title
stringlengths 10
148
| text
stringlengths 14
34.6k
| summary
stringlengths 1
7.08k
|
---|---|---|
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বাড়লে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে: বিশ্বব্যাংক | মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় চলমান সংঘাত বাড়লে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার, খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। ফলে ফের ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির হার।
এ অঞ্চলে সংঘাত আরও বাড়লে জ্বালানি তেলের প্রতি ব্যারেলের দাম বেড়ে ৯২ ডলারে উন্নীত হতে পারে। সংঘাতের কারণে সরবরাহব্যবস্থায় গুরুতর ব্যাঘাত ঘটলে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ছাড়িয়ে যেতে পারে ১০০ ডলার। তখন বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে পারে এক শতাংশ।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক, এপ্রিল ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে এমন পূর্বাভাস। প্রতিবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তর থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় চলমান সংঘাত আর সম্প্রসারিত না হলে বৈশ্বিকভাবে জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম আরও কিছুটা কমে আসবে। তবে তা করোনার আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি থাকবে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা আর না বাড়লে চলতি বছর বৈশ্বিকভাবে সব ধরনের পণ্যমূল্য গড়ে ৩ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে গড়ে ৪ শতাংশ কমতে পারে বলে আভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
এতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের হরমুজ প্রণালি দিয়ে তরল জ্বালানির প্রায় ২০ শতাংশ পরিবহণ করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় সংঘাত বাড়লে এ প্রণালি দিয়ে পণ্য পরিবহণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বাধার ধরনের ওপর নির্ভর করে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের সরবরাহ যেমন বিঘ্ন ঘটতে পারে, তেমনই এর দামও প্রভাবিত হতে পারে; যা উসকে দিতে পারে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির হারকে। এতে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে পারে এক শতাংশ পর্যন্ত। বর্তমানে বৈশ্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির যে নিম্নমুখিতা, তা বাধাগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার কমানোর পরিকল্পনাও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বাড়ায় চলতি মাসে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ৮২ থেকে বেড়ে ৯১ ডলারে উঠেছে। সংঘাত সম্প্রসারিত না হলে জ্বালানি তেলের দাম চলতি বছর ৮৪ ডলারের মধ্যে থাকতে পারে। আগামী বছর এর দাম ৭৯ ডলারে নামতে পারে। আর সংঘাত যদি আরও বাড়তে থাকে, জ্বালানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে। তখন প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ৯২ ডলারে ওঠতে পারে। হরমুজ প্রণালি দিয়ে জ্বালানি পরিবহণ আরও বাধাগ্রস্ত হলে প্রতি ব্যারেলের দাম ছাড়িয়েও যেতে পারে ১০০ ডলার। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাস, সার এবং খাদ্যের দামও বাড়তে পারে। এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হলে সারের দামও যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে, সম্ভবত বাড়বে খাদ্যের দাম।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের অব্যাহত আক্রমণকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় উত্তেজনা চলছে। এর সঙ্গে লেবানন ও ইরান জড়িয়ে পড়েছে। এ সংঘাতকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ওমান উপসাগরের হরমুজ প্রণালিতে দুটি জ্বালানি তেলবাহী জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র এর জন্য দায়ী করেছে ইরানকে। ইরান তা অস্বীকার করেছে।হরমুজ প্রণালি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে পণ্য আদান-প্রদানের অন্যতম একটি সহজ সমুদ্রপথ। এ প্রণালির একদিকে আরব দেশগুলো এবং অন্যপাশে রয়েছে ইরান।
বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত সীমিত থাকলে বিশ্বে সামগ্রিকভাবে খাদ্যের দাম কিছুটা কমতে পারে। এর মধ্যে শুধু খাদ্য উপকরণের দাম চলতি বছর ৬ শতাংশ এবং আগামী বছর ৪ শতাংশ কমতে পারে। সারের দাম চলতি বছর ২২ এবং আগামী বছর ৬ শতাংশ কমতে পারে। পণ্যমূল্য নিম্নমুখী হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো পর্যায়ক্রমে ঋণের সুদের হারও কমাতে পারবে। তবে পণ্যের দাম কমলেও করোনা মহামারির আগের পাঁচ বছরের চেয়ে পণ্যের দাম গড়ে ৩৮ শতাংশ বেশি থাকতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের মধ্যেও বৈশ্বিকভাবে পণ্যমূল্য কমছে। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হারও নিম্নমুখী। ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। এতে ওই সময়ের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে ২ শতাংশ।
| মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় চলমান সংঘাত বাড়লে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার, খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। ফলে ফের ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির হার। |
সংগীতশিল্পীর আড়ালে রেবেলের মাদক কারবার, কাজ করেন ভাইজানের হয়ে | কোটি টাকার মাদক ক্রিস্টাল মেথসহ (আইস) সংগীতশিল্পী মো. এনামুল কবির রেবেলকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তিনি ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ডের একজন সংগীতশিল্পী।
শুক্রবার রাতে রামপুরার মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে রামপুরা থানা পুলিশ। তার কাছ থেকে এক কেজি আইস উদ্ধার করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। এনামুল কবিরকে শনিবার আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির খিলগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, রেবেল মূলত মাদক ব্যবসায়ী মো. লিটন ওরফে লিটু ওরফে ভাইজানের হয়ে কাজ করেন। রেবেল ওই মাদক ব্যবসায়ীর ঠিকানা দিলে পরে বাড্ডা এলাকায় মো. লিটনের বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়। তবে লিটু ও তার সহযোগী অমিত পলাতক রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে এক কেজি পরিমাণ আইস উদ্ধার করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।
তিনি আরও জানান, পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে লিটুর মাদক ব্যবসায় সহায়তা করে আসছেন রেবেল। একটি অনুষ্ঠানে তাদের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুইজনের আর্থিক লেনদেনেরও অনেক নজির আছে। তাদের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা হয়েছে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া খিলগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আবদুল্লাহ-আল-মামুন জানান, এনামুল কবির মাদকের ডিলার লিটনের কাছ থেকে মাদক নিয়ে বিক্রি করে আসছিলেন। লিটনকে সবাই ভাইজান নামে ডাকে। তবে গত বছরের নভেম্বরে লিটন নিজেকে একজন চাল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। বাস্তবে লিটন মাদকের গডফাদার। তার গাড়িচালক ও সহযোগী অমিত মাদক ব্যবসার বিষয়গুলো দেখাশোনা করতেন। লিটন মাদক ব্যবসা করায় ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করে আসছিলেন।
তিনি আরও জানান, এনামুল কবিরের বাসা তেজগাঁও ইন্দিরা রোডে। এ ঘটনায় জড়িত ডিলার লিটন ও তার সহযোগী অমিতকে গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।
| কোটি টাকার মাদক ক্রিস্টাল মেথসহ (আইস) সংগীতশিল্পী মো. এনামুল কবির রেবেলকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তিনি ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ডের একজন সংগীতশিল্পী। |
নিজের জন্য কোয়ালিটি সময় দেওয়াই বড় বিনিয়োগ: ব্যবসায়ীদের ডা. জাহাঙ্গীর কবীর | ব্যবসায়ীদের নিজের জন্য সময় ব্যয়ের বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন লাইফ স্টাইল বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশেষ পরিচিতি পাওয়া ডা. জাহাঙ্গীর কবীর। তিনি ব্যবসায়ীদের নিজের জন্য ‘কোয়ালিটি টাইম ইনভেস্টমেন্ট’ করাকে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এজন্য শুধু কিছু খাবার এড়িয়ে সুস্থ্য থাকা সম্ভব নয়। পরিমিত ঘুম ও শরীরের চাহিদা অনুপাতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসও গড়ে তুলতে হবে।
ডা. জাহাঙ্গীর কবীর মনে করেন, অর্থ দিয়ে সময় কিনতে পাওয়া যায় না। তাই শত ব্যস্ততার মধ্যেও আল্লাহর দেওয়া মূল্যবান সময়কে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য সদ্ব্যবহার করতে হবে।
শনিবার বিকালে রাজধানীর আফতাবনগরে জে কে লাইফস্টাইল লিমিটেড হলরুমে আয়োজিত ‘উদ্যোক্তাদের লাইফস্টাইল কেমন হবে’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
সেমিনারে ১০০ জন ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অনেকে অংশ নেন। সেখানে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের কয়েকজন নিজেদের অসুস্থতা ও দৈনন্দিন জীবনাচার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এ সময় ওষুধ ছাড়াই কিভাবে ব্যবসায়ীদের রোগমুক্ত থাকা সম্ভব সে বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে ডা. জাহাঙ্গীর কবীর প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, অন্যান্য পেশার মানুষের মত ব্যবসায়ীদের জীবনাচারও রুটিন-মাফিক হওয়া উচিত। এজন্য সবার আগে সময়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এবং শত ব্যস্ততার মধ্যে নিজের জন্য সময় বের করা খুবই জরুরি।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের যত শারীরিক মানসিক চাপ থাকুক না কেন, সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে বাড়ি ফেরা এবং পরিবারকে কিছুটা সময় দিতেই হবে। রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ঘুম, ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, প্রার্থনা করা এবং এক থেকে দেড় ঘণ্টা শারীরিক ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শারীরিক ও মানসিক প্রফুল্লতার জন্য সকালের সূর্যের আলোতে হাঁটা ও নিয়মিত মেডিটেশনের (ধ্যান) কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খেলাধুলা বা কোয়ালিটি টাইমও দিতে হবে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পরিবার ও দেশের মানুষের জন্য কীটনাশকমুক্ত পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হেলদি প্রজেক্ট বা প্রাকৃতিক কৃষি পণ্য উৎপাদন ও সম্প্রাসরণে শিল্পপতিদের এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা জমি দিলে অর্গানিক খাদ্যপণ্য উৎপাদনে সব রকম সমর্থন আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিনিময়ে কোনো লাভ নেব না।
সেমিনারে জে কে লাইফস্টাইল লিমিটেড ও কক্সবাজারের টেকনাফে অবস্থিত পর্যটন প্রতিষ্ঠান ‘সিনবাদ বিচ অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমোঝতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। জে কে লাইফস্টাইলের পক্ষে ডা. জাহাঙ্গীর কবীর এবং সিনবাদ বিচ অ্যান্ড ইকো রিসের্টের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থপনা পরিচালক হাসনাইন আব্দুল্লাহ নাসিফ চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। সমঝোতার আলোকে সিনবাদ বিচ অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট জে কে লাইফ স্টাইলের কয়েকটি গাইডলাইন মেনে চলবে।
| ব্যবসায়ীদের নিজের জন্য সময় ব্যয়ের বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন লাইফ স্টাইল বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশেষ পরিচিতি পাওয়া ডা. জাহাঙ্গীর কবীর। তিনি ব্যবসায়ীদের নিজের জন্য ‘কোয়ালিটি টাইম ইনভেস্টমেন্ট’ করাকে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এজন্য শুধু কিছু খাবার এড়িয়ে সুস্থ্য থাকা সম্ভব নয়। পরিমিত ঘুম ও শরীরের চাহিদা অনুপাতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসও গড়ে তুলতে হবে। |
থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় থাই প্রধানমন্ত্রী জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকালে থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গভর্নমেন্ট হাউসে যান তিনি।
শুরুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেখানে থাই কুহ ফাহ বিল্ডিংয়ের সামনের লনে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। এ সময় থাইল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল কর্তৃক প্রদত্ত গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে স্রেথা থাভিসিন তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের শেখ হাসিনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। শেখ হাসিনা পরে সরকারি ভবনের অতিথি বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় নথিতে স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে।
সরকারি বাসভবন ত্যাগের আগে শেখ হাসিনা সেখানে আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার থাই প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে থাইল্যান্ডে ছয় দিনের সরকারি সফর করছেন।
| থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় থাই প্রধানমন্ত্রী জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। |
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আরও বাড়বে কি না, জানা যাবে শনিবার | চলমান তাপদাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও বাড়বে কি না সে বিষয়ে আগামী শনিবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার।
রাজধানীর সচিবালায়ে নিজ দপ্তরে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বর্তমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হবে কি না, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাপমাত্রার কথা বলা যায় না। আপ-ডাউন হয়। আমাদের দুদিন (শুক্র ও শনিবার) বন্ধ আছে, আমরা একটু দেখি। দেখে তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
আবহাওয়া দপ্তরের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা বলেছে যে তাপমাত্রাটা বাড়তে পারে। কিন্তু আমাদের মন্ত্রী মহোদয় বিদেশে আছেন। উনি কালকেই (শুক্রবার) বোধহয় ফিরবেন, তিনি ফেরার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। যদি স্কুল খোলা রাখা হয় তবে শিশুদের স্কুলের সময় এগিয়ে আনা এবং ক্লাস সংখ্যা কমানোরও প্রস্তাব দিয়েছে তারা। এ বিষয়গুলো নিয়ে আপনারা কাজ করছেন কিনা, জানতে চাইলে শামসুন নাহার বলেন, সেটা নিয়ে কাজ করবো পরে। আগে সামনের যেটা আছে সেটা শেষ করে নিই।
আপনাদের বিকল্প কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনলাইন তো আছে, সেটা আমরা পরে দেখবো। গ্রাম পর্যায়ে স্কুল আছে, তারা অনলাইনে অভ্যস্ত না। অতএব সবকিছু চিন্তা করেই আমাদের কাজ করতে হবে।
দেশব্যাপী তাপদাহ বইছে। ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের ছুটি শেষে গত রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিল। কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে ছুটি এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। আগামী রোববার থেকে স্কুল খোলার কথা।
| চলমান তাপদাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও বাড়বে কি না সে বিষয়ে আগামী শনিবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার। |
থাইল্যান্ড পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী | থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৮ মিনিটে ব্যাংকক ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাকে লাল গালিচা উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাকে থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান এবং ১৯ রাউন্ড গান স্যালুট দেওয়া হয়।
থাইল্যান্ডের মিনিস্টার-ইন-অ্যাটেন্ডেন্স পুয়াংপেট চুনলাইদ, বাংলাদেশে থাই রাষ্ট্রদূত মাকাওয়াদি সুমিতমোর এবং থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল হাই বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় সফরের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সরকারি সফরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে আজ সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করেন।
২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল তার সফরের সময় শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং জাতিসংঘের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেবেন।
| থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। |
থাইল্যান্ড গেলেন প্রধানমন্ত্রী | দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে ছয় দিনের সরকারি সফরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে আজ বুধবার সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে ফ্লাইটটি ব্যাংককের ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানটির অবতরণের কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত থাইল্যান্ড সফর উপলক্ষে সোমবার মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘এটি একটি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উভয় সফর। এই সফর উভয় পক্ষের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এতে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের (বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড) মধ্যে সহযোগিতার নতুন জানালা উন্মোচিত হবে।’
গত জানুয়ারিতে সরকার গঠনের পর এটিই হবে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন এবং জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড দুই দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনার অভিপ্রায়পত্রসহ বেশ কিছু সহযোগিতার নথিতে সই করবে। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি, শক্তি সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য পর্যটন খাতে সহযোগিতা এবং শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আরও দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সফর বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি’ পর্যালোচনার সুযোগ তৈরি করবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার জন্য বাংলাদেশের আবেদনের বিষয়টি ঢাকা জোরালোভাবে উত্থাপন করবে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হিসেবে থাইল্যান্ডের প্রতি তার তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করবে।
যেহেতু থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার উভয়ই আসিয়ানভুক্ত, তাই রোহিঙ্গা ইস্যুটি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, উচ্চ পর্যায়ের সফরে বিনিয়োগ, পর্যটন, জ্বালানি, স্থল ও সমুদ্র সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হবে। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, বৌদ্ধ সার্কিট কর্মসূচি প্রচারের পাশাপাশি ভ্রমণ ও অবকাশ শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা বিনিময় করতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পে এই সহযোগিতা উভয় দেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন স্বাগত জানাবেন এবং তাকে একটি আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে গভর্নমেন্ট হাউসে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) একান্ত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন, নথিতে স্বাক্ষরে উপস্থিত থাকবেন, একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং এরপর সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে থাই প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া একটি রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজপ্রাসাদে থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ফ্রা ভাজিরাক্লাওচাওয়ুহুয়া এবং রানী সুথিদা বজ্রসুধাবিমলালক্ষণের রাজকীয় দর্শকদের সঙ্গে থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৫ এপ্রিল ইউএনএসক্যাপ-এর ৮০তম অধিবেশনে যোগদান করবেন এবং সেখানে ভাষণ দেবেন। একই দিনে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল এবং এসক্যাপের নির্বাহী সচিব আরমিদা সালসিয়াহ আলিসজাবানা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
‘লিভারেজিং ডিজিটাল ইনোভেশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৮০তম অধিবেশনটি টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে অঞ্চলব্যাপী সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ জোরদার করার একটি সুযোগ হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডিজিটাল উদ্ভাবন কীভাবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সরকারি নেতারাসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী এবং অন্যান্য মূল অংশীজনরা এই অধিবেশনে অংশ নেবেন।
| দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে ছয় দিনের সরকারি সফরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে আজ বুধবার সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। |
পুঁজিবাজার অস্থিতিশীলকারী চক্রের ৩ জন গ্রেফতার রিমান্ড | অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে পুঁজিবাজার অস্থিতিশীলকারী চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. আমির হোসাইন ওরফে নুরনুরানী, নুরুল হক হারুন ও আব্দুল কাইয়ুম।
শুক্রবার রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (দক্ষিণ)।
ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ যুগান্তরকে বলেন, গ্রেফতারদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে শনিবার তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে জানিয়ে এডিসি আজাদ বলেন, চক্রের অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
ডিবির দাবি, তারা (আসামিরা) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও বিভিন্ন শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজি এবং গুজব রটিয়ে মার্কেটকে অস্থিতিশীল করে। গ্রেফতারদের মধ্যে আমির হোসাইন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামে ৮ থেকে ১০টি গ্রুপ চালাতেন। এর মাধ্যমে শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজি ও গুজব রটিয়ে মার্কেটকে অস্থিতিশীল করতেন। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দমন আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১১টি মামলা রয়েছে। নুরুল হক হারুন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি। তিনি বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নামে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে চাঁদা দাবি করতেন। অপর অভিযুক্ত আব্দুল কাইয়ুম রয়েল ক্যাপিটাল নামক ব্রোকারেজ হাউজের সঙ্গে যুক্ত। তিনি হোয়াটস্যাপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন শেয়ার সম্পর্কে তথ্য দিতেন।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টুরোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার একটি স্পর্শকাতর জায়গা। দেশের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানে অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারী তাদের সর্বস্ব নিয়ে এসে বিনিয়োগ করে থাকেন। অল্পতেই এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক থাকে। একটি স্বার্থান্বেষী চক্র দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, কমিশনের চেয়্যারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামে গোপনীয় গ্রুপ খুলে বিভিন্ন মিথ্যা, ভুয়া এবং প্রতারণামূলক তথ্য সরবরাহ করে আসছে। তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তারা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করে আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতো।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ বিষয়ে গত ২৫ এপ্রিল রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এ মামলার তদন্ত করে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
ডিবির হারুন বলেন, গ্রেফতাররা মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর জন্য ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামে গোপনীয় গ্রুপ ব্যবহার করতো। গ্রুপগুলোতে তারা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, কমিশনের চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এবং পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার নামে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য দিয়ে বিভিন্ন প্রকার প্রাইস সেনসেটিভ ইনফরমেশন (মূল্য সংবেদনশীল তথ্য) আগে প্রকাশ করে দেয় (যা বেশিরভাগ সময় বানোয়াট ও মিথ্যা)। যার ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তারা বিভিন্ন সময় আন্দোলনের নামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করে রাস্তা দখল করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতো। তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিভিন্ন ইস্যুতে চাঁদা দাবি করতো। চাঁদা না দিলে ওইসব কোম্পানি সম্পর্কে অনলাইনে অপপ্রচার শুরু করতো। এমনকি কোম্পানির অফিসগুলোতেও হামলা করতো। গ্রেফতাররা পুঁজিবাজারে বিভিন্ন শেয়ার নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দাম বৃদ্ধি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতো এবং এসব করার জন্য গোপনীয় হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপ ব্যবহার করতো। এসব গ্রুপের সদস্যদের একটি নির্দিষ্ট ফি দিয়ে গ্রুপে যুক্ত হতে হতো। আবার শেয়ারে প্রফিট (লাভ) হলে লভ্যাংশের অংশ তাদেরকে দিতে হতো। লোকসান হলে তারা দায়িত্ব নিতো না। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন অনুযায়ী, যেকোনো শেয়ারের মূল্য নিয়ে তথ্য আদান-প্রদান সম্পূর্ণ অবৈধ।
| অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে পুঁজিবাজার অস্থিতিশীলকারী চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। |
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে বাসে আগুন দিয়ে হত্যা | রাজধানীর ডেমরায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে অছিম পরিবহণের বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত বিএনপির তিন নেতাকর্মীকে গ্রেফতারও করেছে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ বিভাগের অ্যান্টি ইলিগ্যাল আর্মস অ্যান্ড ক্যানাইন টিম।
গ্রেফতাররা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম মনির ওরফে মনির মুন্সি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. সাহেদ আহমেদ এবং বিএনপি কর্মী ও মনির মুন্সির ব্যক্তিগত ড্রাইভার মাহাবুবুর রহমান সোহাগ। তাদের কাছ থেকে ঘটনার সময় ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টুরোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, মনির মুন্সি নির্দেশদাতাদের থেকে নির্দেশনা পেয়ে এই কাজ শুরু করেন। তিনি আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন। দলের আরও বড় পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় ছিলেন তিনি।
ঘটনার নির্দেশদাতাদের শনাক্ত করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নির্দেশদাতাদের নাম আমরা পেয়েছি। তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাদেরও গ্রেফতার করা হবে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের বিষয়ে এখনই কোনো তথ্য বলব না।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের উদ্দেশে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি রাজধানীর পল্টন এলাকায় নারকীয় তাণ্ডব চালায়। বিএনপির নেতাকর্মীরা সেদিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করার মতো জঘন্য কাজসহ অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে ডেমরার দেইল্লা বাসস্ট্যান্ডে রাখা অছিম পরিবহণের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তাদের দেওয়া আগুনে ওই বাসে ঘুমিয়ে থাকা হেলপার মো. নাইম ঘটনাস্থলে পুড়ে মারা যান এবং অপর হেলপার মো. রবিউল দগ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন। এ ঘটনায় ডেমরা থানায় একটি মামলা হয়। গত বছরের ১১ নভেম্বর মামলাটি সিটিটিসিতে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি তদন্ত শুরু করে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ বিভাগের অ্যান্টি ইলিগ্যাল আর্মস অ্যান্ড ক্যানাইন টিম।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, তদন্তভার গ্রহণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনাস্থলের চারপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি শনাক্ত করা হয়, যা ওইদিন অগ্নিসংযোগে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই গাড়ির সূত্র ধরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূল অগ্নিসংযোগকারী ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার এবং ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করা হয়।
ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মনির মুন্সি তার নেতাদের কাছ থেকে নির্দেশনা পান। নির্দেশনার মূল বিষয়বস্তু ছিল নাশকতার মাত্রা আরও বাড়ানো এবং এমন কোনো ঘটনা ঘটানো যাতে করে জনমনে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তারই অংশ হিসেবে তিনি (মনির) বেশ কয়েকজনকে অগ্নিসংযোগের জন্য নিয়োগ দেন এবং তিনি নিজে বড় একটি ঘটনা ঘটানোর জন্য তার অপর সহযোগী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিব ও তার বন্ধু সাহেদ আহমেদকে ডেকে নেন। তারা দুজনে মিলে একটি পরিকল্পনা করে এমন একটি ঘটনা ঘটাবেন যাতে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে ডেমরা এলাকার দেইল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাত দুইটার পর বেশ কয়েকবার গাড়ি দিয়ে ঘুরে ঘুরে রেকি করেন এবং দেখতে থাকেন কোন জায়গাটা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতামুক্ত।
তিনি বলেন, অবশেষে তারা (মনির ও তার সহযোগীরা) কাঙ্ক্ষিত টার্গেট নির্ধারণ করে বড়ভাঙ্গা মার্কেটে চলে যান। সেখান থেকে তারা দুই লিটারের পানির বোতলে পেট্রল সংগ্রহ করে আনুমানিক ভোর তিনটায় ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ঘটনাস্থলের নিরাপদ দূরত্বে গাড়ি থামিয়ে চালক মাহাবুবুর রহমান সোহাগ গাড়িতে অবস্থান করেন এবং মনির মুন্সি ও সাহেদ পেট্রলের বোতল নিয়ে রাস্তার পাশে পার্কিং করা অছিম পরিবহণের গাড়ির কাছে যান। সেখানে গাড়ির চালকের সিটের পাশে থাকা খোলা গ্লাসের অংশ দিয়ে চালকের সিটে মনির মুন্সি পেট্রল ঢেলে দেন। এরপর দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। নিমিষেই গাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগিয়ে তারা গাড়িতে করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। তারা এক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য উল্টো পথে ডেমরা এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠে সুফিয়া কামাল ব্রিজ দিয়ে ভুলতায় থাকা মনির মুন্সিদের মালিকানাধীন ‘মুন্সি পেট্রল পাম্প’-এ রাত্রিযাপন করেন। সকাল দশটার দিকে তারা পেট্রল পাম্প থেকে বাসায় চলে যান।
| রাজধানীর ডেমরায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে অছিম পরিবহণের বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। |
কিলার বাদলের ইশারায় চলে অপরাধজগৎ! | রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী বাদল ওরফে কিলার বাদলের নেতৃত্বে এলাকায় বেশ কয়েকটি ভয়ংকর কিশোর গ্যাং চক্র গড়ে উঠছে। তার নির্দেশে এ চক্রের সদস্যরা মোহাম্মদপুরজুড়ে ছিনতাই, মাদক বিক্রি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির আধিপত্য বিস্তার করেছে। পুলিশের তথ্যমতে, কিলার বাদলের বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজি ও দখলবাজিসহ অন্তত শখানেক মামলা রয়েছে। তার অন্যতম সহযোগী হিসাবে লালু উদ্দিন লালু অন্যতম। বাদলের নির্দেশে লালু কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করেন।
স্থানীয়দের মতে, বর্তমানে কিলার বাদলকে কেউ না দেখলেও তার ইশারায় পুরো মোহাম্মদপুরের অপরাধজগৎ চলে। তার হাতিয়ার হিসাবে কিশোর গ্যাং চক্রের সদস্যরা চাঁদাবাজি, দখলবাজি, ভূমি দখল ও হামলাসহ ভয়ংকর কাজ করছে। সড়ক ও ফুটপাত দখল করে দোকানপাট বসিয়ে টাকা আদায়, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে অথবা জমি দখলে বাধা দিলে কুপিয়ে হত্যা আবার কখনো গুরুতর আহত করা হয়। বাদলের ভয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা মুখ খুলতে সাহস পান না। তার হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে সহযোগী লাল্লু, ইমন ওরফে জুট ইমন, ঘাট বাবু, গ্যারেজ সোহেল, বাত রাসেল, মাহিসহ অনেকে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজি ও অপহরণের মামলা রয়েছে। বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত বাদলের সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারী হিসাবে বাদলের পথচলা শুরু। কাঁটাসুরের এক সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী এনআইয়ের হাত ধরে তার অপরাধ জগতে প্রবেশ। ডিশ ব্যবসায়ী ইকবালকে হত্যার মধ্য দিয়ে কিশোর বয়সেই বাদলের কিলিং মিশন শুরু হয়। এরপর কাঁটাসুরের বাবুল হত্যার মধ্য দিয়ে বাদল থেকে কিলার বাদল হিসাবে স্থানীয়দের কাছে সে পরিচিতি লাভ করে। ২০০২ সালে কমিশনার রাজু হত্যা ও মোহাম্মদপুরে ডাবল মার্ডারের (বস্তাবন্দি জোড়া লাশ) ঘটনায় বাদল সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। এরপর বাদল পেশাদার কিলার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০০৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর কাঁটাসুর এলাকায় ব্রাশফায়ারে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর মিরপুর থেকে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাদল কারাবন্দি ছিল। দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকার সুবাদে বিভিন্ন শীর্ষ ও মধ্যম সারির সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মোহাম্মদপুর এলাকার তিন রাস্তার মোড়ে লেগুনা থেকে চাঁদা তোলার কাজ করত লেগুনার লাইনম্যান নবী হোসেন। চাঁদা ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে রাসেল ও কিলার বাদল অনুসারী মাহি গ্রুপের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত বছরের ৪ এপ্রিল লাইনম্যান নবী হোসেন নিখোঁজ হন। নিখোঁজের পরদিন তুরাগ নদী থেকে তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। নবীর স্বজনরা জানান, নবী ছিলেন রাসেল গ্রুপের সদস্য। যদিও পুলিশ বলছে, নারীঘটিত কারণে পরিকল্পিতভাবে নবীকে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
যারা নিয়ন্ত্রণ করে বাদলের সাম্রাজ্য : মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তা মোড় এলাকায় জসিম, তিন রাস্তা মোড় থেকে আল্লাহ করীম মসজিদ পর্যন্ত সালাম ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করে বাদলের মূল সহযোগী লালু উদ্দিন লাল্লু। বাদলের ১৫-১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করা লালু আধিপত্য বিস্তার করছে। কিশোর গ্যাং নেটওয়ার্কের মূল সমন্বয়ক হিসাবে কাজ করে সোহেল ওরফে গ্যারেজ সোহেল। গ্যাংগুলোর প্রধান হিসাবে কাজ করে ইমন ওরফে জুট ইমন। আইনি ঝামেলা এড়িয়ে বাদলের সব টাকা-পয়সার দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন ইমন। বাদলের বিনিয়োগ করা টাকায় মোহাম্মদপুরের গার্মেন্টগুলোতে ঝুট ব্যবসা করে ইমন। মোহাম্মদপুর এলাকার ১৩টি কিশোর গ্যাং গ্রুপ ইমন ওরফে ঝুট ইমনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চাঁদ-উদ্যান এলাকায় গড়ে ওঠা ইমনের অফিস থেকে গ্রুপগুলো পরিচালনা করা হয়। র্যাব অফিসের কয়েক গজের মধ্যে চাঁদ-উদ্যান এলাকায় প্রতিদিনই চলে কিশোর গ্যাংয়ের গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া।
ঝুট ইমনের সহায়তায় মোহাম্মদপুর কাঁটাসুর এলাকায় সাজ্জাদ ও চাঁদ-উদ্যান এলাকায় মাহি কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে। মোহাম্মদপুর ও বসিলা এলাকাজুড়ে খেলার মাঠ বা খালি জায়গা দখল করে প্রতি সপ্তাহে বেশ কয়েকটি মেলা বসানো হয়। এসব মেলা থেকে চাঁদা উঠানোসহ সবকিছু দেখভালের দায়িত্ব পান করে ইমন। জানা যায়, পুলিশ, র্যাব ও অন্য সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ইমন ওরফে ঝুট ইমনের বিশেষ সখ্য রয়েছে। এ বিশেষ সখ্যের কারণে কিশোর গ্যাং সদস্যদের মারামারিতে কেউ বাধা দিলে তার ওপর নেমে আসে মামলাসহ নানা রকম হয়রানি। মোহাম্মদপুরের এক সময়ের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুমন ওরফে কাইল্যা সুমন। সুমন কিলার বাদলের ভাই ও অন্যতম সহযোগী। বাদলের অন্যতম সহযোগী তাজেল গাজীও সুমনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। হত্যা, চুরি, ডাকাতি এবং ছিনতাইসহ বিভিন্ন মামলায় সুমন ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করেছে। বাদলের মাদক ব্যবসার অন্যতম নিয়ন্ত্রক রনি ওরফে ভাগিনা রনি। ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিন হার্ট অভিযানে সাতটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ রনি গ্রেফতার হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় কিলার বাদলের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এরপর জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে কিলার বাদলের অন্যতম সহযোগী হিসাবে কাজ শুরু করে। এছাড়া মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় বাদলের দখলবাজ একাধিক গ্রুপ রয়েছে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক ভূঞা জানান, কিশোর গ্যাং সদস্যদের প্রতিনিয়ত আটক করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এর পেছনে যারা রয়েছে-তাদেরও আটকের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। বাদল ওরফে কিলার বাদলের নাম শুনেছি। আমরা ক্রমান্বয়ে সব অপরাধীকে আটক করতে কাজ করছি।
| রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী বাদল ওরফে কিলার বাদলের নেতৃত্বে এলাকায় বেশ কয়েকটি ভয়ংকর কিশোর গ্যাং চক্র গড়ে উঠছে। তার নির্দেশে এ চক্রের সদস্যরা মোহাম্মদপুরজুড়ে ছিনতাই, মাদক বিক্রি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির আধিপত্য বিস্তার করেছে। পুলিশের তথ্যমতে, কিলার বাদলের বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজি ও দখলবাজিসহ অন্তত শখানেক মামলা রয়েছে। তার অন্যতম সহযোগী হিসাবে লালু উদ্দিন লালু অন্যতম। বাদলের নির্দেশে লালু কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করেন। |
অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক প্রশ্নফাঁসের মূলহোতা অসিম গাইন | ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।
গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে দুইজন ঢাবি শিক্ষার্থী ও তিনজন পরীক্ষার্থী। তারা হলেন- ঢাবি শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন (২৬) ও সুজন চন্দ্র রায় (২৫) এবং পরীক্ষার্থী মনিষ গাইন (৩৯), পংকজ গাইন (৩০) ও লাভলী মন্ডল (৩০)। এই চক্রের মূলহোতা অসিম গাইন। তার বাড়ি মাদারীপুর। ডিবির ভাষ্য, অসিম পলাতক রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে আসেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
হারুন বলেন, আমাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত যে প্রমাণ পেয়েছি, তাতে এই চক্রের মূলহোতা অসিম গাইন। তার বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। তিনি আগেও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। তিনি অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় করেছেন। এই টাকা দিয়ে তার গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকা অসিমের মানবপাচার, হুন্ডি ব্যবসা ও ডিশের ব্যবসা রয়েছে। যেখানে তিনি প্রশ্ন ফাঁস করে আয় করা টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। আমরা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেফতার করলে কীভাবে প্রশ্নগুলো পান, সেই বিষয়ে পরিষ্কার হতে পারব।
ডিবির হারুন বলেন, গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২১ জেলার সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এই পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের উত্তরপত্র ও ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাতজন ও রাজবাড়ীতে একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এই ঘটনায় দুই জেলায় আলাদাভাবে মামলা দায়ের করেন সংশ্লিষ্টরা। রাজবাড়ীতে আটক হওয়া পরীক্ষার্থী আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান- কীভাবে এবং কখন তার মোবাইলে উত্তরপত্র এসেছে।
ডিবির হারুন জানান, অসিম তার ভাতিজা জ্যোতির্ময় গাইনকে প্রশ্ন সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। আর পরীক্ষার দুই থেকে তিন মাস আগেই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন অসিম। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স শেষের পথে- এমন পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করতেন তিনি। তাদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করতেন। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগেই প্রশ্নের উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন অসিম। তাদের সমাধান করে দেওয়া প্রশ্নের মধ্যে ৭২ থেকে ৭৫টিই মিলেছে।
এই ঘটনায় দুজনকে আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দিয়েছেন। যারা প্রশ্নের সমাধান করেছেন, আদালতে তারাও স্বীকার করেছেন। যারা প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন, তারাও স্বীকার করেছেন। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।
| ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। |
শিক্ষক নিয়োগ: পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে হাতে পৌঁছে যেত উত্তরপত্র | মন্ত্রণালয় থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও গত মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করা হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে উত্তরপত্র। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের এমন সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।
ডিবি জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে বসে এই পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করত চক্রটি।
গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে দুইজন ঢাবি শিক্ষার্থী ও তিনজন পরীক্ষার্থী। তারা হলেন- ঢাবি শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন (২৬) ও সুজন চন্দ্র রায় (২৫) এবং পরীক্ষার্থী মনিষ গাইন (৩৯), পংকজ গাইন (৩০) ও লাভলী মন্ডল (৩০)।
তাদের গ্রেফতারের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে আসেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
ডিবির হারুন বলেন, গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২১ জেলার সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এই পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের উত্তরপত্র ও ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাতজন ও রাজবাড়ীতে একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এই ঘটনায় দুই জেলায় আলাদাভাবে মামলা দায়ের করেন সংশ্লিষ্টরা। রাজবাড়ীতে আটক হওয়া পরীক্ষার্থী আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান- কীভাবে এবং কখন তার মোবাইলে উত্তরপত্র এসেছে।
হারুন জানান, মাদারীপুরে গ্রেফতার হওয়া পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জামিনে বের হয়ে যান। ঘটনাটি তদন্তের জন্য মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলমের অনুরোধে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ তদন্তে নামে। গ্রেফতার করা হয় চক্রের সদস্য ঢাবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন ও সুজন চন্দ্রকে। তারা দুজনই ঢাবির জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তারা গোয়েন্দা পুলিশকে জানান- পরীক্ষার আগেই তারা প্রশ্ন সমাধানের জন্য পেয়েছেন। এই প্রশ্ন সমাধানের দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যোতির্ময় গাইনের চাচা অসিম গাইনের মাধ্যমে। প্রশ্নপ্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাসে তাদের দিয়ে প্রশ্ন সমাধান করান অসিম। এই প্রস্তাবে জ্যোতির্ময় ও সুজনসহ সাতজন ঢাবির জগন্নাথ হলের জ্যোতির্ময়গুহ ঠাকুরতা ভবনের ২২৪ রুমে বসে তারা প্রশ্নের সমাধান করে পাঠান।
ডিবির হারুন জানান, অসিম তার ভাতিজা জ্যোতির্ময় গাইনকে প্রশ্ন সামাধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। আর পরীক্ষার দুই থেকে তিন মাস আগেই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন অসিম। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স শেষের পথে- এমন পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করতেন তিনি। তাদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করতেন। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে প্রশ্নের উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন অসিম। তাদের সমাধান করে দেওয়া প্রশ্নের মধ্যে ৭২ থেকে ৭৫টিই মিলেছে।
হারুন বলেন, এ ঘটনায় দুজনকে (অসিম ও জ্যোতির্ময়) আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দিয়েছেন। যারা প্রশ্নের সমাধান করেছেন, আদালতে তারাও স্বীকার করেছেন। যারা প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন, তারাও স্বীকার করেছেন। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।
ডিবি পরীক্ষা বাতিলের অনুরোধ জানাবে কি না- এমন প্রশ্নের জাবাবে হরুন অর রশীদ বলেন, মামলার তদন্তে পাওয়া সবকিছুই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন পরীক্ষা বাতিল করবেন, নাকি বহাল রাখবেন।
| মন্ত্রণালয় থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও গত মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করা হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগেপরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে উত্তরপত্র। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের এমন সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। |
রায়-আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিশ্চিতে সব কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে: আপিল বিভাগ | সর্বোচ্চ আদালতের উভয় বিভাগের (আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ) রায় ও আদেশের পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায় ও আদেশ বাস্তবায়নে ভবিষ্যতে নির্বাহী ও বিচারিক এবং সব কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে বলে এক রায়ে উল্লেখ করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
‘মো. নুরুন্নবী ভূঁইয়া ও চারজন বনাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী এবং অন্য’-এমন শিরোনামে আদালত অবমাননার পৃথক আবেদনের একসঙ্গে দেওয়া রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ এসেছে।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা পৃথক পাঁচটি আবেদন নিষ্পত্তি করে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রায় দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ।
বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। আট পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি ২৩ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে সতর্ক করে দিচ্ছি যে ভবিষ্যতে শুধু বর্তমান অবমাননার-বিবাদীরা (সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শক) নয়, নির্বাহী ও বিচারিক এবং প্রজাতন্ত্রের সব কর্তৃপক্ষকে সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের রায় ও আদেশের পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সতর্ক থাকতে হবে।’
রায়ে আদালত বলেন, ‘এটি বিস্মিত করে যখন আমরা দেখেছি যে দেশের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর অবমাননার-বিবাদীরা (সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শক) তা বাস্তবায়ন না করে নীরব ছিলেন। আদালত অবমাননার কার্যক্রম শুরু না করা পর্যন্ত তারা এই আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে খুব অনীহা দেখিয়েছেন। এ ধরনের প্রবণতা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যাই হোক, অবশেষে তারা এই বিভাগের (আপিল বিভাগের) সিদ্ধান্ত বিলম্বিতভাবে বাস্তবায়ন করেছেন এবং নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতির প্রার্থনা করেছেন।’
এই পর্যবেক্ষণের আলোকে আবেদনগুলো (আদালত অবমাননার অভিযোগে করা) নিষ্পত্তি করা হলো বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন আপিল বিভাগ। আদালত বলেছেন,
অবমাননার-বিবাদীদের (সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শক) আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
আইনজীবীর তথ্যমতে, ছয় কর্মকর্তা ২০০৮ সালে জেল সুপারের চলতি দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৮৪ সালের নিয়োগবিধি অনুসারে পূর্ণ নিয়োগ পেতে তথা পদোন্নতির জন্য ২০১৬ সালে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বিফল হন। এ নিয়ে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে তাদের পক্ষে রায় পান। এর বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ আপিল ট্রাইব্যুনালে গেলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। এর বিরুদ্ধে তারা আপিল বিভাগে আপিল করেন, যা ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল খারিজ হয়। আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ছয় কর্মকর্তা ২০১৯ সালে ছয়টি আবেদন (রিভিউ) করেন।
জানা যায়, পদোন্নতি নিয়ে ছয় কারা কর্মকর্তার (জেল সুপার) করা পুনর্বিবেচনার আবেদনের (রিভিউ) ওপর ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় দেন। রায়ে ১৯৮৪ সালের অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফ (ডিপার্টমেন্ট অব প্রিজন্স) রিক্রুটমেন্ট বিধিমালার আলোকে দ্রুত আবেদনকারীদের (ছয় জেল সুপার, চলতি দায়িত্ব) পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনা করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগে পদোন্নতিপ্রত্যাশী মো. নুরুন্নবী ভূঁইয়াসহ পাঁচ কর্মকর্তা ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পৃথক পাঁচটি আবেদন করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী ও কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হকের বিরুদ্ধে এই আবেদনগুলো করা হয়।
পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর আপিল বিভাগ পদোন্নতিসংক্রান্ত রায় বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন। ধার্য তারিখ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী ও কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হক আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সেদিন আদালত তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। একই সঙ্গে পুরোপুরি রায় বাস্তবায়ন বিষয়ে জানাতে বলে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য দিন রাখেন। সেদিন শুনানি নিয়ে ওই রায় দেন আপিল বিভাগ।
পূর্ণাঙ্গ রায়টি ২৩ এপ্রিল হাতে পেয়েছেন বলেন জানান পাঁচ কারা কর্মকর্তার আইনজীবী ইব্রাহীম খলিল। শনিবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আপিল বিভাগের রায় অনুসারে প্রথমে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দিয়ে ছয় কর্মকর্তাকে কারা তত্ত্বাবধায়ক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পরে পাঁচজনকে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দিয়ে সিনিয়র জেল সুপার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দিয়ে চারজনকে কারা উপমহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ছয়জনের মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে। তাই এই দুজনের মধ্যে একজনকে সিনিয়র জেল সুপার থেকে কারা উপমহাপরিদর্শক পদে এবং অপর একজনকে জেল সুপার থেকে সিনিয়র জেল সুপার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।
| সর্বোচ্চ আদালতের উভয় বিভাগের (আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ) রায় ও আদেশের পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায় ও আদেশ বাস্তবায়নে ভবিষ্যতে নির্বাহী ও বিচারিক এবং সব কর্তৃপক্ষকেসতর্ক থাকতে হবে বলে এক রায়ে উল্লেখ করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। |
পূর্ণাঙ্গ রায়: রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয় | রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম চ্যালেঞ্জ করে ৩৭ বছর আগে করা রিট আবেদন সরাসরি খারিজের রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের স্বীকৃতি প্রদান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকেও আঘাত করে না।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি নাইমা হায়দারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। অন্য দুই বিচারপতি হলেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। রিট খারিজের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিন বিচারপতি একমত পোষণ করেছেন। তবে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল রায়ে পৃথক পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নাইমা হায়দারের লেখা পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম শুধু সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত শুধু মৌলিক নীতিগুলো অন্য কোন বিধানের সাথেও অসঙ্গতিপূর্ণ নয়। সংবিধানে ইসলামকে "রাষ্ট্রধর্ম মর্যাদা" প্রদান করা হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজনৈতিক মর্যাদা প্রদানের বাধ্যবাধকতা নেই। অনুচ্ছেদ ২(ক) অবশ্যই সামগ্রিকভাবে পড়তে হবে এবং পড়লে এটা সুস্পষ্ট হয় যে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার ধারণার সন্নিবেশ কোনভাবেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করে না। এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকেও প্রভাবিত করে না এবং সংবিধানে বাহুল্যতাও সৃষ্টি করে না।
রায়ে বলা হয়েছে, তর্কিত সংশোধনী সংবিধানে সন্নিবেশিত রাষ্ট্রধর্ম ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাকেও প্রভাবিত করে না। অতএব, আমরা মনে করি তর্কিত সংশোধনীর মাধ্যমে অনুচ্ছেদ ২ক সন্নিবেশ করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান সংবিধান বিরোধী নয়। বিষয়টিকে সহজ করার প্রয়াস হিসেবে, উপস্থাপিত যুক্তিতর্ক আমরা আমাদের রায়ে আলোচনা করেছি। রিট আবেদনকারী এবং বিবাদী পক্ষের আইনজীবীগণের সুনির্দিষ্ট আইনগত যুক্তিসমূহ আমরা রায়ে প্রকাশ করা থেকে বিরত থেকেছি কারণ সাংবিধানিক বিষয় "সামগ্রিকভাবে " আলোচনা করা উচিত।উপরোক্ত আলোচনার আলোকে রুল খারিজ করা হলো। রায়ে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধর্মকে যে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেয়া হয়েছে সে বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। বিচারপতি কাজী রেজাউল হক রায়ের এ পর্যবেক্ষণের একমত প্রকাশ করেছেন।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল তার পৃথক পর্যবেক্ষণে বলেছেন,পঞ্চম সংশোধনীর মতই সপ্তম সংশোধনীর মূল উদ্দেশ্য ছিল সামরিক শাসন বৈধ করা এবং সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠাকারীকে বাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ থেকে রক্ষা করা। এই সংশোধনীতে দেশ অথবা জনগোষ্ঠীর স্বার্থ কোথায়?
