বাঁধ ভেঙ্গে সব অর্গল খুলে যাওয়ার মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো। ঠিক সেই মুহূর্ত থেকে যে যৌন সহিংসতার শিকার তিনি হয়েছিলেন, সেটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। এ নিয়ে তিনি প্রকাশ্য বিতর্কে অংশ নেয়া শুরু করলেন, বন্ধুদের জানালেন- এমনকি একটা বইও লিখে ফেললেন। "সেই ঘটনার কিছু স্মৃতি আমার মনে আছে," বলছিলেন তিনি। "আমি লোকটার নাম জানতাম। লোকটা দেখতে কেমন ছিল আমার মনে আছে। লোকটার কোঁকড়া চুল এবং আমার নীল রঙের পোশাকে রক্তের দাগ, সবকিছু আমার মনে আছে।" তারা যখন বেড়ে উঠছিলেন, তখন তখন ভারতে প্রতিদিন যেসব যৌন হামলার ঘটনা ঘটে সেগুলো নিয়ে ভাবতেন। কেন এই ধরনের যৌন সহিংসতা ঘটে সেটা জানার আগ্রহ তৈরি হলো তার মধ্যে। বিবিসিকে তিনি বলেন, "আমার 'পুরুষ কেন ধর্ষণ করে' বইটি আসলে নিজের দীর্ঘ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং আমার পেশাগত অভিজ্ঞতার একটা চূড়ান্ত সম্মিলন বলতে পারেন।" "কিন্তু এই কাজটা করতে গিয়েও আমি অনেক ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছি।" চোরা ধর্ষণকারীদের খোঁজে ভারতে ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতার বিষয়টি ব্যাপকভাবে সবার মনোযোগের কেন্দ্রে আসে ২০১২ সালে। সে বছর দিল্লিতে একটি চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ২৩ বছর বয়সী এক তরুণী, ফিজিওথেরাপির এক ছাত্রী। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার সময় এই তরুণী যেভাবে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিলেন, তার ফলে কয়েক দিন পরে তিনি মারা যান। ২০২০ সালের মার্চ মাসে এই ঘটনার জন্য অভিযুক্ত চারজনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর ভারতে যৌন সহিংসতার বিষয়টি ক্রমবর্ধমানভাবে আরো বেশি আলোচনায় আসলেও, পরিস্থিতি পাল্টায়নি। হামলার ঘটনা দিনে দিনে আরও বাড়ছে। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইমস রেকর্ডস ব্যুরোর হিসেব অনুযায়ী ২০১৮ সালে পুলিশ ভারতে ৩৩ হাজার ৯৭৭টি ধর্ষণের ঘটনা রেকর্ড করেছে। এর মানে হচ্ছে ভারতে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু যারা এ নিয়ে আন্দোলন করছেন, তাদের মতে প্রকৃত ধর্ষণের সংখ্যা এর চাইতে অনেক বেশি, কারণ অনেক ঘটনার ব্যাপারেই কোন অভিযোগ আসে না। পরিচয় গোপন রেখে নানা ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখে তারা কোওশাল অনুসন্ধানে নামেন। যেসব ধর্ষকের ব্যাপারে কখনোই মামলা করা হয় না বা যাদের কোন সাজা হয় না, তাদের খুঁজে বের করতে চেয়েছিলেন তারা কোওশেল। তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মোট ৯ জন লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যাদের সবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আছে। কিন্তু এসব অভিযোগ সরকারিভাবে কর্তৃপক্ষ কখনো তদন্ত করে দেখেনি। নিজের বইতে তারা লিখেছেন, "আমি এদের সঙ্গে তাদের বাড়ির নিজস্ব পরিবেশের মধ্যে সময় কাটিয়েছি; আমি তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তাদের পর্যবেক্ষণ করেছি।" "আমি ছদ্মবেশে তাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম- ছদ্মনামে আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এই নামে আমার ইমেইল এবং ফেসবুক আইডি ছিল।" তারা তার গায়ে আঁকা উল্কি যেন কারও নজরে না পড়ে সেজন্য বেশ সতর্ক ছিলেন। তিনি ভারতীয় স্টাইলের কুর্তা পরেন,সঙ্গে জিন্স। যখন তিনি এই লোকগুলোর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন, তখন সবসময় সাথে একজন ট্রান্সলেটর বা দোভাষী রেখেছিলেন। তবে আসলে এই দোভাষী একইসঙ্গে তারার একজন ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর কাজই করতেন। তিনি এমন একটা ভান করছিলেন, যেন তিনি আসলে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা একজন অনাবাসী ভারতীয়। ভারতের সাধারণ পুরুষ মানুষের জীবন সম্পর্কে একটি চলচ্চিত্র তৈরির কাজ নিয়ে তিনি গবেষণা করছেন। "এই গবেষণার সময় আমি যে আড়াইশোটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছি এবং যেসব বিষয়ে আমি পর্যবেক্ষণ করেছি, সব পুরুষের বেলাতেই তা ছিল একই। কিন্তু আমি তাদেরকে কখনোই বলিনি যে তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আছে বলেই আমি তাদের নিয়ে গবেষণা করছি," লিখেছেন তিনি। 'সম্মতি' কাকে বলে তা বোঝার অভাব তারা কোওশাল সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি রেখেছিলেন। তাঁর পকেটে সবসময় থাকত একটি পেপার স্প্রে। যে কোন সময় পালানোর দরকার পড়লে সেজন্য থাকতো জরুরী কিছু স্থানীয় যোগাযোগের নম্বর। একটি হোয়াটসঅ্যাপ সাপোর্ট গ্রুপে তিনি তার প্রতি মুহূর্তের অবস্থান লাইভ শেয়ার করতেন। কিন্তু এত কিছুর পরও এসব পুরুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল, যা তিনি কখনোই আগে ধারণা করতে পারেননি। সাক্ষাৎকারে তিনি খুবই অন্তরঙ্গ ব্যক্তিগত কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি। এদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় যৌনতৃপ্তির জন্য নিজেদের শরীর স্পর্শ করছিল। একজনের কথা তার মনে আছে। উত্তর ভারতে নিজের বাড়ির বারান্দায় শীতের রোদে লোকটি তার উল্টোদিকে মুখোমুখি বসে ছিল। "আমার সামনে বসে থাকা ছোটখাটো লোকটি আসলে আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ভয়ংকর যৌন অপরাধীদের একজন (লোকটির নিজের স্বীকারোক্তি অনুসারেই)। তার ছোট্ট গ্রামের বহু নারী এই লোকটির যৌন হামলার শিকার হয়েছে। কিন্তু এজন্যে লোকটিকে জেলেও যেতে হয়নি, সমাজে তাকে একঘরেও করা হয়নি। বরং সে এখনো সমাজের একজন গুরুত্বপূর্ণ গণ্যমান্য ব্যক্তি। শুধু তাই নয়, আমাকে দেখে লোকটি যৌন উত্তেজিত হয়ে পড়লো এবং তার শরীর স্পর্শ করতে কোন সংকোচ পর্যন্ত করছিল না।" সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় এসব অভিজ্ঞতা তারার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ভীষণ প্রভাব ফেলেছিল। "যখন আমার এসব সাক্ষাৎকার নেয়া হয়ে গেলো, আমি বুঝতে পারলাম এগুলোর একটা সম্মিলিত ট্রমায় আক্রান্ত হয়েছি আমি। আমি বুঝতে পারলাম, এই ট্রমা মোকাবেলা করার জন্য আমাকে থেরাপি নিতে হবে", বিবিসিকে বলছিলেন তারা। "আমি অনেক ধরনের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হই। এমন অনেক রাত গেছে, যখন ঘুমের মধ্যে আমি আমার সঙ্গীকে কামড়ে দিয়েছি- ঘুমের মধ্যে আমি তাকে বলেছি আমাকে উৎপীড়ন করা বন্ধ করতে।" প্রচলিত একটা ভ্রান্ত ধারণা হচ্ছে অপরিচিত ব্যক্তির দ্বারাই মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তারা এখান থেকে একটা স্পষ্ট উপলব্ধি নিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলেন। "ধর্ষণ বলতে আসলে কি বোঝায় তা নিয়ে এই লোকগুলোর আসলে কোন অভিন্ন ধারণা নেই। যৌন সম্পর্কের জন্য সম্মতি বলতে কী বোঝায় সেটা তারা মোটেই জানে না।" ধর্ষকদের 'আলাদা মানুষ' হিসেবে দেখা তারা যখন তাঁর গবেষণা শুরু করেছিলেন, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় যৌন সহিংসতার বিষয়টি নিয়ে নারীদের সঙ্গে অনেক আলোচনা করেছেন। "আমি যেসব পুরুষের উপর গবেষণা চালিয়েছিলাম, তাদের দুজনের সন্ধান আমি পাই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের আলোচনায় অংশগ্রহণকারী কয়েকজন নারীর কাছ থেকে," বলছিলেন তিনি। "অন্য সাতজনকে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ছিল। কাজেই তখন আমি স্থানীয় পুলিশের শরণাপন্ন হলাম। স্থানীয় গণমাধ্যম, এনজিও, এমনকি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও সাহায্য নিলাম।" তারা যে পুরুষদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগ পুরুষই স্বীকার করেছে যে তারা ধর্ষণ করেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে একাধিক ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। তবে এই গবেষণার সময় তারা কোওশেল সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তিনি ধর্ষণের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত কারো সঙ্গে কথা বলবেন না। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, "যারা ধর্ষণ করে, আসলে জেলখানা তাদের প্রতিনিধিত্বশীল কোন জায়গা নয়। মানুষ তো আর কোন দ্বীপে বসবাস করে না। কোন মানুষকে তার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ছাড়া পর্যবেক্ষণ করলে সেখান থেকে কিন্তু পুরো ছবিটা পাওয়া যাবে না।" এই পুরুষরা নারীদের ব্যাপারে কী দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে তা জানতে আগ্রহী ছিলেন তারা এবং মধুমিতা। তবে তবে তারা কোওশেলের সঙ্গে তুলনা করলে ডক্টর মধুমিতা পান্ডের গবেষণা একেবারেই ভিন্ন। তিনি যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড হালাম ইউনিভার্সিটির ক্রিমিনোলজির লেকচারার। তিনি তার গবেষণাটি চালিয়েছেন যৌন অপরাধের দায়ে সাজা পেয়েছে এমন লোকজনের ওপর। ২০১২ সালে দিল্লিতে চলন্ত বাসে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর তিনি তাঁর গবেষণা শুরু করেন। "ওই ঘটনার পর ধর্ষকদেরকে দানব হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে একটা সম্মিলিত ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছিল," বলছিলেন মধুমিতা পান্ডে। "ওদের কাজে আমরা এতটাই ক্ষিপ্ত হয়েছিলাম যে আমরা তাদেরকে একেবারে 'আলাদা ধরণের' মানুষ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলাম, যারা আমাদের এবং আমাদের সংস্কৃতির চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা কিছু।" ধর্ষকদের ব্যাপারে একটা ব্যাপক প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে এরা নারীদের ব্যাপারে অনেক বেশি সনাতনী চিন্তা এবং নিপীড়নমূলক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। গবেষক হিসেবে তিনি এই বিষয়ের দিকে নজর দিতে চাইলেন। "কিন্তু আমাদের যা ধারণা, নারীদের ব্যাপারে এই লোকগুলোর চিন্তাভাবনা কি আসলেই সেরকম আলাদা কিছু?" যে কেউ ধর্ষক হতে পারে ডক্টর মধুমিতা পান্ডে দিল্লির তিহার জেলে ধর্ষণের অভিযোগে সাজা খাটা একশোর বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নেন। তিহার জেলখানাকে বলা হয় দক্ষিণ এশিয়ার সবচাইতে বড় কারাগার। এই ধর্ষণকারীদের প্রত্যেকের কাহিনী আলাদা। একজন গ্যাং রেপিস্ট বলছিল ঘটনার পরপরই সে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। একটি মন্দিরের একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলছিল পাঁচ বছরের এক মেয়েকে সে ধর্ষণ করেছিল, কারণ তাকে প্রলুব্ধ করা হয়েছিল। এক যুবক দাবি করেছিল সে আসলে ধর্ষণ করেনি, পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতেই তাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক হয়েছিল। কিন্তু মেয়েটির পরিবার যখন তাদেরকে একসঙ্গে দেখতে পায় তখন তারা ধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগ এনেছিল। পাঁচ বছরের এক শিশু ধর্ষিত হওয়ার পর তার মায়ের লড়াইয়ের কাহিনী শুনে আলোড়িত হয়েছিলেন ডঃ মধুমিতা পান্ডে। ডঃ মধুমিতা পান্ডে ৫ বছরের একটি মেয়ের ধর্ষণের কাহিনী শুনে ভীষণভাবে আলোড়িত হয়েছিলেন। তিনি মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন । তিনি জানান, মেয়েটির বাবা যখন জানলো যে তার মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে, তখন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল এবং তার পরিবারকে পরিত্যাগ করেছিল। তখন পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়া- এই সমস্ত কাজ করেছে ধর্ষণের শিকার শিশুটির মা। যদিও এর যে বিচার হবে সেটার কোন আশা তারা করছিল না। ডঃ মধুমিতা পান্ডে এই লোকগুলো নারীর ব্যাপারে কি ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং তাদের এই চিন্তাভাবনা যৌন সহিংসতায় কি ভূমিকা রাখে সেটা অনুধাবন করার চেষ্টা করছিলেন তাঁর গবেষণায়। "এই প্রত্যেকটি ঘটনার ধরণ হয়তো আলাদা। কিন্তু একটা অভিন্ন বিষয় প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই আছে, সেটা হচ্ছে এরা সবাই মনে করে এটা যেন তাদের একটা অধিকার। এ থেকে যেটা বোঝা যায়, সেটা হলো, আমাদের সমাজে পুরুষরা আসলে কতটা সুবিধাভোগী।" গবেষণায় তিনি দেখতে পেলেন, এই ধর্ষকরা তাদের কৃত অপরাধের জন্য অপরাধের শিকার নারীকেই দোষারোপ করছে। আর এই ধরনের যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে যে সম্মতির একটা ব্যাপার আছে, সেটা তারা একেবারেই বোঝে না। আরও পড়ুন: ভারতে নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যাকারী চারজনের ফাঁসি কার্যকর ভারতে যৌন আক্রমণের শিকার নারীরা কি বিচার পাচ্ছে? ভারতে একবছরে ২০ হাজার কন্যাশিশুকে ধর্ষণ '১৪৩ জন আমাকে ধর্ষণ করেছে': ভারতের পুলিশের কাছে অভিযোগ নারীর তারা কোওশেলের গবেষণার মতো ডঃ মধুমিতা পান্ডের গবেষণাতেও একটা 'মিথ' অসার বলে প্রমাণিত হলো। "ধর্ষক মানেই যেন অন্ধকার ছায়ায় ওঁত পেতে থাকা অপরিচিত কোন আগন্তুক, কিন্তু আসলে মোটেই তা নয়," বলছেন মধুমিতা পাণ্ডে। "এসব ঘটনায় যেটা দেখা গেল, বেশিরভাগ ধর্ষক আসলে আগে থেকেই ধর্ষিতাকে চিনতো। কাজেই এটা সহজেই বোঝা যায়, যে কেউ আসলে ধর্ষণকারী হতে পারে এবং এরা অসাধারণ কোন লোক নয়, এরা আমাদের চারপাশেই আছে। ধর্ষকরা তাদের কৃতকর্মের জন্য ধর্ষিতাদেরই দোষারোপ করছিল তীব্রভাবে। এর আগের অনেক পরিসংখ্যান থেকেও দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ ধর্ষণের ঘটনাতেই ধর্ষণের শিকার মেয়েরা ধর্ষকদের আগে থেকেই চিনতো। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর হিসেব মতে ২০১৫ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৯৫ শতাংশ। যারা ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, তাদের বিশ্বাস, অনেক ধর্ষণের ঘটনাতেই যে কোন অভিযোগ হয় না, তার একটা কারণ এটা। ডঃ অনুপ সুরেন্দ্রনাথ হচ্ছেন 'প্রজেক্ট থার্টি নাইন-এ' বলে একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক। এটি সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে। তিনি বলছেন, "ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ যে কম আসে এটা একটা সমস্যা, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধী ধর্ষিতার পরিচিত এবং সমাজে এমন অনেক ধরনের বিষয় আছে যেগুলোর কারণে ধর্ষিতা এবং তার অভিভাবকরা এটি নিয়ে অভিযোগ করে না।" আর শেষ পর্যন্ত যেসব ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগ হয়, তার মধ্যে কেবল সবচাইতে ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলোই হয়তো সংবাদ শিরোনাম হয়। মৃত্যুদণ্ড কি কোন সমাধান ধর্ষণের এরকম উচ্চহার যে কেবলমাত্র ভারতে, ব্যাপারটা তা নয়। তবে অনেকের বিশ্বাস, ভারতের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এবং জনসংখ্যায় নারী-পুরুষের অনুপাতে ভারসাম্যহীনতা হয়তো পরিস্থিতিকে আরো খারাপ দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিবিসির ভারত সংবাদদাতা সৌতিক বিশ্বাস যেমন বলেছেন, "ভারতে ধর্ষণকে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষমতা প্রদর্শনের এবং একই সঙ্গে ক্ষমতাহীনদের ভয়ভীতি দেখানোর একটা হাতিয়ার হিসেবে। "তবে ভারতে ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু দেশটির বিশৃঙ্খল ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার রাজনৈতিক চাপের কাছে অসহায় এবং এর ফলে অনেক অভিযুক্তই আসলে ছাড়া পেয়ে যায়। সার্বিকভাবে ধর্ষণের কারণে সাজার ঘটনা খুবই কম।" ২০১২ সালে দিল্লিতে চলন্ত বাসে দল বেঁধে সেই ধর্ষণের ঘটনা এবং খুনের পর কর্তৃপক্ষ আইন আরও অনেক বেশি কঠোর করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করা। কিন্তু তারা কোওশেল এবং ডঃ মধুমিতা পান্ডে, দুজনেই একমত যে ফাঁসির সাজা দীর্ঘমেয়াদে কোনো সমাধান নয়। ডঃ মধুমিতা পান্ডে বলছেন, তিনি সংস্কার এবং পুনর্বাসনের মত বিষয়েই বেশি বিশ্বাস করেন। "আমাদের আরো বেশি করে মনোযোগ দেয়া উচিত সমাজের কাঠামোগত পরিবর্তনের দিকে, যাতে করে নারী এবং পুরুষের মধ্যে যে অসম ক্ষমতার সম্পর্ক সেটি বদলে দেয়া যায়।" ঐতিহাসিকভাবেই প্রকাশ্য স্থানে সবসময় ছিল পুরুষদেরই আধিপত্য। এ বিষয়ে তারা কোওশেলও একমত। "আমাদেরকে এখানে মনোযোগ দিতে হবে এই অপরাধের সবচাইতে সক্রিয় উপাদানটির দিকে এবং এখানে সবচেয়ে সক্রিয় উপাদানটি হচ্ছে পুরুষ।" "কিভাবে আমরা এদের থামাবো? এদের থামানোর উপায় হচ্ছে একেবারে শৈশব থেকেই তাদেরকে আরো ভালো হতে শিক্ষা দেয়া।" তারা কোওশেল যেসব পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, তারা সমাজের যে শ্রেণী থেকেই আসুক, তাদের কাউকেই স্কুলে সেক্স এডুকেশন বা যৌন শিক্ষা দেয়া হয়নি। "এরা তাদের যৌন জ্ঞান অর্জন করেছে বন্ধুদের আড্ডায়, যারা নিজেরাও তাদের মতো অজ্ঞ, অথবা পর্নগ্রাফি দেখে বা যৌনকর্মীর কাছ থেকে।" এদের অনেকে শৈশবে সহিংসতাও দেখেছে। "এরা হয়তো দেখেছে তাদের বাবা তাদের মাকে মারধর করছে অথবা তাদের মধ্যে কোন ভালোবাসা নেই। এরা হয়তো ক্রমাগত পিতার হাতে বা পরিবারের অন্য কোন পুরুষ সদস্যরে হাতে বার বার সহিংসতার শিকার হয়েছে।" তাহলে পুরুষ কেন ধর্ষণ করে? "এর কোনো একক উত্তর নেই কারণ ধর্ষণ হচ্ছে একটি খুবই জটিল অপরাধ," বলছেন ডক্টর মধুমিতা। "প্রত্যেকটি ঘটনার বয়ান আসলে আলাদা - কেউ হয়তো লিপ্ত ছিল দলবদ্ধ ধর্ষণে, কেউ হয়তো তাদের ভিকটিমকে আগে থেকেই জানতো আবার কেউ হয়তো একদম অপরিচিত কাউকে ধর্ষণ করেছে। আর নানা ধরনের ধর্ষক আছে, কেউ খুব রাগী, কেউ মর্ষকামী ধর্ষক, কেউ সিরিয়াল ধর্ষক।" তবে ডঃ মধুমিতা পান্ডে একটা বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছেন। সেটা হচ্ছে, এই ধর্ষক যে কেউ হতে পারে: স্বামী, সহকর্মী, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, প্রেমিক, সহপাঠী অথবা শিক্ষক। "জেলখানার ভিতরে আমি যে ধর্ষকদের দেখতে যাবো, তাদের ব্যাপারে আমার আগে থেকে একটা কাল্পনিক ধারণা ছিল, যেমনটা এদেশের বেশিরভাগ মানুষেরই হয়তো আছে। এই ধারণাটা আমার গড়ে উঠেছে বলিউডের ছবি দেখে।" "এরা হয়তো খুব ভয়ঙ্কর দর্শন কিছু পুরুষ, তাদের মুখে বা গায়ে হয়তো কাটা দাগ থাকবে এবং তাদের পরনে থাকবে জেলখানার ডোরাকাটা পোশাক। আমি এমন ভয়ও পাচ্ছিলাম যে হয়তো এই লোকগুলো আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবে, অথবা আমার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করবে এবং এই পুরো অভিজ্ঞতাটা আমার জন্য হবে খুবই অস্বস্তিকর।" কিন্তু ডঃ মধুমিতা পান্ডে শীঘ্রই উপলব্ধি করলেন এরা সবাই এক ধরনের মানুষ নয়। পুরুষ কেন ধর্ষণ করে তার একক কোন উত্তর নেই। "আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে যত সময় কাটাচ্ছিলাম, তাদের জীবনের কাহিনী শুনছিলাম, ততই আমি বুঝতে পারছিলাম, এরা আসলে অতটা অদ্ভুত নয়, অতটা অসাধারণ কেউ নয় এবং এই বিষয়টাই আমাদের আসলে বেশি করে বোঝা দরকার।" তিনি বলেন, "আমরা একটি পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বাস করি। এখানে একজন হয়তো আপনাকে ধর্ষণ করছে না, কিন্তু আপনার উপর তার কর্তৃত্ব এবং দাপটের প্রকাশ নানাভাবে ঘটাতে পারে। আর সমাজে যেন এগুলোকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হয়েছে।" এক্ষেত্রে তিনি কর্মক্ষেত্রের সেক্সিজম অথবা রাস্তায় যৌন হয়রানির মতো নিত্যদিনের নারী বিদ্বেষী আচরণের কথা উল্লেখ করছেন। "একজন ধর্ষক কোন মেয়ে কী ধরণের পোশাক পরেছিল সেটাকে যখন ধর্ষণের অজুহাত হিসেবে উল্লেখ করে, সেটা শুনে আমরা খুবই ক্ষিপ্ত হই। কিন্তু কেন আসলে আমরা এতটা হতবাক হই এটা দেখে," প্রশ্ন করছেন তিনি। "নিত্যদিনের নারীবিদ্বেষী সব ঘটনা যখন স্বাভাবিক বলে মেনে নেয়া হয় এবং এর থেকে আরও মারাত্মক কিছু যখন ঘটে, তখন এত অবাক হওয়ার কি আছে? "এই ধর্ষকদের সঙ্গে কথা বলা শেষ করার পর আমি দেখতে পাই, এরা যেসব শব্দ ব্যবহার করে, তাদের কৃতকাজের জন্য যে ধরনের অজুহাত দেয়, সেটা আসলে তারা যে ধরনের সামাজিক কথাবার্তার মধ্যে বেড়ে উঠেছে সেখান থেকেই এসেছে।" ডঃ মধুমিতা পান্ডে এখন ভারতে একটি পুনর্বাসন কর্মসূচিতে কাজ করছেন যার লক্ষ্য যৌন অপরাধীদের ব্যাপারে যে বিকৃত চিন্তা চালু আছে, সেটাতে পরিবর্তন আনা। "আমি চাই ভারতে একটি সেক্স অফেন্ডার্স রিহ্যাবিলিটেশন ট্রেনিং (এসওআরটি) চালু হোক, যেখানে গ্রুপে বা এককভাবে অংশ নেয়া যাবে। সেখানে অন্যান্য কার্যক্রমও চলবে যাতে করে ধর্ষণের ব্যাপারে প্রচলিত মিথগুলো ভেঙ্গে ফেলা যায় এবং ভারতে নারীর ব্যাপারে যে সেকেলে দৃষ্টিভঙ্গি, সেটা পাল্টে দেয়া যায়।" "প্রতিদিন আমি এই ভাবনা নিয়েই জেগে উঠি এবং সারাক্ষণ এটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ঘুমাতে যাই। এবং এটা আমার মধ্যে বিরাট আশা জাগিয়ে রাখে।" | তারা কোওশাল যখন ধর্ষণকারীদের সাক্ষাৎকার নেয়ার কাজটি করছিলেন, তখন এর একটা গভীর প্রভাব পড়েছিল তাঁর শরীর-মনের ওপর। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | তবে এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয় তারও বছর দশেক পরে। বাংলাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন এমন অনেকে আছেন যারা তাদের আবেগ, চাপ সবকিছু নানা প্রতিকূলতার মাঝেও নিয়ন্ত্রণ করে দলবল সঙ্গী করে বিশ্বের কাছে নিজেদের তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশ এই মুহূর্তে যে কটি দুর্যোগের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে তার একটি হলো, কোন রোল মডেল না থাকা। কিন্তু সার্বিকভাবে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে কেউ যদি থেকে থাকে তবে তিনি সাকিব আল হাসান। সাকিবই বিশ্বের প্রথম যিনি তিন ধরনের ক্রিকেটেই অলরাউন্ডার হিসেবে ঘোষিত হন, যা একটি বিরল দৃষ্টান্ত। সম্প্রতি ক্রিকেট বিষয়ক মাসিক পত্রিকা উইজডেন তাকে এক দিনের ক্রিকেটে শতাব্দীর দ্বিতীয় সেরা ক্রিকেটার হিসেবে ঘোষণা করেছে। সাকিব আল-হাসান সাকিব আল-হাসান: ''যতক্ষণ পর্যন্ত শারীরিকভাবে সুস্থ আছি, সবকিছু নতুন করে শুরু করতে পারবো।'' আন্তর্জাতিক ক্রীড়া জগতে সাকিব দেশের জন্য যে পরিমাণ সম্মান নিয়ে এসেছেন তা আজ পর্যন্ত কেউ করেনি বললে ভুল হবে না। কিন্তু কীভাবে সমস্ত চাপ, দুশ্চিন্তা প্রতিকূলতাকে পাড়ি দিয়ে নিজের পারফরমেন্স দেখানোর পাশাপাশি সতীর্থদেরকেও সঙ্গে করে এই পর্যায়ে আসা- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তার জন্য যে কোন চাপ একধরনের উৎসাহ হিসেবে কাজ করে। ''আমাকে চ্যালেঞ্জ করা হলে আমি আরো উদ্দীপনা অনুভব করি। আর এর থেকে উতরে আসার একমাত্র উপায় নিজের পারফরম্যান্স দেখানো। আমি জানি আমার উদ্দেশ্য কী। আর সেই লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাই,'' তিনি বলেন। মাত্র সতের বছর বয়সে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় যখন একদিন তার কোচ তাকে বলে, কাল থেকে আর হাত খরচের টাকা বাসা থেকে নিও না! সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সাকিব বাসা থেকে কোন আর্থিক সাহায্য নেন নি। বরং ওই কিশোর বয়সেই বুঝে গিয়েছিলেন- তাকে তার ও তার পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে। এরপর বাকিটা ইতিহাস! তার পরিবার, বন্ধুরা তার জন্য একটি নি:শ্বাস নেয়ার জায়গা, যেখানে কেউ তার সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে কথা বলে না। তিনি পত্রিকা পড়েন না। পাবলিক ফিগার হিসেবে অনলাইন ট্রোলিং বা বুলিং তাকে প্রভাবিত করে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ''মানুষ কী ভাবে তাও যদি আমি ভাবি তাহলে মানুষ কী ভাববে!'' ঠাণ্ডা মাথায় কঠিন সিদ্ধান্ত সাকিবকে সবসময় শুধু ঠাণ্ডা মাথায় কঠিন সব সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায় তাই নয়, নিজেকে, দলকে এবং দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে তিনি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সুশীল। এই গুণ তিনি কীভাবে রপ্ত করছেন জানাতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ''আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলার সুযোগ সবচেয়ে বেশি আমারই হয়েছে যেমন কাউন্টি বা আইপিএলে খেলা। এই পরিবেশ আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।'' সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করা সাকিব যেন এক জীবনে সবকিছু পেয়েছেন। সেই তিনি কিছুদিন আগে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটিও পেয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল তাকে এক বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। ''আমার মনের জোর অনেক বেশি। এই ঘটনার পর আমাকে দেখে আমার আশেপাশের মানুষের বোঝার ক্ষমতা নেই আমার সঙ্গে কী হয়েছে। আমি যেকোনো সময় আমার জীবনকে শূন্য থেকে শুরু করার সাহস রাখি,'' তিনি বলেন। ''আমি বিশ্বাস করি যতক্ষণ পর্যন্ত শারীরিকভাবে সুস্থ আছি, আমার আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে পারবো। আগে হয়ত ভাবনা ছিল আর তিন বছর খেলবো। কিন্তু এই ঘটনা আমাকে সাহস যুগিয়েছে, এখন আমি আরো পাঁচ বছর খেলবো,'' বলেন সাকিব আল-হাসান। ইয়াসির আজমান ইয়াসির আজমান: 'আমি সবসময় মানুষের ব্যাপারে আগ্রহী, নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে আগ্রহী।'' এই বছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো একজন বাংলাদেশিকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করলো গ্রামীণফোন, যা কিনা পৃথিবীর অন্যতম সফল টেলিকম সংস্থা টেলেনর এর অঙ্গ সংগঠন। কোন বাংলাদেশির প্রধান নির্বাহী হওয়া নিয়ে এতোটা হইচই আগে কখনো হয়নি, যতোটা হয়েছে ইয়াসির আজমানকে নিয়ে। টেলিকমিউনিকেশনের মতো প্রযুক্তি নির্ভর, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ, প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মুখোমুখি একটি বৈদেশিক সংস্থার প্রধান-এর পদ তিনি নিজেকে কী কী গুণের কারণে জয় করেছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ''আমি সবসময় মানুষের ব্যাপারে আগ্রহী, নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে আগ্রহী, সেই সঙ্গে চেষ্টা করি উদ্দেশ্য ঠিক করে মানুষের সঙ্গে সমষ্টিগত মেলবন্ধন তৈরি করতে যা আমাকে সবসময় সাহায্য করেছে।'' ডিস্ট্রিবিউশন মডেল পুনর্বিন্যাস প্রকল্প ইয়াসির আজমান জীবনে অনেকটা সময় ব্যয় করেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন নেতাদের জীবনী পড়ে। তিনি চেষ্টা করেন তার আশেপাশের ছোট হোক বড় হোক সবাইকে সমান গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে। যা তাকে সাহায্য করে প্রতিটি মানুষকে দৃষ্টিসীমানার মাঝে তাদের দেখতে - যেখানে কেউ ছোট-বড় নয়। পারস্পরিক সেই শ্রদ্ধাবোধ তখন কাজের গুণগত মানকে আরো অনেক বেশি বাড়তে সাহায্য করে তার জন্য। দু'হাজার সাত-আট সালের দিকে প্রায় ৫০০-৬০০ সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামীনফোনের ডিস্ট্রিবিউশন মডেলের পুনর্বিন্যাস প্রকল্পের নেতৃত্ব দেন তিনি। প্রকল্পটি এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে তা সফল না হলে গ্রামীনফোন প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে পিছিয়ে যেত। মাত্র ছ'সাত মাসে সবাইকে নিয়ে এক অসাধ্য সাধান করেন তিনি। তৎকালীন প্রধান নির্বাহী তাকে ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কৃত করতে চাইলেন। কিন্তু তিনি তা নিলেন না। তিনি মনে করেছিলেন এটি প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি কর্মীর জয়। তবে তার সেই নেতৃত্বই হয়ত আজ তাকে প্রতিষ্ঠানের প্রধান হতে সাহায্য করেছে। আর তার জন্য পরিশ্রমের পাশাপাশি প্রস্তুতির কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন। সেই ক্ষেত্রে ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স করা জানাতে পারাও অনেক জরুরি। মানুষের ক্ষমতা অপরিসীম বলে মনে করেন ইয়াসির আজমান। তিনি নিজেও এখনো প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেন। নতুনদের সঙ্গে কথা বলতে, কাজ করতে তা খুবই জরুরি। বিশেষ করে এই করোনার সময়ে যখন বইয়ের ভাণ্ডার পুরনো কথা বলে, অনলাইনে তখন প্রতিদিন অন্তত দু'টো লেখা পড়েন বর্তমান সময়ের পৃথিবীকে নিয়ে। হাসিন জাহান হাসিন জাহান: ''অনেক পুরুষের চাইতেও অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি।'' প্রায় ত০ বছর ধরে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে নারীরা। এটি পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে সরকার, বিরোধী দল এবং সংসদের স্পিকার একজন নারী। তা সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে নারী নেতৃত্ব এখনও অনেক দূরের বিষয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশে খুব কম নারীই কর্পোরেট বা সামাজিক উন্নয়ন জগতে নেতৃত্বে উঠে এসেছেন। তাদেরই একজন আন্তর্জাতিক এনজিও ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান। ব্যক্তিগত আর পেশাগত জীবন আলাদা পারিবারিক দিক থেকে কোন সহযোগিতা ছাড়াই যিনি নিজেকে নিয়ে এসেছেন এ পর্যায়ে। কিন্তু তা তিনি কীভাবে পেরে উঠছেন জানতে চাওয়া হলে বলেন, যদিও মানুষের আবেগ থাকাই স্বাভাবিক, তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনকে বা তার কোন সমস্যাকে পেশাগত জীবনে কোন প্রভাব ফেলতে দেন নাই। ''বরং অনেক পুরুষের চাইতেও অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি,'' তিনি বলেন। হাসিন জাহান যেকোনো বিষয়েই প্রচুর প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন। তিনি মনে করেন পরবর্তী প্রজন্ম জ্ঞানের দিক থেকে আরো বেশি অগ্রসর হয়ে থাকবে। মনোযোগ, উপস্থিত বুদ্ধি এইসব কিছুর সঙ্গে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি যদি থাকে তবেই সাফল্য সম্ভব। ''জীবনে সবকিছুতে জিততে হবে এমন মানসিকতা না থাকাই ভালো। মাঝে মাঝে ব্যর্থতারও দরকার আছে। বরং না পাওয়ার কথা ভেবে যা পেয়েছে তাই নিয়ে কৃতজ্ঞ হলে প্রাপ্তির আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব,'' বলেন হাসিন জাহান। শেহজাদ মুনিম শেহজাদ মুনিম: ''জীবনে রোল মডেল থাকা অনেক প্রয়োজনীয়।'' কর্পোরেট জগতে যদি কোন প্রতিষ্ঠানের নাম নিতে হয়, তবে সবার আগে নাম আসে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর। ইম্পেরিয়াল টোবাকো নামে পূর্বপরিচিত এ প্রতিষ্ঠানটি গত ১১০ বছর ধরে এই অঞ্চলে শুধু ব্যবসা করে আসছে তাই নয়, কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দক্ষ কর্মী উপহার দেয়ার কৃতিত্বও তাদের। এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে বিদেশীদের নেতৃত্বেই চলে আসছিল। তবে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে এই চিত্রটি পাল্টে দেন শেহজাদ মুনিম ২০১৩ সালে। এই রোল মডেল হীন এমনি একটি সময় সম্প্রতি তিনি অতিবাহিত করে চলেছেন। লক-ডাউনের সময় তার কারখানা খোলা রেখেছেন সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নিজে দাঁড়িয়ে থেকেছেন কারাখানায় শ্রমিকদের মাঝে। এমনকি ঈদের দিনের রাতের খাবারও তিনি খেয়েছেন কারাখানায় শ্রমিকদের সঙ্গে বসে অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে। কাউকেই তার চাকরি থেকে ছাঁটাই করতে হয়নি। ফজর থেকে দিন শুরু ভালো মানুষদের সবসময় নিজের চারপাশে ধরে রাখা, উদ্দেশ্য ঠিক রাখা এবং মন মানসিকতাকে সংকীর্ণ না রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিম। ''জীবনে রোল মডেল থাকা অনেক প্রয়োজনীয়। যাকে অনুসরণ করা যায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনে রোল মডেলের পরিবর্তন ঘটে। আবার এমন এক সময় আসে যখন সেক্ষেত্রে কোন রোল মডেল খুঁজে পাওয়া যায় না যাকে অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। সেক্ষেত্রে উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার থাকা উচিত.'' মি. মুনিম বলেন। নিজের আবেগ, অনুভূতি, মনোযোগকে নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন তার ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রয়োগের কথা। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন এর ভিন্ন একটি দিক। ''একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ফজর থেকে যোহর অনেক লম্বা সময়। এই সময়টায় দেরী করে ঘুম থেকে না উঠে ফজর থেকেই দিন শুরু করা উচিত,'' তিনি বলেন। ''আমাদের মস্তিষ্কও তখন সর্ব্বোচ্চ পর্যায়ে সক্রিয় থাকে। যা জরুরি সকল কাজে মনোযোগ দিতে সাহায্য করে। ''বিকেলে আসরের পর সহকর্মীদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো, যা সামাজিক নৈকট্য তৈরি করে। মাগরিবের পর কোনভাবেই অফিসে না থাকা। বরং পরিবারকে সময় দেয়া, বলেন শেহজাদ মুনিম। এ কে এম আব্দুল কাইয়ুম এ কে এম আব্দুল কাইয়ুম: ''এই পেশায় সফল হতে অবশ্যই কিছুটা বেশি বুদ্ধিমান, পরিপক্ব ও জ্ঞানী হওয়া প্রয়োজন।'' পৃথিবীতে অন্যতম বিপদজনক ও চাপ প্রয়োগকারী পেশা হলো বিমানের পাইলট। শুনতে যতটা আকর্ষণীয় মনে হয় এই পেশা ততটাই সতর্কতা গ্রহণের চাহিদা নিয়ে আসে। আর তার জন্য চাই প্রতিটি মুহূর্তের শতভাগ মনোযোগ। কারণ এখানে শুধু নিজের নয়, বহ মানুষের জীবন জড়িত একজন পাইলটের হতে। আর তাই নিরবিচ্ছিন্নভাবে বহু ঘণ্টা ধরে মনোযোগ ধরে রেখে বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে পাড়ি দেয়া এতো সহজ নয়। ''এই পেশায় সফল হতে গেলে কাউকে অবশ্যই কিছুটা বেশি বুদ্ধিমান, পরিপক্ব ও জ্ঞানী হওয়া প্রয়োজন যেকোনো সমস্যার গভীরতা বোঝার জন্য। তবে কে কীভাবে একটি সমস্যাকে সমাধান করবে তা ব্যক্তি নির্ভর,'' বলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অবসরপ্রাপ্ত বৈমানিক এ কে এম আব্দুল কাইয়ুম। স্ত্রীর ক্যান্সার মানুষের ব্যক্তি বা পারিবারিক জীবনে অনেক সমস্যাই থাকে। কিন্তু তার মাঝেও বিমান নিয়ে উড়াল দিতে হয় একজন পাইলটকে। ''আমার স্ত্রী ক্যান্সারের রোগী ছিল। যেহেতু এটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ তাই আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না বারবার স্ত্রীর জন্য ছুটি নেয়া। এমনও হয়েছে স্ত্রীকে হাসপাতালে কেমো দিতে বা অপারেশন করতে পাঠিয়ে আমি অন্যদিকে বিমান নিয়ে রওয়ানা দিয়েছি। সমস্ত দুশ্চিন্তাকে সামাল দিয়েই তা করতে হয়েছে,'' তিনি বলেন। ''বেশি দুশ্চিন্তা ফ্যাটিগ তৈরি করে। যা একবার হয়ে গেলে আর বিমান চালানো সম্ভব না। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতেই মাথা ঠাণ্ডা রাখাই একমাত্র উপায়,'' তিনি বলেন। বৈমানিকদের এই মানসিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্যই বিশ্বজুড়ে 'ক্রু রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট' বলে একটি কোর্স রয়েছে যা প্রতি দু'এক বছরেই করতে হয়। এছাড়াও আরো কিছু কোর্স রয়েছে যা প্রতি ছ'মাসে করতে হয়। মি. কাইয়ুম বলেন, এই কোর্স শুরু করার এক সপ্তাহ আগে থেকেই তিনি পড়াশোনা শুরু করেন যাতে সবার সঙ্গে এগিয়ে থাকতে পারেন। আমাদের দেশে হয়ত একজন শেহজাদ মুনিম, এ কে এম আব্দুল কাইয়ুম, হাসিন জাহান, ইয়াসির আজমান এবং সাকিব আল হাসানের মতো মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু কেউ যদি তাদের মতো করে নিজেদের ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সকে চর্চা করে - তবে এই সংখ্যাটি বাড়তে অবশ্যই বেশি দিন লাগবে না, এইটুকু আশা আমরা করতেই পারি। | শিক্ষা, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা এ সবকিছু থাকার পরও একটি মানুষ নেতৃস্থানীয় পদে আসীন হয়ে অসফল হতে পারে, যদি না তার নিজের আবেগ, চাপ ও আশেপাশের মানুষের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে ইতিবাচক শক্তিতে পরিচালিত করতে না পারে। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের এই নতুন ধারনাটি আমাদের মাঝে ১৯৯০ সালে নিয়ে আসেন আমেরিকার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের দুই অধ্যাপক, জন ডি মায়ের ও পিটার সালোভে। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | ১৯৪২ সালে ভাইরা ভেকয়া-ফাইবাইরগা, যে কিছুদিন পরেই শরণার্থী শিশুতে পরিণত হয় শুধু তাই নয়, তিনি হলেন সাবেক সোভিয়েত ব্লকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম নারী প্রেসিডেন্টও। তিনি বিবিসিকে বলেন, ''আমার বাবা-মা কখনোই আমাকে ভুলতে দেননি যে, আমি একজন লাটভিয়ান।'' দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাল্টিক সাগরের তীরের এই দেশটিতে অভিযান চালায় নাৎসি জার্মানি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন। সেই ১৯৪৪ সালের টুকরো টুকরো স্মৃতি মনে আছে তার, যখন রাশিয়ার কম্যুনিস্ট রেড আর্মি লাটভিয়ায় ঢুকে পড়ে। আরো পড়তে পারেন: কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিল ভারত কাশ্মীরে ১৪৪ ধারা, নেতারা গৃহবন্দী, বন্ধ স্কুল কলেজ ডিএনএ নমুনা অন্যের হাতে দিলে যে সমস্যা হতে পরে ওহাইয়ো হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন বন্দুকধারীর বোন ১৯৪১ সালে লাটভিয়ায় প্রবেশ করে জার্মানি এবং সোভিয়েত সৈন্যদের আটক করে ''তাদের লাল পতাকা আর মুষ্টিবদ্ধ হাত দেখে আমি খুবই অভিভূত হয়ে ছিলাম। একপর্যায়ে তারা যখন মার্চ করে যাচ্ছে, আমিও আমার মুষ্টিবদ্ধ হাত তাদের উদ্দেশ্যে নেড়ে বললাম 'হুররা''', তিনি বলেন। ''একসময় আমি তাকিয়ে দেখলাম একটি ল্যাম্পপোস্টের আড়ালে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার মা, পুরোপুরি বিধ্বস্ত লাগছিল তাকে। তার গাল বেয়ে চোখের পানি পড়তে শুরু করেছিল। তিনি আমাকে বলছেন, ''এরকম করো না। আজ লাটভিয়ার জন্য খুব দুঃখের একটা দিন।'' নিষ্ঠুর শিক্ষা যখন ভাইরার বয়স সাত বছর, তখন তারা প্রথমে লাটভিয়া ছেড়ে বিধ্বস্ত জার্মানিতে যায়। এরপর তারা ফরাসি নিয়ন্ত্রিত মরক্কোয় যায়, তারপরে কানাডায়। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সে আর লাটভিয়ায় ফিরতে পারেনি। তবে ৬০ বছর বয়সে তিনি যখন ফিরলেন, তার আট মাসের মাথায় তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট হন। জার্মানিতে ১৯৪৯ সালে একটি শরণার্থী ক্যাম্পে অন্য শিশুদের সঙ্গে ভাইরা (গোল চিহ্ন অঙ্কিত) ভাইরা স্মৃতিচারন করেন, ১৯৪৪ সালের দিকে তারা বাবা বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস শুনতেন, বোঝার চেষ্টা করতেন যে যুদ্ধ কোন দিকে গড়াচ্ছে। পরের বছর তাদের পরিবার লাটভিয়া ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ''১৯৪৫ সালের নববর্ষের রাতে আমরা একটি জাহাজে উঠে বসলাম। এটা ছিল সৈন্যদের পারাপার করার জাহাজ, সেই সঙ্গে অস্ত্রপাতিও থাকতো। যদি কোন টর্পেডো জাহাজটিতে আঘাত করতো, তাহলে পুরো জাহাজটি বিস্ফোরিত হয়ে যেতো।'' ''তারা বেশ কিছু বেসামরিক লোকজনকেও জাহাজে নিতো, যারা কম্যুনিজম থেকে যেকোনো মূল্যে পালাতে চাইতো। জাহাজে থাকা লাটভিয়ানরা ডেকে জড়ো হয়ে লাটভিয়ার জাতীয় সঙ্গীত গাইতো।'' জার্মানি জুড়ে যেসব শরণার্থী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল, সেখানে এসে পৌঁছায় পরিবারটি। সেখানকার পরিবেশ ছিল খুবই দুর্দশাজনক। তাঁর ১০ মাস বয়সী শিশু বোনটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। একবছরের মধ্যে ভাইরার আরেকটি ভাই আসে পৃথিবীতে। তবে সেই আনন্দের ঘটনা ছাপিয়ে জীবনের একটি কর্কশ শিক্ষা পান সেদিন। ''আমার মায়ের সঙ্গে সেই রুমে আঠারো বছরের এক তরুণী একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু সে শিশুটিকে নিতে চায়নি। এমনকি সে তার কোন নামও রাখতে চায়নি, শিশুটির কোন ব্যাপারেই সে আর জড়াতে চায়নি, কারণ রাশিয়ার সৈন্যদের গণ ধর্ষণের ফলে ওই শিশুটির জন্ম হয়েছিল।'' ''প্রত্যেকবার যখন সেবিকারা অসহায় শিশুটিকে তার কাছে নিয়ে আসছিল, সে তার চেহারা দেয়ালের দিকে নিয়ে কাঁদছিল আর কোন কথা বলতেও অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল। সেবিকারা শিশুটির নাম দেয় মারা, আমার বোনের নামও ছিল তাই।'' তিনি বলছেন, ''আমার মনে হলো, এটা সত্যিই অন্যায়। এখানে একজন মারার জন্ম হয়েছে যাকে এই পৃথিবীতে কেউ চায় না। আর আমাদের মারাকে আমরা এতো বেশি চাইতাম, কিন্তু তাকে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছে। আমি বুঝতে শুরু করলাম, জীবন আসলেই খুবই রহস্যময় এবং পুরোপুরি ন্যায্য নয়।'' মরক্কোয় থাকার সময় সময় ভাইরা, তখন তার বয়স ১১ বছর বাল্যবিয়ে ভীতি ১১ বছর বয়সের সময় ভাইরাকে আবার স্থানান্তরিত হতে হয়। এবার জার্মানি থেকে ফরাসি নিয়ন্ত্রিত মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায়। ''মধ্যরাতে ট্রাক থেকে আমাদের যেখানে নামিয়ে দেয়া হলো, সেটা ছিল ছোট একটি অস্থায়ী গ্রাম। কিন্তু সেটা ছিল যেন পুরো বিশ্বের একটা সংক্ষিপ্ত রূপ।'' ''সেখানে ফরাসি লোকজন ছিল, বিশ্বের সবদেশের মানুষ ছিল। গৃহযুদ্ধের সময় থেকে থাকা স্প্যানিশ লোকজন, ইটালিয়ান এবং রাশিয়ান, সব ধরণের মানুষ ছিল।'' তার পিতার একজন সহকর্মী বললেন, তিনি ভাইরাকে বিয়ে করতে চান, যদিও ভাইরা তখন শিশু। ''বাবা একদিন বাসায় ফিরে বললেন, সে আমাকে ১৫ হাজার ফ্রাঙ্ক যৌতুক দিকে চায়। সে আমাকে প্রথম দুইটা গাধা আর গরুও দিতে চেয়েছে। কিন্তু বাবা তাকে বলেছেন, সে একটি শিশু এবং তার স্কুলে যেতে হবে। তখন ওই ব্যক্তি বলছেন, ঠিক আছে, তাকে আমরা স্কুলে যেতে দেবো।'' তার বাবা-মা দুজনে হেসে উঠলেন। কিন্তু ভাইরা সতর্ক হয়ে উঠলেন। লিঙ্গ বৈষম্যের অধ্যাপক এর কিছুদিন পরে ভাইরার পরিবার কানাডায় চলে যায়। ষোল বছর বয়সে ভাইরা একটি ব্যাংকে চাকরি পেলেন। সেই সঙ্গে তিনি নাইট স্কুলে যেতে শুরু করলেন। এরপরে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোতে পড়ার সুযোগ পেলেন। ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টোতে ভাইরা, ১৯৫৭ সালে সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হলো এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে, যাকে পরবর্তীতে তিনি বিয়ে করেন। ইমান্টস ফ্রাইবার্গা লাটভিয়া থেকে পালিয়ে আসা আরেকজন। মনোবিজ্ঞানে পড়াশোনা করে ১৯৬৫ সালে পিএইচডি করতে শুরু করেন ভাইরা। কিন্তু ভাইরা বলেন, তার বেছে নেয়া বিষয়টি ছিল যেন ভাগ্যের অঙ্গুলি হেলনে নির্ধারিত একটি বিষয়। ''সম্ভাব্য বিষয়গুলোর একটি তালিকা ছিল রেজিস্টারের কাছে। আমি সেটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে দেখলাম এবং একটি লম্বা শব্দ দেখতে পেলাম যেটা শুরু হয়েছে পি দিয়ে এবং শেষ হয়েছে ওয়াই দিয়ে। আমি বললাম, এই বিষয়টি আমি নিতে চাই।'' কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি তিনি বুঝতে পারলেন, নারীদের এখনো পুরোপুরি স্বাগত জানানো হয় না। ''একদিন আমাদের অধ্যাপক একটি সেমিনারে বললেন, আমাদের এখানে তিনজন বিবাহিত নারী রয়েছেন যারা পিএইচডি করছেন। এটা আসলে পুরোপুরি অপচয়, কারণ যারা বিয়ে করবে, সন্তান জন্ম দেবে তারা এমন একটি জায়গা দখল করে আছে যেটি একটি ছেলে পেতে পারতো যে হয়তো সত্যিকারের একজন বিজ্ঞানী হতে পারতো।'' ''ওই সেমিনারে থাকা আমরা সব মেয়েরাই সারা জীবন ধরে সেই কথাগুলো মনে রেখেছি।'' তিনি বলেন, তারা ওই লিঙ্গ বৈষম্য করা অধ্যাপককে দেখিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, তার পছন্দের ছেলেদের তুলনায় নারীরা আরো ভালো কিছু করতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব মন্ট্রিয়লে ৩৫ বছর কাজ করেছেন ভাইরা। তিনি পাঁচটি ভাষায় কথা বলতে পারেন এবং ১০টি বই লিখেছেন। শ্রেণীকক্ষে অধ্যাপনা করছেন ভাইরা, ১৯৭৮ সাল বাড়িতে প্রত্যাবর্তন...চূড়ান্তভাবে ১৯৯৮ সালে যখন ভাইরার বয়স ৬০ বছর, তিনি প্রফেসর এমেরিটাস নির্বাচিত হলেন এবং অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু একদিন বিকালে তার টেলিফোন বেজে উঠলো। ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন লাটভিয়ার প্রধানমন্ত্রী। লাটভিয়ার একটি নতুন প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে কাজ করার প্রস্তাব পেলেন ভাইরা। তাকে বলা হলো, ''তারা বিদেশে থাকা এমন কাউকে খুঁজছে, যিনি অনেকগুলো ভাষায় কথা বলতে পারেন, পশ্চিমা মানসিকতা বুঝতে পারেন এবং সেই সঙ্গে লাটভিয়ার সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে।'' কিন্তু তখনই যেন দেখতে পেলেন যে, তিনি লাটভিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে গেছেন। দেশে ফেরার আটমাস পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য কানাডিয়ান পাসপোর্ট ত্যাগ করলেন ভাইরা। তিনি নির্বাচিত হলেন লাটভিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসাবে। ২০০৩ সালে স্বামী আইম্যান্টস ফ্রাইবার্গের সঙ্গে ভাইরা, যখন তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিচ্ছেন একপর্যায়ে তার জনপ্রিয়তা গিয়ে ঠেকেছিল ৮৫ শতাংশে। ''আমি ছিলাম এমন কেউ, যিনি অর্থ রোজগার বা অন্য কিছুর জন্য নয়, বরং শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করার জন্য। এই পদে এসেছিল।'' ''তখন অনেক সংবাদ মাধ্যম আগ্রহের সঙ্গে সমালোচনা করার চেষ্টা করছিল যে, আমি হচ্ছি খরুচে স্বভাবের, পশ্চিমে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছি। কিন্তু এগুলো পুরোপুরি বানানো'' তিনি বলেন। ''আমি আবিষ্কার করলাম, আপনি যদি গণমাধ্যমকে বিশ্বাস করতে না পারেন, তাহলে আপনাকে জনগণের কাছে সরাসরি গিয়ে কথা বলতে হবে।'' ২০০৪ সালে নেটো আর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে লাটভিয়ার যোগদানের পেছনে তিনি মূল ভূমিকা রেখেছেন। ইস্তানবুলে নেটো সম্মেলনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সঙ্গে ভাইরা ভেকয়া-ফ্রাইবাইরগা ইস্তানবুলে নেটো সম্মেলনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সঙ্গে ভাইরা ''নারী হওয়ার অনেক সুবিধা আছে। আমার মনে পড়ছে, ইস্তানবুলে নেটো সম্মেলনের সময় প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ আমার বাহু ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন, কারণ আমি হাই হিল পড়েছিলাম আর মেঝে ছিল পিচ্ছিল, আমরা আস্তে আস্তে হাঁটছিলাম।'' ''আমি সাধ্যমত সবকিছুই করেছিলাম। তাকে বলেছিলাম নেটোর বিস্তৃতি করা কতটা দরকার এবং লাটভিয়া যেন সেখানে থাকে।'' ''আমরা আস্তে আস্তে হাঁটছিলাম এবং সময়টা উপভোগ করছিলাম এবং তার কানে লাটভিয়ার প্রপাগাণ্ডা দেয়ার জন্য সবকিছুই করছিলাম। আমার মনে হয়নি এতে তার খারাপ লেগেছে',' তিনি বলছেন। ভাইরার দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালে, তার ৭০তম জন্মদিনের কয়েকমাস আগে। তিনি ক্লাব ডি মাদ্রিদ নামের একটি সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যেটি সাবেক নেতাদের নিয়ে গঠিত। এই সংগঠন গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব এবং গর্ভন্যান্স নিয়ে কাজ করে। নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়েও তার বিশেষ নজর রয়েছে। সেই অধ্যাপকের মন্তব্য এখনো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তিনি জানেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার এখনো অনেক বাকি আছে। | যুদ্ধের মধ্যে থাকা লাটভিয়া থেকে পালিয়ে গিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটি। এরপর ৫০ বছর তাকে নির্বাসনে কাটাতে হয়। তবে দেশে ফেরার পরে ভাইরা ভাইক-ফ্রাইবার্গা হলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | বরিস জনসন এবং রানী এলিজাবেথ ব্রিটেনে দীর্ঘদিনের অলিখিত প্রথা এটাই যে, রানি সবসময় সরকারের পরামর্শে কাজ করবেন। তবে কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে কখনই কোনো পক্ষ নেবেন না, মতামত দেবেন না। কয়েক দশক ধরে দল-মত নির্বিশেষে ব্রিটেনের রাজনীতিকরা অলিখিত একটি চুক্তি এবং প্রথা অনুসরণ করছেন যে তারা কখনই রানিকে দিয়ে এমন কিছু করাবেন না বা বলাবেন না যাতে তিনি কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের বিতর্কে পড়তে পারেন। কিন্তু সরকারের পরামর্শে সংসদ স্থগিত করার তার এক নির্দেশ বেআইনি ঘোষণা করে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের পর সেই বিতর্কেই পড়ে গেছেন রানি এলিজাবেথ। পাঁচ সপ্তাহের জন্য সংসদ স্থগিত করার সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত ছিলেন বিরোধীরা। তাদের কথা - চুক্তি হোক আর না হোক ৩১শে অক্টোবরের মধ্যে ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে আনার তার সংকল্পে যেন সংসদ বাধা না দিতে পারে সে জন্যই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন প্রথা ভেঙ্গে এভাবে দীর্ঘ সময়ের জন্য সংসদ স্থগিত করেছেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বে-আইনি ঘোষণার পর ব্রেক্সিট নিয়ে অব্যাহত রাজনৈতিক ঝড়ের মাঝে পড়ে গেছেন ব্রিটেনের রানি। কারণ, সরকারের পরামর্শে যে নির্দেশনা তিনি জারি করেছিলেন, সেটাকেই সুপ্রিম কোর্ট বেআইনি ঘোষণা করেছে। নজিরবিহীন এই রায়ে রানি যে চরম বিব্রত হয়েছেন- এ নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে কোনো বিতর্ক নেই। বিবিসির রাজ-পরিবার বিষয়ক সংবাদদাতা জনি ডায়মন্ড বলছেন, "এটা এমনই এক পরিস্থিতি যা রানি সবসময় এড়িয়ে চলতে চান।" কিন্তু তিনি পারেননি। বিরোধী রাজনীতিকরা এখন খোলাখুলি বলতে শুরু করেছেন, সংসদ স্থগিত করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জেনে-বুঝে রানিকে মিথ্যা বলেছেন, বিভ্রান্ত করেছেন এবং এর জন্য রানীর কাছে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী জন মেজর বলেছেন, "ভবিষ্যতে আর কখনই কোনো প্রধানমন্ত্রী যেন এভাবে রানি এবং সংসদের সাথে আচরণ না করেন।" রানীকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ উঠেছে প্রধানমন্ত্রী বরিন জনসনের বিরুদ্ধে রানি কি 'না' বলতে পারতেন? সংসদ স্থগিত করা নিয়ে রানি কি বরিস জনসনের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করতে পারতেন? তিনি কি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে পারতেন, পাঁচ সপ্তাহের জন্য সংসদ স্থগিত করার পেছনে যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ নেই, এবং ব্রেক্সিট কার্যকরী করার ঠিক আগ মুহূর্তে এ সিদ্ধান্ত নিলে তিনি পক্ষপাতিত্বের বিতর্কে পড়ে যেতে পারেন। যে সরকারি প্রতিনিধিদল ব্যালমোরাল প্রাসাদে রানীর কাছে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের সাথে রানির কি কথাবার্তা হয়েছিল তা হয়তো কখনই জানা যাবেনা। কিন্তু বিবিসির জনি ডায়মন্ড বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করা রানির জন্য অসম্ভব ছিল। কারণ তা হতো নজিরবিহীন এবং তার ফলে অভূতপূর্ব এক সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতে পারতো। রানি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ শুনবেন - এটাই ব্রিটেনের অলিখিত অবশ্য-পালনীয় প্রথা। রাজ-পরিবার সম্পর্কিত বিবিসির আরেক সংবাদদাতা নিকোলাস উইচেল বলছেন, কাগজে-কলমে কিছু বিষয়ে রানি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করার অধিকার রাখেন। "কিন্তু বাস্তবে এই অধিকার একটি ফ্যান্টাসি ছাড়া আর কিছুই নয়।" বিবিসির ঐ সংবাদদাতা বলছেন, প্রতিষ্ঠিত প্রথা এটাই যে সাংবিধানিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে রানি সবসময় প্রধানমন্ত্রীর 'পরামর্শ মানতে বাধ্য।' সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিরা যখন ব্যালমোরাল প্রাসাদে তার সাথে দেখা করেন, রানির পক্ষে যা করা সম্ভব ছিল তিনি তাই করেছেন। ব্যক্তিগত অস্বস্তি থাকলেও, সংসদ স্থগিত করার পরামর্শে রানিকে সম্মতি দিতেই হয়েছে। "কিন্তু কোনো সন্দেহ এই ঘটনা রানির জন্য চরম অস্বস্তির কারণ হয়েছে। কারণ তিনি সব সময় চেয়েছেন এই ব্রেক্সিট বিতর্ক থেকে যেন তাকে বাইরে রাখা হয়।" | ব্রিটেনের রানী রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | বোতলটি সমুদ্রে ছোঁড়া হয়েছিলো ১৩২ বছর আগে এই বোতলের ভেতরে জার্মান ভাষায় লেখা কিছু বার্তা গুটিয়ে ভাঁজ করে ভরে দেওয়া হয়েছে। ওই কাগজে সাল তারিখ হিসেবে ১৮৮৬ সালের কথা লেখা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বোতলটি জার্মানির একটি জাহাজ থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিলো ভারত মহাসাগরে। এবং সামুদ্রিক স্রোতের গতিপথের উপর পরীক্ষা চালানোর জন্যে এই বোতলটি নিক্ষেপ করা হয়েছিলো। যে নারী টনিয়া ইলম্যান বোতলটি প্রথম দেখতে পান তিনি মনে করেছিলেন বিষয়টি সত্য ঘটনা নয়। কেউ হয়তো মজা করার জন্যে এরকম একটা ঘটনা তৈরি করেছে। কিন্তু পরে অস্ট্রেলিয়ার একটি জাদুঘর বোতলের ভেতরের বার্তাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। পার্থ শহরের একটি পরিবার এই বোতলটি সমুদ্র সৈকতে কুড়িয়ে পেয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৩২ বছর আগে বোতলটি সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিলো। টনিয়া ইলম্যানের স্বামী কিম ইলম্যান বিবিসিকে বলেছেন, বোতলের ভেতরে তারা কিছু কাগজ দেখতে পান কিন্তু সেগুলো যে কী সেবিষয়ে তাদের কোন ধারণা ছিলো না। বোতলের ভেতরে গুটিয়ে রাখা ছিলো এই কাগজটি তারা সেটি বাড়িতে নিয়ে যান এবং আভেনের ভেতরে ঢুকিয়ে ভালো করে শুকিয়ে নেন। দেখতে পান, বোতলের ভেতরে রাখা কাগজে লেখা রয়েছে ১২ই জুন ১৮৮৬। বলা হচ্ছে, জার্মান ন্যাভাল অবজারভেটরি থেকে এই বোতলটি সমুদ্রে ফেলা হয়েছিলো জাহাজের রুট সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়ার জন্যে। এর আগে এরকম বোতলের ভেতরে সবচেয়ে পুরনো যে বার্তা পাওয়া গিয়েছিলো সেটি ছিলো ১০৮ বছরের পুরনো। টনিয়া ইলম্যান বোতলটি কুড়িয়ে পাওয়ার পর ভেবেছিলেন এটিকে তিনি তার বুক শেল্ফে সাজিয়ে রাখবেন। কিন্তু পরে তিনি দেখতে পান এর ভেতরে কিছু একটা লেখা। সেখানে উল্লেখ করা আছে কেউ যদি এই বোতলটি কুড়িয়ে পান তাহলে জার্মান কনস্যুলেটের সাথে যোগাযোগ করুন। সেখানে জাহাজের নামও উল্লেখ রয়েছে- পাওলা। তখন তাদের সন্দেহ হয় যে এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু হতে পারে। তারা অনলাইনে বোতলটি নিয়ে গবেষণা করেন এবং এক পর্যায়ে যোগাযোগ করেন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামের বিশেষজ্ঞদের সাথে। ওই জাদুঘরের সহকারী কিউরেটর রস এন্ডার্সন জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে বার্তাটির সত্যতা নিশ্চিত করেন। ইলম্যান দম্পতি এই বোতলটি খুঁজে পান তিনি বলেন, "আশ্চর্যজনক হলেও, জার্মানির আর্কাইভে খোঁজ নিয়ে পাওলা জাহাজের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে ১৮৮৬ সালের ১২ই জুনের কথাও উল্লেখ আছে। তাতে নাবিক মন্তব্য লিখে রেখেছেন যে এরকম একটি বোতল জাহাজ থেকে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এসব দিন তারিখ মিলিয়ে বার্তাটির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।" তিনি বলছেন, ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় এটি ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিলো এবং সম্ভবত ১২ মাস ধরে সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে অস্ট্রেলিয়ান পশ্চিম তীরে এসে পৌঁছায়। তারপর বোতলটি বালির নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিলো। বোতলটি এখন দর্শনার্থীদের জন্যে জাদুঘরে রেখে দেওয়া হয়েছে। ইলম্যান পরিবারটি বলছে, এই বোতলটি পাওয়ার ঘটনা তাদের জীবনের সবচেয়ে নাটকীয় এক বিষয়। বলা হচ্ছে, ৬৯ বছর ধরে চালানো জার্মানির এই পরীক্ষার সময় ৬৬২টি বার্তাবাহী বোতল সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিলো এবং তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত একটি বোতলও ফিরে আসেনি। এধরনের নোট লেখা শেষ বোতলটি পাওয়া গিয়েছিলো ১৯৩৪ সালে, ডেনমার্কে। | বোতলের ভেতরে রাখা বার্তা সমুদ্রে ভাসতে তীরে এসে পৌঁছেছে এরকম নাটকীয় ঘটনা আমরা সিনেমা গল্প উপন্যাসে পেয়ে থাকি। বাস্তবেও এরকম ঘটনার কথা মাঝে মধ্যে শোনা যায়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে সমুদ্র সৈকতে এখন বার্তাবাহী এমন একটি বোতল উদ্ধার করা হয়েছে যা এযাবৎ কালের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো বলে ধারণা করা হচ্ছে। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | টেকনিক্যাল ক্যারিয়ার ছেড়ে স্কিন কেয়ার শিল্পে নিজেকে জড়ান সাবরিনা ট্যান। টেকনিক্যাল ক্যারিয়ার ছেড়ে স্কিন কেয়ার শিল্পে আসতে সাবরিনা ট্যানকে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাদের মধ্যে একটি হল নারী হিসেবে কাজ করা। কর্মস্থলে একজন নারী হিসেবে তার এই শক্তিশালী অবস্থান সাবরিনার নিজের কাছেই নতুন ছিল। কেননা তিনি সিঙ্গাপুরে তিন ভাইয়ের সাথে বড় হয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পরে আইবিএম, ওরাকল এবং হিউলেট-প্যাকার্ডের মতো পুরুষ-কর্তৃত্ব সংস্থাগুলিতে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, "আমি একটি দলের আরও কয়েকজন নারী সদস্য হিসেবেই কাজ করতাম।" অনেক সময় সাবরিনার আশেপাশে এমন অনেক নারী কাজ করতেন, যারা নিজেদের চিন্তা ধারণা শেয়ার করতে ইতঃস্তত বোধ করতেন। তিনি লক্ষ্য করতেন যে অনেক নারী নিজেকে প্রস্তুত বলে ভাবতে পারতেন না। অথচ তাদের এমন অনেকেই ছিলেন যাদের অনেকেই ওই চাকরির তুলনায় ওভার কোয়ালিফাইড বা বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন ছিলেন। বিউটি শিল্পে কেন? "বিউটি শিল্পের দিকে সরে আসাটা আমার জীবনে জন্য বড় ধরণের পরিবর্তন ছিল।" বলেছেন সাবরিনা। মাত্র এক দশক আগে তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, স্কিন ইঙ্ক চালু করার মাধ্যমে। সাবরিনা ট্যান আগে একজন বিজনেস ডেভলপার ও মার্কেটিং পদে কাজ করতেন। আরও পড়তে পারেন: রং ফর্সাকারী ক্রিম কি আসলেই ফর্সা করে? মেনোপজ: নারীর শরীরে কী প্রভাব ফেলে? 'শিশুর বিকাশে পুষ্টিকর খাবার ও খেলাধুলাই যথেষ্ট না' স্কিন ইঙ্ক হল একটি সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক ব্র্যান্ড। বর্তমানে তারা তাদের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ জুড়ে বিক্রি করে থাকে। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটি এক কোটি ডলার রাজস্ব দিয়ে থাকে। সেখান থেকেই ধারণা করা যায় যে তাদের মোট বিক্রির পরিমাণ কতোটা বিশাল। ৪৫ বছর বয়সী এই নারী তার এই সফলতার পেছনে তার "কারিগরি মানসিকতা"-কে প্রধান কারণ হিসেবে মনে করেন। এছাড়া আদর্শ ব্যক্তিবর্গের থেকেও অনুপ্রেরণা নিয়ে থাকেন তিনি। অ্যাপেলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্টিভ জবসকে দেখে তিনিও নিজের একটি স্বতন্ত্র বিউটি কোম্পানি চালু করার স্বপ্ন দেখেন। "আমি স্কিন কেয়ারে অ্যাপল এর মতো ব্র্যান্ড তৈরি করতে চেয়েছিলাম।" বলেন, সাবরিনা। অ্যালার্জি থেকে উদ্যোক্তা সিঙ্গাপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, "ব্যবসা ও অর্থনীতিতে পড়াশোনা করার পর, সাবরিনা তার প্রথম চাকরিটি একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠানে নেন। সেখানে তিনি ব্যবসায়ের উন্নয়ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করতেন। বছরের পর বছর সেখানে কাজ করার সময় তাকে ঘন ঘন বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতে হতো। এই অতিরিক্ত ভ্রমণের চাপে তার ত্বকে একজিমা সংক্রমণ দেখা দেয়। একজিমা এক ধরণের চামড়ার অ্যালার্জি। এবং সাবরিনার ত্বক এই অ্যালার্জি সংবেদনশীল ছিল। ডাই বা রঙের মত পদার্থ সেই-সঙ্গে আবহাওয়া পরিবর্তন সাবরিনার ত্বকে প্রভাব ফেলত। সব মিলিয়ে তিনি বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন এবং সমাধান চাইছিলেন। যখন তার দুই শিশুও একজিমায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন, তখন তিনি বাধ্য হয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। "আমার মনে ব্যাস, যথেষ্ট হয়েছে। এখন আমাদের স্কিনকেয়ার রুটিনকে আরও উন্নত করা প্রয়োজন। পুরো বিষয়টি আমার নিজের হাতে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।" সাবরিনা ট্যান আগে একজন বিজনেস ডেভলপার ও মার্কেটিং পদে কাজ করতেন। এরপর ২০০৭ সালে তিনি জাপানে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বা কারণ অনুসন্ধানের অভিযান শুরু করেন। সাবরিনা মূলত বিশ্বের অন্যতম বড় একটি প্রসাধনী প্রতিষ্ঠানে অনুসন্ধান করতে চেয়েছিলেন, এটা জানতে যে কেন তার ক্ষেত্রে কোন পণ্য কাজ করেনি। "আমি রসায়নবিদ এবং বিজ্ঞানীদের সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। ড্রাগ-স্টোর থেকে শুরু করে মার্কেটের বিউটি কর্নার কোনটাতে যাওয়াই বাদ রাখিনি।" পরে সাবরিনা আবিষ্কার করেন যে জাপানিরা কিছু বিশেষ উপাদান ব্যবহারের ব্যাপারে উৎসাহী। অবশেষে তিনি একটি ল্যাব বা পরীক্ষাগার খুঁজে পান যা তার চাহিদার কথা বুঝতে পেরেছিল। সাবরিনা চেয়েছিলেন, ত্বকের যত্নে এমন প্রসাধনী তৈরি করতে যা সবার ব্যক্তিগত পর্যায়ের সমস্যার সমাধান করবে। জাপানের এই সফরটি তাকে তার লক্ষ্য অর্জনে বড় ধরণের আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল। বাধা পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক তার স্বামীও মনে করেছেন যে এটি বেশ ইন্টারেস্টিং আইডিয়া। কিন্তু, সাবরিনার দুশ্চিন্তা ছিল যে তিনি ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে কিভাবে পরিস্থিতি সামলাবেন। তবুও, তিনি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন এবং তারা দুজনই তাদের চাকরি ছেড়ে এই ব্যবসায় মনোযোগ দেন। সারা জীবনের জমা পুঁজি বিনিয়োগ করেন এই ব্যবসায়। সাবরিনা চেয়েছেন তার পুরোটুকু ব্যবসায় দিতে। তবে বিপর্যয়ের শঙ্কা প্রতিনিয়ত তাকে তাড়া করতো। এক বছর পরে সিঙ্গাপুরে তিনি তার প্রথম দোকান খোলেন। দুই বাচ্চা নিয়ে এই ব্যবসা গড়ে তুলতে গিয়ে প্রায়ই রাতে তিনি মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমানোর সুযোগ পেতেন। "অনেক সময় আমি আমাদের ড্রাইভওয়েতে গাড়ির মধ্যে বসে ভাবতাম, 'আমি কি সঠিক কাজ করছি?'।" এভাবে বছর গড়াতে থাকে এবং ধীরে ধীরে সাবরিনার এই ব্র্যান্ড প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠানটি ত্বকে ব্যবহারের সিরাম, ক্রিম এবং হাই-টেক সৌন্দর্য সামগ্রী বিক্রি করে থাকে। এখন তারা আরও দুটি দোকান খুলছে। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: মাদ্রাসা নয়, সাধারণ শিক্ষা থেকেই জঙ্গি হয়েছে বেশি ইরানে মার্কিন হামলার পরিণতি কী হতে পারে? এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করলেন ট্রাম্প আইএস ছেড়ে আসা ব্রিটিশ যুবক মিডিয়াকে যা বললেন স্কিন ইঙ্কের পণ্যগুলো এরইমধ্যে গ্রাহকদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। ভাগ্য ঘুরে যায় সাবরিনার ভাগ্য ঘুরিয়ে দেয়, সৌন্দর্যের বৈশ্বিক পাওয়ারহাউস 'সেফোরা'-এর সঙ্গে একটি বিতরণ চুক্তি। ফরাসি এই প্রতিষ্ঠান তাদের বিশাল নেটওয়ার্কের সাহায্যে সাবরিনার কোম্পানির বিশাল প্রচারণা করে। ফলে গ্রাহকদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, সাবরিনার পণ্যের নাম। সেফোরা মূলক কাস্টমাইজড স্কিন কেয়ার পণ্যের প্রতি আগ্রহী ছিল। এজন্য তাদের একজন নির্বাহী স্কিন ইঙ্ক স্টোর পরিদর্শনে করেন। এভাবে সেফোরায় জায়গা হয় স্কিন ইঙ্কের। বর্তমানে স্কিন ইঙ্ক এশিয়ান স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে এখন শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সিঙ্গাপুরের এই ব্র্যান্ডটি তাদের সমস্ত পণ্য তৈরি করে জাপানে -যা বিশ্বব্যাপী তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। মার্কিন ডিপার্টমেন্ট স্টোরের চেইন নর্ডস্ট্রোমের মতো খুচরা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে নিউইয়র্কের বার্গডোর্ফ গুডম্যান এবং ব্রিটেনের সেলফ্রিজেসের মতো বিলাসবহুল দোকানে ছড়িয়ে পড়ে স্কিন ইঙ্ক। তাদের কিছু সেবা বেশ খ্যাতি কুড়িয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, ব্যস্ত নারীদের জন্য সৌন্দর্য চিকিৎসা। সাবরিনা বলেন, "চীনে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, পৃথিবীতে কোন কুশ্রী নারী নেই, শুধু অলস নারী আছে"। সেই অলস নারীদের ত্বকের যত্নের দায়িত্বটিই নিতে চেয়েছে স্কিন ইঙ্ক। স্কিন ইঙ্ক তাদের প্রতিটি পণ্য তৈরির আগে গবেষণা করে থাকে। কেন এটি আলাদা এই ব্র্যান্ডের মূল বিষয়টি হল প্রযুক্তি। যেটা সাবরিনার চিন্তাভাবনাকে পরিচালনা করার পাশাপাশি নতুন নতুন পণ্যের বিকাশে সহায়তা করে। অনলাইনে জরিপের মাধ্যমে এবং লাখো গ্রাহকের ত্বক পরীক্ষা করে তথ্য সংগ্রহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য সিঙ্গাপুর, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বহু কর্মী কাজ করছে। তারা সেই তথ্যের ভাণ্ডার ব্যবহার করেই পণ্য প্রস্তুত করে থাকেন। তারা জানার চেষ্টা করেন যে - কতজন নারী পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারেন না বা ব্যায়াম করেন না - ইত্যাদি। সাবরিনা বলেছেন: "প্রযুক্তিতে সবসময় একটি সমস্যা সমাধান করার মানসিকতা থাকে, আমরা সমস্যাটি নির্ণয় করি তারপর মূল সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করব সেটা বের করি।" মিনটেলের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সৌন্দর্য বিশ্লেষক শ্যারন কোয়েক বলেছেন, "স্কিন ইঙ্কের স্কিন কেয়ার নিয়ে এই ভিন্ন ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবসা শুরু সময় থেকেই সব নজর কাড়ে।" "যে সময়ে ত্বকের প্রোফাইলিং এবং কাস্টমাইজেশন করার বিষয়টি সেভাবে প্রচলিত ছিলনা। স্কিন ইঙ্ক প্রতিটি চামড়ার ধরণ অনুযায়ী চাহিদা পূরণ করে থাকে," সাবরিনা নিজে বিনিয়োগের পাশাপাশি হংকং এবং কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের থেকেও তহবিল সংগ্রহ করে থাকে। স্কিন ইঙ্কের বিভিন্ন পণ্য। এখানেই শেষ নয় সাবরিনার এখন লক্ষ্য ফিটনেস স্টুডিও, সুস্থতা কেন্দ্র এবং ত্বকের যত্নে ভেন্ডিং মেশিন চালু করা। বর্তমানে কোম্পানির প্রতিটি দিকের বিকাশে বিভিন্ন মিটিং করতে হয় সাবরিনাকে। সরবরাহকারীদের সাথে কথা বলা থেকে শুরু করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা কৌশল সবকিছুতে তিনি যুক্ত হন। এতো ব্যস্ততার মাঝেও তিনি প্রতিদিন সকালে জগিং করেন এবং রাতের বেলা পরিবারের জন্য সময় রাখেন। মাঝে মাঝে তার কর্মীদের নিয়েও আড্ডার আয়োজন করেন। | বিবিসির সাপ্তাহিক দ্য বস সিরিজ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ব্যবসায়িক নেতাদের প্রোফাইল তৈরি করছে। এই সপ্তাহে কথা হয়েছে সাবরিনা ট্যানের সাথে। যিনি বিশ্বখ্যাত প্রসাধনী ব্র্যান্ড স্কিন ইঙ্ক ডটের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | বাংলাদেশে মুসলমানরা মূলত: সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী। আর সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসীরা সাধারণভাবে আহমদীয়া বা আহমদীয়া মুসলিম জামাতের সদস্যদের মুসলমান হিসেবে স্বীকার করেন না। তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার জন্য আন্দোলনও করছে কোন কোন গোষ্ঠি। সহিংসতাও হয়েছে আহমদীয়াদের বিরুদ্ধে। কিন্তু কী নিয়ে এই ভিন্নতা? ধর্মবিশ্বাস, মুসলিম-অমুসলিম বিতর্ক এবং আরো কিছু বিষয় নিয়ে মুখোমুখি কথা বলতে বিবিসি বাংলা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল আল কুরআন রিসার্চ অ্যান্ড রিসাইটেশন সোসাইটির চেয়ারম্যান সাইয়্যিদ জুলফিকার জহুর এবং বাংলাদেশে আহমদীয়া মুসলিম জামাতের মুবাল্লিগ-ইন-চার্জ আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরীকে। End of YouTube post, 1 | পৃথিবীর নানা দেশে ভিন্ন মত, ভিন্ন পথ এমনকি সংঘর্ষে লিপ্ত বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে এক সাথে করে তাদের ভিন্নতা, মিল-অমিল নিয়ে কথা বলার জন্য বিবিসি আয়োজন করেছে একটি বিশেষ মৌসুম - বিভেদ পেরিয়ে। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | তাই সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি ফুসফুসের প্রতি আমাদের বিশেষ যত্নশীল হতে হবে। জীবনযাত্রায় সাধারণ কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে ৭টি পরামর্শ দিয়েছেন। চলুন সেগুলো জেনে নেই। | বিশ্বব্যাপী যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা সরাসরি আমাদের শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | সুভাষ চন্দ্র বসু সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন কিংবদন্তি নেতা, যুগে যুগে বাঙালিদের জন্য সর্বত্র যিনি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থেকেছেন। তিনি বলেছিলেন "ভারত পুনরায় স্বাধীন হইবেই হইবে। এবং স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের খুব বেশি বিলম্বও নাই।" তাঁর অনুরাগীদের কাছে সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন 'নেতাজি'। পরাধীন ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য ভারতের বাইরে গিয়ে তিনি বিদেশি শক্তির সাহায্য চেয়েছিলেন। তাঁর জন্ম ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের কটক শহরে ১৮৯৭ সালের ২৩শে জানুয়ারি। বাবা ছিলেন আইনজীবী জানকীনাথ বসু ও মা প্রভাবতী দেবী। সুভাষ বসুর ভ্রাতুষ্পুত্র ডা. শিশির কুমার বসুর স্ত্রী কৃষ্ণা বসু (সম্প্রতি প্রয়াত) বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন সুভাষ বসুর প্রাথমিক লেখাপড়া কটক শহরে - প্রথমে স্টুয়ার্ট হাইস্কুলে, পরে র্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে। "তাঁর স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন বেণীমাধব দাস, যাঁর প্রভাব সুভাষ বসুর জীবনে খুব বেশিরকম পড়েছিল। স্কুল জীবনে আরেক ব্যক্তি তাঁর ওপর বড়ধরনের প্রভাব ফেলেছিলেন, তিনি হলেন স্বামী বিবেকানন্দ।" ইংল্যাণ্ডে ছাত্র অবস্থায় বন্ধুদের সঙ্গে সুভাষ চন্দ্র বসু - ১৯২০ সালে। (সুভাষ বসু দাঁড়িয়ে ডানদিকে) মেধাবী ছাত্র সুভাষ চন্দ্র বসু ম্যাট্রিক পরীক্ষায় খুব ভাল ফল করার পর ভর্তি হন কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে। কিন্তু ওই নামী কলেজ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাঁর জাতীয়তাবাদী চেতনার বহি:প্রকাশের কারণে। "ওই কলেজের ইংরেজ অধ্যাপক প্রফেসর ওটেনকে ছাত্ররা প্রহার করেছিল তার ভারত-বিরোধী মন্তব্যের জন্য। সেই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তাঁকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছিল। পরে তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে স্নাতক পাশ করেন," বলেন কৃষ্ণা বসু। সুভাষ বসু ১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত ছেড়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিৎসউইলিয়াম হল থেকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে পাশ করেও তিনি ব্রিটিশের অধীনে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান কৃষ্ণা বসু। ইণ্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হলেও কোন বিদেশি সরকারের অধীনে কাজ করতে তিনি চাননি। তাই নিয়োগপত্র পাওয়ার পরই তিনি সেই কাজে ইস্তফা দেন ১৯২১ সালে এবং ফিরে যান ভারতে। বড়ভাই শরৎ চন্দ্র বসুকে তিনি লিখেছিলেন, "বহু কষ্ট এবং আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়েই শুধু একটি জাতিকে আমরা নির্মাণ করতে পারি।" কলকাতার এলগিন রোডে সুভাষ চন্দ্র বসুর বাড়ি- নেতাজি ভবন। প্রয়াত অধ্যাপক অমলেন্দু দে (অনুষ্ঠান প্রচারের সময় ছিলেন কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি) বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন একটা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন সুভাষ বসু। কিন্তু সেখান থেকে যখন বড় ভাইকে চিঠি লিখে জানালেন তিনি আইসিএস হবেন না, তখন বাঙালিকে তা উদ্বেলিত করল। "অতবড় লোভনীয় একটা পদ পরিত্যাগ করলেন তিনি দেশের স্বার্থে। এটা বাঙালির মনে একটা তরঙ্গ সৃষ্টি করেছিল। বহুদিন ধরে বাঙালি আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশসেবা করার যে আদর্শ তুলে ধরেছিল, যার জন্য অগণিত লোক আন্দামানে নির্বাসন বেছে নিয়েছিলেন সেই ধারাটিকে আরও প্রজ্জ্বলিত করলেন সুভাষ বসু।" দেশে ফিরে চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে সুভাষ চন্দ্র বসু যোগ দেন স্বাধীনতার আন্দোলনে। সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের সভাপতি হবার পর পরপর দুবার তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতিও নির্বাচিত হন। 'স্বরাজ' নামে একটি সংবাদপত্র শুরু করেন তিনি ভারতে ফিরে যাবার পর এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচারণার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিবাদে অংশ গ্রহণের কারণে অনেকবার তাকে জেল খাটতে হয়েছিল। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত মতৈক্যের কারণে শেষ পর্যন্ত সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সুভাষ চন্দ্র। অনেকেই মনে করেন সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রতি মি. গান্ধী সেইসময় অবিচার করেছিলেন। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত মতৈক্যের কারণে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু। এই অনুষ্ঠান প্রচারের সময় প্রেসিডেন্সি কলেজে ইতিহাস বিভাগের প্রধান ছিলেন রজতকান্ত রায়। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছিলেন যে "রবীন্দ্রনাথও সেই সময় গান্ধীকে বলেছিলেন যাতে সুভাষ চন্দ্রকে কংগ্রেস থেকে তাড়ানো না হয়। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে সাধারণ বাঙালি পর্যন্ত সবার তখন একটা অনুভূতি হয়েছিল যে অন্যায়ভাবে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।" উনিশশ' তিরিশের দশকে সুভাষ চন্দ্র বসু ইউরোপে পাড়ি জমান, যে সফরে তিনি ইটালির নেতা বেনিতো মুসোলিনি সহ বেশ কিছু ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি দেখেন বিভিন্ন দেশে কম্যুনিজম এবং ফ্যাসিবাদ কীভাবে কাজ করছে। এই সময় তিনি লেখেন "দ্য ইণ্ডিয়ান স্ট্রাগল" নামে তার বইয়ের প্রথম পর্ব। এই বইয়ে তিনি তুলে ধরেছিলেন ১৯২০ থেকে ১৯৩৪ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা। বইটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত হলেও ব্রিটিশ সরকার বইটি ভারতীয় উপমহাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটা অন্য ধারার প্রবক্তা সুভাষচন্দ্র বসু শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন না। কলকাতা পৌরসভার মেয়র থেকে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সব ক্ষেত্রেই তিনি কম বয়সে তার নিজস্ব চিন্তাধারার প্রমাণ রেখেছিলেন। কংগ্রেস সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বসু ও জওহরলাল নেহরু (নভেম্বর ১৯৩৭) অধ্যাপক অমলেন্দু দে বলেন ছাত্রাবস্থা থেকেই সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন ব্যতিক্রমী। তার মতে তরুণ প্রজন্মের কাছে বারবার তিনি আদর্শ বা রোলমডেল হিসাবে বিবেচিত হয়েছেন তাঁর নেতৃত্বদানের ক্ষমতার জন্য। "আইসিএস-এর মত পদ ছেড়ে দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে যোগদান করার আগেও নেতাজি ছাত্রাবস্থায় যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন, এমনকী সমাজসেবার দায়িত্ব- সেখানেও দেখা গেছে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা- মানুষকে নেতৃত্ব দেবার অসামান্য দক্ষতা।" কলকাতায় এলগিন রোডে তাদের পারিবারিক যে বাড়ি ছিল, সেই বাড়ির শোবার ঘর থেকে ১৯৪১ সালে শীতের এক রাতে তাঁর পালিয়ে যাবার ঘটনাটা ছিল ঐতিহাসিক। "বিশেষ রকমভাবে প্রহরায় ছিলেন সুভাষ চন্দ্র," বলেছিলেন কৃষ্ণা বসু, "তার ভেতর থেকে ওঁনাকে বের করে আমার স্বামী তাঁকে গোমো (বিহারে) স্টেশনে পৌঁছে দেন। গোমো থেকে ট্রেনে উঠে তিনি চলে যান পেশাওয়ার, পেশাওয়ার থেকে কাবুল, কাবুল থেকে মস্কো হয়ে পৌঁছন জার্মানিতে। এবং সেখানে গিয়ে তিনি প্রথম শুরু করেন তাঁর আজাদ হিন্দ আন্দোলন।" "সুভাষচন্দ্র বসু থেকে তাঁর যে 'নেতাজি'তে উত্তরণ, সেটার প্রথম ধাপ শুরু হয়েছিল কলকাতায় এলগিন রোড়ের বাড়িতে, যে রাতে তিনি ওই বাড়ি থেকে নিষ্ক্রমণ করেছিলেন।" পরিবারের এই গাড়িতে করে এলগিন রোডের বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন সুভাষ বসু। গাড়িটি এখন তাঁর বাসভবনে সংরক্ষিত রয়েছে। পরে জার্মানি থেকে সাবমেরিনে করে তিনি পৌঁছন জাপানে এবং তারপর সিঙ্গাপুরে গিয়ে গঠন করেন আজাদ হিন্দ সরকার। কৃষ্ণা বসু বলেন, "সেটাই ছিল ভারতের বাইরে দেশটির প্রথম অস্থায়ী স্বাধীন সরকার। সুভাষ বসু হলেন সেই সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান এবং ৪৫ হাজার ব্রিটিশ ভারতীয় সেনা আত্মসমর্পণ করলেন। তাদের নিয়ে গঠিত হল ভারতের মুক্তি বাহিনী- ইণ্ডিয়ান ন্যাশানাল আর্মি (আইএনএ)। তিনি হলেন তার সুপ্রিম কমাণ্ডার।" বাঙালির বৈপ্লবিক উত্তরাধিকার এবং অদ্ভুত রোমান্টিকতার মেলবন্ধন ঘটেছিল সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবনে। তাঁর ঐতিহাসিক আহ্বান "আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব" বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনালগ্নে তিনি লুকিয়ে ভারত ত্যাগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি ও জাপান ভ্রমণ করেছিলেন ভারতে ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নাৎসি জার্মানি ও জাপানের মত সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের জন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ সুভাষ চন্দ্রের সমালোচনা করেছিলেন, এমনকি কেউ কেউ তাঁকে নাৎসি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলেও অভিযুক্ত করেছিলেন। তবে অন্যদিকে এমন যুক্তিও ছিল যে জার্মানি আর জাপানের সঙ্গে হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতারই পরিচয়। এই সিদ্ধান্তের সমর্থকরা বলেছেন এ কথা মানতেই হবে যে জার্মানি আর জাপানই ছিল তাঁর কাছে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করার একমাত্র ভরসার স্থল। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল যে করে হোক ভারতকে সাম্রাজ্যবাদী শাসন থেকে মুক্ত করা। সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন, কবে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের স্বাধীনতার অনুমোদন দেবে তার জন্য বসে না-থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে সুবিধা নেওয়া উচিত। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা নির্ভর করে অন্য দেশের রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থনের উপর। আর তাই তিনি ভারতের জন্য একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। মে ১৯৪২ সালে জার্মানিতে অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে দেখা করেন সুভাষ চন্দ্র বসু। ঐতিহাসিক মি. দে-র মতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষ চন্দ্র বসুর ভূমিকা নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও অসংখ্য ভারতীয়ের চোখে তিনি এখনও বীর বাঙালি যোদ্ধা- এখনও 'নেতাজি'। সুভাষচন্দ্র বসুর দাদা শরৎ চন্দ্র বসুর কন্যা অধ্যাপিকা চিত্রা ঘোষ এই অনুষ্ঠান তৈরি করার সময় ছিলেন কলকাতায় নেতাজি ইন্সটিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিস-এর পরিচালিকা। "নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে প্রথমে আমরা গ্রহণ করেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের একজন যোদ্ধা হিসাবে। সেভাবেই তাকে আমরা দেখেছিলাম। কিন্তু আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে যে সংগ্রাম তিনি পরিচালনা করেছিলেন, ভারতের পূর্ব সীমান্তে, পরে দেখেছিলাম তিনি শুধু ভারতের মুক্তির সাধনাই করেননি, মুক্ত ভারতবর্ষ কীরকম হবে, তারও একটি ছবি তিনি বরাবর এঁকেছিলেন, বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন চিত্রা ঘোষ। "তাঁর যে আদর্শ, যে ধ্যানধারণা তিনি ভবিষ্যতের জন্য রেখে গিয়েছিলেন, সেখানেও তাঁকে আমরা একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি চিন্তাবিদ বলে গ্রহণ করতে পারি।" আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনী ঝাঁসি রেজিমেন্টে মাত্র ১৫ বছর বয়সে যোগ দিয়েছিলেন অরুণা চ্যাটার্জ্জি। পরবর্তীতে আইএনএ.-র লেফটেনান্টও হয়েছিলেন তিনি। আজাদ হিন্দ ফৌজের রানি ঝাঁসি রেজিমেন্টের সদস্যদের একটি ছবি। "আমরা তখন বার্মাতে ছিলাম। সেখানে যখন যুদ্ধটা শুরু হল, তখন চারিদিকে গোলমাল। সেখানে আসলেন রাসবিহারী বসু, তারপর আসলেন নেতাজি। উনি এসে সেখানে ঝাঁসি রেজিমেন্টের একটা লিংক খুললেন। আমার মা তখন আমাকে লড়াই করার জন্য নেতাজির হাতে তুলে দিয়েছিলেন। নেতাজি তখন আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ঝাঁসি ক্যাম্পের কমাণ্ডারের কাছে। শুরু হয়েছিল আমার প্রশিক্ষণ।" আজাদ হিন্দ ফৌজের লেফটনান্ট মিসেস চ্যাটার্জ্জি বিবিসি বাংলাকে বলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীতে মেয়েদের পুরুষদের পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দিতেন সুভাষ চন্দ্র বসু। তিনি বলেন বন্দুক পিস্তল থেকে শুরু করে বেয়নেট, মর্টার, কামান সবধরনের সমরাস্ত্র চালনার শিক্ষাই তিনি নারী বাহিনীর সদস্যদের দিয়েছিলেন। "সামরিক বাহিনীর কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ভূগোল, ইতিহাস সবকিছুর প্রশিক্ষণই ক্যাম্পে আমাদের দেওয়া হতো। নেতাজি সবসময় না হলেও মাঝেমাঝেই নিজে এসে খোঁজ নিতেন কে কেমন করছে, কেমন চলছে ক্যাম্প।" সুভাষ চন্দ্র বসুর মৃত্যুকে ঘিরে আজও রয়ে গেছে একটা রহস্য। তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো নিয়ে আজও বিতর্কের শেষ হয়নি। যদিও সুভাষ চন্দ্রের ভ্রাতষ্পুত্র বধূ কৃষ্ণা বসু্ এ নিয়ে বিতর্কের তেমন কিছু দেখেননি। "সায়গন থেকে মাঞ্চুরিয়া যাচ্ছিলেন উনি। কিন্তু যে প্লেনে উনি উঠেছিলেন, সেটা তখন তাইপের বিমানবন্দরে একটি দুর্ঘটনায় পড়ে। উনি খুবই অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন। এবং যে ডাক্তার দেখেছিলেন, তিনি আমাদেরও বলেছেন যে গভীরভাবে পুড়ে যাবার ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ১৯৪৫-এর ১৮ই অগাস্ট সন্ধ্যাবেলা।" কিন্তু সুভাষচন্দ্র বসুর বড় ভাই শরৎ চন্দ্র বসুর কন্যা অধ্যাপিকা চিত্রা ঘোষ বিবিসি বাংলাকে বলেন তাদের পরিবারের অনেকেই মনে করেন ওই বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষ বসুর মৃত্যু হয়নি। "আমরা পরিবারের বেশি সংখ্যক লোক কিন্তু বিশ্বাস করি - নানান ঘটনা শোনার পর এবং নানা খবরাখবরের ভিত্তিতে, যে ওই বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়নি।" ভারতের দিল্লিতে জাতীয় সংগ্রহশালায় রক্ষিত সুভাষ বসুর পারিবারিক বংশলতিকার সঙ্গে তাঁর স্ত্রী এমেলি ও কন্যা অনিতার ছবি সুভাষ বসু বার্লিনে বসবাস করেছিলেন ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত। ১৯৩৪ সালে জার্মান সফরের সময় এমেলি শেঙ্কেল নামে এক জার্মান নারীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁকে সুভাষ বসু বিয়ে করেছিলেন, যদিও এই তথ্য স্বীকার করেননি তাঁর দল ফরোওয়ার্ড ব্লকের সদস্যরা। চিত্রা ঘোষ মনে করেন তাঁর গায়ে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়কের পোশাক, বীরোদীপ্ত চেহারা এবং তাঁর সেই ডাক - 'চলো দিল্লি' বা 'তোমরা আমাকে রক্ত দাও- আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব' এই ছবিটাই বাঙালির মনে আজও প্রকট হয়ে রয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসী জার্মানি ও সাম্রাজ্যবাদী জাপানি শক্তির সাথে হাত মেলানোর যে কৌশল সুভাষ বসু অবলম্বন করেছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তাঁর গভীর দেশপ্রেম ও ত্যাগ তাঁকে অগণিত বাঙালির হৃদয়ে বীরের আসনে বসিয়েছে। বলা হয় জাপানের টোকিওতে এই রেনকোজি বৌদ্ধ মন্দিরে সুভাষ চন্দ্র বসুর দেহভস্ম সংরক্ষিত রয়েছে ১৯৪৫ সাল থেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকা | দু'হাজার চার সালে বিবিসি বাংলা একটি 'শ্রোতা জরিপ'-এর আয়োজন করে। বিষয়টি ছিলো - সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে? তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় ২০০৪-এর ২৬শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত। বিবিসি বাংলার সেই জরিপে শ্রোতাদের মনোনীত শীর্ষ কুড়িজন বাঙালির তালিকায় পঞ্চম স্থানে আসেন সুভাষ চন্দ্র বসু। আজ তাঁর জীবন-কথা। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | সাকিব আল হাসান সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একটি বড় অংশ ক্ষমা চাওয়ার জন্য সাকিবকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। কিন্তু ক্ষমা চেয়ে সাকিব একটি ভুল করলো, এমনটি মনে করা মানুষের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে ভিডিও পোস্ট করা ব্যক্তি মহসিন তালুকদারকে মঙ্গলবারই আটক করেছে র্যাব। তবে তার আগেই তুমুল সরগরম হয়েছে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, তবে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে এবার একটির পর একটি যে বিতর্ক হচ্ছে তার সূচনা হয়েছে মূলত তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসার পরই। বিতর্কের শুরু যেভাবে মাত্রই ক্রিকেটে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে তার। ছয়ই নভেম্বর ঢাকায় ফেরার পরদিনই ঢাকার একটি সুপারশপ উদ্বোধন করতে গিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন বাংলাদেশের এই ক্রিকেট সুপারস্টার। অভিযোগ দেশে ফিরে কোয়ারেন্টিনে না থেকে বরং সুপারশপ উদ্বোধনের সময়ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলো বিবেচনায় নেননি তিনি এবং ওই অনুষ্ঠানে ছিলো অনেক মানুষের ভিড়। এরপর বৃহস্পতিবার বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় নতুন করে আলোচনায় আসেন এক ভক্তের সেলফি তোলার চেষ্টার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের জন্য। তবে সাকিব বলেছেন যে, ওই ভক্ত তার অনুমতি ছাড়াই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে প্রায় গায়ের ওপর ওঠে ছবি তোলার চেষ্টা করেছেন এবং এ সময় তাকে সরিয়ে দিতে গেলে ওই ব্যক্তির ফোন হাত থেকে পড়ে যায়। ওদিকে সাকিব ভারতে একটি পূজার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন এখন খবর ও ছবি প্রকাশ করে কিছু গণমাধ্যম তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ও উষ্মা প্রকাশ করা শুরু হয় মূলত শনিবার থেকেই। এর মধ্যে মহসিন তালুকদার নামে এক ব্যক্তি রোববার রাতে তার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ ভিডিওতে সাকিবকে অশ্লীল গালিগালাজ ও হত্যার হুমকি দেন। পাশাপাশি তিনি সাকিবকে পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের অনুসরণেরও পরামর্শ দেন ওই ভিডিওতে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে খেলায় ফিরেছেন সাকিব আল হাসান পরদিন সকালে আবার লাইভে এসে তিনি সাকিবকে ভারতে কালী পূজা উদ্বোধন করতে ভারতে যাওয়ার কারণে ক্ষমা চাইতে বলেন। এসব নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এমন পটভূমিতে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওি বার্তায় সাকিব আল হাসান বলেন তিনি পূজার উদ্বোধন করেননি বা উদ্বোধন করতে যাননি। এই বার্তায় তিনি নিজেকে গর্বিত মুসলমান উল্লেখ করে বলেন, "ভুলত্রুটি হবেই, ভুলত্রুটি নিয়েই আমরা জীবনে চলাচল করি। আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি"। যদিও তিনি স্পষ্ট করেই বলেন যে তিনি পূজা উদ্বোধন করতে যাননি। নেটিজেনদের দুই মত তার এ ক্ষমা প্রার্থনা নিয়েও শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। কারণ এক পক্ষ মনে করে এভাবে ক্ষমা না চেয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলা উচিত ছিলো তার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই আবার কেউ কেউ বলছেন, "হত্যার হুমকির পর এ ছাড়া আর কী বা করার ছিলো সাকিবের? জীবনের ঝুঁকি কেই বা নিতে চায়"? গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আব্দুন নুর তুষার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, "একদল বিশিষ্ট ফেসবুকজীবী খুবই ব্যস্ত হয়েছেন সাকিব এর সমালোচনায়? সাকিব কেন ক্ষমা চাইল? সে যদি মনে করে সে ক্ষমা চাইবে, আপনি তাকে না বলার কে"? "বরং নিজেদের প্রশ্ন করেন আপনারা কেমন সমাজ গড়েছেন যেখানে প্রকাশ্যে ফেসবুকে লাইভ ভিডিওতে রামদা উঁচিয়ে পৃথিবীর সেরা একজন খেলোয়াড়কে জীবনের হুমকি দেওয়া যায়? এখন দেশের ভাবমূর্তি কোথায় গেলো?...."। এই পোস্টেই আনন্দ জামান নামে একজন লিখেছেন, "প্রশ্ন একটাই, এই ক্ষমা প্রার্থনার মধ্যে সাকিব দেশের ধর্মান্ধদের আরও একধাপ এগিয়ে দিল কি না!" বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব সাকিব আল হাসান বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় মোঃ শামীম লিখেছেন, "অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল না, সাকিবকে হত্যার হুমকি দেওয়াটা অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো, আবার সাকিব ও মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়ে হজ্ব করে হিন্দুদের মন্দিরে গিয়ে কোটি মুসলিমের মনে আঘাত দেওয়াটা ও বাড়াবাড়ি।" আনসার আলী খান জয় লিখেছেন, "হত্যা বা ধর্ষণের আসামীকেই এত দ্রুত ধরা হয় না। যত দ্রুত এনাকে ধরা হয়েছে। সাকিব বলেই আইন আলাদা। অথচ সে দেশের আইন অমান্য করে কোয়ারেন্টিনে না থেকে অপরাধ করেনি? আইন শুধু অসহায়, দুর্বল প্রবাসীদের জন্য।" নুরুল আবছার লিখেছেন, "সাকিব ভুল স্বীকার করাতে দেশের মানুষ ক্ষমা করে দিয়েছে, সাকিবের ও উচিৎ হত্যার হুমকি দাতাকে ক্ষমা করে বড় মনের পরিচয় দেওয়া"। অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক অবশ্য সাকিব আল হাসানকে রামদা দেখিয়ে হুমকি দেয়ায় অভিযুক্ত মহসিন তালুকদারের ছবিসহ পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, "ইনিই বাংলাদেশ, বাকি সব বোগাস"। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলছেন, সাকিব আল হাসান এমন কিছু করেননি যেটা নিয়ে ধর্মীয় বিতর্ক হতে পারে। তারপরেও তাকে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলতে হয়েছে বাংলাদেশের এখনকার বাস্তবতার কারণেই । "তবে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বাস্তবতা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন ধর্ম নিয়ে একাডেমিক আলোচনাও করা যায় না। লক্ষ্য করে দেখুন গত কয়েক বছরে ধর্মীয় অনুভূতির নাম দিয়ে গণপিটুনি থেকে আরম্ভ করে মানুষ খুন সবকিছুই হয়েছে। অর্থাৎ একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে"। তিনি বলেন, এসই কারণেই হয়তো সাকিব আল হাসান কোনো ঝুঁকি নেননি। তাই ভালো হোক মন্দ হোক তিনি ক্ষমা চেয়ে নিজেকে নিরাপদ করার চেষ্টা হয়তো করেছেন। | বিতর্ক পিছু ছাড়ছেই না বাংলাদেশের ক্রিকেট সুপারস্টার সাকিব আল হাসানের। বেনাপোল সীমান্তে এক ভক্তের সেলফি তোলার চেষ্টা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর ভারতে পূজার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া এবং পরে তা নিয়ে হত্যার হুমকির পর ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দেয়া- এসব কিছুই নিয়ে এখন তীব্র বিতর্ক ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | দিল্লিতে ২০১২ সালে নির্মম গণধর্ষণের ঘটনার পর ভারতে ধর্ষণ মোকাবেলায় আইন আরও কঠোর করা হয়েছে এবং ওই ঘটনার পর থেকে পুলিশের কাছে ধর্ষণের ঘটনা জানানোর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। অনেকে বলছেন এর কারণ নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়টিকে এখন অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন সরকার আইনে সংস্কার এনে এর সাজা মৃত্যুদণ্ড করায় ধর্ষণের খবর বেশি জানা যাচ্ছে। তবে কোন কোন বিশেষজ্ঞ বলছেন এসব জনপ্রিয় পদক্ষেপ ফাঁকা বুলির মত। সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে এবং সেদিকে আসলে নজর দেয়া হচ্ছে না। বিবিসির ১০০ নারী মৌসুমে বিবিসি কথা বলেছে তিনজন নারীর সাথে, যারা বলছেন ভারতের কঠোর আইনও কেন ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য ব্যর্থ হচ্ছে। ছয় বছর আগে এই পিতার কন্যাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছিল। এখনও তিনি বিচারের অপেক্ষায়। মেয়েদের ঝুলন্ত লাশ আজও মানুষের কাছে এই গ্রামের পরিচয় হল 'সেই গ্রাম যেখানে গাছে মেয়েদের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গিয়েছিল'। ছয় বছর আগে দু্ই কাজিন বোনের মৃতদেহ পাওয়া যায় আম গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায়। একজনের বয়স ছিল ১২, অন্যজনের ১৫। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল তাদের ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। দিল্লিতে ২০১২ সালের গণধর্ষণের ঘটনার পর এটাই ছিল প্রথম আরেকটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ঘটনা। ছয় বছর পরেও ওই ঘটনার ভয়াবহতা এখনও এলাকার মানুষের কাছে ফিকে হয়ে যায়নি। উত্তর প্রদেশের বাদায়ুন জেলায় পৌঁছে সরু রাস্তা ধরে গাড়ি নিয়ে এগোনর সময় পথচারীদের কাছে গ্রামের নিশানা জানার জন্য থেমেছিলাম। সাথে সাথেই কোন্ গ্রামে যাবার পথ খুঁজছি, তারা বুঝতে পেরে পথ দেখিয়ে দিলেন। বাদায়ুনের ওই পরিবারের বিচারের জন্য লড়াইটা বেশ কঠিনই ছিল। আরও পড়তে পারেন: কিশোরীর বাবার সাথে আমার প্রথম কথা হয় ২০১৪ সালে, যখন দুই কিশোরীর মৃত্যু তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল 'প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত' পরিবারের সাথে আমার কথা হয় ২০১৪ সালে। একজন কিশোরীর বাবা আমার সাথে কথা বলেন সেই গাছটির নিচে বসে যে গাছে তিনি তার মেয়ে ও তার কাজিন বোনের ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখতে পান। তিনি বলেন তিনি তখন ভয় পেয়েছিলেন কারণ স্থানীয় পুলিশ তাকে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করেছিল এবং সাহায্য করতে চায়নি। তিনি চেয়েছিলেন প্রতিশোধ। "আমাদের মেয়েদের ওপর যারা এই কাজ করেছে, তাদের ঠিক এইভাবে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত- ঠিক যেভাবে তারা আমাদের মেয়েদের ঝুলিয়েছে।" আইন কঠোর হওয়ার কারণে নারীর জন্য এখন পুলিশের কাছে অভিযোগ নথিভুক্ত করার বিষয়টা এখন সহজ হয়ে যাবার কথা। ধর্ষণের দায়ে এখন মৃত্যুদণ্ডের বিধান আনা হয়েছে, এবং দ্রুত বিচার আদালত গঠন করা হয়েছে। বিচারের আশায় ছয় বছর ধরে চলছে আইনি লড়াই আর নথিপত্র হয়ে উঠেছে পাহাড় প্রমাণ আইনে বলা আছে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের ওপর ধর্ষণের যে কোন মামলা এক বছরের মধ্য শেষ হতে হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেখা যায় ধর্ষণের মামলা গড়াতেই থাকে। ধর্ষণের লক্ষ মামলা অমীমাংসিত দু হাজার তেরো সালের শেষে ৯৫ হাজার ধর্ষণের মামলা অমীমাংসিত ছিল, ২০১৯এর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজারে। এটা সরকারের সর্বসাম্প্রতিক হিসাব। বাদায়ুনের ধর্ষিতা কিশোরীর বাবা এখনও কঠিন আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তার শরীর ভেঙে গেছে, বয়সের তুলনায় বেশি বৃদ্ধ লাগে তাকে। তিনি জানেন বিচারের এই পথ দীর্ঘ এবং তাকে লড়তে হবে একা- কিন্তু তিনি হাল ছাড়তে রাজি নন। "আইনে বলা আছে মামলার দ্রুত শুনানি করতে হবে, কিন্তু আদালত কানে তুলো দিয়ে বসে আছে। আবেদনেও ফল হয় না। অনেকবার আদালতে গেছি, গরীব মানুষদের জন্য বিচার নেই," তিনি বলেন। তদন্ত কাজ দ্রুত শেষ করে দেয়া হয়েছে। তদন্তকারীরা বলেছে ধর্ষণ ও হত্যার পক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই সন্দেহভাজনদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এই তদন্তের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। নতুন করে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু আদালত বলছে তারা শুধু নির্যাতন ও অপহরণের মামলা নিতে রাজি আছে, যেটা লঘু অপরাধ। কিন্তু পরিবার চাইছে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করতে। মা এখনও আশা করছেন একদিন অপরাধীরা দোষী সাব্যস্ত হবে ভারতের বিচার ব্যবস্থায় অর্থ ও লোকবলের অভাব। বাদায়ুনের মামলা নেয়া হয়েছে দ্রুত বিচার আদালতে, কিন্তু তাদের আইনজীবী জ্ঞান সিং বলছেন সেখানে বিচার প্রক্রিয়ার সুবন্দোবস্ত নেই। "দ্রুত বিচার আদালতের উদ্দেশ্য হল মামলা দ্রুত সম্পন্ন করা, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই ময়না তদন্তের এবং অন্যান্য রিপোর্ট সময়মত আসে না। ডাক্তার বা তদন্তকারী কর্মকর্তারা বদিলি হয়ে যান। এছাড়াও সাক্ষীদের আদালতে আনতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়," তিনি বলেন। চারপেয়ে খাটিয়ার ওপর বসে কিশোরীর বাবা বছরের পর বছর ধরে জমে ওঠা পাহাড়প্রমাণ নথিপত্র ও ফাইল আমাকে দেখাচ্ছিলেন। তার স্ত্রী ন্যায়বিচারের আশায় বসে আছেন। বলছিলেন, "আশা করি আমাদের জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারব যে ধর্ষিতারা ন্যায়বিচার পেয়েছে।" 