title
stringlengths
10
148
text
stringlengths
14
34.6k
summary
stringlengths
1
7.08k
মা-মেয়েকে মুক্তি দিয়ে যে বার্তা দিল হামাস
জিম্মি করে রাখা দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তারা হলেন—জুডিথ রানান (৫৯) ও তার মেয়ে নাতালি রানান (১৭)। আজ শনিবার বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে হামলার পর যে ২০০ জনকে জিম্মি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে এই প্রথম দুইজনকে মুক্তি দিলো হামাস। আরওজীবন কেন ফিলিস্তিনিদের নয় রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার পর হামাস বলেছে, 'কাতারের প্রচেষ্টার প্রতিক্রিয়ায় "মানবিক কারণে" জিম্মি দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।' এর আগে হামাস জিম্মি 'বিদেশি' নাগরিকদের 'অতিথি' হিসেবে উল্লেখ করে জানিয়েছিল, উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে তাদের মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু শুধু বিদেশিদের নাকি ইসরায়েলিদেরও মুক্তি দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে হামাস নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি। হামাসের হাতে জিম্মি মার্কিন দুই নাগরিক ২১ অক্টোবর অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তি পান। ছবি: রয়টার্স সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার ঘটনাটি 'প্রথম পদক্ষেপ'। আরও অনেকের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। হামাস দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, জিম্মি বাকিদের উদ্ধারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে 'জয়ের আগ পর্যন্ত' ইসরায়েলি বাহিনী তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার উদ্যোগের প্রশংসা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য জিম্মিদের মুক্তির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আরওফিলিস্তিনের শিশু: এত জন্ম, তবু কমে আসে জাতির আকার দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা। এর কিছুক্ষণ পরেই নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় চার হাজার ১৩৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত ১৩ হাজারের বেশি মানুষ। নিহতদের মধ্যে শিশু এক হাজার ৫২৪, আর নারী এক হাজারের বেশি। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১১ সাংবাদিকও। এ ছাড়া, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় বৃহস্পতিবার পাঁচ শিশুসহ ১৩ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল বলছে, হামাসের হামলায় এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত চার হাজার ৬২৯ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৬৩ জন সেনা ও পুলিশ সদস্য। আরওজিম্মিদের মুক্তির আগে গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধ চায় হামাস আরওজিম্মি ২ মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার দাবি হামাসের আরওস্বাধীন ফিলিস্তিনের সমর্থক ভারত যেভাবে ইসরায়েলের ‘বন্ধু’ হলো আরওভারত থেকে কেন ফিলিস্তিনবিরোধী মিথ্যা প্রচারণা চলছে আরওকেন হামাসকে ‘টেররিস্ট’ বলে না বিবিসি আরওসিএনএনের বিশ্লেষণ: যেভাবে অস্ত্রের যোগান পায় হামাস আরওযেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় হামাস, গাজায় তাদের ভূমিকা কী আরওকে এই ‘আল-আকসা ফ্লাড’ এর মাস্টারমাইন্ড মোহাম্মদ দেইফ আরও‘আমরা জানতাম পাল্টা হামলা হবেই’ আরওইসরায়েল বনাম হামাস আরওইসরায়েলের কারাগারে কত ফিলিস্তিনি বন্দি আরওগাজায় ৪ সমস্যার মুখে পড়তে পারে ইসরায়েল আরওকোথায় যাব আমরা আরওইসরায়েলে হামাসের হামলায় যেভাবে লাভবান হবে রাশিয়া আরওযেভাবে ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিলো হামাস রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার পর হামাস বলেছে, 'কাতারের প্রচেষ্টার প্রতিক্রিয়ায় "মানবিক কারণে" জিম্মি দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।' হামাসের হাতে জিম্মি মার্কিন দুই নাগরিক ২১ অক্টোবর অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তি পান। ছবি: রয়টার্স সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার ঘটনাটি 'প্রথম পদক্ষেপ'। আরও অনেকের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। হামাস দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, জিম্মি বাকিদের উদ্ধারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে 'জয়ের আগ পর্যন্ত' ইসরায়েলি বাহিনী তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার উদ্যোগের প্রশংসা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য জিম্মিদের মুক্তির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আরওফিলিস্তিনের শিশু: এত জন্ম, তবু কমে আসে জাতির আকার দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা। এর কিছুক্ষণ পরেই নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় চার হাজার ১৩৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত ১৩ হাজারের বেশি মানুষ। নিহতদের মধ্যে শিশু এক হাজার ৫২৪, আর নারী এক হাজারের বেশি। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১১ সাংবাদিকও। এ ছাড়া, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় বৃহস্পতিবার পাঁচ শিশুসহ ১৩ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল বলছে, হামাসের হামলায় এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত চার হাজার ৬২৯ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৬৩ জন সেনা ও পুলিশ সদস্য। আরওজিম্মিদের মুক্তির আগে গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধ চায় হামাস আরওজিম্মি ২ মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার দাবি হামাসের আরওস্বাধীন ফিলিস্তিনের সমর্থক ভারত যেভাবে ইসরায়েলের ‘বন্ধু’ হলো আরওভারত থেকে কেন ফিলিস্তিনবিরোধী মিথ্যা প্রচারণা চলছে আরওকেন হামাসকে ‘টেররিস্ট’ বলে না বিবিসি আরওসিএনএনের বিশ্লেষণ: যেভাবে অস্ত্রের যোগান পায় হামাস আরওযেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় হামাস, গাজায় তাদের ভূমিকা কী আরওকে এই ‘আল-আকসা ফ্লাড’ এর মাস্টারমাইন্ড মোহাম্মদ দেইফ আরও‘আমরা জানতাম পাল্টা হামলা হবেই’ আরওইসরায়েল বনাম হামাস আরওইসরায়েলের কারাগারে কত ফিলিস্তিনি বন্দি আরওগাজায় ৪ সমস্যার মুখে পড়তে পারে ইসরায়েল আরওকোথায় যাব আমরা আরওইসরায়েলে হামাসের হামলায় যেভাবে লাভবান হবে রাশিয়া আরওযেভাবে ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিলো হামাস সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার ঘটনাটি 'প্রথম পদক্ষেপ'। আরও অনেকের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। হামাস দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, জিম্মি বাকিদের উদ্ধারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে 'জয়ের আগ পর্যন্ত' ইসরায়েলি বাহিনী তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার উদ্যোগের প্রশংসা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য জিম্মিদের মুক্তির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আরওফিলিস্তিনের শিশু: এত জন্ম, তবু কমে আসে জাতির আকার দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা। এর কিছুক্ষণ পরেই নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় চার হাজার ১৩৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত ১৩ হাজারের বেশি মানুষ। নিহতদের মধ্যে শিশু এক হাজার ৫২৪, আর নারী এক হাজারের বেশি। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১১ সাংবাদিকও। এ ছাড়া, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় বৃহস্পতিবার পাঁচ শিশুসহ ১৩ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল বলছে, হামাসের হামলায় এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত চার হাজার ৬২৯ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৬৩ জন সেনা ও পুলিশ সদস্য। আরওজিম্মিদের মুক্তির আগে গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধ চায় হামাস আরওজিম্মি ২ মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার দাবি হামাসের আরওস্বাধীন ফিলিস্তিনের সমর্থক ভারত যেভাবে ইসরায়েলের ‘বন্ধু’ হলো আরওভারত থেকে কেন ফিলিস্তিনবিরোধী মিথ্যা প্রচারণা চলছে আরওকেন হামাসকে ‘টেররিস্ট’ বলে না বিবিসি আরওসিএনএনের বিশ্লেষণ: যেভাবে অস্ত্রের যোগান পায় হামাস আরওযেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় হামাস, গাজায় তাদের ভূমিকা কী আরওকে এই ‘আল-আকসা ফ্লাড’ এর মাস্টারমাইন্ড মোহাম্মদ দেইফ আরও‘আমরা জানতাম পাল্টা হামলা হবেই’ আরওইসরায়েল বনাম হামাস আরওইসরায়েলের কারাগারে কত ফিলিস্তিনি বন্দি আরওগাজায় ৪ সমস্যার মুখে পড়তে পারে ইসরায়েল আরওকোথায় যাব আমরা আরওইসরায়েলে হামাসের হামলায় যেভাবে লাভবান হবে রাশিয়া আরওযেভাবে ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিলো হামাস দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা। এর কিছুক্ষণ পরেই নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জিম্মি করে রাখা দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে হামাস।
জিম্মি ২ মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার দাবি হামাসের
মানবিক কারণে জিম্মি দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার দাবি করেছে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস। আজ শুক্রবার আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা এক বিবৃতিতে বলেন, 'কাতারের প্রচেষ্টার প্রতিক্রিয়ায় আল-কাসাম ব্রিগেড মানবিক কারণে দুই মার্কিন নাগরিককে (মা ও মেয়ে) মুক্তি দিয়েছে।' তিনি বলেন, 'মার্কিন জনগণ এবং বিশ্বের কাছে জো বাইডেন ও তার ফ্যাসিবাদী প্রশাসনের দাবিগুলোকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন প্রমাণ করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।' তবে হামাসের এ দাবিকে এখনো নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি ইসরায়েল এবং তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
মানবিক কারণে জিম্মি দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার দাবি করেছে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস।
পুতিন ও হামাসে কোনো পার্থক্য নেই: বাইডেন
ইসরায়েল ও ইউক্রেনের প্রতি জোরালো সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে গাজার সংগঠন হামাস একই সুতোয় গাঁথা বলে মন্তব্য করেন তিনি। ওয়াশিংটনের ওভাল অফিস থেকে জাতির উদ্দেশে পূর্ব নির্ধারিত ভাষণে বাইডেন বলেন, 'হামাস ও পুতিন আলাদা হামলার প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু তাদের নৈতিকতা একই। উভয়ই প্রতিবেশীর গণতন্ত্রকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে চায়।' তিনি দাবি করেছেন, প্রকৃত অর্থে বিশ্ব মানচিত্রে একটি রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের অবস্থান মেনে নিতে চান না পুতিন। তাকে থামানো না গেলে শুধু ইউক্রেনেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবেন না। ইসরায়েল ও ইউক্রেনের সফলতা নিশ্চিত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন জো বাইডেন।
ইসরায়েল ও ইউক্রেনের প্রতি জোরালো সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে গাজার সংগঠন হামাস একই সুতোয় গাঁথা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফিলিস্তিনের সমর্থনে পোস্ট দেওয়ায় সুপারমডেল জিজি হাদিদকে সপরিবারে হত্যার হুমকি
চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রথম থেকেই ২৮ বছর বয়সী সুপারমডেল জিজি হাদিদ সক্রিয়ভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করায় ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত জিজি হাদিদ ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ফোনকলে তারা হত্যার হুমকি পেয়েছেন। মার্কিন ট্যাবলয়েড টিএমজেডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হুমকি পেয়ে জিজি, বোন বেলা হাদিদ (২৭), ভাই আনোয়ার হাদিদ (২৪), এবং বাবা-মা ইয়োলান্ডা ও মোহাম্মদ তাদের ফোন নম্বর পরিবর্তন করেছেন। জিজি হাদিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের পাশাপাশি এটাও বলেছেন যে, তিনি কোনো গোষ্ঠী বিশেষ করে ইহুদিদের ক্ষতির ইচ্ছা পোষণ করেন না। তিনি বলেছেন, 'যদিও ফিলিস্তিনিদের জন্য আমার আশা ও স্বপ্ন আছে। কিন্তু কোনো ইহুদির ক্ষতি চাই না।' 'নিরপরাধ মানুষকে আতঙ্কিত করা..."ফিলিস্তিন মুক্তির" আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করবে না। বরং কয়েক দশক ধরে চলে আসা দীর্ঘ, বেদনাদায়ক প্রতিশোধের চক্রকে প্ররোচিত করেছে... এবং এই ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে যে ফিলিস্তিনপন্থী মানেই ইহুদি-বিরোধী,' জিজি লিখেছেন। তিনি আরও লিখেছেন, 'ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি সরকারের আচরণে ইহুদিবাদীতার কিছু নেই। ইসরায়েলের নেতৃত্বের নিন্দা করা ইহুদিবিরোধীতা নয় এবং ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করা হামাসকে সমর্থন করা নয়।' আরওফিলিস্তিনের সমর্থনে টুইট, মিয়া খলিফার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করল প্লেবয়   তার পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'হামাসের ইসরায়েলিদের হত্যা করা সাহসী কিছু নয়। হামাসের নিন্দা করা ফিলিস্তিন বিরোধিতা নয় এবং ইসরায়েলিদের নৃশংস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে সাহায্য করা একটি নৈতিক দায়িত্ব। 'স্টেট অফ ইসরায়েল' অ্যাকাউন্ট থেকে তার পোস্টে ট্যাগ করে লিখেছে, 'আপনি কি গত সপ্তাহে ঘুমিয়ে ছিলেন?' গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিতে রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস। এ হামলায় নিহত হাজারের বেশি। হামাসের দাবি, তারা শতাধিক লোককে অপহরণ করে জিম্মি করেছে। এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় বিমান হামলা শুরু করে। এক পর্যায়ে গাজায় স্থল হামলার ঘোষণা দেয় ইসরায়েল সেনাবাহিনী। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে।
চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রথম থেকেই ২৮ বছর বয়সী সুপারমডেল জিজি হাদিদ সক্রিয়ভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিয়ে আসছেন।
অক্টোবরে চালু হবে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বহুল প্রত্যাশিত তৃতীয় টার্মিনালটি আগামী অক্টোবরে চালু হতে যাচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম জানায়, তৃতীয় টার্মিনালের শতভাগ নির্মাণ কাজ আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টার্মিনালের দায়িত্ব বুঝে নেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ক্যালিব্রেশন এবং যন্ত্রপাতির পরীক্ষা করা হয়েছে। টার্মিনালটি অক্টোবরের মধ্যেই ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে।' গত বছরের ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় টার্মিনালটি আংশিক ব্যবহারের জন্য খুলে দেন। ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর শুরু হয়েছিল। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে শাহজালাল বিমানবন্দরে দুটি টার্মিনালের সঙ্গে আরও ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার স্থান যুক্ত হবে। তিনতলা টার্মিনাল ভবনটিতে থাকবে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপারচার ও ৫৯টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং তিনটি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক। কনসালটেন্সি ফার্ম নিপ্পন কোইয়ের প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, টার্মিনালে অপারেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার জন্য ৬ হাজার দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হবে।  নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য প্রায় ৪ হাজার কর্মীর প্রয়োজন হবে। কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু এত লোকবল অক্টোবরের মধ্যে পাওয়া যাবে না, তাই প্রথম কয়েক মাসে টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু নাও হতে পারে। শুরুর কয়েক মাস বেবিচক ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস টার্মিনালটি পরিচালনা করবে। আগামী বছরের প্রথম দিকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা দিয়ে থাকে। তারা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসও পরিচালনা করে। ইতোমধ্যেই সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের অধীনে একটি জাপানি কনসোর্টিয়ামকে তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সূত্র জানায়, এ বিষয়ে বেবিচক ছয়টি জাপানি কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তবে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে প্রায় এক বছর সময় লাগতে পারে।  একজন 'লেনদেন উপদেষ্টা'কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যিনি একটি প্রতিবেদন তৈরি করছেন। সেটি তিনি এপ্রিল মাসে বেবিচক-কে দেবেন। প্রতিবেদনে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগস্টের মধ্যে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা প্রদানে আগ্রহী জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে একটি চুক্তি সই হবে বলে জানা গেছে। কনসোর্টিয়ামটির প্রস্তুত হতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগবে। ওই জাপানি ফার্ম প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত টার্মিনাল-৩ আংশিকভাবে চালু থাকবে। টার্মিনালের কার্যক্রম সম্পর্কে অক্টোবরে ঘোষণা দেবে বেবিচক। জাপানি কনসোর্টিয়াম টার্মিনালের অপারেশন পরিচালনা করবে এবং বেবিচক নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবে। মফিদুর বলেন, 'আমরা নিজেরাই কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন পরিচালনা করব। একজন যাত্রী বিমানবন্দরে প্রবেশ করার সময় থেকে বিমানে ওঠার সময় পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো নিশ্চিত করে জাপানি কোম্পানি বিমানবন্দরটি পরিচালনা করবে।' তৃতীয় টার্মিনালটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে যাত্রীদের ভেতরে ঢুকতে ও বের হতে সুবিধা হয়। টার্মিনালটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভূগর্ভস্থ রেলপথ এবং বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সাথে একটি টানেলের মাধ্যমে সংযুক্ত হবে। এছাড়া হজযাত্রীরা আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে আরেকটি টানেল দিয়ে তৃতীয় টার্মিনালে যেতে পারবেন।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বহুল প্রত্যাশিত তৃতীয় টার্মিনালটি আগামী অক্টোবরে চালু হতে যাচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম জানায়, তৃতীয় টার্মিনালের শতভাগ নির্মাণ কাজ আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টার্মিনালের দায়িত্ব বুঝে নেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
দেশ থেকে সরাসরি বিদেশি এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রি বন্ধ, বাড়ছে দাম
এখন তারা অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির (ওটিএ) কাছে টিকিট বিক্রি করছে। অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে বেশ কয়েকটি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর একটি হলো স্থানীয় এজেন্টদের কাছে টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়া। বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের, বিশেষ করে অভিবাসী শ্রমিকরা চাপে পড়ছেন। অন্যটি হলো, প্রায় তিন হাজার ৬০০ স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্টদের ব্যবসা দ্রুত লোকসানে পড়ছে। বিদেশি এয়ারলাইনস ও অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ সরকারি কর্মকর্তাদেরও বিব্রত করছে এবং বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। উদাহরণ স্বরূপ, গত ডিসেম্বরে রিয়াদে আয়োজিত আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) এয়ার সার্ভিস নেগোসিয়েশন ইভেন্টে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রধান ও কয়েকটি দেশের এয়ারলাইনসের প্রতিনিধিরা একত্রিত হন। সেখানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমানের কাছে তারা জানতে চান, বাংলাদেশে আটকে থাকা অর্থ তারা কবে নাগাদ ফেরত পাবেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'সবার সামনে তারা আমাদের (বেবিচক) প্রধানকে তাদের আটকে থাকা অর্থ ছাড় করতে বলেছিল, যা আমাদের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করেছে।' প্রায় ৩০০ এয়ারলাইনসের একটি সংস্থা আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)। এর মাধ্যমে আকাশপথে বিশ্বের ৮৩ শতাংশ পরিবহন হয়। টিকিট বিক্রি থেকে আয়ের অর্থ দিতে না পারায় গত বছরের জুনে সংস্থাটি বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্বিতীয় 'সর্বোচ্চ খারাপ' হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তালিকার প্রথমে আছে নাইজেরিয়া। বৈদেশিক রিজার্ভ কমতে শুরু করায় বাংলাদেশ বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোকে ধীর গতিতে মুনাফার অর্থ দিচ্ছে। আইএটিএ-তথ্য অনুসারে, গত বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ২১৪ মিলিয়ন ডলার পাওনা ছিল। গত ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদেশি এয়ারলাইনসের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, তবে তা এখনো ভয়াবহ। আমাদের আয় সঠিকভাবে পাঠাতে পারছি না। আমরা ওটিএ-তে চলে এসেছি, যেন মুনাফা পাঠাতে পারি।' আরেকটি এয়ারলাইনসের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আগে ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে পারতাম এবং একটি নির্ধারিত ব্যাংকের মাধ্যমে আমাদের আয় পাঠাতে পারতাম। কিন্তু এখন ডলারের সংকট সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছে।' ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আয়ের অর্থ পাঠাতে দেরি হলে লাভের পরিমাণ কমে আসে। কারণ দ্রুত টাকার মূল্য ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যায়। বেবিচকের তথ্য অনুসারে, ৩২টি বিদেশি এয়ারলাইনস প্রতিদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১৬০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (এটিএবি) মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ বলেন, 'পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাংলাদেশের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার এয়ার টিকিট ব্যবসা বিদেশি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্টদের হাতে চলে যাবে।' তিনি বলেন, কয়েকটি রুটে টিকিটের দাম; বিশেষত নিউইয়র্ক, কানাডা ও লন্ডনের মতো দূরের পথে টিকিটের দামও ৫০ থেকে ১০০ ডলার বেড়েছে। টিকিট বিদেশে বিক্রি হওয়ায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। এটিএবি সভাপতি এসএন মঞ্জুর মুর্শেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশে কম ভাড়ায় টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ায় যাত্রীদের বেশি দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে।' তিনি আরও বলেন, এখন যে কোনো স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্টের কাছে ব্যাংকক যাওয়ার টিকিটের দাম প্রায় ২৫ হাজার টাকা। একই টিকিট ওটিএ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারে। মঞ্জুর মুর্শেদ জানান, তারা বারবার বেবিচককে এই সমস্যার সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন। অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এবং অ্যাভিয়েশন ও ট্যুরিজম সংক্রান্ত এক জার্নালের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরেই এ সংকট চলছে।' তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি এয়ারলাইনসকে তাদের আয়ের একটি অংশ পাঠানোর সুযোগ দিচ্ছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে বেশির ভাগ এয়ারলাইনস বাংলাদেশে কম ভাড়ার টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছে। 'ফলে বাংলাদেশি যাত্রী ও স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন,' বলে মন্তব্য করেন তিনি। এতে বাংলাদেশের বদনাম হচ্ছে মত দিয়ে ওয়াহিদুল আরও বলেন, 'বাংলাদেশে সেবা দিতে আগ্রহী এয়ারলাইনসরা নিরুৎসাহিত হবে।' এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেবিচক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশে কয়েকটি এয়ারলাইনসের বিশাল বিনিয়োগ আটকে থাকায় কয়েকটি এয়ারলাইনস ও কয়েকটি দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রধানরা আমাকে অনুরোধ করেছেন, যাতে আমরা তাদের আয় তাদের নিজ দেশে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করি।' 'আমরা ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছি।' কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'ডলার সংকটের কারণে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো তাদের আয় দেশে পাঠাতে পারছে না এমন তথ্য তার কাছে নেই।'
এখন তারা অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির (ওটিএ) কাছে টিকিট বিক্রি করছে।
অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রে ডুবে বাংলাদেশি ব্যাংকারের মৃত্যু
মাত্র দুই দিন আগে স্বপরিবারে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বেড়াতে এসেছিলেন নেওয়াজ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ রুমন। সমুদ্র পাড়ে বেড়াতে গেলে প্রবল ঢেউ এসে তাকে ভাসিয়ে নেয় গভীর সমুদ্রে। ৩০ মিনিট পর উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ। গতকাল রোববার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় নিউ সাউথ ওয়েলসের উপকূল কোলেডেলের শার্কির বিচ গ্র্যান্ড প্যাসিফিক ড্রাইভে এ ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, নেওয়াজ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ গত ১২ এপ্রিল এক মাসের সফরে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় ঈদের পরই বন্ধুদের নিয়ে তিনি বেড়াতে যান উলংগং সমুদ্র সৈকতে। সেখানে বেশ কয়েকটি ছবি তুলে নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপর তিনি সমুদ্রের একেবারে কিনারায় যান সবার সঙ্গে সেলফি তুলতে। হঠাৎ বিশাল ঢেউ এসে তাকে টেনে নিয়ে যায়। তার বন্ধুরা সঙ্গে সঙ্গে রেস্কিউ হেলিকপ্টার কল করলেও রেস্কিউ বোট এসে প্রায় ৩০ মিনিট পর তার মরদেহ উদ্ধার করে। রুমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬তম ব্যাচের ম্যানেজমেন্টের ছাত্র ছিলেন। বর্তমানে তিনি কর্মরত ছিলেন মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসির প্রধান শাখায় সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে। তিনি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার সেতুভাঙা এলাকার একে এম জাকির হোসেনের ছেলে। আকিদুল ইসলাম, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক
মাত্র দুই দিন আগে স্বপরিবারে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বেড়াতে এসেছিলেন নেওয়াজ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ রুমন। সমুদ্র পাড়ে বেড়াতে গেলে প্রবল ঢেউ এসে তাকে ভাসিয়ে নেয় গভীর সমুদ্রে। ৩০ মিনিট পর উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ।
বুয়েটের নতুন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আল আমিন সিদ্দিক
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিনের সই করা গতকাল সোমবারের এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বুয়েট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের দায়িত্ব পালন করবেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি নিয়মানুযায়ী ভাতা ও সুযোগ সুবিধা পাবেন। পরিদপ্তরের বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমানকে অধ্যাপক ড. আল আমিন সিদ্দিককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে অফিস আদেশে। এর আগে গত মার্চের শেষদিকে মধ্যরাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশের ঘটনায় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমানের অপসারণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। বুয়েট কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য রাত সাড়ে ১০টার পর ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হলে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের অনুমতি দেওয়ার বিধান আছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক।
এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু, বিলম্ব ফি দিয়ে ইএফএফ করা যাবে ২ মে পর্যন্ত
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত অনলাইনে ফরম পূরণ করা যাবে। এছাড়া সোনালী সেবার মাধ্যমে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ফি জমা দেওয়া যাবে। কোনো কারণে এই সময়ের মধ্যে কেউ টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হলে ২৯ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত ১০০ টাকা বিলম্ব ফি দিয়ে ফরম পূরণ (ইএফএফ) করতে পারবে। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাশার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এবার রেজিস্ট্রেশন নবায়ন ফি শিক্ষার্থী প্রতি ২৫০ টাকা। প্রাইভেট পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষার ফি ২০০ টাকা। তবে যাদের নির্বাচনী পরীক্ষা নেই (দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসি ও হাত নেই এমন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পুলিশ, মিলিটারি) তাদের ব্যবস্থাপনা ফি ১০০ টাকা করে। যাদের ব্যবহারিক বিষয় নেই তাদের পরীক্ষার কেন্দ্র ফি ৪৫০ টাকা এবং ব্যবহারিক বিষয় থাকলে প্রতি পত্রের জন্য ২৫ টাকা করে দিতে হবে। ব্যবহারিক উত্তরপত্রে মূল্যায়ন ফি প্রতি পত্রের জন্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য চতুর্থ বিষয়সহ বিজ্ঞান শাখায় বোর্ড ও কেন্দ্র ফি দুই হাজার ৬৮০, মানবিক শাখায় দুই হাজার ১২০ ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় দুই হাজার ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের কোনো পরীক্ষার্থীর চতুর্থ বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকলে ১৪০ টাকা বেশি দিতে হবে। এছাড়া, নৈর্বাচনিক বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকলে বিষয় প্রতি আরও ১৪০ টাকা জমা দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, নগদ টাকা, পে-অর্ডার, পোস্টাল অর্ডার, মানি অর্ডার, সিকিউরিটি ডিপোজিট রিসিট বা ট্রেজারি চালানে বোর্ডের ফি জমা দেওয়া যাবে না।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হয়েছে।
বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতা রাব্বির হলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত হাইকোর্টে স্থগিত
বুয়েটশিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাব্বির হলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ইমতিয়াজের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সরওয়ার কাজলের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এছাড়া, রাব্বির হলের সিট বাতিল সংক্রান্ত বুয়েট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুল জারি করেন আদালত। গত ২৮ মার্চ রাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৯ মার্চ তিতুমীর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রাব্বির সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায় বুয়েট কর্তৃপক্ষ। রাব্বির আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাইকোর্টের আজকের আদেশের পর ইমতিয়াজের হলের সিট ফিরে পেতে কোনো আইনি বাধা নেই।' তিনি আরও বলেন, 'কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়েই বুয়েট কর্তৃপক্ষ রাব্বির সিট বাতিল করে।' ২০১৯ সালে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনার পর ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
বুয়েটশিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাব্বির হলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠিতে যা লিখলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে চলমান থাকবে কি থাকবে না, এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ এবং বুয়েট শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার এই খোলা চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত পাঁচ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী আপনার প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে সবিনয়ে আমাদের দু-চারটি কথা এবং আর্জি আপনার কাছে নিবেদন করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের স্বপ্নসারথি, বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে আপনি দৃঢ় পায়ে এগিয়ে চলেছেন। আপনি দেশকে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে এগিয়ে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন, সেই একই স্বপ্ন বুকে ধারণ করে নিজেদের শ্রম-মেধা-মনন কাজে লাগিয়ে নিরঙ্কুশ অধ্যবসায়ের পর আপনার গর্বের এই দেশসেরা প্রতিষ্ঠানে আমরা পড়ার সুযোগ করে নিয়েছি। আমরা করোনার সেই বিপদ মুহূর্তে বানিয়েছি লো কষ্ট ভ্যান্টিলেটর, ক্লিন সিটির আশায় পরিত্যক্ত মাস্ক থেকে বানাচ্ছি কনক্রিট, আরও খুঁজছি বিদ্যুতের সহজ উপায়, বানাচ্ছি আর্টিফিশিয়াল আর্মস, সার্জিক্যাল টুলস, পদ্মা সেতু নির্মাণে আমাদের শিক্ষক এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের অবদান অনবদ্য। শুধু দেশেই না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্য দেশের দলগুলো—যাদের জন্য বরাদ্দ থাকে আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ এবং গবেষণাগারের সুবিধা—তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা ছিনিয়ে আনছি বিজয়। আপনি নিঃশর্তভাবে আমাদের অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন এসব গবেষণা খাতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের অভিভাবক। আমরা নিজেদের মেধা ও শ্রমের সবটুকু দিয়ে বিজ্ঞানের অবাক করা দুনিয়ার একটা অংশের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে দেখতে চাই। আমরা ত্রাসের রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না। আমরা শুধু দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে জানি। নিজেদের কাজ দিয়ে তা আমরা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি মানবকল্যাণব্রতী। আপনি আমাদের সবার অভিভাবক, দেশের অভিভাবক। আমরা জানি দেশের কোথাও কোনো দুঃখজনক পরিস্থিতি চললে, দেশের কোথাও সংকট চললে, আপনার হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ হয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, আশির দশকে স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে এই দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অথচ বিগত বছরগুলোতে আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার নেতিবাচক দিকগুলোই প্রত্যক্ষ করেছি। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মাঝে সূচনা ঘটেছে আধিপত্য, দাপট, র‌্যাগিং, শিক্ষকদের অপমান, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নিপীড়ন, খুনোখুনিতে মেতে ওঠার মতো ঘটনা এবং এর ব্যাপ্তি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ৯৯ এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল ০৯ এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল ১৭ এর আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার শাহরিয়ারকে স্ট্যাম্প দিয়ে রাতভর বেধড়ক মারধর করা হয়। ১৭ ব্যাচের মেহজাদ গালিবকে নগ্ন করে সোহরাওয়ার্দী হলের ছাদে তুলে স্ট্যাম্প দিয়ে সারারাত মারা হয়। ১৫ ব্যাচের সামিউত তৌসিফকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেয়। মারতে মারতে তিনটা স্ট্যাম্প ভেঙে ফেলা হয়। সামিউত তৌসিফ ছিলেন এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, তার চাচা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। তার লিগামেন্ট ছিঁড়ে পায়ে ফ্র্যাকচার হয়ে যায়। আরওছাত্রলীগের জেরার পর বুয়েট শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার সালাম না দেওয়ায় সাখাওয়াত অভির হাত ভেঙে ফেলে আবরার ফাহাদের হত্যাকারী অমিত সাহা। সৌমিত্র লাহিড়ী থাপ্পর দিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলে একজনের। এরকম আছে আরও অসংখ্য কাহিনী। দাপটের আড়ালে ছাত্ররাজনীতি আমাদের ক্যাম্পাসে উন্মুক্তভাবে বিচরণের অধিকার, ক্যাম্পাসের সুস্থ একাডেমিক পরিবেশ, আমাদের স্বাধীনতা, হলের মেসের টাকার সৎ ব্যবহার, ক্যাম্পাস মাদকমুক্ত থাকা, নবীন আগত বুয়েটিয়ানদের একটি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন উপভোগের অধিকার—সবকিছুই হারিয়ে গিয়েছিল। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ। বুয়েট শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটি নিরাপদ এবং সুস্থ ক্যাম্পাস চেয়ে এসেছে, যেখানে ক্ষমতা-চর্চার লোভ-লালসার শিকলে আবারও জিম্মি হয়ে যাবে না সবার নিরাপত্তা, শিক্ষাঙ্গনের উপযুক্ত পরিবেশ। সুস্থ নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা বিকাশের সব উপাদান ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি ছাড়াও গত কয়েক বছরে উপস্থিত ছিল এবং এতে সুস্থ নেতৃত্বের চর্চায় শিক্ষার্থীরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক উৎসব আয়োজন, প্রতিটি ডিপার্টেমেন্টের নিজস্ব সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং একাডেমিক অর্গানাইজেশন, সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ, বিভিন্ন ক্লাবের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে আনন্দের সঙ্গে সম্পন্ন হচ্ছে। আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ক্ষমতা-চর্চা ছাড়াই বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সভা-সেমিনার আয়োজন, জাতীয় সহশিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্জনসহ ক্যাম্পাসের ভেতরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সফলভাবেই আয়োজিত হয়েছে। আরও‘খুনিদের ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’ বর্তমান বুয়েটে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ থাকায় নিজ নিজ প্রকৌশল ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণামুখী কাজে মনোনিবেশ করতে অনুপ্রাণিত হওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি রাজনীতিবিহীন নিরাপদ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য দেশব্যাপী জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং সমাদৃত হয়েছে। রাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাসের গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের এসব সফলতা আমাদের জানান দেয়, আমরা আমাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ছাড়াও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যে প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন নেতৃত্ব গঠন এবং বিকাশ প্রয়োজন, তা করতে পারি। স্মার্ট বাংলাদেশ এর লক্ষ্য অর্জনে আমরা নিরন্তর কাজ করে যেতে পারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জেনে খুশি হবেন যে বাকি সব প্রকৌশল-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বুয়েটেও থিসিসের জন্য রিসার্চ টাস্ক চতুর্থ বর্ষে আবশ্যক হলেও আমাদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আগে থেকে বিভিন্ন রিসার্চ প্রজেক্টে নিজ ইচ্ছায় অংশগ্রহণ করছে। এ ছাড়া, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রকৌশল প্রতিযোগিতায়, বিতর্ক প্রতিযোগিতায়, কুইজ প্রতিযোগিতায়, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বুয়েটিয়ানদের সাফল্য গত সাড়ে চার বছরে সুস্পষ্টভাবে বেড়েছে। আপনি জেনে আরও খুশি হবেন যে তথ্য-প্রযুক্তিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি—আন্তর্জাতিক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় আমাদের অর্জন স্বর্ণপদক। ইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সাইন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ডের মতো বিশ্ব সমাদৃত অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বুয়েটের ছয় জন এবং শুধু গত বছরেই চার শিক্ষার্থী। জন হপকিন্স রাইস ইউনিভার্সিটির মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের হেলথকেয়ার চ্যালেঞ্জে আমাদের উপস্থিতি এবং পুরস্কার প্রাপ্তি এখন নিয়মিত। থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার আইইইই কম্পিটিশনে আমাদের বুয়েটিয়ানদের বানানো ড্রোন একের পর এক পুরস্কার জিতেছে। মার্স রোভার চ্যালেঞ্জেও আমাদের দলের সাফল্য নিয়মিত। শুধুমাত্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নয়, সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্টে উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে বুয়েটের এক স্টার্টআপ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন যে বুয়েটের প্রকৃতি ভিন্ন। তাই তিনি নিজে রাজনীতির আওতা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাইরে রেখেছিলেন। আজ যখন তারই গড়ে তোলা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বুয়েটের মতো বিশেষায়িত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেকোনো মূল্যে রাজনীতির আওতায় আনার কথা বলে, আমরা বিশ্বাস করি তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও সিদ্ধান্তকে অপমান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠিতে বুয়েট শিক্ষার্থীরা একইসঙ্গে সিনিয়র-জুনিয়র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামিয়েছে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ফেস্ট, ডিপার্টমেন্টাল ডে—যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা আমাদের সহপাঠীরাও যথেষ্ট খুশি হয়েছে আমাদের আয়োজনে। এ আয়োজন ও অংশগ্রহণ সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র একটি নিরাপদ ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের কারণে। যেখানে হল রেসিডেন্ট কোনো শিক্ষার্থীকে চিন্তায় থাকতে হয়নি যে হলে তাকে র‌্যাগের সম্মুখীন হতে হবে বা এটাচড কোনো শিক্ষার্থীরও উদ্বেগ ছিল না যে ক্যাম্পাসে আসলে তাকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় দিবস সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে আসছি। আমরা শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জাতীয় মূল্যবোধ ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে-প্রাণে ধারণ করি। দেশের গৌরবময় ইতিহাস, ত্যাগ-তিতিক্ষা আমরা অন্তরে লালন করি, ভবিষ্যতে পথচলায় অনুপ্রেরণা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয় মূল্যবোধ, দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ আমাদের সবার জন্যই প্রযোজ্য এবং একান্ত পালনীয়। আমরা সাংগঠনিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এসেই এই সচেতনতা রাখি। অথচ, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে কতিপয় ব্যক্তি বা গণমাধ্যমের তৎপরতায় ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েট ক্যাম্পাসকে জাতীয় চেতনার বিরোধী মতাদর্শের স্থান হিসেবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিষয়টিতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত। আরওছাত্র রাজনীতি বন্ধের নামে বুয়েট যাতে জঙ্গিবাদের কারখানায় পরিণত না হয়: কাদের আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের ব্যাপারে যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। তাই দেশের যেকোনো স্থানের মতো আমাদের ক্যাম্পাসকে আমরা অবশ্যই যেকোনো প্রকারের সন্ত্রাস, মৌলবাদ বা নিষিদ্ধ গোষ্ঠী থেকে নিরাপদ রাখতে সর্বদা তৎপর। সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক মহল থেকেই বলা হচ্ছে, ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ মৌলবাদী বা সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম বিদ্যমান এবং এর ফলশ্রুতিতেই তারা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির চর্চার পক্ষে যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আপনাকে নির্দ্বিধায় বলতে চাই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি যেকোনো মুহূর্তে এসব নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যেকোনো কার্যকলাপ ক্যাম্পাসে চলমান দেখি, শিগগির তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিব এবং প্রশাসনকে অবহিত করব। এমনকি ভবিষ্যতে যদি ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান দৃঢ়। বুয়েট ক্যাম্পাসে এই চার বছর আমরা নির্বিঘ্নে কাটিয়েছি, সেখানে ছায়া হয়ে ছিলেন আমাদের শিক্ষকরা। আমাদের মতো দেশ জুড়ে লাখো শিক্ষার্থী এমন একটা ক্যাম্পাসের স্বপ্ন নিয়েই বাড়ি ছাড়ে, যেখানে তাদের ওপর অকারণে জুলুম হবে না, নির্যাতিত হতে হবে না, দিন রাত কারো ভয়ে তটস্থ থাকতে হবে না, বাবা-মাকে দুশ্চিন্তায় চোখের পানি ফেলতে হবে না। চার বছর আগে আপনার দৃঢ় এবং দ্রুত হস্তক্ষেপে আমরা নতুন করে এই ক্যাম্পাসে বাঁচতে শিখেছি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই ছোট্ট একটা চাওয়ার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি হুমকি, হচ্ছি লাঞ্ছিত, অপদস্থ। আমরা, আমাদের ছোট ভাই-বোনেরা আরও একবার সেই অন্ধকার দিনগুলোর সাক্ষী হতে চাই না। মাননীয় উপাচার্য এবং সব শিক্ষকের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা জানি তারা তাদের সন্তানদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট আছেন এবং থাকবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে সবিনয়ে অনুরোধ, আপনি আমাদের পাশে দাঁড়ান। আপনি সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন। আমরা জানি, এই দুর্দিনে আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না। আরও‘বুয়েটকে বুঝতে হবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে হবে’ আমাদের স্বনামধন্য অ্যালামনাই, বুয়েটের অধ্যাপক ইমেরিটাস, প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত বলেছেন যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন অধ্যাদেশ করে শিক্ষকদের রাজনীতি, রাজনৈতিক কার্যকলাপ ইত্যাদির অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের জন্য অধ্যাদেশের খসড়া যখন বঙ্গবন্ধুর সামনে উপস্থাপন করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন যে এই দুটো বিশ্ববিদ্যালয় নষ্ট করা চলবে না। খসড়া অর্ডিন্যান্স বঙ্গবন্ধু ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বুয়েটের শিক্ষকরা তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন। এই এজেন্ডাতে তিনি দেখা করতে রাজি হননি। তখন শিক্ষকরা কথা বলতেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলীর সঙ্গে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বুয়েটের পড়াশোনার পরিবেশের গুরুত্ব, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বুয়েটের প্রকৌশলী এবং দক্ষ প্রযুক্তিবিদের গুরুত্ব বঙ্গবন্ধুর চিন্তায় প্রাধান্য পেয়েছে সবসময়। আপনারা সবাই জানেন, দেশের জন্য এই সময়ে মেধাবী ও দক্ষ প্রকৌশলীর গুরুত্ব কতটা। আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখি, তারা তাদের জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার, কাঠামোগত উন্নয়নকে নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে বিশেষভাবে তাদের প্রকৌশলীদের সমৃদ্ধ করার ব্যবস্থা করছে। কিন্তু বলতে ভীষণ কষ্ট হয়, অনেক কষ্টে পাওয়া সেই আকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীরা আজ ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাসের থাবা থেকে নিজেকে রক্ষার যুদ্ধ করতে করতে জর্জরিত। এই বিদ্যাপীঠে ঠিকমতো রুটিনমাফিক পড়াশোনা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করার পর কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সময় দেওয়া সম্ভব নয়। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলছি, বঙ্গবন্ধুর ভালবাসার মাটিতে দাঁড়িয়ে আজ এই ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীদের দিনের পর দিন রাস্তায় থাকার কথা নয়। আমাদের চাওয়া, বুয়েটকে ঘিরে আমাদের জাতির জনকের যে ভিশন ছিল, তাকে বাস্তবায়ন করা হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন যে বুয়েটের প্রকৃতি ভিন্ন। তাই তিনি নিজে রাজনীতির আওতা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাইরে রেখেছিলেন। আজ যখন তারই গড়ে তোলা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বুয়েটের মতো বিশেষায়িত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেকোনো মূল্যে রাজনীতির আওতায় আনার কথা বলে, আমরা বিশ্বাস করি তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও সিদ্ধান্তকে অপমান করা হয়। আরওযেকোনো মূল্যে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি দেখতে চাই: ছাত্রলীগ সভাপতি দেশমাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, বুয়েটকে নিয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে পলিসি গ্রহণ করেছিলেন, তার বাস্তবায়ন করুন। বুয়েটকে ছাত্র রাজনীতির বাইরে রাখুন, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও। কারণ সুবিচারের জন্যই আইনের সৃষ্টি। আমাদের অনুরোধ, আপনি দয়া করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসুন। ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট গত কয়েকবছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আদর্শ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা আপনাকে দেখাতে চাই। আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দিবো খুব শিগগির। আরওবুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই: হাইকোর্ট আহসান উল্লাহ হল আয়োজিত নবীনবরণ ও সমাপনী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য মহোদয় বলেছিলেন, 'ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসে আমরা ভালো আছি, সৃজনশীল কাজ করছি, আমরা র‌্যাংকিংয়ে ফোকাস করছি। সেই অনুষ্ঠানে স্যার আরও বলেন, 'ইউনিভার্সিটি শুড গো হায়ার। আমি ইন্টারভিউ দিয়েছি প্রথম আলোতে, আমরা কিছু পলিসি রোল আউট করেছি। যদি পলিসিগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ডাউন দ্যে রোড মেবি উইদিন ফাইভ-সিক্স ইয়ার্স, তোমরা এই বুয়েটের র‌্যাংকিং ৫০ এর মধ্যে দেখতে পারবা।' শেষ কয়েক বছর এই প্রত্যয় নিয়েই প্রতিটি প্রকৌশল বিভাগে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছি, ইতোমধ্যে যার ফলও পেতে শুরু করেছি। আমাদের এই পথচলা আপনিই নির্বিঘ্ন রাখতে পারেন। সেই আশাতেই এই চিঠি। আমরা—আপনার হাজারো সন্তান—আপনার সহযোগিতার প্রতীক্ষায় আছি। নিবেদক বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আরওশিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের ভালো কাজ দেখলে হয়তো ছাত্ররাজনীতি নিয়ে ভয় থাকবে না: বুয়েট ভিসি আরওবুয়েটে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি শুরু করতে ছাত্রলীগের ৪ কর্মসূচি সালাম না দেওয়ায় সাখাওয়াত অভির হাত ভেঙে ফেলে আবরার ফাহাদের হত্যাকারী অমিত সাহা। সৌমিত্র লাহিড়ী থাপ্পর দিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলে একজনের। এরকম আছে আরও অসংখ্য কাহিনী। দাপটের আড়ালে ছাত্ররাজনীতি আমাদের ক্যাম্পাসে উন্মুক্তভাবে বিচরণের অধিকার, ক্যাম্পাসের সুস্থ একাডেমিক পরিবেশ, আমাদের স্বাধীনতা, হলের মেসের টাকার সৎ ব্যবহার, ক্যাম্পাস মাদকমুক্ত থাকা, নবীন আগত বুয়েটিয়ানদের একটি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন উপভোগের অধিকার—সবকিছুই হারিয়ে গিয়েছিল। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ। বুয়েট শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটি নিরাপদ এবং সুস্থ ক্যাম্পাস চেয়ে এসেছে, যেখানে ক্ষমতা-চর্চার লোভ-লালসার শিকলে আবারও জিম্মি হয়ে যাবে না সবার নিরাপত্তা, শিক্ষাঙ্গনের উপযুক্ত পরিবেশ। সুস্থ নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা বিকাশের সব উপাদান ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি ছাড়াও গত কয়েক বছরে উপস্থিত ছিল এবং এতে সুস্থ নেতৃত্বের চর্চায় শিক্ষার্থীরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক উৎসব আয়োজন, প্রতিটি ডিপার্টেমেন্টের নিজস্ব সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং একাডেমিক অর্গানাইজেশন, সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ, বিভিন্ন ক্লাবের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে আনন্দের সঙ্গে সম্পন্ন হচ্ছে। আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ক্ষমতা-চর্চা ছাড়াই বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সভা-সেমিনার আয়োজন, জাতীয় সহশিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্জনসহ ক্যাম্পাসের ভেতরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সফলভাবেই আয়োজিত হয়েছে। বর্তমান বুয়েটে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ থাকায় নিজ নিজ প্রকৌশল ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণামুখী কাজে মনোনিবেশ করতে অনুপ্রাণিত হওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি রাজনীতিবিহীন নিরাপদ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য দেশব্যাপী জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং সমাদৃত হয়েছে। রাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাসের গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের এসব সফলতা আমাদের জানান দেয়, আমরা আমাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ছাড়াও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যে প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন নেতৃত্ব গঠন এবং বিকাশ প্রয়োজন, তা করতে পারি। স্মার্ট বাংলাদেশ এর লক্ষ্য অর্জনে আমরা নিরন্তর কাজ করে যেতে পারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জেনে খুশি হবেন যে বাকি সব প্রকৌশল-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বুয়েটেও থিসিসের জন্য রিসার্চ টাস্ক চতুর্থ বর্ষে আবশ্যক হলেও আমাদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আগে থেকে বিভিন্ন রিসার্চ প্রজেক্টে নিজ ইচ্ছায় অংশগ্রহণ করছে। এ ছাড়া, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রকৌশল প্রতিযোগিতায়, বিতর্ক প্রতিযোগিতায়, কুইজ প্রতিযোগিতায়, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বুয়েটিয়ানদের সাফল্য গত সাড়ে চার বছরে সুস্পষ্টভাবে বেড়েছে। আপনি জেনে আরও খুশি হবেন যে তথ্য-প্রযুক্তিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি—আন্তর্জাতিক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় আমাদের অর্জন স্বর্ণপদক। ইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সাইন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ডের মতো বিশ্ব সমাদৃত অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বুয়েটের ছয় জন এবং শুধু গত বছরেই চার শিক্ষার্থী। জন হপকিন্স রাইস ইউনিভার্সিটির মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের হেলথকেয়ার চ্যালেঞ্জে আমাদের উপস্থিতি এবং পুরস্কার প্রাপ্তি এখন নিয়মিত। থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার আইইইই কম্পিটিশনে আমাদের বুয়েটিয়ানদের বানানো ড্রোন একের পর এক পুরস্কার জিতেছে। মার্স রোভার চ্যালেঞ্জেও আমাদের দলের সাফল্য নিয়মিত। শুধুমাত্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নয়, সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্টে উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে বুয়েটের এক স্টার্টআপ। একইসঙ্গে সিনিয়র-জুনিয়র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামিয়েছে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ফেস্ট, ডিপার্টমেন্টাল ডে—যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা আমাদের সহপাঠীরাও যথেষ্ট খুশি হয়েছে আমাদের আয়োজনে। এ আয়োজন ও অংশগ্রহণ সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র একটি নিরাপদ ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের কারণে। যেখানে হল রেসিডেন্ট কোনো শিক্ষার্থীকে চিন্তায় থাকতে হয়নি যে হলে তাকে র‌্যাগের সম্মুখীন হতে হবে বা এটাচড কোনো শিক্ষার্থীরও উদ্বেগ ছিল না যে ক্যাম্পাসে আসলে তাকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় দিবস সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে আসছি। আমরা শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জাতীয় মূল্যবোধ ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে-প্রাণে ধারণ করি। দেশের গৌরবময় ইতিহাস, ত্যাগ-তিতিক্ষা আমরা অন্তরে লালন করি, ভবিষ্যতে পথচলায় অনুপ্রেরণা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয় মূল্যবোধ, দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ আমাদের সবার জন্যই প্রযোজ্য এবং একান্ত পালনীয়। আমরা সাংগঠনিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এসেই এই সচেতনতা রাখি। অথচ, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে কতিপয় ব্যক্তি বা গণমাধ্যমের তৎপরতায় ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েট ক্যাম্পাসকে জাতীয় চেতনার বিরোধী মতাদর্শের স্থান হিসেবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিষয়টিতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের ব্যাপারে যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। তাই দেশের যেকোনো স্থানের মতো আমাদের ক্যাম্পাসকে আমরা অবশ্যই যেকোনো প্রকারের সন্ত্রাস, মৌলবাদ বা নিষিদ্ধ গোষ্ঠী থেকে নিরাপদ রাখতে সর্বদা তৎপর। সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক মহল থেকেই বলা হচ্ছে, ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ মৌলবাদী বা সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম বিদ্যমান এবং এর ফলশ্রুতিতেই তারা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির চর্চার পক্ষে যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আপনাকে নির্দ্বিধায় বলতে চাই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি যেকোনো মুহূর্তে এসব নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যেকোনো কার্যকলাপ ক্যাম্পাসে চলমান দেখি, শিগগির তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিব এবং প্রশাসনকে অবহিত করব। এমনকি ভবিষ্যতে যদি ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান দৃঢ়। বুয়েট ক্যাম্পাসে এই চার বছর আমরা নির্বিঘ্নে কাটিয়েছি, সেখানে ছায়া হয়ে ছিলেন আমাদের শিক্ষকরা। আমাদের মতো দেশ জুড়ে লাখো শিক্ষার্থী এমন একটা ক্যাম্পাসের স্বপ্ন নিয়েই বাড়ি ছাড়ে, যেখানে তাদের ওপর অকারণে জুলুম হবে না, নির্যাতিত হতে হবে না, দিন রাত কারো ভয়ে তটস্থ থাকতে হবে না, বাবা-মাকে দুশ্চিন্তায় চোখের পানি ফেলতে হবে না। চার বছর আগে আপনার দৃঢ় এবং দ্রুত হস্তক্ষেপে আমরা নতুন করে এই ক্যাম্পাসে বাঁচতে শিখেছি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই ছোট্ট একটা চাওয়ার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি হুমকি, হচ্ছি লাঞ্ছিত, অপদস্থ। আমরা, আমাদের ছোট ভাই-বোনেরা আরও একবার সেই অন্ধকার দিনগুলোর সাক্ষী হতে চাই না। মাননীয় উপাচার্য এবং সব শিক্ষকের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা জানি তারা তাদের সন্তানদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট আছেন এবং থাকবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে সবিনয়ে অনুরোধ, আপনি আমাদের পাশে দাঁড়ান। আপনি সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন। আমরা জানি, এই দুর্দিনে আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না। আমাদের স্বনামধন্য অ্যালামনাই, বুয়েটের অধ্যাপক ইমেরিটাস, প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত বলেছেন যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন অধ্যাদেশ করে শিক্ষকদের রাজনীতি, রাজনৈতিক কার্যকলাপ ইত্যাদির অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের জন্য অধ্যাদেশের খসড়া যখন বঙ্গবন্ধুর সামনে উপস্থাপন করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন যে এই দুটো বিশ্ববিদ্যালয় নষ্ট করা চলবে না। খসড়া অর্ডিন্যান্স বঙ্গবন্ধু ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বুয়েটের শিক্ষকরা তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন। এই এজেন্ডাতে তিনি দেখা করতে রাজি হননি। তখন শিক্ষকরা কথা বলতেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলীর সঙ্গে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বুয়েটের পড়াশোনার পরিবেশের গুরুত্ব, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বুয়েটের প্রকৌশলী এবং দক্ষ প্রযুক্তিবিদের গুরুত্ব বঙ্গবন্ধুর চিন্তায় প্রাধান্য পেয়েছে সবসময়। আপনারা সবাই জানেন, দেশের জন্য এই সময়ে মেধাবী ও দক্ষ প্রকৌশলীর গুরুত্ব কতটা। আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখি, তারা তাদের জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার, কাঠামোগত উন্নয়নকে নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে বিশেষভাবে তাদের প্রকৌশলীদের সমৃদ্ধ করার ব্যবস্থা করছে। কিন্তু বলতে ভীষণ কষ্ট হয়, অনেক কষ্টে পাওয়া সেই আকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীরা আজ ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাসের থাবা থেকে নিজেকে রক্ষার যুদ্ধ করতে করতে জর্জরিত। এই বিদ্যাপীঠে ঠিকমতো রুটিনমাফিক পড়াশোনা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করার পর কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সময় দেওয়া সম্ভব নয়। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলছি, বঙ্গবন্ধুর ভালবাসার মাটিতে দাঁড়িয়ে আজ এই ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীদের দিনের পর দিন রাস্তায় থাকার কথা নয়। আমাদের চাওয়া, বুয়েটকে ঘিরে আমাদের জাতির জনকের যে ভিশন ছিল, তাকে বাস্তবায়ন করা হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন যে বুয়েটের প্রকৃতি ভিন্ন। তাই তিনি নিজে রাজনীতির আওতা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাইরে রেখেছিলেন। আজ যখন তারই গড়ে তোলা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বুয়েটের মতো বিশেষায়িত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেকোনো মূল্যে রাজনীতির আওতায় আনার কথা বলে, আমরা বিশ্বাস করি তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও সিদ্ধান্তকে অপমান করা হয়। দেশমাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, বুয়েটকে নিয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে পলিসি গ্রহণ করেছিলেন, তার বাস্তবায়ন করুন। বুয়েটকে ছাত্র রাজনীতির বাইরে রাখুন, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও। কারণ সুবিচারের জন্যই আইনের সৃষ্টি। আমাদের অনুরোধ, আপনি দয়া করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসুন। ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট গত কয়েকবছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আদর্শ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা আপনাকে দেখাতে চাই। আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দিবো খুব শিগগির। আহসান উল্লাহ হল আয়োজিত নবীনবরণ ও সমাপনী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য মহোদয় বলেছিলেন, 'ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসে আমরা ভালো আছি, সৃজনশীল কাজ করছি, আমরা র‌্যাংকিংয়ে ফোকাস করছি। সেই অনুষ্ঠানে স্যার আরও বলেন, 'ইউনিভার্সিটি শুড গো হায়ার। আমি ইন্টারভিউ দিয়েছি প্রথম আলোতে, আমরা কিছু পলিসি রোল আউট করেছি। যদি পলিসিগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ডাউন দ্যে রোড মেবি উইদিন ফাইভ-সিক্স ইয়ার্স, তোমরা এই বুয়েটের র‌্যাংকিং ৫০ এর মধ্যে দেখতে পারবা।' শেষ কয়েক বছর এই প্রত্যয় নিয়েই প্রতিটি প্রকৌশল বিভাগে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছি, ইতোমধ্যে যার ফলও পেতে শুরু করেছি। আমাদের এই পথচলা আপনিই নির্বিঘ্ন রাখতে পারেন। সেই আশাতেই এই চিঠি। আমরা—আপনার হাজারো সন্তান—আপনার সহযোগিতার প্রতীক্ষায় আছি। নিবেদক বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে চলমান থাকবে কি থাকবে না, এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ এবং বুয়েট শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