সামরিক স্বৈরশাসন সজ্ঞাগতভাবেই ধর্ম, নীতি ও আদর্শের তোয়াক্কা করে না অথচ তাবা অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ঘোষণা করল। দেশে কোন ধর্মীয় সংকট ছিল না। ছিল না কোনো সাংবিধানিক সংকট। তাছাড়া এ বিষয়ে জনগণের পক্ষ থেকে কোন দাবিও উত্থাপিত হয়নি। আশির দশকের স্বৈরশাসকরা রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা ব্যতিরেকে যা কিছু করেছেন তার সবই অধর্ম, অন্যায়, নীতিহীনতা, প্রতারণা, লুটতরাজ এবং বল্লাহীন দুর্নীতি। সন্ত্রাস এবং কুশাসন এ সব কিছু মিলেই এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যে এদেশের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ দীর্ঘ নয় বছর ধরে এই স্বৈরশাসনের অবসানের জন্য সংগ্রাম, ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গ করেছে।
২০১৬ সালের ২৮ মার্চ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, এই রিটে আবেদনকারীর আবেদনের এখতিয়ার (লোকাস স্ট্যান্ডি) নেই।
বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ এ রায় দেন।
১৯৮৮ সালে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে সংযুক্ত করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সংবিধানে ২ (ক) অনুচ্ছেদ যুক্ত করে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে। তখন স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে ওই বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন ১৫ জন বরেণ্য ব্যক্তি। তাদের মধ্যে অনেকেই মারা গেছেন। তারা হলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, বিচারপতি কে এম সোবহান, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, শিল্পী কলিম শরাফী, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ও সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ,অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্ত, লেখক বদরুদ্দীন উমর, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
রিট আবেদনের ২৩ বছর পর ২০১১ সালের ৮ জুন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল দেন। ওই দিনই অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের সহায়তাকারী) হিসেবে ১৪ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে নিয়োগ দেয়া হয়। তারা হলেন, ড. এম জহির, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আখতার ইমাম, ফিদা এম কামাল, আজমালুল হোসেন কিউসি, আবদুল মতিন খসরু, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও আ ফ ম মেজবাহ উদ্দিন।
ওই রুল জারির প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালের ৮ মার্চ এই রুল শুনানির জন্য আদালতে ওঠে। ওই দিন আদালত অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের আদেশটি প্রত্যাহার করেন। পরে ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন আদালত।
| রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম চ্যালেঞ্জ করে ৩৭ বছর আগে করা রিট আবেদন সরাসরি খারিজের রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের স্বীকৃতি প্রদান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকেও আঘাত করে না। |
রাশেদ বিন আমানের বিরুদ্ধে ফের গ্রেফতারি পরোয়ানা | সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বহিষ্কৃত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর রাশেদ বিন আমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
রামপুরা থানায় করা মামলায় বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে এ পরোয়ানা জারি করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হায়দারের আদালত।
আদালত সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আদালত সূত্র জানায়, অর্থ আত্মসাতের মামলায় গত ৫ মার্চ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন রাশেদ বিন আমান। পরে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। এরপর তিনি জামিনে মুক্ত হন। ওই জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফের তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
গত ১১ জানুয়ারি রামপুরা থানায় সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ মোস্তফা গোলাম এমরান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে মীর রাশেদ বিন আমানসহ কোম্পানির সাবেক ৭ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে অর্থ আত্মসাৎসহ হুমকি প্রদানের অভিযোগ আনা হয়।
| সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বহিষ্কৃত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর রাশেদ বিন আমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। |
আ.লীগ নেতা টিপু হত্যা: অভিযোগ গঠন শুনানি শেষ, আদেশ সোমবার | রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় ৩৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২৯ এপ্রিল সোমবার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আলী হোসাইনের আদালতে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের জন্য ধার্য ছিল। এদিন ২৬ আসামির পক্ষে অব্যাহতি ও ১৯ আসামির জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবীরা। শুনানি শেষে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ও জামিনের বিষয়ে আদেশের জন্য ২৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত বছরের ৫ জুন শাহজানপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এ চার্জশিট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার। প্রতিবেদনে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার। তবে এক্সেল সোহেল নামে এক আসামির পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিচারের জন্য ৩৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পরে ২০ জুন এ মামলায় বিদেশে পলাতক দুই সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিকসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত।
চার্জশিটভুক্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ তালুকদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ আহমেদ মনসুর, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম, মতিঝিল থানা জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সোহেল শাহরিয়ার, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মারুফ রেজা সাগর, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বাবুল, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সদস্য কাইল্যা পলাশ, একই ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা আমিনুল, ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ‘ঘাতক’ সোহেল, সুমন শিকদার মুসা, মুসার ভাগনে সৈকত, মুসার ভাতিজা শিকদার আকাশ, ইমরান হোসেন জিতু, মোল্লা শামীম, রাকিব, বিডি বাবু, ওমর ফারুক, ‘কিলার’ নাসির, রিফাত, ইশতিয়াক হোসেন জিতু, মাহবুবুর রহমান টিটু, হাফিজ, মাসুম ও রানা মোল্লা।
এদের মধ্যে মুসা, শুটার আকাশ ও নাসির উদ্দিন মানিক আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি (১৯) নামে এক কলেজছাত্রীও নিহত হন। এছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর ওই রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে টিপুর স্ত্রী অভিযোগ করেন, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুর থানার ২০২ উত্তর শাহজাহানপুর মানামা ভবনের বাটার দোকানের সামনে পৌঁছামাত্র অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা হামলা করেন। তারা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করেন।
| রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় ৩৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২৯ এপ্রিল সোমবার দিন ধার্য করেছেন আদালত। |
যে কারণে খালাস পেলেন গোল্ডেন মনির | মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে অস্ত্র মামলায় খালাস দিয়েছেন আদালত। আদালতের ভাষ্য, গোল্ডেন মনিরের মামলা সাজানো, তার অস্ত্র বৈধ।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) করা একটি অস্ত্র মামলায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান সম্প্রতি এ রায় দিয়েছেন।
আদালতের রায়ের তথ্য অনুযায়ী, র্যাব মামলায় বলেছিল, ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর মনির হোসেনের বাড্ডার বাসায় র্যাব অভিযান চালিয়েছিল সকাল ৬টায়। বাসার তৃতীয় তলায় শয়নকক্ষের তোশকের নিচ থেকে ম্যাগাজিনভর্তি একটি পিস্তল উদ্ধার করে তারা। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল না। অস্ত্র আইনে মামলার পর মনিরকে আদালতের অনুমতি নিয়ে সাত দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগ গঠনের পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৬ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।
আদালত বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া ১৬ সাক্ষীর মধ্যে দুজন পাবলিক সাক্ষী। অন্যরা সবাই পুলিশ সদস্য। মামলার ১৩ নম্বর পাবলিক সাক্ষী এমাদ উদ্দিন আদালতকে বলেন, ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওষুধের দোকানে কর্মরত থাকা অবস্থায় র্যাব সদস্যরা তাকে ডেকে নিয়ে যান। পরে মনিরের বাসার একটি কক্ষে সারা রাত বসিয়ে রাখা হয় তাকে। মধ্যরাতে (রাত ৩টা) র্যাব কর্মকর্তারা একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মামলার ১৪তম সাক্ষী মোবারক হোসেন আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, তাকেও রাত সাড়ে ১০টার দিকে র্যাবের সদস্যরা ডেকে মনিরের বাসায় নিয়ে যান। তার কাছ থেকেও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন র্যাবের সদস্যরা।
রায়ে বলা হয়েছে- পাবলিক সাক্ষী এমাদ ও মোবারকদের উপস্থিতিতে মনিরের বাসার শয়নকক্ষ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের অভিযোগ সমর্থন করে না। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের তথ্য বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয়, মনিরের বাসায় সকাল সাড়ে ৬টায় নয়; অভিযান চালানো হয় রাত সাড়ে ১০টায়। বিশেষ উদ্দেশ্যে মনিরের বাসায় অভিযান চালানো হয়। রাষ্ট্রপক্ষের মামলাটি সাজানো। অন্য সাক্ষীরা মনিরের শয়নকক্ষ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়।
রায়ে বলা হয়েছে, মনিরের বাসা থেকে উদ্ধার অস্ত্রের ফরেনসিক পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে কোনো তথ্য নথিতে উল্লেখ নেই। আবার মামলা করতে দেরি হয় ১৯ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। এত বিলম্বের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয়।
রায়ের তথ্য বলছে, মামলার সাক্ষী উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক চন্দ্র রায় আদালতকে বলেন, মনির হোসেনকে তার বাসার দোতলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আরেক সাক্ষী এসআই জামাল হোসেন ও এএসআই নাজিম উদ্দিন বলেন, মনির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয় বাসার তৃতীয় তলা থেকে। অর্থাৎ সাক্ষীদের সাক্ষ্য পরস্পরবিরোধী।
আদালত আরও উল্লেখ করেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক আবদুল মালেক আদালতকে বলেছেন, তদন্তের সময় তিনি জানতে পারেন, মনির ও তার স্ত্রীর নামে দুটি লাইসেন্স করা অস্ত্র ছিল। অর্থাৎ আবদুল মালেকের সাক্ষ্য থেকে স্পষ্ট যে মনির ও তার স্ত্রীর নামে দুটি বৈধ অস্ত্র ছিল। বৈধ অস্ত্র থাকা অবস্থায় আরেকটি অবৈধ অস্ত্র ঘরে রাখার ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
দোকানকর্মী থেকে স্বর্ণ চোরাচালানি
মানি লন্ডারিং মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, গোল্ডেন মনির ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৭৯১ কোটি ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৩ টাকা জমা করা হয়। মনির এ আয়ের একটি অংশ সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যদের যোগসাজশে যৌথ ও একক নামে ব্যবসায় বিনিয়োগ করে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে রূপান্তর করেছেন।
মনিরকে গ্রেফতার করার পর র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নব্বইয়ের দশকে গাউছিয়া মার্কেটে কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী ছিলেন মনির। পরে মৌচাক মার্কেটের ক্রোকারিজের দোকানে চাকরি নেন। এরপর তিনি বিমানবন্দরকেন্দ্রিক লাগেজ পার্টি ও সোনা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন। পরিচিতি পান ‘গোল্ডেন মনির’ নামে। বিক্রয়কর্মী থেকে লাগেজ পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর মনির শুরুতে কর ফাঁকি দিয়ে কাপড়, প্রসাধনী, ইলেকট্রনিক পণ্য, কম্পিউটার-সামগ্রীসহ বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়া করতেন। একপর্যায়ে আকাশপথে সোনা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন।
এদিকে সিআইডির তথ্য বলছে, অপরাধলব্ধ আয় দিয়ে গোল্ডেন মনির স্ত্রী, ছেলে ও নিজের নামে সরকারি ২০টিসহ ৩০টি প্লট, ১৫টি বাড়ি, একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান ও দুটি গাড়ির শোরুম করেছেন। অথচ মনির ২০০৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দাখিল করা সম্পদের হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করেছিলেন, তার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি টাকা। আর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৭ লাখ টাকা।
| মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে অস্ত্র মামলায় খালাস দিয়েছেন আদালত। আদালতের ভাষ্য, গোল্ডেন মনিরের মামলা সাজানো, তার অস্ত্র বৈধ। |
অস্ত্র মামলায় গোল্ডেন মনির খালাস | মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে অস্ত্র মামলায় খালাস দিয়েছেন আদালত। রায়ে আদালত বলেছেন, পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন- মনির ও তার স্ত্রীর নামে লাইসেন্স করা অস্ত্র ছিল। তাই নিজের ও স্ত্রীর নামে দুটি বৈধ অস্ত্র থাকা অবস্থায় আরেকটি অবৈধ অস্ত্র ঘরে রাখার ঘটনা স্বাভাবিক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়।
আদালত আরও বলেছেন, ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৬টায় মনির হোসেনের বাড্ডার বাসার শয়নকক্ষে খাটের তোশকের নিচ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) করা একটি অস্ত্র মামলায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান সম্প্রতি এ রায় দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, অস্ত্র মামলায় মনির হোসেনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর পর্যালোচনা সাপেক্ষে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
অবশ্য মনিরের আইনজীবী দবির উদ্দিন বলেন, রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, মনিরকে হয়রানির উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা করা হয়।
রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাসায় ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর অভিযান চালিয়ে মনিরকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, চার লিটার বিদেশি মদ, ৩২টি নকল সিল, ৮ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা, ৬০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১ কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনসহ বাড্ডা থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেছিল র্যাব।
পরে মনিরের অবৈধ সম্পদ ও অপরাধলব্ধ আয়ের তথ্য-প্রমাণ পেয়ে ২০২২ সালের ১১ মে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। এছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইন ও জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
| মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে অস্ত্র মামলায় খালাস দিয়েছেন আদালত। রায়ে আদালত বলেছেন, পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন- মনির ও তার স্ত্রীর নামে লাইসেন্স করা অস্ত্র ছিল। তাই নিজের ও স্ত্রীর নামে দুটি বৈধ অস্ত্র থাকা অবস্থায় আরেকটি অবৈধ অস্ত্র ঘরে রাখার ঘটনা স্বাভাবিক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়। |
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন টিআইবি ডিইউজে ডিআরইউ | তথ্য সংগ্রহে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)।
শনিবার এক বিবৃতিতে ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
নেতারা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। তারা বলেন, ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে সাংবাদিকরা। এতে কখনও তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। হঠাৎ করে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সৃষ্টি করায় ব্যাংকিং খাত নিয়ে ভুল সংবাদ প্রকাশ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে, যা কোনো পক্ষেরই কাম্য নয়। নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্য সংগ্রহের কাজে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে গভর্নরকে জোরালোভাবে অনুরোধ জানান। অন্যথায় এর প্রতিবাদে ডিইউজের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ থাকবে না।
শুক্রবার ডিআরইউর কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিনও এক বিবৃতিতে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, প্রতিবেদকেরা সব সময় অবাধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে আসছেন। হঠাৎ করে তাদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা উদ্দেশ্যমূলক ও অনভিপ্রেত; এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি। ফলে ব্যাংক খাত নিয়ে ভুল প্রতিবেদন হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে, যা কোনো পক্ষেরই কাম্য নয়।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্বেচ্ছাচারিতামূলক গোপনীয়তা আরোপের নিন্দনীয় দৃষ্টান্ত হিসাবে উল্লেখ করে টিআইবি। এমন পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে জনস্বার্থে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের তথ্য প্রকাশে অবিলম্বে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় সংস্থাটি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কি তাহলে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ঋণখেলাপি, জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের মতো অপরাধীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে? বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি ও নেতৃত্ব যে অপরাধী চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে, তা গোপন করতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
| তথ্য সংগ্রহে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)। |
এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, বিচার দাবিতে মানববন্ধন | বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা।
বুধবার দুপুর থেকে টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে এফডিসির সামনে মানববন্ধন করেন বিনোদন সাংবাদিকসহ অন্য বিটের সাংবাদিকরা।
মানববন্ধনে হামলায় জড়িত অভিনেতা জয় চৌধুরী, শিবা শানু ও আলেকজান্ডার বোকে সমিতির সদস্যপদ বাতিলসহ যথাযথ শাস্তির দাবি জানান। হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন সমিতির নতুন সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল। এ ঘটনায় সমিতির পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়। হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন শিল্পী সমিতির সাবেক সহসভাপতি চিত্রনায়ক রিয়াজ। ঘটনা তদন্তে প্রযোজক আরশাদ আদনানকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজের নবনির্বাচিত সভাপতি সাজ্জাদ আলম তপু ও সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব, বাচসাসের সভাপতি রিমন মাহফুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবু।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার বিকালে কয়েকজন শিল্পীর নেতৃত্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় এফডিসির কর্মীরা। এ ঘটনায় সাংবাদিক, ক্যামেরাপারসন, ইউটিউবারসহ ২০ জনের মতো আহত হন। এদের মধ্যে চারজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
| বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা। |
যুগান্তরের সাংবাদিক ফরিদের ওপর হামলায় মামলা | যুগান্তর পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার ইকবাল হাসান ফরিদের ওপর ঝাঁজালো কেমিক্যাল নিক্ষেপের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা দুই থেকে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। রোববার ফরিদ বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় মামলাটি করেন। তবে ঘটনার দুই দিনেও হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজীব শিকদার যুগান্তরকে বলেন, মামলার কপি এখনো পাইনি। কপি পাওয়ার পর করণীয় নির্ধারণ করা হবে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ আসামি গ্রেফতারে সর্বাÍক চেষ্টা করা হবে। এদিকে রোববার সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে সাংবাদিক ফরিদ বাসায় ফিরেছেন। ভুক্তভোগী ফরিদ জানান, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরলেও শরীরে জ্বালাপোড়া অনুভব করছেন। শরীরে এখনো জটিলতা রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এনাম মেডিকেলের চিকিৎসকরা জানান, ফরিদের শরীরে মরিচের গুঁড়াসদৃশ রাসায়নিক পদার্থ (কেমিক্যাল) নিক্ষেপ করা হয়েছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্ ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) আব্দুল্লাহিল কাফী যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার পর পুলিশ তাৎক্ষণিক সাংবাদিক ফরিদের খোঁজখবর নিয়েছে। থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে। হামলাকারীদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে সাভারের কলমা এলাকায় ফরিদের ওপর দুর্বৃত্তরা ঝাঁজালো কেমিক্যাল নিক্ষেপ করে। এতে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা ফরিদকে তাৎক্ষণিক প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাভার মডেল থানায় করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাভারের দক্ষিণ কলমার বাসা সংলগ্ন রাস্তায় শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে পৌঁছালে মাস্ক পরিহিত অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন ফরিদকে পথরোধ করে। নিজেদের তারা স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধির লোক দাবি করে তাকে আগামী এক মাসের মধ্যে সপরিবারে সাভার ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। তা না হলে সপরিবারে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে হঠাৎ ফরিদের পেছন দিক থেকে একজন তার মাথা, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পাউডারজাতীয় কিছু দ্রব্য ছুড়ে মারে। এ সময় তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে করতে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। শরীরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া শুরু হলে তিনি চিৎকার করতে থাকেন। চিৎকার শুনে তার স্ত্রী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, বিবাদীরা যে দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলেছে, তাদের সঙ্গে ফরিদের কোনো বিবাদ বা দ্বন্দ্ব নেই। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে জনপ্রতিনিধিদের নাম ব্যবহার করা হতে পারে বলে ফরিদের ধারণা।
| যুগান্তর পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার ইকবাল হাসান ফরিদের ওপর ঝাঁজালো কেমিক্যাল নিক্ষেপের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা দুই থেকে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। রোববার ফরিদ বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় মামলাটি করেন। তবে ঘটনার দুই দিনেও হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। |
অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধের ঘোষণা | দেশে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের অনলাইন, অনলাইনের জন্য নিবন্ধিত এবং নিবন্ধন পেতে আবেদন করা অনলাইন গণমাধ্যম ছাড়া বাকি সব অনলাইন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ ঘোষণা দেন।
ডিআরইউ’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক) মিজান রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে একেবারে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের ২১৩টি অনলাইন আছে। আর নিবন্ধিত অনলাইন আছে ২১৩টি। অর্থাৎ মোট ৪২৬টি অনলাইন আছে। একই সঙ্গে যেগুলো দরখাস্ত করেছে, প্রক্রিয়াধীন আছে সবগুলোর লিস্ট করতে বলা হয়েছে। এর বাইরে যত অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে, সেগুলো আমরা সব বন্ধ করে দেব।
তিনি বলেন, দরখাস্ত করলে নিবন্ধন পাওয়ার আগ পর্যন্ত বন্ধ হবে না। কারণ, নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা অনলাইন কিভাবে চলছে সেটা দেখতে হবে।
বর্তমান সরকারের ১০০ দিনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী কতটা সফল- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে আরাফাত বলেন, ১০০ দিন খুবই অল্প সময় বড় রকমের সফলতা দাবি করার জন্য। অনেক কাজ এগিয়েছে, কাজ যখন প্রক্রিয়াধীন থাকে সেটাকে প্রকাশ করা যায় না, ফলাফলটা যখন আসবে তখন করা যাবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারমুক্ত গণমাধ্যম, সাংবাদিকতার চমৎকার পরিবেশ এবং মত-প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য যা যা উপকরণ লাগে সেই বিষয়গুলোকে নিশ্চিত করতে চাই। আর মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান, তারাই অপতথ্যের ওপর ভর করে অপরাজনীতি করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রবাহকে অবারিত করতে চাই। তথ্য অধিকার আইন শেখ হাসিনার আমলেই সংসদে পাশ হয়েছে। তথ্য পাওয়ার অধিকার আইনগতভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে সেটাকে বাস্তবে আমরা আরও বেশি নিশ্চিত করতে চাই। রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা আছেন তাদের অনেকের তথ্য সরবরাহে কিছুটা অনীহা আছে। তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা একটা বার্তা দিয়েছি, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে। আমরা চাচ্ছি তথ্য অধিকার আইনকে আরও সুদৃঢ় করার জন্য। তথ্য যদি চাওয়া হয় তবে তথ্য দিতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার আছে। এই তথ্য দেওয়ার বিষয়টি আমাদের ক্ষেত্রেও বাধ্যতামূলক। এটাকে জাগ্রত করার চেষ্টা করছি প্রশাসনের প্রত্যেকটি স্তরে। যদি তথ্য না থাকে তখনই অপপ্রচারের সুযোগ তৈরি হয়। কাজেই কিছু প্রশাসনিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। যেন খুবই অল্প সময়ের মধ্যে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য পৌঁছাতে পারি এবং আপনারা জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, একইভাবে তথ্যের বিপরীতে অপতথ্য সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। তাই সবাই মিলে কিভাবে তথ্যের অবাধ প্রবাহকে আরও সুনিশ্চিত করতে পারি এবং এটি করতে গিয়ে আমি যেটা চিন্তা করি অপতথ্যকে রোধ করতে হবে। সাংবাদিকতার মধ্যে যারা পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে অপসাংবাদিকতা করার চেষ্টা করে, আসল সাংবাদিকতাকে তারা সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আরাফাত বলেন, সমাজে অপশক্তি আছে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সমাজের বিপরীতে তারা একটি অন্ধকারের সমাজ তৈরি করতে চায়। জঙ্গিবাদ মৌলবাদের সমাজ তৈরি করতে চায়। এই অপশক্তির সঙ্গে আমাদের নিরন্তর লড়াই। এই লড়াই করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বাস্তবায়ন, অর্থাৎ মুক্ত গণতন্ত্র, মুক্ত গণমাধ্যম, অবাধ মত-প্রকাশের স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে কখনো কখনো হোঁচট খেয়েছি। ক্লাইমেট ঝুঁকির চেয়ে বেশি ঝুঁকি হচ্ছে অপতথ্যের ঝুঁকি। সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে এখানে কোনো ধরনের নীতিমালা না থাকার কারণে এই অপতথ্যের বিস্তার ঘটছে।
তিনি বলেন, মূলধারার গণমাধ্যমে একটা নীতিমালা আছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে এর ডালপালা বিস্তৃত হচ্ছে। সেইখানে আমরা একটা নীতিমালার আওতায় আনতে চাচ্ছি। মিথ্যা খবর কোনোভাবে সমাজের কল্যাণ আনতে পারে না। এখানে সবাই একমত। আমরা কিন্তু বলছি না সরকারের পক্ষে বা আওয়ামী লীগের পক্ষে হোক। কিন্তু খবর সত্য হোক সেটা সরকার বা আওয়ামী লীগের পক্ষে-বিপক্ষে যাক।
| দেশে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের অনলাইন, অনলাইনের জন্য নিবন্ধিত এবং নিবন্ধন পেতে আবেদন করা অনলাইন গণমাধ্যম ছাড়া বাকি সব অনলাইন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত। |
যুগান্তর সাংবাদিকের ওপর ঝাঁঝালো কেমিক্যাল নিক্ষেপ, এলাকা ছাড়ার হুমকি | দৈনিক যুগান্তরের ক্রাইম রিপোর্টার ইকবাল হাসান ফরিদের ওপর ঝাঁঝালো কেমিক্যাল নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা। অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার অদূরে সাভারের কলমা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
দুর্বৃত্তরা এ সময় সাভারের স্থানীয় দুজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে তাদের নির্দেশনার কথা জানিয়ে ইকবাল হাসান ফরিদকে এক মাসের মধ্যে সাভার ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। অন্যথায় তাকে সপরিবারে হত্যা করা হবে।
ঘটনার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ফরিদকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাংবাদিক ইকবাল হাসান ফরিদ বলেন, ‘রাতে অফিস শেষে রাজধানী ঢাকা থেকে সাভারের বাসায় ফিরছিলাম। পৌনে ১২টার দিকে বাসার অদূরে অন্ধকার গলিতে পৌঁছালে পেছন থেকে একজন মুখোশধারী যুবক আমাকে নাম ধরে ডাক দেন। ডাক শুনে দাঁড়ানোর পর মুখোশধারী দুই যুবক স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে এক মাসের মধ্যে এলাকা (সাভার) ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। অন্যথায় সপরিবারে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেন তারা।
‘এরপর কিছু বুঝে উঠার আগেই পেছন থেকে তাদের একজন মরিচের গুঁড়া সদৃশ এক প্রকার ঝাঁঝালো কেমিক্যাল আমার মাথায় ও চোখেমুখে ছিটিয়ে দেন এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে তারা চলে যান। এরপর চোখমুখে ও শরীরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া শুরু হলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়’।
তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা সাভারের যে দুজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে হুমকি দিয়েছেন তাদের কারো সঙ্গেই আমার পরিচয়, যোগাযোগ কিংবা কোনো ধরনের বিরোধ নেই। তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে তাদের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে। আইনশৃংখলা বাহিনীর সঠিক তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে মনে করি।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি সাংবাদিক ফরিদকে হাসপাতালে দেখতে যান সাভার মডেল থানার ওসি মো. শাহজামান। এ সময় তদন্ত করে হামলাকারীদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
| দৈনিক যুগান্তরের ক্রাইম রিপোর্টার ইকবাল হাসান ফরিদের ওপর ঝাঁঝালো কেমিক্যাল নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা। অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার অদূরে সাভারের কলমা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। |
অনিবন্ধিত ও অবৈধ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধে পদক্ষেপ নেবে সরকার | দেশের অনিবন্ধিত ও অবৈধ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনলাইন নিউজ পোর্টাল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ওনাব) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি একথা জানান।
ওনাবসহ অন্যান্য পেশাদার সাংবাদিকদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি করতে চায় না। তবে সাংবাদিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল অ্যাসোসিয়েশনের দাবির সঙ্গে আমি একাত্মতা প্রকাশ করছি যে একটা শৃঙ্খলা আনা দরকার। যেহেতু নিবন্ধনের একটি প্রক্রিয়া আছে সে প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরি। দায়িত্বশীল সাংবাদিক ও সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিবন্ধিত অনলাইন গণমাধ্যমকে প্রণোদনা ও সমর্থন দেওয়ার প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে আমি আপনাদের (সাংবাদিকদের) সঙ্গে একমত।
এ সময় তিনি বলেন, সাংবাদিকরাই বলছেন শৃঙ্খলার জন্য নজরদারি দরকার। গণমাধ্যম এতটাই মুক্ত ও স্বাধীন যে নিবন্ধন ছাড়াও তারা চলছে এবং নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের কথা পেশাদার সাংবাদিকরাই বলছেন। এটা প্রমাণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মুক্ত গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তবে অবাধ স্বাধীনতার কারণে কিছুটা শৃঙ্খলার অভাবও হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনিবন্ধিত পোর্টালগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মানহানিকর অপতথ্যের বিস্তার হয়। এ অপতথ্যের বিস্তার অনলাইন নিউজ পোর্টাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের ছাড়াও বিভিন্ন পেশাদার সাংবাদিকদের পীড়া দেয় বলে বিভিন্ন সময় তারা জানিয়েছেন। এটা খুব ভালো দিক যে, আমাদের সাংবাদিকরা চাচ্ছেন গণমাধ্যমে একটা শৃঙ্খলা এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার বিকাশ। এখানে সরকার পূর্ণাঙ্গভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে একমত।
তিনি আরও বলেন, সরকার গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণে নয় বরং স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করে। নজরদারিতে নয় বরং দায়িত্বশীলতায় বিশ্বাস করে। আমরা মুক্ত গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করি। অপতথ্যের বিস্তৃতি, গুজব ও অপপ্রচার সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম, গণতন্ত্র সবকিছুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সবার স্বার্থে এগুলো রোধ করার জন্য সরকার ও গণমাধ্যমের একটি অংশীদারিত্ব দরকার।
গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন নীতিমালাসহ অন্যান্য নীতিমালা সময়োপযোগী ও আধুনিকীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও এ সময় জানান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।
মতবিনিময় সভায় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অ্যাসোসিয়েশন (ওনাব) সভাপতি মোল্লাহ এম আমজাদ হোসেন, সহ-সভাপতি লতিফুল বারী হামিম ও সৌমিত্র দেব, যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ও আশরাফুল কবির আসিফ, কার্যনির্বাহী সদস্য নজরুল ইসলাম মিঠু, তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু, রফিকুল বাসার, হামিদ মো. জসিম, মহসিন হোসেন, অয়ন আহমেদ ও খোকন কুমার রায় উপস্থিত ছিলেন।
| দেশের অনিবন্ধিত ও অবৈধ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। |
ঈদযাত্রায় ঝরল ৪৩৮ প্রাণ আহত দেড় হাজার | এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাতায়াতে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ৪১৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪৩৮ জন নিহত এবং ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সড়ক-মহাসড়কে ৩৯৯টি দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন।
আর রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ২১ জন আহত; নৌপথে ২টি দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া গত বছরের চেয়ে এবার সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ-সদস্য লুৎফুন্নেছা খান, গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ আব্দুল হক, সংগঠনের সহসভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্মমহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় অন্যবারের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি মানুষ যাতায়াত করেছে।
বর্তমান সরকারের ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায় যানবাহনে গতি বেড়েছে। দেশের সবকটি সড়ক-মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেছে।
সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য এবং পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাস-ট্রেনের ছাদ, খোলা ট্রাক, পণ্যবাহী পরিবহণে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র মানুষকে ঈদে চলাচল করতে দেখা গেছে।
আরও বলা হয়েছে, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩৯৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন। গত বছরে ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত এবং ৫৬৫ জন আহত হয়েছিলেন। গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং আহত ১৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।
পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৯৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত, ২৪০ জন আহত হয়েছেন-যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, নিহতের ৪০ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং আহতের ৩০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ সময়ে সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৮৭ জন চালক, ৩১ জন পরিবহণ শ্রমিক, ৪০ পথচারী, ৭৫ নারী, ৪৭ শিশু, ২৭ শিক্ষার্থী, ৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৪ শিক্ষক, ১ জন রাজনৈতিক দলের কর্মী, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ২ জন চিকিৎসকের পরিচয় পাওয়া গেছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যাত্রীকল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, সংগঠনের সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পাশাপাশি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ৬৫৮ জনের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৬০৮ জন আহত রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে তারা দেখতে পেয়েছেন মোট যানবাহনের ৪০ দশমিক ৫০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ অটোরিকশা, ১২ দশমিক ১১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল এবং ১৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ বাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আরও বলা হয়, দুর্ঘটনার ২৬ দশমিক ৩১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৭ দশমিক ১১ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২ দশমিক ৫৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ০.৫০ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনে, ০.৫০ শতাংশ চাকায় ওড়না প্যাঁচিয়ে এবং ৩ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৫৮ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১০ দশমিক ০২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৫০ দশমিক ৬২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৬ দশমিক ০১ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.২৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবং ০.৫০ শতাংশ লেভেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক, রেল ও নৌপথে ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে অবকাঠামো ভালো হওয়ায় যানবাহনের গতি বেড়েছে। গতিকে নিরাপদ করার মতো আইনি কাঠামো, দক্ষ চালক, মানসম্মত যানবাহনের অভাব রয়েছে। আইন প্রয়োগে দুর্নীতির কারণে জাতীয় মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকের মতো যানবাহন অবাধে চলছে। এছাড়া ছোট ছোট যানবাহন মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ইজিবাইকের অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।
এজন্য মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের আমদানি বন্ধ করে দেশব্যাপী উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সরকারের কাছে দাবি জানাই। পাশাপাশি ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করা, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহণ ঠেকানো, আইন প্রয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়োগ, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে গণপরিবহণগুলোয় নগদ অর্থ বন্ধ করে ডিজিটাল লেনদেন চালুর দাবি জানাই।
দুর্ঘটনার কারণ ও সুপারিশ : ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনার ৬টি কারণ উঠে এসেছে যাত্রীকল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে। এগুলো হলো : ১. দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল; ২. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ঈদে যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব জাতীয় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো; ৩. জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকায় নতুন চালক এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে; ৪. মহাসড়কের নির্মাণত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা; ৫. উলটোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহণ এবং ৬. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যাত্রীকল্যাণ সমিতি ১০ দফা সুপারিশ করেছে। সেগুলো হলো : ১. জরুরি ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা; ২. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতে অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা; ৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান; ৪. ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা; ৫. সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা,
চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা; ৬. মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা; ৭. সড়ক পরিবহণ আইন যথাযথভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা; ৮. উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; ৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করা এবং ১০. মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহণ ও দীর্ঘদিন ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া।
| এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাতায়াতে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ৪১৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪৩৮ জন নিহত এবং ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সড়ক-মহাসড়কে ৩৯৯টি দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন। |
ঈদযাত্রায় প্রাণ হারালেন ৪৩৮ জন | পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির ভেতর যাতায়াতের সময় দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তারা আরও জানায়, গত বছরের ঈদের চেয়ে এবারের ঈদে ৩১.২৫ শতাংশ বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুরন্নেছা খান, গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ আব্দুল হক, সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, মো. মহসিন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঈদের সময় ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন যাত্রী নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে ১৩৯৮ জন। একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ২টি দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত ও ১৪২৪ জন আহত হয়েছে। সংগঠনের দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের মতো এবারো প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
প্রতিবেদনে প্রতি বছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টিও তুলে ধরেছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায় যানবাহনে গতি বেড়েছে। দেশের সবকটি সড়ক-মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর ৭.৫ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেছে। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। গণপরিবহণগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহণে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।
বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিল। বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১.২৫ শতাংশ বেশি হয়েছে। প্রাণহানিও ২৪.০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭.৪৩ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারো দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৯৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত, ২৪০ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৯.৬২ শতাংশ, নিহতের ৪০.৫৪ শতাংশ এবং আহতের ৩০.৩৭ শতাংশ প্রায়। এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছে ৮৭ জন চালক, ৩১ জন পরিবহণ শ্রমিক, ৪০ জন পথচারী, ৭৫ জন নারী, ৪৭ জন শিশু, ২৭ জন শিক্ষার্থী, ৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৪ জন শিক্ষক, ১ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ২ জন চিকিৎসকের পরিচয় মিলেছে।
সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট যানবাহনের ৪০.৫০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪.২৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ৬.৫০ শতাংশ কার মাইক্রো জিপ, ৫.৯৬ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ৬.১৪ শতাংশ অটোরিকশা, ১২.১১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল ও ১৪.৪৬ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৬.৩১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৭.১১ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২.৫৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ০.৫০ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনে, ০.৫০ শতাংশ চাকায় ওড়না পেচিয়ে ও ৩ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩২.৫৮ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১০.০২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৫০.৬২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৬.০১ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.২৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৫০ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে ১০ দফা সুপারিশ সংগঠনটির:
১. জরুরি ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা।
২. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহন, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান।
৪. ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা।
৫. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ এবং চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।
৬. মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা ও রোড সাইন-মার্কিং স্থাপন করা।
৭. সড়ক পরিবহণ আইন যথাযতভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা।
৮. উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করে নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করা।