'বাবা-মা আমার ছেলেবন্ধুকে জেলে পাঠিয়েছে' উষার বয়স যখন ১৭ তার বাবা-মা পাড়ার এক ছেলের সাথে তার প্রেমের কথা জানতে পারেন। পশ্চিম ভারতের গুজরাতে পাঁচমহল জেলার ছোট এক গ্রামে এটা খুব একটা অস্বাভাবিক কোন ঘটনা ছিল না। কিন্তু উষার বাবা-মা এই সম্পর্ক মেনে নিতে চাননি, তাই উষা ও তার প্রেমিক পালিয়ে যায়। উষা বলেন তারা বেশিদিন পালিয়ে থাকতে পারেননি। বাবা ক'দিনের মধ্যেই তাদের খুঁজে বের করেন এবং উষাকে বাড়ি নিয়ে আসেন। আরও পড়তে পারেন: উষা তার বাবামায়ের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ এনেছিল "বাবা আমাকে দড়ি বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটান, উপোষ করিয়ে রাখেন এবং এরপর এক লোকের কাছে আমাকে এক লাখ ২৫ হাজার রুপিতে বেচে দেন," তিনি বলেন। উষা তার বিয়ের রাতে আবার বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। তিনি তার প্রেমিককে বিয়ে করেন এবং গর্ভবতী হন। কিন্তু তার সামনে হাজির হয় আরেকটি প্রতিবন্ধক। আইনি সংস্কারের মাধ্যমে মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়িয়ে আইনগতভাবে ১৬ থেকে ১৮ করা হয়েছে। ধর্ষণের 'মিথ্যা' মামলা কাজেই উষার বিয়েতে সম্মতি দেবার আইনগত বয়স না হওয়ায়, তার বাবা-মা উষার প্রেমিক স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন এবং তাকে জেলে পাঠান। ছেলেটির পরিবারও পার পায়নি। উষাকে ধর্ষণের পর তাকে অপহরণ করার জন্য ছেলেটির সাথে মিলে চক্রান্ত করার অভিযোগ তারা আনেন ছেলেটির মায়ের বিরুদ্ধে। "আমি দু সপ্তাহ কারাগারে কাটাই। উষার পরিবার আমাদের বাসা তছনছ করে, আমাদের ঘরের দরোজা ভেঙে আমাদের গরুছাগল নিয়ে গেছে। প্রাণ বাঁচাতে আমাদের গা ঢাকা দিতে হয়," বলেন ছেলেটির মা। এটা ছিল ধর্ষণের 'মিথ্যা' মামলা। অল্পবয়সী যে তরুণীকে আইনের রক্ষা করার কথা, সেই আইনের ব্যবহার তার জীবনকে দুঃসহ করে তুলেছিল। এধরনের কত যে 'মিথ্যা' ধর্ষণের মামলা আদালত পর্যন্ত ওঠে, তার হিসাব নেই। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় উষা তার স্বামী এবং স্বামীর পরিবারকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়। আইনজীবীরা বলছেন এধরনের মিথ্যা মামলাও ইতোমধ্যেই প্রায় ভঙ্গুর আইনি ব্যবস্থার ওপর কীভাবে বাড়তি চাপ তৈরি করছে তার প্রমাণ তারা দেখেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন মূল সমস্যা অনেক গভীরে যা আইন বদলে সমাধান করা যাবে না। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বাবা-মায়ের মতের বিরুদ্ধে যাওয়া খুবই কঠিন, এক তারা নাবালিকা, দুই তারা আর্থিকভাবে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল, বলছেন গরিমা জৈন। মিজ জৈন নেদারল্যান্ডসের টিলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আন্তর্জাতিক এক প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণের শিকার নারীদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছেন। "আমি যখন এসব মেয়েদের কাছে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছি, আমি দেখেছি যখন তাদের প্রেমিকদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের 'মিথ্যা মামলা' দিয়ে তাদের জেলে পাঠানো হয়, তখন সেটা যে তাদের সম্পর্ক ধ্বংস করে দেয় তাই নয়, এই ঘটনা ওই মেয়ের মনে গভীর একটা ক্ষত তৈরি করে। শুধু তাই নয়, বাবা-মায়ের আরও কঠিন নিয়ন্ত্রণের বেড়াজালে তার জীবন দু:সহ হয়ে ওঠে।" আনন্দী নামে একটি বেসামরিক সংস্থার সাহায্য নিয়ে উষা তার স্বামী ও স্বামীর পরিবারের সদস্যদের জেল থেকে বের করতে আনতে এবং তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সক্ষম হন। উষার বয়স ১৮ হওয়া মাত্রই তিনি নিজের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন তার উপায় ছিল না। "তরুণীরা যদি তাদের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে পারতো, তাহলে সংসার অনেক সুখের হতো," উষা বলেন। সমাজকর্মী সীমা শাহ বলছেন আইনের দুর্ব্যবহার হচ্ছে উষার পরিবার আনন্দী সংগঠনের সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে পাচারের মামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন। গ্রামীণ এলাকায় মেয়ের বিয়েতে সম্মতিদানের বয়স নিয়ে আইনের অপব্যবহারের অনেক ঘটনা ঘটছে। পুলিশে দায়ের করা প্রাথমিক অভিযোগ বা এফআইআর-যেগুলো ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫য় জমা দেয়া হয়েছে সেগুলোর ওপর একটি জরিপ চালিয়ে সংস্থাটি বলছে তার মধ্যে ৯৫% অভিযোগই বাবা-মায়ের দায়ের করা এধরনের অভিযোগ। আনন্দীর সমাজকর্মী সীমা শাহ বলছেন: "ধর্ষণের বিচারের জন্য আইন সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। অল্পবয়সী মেয়েরা তাদের কথা বলতে পারছেন না।" 'দলিত নারীদের হয়ে লড়তে আইন পড়েছি' মায়া বেশ সাহসী মুখ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু শক্ত থাকতে পারছিলেন না। তার কাহিনি আমাকে বলতে চাইছিলেন, কিন্তু প্রায়ই মানসিক যন্ত্রণায় ভেঙে পড়ছিলেন। মায়া দলিত সম্প্রদায়ের নারী। হিন্দু জাতপাতের বিচারে দলিতদের নিম্নবর্ণের মানুষ বলে বিবেচনা করা হয়। তিনি প্রথমে গিয়েছিলেন এঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। সেসময় উচ্চ বর্ণের এক পুরুষ তাকে অনুসরণ করতে শুরু করে। ওই ব্যক্তি তার প্রেমের প্রমাণ দিতে নিজের হাত কেটে ফেলে এবং মায়ার প্রত্যাখান কিছুতেই মানতে রাজি হয় না। কিন্তু পরে মায়াকে সে ধর্ষণ করে। মায়া আইন পড়ার সিদ্ধান্ত নেন "সে ছিল লম্বা-চওড়া লোক, আমি চেষ্টা করেও তাকে থামাতে পারিনি," মায়া বলছিলেন। মায়ার বাবা-মা তাকে পুলিশে অভিযোগ ডায়রি করাতে সাহায্য করেছিলেন, কিন্তু পরে ঐ ব্যক্তি মায়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সম্প্রদায়ের চাপের কাছে তারা মাথা নোয়াতে বাধ্য হন। তারা ভেবেছিলেন একজন ধর্ষিতা নারী হিসাবে সমাজে কলঙ্কিত হবার হাত থেকে তারা তাকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু মায়ার বিবাহিত জীবন ছিল অন্য আরেকটি নরক। "আমার স্বামীর পরিবার বলতো তুমি একজন দলিত, নোংরা গন্ধওয়ালা ড্রেনের মত, তোমার দিকে তাকাতেও আমাদের ঘৃণা হয়," কাঁদতে কাঁদতে মায়া বললেন। "আমার স্বামী মদ খেয়ে ঘরে ফিরত, পুলিশে তার নামে ডায়রি করার জন্য আমাকে গাল দিত, মারত, এবং আমাকে কুরুচিপূর্ণ বিভিন্ন যৌন কাজে বাধ্য করত, আমি না চাইলেও শুনত না।" মায়া আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছিল। একদিন স্বামী ভুল করে দরোজা খুলে রেখে যাওয়ায় মায়া পালিয়ে বেঁচেছিল। দলিত একজন আইনজীবী ও অধিকার কর্মী মণীষা মাশালের সাথে আলাপ হবার পর মায়া প্রকৃত মুক্তির স্বাদ অনুভব করেন। মণীষা হরিয়ানায় পড়াশোনা করছিলেন ধর্ষিতা দলিত মেয়েদের নিয়ে। মণীষা দেখেছিলেন জাতপাতের বৈষম্য এবং যৌন সহিংসতা বন্ধের জন্য যেসব আইন আছে সেগুলো অকার্যকর। কারণ বহু দলিত নারী জানেই না এসব আইন আদৌ আছে বলে। মণীষার আশা তিনি দলিতদের মধ্যে থেকে আইনজীবীদের একটি গোষ্ঠী গড়ে তুলতে পারবেন অভিযুক্তরা বেশিরভাগ সময়ই অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানের মানুষ হন। এছাড়াও পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং প্রশাসনে জাতিগত বৈষম্যর ব্যাপারটা প্রকটভাবে কাজ করে। মণীষা চাইছেন দলিত নারীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে। তিনি মায়ার মত ধর্ষিতা দলিত নারীদের আইন পড়ায় উৎসাহ দিচ্ছেন। মায়াও এটাকে জীবনে এগিয়ে যাবার পথে একটা সুযোগ হিসাবে নিয়েছেন। তিনি ধর্ষণের অভিযোগ আবার নতুন করে দায়ের করেছেন এবং নতুন অভিযোগে তাকে দিয়ে জোর করে অস্বাভাবিক যৌনকাজ করানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। মণীষার সাথে আলাপ হবার তার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। "আমি আইন পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যাতে ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর মুখ বন্ধ করে রাখা দলিত নারীদের হয়ে আমি লড়তে পারি।" মায়া ও আরও জনা ছয়েক ধর্ষিতা নারী মণীষার সাথে ছোট একটি বাড়িতে থাকেন। এলাকার দলিত সম্প্রদায়ের নারীরা নিয়মিত বৈঠক করতে আসেন "উচ্চ বর্ণের মানুষ দলিত মেয়েদের সামগ্রী হিসাবে বিবেচনা করে, তাদের প্রয়োজনমত ব্যবহার করা বা ফেলে দেয়া যায়," বলছেন মণীষা। "তাদের ওপর নির্যাতনের কথা যদি দলিতরা বলার চেষ্টা করেন, তাদের খুন করে ফেলা হয়।" অভিযুক্তর পরিবারগুলো প্রায়ই মণীষাকে হুমকি ধামকি দেন, কিন্তু তিনি তাতে ভয় পেয়ে পিছু হঠতে নারাজ। তিনি দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে একজন নেত্রী হয়ে গেছেন। তিনি দলিত তরুণী এবং বিচার ব্যবস্থার মধ্যে একটা সেতুবন্ধন। "আমাদের সম্প্রদায়ে নারীরা সহিংসতার শিকার হন এবং মুখ বুজে মৃত্যু বরণ করেন। আমি সেটা চাই না। আমি ধর্ষণের শিকার নারী হয়ে বাঁচতে চাই না। আমি লড়তে চাই।" (ভারতীয় আইন মোতাবেক ধর্ষিতা নারীদের নাম এখানে বদলে দেয়া হয়েছে।) প্রতিবেদনে সহযোগিতা করেছেন তেজাস ভৈধ্য। | ভারতে প্রায়শই এমন ভয়াবহ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যা ভারতে তো বটেই এমনকি আন্তর্জাতিকভাবেও খবরের শিরোনাম হয়ে ওঠে। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতালের বারান্দায় রোগীদের আত্মীয়স্বজন আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা বলছে, দেশটিতে এবছর দেড় লাখের বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা যা আছে, তা একদিকে অপ্রতুল এবং অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ব্যয়বহুল। আক্রান্তদের অনেকে বলেছেন, চিকিৎসা ব্যয় সামলাতে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করে পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। ঢাকায় জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ৩০০ শয্যার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ রোগীই নিম্ন আয়ের পরিবারের নারী এবং পুরুষ। সেখানে রোগীদের কয়েকজন বলেছেন, বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় সরকারি এই হাসপাতালে খরচ কিছুটা কম। কিন্তু লম্বা সময় ধরে সেটাও সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন নারী বলেছেন, সময়মতো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা পাওয়ার জন্যও তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। "আমি ঢাকার বাইরে থেকে আসি। কিন্তু এখানে সময়মতো সিরিয়াল পাই না। আসলে বলে ১০দিন পরে আসেন। আবার কয়েকদিন পর আসতে বলে। আমি সময়মতো চিকিৎসা পাই না। টাকাও অনেক খরচ হয়। সেটা যোগাড় করাও আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের সমস্যা, খুব সমস্যা।" আরো পড়তে পারেন: প্লাস্টিকের বোতলে পানি খেলে কি ক্যান্সার হয়? কীভাবে বাঁধাকপি ক্যান্সার ঠেকাতে পারে এই ব্রা কি স্তনের ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারবে? অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যবিত্তরাও বিপদে, কিন্তু তারা কাউকে বলতে পারেন না জামালপুরের একজন গৃহিনী ইসমত আরা নাজমা ক্যান্সারে আক্রান্ত হন নয় বছর আগে। তাঁর শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর প্রথম পর্যায়ে অপারেশন করতেই পাঁচ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়। এরপর ধাপে ধাপে চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে। আক্রান্ত হওয়ার দুই বছরের মাথায় তাঁর স্বামী স্ট্রোক করে মারা যান। তখন স্কুল শিক্ষার্থী দুই ছেলে মেয়ের পড়াশুনা এবং অন্যদিকে নিজের ব্যয়বহুল চিকিৎসা সামলাতে গিয়ে বেশ কষ্ট হয় মধ্যবিত্ত পরিবারের ইসমত আরা নাজমার। "তখন আমার স্বামী ছিল। চাকরি করতো। দুইটা ছেলে মেয়ে লেখা-পড়ার মধ্যে ছিল। ঐ সময় ক্যান্সার ধরা পড়লো। তারপরে অপারেশন হওয়ার পরে তো আমার স্বামী নিজেই স্ট্রোক করে মারা গেলো। শুধু টেনশন করে উনি মারা গেলেন। যাই হোক, আমার জন্য একটু জুলুমই হচ্ছে, তারপরও চিকিৎসা না করলে তো হয় না।" "চেক আপ করাতে যাই। অনেক টেস্ট দেয়, তাতে অনেক টাকা লাগে। মাঝখানে একটা টেস্ট দিয়েছিলো, তাতে ৬৫ হাজার টাকা লাগে। এত টাকা লাগে, আমার জন্য জুলুম হয়ে যায়। ধরেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার আব্বা বেঁচে ছিলেন। তিনি এবং আমার ভাইরা সাহায্য করেছেন। কত আর তাদের কাছ থেকে নেই। তো এখন ঐ জমিজমার মধ্যে হাত দেই।" পুরোপুরি ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় হরমোন থেরাপি থেকে শুরু করে রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি এবং অনেক ঔষধের প্রয়োজন হয়। এর প্রতিটি ধাপেই বড় অংকের অর্থ গুনতে হয়। 'চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য অনেকে দারিদ্র সীমার নীচে নেমে যাচ্ছে' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিজামউদ্দিন আহমেদ একজন চিকিৎসক হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে উল্লেখ করেন, চিকিৎসা ব্যয় পরিবারগুলোকেই পঙ্গু করে দিচ্ছে। "একটা ক্যান্সার ইনস্টিটিউট আছে। কেউ কেউ ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরেও যান। কিন্তু সেটা দিয়ে কি আমরা বলতে পারি, জাতীয়ভাবে আমরা সমর্থ, মোটেও না।" তিনি আরও বলেছেন, "প্রতিবছর অনেক মানুষ চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য দরিদ্র সীমার নীচে নেমে যাচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক মানুষই ধারণা না থাকায়, এই সেবা নিতে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন, নিজে মারা যাচ্ছেন, তার পরিবারকেও মেরে রেখে যাচ্ছেন। এই নিষ্ঠুর সত্যটা আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না বুঝবো, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্যান্সার শব্দটা নিয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হবেই।" বাংলাদেশে বিশেষায়িত হাসপাতালের সংকট ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটা আছে? ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় একটি মাত্র বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি। ঢাকার বাইরে মাত্র দু'টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সীমিত আকারে চিকিৎসা দেয়া হয়। এই রোগের চিকিৎসা সেবা মূলত ঢাকা কেন্দ্রিক। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলছিলেন, ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সে কারণে রোগীদের সেবা পেতেও সময় লেগে যাচ্ছে। "যা করছি আমরা ঢাকায় করছি। কিন্তু ১ লাখ ৫০ হাজার রোগী যদি নতুন করে আক্রান্ত হয়, এর যদি তিন ভাগের একভাগ রোগীও ডায়াগনসিস হয়, তাহলে যে ক'টা হাসপাতাল আছে, তাতে ৫০ হাজার রোগীর চিকিৎসা ঢাকা শহর কি করে দেবে?" "লম্বা সময় লেগে যাচ্ছে। কেমোথেরাপি দিতে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস এবং রেডিও থেরাপির সিরিয়াল পেতে চার পাঁচ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। অপারেশনেই এরকম সময় লাগছে। ফলে ঢাকার বাইরে অন্তত বিভাগীয় শহরে এই চিকিৎসা গড়ে তুলতে না পারলে মানুষের সাধ্যের মধ্যে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়।" হাবিবুল্লাহ তালুকদার, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও সংকট রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকটের কারণে বিশেষায়িত হাসপাতাল সেভাবে গড়ে উঠছে না বলেও বিশ্লেষকরা বলছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও স্বীকার করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকটের কথা। কিন্তু এ ব্যাপারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোনো উদ্যোগ নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাবেরা খাতুন নারীদের ক্যান্সার নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলছিলেন, একটি হাসপাতালেই ক্যান্সারের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার ব্যবস্থা এখনও করা যায়নি। ফলে রোগীকে চিকিৎসার বিভিন্ন পর্যায়ে হাসপাতাল পাল্টাতে হয়। "বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা খুবই কম। শুধু বিশেষজ্ঞ হলেই তো হবে না। হাসপাতালে সুবিধা দরকার। সরকারি পর্যায়ে হাসপাতালে সে রকম সুবিধা আছে। কেমোথেরাপিটা ভালই হচ্ছে। কিন্তু রেডিওথেরাপির ব্যাপারে ভীষণ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। যেখানে ১২৬টা রেডিও থেরাপি সেন্টার থাকার কথা, সেখানে হাতে গোনা কয়েকটা আছে। আট দশটাও হবে না।" সাবেরা খাতুন, অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই কেন? ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। গত বছর ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২২ হাজার। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে এই পরিসংখ্যান দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের নিজস্ব কোনো পরিসংখ্যান নেই। এর কোনো উদ্যোগ কখনও নেয়া হয়নি। হাবিবুল্লাহ তালুকদার মনে করেন, বাংলাদেশের নিজেদের করা বাস্তবসম্মত কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় চিকিৎসা সেবার পরিকল্পনা করাও সম্ভব হচ্ছে না। "২০০৯ সালে ক্যান্সার প্রতিরোধে একটা নীতিমালা করা হয়েছিল যেটা আর আপডেট করা হয়নি। সেই নীতিমালা অনুযায়ীও যে সব হচ্ছে, সেটা বলা যায় না। এরজন্য সবার আগে দরকার আমাদের নিজস্ব একটা পরিসংখ্যান। রোগীর সংখ্যা কত..কি ধরণের ক্যান্সার বেশি হচ্ছে, এগুলো যদি না জানতে পারি, তাহলে কিভাবে আমরা পরিকল্পনা নেবো।" বাংলাদেশে নারীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে স্তন ক্যান্সারে আরো পড়তে পারেন: সহজে ক্যান্সার পরীক্ষার পদ্ধতি কীভাবে কাজ করবে? ক্যান্সারে কেমোথেরাপি কতটা কাজে লাগে? পরিবেশ দূষণের কারণে কী কী রোগ হতে পারে? তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করে বলেন, পুরুষের তুলনায় নারীদের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্য কম ছিল। গত পাঁচ বছর ধরে নারীদের আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে বলে বলা হচ্ছে। কোন শ্রেণির মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, সেই প্রশ্নে চিকিৎসকদের বক্তব্য হচ্ছে, উচ্চবিত্তরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেই দেশের বাইর যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। নিম্ন আয়ের এবং নিম্ন মধ্যবিত্তরাই দেশে চিকিৎসা করছেন। ফলে চিকিৎসকরা ধারণা করেন, নিম্নবিত্তরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অধ্যাপক সাবেরা খাতুন বলছিলেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার উল্লেখযোগ্য অনেক কারণ এখন সবার জানা, কিন্তু সেখানে প্রতিরোধের বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। "পুরুষরা খাদ্যনালী এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে বেশি ভোগেন। আর নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি স্তন এবং জরায়ুর ক্যান্সারে। এর মূল কারণ বাল্য বিয়ে এবং অল্প বয়সে বাচ্চা নেয়া। এগুলো প্রতিরোধে আরও জোর দেয়া প্রয়োজন।" ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের হাসপাতাল ৩০০ শয্যার ক্যান্সার নিয়ে এখন অবশ্য সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে প্রচারণা বেড়েছে। সরকার বলছে, মানুষের মাঝে সচেতনতাও বেড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি সরকার চিকিৎসা সেবা বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। পেলিটিভ কেয়ার ইউনিটের ধারণা কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে? ক্যান্সারে আক্রান্তদের শেষ পর্যায়ে গিয়ে যখন বাঁচার সম্ভবনা আর থাকে না, তখন যাতে যন্ত্রনা কম হয়, সে ধরণের চিকিৎসা সেবারও প্রয়োজন আছে বলে চিকিৎসকরা বলছেন। কিন্তু সে ব্যাপারে নজরই নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালেই শুধু এ ধরনের পেলিটিভ কেয়ার ইউনিট আছে। সেখানে মাত্র ১৯টি শয্যা রয়েছে। এই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নিজামউদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, ক্যান্সারের রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সেবার ব্যাপারে বেসরকারি উদ্যোক্তারাও গুরুত্ব দিচ্ছে না। "বাংলাদেশে পেলিটিভ কেয়ারের ব্যবস্থাটা কোনো দিনই ছিল না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমি বলবো এখনও নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগ হয়েছে, এটা নিয়ে অহংকার করি, গর্ববোধ করি। ছোট ছোট দু'একটি উদ্যোগ হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ক্যান্সার ইন্সটিটিউট এখন এনিয়ে কথা বলছে। কিন্তু এই বিশাল সমুদ্রে এটা এক ফোঁটা পানি ছাড়া আর কিছুই না।" বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের এই পেলিটিভ কেয়ার ইউনিটের ওয়ার্ডে কথা হয় ২৪ বছর বয়সী একজন নারীর সাথে। তিনি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। তিনি যে শেষ অবস্থায় এসে পৌছেছেন, সে ধারণাও তাঁকে দেয়া হয় নি। দু'বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে চিকিৎসার টাকা যোগাতে তাঁর পরিবারের যে কষ্ট হয়েছে, সে কথাই তিনি এখন বার বার বলেন। চিকিৎসকরা বলছেন, ক্যান্সারের আক্রান্তদের চিকিৎসার বড় অংকের টাকা যোগাড়ের বিষয়টিই তাদের আরও সংকটের দিকে ঠেলে দেয়। তবে, সরকারের পাশাপাশি চিকিৎসকদেরও অনেকে এটাও বলেন, সারা বিশ্বেই ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। ফলে এই ব্যয় মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনার প্রশ্নে সঠিক কোনো জবাব মেলে না। | বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানা সময়ে পরীক্ষা নেয়ার আবেদন তাদের কাছে আসছে। এই পরীক্ষা যদি অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে এটা হবে করোনাভাইরাস মহামারির পর মূলধারার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথম সশরিরে পরীক্ষা গ্রহণ। মহামারির কারণে গত মার্চ থেকে বন্ধ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷ গত জুন থেকে অনলাইনে ক্লাস চললেও এখন পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২৬ ডিসেম্বর থেকে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। এই খবর স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে থেকে আসা যেসব শিক্ষার্থী আবাসিক হলে থেকে বিশ্বাবিদ্যালয় পড়েন, তাদের বক্তব্য, পরীক্ষা দেয়ার জন্য জন্য ঢাকায় এসে কোথায় থাকবেন তারা? কীভাবে অংশ নেবেন পরীক্ষা? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান যে কারণে পরীক্ষা নিতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়: বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানা সময়ে পরীক্ষা নেয়ার আবেদন তাদের কাছে আসছে। কারণ তারা এখন চাকরির বাজারে ঢোকার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এছাড়া সেশন জট কমিয়ে আনাটাও একটা কারণ এই পরীক্ষা নেয়ার পিছনে। এ কারণেই একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরুর তারিখ ঠিক করা হয়েছিলো এ বছরের ছাব্বিশে ডিসেম্বর। কিন্তু এখন সুর নরম করে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বিবিসিকে বলছেন, "পরীক্ষার কোন ফাইনাল তারিখ দেয়া হয়নি। প্রতিটা বিভাগ তাদের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে, তাদের পরিস্থিতি বুঝে তারপর পরীক্ষার তারিখ ও রুটিন দেয়া হবে"। ছাব্বিশ ডিসেম্বর তারিখটি ছিল উপাচার্যের চোখে একটি প্রস্তুতিমূলক সময়সূচী। তবে হল না খোলার ব্যাপারে অনঢ় অবস্থানের কথা জানাচ্ছেন উপাচার্য। তাহলে পরীক্ষা দিতে এসে কোথায় থাকবেন ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা? উপাচার্যের ভাষায়, যেহেতু শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে আগ্রহী, তাই তারা নিজেদের থাকার একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করতে পারবে বলে তার আশা। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত মার্চ থেকে বন্ধ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷ পরীক্ষা দিতে চান যারা: সাদিয়া রহমান সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পর থেকেই তিনি যশোর জেলার নিজ বাড়ীতে অবস্থান করছেন। তিনি বলছেন, "পরীক্ষা হয়ে গেলে অন্তত বিভিন্ন চাকরির পরিক্ষাগুলোতে অংশ নিতে পারবো। সেটার জন্য যদি পরীক্ষা হয় তাহলে ঢাকায় থাকার একটা ব্যবস্থা করতে হবে"। যেভাবে নেয়া হতে পারে পরীক্ষা: মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলছেন, সবার আগে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টা বিবেচনায় রাখতে হবে। সেই বিবেচনায় পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সময় অর্ধেক কমিয়ে আনা হবে বলে জানাচ্ছেন তিনি। ভাবা হচ্ছে এক দিনে দুটো পরীক্ষা নেবার কথাও। এছাড়া ইনকোর্স ও টিউটোরিয়াল পরীক্ষা অনলাইনের মাধ্যমে নেয়া হবে বলে জানান তিনি। উপাচার্যের ভাষায়, "স্বল্প সময়ের মধ্যে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে"। | ছাব্বিশে ডিসেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নেয়া হবে, কিন্তু হল খোলা হবে না - একাডেমিক কাউন্সিলের এমন সিদ্ধান্তের দুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য বিবিসিকে বললেন, শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে, পরিস্থিতি বুঝে দেয়া হবে পরীক্ষার তারিখ। তবে পরীক্ষা হলেও আবাসিক হল না খোলার ব্যাপারেই অনঢ় তিনি। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | শুক্রবার থেকেই বাংলাদেশের মুসলিমরা রোজা পালন শুরু করবেন। রোজায় একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ স্বাস্থ্য ঠিক রেখে কিভাবে রোজা করবেন বা রোজার সময় কোন ধরনের খাদ্য দ্রব্য বেশি নেয়া উচিত এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক গোলাম মাওলা বিবিসিকে বলেন অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম থেকে যেমন বিরত থাকতে হবে তেমনি সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে হবে। তবে তার মতে কোনোভাবেই বেশি খাওয়া যাবেনা। পুষ্টিবিদ অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলছেন রোজার জন্য আলাদা ডায়েটের প্রয়োজন নেই। তবে পানি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে তবে এর মধ্য বিশুদ্ধ পানি ও ফলের রসই বেশি কাজে লাগে। তিনি বলেন, "ইফতার কোথা থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ঘরে তৈরি খাবারই সবচেয়ে নিরাপদ। বেশী তেলে ভাজা বাজারের ইফতার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে"। গোলাম মাওলা ও নাজমা শাহীন দুজনই মনে করেন তৈলাক্ত খাবার, ভাজা পোড়া বর্জন করাই ভালো। বরং ফল ও খেজুর শরীরে পুষ্টি ও শক্তি যোগাবে। আরো পড়ুন: একমাস রোজা রাখলে যা ঘটে আপনার শরীরে শিশুদের কি রোজা রাখতে দেয়া উচিত? রোজা: ছয়টি অতি পরিচিত ভুল ধারণা রোজার সময় চিকিৎসা বা ঔষধ খেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত বলে বলছেন পুষ্টিবিদরা রোজা পালনকারীর জন্য কিছু টিপস: ১. ভাজাপোড়া খাবার নয় অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলছেন মাছ ডাল ভাত আদর্শ খাবার। ভোররাতে গরুর মাংস এড়িয়ে মুরগী খেলে ভালো হবে। তবে প্রয়োজন শাক সবজি ও ডাল শরীরের জন্য ভালো হবে। অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলছেন ব্যক্তিকেই আগে বুঝতে হবে কোনটি তার শরীরের জন্য ভালো হচ্ছেনা। যেটি ক্ষতিকর মনে হবে সেটিকে এড়াতে হবে। ২. খাদ্য তালিকায় কী থাকবে? পানি, ফল, চিড়া, রুটি, ভাত, সবজি, ডাল, ডিম, হালকা খিচুড়ি খাওয়া যেতে পারে। গোলাম মাওলা বলছেন মানসম্পন্ন হালিম শরীরের জন্য উপকারী হবে। এটি শক্তি বাড়ায়। ৩. সতর্ক হয়ে খেতে হবে বিরিয়ানি, তেহারির মতো খাবারকে ভারী খাবার হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলছেন মাঝে মধ্যে ইফতারির পর হালকা কম তেলযুক্ত তেহারি খাওয়া মন্দ না। ৪. নিয়মিত খাবারকে গুরুত্ব দিতে হবে পুষ্টিবিদ নাজমা শাহীন বলছেন, সাধারণত একজন মানুষ নিয়মিত যেসব খাবার খান রোজার সময়েই সেগুলোই তার জন্য যথেষ্ট। তবে সারাদিন রোজা পালন শেষে পানি খেতে হবে পর্যাপ্ত। আর বেশি গরম পড়লে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ৫. শারীরিক পরিশ্রম কমানো ও শান্ত থাকা রোজার সময় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম সমস্যার কারণ হতে পারে। গোলাম মাওলা বলছেন একেবারে অলস থাকাও যেমন ক্ষতিকর তেমনি অতিরিক্ত পরিশ্রমও ক্ষতিকর হবে। তাই এসব বিষয়ে সাবধান হতে হবে। ৬. সহজে যাতে হজম হয় অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলছেন রোজা পালনকারী ব্যক্তিকে বুঝতে হবে কোন খাবার গুলো তার সহজে হজম হয়। এসব খাবারকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব খাবার হজমে সমস্যা করে সেগুলো না খাওয়াই ভালো। কারণ রোজার সময় শরীরের এনজাইম যা হজর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় সেটি বন্ধ থাকে। ৭. একবারে বেশি খাবার থেকে বিরত থাকা অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলছেন সারাদিন রোজা পালনের পর একবারে অনেক খাবার খেলে সেটি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কোনভাবেই অতিরিক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা। বরং ফল ও সবজি দিয়ে পরিমাণ মতো ইফতার করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। ৮. খাবার কিভাবে খাবেন? গোলাম মাওলা ও নাজমা শাহীন দুজনই বলছেন ধীরে ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে। ইফতারির শুরুতেই পানি শরীরের জন্য উপকারী। পাশাপাশি খেজুর শক্তি যোগাতে ভূমিকা রাখে। ৯. স্যুপ হতে পারে দারুণ খাবার রোজার সময় সারাদিন পর স্যুপ শরীরকে সতেজ করতে পারে এবং খাবার হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখতেও এটি কাজে লাগে। অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলেন শাক সবজি তবে বাধা কপি বাদ দিয়ে ফুলকপির স্যুপ বা লেটুস পাতার স্যুপ অনেক উপকারী। লেটুস পাতায় কোন গ্যাস হয়না। আর গাজর খেলে সেটি হালুয়া বানিয়ে অল্প খাওয়া যেতে পারে। ১০.খাবার ও জীবনাচরণ ঠিক রাখা অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলছেন শুধু খাবারই নয়, বরং এর পাশাপাশি প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম। আর কঠিন শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইফতারের পর বা সেহেরীর পর ধূমপান থেকেও বিরত থাকা উচিত। ১১. যারা ঔষধ সেবন করেন তারা রোজা করবেন কিভাবে? রমজানে সাধারণত কিছু সমস্যা হয় যার মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা, ক্লান্তি কিংবা অ্যাসিটিডি। আর যারা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা কিডনি জটিলতায় ভুগছেন তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। অধ্যাপক গোলাম মাওলা ও অধ্যাপক নাজমা শাহীন দুজনই এসব বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মিস্টার মাওলা বলেন চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রোজা রেখেও ঔষধ সেবন করা সম্ভব। কারণ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইফতার থেকে সেহরির সময়ে ঔষধ সেবন করা যায়। সব ধরণের খাবার রাখতে হবে খাদ্য তালিকায় ব্যায়াম করবেন কখন? অনেকেই নিয়মিত শরীর চর্চা করেন। কিন্তু রোজার সময়ে অন্য সময়ের মতো ব্যায়াম করা সম্ভব হয়না। অধ্যাপক গোলাম মাওলার পরামর্শ হলো কোন ভাবেই রোজা করে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা ঠিক হবেনা। তবে শরীর সায় দিলে হালকা শরীর চর্চা কেউ চাইলে সন্ধ্যার পর করতে পারে, যদিও শরীরের ওপর চাপ পড়ে এমন কিছু করা যাবেনা। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হেলথ ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ ইউনুস বলছেন যারা রোজা করবেন তাদের জন্য নামাজ বিশেষ করে ইফতারির পর রাতে তারাবির নামাজ নিয়মিত আদায় করাটাই বড় ব্যায়াম হতে পারে। এছাড়া ইফতারি বা রাতের খাবারের পর হাঁটাচলাও ব্যায়াম হিসেবে ভালো হবে। ব্যায়াম প্রশিক্ষকের অভিমত ঢাকার একটি সুপরিচিত হোটেলের ব্যায়ামাগারের প্রধান প্রশিক্ষক মিন্টু আকরাম বলছেন রোজার সময় অর্থাৎ রোজা পালন করে ভারী উপকরণ ব্যবহার করে ব্যায়াম উচিত হবেনা। "ভারী উপকরণ ব্যবহার সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ব্যায়ামের সময়ও কমিয়ে আনতে হবে"। মিস্টার আকরামের মতে যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন তাদের জন্য এটি নিয়মিত করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রোজা পালন করলে সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। রোজা করলে ইফতারির পর অন্তত আধাঘণ্টা বিরতি দিয়ে হালকা ওয়ার্ম আপ বা সকালে কিছুটা ওয়ার্ম আপ করা যেতে পারে ফিটনেস ধরে রাখার স্বার্থে। তবে ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও নিজ নিজ প্রশিক্ষকের পরামর্শ মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন এই প্রশিক্ষক। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: গণপরিবহনের চালকদের ইয়াবা গ্রহণের কারণ অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা চায় উত্তর কোরিয়া? পর্ন তারকার মুখ বন্ধে টাকা খরচের কথা স্বীকার ট্রাম্পের | রমজান মাসে ধর্মীয় বিধি বিধানের পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য স্বাস্থ্য ঠিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সে কারণেই পুষ্টিবিদরা বলছেন দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পর সেহরি ও ইফতারে খাদ্য দ্রব্য বাছাইও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। জীবনাচরণেও কিছুটা পরিবর্তন এসে থাকে এই সময়ে, পরিবর্তন আসে নিয়মিত কাজের ধরণেও। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | বাস থেকে নেমে পার্কের ভেতর দিয়ে নিরাপদে ফিরছেন তামিম, তাইজুল, মিরাজ ও সৌম্য ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলা সময় ঘটনাস্থলেরর ৫০ গজের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের একটি দল, সেখান থেকে ফিরে সংবাদমাধ্যমে ঘটনার ভয়াবহতা বোঝাতে এভাবে বলছিলেন নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলট। "এটা সামনে থেকে দেখা কঠিন, রক্তাক্ত অবস্থায় মানুষ বেড়িয়ে আসছিল, বাসের মধ্যে সবাই অনেকে কান্না করছিল, কে কী করবে, কীভাবে রক্ষা পাবে।" খালেদ মাসুদ পাইলটের কথায় আরও উঠে আসে ঘটনার বিবরণ। "সবাই দেখেছে র্ঘটনাটি, এটা আমরা কখনোই চাই না, আমরা খুবই ভাগ্যবান। আমরা ১৭ জন ছিলাম, আমরা খুবই কাছে ছিলাম, ৫০ গজের মতো দূরে ছিলাম। আর তিন-চার মিনিট আগে মসজিদে গেলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতো।" আরো পড়ুন: ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলা, দু'জন বাংলাদেশী সহ নিহত ৪৯ নিউজিল্যান্ডে দু'জন বাংলাদেশী নিহত, দু'জন নিখোঁজ, আহত পাঁচ খোঁজ নিতে মসজিদ এলাকায় আসছেন উদ্বিগ্ন স্বজনরা যা দেখেছেন পাইলট "সিনেমায় দেখলে যেমন হয়, মানুষজন রক্তাক্ত অবস্থায় বেড়িয়ে আসছিলো।" গুলি যখন শুরু হয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা তখন বাইরেই ছিলেন। মসজিদের ভেতরে না ঢুকলেও গুলির ভয় ছিলো তখনও, বলছিলেন পাইলট। "আমরা বাসের মধ্যে মাথা নিচু করে ছিলাম। আরেকটা ভয় ছিল যিনি আক্রমণ করছেন তিনি যদি বের হয়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তেন, সেই ভয় সবাই পাচ্ছিল।" বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসানও ক্রিকেটারদের সাথে কথা বলে ঘটনার কিছুটা জানতে পেরেছেন। ঢাকায় নিজের বাসায় তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, "আমরা যেটা জেনেছি, একদম কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল টিম বাস, সেখানে সামনে একটা গাড়ি থেকে বের হয়ে জানান ওদিকে যেও না। ওখানেই সবাই বেঁচে যায়।" আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য ঘটনার পর বিসিবি সভাপতি কী বলেন বোর্ড সভাপতি বলেন, "এ ধরণের ঘটনা যেকোনো জায়গাতেই হতে পারে, প্রত্যেকটা দেশকেই সতর্ক থাকতে হবে। ওদের হয়তো ধারণা এগুলো শুধু সাব-কন্টিনেন্টে হতে পারে, এটা কিন্তু এখন আর নেই। এখন যেকোনো জায়গাতে এটা হতে পারে" প্রশ্ন উঠেছে বিদেশে ক্রিকেটারদের কি যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া হয়? নাজমুল হাসান জানান, "দল তিনটা গ্রুপে ভাগ হয়ে গিয়েছিল, একটা গ্রুপ চলে গিয়েছিল দুপুরের খাবার খেতে, একটা গ্রুপ মাঠেই ছিল, আর একটা গ্রুপ নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছিলো" "মসজিদে যাওয়া গ্রুপের সাথে কেউই ছিল না, বাকিরা সবাই ছিল মাঠে," মসজিদে যাওয়া ক্রিকেটারদের সঙ্গে যে কোন নিরাপত্তা দল ছিল না তা নিশ্চিত করে বোর্ড সভাপতি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। "এখানে একটা ব্যাপার থাকে যে আমরা জানিয়েছিলাম কি না আমরা নামাজে যাচ্ছি," বলছিলেন তিনি। ঢাকার গুলশানে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন তবে তার বক্তব্যে উঠে আসে যে এ ধরণের ঘটনা মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি সেখানে ছিল না। "আমাদের এশিয়ান কোনো দেশে পুলিশ আসতে দেরি হয় না, ওরা হয়তো অপ্রস্তুত ছিল।" "আজকের ঘটনার পর যে দেশেই দল যাক না কেন, আমাদের ন্যুনতম নিরাপত্তার যে চাহিদা আমরা জানাবো সেটা দিতে হবে। নতুবা সেখানে আমরা ট্যুর করতে পারবো না," বলছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নাজমুল হাসান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের সবাই হোটেলে অবস্থান করছেন। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলে কেন উদ্বিগ্ন সিলেটিরা? বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স: নতুন প্রযুক্তিই কি দুর্ঘটনার কারণ? মাসুদ আজহারকে 'সন্ত্রাসী' ঘোষণায় চীনের বাধা কেন? | "হোটেলে ফেরার পর মুশফিক কাদঁছিলেন।" |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | - কীভাবে বুঝবেন শিশুর অতিরিক্ত খাবার দরকার? - শুরুতে শিশুদের কী ধরণের খাবার দেয়া উচিত? - শিশুকে কি ডিম খাওয়ানো যাবে? - শিশুর খাবার কীভাবে তৈরি করবেন? - খিচুড়ি কীভাবে খাওয়াবেন? - জুস, আইসক্রিম কখন দেবেন? - শিশুকে কতটুকু খাবার, কখন দেবেন? - কী কী খাবার এড়িয়ে যাবেন? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে ভিডিওটি পুরোটি দেখুন। | শিশুর বয়স ছয় মাস হওয়ার পর মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দেয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। কিন্তু - |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | প্রয়াত আহমদ শফীর সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন শেখ হাসিনা সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতা মামুনুল হককে নিয়েও হেফাজত বিব্রত। চলছে নেতাকর্মীদের ধরপাকড়। অতীতে কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক এই সংগঠনটি আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সুসম্পর্কের সুবাদে নানা ধরনের দাবি আদায় করেছে। কিন্তু পাল্টে গেছে পরিস্থিতি। এটা কি সরকারের জন্য সুযোগ তৈরি করছে? হেফাজত কীভাবে এগুতে চাইছে? তারা কি চায় ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগাতে? সরকারের মুখোমুখি হেফাজত হেফাজতে ইসলাম নিজেরা মনে করছে, গত কিছুদিনের ঘটনাপ্রবাহ তাদের বড় ধরনের সংকটে ফেলেছে। পরিস্থিতিটা হেফাজত এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় গত ২৬শে মার্চ থেকে তিন দিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এবং ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় হেফাজতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের থানা আক্রমণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার নানা ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানি হয়েছে কমপক্ষে ১৭জনের। আরো পড়তে পারেন: হেফাজতে ইসলামের নতুন নেতৃত্বের সাথেই কি সরকারের আসল বিবাদ? মানুষ দেখেছে ধর্মান্ধরা কী করতে পারে-সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে - ড. রাজ্জাক হেফাজতে ইসলাম ও সরকারের সম্পর্ক কি ভেঙ্গে গেলো? অবরুদ্ধ হেফাজত নেতা মামুনুল হককে 'ছিনিয়ে নেয়' সমর্থকরা কে এই 'শিশু বক্তা' রফিকুল ইসলাম? নরেন্দ্র মোদী বিরোধী বিক্ষোভে ব্যাপাক সহিংসতা হয় চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। সেই সহিংসতার পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে একটি রিসোর্টে একজন নারীসহ হেফাজত নেতা মামুনুল হকের অবস্থান করার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। যদিও তার পক্ষ নিয়ে হেফাজতে ইসলাম ঐ ঘটনায় তাকেই হেনস্তা করার অভিযোগ তুলেছে। এছাড়াও সহিংস ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে হেফাজতের অভিযোগ হচ্ছে, ঢাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার পরই বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ বা এমন অবস্থান তুলে ধরলেও হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জেহাদী বলেছেন, সহিংসতা এবং মামুনুল হকের ঘটনা সব মিলিয়ে পরিস্থিতিটা তাদের সংগঠনের ভাবমূর্তির জন্য সংকট তৈরি করেছে বলেই তারা মনে করেন। "হেফাজততো অবশ্যই সংকটে পড়ছে হেফাজত মনে করতেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তা মনে করতেছি। কিছু মানুষ বায়তুল মোকাররমে একটা অঘটন ঘটাইছে, অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে মসজিদের মতো পবিত্র জায়গায়। এটাকে কেন্দ্র করেই হাটহাজারী, বি-বাড়িয়া এবং বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা হইচে এবং আহত-নিহত হইচে। সব মিলিয়েতো হেফাজতের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করচে" বলেন নুরুল ইসলাম জেহাদী। তিনি আরও বলেন, "আর মামুনুল হকের ঘটনা-যদিও সেটা হেফাতের কর্মসূচিতে আসে না, তারপরও যেহেতু তিনি হেফাজতের দায়িত্বশীল (ব্যক্তি)। এটাও বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করচে অবশ্যই।" সরকারের চাপে সংকটে হেফাজত? হেফাজত ইসলামের বিব্রতকর অবস্থায় বা সংকটে পড়ার যে কথা তিনি বলছেন, তাতে তাদের কী সমস্যা হচ্ছে? এই প্রশ্ন করা হলে হেফাজত নেতা নুরুল ইসলাম জেহাদী বলেছেন, "অসুবিধা না?—যদি আমাদেরকে সরকার প্রতিপক্ষ মনে করে, আমাদের কাজেতো বাধা আসতেছে। বাধা আসাটা একটা সংকট বা বিব্রবতকর পরিস্থিতি না?" সরকার এবং হেফাজতে ইসলাম হাত মিলিয়ে চলছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। কিন্তু কিছুদিন ধরে তাদের সম্পর্কের দ্রুত অবনতি দৃশ্যমান হয়েছে। প্রায় এক দশকে এই প্রথম হেফাজতে ইসলাম বড় চাপের মুখে পড়েছে। হেফাজতে ইসলাম মনে করছে, সরকার তাদেরকে প্রতিপক্ষ মনে করছে এবং সেটাই তাদের জন্য নানামুখী সংকট তৈরি করছে। হেফাজত নেতা নুরুল ইসলাম জেহাদী বলেছেন, তারা এমন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন। "সমস্যা হচ্ছে, এখানে কিছু সরকার এবং সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ বা ছাত্রলীগ তারা হেফাজতকে প্রতিপক্ষ মনে করে ফেলতেছে। এটাও একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি। আমাদের আমীরে হেফাজত ঘোষণা দিয়েছেন যে, আমরা সরকার বিরোধী নই। কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানো-এটা আমাদের এজেণ্ডা নয়। "আমাদের প্রতিপক্ষ মনে করাটা সরকার ঠিক করতেছে না। আমরাতো প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বী না। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী হলে যারা রাজনীতি করে তারাই প্রতিদ্বন্দ্বী। আমাদেরতো রাজনীতির কোন এজেণ্ডা নাই। আমাদের এজেণ্ডা ইসলামী এজেণ্ডা। অতএব প্রতিপক্ষ মনে করাটা দুঃখজনক। এই জন্য কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। এই ভুল বোঝাবুঝির নিরসন হওয়া দরকার যে কোন মূল্যে" বলেন হেফাজত নেতা নুরুল ইসলাম জেহাদী। হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারের এক ধরনের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সেই ২০১৩ সালে সংগঠনটির ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পর থেকে। তখন হেফাজতের নেতৃত্বে ছিলেন আহমদ শফী। তার মৃত্যুর পর গত বছর হেফাজতের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে এবং তখন থেকে শুরু হয় দু'পক্ষের সম্পর্কের টানাপোড়েন। মাহবুবুল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেফাজতকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত হেফাজতের নতুন নেতৃত্ব কয়েকমাস আগে যখন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, সেই পরিস্থিতি আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবং হাটহাজারীতে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সরকার এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, তারা এখন আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। "দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং শান্ত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, যারা ধর্মের নামে বা রাজনীতির নামে সহিংসতা করবে, সরকারি বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর বা জ্বালাও পোড়াও করবে-এরা নাশকতকারী, এদের কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করা-এটাই সরকারের এখন লক্ষ্য এবং সরকার সেটাই করবে।" আওয়ামী লীগ নেতা মি: হানিফ বলেছেন, তারা আইনগতভাবেই ব্যবস্থা নিতে চান। ''আমাদের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, এই যে কয়েকদিন ধরে যে তাণ্ডব চলেছে, সেই হামলা বা নৈরাজ্যের সঙ্গে যারা যারা জড়িত, তাদের নাম ঠিকানা এমনকি তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারেও আমরা রিপোর্ট রাখতে চাই। ভবিষ্যতে যদি হেফাজতের নামে এধরনের নাশকতাকারী রাস্তায় নামে. তাদেরকে প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের দলের নেতাকর্মীরাও শক্তভাবে প্রতিরোধ করবে," জানান মি. হানিফ। সরকার যখন হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা বলছে, তখন দু'পক্ষের সম্পর্কে অতীত সখ্যতার বিষয়ই নতুন করে আলোচনায় আসছে। আঁতাত নাকি অন্য কিছু? বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সব ক্ষেত্রেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়েছে। সে কারণে মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতও বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে মাঠে নামার সাহস পাচ্ছে। যদিও হেফাজত নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে দাবি করে থাকে। কিন্তু ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা হেফাজতে রয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই অভিযোগ করা হয়েছে। আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামের উত্থান হয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেহনাজ মোমেন মনে করেন, মত প্রকাশের পরিবেশ না থাকায় হেফাজতের মতো সংগঠন কখনও প্রভাব বিস্তার করতে পারছে এবং কখনও প্রভাব কমে আসছে। "হেফাজতে ইসলাম যে ধরনের মতাদর্শ প্রচার করছে, সেগুলো খুবই সংকীর্ণ এবং আশঙ্কাজনক মতাদর্শ। এরা অন্য কোন মতকে গুরুত্ব দেয় না। যেগুলো বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাদেরকে তোষণ করে এসেছে। সেটারোতো একটা মূল্য দিতে হবে," বলেন তিনি। মেহনাজ মোমেন বলেছেন, "আমি বলতে চাচ্ছি, সরকার যখন চাইবে হেফাজতকে প্রভাব বিস্তার করতে দেবে, আবার যখন চাইবে না, তখন তার থেকে সরে আসবে। এই জিনিসটা অস্বাস্থ্যকর এবং ভীষণভাবে অসহিষ্ণুতা। রাজনৈতিক, সামাজিক সব ক্ষেত্রেই আমরা এটা দেখতে পাচ্ছি। এখানে কোন স্পেস নাই। ''মানে মানুষ যা বিশ্বাস করছে এবং রাষ্ট্রের কথার সাথে যদি একমত না হয়, সেটা প্রকাশ করার আর কোন স্পেস নাই। এটা নাই বলে দেখছি যে, কখনও কোন কোন দল সাংঘাতিক প্রভাব বিস্তার করছে। আবার কখনও তার প্রভাব কমে যাচ্ছে। এটা সুস্থ রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশ না," তিনি মনে করেন। বিশ্লেষকদের অনেক আবার পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করছেন ভিন্নভাবে। তারা বলেছেন, এখনকার পরিস্থিতি সরকারকে সুবিধা দেবে। তারা মনে করেন, সরকারের কঠোর অবস্থান নেয়ার সুযোগ যেমন তৈরি হয়েছে, একইসাথে সুযোগ হয়েছে হেফাজতের সাথে আবার সম্পর্ক গড়ার। তবে দু'পক্ষই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে কিনা- সেই প্রশ্নও রয়েছে বিশ্লেষকদের। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেছেন, এখনকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পেছনেও তার ভাষায় দু'পক্ষের আঁতাতের বিষয় থাকতে পারে। "হেফাজত মাওলানা শফী যখন বেঁচে ছিলেন, তখন সরকারের সঙ্গে তাদের আঁতাত আমরা দেখেছি। এবং সরকার হেফাজতকে ব্যবহার করে। হেফাজতের নিজস্ব কোন রাজনৈতিক প্রোগ্রাম আছে বলে আমি মনে করি না। সরকার তাদের ব্যবহার করে তাদের যখন যে পারপাসে দরকার হয়। "শাপলা চত্বরে (২০১৩ সালে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি) এতবড় ঘটনার পরে তাদের সঙ্গে কি মিলমিশ হয়নি?" প্রশ্ন তোলেন অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। "তারা সরকারের কথায় বিভিন্ন কার্যক্রম করে। আবার যখন একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, বাইরে একটা বাজে ইমেজ হয় আমাদের জন্য, তখনই তারা সেটা ধপ করে ছেড়ে দেয়। আঁতাত না থাকলে এটা সম্ভব নয়।" হেফাজত ইস্যুতে ১৪ দলের জোটেই অসন্তোষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে আওয়ামী লীগ সরকার এবং হেফাজতে ইসলাম। তবে গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেয়া, পাঠ্য পুস্তকে পরিবর্তন আনা এবং সুপ্রিমকোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়াসহ সরকার হেফাজতের নানা ধরনের দাবি মেনে নিয়েছে। এমন সম্পর্কের কারণে আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলগুলো এবং সমমনাদের প্রতিক্রিয়া বা ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক মন্ত্রী এবং শরীক ওয়ার্কাস পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন বলেছেন, কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেয়ায় হেফাজত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কওমী মাদ্রাসা জননী উপাধি দিয়েছিল। সে সময় হেফাজতের বিরুদ্ধে কথা বলে তিনি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। "২০১৩ সালের পরে সরকার যখন হেফাজতের সাথে একটা সমঝোতার নীতি গ্রহণ করে, যার ভিত্তিতে সুপ্রিমকোর্টের ভাস্কর্য সরানো হয়। সেসময় আমি মন্ত্রী ছিলাম। সেসময় আমি তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যেই বলেছিলেন যে, আমাদের যদি কারও বলতে হয়, তাহলে পদত্যাগ করে বলাই উচিত ছিল। ফলে আমাদের ১৪ দলে একটা বড় ধরনের মতপার্থক্য হয়েছিল," বলেন রাশেদ খান মেনন। তিনি আরও বলেছেন, "এবারও এই ঘটনা যখন ঘটেছে, আমরা বলেছি, এটা রাজনীতির বাইরে কোন ঘটনা নয়। এবার আমরা একটু লাভবান হয়েছি। কারণ মিটিংয়ে আওয়ামী লীগের নেতা যারা ছিলেন তারাও আমাদের সাথে একই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।" আওয়ামী লীগের আরেক শরিক জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আকতার হেফাজতের সাথে সরকারের অতীত সম্পর্ককে কৌশল হিসাবে দেখেন। তিনি বলেছেন, এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় যে সহিংসতা হয়েছে, সেগুলো মোকাবেলায় সরকার এবার শক্ত অবস্থানে থাকবে বলে তারা বিশ্বাস করেন। "মাদ্রাসায় অনেক সাধারণ মানুষ আছে, তাদের একটা জায়গায় আনার কৌশল নিয়েছিল সরকার। কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা বলতে চেয়েছি যে ধর্মকে যেন রাজনীতির মধ্যে আনা না হয়। সে কারণে সরকার তা বিবেচনা করেছে এবং কৌশলের প্রশ্নে সে জায়গাটুকুই দেখেছে," শিরীন আকতার বলেছেন। "আমি মনে করি যে এখন এগুলোকে মোকাবেলা করবার জন্য সরকার ভীষণ কঠিন অবস্থানে আছেন।" নরেন্দ্র মোদীর সফরের সময় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ঢাকার রাজপথ 'প্রশয়ের কারণেই আশকারা' তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকার এবং আওয়ামী লীগের প্রশ্রয়ের কারণেই সরকারের ওপর চাপ তৈরি করে দাবি আদায়ের একটা অবস্থান তৈরি করেছিল হেফাজত। এছাড়াও নিজেদেরকে বড় ইসলামী শক্তি হিসাবে দেখানোর চেষ্টাও তারা অনেক ক্ষেত্রে দৃশ্যমান করেছে। এসব বক্তব্য মানতে রাজি নন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। "মাদ্রাসাগুলোতে প্রায় ৫০ লক্ষ ছাত্র ছাত্রী লেখা পড়া করেন। যাদের ভবিষ্যত কর্মসংস্থানের কোন পথ ছিল না। সেখানে কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টির জন্য তাদের সনদের স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এটাকে কোন সখ্যতা বা কোন সমঝোতা বলা যায় না। এটা (তিনি) দায়িত্ব থেকে করেছিলেন," মি: হানিফ বলেন। সরকারের পক্ষ থেকে এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং হাটহাজারীসহ বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার তৎপরতাও দৃশ্যমান করা হচ্ছে। নাশকতা বা সহিংসতার অভিযোগে মামলাগুলোতে মামুনুল হকসহ হেফাজতের অনেক নেতাকে অভিযুক্ত করে তদন্ত শুরু করার কথা বলা হয়েছে। তবে এ ধরনের সংগঠনের পক্ষে সরকারের এমন চাপ সামলানো কঠিন বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। হেফাজতও সরকারের সাথে ভুল বোঝাবুঝির অবসান চাইছে বলে সংগঠনটির নেতাদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে। সংগঠনটির নায়েবে আমীর আব্দুর রব ইউসুফী বলেছেন, তারা এখন আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন। "এটাতো শুধু হেফাজত নয়, সরকারও সংকটে পড়েছে। একটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল, সেটা কেন উত্তপ্ত হলো-উভয়ের জন্যই এটা বিব্রতকর পরিস্থিতি। আমরা মনে করি, যা হবার হয়ে গেছে, এখন সরকার উদ্যোগ নিয়ে পরিস্থিতিটাকে স্বাভাবিক করতে এগিয়ে এলে সেটা সমাধান করা সম্ভব," মত দেন আব্দুর রব ইউসুফী। হেফাজতের নেতারা বলছেন, সংকট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় বের করতে হেফাজতের নেতৃত্ব এখন নিজেরা দফায় দফায় আলোচনা চালাচ্ছেন। | বাংলাদেশে সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘাত বা সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সংগঠনটি চাপে পড়েছে। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | ১৯৮৮ সালে সাদ্দাম হোসেন বাহিনীর অভিযানে নিজ স্বজনদের হারান তৈমুর আবদুল্লা আহমেদ। "শুধু আমার মা আর বোনেরা নয়, তারা আমার সব আত্মীয়-স্বজনদের হত্যা করেছিল।" তাদের অপরাধ এটাই ছিল যে - তারা সাদ্দাম হোসেনের ইরাকে কুর্দি পরিচয়ের মানুষ। তৈমুর আবদুল্লা আহমেদ ১৯৮৮ সালের মে মাসে সেই দিনের কথা প্রায় প্রতিটি দিন মনে করেন, সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। তখন তিনি প্রায় নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন - তবে সেই ফেরা হয়েছে শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে নয়। তিনি বিবিসিকে বলেন, "আমি ওইদিনই আসলে মারা গিয়েছিলাম। সেই কবরস্থানে আমার মা ও বোনদের সাথে আমার হৃদয়ের মৃত্যু হয়েছিল।" তবে তিনি যে পুরোপুরি অক্ষত ছিলেন তা নয়। বাহুতে ও পিঠে গুলি লেগেছিল তার। কিন্তু তারপরেও তিনি অন্ধকারের মধ্যে গর্ত থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হতে পেরেছিলেন এবং এ কারণেই তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। ওই নৃশংসতার স্মৃতি আহমেদের মনে এখনও খুব স্পষ্টভাবে গেঁথে আছে এবং সেদিনের পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষ বর্ণনা দিতে পিছপা হন না। "আমি দেখলাম একটি গুলি আমার মায়ের মাথায় আঘাত করল এবং এর প্রভাবে তার স্কার্ফ খুলে গেল। আরেকটা বুলেট আমার বোনের গালের ভেতরে ঢুকে তার মাথা থেকে বেরিয়ে যায়।" "আমার অন্য বোনের বাহুতে গুলি করা হয়েছিল এবং রক্ত পানির মতো প্রবাহিত হচ্ছিল," তিনি বলেন। যখন তৈমুর ঘুমাতে যান বা কোনও শিশু বা তরুণ বয়সী মেয়েদের দেখেন, তখন এই দৃশ্যগুলো বারবার তার মনে ফ্ল্যাশব্যাক হয় এবং তিনি চিন্তা করতে থাকেন যে তার পরিবারের সাথে কী হয়েছিল। "আমি আর কখনও একজন সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে পারব না," তিনি বলেন, "যতবার আমি এসব নিয়ে ভাবি, আমি মরে যাই।" তৈমুরের এখন বয়স ৪৩ বছর। বিবিসিকে তিনি জানান তাঁর বেঁচে থাকা এবং ন্যায়বিচারের দাবির এক অসাধারণ গল্প। আরও পড়তে পারেন: যে যুদ্ধে মানুষ মরেছে লাখ লাখ, জেতেনি কেউ ইরাকি বাহিনী যখন কুয়েত দখল করে নিয়েছিল সাদ্দাম হোসেনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করছে ইরাক তোপজায়া সামরিক ঘাঁটি। সচেতনতা নেই জুনে, ইরাকি কর্তৃপক্ষ সেই জায়গাটি খনন করতে শুরু করে যেখানে আহমেদ বিশ্বাস করেন যে তার পরিবারের মানুষদের মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এই খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে তৈমুরকে কিছু জানাননি। তারা কুর্দি অঞ্চলে লাশগুলো পুনরায় দাফনের পরিকল্পনা করছে। এতে তৈমুর ভীষণ রেগে যান - তিনি জানান যে এমন গোপনীয়ভাবে দেহাবশেষগুলো স্থানান্তরিত করার কোন অর্থ নেই। "আমি চাই সমগ্র বিশ্ব আমাদের লোকদের সাথে কী ঘটেছিল তা দেখুক। আমি চাই যে গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগ মুহূর্তে যে নিরীহ শিশুটি মা'কে আঁকড়ে ধরে ছিল, তাদের মৃতদেহ ক্যামেরা জুম করে দেখাক।" তিনি মনে করেন যে এই গণহত্যার বর্বরতা সম্পর্কে খুব কম মানুষ অবগত আছে এবং তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে কাউকে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখেননি। আহমদ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, কিন্তু বন্ধুরা যখন তাকে খবর দেন যে ওই গণকবরটি খোঁড়াখুঁড়ি করা হবে তখন তিনি দ্রুত ইরাকে ফিরে আসেন। তিনি এখন গণকবরটি তোলা রোধে লড়াই করছেন যেখানে তাঁর মা, বোন এবং নিকটাত্মীয়দের দেহাবশেষ রয়েছে। গণকবরে নিহতদের পরিচয় অনুসন্ধান করা হচ্ছে। কুর্দি গণহত্যা গত এক দশকে ইরাকে অনেক কুর্দি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ইরাকি সরকার বলেছে যে, এমন অন্তত ৭০ টি গণকবর রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ১৭ টি খোলা হয়েছে। ইরান-ইরাক যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে সাদ্দাম হুসেইন ইরাকের উত্তরে বসবাসকারী কুর্দিদের বিরুদ্ধে "আল-আনফাল" নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি গোষ্ঠীকে শাস্তি দেয়া, যারা ইরানীদের সহযোগিতা করেছিল এবং আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল কুর্দিদের স্ব-শাসিত সমাজ ভেঙ্গে দেয়া। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, পদ্ধতিগত জাতিগত নির্মূলে প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত হন, যাদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে কুর্দি সূত্রগুলো বলছে যে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। প্রায় এক লাখ ৮২ হাজার জন। ওই গণহত্যায় তৈমুর একমাত্র ব্যক্তি যিনি বেঁচে ফিরেছিলেন। বদলে গিয়েছিল গ্রামের মেজাজ সাদ্দাম হোসেইনের বাহিনীর হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কার কথা শুনে ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মাসে তৈমুরের পরিবার ও গ্রামের মেজাজ কীভাবে বদলে গিয়েছিল তা এখনও তার স্পষ্ট মনে আছে। "ইরাকের উত্তরাঞ্চলের গ্রামগুলো একে একে ঘেরাও করা হয়েছিল।" তৈমুরে যতদূর মনে আছে যে তাঁর গ্রামে পুরোপুরি তাঁর বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা ছিলেন, যারা বেশিরভাগ কৃষক ছিলেন। কুলাজো গ্রামটি ছিল অনেক জনবহুল এবং চারিদিকে পাহাড়ের মাঝখানে ছোট এই গ্রামটি ছিল। তৈমুর বলেন, "যদি ওই অঞ্চলটি কেউ ভালোভাবে না চেনেন তাহলে আমাদের গ্রাম খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন।," তবে সাদ্দামের শাসনামলে সরকারের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক কুর্দিদের অভাব ছিল না। "ইরাকের সহযোগী এই কুর্দিরাই আমাদের গ্রামগুলোয় ইরাকি বাহিনীকে পথ দেখিয়ে এনেছিল।" এপ্রিল মাসের একটি দিনে গ্রামের ১১০ জনের সবাইকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। "তারা বলেছিল: 'আমরা জনগণের জন্য একটি শিবির খুলেছি এবং আপনারা সেখানে খুব আনন্দের সাথে বাস করতে পারবেন। সেখানে পানি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সব ধরণের সেবা রয়েছে" কেউ কেউ দল বেঁধে সামরিক গাড়িতে চড়ে বসেছিল। তবে তৈমুরের পরিবার তাদেরকে নিজের ট্র্যাকটারে করে অনুসরণ করে। একটি সামরিক ঘাঁটিতে তৈমুর কে তার বাবার থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। সেটাই ছিল তাদের শেষ দেখা। পৃথকীকরণ অবশেষে তাদের উত্তর ইরাকের তোপজায়ার একটি সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে, সবার থেকে পুরুষদের আলাদা করে ফেলা হয়। সেইসঙ্গে তাদের সঙ্গে থাকা সব জিনিষপত্র লুট করে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। বাবা আবদুল্লা আহমেদকে ওই শেষ বারের মতো দেখেছিলেন তৈমুর। পরে সামরিক বাহিনী তাকে তাঁর দুই বোন, মা, খালা এবং অন্যান্য তরুণ-তরুণীদের সাথে প্রায় এক মাস ধরে আটকে রাখে। মে মাসের এক উত্তপ্ত দিনে, সব নারী এবং শিশুদের তিনটি সম্পূর্ণ ঢাকা সামরিক ট্রাকে তুলে দক্ষিণের অজানা গন্তব্যে কয়েক ঘণ্টা চালিয়ে নিয়ে যায়। আহমেদ বলেছেন, "ট্রাকের ভেতরে খুব গরম ছিল। উত্তাপ ও ক্লান্তির কারণে দুটি মেয়ে সেখানেই মারা যায়।" "এরপর তারা মাঝখানে কোথাও থামে এবং আমাদের কিছু পানি খেতে দেয়।" "পানিতে কিছু রাসায়নিক মেশানো ছিল - যা আমাদের অসাড় করে দেয়। এরপর তারা আমাদের চোখ বেঁধে, হাত বেঁধে আবারও ট্রাকে ধাক্কা দিয়ে তুলে নিয়ে যায়।" তৈমুর কোনভাবে নিজেকে মুক্ত করতে এবং চোখে বাঁধা কাপড় সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হন। গণকবর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। গোলাগুলি পাঁচ মিনিট পরে, ট্রাকগুলো তাদের চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছে যায়। দরজাগুলি খোলার পরে তিনি দেখতে পান বুলডোজার দিয়ে পাশাপাশি তিনটি গর্ত খোঁড়া হচ্ছে। "আমি দেখলাম দুজন ইরাকি সেনা একে-৪৭ রাইফেল হাতে নিয়ে ওই গর্তের দিকে তাক করে আছে।" নারী এবং শিশুদের- এমনকি এক মাস বয়সী শিশুদের ট্রাক থেকে নামিয়ে গর্তে ধাক্কা দিয়ে ফেলা হয়। "হঠাৎ সৈন্যরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে - তারা একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকেও গুলি করে হত্যা করে, যিনি আর ক'দিন পরেই হয়তো জন্ম দিতে চলেছিলেন। তার পেট ছিঁড়ে টুকরো হয়ে যায়।" তৈমুরকে তার বাম বাহুতে গুলি করা হয়েছিল। তিনি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। "আমি মারা যাওয়ার ভান করলাম। আমার মাথার আশেপাশে কাঁধে এবং পায়ের পাশ দিয়ে গুলিবর্ষণ হচ্ছিল। পুরো মাটি যেন কাঁপছিল। এক মুহূর্তে জায়গাটা রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়।" তৈমুর পিঠে আরও দু'বার গুলিবিদ্ধ হন এবং আজও তিনি তার শরীরে সেই গুলির দাগ বয়ে বেড়াচ্ছেন। "আমি আমার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম," তিনি বলেন। একটি বেদুইন পরিবার নিজেদের জীবন বাজি রেখে তৈমুরকে আশ্রয় দিয়েছিল। অব্যাহতি আহমেদ বিশ্বাস করেন, তার অন্য বোনকে পাশের গর্তে হত্যা করা হয়েছিল। "তখন আমার বয়স বারো বছর ছিল, আমার বোনদের মধ্যে বড়জনের বয়স ছিল ১০ বছরের মতো। আর বাকি দুজনের বয়স সম্ভবত আট এবং ছয় বছর।" গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। সৈন্যরা চলে যাওয়ার পরে তৈমুর গর্ত থেকে বের হয়ে আসেন। তিনি হেঁটে হেঁটে, হামাগুড়ি দিয়ে মরুভূমির দিকে ছুটতে থাকেন এবং একটি তাঁবুর কাছে এসে থামেন। ওই তাঁবুটি ইরাকি বেদুইন পরিবারের ছিল। "যেহেতু আমাকে হাসপাতালে নেওয়া বিপজ্জনক ছিল, তাই তারা আমাকে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম্য কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়, তাদের ওষুধগুলোয় আমার গুলির ক্ষত সেরে ওঠে," -তিনি বলেন। ওই ইরাকি পরিবার একটি কুর্দিশ ছেলেকে আশ্রয় দেওয়ার মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত ছিল, তবুও তারা তাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে তৈমুরের যত্ন নিয়েছিল। "আমি জানতাম যে আমার একজন আত্মীয় ইরাকি সেনাবাহিনীতে চাকরি করছেন। আমি তার সাথে যোগাযোগ করি এবং তিন বছর পর কুর্দি অঞ্চলে চলে আসি।" আনফাল অভিযানে সাদ্দাম বাহিনী কুর্দিদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। সংগ্রাম ১৯৯১ সালে তিনি কুর্দি অঞ্চলে পৌঁছানোর পরে শীঘ্রই তার বেঁচে থাকার খবর ছড়িয়ে পড়ে। "যখন আমার বেঁচে থাকার গল্পটি প্রকাশ পায় তখন থেকেই ইরাকি বাহিনী এবং কুর্দি সহযোগীরা আমার সন্ধান করতে শুরু করে। তখন আমার বয়স হয়েছিল ১৫ বছর।" তৈমুর তার অত্যাচারীদের থেকে বাঁচতে লুকোচুরি শুরু করেন। এক পর্যায়ে, তাকে তার আত্মীয়ের বাড়ি ছেড়ে পুড়ে যাওয়া গ্রামগুলোর ধ্বংসাবশেষে লুকিয়ে থাকতে হয়। "আমি কুর্দিদের খালি গ্রামগুলোয় একা থাকতাম। আমার কোনও খাবার ছিল না। মাঝে মাঝে আমাকে গাছের পাতা খেতাম," সে বলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়, এবং যুক্তরাষ্ট্রে তার আশ্রয়ের আবেদন গৃহীত হয়। "১৯৯৬ সালে, আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাই এবং একটি গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করি। আমি এখনও এই ব্যবসাই করছি," তিনি বলেন। কর্মকর্তারা জানান নিহতের ব্যক্তিগত জিনিষপত্র লাশের পরিচয় সনাক্তে কাজে আসে। কবর সন্ধান করা ২০০৯ সালে, তৈমুর ইরাকে ফিরে যান। সে সময় তিনি তাঁর মা ও বোনদের মাটিচাপা দেয়া স্থানটি সন্ধান করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তিনি বাগদাদের ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে সামাওয়াহ অঞ্চলে গিয়ে ওই বেদুইন পরিবারকে খুঁজে পান যারা তাকে আশ্রয় দিয়েছিল। "আমি তাদের বলেছিলাম যে আমাকে সেই তাঁবুর স্থানে নিয়ে যেতে যেখানে আমি তাদের সাথে প্রথম দেখা করেছিলাম। তারা যখন আমাকে সেই জায়গায় নিয়ে যায়, তখন আমি আমার অন্তর্দৃষ্টি ব্যবহার করি এবং কবরের সন্ধান পেতে সক্ষম হই।" ধূ ধূ মরুভূমিতে কোন কিছুর অনুসন্ধান করা কোনও সহজ কাজ ছিলনা। "কবরটি যখন দেখলাম আমি কাঁপছিলাম। আমি কাঁদছিলাম।" "আমি অনুভব করলাম যে ঈশ্বর আমাকে হয়তো এই একটি কারণে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ঈশ্বর আমাকে একটি বড় লক্ষ্য দিয়েছেন এবং সেটা হল সেই নিরীহ মানুষদের নিয়ে কথা বলা, যাদের আর কথা বলার শক্তি নেই।" তৈমুর তার পরিবারের সদস্যদের দেহাবশেষ সাবধান ফিরিয়ে আনতে রাজনীতিবিদদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলেন। "আমি ইরাকি সরকারের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম এবং তাদের বলেছিলাম যে এই কবর সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তারা যেন আমাকে অবহিত করেন।" "আমার মা ও বোনদের একটি ছবিও আমার কাছে নেই। আমি কবরস্থানে থাকতে চেয়েছিলাম কোনটি আমার মা এবং আমার বোন এবং আমি তাদের দেহাবশেষ নিয়ে একটি ছবি তুলতে চাই।" তবে ইরাকি কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা করেনি। "তারা আমার উপস্থিতি ছাড়াই কবরস্থানের কাজ শুরু করেছে," তিনি বলেন। দক্ষিণ ইরাকে একটি গণকবর তোলার কাজ চলছে। অসম্ভব কাজ ওই কবরটি থেকে ১৭০টিরও বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়। যেখানে তৈমুর বিশ্বাস করেন যে তার আত্মীয়দের হত্যা করা হয়েছিল। ইরাকি কর্মকর্তারা বলেছেন যে আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগের বিষয়টি কুর্দি প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে। কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের মুখপাত্র ফাওদ ওসমান তাহা বলেছেন," প্রত্যেক ভুক্তভোগীর স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করা আমাদের পক্ষে কঠিন। তৈমুর [আহমেদ] যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। আমরা এই দেশে বসবাসকারী লোকদের প্রতি মনোনিবেশ করছি। " "স্বজনদের জানানোর আগে লাশগুলি প্রথমে আমাদের পরীক্ষা করতে হবে। আমরা এমন কোনও ক্লু খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছি যা লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে সাহায্য করবে যেমন পোশাক বা আইডি কার্ড বা তারা কোথা থেকে এসেছেন এমন কোন চিহ্ন।" তিনি বলেন যে, আরও পরীক্ষার জন্য দেহাবশেষ থেকে ডিএনএ নমুনা নেওয়া হবে এবং প্রতিটি মরদেহকে আলাদা কোড নম্বর দেওয়া হবে। "পরিবারগুলো সনাক্ত করার পরে আমরা তাদের মৃতদেহগুলি তাদের নিজ শহর বা গ্রামে নিয়ে যেতে এবং একটি বিশেষ শেষকৃত্যানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের কবর দিতে সহায়তা করব।" "আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার চাই। তবে আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ যুদ্ধাপরাধীদের অনুসরণ করা নয়। আমরা প্রমাণ সংগ্রহ করি এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করার জন্য বিশেষ আদালতে পাঠাই," তাহা বলেছেন। গণকবরে অসংখ্য মানুষের লাশ। বিচার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছুটে আসার পরে, তৈমুর মরুভূমির মাঝখানে শিবির স্থাপন করেন। তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের গর্তটি খনন করতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যেখানে তাঁর মা ও দুই বোনের দেহাবশেষ রয়েছে বলে তারা বিশ্বাস। "আমি এখানেই থাকবো। আমি কবর রক্ষা করতে সব ধরণের চেষ্টা করে যাব।" তৈমুর জানান যে তিনি স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মনোভাব দেখে বিরক্ত হয়ে আছেন। যারা আরও একটি গণকবর সন্ধানের কৃতিত্ব নিতে আগ্রহী। "কুর্দি গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। আমাদেরকে এই ঘটনার পেছনে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।" | "এ এক ভয়াবহ অনুভূতি। আমি দেখলাম আমার চোখের সামনে মা'কে মেরে ফেলা হচ্ছে। আমার কোনও শক্তি ছিল না। আমি তাকে রক্ষা করতে পারিনি। এরপরে আমি দেখলাম আমার দুটি বোনকে মেরে ফেলা হচ্ছে।" |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | কামালা হ্যারিস এবং জো বাইডেন উইলমিংটনের নির্বাচনী প্রচারণায় একসঙ্গে যোগ দেন। তারা দুজনই তাদের নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম অনুষ্ঠানটি একসাথে করেন। এর আগে, মি. বাইডেন তার রানিং মেট হিসেবে মিস হ্যারিসকে প্রথম সামনে আনেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের বক্তব্যের জবাবে বলেছেন, যে মিস হ্যারিস তার নিজের নির্বাচনী লড়াইয়ে "নুড়ি পাথরের মতো নীচে গড়িয়ে পড়ে যাবেন"। মি. বাইডেন নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান মি. ট্রাম্পের মুখোমুখি হবেন। বাইডেন কী বলেছেন? ডেলাওয়ারের উইলমিংটনে বুধবারের এই নির্বাচনী প্রচারণা অনুষ্ঠানটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল না, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান ৭৭ বছর বয়সী মি. বাইডেন। উভয় প্রার্থী মুখে মাস্ক পরে মঞ্চে উপস্থিত হন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরা এক দল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তারা। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের বলছে, দু'জন প্রার্থীকে এক ঝলক দেখতে প্রচারণা অনুষ্ঠান শুরুর আগে হালকা বৃষ্টির মধ্যে প্রায় ৭৫ জন লোক বাইরে জড়ো হয়েছিল, যদিও এই ভিড়ে থাকা কয়েকজন মি. বাইডেনের সমালোচক ছিলেন। অ্যালেক্সিস আই ডুপন্ট হাই স্কুলের জিমনেশিয়াম থেকে বক্তব্য রাখার সময় মি. বাইডেন বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর, মিসেস হ্যারিস হলেন প্রথম কোন বর্ণের নারী, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান একটি দলের হয়ে প্রেসিডেন্টের রানিং মেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। মি. বাইডেন বলেন: "আমরা এই নভেম্বরে যাকে বেছে নেব, তিনি নির্ধারণ করবেন আমেরিকার দীর্ঘ সময়ের ভবিষ্যৎ।" ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে এসব বক্তব্যের জবাব দিতে শুরু করেছেন। কমালাকে জঘন্য বলে সম্বোধন করেছেন এবং কমালা তার নিয়োগকারীর দৃষ্টিতে কেমন, সেটা নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন। "এটি অবাক হওয়ার কিছু নয় কারণ আমেরিকার ইতিহাসে যে কোনও প্রেসিডেন্টের চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি ঘ্যানঘ্যান করেন।" "একজন নারী অথবা কোন একটি বোর্ড জুড়ে থাকা শক্তিশালী নারীদের নিয়ে যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমস্যা আছে, এতে কি কেউ অবাক হয়েছেন?" বলেন, মি. বাইডেন। তিনি মি. ট্রাম্পের করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্বের হার সামাল দেয়ার ব্যর্থতা এবং "তাঁর বর্ণবাদী বক্তব্য ও বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে" আক্রমণ করেন। নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার প্রচারণা শুরু হয়েছে। হ্যারিস কি বলেছেন? মি. বাইডেনের পর মিস হ্যারিস মঞ্চে এসে বলেন: "আমি কাজ করতে প্রস্তুত আছি।" ৫৫ বছর বয়সী সাবেক এই আইনপ্রণেতা সাংবাদিকদের বলেন: "আমেরিকার সাথে কী হবে, সেটা নির্ধারণ হতে যাচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের শিশুরা, আমরা যে ধরণের দেশে বাস করছি তার সবকিছুই এর সঙ্গে যুক্ত। " মিস হ্যারিস, যিনি কিনা ভারতীয় এবং জ্যামাইকান অভিবাসীর সন্তান- তিনি আরও বলেন: "আমেরিকা সুযোগ্য নেতৃত্বের জন্য হাহাকার করছে, অথচ আমাদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আছেন তিনি শুধু নিজের চিন্তায় আছেন। যারা তাকে নির্বাচিত করেছে তাদের দিকে খেয়াল নেই।।" তিনি আরও বলেন: "তিনি [মি. ট্রাম্প] বারাক ওবামা এবং জো বাইডেনের কাছ থেকে ইতিহাসের দীর্ঘতম অর্থনৈতিক প্রসার উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। "এরপর তিনি, তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সমস্ত কিছু সরাসরি মাটিতে ছুঁড়ে নষ্ট করেছেন।" মিস হ্যারিস বলেন: "এমনটা তখনই হয়, যখন আমরা এমন একজনকে বেছে নিই যিনি এই কাজের জন্য উপযুক্ত নন- আমাদের দেশকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে আমাদের খ্যাতিও বিনষ্ট হয়েছে।" আরও পড়তে পারেন: যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০: কে এগিয়ে- ট্রাম্প না বাইডেন? মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে কিছু তথ্য ২০২০ নির্বাচনে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রভাব ফেলবে? ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া: বুধবার হোয়াইট হাউসের একটি সংবাদ সম্মেলনে মি. ট্রাম্প বলেন, কমালা হ্যারিস যখন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন তখন তিনি মি. বাইডেনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন। "আমি দেখেছি তার জরিপের সংখ্যাগুলো বুম, বুম, বুম, করে নামতে নামতে প্রায় শূন্যে পৌঁছে যায়, এবং তিনি রাগে পাগল হয়ে যান", বলেন মি. ট্রাম্প। "তিনি (কমালা) বাইডেনের সম্পর্কে ভয়ংকর সব কথা বলেছেন। এমনকি একজন নারী যখন বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তখন তার কথাও মিস হ্যারিস বিশ্বাস করেছিলেন বলে আমার ধারণা"। "এখন সেই তিনিই বাইডেনের রানিং মেট হয়ে গেলেন। আবার বাইডেন সম্পর্কে ভালো ভালো কথাও বলছেন", বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সরঞ্জামাদি মি. বাইডেনের বিরুদ্ধে এর আগে কয়েকজন নারী অযাচিত ব্যবহার যেমন স্পর্শ এবং চুম্বন করার অভিযোগ তুলেছিলেন। মিস হ্যারিস এসব অভিযোগের বিষয়ে ২০১২ সালের এপ্রিলে সাংবাদিকদের বলেছিলেন: "আমি ওই নারীদের বিশ্বাস করি।" মি. বাইডেন সেই সময়ে স্বীকার করেছিলেন যে তাকে অবশ্যই ব্যক্তিগত বিষয়ের প্রতি সম্মান জানাতে হবে। মি. বাইডেনের বিরুদ্ধে এই বছর আরও গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন সাবেক এক সেনেটের সহযোগী। ১৯৯৩ সালে কংগ্রেসের হলে মি. বাইডেন তাকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন বলে তিনি অভিযোগ তোলেন। এই অভিযোগ অস্বীকার করেন মি. বাইডেন। এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বাদ পড়ে যাওয়া মিস হ্যারিস বলেছেন, মিসেস রিডের "তার গল্প বলার অধিকার আছে"। মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধেও বেশ কয়েকজন নারীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল, যার সবই ট্রাম্প অস্বীকার করেন। বাইডেন-হ্যারিসের এই প্রচারণা অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণ আগেই, ট্রাম্প এই লকডাউনের মধ্যে মিঃ বাইডেনকে টিটকারির স্বরে বাড়িতে থাকতে বলেন। হোয়াইট হাউসের ইভেন্টে প্রেসিডেন্ট একদল শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করেন, ঘরে বসে বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করা স্বাস্থ্যকর কি না। তারপরে তিনি বলেন: "তাহলে আপনি যদি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন এবং আপনি একটি বেসমেন্টে বসে থাকেন এবং আপনি একটি কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকেন, এটি কি ভালো বিষয় নয়?" তারপরে তিনি বাইডেন হ্যারিসের প্রচারণাতে কটাক্ষ করে টুইট করেন: 'তারা কোরি বুকার, যিনি কিনা একজন কৃষ্ণাঙ্গ, তাকে শহরতলিতে স্বল্প আয়ের আবাসনের দায়িত্বে রাখবেন।' এই টুইটকে বর্ণবাদী বলে আখ্যা দিয়েছেন সমালোচকরা। মিস হ্যারিসকে রানিং মেট ঘোষণার পরে, বাইডেন-হ্যারিস একসাথে ছবি প্রকাশ করেন। এরপরে কি হবে? মি. বিডেন পরের সপ্তাহের দলীয় সম্মেলনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের মনোনয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করবেন, যা করোনভাইরাস মহামারীর কারণে মূলত ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে হবে। এক সপ্তাহ পরে রিপাবলিকানদের সম্মেলনে মিঃ ট্রাম্প তার সহকর্মীদের সমর্থনে হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় দফায় চার বছরের মেয়াদে মনোনীত হবেন। তেশরা নভেম্বর সাধারণ নির্বাচনে ভোটাররা তাদের রায় দেওয়ার আগে ১০ সপ্তাহ ধরে প্রচারণা চলবে। মি. ট্রাম্প এবং মি. বাইডেন ২৯ সেপ্টেম্বর ওহাইও রাজ্যের ক্লিভল্যান্ড, ১৫ ই অক্টোবর ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি, এবং ২২ অক্টোবর টেনেসির ন্যাশভিলে, তিনটি বিতর্কে অংশ নেবেন। মিস হ্যারিস অক্টোবরে উটাহর সল্টলেক সিটিতে মি. ট্রাম্পের রানিং মেট, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সাথে একটি বিতর্কে অংশ নেবেন। তেশরা নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুখোমুখি হবেন জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিবেদক অ্যান্থনি জার্চার যা বললেন গত মঙ্গলবার বিকেলে জো বাইডেন তার রানিং মেট হিসেবে কমালা হ্যারিসের নাম ঘোষণা করেছেন। এরপর তাদের মধ্যে থাকা নানা পার্থক্যের বিষয় সামনে আসে। মিস হ্যারিসের চাইতে মি. বাইডেন প্রায় ২০ বছরের বড়। তিনি একজন শ্বেতাঙ্গ, পেনসিলভেনিয়ার শ্রমজীবী পিতামাতার ছেলে। অন্যাদিকে মিস হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়ায় জামাইকা এবং ভারতীয় অভিবাসী পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। বুধবার তারা প্রথম যৌথ প্রচারণায় অংশ নিয়ে তাদের মধ্যে কী কী বিষয়ে মিল রয়েছে সেগুলো নিয়ে কথা বলেন। "তার গল্প হল আমেরিকার গল্প," মিস্টার বাইডেন বলেন। "অনেক ক্ষেত্রে আমার থেকে তিনি আলাদা, তবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোয় আমাদের কোন পার্থক্য নেই।" মিস হ্যারিসের কণ্ঠেও ধ্বনিত হয় যে, আমরা দুই প্রার্থী "একই কাপড় থেকে কেটে নেয়া দুটো টুকরো"। এটি এমন এক জাতীয় নিরাময় এবং ঐক্যের বার্তা যা আপনি এসব প্রচারনা থেকে আসবে বলে আশা করেন। যদিও এটা প্রার্থীদেরকে সাধারণ নির্বাচনে তাদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো থেকে বিরত রাখবে না। একে হোয়াইট হাউজের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ধাপের যুদ্ধ বলে জানিয়েছেন মি. জার্চার | ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন এবং তার সদ্য ঘোষিত রানিং মেট কমালা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একজন অযোগ্য নেতা হিসাবে উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত করে রেখেছেন। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | পশ্চিমবঙ্গে শেষ পর্বের ভোটে কলকাতার একটি বুথে মহিলাদের লাইন। ২৯ এপ্রিল, ২০২১ বস্তুত পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই ভোট গোনা হবে দেশের আরও চারটি রাজ্যে - তামিলনাডু, কেরল, পন্ডিচেরি ও আসামেও। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরেও মিডিয়ার যাবতীয় মনোযোগ যেন শুধু পশ্চিমবঙ্গেই কেন্দ্রীভূত। গত দেড়-দুমাস ধরে হুইলচেয়ারে ঘুরে প্রচার চালিয়ে যাওয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বনাম দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জুটির মেগা-জনসভা আর রোড শো-গুলো যেভাবে জাতীয় চ্যানেলগুলোতে কভারেজ পেয়েছে, তার তুলনাও বিরল। কিন্তু ভারতের গণতন্ত্রে যে কোনও রাজ্যেই প্রতি পাঁচ বছর পর পর বিধানসভা নির্বাচন হয়ে থাকে, পশ্চিমবঙ্গেও সেরকমই একটা রুটিন ভোটপর্ব হচ্ছে। তা সত্ত্বেও কেন এত গুরুত্ব পাচ্ছে এই নির্বাচন? কী নির্ভর করছে এই ভোটের ওপর? ইংরেজিতে বললে 'হোয়াট ইস অ্যাট স্টেক'? রাজনৈতিক ভাষ্যকার সাগরিকা ঘোষ ভারতের সুপরিচিত টিভি ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার সাগরিকা ঘোষ তো এবারের এই ভোটকে পলাশীর যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করতেও দ্বিধা করছেন না। ১৭৫৭ সালে রবার্ট ক্লাইভের সেনা যেভাবে নবাব সিরাজউদ্দোল্লার বাহিনীকে পরাস্ত করে বাংলার ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল, সেভাবেই এই নির্বাচন অন্তত পশ্চিমবঙ্গের আগামী দিনের গতিপথ নির্ধারণ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে বলেই তাঁর অভিমত। আসলে প্রায় ৯ কোটি জনসংখ্যার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে এই ভোট শুধু যে ২৯৪ জন বিধায়ক বা জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচন করবে তাই নয়। পর্যবেক্ষকরা প্রায় সবাই এক বাক্যে বলছেন রাজ্যের সাম্প্রদায়িক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক চরিত্রেও সম্ভবত একটা বড়সড় পরিবর্তনের দিশা দেখাতে পারে এই ভোট। সেটা কীভাবে, তারই সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ থাকছে এই প্রতিবেদনে। অটুট থাকবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি? ভারতের জনসংখ্যায় মুসলিমদের যে শতকরা হার, তার তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে সেই অনুপাত প্রায় দ্বিগুণ - তিরিশ শতাংশের কাছাকাছি। তবে রাজ্যের মুসলিমরা গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে সমানভাবে ছড়িয়ে আছেন তা নয়, মূলত মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া বা দক্ষিণ ২৪ পরগণার মতো চার-পাঁচটি জেলাতেই তাদের ঘনত্ব বেশি। দেশভাগ ও স্বাধীনতার পরবর্তী সাত দশকে পশ্চিমবঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা যে হয়নি তা নয়। কিন্তু মোটের ওপর এই রাজ্যটি ভারতে হিন্দু-মুসলিমের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্যই পরিচিত। কলকাতায় নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বহু হিন্দু ও মুসলিম একসাথে আন্দোলন করেছেন "আমরা (রাজ্যকে) গুজরাট হতে দেব না'', এই গানও ভোটের মরশুমে পশ্চিমবঙ্গে অনেকের মুখে মুখে ফিরেছে। কিন্তু দক্ষিণপন্থী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তি বিজেপির উত্থান পশ্চিমবঙ্গের সেই সামাজিক চালচিত্রকে বদলে দেবে কি না, এই আশঙ্কা কিন্তু অনেকের মধ্যেই আছে। ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক ইসলামের গবেষক কিংশুক চ্যাটার্জির কথায়, ''অন্যান্য রাজ্যের অভিজ্ঞতা দেখলে এটা মনে করার যথেষ্ঠ কারণ আছে যে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে এখানে সাম্প্রদায়িক পরিবেশ মোটেই আর আগের মতো থাকবে না!'' পশ্চিমবঙ্গের এই নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্ব আগাগোড়া যেভাবে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি ও প্রচারণা চালিয়ে এসেছে, তাতে এই ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়েছে। বিজেপির ছোট-বড়-মাঝারি নেতারা ক্রমাগত বলে গেছেন, মমতা ব্যানার্জি এতদিন ভোটে জিতেছেন 'স্রেফ রোহিঙ্গা আর বাংলাদেশিদের ভোটে'। মুসলিম কথাটা উচ্চারণ না-করলেও তারা যে এর মাধ্যমে আসলে কী বলতে চেয়েছেন, সেটা কারও বুঝতেই অসুবিধা হয়নি। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে একটি ইফতার পার্টিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কলকাতায় পার্ক সার্কাস অঞ্চলে জন্ম থেকে বেড়ে উঠেছেন অধ্যাপক রওশন জাহানারা। তাঁর আশঙ্কা হল, ''বিজেপি বলেই রেখেছে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে তারা এখানে এনআরসি চালু করবে। মুসলিমদের নিশানা করে আসামে এনআরসি অভিযান চালিয়ে যেভাবে তারা সে রাজ্যে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে পাকাপাকি বিভাজন সেরে ফেলেছে, একই জিনিস যে এখানেও হবে না তার গ্যারান্টি কোথায়?'' সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে রাজ্যে যে একটা 'পোলারাইজেশন' বা মেরুকরণ অনেকটাই সারা, তাতেও কোনও ভুল নেই। তবে এই পরিস্থিতির জন্য ক্ষমতাসীন তৃণমূল নেতৃত্বকেও দায়ী করছেন অনেকেই। বামপন্থী নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ''বিভিন্ন জনসভায় ইনশাল্লাহ বলে ভাষণ শুরু করা, মুসলিমদের জন্য আলাদা হাসপাতাল বা শুধুমাত্র ইমামদের জন্য সরকারি ভাতা - এগুলো মমতা ব্যানার্জিই এ রাজ্যে চালু করেছেন।'' বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে কলকাতার বুকে রামনবমীর মিছিল ''সেই খেলাটাই বিজেপি এখন আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে, কারণ তারা এ খেলার অনেক পুরনো খেলোয়াড়!'' ভোটের ফলাফলে বিজেপি গরিষ্ঠতা পাক বা না-পাক, তাই পশ্চিমবঙ্গে সেই সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন যে ইতিমধ্যেই সারা - সে বিষয়ে সন্দেহ নেই কোনও। বিপন্ন হবে বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি? ভারতের যে কোনও রাজ্যের ভোটে সাধারণত বেশি গুরুত্ব পায় উন্নয়ন, চাকরি-বাকরি, গরিবি হঠাও-এর নানা প্রতিশ্রুতি এবং অবশ্যই ধর্ম। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ভোটে এবারে একটি ব্যতিক্রমী ইস্যু নিয়ে তুমুল চর্চা হয়েছে, আর সেটা হল সংস্কৃতি। ভারতের নানা হিন্দি-ভাষাভাষী অঞ্চলের মতো পশ্চিমবঙ্গেও 'জয় শ্রীরাম' বলে সম্ভাষণ করাটা বাঙালিদের মানায় কি না, তর্কবিতর্ক হয়েছে তা নিয়েও। মূলত উত্তর ও মধ্য ভারতের গোবলয়ের দল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে একটি বিজাতীয় সংস্কৃতি আমদানি করতে চাইছে, রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বাংলায় এখানকার নিজস্ব ভাষা-শিল্প-মননের সঙ্গে যার কোনও মিল নেই - এ কথা তৃণমূল বলে আসছে অনেকদিন ধরেই। বিজেপির জাতীয় স্তরের শীর্ষ নেতাদের তারা 'বহিরাগত' বলে আক্রমণ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী পর্যন্ত বাংলা বলার চেষ্টায় কীভাবে বিকৃত উচ্চারণে 'সুনার বাংলা' বলেছেন তা নিয়েও ব্যঙ্গবিদ্রূপ হয়েছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি নিয়ে কলকাতায় তৃণমূলের পদযাত্রা তৃণমূলের সিনিয়র এমপি কাকলি ঘোষদস্তিদার বলছিলেন, ''মনে রাখতে হবে এই দলটা কলকাতার বুকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি পর্যন্ত ভেঙেছে।'' ''বাঙালির কাছে দুর্গাপূজার কী মাহাত্ম্য, সেটা না-বুঝে রামনবমীতে ত্রিশূল মিছিল বের করেছে। তাদের নেতারা এসে গুজরাটি অ্যাকসেন্টে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার হাস্যকর চেষ্টাও করে গেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কিছুতেই এই সংস্কৃতিকে গ্রহণ করবেন না।'' বিজেপি অবশ্য এই 'বহিরাগত তত্ত্ব'কে খারিজ করে দিয়ে আগাগোড়াই দাবি করে এসেছে, তৃণমূলই বরং আঞ্চলিকতাবাদে বিশ্বাসী - আর তাদের আস্থা একটা জাতীয় সর্বভারতীয় সংস্কৃতিকে। পশ্চিমবঙ্গে দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলছিলেন, ''বিজেপি একটা বাইরের দল, এ কথা এ রাজ্যে কেউই আর বিশ্বাস করেন না। কালিম্পং থেকে কাকদ্বীপ, ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস থেকে পাড়ার চায়ের দোকান, সর্বত্র কান পাতলেই শুনবেন বিজেপিকে এ রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষ কীভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন!'' তবে এটাও ঠিক, টালিগঞ্জের সিনেমাপাড়ার জনাকয়েক তারকা ভোটের আগে বিজেপি শিবিরে নাম লেখালেও পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-সাহিত্য জগতের রথী-মহারথীরা সেভাবে কিন্তু কেউই বিজেপির মতাদর্শের সঙ্গে প্রকাশ্যে একাত্মতা জানাননি। বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা কলকাতার সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র কফি হাউসেরও দখল নিতে চায় বহু বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদ, যারা এককালে বামপন্থীদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তারা তৃণমূলের সভায় হাজিরা দিলেও বিজেপিকে কিন্তু এড়িয়েই চলেছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের আমজনতা এই তথাকথিত বিজেপি ব্র্যান্ডের সংস্কৃতিকে কতটা গ্রহণ করেছেন, সে প্রশ্নেরও জবাব মিলবে রবিবারেই। শিল্পের হাল কি আদৌ ফিরবে? লন্ডন স্কুল অক ইকোনমিকসের অধ্যাপক মৈত্রীশ ঘটক তার এক সাম্প্রতিক নিবন্ধে দেখিয়েছেন, স্বাধীনতার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মাথাপিছু উপার্জন সারা দেশের জাতীয় গড়ের তুলনায় কীভাবে ক্রমশ কমেছে। ১৯৬০র দশকেও পশ্চিমবঙ্গ ছিল দেশের সবচেয়ে ধনী তিনটি রাজ্যের অন্যতম - বাকি দুটো ছিল মহারাষ্ট্র ও গুজরাট। কিন্তু আশির দশক থেকেই বাকি দেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গবাসীর রোজগারপাতি হু হু করে কমতে শুরু করে। ''টপ থ্রি' থেকে নামতে নামতে এই শতাব্দীর গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গ এসে ঠেকেছিল দশ নম্বরে, আর দশ বছর আগে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় আসে তখন র্যাঙ্কিং ছিল ১১। আজ আরও কমে পশ্চিমবঙ্গ ১৪তে এসে নেমেছে। পশ্চিমবঙ্গে বড় কলকারখানা নেই, বৃহৎ শিল্প সংস্থাগুলো এ রাজ্যে লগ্নি করতে ভরসা পায় না - প্রধানত এই কারণগুলোকেই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গে গত তিন দশকে বহু কলকারখানাই বন্ধ হয়ে গেছে বস্তুত চৌত্রিশ বছরের বাম জমানায় পশ্চিমবঙ্গর কখনওই 'শিল্পবান্ধব' বলে বিশেষ সুনাম ছিল না। কমিউনিস্ট শাসিত রাজ্যে শিল্পপতিরাও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে বড় একটা সাহস পেতেন না। কিন্তু এক যুগ আগে নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরে কৃষিজমি রক্ষার আন্দোলন করে ক্ষমতায় আসা মমতা ব্যানার্জি সেই অনাস্থাকেই অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে চপ-তেলেভাজা ছাড়া অন্য কোনও শিল্প নেই, এ কথা আজকাল লোকের মুখে মুখে ফেরে। ঠিক এই জায়গাটাতেই একটা ঢালাও পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী মোদী যেমন তার প্রচারে বারবার বলেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলেই পশ্চিমবঙ্গে 'আসল পরিবর্তন' আসবে, রাজ্য 'সোনার বাংলা' হবে। বিজেপিকে শিল্পপতিরা ভরসা করেন, তাই তারা পশ্চিমবঙ্গ শাসন করলে এ রাজ্যে বিনিয়োগের তুফান বয়ে যাবে, রাজ্যের যুবকরা চাকরি পাবেন - এই ছবিটাই তারা তুলে ধরতে চেয়েছেন। কিন্তু বিষয়টা এত সরল, তা মোটেই বিশ্বাস করেন না কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের কর্ণধার ড. পার্থ চ্যাটার্জি। রাজ্যে তার জনসভাগুলোয় প্রধানমন্ত্রী মোদী 'সোনার বাংলা' গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি বলছেন, ''বিজেপি ক্ষমতায় এলেও রাজ্যের অর্থনীতি রাতারাতি বদলে যাবে কিংবা মানুষের হাতে হঠাৎ প্রচুর টাকাপয়সা চলে আসবে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। শিল্পপতিরা তখনই বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন যখন মুনাফার ভালো সম্ভাবনা থাকবে।'' ''কিন্তু সেটা শুধু একটা সরকার পাল্টালেই হবে না, তার জন্য জোরালো একটা সামাজিক ভিত্তিও থাকতে হবে - যেটা আজকের পশ্চিমবঙ্গে নেই, খুব শিগগিরি হবে বলেও মনে হয় না।" তবে রবিবারের নির্বাচনী ফলাফল যদি রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের ইঙ্গিত দেয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের রুগ্ন শিল্প-মানচিত্রে একটা ওলটপালট করে দেখানোর চেষ্টা হয়তো অবশ্যই হবে। 