৩০ জুন থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা
চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ৩০ জুন থেকে শুরু হবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশারের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, শুরুর দিন বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা হবে। সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে এবং ১১ আগস্ট লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে। এরপর ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হবে।
চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ৩০ জুন থেকে শুরু হবে।
অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ
ধ্রুব এষ অসুস্থ, শরীরটা ভাল যাচ্ছে না ক'দিন ধরে। সঙ্গত কারণে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। সর্বশেষ খবর হল, সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ক্রমশ। আশাজাগানিয়া বার্তা বটে, তবুও আমাদের মন ভাল নেই। স্বস্তিতে নেই বইয়ের জগতের-সংবাদপত্র ভুবনের এবং জ্ঞানকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা। কারণ ধ্রুব এষ বাংলাদেশের বইয়ের জগতের অলিখিত রাজাধিরাজ। পাঠ্য বইয়ের বাইরে সৃজন ও মননশীল চৌহদ্দিকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন-অপূর্ব ও অভাবিত সব প্রচ্ছদ শিল্পে। আমরা এদেশের যে কোন বইয়ের দোকানে যদি চোখ রাখি, তাহলে দেখব সেখানে উপর্যুপরি উপস্থিতি রয়েছে উনার প্রচ্ছদ করা বইয়ের। এই চিত্র শুধু বইয়ের দোকানে নয় প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের যে কোনো বইয়ের আড়ংয়ে কিংবা নিজেদের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ও সংগ্রহালায়েও যদি আমরা চোখ রাখি তা হলে সেখানেও দেখব ধ্রুব এষ-এর প্রচ্ছদ করা বই রয়েছে নিশ্চিতভাবেই, এই প্রত্যাশা আলটপকা নয়- এই চিত্রের কোন হেরফেরও হওয়ার নয়। ধ্রুব এষ অসুস্থ খবরটা যে কোন বইপ্রেমি মানুষের কাছে উদ্বেগ ও মন খারাপের। এ কারণে ধ্রুব-র অসুস্থতার খবরে আমাদেরও মনে হয়েছে, নানা রংয়ের উজ্জ্বল ও তাৎপর্যপূর্ণ সব প্রচ্ছদে করা সব বই যেন কালো চাদরে নিজেদেরকে মুড়ে দিতে উদ্যত হয়েছে। এ যেন রবিবাবুর সেই আমি'র প্রকাশ, 'আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ,/চুনি উঠল রাঙা হয়ে… ধ্রুব এষ-এর প্রচ্ছদ করা বইয়ের সংখ্যা পঁচিশ হাজার ছাড়িয়েছে। একজন শিল্পী কতোটা সাধক হল এতো সংখ্যক কাজ করা যায় এবং নিয়ত নিজেকে ভাঙ্গাগড়ার মধ্য দিয়ে আরও বেশি সময়ানুগ করা সম্ভব তার উদাহরণ ধ্রুব। যার সবচেয়ে বড় গুণ হল নিমগ্নতা । এই নিমগ্নতা দিয়ে তিনি কেবল কৈশোরে দেখা স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে সত্যে পরিণত করেননি, নিজেকে নির্মাণ করেছেন এই শিল্পের একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী স্রষ্টা হিসেবে। তিনি প্রচ্ছদশিল্পী হতে চেয়েছিলেন, হয়েছেন। এবং ধ্যানমগ্নতায় নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যেখানে তিনি হয়ে উঠেছেন এই শিল্পের একজন ভরকেন্দ্র। বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদ শিল্পের কথা উঠলেই আমাদেরকে যার নাম সর্বাগ্রে স্মরণ নিতে হয়-তিনি হলেন কাইয়ুম চৌধুরী। উনার সমসময়ে এবং আগে পরে আরও কয়েকজন শিল্পী প্রচ্ছদ শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। লক্ষণীয় হল, প্রত্যেক প্রচ্ছদশিল্পী এমনকি কাইয়ুম চৌধুরীও নিজ-নিজ শিল্পসত্তাকে অক্ষুণ্ণ রেখেই প্রচ্ছদের কাজ করেছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম হল ধ্রুব এষ। তিনি কেবলই প্রচ্ছদ করেছেন, আকাঙ্ক্ষাও ছিল তাই। হ্যাঁ, তিনি কথাসাহিত্য-কবিতা-ছড়া ‍রচনা করেছেন, কিন্তু আঁকাআঁকির অন্য-মাধ্যমে নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি। উনি বই পড়তে ভালবাসতেন। এই পাঠাভ্যাস থেকেই প্রচ্ছদ শিল্পী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা উপ্ত হয়। যা পরবর্তীতে মহীরুহরূপে প্রকাশিত হয়েছে-হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা আগামিতেও আরও হবে। এক সাক্ষাৎকার জানিয়েছিলেন, প্রচ্ছদশিল্পী হয়ে ওঠার এই পরিভ্রমণে প্রধানত দু'জন মানুষকে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা ও স্মরণে রাখতে চান। একজন হলেন আফজাল হোসেন। উনার করা বইয়ের প্রচ্ছদ দেখে প্রচ্ছদশিল্পী হওয়ার আগ্রহ আরও বেশি জোরদার ও লক্ষ্যভেদী হয়। আরেকজন হুমায়ূন আহমেদ। জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিকের বেশীরভাগ বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পী তিনি। প্রচ্ছদশিল্পের একটা গৎবাঁধা নিয়ম ছিল, প্রচলিত সেই ছকেই কিঞ্চিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে তিনিও আঁকছিলেন। ফিগারের নানারকমের ব্যবহার, মুহূর্তকে ফিগার দিয়ে ধরার চেষ্টা, পরিবেশি পরিস্থিতিকে মূর্ত বা বিমূর্তভাবে উপস্থাপন, বিষয়কে প্রতীকিভাবে হাজির করা-এসবই ছিল প্রচ্ছদশিল্পের বহুল প্রচলিত ও নির্ধারিত এক প্রবণতা। ধ্রুব এখান থেকে বেরোতে চেয়েছেন। ‍হুমায়ূন আহমদের সঙ্গে এই নিয়ে আলাপ করেন। প্রচ্ছদে নতুন কিছু করার স্বাধীনতা চান, মঞ্জুর হয়। তারপর ধ্রুব-র হাত ধরে বাংলাদেশের প্রচ্ছদ শিল্প সম্পূর্ণ নতুন এক জগতে প্রবেশ করে। কেবল রংয়ের ব্যবহার করেও যে প্রচ্ছদ হতে পারে তার এক নতুন ধারা প্রবর্তিত হয়। শুধু রং, কাগজ, ফুল, পশু, পাখি, লতাপাতা থেকে অনেককিছুই জায়গা করে নেয় প্রচ্ছদশিল্পে। লেখক-পাঠক, সকলেরই প্রিয় প্রচ্ছদশিল্পী হয়ে ওঠেন তিনি। শুরু হয়ে প্রচ্ছদরাজ্যে ধ্রুব এষের রাজত্ব পরিচালনার কাল। তবে বলা প্রয়োজন, ধ্রুব সেখানে কেবল একা-একা রাজাগিরি করেননি, অন্যদেরও সঙ্গে নিয়েছেন-সঙ্গ দিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন কাজকে কীভাবে ভালোবাসতে হয়, তাকে প্রেম ও মনোযোগে সাধনার স্তরে নিয়ে যেতে হয়। সাধনা থাকলে যে সব হয়, তার বড়ো উদাহরণ বাংলাদেশের প্রচ্ছদ ও অলংকরণ শিল্পে ধ্রুব ছাড়া আর কে হতে পারেন? একথা মোটেই অতিশয়োক্তি নয় যে, বাংলা ভাষার প্রচ্ছদ শিল্পের অবিসংবাদিত এক শিল্পীর নাম ধ্রুব এষ। ধ্রুবকে অনেকে মনে করেন তিনি নিভৃতচারী। একা থাকতে পছন্দ করেন। সহসা পাওয়া যায় না । এতো এতো যে প্রচ্ছদ করেন-তার সবটাই ফোনে ফোনে, মেইলে, ফেসবুক মেসেঞ্জার বা হোয়াটস অ্যাপে।  উনাকে মিসির আলী বলতেও কসুর করেন না কেউ কেউ। এ পক্ষের তরফে দাবি হল, হুমায়ূন আহমদ মিসির আলী চরিত্র তৈরি করেছেন ধ্রুবকে ঘিরেই। এসব সত্যি, না মিথ্যা সেটা বড়ো কথা নয়, ধর্তব্যের মধ্যেও পড়ে না। বড় কথা হল এরকমভাবে আলোচনার ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠা। মানুষের মনোজগতে-আলাপে-আড্ডায়-প্রতিদিনের রোজনামচায় এভাবে ভাবনার খোরাক যোগানোর সক্ষমতা অর্জন করা। হুমায়ুন আহমদ একবার ধ্রুব সম্পর্কিত এক লেখায় উল্লেখ করেছিলেন অদ্ভুত কিছু প্রসঙ্গ। ধ্রুব এষ নাকি কথা বলতেও পছন্দ করেন না, সচরাচর কথাও বলেননি। যে প্রশ্নের উত্তর না বা হ্যাঁ দিয়ে শেষ করা যায়, সেই প্রশ্নের উত্তর তিনি কখনোই বাক্য ব্যয় করে বলেন না। এমনকি না বা হ্যাঁ বলাতেও নাকি প্রচণ্ড অনীহা-অনাগ্রহ। এ কারণে বেশীর ভাগ সময় ঘাড় সামনে-পেছনে, ডানে-বামে নাড়িয়েই আলাপ শেষ করেন। এগুলোর সবই হয়তো সত্যি কিংবা একবিন্দুও সত্যি নয়, সবই অতিরঞ্জিত-ভীষণরকম বাড়াবাড়ি গোছের। আগেই বলেছি, এসবের সত্যমিথ্যা যাচাইয়ের প্রয়োজন নেই। কেননা এগুলো সত্য-মিথ্যা যাই-ই হোক না কেন, ধ্রুব-র, ধ্রুপদী অবস্থানের কোন হেরফের ঘটবে না। ধ্রুব-র সার্থকতা হল তিনি এই শহরে মিথের জন্ম দিতে পেরেছে। যা আমাদের আড্ডায়-আলাপে-বন্ধুতায় এসব প্রসঙ্গ মিথ হয়ে ঘুরে ঘুরে কথা কয়। আমরা জীবনানন্দকে হাজির করে জিজ্ঞাসিত হই নিজেদের মধ্যে, 'সহজ লোকের মতো কে চলিতে পারে।' এখানেই ধ্রুব-র সার্থকতা, ধ্রুবকে ঘির মিথের তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা। এই শহর-এই দেশে, আমরা যারা বেঁচে আছি ধ্রুব এষ-এর সময়ে আমাদের কতোই না সৌভাগ্য যে আমরা এরকম একজন মানুষকে চোখের সম্মুখে কিংবা কিছুটা আড়ালে আবডালে, আমাদের গল্পে-হার্দিকতায় প্রতিনিয়ত হাজের-নাজেল হতে দেখছি। যে ধ্রুব এষকে আমরা মনে করছি একোংগুয়া পাখির মতো একক, নিংসঙ্গ ও লাজুক। তিনি কিন্তু প্রচ্ছদ শিল্পে একটা স্কুলের যাত্রা শুরু করেছেন। যা-এক বিপ্লবও বটে। এই সময়ের সকল প্রচ্ছদশিল্পী (দু-একজন বাদে) 'ধ্রুব-সঙ্গ' পছন্দ করেননা কেবল উনারা প্রত্যেকে মিলে প্রচ্ছদশিল্পের বিদ্যায়তনিক এক যাত্রাকে লালন করেন। যেখানে সকলেই শিক্ষক-সকলেই শিক্ষার্থী। বাংলাদেশের প্রচ্ছদ শিল্পের অগ্রগমন-উন্নয়ন-উৎকর্ষ  নিয়ে নিজেদের সর্বোচ্চটা দেয়ার ব্রতে এখানে সবাই সহযোগী ও স্বতান্ত্রিক। এই যে সবাইকে নিয়ে চলার কসরত ও কোশেশ তা যেন ধ্রুব-র প্রযত্নে অন্যরকম একমাত্রা পেয়েছে। শুধু কি প্রচ্ছদশিল্পী ও আঁকিয়েরা, ওঁর স্কুলে যেতে কে না ভালবাসে। লেখক-কবি-সাহিত্যিক- সাংবাদিক-ছড়াকার-শিশু সাহিত্যিক সকলেই ধ্রুব-র স্কুলে যেতে উদগ্রিব থাকেন-যানও নিয়মিত কিংবা অনিয়মিতভাবে। এবং সকলের কাছে ধ্রুব প্রিয় এক দাদা, সংক্ষেপে ধ্রুবদা। এই শহরে এরকম দাদার সংখ্যা নেই বললেই চলে-যিনি মহীরুহ হয়ে আশ্রয় দেন, সহমর্মী হন, বন্ধুতায় জড়িয়ে নেন সবাইকে। সাংবাদিক নির্মল সেন, সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত-একসময় সকলের দাদা হয়ে উঠেছিলেন। দাদাই যেন উনাদের নাম। পিতা-পুত্র থেকে সকল প্রকার সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠে উনারা হয়ে উঠেছিলেন সর্বজনীন এক দাদার প্রতিভূ। ধ্রুব এষও ঠিক তেমন-কিংবা এঁদেরকেও ছাড়িয়ে গেছেন। আমাদের সকলেরই আলাদা আলাদা পরিচয় আছে। আমারা কারও মামা হই, চাচা হই-ইত্যাকার সব পরিচয়। কিন্তু ধ্রুব এষ-এর পরিচয় একটাই তিনি ধ্রুবদা। সকলের প্রিয় মানুষটি এখন হাসপাতালে। বয়স এখনও ষাট ছোঁয়নি। আমরা তাই কেবল বালাই ষাট বলতে অনাগ্রহী। যদি বলতেই হয়, তা হলে দেবী ষষ্ঠীর কাছে আপদ, বিপদ, অকল্যাণ থেকে মুক্তির জন্য আমাদের প্রার্থনা হল ধ্রুব এষকে শতায়ু করুন। আমাদের বিশ্বাস, মানুষের ভালাবাসার শক্তি ওপরে কোনকিছু হয় না। ধ্রুবদাকে অগণন মানুষ ভালবাসেন, এই ভালবাসায় তিনি শিগগিরই সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন প্রচ্ছদ শিল্পের ভুবনে-নিজের কর্মময় জীবনে এবং জন্ম দেবেন নতুন কোন মিথের।
ধ্রুব এষ অসুস্থ, শরীরটা ভাল যাচ্ছে না ক'দিন ধরে। সঙ্গত কারণে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। সর্বশেষ খবর হল, সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ক্রমশ। আশাজাগানিয়া বার্তা বটে, তবুও আমাদের মন ভাল নেই। স্বস্তিতে নেই বইয়ের জগতের-সংবাদপত্র ভুবনের এবং জ্ঞানকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা। কারণ ধ্রুব এষ বাংলাদেশের বইয়ের জগতের অলিখিত রাজাধিরাজ।
সরলতা ও বিস্ময়ের খোঁজে
বড় হয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা দুঃখবোধ আছে -- এরকম একটা পঙক্তি পড়েছিলাম কোনো এক গল্পে। কিছুতেই মনে করতে পারছি না, কোন গল্প ছিল সেটি। কী সেই দুঃখবোধ তা লেখা ছিল না গল্পে, কিন্তু কথাটা আমাকে খুব স্পর্শ করেছিল। নিজের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল, এই দুঃখবোধের কারণ-- বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অনেক কিছু হারাই, তার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো সরলতা এবং বিস্ময়বোধ। আর এই দুই সম্পদ হারানোর ফলে হারাই শর্তহীন ভালোবাসার অনিঃশেষ ক্ষমতাও। মনে হয়েছিল, সরলতা-বিস্ময়বোধ-ভালোবাসা এই ব্যাপারগুলো বোধহয় পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। লক্ষ করলে দেখবেন, শিশুরা খুব অল্পতেই বিস্মিত হয়। প্রথমবারের মতো যা-কিছু দেখে তারা, তা যত সামান্যই হোক, গভীর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে। একটা নতুন খেলনা দেখলে যেমন বিস্মিত হয়, একটা পাখি দেখলেও হয়। জীবজগৎই হোক আর জড়জগৎই হোক, ফড়িঙের মতো ছোট্ট পতঙ্গই হোক আর হাতির মতো বিশাল প্রাণীই হোক, সবই তাদের বিস্মিত করে। এই বিস্ময় আসে অকৃত্রিম সরলতা থেকে। জীবনের গভীর সংকট তাদের গ্রাস করেনি, ক্লেদ-গ্লানি-ঘৃণা-বিদ্বেষ তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, শুভ্র-সুন্দর-আলোকোজ্জ্বল হৃদয়ের অধিকারী তারা, সরলতাই তো থাকবে সেখানে। শিশুদের পছন্দ-অপছন্দ খুব তীব্র, সেগুলোর প্রকাশও খুব তীব্র। যাকে তারা ভালোবাসে, সেটি সাড়ম্বরে জানিয়ে দিতে এতটুকু কার্পণ্য করে না। আবার, যাকে অপছন্দ করে তার ধারেকাছেও ভিড়তে চায় না। প্রকাশের এই ধরনটাও সরলতার ফল। আমরা বড় হয়ে যাওয়ার পর তো এভাবে প্রকাশ করতে পারি না। অপছন্দ তো লুকিয়ে রাখিই, ভালোবাসাও প্রকাশ করি হিসাব করে, ভেবেচিন্তে, সীমিত আকারে। শিশুদের এই ভালোবাসা কেবল মানুষের জন্যই নয়। সমস্ত পশুপাখি-কীটপতঙ্গের জন্যও। এমনকি তাদের খেলনার জন্যও। একটু লক্ষ করলে দেখবেন, শিশুরা তাদের খেলনাগুলোকে ভীষণ আদর করে। রীতিমতো হাত বুলিয়ে, কোলে নিয়ে, জড়িয়ে ধরে, চুমু দিয়ে আদর। শুধু তাই নয়, যখন ওরা খেলনা দিয়ে খেলে তখন ক্রমাগত ওগুলোর সঙ্গে কথা বলে। কান পেতে শুনলে বোঝা যায়, কথাবার্তাগুলো একতরফা নয়। শিশুটি হয়তো একটা প্রশ্ন করে, এরপর একটু বিরতি নেয়, তারপর আরেকটি প্রশ্ন করে। দ্বিতীয় প্রশ্নটি শুনলে মনে হয়, প্রথম প্রশ্নের উত্তরে খেলনাটি কিছু একটা বলেছে, সেই ধারাবাহিকতায় এসেছে দ্বিতীয় প্রশ্নটি। আমার মাঝেমধ্যে ভীষণ কৌতূহল হয়, ইচ্ছে হয় জিজ্ঞেস করি-- কী বললো তোমার খেলনাটি? কিন্তু জিজ্ঞেস করলে উত্তর তো মেলেই না, উল্টো থেমে যায় ওদের কথোপকথন। আমি তাই গভীর আগ্রহ নিয়ে, নীরবে, ওই কথাগুলো শুনি। বলাবাহুল্য, শুনি কেবল শিশুটির কথাই, খেলনার কথা শোনে কেবল সেই শিশুটি। ভাবি, কতটা সরল হলে একটা জড়বস্তুর সঙ্গে কথা বলা যায়? আমরা, বড়রা, কেন সেটি পারি না? আমাদেরও অনেক প্রিয় বস্তু থাকে। যেমন নিত্যসহচর ফোন, কলম, পানির গ্লাস বা চায়ের কাপ! কখনো তো ওদের জিজ্ঞেস করি না, কেমন আছ, কী খেয়েছ! কখনো তো হাত বুলিয়ে আদর করি না! রূপকথায় কিংবা ছোটদের জন্য লেখা গল্পে সব বস্তুই কথা বলে, কথা বলে সব প্রাণীও। যেন এক অবারিত ভাষার জগৎ। এবং শিশুরা অবলীলায় তা বিশ্বাসও করে। রূপকথার রচয়িতা কে বা কারা জানার উপায় নেই। যেমন আমাদের ঠাকুরমার ঝুলি। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র সেগুলোর সংকলন ও সম্পাদনা করেছিলেন, রচনা করেননি। এরকম রূপকথা কিন্তু সকল দেশেই আছে, এবং সব দেশেই রচয়িতার নাম অজানা। হয়তো এগুলো একজনের সৃষ্টি নয়ও। দীর্ঘকাল ধরে লোকমুখে সেগুলো রচিত এবং বিবর্তিত হয়েছে। রচয়িতা যাঁরাই হন না কেন, তাঁরা যে শিশুদেরকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তাদের মনস্তত্ত্ব বুঝতেন তার প্রমাণ এই সবকিছুকে কথা বলানোর মধ্যে লুকিয়ে আছে। শিশুরা যেমনটি ভাবে, হয়তো তারাও ভেবেছেন, ভাষা কেবল মানুষেরই থাকবে কেন, অন্য প্রাণীরা কী দোষ করলো? এই নীল গ্রহ তো কেবল মানুষের নয়। অন্য সব পশুপাখি এবং কীটপতঙ্গেরও, এমনকি বৃক্ষদেরও। এই ব্যাপারটি যে শিশুরাই সবচেয়ে ভালো বোঝে, সেটা বোঝা যায় তাদের আচরণ দেখলে। সবকিছুর জন্য তাদের অপার ভালোবাসা, পশুপাখি তো বটেই এমনকি একটা ছোট্ট ফড়িঙ বা প্রজাপতির কষ্টে তাদের চোখে জল আসে। সম্ভবত শিশুদের জন্য যারা কালজয়ী লেখা লেখেন, তাঁদের অনুভূতিও একইরকম। এ প্রসঙ্গে তলস্তয়ের একটা কথা মনে পড়লো। ম্যাক্সিম গোর্কির একটা স্মৃতিগদ্যের বই আছে তলস্তয়কে নিয়ে, Reminiscences of Leo Nikolaevich Tolstoy শিরোনামে। সেখানেই এই প্রসঙ্গটি আছে। হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন প্রচুর রূপকথা লিখেছেন, বিশ্বব্যাপি সেসব অনূদিত এবং জনপ্রিয় হয়েছে। রুশ ভাষায় অনূদিত হওয়ার পর তলস্তয়ও পড়েছিলেন। কিন্তু প্রথমবার তিনি নাকি কিছু বুঝতে পারেননি! বছর দশেক পর দ্বিতীয় পাঠের পর তিনি উপলব্ধি করেন, এন্ডারসন খুব নিঃসঙ্গ ছিলেন এবং সম্ভবত ভবঘুরেও ছিলেন, ঘর-সংসার বলতে তাঁর কিছু ছিল না। সেজন্যই তিনি শিশুদের সঙ্গে মিশতে চাইতেন, কথা বলতে চাইতেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখকদের একজন লিও তলস্তয়। তাঁর ব্যাখ্যাটা লক্ষ করুন প্রিয় পাঠক। তিনি নাকি প্রথম পাঠে এন্ডারসনের লেখা বুঝতেই পারেননি! অবাক লাগে না কথাটা শুনে? রূপকথা বুঝতে না পারার কী হলো? এসব তো নিছকই উদ্ভট গল্প, শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য আর কল্পনাকে উসকে দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়। তলস্তয় কি তা বুঝতেন না? নিশ্চয়ই বুঝতেন। তাঁর দেশেও তো রূপকথা কিছু কম ছিল না। 'রুশদেশের উপকথা' নামের সেই অপূর্ব বইটির গল্পগুলোর কথা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি! তাহলে তলস্তয় কী খুঁজেছিলেন লেখাগুলোর মধ্যে? আমার ধারণা, লেখাগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ আর এগুলো লিখবার কারণ। ছোটদের জন্য লেখা সব রচনারই দুটো উদ্দেশ্য থাকে। একটি শিশুদের আনন্দের জন্য, অপরটি বড়দের ছোটবেলায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। যাহোক, তলস্তয় দ্বিতীয় পাঠে বুঝেছিলেন, এন্ডারসন নিঃসঙ্গ ছিলেন বলেই শিশুদের কাছে যেতেন। এই পর্যবেক্ষণটা গুরুত্বপূর্ণ। নিঃসঙ্গ মানুষ তো তার জন্য সমবয়সী-সমমনা একজন যোগ্য সঙ্গী চায়, এন্ডারসন কেন শিশুদের কাছে যেতেন? ধারণা করি, যেতেন সরলতার সন্ধানে, বিস্ময়বোধের সন্ধানে, যা তিনি নিজে হারিয়ে ফেলেছিলেন। নিশ্চয়ই সেসবের সন্ধান তিনি পেয়েছিলেন ফের, নইলে ওসব তিনি লিখলেন কী করে? যাহোক, আমরা বড় হতে থাকি, প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের বিচ্ছেদ ঘটতে থাকে, আমরা ভুলেই যাই যে আমরা প্রকৃতিরই অংশ। প্রকৃতিপ্রদত্ত মায়া-মমতা-ভালোবাসা-সরলতা-বিস্ময়বোধের সঙ্গেও আমাদের বিচ্ছেদ ঘটতে থাকে। প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ হারাতে হারাতে আমরা ক্রমশ মানুষের নির্মিত সমাজ-সংস্কৃতি-ধর্ম-সভ্যতার ভেতর প্রবেশ করতে থাকি আর আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে থাকে হিংসা-বিদ্বেষ-ক্রোধ-লোভ-ঘৃণা। মায়া-মমতা-ভালোবাসার মতো এগুলোও মানবিক অনুভূতি। কিন্তু দুরকম অনুভূতির ফলাফল এক নয়। প্রথমটি হৃদয়কে শুদ্ধ ও পবিত্র আর আর্দ্র করে, দ্বিতীয়টি হৃদয়কে কালিমালিপ্ত করে। আমরা সরলতা হারাই, বিস্ময়বোধ হারাই, হারাই ভালোবাসার অনিঃশেষ ক্ষমতা; হয়ে উঠি অসহিষ্ণু-অসহনশীল-অবিবেচক-নিষ্ঠুর-নির্মম-প্রেমহীন। একসময় আমরা হয়তো ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে সরল হয়ে উঠতে চাই, কারণ আমরা অনুভব করে উঠতে পারি -- সরলতাই সবচেয়ে সুন্দর। কিন্তু সরল হওয়াটা কঠিন, হতে চাইলেই হওয়া যায় না। কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। সকল মানুষই সরল হয়ে জন্মায়, সেটি বোঝা যায় শিশুদের দিকে তাকালেই। তাদের চিন্তার জগৎটি কী আশ্চর্য সরল ও সুন্দর! তারপর বয়স বাড়ার সঙ্গে জটিলতা 'অর্জন' করে মানুষ, হারাতে থাকে সরলতা। আবার সেই সরলতা ফিরেও পেতে পারে কেউ কেউ। কীভাবে? যদি আপনি বিস্মিত হবার ক্ষমতা হারিয়ে না ফেলেন এবং বিস্ময়বোধ ফিরে পান। কিন্তু বিস্মিত হবো কীভাবে? আমাদের চারপাশে, প্রকৃতিতে, বিস্মিত হবার মতো বহুকিছু ছড়িয়ে আছে, সেগুলো দেখে। দু-একটা উদাহরণ দিই। পানি তো আমাদের কাছে কেবল পানিই। খুবই সাধারণ, সহজলভ্য এবং নিত্য-ব্যবহার্য। এত সহজলভ্য বলেই আমাদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো বিস্ময়বোধ নেই। আমরা পানির আণবিক গঠনও জানি। দুই অণু হাইড্রোজেন আর এক অণু অক্সিজেন মিলে তৈরি করে এক অণু পানি। এই বৈজ্ঞানিক তথ্যও আমাদের বিস্মিত করে না। কিন্তু আরেকটু গভীরভাবে ভেবে দেখুন। হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন দুটোই গ্যাস। হাইড্রোজেন কিন্তু দাহ্য, মানে একটা স্ফুলিঙ্গের স্পর্শ পেলেও জ্বলে ওঠে। এটি তাই জ্বালানিরও প্রধান উৎস। অন্যদিকে অক্সিজেন নিজে দাহ্য নয়, অর্থাৎ নিজে জ্বলে না, কিন্তু অন্য পদার্থকে দ্রুত জ্বলে উঠতে এবং পুড়ে যেতে সাহায্য করে। অর্থাৎ একজন জ্বলতে চায়, আরেকজন জ্বালাতে চায়। তো, এই দুটো গ্যাসকে মিলিয়ে দিলে কী হবে? আগুন জ্বলে উঠবে বলে মনে হয় না? অথচ তারা যখন একটা নির্দিষ্ট অনুপাতে মিলিত হয় (দুই অণু হাইড্রোজেন আর এক অণু অক্সিজেন), তখন জ্বলে ওঠার বদলে পরিণত হয় পানিতে, যা আবার আগুন নেভানোর কাজে লাগে। কী অবাক ব্যাপার, তাই না? পানিই তো সবচেয়ে আশ্চর্য সৃষ্টি, প্রকৃতির অপার করুণাধারা। পানি ছাড়া জীবনের জন্ম এবং টিকে থাকা কোনোটাই সম্ভব হতো না। এই সত্যটি জানার পরও যদি আপনার ভেতরে অপার বিস্ময় জেগে না ওঠে তাহলে বুঝতে হবে, আপনি সরলতার পথ থেকে বহুদূরে আছেন। আরেকটি উদাহরণ দিই। আমরা নিঃশ্বাসের সঙ্গে যে গ্যাস গ্রহণ করি সেটিও অক্সিজেনই। আমাদের বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় শতকরা ২১ ভাগ (বাকিটাও অন্যান্য গ্যাস)। এই ২১ ভাগ অক্সিজেন কিন্তু সবার জন্যই। আপনি যে জাতিরই হন না কেন, যে ভাষারই হন না কেন, যে ধর্মেরই হন না কেন, বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী যা-ই হন না কেন, সবার জন্য পরিমাণ একই। কমও নয়, বেশিও নয়। এমনকি সকল পশুপাখি-কীটপতঙ্গের জন্যও তাই। তারাও নিঃশ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেনই গ্রহণ করে। তাদের জন্যও কম-বেশি নেই। এইসব নিদর্শন দিয়ে প্রকৃতি আমাদের কী ইঙ্গিত দেয়? আমার মনে হয়, সে বলতে চায়-- তার সকল ঐশ্বর্য, সকল সৃষ্টি, সকল মমতা সবার জন্যই সমানভাবে বরাদ্দ। তাহলে অনেকেই আবার প্রকৃতি শব্দটি পছন্দ করেন না। ঠিক আছে, আপনি আপনার স্রষ্টার কথাই ভাবুন। যে ধর্মেরই হন না কেন, ভাবুন যে, আপনার আল্লাহ/ঈশ্বর/ভগবান/খোদা/প্রভু, সেই মহান স্রষ্টা, যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা সকলের জন্য সমানভাবে বন্টন করেছেন। এমনকি যারা তাকে অস্বীকার বা অবিশ্বাস করে তাদের কাছ থেকেও তিনি তার সৃষ্টিজগতের অপার ঐশ্বর্য ছিনিয়ে নিচ্ছেন না। তিনি করুণাময়, তিনি দয়ালু, তিনি এক গ্র্যান্ড ডিজাইনার, এবং তিনি সকলের। সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব জাতির মানুষের জন্য তাঁর অপার সৃষ্টিসুধা সমভাবে বন্টিত। এমনকি সকল পশুপাখি-কীটপতঙ্গ-বৃক্ষরাজির জন্যও তাই। তিনি যদি এমনটি করতে পারেন, তাহলে আমরা কেন এত বিভাজন সৃষ্টি করি? কেন নিজের বিশ্বাসকেই শ্রেষ্ঠ ভাবি, অন্যদেরকে ভাবি ভুল? প্রকৃতির এইসব বিস্ময় আমাদের নত ও বিনয়ী হতে সাহায্য করে, সহিষ্ণু ও সহনশীল হতে সাহায্য আরে। কেবল তাই নয়, প্রকৃতির ইঙ্গিত-ইশারা-ঐশ্বর্য দেখে একবার বিস্মিত হলে সে বারবার বিস্মিত হবার সুযোগ করে দেয়। আর বিস্মিত হতে হতে আমরা ফের ফিরে পাই সরলতা। আমাদের হৃদয় তখন শিশুদের হৃদয়ের মতো কোমল মায়াবী আলোয় ভরে ওঠে। আমরা তখন উপলব্ধি করতে পারি, এই নীল গ্রহ কেবল মানুষের নয়। অন্য সব পশুপাখি এবং কীটপতঙ্গেরও, এমনকি বৃক্ষদেরও। এদের অনেকের স্বল্পদৈর্ঘ্যের জীবন, অনেকের আবার দীর্ঘ জীবন। কিন্তু জীবনের দৈর্ঘ্য যেমনই হোক না কেন, এরা প্রায় সবাই পূর্ণাঙ্গ জীবন কাটায়। সম্ভবত কোনো খেদ নিয়ে মরে না ওরা। কেবল মানুষের খেদ থাকে, জীবন অসম্পূর্ণ বলে মনে হয় তার। এর কারণ সম্ভবত এই যে, মানুষ ছাড়া অন্য সবাই প্রকৃতির নির্বাচিত জীবন-প্রণালি মেনে চলে, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবকিছু। মানুষের তৈরি সভ্যতার সঙ্গে আমাদের জীবন এমনভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে যে চাইলেও আর পুরোপুরি প্রাকৃতিক জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। তবু, বড় হয়ে যাওয়ার পরও যদি সরলতার দেখা পেতে চাই আমরা, যদি বিস্মিত হতে চাই, যদি চাই জীবনের পূর্ণতা তাহলে প্রকৃতির কাছে যাওয়া ছাড়া, প্রকৃতিকে বোঝার চেষ্টা ছাড়া, আমাদের ভিন্ন কোনো পথ খোলা নেই।
বড় হয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা দুঃখবোধ আছে -- এরকম একটা পঙক্তি পড়েছিলাম কোনো এক গল্পে। কিছুতেই মনে করতে পারছি না, কোন গল্প ছিল সেটি। কী সেই দুঃখবোধ তা লেখা ছিল না গল্পে, কিন্তু কথাটা আমাকে খুব স্পর্শ করেছিল। নিজের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল, এই দুঃখবোধের কারণ-- বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অনেক কিছু হারাই, তার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো সরলতা এবং বিস্ময়বোধ। আর এই দুই সম্পদ হারানোর ফলে হারাই শর্তহীন ভালোবাসার অনিঃশেষ ক্ষমতাও। মনে হয়েছিল, সরলতা-বিস্ময়বোধ-ভালোবাসা এই ব্যাপারগুলো বোধহয় পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
প্রকাশিত হলো সাহিত্য কাগজ ‘প্রতিধ্বনি’
প্রকাশিত হলো সাহিত্য কাগজ 'প্রতিধ্বনি'। প্রথম সংখ্যায় খ্যাতিমান লেখকদের পাশাপাশি তরুণদের লেখা যত্নের সঙ্গে প্রকাশ, বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপন ভিন্নতা এনে দিয়েছে। ৭৩৬ পৃষ্ঠার আয়োজনে শুরুতে কবি ও লেখক সৈয়দ শামসুল হকের অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার। কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের অপ্রকাশিত চিঠি। নিশ্চিতভাবে যা অনেক পাঠকের কাছে আগ্রহের। রয়েছে সাম্প্রতিক প্রেক্ষিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভিনদেশি চার সাক্ষাৎকার। চিলিয়ান ঔপন্যাসিক রবার্তো বোলানিও, ভারতীয় বংশোদ্ভূত উগান্ডান লেখক-শিক্ষাবিদ মাহমুদ মামদানি ও কানাডিয়ান লেখক-চিন্তাবিদ নাওমি ক্লেইনের পাশাপাশি আছে আধুনিক কবিতার মহীরুহ টি এস এলিয়টের ভিন্নধর্মী সাক্ষাৎকারের অনুবাদ। চারটি সাক্ষাৎকার যথাক্রমে অনুবাদ করেছেন পলাশ মাহমুদ, রেজাউল করিম রনি, উপল বড়ুয়া ও নেলসন। ইতিহাসের সুলুক সন্ধান করেছেন সাংবাদিক-সম্পাদক মতিউর রহমান। 'গোলাম আম্বিয়া খান লুহানীর খোঁজে' গদ্যটির ভূমিকা লেখার পাশাপাশি তার নেওয়া মার্কসবাদী চিন্তাবিদ ও অধ্যাপক শোভনলাল গুপ্ত দত্তের সঙ্গে কথোপকথনও মুদ্রিত হয়েছে প্রতিধ্বনির এ সংখ্যায়। আরেক প্রখ্যাত সাংবাদিক-সম্পাদক নূরুল কবীর পুনর্পাঠ করেছেন ইতিহাসের। বেশ আগ্রহ জাগানিয়া গদ্যটির শিরোনাম, 'লুঙ্গিসর্বস্ব মওলানা ও অশিক্ষিত স্নাতক: লীগ ও ন্যাপ শিবিরের রাজনৈতিক অপপ্রচার প্রসঙ্গে'। 'অধর্মণের পক্ষে-বিপক্ষে' নামে বিশেষ গদ্য লিখেছেন ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। এ সংখ্যায় সাহিত্য-ইতিহাসের সঙ্গে আছে ভাষা নিয়ে কয়েকটি গদ্য। লিখেছেন ফয়জুল ইসলাম, ওমর কায়সার, মোস্তফা সেলিম, এলিসন চাকমা ও কার্ত্তিক ঘাগ্রা। দেশের তিনটি প্রধান অঞ্চলের ভাষা—ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটীর অতীত-বর্তমানের বিবর্তন-পরিবর্তনের সন্ধান করা হয়েছে। দেশের দুই প্রধান আদিবাসী চাকমা ও গারোদের ভাষা ও লিপির বিকাশ-ভবিষ্যত নিয়ে লিখেছেন দুই আদিবাসী লেখক। রয়েছে বিখ্যাত দার্শনিক মার্টিন হাইডেগারের ভাষা বিষয়ক একটি অনূদিত গদ্য। এটি অনুবাদ করেছেন হামীম কামরুল হক। সংখ্যাটি সম্পাদনা করেছেন কবি ও প্রাবন্ধিক সাখাওয়াত টিপু। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী রাজীব দত্ত। দাম ৬০০ টাকা। পাওয়া যাচ্ছে প্রথমা, বাতিঘর, পাঠক সমাবেশ, তক্ষশীলা, সন্ধিপাঠ, পড়ুয়া এবং কয়েকজন, পুণ্ড, উজানসহ নানা বইয়ের দোকানে।
প্রকাশিত হলো সাহিত্য কাগজ 'প্রতিধ্বনি'। প্রথম সংখ্যায় খ্যাতিমান লেখকদের পাশাপাশি তরুণদের লেখা যত্নের সঙ্গে প্রকাশ, বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপন ভিন্নতা এনে দিয়েছে।
কতটা জরুরি আনোয়ার পাশা অধ্যয়ন
মানুষ আসে, মানুষ যায়, কেউ কেউ বেঁচে থাকে স্মৃতির আয়নায়। মানুষ মরে গেলেও মরে না তার কাজ। তখন কেবল দেহান্তর ঘটে ওপারে, মরে না কখনও কভু। বেঁচে থাকে নিজ ভাষায়, নিজ দেশে, নিজের সংস্কৃতিতে। শিক্ষক, গবেষক, সাহিত্যিক, দেশের স্বপ্নদ্রষ্টা আনোয়ার পাশার ক্ষেত্রে এমন অজস্র বাক্য সৃজন করলেও তার অবদান শেষ করা যাবে না। বাংলা ও বাংলাদেশের আকাশে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে তার নাম। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আনোয়ার পাশাকে যেভাবে স্মরণ করা উচিত তা কি আমরা করছি? এ প্রজন্ম কি ভুলে যাচ্ছে তার অবদান? রাষ্ট্রীয়ভাবে তিনি কতটা স্মরণীয়-বরণীয়—এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সময়ের দাবি। আনোয়ার পাশা ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস তার হাতে ঋদ্ধ হয়েছে। নিখাদ দেশপ্রেমের অনুপম সমাবেশ তার লেখায় উদ্ভাসিত। সমকালীন সমাজ-ভাবনা নিয়ে তিনি লিখেছেন। বাস্তব পরিস্থিতি প্রকাশ করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকিকে বড় করে দেখেননি। সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজচেতনা এবং এই চেতনার মাধ্যমেই মুক্তি—লেখার মূল উদ্দেশ্য তার। সন্ধানী মনে খুঁজেছেন সমাজের শোষক ও শোষিতের চিত্র। 'নীড় সন্ধানী' এমনই একটি শক্তিশালী উপন্যাস। দেশভাগের সংকট নিয়ে রচিত হয়েছে উপন্যাসটি। প্রধান চরিত্র হাসান। বিএ পাশ করে সে ঢাকায় না এসে গ্রাম থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন কলকাতায়। পাকিস্তানের বন্ধুরা তাকে শেষ পর্যন্ত বলেছিল, 'হিন্দুদের সাথে থাকা যাবে না হে, ওদেশ ছেড়ে দিয়ে এখানেই চলে আসার ব্যবস্থা কর।' তার মায়ের ইচ্ছাও এমনটাই, 'কবে হিন্দুরা আমাদের বেইজ্জতির একশেষ করে দেবে বাবা! তার চেয়ে সম্পত্তি বিনিময় করে চল আমরা ওদেশে চলে যাই।' কিন্তু দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত হাসান তা মানতে নারাজ, 'মানলাম না তোমাদের কথা। হাজার হলেও তো রামমোহন-রবীন্দ্রনাথ ওদের সমাজেই জন্মেছেন। যে সমাজে ঐ সব মহাপুরুষ জন্মেছেন সে সমাজ আর কতটুকুই বা অনুদার হতে পারে বল?' ঔপন্যাসিক অত্যন্ত দক্ষতায় এ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট নির্মাণ করেছেন, সেই সঙ্গে চরিত্রায়নও। রাজনৈতিক উপন্যাসকে তিনি সামাজিক উপন্যাসে পরিণত করেছেন। তাই দেখা যায়, উপন্যাসের বাণী হয়েছে সমাজের মুক্তির হাতিয়ার। উপন্যাসের সমাজ-রাজনৈতিক ভাষ্য, তর্ক-বিতর্ক স্থান পেয়েছে অনিবার্যরূপে। প্রতিটি বাক্য যেন অগ্নিস্ফুরণ। বিদ্রোহ-বিপ্লবের, ন্যায়-অন্যায়ের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান। আখ্যান, প্লট ও চরিত্র নির্মাণের কুশলতা উপন্যাসটিকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। ঔপন্যাসিক পরাধীন দেশে থেকে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছেন সাহিত্যিক দক্ষতায়। রাজনৈতিক কুশীলবদের কাছে ধর্না না দিয়ে মুক্তমনের সাহিত্য রচনায় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করেননি। পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে স্বাধীনতাকামী মানুষের উজ্জীবনী শক্তি হিসেবে কাজ করেছে আলোচ্য উপন্যাস। তাইতো হাসান সমাজের কথা বলে, সমাজের মানুষের হতাশার চালচিত্র কথোপকথনে ফুটিয়ে তোলে অবলীলায়। এ যেন সংলাপ, মুক্তির সনদ। নীড়ের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যত সুন্দর স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপরেখা। সরল কথার বুননে রচিত উপন্যাসটি সমাজের দর্পণ। নিঃশব্দ প্রতিবাদের রূপায়ক এই 'নীড় সন্ধানী'। এর বাস্তবরূপের প্রকাশ দেশভাগসহ পরবর্তীকালের সব আন্দোলনের ধারায়। দেশভাগের প্রেক্ষাপটে রচিত 'নীড় সন্ধানী'তে আনোয়ার পাশা ঔপনিবেশিক সময়ের প্রতিকূল বাস্তবতাকে শৈল্পিক তত্ত্বাদর্শে মানবচৈতন্যের পটে সমাজচিত্র বিধৃত করেছেন। সাহিত্যিক ভাষারূপ দিয়ে তিনি উদ্ভাসিত করেন স্বসমাজ মানসকে, স্বকালীন বাস্তবতাকে এবং পরমকাল সৃদশ আদর্শকে। বিরূপ প্রতিবেশে ঐতিহ্য ও সমাজবাস্তবের আত্মকরুণ, বেদনাবিহ্বল চিত্র প্রকাশ করলেও লেখায় আবেগতাড়িত হননি। বরং আত্মচৈতন্য জাগ্রত করে সমাজচৈতন্যে অগ্রসর হয়েছেন। নীড়ে ফেরা আকুতি অবশেষে পরিপুষ্টি লাভ করে স্বপ্নসারথিতে। ফলে দেশভাগ অতি জরুরি বিষয় হিসেবে দেখা দেয়। কিন্তু তাতে সংকটের সমাধান হয়নি। প্রকটতর পরিবেশে দুর্বিষহ জীবনের হাতছানি সিদ্ধান্তহীনতার যাতাকলে নিষ্পেষিত হয়েছে জনপ্রান্তর। কিন্তু স্বপ্নপিপাসু মানুষের জীবন থেমে থাকেনি, সম্মুখপানে অগ্রসর হয়েছে নতুন জীবন সন্ধানে। ঔপন্যাসিক এখানে জীবনের জয়গানকেই আলোকিত করেছেন। 'রাইফেল রোটি আওরাত' উপন্যাসটি রচিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে সংঘটিত গণহত্যা এবং পরবর্তীকালের সমাজবাস্তবতার চিত্র। আনোয়ার পাশা উপন্যাসের আধেয় করেছেন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। ফলে পাঠক সমাবেশে তা ইতিহাস পাঠে পরিগণিত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়রূপে। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত 'রাইফেল রোটি আওরাত' ইতিহাস গবেষণার আকর-গ্রন্থ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আনোয়ার পাশা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রচনা করেছেন গ্রন্থটি। তিনি ছিলেন নির্ভীক দেশপ্রেমিক, শিক্ষক ও সাহিত্যিক। লেখার পরতে পরতে দেশপ্রেমের এমন অনুপম প্রকাশ বিশ্বসাহিত্যের ভাণ্ডারে সত্যিকার অর্থে বিরল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অনুসন্ধানী মন নিয়ে অবলোকন করেছেন পাকিস্তানি শাসকের স্বৈরাচারি মনোভাব। পূর্বপাকিস্তানি শান্তিকামী মানুষ স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বেলিত জীবনকে ভস্মীভূত করেছেন দেশমাতৃকার কল্যাণে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকে পরবর্তীকালের বর্ণনা আছে এ উপন্যাসে। মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয়ের কালের সাক্ষী হয়ে থাকা 'রাইফেল রোটি আওরাত' বহন করে চলেছে বেদনাবিধূর চিহ্ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক সুদীপ্ত শাহীন উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। প্রকান্তরে এ চরিত্রের আড়ালে আনোয়ার পাশা নিজের ছবিই এঁকেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে দেখিয়েছেন দেশের ক্রান্তিকালে বিভিন্ন মানুষের মনস্তত্ত্ব। প্রধান চরিত্র সুদীপ্তের কণ্ঠে আমরা যেমন যুদ্ধের হত্যাযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনের বিপর্যয়ও দেখি, সেইসঙ্গে নতুন দিনের স্বপ্নবুননের ছবিও দেখি। আনোয়ার পাশা উপন্যাসটি শুরু করেছেন 'বাংলাদেশে নামলো ভোর' এই চরণ দিয়ে। আর শেষ করেছেন 'নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভাত। সে আর কতো দূরে। বেশি দূরে হতে পারে না। মাত্র এই রাতটুকু তো! মা ভৈঃ! কেটে যাবে।' ঔপন্যাসিকের মনোদর্শন পূরণ হয়েছে। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছে দেশ। আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা। কিন্তু আনোয়ার পাশা স্বাধীনতার সেই ক্ষণের সারথি হতে পারেননি। আলবদর, আলশামস বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যে বুদ্ধিজীবী হত্যায় উন্মত্ত হয়ে ওঠেছিল, সেই তালিকায় প্রথম সারিতে ছিলেন আলোচ্য ঔপন্যাসিক। তিনি ঘাতক আলবদর কর্তৃক অপহৃত ও নিহত হন। ১৯২৮ সালে মুর্শিদাবাদে জন্ম নেওয়া আনোয়ার পাশা হয়ে উঠেছিলেন সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষ। মাত্র ৩৯ বছরের জীবন পরিসীমায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাহিত্য রচনার পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার নাম সাহিত্যে স্থান পেয়েছে। ছোটবেলা থেকেই তার মুক্তিকামী মন খুঁজে ফিরেছে মানুষের শোষণ মুক্তির উপায়। সাহিত্যে সে ধারণারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই। স্বাধীন দেশের পাখির কিচিরমিচির শব্দের মুখরতার স্বপ্ন এঁকেছিলেন তিনি। সাহিত্য রচনার মধ্য দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র রূপান্তরের স্বপ্নবীজ বপন করেছিলেন। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তিযুদ্ধ—বড় এই দুই মুক্তির আশার বাণী দেখিয়েছেন বাংলার মানুষকে। সাহিত্যে স্থান দিয়েছেন রাজনৈতিক বাস্তবতা ও এর প্রতিকার। গণমানুষের মুক্তির স্বাদ তার সাহিত্যে বড় জায়গা করে নিয়েছে। আনোয়ার পাশা অধ্যয়ন মানে দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধের চর্চা। সময়ের গতির সঙ্গে সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতার চিত্রের খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে—বলা যাবে না। কারণ শোষণ-শাসন-পোষণ রাজনীতির পিষ্টে প্রতিনিয়ত মানবহৃদয় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। স্বাধীন একটি দেশের অভ্যুদয় মানেই মানুষের মুক্তির নিশ্চয়তা নয়। এখনও দৃশ্যমান সমাজের অন্ধ্রে অন্ধ্রে বৈষম্যের কষাঘাত। শাসক ও শোষকের ব্যবধান হ্রাস না পেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা হতাশার কারণ। আনোয়ার পাশা ব্যক্তিগত জীবনদর্শন ও জীবনাভূতির মিশেলে সাহিত্য রচনা করেছেন। দেশভাগ ও মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী নির্ভর উপন্যাসে আবদুল মালেক, আবদুল খালেক, সোবহান মৌলভী, হাসিম শেখসহ চরিত্রগুলোর মধ্যে সুপ্ত রয়েছে মানুষের এক পূর্ণাঙ্গ জীবনসত্য। পশুশক্তির বিরুদ্ধে মানবসত্তার সংগ্রাম স্পৃহার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক চরিত্রের মধ্যে আনোয়ার পাশা দেখিয়েছেন পাকিস্তানি মনোভাবের প্রতি সমর্থন। সমাজে এরূপ চরিত্র এখনও দুর্লভ নয়। স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিকাশে তারা প্রতিনিয়ত বিরুদ্ধ পরিবেশ তৈরির পায়তারায় লিপ্ত। আনোয়ার পাশা বিষয়টি অনুধাবন করেছিলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই। তার ভবিষ্যৎ দর্শন শক্তির প্রাচুর্যতা সহজেই অনুমেয়। আনোয়ার পাশা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ছোটবেলা থেকেই মানবমুক্তির কল্যাণে কাজ করেছেন। ষাটের দশকে আইয়ুব সরকারের আমলে রবীন্দ্রনাথ সরকারের জন্মশতবার্ষিকী পালন করার অপরাধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার পাসপোর্ট ছয় বছরের জন্য স্থগিত করে। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে শিক্ষকতাকালে তিনি 'সাহিত্য মজলিশ' নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে সচেষ্ট হয়েছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবোধ তৈরিতে; সেইসঙ্গে পাবনাতে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে। মুক্তিযুদ্ধে নিজের অর্থ ছাড়াও অন্যদের কাছ থেকে অর্থ জোগাড় করে পাঠিয়ে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। গোপনে লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের গোপন প্রচারপত্রে। তার ছিল মুক্তির উদ্দেশ্যে লড়ে যাওয়ার প্রত্যয়। এ মনোভাব থেকেই উৎসারিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম উপন্যাস 'রাইফেল রোটি আওরাত'। আনোয়ার পাশার লেখার মূল বৈশিষ্ট্য হলো, রাজনৈতিক চেতনার মধ্যে মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলা। এর সারবত্তা শক্রকবলিত অবরুদ্ধ জীবনের। বিপন্ন ও ভীত প্রেক্ষাপট কিন্তু তাতে আশার কমতি নেই। এ যেন মৃত্যু গ্রাসের মধ্যে বসে মৃত্যুকে রোখার বিবরণ। তার এই রচনাকে তুলনা করা যায় ইলিয়া এরিনবুর্গের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের কাহিনী নিয়ে রচিত 'ফল অব প্যারিস' কিংবা স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ নিয়ে রচিত আর্নেস্ট হ্যামিংওয়ের লেখা 'ফর হোম দ্য বেল টোলস'র সঙ্গে। আনোয়ার পাশা এপ্রিলেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন যে স্বাধীনতা আসন্ন। চিরকালেই দর্শন শক্তিসম্পন্ন লেখকেরা ধ্বংসের মুখে আশার বার্তা দিয়ে যান; তিনি তা-ই করেছেন সাহিত্যে। আনোয়ার পাশা অধ্যয়ন সর্বদা প্রাসঙ্গিক। তরুণ প্রজন্মের কাছে অবশ্য পাঠ্য তার রচনা। বিজয়ের প্রভা উদ্ভাসনে তার সাহিত্য কালের ধ্বনি। বাংলাদেশের সংস্কৃতির রূপ-রূপায়নে আনোয়ার পাশার সাহিত্য জীবনোপলব্ধির এক বড় ক্যানভাস। জীবনের প্রতি স্তরে মানুষ বিপদ ও বিপথের সম্মুখীন হয়। তখন তার মধ্যে তৈরি হয় একধরনের সিদ্ধান্তহীনতা। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে কখনো কখনো। আনোয়ার পাশার লেখাগুলো এ পরিস্থিতিতে সহায়ক হতে পারে। সমাজে দুর্নীতি, অন্যায়, বৈষম্য দূরীকরণেও ভূমিকা পালন করতে পারে এসব রচনা। মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও গণমানুষের অধিকার আদায়ে তার লেখা তৈরি করতে পারে দৃঢ়প্রত্যয়। আনোয়ার পাশা লিখেছেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের চেতনা জাগাতে। সেই চেতনা হবে মুক্তির পথ। মত ও পথের বিবিধ সম্ভাবনার মধ্যে তৈরি করতে চেয়েছেন সংযোগ সেতু। তাতে তিনি সিদ্ধহস্তের পরিচয় দিয়েছেন। আনোয়ার পাশা অধ্যয়নের মধ্যে মানবমুক্তির নিশানা বিধৃত। রাষ্ট্রীয়ভাবে আনোয়ার পাশার চর্চা বেগবান করা অপরিহার্য। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে তার লেখা বিভিন্ন শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্তি করা প্রয়োজন। তরুণ প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন তার দেশপ্রেম ও অসাম্প্রদায়িক বাণী। তাহলে উন্নত রাষ্ট্র বাস্তবায়নের পাশাপাশি আদর্শ রাষ্ট্র বিনির্মাণ সম্ভব হবে। সমাজে অযাচিত মানুষের দেশদ্রোহী মনোভাব নির্মূলে তার লেখা সর্বদা আধুনিক। স্বাধীন ও সমাজসচেতন মানুষ সবসময় স্বপ্ন দেখে ভালো কিছুর। সেখানে বিদ্রোহ ও বিপ্লব অন্যায়ের বিরুদ্ধে বড় অবস্থান। আনোয়ার পাশা মানবিক মানুষের চিত্রপটে কল্যাণের জয়গান গেয়েছেন। স্বপ্নাতুর মানুষের জয়ের আকাঙ্ক্ষার তীব্র বাসনার বীজ অন্তরে বুনেছেন। সত্যিকার সাহিত্যিক, দেশপ্রেমিক, সমাজ পরিবর্তনের কারিগর হতে হলে এসব রচনা আস্বাদনের প্রয়োজনীয়তা অনেক। সর্বোপরি আনোয়ার পাশার জীবন ও সাহিত্যদর্পণ পাঠের মাধ্যমে তীব্র জাতীয়তাবোধ তৈরি ও তার বাস্তবায়ন আমাদের সংস্কৃতি রূপান্তরে সবিশেষ কল্যাণ আনতে সহায়ক হবে। আনোয়ার পাশার লেখনীতে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী, পাকিস্তানি শাসকচক্রের নৃশংসতা, দেশীয় কতিপয় লোকের বিপথগামিতা। এসব ঘটনা ঘটেছে দেশভাগ, ভাষা-আন্দোলন ও স্বাধীনতায়। এ ত্রিবিধ অধ্যয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতির আদি-অন্ত জানা সম্ভব। দুভাবে এ সংক্রান্ত তথ্য আমরা পেতে পারি। প্রথমত, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে। দ্বিতীয়ত, বইপুস্তক থেকে—কবিতা, উপন্যাস, নাটক, গান, প্রবন্ধ প্রভৃতি উৎস। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বয়স ৫৩ বছরের অধিক। মুক্তিযোদ্ধা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই বেঁচে নেই। যারা জীবিত তারা আগামী ৩০ বছরের মধ্যে কেউ বেঁচে থাকবেন না। সেক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান অবলম্বন হবে বই-পুস্তক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের এমন ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে নতুন প্রজন্ম অধ্যয়নের মাধ্যমে জীবনে তা রূপায়িত করতে পারে। আফ্রিকায় ১৯৬০ এর দশকে স্বাধীন হওয়া অনেক দেশে রাজনীতি হারিয়ে গেছে, গণতন্ত্র হয়েছে উধাও। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য পূর্বপুরুষেরা যে আত্মাহুতি দিয়েছেন তা নতুন প্রজন্মকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখানো হয়। আমাদের দেশের মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস জানতে হলে আনোয়ার পাশা অধ্যয়নের পথ সুগম করতে হবে। ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান: অধ্যাপক, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মানুষ আসে, মানুষ যায়, কেউ কেউ বেঁচে থাকে স্মৃতির আয়নায়। মানুষ মরে গেলেও মরে না তার কাজ। তখন কেবল দেহান্তর ঘটে ওপারে, মরে না কখনও কভু। বেঁচে থাকে নিজ ভাষায়, নিজ দেশে, নিজের সংস্কৃতিতে।
বাংলা নববর্ষে যেভাবে সংযুক্ত হয়েছিল পান্তা ও ইলিশ
বাংলা নববর্ষের সঙ্গে পান্তা ইলিশ আজ যেন অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নববর্ষের প্রথম দিনে মাটির সানকিতে করে পান্তা ইলিশ খাওয়াকে অনেকে আবার বাঙালিয়ানার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও ভাবতে পছন্দ করেন। বাঙালি ঠিক কত বছর আগে থেকে পান্তাভাত খায় তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্য ধারার অন্যতম প্রধান কাব্য চণ্ডীমঙ্গলে পাওয়া যায় পান্তার বর্ণনা। মুকুন্দরাম চক্রবর্তী চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে 'কালকেতুর ভোজন' এ লিখেছেন, 'মোচড়িয়া গোঁফ দুটা বান্ধিলেন ঘাড়ে/এক শ্বাসে সাত হাড়ি আমানি উজাড়ে/চারি হাড়ি মহাবীর খায় খুদ জাউ/ছয় হান্ডি মুসুরি সুপ মিশ্যা তথি লাউ।' এখানে 'আমানি' হলো পান্তার জলীয় অংশ। বাংলা নববর্ষের সবচেয়ে প্রাচীন আঞ্চলিক অনুষ্ঠান ছিল আমানি। এটি ছিল মূলত নতুন বর্ষে কৃষকের নিজস্ব আয়োজন। চৈত্র সংক্রান্তির শেষ বেলায় কৃষাণী হাঁড়িতে অপরিপক্ক চাল ছড়িয়ে কচি আমপাতার ডাল বসিয়ে দিতেন। নববর্ষের দিনে সূর্যোদয়ের আগে ঘর ঝাড়ু দিয়ে আমপাতা সহযোগে সেই পানি উঠোন ও ঘরে ছড়িয়ে দেন কৃষাণী। এরপর সেই ভেজানো ভাত পরিবারের সবাইকে খেতে দেওয়া হয়। আমানি মূলত নববর্ষের আদি উপাদান। গত কয়েক শতবর্ষ ধরে পান্তা খেয়ে থাকে বাঙালি। বাঙালির সংস্কৃতির পুরোভাগই যেহেতু কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই পান্তাই ছিল সবচেয়ে সহজলভ্য। অন্যদিকে পান্তাভাত ছিল কৃষকের শারীরিক শক্তির উৎস। একসময় সূর্যোদয়ের পর পান্তা খেয়েই কৃষক মাঠে যেতেন। আর তাই তো পকেট হারকিউলিস তথা বিশ্বখ্যাত বাঙালি শরীরচর্চাবিদ মনোহর আইচ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন পান্তা ভাতের জল, 'তিন জোয়ানের বল।' একইসঙ্গে নিজের শক্তির উৎস সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, আমি দিনে চারবেলা পান্তাভাত খেতাম। বাংলার আবহমান গ্রাম বাংলায় পান্তা ভাত খাওয়া হতো নুন, কাঁচা লঙ্কা কিংবা বড়জোর পেঁয়াজ সহযোগে। পান্তা খাওয়ার বাসন হিসেবে দরিদ্র কৃষকের কাছে মাটির বাসন ব্যবহারের রেওয়াজ ছিল না। কৃষক পান্তা খেত কচু পাতায় কিংবা কলা পাতায়। আর তাই তো ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত মনসামঙ্গল কাব্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি বিজয়গুপ্ত লিখেছেন 'আনিয়া মানের পাত বাড়ি দিল পান্তাভাত'। 'মান' বলতে এখানে মানকচুর কথা বোঝানো হয়েছে। তথা মানকচুর পাতায় করে পান্তা ভাত বেড়ে খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কালের পরিবর্তনে পান্তার সঙ্গে একসময় যুক্ত হয় আলু ভর্তা কিংবা পোড়া বেগুন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরণের সহজলভ্য মাছ। এসব মাছের মধ্যে ছিল পুঁটি, কৈ, টাকি কিংবা ট্যাংরা, যা বিলে কিংবা পুকুরে সহজেই পাওয়া যায়। মাছে ভাতে বাঙালি হলেও ইলিশের সংযোগ তারও ঢের বাকি। কারণ ইলিশের দাম সবসময়ই ছিল খানিকটা চড়া। অন্যদিকে, ইলিশের দাম চড়া হওয়ায় তা গরম ভাতের সঙ্গে খেতেন গ্রামের মানুষ। পান্তার ভাগ্যে তা আর জুটতো না। অন্যদিকে, শহরের বিত্তবানদের কাছে পান্তাই ছিল আদতে গরীবের খাবার। ফলে ইলিশ তাদের কাছে সহজলভ্য হলেও পান্তা হেঁশেল ঘরের গণ্ডি পেরোতে পারতো না। ইলিশের সুখ্যাতি বরাবরই লিখিত হয়েছে বাংলা সাহিত্য থেকে রাজনীতিতে বা আড্ডা মহলেও সেখানে পান্তার সুখ্যাতি ছিল না। ইলিশ যতখানি না সগৌরবে আলোচিত হত, সে তুলনায় পান্তা ছিল অনেকখানি অপাংক্তেয়। ফলে পান্তার সঙ্গে ইলিশের সংযোগ বাংলার ঘরে দেখা মিলেনি। তবে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে গত শতকের আশির দশকে ঢাকায়। ষাটের দশক থেকেই রমনার বটমূলে নববর্ষের প্রথম দিনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করে থাকে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। ১৯৬৭ সালে শুরু হয়েছিলো ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। দেশ স্বাধীনের পরও তা অবিচল থাকে। তবে ছায়ানটের মাধ্যমে কিন্তু পান্তা ইলিশ উঠে আসেনি। পান্তা ইলিশের প্রচলন শুরু হয়েছিলো ১৯৮০/৮১ সালের বর্ষবরণে। সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেবারের বর্ষবরণের কিছুদিন আগে সাংবাদিক বোরহানউদ্দিন আহমেদ প্রথম নববর্ষ উদযাপনের বিষয়ে ভাবতে গিয়ে পান্তা ইলিশ আয়োজনের প্রস্তাব দেন। অতঃপর তার বন্ধু, সহকর্মীরা জনপ্রতি চাঁদা তুলে পান্তা ইলিশের আয়োজন করেন। সে আয়োজন নিছক আড্ডাসুলভ হলেও পান্তা ইলিশ আয়োজনের কথা ছড়িয়ে পড়ে। পরের বছর 'ছুটির ফান্দে' খ্যাত গীতিকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক শহিদুল হক খান রমনায় পান্তা ইলিশের আয়োজন করেন। একইসঙ্গে তিনি পান্তা ইলিশের পোস্টার এঁকেও পান্তা ইলিশকে জনপ্রিয় করে তুলেন। আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় রমনার বর্ষবরণের অনুষ্ঠান সবার কাছেই আরাধ্য হয়ে উঠে। ফলে ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের পাশেই জমে উঠে পান্তা ইলিশ ছন্দ। সাংস্কৃতির কাছেই ব্যবসায়িক বুদ্ধি, দুয়ে মিলে পান্তা ইলিশের বিক্রি বাট্টা দেদারসে বাড়তে থাকে। সে বছরগুলোতে মাটির সানকিতে করে পান্তা ইলিশের সঙ্গে যোগ হয় নানা পদের ভর্তাও। এমন সময়ে কিছু বাড়তি উপার্জনের আশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী রমনা বটমূলে পান্তা ইলিশ বিক্রি শুরু করলে তা রীতিমতো তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে পান্তা ইলিশ তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কয়েক বছরের মধ্যে পান্তা ইলিশ দেশব্যাপী রীতিমতো শোরগোল ফেলে দেয়। অনেকের দৃষ্টিতে তখন পান্তা ইলিশ হয়ে দাঁড়ায় বাঙালিয়ানার অন্যতম অনুষঙ্গ। প্রথম পর্যায়ে ইলিশ মাছ দুর্লভ না হওয়ায় পান্তা ইলিশ অনেকেরই সাধ্যের মধ্যেই ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ইলিশ হয়ে উঠে বহু আরাধ্যের বস্তু। জনপ্রিয়তার পালাবদলে নব্বইয়ের দশকে পান্তা ইলিশ হয়ে উঠে নববর্ষে বাংলাদেশিদের কাছে পরম আরাধ্য। কেবল ঢাকা কিংবা বিভাগীয় শহরগুলোই নয়, জেলা শহরের অলিগলিতেও নববর্ষের দিনে পান্তা ইলিশের বিক্রি দেখা যেত। পান্তার জোগান না হয় হলো, কিন্তু ইলিশের জোগান তো সীমিত। প্রথম দিকে ইলিশের দাম বাড়লেও একপর্যায়ে ইলিশের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ইলিশের জোগান দিতে রীতিমতো শুরু হয়ে জাটকা নিধন কর্মসূচী। ফলে সরকারকেও বাধ্য হয়ে দুই মাস নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে জাটকা রক্ষা কর্মসূচি নিতে হয়। বর্তমানে ছোট ইলিশ মাছকে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে পদ্মা ও মেঘনা, কালাবদর, তেঁতুলিয়া নদীসহ দক্ষিণাঞ্চলে মাছের পাঁচ অভয়াশ্রমে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সরবরাহ তো আর পুরোপুরি বন্ধ থাকে না। তাই শহুরে পান্তা ইলিশ পরিবেশনে ইলিশের জোগান দিতে মাঘ মাস থেকেই ব্যবসায়ী ও মজুতদারেরা  হিমাগারের বরফে ইলিশ সংরক্ষণ শুরু হয়। এ প্রেক্ষিতে বলা যায় পান্তা ইলিশ যতখানি না বাঙালি সংস্কৃতির দাবীদার তারচেয়েও ব্যবসায়িক বুদ্ধির চমৎকৃত ফসল। তবে ব্যতিক্রম পান্তা। আবহমানকাল ধরে পান্তা বরাবরই ছিল বাঙালির দৈনন্দিন খাবার। এটি কখনোই নববর্ষের প্রথম দিনেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বিগত শতাব্দীর আশির দশক থেকে পান্তা ইলিশের প্রবর্তন হলেও নববর্ষের প্রথম দিনে আদিকাল থেকেই বাংলার ঘরে ঘরে সাধ্যমতো ভালো খাবার পরিবেশনের চল ছিল। এদিন বাঙালি চিরকালই ভালো খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতো। নববর্ষের আগের দিন তথা চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বাঙালি খেতো শাক-ভাত তথা শাকান্ন। চৈত্র সংক্রান্তির দিন সকাল বেলাতেই বাড়ির চারপাশের জলা, জংলা, ঝোপঝাড় থেকে শাক তুলে আনতো বাড়ির বউ-ঝিরা। মজার ব্যাপার হলো এই শাক হতে হত অনাবাদী। এমন চৌদ্দ পদের শাক দিয়েই চৈত্র সংক্রান্তির দিনের দুপুরের আহার হত। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে শাকান্ন ছাড়া বাড়িতে কোনো মাছ মাংসের পদ রান্না হত না।
বাংলা নববর্ষের সঙ্গে পান্তা ইলিশ আজ যেন অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নববর্ষের প্রথম দিনে মাটির সানকিতে করে পান্তা ইলিশ খাওয়াকে অনেকে আবার বাঙালিয়ানার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও ভাবতে পছন্দ করেন।
৮৪ বছর আগে ‘কৃষক’ ঈদ সংখ্যা কেমন ছিল
১৯৩৮ সালের ডিসেম্বরের কথা। কৃষক-প্রজা পার্টির মুখপত্র হিসেবে একটি নতুন বাংলা দৈনিক প্রকাশিত হয়। নাম 'কৃষক'। আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদক। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় ১৯৪১ সালের জুলাই মাসে পত্রিকার দায়িত্ব থেকে সরে যান আবুল মনসুর আহমদ। তবে এই মধ্যবর্তী সময়ে পত্রিকাটি জনমনে স্থান করে নেয়। আজকের মতো এতো অফুরন্ত খবর বা সংবাদ সেকালের সাময়িকপত্রের পাতায় স্থান পেতো না। সংবাদপত্রের অনেকাংশ জুড়ে থাকতো 'সাহিত্য'। বিশেষ করে ঈদ সংখ্যাগুলো সাহিত্যের বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতো। কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধের মোড়কে সমকালীন চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটতো। ক্রেতাদের কাছে পণ্যের বা প্রতিষ্ঠানের খবর পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপনদাতারাও এ সময়টিকে বেছে নেন। সময়টি তাদের কাছে আকর্ষণীয়, কারণ মুনাফা অর্জনের একটি বড় সুযোগ ঈদ উৎসব। ঈদ সংখ্যার বিজ্ঞাপন খাতে একটা বড় বাজেট রাখতো ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। 'ঈদুলফেৎর-১৩৪৭' সংখ্যাটি পর্যালোচনা করলে তা অনেকটাই অনুধাবন করা যায়। ঈদ সংখ্যাটিতে মোট ৫৪টি বিজ্ঞাপন স্থান পেয়েছে। পূর্ণ, অর্ধ ও সিকি পাতা জুড়ে ছিল এসব বিজ্ঞাপন। ব্যাংক, কটন মিলস ও ইন্সুরেন্স কোম্পানির পূর্ণ পাতা বিজ্ঞাপন দেখে এই খাতগুলো সেসময় কতটা শক্তিশালী ছিল, তা অনুমান করা যায়। পূর্ববঙ্গসংশ্লিষ্ট তিনটি বিজ্ঞাপন বিশেষভাবে লক্ষণীয়। দি লাইট অব হিন্দুস্থান ব্যাংক লিমিটেড (হেড অফিসঃ কুমিল্লা)। হিন্দু অধ্যুষিত ব্যবসায়ী মহলে মুসলমানদেরও যে একটা স্থান ছিল, এই ব্যাংক তার অনন্য প্রমাণ। বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সেক্রেটারিসহ কলকাতা, ঢাকা, চাঁদপুর ও করিমগঞ্জ (সিলেট) এজেন্টদের সবাই ছিলেন মুসলিম। একমাত্র হিন্দু সদস্য ছিলেন শিলচর (কাছার) এজেন্ট বাবু অজেন্দ্র কুমার পুরকায়স্থ। আর ছিল ঢাকার সাধনা ঔষধালয় এবং ফরিদপুরের 'দি আবুবকর সিদ্দিকি কটন মিলস লিঃ' এর বিজ্ঞাপন। ঈদ সংখ্যার বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে জুতা কোম্পানি, সিনেমা, সাবান, লবণ, চা, গেঞ্জি, ওষুধ, টাইপ রাইটার, বন্দুক বিক্রেতা ছাড়াও বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে কবি মঈনুদ্দীনের 'মুসলিম বীরাঙ্গনা', ছান্দসিক কবি আবদুল কাদিরের 'দিলরুবা' এবং আবুল মনসুর আহমদের 'আয়না' গল্পগ্রন্থের বিজ্ঞাপন। এতো গেল বিজ্ঞাপনের কথা। এবার আসি প্রকাশিত সাহিত্যের বিষয়ে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের 'কৃষকের ঈদ' দিয়ে সংখ্যাটির শুরু। যে জাতির কাজ ছিল ভুখানাঙা মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, সে-জাতি কী করে গরিব-দুঃখীদের উপেক্ষা করে আত্মসুখে বিভোর হয়ে থাকতে পারে, সে-কথা কবি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ক্ষোভের সঙ্গে লিখেছেন- 'জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিঁদ মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ? একটি বিন্দু দুধ নাহি পেয়ে যে খোকা মরিল তার উঠেছে ঈদের চাঁদ হয়ে কি সে শিশু-পাজরের হাড়?' শ্রীগোপালচন্দ্র নিয়োগীর 'ধনতান্ত্রিক পরিকল্পনা' সম্পর্কিত নিবন্ধটি প্রকাশ পেয়েছে তার পরেই। এতে তিনি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের মুদ্রানীতির বিশ্লেষণ করেছেন। সমকালীন ব্যাংক ও ইন্সুরেন্স কোম্পানির বিজ্ঞাপন এবং চর্চিত সাহিত্যের কি নিবিড় যোগাযোগ! সংখ্যার শেষ অংশে 'কবিতাগুচ্ছ' শিরোনামে দশটি ভিন্ন ভিন্ন কবির কবিতা ছাড়াও পুরো সংখ্যা জুড়েই রয়েছে কবিতার আধিপত্য। বেনজীর আহমদ (আজিকে ঈদের বাণী), জসিম উদদিন (মুসলিম হল), বন্দে আলী মিয়া (জানি একদিন যাবে চলে তুমি), বেগম সুফিয়া কামাল (ঈদের চাঁদ), এস ওয়াজেদ আলীসহ (ভিক্ষুক) কয়েকজন কবির উল্লেখযোগ্য কবিতা সংখ্যাটিতে স্থান পেয়েছে। বিশ শতকের অন্যতম প্রধান কবি ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কারণে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শাহাদাৎ হোসেনের 'ঝিন্ ঝিন্ ঝিন্ জিঞ্জিরে বাজে' কবিতাটি পরাধীন ভারতবর্ষের জনমনকে কতটা জাতীয়তাবাদে উদ্বেলিত করেছিল তা সহজেই অনুমেয়— 'কোথায় মক্কা মদিনা কোথায় জঙ্গী সে আসোয়ার আজাদী ফৌজ তাজী বোররাকে হাঁকিছে বারম্বার মজলুম আজি, ঘন ফরিয়াদে জালেমের ফাঁদে আছাড়িয়া কাঁদে দুনিয়ার বুকে বাদশাহী করে দাজ্জাল দাগাবাজ, দোরবার ঘাতে কে ভুলিবে দাদ আগুয়ান হও আজ।' 'এক মাস রোজা গেলো। এফতারি, নূনপানি, কখনো কখনো গুড় ও আতপ চা'ল পানিতে ঘুটে ক্ষীর; এতে নারকেল দেয়াও চলে, কিন্তু মেলা ভার। সেহরী চিংড়ী পান্তা পেঁয়াজ, তাও পেট ভরে নয়। তাতে অনুযোগ নেই। খোদা যা মাপায়, তাই জোটে; তাতে না সবর হওয়া গুনার কাজ।..' 'কৃষকের ঈদ' শিরোনামে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর এই অগ্রন্থিত গল্পটি খুঁজে পাওয়া যাবে 'ঈদুলফেৎর-১৩৪৭' সংখ্যায়। পুরো সংখ্যায় রয়েছে এমনি নানা গল্প। ধূপছায়া পত্রিকার সম্পাদক ডাক্তার রেণুভূষণ গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনা 'টেম্পারেচার' এ ফুটে উঠেছে মানবদেহে নানামাত্রার টেম্পারেচারের বাৎচিৎ। শ্রীহিরণ্ময় গুপ্ত 'কলিকাতার পৌর গ্রন্থাগার' শীর্ষক নিবন্ধে করপোরেশনের ওয়ার্ডভিত্তিক গ্রন্থাগারের অবয়ব কেমন হওয়া উচিত সে চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। চিন্তাশীল বাঙালি প্রাবন্ধিক ও ঔপন্যাসিক কাজী আবদুল ওদুদ 'সুলতান মাহমুদ' শিরোনামে ঐতিহাসিক এই ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বলার প্রয়াস পেয়েছেন। এই ধারার আরেকটি রচনা আনোয়ারা চৌধুরীর নেপোলিয়ানের পারিবারিক জীবন সংযুক্ত হয়েছে আলোচ্য সংখ্যায়। এই দুর্লভ ও অতি মূল্যবান ঈদ সংখ্যাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ডিজিটাল আর্কাইভ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিয়াত্তর এবং মূল্য চার আনা। প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। প্রগতিপরায়ণ-আধুনিক নরনারীর জন্য প্রচ্ছদের 'পামিকোকো' ও 'হিমকল্যাণ' কেশতৈলের সঙ্গে সূচিপত্রে উল্লিখিত বেশ কয়েকটি নিবন্ধের বিশেষ সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। ডা. কে. এন খানম, কুমারী কল্পনা সরকার ও রাবেয়া হায়দারের নিবন্ধ যথাক্রমে মেয়েদের 'মুখশ্রী রক্ষার উপায়', 'নারী-সৌন্দর্য্যের ঐতিহ্য' ও 'নারীর কেশ-সৌন্দর্য্য' রচনায় যা ফুটে উঠেছে প্রকৃষ্টরূপে। এগুলো মূলত নারীর সৌন্দর্যচর্চায় ভূমিকা রাখতে নিবন্ধের মোড়কে বিজ্ঞাপিত পণ্য ব্যবহারের হাতছানি। তবে এ দেশের নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সামসুন নাহার মাহমুদের 'মেয়েদের শিক্ষা স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রা' শীর্ষক রচনাটি এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদ্ধৃত অংশটি তার অনন্য প্রমাণ— 'নারীর শিক্ষা ও সামাজিক জীবন সম্পর্কে আলোচনা করিতে গিয়া আমরা বহু উপলক্ষ্যে বহুবার একটী বিষয় চিন্তা করিয়াছি তাহা হইল, ভবিষ্যতের শিক্ষিত নারীর জীবন কোন্ কোন্ পথে চলিতে পারে কি কি হইতে পারে তাঁহাদের উপযোগী … এই প্রসঙ্গে আমি অনেকবার সাহিত্যিক জীবনের এবং সাংবাদিক জীবনের উল্লেখ করিয়াছি। বাহিরের জগতের কোলাহল হইতে দূরেও নারী নিভৃতে পুস্তক রচনা, পত্রিকা পরিচালনা, চিত্রাঙ্কন প্রভৃতি কাজের মধ্যে জীবনের সার্থকতা খুঁজিয়া পাইতে পারে।' বিধায়ক ভট্টাচার্য্যের 'ষ্ট্রাইক' এবং এস. এম. বজলুল হকের 'প্রতিহিংসা' শিরোনামে দুটি নাটকেরও দেখা মেলে আলোচ্য সংখ্যায়। এই সংখ্যায় প্রকাশিত 'রেডিওতে সাম্প্রদায়িক প্রীতি', 'বীমা তহবীল ও ভারতের শিল্প সমস্যা', 'বাঙলায় তুলার চাষ', 'জীবন বীমার নূতন কার্য্য সংগ্রহ পদ্ধতি', 'পাট রপ্তানি শুল্ক'র মতো বিষয়ভিত্তিক বেশ কয়েকটি নিবন্ধ আজও প্রাসঙ্গিক। ৮৪ বছর পর আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত 'কৃষক' ঈদ সংখ্যাটি আপামর পাঠকের দৃষ্টিতে কিরূপে ধরা দিল তার বিচার পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিলাম।