১০. মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহণ ও দীর্ঘদিন যাবৎ ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
| পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির ভেতর যাতায়াতের সময় দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তারা আরও জানায়, গত বছরের ঈদের চেয়ে এবারের ঈদে ৩১.২৫ শতাংশ বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। |
শিশু হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি | রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে হাসপাতালের ‘বি’-ব্লকের ৫ম তলায় কার্ডিয়াক বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। এ সময় আইসিইউ শয্যার সব ধরনের সরঞ্জাম ধ্বংস হয়ে যায়।
শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের মোহাম্মদপুর, সিদ্দিক বাজার ও তেজগাঁও ফায়ার স্টেশন থেকে অগ্নিনির্বাপক দল ছুটে আসে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন নৌ-বাহিনীর সদস্যরাও। ফায়ার সার্ভিস ও ডিফেন্সের পাঁচটি ইউনিট একযোগে ১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এসি বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ঘটনার পর স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. রোকেয়া সুলতানা হাসপাতালে ছুটে যান।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পর হাসাপাতালের রোগী, তাদের স্বজন এমনকি চিকিৎসক-নার্সসহ সবার মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে তারা দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। রোগীদের অক্সিজেন, ক্যানোলা, স্যালাইন সংযোগ খুলে ওই ব্লক থেকে বের হয়ে যান। রোগী ও তাদের স্বজনরা ভয় ও আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে তীব্র গরমের মধ্যে এখানে-সেখানে আশ্রয় নেন। হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে অনেকে কমবেশি আহতও হন। এ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কার্ডিয়াক বিভাগের প্রধান ডা. রেজোয়ানা রিনার নেতৃত্বে এই কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
অগ্নিকাণ্ডের পর ‘বি’ ব্লকের সব রোগীকে সরিয়ে ফেলা হয়। এই ব্লকের ১৯৪টি শয্যায় ১৭৩ জন শিশু রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। এরমধ্যে আইসিইউ, পিআইসিইউ এবং এনআইসিইউ, স্ক্যাবু, এইচডিইউর ১৬টি শয্যায় চিকিৎসাধীন রোগীদের পার্শ্ববর্তী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। কিছু রোগী ছাড়পত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যান। আগুন লাগার পরপর যেসব রোগী জীবন বাঁচাতে বাইরে বের হয়ে গিয়েছিলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর তারা ওয়ার্ড ও কেবিনে ফিরে যান।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বার্তায় জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় নৌবাহিনী। আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেওয়া নৌবাহিনীর ঘাঁটি হাজী মহসিনের লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তানবিনুর রহমান বলেন, আইসিইউতে যত রোগী ছিলেন, সেসব রোগী ও তাদের স্বজনদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছেন তারা।
সরেজমিন দেখা যায়, অগ্নিকাণ্ডের সময় পুরো হাসপাতালে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য তৈরি হয়। রোগী ও তাদের স্বজনরা চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে থাকেন। প্রিয়জনের জীবন রক্ষায় যে যার মতো প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
চিকিৎসা নিতে আসা নাসরিন বেগম নামে এক স্বজন জানান, তার বাচ্চা আইসিইউতে ভর্তি ছিল। মুখে ছিল অক্সিজেন মাস্ক। আগুনের খবরে মুখের অক্সিজেন খুলে প্রথমে চার তলায় ছুটে যান। সেখানে অক্সিজেনের ব্যবস্থা না থাকায় নিচে নেমে আসেন।
রোগীর স্বজনরা আরও জানান, দুপুরে আইসিইউর ভেতর হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এর পরপরই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ভবনের কার্ডিয়াক ইউনিট এবং এর আশপাশের ওয়ার্ডসহ পুরো ভবন প্রচণ্ড ধোঁয়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। আইসিইউতে ভর্তি থাকা শিশুর স্বজনরা ভয়ে কাঁদতে থাকেন।
স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, এতবড় একটা হাসপাতাল, অথচ আগুন নির্বাপণের জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই। আগুন নেভানোর মতো প্রাথমিক ব্যবস্থাও নেই তাদের।
হাসপাতালে সন্তানের চিকিৎসা নিতে আসা জোবায়ের আলম বলেন, ‘আমার ৬ বছর বয়সি কন্যা সন্তান ভর্তি রয়েছে। আগুন লাগার খবর পেয়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী দৌড়ে নিচে নেমে আসি। কারণ, এর আগে বেইলি রোড ট্র্যাজেডিতে শুধু ধোঁয়ায় অনেকে মারা গেছেন।
এক রোগীর স্বজন রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। হঠাৎ আগুন লাগার খবরে দৌড়ে হাসপাতালে এসে দেখেন আগুন জ্বলছে। চতুর্দিকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। পরে দ্রুতই তিনি তার রোগীকে নিয়ে হাসপাতালের নিচে নেমে আসেন। শুনেছি আইসিইউর বিছানার কাপড়ে আগুন লেগে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
আগুনে আইসিইউতে থাকা ১০টি মেশিন পুড়ে অকেজো হয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের পর কার্ডিয়াক বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, আইসিইউর চিকিৎসক কক্ষে থাকা এসি, কম্পিউটার, প্রিন্টার, চেয়ার-টেবিলসহ রোগী ও চিকিৎসকদের ফাইলপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কক্ষের দেওয়ালসহ সবকিছুতেই কালো ধোঁয়ার আস্তরণ পড়ে আছে।
মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, আইসিইউর ভেতর থাকা এসি বিস্ফোরণ থেকে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে সূত্রপাত হয়েছিল, সে জায়গাটিতে অক্সিজেন সরবারহ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। পরে অক্সিজেন সংযোগ বন্ধ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর রোগীদের সরিয়ে নেওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে জানান, দুপুরের দিকে হাসপাতালের ‘বি’ ব্লকের পাঁচ তলায় আইসিইউতে আগুন লাগার পর শিশুদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়। আগুনের ঘটনায় কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খোঁজখবর নিয়ে জানাতে পারব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কার্ডিয়াক বিভাগে কর্তব্যরত এক নার্স বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া প্রত্যেক শয্যায়ই রোগী ছিল। যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন আইসিইউতে ১৬ জন রোগী ছিল। আগুন লাগার পর তাদের প্রত্যেককেই বিভিন্ন ওয়ার্ড ও অন্যান্য আইসিইউগুলোতে স্থানান্তর করা হয়। তিনি বলেন, আগুনে পুরো বেড, দেওয়াল, এসি, ফ্রিজসহ অক্সিজেন সামগ্রী পুড়ে গেছে। যেগুলোর কোনোটাই আর ব্যবহার উপযোগী নয়। যেগুলো ছিল তা এখন দাহ্য পদার্থ।
কর্তব্যরত এক চিকিৎসক বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় সমস্যার কারণ ছিল ধোঁয়া। আইসিইউ থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার কোনো পথ ছিল না। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা এসে কয়েকটি জানালার কাচ ভেঙে ধোঁয়া বের হওয়ার ব্যবস্থা করেন। আগুন যদি আরও ছড়িয়ে পড়ত, তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. রোকেয়া সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালের চেয়ার-টেবিল, এসি-ফ্রিজ, শয্যাসহ যা কিছু পুড়েছে সবকিছু ক্ষয়ক্ষতির বিষয় সঠিকভাবে তদন্ত করে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
| রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে হাসপাতালের ‘বি’-ব্লকের ৫ম তলায় কার্ডিয়াক বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। এ সময় আইসিইউ শয্যার সব ধরনের সরঞ্জাম ধ্বংস হয়ে যায়। |
সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট | সারা দেশের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও দুর্ঘটনা কমাতে প্রতিদিনই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বুধবার এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে এ অভিযান পরিচালনা করতে বলা হয়েছে।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানিয়েছেন, সম্প্রতি সড়কে দুর্ঘটনায় হতাহতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, অবৈধ নসিমন-করিমন, থ্রি-হুইলার, ফিটনেসবিহীন মোটরযান ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল সড়ক মহাসড়কে চলাচল, মোটরযানের অতিরিক্ত গতি এবং মালবাহী গাড়িতে যাত্রীবহন ইত্যাদি অনিয়মের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে।
নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং ট্রাফিক পুলিশের অভিযান জোরদার করার মাধ্যমে এসব অনিয়ম বন্ধ করে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
এ লক্ষ্যে বিআরটিএর সার্কেল অফিসের সহকারী পরিচালকদের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
| সারা দেশের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও দুর্ঘটনা কমাতে প্রতিদিনই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বুধবার এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে এ অভিযান পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। |
বেঁচে গেলেন শতাধিক যাত্রী | ঈদের দিন ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাইলটের দক্ষতায় প্রাণে বেঁচে গেছেন শতাধিক যাত্রী। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাঠমান্ডুগামী একটি ফ্লাইট (বিজি-৩৭১) উড্ডয়নের সময় চাকা ফেটে যায়। রানওয়ের মধ্যে থাকা একটি লাইটবক্স ভেঙে বেরিয়ে আসার কারণে বিমানের দ্রুতগামী চাকায় আঘাত লেগে এ ঘটনা ঘটে। টেকঅফের ঠিক আগ মুহূর্তে হওয়ায় পাইলটের নিয়ন্ত্রণে ছিল না বিমানটি। এ কারণে চাকার টায়ার ফেটে যাওয়ার পরও ফ্লাইটটি আকাশে উঠে যায়। পরবর্তী সময়ে পাইলট দক্ষতার সঙ্গে ফের বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করতে সক্ষম হলে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
আরও জানা যায়, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর পুরো ফ্লাইটে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চাকা ফেটে নাইট্রোজেন গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় ফ্লাইটের মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। এ সময় আকাশে থাকা ফ্লাইটটির ভেতরে যাত্রীদের মাথার ওপরে থাকা অক্সিজেন মাস্কগুলো একটার পর একটা বেরিয়ে আসতে থাকে। এতে যাত্রীরা আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কেবিন ক্রুরা দিশেহারা হয়ে এদিক-ওদিক ছুটতে থাকেন। যাত্রীরা কান্নাকাটি শুরু করেন। কেউ কেউ আল্লাহু আকবর বলে আজান দেন। আবার অনেকে উচ্চৈঃস্বরে দোয়া-দরুদ পড়তে থাকেন।
বিমান সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এয়ারক্রাফটটি আকাশে উঠে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই দুই পাইলট সিদ্ধান্ত নেন ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণের। তারা বিষয়টি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টাওয়ারে জানান। ‘মেডে মেডে’ সংকেত দিয়ে ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণের অনুমতি চান। একপর্যায়ে টাওয়ার থেকে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়। এ সময় শাহজালালে আকাশে অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য অপেক্ষায় থাকা দেশি-বিদেশি অন্য ফ্লাইটগুলোকে হোল্ডে (অপেক্ষায়) থাকতে বলা হয়। দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের দুই পাইলট এরপর বোয়িং কোম্পানির ৭৩৭ এয়ারক্রাফটটি নিয়ে দীর্ঘ সময় আকাশে চক্কর দিতে থাকেন। কারণ, তখন বিমানের দুই ট্যাংক জ্বালানি তেলে পূর্ণ ছিল। এ সময় জরুরি ল্যান্ডিং করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাসহ বিমানে আগুন ধরে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। যে কারণে এয়ারক্রাফটে থাকা পুরো জ্বালানি তেল ফেলে দেওয়া হয়। যখন বিমানের তেল বহনকারী ট্যাংক জ্বালানিশূন্য হয়ে যায়, তখনই দুই পাইলট জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিমানটিকে শাহজালালের রানওয়েতে জরুরি অবতরণ করান। এর আগে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রানওয়েজুড়ে ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ চিকিৎসক প্রস্তুত রাখেন। যাতে বিমানে আগুন ধরে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। এছাড়া কোনো যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিউল আজিম যুগান্তরকে বলেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) গাফিলতির কারণে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু বিমানের পাইলটরা খুবই দক্ষতার সঙ্গে পুরো ব্যবস্থা সামাল দেওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। কোনো যাত্রীও হতাহত হননি। তবে এ ঘটনায় এক ঘণ্টা ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ছিল শাহজালালে। বিকল্প ব্যবস্থায় ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণ করা হলেও চাকা ফেটে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় রানওয়েতে পড়ে ছিল বিমানটি। পরে টো ট্রাক্টর ব্যবহার করে রানওয়ে থেকে বিমানটি সরিয়ে নেওয়া হয়।
বিমান এমডি আরও বলেন, এ দুর্ঘটনার কারণে বিমানকে মোটা অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। এ ঘটনার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে। ইতোমধ্যে বেবিচককে পুরো ঘটনা জানিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তার মতে, রানওয়েতে একটি নুরি পাথরও বিমান চলাচলের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে থাকে। সেখানে একটি লাইট বক্স ভেঙে রানওয়ে থেকে বেরিয়ে আসার পরও কীভাবে সেটি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীদের চোখে পড়ল না, তা রহস্যজনক। তিনি জানান, এ দুর্ঘটনায় বিমানের একটি মেইন হুইল বড় ধরনের ডেমেজ হয়। এছাড়া একটি নোজ গিয়ার ও ল্যান্ডিং গিয়ারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিমানের ফ্লাইট অপারেশন শাখা সূত্রে জানা যায়, ওই ফ্লাইটের পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন তাপস আহমেদ ও ক্যাপ্টেন মাইনুল হোসেন। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। রানওয়ের মতো এত স্পর্শকাতর এলাকায় কীভাবে একটি লাইট ভেঙে পড়েছিল এবং এর সঙ্গে কারা সংশ্লিষ্ট্র, তাদেরও খুঁজে বের করাও সম্ভব হয়নি।
নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো ফ্লাইট উড্ডয়নের আগে সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটের পাইলট ও প্রকৌশলীরা বিমানটিকে ৩ ধাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন। বিশ্বের প্রতিটি এয়ারলাইন্সে এ ইনস্পেকশন খুবই গুরুত্বের সঙ্গে করা হয়ে থাকে। একইভাবে যে কোনো ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়নের পর রানওয়েও ভালোভাবে ইনস্পেকশন করা হয়ে থাকে। অত্যাধুনিক সুইপার মেশিনের মাধ্যমে পুরো রানওয়ে পরিষ্কার করার কথা। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিমানের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা এসব ইনস্পেকশন করাতে কম গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। যে কারণে এ ধরনের একাধিক দুর্ঘটনা ও বিমানের চাকা ফেটে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এভিয়েশন ব্যবসায় এয়ারক্রাফটের ল্যান্ডিং গিয়ার ও সংযুক্ত পার্ট চাকাকে বিমানের একটি ক্রিটিক্যাল পার্ট হিসাবে ধরা হয়। এ কারণে এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রুটিন ইনস্পেকশনের পাশাপাশি আইএনটি, এসভিসি, এসি ও সি চেক করা জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তারপরও নানা কারণে বিমানের চাকা ফেটে যাওয়া, ল্যান্ডিং গিয়ার বের না হওয়াসহ প্রতিনিয়ত নান দুর্ঘটনার অভিযোগ আছে।
সাধারণত কোনো বিমান রানওয়েতে অবতরণ বা উড্ডয়নের সময় তার গতিবেগ ২৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি থাকে। বিপুল পরিমাণ ওজনসহ এ গতিবেগ নিয়ে বিমান যখন রানওয়ের মাটি স্পর্শ করে, তখন চাকার সঙ্গে রানওয়ের ঘর্ষণ তৈরি হয়। আর এ ঘর্ষণের ফলে সৃষ্টি হয় অগ্নিস্ফুলিঙ্গের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের একজন পাইলট যুগান্তরকে বলেন, এ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ থেকে যাতে আগুন ধরে না যায়, সেজন্য চাকার ভেতর নাইট্রোজেন গ্যাস ভরা থাকে। যাতে আগুন ধরে গেলেও মুহুর্তে তা নিভে যায়। তবে এসব দুর্ঘটনায় যদি কেবিনের মধ্যে নাইট্রোজেন গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে কেবিনের অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তখন বিকল্প ব্যবস্থায় যাত্রীদের অক্সিজেন দেওয়া হয়। ওই পাইলট আরও বলেন, ১১ এপ্রিলের ঘটনায়ও চাকা ফেটে নাইট্রোজেন গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় কেবিনের মধ্যে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিয়েছিল। যদি ওইদিন ফ্লাইটটি অবতরণ করাতে আরও দেরি হতো, তাহলে অক্সিজেনের অভাবে অনেক যাত্রী গুরুতর অসুস্থ হতে পারতেন-এমন শঙ্কাও ছিল।
| ঈদের দিন ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাইলটের দক্ষতায় প্রাণে বেঁচে গেছেন শতাধিক যাত্রী। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাঠমান্ডুগামী একটি ফ্লাইট (বিজি-৩৭১) উড্ডয়নের সময় চাকা ফেটে যায়। রানওয়ের মধ্যে থাকা একটি লাইটবক্স ভেঙে বেরিয়ে আসার কারণে বিমানের দ্রুতগামী চাকায় আঘাত লেগে এ ঘটনা ঘটে। টেকঅফের ঠিক আগ মুহূর্তে হওয়ায় পাইলটের নিয়ন্ত্রণে ছিল না বিমানটি। এ কারণে চাকার টায়ার ফেটে যাওয়ার পরও ফ্লাইটটি আকাশে উঠে যায়। পরবর্তী সময়ে পাইলট দক্ষতার সঙ্গে ফের বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করতে সক্ষম হলে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। |
ফেব্রুয়ারিতে ৫০৩ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৫৫ | ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৫০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত এসব দুর্ঘটনায় ৫৫৫ জন নিহত হয়েছেন। এতে এক হাজার ৩১ জন আহত হয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
বুধবার যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ঢাকায় ১১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩৫ জন নিহত ও ৩১৭ জন আহত হয়েছেন।
সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সিলেট বিভাগে। এ বিভাগে ২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন।
সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারিতে রেলপথে ৩৮টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত ও ৬৪ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে পাঁচটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত, চারজন আহত এবং একজন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫৪৬টি দুর্ঘটনায় ৫৯৯ জন নিহত এবং এক হাজার ৯৯ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে ১৭৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২১০ জন নিহত, ১২৯ জন আহত হয়েছেন; যা মোট দুর্ঘটনার ৩৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ, নিহতের ৩৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ ও আহতের ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ২৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৬৩ জন চালক, ৩৪ জন পথচারী, ৪৯ জন পরিবহণ শ্রমিক, ৬৯ জন শিক্ষার্থী, ছয়জন শিক্ষক, ৯৩ জন নারী, ৫৮ জন শিশু, তিনজন সাংবাদিক, একজন চিকিৎসক, একজন আইনজীবী, একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং পাঁচজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন তিনজন পুলিশ সদস্য, একজন আনসার সদস্য, দুইজন সাংবাদিক, একজন চিকিৎসক, একজন মুক্তিযোদ্ধা, ১২৩ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৩৪ জন পথচারী, ৬২ জন নারী, ৪৪ জন শিশু, ৩৪ জন শিক্ষার্থী, ১৫ জন পরিবহণ শ্রমিক, ছয়জন শিক্ষক ও পাঁচজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এ সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় সংঘটিত ৭১০টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১২ দশমিক ৯৫ শতাংশ বাস, ১৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ বিবিধ কারণে, চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৩৯ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে।
এছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।
| ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৫০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত এসব দুর্ঘটনায় ৫৫৫ জন নিহত হয়েছেন। এতে এক হাজার ৩১ জন আহত হয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। |
ফুলেল শ্রদ্ধায় সাংবাদিক আতিকুর রহমানকে শেষ বিদায় ডিআরইউ’র | সংগঠনের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য ও দৈনিক ভোরের কাগজের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক সাংবাদিক আতিকুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিআরইউ প্রাঙ্গণে সাংবাদিক আতিকুর রহমানের জানাজা শেষে ফুলেল শ্রদ্ধায় তাকে শেষ বিদায় জানানো হয়।
ডিআরইউ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমানের (মিজান রহমান) নেতৃত্বে সাংবাদিক আতিকুর রহমানের কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে ডিআরইউ’র কার্যনির্বাহী কমিটি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কার্যনির্বাহী কমিটির অর্থ সম্পাদক মো: জাকির হুসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, দপ্তর সম্পাদক রফিক রাফি, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান, আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ) ও কল্যাণ সম্পাদক মো. তানভীর আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য মুহিববুল্লাহ মুহিব, রফিক মৃধা ও মো. শরীফুল ইসলাম ছাড়াও ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, রফিকুল ইসলাম আজাদ, নজরুল ইসলাম মিঠু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ ও মাইনুল হাসান সোহেলসহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আতিকুর রহমানের মৃত্যুতে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান (মিজান রহমান) গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ডিআরইউ নেতারা আতিকুর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক আতিকুর রহমান মৃত্যু বরণ করেন। তিনি ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর। তিনি স্ত্রী, মা, ৩ ভাই, ২ বোন, আত্মীয়স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আতিকুর রহমান ১৯৭৬ সালে টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন।
| সংগঠনের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য ও দৈনিক ভোরের কাগজের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক সাংবাদিক আতিকুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। |
ফুলেল শ্রদ্ধায় শিব নারায়ণ দাশকে শেষ বিদায় | বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশকে ফুল দিয়ে শেষ বিদায় জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে তার কফিন নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রথমে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা হিসাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিরা তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
৭৮ বছর বয়সে শুক্রবার সকালে শিব নারায়ণ দাশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মারা যান। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তার চোখ সন্ধানীতে দান করা হয়েছে। আর দেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করা হবে।
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শিব নারায়ণ দাশের মরদেহ বিকালে কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানান কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ-সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। পরে একে একে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি, দৈনিক কুমিল্লার কাগজ, ভিক্টোরিয়া কলেজ রোবার স্কাউট, উদীচী কুমিল্লা, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ, কুমিল্লা মহানগর বিএনপি, মহানগর কৃষক লীগ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, কমিউনিস্ট পার্টি কুমিল্লা জেলা, পূর্বাশা-মধুমিতা ও কচিকাঁচার মেলা, খেলাঘর কুমিল্লা, যুব ইউনিয়ন, কুমিল্লা ক্লাব, ন্যাপ-গ্যারিলা পার্টি, মোস্তফা কামাল ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। কুমিল্লায় সর্বস্তরের জনতার শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা হবে।
ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শিব নারায়ণ দাশের কফিনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের সঙ্গে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খানও শ্রদ্ধা জানান।
শহিদ মিনারে শিব নারায়ণ দাশকে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার। শিব নারায়ণ দাশ এক সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা ছিলেন। অগ্রজের প্রতি শ্রদ্ধা জানান জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।
এছাড়া কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাসদ, বাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জেএসডি, জাতীয় যুব জোট, কেন্দ্রীয় খেলাঘর, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, গণজাগরণ মঞ্চ, সহযাত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ, ৫ দলীয় বাম জোট, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শিব নারায়ণ দাশের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানোনো হয়।
| বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশকে ফুল দিয়ে শেষ বিদায় জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে তার কফিন নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রথমে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা হিসাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিরা তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। |
শিব নারায়ণের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক | আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
আজ শুক্রবার এক বার্তায় তিনি প্রয়াত শিব নারায়ণ দাশের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শিব নারায়ণ দাস সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি স্ত্রী ও ১ ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
| আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। |
চলে গেলেন প্রথম পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাশ | বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার শিব নারায়ণ দাশ মারা গেছেন। ৭৮ বছর বয়সি এই জাসদ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ।
অর্ণব বলেন, বাবার মরদেহ বারডেমের মরচুয়ারিতে রাখা হবে। তার দেহ এখানে দান করা হবে এবং কর্নিয়া দান করা হবে সন্ধানীতে।
শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ১ এপ্রিল রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শিব নারায়ণ দাশ।
মনিপুরীপাড়ার বাসায় ওই দিন রাতে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে শমরিতা থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেওয়া হয়েছিল।
শিব নারায়ণের তৈরি করা বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা ধরেই হয়েছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল।
লাল-সবুজের ভেতরে হলুদ রঙে বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত ওই পতাকার নকশা যারা করেছিলেন, তাদের একজন সেই সময়ের ছাত্রলীগ নেতা শিব নারায়ণ দাশ।
১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৮ নম্বর কক্ষে বসে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী ওই পতাকার নকশা তৈরি করেছিলেন ‘জয়বাংলা বাহিনীর’ জন্য।
| বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার শিব নারায়ণ দাশ মারা গেছেন। ৭৮ বছর বয়সি এই জাসদ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ। |
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের মায়ের ইন্তেকাল | মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য এম আব্দুর রহিমের সহধর্মিণী নাজমা রহিম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। বুধবার বেলা ৩টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নাজমা রহিম (৮৪)।
তিনি দুই ছেলে, চার মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের মা নাজমা রহিম। তার ছোট ছেলে ইকবালুর রহিম দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ-সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ। নাজমা রহিমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আজ রাত পৌনে ১০টায় (তারাবিহর নামাজের পর) বেইলি রোডের মিনিস্টার অ্যাপার্টমেন্টসংলগ্ন মসজিদে জানাজা হবে। বৃহস্পতিবার দিনাজপুরে তার লাশ দাফন করা হবে।
| মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য এম আব্দুর রহিমের সহধর্মিণী নাজমা রহিম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। বুধবার বেলা ৩টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নাজমা রহিম (৮৪)। |
ঝিনাইদহ-১ আসনের এমপি আবদুল হাই মারা গেছেন | ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শনিবার ভোরে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর বিষয়টি থাইল্যান্ডে অবস্থান করা তার ব্যক্তিগত সহকারী শহিদুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। তিনি স্ত্রী, ১ মেয়ে ২ ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আছাদুজ্জামান আসাদ জানিয়েছেন, মো. আবদুল হাই বেশ কিছু দিন ধরে লিভার জটিলতাসহ নানা রোগে অসুস্থ হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।
পরিবার সূত্র প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, মরদেহ দেশে আসার পর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই নেতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঝিনাইদহে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা তুলেছিলেন। তার মৃত্যুতে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে।
| ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। |
ডিএমপির ১০ থানায় কিশোর গ্যাং বেশি: পুলিশ কমিশনার | ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে ১০টি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যের অপরাধ লক্ষ করা যায়। এসবের মধ্যে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক আন্দোলন নিয়ে ছায়া সংসদ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক জিএম তসলিম, সাংবাদিক জিয়া খান, সাংবাদিক অনিমেষ কর ও সাংবাদিক কাওসার সোহেলী।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজকের কিশোর আগামী দিনের যুবক। তারাই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে। ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সি কেউ অপরাধ করলে আমরা তাকে কিশোর অপরাধী বলছি। এই বয়সি কিশোরেরা দলবদ্ধভাবে অপরাধ করলে তাকে আমরা বলছি ‘কিশোর গ্যাং’।
তিনি বলেন, আজকের কিশোর-তরুণেরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এ জন্য তাদের নিয়ে ‘কিশোর গ্যাং’ শব্দ বলতে চাই না। খেলাধুলার জায়গার কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা শহরে খেলার মাঠের সংখ্যা কম। মাঠ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো খেলাধুলার মাঠের বিষয়ে কাজ করতে পারে।
কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে কি না- জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের মদদদাতা যারা রয়েছে তাদের তালিকা করা হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের অদ্ভুত অদ্ভুত নাম রয়েছে, তাদের তালিকা করা হয়েছে। যারা মদদদাতা গডফাদার তারা ওইভাবে গডফাদার নয়। তারা যে কিশোর অপরাধের জন্য গ্যাং তৈরি করেছে, বিষয়টি এমন নয়। রাজনৈতিকভাবে কিছু লোক কিশোরদের নিয়ে যাচ্ছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, কাউন্সিলরদের কিছু অনুসারী রয়েছেন, যাদের ১৮ বছরের বেশি। এলাকায় রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ কিশোরদের ব্যবহার করছেন। সরাসরি কোনো কাউন্সিল কিশোরদের নিয়ে অপরাধ করার জন্য গ্যাং তৈরি করেছে এমন তথ্য পাইনি আমরা। কাউন্সিলরদের সহযোগী রয়েছেন এমন কেউ কেউ আছেন, যারা কিশোরদের নিয়ে চলাচল করেন। এসব কিশোরের বেশিরভাগই ছিন্নমূল, যারা রাস্তায় কাজ করে। বেশিরভাগ কিশোরের বাবা নেই। মা থাকলেও দেখা যায় অন্যের বাসায় কাজ করেন। এসব বিষয়েও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। রাজনৈতিক উপনেতা-পাতিনেতাদের বিভিন্ন সময়ে থানায় ডেকে শাসানোও হচ্ছে।
তিনি বলেন, কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে সবার আগে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। অভিভাবকরা যেন তাদের কোমলমতি সন্তানদের সময় দেন ও ঠিকমতো দেখাশোনা করেন। যাতে তারা কিশোর গ্যাংয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে না পরে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, কিশোর অপরাধের ক্ষেত্রে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক দুটি কাজই কিন্তু পুলিশ করে থাকে। কোনো ঘটনা ঘটে গেলে পুলিশ মামলা রুজু, অভিযুক্তকে গ্রেফতার ও তাদের আদালতে প্রেরণ করে থাকে। এছাড়াও কিশোর অপরাধ প্রতিরোধ করতে পুলিশ বিভিন্ন স্কুলে, পাড়ায়, অনুষ্ঠানে এমনকি মসজিদে গিয়েও মানুষকে সচেতন করছে।
| ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে ১০টি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যের অপরাধ লক্ষ করা যায়। এসবের মধ্যে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি। |
নির্বাচন সংসদ সদস্যদের আচরণ নজরে রাখতে হবে: ইসি আনিছুর | নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা যাতে আচরণবিধি মেনে চলেন সে বিষয়ে কর্মকর্তাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করার চেষ্টা করলে তাকে ভদ্রভাবে অবহিত করে বিরত থাকার অনুরোধ করতে হবে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকেই সংসদ সদস্যদের ইতিমধ্যে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিলেট শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শনিবার ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সিলেট বিভাগের মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ সিদ্দীকি। এ সময় বিভাগের চার জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ছাড়াও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় ২ ঘণ্টা রুদ্ধদার আলোচনা শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি, ২টা রাজনৈতিক দল, এর মধ্যে একটার নিবন্ধন নাই। তাদের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ নেই। তারা ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা নির্বাচন থেকে চলে গেছে। এছাড়া একটি নিবন্ধিত দল উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে কিন্তু বর্জন আমি দেখি নাই, আমার চোখে পড়ে নাই। বর্জন যারা করছে, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার তারা বর্জন করতেই পারে। তিনি বলেন, ভোটাররা যদি নির্বাচন বর্জন না করেন, তাহলে এসব বর্জনের কোনো প্রভাব পড়বে না।
নির্বাচনে সহিংসতার কোনো শঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সহিংসতা হয়নি। আগে ছিল প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকে ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত প্রচারণা। কিন্তু এবার আমরা একটু ভিন্নতা এনেছি যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান দেওয়া যাবে যে, আমি ভোটের মাঠে আছি।
জাল ভোট হলে তাৎক্ষণিক সেই কেন্দ্রের ভোট বন্ধ-ইসি হাবিব : বরিশাল ব্যুরো জানায়, নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আহসান হাবিব খান বলেছেন, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে জাল ভোট হলে তাৎক্ষণিক সেই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে। ভোটকে ঘিরে দেশের কোথাও কোনো ধরনের সহিংসতাও সহ্য করা হবে না।
বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শনিবার মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী, রেঞ্জ ডিআইজি জামিল হাসান, পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির, জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
| নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা যাতে আচরণবিধি মেনে চলেন সে বিষয়ে কর্মকর্তাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করার চেষ্টা করলে তাকে ভদ্রভাবে অবহিত করে বিরত থাকার অনুরোধ করতে হবে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকেই সংসদ সদস্যদের ইতিমধ্যে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিলেট শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শনিবার ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সিলেট বিভাগের মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ সিদ্দীকি। এ সময় বিভাগের চার জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ছাড়াও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। |
দেশে রাজনীতি ঠিক না থাকায় অর্থনীতির ভয়ঙ্কর অবস্থা: সাবেক গভর্নর | ‘দেশে রাজনীতি ঠিক না থাকায় অর্থনীতির ভয়ঙ্কর অবস্থা’ বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির ভয়ঙ্কর অবস্থা। রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক হবে না।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গ্রন্থ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমান অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে একথা বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহফুজ উল্লাহর লেখা আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’ এর প্রকাশনা উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৫৯২ পৃষ্ঠার গ্রস্থটির প্রকাশ করেছে ‘বাঙ্গালা গবেষণা’।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুধু অর্থনীতির বিষয়ে কথা বললে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হবে না। এখানে রাজনীতির বিষয়টা সবচেয়ে বড়। রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক হবে না। এটাতো আপনারা দেখতেই পারছেন। ভয়ঙ্কর অবস্থা। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যদি সঠিক না হয় অর্থনীতি ঠিক হবে না। রাজনীতিটাই মেইন (প্রধান)। অর্থনীতির এই টেকনিক্যাল কথাবার্তা, গ্রোথ রেইট ৫ পয়েন্ট ৫ হলো নাকি ৫ পয়েন্ট ৭ হলো, তারপরে ইনফুয়েশন ৮ দশমিক ২ হলো নাকি ৮ দশমিক ৩ হলো- এগুলো নিয়ে কচকচানি করলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। মূল সমস্যা হলো যে, আমাদের ইনস্টিটিউশনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, রাজনীতিটাও অনেকটা ধ্বংসের পথে এবং সেখানে অর্থনীতি কিভাবে ঠিক থাকবে?’
তিনি বলেন, ‘যে রাজনীতিতে ছাত্রজীবনে পজিটিভ রাজনীতি, ভালো রাজনীতি, মানুষের কল্যাণে রাজনীতি যদি না করেন তবে কিন্তু ভবিষ্যতে ভালো মানুষও হবেন না। ভ্যালুজ কিছু থাকতে হয়। আমাদের সময়ে কিছু ভ্যালুজ ছিল। মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের তো ছিলোই। সৎভাবে জীবন-যাপন করেছেন, অনেক কিছু হতে পারতেন। আমরাও করেছি, আমার বন্ধু আলমগীর (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর), ও সৎভাবে জীবন-যাপন করেছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে ভ্যালুজগুলো বারে বারে তাড়া করতো। এখনো আমাদেরকে এটা তাড়িত করে। সাধারণ মানুষের জন্য চিন্তা, এসব চিন্তা এখনো আমাদের তাড়িত করে।’
ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণ করে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘অপরদিকে ওই সময়ে আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব ছিল, যারা আমাদের মার দিয়েছিল। আমাকেও একবার উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তাদের সঙ্গে সহযোগী যারা তারা এখন প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, তারা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। নাম বলব না। আপনারা অনেকেই জানেন। তারা এখন আমাদের সঙ্গে তর্ক করে, তোমরা কী করেছো? অত্যন্ত দুঃখ লাগে বন্ধু মানুষ তো! অনেক সময় এবোর্ট করতে পারি না। কিন্তু ইতিহাস তাদেরকে ক্ষমা করেছে কি না জানি না। মনে হয় না ক্ষমা করেছে। মানুষ নিশ্চয়ই তাদের ক্ষমা করে নাই।’
অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে বসে আলোচনা শুনেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, নাজমুল হক নান্নু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মীসহ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর ছোট ভাই প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর ৫ মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনটি উপলক্ষে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান। সভাপতির বক্তব্য দেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী।
বক্তব্য দেন অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যাংককের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন।
কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নারী নেত্রী শিরিন হক, নিউএজের সম্পাদক নুরুল কবির, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান এবং বাঙ্গালা গবেষণার প্রকাশক আফজালুল বাসার প্রমুখ।
| ‘দেশে রাজনীতি ঠিক না থাকায় অর্থনীতির ভয়ঙ্কর অবস্থা’ বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির ভয়ঙ্কর অবস্থা। রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক হবে না।’ |
অপতথ্যের বিস্তৃতি রোধে বাংলাদেশ-মরিশাস আলোচনা | মরিশাসের তথ্য প্রযুক্তি, যোগাযোগ ও উদ্ভাবন বিষয়ক মন্ত্রী দীপক বালগোবিন’র সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। শুক্রবার মরিশাসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্যের বিস্তৃতি মোকাবিলার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। শনিবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, বৈঠকে স্যাটেলাইটের ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার, বাংলাদেশে মরিশাসের বিনিয়োগাকারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা এবং মরিশাসে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এছাড়া তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মরিশাসে একটি স্পিনিং মিল পরিদর্শন করেন এবং সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের খোঁজ-খবর নেন ও তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
পশ্চিম ভারত মহাসাগর অঞ্চলে মাদক পাচার এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার বিষয়ক প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য গত ২২ এপ্রিল মরিশাস যান বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী। বর্তমানে তিনি মরিশাসে অবস্থান করছেন।
| মরিশাসের তথ্য প্রযুক্তি, যোগাযোগ ও উদ্ভাবন বিষয়ক মন্ত্রী দীপক বালগোবিন’র সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। শুক্রবার মরিশাসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। |
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির লজ্জা পাওয়া উচিত: কাদের | আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশকে নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির লজ্জা পাওয়া উচিত। কালো চশমা পরা বিএনপি নেতারা দেশের উন্নয়ন দেখতে পায় না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ জামালের জন্মদিন উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাজধানীর বনানীতে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কোনো বিদেশি শক্তির প্রভাব ছিল না। জাতীয় পার্টি কোন চাপে নির্বাচনে এসেছে তা দলটিকে পরিষ্কার করতে হবে।
এর আগে শনিবার জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিএম কাদের বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তিনটি প্রভাবশালী দেশের চাপ ছিল।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতেই ৭৫ এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড। খুনিদের মদদ দিয়েছে জিয়া-মোশতাক চক্র। এর মধ্যদিয়ে দেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্তের রাজনীতি শুরু। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বন্ধ করে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা সূচিত করেন। বর্তমানে সরকারের ধারাবাহিকতায় স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে।
| আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশকে নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির লজ্জা পাওয়া উচিত। কালো চশমা পরা বিএনপি নেতারা দেশের উন্নয়ন দেখতে পায় না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। |
প্রথম দিনে আ.লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ১১ জন | ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ফরম বিক্রির প্রথম দিন শনিবার ১১ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরম কিনেছেন। আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রথম দিনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীরা হলেন- শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম আব্দুল হাকিম আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মোছা. সেলিনা পারভীন, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম, আওয়ামী সাংস্কৃতি ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান, আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপকমিটির সদস্য পারভেজ জামান, শৈলকুপা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আশরাফুল আজম এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. নায়েব আলী জোয়াদ্দার।
ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই গত ১৬ মার্চ ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনে শনিবার সকাল থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে আওয়ামী লীগ। ২৯ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন।
| ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ফরম বিক্রির প্রথম দিন শনিবার ১১ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরম কিনেছেন। আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। |
ক্ষমতায় যেতে বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের | বিএনপি দাসত্ব করে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য, ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শনিবার সকালে শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি জনগণকে মূল বিষয় হিসেবে মনে করে না। বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করলে ক্ষমতায় যাওয়া যায়? এখনো তাদের দুরভিসন্ধি হচ্ছে বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়?