'ডাবল ইঞ্জিন থিওরি' কি বাংলায় চলবে? বিগত প্রায় পাঁচ দশকে কোনও 'সর্বভারতীয় দল' পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। ১৯৭৭ সালে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বামপন্থীরা রাজ্যে সরকার গঠন করার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় পুরো সময়টাই বরং এমন দলই পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিল - যাদের বিরোধীরা তখন দিল্লির মসনদে। 'কেন্দ্রের বঞ্চনা' পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে হয়ে উঠেছিল একটি জনপ্রিয় ন্যারেটিভ। কেন্দ্রীয় সরকার কীভাবে পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করে চলেছে সেটা প্রথম বলতে শুরু করেন বামপন্থীরা, পরে মমতা ব্যানার্জিও কমবেশি সেই একই হাতিয়ার রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর জনসভাগুলোয় জ্যোতি বসু নিয়ম করে 'কেন্দ্রের বঞ্চনা'র কথা বলতেন অথচ কেন্দ্রে আর রাজ্যে একই দলের সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের সেই বিশেষ রাজ্যটার কতই না উন্নতি হতে পারে, গুজরাট-সহ বিভিন্ন রাজ্যের দৃষ্টান্ত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে ঠিক সেটাই দেখাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে বিজেপি। তাদের ভাষায় যার নাম 'ডাবল ইঞ্জিন' তত্ত্ব। প্রধানমন্ত্রী মোদী থেকে শুরু করে বিজেপির সব নেতা বারে বারে বলেছেন, কেন্দ্রে আর রাজ্যে একই দলের ইঞ্জিন থাকলে সে রাজ্যের রেলগাড়ি চলবে দ্বিগুণ গতিতে, উন্নয়ন হবে শনৈ শনৈ। কিন্তু প্রশ্ন হল, পশ্চিমবঙ্গ এই কথা কতটা বিশ্বাস করছে? তৃণমূলের প্রবীণ নেতা ও এমপি সৌগত রায়ের সাফ জবাব, ''একদমই করছে না। যে দলের নীতিই হল এয়ার ইন্ডিয়া থেকে শুরু করে ভারত পেট্রোলিয়াম - রাষ্ট্রের সব সম্পদ পারলেই বেচে দাও, তারা যে এ রাজ্যে ঢুকলে পশ্চিমবঙ্গের সর্বস্ব আম্বানি-আদানিদের হাতে তুলে দেবে এটা মানুষ ভাল করেই জানে।'' অবিকল বামপন্থীদের সুরে তৃণমূলও এখন তাই বলছে, পশ্চিমবঙ্গ কখনওই 'দিল্লি'কে বিশ্বাস করতে পারেনি - কারণ তাদের বিশ্বাস করা যায় না! বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত বিজেপির তাত্ত্বিক নেতা ও এবারের ভোটে প্রার্থী হওয়া স্বপন দাশগুপ্তরও স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এ রাজ্যের বাঙালিদের মধ্যে একটা 'বিদ্রোহী সত্তা' চিরকালই কাজ করেছে। তিনি বলছিলেন, ''বামপন্থীদের প্রভাব মাত্র কয়েকটি রাজ্যেই সীমিত, কাজেই তাদের জাতীয় দল কখনওই বলা যায় না। এবং সেই সাতাত্তর সাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গ কখনওই কোনও জাতীয় দলে আস্থা রাখতে পারেনি, সম্ভবত তাদের মধ্যে একটা অ্যান্টি-এস্টাবলিশমেন্ট মানসিকতা কাজ করেছে।'' ''কিন্তু এতদিনে সেটা পাল্টাতে যাচ্ছে, সেই ইঙ্গিত কিন্তু একেবারে স্পষ্ট!'' কাজেই পশ্চিমবঙ্গও অবশেষে ভারতের জাতীয় রাজনীতির তথাকথিত 'মূল ধারা'য় গা ভাসাবে, না কি আরও একবার ভরসা রাখবে একটি নিজস্ব আঞ্চলিক দলের ওপর - সেই প্রশ্নেরও জবাব এনে দেবে রবিবারের রায়। | ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আট পর্বের ম্যরাথন ভোটগ্রহণ শেষে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতে যাচ্ছে রবিবার, ২রা মে। গত দশ বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যটি দখলে রাখতে পারবে, না কি তাদের হঠিয়ে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি প্রথমবারের মতো পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসবে, সে দিকেই এখন সারা দেশের নজর। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁদের দুজনের মধ্যে ছিল ততটাই সখ্যতা। সেই নৈকট্য শব্দে বর্ণনা করা কঠিন। সেই সময়ে জ্যোতি বসু ছিলেন বিধানসভার এক সাধারণ সদস্য। বেতন পেতেন মাসে ২৫০ টাকা। সেটারও বেশীরভাগ অংশ তিনি পার্টির কাজে দিয়ে দিতেন। সিদ্ধার্থশঙ্কর যখন জ্যোতিবাবুর সঙ্গে দেখা করতে যেতেন, তখন মাঝে মাঝেই উঁকি মেরে আসতেন তাঁর রান্নাঘরের দিকে। সেদিন কী রান্না হয়েছে, সেটা এক নজরে দেখে নিতেন। একেবারেই সাধারণ রান্নাবান্না হত - ডাল, ভাত আর বেগুন ভাজা। পরে, যখন জ্যোতি বসু বিরোধী দলনেতা হলেন, তখন অবস্থার সামান্যই উন্নতি হয়েছিল। তাঁর বেতন বেড়ে হয়েছিল মাসে ৭৫০ টাকা। সেই সময়েও জ্যোতি বসুর স্ত্রী কমলা বসু মাঝে মাঝেই সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের কাছে অনুযোগ করতেন যে তিনি যেন তাঁর বন্ধুকে একটু বোঝান যে সংসারটা কীভাবে চলছে! সেই সময়েও মাসিক বেতনের প্রায় পুরো অংশটাই পার্টিকে দিয়ে দিতেন জ্যোতি বসু। মিসেস বসু বলতেন, "দুবেলা রান্নাবান্না করাই কঠিন হয়ে পড়ছে।" একবার চন্দননগর থেকে কলকাতায় আসার সময়ে জ্যোতি বসু আর সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়কে কয়েকজন অল্পবয়সী মেয়ে ঘিরে ধরেছিল। জ্যোতি বাবু সেই সময়ে রীতিমতো স্টার নেতা। তাই অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওই মেয়েরা জ্যোতি বাবুর হাতের লেখায় ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারে নি। তারা চাইছিল সইয়ের সঙ্গেই তিনি যদি কয়েকটা লাইনও লিখে দেন। জ্যোতি বসু আর কিছু লিখতে চান নি, শুধু সই করে দিয়েছিলেন। গাড়িতে ফিরে আসার পরে সিদ্ধার্থশঙ্কর মজা করে বলেছিলেন, "এত সুন্দরী মেয়েগুলোকে তুমি এক কথায় মানা করে দিলে? রবীন্দ্রনাথের কোনও লেখা থেকে একটা দুটো লাইন লিখে দিতে পারতে।" জ্যোতি বসু জবাব দিয়েছিলেন, "জানলে তো লিখব।" বাংলাদেশ যুদ্ধের কিছুদিন আগে সিদ্ধার্থ শঙ্কর ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে জ্যোতি বসুর একটা গোপন বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিলেন। কেউ যাতে জানতে না পারে, সেই জন্য রাত এগারোটায় বৈঠকের সময় ঠিক হয়েছিল। নজর এড়াতে নিজের স্ত্রী মালা রায়ের ফিয়াট গাড়িতে জ্যোতি বসুকে বসিয়ে নিজেই গাড়ি চালিয়ে নিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর বাড়ি ১ নম্বর সফদরজং রোডে নিয়ে গিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়। ঘন্টাখানেকের ওই বৈঠকের পরে বাইরে বেরিয়ে রাস্তা গুলিয়ে ফেলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। অনেকক্ষণ ধরে দিল্লির রাস্তায় চক্কর কাটার পরে তিনি ঠিক করেন কোনও একটা থানায় গিয়ে সাহায্য চাওয়া উচিত। জ্যোতি বসু বলেছিলেন, "তুমি কি বোকা নাকি! গোটা দুনিয়াকে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে জানাতে চাও যে আমি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম?" ঘটনাচক্রে মি. রায় ঠিক রাস্তা খুঁজে পেয়েছিলেন কিছুক্ষণ পরে, তাই আর সে যাত্রায় থানায় যাওয়ার দরকার পড়ে নি। রাজনৈতিক বিরোধ থাকার স্বত্ত্বেও জ্যোতি বসু কংগ্রেসের আরেক বড় নেতা এ বি এ গণি খান চৌধুরীকে নিজের পরিবারের সদস্য বলেই মনে করতেন। সবাই যখন মি. খান চৌধুরীকে 'বরকতদা' বলে ডাকত, জ্যোতি বাবু তাঁকে 'সাহেব' বলেই সম্বোধন করতেন। মি. খানচৌধুরীর বোন প্রতি দুসপ্তাহে একবার করে বিরিয়ানি রান্না করে পাঠাতেন জ্যোতি বাবুকে। নিয়মের ব্যতিক্রম হলে জ্যোতি বসু ফোন করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেন, "কী পাঠাওনি কেন?" পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিক তরুণ গাঙ্গুলি একটা মজার ঘটনা শোনালেন। একবার জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতাকে ডেকে বললেন, "বিধানসভার ভেতরে কিছু ইস্যু তুলে ধরতে পার না যাতে সরকার একটু বিব্রত হয়? একটু কড়া কড়া ভাষায় বলবে ইস্যুগুলো।" এই কথা বলে তিনি কাগজ কলমে লিখে দিলেন যে পরের দিন বিধানসভায় কোন কোন ইস্যুতে সরকারকে আক্রমণ করতে পারে কংগ্রেস। সীতারাম ইয়েচুরি বলছিলেন, ১৯৯৩ সালে জ্যোতি বসুকে কিউবায় যান। একদিন রাতে যখন ঘুমোতে যাবেন, সেই সময়ে খবর আসে যে ফিদেল কাস্ত্রো দেখা করতে চান জ্যোতি বসুর সঙ্গে। সীতারাম ইয়েচুরি বর্তমানে সি পি আই এম দলের সাধারণ সম্পাদক। মি. ইয়েচুরিকে সঙ্গে নিয়ে জ্যোতিবাবু মাঝ রাতে ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা করতে পৌঁছলেন। "প্রায় দেড় ঘন্টা চলেছিল ওই বৈঠক। জ্যোতিবাবুকে ফিদেল একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছিলেন। যেমন ভারতে কয়লার উৎপাদন কত, কোথায় কীরকম লোহা পাওয়া যায়, ইত্যাদি। একটা সময়ে জ্যোতিবাবু বাংলায় আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কি আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছে না কি?" পরের দিন জ্যোতি বসু যখন হাভানা বিমানবন্দরে পৌঁছিয়েছেন ফেরার বিমান ধরার জন্য, তখন জানা গেল ফিদেল কাস্ত্রো তাঁকে বিদায় জানাতে সেখানে এসেছেন। সীতারাম ইয়েচুরি জ্যোতি বসুর সঙ্গে প্রথম বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে, নেপালে। তিনি নেপাল সরকারের রাষ্ট্রীয় অতিথি ছিলেন। তাই জ্যোতি বসুর সফরসূচীতে পশুপতিনাথ মন্দির দর্শনও রাখা হয়েছিল। ইয়েচুরি জ্যোতি বসুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, যে মন্দিরে যাওয়ার ব্যাপারে মানা করে দিলেন না কেন? তিনি জবাব দিয়েছিলেন, "ভারতে আসা প্রত্যেক বিদেশী অতিথিকে রাজঘাটে (গান্ধীজির স্মারকস্থল) নিয়ে যাওয়া হয় - সেই অতিথির গান্ধীর মতাদর্শে বিশ্বাস থাক বা না থাক। সেই একই ভাবে নাস্তিক হওয়া স্বত্ত্বেও আমাদের পশুপতিনাথ মন্দিরে যাওয়া উচিত।" জ্যোতি বসুর পুত্রবধূ ডলি বসু বলছিলেন, "আমার বিয়ের একদিন পরেই আমি জ্বরে পড়ি। পরের দিন আমি তখনও বিছানায় শুয়ে আছি, রান্নাঘর থেকে কয়েকটা বাসনপত্রের আওয়াজ পেলাম। আমার শ্বশুরমশাই একটা বাসনে জল গরম করছিলেন। আমাকে বলেছিলেন, "তোমার গরম জল লাগবে, না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।" অসুস্থ পুত্রবধূর জন্য নিজেই চা বানিয়ে এনেছিলেন। ডলি বসু বলছিলেন, "ওই ঘটনার পর থেকে আমার সঙ্গে উনার এমন একটা সম্পর্ক হয়ে গেল যেটা উনার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল।" এটা হয়তো অনেকেই জানেন না যে জ্যোতি বসু ২১ বছর বয়সে জীবনে প্রথমবার চা খেয়েছিলেন। তাঁর বাবা চা খেতে মানা করেছিলেন। একবার চেন্নাইয়ের লায়োলা কলেজের একটা অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে ভাষণ দিতে গিয়ে মি. বসু একটা মজার ঘটনা বলেছিলেন। কলকাতার ধর্মতলার লরেটো স্কুলে যখন পড়তেন তিনি, সেই সময়ে গোটা ক্লাসভর্তি মেয়েদের মধ্যে একমাত্র তিনিই ছিলেন ছেলে। এই কথা শুনে লায়োলা কলেজের অনুষ্ঠানে খুব হাততালি পড়েছিল। কয়েকজন সিটিও বাজিয়েছিল এটা শুনে। অনেক সাহস করে একটি ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল, "স্যার, ক্লাসের এতগুলো মেয়ের সঙ্গে আপনি কী করেছিলেন?" জ্যোতি বসুর মুখে হাসি দেখতে পাওয়াটা খুবই দুর্লভ ছিল। লায়োলা কলেজের অনুষ্ঠানে ওই প্রশ্ন শুনে সেই দুর্লভ হাসিটা মুখে খেলে গিয়েছিল তাঁর। বলেছিলেন, "ওই বয়সে কী-ই বা করতে পারে কেউ!" জ্যোতি বসুর সুরক্ষার দায়িত্বে ছিলেন এম কে সিং। একটা মজার ঘটনা বলেছিলেন তিনি। জ্যোতি বসু যখনই হিন্দী বলতেন তার মধ্যে প্রায় সবসময়েই কয়েকটা উর্দু শব্দও ব্যবহার করতেন। যার মধ্যে 'নুমায়েন্দা' তাঁর বেশ প্রিয় শব্দ ছিল। বামফ্রন্টের বাকি সব মন্ত্রীদের মিলিত হিন্দি জ্ঞানের থেকেও জ্যোতি বসুর হিন্দি অনেক ভাল ছিল। কিন্তু তাঁর ভাষণের বৈশিষ্ট্য ছিল অসম্পূর্ণ বাক্য। আর যে কোনও বৈঠক - তা সে জনাপাঁচেক লোকের বৈঠক হোক বা বিধানসভায় কোনও গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ - একটা কাগজে বক্তব্যের মূল পয়েন্টগুলো লেখা থাকত, যাতে কোনও পয়েন্ট ভুলে না যান। কিন্তু সেই সব পয়েন্টগুলো ইংরেজীতে লেখা থাকত। জ্যোতি বসুর মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন অর্থনীতিবিদ অশোক মিত্র। নিজের আত্মকথায়, ড. মিত্র লিখেছেন "একবার আমি জ্যোতি বাবুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো ইংরেজীতে কেন লেখেন? তিনি জবাব দিয়েছিলেন, 'কী করব? আমি শুধু ইংরেজীতেই লিখতে পারি। তোমার মতো আমার শিক্ষা তো সম্পূর্ণ হয়নি।" (বিবিসি হিন্দির রেহান ফজলের এই প্রতিবেদনটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন অমিতাভ ভট্টশালী) আমাদের পেজে আরও পড়ুন: কেন পিছোল ঢাকা উত্তর মেয়রের উপনির্বাচন? রাখাইনে প্রত্যাবাসনে ভারতের সমর্থনের আশ্বাস রাখাইনে বৌদ্ধদের ওপর পুলিশের গুলিতে বহু হতাহত | জ্যোতি বসু আর তাঁর ঠিক আগে যিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সেই সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এতটাই ছিল, যার সঙ্গে এখনকার মুলায়ম সিং যাদব আর মায়াবতীর দ্বন্দ্বের তুলনা করা চলে। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ প্রথম শনাক্ত করেন যে, পরিচ্ছন্নতা হলো জীবন বাঁচানোর উপায়। তেমনই সময়ে ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ প্রথম শনাক্ত করেন যে, পরিচ্ছন্নতা হলো জীবন বাঁচানোর উপায়। কিন্তু এই তথ্য প্রতিষ্ঠা করতে তাকে ব্যাপক মূল্য চোকাতে হয়েছে। উনিশ শতকের কথা। সেটা ছিল এমন এক সময় যখন অসুস্থ কোন ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেয়াকে কোনোভাবেই কাজের কথা ভাবা হতো না। সর্বোপরি, ১৯ শতকের হাসপাতালগুলি ছিল সংক্রমণের কেন্দ্র এবং অসুস্থ ও মৃত্যুপথযাত্রীদের সেখানে কেবল সেকেলে চিকিৎসাই দেয়া হতো। তখন প্রকৃতপক্ষে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করাটাকেই মনে করা হতো নিরাপদ: হাসপাতালে চিকিৎসাকালীন মৃত্যুর হার তখন বাসাবাড়িতে রেখে চিকিৎসার তুলনায় ছিল তিন থেকে পাঁচগুণ বেশি। আরো পড়ুন: স্বাস্থ্য: হৃদরোগ ঠেকাতে খাদ্যভ্যাসে ৫টি পরিবর্তন হেঁচকি উঠলে থামাবেন কীভাবে? ঝি ঝি ধরলে কী করবেন? অভিনব চিকিৎসা পদ্ধতি 'মল-প্রতিস্থাপন' উনিশ শতকে অস্ত্রোপচার বা মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ খোলা হাতেই করা হতো, যার মাধ্যমে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তো মৃত্যুর ঘর হাসপাতালগুলোতে প্রস্রাব, বমি এবং শরীর থেকে নির্গত অন্যান্য তরল সবকিছু মিলে এমন উৎকট গন্ধ তৈরি হতো যে কর্মীদের অনেক সময় নাকে কাপড় বা রুমাল বেধে চলাফেরা করতে হতো। চিকিৎসকদের তাদের হাত কিংবা চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ধোয়ার ঘটনা ছিল বিরল। এবং চিকিৎসকরা যেমন নোংরা-অপরিষ্কার থাকতেন, অস্ত্রোপচার কক্ষগুলোও তেমনই ছিল । ফলাফলস্বরূপ, হাসপাতালগুলোর পরিচিতি ছিল "মরণ ঘর বা মৃত্যুর ঘর" হিসেবে। সেই বিশ্বে যখন জীবাণু কি সে সম্পর্কে ধারণা নেই, সেখানে একজন ব্যক্তি বিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়ে সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা শুরু করেন। তার নাম ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ। হাঙ্গেরিয়ান এই চিকিৎসক ১৮৪০ সালে ভিয়েনাতে, মেটার্নিটি ওয়ার্ডগুলোতে মৃত্যুহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে হাত ধোয়ার প্রচলন করার উদ্যোগ নেন। এটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ব্যর্থ একটি উদ্যোগ, কারণ যেহেতু তিনি সহকর্মীদের দ্বারা অসহযোগিতার শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি মায়েদের ত্রাণকর্তা হিসেবে পরিচিতি পান। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: 'রোহিঙ্গা সমস্যা এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার সমস্যা' গুগল সম্পর্কে যে ২১টি তথ্য আপনার হয়তো অজানা সৌদি আরবে কি এবার বিদেশি পর্যটক দেখা যাবে? ক্যাসিনো অবৈধ হলে উপকরণ বৈধ ছিলো কেন? লন্ডনের সেন্ট জর্জের মতো হাসপাতালগুলোর পরিচিতি ছিল "মরণ ঘর বা মৃত্যুর ঘর" হিসেবে। জীবাণুবিহীন এক বিশ্ব! স্যামেলওয়াইজ ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতালে কাজ করতেন, যেখানে সেসময়কার অন্য সব হাসপাতালের মতই মৃত্যু নিয়মিতভাবে মৃত্যু পিছু ছাড়ছিল না। ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে জীবাণু বিষয়ক তত্ত্বের সাফল্যের আগে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ যে হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখছে সে সম্পর্কে অনেক চিকিৎসকেরই টনক নড়েনি। "এমন এক দুনিয়ার কথা কল্পনা করাও আমাদের জন্য কঠিন যেখানে আমরা ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতামই না"। কথাগুলো বলছিলেন, ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের ওষুধের ইতিহাস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্যারন এইচ লার্নার। থমাস এয়াকিন্সের আঁকা তৈলচিত্র দ্যা অ্যাগ্নেয় ক্লিনিকি(১৮৮৯) যেখানে দ্য ক্লিনিক অব গ্রস এর সাথে তুলনা করা হয়েছে কারণ এখানে দেখা যাচ্ছে একটি পরিচ্ছন্ন অস্ত্রোপচার কক্ষ, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা সাদা কোট পরিহিত অবস্থায় তাৎপর্যপূর্ণ ভারসাম্যহীনতা সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঝুঁকিতে ছিলেন যারা তাদের মধ্যে প্রসূতি মায়েরা, বিশেষ করে যাদের প্রসবের সময় যৌনাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়-উন্মুক্ত ক্ষতস্থান ব্যাকটেরিয়ার আদর্শ আবাসস্থল, প্রায়ই যার বাহক ছিলেন চিকিৎসক এবং সার্জনরা প্রথম যে বিষয়টি মিস্টার স্যামেলওয়াইজ নোটিশ করেন সেটি হলো, ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতালের ধাত্রীবিদ্যা সংক্রান্ত দুটি ক্লিনিকের মধ্যকার মজার একটি অসামঞ্জস্য, কিন্তু ক্লিনিকই দুটির সুযোগ-সুবিধা ছিল অভিন্ন। একটি পরিচালিত হতো পুরুষ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দ্বারা, অন্যটি ছিল মিডওয়াইফদের তত্ত্বাবধানে। পুরুষ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত ক্লিনিকটিতে ১৮৪৭ সালে প্রতি এক হাজার প্রসবের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যু হার ছিল ৯৪.৪ (চুরানব্বই দশমিক চার)। আর দ্বিতীয় ক্লিনিক যেটি মিডওয়াইফদের দ্বারা পরিচালিত হতো সেখানে এই হার ছিল প্রতি হাজার প্রসবের ঘটনায় মাত্র ৩৬.২ (ছত্রিশ দশমিক ২)। এই ভারসাম্যহীনতার জন্য অতীতে মনে করা হতো, রোগীদের সাথে মিডওয়াইফদের তুলনায় পুরুষ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কঠোর আচরণ দায়ী । ঠিক সেইসময় একটি মৃত্যু এবং কিছু প্রশ্ন! তখন বিশ্বাস করা হতো যে, পুরুষ ডাক্তারদের এই কঠোর আচরণ মায়েদের শারীরিক এমন পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেত যা তাদের পিউরপেরাল জ্বরের দিকে ঠেলে দিতো-আর সন্তান-প্রসবের পরবর্তী প্রজনন-পথের সংক্রমণ আর সেই হাসপাতালটির সমস্ত মাতৃমৃত্যুর কারণ ছিল এটি। কিন্তু স্যামেলওয়াইজ এই ধরনের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। এমন প্রেক্ষাপটে সেই একই বছর, তার একজন সহকর্মী মারা যান। সেই সহকর্মীটি একটি ময়নাতদন্ত করার সময় হাত কেটে যাওয়ার পর থেকে ভুগছিলেন-আর এটাই হাঙ্গেরিয়ান চিকিৎসক সেমেলউইজের সামনে এনে দেয় সেই ক্লু বা সমাধান সূত্র যা তিনি খুঁজছিলেন। সেইসময় উন্মুক্ত মরদেহ কাটা শারীরিক ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত ছিল যা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। মরদেহ ব্যবচ্ছেদের ছুরি দিয়ে যেকোনো ক্ষত হলে বা চামড়ায় কোন কাটা-ছেড়া হলে, তা যত সামান্যই হোক না কেন, সেটা ছিল মারাত্মক বিপদজনক, এমনকি বেশ অভিজ্ঞ অ্যানাটমিস্টদের জন্যও। স্ট্রেপ্টোকোকাস পাইজিনেস জীবাণু, যা ছিল সেই সময়কার মৃত্যুর জন্য দায়ী এবং সে সময় তা ছিল অদেখা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চার্লস ডারউইনের চাচা-যার নামও ছিল চার্লস ডারউইন যিনি ১৭৭৮ সালে একটি শিশুর মরদেহের ব্যবচ্ছেদ করার সময় ক্ষত সৃষ্টির পরে মারা গিয়েছিলেন। ভিয়েনাতে নিজের সহকর্মীর মৃত্যুর পরে, সেমেলউইজ এটা বুঝলেন যে, তার উপসর্গ এবং পিউপেরাল ফিভারে ভোগা নারীদের উপসর্গ খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি ভাবলেন এটা কি হতে পারে যে, ময়নাতদন্ত কাজ শেষে ডাক্তারেরা সেখান থেকে 'কাডাভেরাস পার্টিকেল' তাদের সাথে বহন করে তা প্রসব কক্ষে নিয়ে যাচ্ছেন? তার পর্যবেক্ষণে উঠে আসে যে, অনেক মেডিকেল শিক্ষার্থী অটপসি (শবদেহ ব্যবচ্ছেদ) শেষ করে সরাসরি চলে যাচ্ছে মেটার্নিটি ওয়ার্ডে নারীদের চিকিৎসা দিতে। যেহেতু সেইসময় মরদেহ ব্যবচ্ছেদ করার সময় কেউই হাতে গ্লোভস বা অন্য কোন ধরনের সুরক্ষামূলক উপকরণ ব্যবহার করতো না, সুতরাং মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ক্লাস শেষে যখন ওয়ার্ডে ঢুকে যেত তখন তাদের পরনের কাপড়ে মাংসের টুকরো বা টিস্যু লেগে থাকতে দেখা গেলে সেটা মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না। "হাসপাতাল গুড়িয়ে দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে" মিডওয়াইফরা অটপসি বা শবদেহ ব্যবচ্ছেদ করতেন না। আর তাদের দ্বারা পরিচালিত ক্লিনিকে মৃত্যুহারও ছিল তুলনামূলক অনেক কম। সেমেলউইজকে বিপর্যস্ত করে রাখা রহস্য-জট খোলার এটাই কি চাবিকাঠি? জীবাণু তত্ত্ব সম্পর্কে বিশদ ধারণা লাভের আগে, হাসপাতালগুলোতে অপরিচ্ছন্নতা দূর করার বিষয়টি ছিল খুবই দু:সাধ্য কাজ। প্রসূতি বিশেষজ্ঞ জেমস ওয়াই. সিম্পসন (১৮১১-১৮৭০)- যিনি মানবদেহের ওপর ক্লোরোফর্মের চেতনা-নাশক প্রভাবের বৈশিষ্ট্য প্রথম তুলে ধরেছিলেন, তিনি যুক্তি তুলে ধরেন যে, যদি দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে হাসপাতালগুলো পর্যায়ক্রমে ধ্বংস করতে হবে এবং আবার গড়তে হবে। যদিও সেমেলউইজ এমন কোনও চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে বিশ্বাসী ছিলেন না। মৃতদেহ থেকে "সংক্রামক বস্তু বা উপকরণ" থেকেই পিউপেরাল জ্বরের ঘটনা ঘটছে- সে বিষয়ে উপসংহারে পৌঁছানোর পর, হাসপাতালে তিনি ক্লোরিনের সাহায্যে হাত ও উপকরণ জীবাণুমুক্ত করার জন্য বেসিন চালু করেন। যেসমস্ত ডাক্তারেরা ময়নাতদন্ত কক্ষ থেকে প্রসব কক্ষে যেত তাদের রোগীদের সেবা দেয়ার আগে অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন ব্যবহার করতে নির্দেশনা দেয়া হলো। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ওয়ার্ডে মৃত্যুর হার কমে ১৮৪৮ সালের মধ্যে প্রতি এক হাজার প্রসবের ক্ষেত্রে ১২.৭( ১২ দশমিক সাত) এ নেমে আসে। জেমস ওয়াই সিম্পসন মনে করতেন, দূষণমুক্ত করতে হাসপাতালগুলো পর্যায়ক্রমে ধ্বংস করতে হবে এবং আবার গড়তে হবে। যে বিজয়ের কোনও পুরস্কার নেই যদিও সেমেলউইজ এর সহকর্মীরা এ বিষয়ে পুরোপুরি একমত হয়নি যে, পিউপেরাল জ্বরের ঘটনা মৃতদেহের সংস্পর্শ থেকে আসা সংক্রমণের কারণে ঘটছে। লার্নার ব্যাখ্যা করে বলেন, এটা মাথায় রাখতে হবে যে তিনি (সেমেলউইজ) কি বলেছেন-যদিও সরাসরি বলা হয়নি- মেডিকেল শিক্ষার্থীরা এই নারীদের মেরে ফেলছে, এবং এটা মেনে নেয়া তো খুব কঠিন ছিল" । এই বিষয়ে প্রকাশ করা একটি বইয়ের প্রচুর নেতিবাচক পর্যালোচনার পর, সেমেলউইজ তার সমালোচকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং যেসমস্ত চিকিৎসক হাত পরিষ্কার করতেন না তাদেরকে "ঘাতক" বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। অত:পর ভিয়েনা হাসপাতালের সাথে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পর তা পুনরায় নবায়ন না হলে, সেমেলউইজ নিজ দেশ হাঙ্গেরিতে ফিরে যান। এরপর বুদাপেস্টের একটি হাসপাতালে তিনি প্রসূতি-বিদ্যা বিভাগে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে অবৈতনিক পদে যোগ দেন। সেখানে এবং ইউনিভার্সিটি অব পেস্ট-এর মেটার্নিটি বিভাগে কাজ করেন। সেখানে তিনি পিউপেরাল জ্বরের বিস্তার নিয়ে শিক্ষা দেন। কিন্তু তার তত্ত্বের সমালোচনা থামলো না, এবং তার প্রবর্তিত পদ্ধতি অনুসরণের বিষয়ে সহকর্মীদের অনীহা সেমেলউইজের ক্রোধ বাড়িয়ে দেয়। ১৮৬১ সাল নাগাদ তার আচরণে অসঙ্গতি দেখা দেয় এবং চার বছর পরে সেমেলউইজকে মানসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। অস্ত্রোপচারের আগে ক্লোরিনযুক্ত পানিতে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিতেন ইগনাজ সেমেলেইউজ। একজন সহকর্মী তাকে একটি নতুন একটি মেডিকেল ইন্সটিটিউট দেখানোর নাম করে ভিয়েনিজ অ্যাসাইলামে রেখে আসে। যখন সেমেলউইজ বিষয়টি বুঝতে পারলেন তখন তিনি সেখান থেকে পালাতে চেষ্টা করেন, কিন্তু কারারক্ষীরা তাকে পরিয়ে দেয় স্ট্রেটজ্যাকেট (ভয়ংকর কোন অপরাধী অথবা মানসিক রোগী যাতে অন্যকে আঘাত করতে না পারে সেজন্য বিশেষ পোশাক)। এবং এরপর তাকে অন্ধকার সেলের ভেতর আটকে রাখা হয়। তার ডান হাতের ক্ষত থেকে সংক্রমণ হয়। এবং দুই সপ্তাহ পরেই মারা যান ৪৭ বছর বয়সী সেমেলউইজ। কেবলমাত্র মৃত্যুর পরেই কিছুটা স্বীকৃতি মিলেছে সেমেলউইজের। শেষপর্যন্ত লুই পাস্তুর, জোসেফ লিস্টার এবং রবার্ট কোচ যে পরিবর্তনের পথ-প্রবর্তক সেখানে সেমেলউইয হয়তো তেমন কোনও ভূমিকা পালন করতে পারবেন না। যাই হোক পরবর্তীতে সেমেলউইজ পুনর্বাসিত হয়েছেন যেভাবে: বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণ ঠেকানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়গুলোর একটি হিসেবে হাত ধোয়া এবং পরিচ্ছন্ন রাখার গুরুত্ব ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। হাত ধোয়ার গুরুত্ব তুলে ধরায় কিভাবে ১৯ শতকের এক ডাক্তারকে একঘরে এবং উন্মাদ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছিল | সেটা ছিল ছিল এমন দুনিয়া যেখানে জীবাণু সম্পর্কে সামগ্রিক কোনও ধারণা ছিল না আর হাসপাতালগুলোকে মনে করা হতো "মৃত্যুর ঘর"। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | কয়েকটি দেশে এর মধ্যেই করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে কিন্তু এখন কী হচ্ছে? মাত্র ১০ মাস পরেই কিছু দেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু হয়ে গেছে, আর এসব ভ্যাকসিন যারা তৈরি করেছে - সেই কোম্পানিগুলোর নাম এখন লোকের মুখে মুখে ফিরছে। এর ফলে, বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন যে কমপক্ষে দু-তিনটি ভ্যাকসিন-উৎপাদক কোম্পানি - আমেরিকার মডার্না, জার্মানির বায়োএনটেক এবং তাদের অংশীদার বৃহৎ আমেরিকান কোম্পানি ফাইজার - এরা আগামী বছর সম্ভবত শত শত কোটি ডলার অর্থ আয় করতে চলেছে। কিন্তু এর বাইরে ভ্যাকসিন-উৎপাদকরা ঠিক কত টাকা কামাবে তা এখনো ঠিক স্পষ্ট নয়। বলা হচ্ছে, এই ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়ায় যেভাবে অর্থসংস্থান করা হয়েছে এবং যতগুলো ফার্ম এই উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছে - তাতে বড় অংকের মুনাফা করার সুযোগ হয়তো খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না। ভ্যাকসিন তৈরির এই দৌড়ে অর্থসংস্থান করেছে কে? ভ্যাকসিনের প্রয়োজন ছিল জরুরি। তাই বিভিন্ন দেশের সরকার এবং দাতারা টিকা তৈরি এবং তার পরীক্ষার প্রকল্পগুলোতে কোটি কোটি পাউণ্ড পরিমাণ অর্থ ঢেলেছে। গেটস ফাউণ্ডেশনের মত দাতব্য সংস্থাগুলোও এতে অর্থ-সহায়তা দিয়েছে, এমনকি আমেরিকান কান্ট্রি মিউজিক তারকা ডলি পার্টন এবং আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা-র মতো অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও অর্থ দিয়েছেন। কোভিডের টিকা আবিষ্কারে কে কত অর্থ ব্যয় করেছে বৈজ্ঞানিক উপাত্ত বিশ্লেষণকারী কোম্পানি এয়ারফিনিটি বলছে, সব মিলিয়ে সরকারগুলো দিয়েছে ৬৫০ কোটি পাউন্ড। এ ছাড়া অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে প্রায় ১৫০ কোটি পাউণ্ড। কোম্পানিগুলো নিজেরা বিনিয়োগ করেছে মাত্র ২৬০ কোটি পাউণ্ড - তবে এর মধ্যে অনেকে আবার বাইরের তহবিলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কোভিডের ভ্যাকসিনে বিনিয়োগের পেছনে ফার্মগুলোর জটিল হিসেব বড় ফার্মগুলো কেন ভ্যাকসিন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে তাড়াহুড়ো করেনি তার বেশ কিছু কারণ আছে। অতীতে দেখা গেছে, বিশেষ করে জরুরি স্বাস্থ্য সংকটের সময় টিকা তৈরি করাটা খুব একটা লাভজনক হয়নি। কারণ এই টিকা উদ্ভাবন করতে অনেক সময় লাগে, তা ছাড়া এটা যে কাজ করবে তার নিশ্চয়তাও কম। দরিদ্র দেশগুলোয় বিপুল পরিমাণ টিকা সরবরাহ করা হয়, কিন্তু তাদের উচ্চ মূল্য দেয়ার আর্থিক সঙ্গতি নেই। তা ছাড়া টিকা দিতে হয় মাত্র একবার কি দু'বার। অন্যদিকে যেসব ওষুধের চাহিদা ধনী দেশগুলোতে বেশি এবং যেগুলো প্রতিদিন নিতে হয় - তা উৎপাদন করে অর্থ আয়ের সুযোগ অনেক বেশি। জিকা বা সার্স ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য যেসব কোম্পানি কাজ শুরু করেছিল তারা সেটা করতে গিয়ে একবার হাত পুড়িয়েছে। বিভিন্ন টিকা বিক্রি হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দামে অন্যদিকে ফ্লু'র টিকার প্রতি বছর কয়েকশ কোটি ডলারের বাজার রয়েছে। এ ছাড়াও আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে ফ্লুর মতই কোভিড-১৯ পৃথিবীতে অনেক দিন স্থায়ী হবে, এবং তা থেকে রক্ষার জন্য বছরে বছরে 'বুস্টার' টিকা নিতে হবে। তার মানে হলো - যে ফার্ম সবচেয়ে কার্যকর এবং সবচেয়ে সাশ্রয়ী ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবে - তা ততই লাভজনক হবে। ভ্যকসিনের কত দাম নিচ্ছে কোম্পানিগুলো? বেশি কিছু কোম্পানি - বিশেষ করে যারা বাইরে থেকে অর্থায়ন পেয়েছে - তারা এটা দেখাতে চায় না যে একটা বৈশ্বিক সংকট থেকে তারা মুনাফা করছে। বৃহৎ আমেরিকান ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি জনসন এ্যান্ড জনসন, এবং যুক্তরাজ্যের এ্যাস্ট্রাজেনেকা (যারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানির সাথে কাজ করছে) - তারা তাদের উৎপাদনমূল্যটুকু পুষিয়ে যাবে এমন দামে ভ্যাকসিনটি বিক্রি করার অঙ্গীকার করেছে । এ্যাস্ট্রাজেনেকা এখন প্রতিটি টিকা ৪ ডলার বা ৩ পাউণ্ড দামে বিক্রি করছে - যা সবচেয়ে সস্তা করোনাভাইরাসের টিকা। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: বাংলাদেশে কবে আসছে ভ্যাকসিন? ভ্যাকসিন নিতে মানুষের আগ্রহ কতটা? হাসপাতালগুলো ফিরিয়ে দিল, মানুষ দুটি শেষ পর্যন্ত মরেই গেল করোনার পর যেভাবে চীনের অর্থনীতি আবার পুরো সচল মডার্না নামের একটি ছোট বায়োটেকনোলজি ফার্ম তাদের টিকার যে দাম ধার্য করেছে তা অনেক বেশি - প্রতি ডোজ ৩৭ ডলার পর্যন্ত। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে এই ফার্মের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কিছু মুনাফা করা। তবে তাদের ভ্যাকসিনটি অত্যন্ত ঠাণ্ডা অবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতে হয়, এবং সেই খরচ টিকার দামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এর মানে অবশ্য এই নয় যে এই টিকার দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে। সাধারণত ফার্মসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো একেক দেশে একেক দামে টিকা বিক্রি করে - সাধারণত সরকারগুলোর কত দামে কেনার সাধ্য আছে তার ওপর এটা নির্ভরশীল। এ্যাস্ট্রাজেনেকা অঙ্গীকার করেছে যে যতদিন মহামারি আছে ততদিন তারা টিকার দাম কম রাখবে। তার মানে হচ্ছে আগামী বছরই এর দাম বেড়ে যেতে পারে। তবে তা নির্ভর করে মহামারির গতি কোন দিকে যায়। বার্কলের ইউরোপিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণার প্রধান এমিলি ফিল্ড বলছেন, এমুহূর্তে ধনী দেশের সরকারগুলো ভ্যাকসিনের জন্য চড়া দাম দেবে - কারণ তারা চাইছে মহামারির অবসান ঘটাতে এখন যাই পাওয়া যায় তাই কিনে ফেলতে । তবে তিনি বলছেন, পরে যখন আরো নানা ভ্যাকসিন বাজারে চলে আসবে তখন প্রতিযোগিতার কারণেই দাম অনেক কমে যাবে। ফাইজার টিকা তৈরিতে বাইরের সাহায্য নেয়নি, কিন্তু বায়োএনটেক জার্মান সরকারের সহায়তা নিয়েছে তবে এ সময়টার মধ্যে যে প্রাইভেট ফার্মগুলো - বিশেষ করে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো যাদের অন্য কোন কিছু বিক্রি করার নেই - তারা লাভের কথা না ভেবেই ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে এমনটা আশা না করাই ভালো - বলছেন রাসমুস বেখ হ্যানসেন, এয়ারফিনিটির প্রধান নির্বাহী। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, এসব কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই বেশ খানিকটা ঝুঁকি নিয়েছে, দ্রুত কাজ করেছে এবং গবেষণা ও উৎপাদন খাতে বড় অংকের বিনিয়োগও করেছে। ফলে ভবিষ্যতে তাদের নতুন আবিষ্কার করতে হলে তাদের পুরষ্কার দরকার - বলছেন মি. হ্যানসেন। তবে কেউ কেউ যুক্তি দেন, এই সংকটের আকার এত বড় ছিল এবং সরকারগুলো এত অর্থ ব্যয় করেছে যে একে স্বাভাবিক ব্যবসার উপযুক্ত সময় বলা যায় না। তাদের কি প্রযুক্তি বিনিময় করা উচিৎ? যেহেতু সংকট এত গুরুতর ছিল, তাই অনেকে আহ্বান জানিয়েছেন যে ভ্যাকসিনের পেছনের যে প্রযুক্তিগত জ্ঞান তা সমন্বয় করা উচিত যাতে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মত দেশগুলোতে অন্যান্য ফার্মগুলো তাদের নিজেদের বাজারের জন্য ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারে। মেডিসিন্স ল' এ্যান্ড পলিসি নামে একটি গবেষণা সংস্থার পরিচালক এলেন টি হোন বলছেন, "সরকারি অর্থায়নের একটা শর্তই হওয়া উচিত ছিল এ ব্যাপারটা। কোন রকম শর্ত ছাড়াই এ পরিমাণ অর্থ তাদেরকে দেয়াটা সুবিবেচনার কাজ হয়নি।" তিনি বলছেন, বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো প্রথমে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে যোগ দিতে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু যখন সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা অর্থায়নের অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে এলো - তখনই তারা কাজ শুরু করেছিল। সবচেয়ে বেশি টিকার অর্ডার পেয়েছে অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকা তাই সেই গবেষণার ফল থেকে শুধু তারা কেন মুনাফা করবে - এ প্রশ্ন করেন তিনি। "ওই আবিষ্কারগুলো এখন কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হচ্ছে, এই জ্ঞান অন্য কাউকে দেয়া হবে কিনা তার নিয়ন্ত্রণও এসব কোম্পানির হাতেই" - বলছিলেন তিনি। তার মতে, এ ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের যতটুকু বিনিময় হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো কি বিশাল অংকের মুনাফা করবে? বিভিন্ন দেশের সরকার এবং বহুজাতিক সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই শত শত কোটি ডোজ টিকা নির্ধারিত মূল্যে কেনার অঙ্গীকার করেছে। তাই আগমিী কয়েক মাসে ফার্মগুলো চেষ্টা করবে কত দ্রুত এই অর্ডারগুলো সরবরাহ করা যায়। যারা ধনী দেশগুলোর কাছে ভ্যাকসিন বিক্রি করবে তারা তাদের বিনিয়োগ থেকে লাভ করতে শুরু করবে। কিন্তু এ্যাস্ট্রাজেনেকার মত কোম্পানি সবচেয়ে বেশি ডোজ টিকা সরবরাহ করার চুক্তি করলেও - তারা তাদের খরচ উঠিয়ে নিতে পারবে মাত্র - তার চেয়ে বেশি কিছু পাবে না। প্রথম চুক্তিগুলো অনুযায়ী ভ্যাকসিন সরবরাহের পর পরিস্থিতি কি হবে তার পূর্বাভাস দেয়া মুশকিল। এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে, যেমন - ভ্যাকসিন নেবার পরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন স্থায়ী হবে, কতগুলো টিকা সাফল্য পাবে, উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা কত সুষ্ঠুভাবে কাজ করবে। এমিলি ফিল্ড মনে করেন - মুনাফা করার সুযোগ হবে খুবই সাময়িক। ভবিষ্যতে হয়তো সরকারগুলো মহামারি প্রতিরোধে আরো বেশি ব্যয় করবে তা ছাড়া প্রথম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারীরা যদি তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বিনিময় না-ও করে, মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে ৫০টিরও বেশি ভ্যাকসিন এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। মিজ ফিল্ড বলেন, "দু বছরের মধ্যে এমন হতে পারে যে বাজারে অন্তত ২০টি টিকা এসে যাবে। তখন এর জন্য চড়া দাম হাঁকা খুব কঠিন হয়ে যাবে।" তার মতে, দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানির সুনাম একটা বড় ভুমিকা পালন করতে পারে। সফল ভ্যাকসিন হয়তো কোভিড থেরাপি বা অন্য কোন সামগ্রী বিক্রির পথও খুলে দিতে পারে। সেদিক দিয়ে বিচার করলে, এয়ারফিনিটির রাসমুস বেখ হ্যানসেন মনে করেন - পুরো শিল্পই হয়তো এতে লাভ করবে। হয়তো এই মহামারিজনিত সংকটের 'রূপোলি রেখা' এটিই। তিনি মনে করেন, সরকারগুলো হয়তো মহামারি দমনের কৌশলের ক্ষেত্রে সেভাবেই বিনিয়োগ করবে, যেভাবে এখন তারা প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করে। আরএনএ প্রযুক্তির সাফল্য আরেকটি আশার কথা হলো, শেয়ারবাজারে মডার্না ও বায়োএনটেকের মূল্য যেভাবে বেড়েছে - তার একটা কারণ হলো তাদের আরএনএ প্রযুক্তির একটা প্রমাণ মিলেছে তাদের আবিষ্কৃত টিকার মধ্যে দিয়ে। "এর কার্যকারিতা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়েছেন, এবং এটা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে" - বলেন এমিলি ফিল্ড। কোভিডের আগে বায়োএনটেক ত্বকের ক্যানসারের একটি টিকার ওপর কাজ করছিল। আর মডার্না কাজ করছে ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের একটি আরএনএ-ভিত্তিক টিকা আবিষ্কারের জন্য। এগুলোর কোন একটি যদি সফল হয় - তাহলে তাদের অর্জন হবে বিরাট। করোনা ভাইরাস: টিকা উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেয়া তুর্কী বংশোদ্ভূত জার্মান মুসলিম দম্পতি | করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতেই সবাইকে সতর্ক করা হয়েছিল যে টিকা তৈরি করতে অনেক বছর সময় লেগে যায় - তাই খুব দ্রুত কিছু পাওয়ার আশা যেন আমরা না করি। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের পরিচয় থেকে দেখা যায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন ভিকটিম হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম আহমেদ বলেন, "সমাজকে যারা পরিবর্তন করার জন্য চেষ্টা করেন বা ভূমিকা রাখেন তাদের একজন প্রতিনিধিকেই সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে পুরো কমিউনিটিতেই একটা আতঙ্ক কাজ করছে।" মোহাম্মদ রায়হান বলছিলেন, "যারা ফেরত আসছেন বোঝা যাচ্ছে তারা নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। গুম হওয়ার আগের মানুষটার সঙ্গে ফিরে আসা মানুষটার আকাশ তাল পার্থক্য দেখা যায়। তাদের মোটিফটা হচ্ছে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। আর এক্ষেত্রে তারা কিছুটা হলেও আতঙ্ক আমাদের মধ্যে সৃষ্টি করতে পেরেছে।" এ বছর যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের পরিচয় থেকে দেখা যায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন ভিকটিম হয়েছে। নিখোঁজ যারা হয়েছে তার মধ্যে একটা বড় অংশ হচ্ছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এছাড়া ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিক, প্রকাশক, কুটনীতিক, ব্যবসায়ী, ব্যাংকারসহ পেশাজীবারা নিখোঁজ হয়েছেন। যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের পরিচয় থেকে দেখা যায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন ভিকটিম হয়েছে মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলছেন, বাংলাদেশে গত এক দশকে কমপক্ষে সাড়ে পাঁচশ মানুষ গুম অপহরণের শিকার হয়েছেন। "একটা পরিবর্তন এসেছে ধরার ক্ষেত্রে। আগে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিচয় দেয়া হতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে এসেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাচ্ছি। পরে তাকে ডিনাই করা হতো। এবং বাসা থেকে, অফিস থেকে, পরিচিত জায়গা থেকে, কোনো ক্ষেত্রে রাস্তা থেকে অপহরণ করা হতো। সাম্প্রতিকালে আমরা লক্ষ্য করছি যে অপহরণ প্রক্রিয়ায় একটা পরিবর্তন এসেছে। সেটা হচ্ছে, অতি সংগোপনে এ কাজটি করা হচ্ছে যাতে কোনো সাক্ষী না থাকে, যাতে কোনো মানুষ সাক্ষ্য দিতে না পারে।" এ পরিবর্তনের পেছনে যুক্তি কী হতে পারে সেটি তুলে ধরে মি. লিটন বলেন, "এনফোর্সড ডিজএপিয়ারেন্স এর ব্যাপারে জাতিসংঘের যে নিয়ম-কানুন আছে, কনভেনশনগুলো আছে সেখানে ধারা উপধারায় যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা আছে সেই সংজ্ঞার মধ্যে যাতে এ বিষয়গুলো না পড়ে এই ধরনের একটা প্রবণতা লক্ষ্য করছি কৌশল হিসেবে গ্রহণ করার।" মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বাংলাদেশে গুম পরিস্থিতির একজন পর্যবেক্ষক। অপহরণ কিংবা গুমের শিকার হয়ে জীবিত ফিরে আসা অন্তত ২০ জনের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে তিনি কথা বলেছেন। আরো পড়ুন: নিখোঁজ ব্যক্তিরা ফেরার পর চুপ থাকেন কেন? 'তুই চলে যা, পেছনে তাকাইলে মাইরা ফালামু' 'জঙ্গলের মধ্যে টিন-শেড ঘরে আমাকে আটকে রাখে' মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বাংলাদেশে গুম পরিস্থিতির একজন পর্যবেক্ষক মি. লিটন বলছেন, "এখন যারা ফিরে আসছেন তারা প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। এবং তাদের বক্তব্যে এক ধরনের ভীতির ছাপ আছে। বডি ল্যাংগুয়েজ এক ধরনের বার্তা দেয় যে এখনো তারা মুক্তভাবে কথা বলতে পারছেন না। এই বার্তাটি পড়া যায় তাদের বাহ্যিক আচরণে। এবং তারা যেসমস্ত কথাবার্তা বলেন সেগুলো খাপছাড়া। কেউ কেউ প্রথমে যে কথাগুলো বলেন পরবর্তীতে সে জায়গা থেকে সরে আসেন। তার মানে হচ্ছে এমন একটা গোষ্ঠী বা এমন একটা গ্রুপ এর সাথে জড়িত তারা আমাদের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।" এদিকে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে গত দশবছরে সাড়ে পাঁচ'শ মানুষ নিখোঁজ বা গুম হয়েছেন। নিখোঁজ এসব মানুষের পরবর্তী পরিণতি সম্পর্কে তাদের যে ক্যাটাগরি সেখানে দেখা যায়, কাউকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। কয়েকজন কে ডিবি অফিসে পাওয়া গেছে। হারিয়ে যাওয়া মানুষদের কারাগারে প্রেরণ করার তথ্য রয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরবর্তী সময়ে র্যাব হাজির করেছে। এছাড়া অপহরণ বা গুমের শিকার বেশ কয়েকজনকে পরে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গুমের ঘটনায় প্রায় সবক্ষেত্রেই কোনো না কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে পুলিশের এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশন্স সহেলী ফেরদৌস বলেন, "পুলিশ বাহিনীর মধ্যে একমাত্র ডিবি সাদা পোশাকে গ্রেফতার করে থাকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ইউনিট এবং থানা এ বিষয়টি অবগত থাকে। তবে পুলিশের কোনো সদস্য ক্রাইমের উদ্দেশ্যে ডিবি পরিচয়ে যদি কিছু করে থাকে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এরকম ব্যবস্থা নেয়াও হয়েছে।" পুলিশের এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশন্স সহেলী ফেরদৌস তবে মিস ফেরদৌস বলছেন, অন্য কোন বাহিনী বা ডিবির নামে কেউ যদি এরকম কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে তার দায় পুলিশ নেবে না। বাংলাদেশে নিখোঁজ ব্যক্তিদের কারা ধরে নিচ্ছে বা কোথায় রাখা হচ্ছে তার কোনো স্পষ্ট জবাব মেলে না কখোনোই। এ কারণে উৎকণ্ঠা এবং উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। নূর খান লিটন বলেন, "সবকিছু দেখে যারা গুম করছেন বা অপহরণ করছেন তারা তারা দক্ষ, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে তাদের সেইফ হাউস আছে। যে ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন এবং যে ধরনের পারিপার্শ্বিকতা আমরা লক্ষ্য করছি সেখানে আমাদের সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে চলমান ইনভেস্টিগেশনের অংশ হিসেবে তাদের অপহরণ করা হচ্ছে কিনা"। প্রতিবেদনটি এখানেও দেখতে পারেন: | বাংলাদেশে নিখোঁজ এবং গুম পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে সম্প্রতি তিনজন সন্ধান মিলেছে। ২০১৭ সালে বিভিন্ন সময় নিখোঁজ ৫৫ জনের মধ্যে ১২ জনের ফিরেছে বলে খবর পাওয়া যায়। নতুন তিনজনের মধ্যে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান কে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আলোচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান এবং সাংবাদিক উৎপল কে ছেড়ে দেয়া হয়েছে রাতের আধাঁরে। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | রুবা ও ইনারা এখন আইভিএফ পদ্ধতির সাহায্য সন্তান নিতে চান রুবা, যার মাধ্যমে তাদের মিলবে স্বাস্থ্যকর একটি ভ্রূণ । যদিও সাকিব ভরসা রাখতে চাইছেন সৃষ্টিকর্তার ওপর। তবে অনেক আত্মীয়-স্বজন চান এই দুজন আলাদা হয়ে যাক এবং পুনরায় বিয়ে করুক। ব্রিটেনের ব্র্যাডফোর্ডে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা রুবা বিয়ের আগে কেবল দুইবার পাকিস্তানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। প্রথমবার তার বয়স ছিল চার বছর এবং এরপর যখন যায় তখন তার বয়স ছিল বারো বছর। এখন যে মানুষটির সাথে তিনি আবদ্ধ সেই মানুষটির কথাও তিনি সেভাবে স্মরণ করতে পারেনা। তার সাথে কখনো একসাথে সময় কাটাতে পারেননি রুবা। রুবার বয়স যখন ১৭ তখন ছেলেটির বয়স ছিল ২৭ । ছেলেটি চালক হিসেবে কাজ করতেন। আরও পড়তে পারেন: সীমা ও হৃদয়ের জীবন বদলে দিয়েছেন যে ফটোগ্রাফার বিশ্বজুড়ে নারীদের সন্তান জন্ম দেয়া কমে যাচ্ছে? আপনার সন্তান কেবল দুরন্ত নাকি মানসিক সমস্যাগ্রস্থ? এত অল্পবয়সে বিয়ে করার মোটেই ইচ্ছা ছিল না রুবা বিবির। তার ইচ্ছা ছিল এ লেভেল শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার। কিন্তু তিনি তার স্কুল সার্টিফিকেট শেষ করার আগেই পাকিস্তানে তার বাবা মা তার বিয়ে দিয়ে দেন কাজিন সাকিব মেহমুদের সাথে।। "আমি খুবই নার্ভাস ছিলাম কারণ তাকে আমি একটুও চিনতাম না। আমি ছিলাম খুবই লাজুক প্রকৃতির এবং বেশি কথা বলতাম না। ছেলেদের প্রতি আমার কোনও আগ্রহ ছিলনা। আমি শুধু বাবা-মাকে বলেছিলাম আমার স্কুল শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এসব না করতে। " পাকিস্তানে তিন মাসের মাথায় রুবা গর্ভবতী হয়ে পড়লে, দুমাস পর তিনি ব্রাডফোর্ডে ফিরে আসেন। এত দ্রুত সন্তান ধারনের বিষয়টি তাকে বিচলিত করে তোলে, কিন্তু বিষয়টি আবার আনন্দিতও করে তাকে। ২০০৭ সালে যখন তাদের পুত্র হাসানের জন্ম হয় তিনি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে স্বামী সাকিবকে জানান যে সবকিছু ঠিকঠাক আছে। যদিও বাচ্চাটি প্রচুর ঘুমচ্ছিল এবং তাকে খাওয়াতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল। রুবা ভেবেছিলেন "বিষয়টি স্বাভাবিক"। কয়েক সপ্তাহ পরে হাসানকে চেক আপের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান রুবা এবং চিকিৎসক তাকে দেখে নোট করলেন যে হাসানের নিতম্ব অসাড় হয়ে আছে। "তিনি বাচ্চাটিকে রেফার করতে চাইলেন কিন্তু আমি ভেবেছিলাম বিষয়টি মামুলি। তারা কিছু টেস্ট দেন এবং তারপর আমাকে ফোনে বলা হয় পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফলের জন্য শিশু-বিভাগে যেতে"। রুবা বলেন, "টেস্টের রিপোর্ট দেখার পর চিকিৎসক জানান খুব খারাপ খবর আছে। তিনি আমার হাতে একটি লিফলেট দিয়ে বললেন আমার ছেলের এই সমস্যা রয়েছে এবং এটা খুবই বিরল।" "আমার জন্য এটি সহ্য করা ছিল ভয়াবহ ব্যাপার, আমি কেবল কাঁদছিলাম। আমি বাড়িতে ফিরে স্বামীকে পাকিস্তানে ফোন দিলাম, সে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল। বলছিল, সবাইকেই সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং আমরাও আমাদের সমস্যা একসাথে মোকাবিলা করবো।" রুবার কোনো ধারণা ছিলনা যে তিনি এবং তার স্বামী(কাজিন) দুজনের শরীর আই-সেল বা রিসিসিভ জিন (প্রচ্ছন্ন জিন) বহন করছে যা একটি শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। এই ঘটনার সাতমাস পরে সাকিব যুক্তরাজ্যে যাওয়ার ভিসা পান এবং প্রথমবার নিজের ছেলেকে কোলে তুলে নেয়ার সুযোগ হয় তার। "সে বলে বাচ্চাকে দেখে মনে হচ্ছিল স্বাভাবিক একটি শিশু। সে বসতো না বা হামাগুড়ি দিতো না কিন্তু আমার স্বামী বলে, কোন কোন শিশু এসব ক্ষেত্রে দেরিতে করে থাকে।" জানান রুবা। ইনারা মারা যায় দুই বছর বয়সে। কিন্তু সমবয়সী অন্যান্য শিশুদের সাথে মেলালে নিজের বাচ্চার মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখত পেতেন রুবা। হাসানের বৃদ্ধি হচ্ছিল খুব ধীরে ধীরে এবং বুকে ইনফেকশন নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া-আসার মধ্যেই ছিল। এরপর ২০১০ সালে যখন তাদের পরবর্তী শিশুর জন্ম হয় তখন বিভিন্ন পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায় যে তিনিও বিরল আই-সেল রোগে আক্রান্ত। তৃতীয়বারের মত সন্তান ধারণের আগে রুবা লিডসের একজন মুসলিম পীর মুফতি যুবায়ের বাটের কাছে জান পরামর্শ নিতে। জানতে চান , ধর্মীয়ভাবে এমন কি করা যেতে পারে যাতে করে তার গর্ভাবস্থায় আই-সেল সমস্যা থাকলেও তা থেকে রক্ষা করবে তাকে? তিনি তাকে বলেন এমন ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে কিন্তু তাকে(রুবা) আরও সতর্ক হতে হবে। ওই ব্যক্তি তাকে বলেন, "আপনার যদি যেকোনো অবস্থাতেই বাচ্চা মারা যায় অথবা সে যদি দ্রুত মারা না-ও যায়, তবু সে অসুস্থ থাকবে। যথেষ্ট কারণ আছে তার ভেতরে আত্মা প্রবেশের আগে তাকে শেষ করে দিতে হবে।" রুবা সিদ্ধান্ত নেয় যে সে গর্ভপাত ঘটাবে না। ২০১৫ সালে সে যখন তৃতীয় সন্তানে ইনারাকে গর্ভে ধারণ করে, তখন সে মেডিকেল স্ক্যান নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য চিকিৎসকদের অনুরোধ উপেক্ষা করে। "আমি স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার মতো করে বিষয়টিকে দেখাতে চেয়েছি। আমার মাথার ভেতর কোনো সন্দেহ ঢুকতে দিতে চাইনি। আমি অ্যাবরশন করাতে চাইছিলাম না, তাই আমি প্রেগন্যান্সিকে এনজয় করতে চাইছিলাম।" "আমি আমার স্বামীকে বলেছিলাম এই শিশুটিও অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি আছে। সে বলে, " বেশ। আমার মনে হয় সে বিষয়ে সন্দেহ আছে- আমি জানতাম খারাপ যা কিছু ঘটবে তা আমাদের দুজনের জন্যই সমান।" রুবা ও সাকিব দম্পতির প্রথম সন্তান হাসাম কিন্তু ইনারাও জন্ম নিল আইসেল ডিজঅর্ডার নিয়ে। "আমি সত্যিই খুশি হয়েছিলাম যে আমি একটি সন্তান পেয়েছি কিন্তু যখন তাকে দেখলাম আমরা যেন কিছুটা বুঝতে পারি। আমি দুঃখিত এবং হতাশ হয়ে গেলাম, আমরা একটা সুস্থ বাচ্চা আশা করেছিলাম। আমি জানতাম না কতটা কষ্টের মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হবে, কিন্তু আমার স্বামী খুশি ছিল। প্রায় এক বছর আগে ইনারা মারা গেল, দু বছর বয়সে। গত ডিসেম্বরে চেস্ট ইনফেকশনের কারণে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে দ্রুত তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। "ইয়র্কের চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে শতভাগ চেষ্টা করেছেন। আমি আশা নিয়ে থাকলো দেখতে পাচ্ছিলাম তার কত কষ্ট। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে অচেতন রাখা হয়েছিল। বেশিরভাগ সময় আমি তাকে আমার হাতে ধরে রাখতাম।, তারপর তার পাশে শুয়ে থাকতাম। আমার স্বামী বুঝে গিয়েছিল যে সে তার জীবনের শেষ নি:শ্বাসটুকু নিচ্ছিল।" এই দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান আলীসাবাহ ছয়টি মিসক্যারেজ এবং তিনটি শিশু মৃত্যুর শোকে হতবিহবল রুবা, ইনারার মৃত্যুর শেষদিকে আবারও গর্ভবতী ছিলেন কিন্তু সেটাও তিনি বুঝতে পারেননি। তিনি জানান ইনারার মৃত্যুর পর তার বাচ্চাদের দুর্ভাগ্য এবং কাজিনকে বিয়ের বিষয়টির মধ্যে একটা যোগসূত্র খুঁজে পান রুবা। কাজিনদের মধ্যে বিয়ে ২০১৩ সালে চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল ল্যাঞ্চেট একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়, ব্র্যাডফোর্ডে জন্ম নেয়া ৬৩% পাকিস্তানি মায়েদের কাজিন অর্থাৎ চাচাতো-মামাতো-খালাতো ভাইদের মত নিকটাত্মীয়দের সাথে বিয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ হতে দেখা যায় এবং তাদের জন্মগত বৈকল্য নিয়ে শিশু জন্মদানের ঝুঁকি দ্বিগুণ। জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেয়া শিশু বিশেষ করে হার্টের কিংবা নার্ভের সমস্যা নিয়ে জন্ম হার রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে এখনো অল্প কিন্তু তা ৩% থেকে বেড়ে ৬% হয়েছে। বাবার সাথে ইনারা ইনারার মৃত্যুর পর ব্রিটেনে নিজেদের আত্মীয়রা রুবা এবং সাকিবকে সুস্থ সন্তান পাওয়ার জন্য একে অপরের কাছ থেকে স্বেচ্ছায় বিচ্ছেদের পথ বেছে নেয়ার উপদেশ দিতে থাকেন। এর মাধ্যমে দুজনের পুনরায় বিয়ে করার এবং অন্য কারো সাথে সংসার করে সুস্থ শিশু জন্মদানের সুযোগ হবে -তাদের যুক্তি। "আমরা বলেছি না" রুবা বলেন, "আমার স্বামীর বক্তব্য হল 'সৃষ্টিকর্তা যদি সন্তান দিতে চান তাহলে তোমার মাধ্যমেই দিতে পারবেন। তিনি তোমার মাধ্যমে আমাকে বাচ্চা দিয়েছিলেন, তিনিই তোমার মাধ্যমে সুস্থ বাচ্চা দিতে পারবেন। না আমি আবার বিয়ে করছি, না তুমি।" যদিও ২০০৭ সালে রুবা বিয়ে করতে অনিচ্ছুক থাকলেও সেই বিয়ের ১০ বছর পরে এসে তিনি বিচ্ছিন্ন হতে চান না। "বাচ্চার জন্য স্বজনরা আমাদের আপোষে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। কিন্তু তার সাথে সুস্থ সন্তান হলে সেই অনুভূতি আর অন্য আরেকজনের সাথে বিয়ে করে বাচ্চা হলে কি একই অনুভূতি হবে? সন্তান হয়তো পাবো কিন্তু সুখী বিবাহিত জীবন নয়।" এখন তাদের সামনে একটাই সম্ভাবনা-আইভিএফ। এটার মাধ্যমে চিকিৎসকরা ভ্রূণের অবস্থা পরীক্ষ করতে পারবেন, এতে তারা আই-সেল ডিজিজকে রিজেক্ট করে রুবার পেটে স্বাস্থ্যকর ভ্রূণ স্থাপন করতে পারবেন। রুবা যদিও বলেন, তার স্বামী সাকিব এই বিষয়টিতে বিশ্বাসী নন। তিনি ভরসা রাখতে চান সৃষ্টিকর্তার ওপরে। তবে অপেক্ষা করে সময় নষ্ট করতে চাননা রুবা। রুবা জানেন না সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে। এই দম্পতির করুন কাহিনী পরিবারের মধ্যে অন্য অনেকের কাজিন ম্যারিজ বা রক্তের সম্পর্কের নিকটাত্মীয়র মাঝে বিয়ের বিষয়ে অনীহা তৈরি করেছে এমনকি রুবার নিজের ভাই এ ধরনের বিয়েকে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। | রুবা এবং সাকিব- এই দম্পতি তাদের শরীরে এমন এক জিন বহন করছেন যার ফলে তাদের শিশু শৈশবেই মৃত্যুর তীব্র ঝুঁকিতে ছিল । এরইমধ্যে তারা তিনটি শিশুকে হারিয়েছেন। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম সরকারের সাথে সমঝোতা করে এখন থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে, গণভবনে আলেমদের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপ্রিম কোর্টের সামনে ভাস্কর্য স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেন। ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলতে হেফাজতে ইসলাম যে দাবি তুলেছিল, তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, "সুপ্রিম কোর্টের সামনে মূর্তি আমিও পছন্দ করিনি।" ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমদ শফীসহ কওমী মাদ্রাসার নেতৃবৃন্দ। হেফাজত নিয়ে কী অবস্থান সরকারের? হেফাজত ও আওয়ামী লীগ সখ্যতা: শুধু ভোটের জন্য? প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর হেফাজতে ইসলাম নেতাদের চোখেমুখে দৃশ্যত এক ধরনের প্রশান্তি দেখা গিয়েছিল, যা ফুটে উঠেছিল টেলিভিশনের পর্দায়। একই অনুষ্ঠানে কওমী মাদ্রাসার 'দাওরায়ে হাদিস' শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার মাস্টার্সের সমান মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। হেফাজতে ইসলামের আমীর ও চট্টগ্রামের প্রভাবশালী হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক পরিচালক আহমদ শফী গত শুক্রবারে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার আগে ছাত্র আন্দোলনের মুখে তিনি মাদ্রাসায় তার পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, হেফাজতে ইসলামের সাথে সংঘাতে জড়াতে চাননি শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের পর থেকে গত সাত বছরে হেফাজতে ইসলামের বেশ কিছু দাবি কার্যতঃ সরকার মেনে নিয়েছে। তবে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দাবির প্রতি সরকার কর্ণপাত করেনি। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ণ, নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি দানের ব্যবস্থা করা এবং প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। এছাড়া 'কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা' করার দাবিও সরকার আমলে নেয়নি। কিন্তু তারপরেও ইসলামপন্থী এই সংগঠনের ভেতরের অনেকেই মনে করেন, ওই সময়ের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের নেতা হিসেবে আহমদ শফী যতগুলো দাবি সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাতে সক্ষম হয়েছেন, সেটি অতীতে কখনো হয়নি। ক্ষমতাসীনদের সাথে সমঝোতা করেই হোক আর চাপ প্রয়োগ করেই হোক, হেফাজতের দাবি মানাতে সক্ষম হয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত আমীর আহমদ শফী। বিবিসি বাংলাকে দেয়া ২০১৭ সালের মার্চ মাসের এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম স্বীকার করেছিলেন যে হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারের এক ধরণের আপোষ হয়েছে। "রাজনীতিতে বলুন, সরকার পরিচালনায় বলুন, সবসময়ই ছোটখাটো অনেক সময় আপোষ করতে হয় বৃহত্তর স্বার্থে। যেমন, এর আগে নারী নীতি নিয়ে কথা হয়েছিল। তখন আমি নিজেই আলেম-ওলামাদের সঙ্গে বসেছি, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি," বলছিলেন মি. ইমাম। তিনি বলেন, "তারপর শিক্ষানীতি নিয়ে যখন কথা হয়েছে, তখন আমাদের সরকারের থেকে ক্যাবিনেটেই সিদ্ধান্তই নেয়া হয়েছে যে এই নীতিমালাগুলোতে এমন কিছুই থাকবে না, যেটি শরিয়া পরিপন্থী, কোরান হাদিসের পরিপন্থী। আসলে থাকেওনি।" "তার ফলে বিষয়টিকে বলতে পারি, ডিফিউজ করা হয়ে গেছে। না হলে এটা একটা খারাপ রূপ ধারণ করতে পারতো। ঐ সুযোগটি তো আমরা দেবো না।" বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, হেফাজতে ইসলাম যেসব দাবি উত্থাপন করেছিল, সেগুলোর মধ্য দিয়ে আহমদ শফী কার্যত বাংলাদেশে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং গতিপ্রকৃতিতে একটি পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন। ঢাকার শাপলা চত্বরে একটি সমাবেশ আয়োজনের মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলামের উত্থান হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে তাদের খুব বেশি সময় লাগেনি। 'নাস্তিক ব্লগারদের' শাস্তির দাবিতে হেফাজতে ইসলাম শুরুতে মাঠে নামলেও বেশ দ্রুত তাদের দাবির সংখ্যা বাড়তে থাকে। সবচেয়ে আলোচিত ছিল তাদের ১৩ দফা দাবি, যেগুলো সরাসরি পূরণ না হলেও পরবর্তীতে সরকার এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যেগুলো হেফাজতে ইসলামের দাবির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করেন অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক। কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা সরকার কর্তৃক স্বীকৃতির জন্য সেই ১৯৯০ সাল থেকেই দাবি তুলেছিল মাদ্রাসাগুলো। কিন্তু ওই দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে এসে সরকারের তরফ থেকে কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমানের হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন নেতা আহমদ শফীর সমঝোতার কারণেই সেটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয়। হেফাজতে ইসলামের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আহমদ শফীর সাথে সরকারের সমঝোতা হয়েছে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড কেন্দ্রিক। "কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি যেভাবে আহমদ শফী সাহেব চেয়েছেন, সরকার প্রধান সেটাই করেছেন," বলেন সাখাওয়াত হোসেন। যেভাবে কওমি ধারার একক নেতায় পরিণত হয়েছিলেন আহমদ শফী তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান বলেন, হেফাজতে ইসলামের দাবি অনুযায়ী কওমী মাদ্রাসার ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। বরং তাঁর মতে, কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা আধুনিকায়ন করার জন্যই এই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। "আমরা ভেবেছি যে কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তরকে যদি স্বীকৃতি দেয়া হয়, তাহলে এই শিক্ষাব্যবস্থার অন্য স্তরগুলোতে তারা আধুনিক সিলেবাস আনবে। তারা ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সাথে আধুনিক শিক্ষায়ও শিক্ষিত হবে," বলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। হেফাজতে ইসলামের দাবির পর সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়া হয় ভাস্কর্য অপসারণ সুপ্রিম কোর্টের সামনে ২০১৭ সালে যে ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল, সেটিকে সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে হেফাজতে ইসলাম আন্দোলন শুরু করে। এ পর্যায়ে হেফাজতে ইসলামের দাবির প্রতি সমর্থন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ওই ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে সরিয়ে পেছনের দিকে স্থাপন করা হয়। নারী উন্নয়ন নীতি: ২০১১ সালে সরকার একটি নারী উন্নয়ন নীতিমালা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখে সেটির বাস্তবায়ন স্থগিত হয়ে যায়। এ নিয়ে সরকার আর অগ্রসর হয়নি। নীতিমালায় সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারীদের সমঅধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। হেফাজতের ইসলামের বক্তব্য ছিল, এটা কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী। পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন ২০১৬ সালে হেফাজতে ইসলাম অভিযোগ করেছিল যে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী ভাবধারা বাদ দিয়ে 'নাস্তিক্যবাদ এবং হিন্দুত্ব পড়ানো হচ্ছে।' সংগঠনটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে 'ইসলামী ভাবধারার' ১৭টি বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সাতটি নতুন কবিতা এবং গল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেগুলো ছিল, সংগঠনটির মতে, 'ইসলামী ভাবধারার বিপরীত'। সব মিলিয়ে হেফাজতে ইসলামের তরফ থেকে পাঠ্যপুস্তকে ২৯টি বিষয় সংযোজন এবং বিয়োজনের দাবি লিখিতভাবে তুলে ধরা হয়। ২০১৭ সালে যে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করা হয়, সেখানে হেফাজতের ইসলামের দাবি অনুযায়ী মোট ২৯টি লেখার সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে বলে ওই সময়ে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ-হেফাজত মৈত্রী: সেকুলাররা কি ভাবছেন? এ ব্যাপারে মুফতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, "পাঠ্যপুস্তককে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবি হেফাজতের ছিল না। হেফাজতের দাবি ছিল, পাঠ্যপুস্তকে যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা হয়েছিল, সেটাকে বাতিল করে পূর্বের অবস্থায় নিয়ে আসা।" হেফাজতের অর্জন বাংলাদেশকে কোন দিকে নেবে? বাংলাদেশে নাগরিক সমাজের একটি অংশ হেফাজতে ইসলামের তীব্র সমালোচনা করে। তাদের অভিযোগ, হেফাজতে ইসলামকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে সরকার যে ছাড় দিয়েছে, তা ভবিয্যতে বাংলাদেশে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও দেশের গতিপথ পরিবর্তন করে দেবে। এমন সমালোচনাও রয়েছে যে হেফাজতের অনেক দাবি মেনে নেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সমাজে ইসলামীকরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এর পাল্টা যুক্তিও আছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের যে প্রভাব অনেকদিন ধরেই ছিল, সেটি আরও প্রকাশ্য এবং দৃঢ় হয়েছে হেফাজতের ইসলামের উত্থানের মধ্য দিয়ে। শান্তনু মজুমদার, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় "জমিন যদি প্রস্তুত না থাকে, তাহলে এভাবে তো তাদের আচমকা উপস্থিতি সম্ভব নয়," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ও রাজনীতির পর্যবেক্ষক শান্তনু মজুমদার। তিনি স্মরণ করেন যে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের সময় সরকারের বাইরে বড় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সমর্থন দিয়েছিল। তার মতে, রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনা করে হেফাজতে ইসলামের সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংঘাতে জড়াতে চায়নি। "ক্ষমতাসীনরা বুঝতে পারছে যে এই শক্তির সাথে যদি আমি সংঘাতে যাই, তাহলে বাংলাদেশের সমাজের যে অবস্থা, সেই সমাজে আমাদের আরো এক দফা ইসলামবিরোধী হিসেবে ব্র্যান্ডেড হওয়ার ঝুঁকি থাকে। " গত সাত বছরে আহমদ শফীর নেতৃত্বে উত্থাপন করা যেসব দাবি পূরণ হয়েছে, সেগুলো হেফাজতে ইসলামকে বেশ খুশি করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। হেফাজতে ইসলামের অনেক নেতা মনে করেন যে গত সাত বছরে তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হয়েছে 'আদর্শগত দিক' থেকে। মুফতি সাখাওয়াতের মতে, আওয়ামী লীগের সাথে আলেমদের দূরত্ব থাকার কারণে একটা শ্রেণী সরকারের কাঁধে ভর করে 'নাস্তিক্যবাদ পরিচর্যা' করার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, "আমাদের ভয় হয়েছিল যে এদেশে প্রকাশ্যে ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা হবে, টুপি-দাড়ি-হিজাব থাকলে কটাক্ষ করা হবে। এ ধরণের সিচুয়েশন তৈরি করার চেষ্টা করেছিল কিছু মানুষ।" "ওই ষড়যন্ত্রটা কিছুটা হলেও ধূলিসাৎ হয়েছে, নস্যাৎ হয়েছে। এটাই হেফাজতে ইসলামের সবচেয়ে বড় অর্জন।" তবে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক খান বলেন, হেফাজতে ইসলামের যেসব দাবির সুদূর প্রসারী প্রভাব বাংলাদেশে হতে পারতো, সেগুলো সরকারের পক্ষ থেকে মেনে নেয়া হয়নি। "আমরা হেফাজতকে শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে দেখেছি। তারা যখন আমাদের সাথে কথা বলেছে, আমরা সেটা পর্যবেক্ষণ করেছি।" 'ধর্মীয় উন্মাদনা' সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোন দাবি মানা হয়নি বলেও উল্লেখ করেন মি. খান। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: কীভাবে ক্ষুদ্র আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যের এক পরাশক্তি হয়ে উঠছে তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কেন নানা মঞ্চে কাশ্মীর প্রশ্ন তুলছেন কীভাবে একজন স্বৈরশাসককে ক্ষমতা থেকে সরানো যায় | গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন কওমী মাদ্রাসা-ভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমদ শফী। চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসার প্রধান হিসেবে তিনি অনেকের কাছেই শ্রদ্ধা পেয়েছেন। রাজনীতিতে তিনি আলোড়ন তোলেন ২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকায় বিশাল এক সমাবেশ করে। তবে দ্রুতই তিনি সরকারের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন এবং এমন কিছু দাবি আদায় করে নেন, যা বাংলাদেশকে আরও বেশি ইসলামীকরণের দিকে নিয়ে যায় বলে তার অনেক সমালোচক মনে করেন। বিশ্লেষণ করেছেন বিবিসি বাংলার আকবর হোসেন। |
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ কি? | বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সেই মুহূর্ত ঘটনার প্রতিক্রিয়ার দেশটির কয়েকটি রাজ্যে তাৎক্ষণিকভাবে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। বাংলাদেশে ঐ ঘটনার প্রভাব তৈরি হয় পরদিন ৭ই ডিসেম্বর। এর পরের কয়েকটি দিন বেশ ঘটনা বহুল ছিল বাংলাদেশের জন্য। ৭ই ডিসেম্বর, ১৯৯২ সেদিন ছিল সোমবার। আগের দিনই ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙ্গেছে সেখানকার হিন্দুত্ববাদীরা। ঢাকার থেকে প্রকাশ হওয়া বাংলা এবং ইংরেজি দৈনিকগুলোর সব কটির প্রধান শিরোনাম ছিল এ বিষয়টি নিয়েই। সেদিন বাংলাদেশের সব কয়টি রাজনৈতিক দল এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছিল। মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকেও বিষয়টির নিন্দা করা হয়। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুরে পৌঁছানোর আগেই ঢাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। বিভিন্ন জেলায়ও একই ধরণের বিক্ষোভ মিছিল হয় বিক্ষুব্ধ ইসলামী জনতার ব্যানারে। দুপুরের মধ্যে সেই বিক্ষোভ পরিণত হয় সহিংসতায়। লাঠিসোটা নিয়ে হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর এমনকি মন্দিরে হামলা ও লুটপাট চালানো হয় এসব মিছিল থেকে। ঢাকায় কী হয়েছিল? ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা পর্যালোচনা করে সেদিনের ঘটনাবলী সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ঢাকায় তখন চলছিল ৭ম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতি। এর অংশ হিসেবে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে চলছিল চারজাতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। ৮ই ডিসেম্বর পত্রিকার শিরোনাম ৭ই ডিসেম্বর সম্মেলনের প্রস্তুতি দেখতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। সকাল সাড়ে দশটায় সে সময়কার এক নম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ওয়ানডে ম্যাচ। সে ম্যাচে ভারতের 'এ দল' অংশ নিয়েছিল। কিন্তু দুপুর নাগাদ কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী মাঠে ঢুঁকে পড়ায় সে ম্যাচ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। দুপুরে পুরনো ঢাকার নামকরা মরনচাঁদ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বেশ কয়েকটি শাখায় হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। একই সঙ্গে পুরনো ঢাকার শাখারীবাজার, তাঁতিবাজার, কোতোয়ালীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় জুয়েলারি দোকান, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, হোটেল ও রেস্তরাঁসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন দোকানপাটে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুরনো ঢাকার জয়কালী মন্দির, নবাবগঞ্জের ঋষিপাড়া মন্দিরসহ অনেক মন্দিরে হামলা হয়। ঢাকশ্বেরী মন্দিরে হামলা করতে গেলে পুলিশ ও এলাকার মানুষ যৌথভাবে তাতে বাধা দেয়। ৭ই ডিসেম্বর সকাল ১০টার পরই ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। হাইকোর্টের মোড়ে প্রথম পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষও বাড়তে থাকে। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিক্ষুব্ধ ইসলামী জনতার। দুপুরে মতিঝিলে এয়ার ইন্ডিয়ার অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় একদল লোক। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহ্বান নিয়ে মিছিল ভারতীয় তথ্যকেন্দ্রের লাইব্রেরীতে হামলা চালিয়ে হাজার হাজার বই রাস্তায় ফেলে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। সেই সঙ্গে পল্টনে কম্যুনিস্ট পার্টির অফিসে হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিকেলে হামলা হয় হিন্দু অধ্যুষিত শাখারীবাজর এলাকায়। ক্রমে ঢাকার বাইরে থেকেও সংঘর্ষ ও হামলার খবর পাওয়া যায়। পরিস্থিতি এমন হয়, সরকার ঢাকার কিছু অংশে এবং ভোলাসহ কয়েকটি জেলার কার্ফ্যু ঘোষণা করে। টাঙ্গাইল ও জামালপুরসহ কয়েকটি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে। সেদিন ঢাকাসহ দেশের অন্তত ২১ টি জেলায় বিক্ষুব্ধ ইসলামী জনতার ব্যানারে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মন্দিরে হামলা চালানো হয়। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলেছিল সেই অবস্থা। ৮ই ডিসেম্বর স্থানীয় পত্রপত্রিকায় খবর অনুযায়ী, বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিবাদে ৮ই ডিসেম্বর সারাদেশে হরতাল ডাকে জামায়াতে ইসলামী এবং আরো কয়েকটি ইসলামী দল। তখনকার জামায়াত আমির গোলাম আজমের নাগরিকত্ব বাতিলসহ চারদফা দাবিতে এর আগেই ৮ই ডিসেম্বর হরতাল ডেকেছিল ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। পরে তারা বাবরি মসজিদ ভাঙার ইস্যুটিও নিজেদের দাবীর মধ্যে যুক্ত করে। ৭ই ডিসেম্বরের ঘটনা নিয়ে পরদিনের কাগজে খবর এই হরতালে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ইসলামপন্থী দলসমূহ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে উভয় পক্ষে বহু মানুষ হতাহত হন। ঐদিন সারাদেশে সহিংস পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ১২ ও ১৩ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত করে ১৯৯৩ সালে জানুয়ারিতে সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করে সরকার। সেই সঙ্গে কোন ভুয়া খবরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় লিপ্ত না হবার জন্য এবং জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রেস নোট জারি করে সরকার। তবে, পুলিশ এবং বাংলাদেশ রাইফেলসের (তৎকালীন বর্ডার গার্ড বাহিনী) পাহাড়া সত্ত্বেও ৮ই ডিসেম্বরে লাঠি ও রড হাতে একদল মানুষ হামলা চালায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। শাঁখারিবাজারের রীতা নন্দী ঢাকার পুরনো অংশে শাঁখারিবাজারে হামলা হয়েছিল ৭ই ডিসেম্বর বিকেল চারটার পর। তিন পুরুষ যাবত সেখানকার বাসিন্দা রিতা নন্দীর পরিবার। তিন বোনের মধ্যে রীতা সবার ছোট, স্কুলে পড়তেন। বিকেলে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করার সময় হঠাৎ দেখলেন, শাঁখারিবাজারের দুই দিক থেকেই লোকজন দৌড়ে ভেতরের দিকে চলে আসছে। "মূহুর্তের মধ্যেই দেখলাম চতুর্দিক থেকে ইট আর আগুন আসতাছে। মোড়ের শুরুতে যেসব দোকানপাট, তাতে আগুন লাগায়ে দিছে। আর নারী ও বয়স্করা ভেতরের দিকে চলে আসতেছে।" রীতা নন্দীর মা এবং মাসিরা তাদের বোনদের এবং অল্প বয়েসী আত্মীয় ও গৃহকর্মীদের বাড়ির ভেতর লুকিয়ে রেখেছিলেন। মিসেস নন্দী বলছিলেন শাঁখারিবাজারে সন্ধ্যে পর্যন্ত সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলেছে। কিন্তু সন্ধ্যের পর পুলিশ কার্ফ্যু জারি করেছিল। রাস্তায় মেয়েরা আক্রান্ত হতে পারে এমন আশংকায় মিসেস নন্দী এবং তার বোনদের সপ্তাহ খানেক স্কুলে যেতে দেননি তারা বাবামা। ঐ ঘটনার প্রেক্ষাপটে ১৯৯৩ সালে মিসেস নন্দীর দুই মাসি পরিবার নিয়ে ভারতে চলে যান বলে তিনি জানান। পালা করে মন্দির ও বাড়িঘর পাহাড়া সেই সময় পুরনো ঢাকায় হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দির পাহাড়া দিয়েছেন বহু মানুষ। এর মধ্যে তখনকার ক্ষমতাসীন বিএনপি, আওয়ামী লীগ এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কর্মীরা এলাকার মানুষদের সাথে নিয়ে পালা করে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দির পাহাড়া দিয়েছেন। লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের এক লেখায় পাওয়া যায়, সে সময়কার যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সাদেক হোসেন খোকা তার কর্মীদের নিয়ে দিনরাত পাহাড়ার কাজ করেছেন। তাঁতিবাজারে মন্দির পাহাড়ার দলে ছিলেন মিন্টু সুর। তিনি জানিয়েছেন নিজেদের মধ্যে তারা শিফট ভাগ করে নিয়েছিলেন। "আমাদের মহল্লায় যত কম বয়েসী ছেলেপেলে ছিল সবাইরে নিলাম আমরা। ভাগ করলাম ছয় ঘণ্টার আর বারো ঘণ্টার দুই রকম শিফট। যে যেমনে সময় দিতে পারত আমরা লাঠি হাতে নিয়ে পাহাড়া দিতাম। শেষ দিকে এমন হইল যে আমার বইন আর পিসিরাও আমাগো লগে জয়েন করছিল।" দশদিন একটানা পাহাড়া দিয়েছিলেন মিঃ সুর ও তার বন্ধুরা। 'পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল না' বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে সবসময়ই গুরুত্ব দিয়েছেন দেশটির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। কিন্তু তা সত্ত্বেও পার্শ্ববর্তী দেশে মসজিদ ভেঙে ফেলার ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশে তার কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে সরকারের মধ্যে প্রস্তুতি প্রায় ছিলই না। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, সরকার এরকম একটি ঘটনার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। "পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, সে সময়কার সরকার এমন ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। কারণ প্রস্তুত থাকলে এতগুলো ঘটনা ঘটতে পারে না।" এর পেছনে দুটো কারণ ছিল। এক, দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের পর নতুন সরকার গঠন হয়েছিল তখন মাত্র দুই বছর হয়েছে। ফলে তাদের সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞতা কিছুটা কম ছিল। দুই হচ্ছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে কিভাবে সেই সেন্টিমেন্ট নিজেদের পক্ষে নেয়া যাবে সরকারের মধ্যে কিছুটা এমন ভাবনাও ছিল।" অধ্যাপক চৌধুরী মনে করেন, হিন্দুদের ওপর হামলা বন্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ না নেবার সেটা একটা বড় কারণ। সরকার কি যথেষ্ট সুরক্ষা দিয়েছিল সংখ্যালঘু মানুষদের ঢাকাসহ সারাদেশে অন্তত ৩০টি শহরে মন্দিরে হামলা চালানো হয়, বিভিন্ন জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, ও লুটপাট চালানো হয়। ঐ সময়কার সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা সেই সহিংস পরিস্থিতির শিকার হয়ে সারা দেশে অন্তত ১০জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন এবং ভাঙ্গা হয়েছিল কয়েক হাজার মন্দির। লুটপাট হয়েছিল বহু বাড়িঘর এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন অনেক হিন্দু নারী। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার দাবী নিয়ে সরকারের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। সংগঠনের সে সময়কার একজন নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, যিনি এখন গণফোরামের একজন কেন্দ্রীয় নেতা, তিনি বলছেন, সরকার সেসময় সংখ্যালঘু মানুষদের যথেষ্ট আস্থা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে। "আমরা সরকারের কাছে বারবার গিয়েছি, সরকার প্রতিবারই 'বড় কিছু হয়নি' বলে কিছুটা উপেক্ষাই করতে চেয়েছে। আমরা বলেছিলাম, সারাদেশে প্রায় তিন হাজার মন্দিরে হামলা হয়েছে, কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং পার্লামেন্টে এ নিয়ে হাসাহাসি করা হয়েছিল। তখনকার ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু মামলা হয়েছিল, কোনটিরই বিচার হয়নি আজ পর্যন্ত।" আর এই বিচার না হবার কারণেই পুরনো ঢাকার অনেক মানুষ ২৭ বছর আগে হয়ে যাওয়া সেই হামলা নিয়ে এখনো কথা বলতে চান না অনেকে। তাদের বক্তব্য সেই ঘটনায় দেশছাড়া হয়েছেন তাদের অনেক স্বজন, নতুন করে কোন ঝামেলায় পড়তে চান না তারা। | ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর ছিল রবিবার। সেদিন অযোধ্যায় জড়ো হওয়া কয়েক লক্ষ উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাড়ে চারশো বছরের বেশি সময় আগে স্থাপিত বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলে। তাদের ঠেকাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হতাহত হন কয়েক শত হিন্দুত্ববাদী কর্মী। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | ক্যারিন এবং তার ছেলে জ্যঁ পিয়ের, গণহত্যার সময় ধর্ষণের কারণে জন্ম নেয়া হাজারো শিশুর একজন। জ্যঁ-পিয়ের বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর সময় একটি ফর্মে তার বাবা-মায়ের নাম জানতে চাওয়া হয়েছিলো। আর ঠিক ওই সময়েই নিজের বাবা সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হয় তার মধ্যে। "আমি তাকে চিনি না- আমি তার নাম জানি না," তিনি বলেন। সতর্কতা: এই প্রতিবেদনের অনেক তথ্য কারো কারো কাছে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। ঘরে বাবা না থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু ছিল না: কারণ ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডার গণহত্যায় ৮০০,০০০ মানুষ নিহত হওয়ায় অনেক শিশুই ছিলো পিতৃহীন। কিন্তু তারা তাদের বাবার নাম জানতো। অনেক সময়ই গ্রামে মানুষের মুখে গুঞ্জন শুনেছে সে, এমনকি কয়েকবার নামও শুনেছে- কিন্তু পুরো সত্য জানতে বছরের পর বছর সময় লেগে যায় তার। তার মা ক্যারিন তাকে যে ঘটনা শুনিয়েছিলেন তা "একবারেই মেনে নেয়ার মতো না।" "তার কাছে অনেক ধরণের তথ্য ছিল। সে গুজব শুনেছে। গ্রামের সবাই জানে যে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলাম আমি। আর এতে আমার করার মতো তেমন কিছুই ছিল না" তিনি(ক্যারিন) বলেন। "আমার ছেলে জিজ্ঞাসা করতে থাকে যে তার বাবা কে। কিন্তু আমি বলতে পারিনি যে আমাকে ধর্ষণ করা ১০০ জন পুরুষের মধ্যে তার বাবা আসলে কে।" "আমি পালিয়ে যেতে পারিনি" ১৯৯৪ সালে ১০০ দিনের গণহত্যার সময় ধর্ষণের কারণে ঠিক কত শিশু জন্ম গ্রহণ করেছিলো তার সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। সংঘাত বা যুদ্ধ সম্পর্কিত যৌন নির্যাতন বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে জাতিসংঘ- কারণ যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় ধর্ষণকে। এপ্রিলে শুরু হওয়া ১০০ দিনের গণহত্যার ২৫ বছর পালন করেছে রুয়ান্ডা সিরিয়া থেকে শুরু করে কলোম্বিয়া কিংবা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো থেকে শুরু করে গত বছর মিয়ানমারেও ধর্ষণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। জাতিসংঘ ঘোষিত যুদ্ধে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসকে সামনে রেখে ধর্ষণের শিকার মানুষেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ হ্যাশট্যাগ #EndRapeinWar ব্যবহার করে নিজেদের গল্প জানাচ্ছেন। তবে যারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তাদের পক্ষে ওই ঘটনার ২৫ বছর পরে এসেও সেগুলো আবার মনে করা খুব সহজ ব্যাপার নয়। ক্যারিনের ঘটনা শুনলে বোঝা যায়, সত্য বলতে গিয়ে কেন তিনি তার ছেলে বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। ১০০ দিনের গণহত্যার সময় ধর্ষণের কারণে মোট কত শিশু জন্ম নিয়েছে তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি প্রথম যখন তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তখন তিনি তার ছেলের বয়সীই ছিলেন। তিনি ছিলেন তুতসি নারী এবং শিশুদের মধ্যে যারা হুতু প্রতিবেশী, যোদ্ধা আর সেনাদের হাতে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে মনে করা হয় সেই লাখো নারীদের একজন। তখন গণহত্যা মাত্র শুরু হয়েছিলো। তখনো তার মুখের দুপাশে রামদা সদৃশ বস্তুর আঘাতে সৃষ্ট ক্ষত থেকে রক্ত পড়তো। যার কারণে এখনো তার খেতে এবং কথা বলতে সমস্যা হয়। তার উপর আক্রমণকারীরা যারা এতদিন তার সম্প্রদায়েরই মানুষ ছিল, তারা তাকে টেনে হিঁচড়ে একটি গর্তের কাছে নিয়ে যায়, যেখানে আগে থেকেই একটি স্কুলের পুরুষ, নারী আর শিশুদের হত্যার পর মরদেহগুলো জড়ো করছিলো তারা। কিন্তু তার ক্ষত আর ব্যথার পরেও ক্যারিন জানতেন যে তিনি মরতে চান না। সেনাদের হাতে ছোট গাছ ও লাঠির দ্বারা যৌন নির্যাতনের ফলে তার দেহে অভাবনীয় ক্ষতি হবে, একথা জেনেও মরতে চাননি তিনি। তবে এরপর যখন আরেকটি দল তার উপর হামলে পরে তার সারা শরীরে কামড়ের ক্ষত তৈরি করে তখন আর বেঁচে থাকতে চাননি তিনি। "এখন আমি তাড়াতাড়ি মরতে চাই। আমি অনেক বার মরতে চাই।" নিজের ছেলেকে সত্য ঘটনা বলতে কয়েক বছর সময় লেগেছিলো ক্যারিনের কিন্তু এটা ছিল তার দুর্ভোগের শুরু মাত্র। যে হাসপাতাল তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলো সেটিতেও হামলা চালিয়ে দখলে নেয় হুতু যোদ্ধারা। "আমি পালাতে পারিনি। আমি যেতে পারিনি কারণ আমার সব কিছুই ছিল ভাঙা," তিনি বলেন। "যেকেউ চাইলেই আমার উপর যৌন নির্যাতন করতে পারতো। এমনকি তারা যদি আমার উপর প্রস্রাব করতে চাইলেও তা করতে পারতো।" রুয়ান্ডার প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্টের সেনারা হাসপাতালটি দখল মুক্ত করার পরেই শেষমেশ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেয়েছিলেন ক্যারিন। পরে ফিরেছিলেন তার গ্রামে-দুর্বল, বিধ্বস্ত, রক্তাক্ত কিন্তু জীবিত অবস্থায়। যখন চিকিৎসকরা তাকে খুঁজে বের করেন তখন তিনি গর্ভবতী ছিলেন। যা চিকিৎসকদের জন্য ছিল একটি বড় ধাক্কা। "আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম যে আমি আসলে কি করবো। কারণ আমার শরীরে অবশিষ্ট বলতে তেমন কিছুই ছিল না। আমি ভাবতে পারতাম না যে কি হতে যাচ্ছে। "যখন শিশুটি জন্ম নিলো, আমি বুঝতে পারি নি কি হল। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এই শিশুটি আমার থেকেই জন্ম নিয়েছে। আমি সারাক্ষণ ভাবতাম যে আমার সাথে আসলে কি হল। জন্মানোর পর আমি বাচ্চাটিকে রেখে দেই। যদিও তার প্রতি আমার কোন ভালবাসা ছিল না।" আরো পড়তে পারেন: যেভাবে ১০০ দিনে ৮ লাখ মানুষ হত্যা করা হয় কেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস? 'মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হয়তো গণহত্যা চলেছে' "পরিত্যক্ত শিশু" এমন গল্প-কিংবা এর চেয়ে একটু হয়তো আলাদা- গত ২৫ বছর ধরে রুয়ান্ডার শিশুদের কাছে শত শত বার বলা হয়েছে। তবে জনসমক্ষে বলা হয়েছে খুবই কম। "ধর্ষণ একটি ট্যাবু। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষের পরিবর্তে দোষারোপ বা লজ্জার মুখে পরতে হয় ধর্ষণের শিকার নারীকে," বলেন সারভাইভারস ফান্ড (সারফ) এর প্রধান নির্বাহী স্যাম মুনডেরেরে। গণহত্যার সময় ধর্ষণের শিকার মা ও শিশুদের শিক্ষা এবং মানসিক সহায়তায় ফাউন্ডেশন রুয়ান্ডা কর্মসূচী নামে একটি প্রকল্পের সমন্বয়ে কাজ করে সারফ। তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে, ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কারণে অনেক স্বজনেরাই মাকে তার সন্তান পরিত্যাগ করতে বলে। অনেক ক্ষেত্রে আবার বিয়ের সম্পর্ক পর্যন্ত ভেঙ্গে যায়। সম্ভব হলে নারীরা গোপনে এই শিশুদের লালন করে। ফলে জ্যঁ পিয়েরের মতো ফর্ম পূরণ করার সময় অনেক শিশুরাই বুঝতে পারে যে তাদেরকে গর্ভে ধারণ করা হয়েছিলো মাত্র। "বিষয়টি এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, মায়েরা তার শিশুদের বলছেন কিভাবে গণহত্যার পর তারা জন্মেছিলো। তবে অনেকের কাছে এটা বলা অনেক সহজ যে, তার বাবা যুদ্ধে মারা গিয়েছিলো। " "কিন্তু বাচ্চারা যখন বড় হয় তখন তারা বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন করতে শুরু করে। যার কারণে অনেক সময় সত্য বলতে বাধ্য হয় মায়েরা।" স্যাম বলেন, বছরে পর বছর ধরে, ফাউন্ডেশন রুয়ান্ডা মায়েদের এ বিষয়ে সহায়তা করে চলেছে। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সত্য ঘটনা শিশুদের মধ্যে মানসিক আঘাত তৈরি করে। "এমন ঘটনার প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে থেকে যেতে পারে। এমনকি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মেও এটি প্রভাব বিস্তার করে," তিনি বলেন। স্যাম একজন তরুণীর কথা বলেন, যিনি তার বাবার বিষয়টি তার নতুন স্বামীর কাছ থেকে গোপন করেছিলো। কারণ, তার মতে, এটি জানলে তার বিবাহিত জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব পরার আশঙ্কা ছিল। তারপর আরেকজন মায়ের কথা বলেন তিনি, যিনি তার মেয়ের প্রতি খারাপ আচরণ করতেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে, তার বাজে স্বভাবের পেছনে তার জন্মের প্রক্রিয়া দায়ী ছিল। আর ক্যারিনের মতো অনেক মা রয়েছেন যারা তাদের সন্তানের জন্য কোন মমতা অনুভব করেন না। যার প্রভাব এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হয়নি। "আমাদের চিন্তার বাইরেও অনেক প্রভাব থাকে," বলেন স্যাম। "এসব তরুণদের নিজেদেরই অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। আমরা সহায়তা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যাতে তারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তারা যাতে বুঝতে পারে যে, রুয়ান্ডার আর দশজন তরুণের মতোই স্বাভাবিক তারা।" সম্পর্কের আঘাত শেষমেশ ক্যারিন জ্যঁ-পিয়েরেকে তার ১৯ কিংবা ২০ বছর বয়সে গর্ভধারণ এবং সন্তান জন্মদানের পুরো ঘটনাই বলেন। ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডা থেকে পালানোর সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এক নারী পিয়েরে সেটা মেনে নেন। কিন্তু এখনো তার মনে হয় যে, তার জীবনে তার বাবার কমতি রয়েছে। যাইহোক আশ্চর্যজনকভাবে, তার মায়ের উপর যে ব্যক্তি হামলা করেছিলো তাকে ঘৃণা করে না সে। আর, ক্যারিনও তাকে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি বলেন, বাস্তবিক সত্য হচ্ছে, "আমার জন্য অন্যতম কষ্টের বিষয় ছিলো তাদের সম্পর্কে ভাবা। কিন্তু যখন আমি ক্ষমা করলাম, আমার ভালো লাগতে শুরু করলো।" জ্যঁ পিয়েরে বলেন, "তার প্রতি আমার কখনো রাগ হয়নি।" "মাঝে মাঝে আমি তার সম্পর্কে ভাবি, আমার মনে হয়, জীবনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমার বাবাকে পাশে পেলে আমার অনেক ভালো লাগতো।" একজন মেকানিক হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নেয়ার চিন্তা করছেন জ্যঁ এবং এক সময় তার নিজেরও একটা পরিবার থাকবে। "আমি আমার পরিবারকেও সাহায্য করতে চাই," তিনি বলেন। যদিও তার জন্য অর্থের প্রয়োজন আর অর্থই আমার কাছে তেমন নেই। আর ক্যারিন, বড় হওয়ার পর জ্যঁ পিয়েরের সাথে সম্পর্ক মজবুত করতে কাউন্সেলিংয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। "আমি এখন মনে করি এটাই আমার সন্তান।" সারফের সহায়তায় কেনা নতুন বাড়ির সিঁড়িতে বসে দূর পাহাড়ের দিকে তাদের তাকিয়ে থাকা দেখলে পোক্ত সম্পর্কের আঁচ পাওয়া যায়। গ্রামের পাশেই তাদের বাড়িটি- সেই গ্রাম, যে গ্রামে বেড়ে উঠেছেন ক্যারিন, যে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন একসময়। সেই গ্রাম যেখানে পিয়েরেকে শুধু একজন তরুণ নামে ডাকা হতো। কিন্তু এখন সবকিছু শান্ত। পরিবার আর সম্প্রদায়, সবাই তাদেরকে মেনে নিয়েছে। "তারা জানে যে দীর্ঘ সময় ভয়ংকর অভিজ্ঞতার শোকে স্তব্ধ হয়ে পার করেছি আমি এবং এখানে আমি সুখী," ক্যারিন বলেন। আর জ্যঁ পিয়েরে তার মাকে নিয়ে গর্বিত। "এটা বোঝাটা একটু কঠিন কিন্তু আমি তার উন্নতিতে খুব খুশী হয়েছি।" "তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে তিনি যেভাবে নিয়েছেন। ভবিষ্যৎ এবং সামনে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে তিনি যেভাবে ভাবেন তা আমার খুবই পছন্দ" | ২৪ বছর বয়সী রুয়ান্ডার এক নাগরিক যার মা দেশটির গণহত্যার সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তিনি বিবিসি-কে বলেছেন যে, কিভাবে তিনি তার জন্মের পেছনের ঘটনা জেনেছেন। বর্তমান সময়েও ধর্ষণ লজ্জাজনক হওয়ায় তাদের নাম বদলে দেয়া হয়েছে। |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | চরমোনাই পীর ইসলামী আন্দোলন গঠন করেছিলেন আশির দশকের শেষ দিকে। পীর বা সুফি নেতাদের নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থী দলগুলোর উদ্দেশ্য আসলে কি? বাংলাদেশে এই দলগুলোর ভবিষ্যত কতটা আছে—এসব প্রশ্ন এখন অনেকে তুলছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল ১৯৭৮সালে। সেই সুযোগ নিয়ে তখন নিষিদ্ধ ইসলামপন্থী কয়েকটি দল আবার রাজনীতি শুরু করেছিল। আশির দশকের শেষদিকে তাতে যুক্ত হয়েছিল পীরদের রাজনীতি। কয়েকজন পীর বা সুফি নেতা ইসলামপন্থী দল গঠন করে রাজনীতির মাঠে নেমেছিলেন। পীরদের রাজনীতিতে নামার প্রেক্ষাপট কী ছিল? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন বলছিলেন, জেনারেল এরশাদ তার ক্ষমতার স্বার্থে ধর্মকে ব্যপকভাবে ব্যবহার করেছিলেন এবং তার পৃষ্ঠপোষকতাতেই তখন দল গঠন করে পীরদের রাজনীতিতে নামতে দেখা গেছে। জোবাইদা নাসরিন "বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব পীরবাদী সংস্কৃতি যদি আমরা দেখি, সেখানে একটি আউলিয়াভিত্তিক সংস্কৃতি ছিল। যেখানে গানবাজনা, উৎসব, মেলা এবং একটা লোকাচার ছিল। আমাদের এখানে সুফিবাদের চর্চা দীর্ঘদিনের।" "কিন্তু ৮০ সালের পর থেকে বিশেষ করে সামরিক শাসক এরশাদের সময় ১৯৮৭ সালে প্রথম তার পৃষ্ঠপোষকতায় চরমোনাই পীরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। এরপর আমরা দেখেছি ১৯৮৮ সালে ইসলাম রাষ্ট্র ধর্মের স্বীকৃতি পায়।" জোবাইদা নাসরিন আরও বলেছেন, "শর্ষিনার পীর, ৭১ সালে যিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসককে সহযোগিতা করেছিলেন, তাকেও জেনারেল এরশাদ স্বাধীনতা পদক দিয়েছিলেন। সেই আমল থেকেই পীর এবং ইসলামকে আমাদের দেশের রাজনীতি ব্যবহার করার ব্যাপারটি ভিন্নমাত্রা পায়।" তবে এরশাদের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দল গঠনের কথা অস্বীকার করেছে ইসলামী আন্দোলন। পীরদের দলগুলো কী করতে চায় দেশে ইসলামপন্থী দলের সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল। পীর বা তাদের বংশধরদের নেতৃত্বে দলের সংখ্যাও কম নয়। তবে পীরদের দলগুলোর মধ্যে মাত্র চারটি দল নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পেয়ে কাজ করছে। এই দলগুলো ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠাকেই মুল লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু সেই লক্ষ্যের ক্ষেত্রেও মতবাদ এবং চলার পথ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য বেশ প্রকট। এমন প্রেক্ষপটে তারা আসলে কি করতে চায়-এই প্রশ্ন তোলেন বিশ্লেষকরা। বরিশালের চরমোনাইর পীর হিসেবে পরিচিত সৈয়দ ফজলুল করিম ইসলামী আন্দোলন নামে দল গঠন করে রাজনীতিতে নেমেছিলেন জেনারেল এরশাদের আমলে ১৯৮৭ সালে। নিবন্ধিত এই দলের প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর তার ছেলে সৈয়দ রেজাউল করিম এখন পীর এবং দলের নেতা হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠা থেকেই তিন দশকেরও বেশি সময়ে দলটিকে ক্ষমতাসীন বা বড় কোনো দলের সাথেই থাকতে দেখা গেছে। তবে এই দলের মহাসচিব ইউনুস আহমদ বলেছেন, তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান। সেজন্য দেশে সব পর্যায়ের নির্বাচনে পাখা প্রতীক নিয়ে তারা অংশগ্রহণ করেন। "আমরা ইসলামের আদর্শে ইসলামের আলোকে প্রত্যেকটা সেক্টরকে সাজাতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, আত্মশুদ্ধি যতক্ষণ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতি অপরাধ, অন্যায় দূর হবে না।" জাকের পার্টিও প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পার করেছে। আটরশির জাকের পার্টিতে পরের প্রজন্ম কী করছে? আরেকটি ইসলামপন্থী দল জাকের পার্টিও প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পার করেছে। জেনারেল এরশাদের শাসনের সময়ই ১৯৮৯ সালে দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফরিদপুরের আটরশির পীর হিসেবে পরিচিত শাহ সুফি মো: হাসমতউল্লাহ। তখনই তিনি তার ছেলে মোস্তফা আমীর ফয়সালকে চেয়ারম্যান করেছিলেন। জেনারেল এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে জাকের পার্টি গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে প্রার্থী দিয়েছিল। জাকের পার্টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে রয়েছে। ড: সায়েম আমীর ফয়সাল, জাকের পার্টি দলটিতে এখন তৃতীয় প্রজন্মকে নেতৃত্বে আনা হচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতার নাতি ড: সায়েম আমীর ফয়সালকে জাকের পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এই দলটির এখনকার নেতৃত্ব স্বাধীনতা বিরোধী এবং কট্টরপন্থী ইসলামী দলগুলোর বিরুদ্ধে একটা অবস্থান তৈরির চেষ্টার কথা বলছে। ড: সায়েম আমীর ফয়সাল দাবি করেছেন, তাদের দল ইসলামপন্থী হলেও উদার এবং প্রগতিশীল চরিত্র নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখছে। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: হায়দ্রাবাদ ধর্ষণে অভিযুক্তদের হত্যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া 'বাংলা' লন্ডনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহৃত ভাষা নয় টাকা দিয়ে কেন গোল্ডেন পাসপোর্ট কিনছেন বিত্তশালীরা "জাকের পার্টি একমাত্র ইসলামী রাজনৈতিক দল একটা প্রগতিশীল দল। এটা আমি গর্বের সাথে বলতে পারি। আমি বিশ্বাস করি ইসলাম পরিপূর্ণভাবে সেকুলার। সবচেয়ে বড় উদাহরণ মদিনা চুক্তি। নবী করিম (সা:) যে মদিনা চুক্তি আমাদের দিয়ে গেছেন, এর চেয়ে বড় উদাহরণতো আর কোথাও নাই।" "অবশ্যই ইসলাম প্রগতিশীল এবং অবশ্যই ইসলাম ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। তো আমরা চাই, সাম্য কায়েম হবে। আমরা চাই, বিকৃত ইসলাম নয়, সত্য ইসলাম বাংলার জমিনে কায়েম হোক।" সংসদে তরিকত ফেডারেশন পীরদের দলগুলোর মধ্যে শুধু তরিকত ফেডারেশন নামের একটি দলের নেতা সৈয়দ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী বর্তমান সংসদে সদস্য হিসেবে যেতে পেরেছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক হিসেবে তিনি নৌকা প্রতীকে চট্টগ্রামের একটি আসন প্রার্থী হয়েছিলেন। এই তরিকত ফেডারেশনের নেতৃত্বও তাদের দলকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে তুলে ধরেন। সৈয়দ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী বলছিলেন, "আমরা আসলে সুফি মতবাদে বিশ্বাস করি। ইসলামের মুল থিমটাই হচ্ছে, মানবতার দর্শ, শান্তির ধর্ম।জঙ্গীবাদ এবং ইসলাম বা যে কোন ধর্মের নামে উগ্রতাকে আমরা না বলি। আমরা কেস করেছিলাম, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের জন্য এবং আমরা জিতেছি। স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান পরিস্কার।" সৈয়দ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী, তরিকত ফেডারেশন এই দলগুলো কি বড় দলের বাইরে বিকল্প শক্তি হতে পারবে? তরিকত ফেডারেশন এবং জাকের পার্টি ইসলামপন্থী দল হলেও তারা ধর্মনিরপেক্ষ এবং উদারনীতির ভিন্ন রাজনীতির কথা বলছে। আর চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন প্রচলিত ব্যবস্থা পাল্টিয়ে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের অবস্থানকেই তুলে ধরছে। তবে এই দলগুলোকে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির ওপর ভর করেই এখন রাজনীতির মাঠে থাকতে দেখা যায়। সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জোবাইদা নাসরিন বলছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতিতে এবং দেশ শাসনের ব্যাপারে ধর্মভিত্তিক দলকে সমর্থন করেনা। সেকারণে এসব দল বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে পারছে না বলে তিনি মনে করেন। "পীরবাদী দলগুলোর এককভাবে রাজনৈতিক সমর্থন আছে, এটা আমি মনে করি না। আসলে বাংলাদেশে মিশ্র সংস্কৃতির ইতিহাস। বাংলাদেশের মানুষ মানবিক দিক থেকে অনেক বেশি সেকুলার। এখানে বহুত্ববাদের সংস্কৃতি আছে। ফলে মানুষ তাদের গ্রহণ করবে না বলে আমার মনে হয়।" এই দলগুলোর নেতাদেরও অনেকে তাদের বিকল্প বা স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়ে দাঁড়াতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু একইসাথে তাদের বক্তব্য হচ্ছে, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়ছে। এই পরিস্থিতি তাদেরকে নতুন করে ভাববার সুযোগ করে দিয়েছে বলে তারা মনে করেন। ইসলামী আন্দোলনের নেতা ইউনুস আহমদ বলেছেন, এখনকার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট কাজে লাগিয়ে তারা বড় দলগুলোর বাইরে বিকল্প শক্তি হিসেবে দাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে ইসলামী আন্দোলনসহ এমন অন্য দলগুলো তাদের অর্থনৈতিক চিন্তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন কর্মসূচি তুলে ধরে না। এর পেছনে বিশ্লেষকরা অনেক কারণ দেখছেন। তারা বলছেন, রাজনীতিতে কোনভাবে একটা অবস্থান নিয়ে বড় দলগুলোর নজরে থাকা-এমন চিন্তার মাঝেই এই দলগুলো এখনও সীমাবদ্ধ রয়েছে। এছাড়া পীর হিসেবে পাওয়া মানুষের সমর্থন রাজনীতিতে কাজে লাগানোর চিন্তা থেকে এই দলগুলো গঠন করেছিলেন এর নেতারা। কিন্তু রাজনীতিতে তা কাজ করেনি। তরিকত ফেডারেশনের নেতা সৈয়দ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী বলছিলেন, তারা এখনও সমমনাদের সাথে থেকে ঐক্যের ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশে বড় দলগুলোও একক নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু পীরদের দলগুলো আরও বেশি এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক। সেজন্য এসব দল সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না বলে রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। জাকের পার্টির নেতা ড: সায়েম আমীর ফয়সাল অবশ্য অর্থনৈতিক কর্মসূচিসহ তাদের দলের কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে কিছুটা প্রাতিষ্ঠানিক বা সাংগঠনিক ভিত্তি দেয়ার দাবি করছেন। পীরদের দলগুলোর ভবিষ্যত কী? যদিও ইসলামপন্থী এই দলগুলো মনে করছে, ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির প্রতি মানুষ এখন ঝুঁকছে এবং তারা ভোটের বা ক্ষমতার রাজনীতিতেও তারা একটা প্রভাব রাখতে পারছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতে ইসলামী ছাড়া ইসলামপন্থী অন্য দলগুলোর ভোটের হিসাব এখনও নগণ্য পর্যায়ে রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলছিলেন, ধর্মের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে মানুষ এখনও সেভাবে সমর্থন করছে না বলে তিনি মনে করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী "দেশে যখন কোনো পলিটিক্স না থাকে, যখন শূণ্যতা দেখা দেয়, মসজিদকে ঘিরে রাজনীতি করে, পীরদের ঘিরে পলিটিক্স করে। কিন্তু এদের কোনো ভবিষ্যত রাজনীতিতে আছে বলে আমি মনে করি না। যে রাজনীতি জনকল্যাণের রাজনীতি, তাতে তাদের ভবিষ্যত নাই।" পীর বা তাদের বংশধরদের রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে একটা শক্তি হিসেবে দাঁড়াবে-এমন বিশ্বাস এখনও দলগুলোর নেতৃত্বের মাঝেও তৈরি হয়নি বলে মনে হয়েছে। তবে দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, বড় দলগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টিকারী একটা শক্তি হিসেবে একটা অবস্থান তারা করতে পেরেছেন। | বাংলাদেশের রাজনীতিতে পীর বা সুফি নেতাদের নেতৃত্বাধীন দলগুলো দশকের পর দশক ধরে কাজ করলেও বিকল্প এবং স্বতন্ত্র শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে ঘিরে দুই জোটের রাজনীতিতেই ঘুরপাক খাচ্ছে এসব দলের রাজনীতি। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | মহারাষ্ট্রের এই মালভূমিটিতে খোঁড়া হচ্ছে সুগভীর গর্ত সেই জট খুলবার এক অতি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে ভারতের এক পার্বত্য এলাকায় মাটির গভীর থেকে গভীরতর স্থানে গর্ত খুঁড়ে যাচ্ছেন ভূতত্ত্ববিদেরা। ঠিক যেখানে এই প্রকল্প, সেই জায়গাটির নাম গোথানে। এটি পশ্চিমাঞ্চলীয় মহারাষ্ট্র অঙ্গরাজ্যের তিন হাজার ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট একটি মালভূমি। চারদিকে পাহাড় আর ঘন জঙ্গল। এই জঙ্গল হচ্ছে এশিয়ান কৃষ্ণসার মৃগ, বুনো শুয়োর আর হরিণের বিচরণ ভূমি। এখান থেকে দশ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে কোয়েনা নামের এলাকা থেকে ১৯৬৭ সালে উৎপন্ন হয়েছিল ৬.৩ মাত্রার এক বিধ্বংসী ভূমিকম্পের। ওই ভূমিকম্পে ১৭৭ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন, আহত হয়েছিলেন আরও দুই সহস্রাধিক। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ব্যাপক মাত্রার। এই ভূমিকম্পের মাত্র পাঁচ বছর আগেই ওই এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল একটি বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ বা ড্যাম। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বৃহৎ জলাধার স্থাপনের আদর্শ জায়গা হচ্ছে পাহাড়। কিন্তু এতে ভূত্বকে চাপ বাড়তে পারে এবং ভূপৃষ্ঠকে তা বিপজ্জনকভাবে নাড়া দিতে পারে। খনি থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ বা ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলনের চেষ্টাও ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। ভূতত্ত্ববিদেরা বিশ্বাস করেন, বিশ্বজুড়ে একশোটিরও বেশী জায়গা আছে, যেখানে বড় জলাধার তৈরি করার কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়েছে। আরো পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়া 'তরুণদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে' জার্মান গানের স্কুলে বহু ছেলে যৌন নির্যাতনের শিকার কোয়েনার জলবিদ্যুত প্রকল্পের ড্যাম ভূতত্ত্ববিদদের আরও ধারণা, কোয়েনার জলাধারটি ১৯৬২ সালে যখন এক ট্রিলিয়ন লিটারেরও বেশী পানি দ্বারা পূর্ণ করা হয়, তখনই সেখানে ভূমিকম্পের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। ভূমিকম্পবিদ হর্ষ কে গুপ্তার মতে, কোয়েনা হচ্ছে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের জন্য পুরো পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে আদর্শ জায়গা। ১৯৬৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সবচাইতে নিয়মিত ভূমিকম্প 'হটস্পট' এই কোয়েনা। এখানে এই সময়ের মধ্যে ৫ থেকে ৫.৯ মাত্রার ২২টি ভূমিকম্প হয়েছে। রিখটার স্কেলে চার মাত্রার বেশী ভূমিকম্প হয়েছে চারশো'র মতো। আর ছোটখাটো ভূমিকম্প এখানে রেকর্ড করা হয়েছে কয়েক হাজার। ওই এলাকায় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের গভীরতা দুই থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত। সর্বশেষ ভূমিকম্পটি রেকর্ড হয়েছে গত ৩রা জুন, যার মাত্রা ছিল ৩.৮। এসব ভূমিকম্পে অবশ্য গত কয়েক দশকে জানমালের বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কোয়েনা থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে ওয়ার্না নদীতে ১৯৮৭ সালে আরেকটি জলাধার তৈরি করা হয়। পাঁচ বছর না যেতেই এটির কাছে ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্প পরিমাপের বেশীরভাগ যন্ত্রপাতিই হয় ভূপৃষ্ঠের উপরে নয়তো অগভীর কোন গর্তে স্থাপিত। বিজ্ঞানীরা এখন মনে করছেন, মাটির সুগভীরে গর্ত খুড়ে, ফল্ট এলাকার মধ্যে যন্ত্রপাতি বসিয়েই কার্যকরভাবে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। ভারতীয় বিজ্ঞানীর অবশ্য এক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের দ্বারা। মার্কিন বিজ্ঞানীরা স্যান আন্দ্রেজের ভূমিকম্প জোনের গভীরে সরাসরি গর্ত খুঁড়েছিলেন ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের জন্য। নানারকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে এই বোরহোল খননের জন্য ড্রিল করতে গিয়ে ২০১২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ভূতত্ত্ববিদেরা কোয়েনার নয়টি এলাকায় দেড় কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত গর্ত বা বোরহোল খুঁড়েছেন। গত ডিসেম্বরে তাঁরা পাইলট বোরহোলটি খুঁড়তে শুরু করেন। নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দিনরাত কাজ করে ছয় মাস পর গত দুই মাসে তাদের ড্রিল করার যন্ত্রটি মাটির তিন কিলোমিটার গভীরে একটি কঠিন শিলাস্তরে গিয়ে ঠেকে। সেখানকার তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই বর্ষা মৌসুম শেষ হলে বিজ্ঞানীদের ইচ্ছে তাঁরা ওই বোরহোলটি দিয়ে সেন্সর, থার্মোমিটার, সিসমোমিটার এবং স্ট্রেসমিটার নামিয়ে দেবেন মাটির গভীরে। তারপরই মাটির নিচের নানা পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের কাজ শুরু হবে, বলছিলেন ভূপদার্থবিদ ড. সুকান্ত রায়। তিনিই এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবেই এখানেই শেষ হচ্ছে না। সবকিছু ঠিক থাকলে তাঁরা আরো গভীরে ড্রিল করবেন, অন্তত পাঁচ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত পৌঁছানোর ইচ্ছে তাদের। | ভূমিকম্পের রহস্য কী? |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | আমেরিকার বোমা বর্ষণের পরের দিন আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশে সন্দেহভাজন আইএস ঘাঁটির ওপর সরকারী বাহিনীর হামলা অব্যাহত। বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া সম্পাদক জিল ম্যাকগিভারিং বলছেন, এই হামলা হলো এমন সময় যখন আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কৌশল নিয়ে অনিশ্চয়তা চলছে এবং শান্তির লক্ষ্যে মস্কোতে রাশিয়া তার নিজস্ব কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু করছে। আফগান সরকারী কর্মকর্তারা এই হামলা সমর্থন করে বলেছেন তাদের সাথে সমন্বয় করেই সেটা করা হয়েছিল। আফগান প্রেসিডেন্টের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ৩০০ মিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে এবং একজন শীর্ষস্থানীয় আইএস কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এখানে কোন সন্দেহ নেই যে, গভীর পাহাড়ি এলাকায় এবং পাকিস্তান সীমান্তের কাছে ইসলামিক স্টেট-এর ঘাঁটি ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগান বাহিনীকে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। আফগানিস্তানে আইএস ছোট হলেও উল্লেখযোগ্য হুমকি। তাদের হাজার খানেক যোদ্ধা আছে এবং তারা গত বছর ধারাবাহিক ভাবে কয়েকটি হামলা পরিচালনা করেছে, যাদের মধ্যে অনেকগুলোই ছিল সাম্প্রদায়িক। নানগারহার প্রদেশে আফগান বাহিনী: সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। আইএস'কে লক্ষ্যবস্তু করার সিদ্ধান্ত এমন সময় এসেছে যখন আফগানিস্তানে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, এবং দেশের সবচেয়ে বড় সরকার-বিরোধী বাহিনী, তালেবানরা ক্রমশঃ সাফল্য পাচ্ছে। আফগান সৈন্যদের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন অত্যন্ত জরুরী, এবং সিনিয়র আমেরিকান সামরিক কমান্ডাররা তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ওয়াশিংটনে নতুন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আফগান কৌশল কী হবে, সেটা এখনো পরিষ্কার না। অতীতে তিনি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রকে এ ধরনের জাতি-গঠন প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে আসতে হবে। হয়তো তিনি এই দীর্ঘ সময় ধরে চলা এবং ব্যয়বহুল সংঘাত থেকে বের হয়ে আসতে চাইবেন, কিন্তু একই সাথে তিনি ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর সম্প্রসারণ প্রতিহত করার অঙ্গীকারও করেছেন। এই সবই হচ্ছে এমন সময়ে যখন আফগানিস্তানে শান্তির লক্ষ্যে রাশিয়া বহুপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করেছে, যেখানে প্রধান আঞ্চলিক শক্তিগুলো অংশ নেবে - যেমন, চীন, পাকিস্তান, ভারত এবং ইরান। যুক্তরাষ্ট্র এই বৈঠকে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা রাশিয়ার এই উদ্যোগ নিয়ে সন্দিহান এবং তালেবানদের সাথে রাশিয়ার আলোচনার বিরোধী। | আফগান সরকার বলছে, বৃহস্পতিবার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ নানগারহারে আমেরিকা তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা ফেললে সেখানে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর ৩৬জন যোদ্ধা নিহত হয়েছে। পারমানবিক ক্ষমতাসম্পন্ন নয় এমন বোমার মধ্যে 'মোয়াব' নামের এই বোমাকে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হয়। |
নিচের অনুচ্ছেদের মূল সারসংক্ষেপ প্রদান করুন। | ড. আন্নাদুরাই চন্দ্রায়ন-১ এর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন নিজের পেশায় থাকা আর অন্য আট-দশ জনের মতো শিক্ষার সুযোগ ছিল না তার। তিনি ভারতের প্রথম সারির একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী- মঙ্গল আর চন্দ্রাভিযানের সফলতার পেছনে অবদান রয়েছে তার। শিক্ষাজীবনের প্রথম তিন বছর তিনি ক্লাস করেছেন অদ্ভুত সব জায়গায়। কখনো গাছের তলায়, কখনো মন্দিরের বারান্দায় আবার কখনো গোয়াল ঘরে ক্লাস করেছেন তিনি। তাহলে কিভাবে প্রযুক্তি শিল্পের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালেন তিনি? প্রাথমিক অভিযান আন্নাদুরাইয়ের পায়ে পরার মতো কোন জুতা ছিল না। আর তার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছিলো যখন তার বয়স আট বছর। তবে দ্রুতই পরিবর্তিত হচ্ছিল পৃথিবী। আরো পড়তে পারেন: চাঁদের মালিকানা আসলে কার? ভারতের স্যাটেলাইট ধ্বংস পরীক্ষা নিয়ে নাসার শঙ্কা মহাকাশ নিয়ে এতো মরিয়া কেন চীন? বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: এক বছরে প্রাপ্তি কতোটা নয় বছর বয়সে স্কুলের বন্ধুদের সাথে আন্নাদুরাই ১৯৬০ সালের ওই সময়টাতে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার প্রতিযোগিতা গিয়ে ঠেকেছিলও মহাকাশ পর্যন্ত। ভারতও সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল এবং ১৯৬৩ সালের ২১ নভেম্বর প্রথম রকেট লঞ্চ করে দেশটি। তবে এসবের কিছুই সাধারণ ভারতীয়দের জীবনযাত্রায় তেমন প্রভাব ফেলেনি। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর ছোট গ্রাম কোধাবাড়িতে বেড়ে উঠছিলেন আন্নাদুরাই। তার মতো ভারতের বেশিরভাগ মানুষ তখন শিল্প-পূর্ব যুগে বাস করছিলেন যেখানে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ ছিল অপ্রতুল। মেধাবী শিক্ষার্থী তবে দরিদ্রতা পড়াশুনায় তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বিজ্ঞান আর গণিত পছন্দ ছিল তার। আর ঘৃণা করতেন ইতিহাস। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: প্রবাসীদের নিয়ে হঠাৎ কী হলো ঢাকার বিমানবন্দরে 'পরিবার চেয়েছিল বিয়ে করি, আমি চেয়েছি ডিজে হতে' ঢাকার বাসিন্দাদের যেসব তথ্য পুলিশকে জানাতে হবে আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা কতটা? ভাইদের সাথে আন্নাদুরাই(মাঝে) বিবিসিকে তিনি বলেন, "আমার বাবা বলতেন যে, ইতিহাস তৈরি করতে হলে ইতিহাস পড়তে হয়।" তার বাবা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। আর সেলাইয়ের কাজ করে কিছুটা বাড়তি উপার্জন করতেন তিনি। পরিবারকে ভরণপোষণের জন্য তার আয় যথেষ্ট হলেও সঞ্চয় বলতে তেমন কিছুই থাকতো না। এক সময় তিনি ভেবেছিলেন, আন্নাদুরাই হয়তো উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগই পাবে না। কিন্তু হঠাৎ করেই জীবন বদলে দেয়ার মতো সুযোগ পেয়ে যান কিশোর আন্নাদুরাই। "আমার বয়স যখন ১২ বছর, তখন রেডিওতে গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি এক বৃত্তির খবর শুনি আমি। আর আবেদনও করি", বলেন আন্নাদুরাই। ওই বৃত্তি তার আর্থিক সংকট কাটিয়ে তাকে পাশের শহরের একটি ভালো স্কুলে ভর্তি হতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, "সেসময় আমার বাবা প্রতিমাসে ১২০ রুপি আয় করতেন। আর বৃত্তির অর্থ ছিল বছরে এক হাজার রুপি।" ১৯৭০ সালে এক ডলার সাড়ে সাত রুপির সমান ছিল। জেলার সেরা আর রাজ্যে ৩৯তম মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে স্কুল শেষ করেন তিনি। যা পরবর্তীতে তাকে আরও শিক্ষার খরচ যোগাতে সহায়তা করে। প্রাথমিক সংগ্রাম আন্নাদুরাই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির কিছুদিন আগে, ১৯৭৫ সালে রাশিয়ার সহায়তায় আরিয়াভাটা নামে নিজেদের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা। স্যাটেলাইটের সংকেত গ্রহণের জন্য ব্যাঙ্গালোরের বেশ কিছু শৌচাগারকে তাৎক্ষনিকভাবে তথ্য কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়। ছয় মাস চলার জন্য স্যাটেলাইটটির নকশা করা হয়েছিলো। তবে এটি ঠিকভাবে কাজ করেছিলো মাত্র চার দিন। ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে আন্নাদুরাই চার বছর পর, স্যাটেলাইট বহনে সক্ষম ভারতের নিজেদের তৈরি একটি রকেট উৎক্ষেপণ প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে আন্নাদুরাই ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-আইএসআরও তে যোগ দেন। তিনি বলেন, "অ্যাসবেসটস শিটের নিচে আমরা কাজ করতাম। আর প্রতি চার বছরে মাত্র একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতাম।" তামিলভাষী হওয়ার কারণে এবং ইংরেজি ও হিন্দিতে দুর্বলতা থাকায় যোগাযোগে বেশ অসুবিধার মুখে পড়তে হতো তাকে। তিনি বলেন, "অনেক সময় মানুষ আমার ইংরেজি শুনে হাসতো।" তিনি প্রথম যে স্যাটেলাইটটিতে কাজ করেছিলেন সেটি পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার উপরে একটি কক্ষপথে পৌঁছানোর জন্য নকশা করা হয়েছিলো। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় সেটি বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। চাঁদে চিত্র ধারণ শুরুটা খারাপ হলেও, আটটি আইএনএসএটি বা ইনসাট স্যাটেলাইট অভিযানে কাজ করেছেন তিনি। ইনসাট'স হল ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচীর মূল চালিকাশক্তি। যেগুলো আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে শুরু করে ম্যাপিং এবং সম্প্রচার-সবই করতো। ২০০৩ সালে, চন্দ্রাভিযান হাতে নেয়ার আগে, একবার মহাকাশ সংস্থা ছেড়ে দিয়ে বেসরকারি খাতে লোভনীয় চাকরী করারও চিন্তা করেছিলেন আন্নাদুরাই। আন্নাদুরাইয়ের মতে, মহাকাশ কর্মসূচী ভারতীয় কৃষকদের অনেক সহায়তা করেছে তিনি বলেন, "আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল আগের অভিযানগুলোতে যেসব বিষয় বাদ পড়েছে সেগুলো নিয়ে গবেষণা করা। আমরা জানতে চেষ্টা করেছিলাম যে, চাঁদে কি পরিমাণ পানি রয়েছে এবং এগুলোর গঠন কেমন।" ২০০৮ সালের এক বৃষ্টিময় বর্ষার দিনে চেন্নাই থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তরের শ্রীহরিকোটা থেকে চন্দ্রাভিযান-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি চাঁদের বুকে ভারতের পতাকা স্থাপন করে এবং চাঁদের পানির উপস্থিতি প্রমাণ করে। ভারতীয় গণমাধ্যমে এই সফলতা উদযাপন করা হয়।তবে যেখানে লাখ লাখ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের অর্থ নেই সেখানে এ ধরণের প্রকল্পে অর্থ খরচ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। ড. আন্নাদুরাই অটল ছিলেন। তিনি বলেন, "দরিদ্রের একটা বড় কারণ ছিল শিল্প বিপ্লবে আমাদের অংশগ্রহণ না করা। জাতি হিসেবে এতো বিপুল মানব সম্পদ থাকা সত্ত্বেও মহাকাশ গবেষণার সুবিধা না নিয়ে শুধু দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারি না আমরা।" মঙ্গল এবং আরও কিছু কয়েক বছর পর, তার নেতৃত্বেই প্রথম দেশ হিসেবে মঙ্গলে প্রথম চেষ্টাতেই নমুনা পাঠাতে সক্ষম হয় ভারত। রকেটের ভেতর মার্স অরবিটার স্থাপন করা হয় তিনি বলেন, "চাঁদে পৌছাতে হলে আমাদের স্যাটেলাইটকে প্রতি সেকেন্ডে এক কিলোমিটার যেতে হতো। আর মঙ্গলে পৌঁছাতে হলে প্রতি সেকেন্ডে ৩০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করার প্রয়োজন হয়। যা করতে বড় ধরণের পরিকল্পনা ও গণনার দরকার হয়েছিলো।" ভারতের মঙ্গল পরিক্রমণকারী যানকে "লাল গ্রহে" পৌছাতে সাড়ে ১০ মাস লেগেছিল। খরচ হয়েছিলো ৭৩ মিলিয়ন ডলার। তবে এটি ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সস্তা মঙ্গল অভিযান। ২০০০ রুপির নোটে মার্স অরবিটারের ছবি তিনি বলেন, "আমি আমার উপদেষ্টা প্রফেসর ইউ আর রাওকে বলেছিলাম যে, আপনার স্যাটেলাইট আরিয়াভাটার ছবি দুই টাকার ব্যাংক নোটে ছাপা হয়েছিলো। "আর আমার মঙ্গল অরবিটারের ছবি ছাপা হয়েছে দুই হাজার টাকার ব্যাংক নোটে। আমরা হাজার গুণ এগিয়ে গেছি", তিনি বলেন। ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ চাঁদে ভারতের প্রথম অভিযানের ১১ বছর পর, মহাকাশ বাজার অনেক বদলে গেছে। স্পেস এক্স এবং এর বারবার ব্যবহার উপযোগী ভারী রকেট আশ্চর্যজনকভাবে ব্যয় কমিয়ে আনছে। তিনি বলেন, "আমাদের তাল মেলাতে হবে। আমরা বারবার ব্যবহার উপযোগী লঞ্চার উন্নয়নের চেষ্টা করছি।" বারবার ব্যবহার উপযোগী রকেট উন্নয়নের কাজ করছে ভারত ভারতের মহাকাশ কর্মসূচীকে বিরল সফলতা হিসেবে ধরা হয় এবং জাতীয়ভাবেও সমর্থন দেয়া হয়। এই অর্জন ভারতকে প্রযুক্তিগত শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করেছে। যাই হোক, জাতীয় সম্মান এখনো মহাকাশ কর্মসূচীর মূল চালিকাশক্তি। আর মহাকাশে মানুষ পাঠানো অভিযানের বিষয়টিও ইসরোর পরিবর্তে রাজনৈতিক নেতৃত্বরাই ঘোষণা করেছে। অতীতের মতোই এখনো ইসরোর প্রথম সারির বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকেই যেমন বর্তমান প্রধানও ড. আন্নাদুরাইয়ের মতোই গ্রামাঞ্চল কিংবা ছোট শহর থেকে এসেছেন। চন্দ্রায়ন-২ জুলাইয়ে ভারত তার বিলম্বিত চন্দ্র অভিযান "চন্দ্রায়ন-২" শুরু করবে। চাঁদে প্রথম অভিযানের ১১ বছর পর হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় এই অভিযান। এই অভিযান চন্দ্র পৃষ্ঠ এবং এতে থাকা পানি, খনিজ এবং পাথরের গঠন নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে। শুরুর বছরগুলোতে এই অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন ড. আন্নাদুরাই। সব ঠিক থাকলে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে রোভার অবতরণকারী প্রথম দেশ হবে ভারত তিনি বলেন, "এখনো পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি জটিল।" এটি সফল হলে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার আর চীনের পর ভারত হবে চাঁদের বুকে নিয়ন্ত্রিত অবতরণে সক্ষম চতুর্থ দেশ। স্বীকৃতি ড. আন্নাদুরাই চাঁদে দ্বিতীয় অভিযানের সমাপ্তি দেখে যেতে চেয়েছিলেন। তবে গত বছরের জুলাইয়ের শেষ দিনে অবসর নেন তিনি। তিনি মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ক জাতিসংঘের কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন টানা দুই বছর। ভারত সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ পুরষ্কারসহ বেশ কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কার জিতেছেন তিনি। স্যাটেলাইট লোডিংয়ের কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন ড. আন্নাদুরাই "আমি ১০ বছর বয়সে সাঁতার শিখতে চেয়েছিলাম বলে আমার বন্ধুরা আমাকে চাষাবাদের জন্য তৈরি বড় একটি কুপে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো। ভেসে থাকতে হাত-পা ছুড়েছিলাম আমি। অভিজ্ঞতা ছিল ভয়ংকর। তবে আমি খুব দ্রুত সাতার শিখেছিলাম। আমার কঠিন অবস্থা আমাকে শিখিয়েছে যে, দরিদ্রতা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে শিক্ষা," ড. আন্নাদুরাই বলেন। তিনি নিয়মিত তার গ্রামে যান এবং তার পুরনো স্কুলটি সংস্কারে তহবিল সংগ্রহ করছেন। ইতিহাস ড. আন্নাদুরাই একটি ছোট গাড়ি চালান এবং শহরের কাছে একটি আবাসিক এলাকায় বাস করেন। তিনি বলেন, বেশ আরামেই জীবন পার করছেন এবং অর্থ কখনোই তার কাছে মুখ্য ছিল না। নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথে আন্নাদুরাই "আমরা যখন চন্দ্রায়ন-১ এ কাজ করতাম, আমি আমার দলের সদস্যদের বলতাম, এটি শুধু একটি প্রকল্প নয় বরং আমরা ইতিহাস গড়ছি", তিনি বলেন। তিনি হয়তো ক্লাসে ইতিহাস ঘৃণা করতেন কিন্তু ক্লাসরুমের বাইরে ইতিহাসই তৈরি করেছেন বটে। তার জীবন কাহিনী এখন তার রাজ্য তামিল নাড়ুর স্কুলের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। | "ক্লাস শুরু হওয়ার আগে গরুর গোবর পরিষ্কার করতাম আমি। কিন্তু দুর্গন্ধ থেকে যেতো।" বলেন ড. মিলস্বামী আন্নাদুরাই। |
এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। | পশ্চিমবঙ্গে প্রায় এক দশক ধরে ক্ষমতায় আছে মমতা ব্যানর্জিী তৃণমূল কংগ্রেস দল তার জনপ্রিয়তা হয়তো ১০ বছর আগের চাইতে কিছুটা কমে গিয়েছে - কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেস আবারও বিপুল বিজয় পেয়েছে, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে বহু পিছনে ফেলে । বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আনার জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বার বার এই রাজ্যে এসে সভা করেছেন, কিন্তু তবু ভোটের লড়াইয়ে এঁটে উঠতে পারেননি পায়ে চোট পেয়ে হুইলচেয়ারে বসে প্রচারাভিযান চালানো মমতা ব্যানার্জীর সাথে। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে - কেমন করে পশ্চিমবঙ্গের এবং সর্বভারতীয় রাজনীতির এত বড় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠতে পারলেন মমতা ব্যানার্জী - কী তার সাফল্যের উৎস। "রাজনীতিবিদ হিসেবে তার এই সাফল্যের পেছনে কিন্তু একটা প্রতিভা কাজ করে" - বলছিলেন সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক শিখা মুখার্জি, - "এবং ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এটা লিখেও গেছেন যে মমতা ব্যানার্জীর একটা ক্যারিশমা বা সম্মোহনী ক্ষমতা আছে।" তবে ১৯৭০-এর দশকে যখন তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল কংগ্রেস দলের একেবারে সাধারণ একজন কর্মী হিসেবেই। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই তাঁর মধ্যে অনেক দূর যাওয়ার সম্ভাবনা দেখেছিলেন তার সিনিয়র নেতারা। তিনি ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর অনুরাগী এবং তার প্রাথমিক রাজনৈতিক জীবন কেটেছে পশ্চিমবঙ্গে সেকালের সিনিয়র কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জির ছায়ায় - যিনি পরবর্তীকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। কলকাতার হাজরা এলাকার এক নিম্নবিত্ত পরিবারে মমতা ব্যানার্জীর জন্ম ১৯৫৫ সালে। তার পিতা ছিলেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ এবং যোগেশচন্দ্র কলেজ থেকে আইনের ডিগ্রি নেবার পর মমতা ব্যানার্জীর প্রথম পেশা ছিল স্কুলশিক্ষকতা। তবে রাজনীতি করতে শুরু করেছিলেন ছাত্রজীবন থেকেই । কিছু দিনের মধ্যেই দলে সিনিয়র নেতাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে মমতা ব্যানার্জী রাজনীতিতে অনেকদূর যাবেন। ১৯৭৬ সালে মাত্র একুশ বছর বয়সেই তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহিলা কংগ্রেস (আই) এর সাধারণ সম্পাদক হন। কয়েক বছর পর তিনি হন নিখিল ভারত যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক । "মমতা ব্যানার্জীর একটা বিশেষত্ব হলো তার প্রচণ্ড লড়াকু মনোবৃত্তি, এবং তার পরিশ্রম করার ক্ষমতা" - বলছিলেন শিখা মুখার্জি। তার ভাষায়, "তার রাজনৈতিক জীবনে বহু বাধা এসেছে, ২০০১ সালে রাজ্য নির্বাচনে হারার পর তার দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রায় ধ্বংস হবার উপক্রম হয়েছিল, কিন্তু তিনি আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন, দলকে পুনর্গঠিত করেছেন। এটা তার লড়াই করার ক্ষমতার প্রমাণ।" বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: 'বাংলার নিজের মেয়ে'র এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে টক্কর মমতা ব্যানার্জির উত্থান যে নন্দীগ্রামে সেখানে কেমন হল ভোট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের আভাস পশ্চিমবঙ্গের ভোটে ধর্ম কেন এবার গুরুত্ব পাচ্ছে ? ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির উত্থান কীভাবে? তৃণমূল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় মমতা ব্যানার্জীকে বর্ণনা করছে 'বাংলার নিজের মেয়ে' বলে মহিলা কংগ্রেসের নেতা হবার পরই তিনি একজন উদীয়মান রাজনীতিবিদ হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নজরে পড়েছিলেন। "ছোট ছোট অনেক ঘটনা আছে যার মধ্যে দিয়ে তিনি তখনকার কংগ্রেসের বড় বড় নেতাদের নজরে এসেছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো ১৯৮৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে সোমনাথ চ্যাটার্জির মত প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতাকে হারানো" - বলছিলেন সাবির আহমেদ - রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং প্রতীচী ট্রাস্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কারী। প্রকৃতপক্ষেই সেটা ছিল এক সাড়া-জাগানো ঘটনা। কোলকাতার যাদবপুরের একটি লোকসভা আসনে সেই প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতাকে হারিয়ে মমতা ব্যানার্জী ভারতের অন্যতম সর্বকনিষ্ঠ পার্লামেন্ট সদস্য হয়েছিলেন। এর পর ১৯৮৯ সালে নির্বাচনে ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেসবিরোধী হাওয়ার মধ্যে তিনি সেই আসনে হেরে যান। কিন্তু কিছুদিন পরই ১৯৯১এ আবার কলকাতা দক্ষিণ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে লোকসভায় ফিরে আসেন, এবং পরে আরো পাঁচবার লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। লোকসভা সদস্য থাকার সময় বেশ কিছু ঘটনায় মমতা ব্যানার্জীর সেই 'লড়াকু' ও 'প্রতিবাদী' ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। নিজ দলের বিরুদ্ধে সিপিআইএমকে সহায়তার অভিযোগ আনা, পার্লামেন্ট ভবনে পেট্রোলিয়াম মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, একজন এমপির সাথে হাতাহাতি, 'পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বঞ্চনার প্রতিবাদ জানাতে' রেলমন্ত্রীর প্রতি শাল ছুঁড়ে মারা এবং এমপি পদ থেকে ইস্তফা - ইত্যাদি নানা ঘটনায় আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। মমতা ব্যানার্জী প্রথম কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন ১৯৯১ সালে, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পি ভি নরসীমা রাও। আর প্রথম পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ১৯৯৯ সালে - যখন বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের অংশ হয়েছিল তার নিজের প্রতিষ্ঠিত দল তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা ব্যানার্জী কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৯৯৮ সালে, এবং কিছুকালের মধ্যেই এটি পরিণত হয় বামফ্রন্ট-শাসিত পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলে। বামফ্রন্ট সরকারের সময় ২০০৫ সাল থেকে পরবর্তী কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে শিল্প স্থাপনের জন্য কৃষিজমি বরাদ্দের কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণঅসন্তোষ তৈরি হয়। বিশেষ করে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে জমি রক্ষার জন্য গড়ে ওঠা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রধান বিরোধীদলে পরিণত হয় তৃণমূল কংগ্রেস। নন্দীগ্রামে আন্দোলনরত জনতার ওপর পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৪ জন নিহত হবার পর পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার-বিরোধী মনোভাব জোরদার হয়ে ওঠে। নন্দীগ্রামে কৃষকদের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে মমতা ব্যানার্জী হয়ে ওঠেন রাজ্যের জনপ্রিয় নেতা। সাবির আহমেদ বলছিলেন, "পশ্চিমবঙ্গে একটা সময় ছিল যে লোকে ভাবতো বামফ্রন্টকে কেউ হটাতে পারবে না। কিন্তু তাদের মোকাবিলা করার নেতৃত্ব এবং সাহস মমতা ব্যানার্জী দেখাতে পেরেছিলেন। আর ভূমি অধিগ্রহণের ইস্যুটিতে তিনি সাধারণ মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছিলেন।" "প্রথম দিকে তার শ্লোগান ছিল শুধুই বামফ্রন্ট হটাও - কিন্তু পরে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে গ্রামীণ মানুষের মধ্যে তার রাজনৈতিক ভিত্তি সৃষ্টি হয় - তার ফলেই মমতা ব্যানার্জির নির্বাচনে বিজয়ের পথ তৈরি হয়েছিল" - বলছিলেন শিখা মুখার্জি। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বামফ্রন্টের চাইতে বেশি আসন পায় তৃণমূল। আর তার দু'বছর পর বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সাথে জোট বেঁধে মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল দল ওই রাজ্যে ৩৪ বছর ধরে ক্ষমতাসীন থাকা বামফ্রন্টকে হারায়। মমতা ব্যানার্জী হন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী। এরপর থেকে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় আছেন। এর পর ২০১৬ এবং ২০২১এর নির্বাচনেও জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস। বিদায়ী রাজ্য বিধানসভার ২৯৫টির মধ্যে তার দলের হাতে ছিল ২১১টি আসন। পপুলিস্ট রাজনীতি? মমতা ব্যানার্জীর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল কংগ্রেস থেকে। তিনি ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর একজন অনুরাগী। তার রাজনৈতিক দর্শন মূলত কংগ্রেসের মধ্যেকার সমাজতন্ত্রী ধারার সাথে মিলে যায়, বলছিলেন শিখা মুখার্জি। "এটা আপনি পপুলিস্ট বলতে পারেন - কিন্তু কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা অনুযায়ী সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্য সুরক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিক্ষা - অর্থাৎ যে সমস্ত সেবা বিনে পয়সায় পাওযা উচিত - এটাই তার আদর্শিক অবস্থান, এটার জন্যই উনি লড়ে যাচ্ছেন। আর এটা ক্লাসিকাল কংগ্রেসেরই নীতি।" নন্দীগ্রাম আসনে জিতে ১৪ বছর আগে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পথ করে নিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। মমতা ব্যানার্জীর সরকার রাজ্যের দরিদ্র ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, নারী এবং সংখ্যালঘুদের জন্য নানা রকম জনকল্যাণ প্রকল্প চালু করেছে । 'কন্যাশ্রী', 'সবুজ সাথী', 'স্বাস্থ্য সাথী' -এরকম প্রকল্পগুলো একদিকে প্রশংসিত হয়েছে, আবার অন্যদিকে "পপুলিস্ট কর্মসূচি" বলে সমালোচিতও হয়েছে। এসব প্রকল্পে নানা দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। "কিন্তু এসব প্রকল্প মমতা ব্যানার্জীকে এনে দিয়েছে ভোটারদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা, এটা তাকে নির্বাচনে জিততে সহায়তা করেছে- আবার আরেক দিকে বামফ্রন্টের সময়কার ট্রেড ইউনিয়ন রাজের অবসান ঘটলেও এ রাজ্যে নতুন বিনিয়োগ আসেনি, নতুন কর্মসংস্থান হয়নি - পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার তরুণকে চাকরির জন্য অন্য রাজ্যে চলে যেতে হয়েছে" - বলছিলেন সাবির আহমেদ। তার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু - বিশেষ করে 'মুসলিম তোষণের' অভিযোগ এনে বিজেপি রাজনৈতিক মেরুকরণের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সাবির আহমেদ বলছেন, এসব অভিযোগ পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণ করা যায়না। "হজ হাউজ বা ইমাম প্রশিক্ষণের মত কিছু প্রতীকী প্রকল্প ছাড়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ রাজ্যে মুসলিম সমাজের সাধারণ পশ্চাৎপদতার ক্ষেত্রে কোন মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। " মমতা ব্যনার্জীর ব্যক্তি-ইমেজই তৃণমূলের শক্তি? মমতা ব্যানার্জী এবং তার রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে নিয়ে সমালোচকরা বলেন, এটি একান্তভাবেই মমতা ব্যানার্জীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা দল। "তৃণমূল কংগ্রেসকে খুব সুশৃঙ্খল দল বলা যাবে না। তাদের দলের কাঠমোও সুদৃঢ় নয় এবং দলটি কোন আদর্শের ভিত্তিতে তৈরি হয়নি। একজন আকর্ষণীয় ও সহজাত নেত্রীর ব্যক্তিত্বের ওপর ভর করে গড়ে উঠেছে দলটি" - লিখেছেন বিবিসির সৌতিক বিশ্বাস। রাজনীতিবিদ হিসেবে তার সাফল্যের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মমতা ব্যানার্জির এক বিরল ক্ষমতা রয়েছে মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারার। "পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এলিটিজমের একটা প্রভাব আগে থেকেই ছিল - কিন্তু মমতা ব্যনার্জী প্রেসিডেন্সী কলেজে না পড়েও বা নামী রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম না নিয়েও সফল রাজনীতিবিদ হয়েছেন। তার আটপৌরে ব্যাপারটাই মানুষ পছন্দ করেছেন" - বলছিলেন সাবির আহমেদ। তার কথা - "মমতা ব্যানার্জীর সাফল্যের কারণ হলো নেতৃত্ব দেবার সহজাত গুণ, আর মানুষ তাকে দূরের কেউ হিসেবে দেখে না - তাকে পাশের বাড়ির মেয়ের মত নিকটজন হিসেবে দেখে।" "সাধারণ মানুষের ভাষায় কথা বলা এবং তাদের সাথে মিশে যাবার ক্ষমতা - এটা তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য" - বলছিলেন শিখা মুখার্জি। | প্রতিপক্ষ যতই শক্তিধর হোক - মমতা ব্যানার্জী আবার প্রমাণ করে দিলেন যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজনীতিতে তিনি এখনো অপরাজেয় । |