১৯৩৮ সালের ডিসেম্বরের কথা। কৃষক-প্রজা পার্টির মুখপত্র হিসেবে একটি নতুন বাংলা দৈনিক প্রকাশিত হয়। নাম 'কৃষক'। আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদক।
ঈদের চাঁদ দেখা ও সালামির ঐতিহ্য
মুসলমানদের প্রধান বাৎসরিক উৎসব ঈদুল ফিতর, যা বাংলাদেশে পরিচিত রোজার ঈদ নামে। মূলত রমজানের পর এই ঈদোৎসব আসে বলেই এই নামকরণ। আরবি শাওয়াল মাসের পহেলা তারিখে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। আর আরবি মাসের হিসাব মূলত চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। ফলে ঈদ কবে উদযাপিত হবে, তা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। এজন্যই শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা ঈদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঈদ মানেই আনন্দ, উল্লাস আর উৎফুল্লতা। শাওয়াল মাসের পহেলা তারিখেই যেহেতু ঈদ, সেহেতু শাওয়ালের চাঁদ মানেই ঈদের চাঁদ। সেজন্য ঈদের আগের দিন রাতকে বলা হয় 'চাঁদরাত'। চাঁদ দেখাকে কেন্দ্র করেই মূলত শুরু হয় আমাদের ঈদ উদযাপনের পালা। ঈদের চাঁদ দেখার জন্য ছোট্ট ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে মুরুব্বি পর্যন্ত সবাই মাগরিবের পর তাকিয়ে থাকে পশ্চিমাকাশে। চাঁদের বাঁকা রেখা ফুটে ওঠা মাত্র‌ই সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দের ফল্গুধারা। চাঁদ দেখাকে কেন্দ্র করে এই আনন্দ-উত্তেজনা আজকের নতুন নয়, বরং বহু পুরোনো রীতি। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে, মীর্জা নাথান রচিত বিখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ 'বাহারিস্তান-ই গায়বী'তে পাওয়া যায় এই রীতির কথা। সেখানে উল্লেখ আছে: 'দিনের শেষে সন্ধ্যায় নতুন চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে রাজকীয় নাকারা বেজে ওঠে এবং গোলন্দাজ সেনাদলের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ক্রমাগত তোপ দাগানো হয়।' অর্থাৎ, সেনাদলের বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে নগরবাসীকে বুঝিয়ে দেওয়া হতো, শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেছে, আগামীকাল ঈদ। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের স্মৃতিকথায় পাওয়া যায় চাঁদ দেখা নিয়ে এমন উৎসবমুখর ঘটনার। তিনি লিখেছেন: 'ঈদটা সত্যি ছিল আনন্দের। প্রথমেই মনে পড়ে ঈদের চাঁদ দেখার প্রতিযোগিতা। সূর্য অস্ত যেতে না যেতেই তৃষিত দৃষ্টি নিয়ে সকলে আকাশের দিকে চেয়ে থাকতাম। মনে হতো ছাদে উঠে দেখতে পারলে আকাশের একটু কাছে পৌঁছানো যেতো এবং তাতে দৃষ্টিসীমার মধ্যে চাঁদের এসে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অভিভাবকেরা সহজে সেখানে উঠতে দিতে চাইতেন না—পাছে আকাশের দিকে চোখ মেলে নড়াচড়া করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে যাই। বাড়ির সামনের ফুটপাথ থেকে চাঁদ দেখা না গেলে ভাবতাম, বাড়ির পেছন দিকে রান্নাঘর বা তার কাছ থেকে তাকালে হয়তো চাঁদ দেখা যাবে। রমজানের চাঁদ দেখারও একটা প্রতিযোগিতা চলতো, তবে ঈদের চাঁদ দেখার উৎসাহ ছিল বহুগুণে বেশি। চাঁদ দেখতে না পেলে একটু বিমর্ষ হতাম। বন্ধুরা এই উৎসাহের সুযোগ নিয়ে ঠকাতে চাইতো। বলতো, "ওই তো চাঁদ"। "কোথায়? কোথায়?", "ঠিক আমার আঙুলের সোজাসুজি দেখ্, দেখতে পাবি"। প্রায়ই কোনো বন্ধুর নির্দেশমতো এদিক-ওদিক তাকিয়েও হয়তো দেখতে পেতাম না। যখন দেখতে পেতাম, তখন কী আনন্দ! 'প্রত্যাশিত দিনে চাঁদ দেখতে না পেলে পরদিন চাঁদ উঠবে বলে ধরে নেওয়া হতো। সেইমতো বাড়িতে শুরু হতো নানা আয়োজন। পরের সন্ধ্যায় চাঁদ উঠলে মা কী বোনেরা খালি চোখে চাঁদ দেখে দোয়া-দরুদ পড়তো। তারপর চোখের সামনে শাড়ির আঁচল ধরে সেদিকে আবার দেখতো। কাপড়ের ভিতর দিয়ে দেখা গেলে বুঝতে হতো সেটা দ্বিতীয়ার চাঁদ—ঈদের চাঁদটা আসলে উঠেছিল আগের সন্ধ্যায়, আমাদের কাছে ধরা দেয় নি।' (আনিসুজ্জামান: ২০০৩, ৭০) আনিসুজ্জামানের এই লেখা থেকেই স্পষ্ট যে, কতটা উৎফুল্ল হয়ে উত্তেজনাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো চাঁদ দেখাকে কেন্দ্র করে। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে ঈদের চাঁদ দেখার যে মধুর স্মৃতি, তাই মূলত তিনি বর্ণনা করেছেন। এমন মধুর স্মৃতি বোধহয়, প্রতিটি বাঙালি মুসলমানের স্মৃতির ভাণ্ডারে তাজা আছে। কথাসাহিত্যিক আবু রুশদের স্মৃতিতেও অমলিন ছিল কৈশোরে ঈদের চাঁদ দেখার স্মৃতি। লিখেছেন তিনি: 'যেদিন ঈদের চাঁদ দেখা দিতো সেটা ছিলো মহা স্ফূর্তির সময়। সাধারণত দুই ঈদের ব্যবধানে আমরা নতুন কাপড় ও জুতো পেতাম। খুব বাহারী কিছু না। পাজামা ফুজি সিল্স এর পাঞ্জাবী আর চপল। সেগুলি কিনতাম তখনকার মধ্যবিত্তদের জন্য খুব চালু ডিপার্টমেন্ট স্টোর ওয়াসেল মোল্লা থেকে। নতুন কাপড় পেলে উৎসাহের পরিমাণ অবশ্য অনেক বেড়ে যেতো। আমার নিজেরটা আমি নিজেই সাবান দিয়ে খুব যত্নের সঙ্গে কাঁচতাম তারপরে ইস্ত্রি করিয়ে রাখতাম। নতুন স্যাণ্ডেল হলে তাতেও কালি লাগিয়ে ব্রাশ ও পুরানো গরম কাপড়ের টুকরো দিয়ে তা পরিষ্কার করে স্যাণ্ডেলটাকে ঝকঝকে তকতকে করে তুলতাম।' (রুশদ: ১৯৮৯, ৭৮) ঈদের চাঁদ নিয়ে কবি শাহাদাত হোসেন কবিতা লিখেছিলেন, সাপ্তাহিক মোহাম্মদী পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় (১৩৪৫/১৯৩৮)। প্রথম চার লাইন: 'আজি শওয়ালের দ্বিতীয়ার চাঁদ বহিয়া এনেছে দ্বারে খুশির স‌ওদা, খোশ আমদেদ মণি-মঞ্জুষা ভারে। দুনিয়া জাহানে ন‌ওরোজ আজি জাগ্রত মুসলিম কোলাকুলি আর কুর্নিশ চলে হরদম তস্‌লিম।' কাজী নজরুল ইসলাম একাধিক কবিতা ও গান লিখেছেন ঈদের চাঁদকে কেন্দ্র করে। একটি বিখ্যাত গানের প্রথম কয়েকটি লাইন: 'ওরে ও নতুন ঈদের চাঁদ তোমায় হেরে হৃদয় সাগর আনন্দে উন্মাদ ॥ তোমার রাঙা তশতরিতে ফিরদৌসের পরী খুশির শিরনি বিলায় রে ভাই নিখিল ভুবন ভরি খোদার রহম পড়ছে তোমার চাঁদনি রূপে ঝরি। দুখ ও শোক সব ভুলিয়ে দিতে তুমি মায়ার ফাঁদ ॥' শুধু ঈদের চাঁদ দেখার আনন্দ‌ই নয়, বরং ঈদের দিনে সালামির রেওয়াজ‌ও ছিল ব্রিটিশ আমলের বাংলায়। সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যায় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ও আবু রুশদের স্মৃতি। মুস্তাফা নূরউল ইসলাম লিখেছেন: 'আমার সেই শৈশব-বাল্যের ঈদের দিনের ছবি আঁকি। এর মধ্যে কাছে-পিছের থেকে, নানান ফ্ল্যাট থেকে আব্বার বন্ধু-বান্ধব, স্বজন, সহকর্মী সবাই এসে গেছেন; নিচের ব্যারাক থেকে এসেছেন হাবিলদার সেপাই এঁরা।...। বড়দের সালাম করবার পর তখনকার দিনেও ছিল সালামী উপহার দেওয়ার রেওয়াজ। এখন বেশ মজাই লাগে ভাবতে—পুলিশের নিচের পদের হাবিলদার সাবেরা সালামী দিতেন ডবল পয়সা। মাথায় মুকুট কুইন ভিক্টোরিয়ার অথবা সম্রাট পঞ্চম জর্জের ছাপ‌অলা তামার ডবল পয়সা। সেই যে কত ছিল!' (ইসলাম: ২০১৯, ২৬) মুস্তাফা নূরউল ইসলামের বাবা চাকরি করতেন পুলিশে—ছিলেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ঈদের দিনে তাদের বাড়ির উৎসবমুখর পরিবেশের বর্ণনা দিতে গিয়ে সামনে এনেছেন সালামি পাওয়ার বিপুল আনন্দের স্মৃতি। ব্রিটিশ আমলে সালামি হিসেবে ডবল পয়সা পাওয়ার আনন্দ যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে তার বর্ণনা থেকে। তখন যেমন ছিল 'মাথায় মুকুট কুইন ভিক্টোরিয়ার অথবা সম্রাট পঞ্চম জর্জের ছাপ‌অলা তামার ডবল পয়সা' পাওয়ার আনন্দ, এখন এই আনন্দ বিবর্তিত হয়েছে কচকচে নতুন নোট পাওয়াতে। এজন্যই রমজানের মধ্যেই ব্যাংকগুলোতে নতুন নোট পাওয়ার জন্য লম্বা লাইন পড়ে। বাজারে অনেককে দেখা যায় নতুন নোট নিয়ে ব্যবসা করতে। পরিবারের বড়জনরা এসব নতুন নোট সংগ্রহ করেন ঈদের পূর্বেই। সেই নোট ঈদের দিন যাবে বাড়ির ও প্রতিবেশী শিশু-কিশোরদের হাতে। আর সেই নতুন কচকচে নোট নিয়ে চোখেমুখে তাদের রাজ্যের আনন্দ! এবার দেখবো কথাসাহিত্যিক আবু রুশদের কণ্ঠে সালামি পাওয়ার উচ্ছ্বাস: 'নামাজ শেষ করে খাওয়া দাওয়া সেরে ঈদের বক্‌শীস-এর আশায় আত্মীয়-মহলে আনাগোনা শুরু হয়ে যেতো। এক আনা, দু'আনা করে, এক বিশেষ আত্মীয়া একটা সিকিও দিতেন, আমার নসীবে এক টাকার উপর জুটে যেতো। আনা দিয়ে ট্রামের ফাস্ট ক্লাস ডেইজ কনশেসন টিকিট কিনে ট্রামে করে শহরটা চষে বেড়াতাম। বাগবাজার শ্যামবাজার নিমতলী কালীঘাট টালিগঞ্জ বালিগঞ্জ হ্যারিসন রোড বেলগাছি খিদিরপুর কলকাতার পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ কোনটাই আমার ঘুরবার আওতার বাইরে থাকতো না।' আহা, কিশোরকালের এমন মধুর স্মৃতিতে মুখরিত আমাদের সবার জীবন। ঈদের সালামি পাওয়ার পর এমন পাগলামি কিংবা আনন্দের বহিঃপ্রকাশ এখনো চলমান আমাদের সমাজে‌। সময়ের পরিক্রমায় সালামি আদান-প্রদান এখন ঈদের একটি অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎসব ক্রমশ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু বিয়োগ হয়, আবার কিছু জুড়ে বসে গায়ে। আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ঈদের চাঁদ দেখার অন্যরকম আনন্দ কিংবা বড়দের সালাম করে সালামি গ্রহণের যে রেওয়াজ, তা দিনকে দিন বাড়ছে। শতবর্ষ পূর্বে যে রেওয়াজ ছিল গোটা কয়েক পরিবার কিংবা শহরে সীমিত, তা এখন প্রায় পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে গেছে। ঈদের চাঁদ দেখাকে কেন্দ্র করে আহ্লাদিত বালকের দল নেই এমন শহর বা গ্রাম বাংলায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঈদের দিন নামাজ শেষে সালাম করে সালামি গ্রহণের চিত্র পাওয়া যাবে না, এমন বাড়ি কল্পনা করাও অসম্ভব। বেদনার মতো আনন্দ‌ও সংক্রমিত হয় সবার মাঝে। আনন্দের ধারা ক্রমশ বাড়তে থাকে। ঈদ উদযাপনে হয়তো সামনে আরও অনেক ধারা যুক্ত হবে। কিন্তু চাঁদ দেখা ও সালামি আদান-প্রদানের এমন চমৎকার রেওয়াজ চলতে থাকুক আমাদের মাঝে। আমাদের ঈদোৎসব হোক বহুমুখী রুচিশীল আনন্দের সমাহার।
মুসলমানদের প্রধান বাৎসরিক উৎসব ঈদুল ফিতর, যা বাংলাদেশে পরিচিত রোজার ঈদ নামে। মূলত রমজানের পর এই ঈদোৎসব আসে বলেই এই নামকরণ। আরবি শাওয়াল মাসের পহেলা তারিখে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। আর আরবি মাসের হিসাব মূলত চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। ফলে ঈদ কবে উদযাপিত হবে, তা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। এজন্যই শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা ঈদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ছাত্ররাজনীতির প্রথম শহীদ নজির আহমদ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সূচনাবিন্দু ধরা হয় ভাষা আন্দোলনকে। এই আন্দোলনে রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্রসমাজ রেখেছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্রদের দাপট ছিল রাজপথে। অভ্যুত্থানে যিনি প্রাণ দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও জীবন্ত করে তুলেছিলেন—শহীদ আসাদ—তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র। পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও ছাত্রসমাজের ভূমিকা ছিল শীর্ষস্থানীয়। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি ধীরে ধীরে বিতর্কে রূপ নিয়েছে। ছাত্ররাজনীতি যত প্রকট আকার ধারণ করেছে, তত মান কমেছে পড়াশোনার। যেখানে ছাত্রদের রাজনীতির ফলে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনা, আবাসন ব্যবস্থা এবং অন্যান্য দরকারি বিষয়ে উন্নতির কথা ছিল, সেখানে হয়েছে ঠিক উল্টো। ছাত্ররাজনীতির অতীত ইতিহাস এবং বাস্তবতার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় সামান্য‌ই। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করা শিক্ষার্থীদের জন্য স্বস্তির জায়গা থেকে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। শহীদ আসাদের মৃত্যু যতটা গৌরবের, শহীদ আবরারের মৃত্যু ততটাই আক্ষেপ ও বেদনার। বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আজ আবারও জেগে উঠেছে সেই পুরনো আলাপ—বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার্থীদের জন্য কতটা সুখের আর কতটা বেদনার? স্বস্তি নাকি আতঙ্ক? সেই জায়গা থেকে একটু ঘুরে আসতে চাই পাকিস্তান আন্দোলনের সময়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে লাহোর প্রস্তাবের আগ পর্যন্ত ছাত্র কিংবা শিক্ষকদের মধ্যে রাজনীতির তেমন প্রভাব ছিল না। কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের পর হিন্দু ও মুসলমানের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেলো—হিন্দুরা কংগ্রেসের অধীনে অখণ্ড ভারত আর মুসলমানরা মুসলিম লীগের অধীনে পাকিস্তান চাওয়া শুরু করেছে। বাংলার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে ঢাকায় বসবাসকারী হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যেও চলছিল বিপরীতধর্মী রাজনীতি। এই রাজনীতির প্রভাব সরাসরি বিস্তার লাভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে। সাংগঠনিক কিংবা কাঠামোগত রাজনীতি তখনও প্রবেশ করেনি সত্য, কিন্তু সম্প্রদায়গত অসাংগঠনিক রাজনীতির উত্থান ঘটে গেছে চল্লিশের পরেই। এভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইতিহাসের সূচনা হয়। এই সূচনাবিন্দুতেই সংঘটিত হয় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, যা সদ্য প্রবেশিত অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে স্থায়ী রূপদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৪৩ সালের জানুয়ারির শেষদিকে ছাত্রীদের একটি অনুষ্ঠানে 'বন্দে মাতরম' গাওয়া এবং পূজার্চনা বিধিকে কেন্দ্র করে হিন্দু এবং মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু ও মুসলমান ছাত্ররা মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন—বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুরাতন ভবনে—ক্লাস চলছিল। পূর্বের ঘটনার জের ধরে ক্লাস চলাকালীন হিন্দু ও মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে শুরু হলো সহিংসতা। লাঠিসোটা নিয়ে একদল আরেক দলের ওপর হামলা করে। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দুই দল আবির্ভূত হয় সম্মুখ সমরে। দুই দলেরই বেশ কিছু ছাত্র আহত হয়। মুসলিম ছাত্রনেতা নজির আহমদ প্রতিপক্ষের হামলায়, ছুরিকাঘাতে আহত হন। বন্ধুরা তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করে এবং বিরতিহীন রক্তক্ষরণের ফলে মাগরিবের সময় তিনি ইন্তেকাল করেন। বাংলা বিভাগের শিক্ষক কবি জসীম উদ্‌দীন সারাদিন তার শয্যাপাশে ছিলেন। একজন শিক্ষক হিসেবে ছাত্রের প্রতি এমন কর্তব্যনিষ্ঠ আচরণ বর্তমানে স্বপ্নের মতো মনে হয়। যাই হোক! প্রথমবারের মতো বাংলার কোনো শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক কারণে শিক্ষার্থী নিহত হলেন। অমর হয়ে গেলেন শহীদ নজির আহমদ। নজির আহমদের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু-মুসলমান ছাত্রদের বিভেদ আরও বাড়লো, পরিস্থিতি হলো আরও উত্তপ্ত। নজির আহমদ ছিলেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের নেতৃস্থানীয় ছাত্র। অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েনদের পাক্ষিক 'পাকিস্তান' পত্রিকার ম্যানেজার ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর পর 'পাকিস্তান' পত্রিকা আর প্রকাশ হয়নি। মুসলিম ছাত্রদের কাছে তিনি হয়ে গেলেন হিরো—আদর্শ অর্জনে ত্যাগের প্রতীক, পাকিস্তান আন্দোলনের প্রথম শহীদ। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্ররা '২ ফেব্রুয়ারি'কে শহীদ নজির দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং ১৯৪৩ থেকে উদযাপন করা শুরু করে। তৎকালীন ছাত্র রবীন্দ্রনাথ গুহ তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, 'এরপর কয়েক বছর মুসলিম বন্ধুরা শহীদ নজিরের স্মরণে সভা করেছে। প্রতি বছরই একমাত্র হিন্দু বক্তা ছিলাম আমি। তার জন্য‌ও হিন্দু বন্ধুদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে।' নিজেদের সহিংসতায় প্রাণ হারানো একজন সহপাঠীর স্মরণসভায় যোগদানের জন্য‌ও স্বধর্মের বন্ধুদের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ গুহের! এ থেকেই বোঝা যায়, হিন্দু-মুসলমান প্রশ্নে তৎকালীন ছাত্রদের মধ্যে কতটা ক্রোধের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। ১৯৪৪ সালে সৈয়দ আলী আহসানের সম্পাদনায় 'নজীর আহমদ' নামে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। উক্ত স্মারকগ্রন্থে আলী আহসানের তিনটি, সাজ্জাদ হোসায়েনের একটি, বেনজীর আহমদের একটি এবং অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের একটি প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত হয়। শহীদ নজিরের অন্তিমকালে তার শিয়রে থাকা কবি জসীম উদ্‌দীন একটি কবিতাও লিখেছিলেন। সৌভাগ্যবশত সৈয়দ আলী আহসানের আত্মজীবনীতে এই তথ্যগুলো পাওয়া গেলেও দুর্ভাগ্যবশত উক্ত স্মারকগ্রন্থটি ডুবে গেছে কালের গহীনে। শহীদ নজিরের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে তার বন্ধুরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি লাইব্রেরিও। পুরান ঢাকার চকবাজারের উত্তর-পশ্চিম কোণে নাজিরা বাজারে একটি বিরাট আকারের পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই লাইব্রেরিকে কেন্দ্র করে মুসলিম ছাত্ররা পাকিস্তান সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা পরিচালনা করতেন। ভাষাসৈনিক আবদুল গফুরের সাক্ষ্য, '১৯৪৫ থেকে ১৯৪৭—এ দু'বছরের কলেজ জীবনে এসব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনেও নিয়মিত অংশ নিয়েছি। এই উপলক্ষেই নাজিরা বাজারে "শহীদ নজির লাইব্রেরি"তে যেতাম পাকিস্তান আন্দোলনের পরিপোষক পুস্তক-পুস্তিকা ও সংবাদপত্র পাঠ ও আলোচনা সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে।' বলা চলে, শহীদ নজির আহমদ মুসলিম ছাত্রদের কাছে রাজনৈতিক আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে বিরাজ করছিলেন। ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্ত থেকেই আমরা দেখছি, তাকে কেন্দ্র করেই মূলত আবর্তিত হচ্ছে মুসলিম ছাত্রদের রাজনৈতিক কার্যক্রম। 'বন্দে মাতরম' সংগীত নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু-মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে যে রাজনীতির সূচনা হয়েছিল, তিরিশের দশকে তা চল্লিশের দশকে আমদানি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্র রাজনীতির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই সহপাঠীদের হাতেই নিহত হলেন নজির আহমদ। দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের আগের এবং পরের পরিবেশে বিস্তর ফারাক। তিরিশের দশকে যেখানে ছাত্রদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান বলে তেমন কোনো বিভেদ ছিল না, সেখানে চল্লিশের দশকে ছাত্রদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান‌ই হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রধান পরিচয় ও বাধা। কেবল হিন্দু-মুসলমান নয়, বরং যেকোনো রাজনৈতিক পরিচয় যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় আধিপত্য বিস্তার করবে এবং সহিংস হয়ে উঠবে, তখনই পরিস্থিতি এমন প্রাণনাশী হয়ে উঠবে। রাজনীতি প্রবেশের একেবারে সূচনাতেই নজির আহমদ জীবন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির সুফলের চেয়ে কুফল‌ই প্রকারান্তরে বেশি। পড়াশোনার জায়গা দখল করে মিছিল-মিটিং, নোটের জায়গা দখল করে লিফলেট, রেজাল্টের প্রতিযোগিতার বদলে প্রতিযোগিতা হয় পদের, পদলেহনের। এভাবেই একটি বিশ্ববিদ্যালয় তার মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত পথে হাঁটতে থাকে, যখন সে নুয়ে পড়ে রাজনৈতিক আধিপত্যের চাপে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির প্রথম শহীদ নজির আহমদের আত্মত্যাগের পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে। তিনি জীবন দিলেন, কিন্তু আমরা শিক্ষা নিলাম না—বরং উল্টো পথে হাঁটলাম। এই হাঁটার পরিণতি কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি আমরা। শহীদ নজির আহমদকে স্মরণ করে শিক্ষা নিতে হবে, যেন তার উত্তরসূরির পথ আর লম্বা না হয়। তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহৃত: ১. এ. কে. নাজমুল করিম স্মারকগ্রন্থ: অধ্যাপক মুহাম্মদ আফসার উদ্‌দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০০ ২. East Pakistan District Gazetteers Dacca: S. N. H. Rizvi, East Pakistan Govt Press, 1969 ৩. জীবনের শিলান্যাস: সৈয়দ আলী আহসান, বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স, ২০১৮ ৪. বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন: সাঈদ-উর রহমান, অনন্যা প্রকাশনী, ২০০১
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সূচনাবিন্দু ধরা হয় ভাষা আন্দোলনকে। এই আন্দোলনে রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্রসমাজ রেখেছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
স্বাধীনতার পথে উত্তপ্ত ষাটের দশক
(১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রহর প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করলেও বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য নানা তৎপরতার শুরু হয়েছিল আরও কয়েক দশক আগে। দ্য ডেইলি স্টারের তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রকাশিত দ্বিতীয় পর্বে থাকছে ১৯৬০'র দশকের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি।) ইনার গ্রুপ, ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট, অপূর্ব সংসদ ছাড়াও ষাটের দশকের শুরুতেই স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের পক্ষে প্রচারণার জন্য ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গোপনে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে একটি বিশেষ গ্রুপ। যা নিউক্লিয়াস নামে পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলৎজ লিখেছেন, '১৯৬২ সালে একদল সচেতন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নিউক্লিয়াস গঠন করে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে এদের ভূমিকা ছিল অন্যান্য বিপ্লবী দল থেকে আলাদা ধরনের।' মহিউদ্দিন আহমদের 'প্রতিনায়ক' ও মোরশেদ শফিউল হাসানের 'স্বাধীনতার পটভূমি ১৯৬০ দশক' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, 'নিউক্লিয়াসের প্রধান সংগঠক ছিলেন তিনজন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খান, সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক ও ঢাকা মহানগর সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ। ১৯৬২ সালে নিউক্লিয়াসের ভাবনা এলেও নিউক্লিয়াসের মূল কাঠামো তৈরি হয় ১৯৬৪ সালে। প্রথম দিকে নিউক্লিয়াসের উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করা। ছাত্রলীগের মধ্যে নিউক্লিয়াসের মতাদর্শ প্রচার করতেন কাজী আরেফ আহমেদ, সদস্য বাছাইয়ের দায়িত্ব ছিল আব্দুর রাজ্জাকের, নতুন সদস্যদের তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দিতেন সিরাজুল আলম খান। নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্তে সাইক্লোস্টাইল মেশিনে একটি প্রচারপত্রও বের করা হয়েছিল। পরবর্তীতে একটি মুদ্রণযন্ত্র কিনে মোহাম্মদপুরে একটি বাড়ির চিলেকোঠায় এটি বসানো হয়। নিউক্লিয়াসের কাজে তাত্ত্বিকভাবে সহযোগিতা করেন কামরুদ্দিন আহমেদ। শেখ মুজিবুর রহমানের অনুমতিক্রমে নিউক্লিয়াসের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হতো। নিউক্লিয়াস থেকেই প্রতিটি থানায় ১০ সদস্যের একটি করে গ্রুপ খোলা হয়েছিল। নিউক্লিয়াসের যারা সদস্য হতেন তাদের একটি করে প্রচারপত্র দেওয়া হতো, যেখানে নিউক্লিয়াসের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, গেরিলা যুদ্ধের কৌশলসহ নানা বিষয় উল্লেখ থাকতো। ১৯৬৯ সালে কারাগার থেকে মুক্তির পর শেখ মুজিবুর রহমান নিউক্লিয়াসের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তাকে জানানো হয় ইতোমধ্যে ২০০ থানায় নিউক্লিয়াসের কমিটি গঠিত হয়েছে। নিউক্লিয়াসের কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'নিউক্লিয়াস অসম্ভব গোপন সংগঠন ছিল। নিউক্লিয়াসের বলয়ে আমি যখন এলাম তখন আমাকে বলা হলো, কারা নিউক্লিয়াসের সদস্য ছিল, কারা নিউক্লিয়াসে কাজ করছে এসব কিছুই আমার জানার প্রয়োজন নেই। কেবল আমি যাদের নেবো তাদের বিষয়ে আমি জানবো।' লেখক ও গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিউক্লিয়াস মূলত ছাত্রলীগের যে কমিটি ছিল সেই কমিটির মাধ্যমে তাদের তৎপরতা চালিয়েছিল। অন্য সংগঠনগুলো সম্পর্কে সেসময় কিছুটা জানা গেলেও আমরা নিউক্লিয়াস সম্পর্কে জানতে পারি ১৯৭২ সালে এসে।' ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুদ্ধে জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান। স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের প্রেক্ষাপটে এই যুদ্ধটিও নানাদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পূর্ব পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনীতিবিদ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতীয় হামলার নিন্দা ও পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন যুগিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের এক জনসভায় শেখ মুজিব কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার জন্য জাতিসংঘের সমালোচনা করেন। পাক-ভারত যুদ্ধ পশ্চিম পাকিস্তানে হলেও যুদ্ধে অসীম বীরত্ব প্রদর্শন করেছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি অফিসার ও সেনারা। কিন্তু ১৭ দিনের যুদ্ধকালীন সময়ে চরম অরক্ষিত ছিল পূর্ব পাকিস্তান। ভারত যদি পূর্ব পাকিস্তানে এসময়ে হামলা করতো তবে প্রতিরোধ করার মতো কোনো সামর্থ্যই পূর্ব পাকিস্তানের ছিল না। পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ এসময় পুরোপুরি অনুধাবন করে তারা কতোটা অবহেলিত, অরক্ষিত এবং নিগৃহীত। আফসান চৌধুরী ডেইলি স্টারকে জানান, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে মানুষ রাস্তায় নেমে ভারতকে গালি দিয়েছে। ৬৫'র যুদ্ধের সময় অরক্ষিত বিষয়টি প্রচার পায়নি। কিন্তু ৬৬ সালে ছয় দফার সময় রাজনৈতিক প্রচারে ৬৫'র যুদ্ধে অরক্ষিত থাকার বিষয়টি বেশ প্রচার পেয়েছিল। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাহোরে ৬ দফা প্রস্তাব উত্থাপনের পরবর্তীতে ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান শিরোনাম। ছবি: সংগৃহীত ৬ দফা দাবিতে উত্তপ্ত রাজপথ স্বাধীনতার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সফলতম পদক্ষেপ ছিল ৬ দফা। ৬ দফা ছিল মূলত স্বাধীনতারই এক দফা। ছয় দফার মধ্যেই নিহিত ছিল স্বাধীনতার বীজ।  প্রাবন্ধিক ও গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসানের 'স্বাধীনতার পটভূমি ১৯৬০ দশক' গ্রন্থের সূত্রমতে 'তাসখন্দ চুক্তি' স্বাক্ষর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে দুই দিনব্যাপী নিখিল পাকিস্তান জাতীয় সম্মেলন ডাকা হয়। সম্মেলনটি হয় নেজামে ইসলামী পার্টির সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবী নিয়ে ৬ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এসময় পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খানসহ বৈঠকে উপস্থিত কেউই এ নিয়ে আলোচনা করতে রাজি না হওয়ায় প্রতিবাদে চার সঙ্গীসহ বৈঠক বর্জন করেন শেখ মুজিব। ১১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলনে ৬ দফা দাবি জনসমক্ষে তুলে ধরেন শেখ মুজিব। ১. শাসনতন্ত্র কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় প্রকৃতিতে ফেডারেশন ভিত্তিক রাষ্ট্রসংঘ। ২. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কেবল থাকবে দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতিতে। অন্যান্য বিষয়ে প্রদেশের ক্ষমতা হবে নিরঙ্কুশ। ৩. দুটি পৃথক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা। ৪. রাজস্ব কর ও শিল্প ব্যবস্থায় থাকবে প্রদেশের সার্বভৌম ক্ষমতা। ৫. বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষমতা ও বৈদেশিক মুদ্রা থাকবে নিজ নিজ প্রদেশের আওতাধীন। ৬. আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা। অলি আহাদ রচিত 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-৭৫' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৬ সালের ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফাকে সাংগঠনিক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং ২০ মার্চ তা অনুমোদিত হয়।  আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে জনতার মিছিল, ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯। ছবি: রশীদ তালুকদার ৬ দফা উত্থাপিত হওয়ার পরপরই এর মর্মবাণী সারাদেশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে দেশব্যাপী ঝটিকা সফরে বের হন শেখ মুজিব। এসময়ে সর্বমোট ৮ বার গ্রেপ্তারের শিকার হন তিনি। সে বছরের ৮ মে নারায়ণগঞ্জের জনসভা শেষে ফেরার পর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে দেশরক্ষা আইনে আটক হন শেখ মুজিব। শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ১৩ মে ঢাকার পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ৭ জুন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতালের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। ৭ জুন হরতালের দিনে কেবল নারায়ণগঞ্জেই পুলিশের গুলিতে ৬ জন নিহত হয়। সরকারি হিসেবে এদিন সারাদেশে ১০ জন নিহত হয়।  ৬ দফা প্রচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৫ জুন ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে গ্রেপ্তার ও ১৬ জুন ইত্তেফাকের মুদ্রণাগার দ্য নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত করে ইত্তেফাক প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। যদিও আদালতের রায়ে শেষ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হয়নি। লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, 'পঞ্চাশের দশক আর ষাটের দশকের স্বাধীনতা আন্দোলন সংগ্রাম যাই বলি না কেন, স্বাধীনতার প্রথম ধাপ ছিল ৬ দফাই। ৬ দফার মাধ্যমেই আসলে স্বাধীনতার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলো।'  গুলিবিদ্ধ আসাদকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে, ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯। ছবি: রশীদ তালুকদার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ৬ দফার পরবর্তীতেই শেখ মুজিবসহ বাঙালি সামরিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ তুলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে পাকিস্তান সরকার। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ৬ দফার বিরুদ্ধেই পাকিস্তান সরকারের কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে আফসান চৌধুরী তার 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ধারাবাহিকতার ইতিহাস' গ্রন্থে লিখেছেন, '১৯৬৭ সালে ৬ দফার বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছে। তারা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সাজাচ্ছে।'  ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি এক প্রেস নোটে ঢাকাস্থ ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারির যোগসাজশে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অপরাধে ১৮ জন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সংবাদ প্রকাশ করে পাকিস্তান সরকার। ১৯৬৬ সালের ৮ মে দেশরক্ষা আইনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি মুক্তির আদেশ পেয়েছিলেন শেখ মুজিব। এদিন রাতেই কারাগার ফটকে তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রথম ও প্রধান আসামি দেখিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে স্থানান্তরিত করা হয়। অলি আহাদের 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫' ও ডা. মাহফুজুর রহমানের 'বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ' গ্রন্থ সূত্র অনুযায়ী  '২১ এপ্রিল আইয়ুব খান অর্ডিন্যান্স জারি করলে ক্যান্টনমেন্টেই বিশেষ আদালত বসিয়ে ১৯ জুন থেকে শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে বিচারকার্য শুরু হয়। বিচারের শুরুতেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে মিথ্যা মামলা বলে আন্দোলন শুরু করে।  ৬ দফা দাবির পক্ষে তখন এমনিতেই পূর্ব পাকিস্তান বিক্ষুব্ধ। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যেন আগুনে ঘি ঢালে। আফসান চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে নানা বৈষম্যের কারণে বাঙালি অফিসার ও সেনারা নানাভাবে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তারাই মূলত সংগঠিত হয়ে দেশ স্বাধীনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। শেখ সাহেবের সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও তিনি এই বিষয়টি জানতেন। যখন এই তথ্য প্রকাশ পায় তখন দেড় হাজার বাঙালিকে আটক করেছিল ওরা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিষয়টি এসেছিল সেই ধারা থেকেই। মূলত ৬ দফার প্রেক্ষিতেই শেখ সাহেবের বিরুদ্ধে মামলাটি রাখার একটি সুযোগ পেল সামরিক সরকার।'   ১৯৬৯ সালের ২১ জানুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় 'পুলিশের গুলীতে ছাত্র নিহত' শিরোনামে আসাদের মৃত্যুর খবর। ছবি: সংগৃহীত অলি আহাদের 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫' গ্রন্থ সূত্রে, ১৯৬৮ সালের ৬ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানে জনসভা শেষে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে একটি মিছিল গভর্নর হাউসের উদ্দেশ্যে গমন করলে পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে। অন্যদিকে, ৭ ও ৮ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী বৈঠকে ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জমিয়ত-উল-উলামা ইসলামী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, নেজামে ইসলামী পার্টি, নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ড্যাক)। ১৭ জানুয়ারিতে দেশব্যাপী দাবি দিবস পালন করার আহ্বান জানায় ড্যাক। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে মোনায়েম প্রশাসন যেকোনো মিছিল ও শোভাযাত্রায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অনুষ্ঠানের পর ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়ে মিছিল বের করলে ইপিআর ও পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। মিছিলে নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট ঘোষণা করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ১৮ জানুয়ারি থেকেই মূলত গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ে। ২০ জানুয়ারি মিছিলে পুলিশের গুলিতে সেন্ট্রাল ল কলেজের ছাত্র আসাদ শহীদ হলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। শহীদ আসাদের রক্তভেজা শার্ট নিয়ে মিছিল বের হয়। মুহূর্তেই মিছিলের শহরে পরিণত হয় ঢাকা। বেপরোয়া পরিস্থিতিতে ২৪ জানুয়ারি রাত ৮টায় ২৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে প্রশাসন। ২৫ জানুয়ারি কারফিউ অমান্য করা মিছিলে সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র আবদুল লতিফ ও আনোয়ারা বেগম।   ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মিছিলের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি স্লোগান জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এই স্লোগানগুলো ছিল 'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা', 'পিণ্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা', 'তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি'। এই স্লোগানগুলো উদ্ভাবন, প্রচলন ও জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের ছিল সবচেয়ে বড় ভূমিকা।  ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক শহীদ হলে পুলিশের গুলি, কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ উপেক্ষা করেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। ১৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও আন্দোলনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাঁচাতে গিয়ে সেনাবাহিনীর বেয়নেটের আঘাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার ড. শামসুজ্জোহা শহীদ হলে আন্দোলনের সীমা চতুর্গুণ বৃদ্ধি পায়। অলি আহাদের 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, একপর্যায়ে আন্দোলনের তীব্রতায় ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবুর রহমান ও বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সামরিক প্রশাসন।  ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে রেসকোর্স ময়দানে জনসভার আয়োজন করা হয়। প্রায় দশ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ডাকসুর সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদ। সমাবেশে তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি প্রদান করেন। মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে সব দলই অংশ নিয়েছে, কিন্তু আন্দোলনের ফসলটি গেছে বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগের ঝুলিতে। এর একমাত্র কারণ ছিল বঙ্গবন্ধুর আপসহীনতা।'   আরওইনার গ্রুপ: স্বাধীনতার প্রথম প্রয়াস ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুদ্ধে জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান। স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের প্রেক্ষাপটে এই যুদ্ধটিও নানাদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পূর্ব পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনীতিবিদ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতীয় হামলার নিন্দা ও পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন যুগিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের এক জনসভায় শেখ মুজিব কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার জন্য জাতিসংঘের সমালোচনা করেন। পাক-ভারত যুদ্ধ পশ্চিম পাকিস্তানে হলেও যুদ্ধে অসীম বীরত্ব প্রদর্শন করেছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি অফিসার ও সেনারা। কিন্তু ১৭ দিনের যুদ্ধকালীন সময়ে চরম অরক্ষিত ছিল পূর্ব পাকিস্তান। ভারত যদি পূর্ব পাকিস্তানে এসময়ে হামলা করতো তবে প্রতিরোধ করার মতো কোনো সামর্থ্যই পূর্ব পাকিস্তানের ছিল না। পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ এসময় পুরোপুরি অনুধাবন করে তারা কতোটা অবহেলিত, অরক্ষিত এবং নিগৃহীত। আফসান চৌধুরী ডেইলি স্টারকে জানান, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে মানুষ রাস্তায় নেমে ভারতকে গালি দিয়েছে। ৬৫'র যুদ্ধের সময় অরক্ষিত বিষয়টি প্রচার পায়নি। কিন্তু ৬৬ সালে ছয় দফার সময় রাজনৈতিক প্রচারে ৬৫'র যুদ্ধে অরক্ষিত থাকার বিষয়টি বেশ প্রচার পেয়েছিল। ৬ দফা দাবিতে উত্তপ্ত রাজপথ স্বাধীনতার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সফলতম পদক্ষেপ ছিল ৬ দফা। ৬ দফা ছিল মূলত স্বাধীনতারই এক দফা। ছয় দফার মধ্যেই নিহিত ছিল স্বাধীনতার বীজ।  প্রাবন্ধিক ও গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসানের 'স্বাধীনতার পটভূমি ১৯৬০ দশক' গ্রন্থের সূত্রমতে 'তাসখন্দ চুক্তি' স্বাক্ষর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে দুই দিনব্যাপী নিখিল পাকিস্তান জাতীয় সম্মেলন ডাকা হয়। সম্মেলনটি হয় নেজামে ইসলামী পার্টির সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবী নিয়ে ৬ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এসময় পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খানসহ বৈঠকে উপস্থিত কেউই এ নিয়ে আলোচনা করতে রাজি না হওয়ায় প্রতিবাদে চার সঙ্গীসহ বৈঠক বর্জন করেন শেখ মুজিব। ১১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলনে ৬ দফা দাবি জনসমক্ষে তুলে ধরেন শেখ মুজিব। ১. শাসনতন্ত্র কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় প্রকৃতিতে ফেডারেশন ভিত্তিক রাষ্ট্রসংঘ। ২. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কেবল থাকবে দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতিতে। অন্যান্য বিষয়ে প্রদেশের ক্ষমতা হবে নিরঙ্কুশ। ৩. দুটি পৃথক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা। ৪. রাজস্ব কর ও শিল্প ব্যবস্থায় থাকবে প্রদেশের সার্বভৌম ক্ষমতা। ৫. বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষমতা ও বৈদেশিক মুদ্রা থাকবে নিজ নিজ প্রদেশের আওতাধীন। ৬. আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা। অলি আহাদ রচিত 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-৭৫' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৬ সালের ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফাকে সাংগঠনিক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং ২০ মার্চ তা অনুমোদিত হয়।  আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে জনতার মিছিল, ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯। ছবি: রশীদ তালুকদার ৬ দফা উত্থাপিত হওয়ার পরপরই এর মর্মবাণী সারাদেশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে দেশব্যাপী ঝটিকা সফরে বের হন শেখ মুজিব। এসময়ে সর্বমোট ৮ বার গ্রেপ্তারের শিকার হন তিনি। সে বছরের ৮ মে নারায়ণগঞ্জের জনসভা শেষে ফেরার পর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে দেশরক্ষা আইনে আটক হন শেখ মুজিব। শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ১৩ মে ঢাকার পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ৭ জুন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতালের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। ৭ জুন হরতালের দিনে কেবল নারায়ণগঞ্জেই পুলিশের গুলিতে ৬ জন নিহত হয়। সরকারি হিসেবে এদিন সারাদেশে ১০ জন নিহত হয়।  ৬ দফা প্রচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৫ জুন ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে গ্রেপ্তার ও ১৬ জুন ইত্তেফাকের মুদ্রণাগার দ্য নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত করে ইত্তেফাক প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। যদিও আদালতের রায়ে শেষ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হয়নি। লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, 'পঞ্চাশের দশক আর ষাটের দশকের স্বাধীনতা আন্দোলন সংগ্রাম যাই বলি না কেন, স্বাধীনতার প্রথম ধাপ ছিল ৬ দফাই। ৬ দফার মাধ্যমেই আসলে স্বাধীনতার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলো।'  গুলিবিদ্ধ আসাদকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে, ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯। ছবি: রশীদ তালুকদার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ৬ দফার পরবর্তীতেই শেখ মুজিবসহ বাঙালি সামরিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ তুলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে পাকিস্তান সরকার। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ৬ দফার বিরুদ্ধেই পাকিস্তান সরকারের কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে আফসান চৌধুরী তার 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ধারাবাহিকতার ইতিহাস' গ্রন্থে লিখেছেন, '১৯৬৭ সালে ৬ দফার বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছে। তারা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সাজাচ্ছে।'  ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি এক প্রেস নোটে ঢাকাস্থ ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারির যোগসাজশে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অপরাধে ১৮ জন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সংবাদ প্রকাশ করে পাকিস্তান সরকার। ১৯৬৬ সালের ৮ মে দেশরক্ষা আইনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি মুক্তির আদেশ পেয়েছিলেন শেখ মুজিব। এদিন রাতেই কারাগার ফটকে তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রথম ও প্রধান আসামি দেখিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে স্থানান্তরিত করা হয়। অলি আহাদের 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫' ও ডা. মাহফুজুর রহমানের 'বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ' গ্রন্থ সূত্র অনুযায়ী  '২১ এপ্রিল আইয়ুব খান অর্ডিন্যান্স জারি করলে ক্যান্টনমেন্টেই বিশেষ আদালত বসিয়ে ১৯ জুন থেকে শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে বিচারকার্য শুরু হয়। বিচারের শুরুতেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে মিথ্যা মামলা বলে আন্দোলন শুরু করে।  ৬ দফা দাবির পক্ষে তখন এমনিতেই পূর্ব পাকিস্তান বিক্ষুব্ধ। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যেন আগুনে ঘি ঢালে। আফসান চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে নানা বৈষম্যের কারণে বাঙালি অফিসার ও সেনারা নানাভাবে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তারাই মূলত সংগঠিত হয়ে দেশ স্বাধীনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। শেখ সাহেবের সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও তিনি এই বিষয়টি জানতেন। যখন এই তথ্য প্রকাশ পায় তখন দেড় হাজার বাঙালিকে আটক করেছিল ওরা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিষয়টি এসেছিল সেই ধারা থেকেই। মূলত ৬ দফার প্রেক্ষিতেই শেখ সাহেবের বিরুদ্ধে মামলাটি রাখার একটি সুযোগ পেল সামরিক সরকার।'   ১৯৬৯ সালের ২১ জানুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় 'পুলিশের গুলীতে ছাত্র নিহত' শিরোনামে আসাদের মৃত্যুর খবর। ছবি: সংগৃহীত অলি আহাদের 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫' গ্রন্থ সূত্রে, ১৯৬৮ সালের ৬ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানে জনসভা শেষে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে একটি মিছিল গভর্নর হাউসের উদ্দেশ্যে গমন করলে পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে। অন্যদিকে, ৭ ও ৮ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী বৈঠকে ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জমিয়ত-উল-উলামা ইসলামী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, নেজামে ইসলামী পার্টি, নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ড্যাক)। ১৭ জানুয়ারিতে দেশব্যাপী দাবি দিবস পালন করার আহ্বান জানায় ড্যাক। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে মোনায়েম প্রশাসন যেকোনো মিছিল ও শোভাযাত্রায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অনুষ্ঠানের পর ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়ে মিছিল বের করলে ইপিআর ও পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। মিছিলে নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট ঘোষণা করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ১৮ জানুয়ারি থেকেই মূলত গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ে। ২০ জানুয়ারি মিছিলে পুলিশের গুলিতে সেন্ট্রাল ল কলেজের ছাত্র আসাদ শহীদ হলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। শহীদ আসাদের রক্তভেজা শার্ট নিয়ে মিছিল বের হয়। মুহূর্তেই মিছিলের শহরে পরিণত হয় ঢাকা। বেপরোয়া পরিস্থিতিতে ২৪ জানুয়ারি রাত ৮টায় ২৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে প্রশাসন। ২৫ জানুয়ারি কারফিউ অমান্য করা মিছিলে সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র আবদুল লতিফ ও আনোয়ারা বেগম।   ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মিছিলের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি স্লোগান জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এই স্লোগানগুলো ছিল 'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা', 'পিণ্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা', 'তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি'। এই স্লোগানগুলো উদ্ভাবন, প্রচলন ও জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের ছিল সবচেয়ে বড় ভূমিকা।  ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক শহীদ হলে পুলিশের গুলি, কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ উপেক্ষা করেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। ১৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও আন্দোলনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাঁচাতে গিয়ে সেনাবাহিনীর বেয়নেটের আঘাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার ড. শামসুজ্জোহা শহীদ হলে আন্দোলনের সীমা চতুর্গুণ বৃদ্ধি পায়। অলি আহাদের 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, একপর্যায়ে আন্দোলনের তীব্রতায় ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবুর রহমান ও বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সামরিক প্রশাসন।  ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে রেসকোর্স ময়দানে জনসভার আয়োজন করা হয়। প্রায় দশ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ডাকসুর সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদ। সমাবেশে তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি প্রদান করেন। মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে সব দলই অংশ নিয়েছে, কিন্তু আন্দোলনের ফসলটি গেছে বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগের ঝুলিতে। এর একমাত্র কারণ ছিল বঙ্গবন্ধুর আপসহীনতা।'   আরওইনার গ্রুপ: স্বাধীনতার প্রথম প্রয়াস স্বাধীনতার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সফলতম পদক্ষেপ ছিল ৬ দফা। ৬ দফা ছিল মূলত স্বাধীনতারই এক দফা। ছয় দফার মধ্যেই নিহিত ছিল স্বাধীনতার বীজ। প্রাবন্ধিক ও গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসানের 'স্বাধীনতার পটভূমি ১৯৬০ দশক' গ্রন্থের সূত্রমতে 'তাসখন্দ চুক্তি' স্বাক্ষর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে দুই দিনব্যাপী নিখিল পাকিস্তান জাতীয় সম্মেলন ডাকা হয়। সম্মেলনটি হয় নেজামে ইসলামী পার্টির সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবী নিয়ে ৬ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এসময় পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খানসহ বৈঠকে উপস্থিত কেউই এ নিয়ে আলোচনা করতে রাজি না হওয়ায় প্রতিবাদে চার সঙ্গীসহ বৈঠক বর্জন করেন শেখ মুজিব। ১১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলনে ৬ দফা দাবি জনসমক্ষে তুলে ধরেন শেখ মুজিব। ১. শাসনতন্ত্র কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় প্রকৃতিতে ফেডারেশন ভিত্তিক রাষ্ট্রসংঘ। ২. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কেবল থাকবে দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতিতে। অন্যান্য বিষয়ে প্রদেশের ক্ষমতা হবে নিরঙ্কুশ। ৩. দুটি পৃথক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা। ৪. রাজস্ব কর ও শিল্প ব্যবস্থায় থাকবে প্রদেশের সার্বভৌম ক্ষমতা। ৫. বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষমতা ও বৈদেশিক মুদ্রা থাকবে নিজ নিজ প্রদেশের আওতাধীন। ৬. আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা। অলি আহাদ রচিত 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-৭৫' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৬ সালের ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফাকে সাংগঠনিক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং ২০ মার্চ তা অনুমোদিত হয়। ৬ দফা উত্থাপিত হওয়ার পরপরই এর মর্মবাণী সারাদেশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে দেশব্যাপী ঝটিকা সফরে বের হন শেখ মুজিব। এসময়ে সর্বমোট ৮ বার গ্রেপ্তারের শিকার হন তিনি। সে বছরের ৮ মে নারায়ণগঞ্জের জনসভা শেষে ফেরার পর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে দেশরক্ষা আইনে আটক হন শেখ মুজিব। শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ১৩ মে ঢাকার পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ৭ জুন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতালের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। ৭ জুন হরতালের দিনে কেবল নারায়ণগঞ্জেই পুলিশের গুলিতে ৬ জন নিহত হয়। সরকারি হিসেবে এদিন সারাদেশে ১০ জন নিহত হয়। ৬ দফা প্রচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৫ জুন ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে গ্রেপ্তার ও ১৬ জুন ইত্তেফাকের মুদ্রণাগার দ্য নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত করে ইত্তেফাক প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। যদিও আদালতের রায়ে শেষ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হয়নি। লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, 'পঞ্চাশের দশক আর ষাটের দশকের স্বাধীনতা আন্দোলন সংগ্রাম যাই বলি না কেন, স্বাধীনতার প্রথম ধাপ ছিল ৬ দফাই। ৬ দফার মাধ্যমেই আসলে স্বাধীনতার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলো।' আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ৬ দফার পরবর্তীতেই শেখ মুজিবসহ বাঙালি সামরিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ তুলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে পাকিস্তান সরকার। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ৬ দফার বিরুদ্ধেই পাকিস্তান সরকারের কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে আফসান চৌধুরী তার 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ধারাবাহিকতার ইতিহাস' গ্রন্থে লিখেছেন, '১৯৬৭ সালে ৬ দফার বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছে। তারা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সাজাচ্ছে।'  ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি এক প্রেস নোটে ঢাকাস্থ ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারির যোগসাজশে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অপরাধে ১৮ জন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সংবাদ প্রকাশ করে পাকিস্তান সরকার। ১৯৬৬ সালের ৮ মে দেশরক্ষা আইনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি মুক্তির আদেশ পেয়েছিলেন শেখ মুজিব। এদিন রাতেই কারাগার ফটকে তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রথম ও প্রধান আসামি দেখিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে স্থানান্তরিত করা হয়। অলি আহাদের 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫' ও ডা. মাহফুজুর রহমানের 'বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ' গ্রন্থ সূত্র অনুযায়ী  '২১ এপ্রিল আইয়ুব খান অর্ডিন্যান্স জারি করলে ক্যান্টনমেন্টেই বিশেষ আদালত বসিয়ে ১৯ জুন থেকে শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে বিচারকার্য শুরু হয়। বিচারের শুরুতেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে মিথ্যা মামলা বলে আন্দোলন শুরু করে।  ৬ দফা দাবির পক্ষে তখন এমনিতেই পূর্ব পাকিস্তান বিক্ষুব্ধ। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যেন আগুনে ঘি ঢালে। আফসান চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে নানা বৈষম্যের কারণে বাঙালি অফিসার ও সেনারা নানাভাবে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তারাই মূলত সংগঠিত হয়ে দেশ স্বাধীনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। শেখ সাহেবের সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও তিনি এই বিষয়টি জানতেন। যখন এই তথ্য প্রকাশ পায় তখন দেড় হাজার বাঙালিকে আটক করেছিল ওরা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিষয়টি এসেছিল সেই ধারা থেকেই। মূলত ৬ দফার প্রেক্ষিতেই শেখ সাহেবের বিরুদ্ধে মামলাটি রাখার একটি সুযোগ পেল সামরিক সরকার।'   ১৯৬৯ সালের ২১ জানুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় 'পুলিশের গুলীতে ছাত্র নিহত' শিরোনামে আসাদের মৃত্যুর খবর। ছবি: সংগৃহীত অলি আহাদের 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫' গ্রন্থ সূত্রে, ১৯৬৮ সালের ৬ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানে জনসভা শেষে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে একটি মিছিল গভর্নর হাউসের উদ্দেশ্যে গমন করলে পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে। অন্যদিকে, ৭ ও ৮ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী বৈঠকে ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জমিয়ত-উল-উলামা ইসলামী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, নেজামে ইসলামী পার্টি, নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ড্যাক)। ১৭ জানুয়ারিতে দেশব্যাপী দাবি দিবস পালন করার আহ্বান জানায় ড্যাক। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে মোনায়েম প্রশাসন যেকোনো মিছিল ও শোভাযাত্রায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অনুষ্ঠানের পর ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়ে মিছিল বের করলে ইপিআর ও পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। মিছিলে নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট ঘোষণা করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ১৮ জানুয়ারি থেকেই মূলত গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ে। ২০ জানুয়ারি মিছিলে পুলিশের গুলিতে সেন্ট্রাল ল কলেজের ছাত্র আসাদ শহীদ হলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। শহীদ আসাদের রক্তভেজা শার্ট নিয়ে মিছিল বের হয়। মুহূর্তেই মিছিলের শহরে পরিণত হয় ঢাকা। বেপরোয়া পরিস্থিতিতে ২৪ জানুয়ারি রাত ৮টায় ২৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে প্রশাসন। ২৫ জানুয়ারি কারফিউ অমান্য করা মিছিলে সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র আবদুল লতিফ ও আনোয়ারা বেগম।   ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মিছিলের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি স্লোগান জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এই স্লোগানগুলো ছিল 'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা', 'পিণ্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা', 'তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি'। এই স্লোগানগুলো উদ্ভাবন, প্রচলন ও জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের ছিল সবচেয়ে বড় ভূমিকা।  ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক শহীদ হলে পুলিশের গুলি, কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ উপেক্ষা করেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। ১৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও আন্দোলনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাঁচাতে গিয়ে সেনাবাহিনীর বেয়নেটের আঘাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার ড. শামসুজ্জোহা শহীদ হলে আন্দোলনের সীমা চতুর্গুণ বৃদ্ধি পায়। অলি আহাদের 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, একপর্যায়ে আন্দোলনের তীব্রতায় ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবুর রহমান ও বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সামরিক প্রশাসন।  ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে রেসকোর্স ময়দানে জনসভার আয়োজন করা হয়। প্রায় দশ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ডাকসুর সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদ। সমাবেশে তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি প্রদান করেন। মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে সব দলই অংশ নিয়েছে, কিন্তু আন্দোলনের ফসলটি গেছে বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগের ঝুলিতে। এর একমাত্র কারণ ছিল বঙ্গবন্ধুর আপসহীনতা।'   আরওইনার গ্রুপ: স্বাধীনতার প্রথম প্রয়াস ৬ দফার পরবর্তীতেই শেখ মুজিবসহ বাঙালি সামরিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ তুলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে পাকিস্তান সরকার। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ৬ দফার বিরুদ্ধেই পাকিস্তান সরকারের কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে আফসান চৌধুরী তার 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ধারাবাহিকতার ইতিহাস' গ্রন্থে লিখেছেন, '১৯৬৭ সালে ৬ দফার বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছে। তারা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সাজাচ্ছে।' ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি এক প্রেস নোটে ঢাকাস্থ ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারির যোগসাজশে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অপরাধে ১৮ জন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সংবাদ প্রকাশ করে পাকিস্তান সরকার। ১৯৬৬ সালের ৮ মে দেশরক্ষা আইনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি মুক্তির আদেশ পেয়েছিলেন শেখ মুজিব। এদিন রাতেই কারাগার ফটকে তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রথম ও প্রধান আসামি দেখিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে স্থানান্তরিত করা হয়। অলি আহাদের 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫' ও ডা. মাহফুজুর রহমানের 'বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ' গ্রন্থ সূত্র অনুযায়ী  '২১ এপ্রিল আইয়ুব খান অর্ডিন্যান্স জারি করলে ক্যান্টনমেন্টেই বিশেষ আদালত বসিয়ে ১৯ জুন থেকে শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে বিচারকার্য শুরু হয়। বিচারের শুরুতেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে মিথ্যা মামলা বলে আন্দোলন শুরু করে। ৬ দফা দাবির পক্ষে তখন এমনিতেই পূর্ব পাকিস্তান বিক্ষুব্ধ। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যেন আগুনে ঘি ঢালে। আফসান চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে নানা বৈষম্যের কারণে বাঙালি অফিসার ও সেনারা নানাভাবে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তারাই মূলত সংগঠিত হয়ে দেশ স্বাধীনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। শেখ সাহেবের সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও তিনি এই বিষয়টি জানতেন। যখন এই তথ্য প্রকাশ পায় তখন দেড় হাজার বাঙালিকে আটক করেছিল ওরা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিষয়টি এসেছিল সেই ধারা থেকেই। মূলত ৬ দফার প্রেক্ষিতেই শেখ সাহেবের বিরুদ্ধে মামলাটি রাখার একটি সুযোগ পেল সামরিক সরকার।' অলি আহাদের 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫' গ্রন্থ সূত্রে, ১৯৬৮ সালের ৬ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানে জনসভা শেষে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে একটি মিছিল গভর্নর হাউসের উদ্দেশ্যে গমন করলে পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে। অন্যদিকে, ৭ ও ৮ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী বৈঠকে ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জমিয়ত-উল-উলামা ইসলামী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, নেজামে ইসলামী পার্টি, নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ড্যাক)। ১৭ জানুয়ারিতে দেশব্যাপী দাবি দিবস পালন করার আহ্বান জানায় ড্যাক। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে মোনায়েম প্রশাসন যেকোনো মিছিল ও শোভাযাত্রায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অনুষ্ঠানের পর ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়ে মিছিল বের করলে ইপিআর ও পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। মিছিলে নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট ঘোষণা করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ১৮ জানুয়ারি থেকেই মূলত গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ে। ২০ জানুয়ারি মিছিলে পুলিশের গুলিতে সেন্ট্রাল ল কলেজের ছাত্র আসাদ শহীদ হলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। শহীদ আসাদের রক্তভেজা শার্ট নিয়ে মিছিল বের হয়। মুহূর্তেই মিছিলের শহরে পরিণত হয় ঢাকা। বেপরোয়া পরিস্থিতিতে ২৪ জানুয়ারি রাত ৮টায় ২৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে প্রশাসন। ২৫ জানুয়ারি কারফিউ অমান্য করা মিছিলে সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র আবদুল লতিফ ও আনোয়ারা বেগম। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মিছিলের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি স্লোগান জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এই স্লোগানগুলো ছিল 'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা', 'পিণ্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা', 'তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি'। এই স্লোগানগুলো উদ্ভাবন, প্রচলন ও জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের ছিল সবচেয়ে বড় ভূমিকা। ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক শহীদ হলে পুলিশের গুলি, কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ উপেক্ষা করেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। ১৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও আন্দোলনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাঁচাতে গিয়ে সেনাবাহিনীর বেয়নেটের আঘাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার ড. শামসুজ্জোহা শহীদ হলে আন্দোলনের সীমা চতুর্গুণ বৃদ্ধি পায়। অলি আহাদের 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, একপর্যায়ে আন্দোলনের তীব্রতায় ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবুর রহমান ও বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সামরিক প্রশাসন। ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে রেসকোর্স ময়দানে জনসভার আয়োজন করা হয়। প্রায় দশ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ডাকসুর সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদ। সমাবেশে তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি প্রদান করেন। মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে সব দলই অংশ নিয়েছে, কিন্তু আন্দোলনের ফসলটি গেছে বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগের ঝুলিতে। এর একমাত্র কারণ ছিল বঙ্গবন্ধুর আপসহীনতা।'