তিনি বলেন, বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল মনে করি না। তাদের ইতিহাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, প্রহসনে পরিণত করেছে। গণতান্ত্রিক বিধিবিধান তারা দলের মধ্যেও কোনো দিন মানেনি। তারা বড় বড় কথা বলে, তারা কবে দলীয় কাউন্সিল করেছে? তারা কোথায় দলীয় কাউন্সিল করেছে? ৭-৮ বছর আগে লা মেরিডিয়ানে কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, বিএনপি দেখে না: কাদের
সেতুমন্ত্রী বলেন, এ দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে যারা রাজনীতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে জাতীয় নেতা শেরেবাংলা ছিলেন অন্যতম। সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেরেবাংলাকে গ্রামবাংলার কৃষকরা কোনো দিনও ভুলতে পারবেন না। তিনি চিরদিন তাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রজাস্বত্ব ও ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করে সুদখোর মহাজনদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছেন, তিনি সে জন্য এখনো স্মরণীয় হয়ে আছেন।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আজ আমাদের অঙ্গীকার বঙ্গবন্ধু, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা লড়ে যাচ্ছি মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। সেটাই শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের স্বপ্ন এবং সেটা আজ আমাদের অঙ্গীকার।
| বিএনপি দাসত্ব করে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য, ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। |
স্বতন্ত্র এমপিদের তোপের মুখে নৌকার কর্মীরা | দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে নির্বাচন করে চাপে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। বেশ কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যের ক্ষমতার কাছে অসহায় তারা। নির্বাচনের তিন মাস পরও বন্ধ হয়নি হামলা, মামলা, মারধর। নির্যাতনের ভয়ে এখনও এলাকা ছাড়া অনেকে। দলীয় পদ-পদবিতে থাকলেও সক্রিয় হতে পারছেন না স্থানীয় রাজনীতিতে। নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে তাদের। প্রায় এক ডজন সংসদীয় এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এসব এমপির লাগাম টানতে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ চান তৃণমূল নেতারা। তবে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট এমপিরা। তাদের দাবি-রাজনৈতিক কারণেই এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে দায়ীদের বিরুদ্ধে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই আওয়ামী লীগের প্রাণ। দুর্দিন এবং দুঃসময়ে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলকে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করে। তাদের ত্যাগ ও পরিশ্রমে আজ আওয়ামী লীগ টানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে। যারা অন্যায় ভাবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আঘাত, নির্যাতন, ঘরবাড়ি ছাড়া করবে আওয়ামী লীগে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। এসব বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সত্যতা পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। বিএনপি ও তাদের শরীকদের বর্জনের এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ করতে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র নির্বাচনের সুযোগ দেয় আওয়ামী লীগ। এমন সিদ্ধান্তে রেকর্ডসংখ্যক (৬২) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান। ভোটের মাঠে তাদের কাছে দলের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতারাও পরাজিত হন। তবে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। বিশেষ করে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে থাকায় তৃণমূলে সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্ব কোন্দল। সংঘাত-সহিংসতা, হামলা-পালটা হামলা, মারধরসহ প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। এই সমস্যার জের কাটেনি এখনো। বেশকিছু জায়গায় নৌকার নির্বাচন করা নেতাকর্মীরা আছেন স্বতন্ত্র এমপি ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের চাপে। অনেকে যেতে পারছেন না এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়-দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সালের কাছে পরাজিত হন নৌকার মনোনীত প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের মক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। তিনি ভোটে হারার পরে নির্যাতনের শিকার হন তার কর্মী-সমর্থক এবং অনুসারীরা। মারধর ও হামলার ভয়ে এলাকা ছাড়া হন দলের প্রায় শতাধিক নেতা। এখনও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও হত্যার ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মকবুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আমি ঘরবন্দি। দলীয় কর্মসূচি দূরের কথা, বাইরেও যেতে পারি না। পুলিশের সহযোগিতায় ঈদের নামাজ পড়েছি। আতঙ্কে থাকি কখন যে বাড়িতে হামলা হয়। নির্বাচনের পর অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে সময় যাচ্ছে। আমার অপরাধ নৌকার নির্বাচন করেছি। তিনি আরও বলেন, সারা জীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলাম। বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হলাম। এখন দল ক্ষমতায়। অথচ দলীয় প্রতীক নৌকার নির্বাচন করায় বিপদে আছি।
জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে এলাকা ছাড়া মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, নৌকার নির্বাচন করেছিলাম। এটাই আমার অপরাধ। তারা (স্বতন্ত্র এমপির কর্মী-সমর্থক) আমাকে দেখলেই আক্রমণ করে। এ কারণে নির্বাচনের পর থেকে আমি বাড়িঘর ছাড়া। কোনোভাবেই এলাকায় যেতে পারছি না। রাজনীতি করতে পারছি না। তার ভাষ্যমতে, মুন্সীগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী বর্তমানেও এলাকা ছাড়া রয়েছেন।
তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ-সদস্য (স্বতন্ত্র এমপি) মোহাম্মদ ফয়সাল। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সবাই নিজ নিজ স্থানেই আছেন। এসব অভিযোগের সত্যতা আছে বলে মনে করি না।
নৌকার নির্বাচন করে তোপের মুখের রয়েছেন নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের নৌকার সমর্থকরা। নির্বাচনের পর থেকে হামলার শিকার হচ্ছেন তারা। ভয়ে বাড়ি ছাড়া অনেকে। লালপুর উপজেলার চন্দপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেম্বর মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, অপরাধ নৌকার নির্বাচন করেছি। কেন নৌকার নির্বাচন করলাম? কেন নৌকার পক্ষে ভোট চাইলাম? এজন্য মারধরের শিকার হলাম। প্রতিদিন শঙ্কায় থাকি, যে কোনো মুহূর্তে আমার ওপর আবার হামলা হতে পারে।
নাটোর-১ আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী ছিলেন সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল। তিনি যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের পরপরই নৌকার কর্মী-সমর্থকদের হামলা করেছেন স্বতন্ত্র এমপির সমর্থকরা। অনেক বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। তার (বর্তমান এমপি) নিজ ইউনিয়নের কিছু নেতাকর্মী এখনও বাইরে পালিয়ে আছে। তিনি বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। বিষয়গুলো নিয়ে দলের হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
তবে নির্বাচনের আগে-পরে নির্বাচনি এলাকার এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই বলে দাবি করেন স্থানীয় সংসদ-সদস্য আবুল কালাম আজাদ। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এই প্রথম আপনার মুখে (সাংবাদিক) শুনলাম। আমি এর আগে কখনই এমন ঘটনা শুনিনি।
সংসদ নির্বাচনে নৌকার কাজ করায় বিপদে পড়েছেন কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী ও খোকসা) আসনে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। এখানে স্বতন্ত্রের ব্যানারে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আবদুর রউফ। তিনি নৌকার সমর্থিত প্রার্থী সেলিম আলতাফ জর্জকে ভোটের মাঠে পরাজিত করেন। নির্বাচনের পর বেশ কয়েক দফা দুপক্ষের সংঘাত সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। নির্বাচনের পর গত তিন মাসে দুপক্ষের তিনজন খুন হয়েছেন। সর্বশেষ মার্চের শেষদিকে স্বতন্ত্র এমপি ও নৌকার সমর্থকদের মাঝে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এমন অবস্থায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ আলী হোসেন যুগান্তরকে বলেন, নৌকার মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচন করলাম। এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হচ্ছে। নির্যাতনের ভয় দেখানো হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আতঙ্কে অনেকে বাড়ি ছাড়া। দিন দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এসব দুঃখ বলার ভাষা নেই। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংসদ-সদস্য আবদুর রউফের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী আব্দুল কাহার আকন্দ হারের পরই চাপে মুখে পড়েন তার কর্মী-সমর্থকরা ও অনুসারীরা। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা ভাবে তাদের নির্যাতন, নিপীড়ন ও হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্রের ব্যানারে নির্বাচিত এমপি সোহরাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে। আব্দুল কাহার আকন্দ যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের পর আমার অনেক কর্মী-সমর্থক মার খেয়েছেন। অনেকের ঘরবাড়িতে হামলা করা হয়েছে। নির্বাচনের পর এতদিনেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
আর স্থানীয় সংসদ-সদস্য সোহরাব উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, গত নির্বাচনে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে প্রার্থী হওয়া এবং নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে যারা নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন তারা আওয়ামী লীগের, যারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন তারাও আওয়ামী লীগের। সবাই যেহেতু আওয়ামী লীগের-তা হলে আমি কেন তাদের হয়রানি করব? যারা নৌকার নির্বাচন করেছেন, তাদের কোনো চাপেই রাখা হয়নি। দলের একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন।
নরসিংদী-৩ আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী ফজলে রাব্বি খানের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই হামলার শিকার হন নৌকা মনোনীত প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফজলে রাব্বি খান যুগান্তরকে বলেন, এখন পরিবেশ মোটামুটি ভালো রয়েছে। তবে যারা নৌকার নির্বাচন করেছেন? মিছিল মিটিং করেছেন। তাদের এমপি সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছেন।
অভিযোগ বিষয়ে সংসদ-সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা যুগান্তরকে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করলেও আমি আওয়ামী লীগের লোক। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দলের কাউকে চাপে রাখিনি। নৌকার নির্বাচন করায় কাউকে বঞ্চিতও করছি না। সবাইকে সমানভাবে মূল্যায়ন করছি। এগুলো নিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতা নেই।
| দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে নির্বাচন করে চাপে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। বেশ কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যের ক্ষমতার কাছে অসহায় তারা। নির্বাচনের তিন মাস পরও বন্ধ হয়নি হামলা, মামলা, মারধর। নির্যাতনের ভয়ে এখনও এলাকা ছাড়া অনেকে। দলীয় পদ-পদবিতে থাকলেও সক্রিয় হতে পারছেন না স্থানীয় রাজনীতিতে। নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে তাদের। প্রায় এক ডজন সংসদীয় এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। |
দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করুন: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী | দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতার্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার থাইল্যান্ড আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সেখানে তার বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের উন্নয়নে আপনাদেরকে কাজ করতে হবে।
সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।
বঙ্গবন্ধু তার অনুপ্রেরণার উৎস উল্লেখ করে শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, জাতির পিতাকে অসময়ে হত্যা করা হলেও তার আদর্শ আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে এবং সে কারণেই আমি তার (বঙ্গবন্ধু) আদর্শ বাস্তবায়ন করতে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু দেশের গরিব-দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন।
গত ১৫ বছরে দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় থাকায় এ অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, অনেক বাংলাদেশি থাইল্যান্ডের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তবে তারা দ্বৈত নাগরিকত্ব বজায় রাখতে চান। এই দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে থাই সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন।
| দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতার্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। |
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা (তালিকাসহ) | ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। রাজিবুল ইসলামকে (বাপ্পি) সভাপতি ও সজল কুন্ডুকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অনুমোদন দিয়ে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এ কমিটির অনুমোদন দেন।
কমিটি অনুমোদনপত্রে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’, ‘স্মার্ট মহানগর’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলো।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আছেন যারা, তাদের তালিকা দেখুন নিচে-
| ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। রাজিবুল ইসলামকে (বাপ্পি) সভাপতি ও সজল কুন্ডুকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অনুমোদন দিয়ে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। |
বহিষ্কারাদেশ আমলে না নিয়ে নির্বাচনি প্রচার: ভোট থেকে সরলেই ক্ষমা করবে বিএনপি | প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সুযোগ দিতে চাচ্ছে বিএনপি। সেক্ষেত্রে ভোট থেকে সরে এসে ক্ষমা চেয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ভোট থেকে তার সরে আসার খবর জানাতে হবে। ইতোমধ্যে নীলফামারী জেলার সদর উপজেলায় একজন বহিষ্কৃত নেতা কেন্দ্রীয় দপ্তরে আবেদন করেছেন, আজ তার সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ইতোমধ্যে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। শনিবার আরও তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়। এসব নেতা চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) প্রার্থী হিসাবে ভোটে রয়েছেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহিষ্কারাদেশ আমলে না নিয়ে প্রচারে নেমেছেন অনেকে। শেষ পর্যন্ত ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে চান তারা। তবে বহিষ্কৃত কেউ কেউ আবার এখনো ভোটের মাঠে নামেননি। শনিবার রাজধানীতে এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখনো সুযোগ আছে যারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে দল তাদের বিষয়ে বিবেচনা করবে। সংবাদ সম্মেলন করে নেতারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, সামান্য লোভ বা চাপে সরকারের পক্ষ হয়ে নির্বাচনে যাবেন না। দেশের মানুষ এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যায়নি, যাবেও না। তাই দেশের স্বার্থে ও মানুষের অধিকার আদায়ে নির্বাচন বর্জন করুন।
উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ভোট হবে আগামী ৮ মে। বিএনপি নেতারা জানান, বাকি ধাপের নির্বাচনে দলের কেউ যাতে অংশ না নেন, সেজন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলছেন। তারা আশা করছেন, কোনো নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন না। নেতারা আরও জানান, প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের এখন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। তার পরও দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভোট থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ভোট বর্জনের ডাক দিলে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বহিষ্কৃত মেহেরপুরে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রোমানা আহমেদ (মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী) ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে কেন্দ্রীয় দপ্তরে আবেদন করেছেন।
এ ছাড়াও কয়েকজন ক্ষমা চেয়ে আবেদন করবেন বলে জেলার শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে দপ্তরকে জানানো হয়েছে। মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ যুগান্তরকে জানান, রোমানা আহমেদ ভোটে অংশ নেবেন না। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে তিনি চিঠি দিয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। রোববার (আজ) সদরে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন।
এদিকে দলের বহিষ্কারাদেশ উপেক্ষা করে প্রথম ধাপের নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেকে। বহিষ্কৃতদের মধ্যে ২৮ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। বহিষ্কারাদেশ নিয়েই নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সরোয়ার হোসেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘দল বহিষ্কার করছে, এটা নীতিনির্ধারকদের ব্যাপার। নির্বাচনে আছি, থাকব। জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এখানে দলীয় কোনো মার্কা নেই। যার জন্য ভোট নিরপেক্ষ হবে আমি আশাবাদী।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমত জনগণ আমাকে চায়, এজন্য ভোটে আছি। দ্বিতীয়ত, মনোনয়নপত্র কিনলাম, জমা দিলাম। তারপর দল বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি বর্জনের সিদ্ধান্তটা আগে আসত, তাহলেও চিন্তাভাবনা করা যেত। আমরা অলরেডি মাঠে নেমে গেছি, ভোটে শেষ পর্যন্ত থাকবই।’ আরেক বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান তালুকদার খসরু জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। তিনি চশমা প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন।
খসরু বলেন, ‘এখন সরে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ২২ এপ্রিল। সেদিন পর্যন্ত উপজেলা, জেলা কিংবা কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে কোনো বাধা পাইনি। যে কারণে ইতোমধ্যেই ভাইস-চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছি।’ এছাড়াও দলটির বহিষ্কৃত আরও চারজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। তারা দলের বহিষ্কারাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যস্ত এবং শেষপর্যন্ত ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে চান তারা।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, ভোটে অংশ নেওয়া দলের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের বহিষ্কার করার মধ্য দিয়ে কার্যত বিএনপি মাঠপর্যায়ে চরম বার্তা পেৌঁছাতে চেয়েছে। এই বহিষ্কারাদেশ প্রথম ধাপের নির্বাচনের প্রার্থীদের জন্য। এরপর ২১ মে দ্বিতীয় ধাপসহ মোট চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন হবে। সেখানেও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেন। মূলত দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার্থে একসঙ্গে ৭৩ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যাতে আগামী ধাপের নির্বাচনগুলোর ব্যাপারে নেতারা সতর্ক হন।
বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দল আবার রাজপথে সরকারবিরোধী শক্ত আন্দোলন গড়ার চিন্তা করছে। এ অবস্থায় দলকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত রাখার দিকে নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ।নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যেসব কারণে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেনি, সেসব কারণ এখনো বহাল; বরং একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতাসীন দল আরও কর্তৃত্ববাদী ও বেপরোয়া হয়েছে। এখনো অনেক নেতা-কর্মী কারাবন্দী, সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মী আদালতে ঘুরছেন। এর বিরুদ্ধে বিএনপিসহ সব বিরোধী দল আন্দোলনে আছে। এ পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ আন্দোলনের নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে।
কিন্তু গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে, অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে বড় সংখ্যায় বহিষ্কার করার এই অবস্থান দলকে আরও দুর্বল করবে কি না, এই প্রশ্নও বিএনপিতে আলোচনা হচ্ছে ।তবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব কঠোর অবস্থান নিয়েই এগোতে চাইছেন। ফলে উপজেলা ভোটে অংশগ্রহণের প্রশ্নে ভিন্নমত দলটিতে গুরুত্ব পাচ্ছে না বলেও বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ বলছেন।
শনিবারও উপজেলার ভোটে অংশ নেওয়ায় আরও তিন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন-ময়মনসিংহ উত্তর জেলা হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির সদস্য আব্দুল হামিদ (চেয়ারম্যান প্রার্থী), রাঙামাটি জেলা কাউখালী উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা মংসুইউ চৌধুরী (চেয়ারম্যান প্রার্থী) এবং শেরপুর জেলা শ্রীবর্দী উপজেলার ২নং পৌর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি গোলাম মোস্তফা (ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী)। এছাড়াও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনেও যারা অংশ নিয়েছেন, তাদেরও দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আটজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এসব কারণে এবার স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানেই থাকার কথা বলছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
| প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সুযোগ দিতে চাচ্ছে বিএনপি। সেক্ষেত্রে ভোট থেকে সরে এসে ক্ষমা চেয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ভোট থেকে তার সরে আসার খবর জানাতে হবে। ইতোমধ্যে নীলফামারী জেলার সদর উপজেলায় একজন বহিষ্কৃত নেতা কেন্দ্রীয় দপ্তরে আবেদন করেছেন, আজ তার সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ইতোমধ্যে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। শনিবার আরও তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়। এসব নেতা চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) প্রার্থী হিসাবে ভোটে রয়েছেন। |
পানি ও স্যালাইন নিয়ে শ্রমিকদের পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল | তীব্র গরমে কষ্টে থাকা রাজধানীর গরিব ও শ্রমিক মানুষসহ সাধারণ মানুষের হাতে সুপেয় খাবার পানির বোতল বিতরণ করেছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা।
শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মুগদা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে চলমান তীব্র তা প্রবাহে অতিষ্ঠ নগরীর মানুষের মধ্যে মুগদা বিশ্বরোড আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ এর সামনে থেকে বিশুদ্ধ ঠান্ডা খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এএ জহির উদ্দিন তুহিন, সাধারণ সম্পাদক সাদ মোর্শেদ পাপ্পা শিকদার, সহসভাপতি মনির হোসেন মৃধা, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন রিন্টু, যুগ্ম সম্পাদক কাজী মহীউদ্দিন মহী, দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পলাশ, ওয়াহিদ আলম চৌধুরী সজীব, সানোয়ার হোসেনসহ মুগদা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সব পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন বলেন, কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরমে মানুষের কষ্ট বেড়েছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ ও শ্রমিকদের কষ্ট সীমাহীন। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এ অবস্থায় বসে থাকতে পারে না। রাজনীতির প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানবসেবা করা। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।
| তীব্র গরমে কষ্টে থাকা রাজধানীর গরিব ও শ্রমিক মানুষসহ সাধারণ মানুষের হাতে সুপেয় খাবার পানির বোতল বিতরণ করেছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। |
বাংলাদেশকে গ্যাস চেম্বার বানিয়েছে সরকার: রিজভী | বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ডামি সরকারের উন্নয়নের ভেলকিবাজিতে বাংলাদেশ এখন মৃত্যু উপত্যকা।
তিনি বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য গাছপালা বন-জঙ্গল উজার করে, নদী নালা ভরাট করে এবং তাপবিদ্যুৎ ও কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে মানুষের জীবনকে সংকটে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশকে এখন গ্যাস চেম্বারে পরিণত করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে সারা দেশে তীব্র তাবদাহে অতিষ্ঠ নগরীর পথচারীদের মাঝে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে মিরপুরে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণের ৭ দিনব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সহসম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, কেন্দ্রীয় সদস্য তাবিথ আউয়াল, মহানগর উত্তর বিএনপির আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তফা জামান, আতাউর রহমান (চেয়ারম্যান), মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীরর কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন ‘তার বাবা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে’। তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ তো বাকশাল, যেখানে গণতন্ত্র থাকবে না, মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে না। সেদিন তো ৪টি পত্রিকা বাদে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সাংবাদিকরা বেকার হয়ে বায়তুল মোকাররমে ফল বিক্রি করতেন।
তিনি বলেন, বিগত ১৭ থেকে ১৮ বছরে প্রধানমন্ত্রী দেশে আবারও ভয়ংকর বাকশাল কায়েম করেছেন। বিপদজ্জনক বাকশাল কায়েম করেছেন। আজকে দেশ থেকে গণতন্ত্রকে ও মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এ কারণে মানুষ এখন আর ভোট দিতে পারে না। সংসদকে পরিণত করা হয়েছে এন্টারটেইনমেন্ট হাউজে। সত্য বললেই জেলে পুড়ে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও ভোটের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে আমার ভাইদের জীবন দিতে হচ্ছে। দুর্নীতি আর লুটপাটরে মাধ্যমে দেশটাকে উজার করে দেওয়া হয়েছে। সারা দেশকে বানানো হয়েছে লীগময়।
তিনি বলেন, এত গুম, এত নির্যাতন, এত নিপীড়ন তারপরও মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করা যায়নি। মানুষের আন্দোলনকে দমানো যায়নি।
আওয়ামী লীগের সধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, মুখে মুখে তারা পাকিস্তানের বিরোধিতা করে। গত কয়েকদিন আগে তাদের উন্নয়ন নিয়ে পাকিস্তান কথা বলায় তাদের সাহেব বলছেন, পাকিস্তান তাদের উন্নয়ন দেখলেও বিএনপি দেখে না। এখন তারা পাকিস্তানের প্রশংসায় গদগদ।
তিনি বলেন, এক দেশ আরেক দেশের প্রশংসা করে এটা তো রীতি। আসলে ওবায়দুল সাহেবরা দ্বিচারিতা নীতি অবলম্বন করছেন। বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সকল দুর্যোগে দেশবাসীর পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
| বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ডামি সরকারের উন্নয়নের ভেলকিবাজিতে বাংলাদেশ এখন মৃত্যু উপত্যকা। |
কী বলছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা | দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। বহিষ্কৃত এসব নেতা মনে করেন, অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়া জরুরি৷ তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন ভিন্ন কথা৷ বহিষ্কৃত ৭৩ জনের বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদও থাকবে না৷
বৃহস্পতিবার বিকালে যাদের কাছে বহিষ্কারের চিঠি পাঠানো হয় তাদের মধ্যে ২৮ জন উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, ২৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং ২১ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী৷
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘তারা নিজেদের স্বার্থে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়েছেন, তারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন৷’
ওই ৭৩ জনের মধ্যে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের নেতাও রয়েছেন৷ তাদের বহিষ্কারের আগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়৷ সেই নোটিশের জবাব দেননি অনেকে৷ আবার কেউ কেউ নোটিশ পেয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারও করেছেন৷ নোটিশ দেওয়ার পর তৃণমূলের এই নেতাদের সঙ্গে রুহুল কবির রিজভী এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা কথাও বলেছেন৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৭৩ জন প্রার্থী হিসেবে থেকে গেছেন৷
রহুল কবির রিজভীর সই করা বহিষ্কারের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আপনাকে নির্দেশক্রমে বহিষ্কার করা হলো৷’
এর আগে শোকজের টিঠিতে তারা দলের সঙ্গে ‘বেঈমানি' করেছেন বলে উল্লেখ করা হয় বলে নোটিশপ্রাপ্তরা জানান৷
কিশোরগগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজমুল আলম দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন৷ শোকজের পর মৌখিকভাবেও বারণ করা হয়েছে তাকে, তারপরও তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি৷ তাকে দল থেকে বহিষ্কারের কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়েছে, ‘দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিএনপি জালিয়াতির নির্বাচনে অংশ নেবে না৷ আপনি সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে দলের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন৷'
এর জবাবে নাজমুল আলম বলেন, ‘আমি দলের সঙ্গে কোনো বেঈমানি করিনি৷ আমি তো সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করি৷ তাই তাদের জন্য নির্বাচন করছি৷ তারা যদি আমাকে গ্রহণ করে, তাহলেও তাদের সঙ্গে থাকবো৷ না করলেও তাদের সঙ্গে থাকবো৷’
তার কথা, ‘আমি তো জাতীয় পর্যায়ের নেতা না, তৃণমূলের নেতা৷ তাই আমাকে তৃণমুলে থাকতে হবে৷ আমি যদি সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকি, তাহলেই আমি নেতা৷ সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকলে তো আর দলের সঙ্গে বেঈমানি করা হয় না৷’
তার কথা, ‘বহিষ্কার করা হলেও আমি একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে দলের সঙ্গেই থাকবো৷’
তার মতে, ‘এবার নির্বাচন যেহেতু দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না তাই বিএনপি যদি নির্দলীয় প্রতীকে দলের লোকজনকে নির্বাচনে বাধা না দিতো, তাহলে তৃণমূলের আরও অনেক নেতা প্রার্থী হতেন৷ এতে দলের লাভ হতো৷ তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা হতো৷ আমার এলাকার নেতাকর্মীরা এখন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে৷’
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শামসুর রশীদ মজনু ওই উপজেলার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন৷ তিনি উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি এবং জেলা বিএনপির সদস্যও ছিলেন৷
তিনি বলেন, ‘আমি এখানকার বিএনপি নেতাদের অবহেলার শিকার৷ আমি বটতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম মোট ১৪ বছর৷ কিন্তু এর আগে উপজেলা বা সংসদ নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি৷ বিএনপির বড় কোনো পদও আমাকে দেওয়া হয়নি৷ কিন্তু এলাকার সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে৷ তারা আমাকে চায়৷ তাই আমি প্রার্থী হয়েছি৷’
তার কথা, ‘আমরা নির্বাচন না করলে দলের ক্ষতি হবে৷ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে৷ আমাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে৷ আরও হবে৷ আমরা যদি জনপ্রতিনিধি হই তাহলে সেইসব মামলা ফেস করা সহজ হবে৷ আর নির্বাচন না করলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সব আওয়ামী লীগে চলে যাবে৷ গত সংসদ নির্বাচনে অনেকেই আওয়ামী লীগে চলে গেছে৷ তৃণমূলে দলকে ধরে রাখতে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা উচিত৷’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ওমরাও খান উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী৷ তিনি এর আগে ২৪ বছর কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন৷ তার কথা, ‘আমি নির্বাচন করায় বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত নয়, উল্টো লাভবান হবে৷ কারণ, আমি তো কাজ করছি মানুষের জন্য৷ তাদের নিয়েই আমার রাজনীতি৷ এখন নির্বাচনে আমার এলাকার মানুষ আমাকে চায়৷ তাদের তো আমরা মূল্যায়ন করতে হবে৷ এর ফলে আমার এলাকায় বিএনপি আরও শক্তিশালী হবে৷ আর নির্বাচন তো দলীয়ভাবে হচ্ছে না৷ আমি না দাঁড়ালে ভোটাররা মন্দের ভালোকে ভোট দিতেন৷ এখন সর্বোত্তম প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন৷’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কারচুপি হবে বলে আমি মনে করি না৷ এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভালো হয়েছে৷ আওয়ামী লীগ উপলব্ধি করতে পেরেছে৷’
‘আর দল থেকে বহিষ্কার করলেও আমি বিএনপির সঙ্গেই আছি৷ বিএনপির সঙ্গেই থাকবো,’ বলেন তিনি৷
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘তারা যে যুক্তিই দেখাক না কেন আসলে তারা নিজেদের স্বার্থে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন৷ তারা দেশ, মানুষ বা দলের কথা চিন্তা করেননি৷ তারা শেখ হাসিনার মতো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন যে, নির্বাচনে না থাকলে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন৷ ডিক্টেটররা এই ধরনের কথা বলে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে৷ তারপর তারা তাদের ছক অনুযায়ী কাজ করে৷ যেহেতু নির্বাচন কমিশন তাদের আজ্ঞাবাহী৷’
তার কথা, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না৷ ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪-এ আমরা সেটা দেখেছি৷ সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমরা বর্জন করেছি৷ সাধারণ মানুষও বর্জন করেছে৷ তারা ভোট দিতে যাননি৷ দেশের মানুষ এই সরকারের অধীনে ভোটে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে৷ তারপরও কিছু অতি উৎসাহী দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে যায়৷ তাদের আমরা বহিষ্কার করেছি৷’
| দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। বহিষ্কৃত এসব নেতা মনে করেন, অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়া জরুরি৷ তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন ভিন্ন কথা৷ বহিষ্কৃত ৭৩ জনের বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদও থাকবে না৷ |
‘প্রচণ্ড শীতেও ৪০ সিটের গাড়িতে একাকী নিয়ে আসত’ | কারাজীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেছেন, প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে প্রতিদিন কোর্টে নিয়ে আসত। ৪০ আসনের একটি গাড়িতে আমি একা। থর থর করে শরীর কাপত। সেভাবেই নিয়ে এসে কোর্ট শেষ করে যখন খুশি তখন কারাগারে নিয়ে যেত। ঢাকা থেকে কাশিমপুর দূরে হওয়ায় কোর্টে আসার সময় অনেক কষ্ট হতো।
সম্প্রতি যুগান্তরকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, অপেক্ষায় আছি আর কয়টি মামলায় সাজা দেয় সরকার। সেগুলো উপভোগ করার জন্য।
মজা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। কারণ কিছু দিন পর পর গ্রেফতার করে আমাকে ধরে নিয়ে যায়, থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি চিকিৎসারও ব্যবস্থা করে। কিছু দিন পর পর রাষ্ট্রের অতিথি ও সরকারের অতিথি হয়ে যাই আমি।
পুরো সাক্ষাৎকারটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
| কারাজীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেছেন, প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে প্রতিদিন কোর্টে নিয়ে আসত। ৪০ আসনের একটি গাড়িতে আমি একা। থর থর করে শরীর কাপত। সেভাবেই নিয়ে এসে কোর্ট শেষ করে যখন খুশি তখন কারাগারে নিয়ে যেত। ঢাকা থেকে কাশিমপুর দূরে হওয়ায় কোর্টে আসার সময় অনেক কষ্ট হতো। |
যুক্তরাষ্ট্র গেলেন বিএনপি নেতা আমির খসরু | চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গেলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তার সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী তাহেরা আলমও। শুক্রবার রাতে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তারা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন তিনি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী শারীরিকভাবে অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকার গিয়েছেন। চিকিৎসা শেষে তারা দেশে ফিরবেন।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হওয়ার কয়েক দিন পর আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ঢাকার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ তিন মাসের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন তিনি। কারাগারে থাকার সময় থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার শরীরের অন্তত ৮ কেজি ওজনও কমেছে। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর আমির খসরু একাধিকবার ঢাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়েছেন।
| চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গেলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তার সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী তাহেরা আলমও। শুক্রবার রাতে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তারা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন তিনি। |
রাজনীতি এখন পদে পদে নিয়ন্ত্রিত ও শৃঙ্খলিত হয়ে পড়েছে: অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম | জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেছেন, নিজের শক্তি না থাকলে কখনও অন্যের ওপর নির্ভর করে ভালো কিছু করা যায় না। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি-সব ক্ষেত্রে এটা খুব জরুরি বিষয়। একথা সত্য যে, নানা জটিলতা ও মীরজাফরদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে আমাদের দল ৯০ সালের পর থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে না। বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরে এ পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। আমরা এক ধরনের আরোপিত বা শৃঙ্খলিত সময় পার করছি। আমরা কেউ এ সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারছি না।
শনিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম আরও বলেন, সঙ্গত কারণে রাজনীতিও এখন পদে পদে নিয়ন্ত্রিত ও শৃঙ্খলিত হয়ে পড়েছে। সরকার ও প্রশাসনের নগ্ন হস্তক্ষেপ ছিল গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আমাদের দলের জনপ্রিয় নেতাদের মধ্যে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তাদের অনেকে আশাহত হয়েছেন। আবার কেউ মনোনয়ন পেয়েছেন, কেউ আবার পাননি। অনেকে মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচনের মাঠে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারেননি। শক্তি এবং সামর্থ্য থাকলেও প্রশাসনের গোপন ষড়যন্ত্রের কারণে সব ভেস্তে গেছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হবে আশ্বাস দিয়ে অনেকটা জোর করে আমাদের দলকে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন আমিও ঢাকা-১ আসন থেকে নির্বাচন করেছি। কিন্তু কি হয়েছে-তা দেশের মানুষ যমুনা টেলিভিশনের মাধ্যমে লাইভ দেখেছে। কোনো টেলিভিশন চ্যানেল সাহস না করলেও যমুনা টেলিভিশন সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। ভোটের দিন সকাল থেকেই যখন সব কেন্দ্রে ভোট কারচুপি হচ্ছিল তখন নির্বাচন কশিসনসহ প্রশাসনের সব পর্যায়ে আমি নিজে যোগাযোগ করি, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। ওই সময় আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে অসহায়ের মতো চরম কষ্ট মেনে নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে বলতে পারি, জাতীয় পার্টির যেকটি আসনে নিশ্চিত জয়ের সম্ভাবনা ছিল তার মধ্যে আমার আসনটি অন্যতম। অথচ আমাকেই এরকম ভোট ডাকাতি মেনে নিতে হয়েছে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বলেন, আমি মনে করি আজ এ বিষয়গুলো যথযথভাবে রিভিউ করতে হবে। আমরা নির্বাচনের আগে জনগণকে কি ধরনের প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলাম? নির্বাচনে আমরা কি ভূমিকা রেখেছি? কিভাবে আমরা এখন জনগণের আস্থা অর্জন করব? তিনি বলেন, বিশেষ করে শুধু সংসদে বিরোধী দল হয়ে থাকলে চলবে না। সাধারণ মানুষের মন জয় করতে হবে। আমি মনে করি-রাজনীতি কখনও হারাবে না। যে কোনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও রাজনীতি টিকে থাকবে। জনগণের বিপ্লব ও সংগ্রাম কখনো বিফলে যায় না। সেই জনগণকে নিয়েই আমাদের রাজপথে থাকতে হবে।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, আমাদের সুযোগ্য চেয়ারম্যানের কৌশলী ভূমিকার কারণে সংসদে তার বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার বিষয়টি শেষ পর্র্যন্ত আটকানো যায়নি। এক্ষেত্রে আমাদের দল অবশ্যই লাভবান হয়েছে। তা না হলে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়ে যেত। এ সময় দলের মাঠ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি জানি আপনাদের অনেকের মনে কষ্ট আছে, অভিমান আছে, ক্ষোভ আছে। এতকিছুর পরেও সবচেয়ে বড় সত্য হলো আমরা সবাই জাতীয় পার্টিকে ভালোবাসি, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ভালোবাসি। তার দেখানো পথেই আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাব। অতীতের সব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করব। পার্টির চেয়ারম্যান আমাদের যে দিকনির্দেশনা দেবেন, আমরা তা পালন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।
| জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেছেন, নিজের শক্তি না থাকলে কখনও অন্যের ওপর নির্ভর করে ভালো কিছু করা যায় না। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি-সব ক্ষেত্রে এটা খুব জরুরি বিষয়। একথা সত্য যে, নানা জটিলতা ও মীরজাফরদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে আমাদের দল ৯০ সালের পর থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে না। বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরে এ পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। আমরা এক ধরনের আরোপিত বা শৃঙ্খলিত সময় পার করছি। আমরা কেউ এ সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারছি না। |
তিন বিদেশি শক্তি আ.লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করেছিল: জিএম কাদের | জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, আমি আগেই বুঝেছিলাম বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না। তিন বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। তাই দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। তবে ভোট ভালো হয়নি। তিনি আরও বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিল। অনেকটা চাপে পড়ে, অনেকটা বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদেরও নির্বাচনে যেতে হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে জিএম কাদের এ দাবি করেন। গত বছরের ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দলের বর্ধিত সভায় জাতীয় পার্টির নেতারা নির্বাচন বর্জনের পক্ষে মতামত দেন। তবে শেষ পর্র্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে ভোটে অংশ নেয় দলটি। মাত্র ১১টি আসনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসে জাতীয় পার্টি। দলের তৃণমূলের নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে কেন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তা বর্ধিত সভায় জানিয়েছেন জিএম কাদের। এ সময় তিনি নির্বাচনের আগের পরিস্থিতিও ব্যাখ্যা করেন।
জিএম কাদের বলেন, নির্বাচন বন্ধ করে কোনো দেশে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করছে। নির্বাচনের আগে বর্ধিত সভায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেওয়া হয়েছিল। ভোটে না গেলে ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখা যাবে কিনা সন্দেহ ছিল, তাই নির্বাচনে গিয়েছি। আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। ভোটের আগ মুহূর্তে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন সুষ্ঠুভাবে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছি। মনে হয়েছে বিভিন্ন বিদেশি শক্তি বিভিন্নভাবে নানা দিকে নিচ্ছিলেন। আর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল তারা সফল হবে না। আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় শক্তি এসে সরকার পরিবর্তন করে, এমন ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বিএনপির ১ কিংবা ১০ লাখ বা ১ কোটি লোক নিয়ে রাস্তায় নামলেও বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না, তা বুঝতে পেরেছিলাম। তিনি বলেন, বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলনে পরাস্ত হয়ে জাতীয় পার্টিকে দোষ দিচ্ছে। তবে এটা ঠিক নির্বাচন ভালো হয়নি। সরকার জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত দল হিসাবে দেখতে চায়, যা কখনও সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি কখনোই অনুগত বিরোধী দল হবে না। গৃহপালিত বিরোধী দল হবে না।
জাতীয় পার্টি ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেও চাপের মুখে তা পালটাতে বাধ্য হন দাবি করে জিএম কাদের বলেন, কোন্দল করে দল ভেঙে দেওয়া হবে-এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে সবাইকে (দলের প্রার্থী) জানিয়ে দিলাম নির্বাচনে যাব না। কিন্তু ১৭ ডিসেম্বর সকালে আমার ওপরে প্রত্যক্ষভাবে ও পরোক্ষভাবে চাপ আসল। প্রত্যক্ষভাবে সেটা বলব না, কিন্তু পরোক্ষভাবে হলো, আমাদের দলের ভেতরে কোন্দল তৈরি করে দল ভেঙে দেওয়া হবে। আর তখন আমার মতো ওয়েল ইনফর্মড নেতা দেশে কমই ছিল। আমি জেনে গিয়েছিলাম, কিছু শক্তিশালী দেশ এই সরকারকে জয়ী করতে চায়। তাই আমি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে সরকার আমাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশনে গেল।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ২৬ জনের তালিকা দেওয়া হলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দিল সেখানে স্বতন্ত্র পাওয়ারফুল প্রার্থীও রেখে দিল। শুধু কয়েকটি আসনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার যাকে পাশ করাতে চায়, তাকে পাশ করানো হয়েছে। আমি যেই আসনে নির্বাচন করেছি, সেখানেও আমাকে হারানোর জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। আমাকে ধ্বংস করা মানে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করা। জাতীয় পার্টি না গেলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না বলে আওয়ামী লীগ তাদের চেয়েছে বলেও মনে করেন বিরোধীদলীয় নেতা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের ব্যবহার করে একদলীয় রাজত্বের চিন্তা করেছে। তারা চেয়েছে অনুগত বিরোধী দল। তারা আমাদের গলায় পচা, গলা, মরা আবর্জনা ঢুকিয়ে দিয়ে অনুগত বিরোধী দল বানানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা আমরা হইনি।
দলের কিছু নেতা জাতীয় পার্টির ছবি না দিয়ে আওয়ামী লীগের ছবি দিয়ে পোস্টার করে জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, এটা পার্টি মানবে না। যারা গৃহপালিত বিরোধী দল হতে চায়, চলে যান। আমরা হব না। গৃহপালিত হলে রাজনৈতিক মাঠে হারিয়ে যাবেন, আমি ছাড় দেব না। নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে স্ত্রী শেরীফা কাদেরকে প্রার্থী করা নিয়ে জাতীয় পার্টিতে যে বিরোধ তৈরি হয়েছে তা নিয়েও কথা বলেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, উত্তরা আমাদের এক শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। আমি দীর্ঘদিন এ এলাকায় রাজনীতি করেছি। ১০টি আসনের চেয়ে উত্তরার এই আসন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি চেয়েছি দলের শক্তিশালী অবস্থানের জন্য আমার স্ত্রী এখান থেকে নির্বাচন করুক। দলে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়নি দাবি করে জিএম কাদের বলেন, আমাকে কমপক্ষে ১০০ জন নেতাকর্মী দিন-রাত ফোন দিয়ে বলে, ‘টাকা দেন, টাকা দেন’। অথচ তারা নির্বাচনে নাই, রাজনীতির মাঠেও নাই। তারা বলেছে আমি নাকি দল বিক্রি করে দিয়েছি, আমি নাকি মনোনয়ন বাণিজ্য করেছি। কোনো মনোনয়ন বাণিজ্য করিনি। কারও কাছ থেকে এক টাকা নেইনি।
আওয়ামী লীগ প্রজাতন্ত্রের জায়গায় রাজতন্ত্র কায়েম করছে বলেও মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, জনগণ ভোট দিতে চায় না, এটা হচ্ছে বিরাজনীতিকরণ। এসব করে আওয়ামী লীগ বর্তমানে রাজনৈতিক দলের চরিত্র হারিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কথা বলে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের স্পেস দেওয়া হচ্ছে না। ক্ষমতা সব এককেন্দ্রিক। উনার (প্রধানমন্ত্রী) ইচ্ছায় ভোট হয়। কেউ ভোট করলে উনার অনুমতি নিয়ে করতে হবে। এভাবে চললে দেশে কোনো দলই টিকবে না। এখন এমন অবস্থা করা হয়েছে যে, রাজনীতি করলে হয় ফুলের মালা না হয় ফাঁসির দড়ি গলায় নিতে হবে।
আন্দোলন করতে নেমে বিএনপি কিছু ভুল করেছে দাবি করে জিএম কাদের বলেন, আমি জানতাম বিএনপির আন্দোলনে সরকার পতন সম্ভব না। ১০ লাখ নয়, ১ কোটি মানুষও রাস্তায় নামলে নির্বাচন বন্ধ হবে না। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে সমাবেশের দিন পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন বিএনপি কিছু ভুল করে ফেলল। তারা ফাঁদে পড়ে গেল। নেতৃস্থানীয় লোকজন গ্রেফতার হলেন, আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হলো। বিএনপি আন্দোলনে পরাস্ত হয়েছে। কিন্তু তারা একটা দায় আমার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। তারা বলে, আমি না গেলে নাকি নির্বাচন হতো না। বিএনপি-জামায়াতের নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য আমার ওপরে দোষ দেয়।