প্রদত্ত দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর, এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দিন। | বুশ বনাম আল গোর: এরকম নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র আর দেখেনি। এরকম নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র আর কখনো দেখেনি। দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান এতটা কম আর কখনো ছিল না। নির্বাচনের ফল ঘিরে এক মাস ধরে চলেছিল অনেক নাটকীয় ঘটনা। ক্যালি শেল তখন কাজ করছিলেন আল গোরের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের অফিশিয়াল ফটোগ্রাফার হিসেবে। "সারা দেশ ঘুরে নভেম্বরের ৭ তারিখে, রাত দুটা বেজে ৩০ মিনিটে, শেষ সমাবেশটা আমরা করেছিলাম ফ্লোরিডায়। এটা খুবই অদ্ভুত একটা ব্যাপার যে, শেষ নির্বাচনী সভা হয়েছিল ফ্লোরিডায়, আর নির্বাচনের ফল শেষ পর্যন্ত আটকে গিয়েছিল এই ফ্লোরিডাতেই।" সেবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন আল গোর। এর আগে তিনি প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে আট বছর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ছিলেন জর্জ ডাব্লিউ বুশ। তিনি এর আগে টেক্সাসের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আশা করছিলেন, তার বাবা জর্জ বুশের মতো তিনিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন। কিন্তু নভেম্বরের ৭ তারিখে ভোটের দিন পর্যন্ত এই নির্বাচনে কে জিতবে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। কারণ জনমত জরিপে দুজনের ব্যবধান ছিল খুবই কম। ক্যালি শেলের মতে, আল গোর শিবির ছিল বেশ আশাবাদী, খুবই উদ্দীপ্ত। তবে তারা ধরে নিচ্ছিল না যে, জয়টা তাদেরই হতে যাচ্ছে। "আমি জানতাম, তারা বেশ নার্ভাস ছিল। কারণ প্রার্থী যখন তার বক্তৃতা নিয়ে কাজ করেন, তখন সেখানে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হয়। কিন্তু আল গোর শিবিরের লোকজন সাংবাদিকদের সেখানে ঢুকতে দেয়নি, যেটা বেশ অস্বাভাবিক। ভোটের যে হিসেব আসছিল, তাতে বোঝা যাচ্ছিল একেবারে হাড্ডহাড্ডি লড়াই হচ্ছে, দুই প্রার্থীর ব্যবধান খুবই কম।" আল গোর: জয়ের একেবারে কাছাকাছি এসেও হেরে গিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ বলে যে পদ্ধতি চালু আছে, তাতে জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিটি রাজ্যের জন্য ঠিক করা হয় ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা। কিছু রাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা মাত্র তিনটি বা চারটি। আবার বড় রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা ৫০ এর বেশি। ২০০০ সালে ফ্লোরিডার ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ছিল ২৫টি। কাজেই সেবার নির্বাচনে অন্য সব রাজ্যের ফলে যখন দুই প্রার্থীর ব্যবধান খুবই কম, তখন ফ্লোরিডাতেই এই নির্বাচনের ফল নির্ধারিত হতে যাচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইস্টার্ন টাইম রাত আটটার সময় বড় কয়েকটি টিভি নেটওয়ার্ক ঘোষণা করে বসলো, ফ্লোরিডায় জিতেছেন আল গোর। তার মানে তিনিই প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। আল গোর এবং তার পরিবার যখন এই খবর শুনছিলেন, তখন সেখানে ছিলেন ফটোগ্রাফার ক্যালি শেল। "তখন বাচ্চারা করিডোর ধরে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো। আল গোর শিবিরের কর্মীরা একে অন্যকে আলিঙ্গন করছিল। আল গোর কেবল তার হাতটা নিজের মাথার ওপর রেখে বললেন, এটা আসলেই একটা বিরাট ব্যাপার… । কিন্তু তারপরই আল গোরের কাছে ফোন কল আসতে লাগলো তার ক্যাম্পেইন ম্যানেজারের কাছ থেকে। ক্যাম্পেইন ম্যানেজার বলছিল, এই ফল বার বার পাল্টে যাচ্ছে। তারপর সাংবাদিকরাও বলতে শুরু করলো, ফ্লোরিডায় অনেক বড় ঝামেলা আছে…" ফ্লোরিডার বিভিন্ন দিক থেকে তখন যে ধরনের খবর আসছিল, তাতে বোঝা যাচ্ছিল, আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হতে যাচ্ছেন, সেটা জানতে বেশ দেরি হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যালট পেপার একেক রাজ্যে একেক রকম। এমনকি তাদের ভোট দেয়ার নিয়ম-কানুনও একেক জায়গায় একেক রকম। একই রাজ্যেই হয়তো কোন জেলায় ভোট নেয়া হচ্ছে ইলেকট্রনিক মেশিনে, কোথাও ব্যালট পেপারে ক্রস চিহ্ন দিয়ে। কোথাও হয়তো একটা পেপারে ছিদ্র করে তারা চিহ্ণিত করছে কাকে ভোট দিচ্ছে। এটাকে বলে চ্যাড। মনে হচ্ছিল টিভি নেটওয়ার্কগুলো যেন তাড়াহুড়ো করে আল গোরকে নির্বাচিত ঘোষণা করে দিয়েছে। নির্বাচনের ফল নিয়ে অব্যাহতভাবে চলছিল নানা জল্পনা। সেই সঙ্গে বিভ্রান্তি। পুরো ব্যাপারটি নিয়ে সবাই তখন প্রচন্ড স্নায়ু চাপে ভুগছে। ক্যালি শেলের মনে আছে, আল গোর তখন খুব শান্ত থাকার চেষ্টা করছিলেন। তিনি তখন হোটেল রুমের মেঝেতে শুয়ে পুরো বিষয়টির মানে বোঝার চেষ্টা করছিলেন। এরপর মধ্যরাতের একটু পর, টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলো এবার উল্টো ফল ঘোষণা করতে লাগলো, তারা বললো ফ্লোরিডায় আসলে জিতেছেন জর্জ ডাব্লিউ বুশ। আল গোর শিবিরে যেন বিপর্যয় নেমে এলো। "মনে হচ্ছিল এটি যেন এক শবযাত্রা। সবাই যেন পাথর হয়ে গেছে। আড়াইটার সময় আল গোর একা তার স্যুইটের বেডরুমে গিয়ে বুশকে ফোন করলেন এবং পরাজয় স্বীকার করলেন। বুশকে অভিনন্দন জানালেন।" "তখন সেখানে এতটাই নীরবতা যে, একটি পিন মেঝেতে পড়লে মনে হয় যেন সেটার শব্দ শোনা যাবে। কেউ কিছু বলছিল না। আমার মনে হয় সবাই একেবারে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। নির্বাচনে জেতার জন্য দেড় বছর ধরে সবাই কষ্ট করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে হারতে হলো ।" এক ভোটে নির্ধারিত হয়েছিল জর্জ ডাব্লিউ বুশের বিজয় তারপর আল গোর যখন হার স্বীকার করে বক্তৃতা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন তার টিমের কাছে একটি বার্তা আসলো। "তার দলের একজন কর্মীর কাছে একটা টেক্সট মেসেজ আসলো ক্যাম্পেইন ম্যানেজারের কাছ থেকে। এটিতে বলা হলো, আল গোরকে যেন অনুষ্ঠান মঞ্চে যেতে দেয়া না হয়। কারণ ভোটের লড়াই এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু আল গোর চাইছিলেন, তিনি মঞ্চে গিয়ে বক্তৃতা দেবেন। তিনি বলছিলেন, লোকজন বহুঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে, আমি সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই। ''তখন একটা লোক সবার সামনে গিয়ে বললো, মাইক রেডি নয়, কাজেই সবাই আবার বাইরের রুমে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। এরপর লোকটা আল গোরকে বললো, ফ্লোরিডার ব্যাপারটা এখনো শেষ হয়নি। তখন আল গোর বললেন, কী বললে? আমার মনে আছে, তার মুখের হতবাক অভিব্যক্তি। তারপরই শোনা গেল লোকজন উল্লাসে ফেটে পড়ছে। আল গোর তখন জানতে চাইলেন, আসলেই তাই? তুমি মজা করছো না তো?" সেই ফোন কলের কথোপকথন ক্যালি শেলের শোনার সুযোগ হয়েছিল। সেই মুহূর্তগুলি তিনি ক্যামেরায় বন্দিও করেছেন। আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন যেভাবে অন্য দেশের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০: ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি কী ও কীভাবে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের যেভাবে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয় ভোট গণনা নিয়ে এরকম বিশৃঙ্খলা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহিন "ছবিতে আপনি যা দেখছেন, সেটা দেখে আসলে ঐ মুহূর্তটা কল্পনা করা কঠিন। আল গোর ছিলেন একটি হেলানো চেয়ারে। পুরো রুমটি মানুষে ঠাসা। সবাই তাকিয়ে আছে। কিন্তু কেউ কথা বলছে না। সবাই দাঁতে নখ কাটছে। তাদের কথোপকথন শোনা যাচ্ছিল। বুশ বলছিলেন, না। এটা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু গোর বলছিলেন এটা শেষ হয়নি। ''তাদের দুজনের মধ্যে বাদানুবাদ চলছিল। দুজনের স্বরই ছিল বেশ কর্কশ। কথা শেষ করে আল গোর ফোন রাখলেন, একটু থামলেন, তারপর হাসিতে ফেটে পড়লেন। তখন সবাই হাসছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম এটা তো একটা ঐতিহাসিক ঘটনা.. আমার হাঁটু তখন কাঁপছে। কিন্তু আমাকে তখন ভাবতে হচ্ছিল, আমার শরীর কাঁপলে চলবে না। আমি যেন ঠিকমত ছবি তুলতে পারি। আমি তখন জানি আমার ছবিটা কি হবে। এই ছবিটা হবে ঐতিহাসিক। আমার এই মুহূর্তটা মিস করা চলবে না।" এরপর ফ্লোরিডার আদালতে শুরু হলো কয়েক সপ্তাহ ব্যাপী এক আইনি লড়াই। পুরো দেশ এবং পুরো বিশ্ব তখন অপেক্ষা করছে- কে হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। ভোট পুনর্গণনার সময় কয়েকটা সমস্যা দেখা দিল। বিশেষ করে যেসব ব্যালট পেপারে ফুটো করা হয়েছে, সেগুলোতে। যেগুলোকে বলা হয় চ্যাড। একটা ব্যালটে যদি ছিদ্রটা পুরোপুরি না করা হয়ে থাকে, সেটাকে কি গোনা হবে? এগুলোকে বর্ণনা করা হচ্ছিল ঝুলে থাকা বা নড়তে থাকা চ্যাড বলে। ফ্লোরিডার কিছু অংশে ব্যবহার করা হয়েছিল বাটারফ্লাই ব্যালট। এটি আসলে দুই পাতার এক ভোটিং স্লিপ। সেখানে প্রার্থীদের নাম বাম এবং ডানদিকে ছড়ানো। আর চ্যাড বা ছিদ্র করতে হবে মাঝখানে। সমালোচকরা বলছিলেন, অনেকে ভুল করে ভুল প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বসেছেন। লোকজনকে তখন প্রতিটি ভোট হাতে গুণতে হচ্ছে। রিপাবলিকানরা চাইছিল ভোট পুনঃগণনার কাজটি যেন থামানো যায়। তারা ফ্লোরিডার কোর্টে গেল। কিন্তু ডেমোক্রেটরা বলছিল, না, সবগুলো ভোট পুনর্গণনা করতে হবে। আদালত ভোট পুনর্গণনার পক্ষে রায় দিল। এই পুরো বিষয়টির জন্য তখন আল গোরের সমালোচনা চলছিল, যে তিনি হার স্বীকার করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। হেরে গিয়ে অভিযোগ তুলছেন। ভোটের ফল চ্যালেঞ্জ করছেন। ভোটের ফল শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে কিন্তু ক্যালি শেল বলছেন, ভোট পুনঃগণনার দরকার ছিল। "আপনি যদি একটা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশে থাকেন, সেখানে এটা গুরুত্বপূর্ণ। সারা দুনিয়া দেখছে আমরা কি করি। আমরা সারা দুনিয়াকে পরামর্শ দেই কীভাবে নির্বাচন করতে হবে। অথচ দেখা যাচ্ছে, আমরা নিজেরাই ঠিকমত নির্বাচন করতে পারি না বলে প্রমাণিত হচ্ছে।" ফ্লোরিডার সর্বোচ্চ আদালত রায় দিল, প্রতিটি ভোট হাতে গুণতে হবে। কিন্তু ১২ ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এই রায় উল্টে দিল। সুপ্রিম কোর্টের নয় বিচারকের ৫ জন ভোট দিলেন ভোট পুনঃগণনা বন্ধ করার পক্ষে, চারজন বিপক্ষে। আদালত ভোটের প্রথম ফলকেই সঠিক বলে রায় দিলেন। অর্থাৎ ফ্লোরিডায় জর্জ ডাব্লিউ বুশই জিতেছেন। এর ফলে ফ্লোরিডার সবগুলো ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে গেলেন জর্জ ডাব্লিউ বুশ। তার মোট ইলেকটোরাল কলেজ ভোট দাঁড়াল ২৭১… প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যত ভোট দরকার, তার চেয়ে এক ভোট বেশি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যখন আল গোরের হোয়াইট হাউসে যাওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল, তখন তার কাছেই ছিলেন ক্যালি শেল। "আইনজীবীরা সবাই তখন ফোনে কথা বলছে। আমার মনে পড়ছে, আল গোর তখন বললেন, সব শেষ হয়ে গেছে, ঠিক? আমরা কি আর কিছু করতে পারি?" আইনজীবীরা বললো, না, সব শেষ, আর কিছু করার নেই। তখন আল গোর বললেন, তাহলে আর কিছু করার নেই, আমাদের সবার এখন ঘুমাতে যাওয়া উচিত। আমার মনে হচ্ছিল, তিনি বেশ দমে গিয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল, তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেলে বেশ ভালোই দেশ চালাতে পারতেন। । আমার মনে হয় আল গোর বেশ নিরাশ হয়েছিলেন, যে সিস্টেমের ওপর তিনি এতটা আস্থা রেখেছিলেন, সেটি শেষ পর্যন্ত কাজ করেনি।'' ফটোগ্রাফার ক্যালি শেল এরপর বারাক ওবামার সঙ্গেও কাজ করেছেন, তার ছবি দিয়ে একটি বইও প্রকাশ করেছেন। আল গোর পরবর্তীতে জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে তার কাজের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন। আর জর্জ বুশ হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩ তম প্রেসিডেন্ট। ২০০৪ সালেও তিনি খুব সহজে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। | যুক্তরাষ্ট্রে ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং বিতর্কিত নির্বাচন। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ এবং আল গোরের মধ্যে এই নির্বাচনে ভোট গণনা নিয়ে তৈরি হয়েছিল তীব্র বিবাদ এবং অনেক আইনি লড়াইয়ের পর নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছিল সুপ্রিম কোর্ট থেকে। এ নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষীর এই পর্বটি তৈরি করেছেন রেবেকা কেসবি। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | কেলভিন সান মার্কিন ডাক্তার কেলভিন সান এখানে স্মৃতিচারণ করে বলেছেন সে একই হোটেলে এক গোপন অংশে তার রাত কাটানোর কাহিনি। তিনি অন্য পর্যটকদের সতর্ক করে দিচ্ছেন যে তারা যেন ওই হোটেল থেকে দূরে থাকেন। কেলভিন সানদের সেই রাতেই উত্তর কোরিয়া ছেড়ে যাবার কথা ছিল। তিনি ২৪ ঘন্টার বেশি সময় ধরে নির্ঘুম ছিলেন। তিনি এবং তার বন্ধুরা একটা মিনিবাসে উঠলেন পিয়ংইয়ং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে যাবার জন্য। এমন সময় মিনিবাসটিতে উঠলো উত্তর কোরিয়ান রক্ষীদের একটি দল। কর্মকর্তারা বললেন, একটা সমস্যা হয়েছে। সেটার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কেলভিন সানদের গ্রুপটিকে যেতে দেয়া হবে না। বাসের মধ্যে একটা নিরবতা নেমে এলো। সান ভাবছিলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন দেশে তার গত একটি সপ্তাহ ঘুরে বেড়ানোর কথা। এটি ছিল তার সবচেয়ে স্মরণীয় ভ্রমণগুলোর একটি। "উত্তর কোরিয়ায় ওই এক সপ্তাহে আমরা এত কিছু করেছিলাম যে আমাদের মনেই হয়নি সে হোটেলের পাঁচ তলায় যাওয়াটা কোন সমস্যার কারণ হতে পারে," বলছিলেন সান। রক্ষীরা বললো, পর্যটকদের দলটিকে মিনিবাস থেকে নেমে আসতে। তখনও তার ওই ব্যাপারটার কথা মনে হয়নি। কেলভিন সানের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা নিউইয়র্ক শহরে। তার বাবা-মা চীনা। তার বয়স কুড়ির কোঠায় পৌঁছানোর আগে তিনি ওই রাজ্য ছেড়ে বলতে গেলে বের হননি। তিনি তখন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েটের ছাত্র, যার ক্যাম্পাস নিউইয়র্কের বাড়ি থেকে মাত্র ২০ মিনিটের পথ। তাকে তার পরিচিত গন্ডির বাইরে বের হতে হয়নি। কিন্তু ২০১০ সালে তিনি মিশরে বেড়াতে গেলেন, আর সেই থেকেই তার পৃথিবী ঘুরে দেখার আকাঙ্খা জেগে উঠলো। তিনি 'মনসুন ডায়রিজ' নামে ভ্রমণ সংক্রান্ত একটি ব্লগ লেখা শুরু করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই তার বহু 'ফলোয়ার' জুটে গেল। প্রতি ছুটি এবং শনি-রবিবারগুলোকেও তিনি কোন না কোন নতুন দেশে যাবার জন্য ব্যবহার করতে লাগলেন। তার লক্ষ্য ছিল, কোন অভিজ্ঞতার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, এবং এক দেশে তাকে দ্বিতীয়বার যেতে না হয় - তা নিশ্চিত করা। মেডিক্যাল স্কুলে তার দ্বিতীয় বর্ষ শুরুর আগেই সান ঠিক করলেন, গ্রীষ্মের ছুটিকে তিনি এমন একটা ভ্রমণে বের হবেন যা শুরু হবে মধ্যপ্রাচ্যের কোন একটি দেশ থেকে এবং শেষ হবে এশিয়ার কোন এক জায়গায়। ইয়াংগাকডো হোটেল তিনি যে ভ্রমণসূচি তৈরি করলেন, তা ছিল খুবই ঢিলেঢালা। এমন কিছু ফাঁকা দিন রাখা হলো - যে সময়গুলোয় তিনি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বন্ধুদের সাথে আশপাশের কোথাও চলে যেতে পারবেন। উত্তর কোরিয়াও তার মূল পরিকল্পনার অংশ ছিল না। পিয়ংইয়ং-এর ইয়াংগাকডো হোটেলের গোপন পাঁচতলা তো ঘুণাক্ষরেও ছিল না। সেটা ছিল ২০১১ সাল। তখনকার দিনে পশ্চিমা পর্যটকরা উত্তর কোরিয়া যেতে চাইলে একজন প্রাইভেট ট্যুর অপারেটরের সাহায্য নিতে হতো। সে সময় পাঁচ-ছ'টি আন্তর্জাতিক ট্যুর অপারেটর ছিল যারা চীন হয়ে উত্তর কোরিয়ায় গাইডেড ট্যুর করাতো। কিন্তু ২০১৭ সালে এই ধরণের ভ্রমণের নিয়মকানুন কঠোর করা হয়। অনেকের মতে এর একটা কারণ ছিল, একজন পশ্চিমা ছাত্র এভাবে উত্তর কোরিয়ায় গিয়ে ইয়াংগাকো হোটেলের সেই নিষিদ্ধ পঞ্চম তলায় গিয়েছিলেন। বেইজিং থাকার সময় কেলভিন সান দেখলেন, আমেরিকায় ফিরে যাবার আগে তার হাতে এক সপ্তাহ সময় আছে। তিনি ভাবলেন, উত্তর কোরিয়ায় যাবার জন্য এটাই তো সুবর্ণ সুযোগ। তিনি তখন ট্যুর অপারেটরদের সাথে যোগাযোগ করলেন এবং যে সবচেয়ে ভালো অফার দিলো তাকে বেছে নিলেন। "আমি যত ভিসা ফর্ম পূরণ করেছি তার মধ্যে অন্যতম সহজ ছিল উত্তর কোরিয়ারটি। সেদেশে যাবার আবেদনের জন্য আপনাকে এমনকি পাসপোর্টটিও জমা দিতে হতো না। আমার ধারণা অনেক লোকই চেষ্টা করতেও চায় না কারণ তারা মনে করে ব্যাপারটা খুব ঝামেলার হবে।" নিউইয়র্কে ফিরে যাবার আগে সে দফায় উত্তর কোরিয়াই ছিল শেষ দেশ। এর পরই তার মেডিক্যাল স্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের পড়াশোনায় ফিরে যাবার কথা। সান ছিলেন ২০ জনের একটি গ্রুপের অংশ। এতে আমেরিকান, ইউরোপিয়ান এবং চীনা পর্যটকরা ছিলেন - যাদের অধিকাংশের বয়েসই ছিল ২০-এর কোঠায়। বেইজিংএ তারা ট্যুর আয়োজকদের সাথে দেখা করলেন, তাদের বুঝিয়ে দেয়া হলো যে উত্তর কোরিয়া সফরের সময় কিভাবে চলতে হবে। বলা হলো, উত্তর কোরিয়ার সংস্কৃতিকে সম্মান করতে হবে, সব সময় গাইডদের কথা শুনতে হবে। রাজধানী পিয়ংইয়ংএ তারা থাকবেন ইয়াংগাকডো হোটেলে। তবে এর পাঁচতলার ব্যাপারে কোন কিছুই বলা হয় নি। পিয়ং ইয়ং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পিয়ংইয়ং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেই সানের চোখে পড়লো যে জায়গাটা চীনের চেয়ে কত আলাদা। "মনে হলো যেন ঈশ্বর নিজেই সব রঙকে অনুজ্জ্বল করে দিয়েছেন,"বলছিলেন সান "বেইজিং ছিল এক রঙিন শহর। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার সাথে তুলনায় তাকে রীতিমত উৎকট মনে হবে।" "শহরের ভবন, পোস্টার, রাস্তার নির্দেশিকা, লোকজনের কাপড়-চোপড় - সবই যেন শুধু সাদা, ধূসর বা কালো। তার মাঝে একটু হয়তো লাল আছে - কারণ তা কমিউনিস্ট পার্টির রঙ। মনে হচ্ছিল যেন আমি একটা টাইম মেশিনে বসে ১৯৭০এর দশকের সোভিয়েট টিভির অনুষ্ঠানে ঢুকে পড়েছি।" সান এবং তার দলকে উত্তর কোরিয়া ঘুরে দেখানোর দায়িত্বে ছিলেন দুজন পুরুষ এবং একজন মহিলা গাইড। তাদের বয়েস ছিল ৪০-এর কোঠায়। তারা জানালেন, দু'জনই এক সময় উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীতে কর্মকর্তা ছিলেন। "শুরুতে তাদের মনে হয়েছিল একটু কড়া ধরণের। তারা বলছিল, তাদের সাহায্য ছাড়া রাস্তার পার না হতে, বা কিছু-কিছু ভবনের ছবি না তুলতে। কিন্তু একটু পরই আমাদের সাথে তাদের বেশ ভাব হয়ে গেল।" সান বলছিলেন,"গাইডরা মদ্যপান করতে ভালোবাসতেন। আমরা জানতে পারলাম যে কোরিয়ান সংস্কৃতিতে মদের একটা কেন্দ্রীয় ভুমিকা আছে, এবং তারা প্রতি সন্ধ্যাতেই তাদের সাথে আড্ডা-গল্পগুজব করতে আমাদেরকে উৎসাহিত করতেন।" পিয়ংইয়ং তারা উত্তর কোরিয়ার বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গা ঘুরলেন। যেমন জুচে টাওয়ার, ওয়াকার্স মেমোরিয়াল, দুই কোরিয়ার মধ্যেকার অসামরিকীকৃত অঞ্চল। আরো দেখলেন ইউএসএস পুয়েবলো - ১৯৬৮ সালে উত্তর কোরিয়ার জিম্মি করা মার্কিন নৌ-বাহিনীর জাহাজ। তবে উত্তর কোরিয়া কী চোখে আমেরিকাকে দেখে সেটির আসল ধারণা সান পেয়েছিলেন সেই সব মদ্যপান এবং সামাজিক মেলামেশার সময়। দেশটিতে ইন্টারনেট সরকার-নিয়ন্ত্রিত এবং সেখানকার টিভিও সীমিত এবং প্রধানত: সরকারি প্রচারণাই চালানো হয়। "আমাদের গাইডরা মাইকেল জ্যাকসনের ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিল। তারা আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করেছিল, তিনি এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কিনা। তারা যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নির্মমতা নিয়েও অনেক প্রশ্ন করেছিল। উত্তর কোরিয়ায় যে অল্প কিছু আন্তর্জাতিক টিভি অনুষ্ঠান দেখানো হতো তার একটি ছিল আমেরিকান রিয়ালিটি শো 'কপস' যাতে পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুসরণ করে তার বাস্তব অভিযান দেখানো হয়। এটি নিয়েও তারা অনেক প্রশ্ন করতো।" কিন্তু তাদের প্রশ্নের বিষয়বস্তু নয় - বরং যেভাবে তারা প্রশ্নগুলো করতো, সেটাই সানকে চমৎকৃত করতো। "মনে হতো এটা নিতান্ত কৌতুহলের চাইতেও বেশি কিছু। যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তাদের মনে যে বিশেষ ধারণা রয়েছে - সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছেন তারা।" উত্তর কোরিয়ার একটি গ্রামে এক শুটিং রেঞ্জে সান তার জীবনের প্রথমবারের মতো বন্দুকের গুলি ছুঁড়লেন। গ্রুপের বেশির ভাগের গুলিই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। "গাইডদের মনে আমেরিকার বন্দুক-সহিংসতা সম্পর্কে যে ধারণা ছিল - তাতে তারা আমাদের হাতের টিপ এত খারাপ দেখে উচ্চস্বরে তাদের বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।" কয়েকদিন পার হবার পর নিয়মকানুন নিয়ে গাইডদের কড়াকড়ি কমে গেল। এর পর গ্রুপের কেউ একা-একা রাস্তা পার হলে তারা আর উদ্বিগ্ন হতেন না। ছবি না তোলার জন্য নির্দেশও আর দিতেন না তারা। সপ্তাহটি ছিল সত্যি মনে রাখার মতো। সানের সাথে খুব দ্রুতই অন্য সফরসঙ্গীদের বন্ধুত্ব হয়ে গেল। গাইডদের সাথেও সম্পর্ক সহজ হয়ে এলো তাদের। উত্তর কোরিয়ায় তাদের শেষ রাতে পুরো গ্রুপটি সবাই মিলে ডিপ্লো নামে একটা নাইটক্লাবে গেলেন। সেখানে মাইকেল জ্যাকসন সহ ১৯৮০-র দশকের বিভিন্ন গানের সাথে তারা নাচলেন। ইয়াংগাকডো হোটেলে ফিরে গাইডরা আরো একদফা মদ্যপানের জন্য গ্রুপটিকে আমন্ত্রণ জানালেন। তারা বেশি সময় ছিলেন না। তারা একটা ব্যস্ত সপ্তাহ কাটিয়েছেন। এর পর গ্রুপটির সদস্যরা যে যার রুমের দিকে রওনা দিলেন। কিন্তু কয়েকজন, যারা অতটা ক্লান্ত হননি, তারা ভাবলেন ঘুমোতে যাবার আগে একটা ঘরে সবাই মিলে আবার একটা আড্ডা হোক। তখনই আরেকজন প্রস্তাব করলেন, হোটেলটার বাকি অংশগুলো ঘুরে দেখলে কেমন হয়? হোটেলের পাঁচতলার সন্ধানে কেলভিন সানদের অভিযান উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে উঁচু ভবনগুলোর একটি হচ্ছে ৪৭-তলা এই ইয়াংগাকডো হোটেল। তায়েডং নদীর মাঝখানে একটি দ্বীপের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এই হোটেল। এতে আছে চারটি রেস্তোরাঁ, বোলিং এবং ম্যাসাজ পার্লার। বেডরুমগুলোতে টিভি আছে তাতে পুরোনো বিবিসির ওয়ার্ল্ড নিউজ বার বার দেখানো হয়। এ দেশে আসা টুরিস্টদের কাছে এটাই সবচেয়ে পছন্দের থাকার জায়গা। উত্তর কোরিয়ার টুরিস্ট বোর্ড একে পাঁচতারা হোটেল হিসেবে প্রচার করে কিন্তু ইন্টারনেটে পর্যটকদের মূল্যায়নে একে তিন-তারার কাছাকাছি বলে উল্লেখ করা হয়। "দেখে মনে হতে পারে যেন তারা ১৯৮৪ সালে ভেগাসে কাউকে পাঠিয়েছিল, বলা হয়েছিল, ওখানে গিয়ে দেখে এসো কী কী আছে, তার পর হুবহু সেরকম একটা হোটেল বানিয়ে ফেলো। তারা সেটাই করেছে, কিন্তু তা করতে গিয়ে গোলমাল করে ফেলেছে," এমন বর্ণনাই করেছেন একজন ব্লগার। কেলভিন সান বলেন, তারা যা করছিলেন তা কত গুরুতর তা বোঝেন নি তারা এই হোটেলে পাঁচ রাত থাকার সময় সান এবং তার সফরসঙ্গীদের সাথে সর্বক্ষণ ছিল গাইডরা। তাদের ছাড়া নিজেরা নিজেরা ভবনটি ঘুরে দেখার এটাই সুযোগ। তাছাড়া এমন কোন নিয়মের কথা তো বলা হয়নি যে হোটেলটা ঘুরে দেখা যাবে না। তারা প্রথমে উঠলেন খোলা ছাদে। তারপর গেলেন একেবারে ওপরের তলায় ঘুর্ণায়মান রেস্তোরাঁতে। তার পর লিফট দিয়ে নিচে নামতে লাগলেন। তখনই গ্রুপের একজন খেয়াল করলেন যে লিফটে পাঁচ তলায় যাবার কোন বোতাম নেই। লিফটের প্যানেলে দেখা যাচ্ছে চারতলা, তার পরই পাঁচ বাদ দিয়ে ছয় তলা। "আমাদের দেখা উচিত এর কোন পাঁচ তলা আসলেই আছে কিনা। নাকি তারা কোন কুসংস্কারের কারণে ইচ্ছা করেই লিফটে পাঁচতলা বলে কিছু রাখেনি,"একজন বললেন। ভ্রমণ বিষয়ক ব্লগাররা এই হোটেলের গোপন পাঁচতলায় কি আছে তা নিয়ে ইন্টারনেটে অনেক জল্পনা কল্পনা করেছেন। সানের গ্রুপে কয়েকজন ছিলেন যারা অভিজ্ঞ পর্যটক, তারা এটার কথা শুনেছিলেন। সান এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। "ইয়াংগাকডো হোটেলের পাঁচ তলায় গেছি এমন প্রথম লোক আমরা ছিলাম না, শেষও ছিলাম না। ২০১১ সাল পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ায় কোন পর্যটককে কখনো আটক করা হয় নি। আমরা যা করছিলাম তা কতটা গুরুতর তার কোন ধারণা আমাদের ছিল না।" সানরা যে ট্যুর অপারেটরকে ভাড়া করেছিলেন, সেই ইয়ং পাইওনিয়ার ট্যুরসের ওয়েবসাইটে এখন একটি পাতা আছে যাতে বলা আছে যে পর্যটকদের জন্য পাঁচ তলায় যাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এরকম কোন সতর্কবাণী ২০১১ সালে অনলাইনে বা অফলাইনে কোথাও ছিল না। রহস্যময় পাঁচতলায় কেলভিন সানের দল "আমাদের কখনোই পঞ্চম তলা থেকে দূরে থাকতে বলেনি আমাদের গাইডরা। এ নিয়ে কোন কথাই হয়নি।" অন্য একজন পর্যটক যিনি এর আগেও সেখানে গেছেন, তিনি জানিয়েছিলেন যে পঞ্চম তলার যেহেতু টেকনিক্যালি কোনো অস্তিত্ব নেই, তাই সেখানে গেলে তাদের কোনো অসুবিধে হবেনা। ফলে সান-রা চারতলায় পৌঁছে লিফট থেকে বেরিয়ে এলন, এবং হোটেলের পেছনের অংশের সিঁড়ির দিকে গেলেন। তারা হাসিখুশিই ছিলেন, তবে সান বলেন যে তাদের ভেতরে একটা উত্তেজনাও কাজ করছিল। "আমাদের একজন করিডোরে আমাদের আগে আগে হাঁটছিল। সে হঠাৎ ঘুরে দৌড়ে এলো। বললো, 'না, এদিকে নয়, আমি একটা চিৎকার শুনতে পেয়েছি।' সান বলেন, তিনি কোন চিৎকার শুনতে পাননি, কিন্তু তার ভয়-ভয় লাগছিল। "আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে দিক পরিবর্তন করে আমরা ছয় তলায় যাবো, তার পর সিঁড়ি দিয়ে পাঁচ তলায় নামবো।" এই পথ দিয়ে পাঁচ তলায় ঢুকতে গিয়ে তারা দেখলেন সেখানে কোন পাহারা নেই, এবং পথটা খোলা। তারা যার যার ক্যামেরা বের করলেন, এবং ভেতরে ঢুকলেন। ঘরগুলোর ছাদ খুব নিচু প্রথম যেটা তাদের চোখে পড়লো যে সেই ফ্লোরের ছাদ খুব নিচু, অন্য তলাগুলোর তুলনায় প্রায় অর্ধেক। তাদের কয়েকজনকে মাথা কাত করে বা নিচু করে চলতে হচ্ছিল। তারা একেকজন গেলেন একেক দিকে। হাঁটতে হাঁটতে সান লক্ষ্য করলেন যে পুরো জায়গাটায় আলো খুব কম, কংক্রিটের বাংকারের মতো। নিচু সিলিং ছাড়া বাকিটা দেখতে একটা সাধারণ হোটেলের করিডোরের মতোই, দুপাশে দরজা। বেশিরভাগ দরজাই বন্ধ, তবে একটি কক্ষ খোলা। দরজার বাইরে একজোড়া জুতো পড়ে আছে। কিন্তু ভেতরে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলেন না তারা। "ঘরটার ভেতর থেকে আলো আসছিল। আমরা সিকিউরিটি ক্যামেরা দেখতে পেলাম। কিছু টিভি পর্দা আছে, তাতে বিভিন্ন বেডরুমের ভেতরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, এমন কিছু যন্ত্রপাতি দেখা যাচ্ছে যা নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হয় বলে মনে হলো। আমি ভাবলাম, হোটেলের কর্মীরা অতিথিদের ওপর নজরদারি করার যে কথা শোনা গেছে তার যন্ত্রপাতি এখানেই রাখা হয়।" সানের একজন বন্ধু জায়গাটির একটা ভিডিও করতে শুরু করলেন ।সান ছবি তুলতে লাগলেন। সবাই কথা বলছিলেন ফিস ফিস করে। আমরা দুর্ঘটনাবশত: ফ্ল্যাশ ফটোগ্রাফিও ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু আমাদের খুঁজে বের করতে কেউ আসেনি। ঘরগুলোর দেয়ালে উজ্জ্বল রঙে আঁকা আমেরিকা ও জাপান-বিরোধী প্রচারণামূলক ছবি ঝোলানো ছিল। এর কোনো কোনোটিতে ছিল সাবেক শীর্ষ নেতা কিম জং ইলের ছবি। একটি ছবির ক্যাপশনে বলা হয়েছে: "এই বোমা আমেরিকানদের তৈরি। আমেরিকানদের তৈরি যে কোন জিনিসই আমাদের শত্রু। আমেরিকার বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ বার প্রতিশোধ নাও।" 'আমেরিকান সবকিছুই আমাদের শত্রু' কয়েক মিনিট পরে একজন অপরিচিত লোক ছায়ার ভেতর থেকে বেরিয়ে এগিয়ে এলো তাদের দিকে। "পথ হারিয়েছো?" সে শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলো ইংরেজিতে। কেউ একজন বললো, হ্যাঁ। লোকটি মাথা নাড়লো, আঙুল দেখালো সিঁড়ির দিকে। "সে আমাদের সাথে আমাদের রুম পর্যন্ত আসেনি, তাকে ক্রুদ্ধ বা উত্তেজিতও মনে হয় নি।" গ্রুপটি একটি বেডরুমে ফিরে এলেন, তারা একমত হলের যে ওই হোটেলে কর্মকর্তার সাথে দেখা হওয়াতে তারা হুমকি অনুভব করেননি। কয়েকজন বললো তারা আবার যাবে সেখানে। পাঁচতলায় গিয়ে ওই গ্রুপের একজন একটা দরজা খুললো। কিন্তু খোলার পর দেখা গেল একটা ইটের দেয়াল ছাড়া কিছুই নেই। আরেকজন আরেকটি দরজা খুলে দেখতে পেলো, সেখান থেকে একটা সিঁড়ি উঠে গেছে আরেক তলায়। "বলতে পারেন, একটা ফ্লোরের ভেতরই আরেকটা ফ্লোর।" জাপানবিরোধী পোস্টার তারা আরো তালাবন্ধ কক্ষ এবং দেয়ালে লাগানো আরো পোস্টার দেখতে পেলেন। সানের কোরিয়ান ভাষা জানা ছিল না। কিন্তু ইউটিউবে তার ভিডিও তোলার পর তিনি এর কিছু বার্তার অর্থ জানতে পারলেন। এসব পোস্টারে কিম পরিবারের শক্তি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রতিশোধ নেবার কথা আছে। একবিংশ শতাব্দীকে প্রযুক্তির যুগ বলে ঘোষণা করা হয়েছে আরেকটি পোস্টারে, তাতে দেখা যাচ্ছে ১৯৮০র দশকের একটি কম্পিউটারের ছবি। একটু পর আরেক জন হোটেল কর্মকর্তা সেখানে আবির্ভূত হলেন, এবং ভদ্রভাবে বললেন তাদের যার যার ঘরে ফিরে যেতে। কিন্তু এরপরও কয়েকজন তৃতীয় বারের মতো ওই পাঁচতলায় গেলেন। এর মধ্যে দু'জন আলাদা হয়ে একটু আড়ালে গিয়ে চুমু খেলেন (এই তথ্য বের হয়েছিল অনেক বছর পর এক পুনর্মিলনীতে)। এবার আরেকজন রক্ষী সেখানে এলেন, এবং আবারও শান্তভাবে তাদের ঘরে ফিরে যেতে বললেন। "আমাদের সবারই বয়েস ছিল ২০-এর কোঠায়। আমার বোকা এবং সরল ছিলাম। আমাদের কাছে ব্যাপারটা নির্দোষ এবং উত্তেজনাপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। তার পরের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, আমরা এখন যা জানি তা তখন জানলে এটা করতাম না।" সান এবং তার সঙ্গীরা ভোর পাঁচটার দিকে যার যার ঘরে গেলেন। জিনিসপত্র ব্যাগে ভরে ফ্লাইটের জন্য তৈরি হলেন। তাদের মিনিবাস আসার কথা ঠিক দু'ঘন্টা পরই। পোস্টার: আমাদের জেনারেলই সবার সেরা কিন্তু সকাল সাতটায় মিনিবাসে ওঠার পরই যখন হোটেল কর্মকর্তারা এসে তাদের বাস থেকে নামতে বললেন, তখন পুরো গ্রুপটির মধ্যেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়লো। গাইডরা বললো, তারা জানে যে গ্রুপের একজন সদস্য কি করেছে, এবং এখনই তাদের তা স্বীকার করতে হবে। গ্রুপের কেউ কোন কথা বললো না। একজন কর্মকর্তা বললো. ইয়াংগাকডো হোটেলের প্রাইভেট কক্ষ থেকে এমব্রয়ডারি করা তোয়ালে কেউ অনুমতি ছাড়া নিয়ে গেছে। গ্রুপটি যদি বাড়ি ফিরতে চায় তাহলে তোয়ালেগুলো ফেরত দিতে হবে। কেউ দোষ স্বীকার করলো না। টুর গাইডরা কর্মকর্তাদের সাথে একটা চুক্তি করলো। তারা যদি পেছন ফিরে বাস থেকে নেমে যায়, তাহলে অপরাধী তোয়ালেগুলো মাটির ওপর রেখে দেবে। এটাই হবে সমস্যা সমাধানের সবচাইতে দ্রুত পদ্ধতি। রক্ষীরা মেনে নিলো। চুরি করা তোয়ালে ফেরত পাওয়া গেল, কিন্তু চোর চিহ্নিত হলো না। গ্রুপটি এরপর এয়ারপোর্টে গেল। উত্তর কোরিয়ান ভিসা ফেরত দিল। তাদের পাসপোর্টে সিল ছাড়াই তারা উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করলো। সান এর পরের বছর মেডিক্যাল স্কুলে তার দ্বিতীয় বছরের পড়াশোনা শুরু করলেন। পাঁচ তলার কথা তার প্রায় মনেই ছিল না। কিন্তু চার বছর পরের এক ঘটনা সব বদলে দিলো। --------------- দু হাজার পনেরো সালে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ওটো ভার্মবিয়ের উত্তর কোরিয়া বেড়াতে যান কেলভিন সানের মত ঠিক একই কর্মসূচি নিয়ে। তার টুর অপারেটরও ছিল সেই একই ইয়ং পাইয়োনিয়র টুরস, তিনি ছিলেনও সেই একই ইয়াংগাকডো হোটেলে। উত্তর কোরিয়ান কর্মকর্তারা বলেন, ভার্মবিয়ের ওই হোটেল থেকে একটি উত্তর কোরিয়ান পোস্টার চুরি করার চেষ্টা করেছিলেন। এর পর তার একটা সাজানো বিচার হয়, টিভিতে প্রচার হয় একটা জোর করে ধারণ করা স্বীকারোক্তি। বন্দী অবস্থায় তিনি আহত হন, এবং সংজ্ঞা হারান। আর কখনো তার জ্ঞান ফেরে নি। ২০১৭ সালের জুন মাসে ওটো ভার্মবিয়েরের মৃত্যু আন্তর্জাতিক সংবাদের শিরোনাম হয়। সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে আভাস পাওয়া যায় যে ভার্মবিয়ের ওই হোটেলের এমন একটি অংশে গিয়েছিলেন - যা সাধারণ লোকের জন্য উন্মুক্ত নয়। ওটো ভার্মবিয়ের, আটক হবার পর ওই হোটেলে আগে গেছেন এমন কয়েকজন বলেছেন, তিনি নিশ্চয়ই সেই পাঁচ তলায় গিয়েছিলেন এবং দেয়াল থেকে কোন একটি প্রচারণামূলক পোস্টার সরিয়েছিলেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার সরকার বা হোটেলে কর্তৃপক্ষ কখনোই তা নিশ্চিত করেনি, যেভাবে তারা কখনো পঞ্চম তলার অস্তিত্বের কথাও স্বীকার করে নি। সান বলছেন, "আমরা যখন সেখানে ছিলাম তখন সেখোনে এমন কোন পোস্টার ছিল না যা খুলে নেয়া যাবে। সবই ছিল দেয়ালে আঁকা বা দেয়ালের সাথে পেরেক দিয়ে আটকানো। এমন নয় যে আমরা কিছু নেবার কথা ভেবেছি, কিন্তু সেখানে এমন কিছুই ছিল না যা আমাদের পক্ষে চুরি করা সম্ভব ছিল, ঘরের বাইরের জুতো দুটি ছাড়া।" ভার্মবিয়েরের মৃত্যুর পর উত্তর কোরিয়ায় পর্যটনের দিকে সবার নজর পড়ে। ইয়ং পাইওনিয়র ট্যুরস সহ বেশ কিছু ট্যুর অপারেটর মার্কিন নাগরিকদের উত্তর কোরিয়ায় নিয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়, ওই হোটেলের পাঁচতলাটি একটি সার্ভিস ফ্লোর যাতে কারো প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। সান এখন একজন ডাক্তার। তিনি সুযোগ পেলেই এখনো ভ্রমণ করেন। তার ব্লগে হাজার হাজার ফলোয়ার রয়েছে। তবে এখন তিনি অন্য দেশে বেড়াতে গিয়ে কি করছেন সে সম্পর্কে অনেক বেশি সতর্ক। "ওটোর যা হয়েছে, তা আমার কাছে একটা মর্মান্তিক ব্যাপার। এখন আমরা যতটুকু জানি, তার ভিত্তিতে আমি সব পর্যটককে বলবো তা যখন যে দেশে যায় সেই দেশের রীতিনীতিকে যেন সম্মান করে।" "তবে ২০১১ সালে আমাদের জানা ছিল না যে আমরা কোন বাড়াবাড়ি করছি কিনা বা আমরা যা করছি তাতে ওটোর মতো দু:খজনক পরিণতিও হতে পারতো।" (অন্য কোন কিছু উল্লেখ না করা থাকলে এই প্রতিবেদনের সব ছবির স্বত্বই কেলভিন সান এবং দি মনসুন ডায়রিজের।) | ওটো ভার্মবিয়েরের কাহিনি মনে আছে? উত্তর কোরিয়ায় বেড়াতে যাওয়া এই আমেরিকান ছাত্রকে পিয়ংইয়ং-এর ইয়াংগাকডো হোটেলে যাবার কারণে আটক করা হয়েছিল এবং তার পরেই মৃত্যু হয়েছিল সে ছাত্রের। |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | সামি খান: আল জাজিরার অনুসন্ধানের মূল সূত্র ফেব্রুয়ারি মাসের পহেলা তারিখে আল-জাজিরার প্রতিবেদন প্রচার হবার এক দিন পরেই এক বিবৃতিতে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ দফতর বা আইএসপিআর সামি খানকে ''মাদকাসক্তির অপরাধে বাংলাদেশ মিলিটারি এ্যাকাডেমি হতে বহিষ্কৃত একজন ক্যাডেট'' বলে আখ্যায়িত করে। তার দু'সপ্তাহ পরে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে প্রকাশিত আরেকটি বিবৃতিতে আইএসপিআর সামি খানের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ আরো বিস্তৃত করে বলে, ২০০৬ সালে সকল ক্যান্টনমেন্টে তাকে 'অবাঞ্ছিত' ঘোষণা করা হয়েছিল। ''সামিকে ইতিপূর্বে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মিলিটারি পুলিশ কর্তৃক চুরি, সেনাবাহিনীর অফিসারের পোশাক এবং ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে প্রতারণার অপরাধে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হয়,'' বিবৃতিতে বলা হয়। সামি খান স্বীকার করেন তাকে সামরিক এ্যাকাডেমি থেকে বহিষ্কার কর হয়েছিল - তবে সেটা মাদকাসক্তির জন্য নয়। ''আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল শৃঙখলা ভঙ্গের কারণে,'' তিনি বিবিসিকে বলেন। বুদাপেস্টে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলাপ করছেন সামি খান। কিন্তু তার পরে বিভিন্ন সময়ে সামি খান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করেছেন। বিশেষ করে, ওয়ার্ল্ড ওয়াটার সামিটের জন্য ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন হাঙ্গেরিতে আসেন, তখন সামি খান সফর দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন বলে তিনি জানান। সামি খান বলছেন, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বাংলাদেশ দূতাবাস তাকে প্রধানমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে জানায়। ''যেহেতু হাঙ্গেরিতে কোন বাংলাদেশ দূতাবাস নাই, তাই ওনারা আমাকে অনুরোধ করেন যাতে তাদের লজিস্টিকাল সহায়তা করি যেমন, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য যোগাযোগের ব্যবস্থা, খাবার-দাবারের ব্যবস্থা ইত্যাদি,'' তিনি বিবিসিকে বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সঙ্গে কাজ করার জন্য নিরাপত্তা যাচাই করার প্রশ্ন আছে। তাই এপ্রিল মাসে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য তাকে তার পাসপোর্ট এবং হাঙ্গেরিয় রেসিডেন্স পারমিট ভিয়েনায় দূতাবাসে পাঠাতে বলা হয়। ''আমাদের বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় যদি কোন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠান যুক্ত থাকে, তাদেরকে এনএসআই, ডিজিএফআই এবং পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে ক্লিয়ারেন্স করাতে হবে। ''আমি যদি বিদেশি নাগরিক হতাম তাহলে সেই দেশের প্রতিষ্ঠানের ক্লিয়ারেন্সের প্রয়োজন হত। কিন্তু আমি যেহেতু বাংলাদেশি নাগরিক এবং আমি প্রধানমন্ত্রীর সফর দলের লজিস্টিকাল সাপোর্ট, খাবারের সাপোর্ট ইত্যাদি দেব, তাই আমার বাংলাদেশর তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হয়েছিল,'' মি. খান বিবিসিকে বলেন। ভিয়েনাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রশংসাপত্র তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী যেসব নিরাপত্তা কর্মী ছিলেন - এসএসএফ, ডিজিএফআই ইত্যাদি - তাদেরকে তিনি নিজ রেস্টুরেন্টে দাওয়াত দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ভিয়েনাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে একটি প্রশংসাপত্রও পাঠিয়েছিল। এখানে তাহলে প্রশ্ন আসে, যদি ২০০৬ সালে তাকে একজন অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, তাহলে তার ১০ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর সফরের মত একটি অতি স্পর্শকাতর কার্যক্রমে যুক্ত থাকার জন্য তাকে তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা কীভাবে ক্লিয়ারেন্স দেয়? ''আমি যদি সেরকম চোর বা প্রতারক হতাম, তাহলে কেন বাংলাদেশর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ব্যক্তি, এমনকি জেনারেল আজিজ আমার সাথে সংশ্লিষ্ট হলেন,'' তিনি বলেন। জেনারেল আজিজের সাথে পরিচয় সামি খান ২০১৩ সাল থেকে হাঙ্গেরিতে বসবাস করছেন, এবং এ'সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রী বুদাপেস্টে এসেছেন এবং তার কাছ থেকে নানা রকম সহযোগিতা পেয়েছেন বলে তিনি জানান। সামি খান বলছেন, জেনারেল আজিজের সাথে তার পরিচয় হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে যখন তিনি বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ বা বিজিবি'র মহাপরিচালক হিসেবে ইউরোপোলের একটি কনফারেন্সে যোগদানের জন্য হাঙ্গেরিতে আসেন। ''তখন আমার পরিচিত একজন আমাকে জানায় তিনি আসবেন, এবং অনুরোধ করে আমি যেন তার সাথে দেখা করি এবং বুদাপেস্ট দেখানোর জন্য সাহায্য করি,'' মি. খান বলেন। জেনারেল আজিজকে একজন ''বিচক্ষণ ব্যক্তি'' হিসেবে বর্ণনা করে মি. খান বলেন, ''অবশ্যই তিনি আমার ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর খোঁজখবর নিয়েই অগ্রসর হয়েছেন।'' ''উনার সাথে যখন বিস্তারিত কথা হয়, উনি আমার বাবার ব্যাপারে জানতে পারেন, উনি আমার স্ত্রীর বাবার ব্যাপারে জানতে পারেন। উনি আমাকে এটাও বলেন যে উনি আমার বাবার সাথে এবং আমার শ্বশুরের সাথে একেবারেই ঘনিষ্ঠভাবে চাকরী করেছেন,'' তিনি বলেন। মি. খানের বাবা এবং শ্বশুর দু'জনই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে উচ্চপদস্থ অফিসার ছিলেন। সামি খান বলেন যে জেনারেল আজিজ তাকে অনুরোধ করেন, তার ভাইকে হাঙ্গেরিতে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করার জন্য। কাজের উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্যবসা শুরু করতে গেলে যাদের প্রয়োজন হবে যেমন, আইনজীবী, এ্যাকাউনট্যান্ট তাদের জোগাড় করা ইত্যাদি। মি. খান বলেন, ২০১৫ সালে জেনারেল আজিজের ভাই হাঙ্গেরিতে আসেন মোহাম্মদ হাসান পরিচয়ে। তখন কি তিনি জানতেন যে মি. হাসানের ভিন্ন একটি পরিচয় আছে? এই প্রশ্নের জবাবে মি. খান বলেন, না, তিনি তখন সেটা জানতেন না। সম্পর্কের অবনতি যেভাবে শুরু সম্পর্কের অবনতি শুরু হয় যখন তিনি ধারণা করলেন ব্যবসা করা হয়তো মি. হাসানের লক্ষ্য না। তার মতে, ব্যবসায়ীদের চাল-চলনে যে ভাব-ভঙ্গি থাকে, মি. হাসানের মধ্যে তিনি সেটা দেখতে পান নি। বাংলাদেশে তার বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিলে তারা মি. হাসানকে একজন 'সন্ত্রাসী' হিসেবে বর্ণনা করে বলেন ইন্টারপোলের রেড লিস্টে তার নাম আছে। ''আমি নিজে রিসার্চ করে দেখতে পাই ওনার নামে আসলেই পুলিশের কাছে মামলা আছে। তখন আমি তাকে বলি, আমাকে যে মিথ্যা কথা তিনি বলেছেন সেটা তিনি ঠিক করেন নি। আমি আজিজ স্যারকেও বলি, আমি তো আপনার কলিগের ছেলে, কলিগের মেয়ের জামাই, আপনি জেনে শুনে কেন এই কাজটা করলেন।'' সামি খান বলেন, তিনি জেনারেল আজিজকে জানিয়ে দেন তার ভাইকে আর সাপোর্ট দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হবে না। এই পর্যায়ে দু'জনের সম্পর্কে বড় ফাটল ধরে। মি. খান দাবী করেন যে এক পর্যায়ে জেনারেল আজিজ বলেন তিনি 'তার জীবন তছনছ' করে দিতে পারেন। ''তখন আমি মনে করলাম যে, এই লোকটাকে (মোহাম্মদ হাসান) আমার উপরে ভর করে আনা হয়েছিল। আমি যদি কাজগুলা না করতাম এই লোকটা এখানে আসতে পারত না। ''আমি তখন ভাবলাম, এটা আমার দায়িত্ব, আমাকেই এটার ফয়সালা করতে হবে। আমি ২০১৮ সালের শেষের দিকে আল জাজিরার সাথে যোগাযোগ করি, তাদের বলি আমার সাথে এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি চাই আপনারা বিষয়টি তদন্ত করবেন। ''এর পরে আল জাজিরা নিজেদের মত করে আমার দেয়া তথ্যর সততা যাচাই করে, এবং এক-দু মাস পরে বলে আমার দেয়া তথ্য-প্রমাণ বেশ শক্তিশালী এবং তারা এটা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হল,'' তিনি বলেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে সামি খান ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে আল জাজিরার সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। মে ২০২০ সালে মামলা সম্প্রতি আরেকটি সূত্র ধরে সামি খান বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষের নজরে আসেন। প্রায় এক বছর আগে, ২০২০ সালের ৫ই মে ঢাকার রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১১জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ''রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা'' সহ কয়েকটি অভিযোগে মামলা করা হয়। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন জুলকারনাইন খান - যাকে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ দফতর সামি খান হিসেবে শনাক্ত করেছে। (অভিযুক্তদের আরেকজন, লেখক মুশতাক আহমেদ ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখে কারাগারে বন্দী অবস্থায় আকস্মিকভাবে মারা যান)। তিনি বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনদের কাছে 'সামি' নামেই পরিচিত। তবে তার পুরো নাম সামি খান নয়। আল জাজিরার প্রতিবেদনে চেহারা দেখালেও, ইন্টারনেটে হয়রানির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তার পুরো নাম ব্যবহার করেন নি বলে মি. খান জানান। রাষ্ট্রদোহ মামলা ফেরত যেদিন ইন্টারনেট-ভিত্তিক একটি অ্যাপের মাধ্যমে তার সাথে কথা হচ্ছিল, সেদিন ঢাকার একটি আদালতে অন্য একটি মামলার শুনানি হচ্ছিল, যে মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। অভিযোগটা ছিল রাষ্ট্রদ্রোহ, যেটা সামি খানকে অবাক করেছিল। ''আমরা যারা এই ডকুমেন্টারিতে অংশগ্রহণ করেছি, আমরা কিন্তু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কিছু বলার বলার চেষ্টা করি নি এবং বলি নি,'' তিনি বিবিসিকে বলেন। ''বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, এবং বাংলাদেশের জনগণ যাতে জানতে পারে যে কোন ধরনের দুষ্কৃতিকারী বা ষড়যন্ত্রকারীরা দেশের উন্নয়ন এবং সামনে এগিয়ে যাওয়াটায় রাশ টেনে ধরছে, আমরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।'' সাক্ষাৎকার শেষ হবার আগেই খবর আসে, ঢাকার আদালত মামলাটি গ্রহণ করেনি। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন এবং এই মামলায় কোন অনুমোদন ছিল না। ''তাহলে এটা প্রমাণ দিল আমাদের দেশে কোন না কোন ভাবে এখনো আইনের শাসন আছে, কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর আমরা এখনো ভরসা করতে পারি,'' সামি খান বলেন। | হাঙ্গেরি প্রবাসী ব্যবসায়ী সামি খান সম্প্রতি বাংলাদেশে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কাতার-ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা, বাংলাদেশের সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং তার ভাইদের নিয়ে যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করেছে, তার মূল সূত্র ছিলেন সামি খান। প্রতিবেদনের জবাবে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ দফতর বা আইএসপিআর মি. খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উপস্থান করেছে। এই সব অভিযোগ এবং আল জাজিরার প্রতিবেদনে তার ভূমিকা নিয়ে সামি খানের সাথে কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক সাবির মুস্তাফা: |
এই লেখাটির সারাংশ প্রদান কর। | ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে প্রবেশের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাকি বিশ্বের সম্পর্ক অনেক ভাবেই বদলে গেছে। এখানে তার সাতটি উল্লেখ করা হচ্ছে: ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসন বড় ধরনের নিরাপত্তার প্রশ্ন তৈরি করেছে এশিয়ায়। শপথের আগেই তাইওয়ানের প্রসঙ্গে তার মন্তব্যই শুধু চীনকে হতবাক করেনি, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের তৈরি দ্বীপে তার প্রবেশ আটকে দেয়ার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও। উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে ওবামা প্রশাসনের নীতি ছিল "কৌশলগত সহনশীলতা" প্রদর্শন। কিন্তু মি. ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, "কৌশলগত সহনশীলতা বা ধৈর্যের যুগের অবসান'' ঘটেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প কিভাবে কিম জং আনকে মোকাবেলা করবেন -সেটাই দেখার বিষয়। মি. ট্রাম্পের সামনের পদক্ষেপগুলো কি হতে যাচ্ছে তা অজানা। আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে 'আস্তানায় জঙ্গি দম্পতি' এবার কৃত্রিম গর্ভ তৈরি করল বিজ্ঞানীরা ডায়েরিতে নারী পুলিশ লিখে গেলেন আত্মহত্যার কারণ তবে অনিশ্চিত কর্মকাণ্ড-সর্বস্ব এই মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান তার প্রাথমিক দিনগুলোতে যেসব কাজ করলেন, তাতে আগামী বছরগুলোতে এশিয়ায় পারমানবিক উত্তেজনা যে বাড়তে যাচ্ছে তা অনুমেয়। রাশিয়ার সাথে সম্পর্কে আরও জটিলতা বৃদ্ধি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় মি. ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একজন দক্ষ নেতা হিসেবে প্রশংসা করেছিলেন। তার সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চান বলেও তখন জানিয়েছিলেন। রাশিয়ার অ্যাম্বাসেডরের সাথে আলাপের সূত্র ধরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন আকস্মিক পদত্যাগ করলে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ককে ঘিরে উদ্বেগের বিষয়টি চলতে থাকে। মি. ট্রাম্প বলেছিলেন মি পুতিনের ওপর বিশ্বাস রাখতে চান তিনি। কিন্তু "তা হয়তো দীর্ঘস্থায়ী হবে না" সতর্ক করেন তিনি। তবে তা আর হয়নি। বরং সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার ঘটনাকে ঘিরে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। এই হামলার জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষ সিরিয়ার সরকারকে দোষারোপ করে আসলেও, রাশিয়া অব্যাহত-ভাবে বাশার আল আসাদের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে। মি ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের দিক থেকে সর্বকালে সবচেয়ে নিচের দিকে এখন যুক্তরাষ্ট্র। মি ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের দিক থেকে সর্বকালে সবচেয়ে নিচের দিকে এখন যুক্তরাষ্ট্র। দুদেশের সম্পর্ক ভালো হলে সেটা জাতির জন্য 'দারুণ ব্যাপার' হতো বলে উল্লেখ করলেও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন "ঘটছে তার বিপরীত"। নেটোর দিকে অধিক মনোযোগ আগে নেটোর প্রতি সমালোচক মনোভাব ছিল মি ট্রাম্পের। তিনি এই সংগঠনকে সেকেলে বলেও আক্রমণ করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেমস মাতিস ফেব্রুয়ারি মাসে নেটোর সদস্যদের সতর্ক করে বলেন, সদস্য দেশগুলো যদি মি. ট্রাম্পের চাহিদা মোতাবেক জিডিপির ২% প্রতিরক্ষা খাতে খরচ করতে না পারে তাহলে ওয়াশিংটন তার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। তবে নেটোর প্রতি মনোযোগী হওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেটোর প্রধান জেনস স্টোলটেনবার্গ। মি. ট্রাম্পও তার মনোভাব বদলে ফেলেন এবং বলেন, নেটো আর প্রাচীন বা সেকেলে প্রতিষ্ঠান নেই। সন্ত্রাসের হুমকির প্রেক্ষাপটে এই জোটের গুরুত্ব রয়েছে এবং ইরাকি এবং আফগান শরিকদের আরও সহায়তা দেয়ার জন্য জোটের সদস্যদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। সামরিক শক্তির ব্যবহার ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ বন্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতে না জড়ানোর প্রত্যাশায় বারাক ওবামাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। এমনকি সিরিয়ায় নৃশংসতার মাত্রা যখন চরম রূপ নিয়েছিল তখনও তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য ব্যাপক মাশুল দিতে হবে। ওবামা প্রশাসন মানবিক সহায়তা প্রদান, বিদ্রোহীদের পরিবর্তনের জন্য অর্থ প্রদান, যুদ্ধবিরতির চেষ্টা এবং প্রেসিডেন্ট আসাদকে অপসারণের জন্য রাজনৈতিক মধ্যস্থতার দিকে মনোযোগী হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পও এর আগে সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক অভিযানের ব্যাপারে বিরোধী ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি টুইটারে লেখেন, "সিরিয়ার কথা ভুলে যান, আমেরিকাকে আবার শ্রেষ্ঠ করে তুলুন"। এরপর সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়ে তিনি এপ্রিলে সিরিয়ায় সরকারি বিমানঘাঁটিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ দিলেন । এটাই প্রথম সিরিয়ায় সংঘাত শুরুর পর সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সিরিয়া লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা। অল্প সময়ের ব্যবধানে আফগানিস্তানে মাদার অফ অল বোম্বস নিক্ষেপ করে আবারও বিশ্বের সামনে নিজের সামরিক শক্তির পরিচয় দিল আমেরিকা। বহু দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাকি বিশ্বের সাথে যেভাবে বাণিজ্য পরিচালনা করছে তাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য-নীতি। মুক্ত বাণিজ্যের সম্ভাবনার পথে অনিশ্চয়তা বহু দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাকি বিশ্বের সাথে যেভাবে বাণিজ্য পরিচালনা করছে তার সাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য-নীতি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্মহীনতার অজুহাতে বর্তমানে চলছে এমন অনেকগুলো বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন । বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা থেকেও আমেরিকাকে প্রত্যাহার করে নেয়ারও চিন্তাভাবনা রয়েছে তার। তিনি প্রথম কর্ম-দিবসেই ১২-জাতির বাণিজ্য জোট ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ টিপিপি বাতিল করেন। তিনি চীনের বিরুদ্ধে মুদ্রা কারসাজিরও অভিযোগ তুলে নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছেন। তবে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা এটা এক ধরনের 'বাণিজ্য যুদ্ধ' ডেকে আনতে পারে। সমালোচকদের আশঙ্কা মি ট্রাম্পের অবস্থান বিশ্বে উষ্ণায়ণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অনিচ্ছুক দেশগুলোকে আরও সুযোগ দেবে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গ পুনর্বিবেচনা মি. ট্রাম্প বলেছিলেন, দায়িত্ব নেয়ার প্রথম একশো দিনের মধ্যেই তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাতিল করবেন।তবে সেটা তিনি করেননি। তার সিনিয়র উপদেষ্টাদের মধ্যে এ বিষয়ে বিভক্তি রয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রণীত জলবায়ু প্রবিধান পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। মানুষের দ্বারা জলবায়ু পরিবর্তন সৃষ্টির বিজ্ঞানসম্মত বিষয়টিকে বারবার নাকচ করে আসছেন মি ট্রাম্প এবং একে তিনি "কাল্পনিক" আখ্যা দিয়ে আসছেন। অন্য অনেক বিষয়ের তিনি এক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক মতামত প্রকাশ করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি নভেম্বরে বলেন, তিনি স্বীকার করেন মানুষের কর্মকাণ্ড এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মাঝে কিছু যোগাযোগ আছে এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের বদলে এ বিষয়ে নজর দেবেন। যদিও মার্কিন জলবায়ু নীতির আমল পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে মিস্টার ট্রাম্পকে আইনগত এবং পদ্ধতিগত কিছু বাধা পেরোতে হবে। তবে সমালোচকদের আশঙ্কা তার অবস্থান বিশ্বে উষ্ণায়ণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অনিচ্ছুক দেশগুলোকে আরও অপারগ করতে পারে। ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে সংশয় ইরানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধের বিনিময়ে অবরোধ তুলে নেয়ার যে চুক্তি হয়েছিল তাকে বারাক ওবামার প্রশাসন "ঐতিহাসিক বোঝাপড়া" বলেই মূল্যায়ন করেছে। কিন্তু মি ট্রাম্প একে বলেছেন, "আমার দেখা এ যাবত-কালের সবচেয়ে বাজে কোনও চুক্তি"। ইরানের সাথে ওবামা প্রশাসনের পরমাণু চুক্তিকে মি ট্রাম্প বলেছেন, "আমার দেখা এ যাবত-কালের সবচেয়ে বাজে কোনও চুক্তি"। এই চুক্তি ভেঙে ফেলা হবে তার প্রধান অগ্রাধিকার কাজের একটি। কিন্তু তিনি আসলে কি করতে চান সেটি স্পষ্ট নয়। তার সরকার ইরানের বিষয়ে মার্কিন নীতি পুনরায় ঢেলে সাজাতে চাইছে। বিষয়টি শুধু ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলবে তা নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে তার ভূমিকা, সিরিয় সংঘাত, সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কেও প্রভাব ফেলবে। | এশিয়ায় পারমানবিক উত্তেজনা উশকে দেয়া |