(১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রহর প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করলেও বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য নানা তৎপরতার শুরু হয়েছিল আরও কয়েক দশক আগে। দ্য ডেইলি স্টারের তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রকাশিত দ্বিতীয় পর্বে থাকছে ১৯৬০'র দশকের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি।)
জগন্নাথ হল গণহত্যায় ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন যিনি
'রাইতে গুলির শব্দে ঘুম ভাইঙে গেল। আমার বাপরে লাশ টানার কথা কইয়া মিলিটারি ধইরা নিয়া গেল। অবস্থা দেইখা মা লগে লগে বেহুঁশ হইয়া গেল। খানিক বাদেই গুলির শব্দ শুইনা বাইর হইয়া দেখি হলের মাঠে কিছু মানুষ পইড়া আছে, আর কিছু মানুষ খাড়ানো। এরপর মিলিটারি আবার যখন গুলি করল, খাড়ানো সবটি কলাগাছের লাহান পইড়া গেল। এর বাদে মিলিটারি কই যেন গেল। আমি দৌড়াইয়া গেলাম। দেখি মাঠের মধ্যে আমার বাপ পইড়া আছে। কইল মা জল দে। জল আগাইয়া দেওয়ার লগে লগে শেষ। একদিকে বাপ মরা, আরেকদিকে মা বেহুঁশ। এমন সময় কোন দিক থেইকা ইদু মিয়া আইয়া কইল 'মিলিটারি আবার আসপো। তরা জলদি পালা।' ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সংগঠিত গণহত্যায় বাবা শহীদ দাসু রাম রায়কে হারানোর বর্ণনা দিতে গিয়ে গিরিজা রাণী রায়ের চোখ ছলছল করে উঠে। একইসঙ্গে জনৈক ইদু মিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতায় নুয়ে আসে তার দৃষ্টি। গিরিজা রাণী ফের বলেন, 'এরপর ইদু মিয়াই আমাগোরে মাঠ থেকে বের কইরা বকশীবাজার নিয়া গেল। খালি আমরা না, ওই রাইতে ইদু মিয়ার লাইগাই বহু লোক বাঁচার পারছে।' ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যায় জগন্নাথ হল পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সেই মৃত্যুপুরীর মাঝে জগন্নাথ হলে অবস্থানরত কয়েকজন ছাত্র, কর্মচারীই শুধু প্রাণে বাঁচতে পেরেছিলেন। আর যার সহায়তায় তারা বাঁচতে পেরেছিলেন তিনি একজন বই বিক্রেতা। নাম তার ইদু মিয়া। নৃশংস সেই রাতে ইদু মিয়া অবতীর্ণ হয়েছিলেন ত্রাণকর্তার ভূমিকায়। ইদু মিয়া কে  জগন্নাথ হলের প্রবীণ কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) মসজিদ সংলগ্ন ছিল বই বিক্রেতা ইদু মিয়ার দোকান। বর্তমানে সেই দোকানটি আর নেই। বছর কয়েক আগে মারা গেছেন ইদু মিয়া। কিন্তু ২৫ মার্চ কালরাতে ইদু মিয়ার অবিশ্বাস্য কীর্তি তাকে আজও স্মরণীয় করে রেখেছে বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শী, জগন্নাথ হলের কর্মচারী ও প্রাক্তন ছাত্রদের মাঝে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক রতনলাল চক্রবর্তী সম্পাদিত 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা: ১৯৭১ (জগন্নাথ হল)' বইয়ে পাওয়া যায় ইদু মিয়ার সেই রাতের অসীম মানবিকতা ও দৃঢ়তার পরিচয়। একইসঙ্গে জগন্নাথ হল গণহত্যার বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছেও শোনা যায় তার মানবিকতার কাহিনী। রতনলাল চক্রবর্তীকে দেওয়া ইদু মিয়ার ভাষ্যে জানা যায়, ২৫ মার্চ রাত ৮টার সময় তাস খেলতে গিয়ে ইদু মিয়া জানতে পারেন আজ রাতেই পাকিস্তানি বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আক্রমণ চালাতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা বইতে প্রকাশিত ইদু মিয়ার বীরত্ব। ছবি: সংগৃহীত এদিন রাত ১১টায় পাকিস্তানি সেনারা জগন্নাথ হলের পূর্ব দিকের দেয়াল ভেঙে গুলি করতে করতে মাঠে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণের মধ্যে হানাদারদের তাণ্ডবে জগন্নাথ হল পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। এক পর্যায়ে সেনারা পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যসহ একাধিক শিক্ষার্থীকে মাঠে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে। বুয়েট মসজিদ থেকে পুরো দৃশ্যই দেখছিলেন ইদু মিয়া। প্রথমে সেনারা জগন্নাথ হলের কর্মচারীদের দিয়ে মরদেহ টানালেও, কাজ শেষে তাদেরকেও লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। এরপর সেনারা কিছুক্ষণের জন্য চলে গেলে দ্রুতই মসজিদ থেকে বেরিয়ে হলের কর্মচারীদের কোয়ার্টারে ঢুকে পড়েন ইদু মিয়া। তিনি কর্মচারীদের বলেন, 'তোমরা তাড়াতাড়ি তোমাদের সব টাকাপয়সা ও গয়নাগাটি নিয়ে আমার সঙ্গে চলো।' রতনলাল চক্রবর্তীর বই সূত্রে শহীদ স্বজন ও ইদু মিয়ার বর্ণনায় আরও পাওয়া যায়, ইদু মিয়া জগন্নাথ হল মাঠে ঢোকেন। মাঠে পড়ে থাকা লাশের স্তুপ থেকে কালি নামের এক শিক্ষার্থী ইদু মিয়াকে দেখে বলেন, 'আমাকে নিয়ে যান। আমার শরীরে গুলি লাগেনি। ওরা যখন আমাদের উপর গুলি চালাল তখন আমি মৃতের ভান করে পড়েছিলাম।' ইদু মিয়া তৎক্ষণাৎ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। চারদিকে তখন মরদেহ আর মরদেহ। সেখানে ইদু মিয়া কর্মচারী চানদেবকে আবিষ্কার করেন। তিনি তাকে কোলে করে ঠিকাদারদের মালপত্র রাখার গোডাউনে রেখে আবার মাঠে ফিরে আসেন। ইদু মিয়ার তখন একটাই লক্ষ্য। যে করেই হোক আহত বা জীবিত মানুষদের উদ্ধার করে তাদের বাঁচাতে হবে। উদ্ধারের এক পর্যায়ে ইদু মিয়া আবিষ্কার করেন একটি পরিবারের সব সদস্যই গুলিবিদ্ধ। সেই পরিবারের সদস্যদের বকশীবাজার পৌঁছিয়ে ফের জগন্নাথ হলে ফিরতে গেলে সঙ্গীরা তাকে নিষেধ করেন। কিন্তু ফের জগন্নাথ হলে ফিরে আসেন ইদু মিয়া। এসেই দেখতে পান হলের পুকুরের স্বল্প পানিতে চানদেব ও হরিধন দাসের মাথা ভেসে আছে। তাদের উদ্ধার করে মেডিকেলে পাঠান ইদু মিয়া। আরওযেমন আছে মিরপুরের বধ্যভূমিগুলো 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা: ১৯৭১ জগন্নাথ হল' বইয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়া প্রত্যক্ষদর্শী ও ইদু মিয়ার দেওয়া ভাষ্যে জানা যায়, ২৫ মার্চ রাতে এক মুহূর্তের জন্যও দম ফেলার সময় পাননি ইদু মিয়া। শেষরাতে ইদু মিয়াকে অ্যাসেম্বলির ভেতর দেখতে পান হলের শিক্ষার্থী যশোদা জীবন সাহা।  যশোদা জীবন সাহা বলেন, 'আমি ইদু মিয়াকে বললাম, আমি ও আমার ভাই এখানে আটকা পড়েছি। আমাদের নিয়ে চলুন। তখন তিনি আমাদের উদ্ধার করে বুয়েট মসজিদে নিয়ে গেলেন।' ফিরে এসে ইদু মিয়া দেখলেন হলের মাঠে ও ভবনের পাশে অগণিত মরদেহ পড়ে আছে। শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও শিক্ষকের বাইরে তাদের বেশিরভাগই বস্তিবাসী।  শেষরাতের দিকে ফ্যাকাল্টি কোয়ার্টারের ৩৪ নাম্বার বাড়িতে যান ইদু মিয়া। এই ভবনটিতে থাকতেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনিসুর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ও অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের পরিবার। এ সময় অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের পরিবারকে কোয়ার্টার থেকে বাইরে নিয়ে এলেন ইদু মিয়া। রতনলাল চক্রবর্তী তার বইয়ে লিখেছেন, 'জগন্নাথ হলের মাঠে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও বস্তিবাসীকে হত্যার পর হানাদাররা যখন মরদেহ চাপা দেওয়ার জন্য বুলডোজার জোগাড় করতে গেল তখন ইদু মিয়া হলে, পুকুর পাড়ে ও মাঠে মৃতের ভান করে পড়ে থাকা গুলিবিদ্ধ আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গিয়েছিলেন। যার ফলে বেঁচে গিয়েছিল চানদেব, মতি, কালী, হরিধন দাস, যশোদা জীবন সাহা, ধীরেন বাবুসহ বহু মানুষের প্রাণ।' একই সূত্রে জানা যায়, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা। পরে ২৭ মার্চ আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। আরওসংরক্ষিত হয়নি মিরপুরের বেশিরভাগ বধ্যভূমি খবর শুনে ঢাকা মেডিকেলে ছুটে গিয়েছিলেন ইদু মিয়া। ইদু মিয়াকে দেখে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা বলেছিলেন, 'তুমি হয়তো মনে করেছ আমি ভালো আছি। কিন্তু আমি বাঁচব না। আমি মেডিকেলে শুনেছি, তুমি হলের অনেক শিক্ষার্থীকে প্রাণে বাঁচিয়েছ। আমি যদি থাকতাম তবে আমি সে কথা প্রকাশ করতে পারতাম।' এর তিন দিন পর ৩০ মার্চ ঢাকা মেডিকেলে মারা যান জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা। তার মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্রই ইদু মিয়া ছুটে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী বাসন্তী গুহ ঠাকুরতার কাছে। বাসন্তী গুহঠাকুরতা ইদু মিয়াকে দেখে বলেছিলেন, 'যদি পারেন আপনাকে তার মরদেহ যে করেই হোক এনে দিতে হবে। মিলিটারিরা যদি তার মরদেহ নিয়ে যায় আমি ভীষণ কষ্ট পাব।' ইদু মিয়া জবাবে বলেছিলেন, 'আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি, স্যারের মরদেহ কোনোভাবেই মিলিটারিকে নিতে দেবো না।' কিন্তু মেডিকেলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের নিয়ে বহু অনুসন্ধানের পরও জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মরদেহ আর পাননি ইদু মিয়া। কারণ ততক্ষণে তার মরদেহ গুম করে ফেলেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। জগন্নাথ হলের প্রবীণ কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) মসজিদ সংলগ্ন ছিল বই বিক্রেতা ইদু মিয়ার দোকান। বর্তমানে সেই দোকানটি আর নেই। বছর কয়েক আগে মারা গেছেন ইদু মিয়া। কিন্তু ২৫ মার্চ কালরাতে ইদু মিয়ার অবিশ্বাস্য কীর্তি তাকে আজও স্মরণীয় করে রেখেছে বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শী, জগন্নাথ হলের কর্মচারী ও প্রাক্তন ছাত্রদের মাঝে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক রতনলাল চক্রবর্তী সম্পাদিত 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা: ১৯৭১ (জগন্নাথ হল)' বইয়ে পাওয়া যায় ইদু মিয়ার সেই রাতের অসীম মানবিকতা ও দৃঢ়তার পরিচয়। একইসঙ্গে জগন্নাথ হল গণহত্যার বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছেও শোনা যায় তার মানবিকতার কাহিনী। রতনলাল চক্রবর্তীকে দেওয়া ইদু মিয়ার ভাষ্যে জানা যায়, ২৫ মার্চ রাত ৮টার সময় তাস খেলতে গিয়ে ইদু মিয়া জানতে পারেন আজ রাতেই পাকিস্তানি বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আক্রমণ চালাতে পারে। এদিন রাত ১১টায় পাকিস্তানি সেনারা জগন্নাথ হলের পূর্ব দিকের দেয়াল ভেঙে গুলি করতে করতে মাঠে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণের মধ্যে হানাদারদের তাণ্ডবে জগন্নাথ হল পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। এক পর্যায়ে সেনারা পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যসহ একাধিক শিক্ষার্থীকে মাঠে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে। বুয়েট মসজিদ থেকে পুরো দৃশ্যই দেখছিলেন ইদু মিয়া। প্রথমে সেনারা জগন্নাথ হলের কর্মচারীদের দিয়ে মরদেহ টানালেও, কাজ শেষে তাদেরকেও লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। এরপর সেনারা কিছুক্ষণের জন্য চলে গেলে দ্রুতই মসজিদ থেকে বেরিয়ে হলের কর্মচারীদের কোয়ার্টারে ঢুকে পড়েন ইদু মিয়া। তিনি কর্মচারীদের বলেন, 'তোমরা তাড়াতাড়ি তোমাদের সব টাকাপয়সা ও গয়নাগাটি নিয়ে আমার সঙ্গে চলো।' রতনলাল চক্রবর্তীর বই সূত্রে শহীদ স্বজন ও ইদু মিয়ার বর্ণনায় আরও পাওয়া যায়, ইদু মিয়া জগন্নাথ হল মাঠে ঢোকেন। মাঠে পড়ে থাকা লাশের স্তুপ থেকে কালি নামের এক শিক্ষার্থী ইদু মিয়াকে দেখে বলেন, 'আমাকে নিয়ে যান। আমার শরীরে গুলি লাগেনি। ওরা যখন আমাদের উপর গুলি চালাল তখন আমি মৃতের ভান করে পড়েছিলাম।' ইদু মিয়া তৎক্ষণাৎ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। চারদিকে তখন মরদেহ আর মরদেহ। সেখানে ইদু মিয়া কর্মচারী চানদেবকে আবিষ্কার করেন। তিনি তাকে কোলে করে ঠিকাদারদের মালপত্র রাখার গোডাউনে রেখে আবার মাঠে ফিরে আসেন। ইদু মিয়ার তখন একটাই লক্ষ্য। যে করেই হোক আহত বা জীবিত মানুষদের উদ্ধার করে তাদের বাঁচাতে হবে। উদ্ধারের এক পর্যায়ে ইদু মিয়া আবিষ্কার করেন একটি পরিবারের সব সদস্যই গুলিবিদ্ধ। সেই পরিবারের সদস্যদের বকশীবাজার পৌঁছিয়ে ফের জগন্নাথ হলে ফিরতে গেলে সঙ্গীরা তাকে নিষেধ করেন। কিন্তু ফের জগন্নাথ হলে ফিরে আসেন ইদু মিয়া। এসেই দেখতে পান হলের পুকুরের স্বল্প পানিতে চানদেব ও হরিধন দাসের মাথা ভেসে আছে। তাদের উদ্ধার করে মেডিকেলে পাঠান ইদু মিয়া। 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা: ১৯৭১ জগন্নাথ হল' বইয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়া প্রত্যক্ষদর্শী ও ইদু মিয়ার দেওয়া ভাষ্যে জানা যায়, ২৫ মার্চ রাতে এক মুহূর্তের জন্যও দম ফেলার সময় পাননি ইদু মিয়া। শেষরাতে ইদু মিয়াকে অ্যাসেম্বলির ভেতর দেখতে পান হলের শিক্ষার্থী যশোদা জীবন সাহা। যশোদা জীবন সাহা বলেন, 'আমি ইদু মিয়াকে বললাম, আমি ও আমার ভাই এখানে আটকা পড়েছি। আমাদের নিয়ে চলুন। তখন তিনি আমাদের উদ্ধার করে বুয়েট মসজিদে নিয়ে গেলেন।' ফিরে এসে ইদু মিয়া দেখলেন হলের মাঠে ও ভবনের পাশে অগণিত মরদেহ পড়ে আছে। শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও শিক্ষকের বাইরে তাদের বেশিরভাগই বস্তিবাসী। শেষরাতের দিকে ফ্যাকাল্টি কোয়ার্টারের ৩৪ নাম্বার বাড়িতে যান ইদু মিয়া। এই ভবনটিতে থাকতেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনিসুর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ও অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের পরিবার। এ সময় অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের পরিবারকে কোয়ার্টার থেকে বাইরে নিয়ে এলেন ইদু মিয়া। রতনলাল চক্রবর্তী তার বইয়ে লিখেছেন, 'জগন্নাথ হলের মাঠে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও বস্তিবাসীকে হত্যার পর হানাদাররা যখন মরদেহ চাপা দেওয়ার জন্য বুলডোজার জোগাড় করতে গেল তখন ইদু মিয়া হলে, পুকুর পাড়ে ও মাঠে মৃতের ভান করে পড়ে থাকা গুলিবিদ্ধ আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গিয়েছিলেন। যার ফলে বেঁচে গিয়েছিল চানদেব, মতি, কালী, হরিধন দাস, যশোদা জীবন সাহা, ধীরেন বাবুসহ বহু মানুষের প্রাণ।' একই সূত্রে জানা যায়, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা। পরে ২৭ মার্চ আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। খবর শুনে ঢাকা মেডিকেলে ছুটে গিয়েছিলেন ইদু মিয়া। ইদু মিয়াকে দেখে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা বলেছিলেন, 'তুমি হয়তো মনে করেছ আমি ভালো আছি। কিন্তু আমি বাঁচব না। আমি মেডিকেলে শুনেছি, তুমি হলের অনেক শিক্ষার্থীকে প্রাণে বাঁচিয়েছ। আমি যদি থাকতাম তবে আমি সে কথা প্রকাশ করতে পারতাম।' এর তিন দিন পর ৩০ মার্চ ঢাকা মেডিকেলে মারা যান জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা। তার মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্রই ইদু মিয়া ছুটে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী বাসন্তী গুহ ঠাকুরতার কাছে। বাসন্তী গুহঠাকুরতা ইদু মিয়াকে দেখে বলেছিলেন, 'যদি পারেন আপনাকে তার মরদেহ যে করেই হোক এনে দিতে হবে। মিলিটারিরা যদি তার মরদেহ নিয়ে যায় আমি ভীষণ কষ্ট পাব।' ইদু মিয়া জবাবে বলেছিলেন, 'আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি, স্যারের মরদেহ কোনোভাবেই মিলিটারিকে নিতে দেবো না।' কিন্তু মেডিকেলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের নিয়ে বহু অনুসন্ধানের পরও জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মরদেহ আর পাননি ইদু মিয়া। কারণ ততক্ষণে তার মরদেহ গুম করে ফেলেছিল পাকিস্তানি বাহিনী।
'রাইতে গুলির শব্দে ঘুম ভাইঙে গেল। আমার বাপরে লাশ টানার কথা কইয়া মিলিটারি ধইরা নিয়া গেল। অবস্থা দেইখা মা লগে লগে বেহুঁশ হইয়া গেল। খানিক বাদেই গুলির শব্দ শুইনা বাইর হইয়া দেখি হলের মাঠে কিছু মানুষ পইড়া আছে, আর কিছু মানুষ খাড়ানো। এরপর মিলিটারি আবার যখন গুলি করল, খাড়ানো সবটি কলাগাছের লাহান পইড়া গেল। এর বাদে মিলিটারি কই যেন গেল। আমি দৌড়াইয়া গেলাম। দেখি মাঠের মধ্যে আমার বাপ পইড়া আছে। কইল মা জল দে। জল আগাইয়া দেওয়ার লগে লগে শেষ। একদিকে বাপ মরা, আরেকদিকে মা বেহুঁশ। এমন সময় কোন দিক থেইকা ইদু মিয়া আইয়া কইল 'মিলিটারি আবার আসপো। তরা জলদি পালা।'
ইনার গ্রুপ: স্বাধীনতার প্রথম প্রয়াস
(১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রহর প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করলেও বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য নানা তৎপরতার শুরু হয়েছিল আরও কয়েক দশক আগে। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম বীজ বপন করা হয়। স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট নিয়ে তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রকাশিত হচ্ছে প্রথম পর্ব।) পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে চল্লিশের দশক থেকেই শুরু হয় নানা কার্যক্রম ও তৎপরতার। এসব কর্মকাণ্ডে নানা পর্যায়ে ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ অনেকে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মোয়াজ্জেম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল আজিজ বাগমার, সিরাজুল আলম খানসহ অনেকেই। পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার প্রক্রিয়ায় সবগুলো কর্মকাণ্ড সম্পর্কেই অবগত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এর মধ্যে বেশিরভাগ কর্মকাণ্ডেই  তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এই প্রতিবেদনে আফসান চৌধুরী রচিত 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ধারাবাহিকতার ইতিহাস', মহিউদ্দিন আহমদ রচিত 'প্রতিনায়ক', মোরশেদ শফিউল হাসানের 'স্বাধীনতার পটভূমি ১৯৬০ দশক' এবং ডা. মাহফুজুর রহমানের 'বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ' এবং আবদুল আজিজ বাগমার রচিত 'স্বাধীনতার স্বপ্ন উন্মেষ ও অর্জন' এর তথ্যসূত্র ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই পূর্ববঙ্গকে স্বাধীন করার প্রচেষ্টা শুরু হয় ইনার গ্রুপের মাধ্যমে। পরবর্তীতে পাকিস্তান জন্মের পর পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার জন্য গোপন প্রচেষ্টা শুরু করে ইনার গ্রুপ। গবেষক আফসান চৌধুরী রচিত 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ধারাবাহিকতার ইতিহাস' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ইনার গ্রুপের প্রধান সংগঠক ছিলেন রাজনীতিবিদ ও সংগঠক মোয়াজ্জেম আহমেদ চৌধুরী। গ্রুপের সঙ্গে আরও যুক্ত ছিলেন সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কূটনীতিবিদ কামরুদ্দীন আহমদ, রুহুল কুদ্দুস  (পরবর্তীকালে সচিব) প্রমুখ। পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই ইনার গ্রুপের সদস্যরা স্বাধীনতায় সহায়তার জন্য ভারতীয় দূতাবাস ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ শুরু করেন। এ জন্য ইনার গ্রুপের কয়েকজন সদস্য কলকাতায় কয়েক মাস অবস্থান করে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। ভারত সরকার স্বাধীনতার জন্য তাদের মেঘালয়ে গোপন ট্রান্সমিটার বসাতে দিতেও রাজি ছিল। ইনার গ্রুপের বিষয়ে আফসান চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইনার গ্রুপই সর্বপ্রথম স্বাধীনতার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিল। ওই গ্রুপের সদস্যরা আগে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের ছাত্রফ্রন্টে করতো এবং বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ওদের আদর্শ ছিল সুভাষ চন্দ্র বসু। ওরা চেয়েছিল শেখ সাহেবকে লন্ডনে পাঠিয়ে সুভাষ বসুর মতো আন্দোলন করা। কিন্তু ১৯৫৫ সালের পর তারা বুঝতে পারেন যে সুভাষ বোসের মডেলে স্বাধীনতা সম্ভব নয়।' ইনার গ্রুপের কার্যক্রম কেবল ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৫৮ সালে  দেশে সামরিক শাসন জারি হলে ইনার গ্রুপের কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়ে। তবে এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যতিক্রম ছিল স্বাধীনতার আরেকটি প্রচেষ্টা। ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে দেশে সামরিক শাসন জারির পর ইনার গ্রুপের কার্যক্রমে ভাটা পড়লেও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার উদ্যোগে ময়মনসিংহের জামালপুর মহকুমায় গঠিত হয় 'ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট'। সংগঠনটির প্রচারপত্রের বয়ান ছিল 'পূর্ব বাংলা বাঙালিদের, পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাংলা ছাড়ো'। স্বল্প সময়েই ফ্রন্টের জামালপুর, নেত্রকোণা, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ মহকুমা কমিটি গঠিত হয়েছিল। মহিউদ্দিন আহমদের 'প্রতিনায়ক' ও আফসান চৌধুরীর 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ধারাবাহিকতার ইতিহাস' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, 'ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্টও ভারতের সাহায্যে সশস্ত্র উপায়ে দেশ স্বাধীন করতে চেয়েছিল। ১৯৫৯ সালের মার্চে গোপনে ভারতের আসামের মাইনকার চর ও ধুবড়ী হয়ে কলকাতা যান ফ্রন্টের নেতারা। কলকাতায় তাদের সঙ্গে কমিউনিস্ট নেতা সুরেন ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সুরেন ঘোষই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ করিয়ে দেন।  যদিও ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে নেহেরু-লিয়াকত চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ায় সে কথা স্মরণ করিয়ে নেহেরু অস্ত্র সাহায্যের বিষয়ে সীমাবদ্ধতার কথা জানান।' গ্রন্থ দুটির সূত্রে আরও জানা যায়, ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট সম্পর্কে অবগত ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল মনসুর আহমেদ, মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হক। প্রাথমিক পর্যায়ে শেখ মুজিব ফ্রন্টের জন্য নগদ অর্থ প্রদান করেছিলেন। ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট রাজনৈতিকভাবে তেমন প্রভাব রাখতে না পারলেও 'পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা' শিরোনামে পোস্টার ও লিফলেট ছাপিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণা তোলে। ফ্রন্টের কর্মীরা সচিবালয়, সিনেমা হলসহ জনবহুল স্থানে এসব পোস্টার লাগালে তা জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি সরকারি মহলেও চাঞ্চল্যের তৈরি করে। যদিও দ্রুতই পাকিস্তানি প্রশাসন ফ্রন্টের কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করলে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল ফ্রন্টটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে পাকিস্তানি প্রশাসনের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা হয়, দেশের বিরুদ্ধে বড়সড় ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্টের কথা বলতে গিয়ে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট স্বাধীনতার স্বপক্ষে প্রথম বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছিল। ষাটের দশকে অনেক গ্রুপই তো কাজ করেছে। তবে তাদের কার্যক্রম খুবই সীমিত ছিল। এক্টিভিস্ট গ্রুপ বলতে যা ছিল তা ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট।' পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার পথচলায় গুরুত্বপূর্ণ একটি আন্দোলন ছিল ষাটের দশকে শরীফ শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন। 'বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ', 'প্রতিনায়ক' ও 'স্বাধীনতার পটভূমি ১৯৬০ দশক' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে ক্ষমতায় আরোহণের দুমাস পরই পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে শিক্ষাসচিব এস শরীফের নেতৃত্বে কমিশন অন ন্যাশনাল এডুকেশন নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান। সংক্ষেপে শরীফ শিক্ষা কমিশন নামে পরিচিত এই কমিশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষাবিদরা সদস্য হিসেবে ছিলেন। ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট আইয়ুব খানের কাছে ৩৫০ পৃষ্ঠার একটি খসড়া প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ছিল দুই বছরের বিএ পাস কোর্সকে তিন বছর করা, অবৈতনিক শিক্ষা তুলে দেওয়া, উর্দু ও বাংলা বর্ণমালা সংস্কার করে রোমান বর্ণমালায় অক্ষরান্ত করা, প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করা ইত্যাদি। কমিশনের এই প্রতিবেদন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। ফলে কমিশনের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন। প্রথমে ঢাকা কলেজে এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পুরো দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, 'আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ছাত্ররা তখন আন্দোলনের একটি সুযোগ খুঁজছিল। এ সময় সোহরাওয়ার্দী গ্রেপ্তার হন। আবার তখন শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টও বের হয়ে। ফলে সব মিলে ছাত্রদের আন্দোলন শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধেই গড়ে উঠে।' লেখক ও গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিক্ষা কমিশনের সুপারিশগুলো তখন বাস্তবায়িত না হলেও পরবর্তীতে আমরা সবগুলোই কিন্তু গ্রহণ করেছি। মূলত আন্দোলনে নামার ক্ষেত্র হিসেবে শিক্ষা কমিশনকেই টার্গেট করেছিল ছাত্ররা।' 'প্রতিনায়ক' ও 'স্বাধীনতার পটভূমি ১৯৬০ দশক' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬১ সালের শেষের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান, ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মণি সিংহ এবং খোকা রায়ের মধ্যে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শেখ মুজিব বলেন, 'এখন থেকেই স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হনে। আন্দোলনের প্রোগ্রামে ওই দাবি রাখতে হবে।' আফসান চৌধুরী বলেন, 'শেখ সাহেব যখন মণি সিংহ এবং খোকা রায়ের সঙ্গে বৈঠকে স্বাধীনতার প্রস্তাবটি তুললেন, তখন মণি সিংহরা রাশিয়াতে জিজ্ঞেস করে যে আমরা এই উদ্যোগে জড়িত হবো কি না। কিন্তু রাশিয়া থেকে সম্মতি না আসায় তারা বলেন, আমরা মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে থাকতে চাই। ১৯৬৮ সালের আগে এরপর আর কমিউনিস্ট পার্টি স্বাধীনতার পক্ষে কোনো কাজ করেনি।' শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের মধ্যেও আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ বরাবরই স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার ছিল। 'প্রতিনায়ক' সূত্রে আরও জানা যায়, '১৯৬১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মণিসহ ছাত্রলীগের একাধিক নেতার নেতৃত্বে রাতের অন্ধকারে "স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান কায়েম কর" লিখিত লিফলেট ও পোস্টার বিলি করেছিলেন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গোপনে পূর্ব বঙ্গ মুক্তি ফ্রন্টের প্রচারণা চালানো হয়। এই লিফলেটটিতে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার আহ্বান জানিয়ে লেখা হয়েছিল।' স্বাধীনতার জন্য ষাটের দশক থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান কতোটা সক্রিয়  ছিলেন তার প্রমাণ মিলে 'প্রতিনায়ক' গ্রন্থে। ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে স্বাধীনতার পক্ষে ভারত সরকারের সমর্থনের জন্য গোপনে ত্রিপুরা সফর করেন শেখ মুজিব। এই ত্রিপুরা সফরে শেখ মুজিবের সহযাত্রী ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা রেজা আলী। তার ভাষ্য অনুযায়ী, গোপনীয়তার স্বার্থে নারায়ণগঞ্জ থেকে সিলেটগামী ট্রেনে তারা টঙ্গী স্টেশন থেকে উঠেছিলেন। টিকেটও কাটা হয়েছিল ছাত্র ইউনিয়নের অন্য দুই নেতার নামে। ফলে শেখ মুজিবের ওই ট্রেন ভ্রমণের রেকর্ড রেলওয়ে বিভাগের কাছে ছিল না। মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, 'সে সফরে ভুল বোঝাবুঝির কারণে বঙ্গবন্ধু কিন্তু একদিন জেলেও ছিলেন। সেই সফর কিন্তু ব্যর্থ হয়। তিনি ফিরে এসে পরদিনই জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হন।' কয়েকমাস পর মুক্তি পেয়ে শেখ মুজিব ডিসেম্বরে ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়ার উদ্যোগে ইত্তেফাক অফিসে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিবিদ শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী গোপন বৈঠক করেন। বৈঠকের একপর্যায়ে শেখ মুজিব তাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরুকে ব্যক্তিগতভাবে সম্বোধন করা একটি চিঠি দেন। চিঠিতে ১৯৬৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে লন্ডন থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা ও প্রবাসী সরকার গঠনের একটি কর্মপরিকল্পনাও ছিল। এ নিয়ে নেহেরুর সঙ্গে বৈঠকের ইচ্ছেও প্রকাশ করেন মুজিব। কিন্তু এমন সময় চীন-ভারত যুদ্ধ হওয়ায় আরেকটি যুদ্ধে যেতে রাজি হয়নি ভারত। ফলে দিল্লি থেকে অপেক্ষায় থাকতে বলা হয়। কিন্তু শেখ মুজিব ধরে নিয়েছিলেন যে ভারতীয় আমলাদের জন্যই দেরী হচ্ছে। তাই ভারত সরকারের চূড়ান্ত মনোভাব জানতে ১৯৬৩ সালের জানুয়ারিতে ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিংহের সঙ্গে দেখা করেন শেখ মুজিব। শেখ মুজিবকে আগরতলায় রেখেই দিল্লি যান মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লিতে নেহেরু ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, শেখ মুজিবের প্রস্তাবের বিষয়ে ভারত অবগত রয়েছে। এরপর থেকে তিনি যেন একমাত্র ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমেই দিল্লিতে যোগাযোগ করেন। শরীফ শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা রেখেছিল  ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গঠিত হওয়া পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফোরাম। ফোরামের সভাপতি ছিলেন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ ওয়ারেস ইমাম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের ছাত্রনেতা আবদুল আজিজ বাগমার। প্রথমে দেশে সামরিক আইন থাকার কারণে আন্দোলন কিছুটা সীমাবদ্ধ থাকলেও ১৯৬২ সালের ১ মার্চ সামরিক শাসন তুলে নেওয়া মাত্রই শরীফ কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জের এক ছাত্রসভায় ছাত্রনেতা আবদুল আজিজ বাগমার পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার বিষয়টি উচ্চারণ করেন। বাগমার তার রচিত 'স্বাধীনতার স্বপ্ন, উন্মেষ ও অর্জন' গ্রন্থে 'স্বাধীনতার প্রথম স্লোগান' অনুচ্ছেদে লিখেছেন, '১৯৬২ সালে এ ধ্বনিটি বা স্লোগানটি আমিই উচ্চারণ করেছিলাম।' সেই ছাত্রসভায় সবাই স্বাধীনতার পক্ষে শপথ নেওয়ার উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, 'তারা আরও একটি শপথ নেয় যে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করা হবে।' শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের মাঝেই ১৯৬২ সালের ১ অক্টোবর স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণা গড়ে তোলার জন্য জন্ম হয় আরেকটি নতুন গোপন সংগঠনের—অস্থায়ী পূর্ববঙ্গ সরকার। সাংস্কৃতিক নাম অপূর্ব সংসদ। কবি সুফিয়া কামালকে রাষ্ট্রপতি, আবদুল আজিজ বাগমারকে প্রধানমন্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমদ শরীফ, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুহম্মদ আবদুল হাই ও শওকত ওসমানকে উপদেষ্টা করে অপূর্ব সংসদের একটি সরকার কাঠামোও ঠিক হয়। অপূর্ব সংসদের মনোগ্রাম অঙ্কন করেন প্রাণেশকুমার মণ্ডল। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত 'বাঙালি কি চায়? স্বাধীনতা', 'শকুন-শৃগালের আবার বাংলা আক্রমণ', 'ইতিহাসের ধারায় বাঙালী' শিরোনামে অপূর্ব সংসদের তিনটি ইশতেহার প্রকাশিত হয়। অপূর্ব সংসদের উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল রবীন্দ্রনাথের 'আমার সোনার বাংলা' গানটিকে ভবিষ্যতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে জনপ্রিয় করে তোলা। স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণার জন্য অপূর্ব সংসদের কর্মীরা মূলত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেনের ইন্টারক্লাস যাত্রীদেরই বেছে নিতেন। অপূর্ব সংসদ সম্পর্কে অবগত ছিলেন শেখ মুজিব থেকে মওলানা ভাসানীসহ অন্যান্য জাতীয় নেতারা। অপূর্ব সংসদ বিষয়ে মহিউদ্দিন আহমদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অপূর্ব সংসদ ছিল ছাত্রলীগের মধ্যেই একটি গ্রুপ। তবে তাদের প্রকাশ্যে কোনো প্রচার ছিল না। যা করেছিল সব গোপনেই। তবে তাদের তৃতীয় ইশতেহার "ইতিহাসের ধারায় বাঙালি" ভীষণ দূরদর্শী ছিল। এটি লিখেছিলেন অধ্যাপক আহমদ শরীফ।' ষাটের দশকের প্রতিটি আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা  পরোক্ষভাবে বঙ্গবন্ধুর সংযোগ ছিল জানিয়ে লেখক ও গবেষক আফসান চৌধুরী বলেন, 'শেখ সাহেব আসলে একটিভ পার্টিসিপেন্ট ছিলেন। স্বাধীনতার কোনো প্রচেষ্টা হলেই শেখ সাহেব, মওলানা ভাসানী, মানিক মিয়ার কাছে আসতেন। যাদের সঙ্গে শেখ সাহেবের সম্পর্ক পূর্বে ছিল না, তারাও শেখ সাহেবের কাছে গিয়েছেন। সুতরাং বলা যায়, স্বাধীনতার যতোগুলো প্রচেষ্টা ছিল সবগুলোর সঙ্গে শেখ সাহেবের একটি সংযোগ ছিল।'
(১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রহর প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করলেও বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য নানা তৎপরতার শুরু হয়েছিল আরও কয়েক দশক আগে। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম বীজ বপন করা হয়। স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট নিয়ে তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রকাশিত হচ্ছে প্রথম পর্ব।)
লালন উৎসব আজ বিকেল ৩টায়, সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে ভক্তদের অসন্তোষ
রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় এ বছর সংক্ষিপ্ত হচ্ছে লালন স্মরণোৎসব। তিন দিনের অনুষ্ঠান এক দিনে হওয়ায় বাদ যাচ্ছে অনেক আনুষ্ঠানিকতা। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন লালনের ভক্ত-অনুসারীরা। তারা বলছেন, রেওয়াজ অনুযায়ী সাধুসঙ্গে তিনটি সেবাগ্রহণের যে আচার, তা এবার ঠিকঠাক করা যাবে না। ফকির লালন সাঁই ভক্তদের নিয়ে দোল পূর্ণিমা তিথিতে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে সাধুসঙ্গ করতেন। গানে গানে তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দিতেন। সেই রেওয়াজ মোতাবেক প্রতিবছর উদযাপিত হয় লালন স্মরণোৎসব। সাধারণত দোল পূর্ণিমার সন্ধ্যায় অধিবাসে রাখালসেবার মধ্য দিয়ে সঙ্গ শুরু হয়। পরদিন সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণসেবা করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া তিন দিনব্যাপী লালন একাডেমি মাঠে বাউলমেলা ও লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল শনিবার লালন একাডেমিতে কোর কমিটির বৈঠক হয়। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির আহ্বায়ক এহেতেশাম রেজা এতে সভাপতিত্ব করেন। পরে তিনি বলেন, 'রমজানের পবিত্রতা ও গাম্ভীর্যতা রক্ষায় একাডেমির এডহক কমিটিসহ সবাই প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি এবং স্মরণোৎসব এক দিনব্যাপী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' এবার লালনমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না করে শুধু আলোচনাসভা ও সাধুদের সেবাগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সে সময় সাধু-বাউলরা জেলা প্রশাসককে ঘিরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রবীণ সাধু নহির শাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু প্রশাসনের মাধ্যমে সাঁইজির আখড়াবাড়ি পরিচালিত হচ্ছে, অতএব তাদের সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হবে। আমরা মূল ভুলে নকল নিয়ে ব্যস্ত থাকছি।' রেওয়াজ অনুযায়ী আচার-অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না জানিয়ে এই সাধক আরও বলেন, 'অনুষ্ঠানটা ২৪ ঘণ্টাব্যাপী হওয়া উচিত ছিল। রোববার বিকেলে অধিবেশন শুরু হবে, পরদিন বিকেলে অধিবেশন শেষ হবে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা পূর্ণিমা তিথিটা বিরাজ করে। একদিনে তিনটি সেবা হবে না। সেবা তো সময়ান্তে হবে। সময় হাতে না পেলে সেবা কীভাবে হবে?' লালন একাডেমির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান সাংবাদিকদের অনুষ্ঠানসূচি জানান। সূচি অনুযায়ী, আজ রোববার বিকেল ৩টায় আলোচনাসভা হবে একডেমির অডিটরিয়ামে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। সন্ধ্যায় সাধু-বাউল পায়েস মুড়ি দিয়ে রাখাল সেবা দেওয়া হবে। এ ছাড়া রাতে ভাতমাছ, ডাল-সবজি ও দই দিয়ে সেবা দেওয়া হবে। সাধু-বাউলদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। তাইজাল বলেন, 'রমজানের মধ্যে সাধু-বাউলদের সেবা দিতে দিনের বেলায় আড়ম্বরভাবে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারে। সে কারণে আয়োজন সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।' গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত খুব বেশি সাধু-ফকিরদের আখড়াবাড়িতে আনাগোনা দেখা যায়নি। কলকাতা থেকে আসা কার্তিক চন্দ্র বণিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লালন মানবতার শিল্পী ছিলেন। এখানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।'
রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় এ বছর সংক্ষিপ্ত হচ্ছে লালন স্মরণোৎসব। তিন দিনের অনুষ্ঠান এক দিনে হওয়ায় বাদ যাচ্ছে অনেক আনুষ্ঠানিকতা। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন লালনের ভক্ত-অনুসারীরা।
পাবনার ঐতিহাসিক ‘ভুট্টা আন্দোলন’
পাকিস্তানের ২৩ বছরের দুঃশাসনে ছোট-বড় নানা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। যেসব আন্দোলন সংগ্রাম নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের ভিত রচনা করেছিল তার মধ্যে অন্যতম পাবনার 'ভুট্টা আন্দোলন'। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাবনায় পাকিস্তান সরকারের নিম্নমানের রেশন সরবরাহের প্রতিবাদে শুরু হওয়া এ আন্দোলন প্রভাব ফেলে পুরো দেশে। দিনটি ছিল ১৯৬৭ সালের ১৬ মার্চ, নিম্নমানের ভুট্টার আটা খেয়ে মারা যান হারু প্রামাণিক নামে এক দরিদ্র রিকশাচালক। বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত দরিদ্র ও শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। খবরটি পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পাবনার শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। এ ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। তৎকালীন সময়ের প্রগতিশীল সব রাজনৈতিক দলের নেতা ও সাধারণ ছাত্ররা যুক্ত হয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পুরো পাবনায়। বিক্ষুব্ধ জনতা শহরের মোড়ে মোড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিক, সাধারণ মানুষ ও ছাত্র-জনতা পাবনা শহরের রূপকথা রোডে অবস্থিত তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ফুড সেক্রেটারি ক্যাপ্টেন জায়েদির বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় আইয়ুব সরকারের একনিষ্ঠ ক্যাপ্টেন জায়েদি উত্তেজিত জনতাকে রোধ করতে তারা বাড়ি থেকে গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তার একজন মৃত্যুবরণ করেন, গুলিবিদ্ধ হন তৎকালীন ছাত্রলীগের শীর্ষ সংগঠক ও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতা আহমেদ রফিকসহ অনেকে। বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর গুলির ঘটনা আরও বিক্ষুব্ধ করে তোলে জনতাকে। বিক্ষুব্ধ জনতা শহরের বন্দুকের দোকান লুট করে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে। বিক্ষুব্ধ জনতা এক পর্যায়ে ক্যাপ্টেন জায়েদির বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। প্রশাসনের সহায়তায় ক্যাপ্টেন জায়েদি পরবর্তীতে পাবনা থেকে ঢাকায় চলে যান, দীর্ঘদিন তাকে আর পাবনায় দেখা যায়নি বলে জানান ঐতিহাসিকরা। বিক্ষোভ দমনে তৎকালীন প্রশাসন পাবনা, ঈশ্বরদী ও সিরাজগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করে, শুরু হয় গণগ্রেপ্তার। সাংবাদিক, রাজনীতিক, ছাত্রনেতা, শ্রমিকসহ প্রায় তিন শতাধিক মানুষকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে অনেকে জামিন পেলেও ২৯ জনকে রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘদিন আটক রাখা হয়। পাবনায় সংগঠিত এ আন্দোলন দমাতে তৎকালীন আইয়ুব সরকার এক সরকারি প্রেস নোটে ভুট্টার আটা থেকে কোন বিষক্রিয়া হয়নি বলে দাবি করেন। তবে পাকিস্তান সরকারের এ দাবি দমাতে পারেনি পাবনার মানুষের ক্ষোভ। ঐতিহাসিক ভুট্টা আন্দোলনে অংশ নেওয়া তৎকালীন ছাত্রনেতা মো. মোক্তার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তৎকালীন খাদ্য সংকটে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে রেশনের গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। রেশনে সরবরাহকৃত বিষাক্ত ভুট্টার আটা খেয়ে একজন রিকশাচালকের মৃত্যু আর অনেক নিম্নআয়ের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাধারণ শ্রমিক শ্রেণির মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা সাধারণ মানুষের এ আন্দোলকে পাবনার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ফলে দল-মত, জাতি, ধর্মের সব বিভেদ ভুলে সর্বস্তরের মানুষ ঝাপিয়ে পড়ে এ আন্দোলনে। তৎকালীন আইয়ুব সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সেদিন সাধারণ মানুষের এ বিক্ষোভ গণআন্দলনে রূপ নেয় বলে জানান তিনি। একজন সচেতন ছাত্র হিসেবে সেদিন এ আন্দোলনে অংশ নিয়ে কারাবরন করলেও এর মধ্য দিয়ে পাবনার মানুষ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে পারে যা তৎকালীন সময়ে পাকিস্তান সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে যায় বলে মনে করেন তিনি। লেখক ও সাংবাদিক মোস্তফা সতেজ বলেন, বিভিন্ন ঐতিহাসিকের লেখা থেকে পরবর্তীতে জানা গেছে তৎকালীন সময়ে রেশনের খাবার খেয়ে কুষ্টিয়ায় ৬ জন, খুলনায় দুই জন আর কুমিল্লা ও পাবনায় ১ জন করে ১০ জনের মৃত্যু হয়। সব জায়গায় ক্ষোভ থাকলেও পাবনায় ক্ষোভ বিক্ষোভে রূপ নেয় এবং পরবর্তীতে সেটা গণআন্দোলনে পরিণত হয়। ভুট্টার আন্দোলন নিয়ে সংবাদ দৈনিক আজাদ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জেরে ধরে তৎকালীন প্রখ্যাত সাংবাদিক আনোয়ারুল হককে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় দুই বছর বিনা বিচারে আটক রাখা হয় তাকে। আর একজন সাংবাদিক হাসনাতুজ্জামানকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময়ের শীর্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বাম সংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকে জেলে বন্দি করে রাখা হয়। পাবনার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শিবজিত নাগ বলেন, ভুট্টা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাবনার মানুষ সেদিন মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত হওয়ার প্রাথমিক ধাপ অর্জন করে। সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ কীভাবে একটি শক্তিশালি গোষ্ঠীর ভিত কাঁপিয়ে দিতে পারে সে শিক্ষা পরবর্তীতে পাবনার মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা ছিল বলে মনে করেন প্রবীণ এ শিক্ষাবিদ। আগামী প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরতে হলে ভুট্টা আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রবীণ এ শিক্ষাবিদ।
পাকিস্তানের ২৩ বছরের দুঃশাসনে ছোট-বড় নানা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। যেসব আন্দোলন সংগ্রাম নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের ভিত রচনা করেছিল তার মধ্যে অন্যতম পাবনার 'ভুট্টা আন্দোলন'।
এস এম সুলতান: বাংলার মাটি ও মানুষের শিল্পী
চিত্রা নদীর পাড়ে ঝাঁকড়া চুলের এক নিবিষ্ট মানব এঁকেই চলেছেন বাংলার গ্রামীণ জীবন, কৃষক, আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ এবং প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার অনন্ত সংগ্রাম। চোখের পুরু লেন্সের চশমা হেলে পড়ছে, তবুও থামছে না হাত। সেই চোখে কী অদ্ভুত এক জ্যোতির ছাপ। সচরাচর আমরা দেখি কৃষকের রুগ্ন চেহারা, মেদহীন এক শীর্ণকায় প্রতিকৃতি, কৃশ। আর সেই পুরু লেন্সের মধ্য দিয়ে সে চোখ দেখে বলিষ্ঠ, পেশিবহুল কৃষকের ছবি। আঁকতে থাকেন বিদ্রোহ, চিরন্তন অন্নদাতার প্রকৃষ্ট ছবি। চিত্রা নদীর তীর ঘেঁষা পৈতৃক ভিটে পুরুলিয়া গ্রাম ছেড়ে তিনি কখনো আলোচনায় আসতে চাননি, চাননি তাকে নিয়ে মাতামাতি হোক। আর তাই একটা সময় তাকে ঢাকায় আনার পর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করায় ফিরে গিয়েছিলে নিজের গ্রামেই। নিজের আপন জগতে বুঁদ হয়ে থাকতেন তিনি। কাটিয়েছেন এক অনন্য জীবন। অপূর্ব বাঁশি বাজাতেন। বাজাতেন তবলা। শাড়ি পরে পায়ে ঘুঙুর পায়ে নাচতেন আপন খেয়ালে। বিশ্বখ্যাত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় যখন তাকে 'ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট' সম্মাননা প্রদান করল তখনো তিনি বললেন, 'শিল্পের কখনো পুরস্কার হয় না। শিল্পের ভার তো প্রকৃতি স্বীয় হাতে প্রদান করে।' তিনি এস এম সুলতান। আহমদ ছফা লিখেছিলেন, 'কোনো কোনো মানুষ জন্মায়, জন্মের সীমানা যাদের ধরে রাখতে পারে না। অথচ যাদের সবাইকে ক্ষণজন্মাও বলা যাবে না। এরকম অদ্ভুত প্রকৃতির শিশু অনেক জন্মগ্রহণ করে জগতে, জন্মের বন্ধন ছিন্ন করার জন্য যাদের রয়েছে এক স্বভাবিক আকুতি। শেখ মুহাম্মদ সুলতান সে সৌভাগ্যের বরে ভাগ্যবান, আবার সে দুর্ভাগ্যের অভিশাপে অভিশপ্ত।' সুলতানের ডাক নাম ছিল লাল মিয়া। তার বাবা শেখ মোহাম্মদ মেসের আলী মূলত কৃষক হলেও রাজমিস্ত্রীর কাজও করতে হতো তাকে। সুলতানকে স্কুলে পড়ানোর মতো সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। তাই পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থাতেই তাকে স্কুলের পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। সালটা ১৯৩৩। সে বছরই বিখ্যাত রাজনীতিবিদ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী এসেছিলেন নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল পরিদর্শনে। সুলতান তার একটি পেন্সিল স্কেচ এঁকেছিলেন। শ্যামাপ্রসাদ মাত্র ১০ বছর বয়সি এক বালকের আঁকা স্কেচ দেখে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেই পেন্সিল স্কেচের মাধ্যমেই শিল্পী হিসেবে সুলতানের প্রথম আত্মপ্রকাশ। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মুগ্ধতা প্রকাশের কারণ এবং সুলতানের প্রতিভা দেখে এগিয়ে এলেন জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়। ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের ভাইপো অরুণ রায় তখন কলকাতা আর্ট স্কুলের ছাত্র। জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ ভাইপোকে বলতেই অরুণ রায়ই সাগ্রহে সুলতানকে ছবি আঁকা শেখাতে রাজি হয়ে গেলেন। ছুটিতে যখনই অরুণ রায় বাড়িতে আসতেন, সর্বসঙ্গী হিসেবে থাকতেন সুলতান। গতানুগতিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কখনোই টানেনি সুলতানকে। তাই অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থাতেই তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি। এক পর্যায়ে কলকাতা যাত্রা। উদ্দেশ্য আর্ট স্কুলে ভর্তি। কিন্তু বিধিবাম হয়ে দাঁড়ালো তার কম বয়স এবং এন্ট্রান্স পাশ না হওয়া। তাই কখনো ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের বাড়ি, কখনো তার ভাই সত্যেন রায়ের বাড়ি, আবার কখনো অন্য ভাইদের বাড়িতে থেকে সুলতান ছবি আঁকা শিখেছিলেন। আর্ট স্কুলে তার ভর্তির পেছনে ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ স্যার হাসান সোহরাওয়ার্দী। কলকাতা আর্ট স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য তখন তিনি। ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের কাছে জানতে পেরে তিনিই এগিয়ে এসেছিলেন সুলতানের সাহায্যে। চল্লিশের দশকের প্রথমভাগে আর্ট স্কুলের সেই ভর্তি পরীক্ষায় ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন সুলতান। পরীক্ষায় ১৫ মিনিট সময়ে আঁকতে দেয়া হয়েছিল ভেনাস ডি মিলোর ছবি। হাসান সোহরাওয়ার্দীর বাড়ির সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ছিল সুলতানের জন্য উন্মুক্ত। এসময় আর্ট স্কুলে কামরুল হাসান, সফিউদ্দিন আহমেদের মতো কিংবদন্তি শিল্পিদের সহপাঠী হিসেবে পেয়েছিলেন সুলতান। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সেখানেও টানেনি সুলতানকে। তাই আর্ট স্কুলের তৃতীয় বর্ষে সেই যাত্রারও ইতি। ১৯৪৩ এ আর্ট স্কুল ছাড়লেন সুলতান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাঁধাধরা জীবন এবং প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার কঠোর রীতিনীতি সুলতানের জীবনের সাথে কখনোই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। এসময় সুলতান খাকসার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তখন ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। অনেক মার্কিন ও ব্রিটিশ সেনা ছিল ভারতে। সুলতান ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে ছবি এঁকে তা সেনাদের কাছেই বিক্রি করতেন। বেশ কয়েকটি শহরে প্রদর্শনী হয়েছিল তার আঁকা চিত্রকর্মের। সুলতানের প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল ১৯৪৭ সালে শিমলায়। সেই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন কাপুরতলার মহারাজা। দ্বিতীয় প্রদর্শনী হয়েছিল লাহোরে। সালটা ছিল ১৯৫০। উদ্বোধন করেছিলেন মালিক ফিরোজ খান নূন। একই বছরে করাচিতে হওয়া তার আরেক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন ফাতেমা জিন্নাহ। এসময় সুলতান মার্কিন সরকারের আমন্ত্রণে মার্কিন মুলুক ঘুরে এলেন। বিলেতের লেইস্টার গ্যালারিতে তার ছবি প্রদর্শিত হয়েছিল পিকাসো, সালভেদর দালির চিত্রকর্মের সঙ্গে। সুলতানের জীবনমুখী ও বাংলার মায়াবি রূপের সেসব চিত্রকর্ম তুমুল আলোড়িত এবং প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু সুলতানের সেসব ছবি পরে আর পাওয়া যায়নি। এক সাক্ষাৎকারে সুলতান বলেছিলেন সেই সময়ে তার জীবন নিয়ে, 'একেক জায়গায় এভাবে পড়ে আছে সব। শ্রীনগরে গেলাম। সেখানকার কাজও নেই। শ্রীনগরে থাকাকালীন পাকিস্তান হয়ে গেল। '৪৮-এ সেখান থেকে ফিরে এলাম। কোনো জিনিসই তো সেখান থেকে আনতে পারিনি। একটা কনভয় এনে বর্ডারে ছেড়ে দিয়ে গেলো। পাকিস্তান বর্ডারে। আমার সমস্ত কাজগুলোই সেখানে রয়ে গেলো। দেশে দেশে ঘুরেছি। সেখানে এঁকেছি। আর সেখানেই রেখে চলে এসেছি।' ১৯৫৩ সালে করাচি থেকে ঢাকায় ফেরেন সুলতান। সেখান থেকেও সবকিছু ছেড়ে চলে গেলেন সকলের অজ্ঞাতে নড়াইলের পুরুলিয়া গ্রামে। তখন তিনি ছবি আঁকা প্রায় ছেড়েই দিলেন। সত্তরের দশকের মাঝামাঝিতে কয়েকজন শুভানুধ্যায়ীর আকুল প্রচেষ্টায় তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হলো। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমরা সুলতানকে মূল্যায়নই করতে পারিনি। অথচ ঠিক তখনই আমাদের দেশের আধুনিক চিত্রশিল্পের বিকাশ হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় প্রদর্শনীতে তিনি ছবি পাঠালেন। তার ১৭টি তৈলচিত্র, জলরং, কালি কলমের স্কেচ ও চারকোলের চিত্রকর্ম নিয়ে ১৯৭৬ সালে শিল্পকলা একাডেমীতে বিশাল প্রদর্শনী হয়েছিল। সুলতান তখন নতুন এক রূপে আমাদের সামনে উন্মোচিত হলেন। ২২ বছর পর সুলতান জানালেন চিত্রশিল্পী হিসেবে তার মৃত্যু হয়নি। বাংলাদেশে আধুনিক ইতিহাস গবেষণার পথিকৃৎ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম প্রদর্শনী দেখে লিখেছিলেন, 'Here is a display with difference in the sense that never before had any artist dared to wield masterly strokes on such a large canvas and in such a large scale. … S M Sultan provides a moral and spiritual touch in his exceptionally powerful paintings.' পুরুলিয়ায় সুলতানের অসংখ্য ছবি নষ্ট হয়েছে, সংরক্ষিত হয়নি। অসংখ্য ছবি বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পুড়ে নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে অনেক ছবি দেশে বিদেশে ফেলে এসেছিলেন। যার প্রতিটিই ছিল আমাদের চিত্রকর্মের ইতিহাসে অমূল্য সম্পদ। সুলতানের ছবিতে আমরা দেখি গ্রামবাংলার নতুন এক প্রতিচ্ছবি। একই সাথে তার এ ছবিগুলোতে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের শ্রেণি-দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির ক্রূর বাস্তবতাও উঠে এসেছে। সুলতানের ছবিতে আমরা দেখতে পাই পেশিবহুল কৃষকের ছবি, দেখতে পাই বলিষ্ঠ আকার। এই নিয়ে জবাবটা সুলতান নিজেও দিয়েছিলেন। সুলতান বলেছিলেন, 'আমাদের দেশের মানুষ তো অনেক রুগ্ন, কৃষকায়। একেবারে কৃষক যে সেও খুব রোগা, তার গরু দুটো, বলদ দুটো -সেটাও রোগা। আমার ছবিতে তাদের বলিষ্ঠ হওয়াটা মনের ব্যাপার। মন থেকে ওদের যেমনভাবে আমি ভালোবাসি যে আমাদের দেশের কৃষক সম্প্রদায়ইতো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য গড়েছিলো। অর্থবিত্ত ওরাই তো যোগান দেয়। ...আর এই যত জমিদার রাজা মজারাজা আমাদের দেশের কম কেউ না। সবাই তো কৃষিনির্ভর একই জাতির ছেলে। আমার অতিকায় ছবিগুলোর কৃষকের অতিকায় অতিকায় দেহটা এই প্রশ্নই জাগায় যে, ওরা কৃশ কেন? ওরা রুগ্ন কেন- যারা আমাদের অন্ন যোগায়। ফসল ফলায়।' সুলতান আধুনিকতার একটি নিজস্ব সংজ্ঞা গ্রহণ করেছিলেন। শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সুলতান সম্পর্কে এক লেখায় বলেছিলেন, 'তিনি ফর্মের নিরীক্ষাকে গুরুত্ব দেননি, দিয়েছেন মানুষের ভেতরের শক্তির উত্থানকে, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এবং ঔপনিবেশিক সংগ্রামের নানা প্রকাশকে তিনি সময়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপন করেছেন। এটাই তাঁর কাছে ছিল "আধুনিকতা", অর্থাৎ তিনি ইউরো-কেন্দ্রিক, নগর নির্ভর, যান্ত্রিকতা-আবদ্ধ আধুনিকতার পরিবর্তে অন্বেষণ করেছেন অনেকটা ইউরোপের রেনেসাঁর শিল্পীদের মতো মানবের কর্মবিশ্বকে।' এস এম সুলতানের পোষা বেশ কয়েকটি বিড়াল ছিল। তার কাছে যেসব মানুষ এবং শিশু আশ্রয় নিয়েছিল তাদের জন্য তিনি নিজের ঘর ছেড়ে দিয়েছিলেন। একসময় সুলতান শিশুদের জন্য একটি বড় কাঠের নৌকাও তৈরি করেছিলেন। তার ইচ্ছা ছিল শিশুরা সেই নৌকায় চড়ে সমুদ্র পরিভ্রমণে বের হবে আর শিল্পচর্চার উপকরণ খুঁজে পাবে। সুলতান বলতেন, 'যে শিশু সুন্দর ছবি আঁকে, তার গ্রামের ছবি আঁকে, সে সুন্দর ফুলের ছবি আঁকে, তার জীবজন্তুর ছবি আঁকে, গাছপালার ছবি আঁকে, সে কোনোদিন অপরাধ করতে পারে না, সে কোনোদিন কাউকে ব্যথা দিতে পারে না।' সুলতান দ্বিধাহীনভাবে অকপটে বলতেন, 'আমি সুখী। আমার কোনো অভাব নেই। সকল দিক দিয়েই আমি প্রশান্তির মধ্যে দিন কাটাই। আমার সব অভাবেরই পরিসমাপ্তি ঘটেছে।' বেঁচে থাকলে আজ শতবর্ষ পূর্ণ হতো বাংলার মাটি ও মানুষের শিল্পী শেখ মোহাম্মদ সুলতানের। জন্মশত বার্ষিকীতে এস এম সুলতানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। তথ্য সূত্র- বাংলার চিত্র-ঐতিহ্য: সুলতানের সাধনা: আহমদ ছফা বাঙালি মুসলমানের মন: আহমদ ছফা সুলতান: হাসনাত আবদুল হাই এস এম সুলতান বৈচিত্র্যময় শিল্পজীবন: সুভাষ বিশ্বাস বাংলার চিত্র-ঐতিহ্য: সুলতানের সাধনা: আহমদ ছফা বাঙালি মুসলমানের মন: আহমদ ছফা সুলতান: হাসনাত আবদুল হাই এস এম সুলতান বৈচিত্র্যময় শিল্পজীবন: সুভাষ বিশ্বাস
চিত্রা নদীর পাড়ে ঝাঁকড়া চুলের এক নিবিষ্ট মানব এঁকেই চলেছেন বাংলার গ্রামীণ জীবন, কৃষক, আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ এবং প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার অনন্ত সংগ্রাম। চোখের পুরু লেন্সের চশমা হেলে পড়ছে, তবুও থামছে না হাত। সেই চোখে কী অদ্ভুত এক জ্যোতির ছাপ। সচরাচর আমরা দেখি কৃষকের রুগ্ন চেহারা, মেদহীন এক শীর্ণকায় প্রতিকৃতি, কৃশ। আর সেই পুরু লেন্সের মধ্য দিয়ে সে চোখ দেখে বলিষ্ঠ, পেশিবহুল কৃষকের ছবি। আঁকতে থাকেন বিদ্রোহ, চিরন্তন অন্নদাতার প্রকৃষ্ট ছবি।
ছাপচিত্রের ক্যানভাসে ৩ নগরের ‘শহরনামা’