প্রখর খরতাপ উপেক্ষা করে জাতীয় পার্টির জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায় থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা বর্ধিত সভায় যোগ দেন। এছাড়াও দলের বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন বর্ধিত সভায়। চেয়ারম্যান, মহাসচিব, কো-চেয়ারম্যানরা ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সংসদ-সদস্যরা। ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, উপদেষ্টা, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা ছিলেন সামনের সারিতে। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাড়ে ৩ মাসের মাথায় এসে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহত্তর কলেবরের এই সভায় মাঠের নেতারা তাদের মান-অভিমানের কথা তুলে ধরেন। অনেকে এ সময় ব্যর্থতা কাটিয়ে আগামী দিনে জাতীয় পার্টির করণীয় সম্পর্কেও মতামত দেন। পবিত্র কুরআন থেকে তেলায়াতের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। এরপর শোক প্রস্তাব গ্রহণ শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি স্বাগত বক্তব্য দেন।
স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, যারা দল ছেড়ে চলে গেছেন তারা ভুল করেছেন। তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। নির্বাচনে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায়নি, এজন্য অনেক সমস্যা জড়িত। যেমন শাসক দলের দৌরাত্ম্য, প্রশাসনের নিরপেক্ষতার অভাব। বলা যায় আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র যারা ছিলেন তাদের পক্ষে প্রশাসন কাজ করেছে। নিরপেক্ষতার অভাবে লাঙলের প্রার্থীরা পাশ করেনি।
মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গত নির্বাচনে আমাদের নিজেদের কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা প্রত্যাশিত ফলাফল পাইনি। আমাদের নেতাকর্মীদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকার পরও প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে জয়ী হতে পারিনি। কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে অল্পের জন্য পরাজয় থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাকেও লড়াই করে জয়ী হতে হয়েছে। আমাদের ত্যাগী কিছু নেতাকর্মী আমাদের ভুল বুঝে চলে গেছেন। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই দেশে এরশাদের প্রতিনিধিত্ব করে একমাত্র জিএম কাদের-অন্য কেউ এরশাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাই যারা চলে গেছেন তারা ভুল করেছেন।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি বলেছেন, পল্লীবন্ধুর জাতীয় পার্টি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে আজ ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় পার্টি করতে হলে তার নেতৃত্ব মেনেই করতে হবে। আগামীতে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আমরা পল্লীবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেন, নিজের শক্তি না থাকলে কখনও অন্যের ওপর নির্ভর করে ভালো কিছু করা যায় না। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি-সব ক্ষেত্রে এটা খুব জরুরি বিষয়। একথা সত্য যে, নানা জটিলতা ও মীরজাফরদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে আমাদের দল ৯০ সালের পর থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে না। বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরে এ পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। আমরা এক ধরনের আরোপিত বা শৃঙ্খলিত সময় পার করছি। আমরা কেউ এ সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, সঙ্গত কারণে রাজনীতিও এখন পদে পদে নিয়ন্ত্রিত ও শৃঙ্খলিত হয়ে পড়েছে। সরকার ও প্রশাসনের নগ্ন হস্তক্ষেপ ছিল গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আমাদের দলের জনপ্রিয় নেতাদের মধ্যে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তাদের অনেকে আশাহত হয়েছেন। আবার কেউ মনোনয়ন পেয়েছেন, কেউ আবার পাননি। অনেকে মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচনের মাঠে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারেননি। শক্তি এবং সামর্থ্য থাকলেও প্রশাসনের গোপন ষড়যন্ত্রের কারণে সব ভেস্তে গেছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হবে আশ্বাস দিয়ে অনেকটা জোর করে আমাদের দলকে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছিল।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, আপনারা সবাই জানেন আমিও ঢাকা-১ আসন থেকে নির্বাচন করেছি। কিন্তু কি হয়েছে-তা দেশের মানুষ যমুনা টেলিভিশনের মাধ্যমে লাইভ দেখেছে। কোনো টেলিভিশন চ্যানেল সাহস না করলেও যমুনা টেলিভিশন সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। ভোটের দিন সকাল থেকেই যখন সব কেন্দ্রে ভোট কারচুপি হচ্ছিল তখন নির্বাচন কশিসনসহ প্রশাসনের সব পর্যায়ে আমি নিজে যোগাযোগ করি, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। ওই সময় আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে অসহায়ের মতো চরম কষ্ট মেনে নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে বলতে পারি, জাতীয় পার্টির যেকটি আসনে নিশ্চিত জয়ের সম্ভাবনা ছিল তার মধ্যে আমার আসনটি অন্যতম। অথচ আমাকেই এরকম ভোট ডাকাতি মেনে নিতে হয়েছে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বলেন, আমি মনে করি আজ এ বিষয়গুলো যথযথভাবে রিভিউ করতে হবে। আমরা নির্বাচনের আগে জনগণকে কি ধরনের প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলাম? নির্বাচনে আমরা কি ভূমিকা রেখেছি? কিভাবে আমরা এখন জনগণের আস্থা অর্জন করব? তিনি বলেন, বিশেষ করে শুধু সংসদে বিরোধী দল হয়ে থাকলে চলবে না। সাধারণ মানুষের মন জয় করতে হবে। আমি মনে করি-রাজনীতি কখনও হারাবে না। যে কোনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও রাজনীতি টিকে থাকবে। জনগণের বিপ্লব ও সংগ্রাম কখনো বিফলে যায় না। সেই জনগণকে নিয়েই আমাদের রাজপথে থাকতে হবে।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, আমাদের সুযোগ্য চেয়ারম্যানের কৌশলী ভূমিকার কারণে সংসদে তার বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার বিষয়টি শেষ পর্র্যন্ত আটকানো যায়নি। এক্ষেত্রে আমাদের দল অবশ্যই লাভবান হয়েছে। তা না হলে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়ে যেত। এ সময় দলের মাঠ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি জানি আপনাদের অনেকের মনে কষ্ট আছে, অভিমান আছে, ক্ষোভ আছে। এতকিছুর পরেও সবচেয়ে বড় সত্য হলো আমরা সবাই জাতীয় পার্টিকে ভালোবাসি, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ভালোবাসি। তার দেখানো পথেই আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাব। অতীতের সব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করব। পার্টির চেয়ারম্যান আমাদের যে দিকনির্দেশনা দেবেন, আমরা তা পালন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব। অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, আমি যা বলতে চেয়েছিলাম তার অনেক কিছুই আপনারা ইতোমধ্যে বলে ফেলেছেন। বিশেষ করে আমাদের জেলার নেতারা তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরে আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন-অতীতে আমরা কোথায় ভুল করেছি। আমাদের প্রিয় চেয়ারম্যান অনেক বিচক্ষণ এবং সুবিবেচক। তিনি নিশ্চয়ই এসব বিষয়ে তার মূল্যবান বক্তব্য দেবেন।
প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এমপি, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম জহির, জহিরুল আলম রুবেল, উপদেষ্টা আশরাফুজ্জামান আশু এমপি ছাড়াও বিভিন্ন জেলার নেতা বক্তব্য রাখেন। এদের মধ্যে রয়েছেন-আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, আহসান আদেলুর রহমান, আহমেদ শফি রুবেল, এসএম ইয়াসির, মহসিন উল ইসলাম হাবুল, সামসুউদ্দিন রিন্টু, এয়ার আহমেদ সেলিম, সাব্বির আহমেদ, ডা. আব্দুল হাই, সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, শফিকুল ইসলাম মধু, জাহিদ হাসান, আলহাজ আবদুর রাজ্জাক, মোজাম্মেল হক, মো. নজরুল ইসলাম, মো. নাসির উদ্দিন, মো. জাফর উল্লাহ, কামরুজ্জামান মণ্ডল, নূরুল আমিন ভুট্টো, আমির হোসেন ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট খন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু, ওমর ফারুক, আলাউদ্দিন, মোস্তফা জামান লিটন প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন-পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, এসএম আব্দুল মান্নান, এটিইউ তাজ রহমান, আবদুর রশীদ সরকার, নাসরিন জাহান রতনা, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, নাজমা আক্তার, সৈয়দ দিদার বখত, একেএম সেলিম ওসমান এমপি, মেজর অব. রানা মোহাম্মদ সোহেল, এমরান হোসেন মিয়া, শেরিফা কাদের, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি প্রমুখ।
| জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, আমি আগেই বুঝেছিলাম বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না। তিন বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। তাই দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। তবে ভোট ভালো হয়নি। তিনি আরও বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিল। অনেকটা চাপে পড়ে, অনেকটা বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদেরও নির্বাচনে যেতে হয়েছে। |
ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ জাতীয় পার্টির | দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যর্থতার রেশ কাটিয়ে এবার নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে চায় প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সংসদে এবং সংসদের বাইরে সরব থাকার পাশাপাশি রাজনীতির মাঠে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথাটিও পুরোদমে জানান দিতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন গোছানোর কাজটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনের তিন মাসের মাথায় এসে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা আহ্বান করেছে জাতীয় পার্টি। আজ শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর রমনায় অবস্থিত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলটির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের এমপি এতে সভাপতিত্ব করবেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি জেলা, উপজেলাসহ সব পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এমনকি জাতীয় পার্টির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদেরও এই সভায় থাকতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যানবৃন্দ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসহ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল-সব পর্যায়ের নেতাদের উপস্থিতিতে আগামী দিনের রাজনীতির পথ পরিক্রমা ঠিক করবে জাতীয় পার্টি। বিশেষ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী ক্ষোভ-হতাশা কাটিয়ে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজেদের করণীয় নিয়েও আলোচনা হবে এই বৈঠকে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বিএনপিসহ তাদের বলয়ে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মধ্যে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১টি আসনে জয়লাভ করে জাতীয় পার্টি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার এই নির্বাচনে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও টানা তৃতীয় মেয়াদে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসেন তারা। এবারের নির্বাচনি অভিজ্ঞতা জাতীয় পার্টির জন্য খুব একটা সুখকর না হলেও সংসদের প্রথম অধিবেশনেই দলটির সংসদ-সদস্যরা নানা ইস্যুতে সরব এবং সোচ্চার ছিলেন। এর মধ্য দিয়ে কার্যকর বিরোধী দল হিসাবে নিজেদের সক্রিয় উপস্থিতি জানান দেন তারা। তবে মাঠের রাজনীতিতে সেভাবে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি জাতীয় পার্টিকে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতাসহ নানা ইস্যুতে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরে ক্ষোভ এবং হতাশা বিরাজ করছে এখনও। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় আলোচনা হবে।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা এর আগে কো-চেয়ারম্যান এবং প্রেসিডিয়াম সদস্যরা মিলে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। এবার সারা দেশের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসব। এই বৈঠকে দলের কো-চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্য, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ-সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য-সবাই উপস্থিত থাকবেন। এর বাইরেও সারা দেশের সাংগঠনিক জেলা এবং উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের মনে অনেক ক্ষোভ ও হতাশা আছে। আমাদেরও কিছু ভুলত্রুটি আছে, নির্বাচনে যারা প্রার্থী ছিলেন তাদের মনে ক্ষোভ আছে, কর্মীদেরও মনে হতাশা আছে। এর মধ্যে অনেকে আবার দল ছেড়ে চলে গেছেন-সামগ্রিকভাবে বলা যেতে পারে আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজেদের করণীয় ঠিক করতে সবাইকে ডেকেছি। সবার মতামত নিয়ে আমরা আগামীতে কিভাবে এগিয়ে যাব তা ঠিক করব।
| দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যর্থতার রেশ কাটিয়ে এবার নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে চায় প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সংসদে এবং সংসদের বাইরে সরব থাকার পাশাপাশি রাজনীতির মাঠে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথাটিও পুরোদমে জানান দিতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন গোছানোর কাজটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন তারা। |
‘গণমানুষের জন্যই জাতীয় পার্টির রাজনীতি’ | বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, গণমানুষের জন্যই জাতীয় পার্টির রাজনীতি। আমরা সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে রাজনীতি করছি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে এক শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
এর আগে জিএম কাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান পার্টি চেয়ারম্যানের নবনিযুক্ত উপদেষ্টা মেজর সিকদার আনিসুর রহমান (অব.)।
এ সময় জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে আরও সংগঠিত করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ সেলিম, কেন্দ্রীয় নেতা মো. ইব্রাহিম, প্রিন্সিপাল মোস্তফা চৌধুরী, জাতীয় মটর শ্রমিক পার্টির সভাপতি মেহেদী হাসান শিপন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, জাতীয় হকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ নিজাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
| বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, গণমানুষের জন্যই জাতীয় পার্টির রাজনীতি। আমরা সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে রাজনীতি করছি। |
বন ডাকাতদের জন্যই পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়: জিএম কাদের | কুষ্টিয়ার কুমারখালী বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত সড়কের ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্তে উষ্মা প্রকাশ করেছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত বাতিল করার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে বিগত দিনে একই সড়কের গাছ কাটার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতেও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জিএম কাদের।
বিবৃতিতে জিএম কাদের বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশ ২০২৩ সালে ওই সড়কের ১০ হাজার গাছ কেটেছে বনবিভাগ। সম্প্রতি একই সড়কে আরও ৩ হাজার গাছ কেটেছে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় জনসাধারণ ও পরিবেশবিদদের মতামত উপেক্ষা করে ওই সড়কে আরও প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটার জন্য নাম্বারিং করেছে বনবিভাগ। এর চেয়ে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত আর হতে পারে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা। কিন্তু আমাদের আছে ৯ শতাংশের কম। এভাবে বনাঞ্চাল নিধন করার কারণেই দেশ আজ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন যে আজ অতিষ্ঠ, যথেষ্ট গাছপালা থাকলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাওয়া যেত।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, অন্যদিকে রাজধানীতে সড়ক ও ভবন তৈরির জন্য ইতোমধ্যেই দেদারছে কেটে ফেলা হয়েছে হাজার গাছ। অপরিকল্পিত ও আত্মঘাতী এমন সিদ্ধান্তে রাজধানী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে আছে। পরিবেশবিদদের মতে, রাজধানীতে ২০ শতাংশ বনাঞ্চল থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ২ শতাংশ। প্রয়োজন হলে গাছ না কেটেও সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্ত করা সম্ভব। তাই কারণে-অকারণে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আগে বন থেকে গাছ চুরি হতো, এখন বনে ডাকাতি শুরু হয়েছে। বন ডাকাতদের জন্যই পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়। বনখেকো ও বনদস্যুদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের মুখোমুখী করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান জিএম কাদের।
| কুষ্টিয়ার কুমারখালী বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত সড়কের ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্তে উষ্মা প্রকাশ করেছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের। |
প্রতিদিনই সড়কে প্রাণ গেলেও প্রতিকার নেই: জিএম কাদের | জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, সড়কে কমছেই না মৃত্যুর মিছিল। গেল ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল সাত দিনে ১১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২২ জন মারা গেছে। এতে আহত হয়েছে আরও অন্তত ১৯৫ জন। আজ ফরিদপুরের কানাইপুরে ও ময়মনসিংহে পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জনসহ মোট ১৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
এতে গভীর শোক ও দুখ প্রকাশ করে এক শোকবার্তায় নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন জিএম কাদের। পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
শোকবার্তায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিদিনই সড়কে প্রাণ যাচ্ছে, কোনো প্রতিকার নেই। সড়কে প্রতিদিনের অপমৃত্যু যেন স্বাভাবিক ঘটনা। প্রতিদিন এমন দুর্ঘটনার সংবাদ মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, তদন্ত করে দুর্ঘটনার কারণ প্রকাশ করতে হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়ক ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
শোকবার্তায় জিএম কাদের আরও বলেন, নিহতদের প্রতি পরিবারে যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। একই সঙ্গে আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
| জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, সড়কে কমছেই না মৃত্যুর মিছিল। গেল ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল সাত দিনে ১১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২২ জন মারা গেছে। এতে আহত হয়েছে আরও অন্তত ১৯৫ জন। আজ ফরিদপুরের কানাইপুরে ও ময়মনসিংহে পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জনসহ মোট ১৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। |
বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহতের নিন্দা | লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে শুক্রবার ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ আবুল কালাম নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
শনিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সীমান্তে বিএসএফ পোকামাকড়ের মতো বাংলাদেশিদের হত্যা করছে। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে বিএসএফ তার ওয়াদা রাখেনি। সীমান্তে ধারাবাহিক হত্যা ভারতের সৎ প্রতিবেশীর পরিচয় নয়। অবিলম্বে ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে বলুন।
তিনি বলেন, বেশ কিছুকাল ধরে সীমান্তে বিএসএফ পোকামাকড়ের মতো বাংলাদেশিদের হত্যা করে আসছে। এটা বাংলাদেশকে দেওয়া বিএসএফের ওয়াদার বরখেলাপ। গত ৯ মার্চ ঢাকায় বিএসএফ প্রধান সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার ঘোষণা করেন। কিন্তু সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা তারা বন্ধ করেনি। প্রায় প্রতি সপ্তাহে তারা বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করছে। এটা বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। ভারতের এসব তৎপরতা কোনো সৎ প্রতিবেশীর পরিচয় নয়; বরং তাদের বাংলাদেশ বিরোধী আগ্রাসী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।
সাইফুল হক বলেন, কেবল ২০২৩ সালে বিএসএফের হাতে ৩০ জনের বেশি বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আর গত সাত বছরে বিএসএফের গুলি ও অত্যাচারে প্রাণ হারিয়েছেন দুই শতাধিক বাংলাদেশি, আহত হয়েছেন অনেকে।
তিনি বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সীমান্তে লেনদেনে সমস্যা হলেই বিএসএফ মারমুখী হয়ে উঠে এবং গুলি চালিয়ে বাংলাদেশি হত্যা করে।
সাইফুল হক আরও বলেন, বাংলাদেশের সরকারের ভারত তোষণ নীতি বিশেষ করে গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের ভারত অনুগত পররাষ্ট্র নীতির কারণে সীমান্ত হত্যা বন্ধ, পানির ন্যায্য অংশীদারিত্ব, বাণিজ্যিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠাসহ ভারতে বাংলাদেশ বিরোধী বহুমুখী অপতৎপরতা বন্ধ করানো যায়নি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখন প্রায় প্রতিদিন ঘোষণা করছে, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব এখন সর্বোচ্চ শিখরে তখন প্রায় প্রতি সপ্তাহে সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ত দিয়ে এই বন্ধুত্বের নির্মম দায় শোধ করতে হচ্ছে।
সাইফুল হক বলেন, সরকার সীমান্তে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ড বন্ধ দূরের কথা, এর উপযুক্ত প্রতিবাদ করার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে। সীমান্তবর্তী লাখ লাখ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানেও তাদের দৃশ্যমান ও কার্যকরি কোনো উদ্যোগ নেই। গত ১৫ বছর শাসক দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিকভাবে অবৈধ ও অনৈতিক ক্ষমতার পেছনে ভারতের চরম হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের এককাট্টা মদদ ও সমর্থনের বিনিময়ে বাংলাদেশকে তারা ভারতের অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এই পরিস্থিতি দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তায় গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে।
তিনি অনতিবিলম্বে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ ও তা বন্ধে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি সীমান্ত অঞ্চলের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানেও কার্যকরি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।
| লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে শুক্রবার ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ আবুল কালাম নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
শনিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সীমান্তে বিএসএফ পোকামাকড়ের মতো বাংলাদেশিদের হত্যা করছে। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে বিএসএফ তার ওয়াদা রাখেনি। সীমান্তে ধারাবাহিক হত্যা ভারতের সৎ প্রতিবেশীর পরিচয় নয়। অবিলম্বে ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে বলুন। |
সরকারকে পাঁচ দিনের আলটিমেটাম ইসলামী আন্দোলনের | ফরিদপুরের মধুখালীতে মন্দিরে প্রতিমায় আগুন দেওয়ার অভিযোগ তুলে দুই নির্মাণ শ্রমিকের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের (দোষী) আগামী বুধবারের মধ্যে গ্রেফতার করতে সরকারকে আলটিমেটাম দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। অন্যথায় আগামী শুক্রবার প্রত্যেকটা জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল করবে। পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইসলামী আন্দোলন।
শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ কথা বলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম।
মিছিল শেষে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করেন। তাদের মিছিলটি পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি ঘুরে আবারো বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটের সামনে এসে শেষ হয়।
‘ফরিদপুরের মধুখালীতে কতিপয় উগ্র সন্ত্রাসী কর্তৃক নিরীহ হাফেজ কুরআন দুই সহোদর শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে’ এ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ।
ফয়জুল করিম বলেন, আগামী বুধবারের মধ্যে সরকার দোষীদের গ্রেফথার করতে ব্যর্থ হলে আগামী শুক্রবার সারা দেশে প্রত্যেকটা জেলা ও মহানগরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করবে। এরপরও যদি সরকার ব্যর্থ হয়, তাহলে পরবর্তীতে এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে, এ ইস্যুতে বাংলাদেশের জনগণ রাস্তার নামবে। দোষীদের গ্রেফতারের জন্য সরকারকে বাধ্য করবে। আর এ অবৈধ সরকারকেও বিদায় করতে বাধ্য করবে ইনশাআল্লাহ।
ফয়জুল করিম বলেন, আপনারা (সরকার) তদন্তভিত্তিক মন্দিরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিচার করেন। আমি এটাও দাবি করছি।
তিনি বলেন, আর যারা দুজন শ্রমিককে হত্যা করেছে, বাংলার জমিনে তাদের বিচার করতে হবে। আজকে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার বিনিময়ে বাংলাদেশের মুসলমানদের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে গোলাম হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছেন। এ দেশের মুসলমানরা স্বাধীন নয়। সমস্ত মুসলমানরা বিক্রি হয়ে গেছে। তাদের গলার মধ্যে গোলামীর জিঞ্জির লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
| ফরিদপুরের মধুখালীতে মন্দিরে প্রতিমায় আগুন দেওয়ার অভিযোগ তুলে দুই নির্মাণ শ্রমিকের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের (দোষী) আগামী বুধবারের মধ্যে গ্রেফতার করতে সরকারকে আলটিমেটাম দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। অন্যথায় আগামী শুক্রবার প্রত্যেকটা জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল করবে। পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইসলামী আন্দোলন। |
‘তাপমাত্রার এই পরিস্থিতির দায় সরকার এড়াতে পারে না’ | বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ‘দেশজুড়ে তাপমাত্রার মারাত্মক বৃদ্ধি শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের কাছে গজবের মতোই। গরমে তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত, ত্রাহিত্রাহি অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে তাদের একটি বড় অংশের কাজ নেই। শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা গুরুতর হুমকির মুখে। অনেকেরই কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই।’
তিনি বলেন, ‘টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে এই পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না।’
শুক্রবার সকালে সেগুনবাগিচায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় দপ্তরে বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত জরুরি অবস্থা (হিট ইমারজেন্সি) জারি করে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে সরকার, মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি দুর্যোগ পরিস্থিতিতে অসহায় শ্রমজীবী মেহনতি পরিবারগুলোকে নগদ অর্থ প্রদান, টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রি ও শ্রমজীবীদের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সাইফুল হক বলেন, ‘গত ১৫ বছরে উন্নয়নের নামে বনাঞ্চল আরও উজাড় হয়েছে, দেশ আরও গাছ শূন্য হয়েছে; প্রাণ, প্রকৃতি আরও বিপদগ্রস্ত হয়েছে। দেশে তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে চলেছে।’
তিনি উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশব্যাপী পরিকল্পিতভাবে বনাঞ্চল সৃষ্টিসহ বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
সাইফুল হক বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ শিল্প-কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলার অনুকূল পরিস্থিতি নেই।’ তিনি শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করতে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রনয়নের আহ্বান জানান।
অন্যান্য বক্তারা অনতিবিলম্বে গারমেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় সমাবেশ ও র্যালির মাধ্যমে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির সভাপতি মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ, আইয়ুব আলী, নূর ইসলাম, স্বাধীন মিয়া, জামাল সিকদার, আব্দুল হালিম ভুঁইয়া, হাফিজুর রহমান রুবেল, আবুল হোসেন, নান্টু দাস প্রমুখ।
| বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ‘দেশজুড়ে তাপমাত্রার মারাত্মক বৃদ্ধি শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের কাছে গজবের মতোই। গরমে তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত, ত্রাহিত্রাহি অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে তাদের একটি বড় অংশের কাজ নেই। শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা গুরুতর হুমকির মুখে। অনেকেরই কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই।’ |
তীব্র তাপপ্রবাহে নগরে বিশুদ্ধ শীতল পানি বিতরণ | তীব্র তাপপ্রবাহে সৃষ্ট সংকটে রাজধানীতে শ্রমজীবী ও পথচারীদের মাঝে বিশুদ্ধ শীতল পানি, স্যালাইন ও ওয়ালেট টিস্যু বিতরণ করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬৬ ও ৬৭নং ওয়ার্ডে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর পূর্বের আওতাধীন ডেমরা থানা শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ মাইনুল ইসলাম, ডেমরা থানা শাখার সভাপতি শাহাদাত হোসেন মৃধা, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাফিইন বিন আমজাদ, স্কুল সম্পাদক তরুণ, কার্যনির্বাহী সদস্য আহমেদ হৃদয়সহ ও ওয়ার্ড নেতারা।
প্রধান অতিথি শেখ মুহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাধার ভরাট ও অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলেই অসহনীয় দাবদাহে নগরে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। সাময়িক স্বস্তির জন্য আমরা শীতল পানির বিতরণ কর্মসূচি পালন করছি; কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের জন্য নগরকে সবুজায়ন ও বসবাসের উপযোগী করতে রাষ্ট্রকেই যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।
নগর সহ-সভাপতি মাইনুল ইসলাম বলেন, যতদিন তীব্র দাবদাহ থাকবে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর পূর্বের উদ্যোগে নগরজুড়ে বিশুদ্ধ শীতল পানি বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
| তীব্র তাপপ্রবাহে সৃষ্ট সংকটে রাজধানীতে শ্রমজীবী ও পথচারীদের মাঝে বিশুদ্ধ শীতল পানি, স্যালাইন ও ওয়ালেট টিস্যু বিতরণ করা হয়। |
‘দেশ গরমে পুড়ছে আর সরকার উন্নয়নের বেসুরো বাঁশি বাজিয়ে যাচ্ছে’ | আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) নেতারা বলেছেন, তীব্র দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। কৃষি, শিল্পসহ সব খাতে মারাত্মক মন্দা। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে মানুষ দিশাহারা। দরিদ্র মানুষ আছে অবর্ণনীয় কষ্টে। রোগ শোকের প্রকোপে হাসপাতালে জায়গা নাই। এক কথায় দেশ গরমে পুড়ছে। কিন্তু ফাইভ পার্সেন্ট সরকারের কোনো বিকার নেই। এ অবস্থায়ও তারা মিথ্যা উন্নয়নের বেসুরো বাঁশি বাজিয়েই যাচ্ছে।
এবি পার্টি আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব অভিযোগ করেন দলের শীর্ষ নেতারা। নেতারা বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহ, পরিবেশ ও জনজীবনে বিপর্যয়, দেশব্যাপী বিদ্যুৎ সংকটের প্রেক্ষাপটে সরকারের মৌনতা ও নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ বিকাল ৪টায় এ মিডিয়া ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের সঞ্চালনায় ও প্রফেসর ডা. আব্দুল ওহাব মিনারের সভাপতিত্বে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ও সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক দাবদাহের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোই মূলত দায়ী। কিন্তু দিন শেষে আমাদের নিজেদের বাঁচার ব্যবস্থা নিজেদের উদ্যোগেই করতে হবে। এবি পার্টি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণকে সচেতন করতেই জাতির সামনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নদী, খাল, বিল সবই নিঃশেষ হওয়ার পথে। প্রধান নদীগুলোর উৎসমূখে বাঁধ নির্মাণ করে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রটি বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করার প্রক্রিয়া করছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা খাল, বিল দখল করে অবৈধভাবে দালান-কোঠা নির্মাণ করেছে। বনের গাছ শুধু নয় রাস্তাঘাটের গাছ পর্যন্ত কেটে উজাড় করা হয়েছে। বনের গাছ কাটায় বাধা দেওয়ায় সরকারি দলের বাহিনী বন কর্মকর্তাকে বুলডোজার চালিয়ে হত্যা পর্যন্ত করেছে। দেশকে বাঁচাতে, আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে আমাদের এখনই ভূমিকা নিতে হবে।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, গত ৩ দশকে রাজধানী থেকে ২৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জলাধার উধাও হয়ে গেছে। প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার সবুজ কেটে সাফ করে ফেলা হয়েছে। এগুলোর পেছনে হয়েছে সরকারের ছত্রছায়ায় থাকা প্রভাবশালী মহল।
দরিদ্র মানুষের অবর্ণনীয় কষ্টের বর্ণনা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, রোগ শোকের প্রকোপে হাসপাতালগুলোতে তিল পরিমাণ জায়গা নাই।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. মেজর (অব.) মিনার বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহে সবাইকে সচেতন হতে হবে। হিটস্ট্রোকের ব্যাপারে খেটেখাওয়া মানুষকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরাও সামর্থ্য অনুযায়ী সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। তিনি উপস্থিত সব সংবাদকর্মীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ব্রিফিং শেষ করেন।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন- এবি পার্টির প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন, সহকারী সদস্যসচিব শাহ আব্দুর রহমান, এম আমজাদ খান, এবি পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহবায়ক ফিরোজ কবিরসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
| আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) নেতারা বলেছেন, তীব্র দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। কৃষি, শিল্পসহ সব খাতে মারাত্মক মন্দা। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে মানুষ দিশাহারা। দরিদ্র মানুষ আছে অবর্ণনীয় কষ্টে। রোগ শোকের প্রকোপে হাসপাতালে জায়গা নাই। এক কথায় দেশ গরমে পুড়ছে। কিন্তু ফাইভ পার্সেন্ট সরকারের কোনো বিকার নেই। এ অবস্থায়ও তারা মিথ্যা উন্নয়নের বেসুরো বাঁশি বাজিয়েই যাচ্ছে। |
দুদিনের কর্মসূচি দিল জামায়াত | সারাদেশে তীব্র তাপ প্রবাহ থেকে পরিত্রাণে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াত ইসলামী। ঘোষণা অনুযায়ী বুধ ও বৃহস্পতিবার মহান আল্লাহ তাআলার অবারিত রহমত তথা বৃষ্টি কামনা করে সালাতুল ইসতিসকা আদায় করবে দলটি। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
সারাদেশে তীব্র তাপ প্রবাহে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, দেশে বিরাজমান এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহ তাআলার অবারিত রহমত তথা বৃষ্টি কামনা করে সালাতুল ইসতিসকা আদায় করার জন্য ওলামায়ে কেরাম, জামায়াতের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও দেশবাসী সবার প্রতি আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। এজন্য বুধ ও বৃহস্পতিবার জামায়াতের সব সাংগঠনিক শাখার উদ্যোগে জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে সালাতুল ইসতিসকা আদায়ের কর্মসূচি সফল করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
শফিকুর রহমান বলেন, সম্প্রতি প্রচণ্ড তাপদাহ ও অনাবৃষ্টিতে দেশের আবহাওয়া অত্যন্ত উঞ্চ হয়ে পড়েছে। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। একদিকে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে প্রচণ্ড গরম, অপরদিকে অনাবৃষ্টিতে মানুষ, পশু-পাখি ও জীব-জন্তুর জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। একমাত্র মহান রাব্বুল আলামীনই আমাদেরকে এহেন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ দিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, প্রচণ্ড তাপ প্রবাহে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন মানুষ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সারা দেশের মানুষ গরমে কষ্ট পাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক-শ্রমিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার শ্রমজীবী মানুষ কর্ম ক্ষেত্রে প্রচন্ড গরমে কষ্ট পাচ্ছে। গত ২২ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে একজন রিক্সাওয়ালা প্রচণ্ড গরমে মারা গেছেন। সারাদেশে বেশ কয়েকজন কৃষক মারা গেছেন। খড়ায় মাঠ-ঘাট শুকিয়ে চৌচির হয়ে গিয়েছে। ফসলাদি নষ্ট হচ্ছে। বাড়ন্ত ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। বনের পশু-পাখি তীব্র গরমে কষ্ট পাচ্ছে এবং গাছ-পালা মারা যাচ্ছে।
| সারাদেশে তীব্র তাপ প্রবাহ থেকে পরিত্রাণে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াত ইসলামী। ঘোষণা অনুযায়ী বুধ ও বৃহস্পতিবার মহান আল্লাহ তাআলার অবারিত রহমত তথা বৃষ্টি কামনা করে সালাতুল ইসতিসকা আদায় করবে দলটি। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান। |
তিন বিদেশি শক্তি আ.লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করে | জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, আমি আগেই বুঝেছিলাম বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না। তিন বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। তাই দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। তবে ভোট ভালো হয়নি। তিনি আরও বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিল। অনেকটা চাপে পড়ে, অনেকটা বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদেরও নির্বাচনে যেতে হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে জিএম কাদের এ দাবি করেন। গত বছরের ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দলের বর্ধিত সভায় জাতীয় পার্টির নেতারা নির্বাচন বর্জনের পক্ষে মতামত দেন। তবে শেষ পর্র্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে ভোটে অংশ নেয় দলটি। মাত্র ১১টি আসনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসে জাতীয় পার্টি। দলের তৃণমূলের নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে কেন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তা বর্ধিত সভায় জানিয়েছেন জিএম কাদের। এ সময় তিনি নির্বাচনের আগের পরিস্থিতিও ব্যাখ্যা করেন।
জিএম কাদের বলেন, নির্বাচন বন্ধ করে কোনো দেশে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করছে। নির্বাচনের আগে বর্ধিত সভায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেওয়া হয়েছিল। ভোটে না গেলে ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখা যাবে কিনা সন্দেহ ছিল, তাই নির্বাচনে গিয়েছি। আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। ভোটের আগ মুহূর্তে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন সুষ্ঠুভাবে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছি। মনে হয়েছে বিভিন্ন বিদেশি শক্তি বিভিন্নভাবে নানা দিকে নিচ্ছিলেন। আর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল তারা সফল হবে না। আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় শক্তি এসে সরকার পরিবর্তন করে, এমন ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বিএনপির ১ কিংবা ১০ লাখ বা ১ কোটি লোক নিয়ে রাস্তায় নামলেও বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না, তা বুঝতে পেরেছিলাম। তিনি বলেন, বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলনে পরাস্ত হয়ে জাতীয় পার্টিকে দোষ দিচ্ছে। তবে এটা ঠিক নির্বাচন ভালো হয়নি। সরকার জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত দল হিসাবে দেখতে চায়, যা কখনও সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি কখনোই অনুগত বিরোধী দল হবে না। গৃহপালিত বিরোধী দল হবে না।
জাতীয় পার্টি ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেও চাপের মুখে তা পালটাতে বাধ্য হন দাবি করে জিএম কাদের বলেন, কোন্দল করে দল ভেঙে দেওয়া হবে-এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে সবাইকে (দলের প্রার্থী) জানিয়ে দিলাম নির্বাচনে যাব না। কিন্তু ১৭ ডিসেম্বর সকালে আমার ওপরে প্রত্যক্ষভাবে ও পরোক্ষভাবে চাপ আসল। প্রত্যক্ষভাবে সেটা বলব না, কিন্তু পরোক্ষভাবে হলো, আমাদের দলের ভেতরে কোন্দল তৈরি করে দল ভেঙে দেওয়া হবে। আর তখন আমার মতো ওয়েল ইনফর্মড নেতা দেশে কমই ছিল। আমি জেনে গিয়েছিলাম, কিছু শক্তিশালী দেশ এই সরকারকে জয়ী করতে চায়। তাই আমি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে সরকার আমাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশনে গেল।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ২৬ জনের তালিকা দেওয়া হলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দিল সেখানে স্বতন্ত্র পাওয়ারফুল প্রার্থীও রেখে দিল। শুধু কয়েকটি আসনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার যাকে পাশ করাতে চায়, তাকে পাশ করানো হয়েছে। আমি যেই আসনে নির্বাচন করেছি, সেখানেও আমাকে হারানোর জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। আমাকে ধ্বংস করা মানে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করা।
জাতীয় পার্টি না গেলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না বলে আওয়ামী লীগ তাদের চেয়েছে বলেও মনে করেন বিরোধীদলীয় নেতা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের ব্যবহার করে একদলীয় রাজত্বের চিন্তা করেছে। তারা চেয়েছে অনুগত বিরোধী দল। তারা আমাদের গলায় পচা, গলা, মরা আবর্জনা ঢুকিয়ে দিয়ে অনুগত বিরোধী দল বানানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা আমরা হইনি।
দলের কিছু নেতা জাতীয় পার্টির ছবি না দিয়ে আওয়ামী লীগের ছবি দিয়ে পোস্টার করে জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, এটা পার্টি মানবে না। যারা গৃহপালিত বিরোধী দল হতে চায়, চলে যান। আমরা হব না। গৃহপালিত হলে রাজনৈতিক মাঠে হারিয়ে যাবেন, আমি ছাড় দেব না। নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে স্ত্রী শেরীফা কাদেরকে প্রার্থী করা নিয়ে জাতীয় পার্টিতে যে বিরোধ তৈরি হয়েছে তা নিয়েও কথা বলেন জিএম কাদের।
তিনি বলেন, উত্তরা আমাদের এক শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। আমি দীর্ঘদিন এ এলাকায় রাজনীতি করেছি। ১০টি আসনের চেয়ে উত্তরার এই আসন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি চেয়েছি দলের শক্তিশালী অবস্থানের জন্য আমার স্ত্রী এখান থেকে নির্বাচন করুক। দলে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়নি দাবি করে জিএম কাদের বলেন, আমাকে কমপক্ষে ১০০ জন নেতাকর্মী দিন-রাত ফোন দিয়ে বলে, ‘টাকা দেন, টাকা দেন’। অথচ তারা নির্বাচনে নাই, রাজনীতির মাঠেও নাই। তারা বলেছে আমি নাকি দল বিক্রি করে দিয়েছি, আমি নাকি মনোনয়ন বাণিজ্য করেছি। কোনো মনোনয়ন বাণিজ্য করিনি। কারও কাছ থেকে এক টাকা নেইনি।
আওয়ামী লীগ প্রজাতন্ত্রের জায়গায় রাজতন্ত্র কায়েম করছে বলেও মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, জনগণ ভোট দিতে চায় না, এটা হচ্ছে বিরাজনীতিকরণ। এসব করে আওয়ামী লীগ বর্তমানে রাজনৈতিক দলের চরিত্র হারিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কথা বলে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের স্পেস দেওয়া হচ্ছে না। ক্ষমতা সব এককেন্দ্রিক। উনার (প্রধানমন্ত্রী) ইচ্ছায় ভোট হয়। কেউ ভোট করলে উনার অনুমতি নিয়ে করতে হবে। এভাবে চললে দেশে কোনো দলই টিকবে না। এখন এমন অবস্থা করা হয়েছে যে, রাজনীতি করলে হয় ফুলের মালা না হয় ফাঁসির দড়ি গলায় নিতে হবে।
আন্দোলন করতে নেমে বিএনপি কিছু ভুল করেছে দাবি করে জিএম কাদের বলেন, আমি জানতাম বিএনপির আন্দোলনে সরকার পতন সম্ভব না। ১০ লাখ নয়, ১ কোটি মানুষও রাস্তায় নামলে নির্বাচন বন্ধ হবে না। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে সমাবেশের দিন পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন বিএনপি কিছু ভুল করে ফেলল। তারা ফাঁদে পড়ে গেল। নেতৃস্থানীয় লোকজন গ্রেফতার হলেন, আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হলো। বিএনপি আন্দোলনে পরাস্ত হয়েছে। কিন্তু তারা একটা দায় আমার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। তারা বলে, আমি না গেলে নাকি নির্বাচন হতো না। বিএনপি-জামায়াতের নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য আমার ওপরে দোষ দেয়।
প্রখর খরতাপ উপেক্ষা করে জাতীয় পার্টির জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায় থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা বর্ধিত সভায় যোগ দেন। এছাড়াও দলের বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন বর্ধিত সভায়। চেয়ারম্যান, মহাসচিব, কো-চেয়ারম্যানরা ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সংসদ-সদস্যরা। ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, উপদেষ্টা, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা ছিলেন সামনের সারিতে।
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাড়ে ৩ মাসের মাথায় এসে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহত্তর কলেবরের এই সভায় মাঠের নেতারা তাদের মান-অভিমানের কথা তুলে ধরেন। অনেকে এ সময় ব্যর্থতা কাটিয়ে আগামী দিনে জাতীয় পার্টির করণীয় সম্পর্কেও মতামত দেন। পবিত্র কুরআন থেকে তেলায়াতের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। এরপর শোক প্রস্তাব গ্রহণ শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি স্বাগত বক্তব্য দেন।
স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, যারা দল ছেড়ে চলে গেছেন তারা ভুল করেছেন। তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি, এজন্য অনেক সমস্যা জড়িত। যেমন শাসক দলের দৌরাত্ম্য, প্রশাসনের নিরপেক্ষতার অভাব। বলা যায় আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র যারা ছিলেন তাদের পক্ষে প্রশাসন কাজ করেছে। নিরপেক্ষতার অভাবে লাঙলের প্রার্থীরা পাশ করেনি।
মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গত নির্বাচনে আমাদের নিজেদের কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা প্রত্যাশিত ফলাফল পাইনি। আমাদের নেতাকর্মীদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকার পরও প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে জয়ী হতে পারিনি। কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে অল্পের জন্য পরাজয় থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাকেও লড়াই করে জয়ী হতে হয়েছে। আমাদের ত্যাগী কিছু নেতাকর্মী আমাদের ভুল বুঝে চলে গেছেন। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই দেশে এরশাদের প্রতিনিধিত্ব করে একমাত্র জিএম কাদের-অন্য কেউ এরশাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাই যারা চলে গেছেন তারা ভুল করেছেন।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি বলেছেন, পল্লীবন্ধুর জাতীয় পার্টি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে আজ ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় পার্টি করতে হলে তার নেতৃত্ব মেনেই করতে হবে। আগামীতে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আমরা পল্লীবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেন, নিজের শক্তি না থাকলে কখনও অন্যের ওপর নির্ভর করে ভালো কিছু করা যায় না। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি-সব ক্ষেত্রে এটা খুব জরুরি বিষয়। একথা সত্য যে, নানা জটিলতা ও মীরজাফরদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে আমাদের দল ৯০ সালের পর থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে না। বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরে এ পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। আমরা এক ধরনের আরোপিত বা শৃঙ্খলিত সময় পার করছি। আমরা কেউ এ সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, সঙ্গত কারণে রাজনীতিও এখন পদে পদে নিয়ন্ত্রিত ও শৃঙ্খলিত হয়ে পড়েছে। সরকার ও প্রশাসনের নগ্ন হস্তক্ষেপ ছিল গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আমাদের দলের জনপ্রিয় নেতাদের মধ্যে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তাদের অনেকে আশাহত হয়েছেন। আবার কেউ মনোনয়ন পেয়েছেন, কেউ আবার পাননি। অনেকে মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচনের মাঠে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারেননি। শক্তি এবং সামর্থ্য থাকলেও প্রশাসনের গোপন ষড়যন্ত্রের কারণে সব ভেস্তে গেছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হবে আশ্বাস দিয়ে অনেকটা জোর করে আমাদের দলকে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছিল।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, আপনারা সবাই জানেন আমিও ঢাকা-১ আসন থেকে নির্বাচন করেছি। কিন্তু কি হয়েছে-তা দেশের মানুষ যমুনা টেলিভিশনের মাধ্যমে লাইভ দেখেছে। কোনো টেলিভিশন চ্যানেল সাহস না করলেও যমুনা টেলিভিশন সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। ভোটের দিন সকাল থেকেই যখন সব কেন্দ্রে ভোট কারচুপি হচ্ছিল তখন নির্বাচন কশিসনসহ প্রশাসনের সব পর্যায়ে আমি নিজে যোগাযোগ করি, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। ওই সময় আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে অসহায়ের মতো চরম কষ্ট মেনে নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে বলতে পারি, জাতীয় পার্টির যেকটি আসনে নিশ্চিত জয়ের সম্ভাবনা ছিল তার মধ্যে আমার আসনটি অন্যতম। অথচ আমাকেই এরকম ভোট ডাকাতি মেনে নিতে হয়েছে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বলেন, আমি মনে করি আজ এ বিষয়গুলো যথযথভাবে রিভিউ করতে হবে। আমরা নির্বাচনের আগে জনগণকে কি ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম? নির্বাচনে আমরা কি ভূমিকা রেখেছি? কিভাবে আমরা এখন জনগণের আস্থা অর্জন করব? তিনি বলেন, বিশেষ করে শুধু সংসদে বিরোধী দল হয়ে থাকলে চলবে না। সাধারণ মানুষের মন জয় করতে হবে। আমি মনে করি-রাজনীতি কখনও হারাবে না। যে কোনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও রাজনীতি টিকে থাকবে। জনগণের বিপ্লব ও সংগ্রাম কখনো বিফলে যায় না। সেই জনগণকে নিয়েই আমাদের রাজপথে থাকতে হবে।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, আমাদের সুযোগ্য চেয়ারম্যানের কৌশলী ভূমিকার কারণে সংসদে তার বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার বিষয়টি শেষ পর্র্যন্ত আটকানো যায়নি। এক্ষেত্রে আমাদের দল অবশ্যই লাভবান হয়েছে। তা না হলে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়ে যেত। এ সময় দলের মাঠ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি জানি আপনাদের অনেকের মনে কষ্ট আছে, অভিমান আছে, ক্ষোভ আছে। এতকিছুর পরেও সবচেয়ে বড় সত্য হলো আমরা সবাই জাতীয় পার্টিকে ভালোবাসি, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ভালোবাসি। তার দেখানো পথেই আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাব। অতীতের সব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করব। পার্টির চেয়ারম্যান আমাদের যে দিকনির্দেশনা দেবেন, আমরা তা পালন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব। অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, আমি যা বলতে চেয়েছিলাম তার অনেক কিছুই আপনারা ইতোমধ্যে বলে ফেলেছেন। বিশেষ করে আমাদের জেলার নেতারা তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরে আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন-অতীতে আমরা কোথায় ভুল করেছি। আমাদের প্রিয় চেয়ারম্যান অনেক বিচক্ষণ এবং সুবিবেচক। তিনি নিশ্চয়ই এসব বিষয়ে তার মূল্যবান বক্তব্য দেবেন।