নিসর্গের কবি জীবনানন্দ দাশ তার 'শহর' শিরোনামের কবিতায় নিজ হৃদয়কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, 'হৃদয়, অনেক বড়ো-বড়ো শহর দেখেছো তুমি; সেই সব শহরের ইটপাথর,/কথা, কাজ, আশা, নিরাশার ভয়াবহ হৃত চক্ষু/আমার মনের বিস্বাদের ভেতর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।' আবার মনের খোঁজে মনে মনে অনেক অচিন শহর পরিভ্রমণের কথা উঠে এসেছে ফকির লালন সাঁইয়ের গানেও। লালন বলেন, 'মন এসে মন হরণ করে/লোকে ঘুম বলে তারে/কত আনকা নহর, আনকা শহর/ভ্রমিয়ে দেখায় তৎক্ষণা।' এভাবে বণিক ও বুর্জোয়া সভ্যতার জঠরে জন্ম নেওয়া নগর ও এর নাগরিকদের যাপিত জীবনের বহু উপাদান উপজীব্য হয়েছে লেখক-কবিদের রচনায়। শিল্পীর নিমগ্ন তুলিতেও ফুটে উঠেছে নগরজীবনের এমন নানা রঙিন-বেরঙিন মুহূর্ত। একই পরম্পরায় এসব শহুরে সৌন্দর্য ও বিপন্নতায় তাড়িত চিত্রশিল্পী মোয়াজ্জেম হোসেন জনি এশিয়া মহাদেশের ৩ ত্রিকালদর্শী নগর- বাংলাদেশের ঢাকা, ভারতের কলকাতা ও চীনের হাংচৌ শহরে বসবাসের অভিজ্ঞতা ফুটিয়ে তুলেছেন ছাপচিত্রের ক্যানভাসে। জনির আঁকা এমন ৪১টি ছাপচিত্র নিয়ে ঢাকার সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে চলছে তার প্রথম একক প্রদর্শনী 'শহরনামা'। প্রদর্শনীতে জায়গা পাওয়া ছাপচিত্রগুলোর মূল উপজীব্য নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার অভিঘাত। তাতে যেমন আছে ক্লান্তি ও নৈরাশ্যবোধ, আত্মবিরোধ ও শিকড়হীনতার যন্ত্রণা, তেমনি আছে সংগ্রামী মানুষের গল্প ও বেঁচে থাকার টুকরো টুকরো আনন্দ। গত রোববার থেকে থেকে শুরু হওয়া ৪ দিনের এই প্রদর্শনীটি কিউরেট করেছেন মো. সাজিদুল হক। চলবে বুধবার পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত আছে প্রদর্শনীটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রিন্টমেকিং বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা জনি পরবর্তীতে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চীনের হাংচৌ শহরের অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে উচ্চতর পড়ালেখা করেন। তার ভাষ্য, প্রদর্শনীতে জায়গা পাওয়া শিল্পকর্মগুলো তৈরি হয়েছে এই ৩ শহরে বসবাসের অভিজ্ঞতার নিরিখে। দ্য ডেইলি স্টারকে জনি বলেন, 'অ্যাকাডেমিক কাজ ছাড়াও এই ৩ শহরে যাপিত জীবনের যে বিষয়গুলো আমাকে ভাবিয়েছে তারই চিত্ররূপ এই শিল্পকর্মগুলো। ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে আমি এগুলো তৈরি করেছি।' রোববার সন্ধ্যায় 'শহরনামা'র উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক আলভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন ও প্রিন্টমেকিং বিভাগের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এতে সভাপতিত্ব করেন একই বিভাগের অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানা। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল জনির শিল্পকর্মগুলোকে অভিহিত করেন 'সাধারণ থেকেও অসাধারণ' হিসেবে। অধ্যাপক আবুল বারক আলভীর মতে, জনির কাজগুলোতে 'নিজস্বতা' আছে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক নিসার হোসেনের অভিমত, 'যে কোনো কিছুতে নিজস্ব স্টাইল প্রতিষ্ঠা করা কঠিন কাজ, আবার কঠিনও নয়। মোয়াজ্জেম হোসেন তার কাজের মধ্য দিয়ে একটা স্টাইল গড়েছেন। এই পথে সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।' এছাড়া অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানা মনে করেন, শিল্পকর্মে প্রতিভার চেয়েও অনুশীলন বেশি জরুরি। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, 'আমি মোয়াজ্জেম হোসেনের মধ্যে সেই অনুশীলনের চর্চা দেখেছি।' সেইসঙ্গে শিল্পচর্চাকে অধিকতর কার্যকর করে তুলতে এটিকে জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলার তাগিদও দেন তিনি।
নিসর্গের কবি জীবনানন্দ দাশ তার 'শহর' শিরোনামের কবিতায় নিজ হৃদয়কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, 'হৃদয়, অনেক বড়ো-বড়ো শহর দেখেছো তুমি; সেই সব শহরের ইটপাথর,/কথা, কাজ, আশা, নিরাশার ভয়াবহ হৃত চক্ষু/আমার মনের বিস্বাদের ভেতর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।'
ধানমন্ডিতে মোয়াজ্জেম হোসেনের ‘শহরনামা’ ছাপচিত্রের প্রদর্শনী
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে শুরু হয়েছে চিত্রশিল্পী মোয়াজ্জেম হোসেন জনির প্রথম একক ছাপচিত্র প্রদর্শনী 'শহরনামা'। ঢাকা, কলকাতা ও হাংচৌ শহরে বসবাসের অভিজ্ঞতা তিনি ছাপচিত্রের ক্যানভাসে এঁকেছেন। গত ১৮ ডিসেম্বর ৪ দিনব্যাপী এই একক ছাপচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক এ এস এম ড. মাকসুদ কামাল। ধানমন্ডি-৪-এর বাসা#২১/এ (প্রথম তলায়) সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে ১৮ থেকে ২১ ডিসেম্বর প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে শুরু হয়েছে চিত্রশিল্পী মোয়াজ্জেম হোসেন জনির প্রথম একক ছাপচিত্র প্রদর্শনী 'শহরনামা'।
কী এঁকেছি দেখো
সবুজ বনের পাশে দিয়ে বয়ে গেছে একটি নদী। সেই নদীতে লঞ্চ চলাচল করে। তেমনি একটি লঞ্চে বসে আনমনে বন দেখছে ছোট্ট এক শিশু। (ছবিটি এঁকেছে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আসফিয়া জান্নাহ। আসফিয়া সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।)
সবুজ বনের পাশে দিয়ে বয়ে গেছে একটি নদী। সেই নদীতে লঞ্চ চলাচল করে। তেমনি একটি লঞ্চে বসে আনমনে বন দেখছে ছোট্ট এক শিশু।
৫০ পেরিয়ে বাংলাদেশের আলোকচিত্র
বাংলাদেশের আলোকচিত্রের ৫০ বছরের ফিরিস্তি লিখতে গেলে শুরু করতে হবে তারও একটু আগে থেকে। বায়ান্নর সেই উত্তাল দিনগুলোর চিত্র ধারণ করে স্মরণীয় হয়ে আছেন আলোকচিত্রী আমানুল হক ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ভাষাসংগ্রামের রক্তাক্ত ঘটনাকে অস্বীকার করতে চেয়েছিল। তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় একটিমাত্র ছবির কারণে। পুলিশের গুলিতে নিহত রফিক উদ্দীনের মরদেহ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। গোপন খবরের ভিত্তিতে আমানুল হক মর্গে ঢুকে পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত ছবি। ছবিটি রক্ষা করতে তাকে ভারতে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়। আমানুলের তোলা ছবিটি এভাবেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রধান নিয়াজীর আত্মসমর্পণের ছবিটিকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আলোকচিত্র হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। চিত্রসাংবাদিক আফতাব আহমেদের ধরে রাখা বিজয়ের মুহূর্তটি ইতিহাসের আধার হয়ে আছে। স্বাধীনের পর আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে আলোকচিত্রই একমাত্র অবলম্বন হয়ে ওঠে। ১৯৭২ সালে দিল্লিতে এশিয়ান ফেয়ারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের জন্য একটি স্টল বরাদ্দ করেন। এ উপলক্ষে ১১ মার্চ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তার স্নেহভাজন ১৪ জন ফটোসাংবাদিককে সুগন্ধায় ডাকেন। বলেন, 'দেশকে উপস্থাপনের মতো আমাদের তো কিছু নেই। তোমাদের তোলা গণ-আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো দিয়ে একটা প্রদর্শনী করলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা যায়।' সেদিন বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ আর পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয় 'বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও একাডেমি'। দিন দশেক পর এশিয়ান ফেয়ারে ফটোসাংবাদিকদের ছবিতে প্রথম মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এ দেশে ফটোগ্রাফির শিক্ষাচর্চা শুরু হয় পথিকৃৎ আলোকচিত্রশিল্পী গোলাম কাসেম ড্যাডির হাত ধরে। আলোকচিত্রীদের অভিভাবক হিসেবে তাকে 'ড্যাডি' ডাকা হয়। তিনি ১৯৫১ সালে ঢাকায়  ট্রপিক্যাল ইন্সটিটিউট অব ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬০ সালে আলোকচিত্রাচার্য মনজুর আলম বেগ প্রতিষ্ঠা করেন বেগার্ট ইন্সটিটিউট। ১৯৬৪ সালে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় সমাজকল্যাণ দপ্তরের অধীনে চালু হয় ফটোগ্রাফিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিপিএসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক ইন্সটিটিউট। ১৯৯৮ সালে দৃক পিকচার লাইব্রেরির অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে পাঠশালা—দ্য সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব ফটোগ্রাফি। পাঠশালা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একটি ইনস্টিটিউটি। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কাউন্টার ফটো। এছাড়া এখন প্রিজম, ফটোফি, চঞ্চল মাহমুদ স্কুল অব ফটোগ্রাফিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফটোগ্রাফি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ফটোগ্রাফির সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হয় দেশভাগের পর। ১৯৪৮ সালে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্ট পাকিস্তান ফটোগ্রাফিক সোসাইটি। কয়েক বছর পর গোলাম কাসেম ড্যাডি ও বারডেমের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ইস্ট পাকিস্তান ফটোগ্রাফার্স অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু সংগঠন ২টি দীর্ঘস্থায়িত্ব লাভ করতে পারেনি। ফলে ১৯৬২ সালের ১২ আগস্ট গোলাম কাসেম ড্যাডি প্রতিষ্ঠা করেন ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাব। এই ক্লাব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এদেশে ফটোগ্রাফির সাংগঠনিকচর্চা গতিশীল হতে শুরু করে। এরপর মনজুর আলম বেগের নেতৃত্বে ১৯৭৬ সালের ৩০ মে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (বিপিএস)। বিপিএসের মাধ্যমে এ দেশে ফটোগ্রাফির জোয়ার শুরু হয়। আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে সিনেসিক, ম্যাপ ও আলোকসহ কয়েকটি সংগঠন গড়ে ওঠে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে পাঠশালার আলোকচিত্র সংগঠন 'মুক্তচোখ'। ইতিহাস বলে, ঢাকা আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠার সময়ে চিত্রকলার বিভিন্ন শাখার সঙ্গে ফটোগ্রাফি বিভাগও চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উপযুক্ত শিক্ষক না পাওয়ায় সে সময় এর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এরপর ষাটের দশকের শুরুতে আর্ট কলেজে ফটোগ্রাফির একটা পূর্ণাঙ্গ বিভাগ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ফটোগ্রাফি পড়ানোর জন্য শিল্পী মুস্তফা মনোয়ারকে আর্ট কলেজে নিয়ে আসেন। ক্যামেরা, লাইটিং, এনলার্জারসহ ডার্করুম সরঞ্জাম কেনা হলো। কিন্তু কোথায় যেন ছেদ পড়ল! অনেক দিন অপেক্ষা করে মুস্তফা মনোয়ার চলে গেলেন টেলিভিশনে। ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করতে আর্ট কলেজে আসলে ফটোগ্রাফি বিভাগ প্রতিষ্ঠার আলোচনাটি আবারো জোরালো হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়। ফলে চারুকলায় ফটোগ্রাফি আর জায়গা করে নিতে পারল না। তাই বলে বাংলাদেশে ফটোগ্রাফির পথচলা থেমে থাকেনি। অনেকটা ব্যক্তি-উদ্যোগেই এগিয়ে চলেছে ফটোগ্রাফিচর্চা। বর্তমানে বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা বিশ্বের সেরা ফটোগ্রাফার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে অনেক চোখ এখন এ দেশের আলোকচিত্রীদের কাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই সফলতার পেছনে রয়েছে কিছু মানুষের নিরলস প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের আলোকচিত্রবিদ্যায় অনন্য অবদান রেখে যিনি প্রবাদপুরুষ হয়ে আছেন তিনি গোলাম কাসেম ড্যাডি। আরেক ধীমান মানুষ হলেন মনজুর আলম বেগ। বাংলাদেশের আলোকচিত্রকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত করার জন্য যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি ড. শহিদুল আলম। আমানুল হক, নাইবউদ্দীন আহমদ, ড. নওয়াজেশ আহমদ, আনোয়ার হোসেন সৃষ্টি করে গেছেন অসাধারণ সব শিল্পকর্ম। নাসির আলী মামুন তৈরি করেছেন প্রতিকৃতি আলোকচিত্রের ধারা। পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের আলোকচিত্রকে যারা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন- ইউসুফ মোহাম্মদ প্যাটেল, আজমল হক, কফিল উদ্দীন আহমেদ, বিজন সরকার, হাজি আবু তালেব, সৈয়দ আনিসুল হোসেন, মৃণাল সরকার, ডা. আনসার উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ খসরু, এম হারিস উদ্দিন, আজীজুর রহমান, খান মোহাম্মদ আমীর, এস এস বড়ুয়া, কাজী মিজানুর রহমান, শফিকুল ইসলাম স্বপন, স্বপন সাহা, দেবব্রত চৌধুরী, নাফিস আহমেদ নাদভী, মোহাম্মদ আলী সেলিম, কাশিনাথ নন্দী, হাসান সাইফুদ্দীন চন্দন, ডা. রশিদ-উন-নবী শুভ্র, এবিএম আখতারুজ্জামান, খালিদ মাহমুদ মিঠু, চঞ্চল মাহমুদ, সেলিম নেওয়াজ ভূঞা, শেহজাদ নূরানী, মাহমুদুর রহমান, মো. মঈন উদ্দীন, সৈয়দ লতিফ হোসেন, আক্কাস মাহমুদ, শিহাবউদ্দীন, বশীর আহমেদ সুজন, ইমতিয়াজ আলম বেগ, পল ডেভিড বারিকদার, খালেদ হাসান, খন্দকার তানভীর মুরাদ, ইউসুফ তুষারসহ আরও অনেকে। সাইদা খানমকে বলা হয় নারী আলোকচিত্রীদের পথিকৃৎ। তার পর আসেন সাজেদা খানম, সুফিয়া বেগম, ডলি আনোয়ার, দীল আফরোজ পারভীন, সিতারা ফেরদৌস, মাহবুবা খান, শিরীন সুলতানা, মুনিরা মোরশেদ মুন্নী, শায়লা হক মিতা, নূরজাহান চাকলাদার, রওশন আরা ঝুনু, ইসমাত জাহান, ফারজানা খান গোধুলী, সামিরা হক, স্নিগ্ধা জামান, সৈয়দা ফারহানা, মাসুমা পিয়া, মোমেনা জলিল, কাকলী প্রধান, জান্নাতুল মাওয়া, সাবিনা ইয়াসমীন, জয়িতা রায়, মম মুস্তফা, জয়া করীম, হাবিবা নওরোজ, ফাতেমা তুজ জোহরা, ফারহানা ফারাহ প্রমুখ। পৃথিবীর এমন কোনো প্রতিযোগিতা নেই, যেখানে বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা জয়ী হননি। ২০১৮ সালে পুলিৎজার জেতেন রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ পনির হোসেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ১০ জন আলোকচিত্রী ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো পুরস্কার জিতেছেন। ওয়ার্ল্ড প্রেস বিজয়ীরা হলেন- শফিকুল আলম কিরণ, শোয়েব ফারুকী, জিএমবি আকাশ, এন্ড্রু বিরাজ, তাসলিমা আখতার, রাহুল তালুকদার, সরকার প্রতীক, মো. মাসফিকুর আখতার সোহান, কেএম আসাদ ও ইসমাইল ফেরদৌস। ওয়ার্ল্ড প্রেসের আরেকটি সম্মানসূচক গ্র্যান্ড জুপ মাস্টার ক্লাস জিতেন জিএমবি আকাশ, মুনেম ওয়াসিফ, এন্ড্রু বিরাজ, সাইফুল হক অমি, সরকার প্রতীক, শামসুল আলম হেলাল, সাদমান শহীদ, আশফিকা রহমান, শাহারিয়া শারমীন ও সালমা আবেদীন পৃথি। বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের মুকুটে যুক্ত হয়েছে ইউজিন স্মিথ ফান্ড, মাদার জোনস, ন্যাশনাল জিওগ্রাফির অল রোডস, পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার এওয়ার্ড, হিপা, টাইম ম্যাগাজিন পারসন অব দ্য ইয়ারের মতো সম্মানসূচক পালক। প্রথম এশিয়ান হিসেবে ২০০৩ সালে ড. শহিদুল আলম ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর জুরি চেয়ার হন। এর আগে তিনি ১৯৯৪, ১৯৯৫ ও ১৯৯৮ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতার জুরি সদস্য ছিলেন। এরপর ওয়ার্ল্ড প্রেসের জুরি সদস্য হয়েছেন আলোকচিত্রী আবীর আবদুল্লাহ ও মুনেম ওয়াসিফ। ২০২২ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেসের এশিয়া অঞ্চলের জুরি চেয়ার হন তানজিম ওয়াহাব। এ বছর ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ফাউন্ডেশনের এশিয়া অঞ্চলের সহ-আয়োজক হিসেবে যুক্ত হয়েছে দৃক। এশিয়া মহাদেশের এত এত দেশ থাকতে বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ফাউন্ডেশনের মনোনয়ন পাওয়া কম গৌরবের ব্যাপার নয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো আলোকচিত্রী স্বাধীনতা পদক পাননি। একুশে পদক পেয়েছেন মো. কামরুজ্জামান, আফতাব আহমেদ, মনজুর আলম বেগ, মোহাম্মদ আলম, আমানুল হক, গোলাম মুস্তফা, সাইদা খানম ও পাভেল রহমান। বাংলাদেশ শিল্পকলা পদক পেয়েছেন শহিদুল আলম, গোলাম মুস্তফা, নাসির আলী মামুন, এমএ তাহের ও শফিকুল ইসলাম স্বপন। সাম্প্রতিক সময়ে ফটোগ্রাফির ইতিহাস নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। শহিদুল আলম, অনুপম হায়াত, রাফিউল ইসলাম, নাঈম মোহায়মেন ফটোগ্রাফি গবেষণায় অগ্রগণ্য। এই নিবন্ধকারের সম্পাদিত ড্যাডিসমগ্র'র মতো উল্লেখযোগ্য স্মারক প্রকাশনা বাংলাদেশ থেকেই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তানজীম ওয়াহাব, মুনেম ওয়াসিফ সম্পাদিত 'কামরা' ও সাইফুল হক অমি সম্পাদিত 'কাউন্টার ফটো' ফটোগ্রাফিবিষয়ক উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা। ফটোগ্রাফি নিয়ে পত্র-পত্রিকা সীমিত। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির মাসিক মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত হয় বিপিএস নিউজ লেটার। পরবর্তী সময়ে এর নাম বদলে হয় 'মাসিক ফটোগ্রাফি'। সাম্প্রতিক সময়ে ফটোগ্রাফি নিয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন নাসির আলী মামুন, মো. রফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর সেলিম, সুদীপ্ত সালাম, সুমন ইউসুফ ও মো. শাহারিয়ার খান শিহাব প্রমুখ। আজকের শিল্পবিশ্বে বাংলাদেশের যে পরিচিতি তার নেপথ্য ভূমিকা দৃক ও পাঠশালার। প্রতিষ্ঠার ১১ বছরের মাথায় ২০০০ সালে দৃক প্রথম আন্তর্জাতিক ছবিমেলার আয়োজন করে। বলতে দ্বিধা নেই, ছবিমেলা এশিয়ার সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র উৎসব। অপরদিকে পাঠশালার উত্তরণকে বাংলাদেশের 'আলোকচিত্রিক রেনেসাঁ' বলা যায়। পাঠশালা শুধুমাত্র শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল না; জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি চর্চার মাঝখানের দূরত্বও ঘুচিয়ে দিতে শুরু করল। আগে এ দেশে স্যালোন বা আর্ট ফটোগ্রাফির চর্চা হতো। কিন্তু ছবি দিয়ে যে সমাজজীবনের গল্প বলা যায় এই ধারণা আসে পাঠশালা প্রতিষ্ঠার পর থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে একটি পূর্ণাঙ্গ ফটোগ্রাফি বিভাগ চালু করার দাবি দীর্ঘদিনের। ভিজ্যুয়াল দুনিয়ায় এটা এখন সময়েরও দাবি। আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি হয়ে গেল, সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের ফটোগ্রাফি নিয়ে এত এত ঘটনা ঘটে গেল, কিন্তু দেশের মাটিতে তাদের কোনো মূল্যায়ন হলো না। গোলাম কাসেম ড্যাডি, নাইবউদ্দীন আহমেদ, ড. নওয়াজেশ আহমেদ, রশীদ তালুকদার আর আনোয়ার হোসেনের মতো আলোকচিত্রীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে না পারাও এক ধরনের সীমাবদ্ধতা। আলোকচিত্রীদের জয় হোক।
বাংলাদেশের আলোকচিত্রের ৫০ বছরের ফিরিস্তি লিখতে গেলে শুরু করতে হবে তারও একটু আগে থেকে। বায়ান্নর সেই উত্তাল দিনগুলোর চিত্র ধারণ করে স্মরণীয় হয়ে আছেন আলোকচিত্রী আমানুল হক ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ভাষাসংগ্রামের রক্তাক্ত ঘটনাকে অস্বীকার করতে চেয়েছিল। তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় একটিমাত্র ছবির কারণে।
মুর্তজা বশীর ৯৩ বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন
মুর্তজা বশীর ৯৩ বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন। তার বেশি কিংবা কম কেন নয়, সে এক মস্তোবড় প্রশ্ন বটে। যার উত্তর ও যৌক্তিকতা জানতেন কেবল তিনিই। এই অভিলাষ ছিল না একজন শিল্পীর আলটপকা কোনো খেয়াল কিংবা শিল্পের আলো-আঁধারি। এ চাওয়া ছিল শুদ্ধতা ও দার্শনিকতায় নিমগ্ন এক শিল্পীর হৃদয় থেকে উৎসারিত সাধনার অর্ঘ্যবিশেষ। দেশভাগ পরবর্তী আমাদের যে শিল্প-আন্দোলন ও সৃজনে মুর্তজা বশীর ছিলেন তার অগ্রভাগে। বর্তমান যে বাংলাদেশ ভূখণ্ড, দেশ স্বাধীনের আগে ছিল পূর্ব বঙ্গ, পূর্ব পাকিস্তান, পূর্ব বাংলা—নানা নামে পরিচিত। এখানে নবজাগরণের সূত্রপাত হয় বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে। বায়ান্নোর একুশে সেই জাগরণ পালন করে যৌবনের ধর্ম। বাঙালির এই যৌবনের ধর্ম বিকাশের সোনা ঝরা দিনগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। অমর একুশের শহীদ বরকত গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রত্যক্ষ সাক্ষী নন, রক্তাক্ত বরকতকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। একুশের সংকলন একুশে ফেব্রুয়ারিতে সেই অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন, সেখানে ব্যবহৃত হয়েছে তার লিনোকার্ট। সেই সংকলনের সঙ্গে যারা ছিলেন যুক্ত তারা সকলেই একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। হাসান হাফিজুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, শামসুর রাহমান, আনিসুজ্জামানদের সঙ্গে বন্ধুত্বের গভীরতা সময় পরিক্রমায় বেড়েছে বৈ কমেনি। এ ছাড়াও পথ চলতে, লেখাপড়ার সুবাদে, কর্মক্ষেত্রের কারণেও বন্ধু তালিকায় যুক্ত হয়েছেন অনেকেই। তবে তিনি তাদেরকে বন্ধু তালিকায় রাখতে নিমরাজি নয়, রীতিমতো গররাজি। শামসুর রাহমানের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল, যা মলিন হয়নি এক মুহূর্তের জন্য। ট্রাজেডি হলো, প্রিয় এই বন্ধু মারা যান মুর্তজা বশীরের জন্মদিনে ২০০৬ সালে। তারপর যতদিন জীবিত ছিলেন আর কোনো দিন পালন করেননি নিজের জন্মদিন। কেবল নিভৃতে স্মরণ করেছেন প্রিয় বন্ধুকে, স্মৃতির ডালিতে, প্রিয় কবিতার পংক্তিতে। সন্তানেরা জোরাজুরি করলে সেই জন্মদিন গড়িয়েছে পরের দিন। কিন্তু ১৭ আগস্টে হয়নি কখনও। এই হচ্ছে মুর্তজা বশীরের বন্ধুকৃত্য। মুর্তজা বশীর বাঁচতে চেয়েছিলেন ৯৩ বছর। এ কথা আরও অনেককেই হয়তো বলেছেন তিনি। আমাকেও বলতেন প্রায়শ। বলেই চাপা একটা হাসি দিতেন, চোখে-মুখে বিরাজ করতো অন্যরকম এক দ্যুতি। যেন দাবা খেলায় রাজাকে দিয়েছেন চেক, পথ নেই বের হওয়ার। আমি বলতাম, ৯৩ কেন, ৯৪, ৯৫ কিংবা ১০০ নয় কেন? উনি হেসে ঠোঁটটা আরও একটু রক্তিম করে ফেলতেন, পাখির দিকে তাকাতেন, সিগারেটে একটা দম দিতেন। মনে পড়ে প্রত্ন ইতিহাস সংগ্রাহক ও লেখক আ কা মু যাকারিয়ার যখন ৯৫ বছর বয়স, আলাপে-গল্পে বলেছিলেন একবার, 'ও কাজল, আমি মনে হয় আমার বাবা-চাচাদের মতো বাঁচব না, ফুপুদের আয়ু পাব।' আপনার ফুপুরা কতো বছর বেঁচেছিলেন? ১০০ বছরের মতো। আর বাবা-চাচারা? ১১৫ বছরের মতো। যাকারিয়া সাহেব সরল বিশ্বাসে যা মনে করেছিলেন তাই-ই বলেছিলেন। কিন্তু মুর্তজা বশীর ৯৩ বছর বাঁচতে চাওয়ার পর হাসছেন কেন? আমি পেঁচিয়ে ধরি, 'স্যার, বলেন কেন নির্দিষ্ট একটা সময় ধরেই বাঁচতে চান, কেন?' মুখ খোলেন তিনি। বলেন, শোনো কাজল, তার আগে তোমাকে আমার একটা গল্প বলি। মুর্তজা বশীর অসুস্থ ভীষণ। রাজধানীর একটা হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন। সেই যাত্রায় আর ঘরে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। একটা সময়ে ডাক্তাররা বলে দিলেন, উনার অবস্থা খুবই খারাপ, ক্রমশ ক্রিটিক্যাল অবস্থার দিকে যাচ্ছে। মুর্তজা বশীরের কোনো নড়াচড়া নেই, সেই শক্তিও হারিয়েছেন। কিন্তু সবই শুনতে পাচ্ছেন তিনি। ডাক্তার ছেলে-মেয়েদের ডেকে বলে দিলেন চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার কথা। জানালেন আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেব, 'মুর্তজা বশীর আর নেই।' আপনাদেরকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানালাম। ছেলে-মেয়েরা বেডের পাশে শুয়ে আলাপ করছে। বিষয়, লাশ কী করা হবে? কোথায় কবর দেওয়া হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। মুর্তজা বশীর বললেন, 'কাজল আমি কিন্তু সব শুনতেছি। আর ভাবছি, আমি তো ৯৩ বছর বাঁচতে চাই। আমার তো এখনও অনেক কাজ বাকি। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে গাল ভিজে যাচ্ছে আমার। কেউ টেরও পায়নি। আমি চোখ বন্ধ করে শুধু বললাম, 'হে আল্লাহ্, তুমি কি চাওনা আমি আমার অসমাপ্ত কাজগুলো করি, তুমি কি চাও না আমি আরও কয়েকটা দিন বাঁচি, তুমি কি চাও না আমার কাজগুলো শেষ করে যাই?' এই বলে আমি আমার চোখ বন্ধ করলাম। ঠিক তক্ষুনি ঘোষণা দেওয়ার জন্য ডাক্তার এলেন এবং সব দেখেশুনে বললেন, 'মিরাকল, উনি ব্যাক করেছেন। আপনার উনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন।' মুর্তজা বশীর বাসায় ফিরলেন এবং ডুব দিলেন নিজের কাজে। ততদিনে স্ত্রী পাড়ি দিয়েছেন চির প্রয়াণের পথ। তবুও প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে তিনি স্ত্রীকে স্মরণ করতেন। আমি জানতে চেয়েছিলাম, আপনি যে এভাবে উনাকে স্মরণ করেন, অন্যেরা জানে? উনি বলেছিলেন, 'আমি তো কাউকে জানানোর জন্য, দেখানোর জন্য কিছু করি না।' যতদিন সুস্থ ছিলেন, প্রত্যেক শুক্রবারে স্ত্রীর কবরের কাছে যেতেন। মনে পড়ে, স্ত্রী মারা যাওয়ার আগে ফোনে কথা হলেই বাসাই আসার জন্য বলতেন, সঙ্গে এও বলতেন যে, এই এই সময়ে এসো না। কারণ তখন উনি স্ত্রীকে ওষুধ খাওয়ান, সেবা যত্ন করেন, সময় ও সঙ্গ দেন। মুর্তজা বশীর অমর হতে চেয়েছিলেন। তার ইচ্ছে ও সাধনা ছিল কাজ দিয়ে অমর হয়ে ওঠা। এই নিয়ে তার কৌতূহল ছিল শিশুর মতো। এ প্রসঙ্গ এলেই মুখজুড়ে যে হাসির আভা খেলা করতো তা বুঝি কেবল নিষ্পাপ শিশুর মুখাবয়বেই মানায়। নিজের আঁকা ছবি নিয়ে ভীষণ খুঁতখুঁতে আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছিল তার। মুর্তজা বশীরের ছিল সাহিত্যিক মন, গবেষণা নিষ্ঠ প্রাণ-যুক্ত ছিলেন চলচ্চিত্রের সঙ্গেও। হুমায়ুন কবীরের 'নদী ও নারী' উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ন করেছিলেন সাদেক খান। তিনি ছিলেন এর চিত্রনাট্য রচয়িতা ও প্রধান সহকারী পরিচালক। তিনি উপন্যাস লিখেছেন, কবিতা চর্চা করেছেন, মুদ্রা ও শিলালিপির আলোকে হাবশী সুলতানদের কাজ নিয়ে গবেষণা করেছেন। একজন পূর্ণাঙ্গ শিল্পী বলতে যা বোঝায় তিনি ছিলেন যথার্থই সেসবের প্রতিভূ। শিল্পের নানা মাধ্যমের প্রতি আগ্রহ-ঝোঁক ও সংশ্লিষ্টতা তার শিল্পচর্চাকে করেছিল উচ্চকিত ও স্বাতন্ত্রমণ্ডিত। এই স্বাতন্ত্র্যই তাঁকে বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন ও শিল্প সৃজনের ভুবনে অমর করে তুলেছে। শিল্প সৃজনের অমর কারিগর মুর্তজা বশীর কেবল আঁকাআঁকি দিয়ে নয়, তার বৌদ্ধিক অবস্থান দিয়েও নিজেকে কিংবদন্তীর জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন। কিংবদন্তী হওয়ার পরও তিনি ৯৩ বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি তার, নাকি নিজেই পূরণ করতে চাননি। জীবন সায়াহ্নে এসে সরে গিয়েছিলেন নিজের ওই অবস্থান থেকে। যে বছর মারা গেলেন তিনি, তখন কেবল দেশেই নয় বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড-১৯ এর দৌর্দণ্ড প্রতাপ। তার আগের বছর দেখা ও শেষ আলাপ হয় তার সঙ্গে। অসুস্থ, অক্সিজেন নিতে হয় যন্ত্রের সাহায্যে, তারপরও কথার তুবড়ি ছুটছিল। চেহারা ও বেশভুষায় এনেছেন ব্যাপক পরিবর্তন। তারও আগে থেকেই মন দিয়েছেন ধর্মেকর্মে—এখন বেড়েছে কিছুটা। অনেক কথা, অনেক গল্প। কিছু কিছু ঘুরে ফিরে আসতো, কিছু একেবারেই আনকোরা। আর যেগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে সেগুলোর বেশিরভাগ শুনেই মনে হয়েছে উনি সেই কথা-গল্প-আখ্যান এতদিনে শেষ করলেন। তার মানে কি কথারা, গল্পেরা, আখ্যানেরা মানুষের সঙ্গে বড়ো হয়, পরিণতির দিকে এগোয়, দার্শনিকতাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিন্যাস করে তার মাত্রা। যতো বড়ো দার্শনিক, যতো বড় বুদ্ধিজীবী তার পরিবর্তনের ক্ষমতা হয় সবার থেকে বেশি। কেবল গোঁয়ার-মুঢ়-মূক এক ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে, পাথরের মতো নিস্তব্ধতাকে সাক্ষী রেখে। স্যার, আপনি কি এখনও বাঁচতে চান ৯৩ বছর, কিংবা তারও অধিক। মনে হলো, আগের সেই হাসি হয়েছে কিছুটা ম্লান। যদিও তিনি পড়ে আছেন রঙের উজ্জ্বলতায় ভরা রঙিন এক জামা, টুপিটাও বেশ কালারফুল। তিনি বললেন, কাজল ৯২, ৯৩ এরপর আর বাঁচা উচিৎ নয়, কারণ তখন আর শরীরে কুলোয় না। নিজে নিজে চলার সক্ষমতা হারিয়ে যায়। অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়ায় কি ভালো নয়? আমি বললাম, স্যার নীরদচন্দ্র চৌধুরী তো সম্পূর্ণ সুস্থভাবে ১০২ বছর বেঁচে ছিলেন। পাড়লাম তপন রায়চৌধুরী, খুশবন্ত সিং প্রমুখের কথা। উনি কেবল চুপ করে শুনলেন। বললেন মানুষের শরীরে যতদিন কুলোয় ঠিক ততদিনই বাঁচা উচিৎ, তার থেকে বেশি একদিনও নয়, এক মুহূর্তের জন্যও নয়। ঠিক তক্ষুনি মনে পড়ে গেল, মুর্তজা বশীর ৯৩ বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন। আমরা চুপচাপ বসে থাকি। বই দেখি। মসজিদ থেকে আজানের শব্দ ভেসে আসে। তিনি আজান শুনেন, জবাব দেন। নিজেদের মধ্যে আলাপে মগ্ন হই। স্যার, আপনি কেন ৯৩ বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন? 'তুমি শুনবেই সেই কথা? পাবলো পিকাসো ৯২ বছর বেঁচেছিলেন। আমিতো শিল্প সৃজন দিয়ে তাকে ছাড়াতে পারব না, তাই বাঁচতে চেয়েছিলাম ৯৩ বছর। যাতে জীবনের আয়ুষ্কাল দিয়ে হলেও পাবলো পিকাসোকে অতিক্রম করতে পারি। এ কারণেই ৯৩ বছর বাঁচার অভিলাষ আমার।' মুর্তজা বশীর, জীবন সায়াহ্নে আপনি কি বেছে নিয়েছিলেন ইচ্ছামৃত্যুর পথ? এই প্রশ্নের উত্তর কোনোদিনই জানা হবে না আমার, আমাদের। আপনি কি জানেন, আমরা আপনাকে পাবলো পিকাসো জ্ঞান করি, মান্যতা দেই গভীর-গভীরতর এক শ্রদ্ধায়। জীবনের আয়ুষ্কাল দিয়ে নয়, শিল্পের সৃজন দিয়েই আপনি হয়েছেন অমর, বাংলার পাবলো পিকাসো। কাজল রশীদ শাহীন: সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও গবেষক [email protected]
মুর্তজা বশীর ৯৩ বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন। তার বেশি কিংবা কম কেন নয়, সে এক মস্তোবড় প্রশ্ন বটে। যার উত্তর ও যৌক্তিকতা জানতেন কেবল তিনিই।
শহীদ সাবেরের ভাগ্য কারো জীবনে না আসুক
আজিমপুর কলোনিতে থাকতেন। সালামতউল্লাহ নানার বড় ছেলে সাবের। পেয়ারুর বড় ভাই। পেয়ারু ভাইকে চিনি-জানি কিন্তু সাবের নামের তার এই ভাইকে চিনতাম না। নাম এ কে এম শহীদুল্লাহ, ডাক নাম সাবের। শহীদ সাবের নামে লেখক পরিচিতি। তিনি ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় চার বছর জেল খেটেছেন। জেল থেকেই আইএ ও বিএ পাস করেছেন। সিএসপি এবং সিআইএস পরীক্ষায় পাস করেও জেলখাটা রাজনীতিক বলে সরকারি চাকরি পাননি। নিজ পছন্দের এক জমিদার কন্যার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা থাকলেও জেলফেরত কমিউনিস্ট বলে সেই জমিদার কন্যাকেও পায়নি। পরে সংবাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। সরকারি চাকরি, প্রতিষ্ঠা, বিয়ে কোনোটি না হওয়ায় অজানা সংকটে প্রায় অস্বাভাবিক হয়ে যান। সালামতউল্লাহ নানার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর দুই ছেলে সাবের ও পেয়ারু। প্রচণ্ড মেধাবী সাবের কেন এমন হয়ে গেলেন কেউ তা জানে না। সৎমায়ের সংসারে বেড়ে ওঠা সাবের ও পেয়ারুর। সৎমায়ের সংসারে থাকলে যা হয়; এদের দুই ভাইয়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। দুই ভাইয়ের প্রতি অন্যায় আচরণের জন্য এদের সৎমাকে আমার বাবা নাকি রাগে-ক্ষোভে শাসন করতে পর্যন্ত গিয়েছিলেন। সাবের বইও লিখেছেন। বেরোনো দুটি বই নিজ হাতে লিখে উপহারও দিয়েছিলেন বাবাকে। বই দুটি এখনো বাসায় আছে স্মৃতিস্বরূপ। বাসায় ফিরে বাবার সেলফ তন্ন তন্ন করে খুঁজে বই দুটি উদ্ধার করি। 'কালো মেয়ের স্বপ্ন' এবং 'এক টুকরো মেঘ' দুটি বইয়ের ভেতরের পাতায় তার স্বহস্তে লেখা, 'সিরাজ মামাকে, স্নেহভাজন সাবের।' লোকটির প্রতি আমার সমস্ত ভালো না লাগা নিমিষে উধাও। মানুষটির প্রতি আমার শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার বিশাল জায়গা মুহূর্তে তৈরি হয়ে যায়। ১৯৩০ সালের ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁওর সোনাপুকুর গ্রামে নানার বাড়িতে জন্ম এবং ঈদগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় নিজ মাকে ছেড়ে পিতার কাছে সৎমায়ের সংসারে কলকাতা চলে যান। কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি হয়ে বরাবরই ক্লাসের সেকেন্ড বয় হিসেবে পরিচিতি পান। 'ছন্দ শিখা' নামক হাতে লেখা পত্রিকার মাধ্যমেই তার সাহিত্য জগতে প্রবেশ। মুকুল ফৌজেও যুক্ত ছিলেন। আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত দৈনিক ইত্তেহাদে স্কুলছাত্র শহীদ সাবেরের প্রথম লেখা ছাপা হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে ইত্তেহাদে তার লেখা গল্পও ছাপা হয়েছিল। ইত্তেহাদ পত্রিকার সাহিত্য পাতা দেখতেন জহুরি সাহিত্য সম্পাদক কবি আহসান হাবিব। আহসান হাবিব শহীদ সাবের সম্পর্কে বলেছিলেন, অমন সপ্রতিভ দ্বিতীয় কাউকে তিনি দেখেননি। বয়সের তুলনায় অসামান্য পরিপক্ব প্রতিভাধর শহীদ সাবের। দেশভাগে সপরিবারে তারা পূর্ববাংলায় চলে আসেন। চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন সাবের। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে আইএ পড়ার সময়ে তখনকার একমাত্র অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল ও কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনে যুক্ত হয়ে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি প্রগতিশীল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রজুড়ে তখন কমিউনিস্টদের ওপর চলছে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সেই ধারাবাহিকতায় ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীদের ওপর ইচ্ছেমতো যখন-তখন হামলা চালায়। ১৯৫০ সালে ছাত্র ফেডারেশনের এক সমাবেশে বক্তৃতারত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন। সুনির্দিষ্ট কোনো মামলা না দিয়ে নিরাপত্তা বন্দি শহীদ সাবেরকে চট্টগ্রাম কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরে তাকে আতঙ্কের জেলখ্যাত রাজশাহী জেলে পাঠানো হয়। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে সেনাবাহিনী লেলিয়ে রাজশাহী জেলে হত্যা করা হয় সাতজন কমিউনিস্ট রাজবন্দিকে এবং এতে আহত হন শতাধিক রাজবন্দি। বন্দিদের আতঙ্কগ্রস্ত করা এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার জন্যই দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে কমিউনিস্ট বন্দিদের রাজশাহী কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। রাজশাহী জেলের সর্বকনিষ্ঠ রাজবন্দি ছিলেন শহীদ সাবের। রাজবন্দিরা তাকে খুব স্নেহ করতেন। এ তরুণের নানা আবদার-উপদ্রব হাসিমুখে সহ্য করতেন তারা, বিশেষ করে ঢাকার রেলশ্রমিক আন্দোলনের নেতা সুকুমার চক্রবর্তী। ১৯৫১ সালে রাজশাহী জেল থেকে আইএ পাস করেন সাবের। রাজশাহী জেল থেকে ঢাকার সেন্ট্রাল জেলে বদলি হয়ে আসা বন্দি শহীদ সাবেরকে তার বাবা বন্ড দিয়ে মুক্তির উদ্যোগ নিলেও শহীদ সাবেরের অসম্মতি ও বিরোধিতার কারণে তা ভেস্তে যায়। সচিবালয়ে কর্মরত তার বাবা অনেক চেষ্টার পর যুক্তফ্রন্ট সরকারের কল্যাণে তাকে জেল থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। শর্ত ছিল ঢাকা থেকে কোথাও যাওয়া চলবে না। যেতে হলে গোয়েন্দা বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। বিনা বিচারে চার বছর জেল খেটে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের শাসনামলে ছাড়া পান তিনি। ছাড়া পেয়ে ১০/জে, আজিমপুর কলোনিতে বাবার সংসারে ফিরে আসেন। সংসারের আর্থিক সহযোগিতার জন্য আজিমপুরে ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন। সাবের একই সঙ্গে জগন্নাথ কলেজের নৈশ শাখায় বিএ ক্লাসে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে বিএ পাস করেন। চট্টগ্রাম জেলে বসেই বন্দিজীবনের কাহিনি নিয়ে লিখেছিলেন 'আরেক দুনিয়া থেকে' নামক রোজনামচা। লেখাটি গোপনে জেল থেকে পাচার হয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত নতুন সাহিত্যের চৈত্র ১৩৫৭ সংখ্যায় ছাপা হয়। লেখাটি নিয়ে চারদিকে সাড়া পড়েছিল। কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখাটি পড়ে মুগ্ধ হয়ে পত্রিকার সম্পাদককে চিঠি লিখে এ নতুন প্রতিভার আগমনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। নিরাপত্তা বন্দি বলেই স্বনামে লেখা ছাপানোর অধিকার তার ছিল না। 'আরেক দুনিয়া থেকে' ছাপা হয়েছিল 'জামিল হোসেন' ছদ্মনামে। কবি ও কথাসাহিত্যিক হিসেবে সেই তার যাত্রা শুরু, কিন্তু দুর্ভাগ্য, ১৯৫৪ থেকে '৫৮—মাত্র এ কটি বছরই মূলত তিনি লিখতে পেরেছিলেন। বিএ পাস করে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। সংবাদের সম্পাদকীয় তিনিই লিখতেন এবং দেখতেন সাহিত্য পাতাও। সংবাদে চাকরিরত অবস্থায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসে (সিএসএস) অন্তর্গত সিএসপি পরীক্ষায় বসেন; লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। চোখের সমস্যার অজুহাতে নিশ্চিত সরকারি চাকরি থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়। পরে তিনি ফেডারেল ইনফরমেশন সার্ভিসে পরীক্ষা দিয়ে পুরো পাকিস্তানে প্রথম স্থান অধিকার করেন। কিন্তু তিনি ছিলেন জেলখাটা কমিউনিস্ট, তার সম্পর্কে গোয়েন্দা রিপোর্ট সন্তোষজনক ছিল না। এ কারণে তাকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি বিস্তারিত জানালে তিনি এ ব্যাপারে ওভার রুল করে, নিয়োগপত্র প্রদানের সরকারি নির্দেশের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সেই রাতেই সামরিক শাসন জারির মধ্য দিয়ে জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করেন। শহীদ সাবেরের পরিবার ও শ্রেণির আকাঙ্ক্ষা এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের গণতন্ত্র একই সঙ্গে ভেস্তে যায়। শহীদ সাবেরের লক্ষ্য-প্রত্যাশা-প্রাপ্তি ছিল সমন্বয়হীন, যা তাকে হতাশ করে তুলেছিল। ব্যক্তিগত জীবনের প্রেমও ব্যর্থ হয়ে যায়। সেই জমিদার কন্যার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। হতাশার ধূম্রজাল তাকে চারদিক থেকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। ১৯৫৮ সালের শেষদিকে তার মানসিক বিপর্যয় শুরু হয়। ময়মনসিংহের মামাতো বোনের বাড়িতে নিভৃতে পুড়িয়ে ফেলেন প্রেমিকার নীল কাগজের চিঠিগুলো। চিঠি পোড়ানো প্রসঙ্গে মন্তব্য ছিল, 'বাজে জিনিস পুড়িয়ে ফেলাই ভালো।' নিজের অবস্থানে টিকে থাকতে না পারার যন্ত্রণায় জীবনের প্রতি তীব্র অনীহা কিংবা ঘৃণায় নিজের মধ্যে গুটিয়ে যান শহীদ সাবের। তার সেই মানসিক বিপর্যয়কালে সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই উদ্যোগ নিয়ে তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। তার বন্ধু প্রয়াত সাংবাদিক ফাউজুল করীম এবং মন্টু খান তাকে সঙ্গে নিয়ে পাবনার হাসপাতালে রেখে আসেন। চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলেও চিকিৎসার ধারাবাহিকতার অভাবে তার আর সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব হয়নি। পরে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে খাওয়া, পেটিকোট, আন্ডারওয়্যার পরে রাস্তায় বের হয়ে যাওয়ার মতো বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনাও ঘটেছিল। নোংরা ও অপরিষ্কার থাকা তার মজ্জাগত হয়ে যায়। বেগম সুফিয়া কামাল এবং ওয়াহিদুল হক-সন্জীদা খাতুন তাকে পরিচ্ছন্ন স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নিজেদের বাড়িতে নিয়েও রাখতে পারেননি। ফাঁকি দিয়ে সেখান থেকেও তিনি পালিয়ে যান। তার জীবন হয়ে পড়ে অসংলগ্ন এবং প্রথাবিরোধী। বংশালের সংবাদ অফিসই হয়ে উঠেছিল সাবেরের একমাত্র আশ্রয়স্থল। সারাদিন উদ্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরে রাতে ঘুমাতে যেতেন সংবাদ অফিসে। মেঝে, বারান্দা, হাতলবিহীন চেয়ার ছিল তার ঘুমের স্থান। সংবাদ অফিস থেকে তাকে প্রতিদিন দুই টাকা দেওয়া হতো। প্রেস ক্লাবে খাওয়া ছিল ফ্রি। ফ্রি খাওয়ার বেলায়ও ছিলেন অনিয়মিত। সিগারেট, একমাত্র সিগারেট খেতেই সবার কাছে হাত পাততেন নির্দ্বিধায়। জীবনের বোঝা বয়ে বয়ে উদ্‌ভ্রান্ত জীবনে অভ্যস্ত শহীদ সাবের মূলত বন্ধুদের সাহায্যেই বেঁচে ছিলেন। ছিল না বোধ। ছিল না স্বপ্নপূরণের সামান্য মানসিক শক্তি। কেউ খাওয়ালে খেতেন নয়তো না খেয়েই থাকতেন। অনাহার ছিল তার নিত্যসঙ্গী। ভালোবাসাহীন সামাজিক-পারিবারিক বিচ্ছিন্ন শহীদ সাবের ঘৃণায়-যন্ত্রণায় নিজের প্রতি নিজে প্রতিশোধ নিয়েছিলেন কি? দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া পাগলামি না করেও পাগলের খ্যাতি-দুর্নাম নিয়ে ১৯৬৭ থেকে '৭০ সাল পর্যন্ত কবিতা লিখতে পেরেছিলেন কীভাবে? যদি পাগলই হবেন তবে তাকে নিয়ে পত্রিকায় কেউ কিছু লিখলে তার প্রতিবাদে বলতেন কীভাবে 'আমি কি পণ্য? আমার কথা লিখেছেন কেন?'। দৈনিক পাকিস্তান (দৈনিক বাংলা) পত্রিকার অফিসে গিয়ে কবি শামসুর রাহমানকে বলেছিলেন, 'আপনাকে কিন্তু এক বোতল মদের মতো লাগছে। বেশ তাজা। খুব ফেনা আছে তাই না? আমি ভেবেছিলাম ওয়ান শুড নট বি দ্য হ্যাসব্যান্ড অব রিস্কি হুইস্কি।' পরিবার-পরিজন থেকেও মানুষটি পাননি যথাযথ ভালোবাসা ও সহমর্মিতা। তার সুচিকিৎসা হয়নি। ভালো হওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা থাকলেও সুচিকিৎসা ও পরিচর্যার অভাবে তার আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। বাবা মৃত্যুপথযাত্রী, শোনামাত্র সাবেরের অনুজ পেয়ারু বাবার কাছে ছুটে গেলেন। যাওয়ামাত্র বাবার প্রশ্ন 'সাবের কোথায়? তাকে নিয়ে আসোনি কেন?' উত্তরে পেয়ারু বলেছিলেন, 'সাবের ভাইকে আনতে গেলে আমারই আসা হতো না। সে কখন কোথায় থাকে তার হদিস পাওয়া কারও পক্ষে সম্ভব না।' বাবার অন্তিম কথা ছিল—'আমার জীবনটা ব্যর্থতায় পরিপূর্ণ। যা চেয়েছি তা পাইনি। তোমাদের যা করতে চেয়েছি তাও পারলাম না।' পরিবারের আকাঙ্ক্ষার প্রতি নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও উপায় ছিল না সাবেরের। পরিবারের প্রতি দায়িত্বসচেতন ছিলেন বলেই ওয়েস্ট এন্ড স্কুলে শিক্ষকতা এবং সংবাদে চাকরি করে বেহিসেবি বাবাকে নিয়মিত অর্থ দিতেন। সৎমায়ের পাঁচ ছেলেমেয়ের সংসারের দায়িত্ব পালনে ছিলেন না উদাসীন। অনুজ পেয়ারু ম্যাট্রিক পাস করেই চাকরিতে ঢুকে যান। চাকরিরত অবস্থায় আইকম ও বিএ পাস করেন। বাবার সংসারের অভাব দূর করতে দুই ভাই ছিলেন সদা তৎপর। খেলার বয়সে খেলাধুলা পর্যন্ত করতে পারেননি। সৎ-ভাইবোনদের অসম্ভব ভালোবাসতেন। তাদের দুই ভাইয়ের কোলেপিঠে তারা বড় হয়েছে। অথচ এই সৎ-ভাইবোনেরা মিলে ১৯৭০ সালে বাবার জাল স্বাক্ষরে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের চন্দনপুরার পৈতৃক বাড়ি থেকে শহীদ সাবের ও তার অনুজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক (পার্সোনাল) সাইফুল্লাহ পেয়ারুকে চিরবঞ্চিত করেছে। পেয়ারু মামলা করলেও মামলার দীর্ঘসূত্রতায় আজ অবধি পৈতৃক ভিটার অধিকার ফিরে পাননি। ২৫ মার্চের গণহত্যা-পরবর্তী সান্ধ্য আইন শিথিল হওয়ামাত্র পুরানা পল্টন লেনের দাদার বাড়ির সবাই ঢাকায় আমাদের পুরো পরিবার আত্মরক্ষার্থে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কুশিয়ারবাগে আশ্রয় নিয়েছিল। সাবেরের অনুজ পেয়ারুও সঙ্গে ছিলেন। অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদের মায়ের কাছে জেনেছিলাম, সাবের নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দাদার বাড়িতে এসেছিলেন। তালাবন্ধ শূন্য বাড়িতে কাউকে না পেয়ে অগত্যা নিঃশব্দে ফিরে গেছেন আদি ঠিকানা বংশালের সংবাদ অফিসে। ১৯৭১-এর ৩১ মার্চ সকালে পাকিস্তানি হানাদাররা প্রগতিশীল ও জাতীয় চেতনার দৈনিক সংবাদ অফিস আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। সংবাদের স্থায়ী বাসিন্দা ঘুমন্ত শহীদ সাবের সেই আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান। তার দেহের সৎকার তো দূরের কথা, শনাক্ত পর্যন্ত করা যায়নি। পুরো সংবাদ অফিসের সঙ্গে ছাই-ভস্ম হয়ে যান দৈহিকভাবে বেঁচে থাকা সাবের। রাষ্ট্রীয় খড়গে জেলফেরত শহীদ সাবের রাজনীতিতে যুক্ত থাকতে পারেননি। সাংবাদিকতা পেশাও তাকে দিতে পারেনি আর্থিক নিশ্চয়তা। পরিবার ও শ্রেণির চাপে এবং ব্যক্তিগত জীবনের প্রেমকে সফল করতে ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছুটতে হয়েছে আত্মপ্রতিষ্ঠার পিছু। শাসক সহযোগী সরকারি আমলা হওয়ার জন্য নিজের স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে সিএসপি এবং সিআইএস পরীক্ষা দিতে হয়েছে। নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ধরনা পর্যন্ত দিতে বাধ্য হয়েছেন। নিজের মতাদর্শিক চিন্তা-চেতনার আত্মাহুতির মানসিক যন্ত্রণা-কষ্টে শহীদ সাবের দ্রোহী হয়ে বদলে গিয়েছিলেন। করেছিলেন ভিন্নমাত্রার নীরব প্রতিবাদ। মতাদর্শিক অঙ্গীকার এবং নিজস্ব সত্তার বিকাশের বিপরীতে পিতা-পরিবার-শ্রেণি হতে ব্যক্তিগত প্রেম তাকে ঠেলে দিয়েছিল সনাতনী প্রতিষ্ঠার পেছনে, যা তার পক্ষে ছিল অসহনীয়। ইচ্ছের বিরুদ্ধে চলতে গিয়ে মতাদর্শ ও বিবেক দংশনে বৈরী সমাজব্যবস্থার চাপে শহীদ সাবের অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যান। শ্রেণির চাপে ক্ষত-বিক্ষত শহীদ সাবের নীতি ও মূল্যবোধের এ বিচ্যুতি সহ্য করতে পারেননি। তাই ভেঙেছেন, কিন্তু মচকে যাননি। আজকের ন্যায় সাংবাদিকতা তখন পেশা হিসেবে নিশ্চিত কিছু ছিল না। অনিয়মিত বেতন প্রাপ্তির বিড়ম্বনায় বাবা-মা-ভাইবোনদের ঢাকায় বাসা ভাড়া করে এনেও সংসারের ব্যয় মেটানো সম্ভব হয়নি। সে জন্য তার বাবা আত্মীয়-পরিজনদের কাছে উপহাস করে বলতেন—'সাবের আমাদের অনাহারে না খাইয়ে মারার জন্য ঢাকায় এনেছে।' আর্থিক অনিশ্চয়তায় পুরো পরিবারকে চট্টগ্রাম ফেরত পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। সাবের নিজের স্বাধীন স্বকীয়তায় চলতে পারেননি। তিনি যেমনটি চেয়েছিলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা তাকে অন্য পথে ঠেলে দিয়েছিল। যে পথের বিরুদ্ধে ছিল তার দৃষ্টিভঙ্গি ও মতাদর্শ। শ্রেণি উত্তরণের মোহ কিংবা নেশা তার ছিল না। থাকার কথাও নয়। চাপিয়ে দেওয়া নানা চাপে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় শহীদ সাবেরকে পাগলের খ্যাতি নিয়ে বাঁচতে হয়েছে এবং সবার অলক্ষ্যে পুড়ে মরতে হয়েছে। তার নির্লোভ-নির্মোহ সমষ্টিগত জগৎটিকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েই জীবন ও সৃষ্টির জগৎ থেকে স্বেচ্ছায় হারিয়ে গেছেন। নিজে হেরে সবাইকে হারিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাই আজকের এই লেখায় প্রত্যাশা করছি- শহীদ সাবেরের ভাগ্য যেন আর কোন সৃষ্টিশীল মানুষের জীবনে না আসে!
আজিমপুর কলোনিতে থাকতেন। সালামতউল্লাহ নানার বড় ছেলে সাবের। পেয়ারুর বড় ভাই। পেয়ারু ভাইকে চিনি-জানি কিন্তু সাবের নামের তার এই ভাইকে চিনতাম না। নাম এ কে এম শহীদুল্লাহ, ডাক নাম সাবের। শহীদ সাবের নামে লেখক পরিচিতি।
দুধ পটল রেঁধেছেন কখনো?
গরমের সবজি হিসেবে পটল বেশ পরিচিত। পটলে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় খেয়েও খুব স্বস্তি পাওয়া যায়। তাই বলে প্রতিদিন কি পটল ভাজা, পটলের তরকারি খেতে ভালো লাগে! তাই আজ একদম সাধারণ, খুব দ্রুত রান্না করা যায় কিন্তু খেতে অসাধারণ দুধ পটলের রেসিপি বর্ণনা করব। দুধ পটল রান্নার জন্য লাগবে কচি পটল। আধা কেজি পটল নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে ভালোভাবে। এরপর দুপাশ দিয়ে হালকা চিরে নিতে হবে যেন মশলা ভালো করে ঢোকে। এবার একটি কড়াইয়ে পরিমাণমতো তেল দিয়ে পটলগুলো ভাজতে হবে সোনালি হয়ে আসা পর্যন্ত। এবার তুলে আলাদা প্লেটে রাখতে হবে। সেই তেলেই দুটি এলাচ, দুটি দারচিনি, দুটি লবঙ্গ দিয়ে ফোড়ন দিতে হবে। এক চা চামচ ধনিয়া গুঁড়ো ও আধা চা চামচ হলুদের গুঁড়ো দিতে হবে। কাঁচা গন্ধ চলে গেলে দিয়ে দিতে হবে সেই আগে থেকে ভেজে রাখা পটল। মশলার সঙ্গে পটল ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে মিনিট পাঁচেক। এ পর্যায়ে যোগ করতে হবে স্বাদমতো লবণ। এবার যোগ করতে হবে দুধ। আধা কেজি পটলের জন্য আড়াইশ গ্রাম দুধ যোগ করতে হবে। ঢাকনা খুলে রান্না করতে হবে ততক্ষণ, যতক্ষণ না পর্যন্ত দুধ ঘন হয়ে আসে। দুধ খানিকটা ঘন হয়ে আসলে যোগ করতে হবে এক চামচ চিনি। চুলার আঁচ রাখতে হবে মাঝারি। দুধ পটল নামানোর আগে ৫-৬ টা কাঁচা মরিচ মাঝখান থেকে চিরে ছড়িয়ে দিতে পারেন। আর রান্নায় শাহি ভাব আনতে চাইলে এক চা চামচ ঘি দুধ পটলের ওপর দিয়ে ঢাকনা দিয়ে দিতে হবে। হালকা মশলার এই দুধ পটল গরম গরম ভাত বা পোলাওয়ের সঙ্গে দারুণ লাগে খেতে।
গরমের সবজি হিসেবে পটল বেশ পরিচিত। পটলে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় খেয়েও খুব স্বস্তি পাওয়া যায়। তাই বলে প্রতিদিন কি পটল ভাজা, পটলের তরকারি খেতে ভালো লাগে! তাই আজ একদম সাধারণ, খুব দ্রুত রান্না করা যায় কিন্তু খেতে অসাধারণ দুধ পটলের রেসিপি বর্ণনা করব।
কুকুর কামড়ালে কী করবেন
ভালোবেসে বাড়িতে কুকুর পোষেন অনেকেই। আবার নিত্যদিনের চলার পথেও কুকুরের দেখা মেলে হরহামেশাই। প্রভুভক্ত হিসেবে খ্যাত বেশিরভাগই কুকুরের শরীরেই রয়েছে র‌্যাবিস ভাইরাস। র‌্যাবিস আক্রান্ত কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে হতে পারে জলাতঙ্ক। কুকুর কামড়ালে বা আঁচড় দিলে করণীয় সম্পর্কে জানিয়েছেন মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান। কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে কী হয় ডা. মিজানুর রহমান বলেন, কুকুর হচ্ছে রেবিড অ্যানিমেল। বিড়াল, শিয়াল, অন্যান্য হিংস্র বণ্যপ্রাণী এবং বাদুড় এগুলো সবই রেবিড অ্যানিমেল। রেবিড অ্যানিমেল কামড় বা আঁচড় দিলে জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে র‌্যাবিস আক্রান্ত কুকুর কামড় দিলে ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। তবে কুকুর কামড় দিলেই যে জলাতঙ্ক রোগ হবে তা কিন্তু ঠিক নয়, কুকুরের মধ্যে জলাতঙ্কের জীবাণু থাকতে হবে। র‌্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুরের লালা থেকে ভাইরাসটি ছড়ায়। কুকুরের লালা যদি কামড়, আঁচড় বা শরীরের ক্ষতস্থানের সংস্পর্শে আসে আর লালার মধ্যে যদি র‌্যাবিস ভাইরাস থাকে তাহলেই জলাতঙ্ক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেহেতু কুকুর রেবিড প্রাণী, সেহেতু তার মধ্যে র‌্যাবিস ভাইরাস থাকতেই পারে। তাই কুকুর কামড় দিলে ঝুঁকি না নিয়ে অবশ্যই দেরি না করে জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে। জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ডা. মিজানুর রহমান বলেন, জলাতঙ্কের ইনকিউবেশন পিরিয়ড থাকে অর্থাৎ কুকুরের কামড়ের কারণে র‌্যাবিস ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর লক্ষণ বা উপসর্গের বিকাশে যে সময় লাগে সেটি এক বছর পর্যন্তও হতে পারে। তবে সাধারণভাবে এই সময়কাল ৩ মাস ধরা হয়।  অনেক সময় ইনকিউবেশন পিরিয়ড ক্ষতস্থান কোথায় তার ওপর নির্ভর করে। কুকুরের কামড় বা আঁচড় যদি ঘাড় বা মাথায় হয় তাহলে ইনকিউবেশন পিরিয়ড কমে আসবে। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের যত কাছাকাছি কামড় বা আঁচড় দিবে তত তার  ইনকিউবেশন পিরিয়ড হ্রাস-বৃদ্ধি হবে। জলাতঙ্ক রোগ হলে প্রথম যে লক্ষণ দেখা দেয় সেটি হলো হাইড্রোফোবিয়া মানে পানি ভীতি দেখা দেয়। রোগী পানি খেতে পারেনা। পরবর্তীতে অন্যান্য লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। এরোফোবিয়া দেখা দেয় যার কারণে রোগী বাতাস সহ্য করতে পারেনা। আলোও সহ্য করতে পারেনা, অস্বাভাবিক আচরণ করে, মস্তিষ্কের প্রদাহ দেখা দেয়, রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। আরওক্যানসার কেন হয়, প্রতিরোধে করণীয় রোগীর মধ্যে এসব লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাকে জলাতঙ্ক বলা হয়। আর জলাতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোগী মারা যায়। কুকুর কামড়ালে বা আঁচড় কাটলে করণীয় ডা. মিজানুর রহমান বলেন, কুকুর কামড় দিলে বা আঁচড় কাটলে যদি কোন ধরনের ক্ষত তৈরি হয় তাহলে ক্ষতস্থান তাৎক্ষণিকভাবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় নিয়ে কাপড় ধোয়ার ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ফেনা উঠিয়ে ধুতে হবে। আতঙ্কিত হওয়া যাবে না, কুকুরের কামড় বা আঁচড় দেয়ার ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে অবশ্যই টিকা নিতে হবে। রাজধানীর মহাখালীতে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল জলাতঙ্ক রোগীদের জন্য কেন্দ্রীয় সেন্টার। সেখান থেকে টিকা নিতে পারবেন। এর পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ ৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়। ঢাকার বাইরে জেলা হাসপাতাল এবং প্রায় ২০০ উপজেলা হেড কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা নিতে হবে, কুকুরের কামড় ও আঁচড়ে ক্ষতস্থানের ক্যাটাগরির ভিত্তিতে। আরওটাইফয়েড কীভাবে ছড়ায়, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী ক্ষতস্থানের ক্যাটাগরি কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের ফলে সৃষ্ট ক্ষতস্থানকে ৩টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। যেমন- ক্যাটাগরি ১: শরীরে যেখানে কোনো ক্ষতস্থান থাকে না। কুকুরের সংস্পর্শে আসা, কুকুরকে খাওয়ানোর সময়, আদরের সময় লালা লেগে গেছে কিন্তু কোনো কামড় বা আঁচড় হয়নি বা কোনো ক্ষতস্থানে লালা লাগেনি সেক্ষেত্রে এটি ক্যাটাগরি ১। এর জন্য টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। জায়গাগুলো সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই হবে। ক্যাটাগরি ২: এক্ষেত্রে কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের ফলে শরীরে ক্ষত থাকে, কিন্তু রক্তপাত হয় না। এর জন্য অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) নিতে হবে। ক্যাটাগরি ৩: এক্ষেত্রে শরীরে ক্ষত থাকে এবং রক্তপাত হয়। এ ছাড়া মাথায়, বুকে বা ঘাড়ে কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে রক্তপাত হোক বা না হোক, সেটিকে ক্যাটাগরি ৩ ধরা হয়। কারণ এই জায়গাগুলো মস্তিষ্কের একদম কাছাকাছি। র‌্যাবিস ভাইরাসটি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে ফলে মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রে রোগীকে জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে। বিশেষ করে ক্যাটাগরি ৩ বাইটের জন্য অ্যান্টি র‌্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আরআইজি) ইনজেকশনও নিতে হবে। ডা. মিজানুর রহমান বলেন, জলাতঙ্ক শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য, আবার শতভাগ প্রাণঘাতী। র‌্যাবিস আক্রান্ত কুকুর কামড় বা আঁচড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে টিকা নিলে জলাতঙ্ক শতভাগ প্রতিরোধ করা যাবে। আর তা না হলে মৃত্যু অনিবার্য। তাই শুধু টিকার মাধ্যমেই সুরক্ষা সম্ভব। আরওডিভিটি বা শিরায় রক্ত জমাট বাঁধে কেন, করণীয় কী ডা. মিজানুর রহমান বলেন, জলাতঙ্কের ইনকিউবেশন পিরিয়ড থাকে অর্থাৎ কুকুরের কামড়ের কারণে র‌্যাবিস ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর লক্ষণ বা উপসর্গের বিকাশে যে সময় লাগে সেটি এক বছর পর্যন্তও হতে পারে। তবে সাধারণভাবে এই সময়কাল ৩ মাস ধরা হয়।  অনেক সময় ইনকিউবেশন পিরিয়ড ক্ষতস্থান কোথায় তার ওপর নির্ভর করে। কুকুরের কামড় বা আঁচড় যদি ঘাড় বা মাথায় হয় তাহলে ইনকিউবেশন পিরিয়ড কমে আসবে। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের যত কাছাকাছি কামড় বা আঁচড় দিবে তত তার  ইনকিউবেশন পিরিয়ড হ্রাস-বৃদ্ধি হবে। জলাতঙ্ক রোগ হলে প্রথম যে লক্ষণ দেখা দেয় সেটি হলো হাইড্রোফোবিয়া মানে পানি ভীতি দেখা দেয়। রোগী পানি খেতে পারেনা। পরবর্তীতে অন্যান্য লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। এরোফোবিয়া দেখা দেয় যার কারণে রোগী বাতাস সহ্য করতে পারেনা। আলোও সহ্য করতে পারেনা, অস্বাভাবিক আচরণ করে, মস্তিষ্কের প্রদাহ দেখা দেয়, রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। রোগীর মধ্যে এসব লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাকে জলাতঙ্ক বলা হয়। আর জলাতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোগী মারা যায়। কুকুর কামড়ালে বা আঁচড় কাটলে করণীয় ডা. মিজানুর রহমান বলেন, কুকুর কামড় দিলে বা আঁচড় কাটলে যদি কোন ধরনের ক্ষত তৈরি হয় তাহলে ক্ষতস্থান তাৎক্ষণিকভাবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় নিয়ে কাপড় ধোয়ার ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ফেনা উঠিয়ে ধুতে হবে। আতঙ্কিত হওয়া যাবে না, কুকুরের কামড় বা আঁচড় দেয়ার ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে অবশ্যই টিকা নিতে হবে। রাজধানীর মহাখালীতে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল জলাতঙ্ক রোগীদের জন্য কেন্দ্রীয় সেন্টার। সেখান থেকে টিকা নিতে পারবেন। এর পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ ৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়। ঢাকার বাইরে জেলা হাসপাতাল এবং প্রায় ২০০ উপজেলা হেড কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা নিতে হবে, কুকুরের কামড় ও আঁচড়ে ক্ষতস্থানের ক্যাটাগরির ভিত্তিতে। আরওটাইফয়েড কীভাবে ছড়ায়, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী ক্ষতস্থানের ক্যাটাগরি কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের ফলে সৃষ্ট ক্ষতস্থানকে ৩টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। যেমন- ক্যাটাগরি ১: শরীরে যেখানে কোনো ক্ষতস্থান থাকে না। কুকুরের সংস্পর্শে আসা, কুকুরকে খাওয়ানোর সময়, আদরের সময় লালা লেগে গেছে কিন্তু কোনো কামড় বা আঁচড় হয়নি বা কোনো ক্ষতস্থানে লালা লাগেনি সেক্ষেত্রে এটি ক্যাটাগরি ১। এর জন্য টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। জায়গাগুলো সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই হবে। ক্যাটাগরি ২: এক্ষেত্রে কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের ফলে শরীরে ক্ষত থাকে, কিন্তু রক্তপাত হয় না। এর জন্য অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) নিতে হবে। ক্যাটাগরি ৩: এক্ষেত্রে শরীরে ক্ষত থাকে এবং রক্তপাত হয়। এ ছাড়া মাথায়, বুকে বা ঘাড়ে কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে রক্তপাত হোক বা না হোক, সেটিকে ক্যাটাগরি ৩ ধরা হয়। কারণ এই জায়গাগুলো মস্তিষ্কের একদম কাছাকাছি। র‌্যাবিস ভাইরাসটি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে ফলে মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রে রোগীকে জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে। বিশেষ করে ক্যাটাগরি ৩ বাইটের জন্য অ্যান্টি র‌্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আরআইজি) ইনজেকশনও নিতে হবে। ডা. মিজানুর রহমান বলেন, জলাতঙ্ক শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য, আবার শতভাগ প্রাণঘাতী। র‌্যাবিস আক্রান্ত কুকুর কামড় বা আঁচড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে টিকা নিলে জলাতঙ্ক শতভাগ প্রতিরোধ করা যাবে। আর তা না হলে মৃত্যু অনিবার্য। তাই শুধু টিকার মাধ্যমেই সুরক্ষা সম্ভব। আরওডিভিটি বা শিরায় রক্ত জমাট বাঁধে কেন, করণীয় কী ডা. মিজানুর রহমান বলেন, কুকুর কামড় দিলে বা আঁচড় কাটলে যদি কোন ধরনের ক্ষত তৈরি হয় তাহলে ক্ষতস্থান তাৎক্ষণিকভাবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় নিয়ে কাপড় ধোয়ার ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ফেনা উঠিয়ে ধুতে হবে। আতঙ্কিত হওয়া যাবে না, কুকুরের কামড় বা আঁচড় দেয়ার ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে অবশ্যই টিকা নিতে হবে। রাজধানীর মহাখালীতে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল জলাতঙ্ক রোগীদের জন্য কেন্দ্রীয় সেন্টার। সেখান থেকে টিকা নিতে পারবেন। এর পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ ৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়। ঢাকার বাইরে জেলা হাসপাতাল এবং প্রায় ২০০ উপজেলা হেড কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা নিতে হবে, কুকুরের কামড় ও আঁচড়ে ক্ষতস্থানের ক্যাটাগরির ভিত্তিতে। ক্ষতস্থানের ক্যাটাগরি কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের ফলে সৃষ্ট ক্ষতস্থানকে ৩টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। যেমন- ক্যাটাগরি ১: শরীরে যেখানে কোনো ক্ষতস্থান থাকে না। কুকুরের সংস্পর্শে আসা, কুকুরকে খাওয়ানোর সময়, আদরের সময় লালা লেগে গেছে কিন্তু কোনো কামড় বা আঁচড় হয়নি বা কোনো ক্ষতস্থানে লালা লাগেনি সেক্ষেত্রে এটি ক্যাটাগরি ১। এর জন্য টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। জায়গাগুলো সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই হবে। ক্যাটাগরি ২: এক্ষেত্রে কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের ফলে শরীরে ক্ষত থাকে, কিন্তু রক্তপাত হয় না। এর জন্য অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) নিতে হবে। ক্যাটাগরি ৩: এক্ষেত্রে শরীরে ক্ষত থাকে এবং রক্তপাত হয়। এ ছাড়া মাথায়, বুকে বা ঘাড়ে কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে রক্তপাত হোক বা না হোক, সেটিকে ক্যাটাগরি ৩ ধরা হয়। কারণ এই জায়গাগুলো মস্তিষ্কের একদম কাছাকাছি। র‌্যাবিস ভাইরাসটি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে ফলে মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রে রোগীকে জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে। বিশেষ করে ক্যাটাগরি ৩ বাইটের জন্য অ্যান্টি র‌্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আরআইজি) ইনজেকশনও নিতে হবে। ডা. মিজানুর রহমান বলেন, জলাতঙ্ক শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য, আবার শতভাগ প্রাণঘাতী। র‌্যাবিস আক্রান্ত কুকুর কামড় বা আঁচড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে টিকা নিলে জলাতঙ্ক শতভাগ প্রতিরোধ করা যাবে। আর তা না হলে মৃত্যু অনিবার্য। তাই শুধু টিকার মাধ্যমেই সুরক্ষা সম্ভব। আরওডিভিটি বা শিরায় রক্ত জমাট বাঁধে কেন, করণীয় কী কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের ফলে সৃষ্ট ক্ষতস্থানকে ৩টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। যেমন- ক্যাটাগরি ১: শরীরে যেখানে কোনো ক্ষতস্থান থাকে না। কুকুরের সংস্পর্শে আসা, কুকুরকে খাওয়ানোর সময়, আদরের সময় লালা লেগে গেছে কিন্তু কোনো কামড় বা আঁচড় হয়নি বা কোনো ক্ষতস্থানে লালা লাগেনি সেক্ষেত্রে এটি ক্যাটাগরি ১। এর জন্য টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। জায়গাগুলো সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই হবে। ক্যাটাগরি ২: এক্ষেত্রে কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের ফলে শরীরে ক্ষত থাকে, কিন্তু রক্তপাত হয় না। এর জন্য অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) নিতে হবে। ক্যাটাগরি ৩: এক্ষেত্রে শরীরে ক্ষত থাকে এবং রক্তপাত হয়। এ ছাড়া মাথায়, বুকে বা ঘাড়ে কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে রক্তপাত হোক বা না হোক, সেটিকে ক্যাটাগরি ৩ ধরা হয়। কারণ এই জায়গাগুলো মস্তিষ্কের একদম কাছাকাছি। র‌্যাবিস ভাইরাসটি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে ফলে মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রে রোগীকে জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে। বিশেষ করে ক্যাটাগরি ৩ বাইটের জন্য অ্যান্টি র‌্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আরআইজি) ইনজেকশনও নিতে হবে। ডা. মিজানুর রহমান বলেন, জলাতঙ্ক শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য, আবার শতভাগ প্রাণঘাতী। র‌্যাবিস আক্রান্ত কুকুর কামড় বা আঁচড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে টিকা নিলে জলাতঙ্ক শতভাগ প্রতিরোধ করা যাবে। আর তা না হলে মৃত্যু অনিবার্য। তাই শুধু টিকার মাধ্যমেই সুরক্ষা সম্ভব।
ভালোবেসে বাড়িতে কুকুর পোষেন অনেকেই। আবার নিত্যদিনের চলার পথেও কুকুরের দেখা মেলে হরহামেশাই। প্রভুভক্ত হিসেবে খ্যাত বেশিরভাগই কুকুরের শরীরেই রয়েছে র‌্যাবিস ভাইরাস। র‌্যাবিস আক্রান্ত কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে হতে পারে জলাতঙ্ক।
আপনার সম্পর্ক ‘ট্রমা বন্ডিং’ নয় তো?