প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এমপি, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম জহির, জহিরুল আলম রুবেল, উপদেষ্টা আশরাফুজ্জামান আশু এমপি ছাড়াও বিভিন্ন জেলার নেতা বক্তব্য রাখেন।
এদের মধ্যে রয়েছেন-আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, আহসান আদেলুর রহমান, আহমেদ শফি রুবেল, এসএম ইয়াসির, মহসিন উল ইসলাম হাবুল, সামসুউদ্দিন রিন্টু, এয়ার আহমেদ সেলিম, সাব্বির আহমেদ, ডা. আব্দুল হাই, সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, শফিকুল ইসলাম মধু, জাহিদ হাসান, আলহাজ আবদুর রাজ্জাক, মোজাম্মেল হক, মো. নজরুল ইসলাম, মো. নাসির উদ্দিন, মো. জাফর উল্লাহ, কামরুজ্জামান মণ্ডল, নূরুল আমিন ভুট্টো, আমির হোসেন ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট খন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু, ওমর ফারুক, আলাউদ্দিন, মোস্তফা জামান লিটন প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন-পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, এসএম আব্দুল মান্নান, এটিইউ তাজ রহমান, আবদুর রশীদ সরকার, নাসরিন জাহান রতনা, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, নাজমা আক্তার, সৈয়দ দিদার বখত, একেএম সেলিম ওসমান এমপি, মেজর অব. রানা মোহাম্মদ সোহেল, এমরান হোসেন মিয়া, শেরিফা কাদের, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি প্রমুখ।
| জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, আমি আগেই বুঝেছিলাম বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না। তিন বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। তাই দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। তবে ভোট ভালো হয়নি। তিনি আরও বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিল। অনেকটা চাপে পড়ে, অনেকটা বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদেরও নির্বাচনে যেতে হয়েছে। |
সরকারি কর্মচারীদের ভাতায় করের চিন্তা | আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত অনুযায়ী কর অব্যাহতি-প্রণোদনা কমিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই ধারাবাহিকতায় এবং বেসরকারি চাকরিজীবীদের সঙ্গে বৈষম্য কমিয়ে আনতে সরকারি চাকরিজীবীদের বাড়িভাড়া ও অন্য ভাতায় করারোপের চিন্তা করছে সংস্থাটি। এছাড়া শিল্প খাতে কর অবকাশ সুবিধার মেয়াদ নির্দিষ্ট করাসহ আয়কর আইন সংস্কারে একগুচ্ছ পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা আগামী বাজেটে অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
জানা গেছে, কর অব্যাহতি-প্রণোদনা যৌক্তিক করতে কর আপিল ও অব্যাহতি অণুবিভাগের সদস্য ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল কাজ করছে। ২০ মার্চ সেই টিম এনবিআর চেয়ারম্যানকে কর প্রণোদনার প্রেক্ষাপট, বিদ্যমান ব্যবস্থার বিস্তারিত তুলে ধরে একটি উপস্থাপনা দেয়।
উপস্থাপনায় কর অব্যাহতি-প্রণোদনার বিদ্যমান ব্যবস্থা ও পদ্ধতি, নেতিবাচক দিক, প্রয়োজনীয়তা, অপব্যবহার, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা তুলে ধরা হয়। একইসঙ্গে আয়কর আইন সংস্কারের মাধ্যমে কর প্রণোদনা যৌক্তিকীকরণে একগুচ্ছ সুপারিশ করা হয়।
উপস্থাপনায় বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, দেশীয় বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ, রপ্তানিমুখী সেবা ও শিল্পকে উৎসাহ দেওয়া, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সহযোগিতা দেওয়া, গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমকে উৎসাহ দেওয়া এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে শ্রমঘন প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে কর প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। মোট ৩১৮টি প্রজ্ঞাপন ও বিশেষ আদেশের মাধ্যমে ১৫টি শিল্প খাত ও ব্যক্তি খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া আছে। এর মধ্যে ৪৫টি প্রজ্ঞাপন সময় দ্বারা সীমাবদ্ধ হলেও প্রায় ২৭৩টি প্রজ্ঞাপনের সময়ের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তবে কর প্রণোদনার ফলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যায়। ফলে সরকার অন্য প্রয়োজনীয় খাত যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করতে পারে না।
এতে আরও বলা হয়, কর প্রণোদনার অপব্যবহারও হয়ে থাকে। কর ফাঁকি দিতে একই ব্যক্তি বা গ্রুপর করযোগ্য সত্তার আয় কম দেখিয়ে কর প্রণোদনার সত্তার আয় বাড়িয়ে দেখানো হয়ে থাকে। কর প্রণোদনা পরিপালন ব্যয় বৃদ্ধি করে, দুর্নীতি ও অনিয়ম বেড়ে যায়। অপরিকল্পিত কর প্রণোদনার ক্ষেত্রে প্রকৃত কর ব্যয় এবং কর ব্যয়ের সফলতা বা সুবিধা সুনির্দিষ্টভাবে পরিমাপযোগ্য হয় না। তাছাড়া অনিয়ন্ত্রিত প্রণোদনা ব্যবসার অসম প্রতিযোগিতাকে বাড়িয়ে দিয়ে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কর প্রণোদনা যৌক্তিক করতে এবং অপব্যবহার রোধে আয়কর কর্মকর্তাদের একটি টিম বিদ্যমান কাঠামো পর্যালোচনা করছে। কর প্রণোদনায় শৃঙ্খলা আনতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। ভবিষ্যতে সেই নীতিমালার আলোকে কর অব্যাহতি, প্রণোদনা বা ছাড় দেওয়া হবে। আগামী বাজেটে নীতিমালাটি আয়কর আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, কর অব্যাহতির পরিমাণ যৌক্তিক করতে এবং বেসরকারি চাকরিজীবীদের সঙ্গে বৈষম্য দূর করতে সরকারি চাকরিজীবীদের ভাতায় কর আরোপের পরিকল্পনা আছে। বর্তমানে বেসরকারি চাকরিজীবীদের মূল বেতন, বোনাস, বাড়িভাড়া, যাতায়াত ভাতাসহ মোট আয়ের দুই-তৃতীয়াংশের ওপর (এক-তৃতীয়াংশ বা সাড়ে ৪ লাখ টাকার নিচে যেই অঙ্ক কম, সেই অঙ্কে করছাড় রয়েছে। অর্থাৎ করমুক্ত) নির্ধারিত হারে আয়কর দিতে হয়। পক্ষান্তরে সরকারি চাকরিজীবীরা শুধু মূল বেতন ও বোনাসের ওপর আয়কর দেন।
এছাড়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানিক করদাতারা বিভিন্ন খাতে দানের পরিপ্রেক্ষিতে যেই পরিমাণ করছাড় পেয়ে থাকেন, সেগুলোও পুনর্বিন্যাস করার উদ্যোগ থাকছে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট, শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত বালিকা বিদ্যালয় বা মহিলা কলেজ, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিক্ষা উন্নয়নের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে দান করতে করছাড় পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে করছাড় যৌক্তিক করার পাশাপাশি প্রণোদনার সম্ভাব্য অপব্যবহার রোধে দাতব্য এবং জনকল্যাণমূলক ট্রাস্টের কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, আগামীতে শিল্প খাতকে অনির্দিষ্টকাল বা অসীম সময়ের জন্য কর অব্যাহতি বা প্রণোদনা দেওয়া হবে না। শিল্পকে উৎসাহিত করতে কর প্রণোদনা বহাল থাকবে। তবে সেটি সময়াবদ্ধ হবে, সর্বোচ্চ ৫ বছর করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কর অব্যাহতি বা প্রণোদনা পেয়েছে, সেগুলো নতুন করে সুবিধা দেওয়া হবে না। ব্যবসা ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে, এমন সব প্রণোদনা বাতিল করা হতে পারে।
এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, সেনাবাহিনী বা যেসব প্রতিষ্ঠানের আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা নেই, কিন্তু করযোগ্য আয় রয়েছে, তাদের গ্রসপ্রাপ্তির সংবলিত একটি বার্ষিক রিপোর্ট দালিল এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর কর পরিশোধের বিষয় আয়কর আইনে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একইভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের করযোগ্য প্রাপ্তির ওপর করারোপের সুস্পষ্ট বিধান করার পরিকল্পনা আছে।
এ বিষয়ে সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আয়কর আইনে বেশকিছু বৈষম্য আছে। এর মধ্যে একটি হলো সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন-ভাতা করমুক্ত রাখা এবং বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর করারোপ করা। একই আইনে চাকরিজীবীদের ওপর দ্বৈতনীতি কাম্য হতে পারে না। সরকারি কর্মকর্তারা নিজেরা আইন করেছেন বলে নিজেরা সুবিধা নিয়ে নেবেন, আর বেসরকারি চাকরিজীবীদের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন, সেটি যৌক্তিক হতে পারে না। সব শ্রেণি-পেশার চাকরিজীবীর সমান সুবিধা দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, কর অবকাশ সুবিধা যৌক্তিকীকরণ করা উচিত। কোনো সুবিধাই আজীবনের জন্য দেওয়া উচিত নয়। এতে শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায় না, বরং অপব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। যেমন আইটিইএস সার্ভিস ১৫ বছর ধরে কর অবকাশ সুবিধা ভোগ করছে; কিন্তু নতুন অনেক শিল্পোদ্যোগের কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া দরকার, তারা সুবিধা পাচ্ছে না। আয়কর আইনে যেসব শিল্পকে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া আছে, সেগুলো পুনর্বিন্যাস ও যৌক্তিক করা জরুরি। মোদ্দা কথা, বাংলাদেশের কর ব্যয় আরও স্বচ্ছতার মধ্যে নিয়ে আসা উচিত।
৫-১৩ মার্চ আইএমএফের ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের ‘কর ব্যয়’ ওপর ওয়ার্কশপে অংশ নেয়। তারা কর অব্যাহতি কমিয়ে আনতে ২০২৪ সাল অর্থ আইনের মাধ্যমে আয়কর আইনে কী পরিবর্তন আনতে হবে, ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তী ব্যবসায় সক্ষমতা ধরে রাখতে মধ্য মেয়াদে ২০২৫ সালে এবং দীর্ঘমেয়াদে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে আইনে কী ধরনের সংস্কার আনতে হবে তার সুপারিশ করেছে। আইএমএফের সুপারিশের মধ্যে আছে-সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন এবং বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতাসহ সব ধরনের ভাতা করের আওতায় আনা, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের অব্যাহতি সুবিধা বাতিল (বর্তমানে মোট আয়ের এক-তৃতীয়াংশ অথবা সাড়ে ৪ লাখ টাকার মধ্যে যেটি কম সেই অঙ্কের করছাড় পায় করদাতারা), করমুক্ত আয়সীমা ও ন্যূনতম করহার বৃদ্ধি এবং শিল্প খাতে প্রদত্ত কর অব্যাহতি পুনর্মূল্যায়নের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
কোন খাতে কত কর ব্যয় : এনবিআরের তথ্যমতে, ক্ষুদ্রঋণ খাতে সবচেয়ে বেশি কর ব্যয় হয়, ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এরপরের অবস্থানে আয়ে যথাক্রমে বৈদেশিক আয় খাতে ১১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৮ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাইটেক পার্কে ৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা, তৈরি পোশাক/টেক্সটাইল মিল/এক্সেসরিজ শিল্পে ৩ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা, আইটি/সফটওয়্যার খাতে এক হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, শেয়ার মূলধনী মুনাফা ৯৬৫ কোটি টাকা এবং মৎস্য চাষ ও হাস-মুরগির খামারে ১৪৩ কোটি টাকা কর ব্যয় হয়।
প্রত্যক্ষ কর ব্যয় বলতে কর রেয়াত, ছাড়, প্রণোদনা, অব্যাহতি, হ্রাসকৃত হারে করারোপ এবং মোট করযোগ্য আয় পরিগণনা হতে আয় বাদ দেওয়াকে বোঝায়। এটি এক ধরনের ভর্তুকি। এই ভর্তুকি যদি কর হিসাবে আয়দায় হতো তা হলে মোট আদায়কৃত করের সঙ্গে এটি যুক্ত হতো এবং করের পরিমাণ বৃদ্ধি পেত। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রণোদনা, সামাজিক সাম্যাবস্থা ও শিল্প সহায়তার সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। চলতি বছরের বাজেটে প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের একটি ধারণা দেয় এনবিআর, যা অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয়।
এনবিআরের হিসাবে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ছাড়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে করপোরেট পর্যায়ে ৮৫ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা ও ব্যক্তিপর্যায়ে ৪০ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়। সামগ্রিকভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ব্যয় ছিল জিডিপির ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপির আকার বিবেচনায় প্রত্যক্ষ কর ব্যয় হবে এক লাখ ৭৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকা।
| আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত অনুযায়ী কর অব্যাহতি-প্রণোদনা কমিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই ধারাবাহিকতায় এবং বেসরকারি চাকরিজীবীদের সঙ্গে বৈষম্য কমিয়ে আনতে সরকারি চাকরিজীবীদের বাড়িভাড়া ও অন্য ভাতায় করারোপের চিন্তা করছে সংস্থাটি। এছাড়া শিল্প খাতে কর অবকাশ সুবিধার মেয়াদ নির্দিষ্ট করাসহ আয়কর আইন সংস্কারে একগুচ্ছ পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা আগামী বাজেটে অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। |
পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা ঋণের ছক | আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটে প্রাথমিকভাবে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর বড় অংশই নেওয়া হবে ব্যাংক খাত থেকে। যার অঙ্ক দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি। পাশাপাশি সোয়া লাখ কোটি টাকার ওপরে (১১৭০ কোটি মার্কিন ডলার) বিদেশি ঋণ নেওয়া হবে। বিপুল অঙ্কের এ ঋণের সুদ পরিশোধে গুনতে হচ্ছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা চলতি অর্থবছরে ধরা হয়েছে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা।
তবে এবারই প্রথম কোনো টাকা ধার নেওয়া হবে না সঞ্চয়পত্র থেকে। আইএমএফ-এর শর্ত পূরণ করতে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের লাগাম টানা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এই দাতা সংস্থা বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলারের যে ঋণ দিয়েছে, এর বিপরীতে সঞ্চয়পত্র থেকে ধার কমিয়ে আনার শর্ত জুড়ে দেয়। এখন সে পথেই হাঁটছে সরকার। দেশি ও বিদেশি উল্লিখিত ঋণের রূপরেখার ঘোষণা থাকছে আগামী বাজেটে। সম্প্রতি এর অনুমোদন দেওয়া হয় আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিয়ম হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
এর আগে নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আবুল হাসান মাহমুদ আলী ‘দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা’ করতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে সরকারের ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। বিশেষ করে ঋণ পরিশোধের চাপ প্রসঙ্গে ওই বৈঠকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, ‘রাশিয়া থেকে গৃহীত ঋণ এবং মেগা প্রকল্পের বৃহৎ ঋণ পরিশোধের জন্য নির্ধারিত থাকায় ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের অঙ্ক বৃদ্ধি পাবে। সেই অর্থবছরে ৫৩ কোটি ১০ লাখ ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে। এরপর ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৫১ কোটি ৯০ লাখ ডলার এবং ২০২৮-২৯ অর্থবছরে ৫০ কোটি ৭০ লাখ ডলার শোধ করার হিসাব করা হয়েছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলেও ২০৩৪ সালের পর ঋণ পরিশোধের চাপ কমে আসবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, একটু দেখা দরকার বিগত সময়ে নেওয়া ঋণগুলো কোথায় ব্যবহার হয়েছে। এতে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বর্তমানে না বাড়লেও ভবিষ্যতে বাড়বে কি না, সেটি দেখার বিষয়।
তিনি আরও বলেন, সার্বিকভাবে জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত যা আছে, সেটি খারাপ না। তবে শঙ্কিত না হওয়ার কারণ থাকলেও সতর্কতার সঙ্গে ঋণ নিতে হবে। যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে নমনীয় (স্বল্প সুদে) ঋণ নেওয়ার। বিদেশ থেকে বেসরকারি খাতে ঋণ নেওয়াকে আমি নিরুৎসাহিত করছি। কারণ, এসব ঋণ হঠাৎ আসে, আবার চলেও যায় হঠাৎ, এতে চাপ সৃষ্টি করে রিজার্ভের ওপর। এছাড়া তাদের ঋণের শর্ত ও সুদের হার বেশি হয়।
সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, সরকারের জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত প্রায় ২২ শতাংশ। বিশ্বের অনেক দেশে এ অনুপাতের হার ৭০ থেকে ১০০ শতাংশের বেশি আছে। তবে আমাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার বিষয় আছে। আগামী বছর ঋণ ও সুদ মিলে যা পরিশোধ করতে হবে, সেটি আমাদের রেমিট্যান্স ও রপ্তানির মোট আয়ের প্রায় ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশের সমান। এ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এখনো ঋণ গ্রহণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারকে সাবধানতা অবলম্বনের কথা যারা বলছেন, তারা ঠিকই বলছেন। অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেসব প্রকল্প নিলে পরিশোধের কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না, বিনিয়োগে সহায়তা করবে, সে প্রকল্প বাছাই করে ঋণ নিতে হবে। অন্যথায় যেখানে-সেখানে ঋণ নেওয়া ঠিক হবে না।
ঋণ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে তিনি আরও বলেন, বর্তমান মোট ঋণের ৬৩ শতাংশ অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া, বাকি ৩৩ শতাংশ বিদেশি ঋণ। আর ঋণের উৎসগুলোর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাপান থেকে নেওয়া। এসব সংস্থার ঋণগুলো নমনীয়। এছাড়া ৭ শতাংশ ঋণ চীন, ৬ শতাংশ রাশিয়া, এক শতাংশ ভারত এবং বাকি ঋণ অন্য দেশ থেকেও নেওয়া হচ্ছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, বিদেশি ঋণ নিয়ে এ অস্বস্তি মোকাবিলা করতে হলে এখনই ঋণপ্রবাহ কমিয়ে আনতে হবে। বিশেষ করে বাণিজ্যিক শর্তে ঋণ নেওয়া অর্থাৎ সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট কমাতে হবে। এছাড়া ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বাড়াতে হলে রাজস্ব আয়, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। তবে বাস্তবতা হলো রপ্তানি নির্ভরশীল হয়ে আছে একটি পণ্যের ওপর, যা অত্যন্ত ঝুঁকির বিষয়। আবার রেমিট্যান্স প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। অর্থ পাচারের কারণে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। তবে আমরা যদি দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারতাম, তাহলে এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অনেক বাড়ত।
জানা যায়, আগামী দুই অর্থবছরে সরকারের বিদেশি ঋণের অঙ্ক আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে বাড়বে পরিশোধের চাপও। একই বছরে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৯০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, নতুন অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের ২০ শতাংশই ব্যয় হবে ঋণ পরিশোধে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত হারে আদায় না বাড়লে বড় ধরনের এ ব্যয় অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আগামী বাজেটের আকার জিডিপির ১৪ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে রাখা হচ্ছে। কিন্তু অর্থনীতির পরিধি অনুযায়ী আকার আরও বড় হওয়া দরকার। সেটি করতে গেলে ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। আর ওই ঘাটতি মেটাতে আরও ঋণ করতে হবে।
জানা যায়, ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে এবং এর মধ্যেই চলতি বছর থেকেই বড় বড় কিছু প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করাও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানি ও রেমিট্যান্সও কাঙ্ক্ষিত আকারে বাড়ানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের সরবরাহ না বাড়ানো গেলে বিদেশি ঋণকে ঘিরে সংকট জোরালো হতে পারে-এমন আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, যখন মেগা প্রকল্পগুলোর মূল অর্থ পরিশোধ শুরু হবে, তখন পরিস্থিতি কেমন হয়, তা নিয়েই উদ্বিগ্ন অনেকে।
সরকারের হিসাবে বর্তমান ঋণের অনুপাত জিডিপির ৩৭ দশমিক ৩৪ শতাংশের সমান। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবলের (আইএমএফ) মানদণ্ডে একটি দেশ তার মোট জিডিপির ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ গ্রহণের মাত্রাকে ঝুঁকিমুক্ত হিসাবে গণ্য করা হয়। ফলে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, ঋণের মাত্রা এখনো ঝুঁকিমুক্ত আছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিডিপির অনুপাত হারে ঋণ কম হলেও রাজস্ব আয়, রপ্তানি, রেমিট্যান্স বাড়ানো এবং ডলারের মূল্য স্থিতিশীল আনতে না পারলে ঝুঁকির মধ্যে পড়ার শঙ্কা থাকবে। এসব খাতে আয় বৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে বিদেশি ঋণের প্রবাহ কমিয়ে না আনতে পারলে বিশাল চাপ তৈরি করতে পারে আগামী কয়েক বছরে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিদেশি ঋণের স্থিতির অঙ্ক ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫৬২ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে ঋণ আছে ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
| আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটে প্রাথমিকভাবে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর বড় অংশই নেওয়া হবে ব্যাংক খাত থেকে। যার অঙ্ক দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি। পাশাপাশি সোয়া লাখ কোটি টাকার ওপরে (১১৭০ কোটি মার্কিন ডলার) বিদেশি ঋণ নেওয়া হবে। বিপুল অঙ্কের এ ঋণের সুদ পরিশোধে গুনতে হচ্ছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা চলতি অর্থবছরে ধরা হয়েছে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। |
বাস্তবায়নের হার ছয় মাসে ২৬ শতাংশ | বৈশ্বিক কারণ, অর্থ ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধন ও ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে চলতি বাজেটে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুরুতেই মন্ত্রণালয়গুলোকে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে নানা ধরনের বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। এর প্রভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মোট বাজেটের মাত্র ২৬ শতাংশ ব্যয় হয়। টাকার অঙ্কে তা ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৫ কোটি। একই সময়ে অর্থ সংগ্রহ অর্থাৎ রাজস্ব আহরণও খুব বেশি হয়নি। আয় কম হওয়ায় বেশি ব্যয়ও সম্ভব হচ্ছে না।
অপরদিকে বিদেশি ঋণও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পাওয়া গেছে মাত্র ১০ শতাংশ। ঋণ সংগ্রহে বেশি সাড়া মিলছে না। যে কারণে সরকারের আয় ও ব্যয়ে এক ধরনের ধীরগতি বিরাজ করছে। অর্থ বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
কৃচ্ছ সাধনের কারণে চলতি বাজেটে মোট ব্যয়ের মধ্যে ১৫ শতাংশ কম হবে এমন আভাস আগেই দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ আভাস দিয়েছেন তিনি।
অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার ব্যয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছে। চলতি হিসাবের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এতে আমদানির প্রবৃদ্ধি বিগত অর্থবছরের তুলনায় কমেছে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বর্তমান ডলার সংকটের কারণে বিলাসী দ্রব্য আমদানি পরিহার এবং মিতব্যয়ের কারণে এ খাতে খরচ হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে গত তিন বাজেটের প্রথম ৬ মাসের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, টাকা ব্যয়ের হার সবচেয়ে কম চলতি বাজেটে। একই সময়ে গত বাজেট (২০২২-২৩) বাস্তবায়ন হার ছিল ২৭ শতাংশ এবং রাজস্ব আহরণ ৩৮ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর (২০২১-২২) বাস্তবায়ন হার ২৮ শতাংশ এবং রাজস্ব আদায় ৪২ শতাংশ। আর ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ৬ মাসে বাস্তবায়ন হার ২৭ শতাংশ এবং রাজস্ব আদায় ৩৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, এটি দীর্ঘদিনের পুরোনো সমস্যা। প্রথমদিকে টাকা ব্যয় কম হয়। শেষদিকে টাকা খরচের হিড়িক পড়ে। আর তখনই কাজের এবং অর্থ ব্যয়ের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। আমি মনে করে অর্থ ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এর জন্য জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার। না হলে একই সমস্যা প্রতিবছরই ঘটবে। কেন তারা প্রথম ৬ মাসে অর্থ ব্যয় করতে পারে না, শেষদিকে কেন ব্যয় বাড়িয়ে দেয় তার জবাব নিশ্চিত করতে হবে।
জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে জানান, কৃচ্ছ সাধনের কারণে কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় কমানো হয়েছে। এর প্রভাব এসে পড়ছে বাজেটে। তবে শেষ ৬ মাসে এ ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। এটি গতানুগতিক ধারা। তিনি আরও বলেন, গত ৫০ বছরে রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় অর্থনীতি পলিসির কারণে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে সেটি হচ্ছে দরিদ্র কমলেও ধনী ও দারিদ্র্যের বৈষম্য বেড়েছে। এটি একটি অস্বস্তিদায়ক।
সূত্রমতে, এ বছর রাজস্ব আহরণ নিয়ে খুব চাপের মধ্যে আছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বিগত তিন অর্থবছরের তুলনায় মোট বাজেটের অনুপাতে আদায় হার কম। এনবিআর কর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্রথম ৬ মাসে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা আদায় হয়। এটি মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ৩৬ শতাংশ।
এনবিআরবহির্ভূত কর বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬ মাসে ৩ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা মাত্র আদায় করতে পেরেছে এনবিআর। আদায় কম প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের পর্যালোচনায় বলা হয়, এমনিতে ডলার সংকটে এলসি খোলার জটিলতা পণ্য আমদানি খাতকে সংকুচিত করেছে।
অপরদিকে বিগত কয়েক মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলছে রপ্তানি কার্যক্রমের ওপর। অবরোধসহ নানা কর্মসূচির কারণে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় অনেকটা স্থবিরতা নেমে আসে। ফলে এসব খাত থেকে কমেছে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আদায়। যে কারণে রাজস্ব আদায় ভালো থাকলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা কমে আসে।
এদিকে সরকার পরিচালনা খাতে অর্থবছরের ৬ মাসে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। এটি মোট ব্যয়ের ৩৩ শতাংশ। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতা খাতে বেশি ব্যয় হয়েছে। অপরদিকে মূলধনী খাতে ব্যয় কম করা হয়। এছাড়া উন্নয়ন খাতে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা থাকলেও প্রথম ৬ মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪৩ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা।
বাজেটের টাকা কম ব্যয় হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। ভোট ঘিরে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিরতাও। যে কারণে মন্ত্রণালয়গুলো টাকা খরচ কম করেছে।
এছাড়া অর্থবছরের শুরুতেই কৃচ্ছ সাধনের কারণ হিসাবে জ্বালানি খরচ, বিদেশ ভ্রমণ, জমি অধিগ্রহণ, সরকারি ভবন নির্মাণ, গাড়ি কেনাসহ বিভিন্ন ব্যয় খাতের ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। এসব কারণে বিগত ৩ অর্থবছরের তুলনায় এবার বাজেট বাস্তবায়নের হার কম।
| বৈশ্বিক কারণ, অর্থ ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধন ও ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে চলতি বাজেটে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুরুতেই মন্ত্রণালয়গুলোকে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে নানা ধরনের বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। এর প্রভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মোট বাজেটের মাত্র ২৬ শতাংশ ব্যয় হয়। টাকার অঙ্কে তা ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৫ কোটি। একই সময়ে অর্থ সংগ্রহ অর্থাৎ রাজস্ব আহরণও খুব বেশি হয়নি। আয় কম হওয়ায় বেশি ব্যয়ও সম্ভব হচ্ছে না। |
আগামী বাজেট উৎসাহব্যঞ্জক হবে: অর্থমন্ত্রী | আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটে বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। আগামী বাজেট হবে বেসরকারি খাতের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, বেসরকারি খাত অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এ খাতের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সরকার বরাবরই সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে। আগামী বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রেও বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা : বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল ২৪ যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বেসরকরি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে কিছু কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নে সময় প্রয়োজন। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আমদানির বিকল্প শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে এ বছর বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। আশা করি, এ পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের প্রসারসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে।
ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ও সংসদ-সদস্য এ কে আজাদ, জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ, এনবিআর-এর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
সংসদ-সদস্য ও সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতায়ন করতে হবে। এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে ১২০০ কোটি টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেল, এটা নিয়ে অভিযোগের পরও বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। ব্যাংক খাতে এখন ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। বিভিন্ন ড্রেসিংয়ের মাধ্যমে অনেক খেলাপি ঋণ নিয়মিত দেখানোর প্রবণতা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে এখন ১৪ শতাংশ গুনতে হচ্ছে। বাড়তি এ সুদের কারণে অনেকে খেলাপি হয়ে পড়বে। আবার ডলারের সরকারি দর ১১০ টাকা বলা হলেও আমদানির সময় কিনতে হচ্ছে ১২৪ টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান বলেন, বহির্বিশ্বের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত অনেক কারণে আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে মূলস্ফীতি ও খেলাপিতে এই প্রভাব বেশি পড়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে স্থানীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। তাই উদ্যোক্তাদের বিকাশে সর্বাÍক নীতিসহায়তা অব্যাহত থাকবে।
| আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটে বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। আগামী বাজেট হবে বেসরকারি খাতের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব কথা বলেছেন। |
বাজেট বাস্তবায়ন তিন বছরের তুলনায় কম | অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় চলতি বাজেট বাস্তবায়নের শুরুতেই টাকা খরচের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ওপর কয়েকটি বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। তা শেষ না হতেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। ফলে উভয় ধাক্কার নেতিবাচক প্রভাবে চলতি বাজেট বাস্তবায়ন (প্রথম প্রান্তিকে) হার গত তিন বাজেটের একই সময়ের তুলনায় কমে গেছে। বাজেট বাস্তবায়ন হার নিয়ে অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
চলতি এবং বিগত কয়েকটি বাজেটের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মাত্র ৮৩ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এটি মোট বাজেটের মাত্র ১০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের অর্থবছর (২০২২-২৩) প্রথম প্রান্তিকে বাজেটের ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হয়। ওই হিসাবে চলতি বাজেটের বাস্তবায়ন হার গেল বাজেটের তুলনায় কম হয়েছে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। এছাড়া ২০২১-২২ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের একই সময়ে অর্থ ব্যয়ের হার ছিল ১১ শতাংশ।
জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে জানান. কৃচ্ছ সাধন করে কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়েছে ইতোমধ্যে। এর প্রভাব এসে পড়তে পারে। আরেকটি ইস্যু হতে পারে নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে উন্নয়ন খাতেও কম ব্যয় হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যে ব্যয় কমানো হচ্ছে এবং এর প্রভাবে বাজেটের ব্যয় কমছে, সেটি নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে মুদ্রানীতি দিয়ে ব্যয় কমিয়ে আনা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশেও কিছুটা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ আছে। তা থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব আদায়ের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে। প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আয়, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যয় এবং ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহসহ মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অবস্থান সন্তোষজনক পর্যায়ে আছে।
সেখানে আরও বলা হয়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যপণ্য এবং জ্বালানির জোগানে বাধাগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও নিম্ন প্রবৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি এখনো নানা ধরনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করছে। সব ধরনের বিরূপ প্রভাব সত্ত্বেও গত অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ অর্জন হয়। যেখানে ২০২৩ সালে বৈশ্বিক গড় প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ এবং উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ শতাংশ।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের শুরুতে দুটি চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাবে দেশের অর্থনীতিতে সংকট তৈরি, দ্বিতীয়-দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি। শেষ পর্যন্ত দুটি শঙ্কাই বাস্তবে রূপ নিয়েছে বলে মনে করছেন অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকার ব্যয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছে। চলতি হিসাবের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে আমদানির ক্ষেত্রেও প্রবৃদ্ধি কমেছে বিগত অর্থবছরের তুলনায় ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বর্তমান বিলাসদ্রব্য পণ্য আমদানি পরিহার এবং মিত্যব্যয়ের কারণে এ খাতে খরচ হ্রাস পেয়েছে।
বাজেটের অর্থের একটি বড় অংশ ব্যয় হয় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। কিন্তু এ বছর উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ে তেমন কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব এক্ষেত্রে পড়েছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয়, প্রথম প্রান্তিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বাস্তবায়ন হার ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
সর্বশেষ তথ্য মতে, এডিপির বাস্তবায়ন হার জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে ৬১ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ আইএমইডি এ তথ্য জানায়, গত এক দশকের তুলনায় এ বাস্তবায়ন হার সবচেয়ে কম।
সংশ্লিষ্টদের মতে, গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ ২৩ হাজার কোটি টাকা কমেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধিও কমছে। তবে অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের হিসাব তুলে ধরে বলা হয়, এই সময়ে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। কিন্তু গত অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কম ছিল। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল ও অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। রাজপথে জালাও-পোড়াও ছিল চোখে পড়ার মতো। বাস, ট্রাক ও রেলে ঘটছে অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা। ফলে ব্যাহত হয় স্বাভাবিক আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম। ব্যাহত হয় পাইকারি ও খুচরা ব্যবসাসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও। এমনিতে ডলার সংকটের এলসি খোলার জটিলতায় পণ্য আমদানি খাতকে সংকুচিত করেছে। অপরদিকে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়ায় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলছে রপ্তানি কার্যক্রমে ওপর। অবরোধসহ নানা কর্মসূচির কারণে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় অনেকটা স্থবিরতা নেমে আসে। ফলে এসব খাত থেকে কমেছে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আদায়। যে কারণে প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আদায় ভালো থাকলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা কমে আসে।
রপ্তানি আয় সম্পর্কে অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ধনাত্মক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। যা জানুয়ারি মাসে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশে।
| অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় চলতি বাজেট বাস্তবায়নের শুরুতেই টাকা খরচের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ওপর কয়েকটি বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। তা শেষ না হতেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। ফলে উভয় ধাক্কার নেতিবাচক প্রভাবে চলতি বাজেট বাস্তবায়ন (প্রথম প্রান্তিকে) হার গত তিন বাজেটের একই সময়ের তুলনায় কমে গেছে। বাজেট বাস্তবায়ন হার নিয়ে অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। |
নির্বাচনের আগেই শুরু হচ্ছে চলতি বাজেট সংশোধন | বড় ধরনের ব্যয় কাটছাঁটের লক্ষ্য নিয়ে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে চলতি বাজেট সংশোধনের কাজ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কমপক্ষে ৫২ হাজার কোটি টাকা মূল বাজেট থেকে কমানো হবে।
পাশাপাশি জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে আনা হবে। কিন্তু অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পরিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
একইভাবে বাজেটে মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতির হারও সাড়ে ৭ শতাংশের ওপর প্রাক্কলনের প্রস্তাব করা হতে পারে।
এ মুহূর্তে প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্ব কমিয়ে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেওয়া হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়নযোগ্য হবে না।
সংশোধিত কার্যক্রমের হিসাবে প্রথমে রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের বাজেট নিয়ে বৈঠক শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে রেল মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। এ বৈঠক শেষ হবে ২৪ ডিসেম্বরে।
সংশোধিত বাজেটের সম্ভাব্য আকার: মোট ব্যয় ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি থেকে কমিয়ে ৭ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। মোট রাজস্ব আয় ৫ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। রাজস্ব আয় কমানো হয়েছে ৩৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
এক্ষেত্রে বাজেটে নতুন ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এডিপির আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি থেকে কমে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এডিপি কাটছাঁট করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেটে গাড়ি কেনা, ভূমি অধিগ্রহণ, ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রাখা হচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকবে।
সূত্র আরও জানায়, চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির দিকে নজর কম থাকবে। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। নানা প্রেক্ষাপটে এটি অর্জন সম্ভব হয়নি। ফলে প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে সমন্বয় রেখেই প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনা হচ্ছে। বৈঠকে রেমিট্যান্স কমে যাওয়াকে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব হিসাবে দেখা হয়েছে। এছাড়া সরকারের ঋণের সুদহার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কারণ, সুদ পরিশোধে সরকারের অনেক ব্যয় হচ্ছে।
| বড় ধরনের ব্যয় কাটছাঁটের লক্ষ্য নিয়ে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে চলতি বাজেট সংশোধনের কাজ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কমপক্ষে ৫২ হাজার কোটি টাকা মূল বাজেট থেকে কমানো হবে। |
আমদানির অনুমতির পর চালের দাম বৃদ্ধি | অভ্যন্তরীণ বাজারে সব ধরনের চাল সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও গত ২১ মার্চ হঠাৎ করে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অনুমোদনের চার দিন পর স্থানীয় বাজারে হঠাৎ সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের মূল্য বেশি হওয়া সত্ত্বেও কেন আমদানি এ প্রশ্নের কোনো জবাবে দিতে পারছে না খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বিত্তশালীরা খান এমন সরু চালের অভাব রয়েছে। তাছাড়া মোটা চালও অনেক ক্ষেত্রে কম দামে বিশ্ববাজারে পাওয়া যেতে পারে। ব্যবসায়ীরা জানেন, কোথায় কোন চাল কম দামে পাওয়া যাবে। আমরা মুক্তবাজারে আছি। আমদানি আর বন্ধ রাখতে চাই না।
অপরদিকে আমদানির অনুমোদনের পর মাঝারি মানের চাল দাম কেজিতে বেড়েছে ৪ টাকা। আমদানির অনুমোদনের সঙ্গে দাম বাড়ার বিষয়টি কাকতালীয় হলেও অনেকে বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। তারা বলছেন, আমদানির অনুমোদন দেওয়ার মাধ্যমে সরকার স্বীকার করে নিয়েছে দেশে চালের সংকট রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা থাকতে পারে। চালের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যেখানে সরকারের গুরুদায়িত্ব, সেখানে উল্টো সরকার নিজেই ব্যবসায়ীদের চালের মূল্য বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার যুগান্তরকে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন চালের দাম ৬৭০ থেকে ৬৮০ ডলার। পক্ষান্তরে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশের বাজারে চালের মূল্য অনেক কম। খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির মিটিংয়ে যে পরিমাণ চাল অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহের সিদ্ধান্ত রয়েছে, প্রয়োজনে পরিমাণ বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করবে সরকার। কিন্তু সে কথা রাখতে পারেননি খাদ্যমন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত বিদেশ থেকে আমদানির অনুমতি দিতে হয়েছে। কেন দিতে হলো তার কোনো ব্যাখ্যাও নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, চালের আমদানির ওপর আর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখতে চাই না। আমরা আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার চিন্তার জায়গা থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছি। দ্বিতীয়ত, বিত্তশালীরা খান এমন সরু চালের সংকট রয়েছে। তা জোগান দিতে আমদানির প্রয়োজন রয়েছে। তৃতীয়ত, মোটা চাল আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে পাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা আমদানির অনুমোদন দিয়েছি। ব্যবসায়ীদের পোষালে আনবেন আর না পোষালে আনবেন না।
চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া চার দিনের মাথায় হঠাৎ করে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোটা চাল হিসাবে খ্যাত স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হলেও এখন ৫২ থেকে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চাল পাইজাম ও লতা আগে বিক্রি হতো প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা। সরুচাল হিসাবে খ্যাত নাজির ও মিনিকেট আগে বিক্রি হতো ৬২ থেকে ৭৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৬ টাকা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এখন কৃষকের ঘরে ধান নেই। ব্যবসায়ীদের কাছেও কোনো ধান নেই। কয়েকদিনের মধ্যে বোরো ধান আহরণ শুরু হবে। ব্যবসায়ীদের কাছে আছে চাল। তারা এখন চালের দাম বাড়াবেই। আবার যখন বাজারে নতুন বোরো ধান ক্রয় ও বিক্রয় শুরু তখন চালের দাম কমে যাবে।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিলের ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে নতুন করে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। বর্তমানে সরকারি গুদামে প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন ধান, চাল ও গম রয়েছে। অর্থাৎ সরকারি গুদামেও খাদ্যের মজুত পর্যাপ্ত। ওএমএস, ফ্রেয়ারপ্রাইস, ভিজিডি, ভিজিএফ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডও চালু রয়েছে। তারপরও চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না-এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
| অভ্যন্তরীণ বাজারে সব ধরনের চাল সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও গত ২১ মার্চ হঠাৎ করে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অনুমোদনের চার দিন পর স্থানীয় বাজারে হঠাৎ সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের মূল্য বেশি হওয়া সত্ত্বেও কেন আমদানি এ প্রশ্নের কোনো জবাবে দিতে পারছে না খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বিত্তশালীরা খান এমন সরু চালের অভাব রয়েছে। তাছাড়া মোটা চালও অনেক ক্ষেত্রে কম দামে বিশ্ববাজারে পাওয়া যেতে পারে। ব্যবসায়ীরা জানেন, কোথায় কোন চাল কম দামে পাওয়া যাবে। আমরা মুক্তবাজারে আছি। আমদানি আর বন্ধ রাখতে চাই না। |
কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণের প্রবণতা বেড়েছে | সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত হওয়ার খবরে দুর্বল ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে অনেকে দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সবল ব্যাংকে রাখছেন। ফলে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার প্রয়োজন বেড়ে গেছে। এজন্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয়সহ বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ধারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ ৩ দিনে গড়ে ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। বেশিরভাগ ব্যাংক এ ধারের টাকায় গ্রাহক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণ করছে।
সূত্র জানায়, রোববার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট থেকে ধার করেছে ৩৮০০ কোটি টাকা। এতে সর্বোচ্চ সুদ হার ছিল সাড়ে ৯ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ছিল ৮ শতাংশ। এছাড়া স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধার করেছে আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এগুলোর সর্বোচ্চ সুদ ছিল ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহতায়তার আওতায় ২১ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। একই দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কলমানি ও স্বল্প এবং মধ্যমেয়াদি ধার করেছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। দুই খাত মিলে একদিনে ধার করেছে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা।
বুধবার ব্যাংকগুলো বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ১৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। একদিনে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি এবং কলমানি মিলে ধারের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। দুই খাত মিলে ওই দিন ১৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা ধার করেছে।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কলমানি, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ধার করেছে ৩ হাজার কোটি টাকা। দুই খাত মিলে ওই দিনে ধারের পরিমাণ ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ফলে ওই ৩ দিনে ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোতে এখন তারল্যের চাপ বেশি। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার খবরে দুর্বল ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা টাকা তুলে নিচ্ছে। এই টাকার জোগান দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আমানতকারীদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে টাকার জোগান নিশ্চিত করতে হবে। কোনো আমানতকারী যেন ব্যাংক থেকে টাকা না পেয়ে ফেরত না যান। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চাহিদা অনুযায়ী নগদ টাকার জোগান দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলোকে যে নগদ টাকা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো তাদেরই টাকা। ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ বাবদ যেসব টাকা রয়েছে সেগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে এর বিপরীতে নগদ টাকা দেওয়া হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব টাকার উৎস থেকে কোনো ব্যাংককে টাকা দেওয়া হয়নি। আর এটিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাভাবিক ব্যাংকিং প্রক্রিয়া হিসাবেই মনে করে।
ব্যাংকগুলো যে ধার করছে তার বড় একটি অংশই একদিনের জন্য। ফলে একদিন পর ওই ধারের অর্থ আবার ফেরত দিতে হচ্ছে। যে কারণে পরের দিন আবার ধার করতে হচ্ছে। এ কারণে প্রতিদিন ধারের অঙ্ক বেশি হচ্ছে।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলেছেন, ব্যাংকগুলো গ্রাহকের চাহিদার ভিত্তিতে নিজস্ব তহবিলের একটি অংশ নগদ আকারে নিজেদের কাছে জমা রাখার কথা। কিন্তু তারল্য সংকটের কারণে তারা সেটি পারছে না। এছাড়া আস্থাহীনতার কারণে কিছু গ্রাহক ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নিচ্ছে। এ কারণে সংকট বাড়ছে।
| সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত হওয়ার খবরে দুর্বল ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে অনেকে দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সবল ব্যাংকে রাখছেন। ফলে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার প্রয়োজন বেড়ে গেছে। এজন্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয়সহ বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ধারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ ৩ দিনে গড়ে ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। বেশিরভাগ ব্যাংক এ ধারের টাকায় গ্রাহক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণ করছে। |
রপ্তানি আয়ে ৭শ কোটি মার্কিন ডলার গরমিল | রপ্তানি আয়ে গরমিলের অঙ্ক অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। গেল অর্থবছরে এটা ৮৪৮ কোটি ডলারের (৮.৪৮ বিলিয়ন) সীমা ছুঁয়েছে। শুধু তাই নয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গরমিলের ব্যবধান স্পর্শ করেছে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারে। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থবছর (২০২৩-২৪) শেষে এটি অতীতের সব রের্কড অতিক্রম করবে। বিদেশে পণ্যসামগ্রীর রপ্তানির বিপরীতে আয়ের মোট হিসাব প্রতি অর্থবছর শেষে ইপিবি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তৈরি করে। দুটি সংস্থার হিসাবে পর্যায়ক্রমে অস্বাভাবিক গরমিল বিষয়টি ধরা পড়ে। পর্যায়ক্রমে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।
বড় ধরনের গরমিল কি রপ্তানির অন্তরালে বিদেশে অর্থ পাচারের ইঙ্গিত বহন করছে কিনা এ নিয়ে অনেকটা উদ্বেগ রয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সম্প্রতি এ বিষয়ে তদন্ত করতে অর্থ বিভাগের নেতৃত্বে তিনটি সংস্থাকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি ৩১ মার্চের মধ্যে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেবে অর্থমন্ত্রীর কাছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ইপিবির গত ৭ অর্থবছরের (২০১৭-২০১৮ থেকে ২০২৩-২৪) রপ্তানি আয়ের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতি অর্থবছরই ইপিবি রপ্তানি আয় হিসাবে যা গ্রহণ করছে বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে কিছুটা কম। গত কয়েক বছর এভাবে চলে আসছে।
কিন্তু সম্প্রতি দুটি সংস্থার হিসাবের গরমিল বড় ব্যবধান হওয়ায় সন্দেহ দানা বাঁধছে। রপ্তানি আয়ে অস্বাভাবিক গরমিল নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনাসংক্রান্ত বৈঠকে তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইপিবির তথ্যমতে ৫৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি হলেও কাস্টমসের তথ্যমতে ৪৯ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে ৪৮ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এ পর্যন্ত ইপিবির তথ্যমতে ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্যসামগ্রী রপ্তানি হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০ বিলিয়ন ডলার। তিনি রপ্তানি আয়ের তথ্যের এ গরমিল নিষ্পত্তি প্রয়োজন বলে ওই বৈঠকে মত ব্যক্ত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ যুগান্তরকে জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত কমিটি হয়েছে। ওই কমিটি এ বিষয়ে কাজ করছে। তবে এর আগে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা সংক্রান্ত বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বাণিজ্য সচিব। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্যের যে গরমিল রয়েছে সে বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে খতিয়ে দেখা যেতে পারে।’
ইপিবি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যসামগ্রী রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ৪ হাজার ৮শ কোটি ডলার। আয়ের গরমিল ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানের মধ্যে ব্যবধান আগে কিছুটা কম ছিল। যেমন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ আয়ের গরমিলের অঙ্ক ছিল ৪১৪ কোটি মার্কিন ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫১৯ কোটি ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৩৫ কোটি ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৪৭৮ কোটি ডলার। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে এই ব্যবধান অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ৮৪৮ কোটি মার্কিন ডলারে উঠে। ওই বছর ইপিবির হিসাবে বিদেশে পণ্যসামগ্রী রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলার। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ৪ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার।
আরও দেখা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গরমিলের অঙ্ক ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থবছর শেষে যে অঙ্ক দাঁড়াবে তা বিগত সব রেকর্ড অতিক্রম করবে। বিগত কয়েক অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এত বেশি রপ্তানি আয়ে গরমিল পাওয়া যায়নি। অবশ্য এই ৬ মাস হচ্ছে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে রপ্তানি জাহাজিকরণের তথ্য ও বিদেশ থেকে পাওয়া অর্থের মধ্যে বড় অঙ্কের ব্যবধান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতবড় ব্যবধান কোনো স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। রপ্তানি আয়ে দুটি সংস্থার হিসাবে বড় অঙ্কের ব্যবধানের বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন সাবেক বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ। তিনি যুগান্তরকে জানান, ব্যংকের হিসাব সমন্বয়ের কারণে রপ্তানি আয়ের তথ্যের গরমিল সামান্য হতে পারে। এটা প্রতিবছরই হয়। প্রথমে দেখতে হবে দুটি সংস্থার হিসাবে গরমিলের অঙ্ক কত। সেটি খুবই কম হলে সমন্বয়ের মাধ্যমে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পার্থক্যের অঙ্ক বেশি হলে সেখানে একটি সন্দেহ সৃষ্টি হয়। কারণ রপ্তানি যে পরিমাণ হয়েছে অর্থ সেভাবে না আসলে আন্ডার বা অভার ইনভেসিং হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। গরমিল বড় হলে সেখানে কারসাজি হচ্ছে কিনা সেটিও দেখা দরকার।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই গরমিলের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। অর্থ বিভাগের সমন্বয়ে ১৯ মার্চ ইপিবি, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, গঠিত কমিটি শিগগিরই একত্রে কাজ শুরু করবে। এ কমিটি দেখবে ইপিবি কোনো উৎস থেকে কিভাবে রপ্তানি আয়ের তথ্য নিচ্ছে এবং একই ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উৎস যাচাই করা হবে। এরপর গরমিলের প্রকৃত কারণ বের করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু কাঁচামাল কিনতে হয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ইপিজেড থেকে। এটি অভ্যন্তরীণ কেনাকাটা হলে রপ্তানি আয় হিসাবে ইপিজিডের হিসাবে দেখানো হয় । একই পণ্য পুরোপুরি তৈরি হয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। একই পণ্য আয় একবার ইপিজেডে আরেকবার সংশ্লিষ্ট পোশাক শিল্পের তালিকায় রপ্তানি হিসাবে যোগ হচ্ছে। এছাড়া রপ্তানির শিপমেন্ট এবং রপ্তানি আয় ডলার হিসাবে হাতে আসছে এরমধ্যে পার্থক্য হতে পারে। কিন্তু প্রতিবছরই রপ্তানি আয়ের গরমিল যেভাবে বাড়ছে এতে মনে হয়, হয়তো রপ্তানিকারকরা ডলার আনছেন না বা আনলেও সেটি ভিন্নভাবে। অর্থ পাচারের কারণেই কি পার্থক্য বেশি হচ্ছে তাও খতিয়ে দেখা দরকার।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির দেওয়া তথ্যের মধ্যে সব সময়ই কিছু পার্থক্য থাকে। কিন্তু বড় অঙ্কের পার্থক্য মানি লন্ডারিং কিনা এটি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ১২০ দিনের মধ্যে রপ্তানি আয় না এলে রপ্তানিকারকের নাম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ড্যাশবোর্ডে প্রদর্শিত হয়। তারপর, রপ্তানিকারক ব্যাংক থেকে কোনো সেবা পান না। ব্যাংকিং সেবা অব্যাহত রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে মেয়াদ বাড়াতে হবে এবং রপ্তানিকারক যদি মনে করেন তিনি আয় পাবেন না, তাহলে অনুমোদনের আগে এটি বিশ্লেষণকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিসকাউন্ট কমিটিকে অবহিত করতে হয়।
| রপ্তানি আয়ে গরমিলের অঙ্ক অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। গেল অর্থবছরে এটা ৮৪৮ কোটি ডলারের (৮.৪৮ বিলিয়ন) সীমা ছুঁয়েছে। শুধু তাই নয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গরমিলের ব্যবধান স্পর্শ করেছে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারে। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থবছর (২০২৩-২৪) শেষে এটি অতীতের সব রের্কড অতিক্রম করবে। বিদেশে পণ্যসামগ্রীর রপ্তানির বিপরীতে আয়ের মোট হিসাব প্রতি অর্থবছর শেষে ইপিবি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তৈরি করে। দুটি সংস্থার হিসাবে পর্যায়ক্রমে অস্বাভাবিক গরমিল বিষয়টি ধরা পড়ে। পর্যায়ক্রমে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। |
বৈশ্বিক কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পোশাক রপ্তানি: বাংলাদেশ ব্যাংক | বৈশ্বিক কারণে চলতি অর্থবছরের আগামী মাসগুলোয় দেশের রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা বলেছে, বৈশ্বিকভাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদের হারের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিম্নমুখী। এছাড়াও ভূ-অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে এ খাতে অনিশ্চয়তার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তৈরি পোশাক খাতের ওপর প্রকাশিত ত্রৈমাসিক এক প্রতিবেদনে এসব আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করে বলা হয়, এ অনিশ্চয়তা এবং চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এগিয়ে যাবে। কারণ, পোশাক রপ্তানির আদেশ বাড়তে শুরু করেছে। রপ্তানি শিল্পের কাঁচামালের আমদানি আগে যেভাবে কমছিল, সেই গতি এখন কমেছে। আগে যেখানে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আসছিল, এখন কমছে তুলনামূলক কম হারে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে ২০ শতাংশ। তবে ওই সময়ে এলসি খোলা ৮ শতাংশ বেড়েছে। আগে এলসি খোলার হারও কম ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা এবং প্রধান বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো এখনো করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তবে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর মধ্যে পোশাকের বৈচিত্র্য এনে, রপ্তানি আদেশ ও পণ্য জাহাজীকরণের সময় বা লিড টাইম কমিয়ে দক্ষতা বাড়িয়ে এ খাতকে এগিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে গবেষণা করে পণ্যের মান আরও উন্নত করতে হবে। নতুন বাজারে প্রবেশ করতে হবে। দক্ষ কর্মীবাহিনী ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে হবে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে এ খাতকে এগিয়ে যেতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও নিটওয়্যার রপ্তানি কমেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে কাঁচামালের দাম বাড়ার সঙ্গে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে ছোট ও দুর্বল কিছু কারখানা আপাতত কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া নির্দিষ্ট খরচ মেটানো এবং ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতার কারণে অনেক কারখানা বাধ্যতামূলকভাবে কম দামে পোশাক রপ্তানির প্রস্তাব দিচ্ছে। এতে গত অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় নিটওয়্যার রপ্তানিতে সামান্য কমেছে। তবে গত অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারির তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি দশমিক ২৬ শতাংশ কমেছে। কিন্তু নিটওয়্যার রপ্তানি ৯ শতাংশ বেড়েছে।
| বৈশ্বিক কারণে চলতি অর্থবছরের আগামী মাসগুলোয় দেশের রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা বলেছে, বৈশ্বিকভাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদের হারের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিম্নমুখী। এছাড়াও ভূ-অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে এ খাতে অনিশ্চয়তার আশঙ্কা করা হচ্ছে। |
মজুত পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ায় কমছে দাম | ভারত থেকে আমদানির খবরে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী তাদের অবৈধভাবে মজুত করা পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে। এতে পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়ার পাইকারি মোকামে পেঁয়াজের দাম মনপ্রতি ১৪শ’ টাকা কমেছে। ফলে প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তিন দিন আগে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও রাজধানীর খুচরা বাজারে এখন ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি কিনতে ক্রেতার স্বস্তি মিলছে।
এদিকে নভেম্বরে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। তবে দেশি জাত বাজারে আসায় দাম কিছুটা কমে ফেব্রুয়ারির শুরুতে ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে রোজায় বাড়তি মুনাফা করতে মার্চে ফের ৯০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়। শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আগামী সপ্তাহে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে আসবে। মূলত এই কথার পরই বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে থাকে। বাড়তি মুনাফার আশায় যারা এতদিন অবৈধভাবে মজুত করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে তারা মূল্য কমিয়ে বাজারে ছাড়তে থাকে। পাশাপাশি কৃষক পর্যায় থেকেও পণ্যটি বাজারে আসায় কমতে থাকে দাম।
সোমবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। যা তিন দিন আগেও ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে গত বছর ঠিক একই সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি খুচরা বাজারে ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ক্রেতারা বলছেন, ভারত থেকে আমদানির খবর শুনেই বাজারে পেঁয়াজের দাম কমানো হয়েছে। এসব বিক্রেতাদের কারসাজি। এতদিন আমাদের কাছে বাড়তি দামে বিক্রি করে। কিন্তু তাদের কোনো বিচার বা শাস্তি হয়নি। তবে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম কমায় একটু হলেও স্বস্তি লাগছে।
রাজধানীর কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানীসহ সারা দেশে পাবনাসহ যেসব স্থান থেকে পেঁয়াজ আসে সেখানকার কিছু ব্যবসায়ী রোজায় বাড়তি মুনাফা করতে পণ্যটি মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। মোকাম পর্যায়ে বাড়ায় দাম। ফলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি ছিল। ইতোমধ্যে কৃষকের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার খবরে অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ বাজারে ছেড়েছে। তাই দাম হু হু করে কমছে। এর পরও সেই চক্র বাড়তি দম ধরেই মুনাফা করছে। কারণ এ সময় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
এদিকে দেশের বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনের এলাকা হিসেবে খ্যাত পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়ার পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার প্রতি মন পেঁয়াজ ১৬০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা পাঁচ দিন আগেও ৩০০০-৩২০০ টাকা ছিল।
| ভারত থেকে আমদানির খবরে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী তাদের অবৈধভাবে মজুত করা পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে। এতে পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়ার পাইকারি মোকামে পেঁয়াজের দাম মনপ্রতি ১৪শ’ টাকা কমেছে। ফলে প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তিন দিন আগে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও রাজধানীর খুচরা বাজারে এখন ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি কিনতে ক্রেতার স্বস্তি মিলছে। |
চড়া সুদে ৩১০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হচ্ছে | জ্বালানি উপকরণ, রোজার পণ্য ও বকেয়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে নতুন করে বিদেশ থেকে চড়া সুদে ৩১০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হচ্ছে। পুরোটাই স্বল্পমেয়াদি ঋণ। ঋণ গ্রহণের পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ঋণদায় পরিশোধ করতে হবে। ফলে রিজার্ভে আরও চাপ বাড়বে। এদিকে রোজার পণ্য ও জ্বালানি তেল আমদানি জরুরি হয়ে পড়েছে। যে কারণে এ খাতে চড়া শোধে ঋণ নিয়ে আমদানির পাশাপাশি আগের দায় শোধ করা হবে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেব্রুয়ারিতেই ছয় মাস মেয়াদি ট্রেড ক্রেডিটের আওতায় রোজার পণ্য আমদানির সুযোগ দিয়েছে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা এসব ঋণ নিয়ে রোজাসংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি করতে পারবে। ইতোমধ্যে ভারত, সৌদি আরব ও অন্য কয়েকটি দেশের বেশকিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫০ ডলারের ট্রেড ক্রেডিট রোজার পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এসব পণ্য আরও আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে।
বর্তমানে বেশির ভাগ ঋণই নেওয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তঃব্যাংক ঋণের সুদহার সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেটের (সোফর) ভিত্তিতে। মার্কিন ডলারের ছয় মাস মেয়াদি বন্ডের সুদের হার এখন ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এর সঙ্গে আরও আড়াই শতাংশ যোগ করে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। ফলে সুদের হার দাঁড়াচ্ছে ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বেসরকারি খাতে কিছু ঋণ নেওয়া হচ্ছে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেটে (লাইবর)। এ বাজার ছয় মাস মেয়াদি ডলার বন্ডের সুদের হার ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ফলে এর সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করলে সুদের হার দাঁড়াচ্ছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। যে ব্যাংক ঋণের মধ্যস্বত্বকারী হিসাবে কাজ করছে তারা কমিশন বাবদ দিচ্ছে আরও ১ শতাংশ। ফলে ঋণের সুদহার ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ পড়ছে। এর আগে ট্রেড ক্রেডিটের এসব ঋণ পাওয়া যেত ৪ থেকে ৬ শতাংশ সুদে।
জ্বালানি তেল আমদানি ও জ্বালানি খাতের আগের দেনা পরিশোধ করতে সরকার সৌদি আরবের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে ছয় মাস মেয়াদি। এগুলোর সুদও একই হারে পড়বে। সৌদি আরবের বিভিন্ন তেল কোম্পানির খাঁচ থেকে এসব ট্রেড ক্রেডিট নেওয়া হবে। আপাতত সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো বাংলাদেশকে বাকিতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে। পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে সরকার এসব ঋণ পরিশোধ করবে। এ বিষয়ে সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে সরকারের আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু ঋণ দিয়ে আগের দেনা সমন্বয় করা হচ্ছে।
এদিকে জ্বালানি উপকরণ আমদানিতে সরকার ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) থেকে ৬ মাস মেয়াদে নেওয়া হচ্ছে ৫০ কোটি ডলার। এ খাতে মোট ২১০ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠন করা হবে। এর মধ্যে ১৬০ কোটি ডলার দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাকি ৫০ কোটি ডলার আইটিএফসি থেকে জোগান দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, আসন্ন গরমের মৌসুমে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তহবিলে জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি করা হবে। জ্বালানির উপকরণ আমদানির বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় অনেক বিদেশি কোম্পানি এখন দেশে জ্বালানি তেল ও গ্যাস সরবরাহ করতে চাচ্ছে না। এ কারণে স্পট থেকে নগদ আকারে জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে এ খাতের আমদানির বকেয়া অর্থও পরিশোধ করা হচ্ছে।
জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানিতে ২১০ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠন করা হচ্ছে। এর মধ্যে আইডিবির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) থেকে ৬০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হচ্ছ। এর বিপরীতে মার্কিন মুদ্রা বাজারের সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটের (সোফর) সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করে সুদ দিতে হবে। বর্তমানে সোফর রেট ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। এর সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করলে সুদহার দাঁড়াচ্ছে ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। ঋণের মেয়াদ হবে ছয় মাস। তবে এর মেয়াদ আরও বাড়ানো যাবে।
তহবিলের বাকি ১৬০ কোটি ডলার জোগান দেওয়া হবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে। তবে রিজার্ভ থেকে ওই অর্থ একসঙ্গে দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে জোগান দেওয়া হবে। আইটিএফসি রিজার্ভ থেকে ওই অর্থ আলাদা করতে বলেছে। এর সঙ্গে তাদের ঋণের ৫০ কোটি ডলার যোগ হবে। সোফরের সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করে এর সুদহার নির্ধারিত হবে। ফলে সুদহার দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এদিকে রিজার্ভ থেকে ওই অর্থ আলাদা করলে আইএমএফ-এর মান অনুযায়ী ১৬০ কোটি ডলার রিজার্ভের হিসাব থেকে বাদ দিতে হবে। এতে নিট রিজার্ভ কমে যাবে।
আন্তর্জাতিক ঋণ নেওয়ার সুদের হারের প্রধান দুটি উপকরণ সোফর ও লাইবর দুটির সুদহারই এখন বেড়ে গেছে। ফলে চুক্তি অনুযায়ী অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের সুদহারও বেড়ে গেছে। স্বল্পমেয়াদি ঋণের প্রায় ৯০ শতাংশেরই সুদহার নির্ধারিত হয় বাজার দরের ভিত্তিতে। ফলে বর্তমানে স্বল্পমেয়দি ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। এর প্রায় সব ঋণেরই সুদহার বাড়বে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে ৯ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার। এসব ঋণের ৭৫ শতাংশ সুদহার বাজারভিত্তিক। ফলে এসব ঋণের সুদের হার বাড়বে। এসব ঋণ পরিশোধের সময় দুভাবে বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। সুদের হার বাড়ায় বাড়তি সুদ দিতে হচ্ছে। ডলারের দাম বাড়ায় স্থানীয় ব্যাংক থেকে বাড়তি দামে ডলার কিনে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতেও টাকার অঙ্কে বেশি ঋণ পরিশোধ হচ্ছে। গত পৌনে ২ বছরের ব্যবধানে প্রায় ৪৮ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে টাকার।
এদিকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে যে ঋণ দিচ্ছে তার সুদের হারও বাড়িয়েছে। তারা আগে দশমিক ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিত। এখন তা বেড়ে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ করেছে। তবে আগের নেওয়া ঋণের সুদহার তারা দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে দশমিক ৭৫ শতাংশই অব্যাহত রেখেছে।
| জ্বালানি উপকরণ, রোজার পণ্য ও বকেয়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে নতুন করে বিদেশ থেকে চড়া সুদে ৩১০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হচ্ছে। পুরোটাই স্বল্পমেয়াদি ঋণ। ঋণ গ্রহণের পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ঋণদায় পরিশোধ করতে হবে। ফলে রিজার্ভে আরও চাপ বাড়বে। এদিকে রোজার পণ্য ও জ্বালানি তেল আমদানি জরুরি হয়ে পড়েছে। যে কারণে এ খাতে চড়া শোধে ঋণ নিয়ে আমদানির পাশাপাশি আগের দায় শোধ করা হবে। |
মালিকরা সমৃদ্ধ হলেও পোশাক শ্রমিকদের উন্নয়ন নেই: বিলস | দেশের তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর কারখানাগুলোয় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা হয়েছে। মালিকের কারখানা উন্নত হয়েছে, মালিক সমৃদ্ধ হয়েছেন। দুই শতাধিক সবুজ কারখানা গড়ে উঠেছে। কিন্তু এসব পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের উন্নতি হয়নি। বরং তাদের নানা সুযোগ-সুবিধা কমানো হয়েছে। এর কারণে শ্রমিকের সংখ্যাও কমেছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার ‘নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরির অর্জন ও চ্যালেঞ্জ : রানা প্লাজা-পরবর্তী উদ্যোগ’ শীর্ষক আলোচনাসভায় এ কথা বলেন বক্তারা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) আয়োজিত অনুষ্ঠানে খাতসংশ্লিষ্ট গবেষক, শ্রমিকনেতা, আইএলও এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বক্তৃতা করেন।
আলোচনায় শ্রমিকনেতা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বিলস-এর মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর নানা চাপের কারণে দেশে ট্রেড ইউনিয়ন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক ও শ্রমিকনেতাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। শহিদ শ্রমিকদের রক্তের বিনিময়ে শিল্পে ইতিবাচক দিক ও ইমেজ ফিরে পেয়েছে। কিন্তু সেই ট্র্যাজেডির আহত-নিহত শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্যতা ফিরে পাননি।
তিনি বলেন, অ্যাকোর্ড-অ্যালায়েন্সের কারণে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত পোশাক কারখানায় শিশুশ্রম নেই। তবে এর বাইরে যেসব কারখানা রয়েছে, সেগুলোয় শিশুশ্রমের অভাব নেই। এর দায়ভার কেউ নিতে চায় না। রানা প্লাজায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া আহত শ্রমিকরা দীর্ঘ ১১ বছর হুইলচেয়ারে বসে চলাফেরা করছেন। তাদের দীর্ঘশ্বাস শেষ হয়নি। তাদের দীর্ঘশ্বাস বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে।
বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান আহমেদের পরিচালানায় আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ লেবার কংগ্রেসের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক খাদিজা আক্তার, শ্রমিকনেতা আব্দুল হাই, শহিদুল্লাহ বাদল, সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, গণস্বাস্থ্যে কেন্দ্রের অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল, শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক রোখসানা চৌধুরী, সংগঠনের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, সমন্বয়ক মইনুল আহসান জুয়েল, শ্রমকি লীগের সভাপতি নুর কুতুবুল আলম মান্নান।
| দেশের তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর কারখানাগুলোয় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা হয়েছে। মালিকের কারখানা উন্নত হয়েছে, মালিক সমৃদ্ধ হয়েছেন। দুই শতাধিক সবুজ কারখানা গড়ে উঠেছে। কিন্তু এসব পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের উন্নতি হয়নি। বরং তাদের নানা সুযোগ-সুবিধা কমানো হয়েছে। এর কারণে শ্রমিকের সংখ্যাও কমেছে। |
পোশাক কারখানার বেতন ও ভাতার বিষয়ে যা বলল বিজিএমইএ | ঈদের আগে শতভাগ পোশাক কারখানায় মার্চের বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
বুধবার রাজধানীর উত্তরায় সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি এ তথ্য জানান।
মান্নান বলেন, প্রাথমিকভাবে ৬০০ কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছিল, যারা বেতন ও বোনাস পরিশোধের ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ৫০ জনের সমন্বয়ে ২২টি কমিটি দেশব্যাপী মনিটরিং করায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে অতি ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার সংখ্যা ২৫টিতে নেমে এসেছে। বিজিএমইএর হস্তক্ষেপে সেই ২৫টি কারখানাতেও শ্রমিকদের পাওনা অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্য দিয়ে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব কারখানার শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ সম্পন্ন হলো।
| ঈদের আগে শতভাগ পোশাক কারখানায় মার্চের বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। |
৫১ শতাংশ কারখানা এখনো মার্চের বেতন দেয়নি | ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারঘোষিত ছুটি শুরু হওয়ার একদিন আগেও দেশের ৫১ শতাংশের বেশি মিল-কারখানা এখনো কর্মচারীদের মার্চের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছে।
তাদের তথ্যে দেখা গেছে, ৯ হাজার ৪৬৯ কারখানার মধ্যে ৪ হাজার ৮৪৯টি সোমবার পর্যন্ত মার্চের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। অর্থাৎ ৫১ দশমিক ২১ শতাংশ কারখানা এখনো মার্চের বেতন দেয়নি।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের তথ্যানুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত ৪৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ বা চার হাজার ৬২০টি মিল ও কারখানা মার্চের বেতন পরিশোধ করেছে।
কারখানা ও মিলগুলো আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট ও নরসিংদীর শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত।
অন্যদিকে, ঈদের আগে বোনাস পরিশোধ করেছে ৮১ দশমিক ৩৫ শতাংশ কারখানা, যেখানে ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ বা এক হাজার ৭৬৬টি মিল-কারখানা এখনো বোনাস দেয়নি।
এক বিবৃতিতে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় ১১৬টি মিল ও কারখানা ঈদের ছুটি ঘোষণা করবে না এবং ৩৫ দশমিক ৭১ শতাংশ বা তিন হাজার ৩৮১টি মিল ও কারখানা ইতোমধ্যেই ছুটি ঘোষণা করেছে।
গতকাল পর্যন্ত ৬৩১টি মিল ও কারখানা বন্ধ ছিল এবং ৭১টি আংশিকভাবে খোলা ছিল।
গত ২৭ মার্চ শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী ঈদের ছুটি শুরুর আগে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
শ্রম মন্ত্রণালয়ে জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
তখন কোনো নির্দিষ্ট তারিখের কথা না বললেও ঈদের সরকারি ছুটি শুরুর আগেই অর্থ পরিশোধ করার কথা বলেন তিনি।
| ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারঘোষিত ছুটি শুরু হওয়ার একদিন আগেও দেশের ৫১ শতাংশের বেশি মিল-কারখানা এখনো কর্মচারীদের মার্চের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছে। |
২০ রোজার মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের দাবি | আগামী ২০ রোজার মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদানের দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ)।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে ২০ রোজার ভেতর পূর্ণাঙ্গ বেতন-বোনাস প্রদানসহ মজুরি আন্দোলনে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, হয়রানি বন্ধ, ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন, শ্রমিক ছাঁটাই ও নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান বক্তারা।
সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়ক নাইমুল আহসান জুয়েলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতা কামরুল আহসান, আব্দুল ওয়াহেদ, আহসান হাবিব বুলবুল, রুহুল আমিন ও সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, প্রতি বছরই শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ২০ রোজার মধ্যেই বকেয়া বেতন ও পূর্ণ বোনাস পরিশোধ করার দাবি জানানো হলেও মালিকপক্ষের একটি অংশ সময়ক্ষেপণ করে। এমনকি বকেয়া ও পূর্ণ বোনাসের পরিবর্তে বেতনের টাকা কমিয়ে ও বোনাসের নামে বকশিস নামক একটা কিছু দিয়ে গার্মেন্টস সেক্টরে অরাজকতা তৈরি করে। গত ২০ মার্চ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা ছাড়া সাধারণভাবে ঈদের আগে পরিশোধ করার কথা বলা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে মালিকপক্ষকে সময়ক্ষেপণ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
নেতারা বলেন, মজুরি আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের কোনো ক্ষতিপূরণ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচার আওতায় আনা হয়নি। অথচ মজুরি আন্দোলন কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করে শ্রমিক নেতা ও সাধারণ শ্রমিকদের হয়রানি করা হচ্ছে।
তারা বলেন, সরকার ঘোষিত ১২ হাজার ৫০০ টাকার ন্যূনতম মজুরি শ্রমিকরা প্রত্যাখ্যান করলেও সেই ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছে। শ্রমিকদের গ্রেডে নির্ধারণে ফাঁকি দিচ্ছে। এর প্রতিবাদ করলে শ্রমিক ছাঁটাই, নির্যাতন ও মামলা করার হুমকি দিচ্ছে। শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে মালিকের ওইসব অনিয়ম মেনে নিচ্ছে। এসব অনিয়ম বন্ধ করে এসব সমস্যার সমাধানেরও দাবি জানান নেতারা।
| আগামী ২০ রোজার মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদানের দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ)। |
টেক্সটাইলে ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি | দেশের ৮৫ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা বস্ত্র খাত থেকে আসে, অথচ দেশে টেক্সটাইলের কোনো ক্যাডার সার্ভিস নেই। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী টেক্সটাইল সাব-ক্যাডারের অনুমোদন দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাবের উদ্যোগে শুক্রবার (১৫ মার্চ) আর্মি গলফ ক্লাবের অভ্যন্তরে গলফ গার্ডেনে ইফতার মাহফিল ও টেক কম্পিটিশন সিজন ৩ এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাবের সভাপতি মো. জুলফিকার আলীর সভাপতিত্বে উক্ত ইফতার মাহফিলে অংশ নেন দেশের বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, শিক্ষার্থী, গবেষক এবং একাডেমিক ব্যক্তিরা।
সভাপতির বক্তব্যে মো. জুলফিকার আলী বলেন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাব। এটি দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প বস্ত্রখাতের মানোন্নয়নে ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে সহায়তা করছে ক্লাবটি।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে টেক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী ত্বরিক বিন মুতালিব বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করে অবিলম্বে টেক্সটাইল সাব-ক্যাডার চালু করা উচিত।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইডিএস গ্রুপের নির্বাহী প্রধান আবদুল্লাহ আল মাহির, বেস্টি টেক্সটাইলের প্রধান নির্বাহী আলেক্সান্ডার ইবুয়ান, ডব্লিউ এপারেলের এমডি একেএম আখতার হোসাইন, গোয়াংলি মেশিনারি বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী শংকর দয়াল বিশ্বাস, ওয়ানটেক্স লিমিটেডের ডিরেক্টর মো: কামরুজ্জামান মিঠু, বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো: আসাদুজ্জামান, ফারিহা নিট টেক্স লিমিটেডের সিওও মোহাম্মদ আবদুর রহিম, স্প্যারো এপারেলস লিমিটেডের ইভিপি মো: নাজমুল হুদা, উতাহ গ্রুপের টেক্সটাইল ডিভিশনের প্রধান কল্যাণ ভট্টাচার্য, ফারিহা নিট টেক্স লিমিটেডের ডিরেক্টর প্রমোধ এন আবেকুনিয়া, প্রত্যাশার বাংলাদেশের উপদেষ্টা হামদুল্লাহ আল মেহেদী, মো:মাহবুবুল হক-অধ্যক্ষ (বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ও ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে, সাহেপ্রতাপ, নরসিংদী) প্রমুখ।
আলোচনা, দুআ ও ইফতার শেষে দেশের টেক্সটাইল বিষয়ক সর্ববৃহৎ অনলাইন প্রতিযোগিতা টেক কম্পিটিশন সিজন ০৩ এর পুরস্কার প্রদান করা হয়। ৫টি বিভাগে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় সর্বমোট ৫৫ জনকে লক্ষাধিক টাকার পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ক্রিয়েটিভ এন্ড ইনোভেশন বিভাগে মোঃ ফারমাজুল ইসলাম সানজা, টেক্সটাইল ফান বিভাগে মো: আলী, টেক্সটাইল ব্লগ বিভাগে নাসিমা আক্তার, ভিডিও কনটেন্ট বিভাগে টিম টেক্সমেট প্রথম স্থানের পুরস্কার গ্রহণ করেন। এছাড়াও সেরা ক্যাম্পাস টিম লিডার হিসেবে নাঈম ইবনে আমিন, তারিকুল ইসলাম রাসেল এবং মো: নাজিম উদ্দিন পদক গ্রহন করেন।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে। বস্ত্র প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে বস্ত্র প্রকৌশলীদের জন্য সংগঠনটি কাজ করে থাকে। বর্তমানে দেড় সহস্রাধিক বস্ত্র প্রকৌশলী প্রত্যক্ষ সদস্য হিসেবে এই ক্লাবে যুক্ত রয়েছেন। বস্ত্র শিল্পে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহন করেছে ক্লাবটি। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সেমিনার ও ওয়ার্কশপ আয়োজন, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধি, গবেষণা কাজে বিনিয়োগ, প্রকাশনা ইত্যাদি। এছাড়াও টেক্সটাইল বিষয়ক জনপ্রিয় অনলাইন অনুষ্ঠান 'টেক শো' আয়োজন করে থাকে ক্লাবটি।
| দেশের ৮৫ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা বস্ত্র খাত থেকে আসে, অথচ দেশে টেক্সটাইলের কোনো ক্যাডার সার্ভিস নেই। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী টেক্সটাইল সাব-ক্যাডারের অনুমোদন দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। |
বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক শেয়ারবাজার | চরম অস্থির শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই কমছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। গত এক সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ১৬৮ পয়েন্ট কমেছে। পতন ঠেকাতে বুধবার মূল্যসীমায় (সার্কিট ব্রেকার) আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম একদিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বৃহস্পতিবার থেকে তা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এতে বাজারে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। ফলে বৃহস্পতিবার সূচক আরও ৬০ পয়েন্ট কমেছে। সবমিলিয়ে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় খারাপ। বাজার ছাড়ছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ফলে বর্তমানে শেয়ারবাজার মানেই বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে, বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, বাজারে কিছু অস্বাভাবিক লেনদেন কমিশনের নজরে এসেছে। এরপর নিম্ন লেভেলে সার্কিট ব্রেকারের (একদিনে দাম কমার সীমা) সীমা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কমিশন কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না। তবে কেউ আইনের লঙ্ঘন করলে তদন্ত করে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকেই বাজারে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়েছে। এদের মধ্যে বড় অংশই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। আর বাজারের এই নেতিবাচক অবস্থার জন্য এক এক সময় ভিন্ন ভিন্ন অজুহাত দেখানো হয়। কখনো দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির নেতিবাচক অবস্থা, কখনো বিশ্ব অর্থনীতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ব্যাংকের সুদের বৃদ্ধি অন্যতম। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইরান ও ইসরাইল যুদ্ধ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশ যুদ্ধের মুখোমুখি হলেও এর কোনো দেশেরই শেয়ারবাজারে প্রভাব পড়েনি। ইরান ও ইসরাইল দুই দেশেরই শেয়ারবাজার স্বাভাবিক। অর্থনীতিবিদ ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, মোটা দাগে বাজারে দুটি সংকট। চাহিদার দিক থেকে সংকট হলো-এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। সরবরাহের দিক থেকে সংকট হলো-ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। ফলে কারসাজি ও সিন্ডিকেটের জয়জয়কার অবস্থা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন দুর্বলতাও এর সঙ্গে যোগ হয়েছে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাজারের মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। দীর্ঘদিন থেকে এই সংকট চলে আসছে। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংকট, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় রাজনীতিসহ সবকিছু যোগ হয়েছে। ফলে সবার আগে আস্থা সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে, কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার টাকা হাতিয়ে নিলে বিচার হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। তবে কাজটি খুব সহজ নয়।
এদিকে দীর্ঘদিন থেকে শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে। কমছে মূল্যসূচক। কমিশন মনে করে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করছে। লেনদেন মূল্যসীমায় আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। তবে বাড়তে পারবে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এর আগে কমার ক্ষেত্রেও এই সীমা ছিল ১০ শতাংশ। বৃহস্পতিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। কিন্তু বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি বাজার। ওইদিন বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। একক দিন হিসাবে ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ৩৯৬টি কোম্পানির ১৩ কোটি ৮৪ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৫১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে দাম বেড়েছে ৬৯টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ৩০০টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ৬০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ১০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৭৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসইর বাজার মূলধন আগের দিনের চেয়ে কমে ৬ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
শীর্ষ দশ কোম্পানি : বৃহস্পতিবার ডিএসইতে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে সেগুলো হলো-ওরিয়ন ইনফিউশন, তৌফিকা ফুডস, আইটিসি, কোহিনূর কেমিক্যাল, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, মালেক স্পিনিং, ফার্মা এইডস, বিচ হ্যাচারি এবং বেস্ট হোল্ডিংস। ডিএসইতে বৃহস্পতিবার যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হলো-এডিএন টেলিকম, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, এম্বী ফার্মা, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্টিজ, কোহিনূর কেমিক্যাল, লিব্রা ইনফিউশন, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, আইটিসি, জিকিউ বলপেন ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হলো-বাটা সুজ, রেনেটা, ইউপিজিডিসিএল, নিটল ইন্স্যুরেন্স, সেনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, এডভেন্ট ফার্মা, ডোমিনেজ স্টিল, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং আফতাব অটোমোবাইল।
| চরম অস্থির শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই কমছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। গত এক সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ১৬৮ পয়েন্ট কমেছে। পতন ঠেকাতে বুধবার মূল্যসীমায় (সার্কিট ব্রেকার) আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম একদিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বৃহস্পতিবার থেকে তা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এতে বাজারে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। ফলে বৃহস্পতিবার সূচক আরও ৬০ পয়েন্ট কমেছে। সবমিলিয়ে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় খারাপ। বাজার ছাড়ছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ফলে বর্তমানে শেয়ারবাজার মানেই বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে, বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলবে। |
শেয়ারবাজারে গুরু পাপে লঘুদণ্ড! | ক্রমেই অপরাধীদের অভয়রাণ্য হয়ে উঠছে শেয়ারবাজার। কারসাজির নানা উপায়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৪ বছরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) ১৮৪টি তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কিন্তু শাস্তি হচ্ছে নামমাত্র। দু-একটি ঘটনায় শাস্তি দেওয়ার দাবি করা হলেও অপরাধীরা যত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, শাস্তি হচ্ছে তার খুবই সামান্য অংশ। সম্প্রতি আইটি খাতের কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস নামে একটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে আবারও এ ধরনের ঘটনা সামনে এসেছে। কোম্পানিটির শেয়ারে কারসাজির মাধ্যমে বাজারে চিহ্নিত চক্র আবুল খায়ের হিরু চক্র রিয়ালাইজড (শেয়ার বিক্রি করেছে) এবং আনরিয়ালাইজড (শেয়ার বিক্রি করা হয়নি) মিলে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। এরমধ্যে রিয়ালাইজড মুনাফা ৯২ লাখ টাকা। কিন্তু এ অপরাধে তাকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। এর মানে হলো ২০ লাখ টাকা দিলেই তার ৭২ লাখ টাকা বৈধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ জরিমানা রিয়ালাইজড মুনাফার এক-পঞ্চমাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক নয়।
তবে বিএসইসি বলছে, তারা যৌক্তিকভাবেই জরিমানা করে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম যুগান্তরকে বলেন, কোনো কোম্পানির শেয়ারের তদন্তের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয়। এরপর কমিশন অভিযুক্তসহ সংশ্লিষ্টদের শুনানিতে ডাকে। কিন্তু শুনানির সময় দেখা যায় আনরিয়ালাইজড মুনাফা কমে যায়। কখনো আবার লোকসানে চলে যায়। ফলে কমিশন সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে একটি যৌক্তিক জরিমানা করে। তিনি বলেন, এ ধরনের জরিমানা বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
শেয়ারবাজারে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তির পরপরই কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির বিষয়টি সামনে চলে আসে। কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে উঠানামা করেছে। ডিএসইর তদন্তে উঠে এসেছে ২০২১ সালের ১৬ থেকে ১ জুন পর্যন্ত মাত্র ১৫ দিনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৬৯ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৬৩ টাকা থেকে ৯২ টাকায় লেনদেন হয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ানোর নেতৃত্ব দিয়েছেন সরকারি সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার শেয়ারবাজারে ব্যাপক সমালোচিত আবুল খায়ের হিরু ও তার পরিবারসহ পুরো একটি চক্র। এর আগে ১২টি কোম্পানির শেয়ারে কারসাজিতে এই চক্রের নাম এসেছে। এসব বিষয় একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুগান্তর।
ডিএসইর অনুসন্ধানে জেনেক্স শেয়ার কারসাজি নিয়ে বেশকিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে অস্বাভাবিক শেয়ার লেনদেনকে আইন লঙ্ঘন এবং অপরাধ হিসাবে দেখানো হয়েছে। অপরাধের তালিকায় নয়টি বিও অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে-আবুল খায়ের হিরুর চারটি বিও অ্যাকাউন্ট, তার প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কোঅপারেটিভসের দুটি অ্যাকাউন্ট, হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের একটি, বাবা আবুল কালাম মাতবর একটি এবং হিরুর বোন কনিকা আফরোজের একটি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি ব্রোকারেজ হাউজে এ নয়টি অ্যাকাউন্ট ছিল। হাউজগুলো হলো-ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ, এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজ এবং রেমনস ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ। এরমধ্যে একটি হাউজ থেকে শেয়ার ক্রয়ের আদেশ দিয়ে অন্য হাউজ থেকে বিক্রি করেছে। এভাবেই কৃত্রিমভাবে লেনদেন করে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। এরপর সাধারণ বিনিয়োগকারী এখানে যুক্ত হলে শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে গেছে। এ প্রক্রিয়ায় চক্রটি ৩৫ লাখ ৬০ হাজার ১৮৫টি শেয়ার কিনেছে। আলোচ্য ১৫ দিনে বিক্রি করেছে ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫০টি শেয়ার। এতে গ্রুপটির রিয়ালাইজড মুনাফা হয় ৯২ লাখ ৩০ হাজার ৫১৫ টাকা। এ কাজের মাধ্যমে চক্রটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ সালের সেকশন ১৭ই লঙ্ঘন করেছে। এরফলে ওই অধ্যাদেশের ২২ ধারায় তাদের ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কমিশন। অর্থাৎ গুরু পাপে লঘু দণ্ড।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাজারের মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। এ সংকট কাটাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। এক্ষেত্রে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। না হলে তা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক হবে না।