অপি ও শ্রাবণ প্রেমের সম্পর্কে আছে প্রায় দুই বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে অধ্যয়নরত শ্রাবণ অপিকে প্রেম নিবেদন করেন হাজারো মোমবাতি জ্বালিয়ে। অপিও শ্রাবণকে না বলতে পারেননি। সময়ে গড়িয়ে যেতে থাকে। কিন্তু একদিন ফোন না ধরায় শ্রাবণ অপিকে সবার সামনেই তার ফোন ছুড়ে মারেন। পরে অবশ্য ক্ষমাও চেয়ে নেন। কিন্তু এখানেই শেষ হয় না, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে, আর অপি তাকে ক্ষমা করে দেন। অপির আত্মসম্মানে লাগলেও সেই সম্পর্কের বেড়াজাল থেকে কোনোমতেই যেন বের হতে পারেন না। অপরদিকে চার বছরের সায়নের বাবা-মা চাকরি করেন। ছোট সায়নকে রেখে যান দূর সম্পর্কে এক আত্মীয় শারমিনের কাছে। তিনি সায়নকে আদর করলেও মাঝেমাঝে তার বাবা-মার অনুপস্থিতিতে বাজে আচরণ করেন, এমনকি গায়েও হাত তোলেন। আবার কিছুক্ষণ পরেই আদর করে বুকে তুলে নেন। ছোট সায়নও আদরের আশায় সব ভুলে শারমিনের কোলে আশ্রয় নেয়। কারণ বাবা-মার অনুপস্থিতিতে তিনিই তার একমাত্র ভরসা। উপরের নামগুলো ছদ্মনাম হলেও ঘটনাগুলো সত্য। আমরা আমাদের আশপাশে এ ধরনের ঘটনা অহরহই দেখতে পাই। আবার অনেক সময় আমরাই এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হই। কাছের মানুষ থেকে প্রতিনিয়ত অবহেলা, গ্যাস লাইটিং, মানসিক নির্যাতন, এমনকি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়া সত্ত্বেও তা মেনে নিয়ে পুনরায় সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাকে বলা হয় ট্রমা বন্ডিং। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুব আজাদের কাছ থেকে জানব ট্রমা বন্ডিং কী, কেন হয় আর এ থেকে বেরিয়ে আসার উপায়। ট্রমা বন্ডিং কী ডা. মাহবুব আজাদ বলেন, ট্রমা বন্ডিং এমন এক ধরনের মানসিক বন্ধন যেখানে বেশিভাগ ক্ষেত্রে মানুষ যাকে আপন মনে করছে তার কাছ থেকেই আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মূলত একপাক্ষিক বিশ্বাস, ভালোবাসা, নির্ভরশীলতা, অসম সম্পর্ক থেকেই এই ধরনের বন্ধনের সৃষ্টি। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলা হয় স্টকহোম সিনড্রোম। এই ধরনের বন্ডিংয়ে একজন কর্তৃত্ববাদী আচরণ করেন, সঙ্গীকে অপমান করেন। তারপর আবার ভালো ব্যবহার, উপহার, অনুশোচনা প্রকাশের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সম্পর্কে থাকা অপর ব্যক্তিটিও সেটি মেনে নেন। একটা সময় ভাবতে শুরু করেন এটি হয়তো বা সঙ্গীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তিনি চাইলেও সে সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না। তারা নিজেরাই নিজেদের বোঝান যে, তাদের সঙ্গী সংগত কারণে তাদের উপর বিরক্ত ছিলেন। তারা অপব্যবহার এবং ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধির চক্রে আটকে যান, আবার সেই ব্যক্তির কাছে ফিরে আসেন। যদিও তারা জানেন যে, তাদের সঙ্গে ভুল আচরণ করা হচ্ছে। কাদের সঙ্গে হয় সাধারণত ভালোবাসার সম্পর্কে, দাম্পত্যে ট্রমা বন্ডিং দেখা যায়। তাছাড়া শিশু ও কেয়ার গিভার, বন্ধু, অফিসের সহকর্মী, এমনকি পরিবারেও ট্রমা বন্ডিং দেখা যায়। মানুষ সহজে পারস্পরিক বন্ধন ভাঙতে চায় না। যারা খুব দ্রুত অন্যের ওপর মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তাদেরকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ট্রমা বন্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরাও এই ধরনের সম্পর্ক মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। মাহবুব আজাদ বলেন, নারীদের মধ্যে ট্রমা বন্ডিংয়ে থাকার প্রবণতা বেশি। তবে সম্পর্কের মধ্যে যারাই দুর্বল মানসিকতার বা শারীরিকভাবেও দুর্বল, তারাই ট্রমা বন্ডিং মেনে নেন। আরওআপনার সঙ্গে ‘পকেটিং’ হচ্ছে কি না কীভাবে বুঝবেন ট্রমা বন্ডিং কেন হয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুব আজাদ বলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানুষ একটা পর্যায়ে অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সম্পর্কের শুরুতে সুন্দর একটি সময় কাটানো হয় বলে সঙ্গীর ছেড়ে যাওয়ার ভয় তার মধ্যে কাজ করতে শুরু করে। সঙ্গীকে হারিয়ে একাকী হয়ে পড়ার ভয় পান তিনি। তাই তিনি অবচেতন মনে নিজেকে বোঝান, দোষটি আসলে তারই। তাই সব ধরনের অন্যায় আচরণ তিনি মেনে নিতে শুরু করেন। অপরদিকে নিপীড়নকারীও বুঝে যান, মানসিকভাবে তার সঙ্গী তার কাছে কতটুকু অসহায়। উপরে বর্ণনা করা দুটি ঘটনা মনে আছে? ঘটনা দুটি ভিন্ন হলেও এক সূত্রে গাঁথা। অপির মনের শ্রাবণকে হারানোর ভয় কাজ করে। অপরদিকে শিশু সায়নের কাছেও বাবা-মা কর্মক্ষেত্রে চলে যাওয়ার পর একমাত্র শারমিনই ভরসা। এই ভেবে সবকিছু মেনে নেয় সে। আরওবিপরীত স্বভাবের কারো সঙ্গে কি সম্পর্কে জড়ানো উচিত ট্রমা বন্ডিংয়ের লক্ষণ ডা. মাহবুব আজাদ বলেন, ট্রমা বন্ডিংয়ের মূল লক্ষণ হলো নিপীড়নকারী নিজের করা অন্যায়কে যথাযথ বলে দাবি করেন। অপরদিকে থাকা সঙ্গীও এই অন্যায় আচরণ মেনে নেন। এই ঘটনা চক্রাকারে চলতে থাকে। সেই ব্যক্তি অনেক সময় বুঝতেও পারেন না যে তিনি একটি অসুস্থ সম্পর্কের মধ্যে রয়েছেন। যারা এই সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন, তাদের থেকেও ব্যক্তি দূরে থাকার চেষ্টা করেন। নিপীড়নকারী ব্যক্তি এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করেন যেন নিগৃহীত ব্যক্তিটি মনে করতে শুরু করেন, আসলে দোষটি তারই। বন্ধুবান্ধব এমনকি পরিবার থেকেও থেকে অনেকটা আইসোলেশনেই থাকেন তারা। কীভাবে ট্রমা বন্ডিং থেকে বের হবেন দীর্ঘদিন এ ধরনের সম্পর্কের থাকার কারণে আত্মবিশ্বাস, আত্মমর্যাদা কমে যায়। দীর্ঘ সময় ভয়ের মধ্যে থাকার কারণে ডিপ্রেশন, এংজাইটি, নিদ্রাহীনতা, অমনোযোগিতা দেখা যায়। বর্তমান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের সম্পর্ক সবসময়ই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ডা. মাহবুব আজাদ বলেন, এ ধরনের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা বেশ কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ। কারণ আত্মসম্মানবোধ ভেঙে গেলে তা সহজে ফেরত পাওয়া সম্ভব না। তবে এ ধরনের সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার প্রথম শর্ত হলো নিজেকে ভালোবাসা, নিজেকে সম্মান করা, নিজের সঙ্গে সৎ থাকা। এই ঘটনা যদি ঘটে থাকে তবে প্রাথমিক অবস্থাতেই একে প্রতিরোধ করতে হবে। তবে দীর্ঘদিন যদি এই সম্পর্কের মধ্যে বসবাস করে থাকেন, তবে এ থেকে বের হওয়ার জন্য আগে নিজেকে বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে কাছের মানুষ ও পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিন। এ সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার পরেও অতীতের স্মৃতি আপনাকে তাড়া করতে পারে। সে ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তিনি কাউন্সিলিং ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেবেন। আরওওথেলো সিনড্রোম: সঙ্গীকে সন্দেহ করার মানসিক রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সাধারণত ভালোবাসার সম্পর্কে, দাম্পত্যে ট্রমা বন্ডিং দেখা যায়। তাছাড়া শিশু ও কেয়ার গিভার, বন্ধু, অফিসের সহকর্মী, এমনকি পরিবারেও ট্রমা বন্ডিং দেখা যায়। মানুষ সহজে পারস্পরিক বন্ধন ভাঙতে চায় না। যারা খুব দ্রুত অন্যের ওপর মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তাদেরকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ট্রমা বন্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরাও এই ধরনের সম্পর্ক মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। মাহবুব আজাদ বলেন, নারীদের মধ্যে ট্রমা বন্ডিংয়ে থাকার প্রবণতা বেশি। তবে সম্পর্কের মধ্যে যারাই দুর্বল মানসিকতার বা শারীরিকভাবেও দুর্বল, তারাই ট্রমা বন্ডিং মেনে নেন। ট্রমা বন্ডিং কেন হয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুব আজাদ বলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানুষ একটা পর্যায়ে অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সম্পর্কের শুরুতে সুন্দর একটি সময় কাটানো হয় বলে সঙ্গীর ছেড়ে যাওয়ার ভয় তার মধ্যে কাজ করতে শুরু করে। সঙ্গীকে হারিয়ে একাকী হয়ে পড়ার ভয় পান তিনি। তাই তিনি অবচেতন মনে নিজেকে বোঝান, দোষটি আসলে তারই। তাই সব ধরনের অন্যায় আচরণ তিনি মেনে নিতে শুরু করেন। অপরদিকে নিপীড়নকারীও বুঝে যান, মানসিকভাবে তার সঙ্গী তার কাছে কতটুকু অসহায়। উপরে বর্ণনা করা দুটি ঘটনা মনে আছে? ঘটনা দুটি ভিন্ন হলেও এক সূত্রে গাঁথা। অপির মনের শ্রাবণকে হারানোর ভয় কাজ করে। অপরদিকে শিশু সায়নের কাছেও বাবা-মা কর্মক্ষেত্রে চলে যাওয়ার পর একমাত্র শারমিনই ভরসা। এই ভেবে সবকিছু মেনে নেয় সে। আরওবিপরীত স্বভাবের কারো সঙ্গে কি সম্পর্কে জড়ানো উচিত ট্রমা বন্ডিংয়ের লক্ষণ ডা. মাহবুব আজাদ বলেন, ট্রমা বন্ডিংয়ের মূল লক্ষণ হলো নিপীড়নকারী নিজের করা অন্যায়কে যথাযথ বলে দাবি করেন। অপরদিকে থাকা সঙ্গীও এই অন্যায় আচরণ মেনে নেন। এই ঘটনা চক্রাকারে চলতে থাকে। সেই ব্যক্তি অনেক সময় বুঝতেও পারেন না যে তিনি একটি অসুস্থ সম্পর্কের মধ্যে রয়েছেন। যারা এই সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন, তাদের থেকেও ব্যক্তি দূরে থাকার চেষ্টা করেন। নিপীড়নকারী ব্যক্তি এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করেন যেন নিগৃহীত ব্যক্তিটি মনে করতে শুরু করেন, আসলে দোষটি তারই। বন্ধুবান্ধব এমনকি পরিবার থেকেও থেকে অনেকটা আইসোলেশনেই থাকেন তারা। কীভাবে ট্রমা বন্ডিং থেকে বের হবেন দীর্ঘদিন এ ধরনের সম্পর্কের থাকার কারণে আত্মবিশ্বাস, আত্মমর্যাদা কমে যায়। দীর্ঘ সময় ভয়ের মধ্যে থাকার কারণে ডিপ্রেশন, এংজাইটি, নিদ্রাহীনতা, অমনোযোগিতা দেখা যায়। বর্তমান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের সম্পর্ক সবসময়ই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ডা. মাহবুব আজাদ বলেন, এ ধরনের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা বেশ কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ। কারণ আত্মসম্মানবোধ ভেঙে গেলে তা সহজে ফেরত পাওয়া সম্ভব না। তবে এ ধরনের সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার প্রথম শর্ত হলো নিজেকে ভালোবাসা, নিজেকে সম্মান করা, নিজের সঙ্গে সৎ থাকা। এই ঘটনা যদি ঘটে থাকে তবে প্রাথমিক অবস্থাতেই একে প্রতিরোধ করতে হবে। তবে দীর্ঘদিন যদি এই সম্পর্কের মধ্যে বসবাস করে থাকেন, তবে এ থেকে বের হওয়ার জন্য আগে নিজেকে বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে কাছের মানুষ ও পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিন। এ সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার পরেও অতীতের স্মৃতি আপনাকে তাড়া করতে পারে। সে ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তিনি কাউন্সিলিং ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেবেন। আরওওথেলো সিনড্রোম: সঙ্গীকে সন্দেহ করার মানসিক রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুব আজাদ বলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানুষ একটা পর্যায়ে অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সম্পর্কের শুরুতে সুন্দর একটি সময় কাটানো হয় বলে সঙ্গীর ছেড়ে যাওয়ার ভয় তার মধ্যে কাজ করতে শুরু করে। সঙ্গীকে হারিয়ে একাকী হয়ে পড়ার ভয় পান তিনি। তাই তিনি অবচেতন মনে নিজেকে বোঝান, দোষটি আসলে তারই। তাই সব ধরনের অন্যায় আচরণ তিনি মেনে নিতে শুরু করেন। অপরদিকে নিপীড়নকারীও বুঝে যান, মানসিকভাবে তার সঙ্গী তার কাছে কতটুকু অসহায়। উপরে বর্ণনা করা দুটি ঘটনা মনে আছে? ঘটনা দুটি ভিন্ন হলেও এক সূত্রে গাঁথা। অপির মনের শ্রাবণকে হারানোর ভয় কাজ করে। অপরদিকে শিশু সায়নের কাছেও বাবা-মা কর্মক্ষেত্রে চলে যাওয়ার পর একমাত্র শারমিনই ভরসা। এই ভেবে সবকিছু মেনে নেয় সে। ট্রমা বন্ডিংয়ের লক্ষণ ডা. মাহবুব আজাদ বলেন, ট্রমা বন্ডিংয়ের মূল লক্ষণ হলো নিপীড়নকারী নিজের করা অন্যায়কে যথাযথ বলে দাবি করেন। অপরদিকে থাকা সঙ্গীও এই অন্যায় আচরণ মেনে নেন। এই ঘটনা চক্রাকারে চলতে থাকে। সেই ব্যক্তি অনেক সময় বুঝতেও পারেন না যে তিনি একটি অসুস্থ সম্পর্কের মধ্যে রয়েছেন। যারা এই সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন, তাদের থেকেও ব্যক্তি দূরে থাকার চেষ্টা করেন। নিপীড়নকারী ব্যক্তি এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করেন যেন নিগৃহীত ব্যক্তিটি মনে করতে শুরু করেন, আসলে দোষটি তারই। বন্ধুবান্ধব এমনকি পরিবার থেকেও থেকে অনেকটা আইসোলেশনেই থাকেন তারা। কীভাবে ট্রমা বন্ডিং থেকে বের হবেন দীর্ঘদিন এ ধরনের সম্পর্কের থাকার কারণে আত্মবিশ্বাস, আত্মমর্যাদা কমে যায়। দীর্ঘ সময় ভয়ের মধ্যে থাকার কারণে ডিপ্রেশন, এংজাইটি, নিদ্রাহীনতা, অমনোযোগিতা দেখা যায়। বর্তমান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের সম্পর্ক সবসময়ই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ডা. মাহবুব আজাদ বলেন, এ ধরনের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা বেশ কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ। কারণ আত্মসম্মানবোধ ভেঙে গেলে তা সহজে ফেরত পাওয়া সম্ভব না। তবে এ ধরনের সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার প্রথম শর্ত হলো নিজেকে ভালোবাসা, নিজেকে সম্মান করা, নিজের সঙ্গে সৎ থাকা। এই ঘটনা যদি ঘটে থাকে তবে প্রাথমিক অবস্থাতেই একে প্রতিরোধ করতে হবে। তবে দীর্ঘদিন যদি এই সম্পর্কের মধ্যে বসবাস করে থাকেন, তবে এ থেকে বের হওয়ার জন্য আগে নিজেকে বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে কাছের মানুষ ও পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিন। এ সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার পরেও অতীতের স্মৃতি আপনাকে তাড়া করতে পারে। সে ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তিনি কাউন্সিলিং ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেবেন। আরওওথেলো সিনড্রোম: সঙ্গীকে সন্দেহ করার মানসিক রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা ডা. মাহবুব আজাদ বলেন, ট্রমা বন্ডিংয়ের মূল লক্ষণ হলো নিপীড়নকারী নিজের করা অন্যায়কে যথাযথ বলে দাবি করেন। অপরদিকে থাকা সঙ্গীও এই অন্যায় আচরণ মেনে নেন। এই ঘটনা চক্রাকারে চলতে থাকে। সেই ব্যক্তি অনেক সময় বুঝতেও পারেন না যে তিনি একটি অসুস্থ সম্পর্কের মধ্যে রয়েছেন। যারা এই সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন, তাদের থেকেও ব্যক্তি দূরে থাকার চেষ্টা করেন। নিপীড়নকারী ব্যক্তি এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করেন যেন নিগৃহীত ব্যক্তিটি মনে করতে শুরু করেন, আসলে দোষটি তারই। বন্ধুবান্ধব এমনকি পরিবার থেকেও থেকে অনেকটা আইসোলেশনেই থাকেন তারা। কীভাবে ট্রমা বন্ডিং থেকে বের হবেন দীর্ঘদিন এ ধরনের সম্পর্কের থাকার কারণে আত্মবিশ্বাস, আত্মমর্যাদা কমে যায়। দীর্ঘ সময় ভয়ের মধ্যে থাকার কারণে ডিপ্রেশন, এংজাইটি, নিদ্রাহীনতা, অমনোযোগিতা দেখা যায়। বর্তমান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের সম্পর্ক সবসময়ই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ডা. মাহবুব আজাদ বলেন, এ ধরনের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা বেশ কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ। কারণ আত্মসম্মানবোধ ভেঙে গেলে তা সহজে ফেরত পাওয়া সম্ভব না। তবে এ ধরনের সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার প্রথম শর্ত হলো নিজেকে ভালোবাসা, নিজেকে সম্মান করা, নিজের সঙ্গে সৎ থাকা। এই ঘটনা যদি ঘটে থাকে তবে প্রাথমিক অবস্থাতেই একে প্রতিরোধ করতে হবে। তবে দীর্ঘদিন যদি এই সম্পর্কের মধ্যে বসবাস করে থাকেন, তবে এ থেকে বের হওয়ার জন্য আগে নিজেকে বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে কাছের মানুষ ও পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিন। এ সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার পরেও অতীতের স্মৃতি আপনাকে তাড়া করতে পারে। সে ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তিনি কাউন্সিলিং ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেবেন।
অপি ও শ্রাবণ প্রেমের সম্পর্কে আছে প্রায় দুই বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে অধ্যয়নরত শ্রাবণ অপিকে প্রেম নিবেদন করেন হাজারো মোমবাতি জ্বালিয়ে। অপিও শ্রাবণকে না বলতে পারেননি। সময়ে গড়িয়ে যেতে থাকে।
কর্মস্থল ‘টক্সিক’ হলে কী করবেন
আমাদের চারপাশের পরিবেশ মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব ছাড়াও নিজেদের কর্মক্ষেত্র এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। যারা বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত, তাদের দিনের একটা বিরাট অংশ কাটাতে হয় কর্মস্থলে। তাই কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ভালো হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আজকাল একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়, 'টক্সিক কাজের পরিবেশ'। টক্সিক শব্দটির বাংলা বিষাক্ত। যখন একজন মানুষের কর্মস্থলের পরিবেশ নানা কারণে বিষাক্ত হয়ে ওঠে সেটিকেই টক্সিক কাজের পরিবেশ বলা হয়। আপনার কাজের পরিবেশ টক্সিক কি না বুঝবেন কীভাবে টক্সিক কর্মস্থল কর্মীদের জন্য একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে রাখে। দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এরকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সেখানে কাজের যথাযথ মূল্যায়ন হয় না এবং আপনার কাজকে ছোট করে দেখা হতে পারে। এ ধরনের পরিবেশে কাজের মূল্যায়ন না করে তোষামোদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বস এবং অন্যান্য সহকর্মীরা সহযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ না করে বরং ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখেন। সেখানে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ থাকে না এবং মাঝেমাঝে অন্যদের সামনে অপমানও করা হয়। একে অন্যকে সহযোগিতা করার বদলে কীভাবে আরেকজনকে মারপ্যাঁচে ফেলে টপকে যাওয়া যায় সেই চিন্তা কাজ করে এ পরিবেশে। আরওসহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক যেমন হবে এসব বৈশিষ্ট্য থেকেই বোঝা যায় আপনার কর্মক্ষেত্র টক্সিক কি না। টক্সিক কর্মক্ষেত্র মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি আপনার হতাশা, দুশ্চিন্তা ও অবসাদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এরকম পরিবেশে দিনের একটি অংশ কাটালে আপনার মেজাজ খিটমিটে হয়ে যাবে এবং আপনি নিজেও একজন নেতিবাচক মানুষে পরিণত হতে পারেন। সুযোগ থাকলে এরকম পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসাই ভালো। তবে অনেক সময় তা সম্ভব হয় না। এরকম পরিস্থিতিতে কীভাবে এ ধরনের পরিবেশে খাপ খাইয়ে চলবেন তাই জানব আজ। মনে রাখবেন, আপনি একা নন কর্মক্ষেত্রের এরকম পরিবেশের শিকার কেবল আপনি নন, আপনার অনেক সহকর্মীও ভুক্তভোগী। তাই তাদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। একই রকম মানসিকতার মানুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন এবং একসঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করুন। কাজের বাইরে নিজেকে সময় দিন দিনের উল্লেখযোগ্য সময় এরকম পরিবেশে কাটানোর পর নিজেকে কিছুটা সময় দিন। নিজের প্রিয় কাজ করুন। সেটি হতে পারে বই পড়া, রান্না করা, খেলাধুলা করা, সিনেমা দেখা বা শরীরচর্চা করা। কাজের বাইরেও কাজ নিয়ে চিন্তা না করে অবসর সময়টি নিজের জন্য রাখুন। আরওঅফিসে যে ১০ অপেশাদার কাজ এড়িয়ে চলা উচিত নিজের লক্ষ্য স্থির রাখুন টক্সিক কর্মস্থলে সবসময় নেতিবাচক কথা বলে আপনার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। চারপাশের সহযোগিতা না পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলবেন না, বরং প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করুন। নিজের কাজকে নিজেই মূল্যায়ন করুন। আপনার লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যান এবং এক্ষেত্রে নিজেই নিজেকে উৎসাহ দিন। অফিসের বাইরে কাজ নয় কিছু বিষয়ে আপনাকে কঠোর হতে হবে। যেমন অফিসের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অফিসের কোনো ফোন রিসিভ করা বা মেইলের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে অফিসের ফোনটি বন্ধ করে রাখুন। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে অফিসের চিন্তা বাদ দিন। এই সময়টি একান্ত আপনার। পরিবার এবং নিজেকে সময় দিন। তা না হলে অফিসের বিষাক্ত পরিবেশের ভার আপনার ব্যক্তিগত জীবনকেও গ্রাস করে ফেলবে।  ইতিবাচক থাকুন নিজে ইতিবাচক থাকুন এবং ইতিবাচক ধরনের মানুষদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করুন। টক্সিক কর্মস্থলের নেতিবাচক প্রভাব নিজের মধ্যে যেন না আসে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন। ইতিবাচক সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটান, যারা আপনাকে উৎসাহ দেবেন এবং গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। আরওঅন্যের সফল কর্মজীবন দেখে হতাশ, কী করবেন   অফিস আলোচনায় কান দেবেন না অফিসে অহেতুক কোনো বিষয়ে আলোচনা হলে তাতে অংশগ্রহণ করবেন না। কাউকে নিয়ে সমালোচনা বা অপমানজনক কথা হলে সেখান থেকে সরে আসুন। এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় আলোচনা থেকে দূরে থেকে নিজের কাজে মনোযোগী হোন। বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজুন দীর্ঘদিন টক্সিক পরিবেশে কাজ করলে ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তাই সুযোগ থাকলে এ ধরনের পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করাটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। চেষ্টা করুন নিজের অভিজ্ঞতা ও আগ্রহ অনুযায়ী নতুন কর্মস্থল খোঁজার। চাকরি পেয়ে গেলে যোগদানের আগে কিন্তু নতুন অফিসে পরিবেশ কেমন, সেই খোঁজ নিতে ভুলবেন না। তথ্যসূত্র: ফোর্বস আরওব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের ভারসাম্য রাখবেন যেভাবে আরওঅফিসে কেমন পোশাক এসব বৈশিষ্ট্য থেকেই বোঝা যায় আপনার কর্মক্ষেত্র টক্সিক কি না। টক্সিক কর্মক্ষেত্র মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি আপনার হতাশা, দুশ্চিন্তা ও অবসাদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এরকম পরিবেশে দিনের একটি অংশ কাটালে আপনার মেজাজ খিটমিটে হয়ে যাবে এবং আপনি নিজেও একজন নেতিবাচক মানুষে পরিণত হতে পারেন। সুযোগ থাকলে এরকম পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসাই ভালো। তবে অনেক সময় তা সম্ভব হয় না। এরকম পরিস্থিতিতে কীভাবে এ ধরনের পরিবেশে খাপ খাইয়ে চলবেন তাই জানব আজ। মনে রাখবেন, আপনি একা নন কর্মক্ষেত্রের এরকম পরিবেশের শিকার কেবল আপনি নন, আপনার অনেক সহকর্মীও ভুক্তভোগী। তাই তাদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। একই রকম মানসিকতার মানুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন এবং একসঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করুন। কাজের বাইরে নিজেকে সময় দিন দিনের উল্লেখযোগ্য সময় এরকম পরিবেশে কাটানোর পর নিজেকে কিছুটা সময় দিন। নিজের প্রিয় কাজ করুন। সেটি হতে পারে বই পড়া, রান্না করা, খেলাধুলা করা, সিনেমা দেখা বা শরীরচর্চা করা। কাজের বাইরেও কাজ নিয়ে চিন্তা না করে অবসর সময়টি নিজের জন্য রাখুন। আরওঅফিসে যে ১০ অপেশাদার কাজ এড়িয়ে চলা উচিত নিজের লক্ষ্য স্থির রাখুন টক্সিক কর্মস্থলে সবসময় নেতিবাচক কথা বলে আপনার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। চারপাশের সহযোগিতা না পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলবেন না, বরং প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করুন। নিজের কাজকে নিজেই মূল্যায়ন করুন। আপনার লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যান এবং এক্ষেত্রে নিজেই নিজেকে উৎসাহ দিন। অফিসের বাইরে কাজ নয় কিছু বিষয়ে আপনাকে কঠোর হতে হবে। যেমন অফিসের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অফিসের কোনো ফোন রিসিভ করা বা মেইলের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে অফিসের ফোনটি বন্ধ করে রাখুন। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে অফিসের চিন্তা বাদ দিন। এই সময়টি একান্ত আপনার। পরিবার এবং নিজেকে সময় দিন। তা না হলে অফিসের বিষাক্ত পরিবেশের ভার আপনার ব্যক্তিগত জীবনকেও গ্রাস করে ফেলবে।  ইতিবাচক থাকুন নিজে ইতিবাচক থাকুন এবং ইতিবাচক ধরনের মানুষদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করুন। টক্সিক কর্মস্থলের নেতিবাচক প্রভাব নিজের মধ্যে যেন না আসে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন। ইতিবাচক সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটান, যারা আপনাকে উৎসাহ দেবেন এবং গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। আরওঅন্যের সফল কর্মজীবন দেখে হতাশ, কী করবেন   অফিস আলোচনায় কান দেবেন না অফিসে অহেতুক কোনো বিষয়ে আলোচনা হলে তাতে অংশগ্রহণ করবেন না। কাউকে নিয়ে সমালোচনা বা অপমানজনক কথা হলে সেখান থেকে সরে আসুন। এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় আলোচনা থেকে দূরে থেকে নিজের কাজে মনোযোগী হোন। বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজুন দীর্ঘদিন টক্সিক পরিবেশে কাজ করলে ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তাই সুযোগ থাকলে এ ধরনের পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করাটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। চেষ্টা করুন নিজের অভিজ্ঞতা ও আগ্রহ অনুযায়ী নতুন কর্মস্থল খোঁজার। চাকরি পেয়ে গেলে যোগদানের আগে কিন্তু নতুন অফিসে পরিবেশ কেমন, সেই খোঁজ নিতে ভুলবেন না। তথ্যসূত্র: ফোর্বস আরওব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের ভারসাম্য রাখবেন যেভাবে আরওঅফিসে কেমন পোশাক কর্মক্ষেত্রের এরকম পরিবেশের শিকার কেবল আপনি নন, আপনার অনেক সহকর্মীও ভুক্তভোগী। তাই তাদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। একই রকম মানসিকতার মানুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন এবং একসঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করুন। কাজের বাইরে নিজেকে সময় দিন দিনের উল্লেখযোগ্য সময় এরকম পরিবেশে কাটানোর পর নিজেকে কিছুটা সময় দিন। নিজের প্রিয় কাজ করুন। সেটি হতে পারে বই পড়া, রান্না করা, খেলাধুলা করা, সিনেমা দেখা বা শরীরচর্চা করা। কাজের বাইরেও কাজ নিয়ে চিন্তা না করে অবসর সময়টি নিজের জন্য রাখুন। আরওঅফিসে যে ১০ অপেশাদার কাজ এড়িয়ে চলা উচিত নিজের লক্ষ্য স্থির রাখুন টক্সিক কর্মস্থলে সবসময় নেতিবাচক কথা বলে আপনার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। চারপাশের সহযোগিতা না পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলবেন না, বরং প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করুন। নিজের কাজকে নিজেই মূল্যায়ন করুন। আপনার লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যান এবং এক্ষেত্রে নিজেই নিজেকে উৎসাহ দিন। অফিসের বাইরে কাজ নয় কিছু বিষয়ে আপনাকে কঠোর হতে হবে। যেমন অফিসের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অফিসের কোনো ফোন রিসিভ করা বা মেইলের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে অফিসের ফোনটি বন্ধ করে রাখুন। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে অফিসের চিন্তা বাদ দিন। এই সময়টি একান্ত আপনার। পরিবার এবং নিজেকে সময় দিন। তা না হলে অফিসের বিষাক্ত পরিবেশের ভার আপনার ব্যক্তিগত জীবনকেও গ্রাস করে ফেলবে।  ইতিবাচক থাকুন নিজে ইতিবাচক থাকুন এবং ইতিবাচক ধরনের মানুষদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করুন। টক্সিক কর্মস্থলের নেতিবাচক প্রভাব নিজের মধ্যে যেন না আসে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন। ইতিবাচক সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটান, যারা আপনাকে উৎসাহ দেবেন এবং গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। আরওঅন্যের সফল কর্মজীবন দেখে হতাশ, কী করবেন   অফিস আলোচনায় কান দেবেন না অফিসে অহেতুক কোনো বিষয়ে আলোচনা হলে তাতে অংশগ্রহণ করবেন না। কাউকে নিয়ে সমালোচনা বা অপমানজনক কথা হলে সেখান থেকে সরে আসুন। এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় আলোচনা থেকে দূরে থেকে নিজের কাজে মনোযোগী হোন। বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজুন দীর্ঘদিন টক্সিক পরিবেশে কাজ করলে ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তাই সুযোগ থাকলে এ ধরনের পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করাটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। চেষ্টা করুন নিজের অভিজ্ঞতা ও আগ্রহ অনুযায়ী নতুন কর্মস্থল খোঁজার। চাকরি পেয়ে গেলে যোগদানের আগে কিন্তু নতুন অফিসে পরিবেশ কেমন, সেই খোঁজ নিতে ভুলবেন না। তথ্যসূত্র: ফোর্বস আরওব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের ভারসাম্য রাখবেন যেভাবে আরওঅফিসে কেমন পোশাক নিজের লক্ষ্য স্থির রাখুন টক্সিক কর্মস্থলে সবসময় নেতিবাচক কথা বলে আপনার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। চারপাশের সহযোগিতা না পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলবেন না, বরং প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করুন। নিজের কাজকে নিজেই মূল্যায়ন করুন। আপনার লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যান এবং এক্ষেত্রে নিজেই নিজেকে উৎসাহ দিন। অফিসের বাইরে কাজ নয় কিছু বিষয়ে আপনাকে কঠোর হতে হবে। যেমন অফিসের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অফিসের কোনো ফোন রিসিভ করা বা মেইলের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে অফিসের ফোনটি বন্ধ করে রাখুন। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে অফিসের চিন্তা বাদ দিন। এই সময়টি একান্ত আপনার। পরিবার এবং নিজেকে সময় দিন। তা না হলে অফিসের বিষাক্ত পরিবেশের ভার আপনার ব্যক্তিগত জীবনকেও গ্রাস করে ফেলবে।  ইতিবাচক থাকুন নিজে ইতিবাচক থাকুন এবং ইতিবাচক ধরনের মানুষদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করুন। টক্সিক কর্মস্থলের নেতিবাচক প্রভাব নিজের মধ্যে যেন না আসে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন। ইতিবাচক সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটান, যারা আপনাকে উৎসাহ দেবেন এবং গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। আরওঅন্যের সফল কর্মজীবন দেখে হতাশ, কী করবেন   অফিস আলোচনায় কান দেবেন না অফিসে অহেতুক কোনো বিষয়ে আলোচনা হলে তাতে অংশগ্রহণ করবেন না। কাউকে নিয়ে সমালোচনা বা অপমানজনক কথা হলে সেখান থেকে সরে আসুন। এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় আলোচনা থেকে দূরে থেকে নিজের কাজে মনোযোগী হোন। বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজুন দীর্ঘদিন টক্সিক পরিবেশে কাজ করলে ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তাই সুযোগ থাকলে এ ধরনের পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করাটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। চেষ্টা করুন নিজের অভিজ্ঞতা ও আগ্রহ অনুযায়ী নতুন কর্মস্থল খোঁজার। চাকরি পেয়ে গেলে যোগদানের আগে কিন্তু নতুন অফিসে পরিবেশ কেমন, সেই খোঁজ নিতে ভুলবেন না। তথ্যসূত্র: ফোর্বস আরওব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের ভারসাম্য রাখবেন যেভাবে আরওঅফিসে কেমন পোশাক টক্সিক কর্মস্থলে সবসময় নেতিবাচক কথা বলে আপনার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। চারপাশের সহযোগিতা না পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলবেন না, বরং প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করুন। নিজের কাজকে নিজেই মূল্যায়ন করুন। আপনার লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যান এবং এক্ষেত্রে নিজেই নিজেকে উৎসাহ দিন। অফিসের বাইরে কাজ নয় কিছু বিষয়ে আপনাকে কঠোর হতে হবে। যেমন অফিসের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অফিসের কোনো ফোন রিসিভ করা বা মেইলের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে অফিসের ফোনটি বন্ধ করে রাখুন। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে অফিসের চিন্তা বাদ দিন। এই সময়টি একান্ত আপনার। পরিবার এবং নিজেকে সময় দিন। তা না হলে অফিসের বিষাক্ত পরিবেশের ভার আপনার ব্যক্তিগত জীবনকেও গ্রাস করে ফেলবে। ইতিবাচক থাকুন নিজে ইতিবাচক থাকুন এবং ইতিবাচক ধরনের মানুষদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করুন। টক্সিক কর্মস্থলের নেতিবাচক প্রভাব নিজের মধ্যে যেন না আসে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন। ইতিবাচক সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটান, যারা আপনাকে উৎসাহ দেবেন এবং গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। আরওঅন্যের সফল কর্মজীবন দেখে হতাশ, কী করবেন   অফিস আলোচনায় কান দেবেন না অফিসে অহেতুক কোনো বিষয়ে আলোচনা হলে তাতে অংশগ্রহণ করবেন না। কাউকে নিয়ে সমালোচনা বা অপমানজনক কথা হলে সেখান থেকে সরে আসুন। এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় আলোচনা থেকে দূরে থেকে নিজের কাজে মনোযোগী হোন। বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজুন দীর্ঘদিন টক্সিক পরিবেশে কাজ করলে ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তাই সুযোগ থাকলে এ ধরনের পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করাটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। চেষ্টা করুন নিজের অভিজ্ঞতা ও আগ্রহ অনুযায়ী নতুন কর্মস্থল খোঁজার। চাকরি পেয়ে গেলে যোগদানের আগে কিন্তু নতুন অফিসে পরিবেশ কেমন, সেই খোঁজ নিতে ভুলবেন না। তথ্যসূত্র: ফোর্বস আরওব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের ভারসাম্য রাখবেন যেভাবে আরওঅফিসে কেমন পোশাক অফিস আলোচনায় কান দেবেন না অফিসে অহেতুক কোনো বিষয়ে আলোচনা হলে তাতে অংশগ্রহণ করবেন না। কাউকে নিয়ে সমালোচনা বা অপমানজনক কথা হলে সেখান থেকে সরে আসুন। এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় আলোচনা থেকে দূরে থেকে নিজের কাজে মনোযোগী হোন। বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজুন দীর্ঘদিন টক্সিক পরিবেশে কাজ করলে ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তাই সুযোগ থাকলে এ ধরনের পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করাটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। চেষ্টা করুন নিজের অভিজ্ঞতা ও আগ্রহ অনুযায়ী নতুন কর্মস্থল খোঁজার। চাকরি পেয়ে গেলে যোগদানের আগে কিন্তু নতুন অফিসে পরিবেশ কেমন, সেই খোঁজ নিতে ভুলবেন না। তথ্যসূত্র: ফোর্বস আরওব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের ভারসাম্য রাখবেন যেভাবে আরওঅফিসে কেমন পোশাক অফিসে অহেতুক কোনো বিষয়ে আলোচনা হলে তাতে অংশগ্রহণ করবেন না। কাউকে নিয়ে সমালোচনা বা অপমানজনক কথা হলে সেখান থেকে সরে আসুন। এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় আলোচনা থেকে দূরে থেকে নিজের কাজে মনোযোগী হোন। বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজুন দীর্ঘদিন টক্সিক পরিবেশে কাজ করলে ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তাই সুযোগ থাকলে এ ধরনের পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করাটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। চেষ্টা করুন নিজের অভিজ্ঞতা ও আগ্রহ অনুযায়ী নতুন কর্মস্থল খোঁজার। চাকরি পেয়ে গেলে যোগদানের আগে কিন্তু নতুন অফিসে পরিবেশ কেমন, সেই খোঁজ নিতে ভুলবেন না। তথ্যসূত্র: ফোর্বস আরওব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের ভারসাম্য রাখবেন যেভাবে আরওঅফিসে কেমন পোশাক আরওঅফিসে কেমন পোশাক
আমাদের চারপাশের পরিবেশ মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব ছাড়াও নিজেদের কর্মক্ষেত্র এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। যারা বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত, তাদের দিনের একটা বিরাট অংশ কাটাতে হয় কর্মস্থলে। তাই কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ভালো হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শেফ স্পেশাল চিংড়ি মালাইকারি রেসিপি
কম-বেশি সবাই চিংড়ির মালাইকারি খুব বেশি পছন্দ করেন। যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের চিংড়ি এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে যাদের কোনো সমস্যা নেই তাদের জন্য চিংড়ির মালাইকারি দারুণ খাবার। বাজার থেকে চিংড়ি এনে বানিয়ে ফেলতে পারেন চিংড়ি মালাইকারি। পর্যটন করপোরেশনের ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন (রন্ধন প্রশিক্ষণ) বিভাগের প্রধান শেফ জাহিদা বেগম শেয়ার করেছেন চিংড়ির মালাইকারি রেসিপি। পরিবেশন: ৪ জন উপাদান ও পরিমাণ চিংড়ি ১ কেজি, পেঁয়াজ ২টি বড় সাইজের, আদা রসুন বাটা ১ থেকে ১/২ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, কাঁচা মরিচ ৬ পিস, গরম মসলা ১/৪ চা চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, তেজপাতা ৩ পিস, তেল ৫০ মিলি, নারকেলের দুধ ১ কাপ, টমেটো ১টি বড় সূক্ষ্মভাবে কাটা এবং লবণ পরিমাণমতো। প্রস্তুত প্রণালি ১. চিংড়ির খোসা পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। ২. লবণ এবং এক চিমটি হলুদ গুঁড়া দিয়ে চিংড়িগুলো ভেজে মেরিনেট করুন। তারপর একটি প্যানে খুব অল্প পরিমাণে তেল দিয়ে ভেজে নিন। ৩. তারপর চিংড়ি তেল থেকে উঠিয়ে রেখে একই প্যানে আরও তেল দিন এবং পেঁয়াজের পেস্ট, তেজপাতা, আদা রসুনের পেস্ট, টমেটো দিয়ে ১০ মিনিট নাড়ুন। ৪. হলুদ, মরিচ, জিরা এবং গরম মসলা গুঁড়া যোগ করুন। সামান্য পানি দিয়ে আরও ১০ মিনিট রান্না করুন। ৫. চিংড়ি ভাজা, লবণ, নারকেল, মরিচ এবং কাঁচা মরিচ দিয়ে আরও ৮ থেকে ১০ মিনিট রান্না করুন। আরওওমেগা-৩ ডিম কতখানি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, উপকার কী ৬. এরপর উপরে ঘি দিয়ে দিন। ৭. ভাতের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন। গার্নিশ: কাটা ধনে পাতা, লেবুর ওয়েজ দিয়ে পরিবেশন করুন। পুষ্টির পরিমাণ: প্রতি পরিবেশন: ক্যালরি ৭৬০, ফ্যাট ২৮ গ্রাম, কোলেস্টেরল ১০.২৪ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ২৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৮০ গ্রাম, সোডিয়াম ২২.৫৮, পটাসিয়াম ৩৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১২.৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৪৭ মিলিগ্রাম। আরওবাঙ্গির যত গুণ ১. চিংড়ির খোসা পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। ২. লবণ এবং এক চিমটি হলুদ গুঁড়া দিয়ে চিংড়িগুলো ভেজে মেরিনেট করুন। তারপর একটি প্যানে খুব অল্প পরিমাণে তেল দিয়ে ভেজে নিন। ৩. তারপর চিংড়ি তেল থেকে উঠিয়ে রেখে একই প্যানে আরও তেল দিন এবং পেঁয়াজের পেস্ট, তেজপাতা, আদা রসুনের পেস্ট, টমেটো দিয়ে ১০ মিনিট নাড়ুন। ৪. হলুদ, মরিচ, জিরা এবং গরম মসলা গুঁড়া যোগ করুন। সামান্য পানি দিয়ে আরও ১০ মিনিট রান্না করুন। ৫. চিংড়ি ভাজা, লবণ, নারকেল, মরিচ এবং কাঁচা মরিচ দিয়ে আরও ৮ থেকে ১০ মিনিট রান্না করুন। ৬. এরপর উপরে ঘি দিয়ে দিন। ৭. ভাতের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন। গার্নিশ: কাটা ধনে পাতা, লেবুর ওয়েজ দিয়ে পরিবেশন করুন। পুষ্টির পরিমাণ: প্রতি পরিবেশন: ক্যালরি ৭৬০, ফ্যাট ২৮ গ্রাম, কোলেস্টেরল ১০.২৪ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ২৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৮০ গ্রাম, সোডিয়াম ২২.৫৮, পটাসিয়াম ৩৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১২.৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৪৭ মিলিগ্রাম। আরওবাঙ্গির যত গুণ কাটা ধনে পাতা, লেবুর ওয়েজ দিয়ে পরিবেশন করুন। পুষ্টির পরিমাণ: প্রতি পরিবেশন: ক্যালরি ৭৬০, ফ্যাট ২৮ গ্রাম, কোলেস্টেরল ১০.২৪ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ২৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৮০ গ্রাম, সোডিয়াম ২২.৫৮, পটাসিয়াম ৩৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১২.৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৪৭ মিলিগ্রাম।
কম-বেশি সবাই চিংড়ির মালাইকারি খুব বেশি পছন্দ করেন। যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের চিংড়ি এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে যাদের কোনো সমস্যা নেই তাদের জন্য চিংড়ির মালাইকারি দারুণ খাবার।
বাঙ্গির যত গুণ
চলে এসেছে গ্রীষ্মকাল। দেশের বিভিন্ন অংশে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। গ্রীষ্মে পাওয়া যায় অনেক ফল। এই গরমে শরীর সুস্থ রাখতে মৌসুমি ফল খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে একটি দেশীয় ফল বাঙ্গি। অনেকেরই পছন্দের তালিকায় থাকা এই ফলটি খুব বেশি সুস্বাদ না হওয়ায় অনেকের অপছন্দের তালিকাতেও রয়েছে। কিন্তু পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এই ফলটির রয়েছে অনেক উপকারিতা। আসুন জেনে নেই বাঙ্গির উপকারিতাগুলো। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের সিনিয়র পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী। তিনি বলেন, বাঙ্গি ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ একটি ফল। গরমে শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এটি। পুষ্টি উপাদান বাঙ্গির প্রায় ৯০ শতাংশই জলীয় অংশ। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার। এ ছাড়া, বাঙ্গিতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উপকারিতা ১. বাঙ্গি থেকে পাওয়া যায় প্রচুর পানি, যা শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে। ২. গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়। বাঙ্গি এই পানির ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। ৩. গরম ও অতিরিক্ত রোদের কারণে সানবার্ন, ফিট হাইপার পাইরেক্সিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। বাঙ্গির রস এসব সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ৪. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রয়োজন হয়। বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি। ফলে, এই ফল শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, বিটা-ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। ৫. বাঙ্গিতে প্রচুর ফাইবার থাকায় তা খাবার হজমে সহায়তা করে। অর্থাৎ হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সহায়ক বাঙ্গি। ৬. বাঙ্গিতে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। হার্টের রোগীরা শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ অর্থাৎ ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স করার জন্য খাদ্যতালিকায় বাঙ্গি রাখতে পারেন। ৭. বাঙ্গিতে সুগারের পরিমাণ কম। এই ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও অনেক বেশি না। ডায়াবেটিস রোগীরা এই ফলটি ৯০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়া ভালো। ৮. বাঙ্গি ফলিক অ্যাসিডের ভালো উৎস। এই ফল ফলিক অ্যাসিড তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং যাদের শরীরে রক্ত কম এবং তাদের জন্য বাঙ্গি খুবই উপকারী ফল। ৯. বাঙ্গিতে রয়েছে ভিটামিন বি এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ইন্সনিটল। এই উপাদান নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে। তাই নিয়মিত বাঙ্গি খেলে চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল হয়। ১০. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ত্বকের সুস্থতায় বাঙ্গি ভূমিকা রাখে। ত্বকতে করে উজ্জ্বল ও মসৃণ। ১১. বাঙ্গিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা হাড় মজবুত করে এবং হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধে সাহায্য করে। ১২. বাঙ্গিতে ফ্যাট না থাকায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ সাহায্য করে। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে, ফলে বারবার অন্য খাবার খাওয়ার ইচ্ছা কম হয়। ১৩. অ্যাসিডিটি, খাবারে অরুচি, নিদ্রাহীনতা, আলসারের মতো বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধেও সাহায্য করে বাঙ্গি। কীভাবে খাবেন বাঙ্গি কেটে ছোট ছোট টুকরো করে খেতে পারেন অথবা শরবত বা স্মুদি তৈরি করেও খেতে পারেন। অনেকেই বাঙ্গিতে চিনি মিশিয়ে খেয়ে থাকেন। চিনি দিয়ে খেলে বাঙ্গির উপকারিতা পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায় না। কারণ, চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। শরবত বা স্মুদি তৈরি করার ক্ষেত্রেও চিনি পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে চিনির বিকল্প উপাদান—যেমন: গুড়—অল্প পরিমাণে যোগ করা যেতে পারে। সতর্কতা বাঙ্গির তেমন কোনো অপকারিতা নেই। কিন্তু অপকারিতা নেই মনে করে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক হবে না। কারণ, অতিরিক্ত বাঙ্গি খেলে সুগারলেভেল ওভারলোড হতে পারে। এ ছাড়া, যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে, তাদের বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। কারণ, কিডনি রোগীদের অতিরিক্ত পটাশিয়াম নেওয়ার ক্ষমতা কম।
চলে এসেছে গ্রীষ্মকাল। দেশের বিভিন্ন অংশে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। গ্রীষ্মে পাওয়া যায় অনেক ফল। এই গরমে শরীর সুস্থ রাখতে মৌসুমি ফল খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
স্বাদে-ঘ্রাণে মন কাড়ে সিলেটের আখনি