আলোচ্য সময়ে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ারের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিলেন সুমন খান, আবুল খায়ের হিরুর নিজ নামে তিনটি অ্যাকাউন্ট, হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কোঅপারেটিভ, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, নাসিমা আক্তার লতা, মাকসুদা বেগম, হাসান মো. সিরাজ, জহরা রসুল, উম্মে বিলকিস, শান্তা ফাস্ট ইনকাম ইউনিট ফান্ড, নাজমুল হক মিলন এবং সৈয়দ শোয়েব আহমেদ। তবে আলোচ্য সময়ে যারা বেশি শেয়ার বিক্রি করেছেন এরমধ্যে রয়েছে-জহরা রসুল, ডিআইটি কো অপারেটিভস, ইউসিবি স্টক ব্রোকার, এটিসিপি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, সুমন খান, মাকসুদা বেগম, আমার রসুল, জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, আইসিবি এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ইউনিট ফান্ড, বাংলাদেশ ফান্ড, আইসিবি এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, নাসিমা আক্তার লতা, আইসিবি ইউনিট ফান্ড, নাজমুল হক মিলন এবং দীপক রক্ষিত।
১২০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি মিলিয়ে ১৯২ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজার ছিল ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল এবং অডিটর মাসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানি। কোম্পানির পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসাবে রয়েছেন মোহাম্মদ আদনান ইমাম, ভাইস চেয়ারম্যান প্রিন্স মজুমদার, পরিচালকদের মধ্যে-চৌধুরী ফজলে ইমাম, হাসান শহিদ সরওয়ার, নিলুফার ইমাম এবং রোকেয়া ইসলাম। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে রয়েছেন-মো. নাজমুল হাসান ও টিআইএম নুরুল কবির।
| ক্রমেই অপরাধীদের অভয়রাণ্য হয়ে উঠছে শেয়ারবাজার। কারসাজির নানা উপায়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৪ বছরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) ১৮৪টি তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কিন্তু শাস্তি হচ্ছে নামমাত্র। দু-একটি ঘটনায় শাস্তি দেওয়ার দাবি করা হলেও অপরাধীরা যত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, শাস্তি হচ্ছে তার খুবই সামান্য অংশ। সম্প্রতি আইটি খাতের কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস নামে একটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে আবারও এ ধরনের ঘটনা সামনে এসেছে। কোম্পানিটির শেয়ারে কারসাজির মাধ্যমে বাজারে চিহ্নিত চক্র আবুল খায়ের হিরু চক্র রিয়ালাইজড (শেয়ার বিক্রি করেছে) এবং আনরিয়ালাইজড (শেয়ার বিক্রি করা হয়নি) মিলে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। এরমধ্যে রিয়ালাইজড মুনাফা ৯২ লাখ টাকা। কিন্তু এ অপরাধে তাকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। এর মানে হলো ২০ লাখ টাকা দিলেই তার ৭২ লাখ টাকা বৈধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ জরিমানা রিয়ালাইজড মুনাফার এক-পঞ্চমাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক নয়। |
শেয়ারবাজারে আরও পতন | দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন থামছে না। সোমবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন। দিন শেষে ডিএসইর সূচক কমেছে ৩২ পয়েন্ট। একইভাবে কমেছে লেনদেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটে বাজারে এভাবে পতন হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসইতে সোমবার ৩৯৩টি কোম্পানির ১৪ কোটি ৮৬ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৪৭৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে দাম বেড়েছে ৭৫টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ২৮৫টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬৫৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮২ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৩৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসইর বাজার মূলধন আগের দিনের চেয়ে কমে ৭ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
শীর্ষ দশ কোম্পানি: সোমবার ডিএসইতে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে সেগুলো হলো-এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, গোল্ডেন সন, স্যালভো কেমিক্যাল, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, তৌফিকা ফুডস, রবি আজিয়াটা, ফু-ওয়াং সিরামিক, বেস্ট হোল্ডিংস, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স এবং সেন্ট্রাল ফার্মা। ডিএসইতে একই দিন যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হলোÑপ্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, গোল্ডেন সন, শাশা ডেনিমস, রবি আজিয়াটা, ফার্মা এইডস, স্যালভো কেমিক্যাল, পূবালী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, দেশবন্ধু পলিমার ও কোহিনূর কেমিক্যাল। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হলো-ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এডিএন টেলিকম, খুলনা প্রিন্টিং, ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড, সোনারগাঁ টেক্সটাইল, ডেল্টা স্পিনার্স, লংকা-বাংলা ফাইন্যান্স, ইস্টার্ন কেবলস, জুট স্পিনার্স এবং প্রগতি ইন্স্যুরেন্স।
| দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন থামছে না। সোমবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন। দিন শেষে ডিএসইর সূচক কমেছে ৩২ পয়েন্ট। একইভাবে কমেছে লেনদেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটে বাজারে এভাবে পতন হচ্ছে। |
শেয়ারবাজারে রক্তক্ষরণ থামছে না | শেয়ারবাজারে রক্তক্ষরণ থামছে না। বৃহস্পতিবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। ফলে দিনশেষে ডিএসইর সূচক কমেছে ৭৭ পয়েন্ট।
শতকরা হিসেবে যা প্রায় দেড় শতাংশ। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে সব কোম্পানির শেয়ারের দাম একদিনেই গড়ে দেড় শতাংশ কমেছে। এর ফলে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে দরপতন হলেও এখানে কারো নজর নেই।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে-ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ৩৯৫টি কোম্পানির ১৭ কোটি ২৬ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৫২২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৯টি, কমেছে ৩৪২টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ৭৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬৮৬ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে।
ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ২২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮৪ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ডিএসই শরীয়াহ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৪৬ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ডিএসইর বাজার মূলধন আগের দিনের চেয়ে কমে ৭ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
শীর্ষ দশ কোম্পানি : ডিএসইতে বৃহস্পতিবার যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে সেগুলো হলো-এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, বেস্ট হোল্ডিংস, তৌফিকা ফুডস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, গোল্ডেন সন, সেন্ট্রাল ফার্মা, ফুওয়ান ফুড, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফুওয়াং সিরামিক এবং মালেক স্পিনিং।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হলো- এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, স্যালভো কেমিক্যাল, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, ইফাদ অটোস, বেস্ট হোল্ডিংস, এইচআর টেক্সটাইল, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, সিকদার ইন্স্যুরেন্স এবং গোল্ডেন সন।
অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হলো- ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জাহিন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, ক্যাপিটেক গ্রামীণব্যাংক গ্রোথ ফান্ড, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, খুলনা প্রিন্টিং, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, আইডিএলসি, আইএফআইএল ইসলামি মিউচুয়াল ফান্ড-১, এনসিসিবি মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান এবং প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।
| শেয়ারবাজারে রক্তক্ষরণ থামছে না। বৃহস্পতিবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। ফলে দিনশেষে ডিএসইর সূচক কমেছে ৭৭ পয়েন্ট। |
শেয়ারবাজারে পতন থামছে না | শেয়ারবাজারে টানা দরপতন চলছে। বুধবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। ফলে দিনশেষে ডিএসইর সূচক কমেছে ১০ পয়েন্ট। কমছে লেনদেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটে বাজারে এভাবে পতন হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে- ডিএসইতে বুধবার ৩৯৫টি কোম্পানির ১৫ কোটি ৭৮ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৪৮২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে দাম বেড়েছে ১০৬টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ২২২টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ১০ কমে ৫ হাজার ৭৬৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএস-৩০ মূল্যসূচক ৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই শরীয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৬২ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসইর বাজারমূলধন আগের দিনের চেয়ে বেড়ে ৭ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
শীর্ষ দশ কোম্পানি : বুধবার ডিএসইতে যে সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে সেগুলো হলো- এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, তৌফিকা ফুড অ্যান্ড লাভেলো, গোল্ডেন সন্স, ফুওয়াং ফুড, ফু-ওয়াং সিরামিক, বেস্ট হোল্ডিংস, আলিফ ইন্ডাষ্ট্রিজ, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, শাইনপুকুর সিরামিকস এবং প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলস। ডিএসইতে বুধবার যে সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হলো- কপারটেক ইন্ডাষ্ট্রিজ, এসইএমএল লেকচার মিউচুয়াল ফান্ড, একমি ফার্মা, বিডি থাইফুড, তৌফিকা ফুড অ্যান্ড লাভেলো, আমরা নেটওয়ার্ক, আলহাজ— টেক্সটাইল, ইফাদ অটোস এবং পূবালী ব্যাংক। অন্যদিকে যে সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হলো- এলআর গ্লোবাল মিউচুয়াল ফান্ড-১, নিউলাইন ক্লোথিং, প্রাইম ফাস্ট আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ড, কর্ণফুলি ইন্স্যুরেন্স, গ্রীণ ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স,আমান কটন ফাইবার, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, এমবিএল প্রথম মিউচুয়াল ফান্ড এবং ফুওয়াং ফুড।
| শেয়ারবাজারে টানা দরপতন চলছে। বুধবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। ফলে দিনশেষে ডিএসইর সূচক কমেছে ১০ পয়েন্ট। কমছে লেনদেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটে বাজারে এভাবে পতন হচ্ছে। |
এক দিনে ২৩ হাজার কোটি টাকা ধার | তারল্য সংকট ব্যাংকগুলোর পিছু ছাড়ছে না। দৈনন্দিন কার্যক্রম মেটাতেও এখন ধার করতে হচ্ছে। বুধবার এক দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ধার করেছে ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। কলমানি মার্কেট ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধার করেছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। বৃহস্পতিবারও এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ধার করেছে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।
সূত্র জানায়, ঈদের আগে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের বাড়তি চাহিদা ছিল টাকা তোলার। এ কারণে ওই সময়ে তারল্য সংকট বেড়েছিল। ঈদের পর গ্রাহকদের চাপ কমে গেছে। তারপরও ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক একীভূত করার ঘোষণা দেওয়ায় দুর্বল ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা নগদ টাকা তুলে নিচ্ছেন। এমনকি দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ী প্রকল্পে জমা রাখা অর্থও তুলে নিচ্ছেন। এতে করে কিছু দুর্বল ব্যাংকে তারল্য সংকট বেড়েছে। ওইসব ব্যাংক এখন ধারের প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার কলমানি মার্কেট থেকে কিছু দুর্বল ব্যাংক ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ধার করেছে। এতে সর্বোচ্চ সুদ ছিল সাড়ে ৯ শতাংশ। সর্বনিম্ন সুদ ছিল ৮ শতাংশ। এ সুদহার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানাভাবে মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে একটি সীমার মধ্যে রেখে দিয়েছে। এছাড়া স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধার করেছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। এতে সুদহার ছিল ১০ থেকে প্রায় ১২ শতাংশ।
এর আগে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ধার করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলো আমদানি ব্যয় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনায় মোটা অঙ্কের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আটকে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ট্রেজারি বিল ও বন্ডেও বিনিয়োগ করেছে। ট্রেজারি বিল পুনরায় কিনে নেওয়ার চুক্তি বা রেপোর আওতায় ওইসব অর্থ ব্যাংকগুলোকে স্বল্পমেয়াদে ধার দিচ্ছে।
এদিকে ব্যাংকগুলোতে এখনো আমানত বাড়ার চেয়ে ঋণ বাড়ছে বেশি হারে। ঋণ হিসাবে বিতরণ করা অর্থ আদায় হচ্ছেও কম। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট বেড়েছে। এছাড়া বাজারে নিত্যপণ্যের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় মানুষের সঞ্চয় করার মতো সক্ষমতা কমে গেছে। এমনকি আগের সঞ্চয় ভেঙে জীবিকা নির্বাহ করছে। এতে করেও ব্যাংকে সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ছে না। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোতে নানা সংকটের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে নানা ধরনের বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে।
| তারল্য সংকট ব্যাংকগুলোর পিছু ছাড়ছে না। দৈনন্দিন কার্যক্রম মেটাতেও এখন ধার করতে হচ্ছে। বুধবার এক দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ধার করেছে ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। কলমানি মার্কেট ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধার করেছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। বৃহস্পতিবারও এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ধার করেছে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। |
রিজার্ভ বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি | রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার ধার করায় প্রায় এক মাসের ব্যবধানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে ৫২ কোটি ডলার।
বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে দেশের নিট রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯৭ কোটি ডলার বা প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। একই সঙ্গে গ্রস রিজার্ভও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫২৩ কোটি ডলার। তবে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে নিট রিজার্ভ আরও কম। এদিকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ ১২৫ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ আবার কমে যাবে।
এমন এক সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ বাড়াচ্ছে যখন আইএমএফের একটি মিশন দেশে সফর করছে। তারা আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি মূল্যায়ন করছে।
সূত্র জানায়, ২৮ মার্চ দেশের নিট রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯৭ কোটি ডলার। ওই সময়ে নিট রিজার্ভ বেড়েছে ৫২ কোটি ডলার। তবে এই রিজার্ভের মধ্যে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ আরও কম।
এদিকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর দেনা বাবদ ১২৫ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া ব্যাংক থেকে ধার করা ডলারও আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে। কারণ ওই সময়ে ব্যাংকগুলোর কিছু বড় দেনা শোধ করতে হবে। এগুলো পরিশোধ করলে রিজার্ভ আবার কমে যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের ওই সময়ে প্রবৃদ্ধি কমলেও গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানি আয় প্রতি মাসে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি আসছে। গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চে আমদানি ব্যয় কমেছিল ১১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমেছে ১৫ শতাংশ। ডলার সাশ্রয় করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমানোর কারণে রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে।
| রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার ধার করায় প্রায় এক মাসের ব্যবধানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে ৫২ কোটি ডলার। |
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি, প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি | বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি ঘোষণা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ব্যাংকটির সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিকরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন অর্থনীতি বিটের বিপোর্টাররা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের যিনি পাস দেবেন শুধু তার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। অন্য কারও সঙ্গে নয়। এটাই আপাতত সিদ্ধান্ত। সম্ভাব্য আগামী ৮ মে শুধু ব্যাংক বিটের সাংবাদিকদের একটি কর্মশালা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের ব্যানারে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝিতে কিছুটা পরিবর্তনের আভাস দেন তিনি।
এ বিটের রিপোর্টার রহিম শেখ বলেন, সাংবাদিকদের জন্য আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ যাতায়াত ছিল। বর্তমানে সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন সাংবাদিকরা পাস ইস্যুর মাধ্যমে ব্যাংকের শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। এর বাইরে অন্য কোথাও বা কোনো কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন না। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ যাতায়াত বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, এর আগেও পাস ইস্যুর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে হতো। তবে ভেতরে অবাধ যাতায়াত ছিল। বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের সঙ্গে বৃহস্পতিবার দেখা করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। তবে তিনি কোনো সমাধান দেননি। এর প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।
এ বিষয়ে ইআরএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের পেশাগত কাজকে বাধাগ্রস্ত করছে। তথ্য পাওয়ার সাংবাদিকদের যে অধিকার তা যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
| বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি ঘোষণা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ব্যাংকটির সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিকরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন অর্থনীতি বিটের বিপোর্টাররা। |
একসঙ্গে চাকরি ছাড়লেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা | বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ৫৭ জন কর্মকর্তা। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ (বিসিএস) অন্য চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকরি ছেড়েছেন তারা।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক অফিস আদেশে এই তথ্য জানানো হয়।
পদত্যাগকারীদের মধ্যে রয়েছেন একজন উপপরিচালক ও একজন অফিসার। বাকি ৫৫ জন সহকারী পরিচালক। তাদের মধ্যে ৪৮ জনের পদত্যাগ কার্যকর হবে আজকে।
এছাড়া গত ৩১ মার্চ, ১৫ ও ১৬ এপ্রিল একজন করে, ১৮ এপ্রিল ২ জন এবং ২১ এপ্রিল ৪ জনের পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে।
চাকরি ছেড়ে যাওয়া এসব কর্মকর্তা বেশির ভাগই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
এছাড়া খুলনা ও বরিশাল অফিসে ৩ জন করে, সিলেট অফিসে ২ জন, মতিঝিল, চট্টগ্রাম ও রংপুর অফিসে একজন করে কর্মরত ছিলেন।
এক সময় বিসিএস, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মতো চাকরি ছেড়ে অনেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসতেন। কিন্তু এখন হয়েছে উল্টো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনের ঘাটতিতে হতাশা, চাকরির সুযোগ-সুবিধা কমে আসার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
| বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ৫৭ জন কর্মকর্তা। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ (বিসিএস) অন্য চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকরি ছেড়েছেন তারা। |
আমানতের মুনাফার ওপর কর দিতে হবে না | দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে কোনো আমানতকারী আমানত রেখে বা কোনো বাংলাদেশি অনিবাসী ঋণদাতা কর্তৃক গৃহীত সুদ বা মুনাফার ওপর এখন থেকে আর কোনো কর দিতে হবে না। আগে এ খাতে অর্জিত সুদ বা মুনাফার ওপর ১০ বা ১৫ শতাংশ উৎসে কর দিতে হতো। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে। এর আগে অফশোর ব্যাংকিং আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, এতে এ বিধান করা হয়েছে। এর আলোকে সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই সার্কুলার জারি করল। সূত্র জানায়, দেশে প্রায় দুই বছর ধরে প্রবল ডলার সংকট চলছে। এ সংকট মোকাবিলায় বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়াতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসাবেই অফশোর ব্যাংকিংয়ের মুনাফার ওপর কর প্রত্যাহার করা হলো।
অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট হলো ব্যাংকগুলোর আলাদা একটি ইউনিট। এর সঙ্গে মূল ব্যাংকিংয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে বছর শেষে লাভ বা লোকসান মূল ব্যাংকের স্থিতিপত্রে যোগ বা বিয়োগ হবে। এতে কেবল বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশিরা, বাংলাদেশি প্রবাসী বা দেশে ইপিজেড বা অর্থনৈতিক অঞ্চল বা শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত রাখতে বা ঋণ নিতে পারে।
অফশোর ব্যাংকিংয়ে কোনো আমানতকারী বা বাংলাদেশের অনিবাসী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমানত রাখলে তিনি মেয়াদ শেষে যে সুদ বা মুনাফা পাবেন, তার ওপর আগে ১০ বা ১৫ শতাংশ উৎসে কর দিতে হতো। বর্তমানে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) না থাকলে আমানতের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ আর টিআইএন থাকলে ১০ শতাংশ কর দিতে হয়। নতুন আইনের কারণে এ খাতে আমানতের ওপর বা অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটকে ঋণ দিলে তার মুনাফার ওপর কোনো কর দিতে হবে না। ফলে আমানতের গ্রাহকরা মুনাফার পুরো অর্থই নিয়ে যেতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, এতে দেশের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলোয় ডলারের প্রবাহ বাড়বে। ফলে ডলারের ব্যাংকগুলো ঋণও দিতে পারবে। এছাড়া অফশোর ব্যাংক থেকে মূল ব্যাংকেও তারা চাহিদা অনুযায়ী ডলার স্থানান্তর করতে পারবে। এছাড়া দেশে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত রাখলে সুদের হারও বেড়েছে। বিশেষ করে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট (লাইবর) বা সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটের (সোফর) সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট অংশ যোগ করে সুদ দিতে পারে। আগে লাইবর রেট ছিল দেড় শতাংশ। এখন তা বেড়ে পৌনে ৬ শতাংশ হয়েছে। সোফর রেট আগে ছিল ১ শতাংশের কিছু বেশি। এখন তা বেড়ে সাড়ে ৫ শতাংশে উঠেছে। এর সঙ্গে ২ থেকে আড়াই শতাংশ যোগ করে অফশোর ব্যাংকগুলো আমানত নিতে পারে। ফলে লাইবর রেটে আমানতের সুদহার পৌনে ৮ থেকে সোয়া ৮ শতাংশ দিতে পারবে। সোফরে সাড়ে ৭ থেকে ৮ শতাংশ সুদ দিতে পারবে। এতে বাড়তি মুনাফার আশায় অনেকেই ডলারে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। চড়া সুদে ডলার আমানত নিলে ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি সুদ দিতে হবে। এতে ঋণের খরচ বেড়ে যাবে। ফলে উদ্যোক্তারা চাপের মুখে পড়বেন। এমনিতেই দেশে স্থানীয় মুদ্রায় ব্যাংক ঋণের সুদের হার সাড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আগে সর্বোচ্চ সুদ ছিল ৯ শতাংশ। স্থানীয় মুদ্রার সুদহার বাড়ায় এমনিতেই উদ্যোক্তারা চাপে পড়েছেন।
| দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে কোনো আমানতকারী আমানত রেখে বা কোনো বাংলাদেশি অনিবাসী ঋণদাতা কর্তৃক গৃহীত সুদ বা মুনাফার ওপর এখন থেকে আর কোনো কর দিতে হবে না। আগে এ খাতে অর্জিত সুদ বা মুনাফার ওপর ১০ বা ১৫ শতাংশ উৎসে কর দিতে হতো। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। |
বিমা খাতে অনিয়ম, সোনালী লাইফে প্রশাসক নিয়োগ | শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে ছয় মাসের জন্য বরখাস্ত করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক নিয়োগ করেছে আইডিআরএ। প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম ফেরদৌস।
রোববার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। আইডিআরএ’র পরিচালক (আইন) মোহা. আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে জানানো হয়।
আদেশে বলা হয়, বিমাকারী ও বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের স্বার্থরক্ষার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ বরখাস্ত ও প্রশাসক নিয়োগের এ আদেশ রোববার থেকে কার্যকর হয়েছে।
আইডিআরএ আরও জানিয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসক কর্তৃপক্ষের কাছে শিগগিরই একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন। পাশাপাশি বিমা পলিসি ইস্যুসহ সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
নিয়োজিত নতুন প্রশাসক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্ধারিত মাসিক সম্মানি ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভাতা পাবেন। এছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি যোগ্য দেশি বা বিদেশি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
| শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে ছয় মাসের জন্য বরখাস্ত করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। |
আমানত বিমা প্রিমিয়ামের তথ্য ভুল দিলে জরিমানা | তফশিলি ব্যাংকগুলোকে বছরে দুবার আমানত বিমার প্রিমিয়ামের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। যদি কোনো ব্যাংক এ তথ্য পাঠাতে বিলম্ব বা ভুল করে তাহলে জরিমানা গুনতে হবে।
বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্ট। এতে বলা হয়, দেশের ক্ষুদ্র আমানতদারিদের আমানতের সুরক্ষা ও সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ১৯৮৪ সাল থেকে আমানত বিমা পদ্ধতি তথা ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স সিস্টেমস চালু আছে।
বর্তমানে ‘ব্যাংক আমানত বিমা আইন, ২০০০’ অনুযায়ী দেশে কার্যরত সব তফশিলি ব্যাংক আবশ্যিকভাবে আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিলের সঙ্গে বিমা করা আছে। এই আইনের ৫নং ধারা অনুযায়ী, সব তফশিলি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত সময় ও পদ্ধতিতে আলোচ্য তহবিলে প্রিমিয়াম জমা প্রদান করে। প্রিমিয়াম হিসাবায়নের লক্ষ্যে বর্তমানে প্রতি ৬ মাসে তফশিলি ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী আমানত বিমা প্রিমিয়াম নির্ধারণী তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
সংগৃহীত তথ্য প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করে নির্ধারিত প্রিমিয়াম হার প্রয়োগ করে ব্যাংকগুলোর জন্য আবশ্যিকভাবে প্রদেয় প্রিমিয়ামের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। ফলে ব্যাংকগুলোর পাঠানো আমানত বিমা প্রিমিয়াম নির্ধারণী তথ্যগুলোর সুনির্দিষ্টতা নিশ্চিত করার জন্য ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্ট থেকে আগে জারি করা এ সংক্রান্ত সব সার্কুলার লেটার একীভ‚ত করে এই মাস্টার সার্কুলারটি জারি করা হয়েছে।
মাস্টার সার্কুলারে বলা হয়, সব তফশিলি ব্যাংককে নির্দেশনা অনুযায়ী তথ্য প্রস্তুত করতে হবে। প্রস্তুত করা সব তথ্যের সফট কপি এবং হার্ডকপি দাখিল করতে হবে। তফশিলি ব্যাংকগুলোকে জানুয়ারি থেকে জুন ও জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবের স্থিতির ভিত্তিতে যথাক্রমে ৩১ জুলাই এবং ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সংশ্লিষ্ট আগের বছরের তথ্য পাঠাতে হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য সংবলিত বিবরণী দাখিল করলে শাস্তি আরোপ করা হবে।
| তফশিলি ব্যাংকগুলোকে বছরে দুবার আমানত বিমার প্রিমিয়ামের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। যদি কোনো ব্যাংক এ তথ্য পাঠাতে বিলম্ব বা ভুল করে তাহলে জরিমানা গুনতে হবে। |
অনিয়ম দুর্নীতিতে বিমা খাতে আস্থার সংকট | বিমা খাত থেকে টাকা পয়সা নিয়ে অনেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ঘুরেও বিমার টাকা তোলা যাচ্ছে না। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বর্তমানে তীব্র আস্থা সংকটে পড়েছে খাতটি। এ খাতের প্রতি আস্থা বাড়াতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন জরুরি বলে মত দেন ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশে সামাজিক বিমা ফোরামের সূচনা’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত সংলাপে সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য পারভীন মাহমুদের সঞ্চালনায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সংলাপে অংশ নিয়ে সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব মুহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও সমন্বয় জরুরি। সামাজিক বিমা একটি বিস্তৃত ইস্যু। বহু খাত সম্পর্কিত বিষয়। এখানে সরকারের বহু মন্ত্রণালয় ও উন্নয়ন সহযোগী সম্পর্কিত।
তিনি বলেন, যখন রাজনীতিবিদরা সরকারের বাইরে থাকেন, তখন তারা সংস্কার ও পরিবর্তনের বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু যখন তারা সরকারের অংশ হয়ে যান, তখন তারা আমলাদের মতো আচরণ করেন। অনেক রাজনৈতিক নেতা দেখেছি, যারা আমলাদের চেয়েও বেশি আমলাতান্ত্রিক, যখন তারা চেয়ারে বসেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এবিএম সাদিকুর রহমান বলেন, বিমা সম্পর্কে মানুষের মাঝে একটা নেতিবাচক ধারণা আছে। যে কারণে পুরো খাতের ওপর মানুষ বিশ্বাস এবং আস্থা হারাচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা যে গাড়ির বিমা করেন, সেটা দুর্ঘটনার শিকার হলে বিমা কোম্পানি থেকে ক্ষতিপূরণ নিতে আমাদেরই বেগ পেতে হয়। তাতে সাধারণ মানুষের যে কী অবস্থা তা সহজে অনুমেয়। প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ডানে-বামে ছবি তুলে জিডি করতে হয়। ছবিতে পুরো ক্ষতির চিত্র ফুটে ওঠে না। দেখা গেল, রি-পেয়ার করতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হলো, বিপরীতে দিল পাঁচ হাজার টাকা, তাও অনেক দিন পরে। এরকম ফিডব্যাক পেলে বিমার প্রতি আস্থা থাকার কথা না।
উদাহরণ টেনে সাদিকুর রহমান আরও বলেন, কিছু আত্মীয়স্বজন এখনো আমার কাছে তদবির করেন। ফারইস্ট ইনস্যুরেন্সের মালিকপক্ষ টাকা পয়সা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। যাদের বিমা ম্যাচিউরড হয়ে গেছে, তারাও টাকা পাচ্ছেন না। যখন সমাজের একজন ভোগান্তির শিকার হন, তখন বাকিরা তো তা জেনে যায়। তার আত্মীয়স্বজনরা জানে। সাধারণত, যেটা খারাপ সংবাদ, সেটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
সরকারের এই উপসচিব বলেন, যারা বিমা করেছেন, তাদের বেশির ভাগই সরকারি-বেসরকারি স্কুল কলেজে চাকরি করেন। অনেক আশা করে বিমা করেছেন। একই পরিবারে চার-পাঁচটি বিমা। টাকা পাচ্ছেন না। আমি অনেকবার যোগাযোগ করেছি, কথা বলেছি। তারা (কোম্পানি কর্তৃপক্ষ) বলে, আমাদের পূর্ববর্তী মালিকরা টাকা নিয়ে গেছে, তারা জেলে আছে। সেটা জেনে আমার কী লাভ? আমি তো টাকা পাচ্ছি না। এভাবে যদি বিমা কোম্পানিগুলো কাজ করে তাহলে মানুষের আস্থা থাকার কথা নয়। সে জন্য প্রথমে আস্থা তৈরি করতে হবে। এ জন্য যে কাজ করি, সেগুলো সিনসিয়ারলি করতে হবে। এখানে দুর্নীতি করা যাবে না, কাজে ফাঁকি দেওয়া যাবে না। সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে যেভাবে ব্যবহার করা উচিত, সেভাবে করতে হবে। যেভাবে সহযোগিতা করা উচিত, সেভাবে করতে হবে। এটা যদি নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে সামাজিক বিমার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে।
সরকারি চাকরিতে বদলির কারণে প্রাতিষ্ঠানিক মেমোরি গড়ে ওঠে না বলে আলোচনায় উঠে আসে। এতে কর্মকর্তার বদলির সঙ্গে কাজের অগ্রগতিও থেমে যায়।
এ প্রসঙ্গে সাদিকুর রহমান বলেন, সরকারি চাকরিতে বদলি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তাই ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা, সেকশন অনুযায়ী করতে হবে। যে সেকশনটা সাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ করে, সেই সেকশনের অফিসার যিনি হবেন, তিনি ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হবেন। তাহলে সেখানে ইনস্টিটিউশনাল মেমোরি থেকে যাবে। আর যদি কোনো ব্যক্তিকে করা হয়, তাহলে তিনি তো বদলি হলে ইনস্টিটিউশনাল মেমোরি থাকবে না।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে উঠছে বাংলাদেশ, মানুষের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি রয়েছে, সেখানে উত্তরণ দরকার। কীভাবে তাদের সামাজিক বিমা কাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এ ধরনের কর্মসূচির নীতিকাঠামো রয়েছে। এখন এটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা কীভাবে কাজ করছে, সেটা দেখা।
মোয়াজ্জেম আরও বলেন, রাজনৈতিকভাবে সরকারের অঙ্গীকার হয়তো পরিষ্কার, কিন্তু সেটা বাস্তবায়নে এজেন্সিগুলো যথেষ্ট সচেতন নয়। কিছু ক্ষেত্রে ধারণাগত দিক এবং আইনিভাবে সংস্থাগুলোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক পরিস্থিতির জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোকবলও প্রস্তুত নয়। এই যে, সামগ্রিকভাবে একটি ঘাটতি, এর সমাধান করতে হবে।
এনজিও প্রতিষ্ঠান এসওএস চিলড্রেনস ভিলেজের এইচআর ডিরেক্টর আহমেদ মেহেদী হাসান বলেন, জীবন বিমার ক্ষেত্রে অনেকের ধারণা হলো এমন যে, আমরা যখন মরে যাব তখন টাকা পাব। তাহলে এ টাকা দিয়ে কী করব। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বিমা খাতে আস্থাহীনতা রয়েছে। আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্টের যুগ্ম পরিচালক মো. সাহেদুল হাসান বলেন, ব্যাংক খাতে যত আমানত আছে তার ৯১ শতাংশ হলো ১ থেকে ১ লাখ টাকার হিসাব। এই আমানতধারীদের কোনো ঝুঁকি নেই। তাদের বিমা করা আছে। যদি কোনো ব্যাংক বন্ধ বা দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে এই আমানতকারীরা টাকা পাবে। তবে বড়দের ক্ষেত্রে এটা কার্যকর হবে না।
পিকেএসএফের উপ-মহাপরিচালক হাসান খালেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গে যুক্ত নয়। তবে প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে এগুলো যুক্ত করা হয়েছে। যখন তারা কাজের সন্ধানে বাইরে যাবেন, তাদের সঙ্গে এটা ট্যাগ করে দেওয়া হয়েছে।
গ্রিন ডেলটা ইন্স্যুরেন্সের শুভাশিষ বড়ুয়া বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা রেমিট্যান্স পাঠালেও তাদের যথেষ্ট মূল্যায়ন হচ্ছে না। যাদের মৃত্যু হচ্ছে, তাদের পরিবারের পাশে আমরা দাঁড়াতে পারছি না।
| বিমা খাত থেকে টাকা পয়সা নিয়ে অনেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ঘুরেও বিমার টাকা তোলা যাচ্ছে না। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বর্তমানে তীব্র আস্থা সংকটে পড়েছে খাতটি। এ খাতের প্রতি আস্থা বাড়াতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন জরুরি বলে মত দেন ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। |
২০ ভাগ অর্থ পাচার হয় বিমার মাধ্যমে | বিশ্বে মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে বিমা কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। প্রতি বছর সারাবিশ্বে যত মানি লন্ডারিং হয়, তার প্রায় ২০ শতাংশই বিমা কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করা হয়। এ খাতে অর্থ পাচারের সিংহভাগ ঘটনাই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সংশ্লেষের মাধ্যমে ঘটে থাকে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন। বিমা খাতের লাইফ ও নন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তাদের জন্য বিএফআইইউর উদ্যোগে এ কর্মশালা আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএফআইইউ প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের পরিচালক এসএম মাসুদুল হক ও সহকারী পরিচালক আবু মাহমুদ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাসুদ বিশ্বাস বলেন, বিএফআইইউ সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পরিদর্শনে বিভিন্ন অনিয়ম শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে উলেখযোগ্য হলো-ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিসগুলো রি-ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম বাবদ বিদেশি নামসর্বস্ব ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করা, বিমা পলিসির মেয়াদপূর্তি সত্ত্বেও পলিসির বিপরীতে গ্রাহকদের দাবি নিষ্পত্তি না করা, প্রিমিয়াম বাবদ গৃহীত অর্থ সুষ্ঠুভাবে বিনিয়োগ না করে অন্যত্র স্থানান্তর, প্রিমিয়ামের অর্থ পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন তছরুপ, বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের নিজ ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন পরিচালনা করা।
কর্মশালায় রিসোর্স পার্সন অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মহসিন হোছাইনী মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের নানা খুঁটিনাটি দিক ও এ বিষয়ে করণীয় বিষয়ে বিশদভাবে উপস্থাপন করেন।
| বিশ্বে মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে বিমা কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। প্রতি বছর সারাবিশ্বে যত মানি লন্ডারিং হয়, তার প্রায় ২০ শতাংশই বিমা কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করা হয়। এ খাতে অর্থ পাচারের সিংহভাগ ঘটনাই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সংশ্লেষের মাধ্যমে ঘটে থাকে। |
দেশে চালু হলো ‘ব্যাংকাসুরেন্স’, ব্যাংকেও বিমা করতে পারবেন গ্রাহক | দেশে এবার চালু হলো ‘ব্যাংকাসুরেন্স’। এখন থেকে দেশে কার্যরত সব তফশিলি ব্যাংক বিমা কোম্পানির এজেন্ট হিসাবে কাজ করতে পারবে। একই সঙ্গে বিমা পণ্য বিপণন ও বিক্রির ব্যবসা করতে পারবে ব্যাংকগুলো। ফলে একজন গ্রাহক ব্যাংকেও বিমা করতে পারবেন।
মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশে কার্যরত তফশিলি ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকাসুরেন্স (Bancassurance) প্রবর্তন করা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৭(১)(ল) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনক্রমে সব তফশিলি ব্যাংক বিমা কোম্পানির ‘করপোরেট এজেন্ট’ হিসাবে বিমা পণ্য বিপণন ও বিক্রয় ব্যবসা ১২ ডিসেম্বর থেকে করতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকাসুরেন্স একটি ফরাসি শব্দ। ১৯৮০ সালের দিকে ফ্রান্স ও স্পেন এটি প্রথম চালু করে। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে ব্যাংকের মাধ্যমে জীবন বিমা পলিসি বিক্রি হয়। এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও এটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভারতে এটি চালু হয়েছে প্রায় তিন যুগ আগে। পাকিস্তান, শ্রীলংকাও ব্যাংকাসুরেন্সে সফল হয়েছে।
নীতিমালায় যা আছে : অনুমোদিত নীতিমালা ও নির্দেশিকা অনুযায়ী, ব্যাংকাসুরেন্স বাস্তবায়িত হবে মূলত দেশের ব্যাংকগুলোর শাখার মাধ্যমে। সহজ কথায় বলতে গেলে বিমা কোম্পানির করপোরেট এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে ব্যাংক। দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে যে, বিমা খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা তুলনামূলক কম। তাই ব্যাংকাসুরেন্স হতে পারে মানুষের ভরসার জায়গা।
ধারণাটি এমন যে বিমাপণ্যের জন্য গ্রাহকদের বিমা কোম্পানিতে যেতে হবে না, ব্যাংকের শাখায় গেলেই চলবে। অর্থাৎ ব্যাংক তার নিজের গ্রাহকের কাছে ব্যাংকিং পণ্যের পাশাপাশি বিমাপণ্যও বিক্রি করবে। পণ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পেনশন, স্বাস্থ্য, দুর্ঘটনা, দেনমোহর, শিক্ষা, ওমরাহ হজ ইত্যাদি।
বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো ব্যাংকাসুরেন্সের এজেন্ট হতে পারবে। এজন্য বিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। তবে কোনো ব্যাংকাসুরেন্স এজেন্ট তিনটির বেশি বিমা কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না। এ জন্য বিমা কোম্পানিকে আইডিআরএ এবং ব্যাংকাসুরেন্স এজেন্টকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ব্যাংকের মোট শাখা রয়েছে ১১ হাজার ২৩৯টি। এর মধ্যে গ্রামে আছে ৫ হাজার ২৮৭টি শাখা।
| দেশে এবার চালু হলো ‘ব্যাংকাসুরেন্স’। এখন থেকে দেশে কার্যরত সব তফশিলি ব্যাংক বিমা কোম্পানির এজেন্ট হিসাবে কাজ করতে পারবে। একই সঙ্গে বিমা পণ্য বিপণন ও বিক্রির ব্যবসা করতে পারবে ব্যাংকগুলো। ফলে একজন গ্রাহক ব্যাংকেও বিমা করতে পারবেন। |
সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে বীমাখাতে আস্থা বাড়বে | দেশের বীমাখাতে সমস্যা দীর্ঘদিনের। বড় সমস্যা গ্রাহকের আস্থা সংকট। ‘করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন’ মেনে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই গ্রাহকের আস্থা বাড়বে। সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথোরিটি (আইডিআরএ) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলী। সেমিনারের বিষয় ছিল : করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন।
শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, বীমা এমন এক খাত, যেখানে মানুষের আস্থা প্রয়োজন। এখানে প্রতারণা বা মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, একাউন্টিংয়ের ভাষায় বীমা হলো- অন গোয়িং কনসার্ন। অর্থাৎ এটি চলবেই। তবে চলার মতো চলতে হবে। তার মতে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। এতে বাড়বে ঝুঁকি। আর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বীমার প্রয়োজন। সচিব বলেন, বর্তমানে দেশে ৮১টি বীমা কোম্পানি আছে। সামনে আরও বাড়বে। এখানে চাহিদা আছে, তাই সরবরাহ জরুরি। তবে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই।
বিএম ইউসুফ আলী বলেন, বীমাখাতে দুর্নীতি-অনিয়মের জন্য মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও) দায়ী নয়। চাকরির নিরাপত্তা পেলে বীমাখাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তারা ভূমিকা রাখতে পারবে। তিনি বলেন, বীমাখাতে উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিতে ‘করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন’ সময়োপযোগী। এটা বাস্তবায়ন হলে এখাতে সুশাসন নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, কোম্পানির সিইও একজন কর্মচারি। ফলে পর্ষদের বাইরে কিছুই করার সুযোগ নেই। ম্যানেজমেন্টের লোকজন সব সময় সরকার ও নিয়ন্ত্রকসংস্থার বিধি-বিধান মেনে চলার চেষ্টা করে। বিএম ইউসুফ আলী বলেন, দেশের যে কয়টি বড় কোম্পানি ধ্বংস হয়েছে, তার সিংহভাগ দায় পর্ষদের। ম্যানেজমেন্টের লোকজন বোর্ডের নির্দেশনা মেনেছে। সম্প্রতি অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে শুধু বোর্ড ভাঙাই সমাধান নয়। তিনি বলেন, সিইওদের নেতৃত্বে কোম্পানি পরিচালিত হলে এক টাকাও নষ্ট হবে না।
| দেশের বীমাখাতে সমস্যা দীর্ঘদিনের। বড় সমস্যা গ্রাহকের আস্থা সংকট। ‘করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন’ মেনে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই গ্রাহকের আস্থা বাড়বে। সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথোরিটি (আইডিআরএ) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। |
আমরা অতিথিপরায়ন জাতি বললেই হবে না, প্রমাণ করতে হবে: মন্ত্রী | বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, শুধু কথা নয়; কাজ ও সেবার মাধ্যমে দেশের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা কথায় কথায় বলি আমরা অতিথিপরায়ন জাতি। এটি শুধু বললেই হবে না, সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। পর্যটন শিল্পে সেবার মান ও সেবার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। শুধু কথা নয়, কাজ ও সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। দেশের পর্যটনকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত ১২তম ‘বিমান বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী পর্যটন শিল্প বিভিন্ন দেশের জিডিপি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে এবং উন্নয়নেও যাতে পর্যটন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকতে পারে সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। বর্তমান পৃথিবী প্রচারের পৃথিবী। সারা বিশ্বের পর্যটকদের জানাতে হবে আমাদের কী কী সুবিধা আছে, কিভাবে তারা আমাদের এখানে আসবেন, কী কী দেখবেন। আমাদের এখানে নিরাপত্তার কোনো সমস্যা নেই। পর্যটক বৃদ্ধির জন্য উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল কৌশলের মাধ্যমে আমাদের প্রচার বাড়াতে হবে।
ফারুক খান বলেন, বিদেশে বিভিন্ন পর্যটন মেলায় অংশগ্রহণের বিষয়ে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেখানে ভালো জায়গায় স্টল নিতে হবে, সৃজনশীল কর্মতৎপরতা ও প্রচারের মাধ্যমে দেশকে উপস্থাপন করতে হবে। বিভিন্ন মেলায় আমাদের বেসরকারি খাতের অপারেটররা যাতে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে সেই ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে পর্যটন শিল্পে সরকারের কাজ পলিসি তৈরি করা আর পর্যটন প্রসারে কাজ করে বেসরকারি খাত। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পলিসি পর্যটন বান্ধব। আমরা দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অংশীজনদের সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করব। অন-অ্যারাইভাল ভিসাসহ তাদের আর কী কী সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন তা স্টেকহোল্ডার সভার মাধ্যমে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শিবলুল আজম কোরাইশির সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. মাহবুব আলম, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত নগুয়েন মান চোং, নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি প্রমূখ।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া ৩ দিনব্যাপী এই মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্কের ট্যুর অপারেটর এবং ট্রাভেল এজেন্টরা অংশগ্রহণ করছে। মেলায় তিনটি স্টলে ১২টি প্যাভিলিয়নসহ ১৫০টি স্টল থাকছে। সাইড লাইন ইভেন্ট হিসেবে থাকছে বি টু বি সেশন, সেমিনার ও রাউন্ড টেবিল ডিসকাশন। এছাড়াও মেলায় আসা দর্শনার্থীদের জন্য সাংস্কৃতিক আয়োজন এবং দেশের পর্যটন গন্তব্যের ওপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হবে।
| বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, শুধু কথা নয়; কাজ ও সেবার মাধ্যমে দেশের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। |
ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার | পবিত্র রমজান মাসজুড়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ছিল সুনসান নীরবতা। এবার ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় সেই নীরবতা ভাঙতে চলেছে। পর্যটকদের বরণে সব আয়োজন প্রায় শেষ করেছে হোটেল-মোটেলগুলো।
কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল-মোটেল রং করা ও ধুয়েমুছে পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে। ঈদের ছুটি পাঁচ দিন হলেও টানা সাত দিন কক্সবাজারে পর্যটকরা আসবেন বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এ সময়ের মধ্যে ১০ লাখ পর্যটকের আগমন হলে তাদের কাছ থেকে সব খাত মিলিয়ে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা আয় করতে সক্ষম হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যে পর্যটকদের বরণে প্রস্তুতি শেষ করেছে কক্সবাজারের অবকাশকেন্দ্রগুলো। অধিকাংশ হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউস আগাম বুকিং হয়ে গেছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও ঈদে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন হবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের। পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ প্রান্তে। এবার ঈদে ফেডারেশনভুক্ত আবাসিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউসে ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পাঁচ দিন সরকারি ছুটি রয়েছে। আমাদের হোটেলগুলোতে এরই মধ্যে অনলাইনে বুকিং শুরু হয়েছে। পর্যটকদের অনেক সাড়া পাচ্ছি। এবার প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০ হাজার পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসবেন বলে আমাদের ধারণা। বৈশাখের উত্তাল সাগর পর্যটকদের দেবে ভিন্ন আমেজ।
তারকা মানের হোটেল রয়েল টিউলিপের এজিএম নাদিব চৌধুরী বলেন, আমাদের হোটেলের ৬০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটক টানতে আমরা বিশেষ ছাড়ও দিচ্ছি।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নঈমুল হক টুটুল বলেন, পর্যটক টানতে আমরা দেশি খাবারের পাশাপাশি বিদেশি আইটেম বাড়িয়েছি।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারে প্রায় প্রতিবছরই ঈদের টানা ছুটিতে ১০ লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটে থাকে। এবারও এমনটা প্রত্যাশা আমাদের।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার শেহরিন আলম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে সমুদ্রসৈকতসহ গুরুত্বপূর্ণ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় আবারও চিরচেনা রূপে ফিরবে সৈকতসহ পর্যটন এলাকা। আমরা কলাতলী ডলফিন মোড়ে পর্যটকদের সুবিধার্থে হেল্প বুথ স্থাপন করেছি। পর্যটকদের কাছ থেকে খাবারের অতিরিক্ত দাম কিংবা রুমের ভাড়া আদায় করলে অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই পর্যটক ম্যাজিস্ট্রেট।
| পবিত্র রমজান মাসজুড়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ছিল সুনসান নীরবতা। এবার ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় সেই নীরবতা ভাঙতে চলেছে। পর্যটকদের বরণে সব আয়োজন প্রায় শেষ করেছে হোটেল-মোটেলগুলো। |