রমজানের ইফতার, ঈদের দুপুরের খাবার, ধর্মীয় আয়োজন কিংবা পারিবারিক উৎসব- সিলেটিদের পছন্দের তালিকায় সবার আগে যে সুস্বাদু খাবারটি থাকে, তা হচ্ছে আখনি। সুগন্ধি চাল এবং মাংসযোগে আখনি রান্নার পদ্ধতি অনেকটা ঢাকার তেহারির মতো হলেও সুঘ্রাণ ও স্বাদের দিক দিয়ে আখনি অনন্য। সিলেটজুড়ে পাড়া-মহল্লার অজস্র রেস্টুরেন্টে রান্না হয় আখনি। এমনকি বড় হাঁড়িতে রান্না করা আখনির অনলাইনভিত্তিক একটি বাজারও সৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। পারস্য-দিল্লি হয়ে সিলেট আখনি শব্দটির মূলত পারস্যের (বর্তমান ইরান) 'Yakhni (ইয়াখনি)' এর একটি রূপ। এ রান্নাটি পারস্য থেকেই পূর্বে ভারতবর্ষ ও পশ্চিমে তুরস্ক পর্যন্ত ছড়িয়েছে। ইয়াখনি অর্থ হচ্ছে মাংসের স্টু বা ভাপে সেদ্ধ করা মাংস। ইয়াখনি পোলাও অর্থ স্টুতে রান্না করা চাল বা পোলাও। ছবি: স্টার বাস্তবে আমাদের পরিচিত আখনি মাংসের ঝোলের মধ্যেই রান্না করা এক ধরনের পোলাও। সিলেটে এটি তাই আখনি পোলাও হিসেবেও পরিচিত। ভারতবর্ষে প্রথম 'ইয়াখনি' শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায় মুঘল সম্রাট আকবরের 'আইন-ই-আকবর' গ্রন্থে। খাদ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পারস্যের এই খাবারটি মুঘল বাবুর্চিদের হাত ধরে এই অঞ্চলে এসে দিল্লি সালতানাতে জনপ্রিয়তা পায়। আরওসিলেটের ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গা পিঠা সিলেটে আখনির আগমন ও জনপ্রিয়তার ব্যাপারে নথিভুক্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা যায়, দিল্লির জনপ্রিয় এই খাবার সিলেট অঞ্চলে দিল্লি থেকেই এসেছে। ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে সুফি সাধক হযরত শাহজালাল (র) দিল্লি হয়ে সিলেট গৌড় রাজ্যের রাজা গোবিন্দকে পরাজিত করেন। দিল্লীর মসনদে তখন আলাউদ্দিন খিলজি। হযরত শাহজালাল (র) এর সিলেট বিজয়ের সময় তার সঙ্গে দিল্লী থেকে আসা খিলজি সৈনিকদের মাধ্যমেও এ অঞ্চলে আখনি বিস্তার লাভ করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। আখনি রান্নার রেসিপি আখনি রান্নার রেসিপি বাবুর্চিভেদে যেমন ভিন্ন ভিন্ন, তেমনি প্রতিটি পুরোনো বাড়িরই রয়েছে নিজস্ব রন্ধন পদ্ধতি। প্রায় ৫০ বছরের অভিজ্ঞ বাবুর্চি জামাল মিয়া এবং ১৫ বছরের অভিজ্ঞ বাবুর্চি ইমন মিয়া আখনি রান্নায় প্রায় অভিন্ন এক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তারা জানান, আখনি রান্নায় বিরিয়ানির মতো বাসমতি চাল নয়, বরং ছোট দানার সুগন্ধি চিনিগুঁড়া কিংবা কালিজিরা চাল ব্যবহার করা হয়। চালের সমপরিমাণ গরু বা খাসি কিংবা মুরগির ছোট করে কাটা মাংস ব্যবহার করতে হয়। তবে মাংসের পরিমাণ অনেকে চালের তিন ভাগের দুই ভাগ কিংবা অর্ধেকও রাখেন। প্রথমে বড় একটি হাঁড়িতে সয়াবিন তেল কিংবা ঘি গরম করে তাতে কুচি করা পেঁয়াজ দেওয়া হয়। তারপর এতে সিলেটের জৈন্তাপুরের তেজপাতার সঙ্গে দারুচিনি, এলাচ ও লবঙ্গ দিয়ে কষানো হয়। আরওনওগাঁর সাব্বীরের বিরিয়ানি: ৪০ বছর ধরে যার স্বাদ বেড়েই চলেছে পেঁয়াজ ভাজা ভাজা হয়ে এলে আদা ও রসুন বাটার সঙ্গে টুকরো করে কাটা টমেটো দেওয়া হয়। এরপর পরিমিত লবণ দিয়ে চিনাবাদাম বাটা দেওয়া হয়। সব মসলা কষানো হয়ে গেলে এবার এতে মাংস ঢেলে দেওয়া হয়। তারপর এতে জয়ত্রী ও জায়ফলের গুঁড়া দিয়ে বাড়তি আগুনে কষানো হয়। কষানোর মধ্যেই ধনে গুঁড়া, আস্ত জিরা, গুঁড়া জিরা, গুঁড়া পাঁচফোড়ন, আলু বোখারা দেওয়া হয়। আরও দেওয়া হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে আমের আচার। তারপর কিছুটা গরম পানি দিয়ে ঢাকনা লাগিয়ে মাংস রান্না করতে হয়। মাংস রান্না হয়ে এলে তাতে ছোট ছোট করে কেটে রাখা গাজর, আস্ত কিশমিশ, মটরশুঁটি ও কাঁচামরিচ দেওয়া হয়। সবকিছু ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দেওয়া হয়। এই পানি ফুটতে শুরু করলে আগে থেকে ধুয়ে রাখা চাল ঢেলে দিয়ে ভালো করে নেড়ে ভাত সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। ভাত প্রায় রান্না হয়ে এলে এতে পরিমিত ঘি ঢেলে দিয়ে হাঁড়ির মুখ ভালো করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় হাঁড়ির ঢাকনাতে জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে রাখা হয়। কিছুক্ষণ ভাপে রাখার পর ঢাকনা খুলে ভালো করে নেড়েচেড়ে দিলেই প্রস্তুত সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আখনি। বিরিয়ানি, তেহারি, আখনি—স্বাদের পার্থক্যই আসল বিরিয়ানিতে মসলাদার মাংস এবং চাল আলাদা রান্না করা হয় এবং পরে ধাপে ধাপে রেখে ভাপ দিয়ে মেশানো হয়। কিন্তু আখনিতে সরাসরি মসলাদার মাংসের ঝোলেই চাল দিয়ে রান্না করা হয়। তাই আখনিতে মসলার স্বাদ-গন্ধই মুখ্য। পাক্কি বিরিয়ানি নামে এক বিশেষ ধরনের বিরিয়ানি রান্না হয় ভারত এবং ঢাকায়। পাক্কি বিরিয়ানি মূলত একই হাঁড়িতে রান্না করা বিরিয়ানি। আখনিও মূলত এক ধরনের পাক্কি বিরিয়ানি। প্রথাগতভাবে বিরিয়ানি রান্নায় বেশি মসলা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া মাংসের টুকরাও থাকে বড়, দেওয়া হয় আলুও। সেই তুলনায় তেহারিতে ও আখনিতে কম মসলা ও ছোট ছোট মাংসের টুকরা ব্যবহার করা হয়। আবার তেহারির উৎপত্তি উত্তর ভারতের সুপ্রাচীন অযোধ্যাতে, অর্থাৎ এটি একটি আওয়াধি রেসিপি যা পরে ঢাকায় এসে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। আরওপুরান ঢাকায় ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বনাম ‘সব বাপের পোলায় খায়’ তেহারি মূলত রান্না হয় সরিষার তেলে, যার ফলে সরিষার ঘ্রাণটাই এখানে প্রাধান্য পায়। কিন্তু আখনিতে সরিষার তেলের বদলে সাধারণ সয়াবিন তেল ও ঘি ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক চাহিদার কারণে সিলেটের প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় আখনি। তাছাড়া বেশ কিছু বড় পরিসরের রেস্টুরেন্টও ভালো মানের আখনি পরিবেশন করে সুনাম কুড়িয়েছে। এ ছাড়াও ভালো আখনির চাহিদা থাকায় বেশ কিছু অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও প্রতি শুক্রবার বড় হাঁড়িতে আখনি রান্না করে চাহিদা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করছে। ইফতার বাজারে আখনির চাহিদা রমজান মাসে সিলেটের প্রতিটি রেস্টুরেন্টে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে আখনির উপস্থিতি থাকবেই। গরু ও মুরগি দুই রকম আখনিই ব্যাপক জনপ্রিয়। দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ আহমেদ জিন্দাবাজার এলাকার একটি রেস্টুরেন্ট থেকে গরুর মাংসের আখনি কিনছিলেন। তিনি বলেন, 'রমজান মাসে ইফতারে বিশেষ আয়োজন মানেই আখনি লাগবে। যেহেতু বাসায় রান্না করা বেশ কষ্টসাধ্য, তাই ভালো রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে নেওয়াটাই সাশ্রয়ী।' আরওবরিশালের যে সন্দেশের স্বাদ নিতে ভুলবেন না রেস্টুরেন্টে গরুর মাংসের আখনি কেজিপ্রতি ৩৮০ টাকা এবং মুরগির মাংসের আখনি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে রেস্টুরেন্টভেদে দাম ১০ বা ২০ টাকা কম-বেশি হতে পারে। সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি। ঢাকার বড় বড় ব্র্যান্ডের বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট সিলেটে আসছে। কালের পরিক্রমায় সিলেটি আখনির অনেক রেস্টুরেন্টও নাম পাল্টে বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ খাবারের চাহিদা এখনও ব্যাপক। মাঝেমধ্যে কাচ্চি বিরিয়ানির রসনায় সিলেটিরা বিলাস করলেও নিত্যদিনের রসনা বিলাসে এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আখনি। আরওরাজশাহীর কালাইরুটি-ভর্তার স্বাদ নিয়েছেন কি বাস্তবে আমাদের পরিচিত আখনি মাংসের ঝোলের মধ্যেই রান্না করা এক ধরনের পোলাও। সিলেটে এটি তাই আখনি পোলাও হিসেবেও পরিচিত। ভারতবর্ষে প্রথম 'ইয়াখনি' শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায় মুঘল সম্রাট আকবরের 'আইন-ই-আকবর' গ্রন্থে। খাদ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পারস্যের এই খাবারটি মুঘল বাবুর্চিদের হাত ধরে এই অঞ্চলে এসে দিল্লি সালতানাতে জনপ্রিয়তা পায়। আরওসিলেটের ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গা পিঠা সিলেটে আখনির আগমন ও জনপ্রিয়তার ব্যাপারে নথিভুক্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা যায়, দিল্লির জনপ্রিয় এই খাবার সিলেট অঞ্চলে দিল্লি থেকেই এসেছে। ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে সুফি সাধক হযরত শাহজালাল (র) দিল্লি হয়ে সিলেট গৌড় রাজ্যের রাজা গোবিন্দকে পরাজিত করেন। দিল্লীর মসনদে তখন আলাউদ্দিন খিলজি। হযরত শাহজালাল (র) এর সিলেট বিজয়ের সময় তার সঙ্গে দিল্লী থেকে আসা খিলজি সৈনিকদের মাধ্যমেও এ অঞ্চলে আখনি বিস্তার লাভ করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। আখনি রান্নার রেসিপি আখনি রান্নার রেসিপি বাবুর্চিভেদে যেমন ভিন্ন ভিন্ন, তেমনি প্রতিটি পুরোনো বাড়িরই রয়েছে নিজস্ব রন্ধন পদ্ধতি। প্রায় ৫০ বছরের অভিজ্ঞ বাবুর্চি জামাল মিয়া এবং ১৫ বছরের অভিজ্ঞ বাবুর্চি ইমন মিয়া আখনি রান্নায় প্রায় অভিন্ন এক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তারা জানান, আখনি রান্নায় বিরিয়ানির মতো বাসমতি চাল নয়, বরং ছোট দানার সুগন্ধি চিনিগুঁড়া কিংবা কালিজিরা চাল ব্যবহার করা হয়। চালের সমপরিমাণ গরু বা খাসি কিংবা মুরগির ছোট করে কাটা মাংস ব্যবহার করতে হয়। তবে মাংসের পরিমাণ অনেকে চালের তিন ভাগের দুই ভাগ কিংবা অর্ধেকও রাখেন। প্রথমে বড় একটি হাঁড়িতে সয়াবিন তেল কিংবা ঘি গরম করে তাতে কুচি করা পেঁয়াজ দেওয়া হয়। তারপর এতে সিলেটের জৈন্তাপুরের তেজপাতার সঙ্গে দারুচিনি, এলাচ ও লবঙ্গ দিয়ে কষানো হয়। আরওনওগাঁর সাব্বীরের বিরিয়ানি: ৪০ বছর ধরে যার স্বাদ বেড়েই চলেছে পেঁয়াজ ভাজা ভাজা হয়ে এলে আদা ও রসুন বাটার সঙ্গে টুকরো করে কাটা টমেটো দেওয়া হয়। এরপর পরিমিত লবণ দিয়ে চিনাবাদাম বাটা দেওয়া হয়। সব মসলা কষানো হয়ে গেলে এবার এতে মাংস ঢেলে দেওয়া হয়। তারপর এতে জয়ত্রী ও জায়ফলের গুঁড়া দিয়ে বাড়তি আগুনে কষানো হয়। কষানোর মধ্যেই ধনে গুঁড়া, আস্ত জিরা, গুঁড়া জিরা, গুঁড়া পাঁচফোড়ন, আলু বোখারা দেওয়া হয়। আরও দেওয়া হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে আমের আচার। তারপর কিছুটা গরম পানি দিয়ে ঢাকনা লাগিয়ে মাংস রান্না করতে হয়। মাংস রান্না হয়ে এলে তাতে ছোট ছোট করে কেটে রাখা গাজর, আস্ত কিশমিশ, মটরশুঁটি ও কাঁচামরিচ দেওয়া হয়। সবকিছু ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দেওয়া হয়। এই পানি ফুটতে শুরু করলে আগে থেকে ধুয়ে রাখা চাল ঢেলে দিয়ে ভালো করে নেড়ে ভাত সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। ভাত প্রায় রান্না হয়ে এলে এতে পরিমিত ঘি ঢেলে দিয়ে হাঁড়ির মুখ ভালো করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় হাঁড়ির ঢাকনাতে জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে রাখা হয়। কিছুক্ষণ ভাপে রাখার পর ঢাকনা খুলে ভালো করে নেড়েচেড়ে দিলেই প্রস্তুত সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আখনি। বিরিয়ানি, তেহারি, আখনি—স্বাদের পার্থক্যই আসল বিরিয়ানিতে মসলাদার মাংস এবং চাল আলাদা রান্না করা হয় এবং পরে ধাপে ধাপে রেখে ভাপ দিয়ে মেশানো হয়। কিন্তু আখনিতে সরাসরি মসলাদার মাংসের ঝোলেই চাল দিয়ে রান্না করা হয়। তাই আখনিতে মসলার স্বাদ-গন্ধই মুখ্য। পাক্কি বিরিয়ানি নামে এক বিশেষ ধরনের বিরিয়ানি রান্না হয় ভারত এবং ঢাকায়। পাক্কি বিরিয়ানি মূলত একই হাঁড়িতে রান্না করা বিরিয়ানি। আখনিও মূলত এক ধরনের পাক্কি বিরিয়ানি। প্রথাগতভাবে বিরিয়ানি রান্নায় বেশি মসলা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া মাংসের টুকরাও থাকে বড়, দেওয়া হয় আলুও। সেই তুলনায় তেহারিতে ও আখনিতে কম মসলা ও ছোট ছোট মাংসের টুকরা ব্যবহার করা হয়। আবার তেহারির উৎপত্তি উত্তর ভারতের সুপ্রাচীন অযোধ্যাতে, অর্থাৎ এটি একটি আওয়াধি রেসিপি যা পরে ঢাকায় এসে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। আরওপুরান ঢাকায় ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বনাম ‘সব বাপের পোলায় খায়’ তেহারি মূলত রান্না হয় সরিষার তেলে, যার ফলে সরিষার ঘ্রাণটাই এখানে প্রাধান্য পায়। কিন্তু আখনিতে সরিষার তেলের বদলে সাধারণ সয়াবিন তেল ও ঘি ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক চাহিদার কারণে সিলেটের প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় আখনি। তাছাড়া বেশ কিছু বড় পরিসরের রেস্টুরেন্টও ভালো মানের আখনি পরিবেশন করে সুনাম কুড়িয়েছে। এ ছাড়াও ভালো আখনির চাহিদা থাকায় বেশ কিছু অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও প্রতি শুক্রবার বড় হাঁড়িতে আখনি রান্না করে চাহিদা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করছে। ইফতার বাজারে আখনির চাহিদা রমজান মাসে সিলেটের প্রতিটি রেস্টুরেন্টে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে আখনির উপস্থিতি থাকবেই। গরু ও মুরগি দুই রকম আখনিই ব্যাপক জনপ্রিয়। দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ আহমেদ জিন্দাবাজার এলাকার একটি রেস্টুরেন্ট থেকে গরুর মাংসের আখনি কিনছিলেন। তিনি বলেন, 'রমজান মাসে ইফতারে বিশেষ আয়োজন মানেই আখনি লাগবে। যেহেতু বাসায় রান্না করা বেশ কষ্টসাধ্য, তাই ভালো রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে নেওয়াটাই সাশ্রয়ী।' আরওবরিশালের যে সন্দেশের স্বাদ নিতে ভুলবেন না রেস্টুরেন্টে গরুর মাংসের আখনি কেজিপ্রতি ৩৮০ টাকা এবং মুরগির মাংসের আখনি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে রেস্টুরেন্টভেদে দাম ১০ বা ২০ টাকা কম-বেশি হতে পারে। সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি। ঢাকার বড় বড় ব্র্যান্ডের বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট সিলেটে আসছে। কালের পরিক্রমায় সিলেটি আখনির অনেক রেস্টুরেন্টও নাম পাল্টে বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ খাবারের চাহিদা এখনও ব্যাপক। মাঝেমধ্যে কাচ্চি বিরিয়ানির রসনায় সিলেটিরা বিলাস করলেও নিত্যদিনের রসনা বিলাসে এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আখনি। আরওরাজশাহীর কালাইরুটি-ভর্তার স্বাদ নিয়েছেন কি সিলেটে আখনির আগমন ও জনপ্রিয়তার ব্যাপারে নথিভুক্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা যায়, দিল্লির জনপ্রিয় এই খাবার সিলেট অঞ্চলে দিল্লি থেকেই এসেছে। ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে সুফি সাধক হযরত শাহজালাল (র) দিল্লি হয়ে সিলেট গৌড় রাজ্যের রাজা গোবিন্দকে পরাজিত করেন। দিল্লীর মসনদে তখন আলাউদ্দিন খিলজি। হযরত শাহজালাল (র) এর সিলেট বিজয়ের সময় তার সঙ্গে দিল্লী থেকে আসা খিলজি সৈনিকদের মাধ্যমেও এ অঞ্চলে আখনি বিস্তার লাভ করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। আখনি রান্নার রেসিপি আখনি রান্নার রেসিপি বাবুর্চিভেদে যেমন ভিন্ন ভিন্ন, তেমনি প্রতিটি পুরোনো বাড়িরই রয়েছে নিজস্ব রন্ধন পদ্ধতি। প্রায় ৫০ বছরের অভিজ্ঞ বাবুর্চি জামাল মিয়া এবং ১৫ বছরের অভিজ্ঞ বাবুর্চি ইমন মিয়া আখনি রান্নায় প্রায় অভিন্ন এক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তারা জানান, আখনি রান্নায় বিরিয়ানির মতো বাসমতি চাল নয়, বরং ছোট দানার সুগন্ধি চিনিগুঁড়া কিংবা কালিজিরা চাল ব্যবহার করা হয়। চালের সমপরিমাণ গরু বা খাসি কিংবা মুরগির ছোট করে কাটা মাংস ব্যবহার করতে হয়। তবে মাংসের পরিমাণ অনেকে চালের তিন ভাগের দুই ভাগ কিংবা অর্ধেকও রাখেন। প্রথমে বড় একটি হাঁড়িতে সয়াবিন তেল কিংবা ঘি গরম করে তাতে কুচি করা পেঁয়াজ দেওয়া হয়। তারপর এতে সিলেটের জৈন্তাপুরের তেজপাতার সঙ্গে দারুচিনি, এলাচ ও লবঙ্গ দিয়ে কষানো হয়। আরওনওগাঁর সাব্বীরের বিরিয়ানি: ৪০ বছর ধরে যার স্বাদ বেড়েই চলেছে পেঁয়াজ ভাজা ভাজা হয়ে এলে আদা ও রসুন বাটার সঙ্গে টুকরো করে কাটা টমেটো দেওয়া হয়। এরপর পরিমিত লবণ দিয়ে চিনাবাদাম বাটা দেওয়া হয়। সব মসলা কষানো হয়ে গেলে এবার এতে মাংস ঢেলে দেওয়া হয়। তারপর এতে জয়ত্রী ও জায়ফলের গুঁড়া দিয়ে বাড়তি আগুনে কষানো হয়। কষানোর মধ্যেই ধনে গুঁড়া, আস্ত জিরা, গুঁড়া জিরা, গুঁড়া পাঁচফোড়ন, আলু বোখারা দেওয়া হয়। আরও দেওয়া হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে আমের আচার। তারপর কিছুটা গরম পানি দিয়ে ঢাকনা লাগিয়ে মাংস রান্না করতে হয়। মাংস রান্না হয়ে এলে তাতে ছোট ছোট করে কেটে রাখা গাজর, আস্ত কিশমিশ, মটরশুঁটি ও কাঁচামরিচ দেওয়া হয়। সবকিছু ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দেওয়া হয়। এই পানি ফুটতে শুরু করলে আগে থেকে ধুয়ে রাখা চাল ঢেলে দিয়ে ভালো করে নেড়ে ভাত সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। ভাত প্রায় রান্না হয়ে এলে এতে পরিমিত ঘি ঢেলে দিয়ে হাঁড়ির মুখ ভালো করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় হাঁড়ির ঢাকনাতে জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে রাখা হয়। কিছুক্ষণ ভাপে রাখার পর ঢাকনা খুলে ভালো করে নেড়েচেড়ে দিলেই প্রস্তুত সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আখনি। বিরিয়ানি, তেহারি, আখনি—স্বাদের পার্থক্যই আসল বিরিয়ানিতে মসলাদার মাংস এবং চাল আলাদা রান্না করা হয় এবং পরে ধাপে ধাপে রেখে ভাপ দিয়ে মেশানো হয়। কিন্তু আখনিতে সরাসরি মসলাদার মাংসের ঝোলেই চাল দিয়ে রান্না করা হয়। তাই আখনিতে মসলার স্বাদ-গন্ধই মুখ্য। পাক্কি বিরিয়ানি নামে এক বিশেষ ধরনের বিরিয়ানি রান্না হয় ভারত এবং ঢাকায়। পাক্কি বিরিয়ানি মূলত একই হাঁড়িতে রান্না করা বিরিয়ানি। আখনিও মূলত এক ধরনের পাক্কি বিরিয়ানি। প্রথাগতভাবে বিরিয়ানি রান্নায় বেশি মসলা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া মাংসের টুকরাও থাকে বড়, দেওয়া হয় আলুও। সেই তুলনায় তেহারিতে ও আখনিতে কম মসলা ও ছোট ছোট মাংসের টুকরা ব্যবহার করা হয়। আবার তেহারির উৎপত্তি উত্তর ভারতের সুপ্রাচীন অযোধ্যাতে, অর্থাৎ এটি একটি আওয়াধি রেসিপি যা পরে ঢাকায় এসে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। আরওপুরান ঢাকায় ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বনাম ‘সব বাপের পোলায় খায়’ তেহারি মূলত রান্না হয় সরিষার তেলে, যার ফলে সরিষার ঘ্রাণটাই এখানে প্রাধান্য পায়। কিন্তু আখনিতে সরিষার তেলের বদলে সাধারণ সয়াবিন তেল ও ঘি ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক চাহিদার কারণে সিলেটের প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় আখনি। তাছাড়া বেশ কিছু বড় পরিসরের রেস্টুরেন্টও ভালো মানের আখনি পরিবেশন করে সুনাম কুড়িয়েছে। এ ছাড়াও ভালো আখনির চাহিদা থাকায় বেশ কিছু অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও প্রতি শুক্রবার বড় হাঁড়িতে আখনি রান্না করে চাহিদা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করছে। ইফতার বাজারে আখনির চাহিদা রমজান মাসে সিলেটের প্রতিটি রেস্টুরেন্টে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে আখনির উপস্থিতি থাকবেই। গরু ও মুরগি দুই রকম আখনিই ব্যাপক জনপ্রিয়। দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ আহমেদ জিন্দাবাজার এলাকার একটি রেস্টুরেন্ট থেকে গরুর মাংসের আখনি কিনছিলেন। তিনি বলেন, 'রমজান মাসে ইফতারে বিশেষ আয়োজন মানেই আখনি লাগবে। যেহেতু বাসায় রান্না করা বেশ কষ্টসাধ্য, তাই ভালো রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে নেওয়াটাই সাশ্রয়ী।' আরওবরিশালের যে সন্দেশের স্বাদ নিতে ভুলবেন না রেস্টুরেন্টে গরুর মাংসের আখনি কেজিপ্রতি ৩৮০ টাকা এবং মুরগির মাংসের আখনি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে রেস্টুরেন্টভেদে দাম ১০ বা ২০ টাকা কম-বেশি হতে পারে। সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি। ঢাকার বড় বড় ব্র্যান্ডের বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট সিলেটে আসছে। কালের পরিক্রমায় সিলেটি আখনির অনেক রেস্টুরেন্টও নাম পাল্টে বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ খাবারের চাহিদা এখনও ব্যাপক। মাঝেমধ্যে কাচ্চি বিরিয়ানির রসনায় সিলেটিরা বিলাস করলেও নিত্যদিনের রসনা বিলাসে এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আখনি। আরওরাজশাহীর কালাইরুটি-ভর্তার স্বাদ নিয়েছেন কি আখনি রান্নার রেসিপি বাবুর্চিভেদে যেমন ভিন্ন ভিন্ন, তেমনি প্রতিটি পুরোনো বাড়িরই রয়েছে নিজস্ব রন্ধন পদ্ধতি। প্রায় ৫০ বছরের অভিজ্ঞ বাবুর্চি জামাল মিয়া এবং ১৫ বছরের অভিজ্ঞ বাবুর্চি ইমন মিয়া আখনি রান্নায় প্রায় অভিন্ন এক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তারা জানান, আখনি রান্নায় বিরিয়ানির মতো বাসমতি চাল নয়, বরং ছোট দানার সুগন্ধি চিনিগুঁড়া কিংবা কালিজিরা চাল ব্যবহার করা হয়। চালের সমপরিমাণ গরু বা খাসি কিংবা মুরগির ছোট করে কাটা মাংস ব্যবহার করতে হয়। তবে মাংসের পরিমাণ অনেকে চালের তিন ভাগের দুই ভাগ কিংবা অর্ধেকও রাখেন। প্রথমে বড় একটি হাঁড়িতে সয়াবিন তেল কিংবা ঘি গরম করে তাতে কুচি করা পেঁয়াজ দেওয়া হয়। তারপর এতে সিলেটের জৈন্তাপুরের তেজপাতার সঙ্গে দারুচিনি, এলাচ ও লবঙ্গ দিয়ে কষানো হয়। আরওনওগাঁর সাব্বীরের বিরিয়ানি: ৪০ বছর ধরে যার স্বাদ বেড়েই চলেছে পেঁয়াজ ভাজা ভাজা হয়ে এলে আদা ও রসুন বাটার সঙ্গে টুকরো করে কাটা টমেটো দেওয়া হয়। এরপর পরিমিত লবণ দিয়ে চিনাবাদাম বাটা দেওয়া হয়। সব মসলা কষানো হয়ে গেলে এবার এতে মাংস ঢেলে দেওয়া হয়। তারপর এতে জয়ত্রী ও জায়ফলের গুঁড়া দিয়ে বাড়তি আগুনে কষানো হয়। কষানোর মধ্যেই ধনে গুঁড়া, আস্ত জিরা, গুঁড়া জিরা, গুঁড়া পাঁচফোড়ন, আলু বোখারা দেওয়া হয়। আরও দেওয়া হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে আমের আচার। তারপর কিছুটা গরম পানি দিয়ে ঢাকনা লাগিয়ে মাংস রান্না করতে হয়। মাংস রান্না হয়ে এলে তাতে ছোট ছোট করে কেটে রাখা গাজর, আস্ত কিশমিশ, মটরশুঁটি ও কাঁচামরিচ দেওয়া হয়। সবকিছু ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দেওয়া হয়। এই পানি ফুটতে শুরু করলে আগে থেকে ধুয়ে রাখা চাল ঢেলে দিয়ে ভালো করে নেড়ে ভাত সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। ভাত প্রায় রান্না হয়ে এলে এতে পরিমিত ঘি ঢেলে দিয়ে হাঁড়ির মুখ ভালো করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় হাঁড়ির ঢাকনাতে জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে রাখা হয়। কিছুক্ষণ ভাপে রাখার পর ঢাকনা খুলে ভালো করে নেড়েচেড়ে দিলেই প্রস্তুত সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আখনি। বিরিয়ানি, তেহারি, আখনি—স্বাদের পার্থক্যই আসল বিরিয়ানিতে মসলাদার মাংস এবং চাল আলাদা রান্না করা হয় এবং পরে ধাপে ধাপে রেখে ভাপ দিয়ে মেশানো হয়। কিন্তু আখনিতে সরাসরি মসলাদার মাংসের ঝোলেই চাল দিয়ে রান্না করা হয়। তাই আখনিতে মসলার স্বাদ-গন্ধই মুখ্য। পাক্কি বিরিয়ানি নামে এক বিশেষ ধরনের বিরিয়ানি রান্না হয় ভারত এবং ঢাকায়। পাক্কি বিরিয়ানি মূলত একই হাঁড়িতে রান্না করা বিরিয়ানি। আখনিও মূলত এক ধরনের পাক্কি বিরিয়ানি। প্রথাগতভাবে বিরিয়ানি রান্নায় বেশি মসলা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া মাংসের টুকরাও থাকে বড়, দেওয়া হয় আলুও। সেই তুলনায় তেহারিতে ও আখনিতে কম মসলা ও ছোট ছোট মাংসের টুকরা ব্যবহার করা হয়। আবার তেহারির উৎপত্তি উত্তর ভারতের সুপ্রাচীন অযোধ্যাতে, অর্থাৎ এটি একটি আওয়াধি রেসিপি যা পরে ঢাকায় এসে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। আরওপুরান ঢাকায় ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বনাম ‘সব বাপের পোলায় খায়’ তেহারি মূলত রান্না হয় সরিষার তেলে, যার ফলে সরিষার ঘ্রাণটাই এখানে প্রাধান্য পায়। কিন্তু আখনিতে সরিষার তেলের বদলে সাধারণ সয়াবিন তেল ও ঘি ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক চাহিদার কারণে সিলেটের প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় আখনি। তাছাড়া বেশ কিছু বড় পরিসরের রেস্টুরেন্টও ভালো মানের আখনি পরিবেশন করে সুনাম কুড়িয়েছে। এ ছাড়াও ভালো আখনির চাহিদা থাকায় বেশ কিছু অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও প্রতি শুক্রবার বড় হাঁড়িতে আখনি রান্না করে চাহিদা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করছে। ইফতার বাজারে আখনির চাহিদা রমজান মাসে সিলেটের প্রতিটি রেস্টুরেন্টে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে আখনির উপস্থিতি থাকবেই। গরু ও মুরগি দুই রকম আখনিই ব্যাপক জনপ্রিয়। দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ আহমেদ জিন্দাবাজার এলাকার একটি রেস্টুরেন্ট থেকে গরুর মাংসের আখনি কিনছিলেন। তিনি বলেন, 'রমজান মাসে ইফতারে বিশেষ আয়োজন মানেই আখনি লাগবে। যেহেতু বাসায় রান্না করা বেশ কষ্টসাধ্য, তাই ভালো রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে নেওয়াটাই সাশ্রয়ী।' আরওবরিশালের যে সন্দেশের স্বাদ নিতে ভুলবেন না রেস্টুরেন্টে গরুর মাংসের আখনি কেজিপ্রতি ৩৮০ টাকা এবং মুরগির মাংসের আখনি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে রেস্টুরেন্টভেদে দাম ১০ বা ২০ টাকা কম-বেশি হতে পারে। সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি। ঢাকার বড় বড় ব্র্যান্ডের বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট সিলেটে আসছে। কালের পরিক্রমায় সিলেটি আখনির অনেক রেস্টুরেন্টও নাম পাল্টে বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ খাবারের চাহিদা এখনও ব্যাপক। মাঝেমধ্যে কাচ্চি বিরিয়ানির রসনায় সিলেটিরা বিলাস করলেও নিত্যদিনের রসনা বিলাসে এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আখনি। আরওরাজশাহীর কালাইরুটি-ভর্তার স্বাদ নিয়েছেন কি পেঁয়াজ ভাজা ভাজা হয়ে এলে আদা ও রসুন বাটার সঙ্গে টুকরো করে কাটা টমেটো দেওয়া হয়। এরপর পরিমিত লবণ দিয়ে চিনাবাদাম বাটা দেওয়া হয়। সব মসলা কষানো হয়ে গেলে এবার এতে মাংস ঢেলে দেওয়া হয়। তারপর এতে জয়ত্রী ও জায়ফলের গুঁড়া দিয়ে বাড়তি আগুনে কষানো হয়। কষানোর মধ্যেই ধনে গুঁড়া, আস্ত জিরা, গুঁড়া জিরা, গুঁড়া পাঁচফোড়ন, আলু বোখারা দেওয়া হয়। আরও দেওয়া হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে আমের আচার। তারপর কিছুটা গরম পানি দিয়ে ঢাকনা লাগিয়ে মাংস রান্না করতে হয়। মাংস রান্না হয়ে এলে তাতে ছোট ছোট করে কেটে রাখা গাজর, আস্ত কিশমিশ, মটরশুঁটি ও কাঁচামরিচ দেওয়া হয়। সবকিছু ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দেওয়া হয়। এই পানি ফুটতে শুরু করলে আগে থেকে ধুয়ে রাখা চাল ঢেলে দিয়ে ভালো করে নেড়ে ভাত সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। ভাত প্রায় রান্না হয়ে এলে এতে পরিমিত ঘি ঢেলে দিয়ে হাঁড়ির মুখ ভালো করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় হাঁড়ির ঢাকনাতে জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে রাখা হয়। কিছুক্ষণ ভাপে রাখার পর ঢাকনা খুলে ভালো করে নেড়েচেড়ে দিলেই প্রস্তুত সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আখনি। বিরিয়ানি, তেহারি, আখনি—স্বাদের পার্থক্যই আসল বিরিয়ানিতে মসলাদার মাংস এবং চাল আলাদা রান্না করা হয় এবং পরে ধাপে ধাপে রেখে ভাপ দিয়ে মেশানো হয়। কিন্তু আখনিতে সরাসরি মসলাদার মাংসের ঝোলেই চাল দিয়ে রান্না করা হয়। তাই আখনিতে মসলার স্বাদ-গন্ধই মুখ্য। পাক্কি বিরিয়ানি নামে এক বিশেষ ধরনের বিরিয়ানি রান্না হয় ভারত এবং ঢাকায়। পাক্কি বিরিয়ানি মূলত একই হাঁড়িতে রান্না করা বিরিয়ানি। আখনিও মূলত এক ধরনের পাক্কি বিরিয়ানি। প্রথাগতভাবে বিরিয়ানি রান্নায় বেশি মসলা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া মাংসের টুকরাও থাকে বড়, দেওয়া হয় আলুও। সেই তুলনায় তেহারিতে ও আখনিতে কম মসলা ও ছোট ছোট মাংসের টুকরা ব্যবহার করা হয়। আবার তেহারির উৎপত্তি উত্তর ভারতের সুপ্রাচীন অযোধ্যাতে, অর্থাৎ এটি একটি আওয়াধি রেসিপি যা পরে ঢাকায় এসে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। আরওপুরান ঢাকায় ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বনাম ‘সব বাপের পোলায় খায়’ তেহারি মূলত রান্না হয় সরিষার তেলে, যার ফলে সরিষার ঘ্রাণটাই এখানে প্রাধান্য পায়। কিন্তু আখনিতে সরিষার তেলের বদলে সাধারণ সয়াবিন তেল ও ঘি ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক চাহিদার কারণে সিলেটের প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় আখনি। তাছাড়া বেশ কিছু বড় পরিসরের রেস্টুরেন্টও ভালো মানের আখনি পরিবেশন করে সুনাম কুড়িয়েছে। এ ছাড়াও ভালো আখনির চাহিদা থাকায় বেশ কিছু অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও প্রতি শুক্রবার বড় হাঁড়িতে আখনি রান্না করে চাহিদা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করছে। ইফতার বাজারে আখনির চাহিদা রমজান মাসে সিলেটের প্রতিটি রেস্টুরেন্টে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে আখনির উপস্থিতি থাকবেই। গরু ও মুরগি দুই রকম আখনিই ব্যাপক জনপ্রিয়। দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ আহমেদ জিন্দাবাজার এলাকার একটি রেস্টুরেন্ট থেকে গরুর মাংসের আখনি কিনছিলেন। তিনি বলেন, 'রমজান মাসে ইফতারে বিশেষ আয়োজন মানেই আখনি লাগবে। যেহেতু বাসায় রান্না করা বেশ কষ্টসাধ্য, তাই ভালো রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে নেওয়াটাই সাশ্রয়ী।' আরওবরিশালের যে সন্দেশের স্বাদ নিতে ভুলবেন না রেস্টুরেন্টে গরুর মাংসের আখনি কেজিপ্রতি ৩৮০ টাকা এবং মুরগির মাংসের আখনি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে রেস্টুরেন্টভেদে দাম ১০ বা ২০ টাকা কম-বেশি হতে পারে। সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি। ঢাকার বড় বড় ব্র্যান্ডের বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট সিলেটে আসছে। কালের পরিক্রমায় সিলেটি আখনির অনেক রেস্টুরেন্টও নাম পাল্টে বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ খাবারের চাহিদা এখনও ব্যাপক। মাঝেমধ্যে কাচ্চি বিরিয়ানির রসনায় সিলেটিরা বিলাস করলেও নিত্যদিনের রসনা বিলাসে এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আখনি। আরওরাজশাহীর কালাইরুটি-ভর্তার স্বাদ নিয়েছেন কি বিরিয়ানিতে মসলাদার মাংস এবং চাল আলাদা রান্না করা হয় এবং পরে ধাপে ধাপে রেখে ভাপ দিয়ে মেশানো হয়। কিন্তু আখনিতে সরাসরি মসলাদার মাংসের ঝোলেই চাল দিয়ে রান্না করা হয়। তাই আখনিতে মসলার স্বাদ-গন্ধই মুখ্য। পাক্কি বিরিয়ানি নামে এক বিশেষ ধরনের বিরিয়ানি রান্না হয় ভারত এবং ঢাকায়। পাক্কি বিরিয়ানি মূলত একই হাঁড়িতে রান্না করা বিরিয়ানি। আখনিও মূলত এক ধরনের পাক্কি বিরিয়ানি। প্রথাগতভাবে বিরিয়ানি রান্নায় বেশি মসলা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া মাংসের টুকরাও থাকে বড়, দেওয়া হয় আলুও। সেই তুলনায় তেহারিতে ও আখনিতে কম মসলা ও ছোট ছোট মাংসের টুকরা ব্যবহার করা হয়। আবার তেহারির উৎপত্তি উত্তর ভারতের সুপ্রাচীন অযোধ্যাতে, অর্থাৎ এটি একটি আওয়াধি রেসিপি যা পরে ঢাকায় এসে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। আরওপুরান ঢাকায় ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বনাম ‘সব বাপের পোলায় খায়’ তেহারি মূলত রান্না হয় সরিষার তেলে, যার ফলে সরিষার ঘ্রাণটাই এখানে প্রাধান্য পায়। কিন্তু আখনিতে সরিষার তেলের বদলে সাধারণ সয়াবিন তেল ও ঘি ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক চাহিদার কারণে সিলেটের প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় আখনি। তাছাড়া বেশ কিছু বড় পরিসরের রেস্টুরেন্টও ভালো মানের আখনি পরিবেশন করে সুনাম কুড়িয়েছে। এ ছাড়াও ভালো আখনির চাহিদা থাকায় বেশ কিছু অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও প্রতি শুক্রবার বড় হাঁড়িতে আখনি রান্না করে চাহিদা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করছে। ইফতার বাজারে আখনির চাহিদা রমজান মাসে সিলেটের প্রতিটি রেস্টুরেন্টে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে আখনির উপস্থিতি থাকবেই। গরু ও মুরগি দুই রকম আখনিই ব্যাপক জনপ্রিয়। দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ আহমেদ জিন্দাবাজার এলাকার একটি রেস্টুরেন্ট থেকে গরুর মাংসের আখনি কিনছিলেন। তিনি বলেন, 'রমজান মাসে ইফতারে বিশেষ আয়োজন মানেই আখনি লাগবে। যেহেতু বাসায় রান্না করা বেশ কষ্টসাধ্য, তাই ভালো রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে নেওয়াটাই সাশ্রয়ী।' আরওবরিশালের যে সন্দেশের স্বাদ নিতে ভুলবেন না রেস্টুরেন্টে গরুর মাংসের আখনি কেজিপ্রতি ৩৮০ টাকা এবং মুরগির মাংসের আখনি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে রেস্টুরেন্টভেদে দাম ১০ বা ২০ টাকা কম-বেশি হতে পারে। সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি। ঢাকার বড় বড় ব্র্যান্ডের বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট সিলেটে আসছে। কালের পরিক্রমায় সিলেটি আখনির অনেক রেস্টুরেন্টও নাম পাল্টে বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ খাবারের চাহিদা এখনও ব্যাপক। মাঝেমধ্যে কাচ্চি বিরিয়ানির রসনায় সিলেটিরা বিলাস করলেও নিত্যদিনের রসনা বিলাসে এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আখনি। আরওরাজশাহীর কালাইরুটি-ভর্তার স্বাদ নিয়েছেন কি তেহারি মূলত রান্না হয় সরিষার তেলে, যার ফলে সরিষার ঘ্রাণটাই এখানে প্রাধান্য পায়। কিন্তু আখনিতে সরিষার তেলের বদলে সাধারণ সয়াবিন তেল ও ঘি ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক চাহিদার কারণে সিলেটের প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় আখনি। তাছাড়া বেশ কিছু বড় পরিসরের রেস্টুরেন্টও ভালো মানের আখনি পরিবেশন করে সুনাম কুড়িয়েছে। এ ছাড়াও ভালো আখনির চাহিদা থাকায় বেশ কিছু অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও প্রতি শুক্রবার বড় হাঁড়িতে আখনি রান্না করে চাহিদা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করছে। ইফতার বাজারে আখনির চাহিদা রমজান মাসে সিলেটের প্রতিটি রেস্টুরেন্টে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে আখনির উপস্থিতি থাকবেই। গরু ও মুরগি দুই রকম আখনিই ব্যাপক জনপ্রিয়। দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ আহমেদ জিন্দাবাজার এলাকার একটি রেস্টুরেন্ট থেকে গরুর মাংসের আখনি কিনছিলেন। তিনি বলেন, 'রমজান মাসে ইফতারে বিশেষ আয়োজন মানেই আখনি লাগবে। যেহেতু বাসায় রান্না করা বেশ কষ্টসাধ্য, তাই ভালো রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে নেওয়াটাই সাশ্রয়ী।' আরওবরিশালের যে সন্দেশের স্বাদ নিতে ভুলবেন না রেস্টুরেন্টে গরুর মাংসের আখনি কেজিপ্রতি ৩৮০ টাকা এবং মুরগির মাংসের আখনি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে রেস্টুরেন্টভেদে দাম ১০ বা ২০ টাকা কম-বেশি হতে পারে। সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি। ঢাকার বড় বড় ব্র্যান্ডের বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট সিলেটে আসছে। কালের পরিক্রমায় সিলেটি আখনির অনেক রেস্টুরেন্টও নাম পাল্টে বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ খাবারের চাহিদা এখনও ব্যাপক। মাঝেমধ্যে কাচ্চি বিরিয়ানির রসনায় সিলেটিরা বিলাস করলেও নিত্যদিনের রসনা বিলাসে এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আখনি। আরওরাজশাহীর কালাইরুটি-ভর্তার স্বাদ নিয়েছেন কি রমজান মাসে সিলেটের প্রতিটি রেস্টুরেন্টে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে আখনির উপস্থিতি থাকবেই। গরু ও মুরগি দুই রকম আখনিই ব্যাপক জনপ্রিয়। দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ আহমেদ জিন্দাবাজার এলাকার একটি রেস্টুরেন্ট থেকে গরুর মাংসের আখনি কিনছিলেন। তিনি বলেন, 'রমজান মাসে ইফতারে বিশেষ আয়োজন মানেই আখনি লাগবে। যেহেতু বাসায় রান্না করা বেশ কষ্টসাধ্য, তাই ভালো রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে নেওয়াটাই সাশ্রয়ী।' আরওবরিশালের যে সন্দেশের স্বাদ নিতে ভুলবেন না রেস্টুরেন্টে গরুর মাংসের আখনি কেজিপ্রতি ৩৮০ টাকা এবং মুরগির মাংসের আখনি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে রেস্টুরেন্টভেদে দাম ১০ বা ২০ টাকা কম-বেশি হতে পারে। সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি। ঢাকার বড় বড় ব্র্যান্ডের বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট সিলেটে আসছে। কালের পরিক্রমায় সিলেটি আখনির অনেক রেস্টুরেন্টও নাম পাল্টে বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ খাবারের চাহিদা এখনও ব্যাপক। মাঝেমধ্যে কাচ্চি বিরিয়ানির রসনায় সিলেটিরা বিলাস করলেও নিত্যদিনের রসনা বিলাসে এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আখনি। আরওরাজশাহীর কালাইরুটি-ভর্তার স্বাদ নিয়েছেন কি রেস্টুরেন্টে গরুর মাংসের আখনি কেজিপ্রতি ৩৮০ টাকা এবং মুরগির মাংসের আখনি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে রেস্টুরেন্টভেদে দাম ১০ বা ২০ টাকা কম-বেশি হতে পারে। সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি। ঢাকার বড় বড় ব্র্যান্ডের বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট সিলেটে আসছে। কালের পরিক্রমায় সিলেটি আখনির অনেক রেস্টুরেন্টও নাম পাল্টে বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ খাবারের চাহিদা এখনও ব্যাপক। মাঝেমধ্যে কাচ্চি বিরিয়ানির রসনায় সিলেটিরা বিলাস করলেও নিত্যদিনের রসনা বিলাসে এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আখনি। আরওরাজশাহীর কালাইরুটি-ভর্তার স্বাদ নিয়েছেন কি
রমজানের ইফতার, ঈদের দুপুরের খাবার, ধর্মীয় আয়োজন কিংবা পারিবারিক উৎসব- সিলেটিদের পছন্দের তালিকায় সবার আগে যে সুস্বাদু খাবারটি থাকে, তা হচ্ছে আখনি।
ঈদে বানান সহজ ও সুস্বাদু ডেজার্ট মাহালাবিয়া
ঈদের দিন সকালে নাস্তার টেবিলে কিংবা দুপুরে ভারী খাবারের পর খুব সহজ কিন্তু দারুণ মজাদার ডেজার্ট দিয়ে কাউকে চমকে দিতে চান? তাহলে আপনার জন্য নিয়ে এসেছি কম সময়ে, ঝটপট তৈরি করা যাবে এমন একটি ডেজার্ট। পারস্য থেকে আসা এই খাবারটি মধ্যপ্রাচ্যে বেশ জনপ্রিয়। এটি তুরস্কে মুহাল্লেবি নামেও পরিচিত। মাহালাবিয়া মূলত দুধের পুডিং। রান্নাঘরে থাকা অল্প কিছু উপাদান দিয়ে ১০ মিনিটেই বানিয়ে ফেলা যায় এই মজাদার ডেজার্টটি। চালের গুঁড়ো বা কর্নস্টার্চ ব্যবহার করে এই সহজ ডেজার্টটি বানানো যায়। যদি কর্নস্টার্চ ব্যবহার করে ডেজার্টটি বানান তবে এটি খেতে হবে মসৃণ, মুখে দিলেই মিলিয়ে যাবে। তবে প্রাচীন পারস্যে দাদি-নানিরা চালের গুঁড়ো দিয়ে মাহালাবিয়া বানাতেন, যা খানিকটা দানাদানা থাকত। মাহালাবিয়া বানাতে প্রথমে একটি পাত্রে এক লিটার দুধ নিতে হবে। সেখান থেকে খানিকটা দুধ বাটিতে তুলে দুই টেবিল চামচ কর্নস্টার্চ বা সমপরিমাণ চালের গুঁড়ো, যেটাই আপনার হাতে নাগালে থাকবে তা গুলিয়ে নিন। তারপর স্বাদমতো চিনি, দুধে গোলানো চালের গুঁড়ো বা কর্নস্টার্চ সম্পূর্ণ দুধের সঙ্গে ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে। মাহালাবিয়ার স্বাদকে বহুগুণে বাড়াতে চাইলে এতে যোগ করতে হবে ২০০ গ্রাম এভাপোরেটেড মিল্ক বা ক্রিম। হাতে সময় থাকলে দুধকে ঘন জ্বাল করে বানিয়ে নিতে পারেন। নতুবা বাইরে থেকে কিনে এনে যোগ করতে পারেন। এবার সবকিছু ভালোভাবে মিশিয়ে  অনবরত নাড়তে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত এই নাড়ানাড়ির কাজ চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ না মিশ্রণটি ঘন হয়ে আসে। এবার আপনার পছন্দ অনুযায়ী এলাচ, গোলাপ জল বা কমলার নির্যাস যোগ করতে পারেন। আরব দেশে গোলাপজলের প্রচলনটাই বেশি। আর তুরস্কে কমলার ফ্লেভার বেশি জনপ্রিয়। খুব বড় কোন পাত্রে না ঢেলে ছোট ছোট স্বচ্ছ গ্লাসে মাহালাবিয়া ঢেলে নিতে হবে। ঠান্ডা হওয়ার জন্য কমপক্ষে কয়েক ঘণ্টা ফ্রিজে রাখতে হবে। এবার পরিবেশনের পালা। মাহালাবিয়ার আসল সৌন্দর্য পরিবেশনে। একে আকর্ষণীয় করতে পেস্তা বাদাম কুচি, শুকনো গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিতে পারেন। আবার রঙিন জেলি  বা ফলের পিউরি মাহালাবিয়ার ওপর ছড়িয়ে দিলেও বেশ আকর্ষণীয় লাগে। কুড়ানো নারকেল ও কিশমিশ দিয়েও পরিবেশন করা যায় মাহালাবিয়া।
ঈদের দিন সকালে নাস্তার টেবিলে কিংবা দুপুরে ভারী খাবারের পর খুব সহজ কিন্তু দারুণ মজাদার ডেজার্ট দিয়ে কাউকে চমকে দিতে চান? তাহলে আপনার জন্য নিয়ে এসেছি কম সময়ে, ঝটপট তৈরি করা যাবে এমন একটি ডেজার্ট।
মাশরুমের উপকারিতা, কীভাবে খাবেন
'ব্যাঙের ছাতা' হিসেবে পরিচিত মাশরুম খেতে চান না অনেকেই, অথচ এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। ‍মাশরুমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশির কাছ থেকে। মাশরুম কী পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, মাশরুম ছত্রাক পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। প্রায় ১৪ হাজার প্রজাতির মাশরুম এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে। তবে সব ধরনের মাশরুম খাওয়া যায় না। অনেক বিষাক্ত মাশরুম রয়েছে যেগুলো বনে জঙ্গলে পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে অর্গানিক বা নিজেদের চাষ করা মাশরুম খাওয়াই ভালো। যেমন- বাটান মাশরুম, ওয়েস্টার মাশরুম, পোর্টেবেলো মাশরুম এগুলো বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেশে মাশরুম ব্যাঙের ছাতা হিসেবেই অনেকের কাছে পরিচিত। এটিকে খাবার হিসেবে অনেকেই এখনও গ্রহণ করতে পারেননি। শহরের মানুষের মধ্যে মাশরুম খাওয়ার প্রবণতা বাড়লেও, সেটি এখনও খুব বেশি নয়। তবে যেখানে-সেখানে গজানো নয়, অর্গানিক বা নিজে চাষ করা মাশরুম খাওয়া নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত। অনেকেই জানেন না কীভাবে মাশরুম খেতে হবে, কীভাবে চাষ করা যায়। আবার মাশরুম বিষাক্ত কি না সেটি নিয়েও সংশয়ে থাকেন অনেকে। যে কারণে মাশরুমের চাহিদা কম, সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে না এটি দেশে। এ ছাড়া, মাশরুমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। যে কারণে গরু, খাসি কিংবা মুরগির মাংস খাওয়ার দিকে ঝোঁক বেশি। অথচ সঠিক উপায় যদি মাশরুম দিয়ে স্যুপ, সবজি কিংবা বিভিন্ন খাবার তৈরি করে খাওয়া যায় তাহলে সব বয়সী মানুষের প্রোটিনের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব হবে। মাশরুমের পুষ্টিগুণ পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, মাশরুমের কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। এতে প্রচুর প্রোটিন পাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে আরও আছে অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিবায়োটিক, জিঙ্ক,  মিনারেল, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি। মাশরুমের উপকারিতা ১. মাশরুমে লো ক্যালোরি থাকায় যারা ওজন কমাতে চান তারা খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। ২. পেশি বাড়াতে যারা বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খোঁজেন, তাদের জন্য মাশরুম প্রোটিনের সেরা উৎস হতে পারে। ৩. মাশরুমে পেনিসিলিন থাকে, যা এক রকম অ্যান্টিবায়োটিক যেটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আরওকুসুম গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেলে কি ওজন কমে ৪. মাশরুম ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে। ৫. ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক মাশরুম। ৬. হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে। ৭. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ৮. মাশরুমে থাকা পুষ্টি উপাদান ক্যানসার ও টিউমার প্রতিরোধে বেশ সাহায্য করে। ৯. শিশুদের হাড় ও দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে। ১০. অ্যানিমিয়া দূর করতে ভূমিকা রাখে মাশরুম। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন মাশরুম খাদ্যতালিকায় থাকলে বেশ উপকারে আসে এক্ষেত্রে। ১১. মাশরুম শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আরওভাতের সঙ্গে প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খাওয়া কি ভালো কীভাবে খাবেন সালাদ হিসেবে মাশরুম বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া মাশরুম স্যুপ, ক্রিম মাশরুপ স্যুপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। সবজির সঙ্গে মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন রেসিপি করে খাওয়া যেতে পারে। নুডুলসের সঙ্গে মাশরুম মিশিয়ে খেতে পারেন, ফ্রাই করেও খেতে পারেন। মাশরুমের পাউডার তৈরি করে নেওয়া যায়, স্যুপে আস্ত মাশরুম ব্যবহার না করে পাউডার আকারে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। সতর্কতা ও কারা খাবেন না কখনোই কাঁচা বা অল্প সেদ্ধ করে মাশরুম খাওয়া উচিত নয়। এতে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন ও হজমের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। মাশরুম বিষাক্ত কি না সেটি নিশ্চিত হয়ে খেতে হবে। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, বিশেষ করে মাশরুম খাওয়ার কারণে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা হয়, তাদের মাশরুম না খাওয়াই ভালো। মাশরুম যেহেতু ছত্রাকজনিত প্রোটিন তাই কিডনি রোগীরা এটি খাবেন না। যাদের হজমে সমস্যা হয়, পেটের নানা রকম সমস্যা থাকে, বার বার ডায়রিয়া হয় তাদের মাশরুম খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। আরওরসুনের যত উপকারিতা পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, মাশরুমের কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। এতে প্রচুর প্রোটিন পাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে আরও আছে অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিবায়োটিক, জিঙ্ক,  মিনারেল, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি। মাশরুমের উপকারিতা ১. মাশরুমে লো ক্যালোরি থাকায় যারা ওজন কমাতে চান তারা খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। ২. পেশি বাড়াতে যারা বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খোঁজেন, তাদের জন্য মাশরুম প্রোটিনের সেরা উৎস হতে পারে। ৩. মাশরুমে পেনিসিলিন থাকে, যা এক রকম অ্যান্টিবায়োটিক যেটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ৪. মাশরুম ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে। ৫. ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক মাশরুম। ৬. হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে। ৭. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ৮. মাশরুমে থাকা পুষ্টি উপাদান ক্যানসার ও টিউমার প্রতিরোধে বেশ সাহায্য করে। ৯. শিশুদের হাড় ও দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে। ১০. অ্যানিমিয়া দূর করতে ভূমিকা রাখে মাশরুম। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন মাশরুম খাদ্যতালিকায় থাকলে বেশ উপকারে আসে এক্ষেত্রে। ১১. মাশরুম শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কীভাবে খাবেন সালাদ হিসেবে মাশরুম বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া মাশরুম স্যুপ, ক্রিম মাশরুপ স্যুপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। সবজির সঙ্গে মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন রেসিপি করে খাওয়া যেতে পারে। নুডুলসের সঙ্গে মাশরুম মিশিয়ে খেতে পারেন, ফ্রাই করেও খেতে পারেন। মাশরুমের পাউডার তৈরি করে নেওয়া যায়, স্যুপে আস্ত মাশরুম ব্যবহার না করে পাউডার আকারে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। সতর্কতা ও কারা খাবেন না কখনোই কাঁচা বা অল্প সেদ্ধ করে মাশরুম খাওয়া উচিত নয়। এতে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন ও হজমের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। মাশরুম বিষাক্ত কি না সেটি নিশ্চিত হয়ে খেতে হবে। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, বিশেষ করে মাশরুম খাওয়ার কারণে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা হয়, তাদের মাশরুম না খাওয়াই ভালো। মাশরুম যেহেতু ছত্রাকজনিত প্রোটিন তাই কিডনি রোগীরা এটি খাবেন না। যাদের হজমে সমস্যা হয়, পেটের নানা রকম সমস্যা থাকে, বার বার ডায়রিয়া হয় তাদের মাশরুম খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। আরওরসুনের যত উপকারিতা সালাদ হিসেবে মাশরুম বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া মাশরুম স্যুপ, ক্রিম মাশরুপ স্যুপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। সবজির সঙ্গে মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন রেসিপি করে খাওয়া যেতে পারে। নুডুলসের সঙ্গে মাশরুম মিশিয়ে খেতে পারেন, ফ্রাই করেও খেতে পারেন। মাশরুমের পাউডার তৈরি করে নেওয়া যায়, স্যুপে আস্ত মাশরুম ব্যবহার না করে পাউডার আকারে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। সতর্কতা ও কারা খাবেন না কখনোই কাঁচা বা অল্প সেদ্ধ করে মাশরুম খাওয়া উচিত নয়। এতে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন ও হজমের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। মাশরুম বিষাক্ত কি না সেটি নিশ্চিত হয়ে খেতে হবে। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, বিশেষ করে মাশরুম খাওয়ার কারণে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা হয়, তাদের মাশরুম না খাওয়াই ভালো। মাশরুম যেহেতু ছত্রাকজনিত প্রোটিন তাই কিডনি রোগীরা এটি খাবেন না। যাদের হজমে সমস্যা হয়, পেটের নানা রকম সমস্যা থাকে, বার বার ডায়রিয়া হয় তাদের মাশরুম খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
'ব্যাঙের ছাতা' হিসেবে পরিচিত মাশরুম খেতে চান না অনেকেই, অথচ এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। ‍মাশরুমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশির কাছ থেকে।
ঢাকায় উটের দুধের চা পাবেন যেখানে
এই রমজানে ইফতারের পর এক কাপ দুধ চা খেতে চাইবেন না, এমন মানুষ খুব কম আছেন দেশে। একজন প্রকৃত চাপ্রেমীর সারাদিনের ক্লান্তিকে নিমিষেই দূর করে দিতে পারে কড়া লিকারের ও ঘন দুধের এক কাপ চা। আর সেটা যদি হয় ভিন্ন স্বাদের 'উটের দুধের চা', তাহলে তো কথাই নেই! যারা ভোজনরসিক কিংবা নতুন কিছু চেখে দেখতে পছন্দ করেন তারা ছুটে যান বিভিন্ন জায়গায় নতুন অভিজ্ঞতার খোঁজে। সেই রকম এক নতুন অভিজ্ঞতা পেতে চাইলে যেতে হবে গুলশান ২ এর ল্যাবএইড হাসপাতালের অপর পাশের ৫২ নম্বর সড়কের 'ব্যাচেলর এক্সপ্রেস' নামের ক্যাফেতে। ঢাকার প্রথম উটের দুধ চা পাওয়া যাচ্ছে এই ক্যাফেতেই। ক্যাফেটি চালু হয়েছে গত ৬ ফেব্রুয়ারি। মরুভূমির জাহাজখ্যাত এই উটের দুধ নিয়ে আসা হচ্ছে বাংলাদেশে। তাতেই বানানো হচ্ছে ভিন্ন স্বাদের ও মধ্যপ্রাচ্যে বহুল প্রচলিত উটের দুধের চা। দুই তরুণ বন্ধু মাহবুব হাসান ও আমিনুল ইসলাম 'ব্যাচেলর এক্সপ্রেসে'র উদ্যোক্তা। 'এত কিছু থাকতে উটের দুধের চা কেন?'  জানতে চাইলে মাহবুব হাসান বলেন, 'আমাদের দেশে এই দুধ পাওয়া যায় না। ভিন্ন রকমের স্বাদ, খেতে সুস্বাদু আর এর বেশ কিছু উপকারিতাও আছে। এ ছাড়া সবাই নতুন কিছু করতে চায়। ভালো চললে মানুষ আসবে। তখন এই চায়ের পাশাপাশি এখানকার অন্য খাবারও খাবে।' আরবদেশের সহভলভ্য এই দুধ আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। তাহলে কীভাবে তারা নিয়ে আসছেন এই দুধ? উত্তরে মাহবুব হাসান বলেন, 'আরব দেশে আমার ব্যবসা আছে। আমি আসার সময় ৫ কেজি নিয়ে আসি। সেই দিয়েই চলছে। তবে এখানকার কিছু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ঈদের পর থেকে তারা আমাদের দুধ দেবেন।' কথা বলতে বলতেই প্যাকেটের প্রক্রিয়াজাতকৃত দুধ দেখাচ্ছিলেন হাসান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্যামেলিসাস ব্র্যান্ডের তৈরি গুঁড়ো দুধ দিয়ে চা বানান তারা। 'ব্যাচেলর এক্সপ্রেসে' প্রতি কাপ উটের দুধের চায়ের দাম ৪০০ টাকা। বর্তমান বাজার এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই দামটা বেশি হয়ে গেল কি না জিজ্ঞেস করতেই মাহবুব হাসান বলেন, 'এই দুধ নিয়ে আসার জন্য অনেক খরচ হয়ে যায়। প্রতি কেজি গুঁড়ো দুধের দাম পড়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এ ছাড়া এটা কেউ প্রতিদিন খাবে না। সেখান থেকে আমার কাছে মনে হয়েছে এর দাম খুব বেশি না।' ক্যাফেতে কথা হয় একটি বায়িং হাউজের কর্মকর্তা কামাল উদ্দীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'আমি পরিচিত একজনের কাছ থেকে শুনে দুই বন্ধুকে নিয়ে এসেছি।' চায়ের স্বাদ কেমন এবং সেই স্বাদ অনুযায়ী দাম ঠিক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'স্বাদটা খুব প্রখর। ভিন্ন রকম লাগছে মুখে, এখানে দুধের পার্থক্যটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি। তবে দামের দিক থেকে আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। ভিন্নতা খুঁজতে পছন্দ করি বলে এই দামে চা খেয়ে দেখলাম।' তার বন্ধু নাসির উদ্দীন বাদল বলেন, 'আসলে প্রথমবার খাচ্ছি, স্বাদটা আমাদের দেশের মানুষের জন্য ঠিকঠাকই বলে মনে হচ্ছে। আর পরিবর্তন করার জায়গা বললে লিকারের পরিমাণটা আরেকটু কম হলে হয়তো ভালো। তবে খেতে অসাধারণ লাগছে, ভিন্ন রকমের।' ছবি: স্টার দেশে কোনোভাবে এই দুধ সংগ্রহ করা যায় কি না জানতে চাইলাম ক্যাফের মালিক মাহবুব হাসানের কাছে। তিনি বললেন, 'ঢাকার আরামবাগে একটি ফার্ম আছে, যেখানে আমি কথা বলেছি। সামনে তারা আমাদের তরল দুধ দিতে পারবে বলে জানিয়েছে।' ব্যাচেলর এক্সপ্রেস নামের এই ক্যাফেতে অনান্য হরেক রকমের চাও পাওয়া যায়। এ ছাড়া এখানে পিজ্জা, পাস্তা, বার্গারসহ বিভিন্ন ফাস্টফুড পাওয়া যায়। ক্যাফেটি খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত। ক্যাফেতে কথা হয় একটি বায়িং হাউজের কর্মকর্তা কামাল উদ্দীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'আমি পরিচিত একজনের কাছ থেকে শুনে দুই বন্ধুকে নিয়ে এসেছি।' চায়ের স্বাদ কেমন এবং সেই স্বাদ অনুযায়ী দাম ঠিক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'স্বাদটা খুব প্রখর। ভিন্ন রকম লাগছে মুখে, এখানে দুধের পার্থক্যটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি। তবে দামের দিক থেকে আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। ভিন্নতা খুঁজতে পছন্দ করি বলে এই দামে চা খেয়ে দেখলাম।' তার বন্ধু নাসির উদ্দীন বাদল বলেন, 'আসলে প্রথমবার খাচ্ছি, স্বাদটা আমাদের দেশের মানুষের জন্য ঠিকঠাকই বলে মনে হচ্ছে। আর পরিবর্তন করার জায়গা বললে লিকারের পরিমাণটা আরেকটু কম হলে হয়তো ভালো। তবে খেতে অসাধারণ লাগছে, ভিন্ন রকমের।' ছবি: স্টার দেশে কোনোভাবে এই দুধ সংগ্রহ করা যায় কি না জানতে চাইলাম ক্যাফের মালিক মাহবুব হাসানের কাছে। তিনি বললেন, 'ঢাকার আরামবাগে একটি ফার্ম আছে, যেখানে আমি কথা বলেছি। সামনে তারা আমাদের তরল দুধ দিতে পারবে বলে জানিয়েছে।' ব্যাচেলর এক্সপ্রেস নামের এই ক্যাফেতে অনান্য হরেক রকমের চাও পাওয়া যায়। এ ছাড়া এখানে পিজ্জা, পাস্তা, বার্গারসহ বিভিন্ন ফাস্টফুড পাওয়া যায়। ক্যাফেটি খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত। দেশে কোনোভাবে এই দুধ সংগ্রহ করা যায় কি না জানতে চাইলাম ক্যাফের মালিক মাহবুব হাসানের কাছে। তিনি বললেন, 'ঢাকার আরামবাগে একটি ফার্ম আছে, যেখানে আমি কথা বলেছি। সামনে তারা আমাদের তরল দুধ দিতে পারবে বলে জানিয়েছে।' ব্যাচেলর এক্সপ্রেস নামের এই ক্যাফেতে অনান্য হরেক রকমের চাও পাওয়া যায়। এ ছাড়া এখানে পিজ্জা, পাস্তা, বার্গারসহ বিভিন্ন ফাস্টফুড পাওয়া যায়। ক্যাফেটি খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত।
এই রমজানে ইফতারের পর এক কাপ দুধ চা খেতে চাইবেন না, এমন মানুষ খুব কম আছেন দেশে। একজন প্রকৃত চাপ্রেমীর সারাদিনের ক্লান্তিকে নিমিষেই দূর করে দিতে পারে কড়া লিকারের ও ঘন দুধের এক কাপ চা। আর সেটা যদি হয় ভিন্ন স্বাদের 'উটের দুধের চা', তাহলে তো কথাই নেই!
বিশ্বজুড়ে ইফতারের ৫ ঐতিহ্যবাহী পানীয়
আমাদের দেশের মতো সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবার ইফতারেই থাকে নিজেদের বানানো নানা রকম শরবত ও পানীয়। এসব পানীয় বা শরবত ঐতিহ্যভেদে আলাদা হয়। আজ বিশ্বের এমন ৫টি ঐতিহ্যবাহী পানীয় সম্পর্কে জানব। কামার আল-দ্বীন কামার আল-দ্বীন একটি জনপ্রিয় মধ্যপ্রাচ্যের পানীয়, যা রমজান মাসে ইফতারে পান করা হয়। এটি শুকনো এপ্রিকট পেস্ট, পানি, চিনি এবং পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি করা হয়। খেতে খুবই মজাদার এবং পুষ্টিকরও। উত্তর আফ্রিকাতেও গরমের মাসগুলোতে ইফতারের পানীয় হিসেবে খাওয়া হয় এটি। আরওপুরান ঢাকায় ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বনাম ‘সব বাপের পোলায় খায়’ জাল্লাব এটিও একটি গ্রীষ্মকালীন পানীয় যা মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। রমজানে ইফতারে রাখা হয় এটি। গোলাপ জল, বরফ এবং ভেজানো বাদাম দিয়ে খেজুর এবং আঙুরের গুড়ের পেস্ট মিশিয়ে তৈরি করা হয় এটি। জাল্লাব শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে, সঙ্গে পুষ্টিও জোগায়। এই অঞ্চলের সবাই কম-বেশি এটি ইফতারে রাখেন। কারকাডে ফুল থেকে তৈরি এই পানীয় কড়া গন্ধ এবং রঙের জন্য পরিচিত। এটি গরম বা ঠান্ডা যেকোনোভাবেই উপভোগ করা যায়। বিশ্বের বেশকিছু স্থানে ইফতারের খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয় এটি। একইসঙ্গে বিয়ে এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানেও এটি জনপ্রিয়। যদিও ঠান্ডা কারকাডে ইফতারে বেশি পছন্দ করা হয়। এস কোপিওর বা ম্যাকাপুনো ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনের জনপ্রিয় ইফতার পানীয় এস কোপিওর। এটি এস কোপিওর বা ম্যাকাপুনো নামের বিশেষ নারকেলের সঙ্গে কমলার রস বা গোলাপের শরবত, চিনি, আগার আগার পাউডার দিয়ে তৈরি করা হয়। আরওইফতারে ঝটপট ও ভিন্নধর্মী পাঁচ পদ সাহলাব সাহলাব একটি ঘন ঐতিহ্যবাহী লেবানিজ পানীয়। যদিও এটি অনেকটা পুডিংয়ের মতো খাওয়া হয় এর ঘনত্বের কারণে। এটি গরম দুধ, বাদাম এবং দারুচিনি দিয়ে তৈরি করা হয় এবং ইফতারে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করা হয়। সাহলাব  রমজান মাসে সিরিয়া, জর্ডান এবং ফিলিস্তিনেও জনপ্রিয়। প্রতিটি পানীয়ই সহজ কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি। তাই চাইলে আপনিও ঘরে বসে বানিয়ে ফেলতে পারেন যেকোনো একটি। ইফতারে যোগ করতে পারেন ভিন্ন এক স্বাদ। আরওস্বাদে-গন্ধে মন মাতানো জামুর্কীর কালিদাসের সন্দেশ জাল্লাব এটিও একটি গ্রীষ্মকালীন পানীয় যা মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। রমজানে ইফতারে রাখা হয় এটি। গোলাপ জল, বরফ এবং ভেজানো বাদাম দিয়ে খেজুর এবং আঙুরের গুড়ের পেস্ট মিশিয়ে তৈরি করা হয় এটি। জাল্লাব শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে, সঙ্গে পুষ্টিও জোগায়। এই অঞ্চলের সবাই কম-বেশি এটি ইফতারে রাখেন। কারকাডে ফুল থেকে তৈরি এই পানীয় কড়া গন্ধ এবং রঙের জন্য পরিচিত। এটি গরম বা ঠান্ডা যেকোনোভাবেই উপভোগ করা যায়। বিশ্বের বেশকিছু স্থানে ইফতারের খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয় এটি। একইসঙ্গে বিয়ে এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানেও এটি জনপ্রিয়। যদিও ঠান্ডা কারকাডে ইফতারে বেশি পছন্দ করা হয়। এস কোপিওর বা ম্যাকাপুনো ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনের জনপ্রিয় ইফতার পানীয় এস কোপিওর। এটি এস কোপিওর বা ম্যাকাপুনো নামের বিশেষ নারকেলের সঙ্গে কমলার রস বা গোলাপের শরবত, চিনি, আগার আগার পাউডার দিয়ে তৈরি করা হয়। আরওইফতারে ঝটপট ও ভিন্নধর্মী পাঁচ পদ সাহলাব সাহলাব একটি ঘন ঐতিহ্যবাহী লেবানিজ পানীয়। যদিও এটি অনেকটা পুডিংয়ের মতো খাওয়া হয় এর ঘনত্বের কারণে। এটি গরম দুধ, বাদাম এবং দারুচিনি দিয়ে তৈরি করা হয় এবং ইফতারে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করা হয়। সাহলাব  রমজান মাসে সিরিয়া, জর্ডান এবং ফিলিস্তিনেও জনপ্রিয়। প্রতিটি পানীয়ই সহজ কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি। তাই চাইলে আপনিও ঘরে বসে বানিয়ে ফেলতে পারেন যেকোনো একটি। ইফতারে যোগ করতে পারেন ভিন্ন এক স্বাদ। আরওস্বাদে-গন্ধে মন মাতানো জামুর্কীর কালিদাসের সন্দেশ এটিও একটি গ্রীষ্মকালীন পানীয় যা মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। রমজানে ইফতারে রাখা হয় এটি। গোলাপ জল, বরফ এবং ভেজানো বাদাম দিয়ে খেজুর এবং আঙুরের গুড়ের পেস্ট মিশিয়ে তৈরি করা হয় এটি। জাল্লাব শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে, সঙ্গে পুষ্টিও জোগায়। এই অঞ্চলের সবাই কম-বেশি এটি ইফতারে রাখেন। কারকাডে ফুল থেকে তৈরি এই পানীয় কড়া গন্ধ এবং রঙের জন্য পরিচিত। এটি গরম বা ঠান্ডা যেকোনোভাবেই উপভোগ করা যায়। বিশ্বের বেশকিছু স্থানে ইফতারের খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয় এটি। একইসঙ্গে বিয়ে এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানেও এটি জনপ্রিয়। যদিও ঠান্ডা কারকাডে ইফতারে বেশি পছন্দ করা হয়। এস কোপিওর বা ম্যাকাপুনো ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনের জনপ্রিয় ইফতার পানীয় এস কোপিওর। এটি এস কোপিওর বা ম্যাকাপুনো নামের বিশেষ নারকেলের সঙ্গে কমলার রস বা গোলাপের শরবত, চিনি, আগার আগার পাউডার দিয়ে তৈরি করা হয়। সাহলাব সাহলাব একটি ঘন ঐতিহ্যবাহী লেবানিজ পানীয়। যদিও এটি অনেকটা পুডিংয়ের মতো খাওয়া হয় এর ঘনত্বের কারণে। এটি গরম দুধ, বাদাম এবং দারুচিনি দিয়ে তৈরি করা হয় এবং ইফতারে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করা হয়। সাহলাব  রমজান মাসে সিরিয়া, জর্ডান এবং ফিলিস্তিনেও জনপ্রিয়। প্রতিটি পানীয়ই সহজ কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি। তাই চাইলে আপনিও ঘরে বসে বানিয়ে ফেলতে পারেন যেকোনো একটি। ইফতারে যোগ করতে পারেন ভিন্ন এক স্বাদ। আরওস্বাদে-গন্ধে মন মাতানো জামুর্কীর কালিদাসের সন্দেশ সাহলাব একটি ঘন ঐতিহ্যবাহী লেবানিজ পানীয়। যদিও এটি অনেকটা পুডিংয়ের মতো খাওয়া হয় এর ঘনত্বের কারণে। এটি গরম দুধ, বাদাম এবং দারুচিনি দিয়ে তৈরি করা হয় এবং ইফতারে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করা হয়। সাহলাব  রমজান মাসে সিরিয়া, জর্ডান এবং ফিলিস্তিনেও জনপ্রিয়। প্রতিটি পানীয়ই সহজ কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি। তাই চাইলে আপনিও ঘরে বসে বানিয়ে ফেলতে পারেন যেকোনো একটি। ইফতারে যোগ করতে পারেন ভিন্ন এক স্বাদ।
আমাদের দেশের মতো সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবার ইফতারেই থাকে নিজেদের বানানো নানা রকম শরবত ও পানীয়। এসব পানীয় বা শরবত ঐতিহ্যভেদে আলাদা হয়।
ম্যাজিকের নাম ড্রাই শ্যাম্পু
হুটহাট কোনো কোনো অনুষ্ঠানে যেতে হবে, কিন্তু চুলের অবস্থা ভালো না। যেটুকু সময় আছে তাতে চুল ভিজিয়ে শ্যাম্পু করাও সম্ভব না। এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে ড্রাই শ্যাম্পু। ঝটপট স্প্রে, সঙ্গে সঙ্গে ঝলমলে চুল। ড্রাই শ্যাম্পু সাধারণত স্টার্চ উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। এটি স্কাল্পকে রাখে শুষ্ক, ফলে দু-একদিন না ধোয়ার পরেও তৈলাক্ত দেখায় না। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ড্রাই শ্যাম্পু হতে পারে আপনার জন্য আলাদিনের চেরাগ, বাঁচাবে অনেকটা সময়। তবে, এ ক্ষেত্রেও এমন কিছু সাধারণ ভুল আছে যা খুশকির মতো ফ্লেক্স, নিস্তেজ ও শুষ্ক চুলের দিকে নিয়ে যেতে পারে। যেভাবে করবেন ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার— ১. ঠিক রঙ বেছে নিন বাদামি চুলে কালো শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুলে ফ্লেক্স দেখা যাবে এবং চুলও নিস্তেজ হয়ে পড়বে। যেকোনো রঙ নেওয়ার পরিবর্তে নিজের চুলের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বা কাছাকাছি রঙের শ্যাম্পু বেছে নিন। ২. ভালো মতো ঝাঁকিয়ে নিন শ্যাম্পু খোলার আগে অবশ্যই ভালো মতো বোতলটি ঝাঁকিয়ে নেবেন। স্টার্চ অনেক সময় বোতলের নিচের অংশে পড়ে থাকে। ভালো মতো ঝাঁকিয়ে নিলে মিশ্রণের সব উপাদান একই অনুপাতে থাকবে। ৩. মাথার ত্বকের খুব কাছাকাছি স্প্রে করবেন না শুষ্ক চুলে ড্রাই শ্যাম্পু মাথা থেকে চার থেকে ছয় ইঞ্চি দূরে ধরে সরাসরি গোঁড়ায় স্প্রে করুন। ১২ ইঞ্চি দূরে রেখে স্প্রে করলেও ড্রাই শ্যাম্পু কাজ করবে। পাউডার বেসড শ্যাম্পু হলে স্কাল্পের কাছাকাছি ছড়িয়ে দিন। সরাসরি স্কাল্পে দেবেন না। ৪. ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করুন এক জায়গায় অনবরত স্প্রে করতে থাকবেন না। সম্পূর্ণ মাথায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে স্প্রে করুন। এক জায়গায় ক্রমাগত স্প্রে করতে থাকলে সেখানে স্পট বা সাদা সাদা হয়ে যায়। ৫. ড্রাই শ্যাম্পুর ব্যবহার শুধুমাত্র তেলতেলে স্থানে সারা মাথায় ড্রাই শ্যাম্পু স্প্রে করবেন না, শুধু উপরের দিকে দিন। আপনার চুলের নীচের অংশটি তেলতেলে হয় না, তাই নিচের দিকে স্প্রে করবেন না। এতে চুল দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ৬. অত্যধিক ব্যবহার না করা চুল যখন তৈলাক্ত হয়, তখন ড্রাই শ্যাম্পু একটি ভালো সমাধান। কিন্তু, সবসময় ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করলে সেটা আপনার চুলের জন্য ক্ষতিকর। সাময়িকভাবে চুল ঝলমল করলেও অতিরিক্ত ব্যবহারে চুল হয়ে পড়বে শুষ্ক, নিস্তেজ। যখন প্রয়োজন হবে তখন অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। ৭. সেট হওয়ার সময় দিন ড্রাই শ্যাম্পু দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুল আঁচড়াবেন না। কিছুক্ষণ সময় দিতে হবে এটি কাজ করার জন্য। ৮. ম্যাসাজ করুন ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহারের পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর হাত দিয়ে ম্যাসাজ করুন। তা না করলে এটি কেবল আপনার চুলের উপরে বসে থাকবে এবং স্কাল্পে গিয়ে কাজ করবে না। তারপর চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে ফেলুন। এতে সাদা সাদা হয়ে থাকার সম্ভাবনা থাকবে না। ৯. প্রতিদিন ব্যবহার করবেন না কোনোভাবেই ড্রাই শ্যাম্পু প্রতিদিন ব্যবহার করবেন না। এতে মাথার লোমকূপ বন্ধ হয়ে স্কাল্পের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি চুলের গোঁড়া দুর্বল করে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে এবং ত্বকের সমস্যা, যেমন: ডার্মাটাইটিস ও ব্রণ হতে পারে।
হুটহাট কোনো কোনো অনুষ্ঠানে যেতে হবে, কিন্তু চুলের অবস্থা ভালো না। যেটুকু সময় আছে তাতে চুল ভিজিয়ে শ্যাম্পু করাও সম্ভব না। এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে ড্রাই শ্যাম্পু। ঝটপট স্প্রে, সঙ্গে সঙ্গে ঝলমলে চুল।
ক্যানসার কেন হয়, প্রতিরোধে করণীয়
ক্যানসার মরণব্যাধি রোগ হওয়া সত্ত্বেও তা সম্পর্কে মানুষ কতটা সচেতন? ক্যানসার কেন হয় এবং এই রোগ প্রতিরোধে করণীয় কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক গণস্বাস্থ্য কমিউনিটি বেজড ক্যান্সার হাসপাতালের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ও বাংলাদেশ ক্যানসার ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের কাছ থেকে। ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ক্যানসার সম্পর্কে জানার আগে বুঝতে হবে টিউমার কী। মানুষের শরীরে কোষের বিভাজন হয়। অর্থাৎ স্বাভাবিক নিয়মে একটা কোষ থেকে অনেকগুলো ভাগ হয় শরীরের প্রয়োজনে। হঠাৎ করে যদি শরীরের প্রয়োজন ছাড়া, নিয়ম-নীতি, নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোষ ভাগ হতে থাকে, তখন অনেক অতিরিক্ত কোষের সমষ্টি হয়ে চাকা বা পিণ্ডের মতো হয়, সেটাকে বলা হয় টিউমার। এই টিউমার দুই ধরনের হয়। ১. বিনাইন টিউমার বিনাইন টিউমার অক্ষতিকারক। এই টিউমার শরীরের যে অঙ্গে অর্থাৎ যে কোষ বা টিস্যুতে হবে, সেই টিস্যুর মধ্যেই থাকবে। টিউমার যত বড় হোক কিংবা ছোট, টিস্যুর সীমানার বাইরে যাবে না, শরীরের অন্য কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করবে না। ২. ম্যালিগনেন্ট টিউমার ম্যালিগনেন্ট টিউমার ক্ষতিকারক। এটি শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে উৎপত্তি হয় সেখানে থাকে না। আশপাশের টিস্যুকে সরাসরি আক্রান্ত করতে পারে। আবার শরীরের লোসিকা নালীর মাধ্যমে আশেপাশের গ্রন্থিগুলো যদি আক্রান্ত হয় আর কোনো কারণে যদি রক্ত প্রবাহের মধ্যে মিশে যায়, তাহলে শরীরের যেকোনো জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্যই এটা ম্যালিগনেন্ট, আর এজন্যই এটাকে ক্যানসার বলা হয়। ডা. রাসকিন বলেন, বংশগত, পরিবেশগত ও কিছু জীবনাচরণের কারণেই ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হয়। যেমন: বংশগত কারণ বংশগত বা জেনেটিক কারণে অনেকে ক্যানসারে আক্রান্ত হন। যেমন: ব্রেস্ট ক্যানসার যদি মায়ের দিকের নিকট আত্মীয় মা, খালা, বড় বোন, নানি কেউ আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অনেক শিশুদের চোখের পর্দায় রেটিনোব্লাস্টোমা নামের টিউমার থেকে ক্যানসার হয়, সেটি বংশগত কারণেই। পরিবেশগত কারণ ক্যানসার হওয়ার জন্য পরিবেশগত কারণের মধ্যে ভৌত পদার্থ, রাসায়নিক পদার্থ ও জীবাণুজাতীয় পদার্থ দায়ী। যেমন: ১. কেমিক্যাল বা রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে যত ধরনের তামাক জাতীয় পদার্থ আছে তা শরীরের ৫০ শতাংশ ক্যানসারের জন্য দায়ী। ফুসফুস ক্যানসারের জন্য প্রায় ৯০ শতাংশ দায়ী তামাক। তামাকের মধ্যে ক্যানসার সৃষ্টিকারী নানা উপাদান থাকে। ২. ফিজিক্যাল বা ভৌত কারণের মধ্যে প্রধানত রেডিয়েশন ক্যানসারের জন্য দায়ী। প্রয়োজনের অতিরিক্ত এক্স-রে করা হলে লিউকোমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার হতে পারে। আবার ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত গামা রে যদি শরীরের সুস্থ টিস্যুর ওপর পড়ে, তাহলে সেখানেও ক্যানসার হতে পারে। এ ছাড়াও সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি যদি দীর্ঘসময় শরীরে পড়ে, তাহলে ত্বকের ক্যানসার হতে পারে। ৩. বায়োলজিক্যাল বা জীবাণু জাতীয় পদার্থের মধ্যে নানা ধরনের জিনিস রয়েছে, যা ক্যানসারের জন্য দায়ী। যেমন: ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, প্যারাসাইট সবগুলোর মধ্যেই কিছু কিছু আছে, যা ক্যানসার সৃষ্টি করে। এর মধ্যে এইচ পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া আছে, যার জন্য পাকস্থলীতে ক্যানসার হয়। এ ছাড়া হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে যদি ইনফেকশন ক্রনিক হয়, তাহলে লিভার ক্যানসার হতে পারে। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের যদি ক্রনিক ইনফেকশন হয়, তাহলে মেয়েদের জরায়ুমুখের ক্যানসার হতে পারে। পায়ুপথের, মুখের, খাদ্যনালির ক্যানসার হতে পারে। আরওপারকিনসনস রোগ কেন হয়, প্রতিরোধে করণীয় কী অনিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইলের কারণে ১. ওরাল হাইজিন যেমন দরকার ওরাল ক্যানসার থেকে রক্ষা পেতে, তেমনি ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা দরকার বিশেষ করে মেয়েদের সারভাইভাল ক্যানসার থেকে সুরক্ষার জন্য। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ২. অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন যারা খান, যার মধ্যে ফাইবার কম থাকে, যারা চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খান, তাদের কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে নারীরা যদি এ ধরনের খাবার বেশি খায়, তাহলে মোটা হওয়া ও ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকবে, ওবেসিটি হবে। আর ওবেসিটি যত বেশি হবে, ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকিও তত বাড়বে। ৩. যারা বেশিরভাগ সময় শুয়ে-বসে থাকে, হাঁটা-চলা করে না, ব্যায়াম করে না, তাদের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। ৪. বাল্যবিবাহ, অল্প বয়সে সন্তান হওয়া, বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া, ঘন ঘন সন্তান জন্ম ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব থাকলে জরায়ুমুখের ক্যানসার হতে পারে। আবার ৩০ বছর বয়সের পরে বিয়ে হলে, সন্তানকে স্তন্যদান না করলে নারীদের ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। ৫. মাল্টিপল সেক্সুয়াল পার্টনার ও অস্বাভাবিক যৌন আচরণের কারণে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের ইনফেকশন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। ৬. অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে মুখের ক্যানসার থেকে শুরু করে খাদ্যনালী, পাকস্থলী ও লিভার ক্যানসার হতে পারে। আরওসিজোফ্রেনিয়া কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয় ১. তামাক জাতীয় জিনিস ও অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে। ২. বাল্যবিবাহ রোধ করলে, সন্তানকে স্তন্যদান করলে, ওরাল ও ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। ৩. শাকসবজি, ফলমূল, বিটা ক্যারোটিন ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে, যা ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দেয়। একইসঙ্গে চর্বিযুক্ত, অস্বাস্থ্যকর ও জাঙ্ক ফুড পরিহার করতে হবে। ৪. ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি বাড়াতে হবে, নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস ও ব্যায়াম করতে হবে। ৫. হেপাটাইটিস 'বি'র ভ্যাকসিন নিতে হবে ক্যানসার প্রতিরোধে। এখন শিশুদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয় টিকা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। এ ছাড়া অন্যরাও এই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। ৬. হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, যেটা ৯৯ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যানসারের জন্য দায়ী, এটি প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আছে। নয় থেকে ১৪ বছর বয়স এই ভ্যাকসিনের উপযুক্ত সময়। এ ছাড়া ২৫ বা ৪০ বছর বয়সেও এই ভ্যাকসিন নিলে কিছুটা সুরক্ষা দেবে। ৭. মাল্টিপল সেক্সুয়াল পার্টনার ও অস্বাভাবিক যৌন আচরণ পরিহার করতে হবে। ৮. অপরিকল্পিত নগরায়ন বন্ধ করতে হবে। নিয়মনীতি বাস্তবায়ন, খেলার মাঠ, হাঁটার জন্য ফুটপাত রাখতে হবে। ৯. ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে সর্বস্তরে। আরওশিশুর কৃমি হয়েছে কীভাবে বুঝবেন, প্রতিরোধের উপায় বংশগত বা জেনেটিক কারণে অনেকে ক্যানসারে আক্রান্ত হন। যেমন: ব্রেস্ট ক্যানসার যদি মায়ের দিকের নিকট আত্মীয় মা, খালা, বড় বোন, নানি কেউ আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অনেক শিশুদের চোখের পর্দায় রেটিনোব্লাস্টোমা নামের টিউমার থেকে ক্যানসার হয়, সেটি বংশগত কারণেই। পরিবেশগত কারণ ক্যানসার হওয়ার জন্য পরিবেশগত কারণের মধ্যে ভৌত পদার্থ, রাসায়নিক পদার্থ ও জীবাণুজাতীয় পদার্থ দায়ী। যেমন: ১. কেমিক্যাল বা রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে যত ধরনের তামাক জাতীয় পদার্থ আছে তা শরীরের ৫০ শতাংশ ক্যানসারের জন্য দায়ী। ফুসফুস ক্যানসারের জন্য প্রায় ৯০ শতাংশ দায়ী তামাক। তামাকের মধ্যে ক্যানসার সৃষ্টিকারী নানা উপাদান থাকে। ২. ফিজিক্যাল বা ভৌত কারণের মধ্যে প্রধানত রেডিয়েশন ক্যানসারের জন্য দায়ী। প্রয়োজনের অতিরিক্ত এক্স-রে করা হলে লিউকোমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার হতে পারে। আবার ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত গামা রে যদি শরীরের সুস্থ টিস্যুর ওপর পড়ে, তাহলে সেখানেও ক্যানসার হতে পারে। এ ছাড়াও সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি যদি দীর্ঘসময় শরীরে পড়ে, তাহলে ত্বকের ক্যানসার হতে পারে। ৩. বায়োলজিক্যাল বা জীবাণু জাতীয় পদার্থের মধ্যে নানা ধরনের জিনিস রয়েছে, যা ক্যানসারের জন্য দায়ী। যেমন: ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, প্যারাসাইট সবগুলোর মধ্যেই কিছু কিছু আছে, যা ক্যানসার সৃষ্টি করে। এর মধ্যে এইচ পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া আছে, যার জন্য পাকস্থলীতে ক্যানসার হয়। এ ছাড়া হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে যদি ইনফেকশন ক্রনিক হয়, তাহলে লিভার ক্যানসার হতে পারে। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের যদি ক্রনিক ইনফেকশন হয়, তাহলে মেয়েদের জরায়ুমুখের ক্যানসার হতে পারে। পায়ুপথের, মুখের, খাদ্যনালির ক্যানসার হতে পারে। ১. ওরাল হাইজিন যেমন দরকার ওরাল ক্যানসার থেকে রক্ষা পেতে, তেমনি ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা দরকার বিশেষ করে মেয়েদের সারভাইভাল ক্যানসার থেকে সুরক্ষার জন্য। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ২. অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন যারা খান, যার মধ্যে ফাইবার কম থাকে, যারা চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খান, তাদের কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে নারীরা যদি এ ধরনের খাবার বেশি খায়, তাহলে মোটা হওয়া ও ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকবে, ওবেসিটি হবে। আর ওবেসিটি যত বেশি হবে, ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকিও তত বাড়বে। ৩. যারা বেশিরভাগ সময় শুয়ে-বসে থাকে, হাঁটা-চলা করে না, ব্যায়াম করে না, তাদের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। ৪. বাল্যবিবাহ, অল্প বয়সে সন্তান হওয়া, বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া, ঘন ঘন সন্তান জন্ম ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব থাকলে জরায়ুমুখের ক্যানসার হতে পারে। আবার ৩০ বছর বয়সের পরে বিয়ে হলে, সন্তানকে স্তন্যদান না করলে নারীদের ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। ৫. মাল্টিপল সেক্সুয়াল পার্টনার ও অস্বাভাবিক যৌন আচরণের কারণে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের ইনফেকশন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। ৬. অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে মুখের ক্যানসার থেকে শুরু করে খাদ্যনালী, পাকস্থলী ও লিভার ক্যানসার হতে পারে। ১. তামাক জাতীয় জিনিস ও অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে। ২. বাল্যবিবাহ রোধ করলে, সন্তানকে স্তন্যদান করলে, ওরাল ও ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। ৩. শাকসবজি, ফলমূল, বিটা ক্যারোটিন ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে, যা ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দেয়। একইসঙ্গে চর্বিযুক্ত, অস্বাস্থ্যকর ও জাঙ্ক ফুড পরিহার করতে হবে। ৪. ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি বাড়াতে হবে, নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস ও ব্যায়াম করতে হবে। ৫. হেপাটাইটিস 'বি'র ভ্যাকসিন নিতে হবে ক্যানসার প্রতিরোধে। এখন শিশুদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয় টিকা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। এ ছাড়া অন্যরাও এই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। ৬. হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, যেটা ৯৯ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যানসারের জন্য দায়ী, এটি প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আছে। নয় থেকে ১৪ বছর বয়স এই ভ্যাকসিনের উপযুক্ত সময়। এ ছাড়া ২৫ বা ৪০ বছর বয়সেও এই ভ্যাকসিন নিলে কিছুটা সুরক্ষা দেবে। ৭. মাল্টিপল সেক্সুয়াল পার্টনার ও অস্বাভাবিক যৌন আচরণ পরিহার করতে হবে। ৮. অপরিকল্পিত নগরায়ন বন্ধ করতে হবে। নিয়মনীতি বাস্তবায়ন, খেলার মাঠ, হাঁটার জন্য ফুটপাত রাখতে হবে। ৯. ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে সর্বস্তরে।
ক্যানসার মরণব্যাধি রোগ হওয়া সত্ত্বেও তা সম্পর্কে মানুষ কতটা সচেতন? ক্যানসার কেন হয় এবং এই রোগ প্রতিরোধে করণীয় কী?
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন সভাপতি মিশা, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২০২৬ মেয়াদের নির্বাচনে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মিশা সওদাগর। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। মিশা সওদাগর পেয়েছেন ২৬৫ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদ কলি পেয়েছেন ১৭০ ভোট। অন্যদিকে ২২৫ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তার চেয়ে ১৭ ভোট কম পেয়ে পরাজিত হয়েছেন নিপুণ আক্তার। এছাড়া সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন মাসুম পারভেজ রুবেল (২৩১) ও ডি এ তায়েব (২৩৪), সহ-সাধারণ সম্পাদক আরমান (২৩৭), সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরী (২৫৫), আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো (২৯৬), দফতর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর (২৪৫), সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক মামনুন হাসান ইমন (২৩৫) এবং কোষাধ্যক্ষ পদপ্রার্থী কমল (২৩১)। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মিশা-ডিপজল পরিষদ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন নয় জন। তারা হলেন সুচরিতা (২২৮ ভোট), রোজিনা (২৪৩ ভোট), আলীরাজ (২৩৯ ভোট), সুব্রত, দিলারা ইয়াসমিন (২১৮ ভোট), শাহনূর (২৪৫ ভোট), নানা শাহ (২১০ ভোট), রত্না কবির (২৬৩ ভোট) ও চুন্নু (২৪৮ ভোট)। কলি-নিপুণ পরিষদ থেকে রিয়ানা পারভিন পলি (২২০ ভোট) ও সনি রহমান (২৩০ ভোট) নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বিএফডিসিতে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয় ভোট চলে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণের পর ভোট গণনা শুরু হয় রাত ৮টায়। সারারাত শেষে সকাল ৭টার দিকে প্রাথমিকভাবে ভোট ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার খোরশেদ আলম খসরু।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২০২৬ মেয়াদের নির্বাচনে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মিশা সওদাগর। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল।
বাংলার গল্প বলার ঢংয়ে কাজলরেখা বানিয়েছি, তামিল বা বম্বের সিনেমা বানাইনি: গিয়াস উদ্দিন সেলিম
'মনপুরা' খ্যাত পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম এবার নির্মাণ করেছেন 'কাজলরেখা'। মৈমনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমাটি ঈদের দিন মুক্তি পেয়েছে। আজ নবম দিন চলছে মুক্তির। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে এই সিনেমার হল সংখ্যা বেড়েছে। আগের হলগুলোও রয়েছে, ঢাকার বাইরেও প্রদর্শিত হচ্ছে। নওগাঁ তাজ সিনেমাহলে আজ মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। আগামী সপ্তাহে আরও বেশ কয়েকটি হলে মুক্তি পাবে। এসব তথ্য জানিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কাজলরেখা নিয়ে কথা বলেছেন পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম। গিয়াস উদ্দিন সেলিম। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ এই পরিচালক বলেন, 'কাজলরেখা সিনেমার দর্শক দিন দিন বাড়ছে। ভিড়ের মধ্যেও আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছে। পরিচালক হিসেবে আমি খুশি।' তিনি আরও বলেন, 'তৃতীয় সপ্তাহে সিঙ্গেল স্ক্রিন আরও বাড়বে। দীর্ঘদিন ধরে মানসম্মত সিনেমার যারা দর্শক, তারা এটি দেখছেন এবং সামনেও দেখবেন। এটা আশার কথা।' কাজলরেখা প্রসঙ্গে গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, 'দেশজ ভঙ্গি ও কৃষ্টি-কালচার বুঝতেই এমন সিনেমা। তামিল কিংবা বম্বের সিনেমা তো বানাইনি। বাংলার গল্প বলার ঢং নিয়ে কাজলরেখা বানিয়েছি। আমার দেশের দর্শকদের রুচির মতো করে কাজলরেখা বানিয়েছি। কাজলরেখা একটি মিউজিক্যাল ফিল্ম।' ইতোমধ্যে ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। দর্শকদের প্রতিক্রিয়া সরাসরি দেখেছেন। দর্শকরাও তার সঙ্গে সামনি-সামনি কথা বলেছেন। তিনি বলেন, 'কাজলরেখা দেখে আমার দর্শকরা আপ্লুত। দর্শকরা তাদের ভালোলাগার কথা সরাসরি জানিয়েছেন। তাদের চোখে-মুখে মুগ্ধতা দেখেছি।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আগামী সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জে হল ভিজিট করতে যাব। আরও কিছু পরিকল্পনা আছে হল ভিজিট নিয়ে। দর্শকদের বলব, দেশীয় ভালো সিনেমার সঙ্গে থাকুন।' 'আমরা একটা শান্ত-সুন্দর সিনেমা বানিয়েছি। ধীরে ধীরে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়তেই থাকবে। পরিচালক হিসেবে এটাই ভালো খবর', যোগ করেন তিনি। এই পরিচালক বলেন, 'কাজলরেখা সিনেমার দর্শক দিন দিন বাড়ছে। ভিড়ের মধ্যেও আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছে। পরিচালক হিসেবে আমি খুশি।' তিনি আরও বলেন, 'তৃতীয় সপ্তাহে সিঙ্গেল স্ক্রিন আরও বাড়বে। দীর্ঘদিন ধরে মানসম্মত সিনেমার যারা দর্শক, তারা এটি দেখছেন এবং সামনেও দেখবেন। এটা আশার কথা।' কাজলরেখা প্রসঙ্গে গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, 'দেশজ ভঙ্গি ও কৃষ্টি-কালচার বুঝতেই এমন সিনেমা। তামিল কিংবা বম্বের সিনেমা তো বানাইনি। বাংলার গল্প বলার ঢং নিয়ে কাজলরেখা বানিয়েছি। আমার দেশের দর্শকদের রুচির মতো করে কাজলরেখা বানিয়েছি। কাজলরেখা একটি মিউজিক্যাল ফিল্ম।' ইতোমধ্যে ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। দর্শকদের প্রতিক্রিয়া সরাসরি দেখেছেন। দর্শকরাও তার সঙ্গে সামনি-সামনি কথা বলেছেন। তিনি বলেন, 'কাজলরেখা দেখে আমার দর্শকরা আপ্লুত। দর্শকরা তাদের ভালোলাগার কথা সরাসরি জানিয়েছেন। তাদের চোখে-মুখে মুগ্ধতা দেখেছি।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আগামী সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জে হল ভিজিট করতে যাব। আরও কিছু পরিকল্পনা আছে হল ভিজিট নিয়ে। দর্শকদের বলব, দেশীয় ভালো সিনেমার সঙ্গে থাকুন।' 'আমরা একটা শান্ত-সুন্দর সিনেমা বানিয়েছি। ধীরে ধীরে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়তেই থাকবে। পরিচালক হিসেবে এটাই ভালো খবর', যোগ করেন তিনি।
'মনপুরা' খ্যাত পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম এবার নির্মাণ করেছেন 'কাজলরেখা'। মৈমনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমাটি ঈদের দিন মুক্তি পেয়েছে। আজ নবম দিন চলছে মুক্তির।
শিল্পী সমিতির ভোটে নেই তারকাশিল্পীরা, নায়ক রুবেলের ক্ষোভ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) আজ শুক্রবার চলছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোটগ্রহণ। আজ সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই ভোট চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ভোটার উপস্থিতি কম। অনেক তারকাশিল্পীকে সেখানে দেখা যায়নি। তারকাশিল্পীদের মধ্যে শাকিব খান শুটিংয়ে ভারতে, মৌসুমী আমেরিকায় ও নায়ক ফেরদৌস কানাডায়। দুপুর পর্যন্ত তেমন কোনো তারকাশিল্পীর দেখা মেলেনি। নির্বাচনে সভাপতি পদের প্রার্থী অভিনেতা মাহমুদ কলি বলেন, ভোটার উপস্থিতি এখন কম থাকলেও দুপুরের পর থেকে বাড়বে। আনন্দঘন পরিবেশে, সৌহার্দপূর্ণভাবে যাতে ভোটগ্রহণ শেষ হয়, এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। আশা করছি চলচ্চিত্রের মানুষেরা সুচিন্তিত মতামত দিয়ে কলি-নিপুণ প্যানেলকে জয়যুক্ত করবে। এফডিসির শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করায় সেখানে বেশ কড়াকড়ি রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নায়ক রুবেল বলেন, 'নির্বাচন নিয়ে আমাদের মধ্যে বিরোধ থাকতে পারে। তবে আমি মনে করি, এটা মাত্র ৫-৭ দিনের জন্য। এরপর তো আবার ভাই-ব্রাদার। আমি ৭-৮ বার নির্বাচিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলাম। ৯০ সাল থেকে নির্বাচন করি। এভাবে প্রশাসনের পাহারায় নির্বাচন দেখি নাই। আমরা সবাই আনন্দ করতে করতেই ভোট দিয়েছি। নায়ক আলমগীর বা উজ্জ্বলের মতো লোককে যদি আইডি কার্ড দেখিয়ে ঢুকতে হয়, তাহলে সেটা দুঃখজনক।'
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) আজ শুক্রবার চলছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোটগ্রহণ।
১৮ বছর পর পর্দায় জুটি হবেন সুরিয়া-জ্যোতিকা?
দক্ষিণ ভারতের আলোচিত তারকা দম্পতি সুরিয়া-জ্যোতিকা। পারিবারিকভাবে এক ছাদের নিচে তাদের বসবাস হলেও দীর্ঘদিন জুটি হয়ে সিনেমায় দেখা যায়নি তাদের। অথচ একসময় নিয়মিত পর্দায় দেখা যেত এই জুটিকে। তারপর পেরিয়ে গেছে আঠারো বছর, এই আঠারো বছরে কোনো সিনেমায় জুটি হতে দেখা যায়নি সুরিয়া-জ্যোতিকাকে। পিঙ্কভিলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম আলোচিত জুটি সুরিয়া-জ্যোতিকা। একাধিক সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করার পর ২০০৬ সালে জ্যোতিকার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন কঙ্গুভা অভিনেতা সুরিয়া। সে সময় তারা একসঙ্গে সাতটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু তারপর জ্যোতিকা বিরতি ভেঙে অভিনয়ে ফিরলেও কোনো সিনেমায় স্ক্রিন শেয়ার করেননি এই তারকা দম্পতি। কিন্তু এবার ভক্তদের অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, সুরিয়া ও জ্যোতিকা শিগগিরই একটি সিনেমার জন্য আবার একত্রিত হতে পারেন। যদিও এ নিয়ে বিশদ বিবরণ এখনো জানাতে পারেনি পিঙ্কভিলা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বিস্তারিত তথ্য এখনো জানা যায়নি। কিন্তু গুঞ্জন ছড়িয়েছে, এই সিনেমাটি বেঙ্গালুরু ডেজের জন্য পরিচিত পাওয়া অঞ্জলি মেনন বা সিলুকারুপেট্টি খ্যাত হালিতা শামীম পরিচালনা করবেন। সুরিয়া ও জ্যোতিকা তামিল সিনেমার দর্শকপ্রিয় ও আলোচিত অন-স্ক্রিন জুটি। পুভেল্লাম কেট্টুপ্পার থেকে শুরু করে এই জুটির শেষ সিনেমা সিলুনু ওরু কাধাল বেশ হিট হয়েছিল। তাদের ঝুলিতে আছে পেরাঝাগান এবং কাখা কাখার মতো মনে রাখার মতো সিনেমা। এই তারকা জুটির সফলতার কারণে ভক্তরা রূপালী পর্দায় তাদের আবারও জুটি হয়ে প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় আছেন। বিশেষ করে জ্যোতিকা অভিনয়ে ফেরার পর থেকে। যদি গুঞ্জনটি সত্যি হয়, তাহলে অবশ্যই ভক্তদের জন্য একটি চমক হবে। বিশেষ করে যারা এই জুটির তাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন তাদের জন্য। সুরিয়ার পরবর্তী সিনেমা 'কঙ্গুভা' একটি বহুল প্রত্যাশিত পিরিয়ডিক অ্যাকশন ফিল্ম। ২০২২ সালে বক্স অফিসে ভালো পারফর্ম না করা ইথারক্কুম থুনিন্ধওয়ান মুক্তির পর, ভক্তরা অধীর আগ্রহে তার স্বরূপে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। শিবা পরিচালিত ও স্টুডিও গ্রিন প্রযোজিত কঙ্গুভা সিনেমার আরও দেখা যাবে ববি দেওল এবং দিশা পাটানিকে। এই সিনেমার মাধ্যমে তামিল চলচ্চিত্রে তাদের আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। এছাড়াও সিনেমাটির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন- কমেডি ক্যারেক্টার আর্টিস্ট যোগী বাবু এবং খ্যাতিমান অভিনেতা জগপতি বাবু। দেবী শ্রী প্রসাদ সিনেমাটির সংগীত পরিচালনা করছেন। গুঞ্জন অনুযায়ী, সিনেমাটির ছয়টি ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন সুরিয়া। এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি অবতার প্রকাশ পেয়েছে, যা ইতোমধ্যে কঙ্গুভা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে ভিন্ন রকমের প্রত্যাশা তৈরি করেছে। এক সাক্ষাত্কারে সিনেমাটির লেখক মদন কার্কি উল্লেখ করেছিলেন, এটি ঐতিহ্যবাহী পিরিয়ড ড্রামা থেকে বিচ্যুত এবং বিকল্প সময়ের অ্যাকশন ফ্লিক হিসেবে দেখা উচিত। সিনেমাটি দশটি ভিন্ন ভাষায় মুক্তি পেতে চলেছে। কঙ্গুভা শঙ্করের ইন্ডিয়ান টু এবং থালাপাতির গ্রেটেস্ট অব অল টাইমসহ তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে প্রত্যাশিত সিনেমাগুলোর একটি।
দক্ষিণ ভারতের আলোচিত তারকা দম্পতি সুরিয়া-জ্যোতিকা। পারিবারিকভাবে এক ছাদের নিচে তাদের বসবাস হলেও দীর্ঘদিন জুটি হয়ে সিনেমায় দেখা যায়নি তাদের। অথচ একসময় নিয়মিত পর্দায় দেখা যেত এই জুটিকে। তারপর পেরিয়ে গেছে আঠারো বছর, এই আঠারো বছরে কোনো সিনেমায় জুটি হতে দেখা যায়নি সুরিয়া-জ্যোতিকাকে।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোট চলছে, রাতের মধ্যে ফল
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। দুপুরে কিছু সময় বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট চলবে। রাতের মধ্যে ফলাফল জানানো হবে। শিল্পী সমিতির নির্বাচন কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এবার নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৫৭১ জন। এর মধ্যে নতুন ভোটার হয়েছেন ৫০ জন। গত নির্বাচনে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল বিজয়ী হয়ে শিল্পী সমিতি থেকে বাদ পড়া ১০৩ জনকে শিল্পীকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ২১টি পদে ৬ জন স্বতন্ত্রসহ ২টি প্যানেল থেকে ৪৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুটি প্যানেল হলো মিশা-ডিপজল ও মাহমুদ কলি-নিপুণ। শিল্পী সমিতির নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন খোরশেদ আলম খসরু। তার সঙ্গে সদস্য হিসেবে আছেন এ জে রানা ও বিএইচ নিশান। শিল্পী সমিতির নির্বাচন কমিশনার খোরশেদ আলম খসরু বলেন, 'এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মোট ভোটার আছেন ৫৭১ জন। নির্বাচনে যেন কোনোপ্রকার ঝামেলা না হয়, সুষ্ঠু পরিবেশে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা হয়েছে। গতবারের কোনো প্রভাব যেন এই নির্বাচনে না পড়ে সেটাও খেয়াল রাখছি। বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠ, সুন্দর, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে আশা করছি।' মাহমুদ কলি-নিপুণ প্যানেলে প্রার্থীরা হলেন সহ-সভাপতি পদে ড্যানি সিডাক ও অমিত হাসান, সহ-সাধারণ সম্পাদক বাপ্পি সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক অঞ্জনা রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মারুফ আকিব, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক কাবিলা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক মামনুন হাসান ইমন ও কোষাধ্যক্ষ পদে অভিনেতা আজাদ খান। কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদের প্রার্থীরা হলেন- সুজাতা আজিম, নাদের চৌধুরী, পীরজাদা হারুন, পলি, জেসমিন আক্তার, তানভীর তনু, মো.সাইফুল, সাদিয়া মির্জা, সনি রহমান, হেলেনা জাহাঙ্গীর, সাইফ খান। মিশা-ডিপজল পরিষদে সহ-সভাপতি মাসুম পারভেজ রবেল, সহ-সভাপতি ডি এ তায়েব, সহ-সাধারণ সম্পাদক আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক ডন এবং কোষাধ্যক্ষ পদপ্রার্থী কমল। কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচন করছেন অভিনেত্রী সুচরিতা, রোজিনা, আলীরাজ, সুব্রত, দিলারা ইয়াসমিন, শাহনূর, নানা শাহ, রত্না কবির, চুন্নু, সাঞ্জু জন, ফিরোজ মিয়া।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে।
শিল্পী সমিতির নির্বাচন কাল, কী প্রতিশ্রুতি দিলেন দুই সভাপতি পদপ্রার্থী
আগামীকাল শুক্রবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন হবে। এবারের নির্বাচনে ২১টি পদে ৬ জন স্বতন্ত্রসহ ২টি প্যানেল থেকে ৪৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুটি প্যানেল হলো মিশা-ডিপজল প্যানেল ও মাহমুদ কলি-নিপুণ প্যানেল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন খোরশেদ আলম খসরু। তার সঙ্গে সদস্য হিসেবে আছেন এ জে রানা ও বিএইচ নিশান। শিল্পী সমিতির আগামীকালের নির্বাচন নিয়ে দুই প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী মিশা সওদাগর ও মাহমুদ কলি দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। মাহমুদ কলি বলেন, 'যেদিন নিশ্চিত করলাম চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন করছি, সেদিন থেকেই সবাইকে বলছি এফডিসিতে যেন সব শিল্পীর মিলনমেলা হয়, উৎসবমুখর পরিবেশে সবার উপস্থিতিতে নির্বাচন হয়। কারো মধ্যে যেন কোনো প্রকার ভুল বোঝাবুঝি, ঝগড়া না হয় এটাই আমার পরম চাওয়া। নির্বাচনের ব্যাপারে আমি শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। শিল্পীদের স্বার্থে কাজ করে যেতে চাই। আমরা অসহায় শিল্পী ও তার পরিবারের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করব, চলচ্চিত্র শিল্পের সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে শ্রদ্ধা, সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার ব্যবস্থা করব, দেশের ও সমাজের কাছে শিল্পীদের সম্মান বয়ে আনব।' মিশা সওদাগর বলেন, 'আমরা শিল্পীদের সর্বোচ্চ স্বার্থ সংরক্ষণ করার চেষ্টা করব। বাণিজ্যিক সিনেমাকে বেশি অনুদান দেওয়ার অনুরোধ করব, যে দেশের বাণিজ্যিক সিনেমা যত চলবে সে দেশের ইন্ড্রাস্ট্রি তত ঘুরে দাঁড়াবে। এফডিসিভিত্তিক সিনেমা যেন বেশি হয়, সেটা করার চেষ্টা করব। শিল্পী সমিতির সদস্যরা যেন আজীবন সদস্য থাকতে পারের।  আমরা আশা করছি জিতব। যদি  জিততে নাও পারি, অসুবিধা নেই। শিল্পীরা আমরা একই পরিবার। গতবার পরাজিত হয়ে বিজয়ীদের গলায় মালা দিয়েছি, এবারও তাই দেবো।'
আগামীকাল শুক্রবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন হবে। এবারের নির্বাচনে ২১টি পদে ৬ জন স্বতন্ত্রসহ ২টি প্যানেল থেকে ৪৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী: মিশা সওদাগর
রাত পোহালেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। গত নির্বাচনের মতো দুটো প্যানেল অংশ নিচ্ছে এবারও। মিশা সওদাগর ও ডিপজল একটি প্যানেলে লড়ছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে। অপর প্যানেলে লড়ছেন একসময়ের সাড়া জাগানো নায়ক মাহমুদ কলি ও নায়িকা নিপুণ। এবারের নির্বাচন নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে মিশা সওদাগর বলেন, 'আমার বিশ্বাস আমরা জয়ী। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। শিল্পীরা আমাদের প্যানেলকে ভোট দেবেন।' এতটা আত্মবিশ্বাসের কারণ কী? এই প্রশ্নের জবাবে মিশা সওদাগর বলেন, 'আমরা কিন্তু শিল্পী সমিতির নির্বাচিত নেতা ছিলাম। চলচ্চিত্রের শিল্পীরা গভীরভাবে দেখেছেন, আমরা তাদের জন্য কতটা করেছি। চেষ্টা করেছি তাদের পাশে থাকার। সুখে-দুঃখে ছিলাম শিল্পীদের পাশে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, শিল্পীরা মিশা-ডিপজল প্যানেলকে ভোট দেবেন।' অতীতের কথা স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, 'আমরা চলচ্চিত্র শিল্পী। আমরা একটি পরিবার। সবাই সবার সুখে-দুঃখে পাশে থাকব। শিল্পী সমিতির হয়ে সেই কাজটি আরও ভালোভাবে করতে চাই, যেন সবাই ভালো বলে।' এক প্রশ্নের জবাবে মিশা সওদাগর বলেন, 'কারো প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই, বরং সবার প্রতি ভালোবাসা, সবার প্রতি সম্মান জানাই। সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ হোক এবং শিল্পীরা যেন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।' মাহমুদ কলি-নিপুণ প্যানেল সম্পর্কে কোনো অভিযোগ আছে কী? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'না। আমি কারো সম্পর্কে কিছু বলব না। সবাই আমরা শিল্পী। সবার প্রতি ভালোবাসা।' সবশেষে তিনি বলেন, 'আমরা শিল্পীদের জন্য আগেও করেছি, ভবি জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী: মিশা সওদাগর শাহ আলম সাজু রাত পোহালেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। আগেরবারের মতো দুটো প্যানেল অংশ নিচ্ছে এবারও। মিশা সওদাগর ও ডিপজল একটি প্যানেলে লড়ছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে। অপর প্যানেলে লড়ছেন একসময়ের সাড়া জাগানো নায়ক মাহমুদ কলি ও নায়িকা নিপুণ। এবারের নির্বাচন নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে মিশা সওদাগর বলেন, 'আমার বিশ্বাস আমরা জয়ী। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। শিল্পীরা আমাদের প্যানেলকে ভোট দেবেন।' এতটা আত্মবিশ্বাসের কারণ কী? এই প্রশ্নের জবাবে মিশা সওদাগর বলেন, 'আমরা কিন্তু শিল্পী সমিতির নির্বাচিত নেতা ছিলাম। চলচ্চিত্রের শিল্পীরা গভীরভাবে দেখেছেন, আমরা তাদের জন্য কতটা করেছি। চেষ্টা করেছি তাদের পাশে থাকার। সুখে-দুঃখে ছিলাম শিল্পীদের পাশে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, শিল্পীরা মিশা-ডিপজল প্যানেলকে ভোট দেবেন।' অতীতের কথা স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, 'আমরা চলচ্চিত্র শিল্পী। আমরা একটি পরিবার। সবাই সবার সুখে-দুঃখে পাশে থাকব। শিল্পী সমিতির হয়ে সেই কাজটি আরও ভালোভাবে করতে চাই, যেন সবাই ভালো বলে।' এক প্রশ্নের জবাবে মিশা সওদাগর বলেন, 'কারো প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই, বরং সবার প্রতি ভালোবাসা, সবার প্রতি সম্মান জানাই। সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ হোক এবং শিল্পীরা যেন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।' মাহমুদ কলি-নিপুণ প্যানেল সম্পর্কে কোনো অভিযোগ আছে কী? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'না। আমি কারো সম্পর্কে কিছু বলব না। সবাই আমরা শিল্পী। সবার প্রতি ভালোবাসা।' সবশেষে তিনি বলেন, 'আমরা শিল্পীদের জন্য আগেও করেছি, ভবিষ্যতেও করতে চাই।'ষ্যতেও করতে চাই।'
রাত পোহালেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। গত নির্বাচনের মতো দুটো প্যানেল অংশ নিচ্ছে এবারও। মিশা সওদাগর ও ডিপজল একটি প্যানেলে লড়ছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে। অপর প্যানেলে লড়ছেন একসময়ের সাড়া জাগানো নায়ক মাহমুদ কলি ও নায়িকা নিপুণ।
দেশে আসছে ‘গোস্টবাস্টার্স: ফ্রোজেন এম্পায়ার’
আগামী ১৯ এপ্রিল স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেতে যাচ্ছে হলিউডের কমেডি সিনেমা 'গোস্টবাস্টার্স: ফ্রোজেন এম্পায়ার'। ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া 'গোস্টবাস্টার্স: আফটারলাইফ' সিনেমার সিক্যুয়েল এটি। গত ২২ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। মুক্তির পর থেকে সাফল্যের পথে বেশ জোরেশোরেই এগিয়ে চলেছে সনি পিকচার্স পরিবেশিত এই সিনেমা। প্রথম তিন দিনেই সিনেমাটির আয় দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫২ লাখ ডলার। উত্তর আমেরিকার ৪ হাজার ৩৪৫টি থিয়েটারে প্রদর্শিত হচ্ছে ছবিটি। প্রাথমিক অনুমান হিসেবে ফ্রোজেন এম্পায়ারের কাছে তিন দিনে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার আয়ের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দর্শক উপস্থিতি সেই অনুমানকে ছাড়িয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বক্স অফিসেও 'গোস্টবাস্টার্স: ফ্রোজেন এম্পায়ার' ইতিবাচক ব্যবসা দেখেছে। এরমধ্যে সিনেমাটি আয় করেছে ১৬০ মিলিয়ন ডলার। `গোস্টবাস্টার্স: ফ্রোজেন এম্পায়ার' এই ফ্র্যাঞ্চাইজির পঞ্চম চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেছে গিল কেনান। আগের সিনেমার মতো এ সিনেমাতেও থাকছেন পল রুড, ক্যারি কুন, ফিন উলফহার্ড, ম্যাকেনা গ্রেস, সেলেস্টে ও'কনর এবং লোগান কিম। পাশাপাশি আরও আছেন বিল মারে, ড্যান আইক্রয়েড, আর্নি হাডসন, অ্যানি পোটস এবং উইলিয়াম আথারটন।
আগামী ১৯ এপ্রিল স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেতে যাচ্ছে হলিউডের কমেডি সিনেমা 'গোস্টবাস্টার্স: ফ্রোজেন এম্পায়ার'। ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া 'গোস্টবাস্টার্স: আফটারলাইফ' সিনেমার সিক্যুয়েল এটি।
আমার কষ্ট স্বার্থক হয়েছে: বুবলি
ঈদের উৎসবে ১১টি সিনেমার মুক্তি পেয়েছে। তার মধ্যে একটি 'দেয়ালের দেশ'। মিশুক মনি পরিচালিত এই সিনেমায় প্রথমবার জুটি হয়ে অভিনয় করেছেন শবনম বুবলি ও শরীফুল রাজ। ভিন্নধর্মী গল্পের সিনেমাটি মুক্তির দিন থেকেই মাল্টিপ্লেক্সে ভালো চলছে। সিনেমায় বুবলি ও রাজের অভিনয় প্রশংসিত হচ্ছে দর্শকদের মাঝে। আজ বুধবার সিনেমাটি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন শবনম বুবলি। তিনি বলেন, 'দেয়ালের দেশ সিনেমার পোস্টার, টিজার ও ট্রেলার প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই দর্শকের কাছ থেকে যেভাবে সাড়া পাচ্ছিলাম ভালো লাগছিল। মুক্তির পর থেকে দর্শকদের অনেক ভালো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। দর্শক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভালো রিভিউ দিচ্ছেন। চিন্তাও করিনি দর্শকের এতটা ভালোবাসা পাবো। 'দেয়ালের দেশ' সিনেমাটি আসলে গল্প ও শিল্পীদের পরিশ্রমের কারণে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি চাই হলে গিয়ে সবাই সিনেমাটা দেখুক।' তিনি আরও বলেন, 'সিনেমাটির যখন শুটিং শুরু করেছিলাম তখন থেকেই এই টিমের একজন হয়ে কাজ করেছি। "দেয়ালের দেশ" সিনেমাটার জন্য অনেক কষ্ট করেছি। সেটা দেখে দর্শক যখন প্রশংসা করছে তখন মনে হচ্ছে আমার কষ্টটা সার্থক হয়েছে। আর একটা কাজ দেখে কারো ভালো লাগবে কেউ সমালোচনা করবে এটাই স্বাভাবিক।'
ঈদের উৎসবে ১১টি সিনেমার মুক্তি পেয়েছে। তার মধ্যে একটি 'দেয়ালের দেশ'। মিশুক মনি পরিচালিত এই সিনেমায় প্রথমবার জুটি হয়ে অভিনয় করেছেন শবনম বুবলি ও শরীফুল রাজ।
ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শাহরুখের জনপ্রিয়তা
১৫ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন, ২৬ বছর বয়সে হারান মাকেও। একমাত্র বোন এই শোক সইতে পারেননি, অবসন্নতাসহ মানসিক অসুখের শিকার হন তিনি। সেই দুঃসময়ে পাশে কেউ ছিল না। অথচ এখন তার বাড়ির সামনে ভিড় করে লাখো মানুষ। গোটা বিশ্বে এক নামে পরিচিত তিনি। তিনিই বলিউড বাদশাহ, 'লাস্ট অব দ্য স্টারস' শাহরুখ খান। বর্তমান এই গ্ল্যামারের পেছনে শাহরুখের জীবনের একাকীত্বের করুণ ছায়া, অসহায়ত্ব ও অবসাদও রয়েছে। দিল্লির মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শাহরুখ খানের বাবা এসেছেন পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরের 'কিসসা খোয়ানি বাজার' থেকে। 'কিসসা' শব্দের অর্থ 'গল্প' আর খোয়ানি মানে 'কাহিনী'। 'কিসসা খোয়ানি বাজারে'র অর্থ হলো গল্পকারদের বাজার। দেশ-বিদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা সেখানে ফল বিক্রি করতে যেতেন, সঙ্গে নিয়ে যেতেন গল্পের ঝুড়িও। সেখান থেকেই এই নাম। শুধু শাহরুখ খান নন, রাজ কাপুর ও দিলীপ কুমারের মতো গল্পকাররাও এসেছেন এই গল্পের গলি থেকে। ছোটবেলায় শাহরুখ হতে চেয়েছিলেন একজন অ্যাথলেট। সেন্ট কলম্বাসে পড়ার সময় হকি ও ফুটবলে অসাধারণ পারফর্ম্যান্সের জন্য তিনি পেয়েছিলেন 'সোয়ার্ড অব পারফর্ম্যান্স' পুরস্কার। দিল্লির হানস রাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন ও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া থেকে গণযোগাযোগ বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়াকালে অভিনয় শেখার জন্য 'থিয়েটার অ্যাকশন গ্রুপে' ভর্তি হন তিনি। টেলিভিশনে অভিনয় দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন শাহরুখ। তার প্রথম অভিনীত ধারাবাহিক 'ফৌজি' মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে। ১৯৯১ সালের এপ্রিলে মাকে হারানোর পর দিল্লি ছেড়ে স্বপ্নের নগরী মুম্বাইতে আসেন তিনি। পকেটে তখন মাত্র দেড় হাজার রুপি। মুম্বাইতে এসেই চারটি সিনেমায় নাম লেখান শাহরুখ। প্রথমটি অভিনেত্রী হেমা মালিনীর নির্দেশিত সিনেমা 'দিল আশনা হে'। যদিও শাহরুখ খানের প্রথম মুক্তি পাওয়া সিনেমা 'দিওয়ানা'। এই সিনেমায় রিশি কাপুর ও দিব্য ভারতীর সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি। বলিউডে শাহরুখ সবার নজর কাড়েন 'দিওয়ানা', 'আঞ্জাম', 'ডর' ও 'বাজিগরে'র মতো সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করে। কিন্তু খল চরিত্রে অভিনয় থেকে সরে আসতে চেয়েছিলেন শাহরুখ। এই যাত্রায় তার সঙ্গী হন আদিত্য চোপড়া ও বিখ্যাত প্রযোজনা সংস্থা যশ রাজ ফিল্মস। মুক্তি পায় বলিউডের অমর প্রেম আখ্যান 'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে'। সিনেমাটি এতটাই দর্শকপ্রিয় যে এখনো প্রতি শুক্রবার মুম্বাইয়ের মারাঠা মন্দির সিনেমা হলে এটি প্রদর্শিত হয়। এরপর শাহরুখ ক্রমাগত রোমান্টিক সিনেমাতেই অভিনয় করে যান। 'দিল তো পাগাল হে', 'কুছ কুছ হোতা হে', 'কাভি খুশি কাভি গাম', 'ভির জারা' এরকম অসংখ্য রোমান্টিক সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। শাহরুখ খানের সিনেমা ও চরিত্র বাছাই তাকে তার সমসাময়িক অন্যান্য অভিনেতাদের থেকে আলাদা করে। আশির দশকের শেষে ও নব্বইয়ের দশকের শুরুতে হিন্দি সিনেমায় যারা দাপিয়ে বেড়ান, অতিপুরুষালি আচরণে ভরপুর সেসব সিনেমায় নায়িকাকে চড় মারতেও দ্বিধা করেনি সেই চরিত্রগুলো। ঠিক এসময়ই শাহরুখ এমন সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন যেখানে তাকে মায়েদের সঙ্গে ঘরের কাজ করতে দেখা যায়। নায়িকাদের যত্ন নিতে দেখা যায়। মায়ের সবথেকে আদরের সন্তান, শিশুদেরও পছন্দের। পর্দায় একইসঙ্গে রোমান্স, অ্যাকশন, কমেডি আবার ন্যায়পরায়ণ, নিষ্ঠাবান সবকিছুই সফলভাবে ফুটিয়েছেন তিনি। সাধারণ মানুষ মাত্রই যে হিরো হতে পারে এবং একজন হিরো বা নায়ক যে সাধারণ মানুষ ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়, তা প্রমাণ করেছেন চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেই। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন 'কিং অব রোমান্স'। বলা হয়ে থাকে, শাহরুখের এত জনপ্রিয়তার মূলে একটি বড় ভূমিকা রয়েছে তার নারী ভক্তদের। ভারতবর্ষে এমন কোনো নারী পাওয়া দুষ্কর যিনি শাহরুখের ভক্ত নন। এ কারণ মূলত তার অভিনীত চরিত্রগুলোই, নারীদের কাছে আদর্শ প্রেমিক বলতে যা বোঝায় এর প্রতিচ্ছবি দেখা যায় এসব চরিত্রে। পর্দায় বাইরে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপের সময়, কিংবা ভক্তদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সময়ও তার মার্জিত আচরণ, রসবোধ ও অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ শাহরুখকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়। শাহরুখ খানের মতে, তার জীবনের একটাই অপূর্ণতা যে এই যশ-খ্যাতি তার বাবা-মা দেখে যেতে পারেনি। দ্য অনুপম খের শোতে অভিনেতা অনুপম খের তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, 'কখনো কি মনে হয় আপনার পর কোনো সুপারস্টার আসবে?' জবাবে শাহরুখ বলেন, 'আই এম দ্য লাস্ট অব দ্য স্টারস।' সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিকবার ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর রোষানলে পড়তে হয়েছে শাহরুখকে। ২০২৩ সালে 'পাঠান' ছবির একটি গান, 'বেশরম রং' মুক্তির পর নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোন 'গেরুয়া রংয়ের ছোট পোশাক পরে একজন মুসলিম নায়কের সঙ্গে নেচেছেন এবং হিন্দুত্বের অবমাননা করেছেন' এমন আলোচনাও শুরু হয়। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা 'পাঠানে'র পোস্টার ছিঁড়ে, ভাঙচুর করে ও শাহরুখের ছবিতে লাথি মেরে প্রতিবাদ জানালেও বক্সঅফিসে বাজিমাত করে সিনেমাটি। এর আগে, প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের শেষকৃত্যে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে শাহরুখ খান 'থুথু ছিটিয়েছেন' এমন গুজবও ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেসময় শাহরুখ ভক্তরা সোচ্চার হয়ে এর প্রতিবাদ করেন। ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ক্ষমতায় আসার ঠিক এক বছর পর বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছিলেন যে, ভারতে মুসলমানদের প্রতি অসহিষ্ণুতা ক্রমাগত বাড়ছে। এরপর থেকেই ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর রোষানলে পড়েন তিনি। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিবিদ যোগী আদিত্যনাথ এক বক্তৃতায় শাহরুখকে একজন পাকিস্তানি জঙ্গির সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং তাকে পাকিস্তানে চলে যেতে বলেছেন। ২০১৬ সালের পর ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা সম্পর্কে আর কোনো প্রকাশ্য বিবৃতি দেননি শাহরুখ। তবে ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দুই সিনেমা 'পাঠান' ও 'জওয়ান' এ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে। ২০২১ সালে শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ানকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তারের ঘটনাকেও কিছু বিশ্লেষক 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে মনে করেন। শাহরুখ খানের ধর্ম কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের এক বিনোদন প্রতিবেদক ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'শাহরুখ এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি সবসময় উদারনৈতিক মূল্যবোধ বহন করেন। তিনি অত্যন্ত প্রগতিশীল। একটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে তিনি একজন মুসলিম ব্যক্তিত্ব। তার ব্যক্তিগত জীবন—তিনি একজন হিন্দু নারীকে বিয়ে করেছেন। সন্তানদের কোনো একটি নির্দিষ্ট ধর্মে বড় করেননি। বলেছেন, তারা যে ধর্ম অনুসরণ করতে চায়, সেটি করবে।' জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেমা স্টাডিজের অধ্যাপক ড. রঞ্জনী মজুমদার বলেন, 'সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের কারণে শাহরুখের ধর্ম এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন মুসলিমদের বিরুদ্ধে এত বিষ ঢালার পরেও শাহরুখের জনপ্রিয়তা হারায় না। শাহরুখ কখনো জনসমক্ষে তার ধর্মকে সামনে আনেননি। ভারতে তার যে জনপ্রিয়তা তাতে বোঝা যায় তার বিপুল সংখ্যক ভক্তদের কারো কাছেই তার ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটি হিন্দুত্ববাদীদের পছন্দ হওয়ার কথা নয়।' সাংবাদিক রানা আইয়ুবের মতে, ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার বলিউডের যে ব্যাপক শক্তি সেটিকে সংখ্যালঘু মুসলিমদের অপমান করার জন্য ব্যবহার করতে চাইছে। এই কারণেই শাহরুখ তাদের জন্য 'শত্রু' হয়ে উঠেছেন। রানা আইয়ুব বলেন, 'হিন্দুত্ববাদীরা পর্দায় মুসলিম পুরুষদের নেতিবাচক উপস্থাপন দেখতে পছন্দ করে। সেখানে একজন মুসলিম নায়কের আধিপত্য তাদের জন্য কিছুটা বিরক্তির কারণ তো হবেই। অথচ দেখুন, 'জওয়ান' সিনেমায় যা বলা হয়েছে, "জাতি ও ধর্ম দেখে নয়, এমন প্রার্থীকে ভোট দিন যিনি আপনার জন্য কাজ করবে" এটি খুবই সাধারণ একটা বার্তা, অসাধারণ কিছু নয়। কিন্তু আমরা যে সময়ের মধ্যে বাস করছি, তার মধ্যে এটিই হয়ে গেছে বিরাট সাহসী কাজ!' ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের আমলে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিতর্কের পটভূমিতে বিজেপি নেতাদের প্রবল তোপের মুখেও অভিনয় ও অসামান্য ব্যক্তিত্বের জোরে নিজের মুকুট সগৌরবে ধরে রেখেছেন শাহরুখ। ঈদ কিংবা কোনো সিনেমা মুক্তি অথবা শাহরুখের জন্মদিনে তার বাড়ির সামনে কয়েক লাখ ভক্তের জমায়েতই এর প্রমাণ। তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ডয়েচে ভেলে, দ্য অনুপম খের শো আরও‘তারে কই বড় বাজিকর’
১৫ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন, ২৬ বছর বয়সে হারান মাকেও। একমাত্র বোন এই শোক সইতে পারেননি, অবসন্নতাসহ মানসিক অসুখের শিকার হন তিনি। সেই দুঃসময়ে পাশে কেউ ছিল না। অথচ এখন তার বাড়ির সামনে ভিড় করে লাখো মানুষ। গোটা বিশ্বে এক নামে পরিচিত তিনি। তিনিই বলিউড বাদশাহ, 'লাস্ট অব দ্য স্টারস' শাহরুখ খান।
শিল্পী সমিতির নির্বাচনে দুই প্যানেলে লড়ছেন যারা
আগামী ১৯ এপ্রিল বিএফডিসিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে দুটি প্যানেল। ঈদের পর নির্বাচনের শেষ সময়ে প্রচার-প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে এফডিসি। শিল্পী সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্যানেলে আছেন মিশা সওদাগর ও মনোয়ার হোসেন ডিপজল। আরেক প্যানেলে আছেন সোনালি দিনের নায়ক মাহমুদ কলি ও চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। মাহমুদ কলি-নিপুণ প্যানেলে প্রার্থীরা হলেন- সহ-সভাপতি পদে ড্যানি সিডাক ও অমিত হাসান, সহ-সাধারণ সম্পাদক বাপ্পি সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক অঞ্জনা রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মারুফ আকিব, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক কাবিলা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক মামনুন হাসান ইমন ও কোষাধ্যক্ষ পদে অভিনেতা আজাদ খান। কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদের প্রার্থীরা হলেন- সুজাতা আজিম, নাদের চৌধুরী, পীরজাদা হারুন, পলি, জেসমিন আক্তার, তানভীর তনু, মো.সাইফুল, সাদিয়া মির্জা, সনি রহমান, হেলেনা জাহাঙ্গীর ও সাইফ খান। মিশা-ডিপজল পরিষদে সহ-সভাপতি মাসুম পারভেজ রবেল, সহ-সভাপতি ডি এ তায়েব, সহ-সাধারণ সম্পাদক আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক ডন এবং কোষাধ্যক্ষ পদপ্রার্থী কমল। কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচন করছেন অভিনেত্রী সুচরিতা, রোজিনা, আলীরাজ, সুব্রত, দিলারা ইয়াসমিন, শাহনূর, নানা শাহ, রত্না কবির, চুন্নু, সাঞ্জু জন, ফিরোজ মিয়া।
আগামী ১৯ এপ্রিল বিএফডিসিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে দুটি প্যানেল। ঈদের পর নির্বাচনের শেষ সময়ে প্রচার-প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে এফডিসি।
মারা গেলেন ‘আদম' ছবির তরুণ পরিচালক হিরণ
মারা গেছেন তরুণ পরিচালক আবু তাওহীদ হিরণ। আজ সোমবার ভোররাতে নিজ বাসায় ব্রেনস্ট্রোকে মারা গেছেন তিনি। হিরণের মৃত্যুর বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন পরিচালক সমিতির উপমহাসচিব অপূর্ব রানা। আজ ভোররাতে বাসার কেয়ারটেকারকে কল করে হিরণ জানান যে তিনি অসুস্থ। কেয়ারটেকার দ্রুত তার ফ্ল্যাটে পৌঁছালেও রুম ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় ঢুকতে পারেননি। পরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে হিরণকে মৃত অবস্থায় পান। খুলনার সন্তান আবু তাওহীদ হিরণ পরিচালিত 'আদম' সিনেমায় অভিনয় করেছেন ইয়াশ রোহান, ঐশী, রাইসুল ইসলাম আসাদ, শহিদুজ্জামান সেলিম প্রমুখ। তার পরিচালনায় 'রং রোড' নামে একটি সিনেমার শুটিং শেষ হয়েছে।
মারা গেছেন তরুণ পরিচালক আবু তাওহীদ হিরণ। আজ সোমবার ভোররাতে নিজ বাসায় ব্রেনস্ট্রোকে মারা গেছেন তিনি।
মুম্বাইয়ে সালমানের বাড়ির সামনে গুলি, নিরাপত্তা জোরদার
বলিউড সুপারস্টার সালমান খানের বাড়ির সামনে মোটরসাইকেলে এসে গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে গেছে দুই অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্ত। আজ রোববার ভোর ৫টার দিকে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় সালমানের গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের সামনে গুলির ঘটনা ঘটে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হেলমেট পরা দুইজন মোটরসাইকেলে এসে গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন লক্ষ্য করে অন্তত চারটা গুলি ছোঁড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা দ্রুত পালিয়ে যান। এই ভবনেই সালমান খান থাকেন। ঘটনার পরই বান্দ্রার পুলিশ সদস্যরা সেখানে ছুটে যায় এবং বাড়ির চারদিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। অপরাধীদের খুঁজে বের করতে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছে পুলিশ। ঘটনা নিশ্চিত করে একটি বিবৃতি দিয়েছে মুম্বাই পুলিশ। এতে বলা হয়, দুর্বৃত্তরা তিন রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছে। ঘটনা তদন্তে ঘটনাস্থলে পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের সদস্যরা আছেন। সালমানের বাড়ির সামনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
বলিউড সুপারস্টার সালমান খানের বাড়ির সামনে মোটরসাইকেলে এসে গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে গেছে দুই অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্ত।
মুক্তি পেল ‘কোক স্টুডিও বাংলা’ তৃতীয় সিজনের প্রথম গান ‘তাঁতি’
সফল দুই সিজনের পর 'কোক স্টুডিও বাংলা'র তৃতীয় সিজন শুরু হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় তৃতীয় সিজনের প্রথম গান 'তাঁতি' প্রকাশিত হয়েছে। গত দুই সিজনের পর বাংলাদেশ ও বিশ্বের ১৮০ জনের বেশি সুরকার ও শিল্পীকে নিয়ে নতুন সিজনের যাত্রা শুরু হচ্ছে। কোক স্টুডিও বাংলা আশা করছে, দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে এবং তাদের মনে গেঁথে থাকবে, এমন কিছু গান ও মিউজিক্যাল ফিউশন নিয়ে তৃতীয় সিজন শুরু বাংলা নববর্ষ সামনে রেখে। তৃতীয় সিজনে থাকবে বিভিন্ন ধারার শিল্পীদের পরিবেশিত নানা ধরনের মোট ১১টি গান। প্রথম দুই সিজনের মতোই এই সিজনেও মিউজিক কিউরেটর হিসেবে আছেন শায়ান চৌধুরী অর্ণব। সংগীত প্রযোজক হিসেবে তার সঙ্গে আরও থাকবেন প্রীতম হাসান, ইমন চৌধুরী, শুভেন্দু দাশ শুভ এবং অন্যান্যরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোক স্টুডিও'র ভিডিওতে দেখা গেছে অভিনেত্রী জয়া আহসান 'গান গাই আমার মন রে বোঝাই' গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলাচ্ছেন। সেখানে আরও আছেন হাবিব ওয়াহিদ, অর্নব, প্রীতম হাসান, ইমন চৌধুরীসহ অন্যরা।
সফল দুই সিজনের পর 'কোক স্টুডিও বাংলা'র তৃতীয় সিজন শুরু হয়েছে।
ঈদের দিন নাটক মঞ্চায়ন একটি রেকর্ড: মামুনুর রশীদ
একুশে পদক প্রাপ্ত নাট্যকার-অভিনেতা-পরিচালক মামুনুর রশীদের পরিচালনায় আজ বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়ন হবে নতুন নাটক 'কম্পানি'। 'কম্পানি' নাটকের নাট্যকারও তিনি। এমনকি এই নাটকে বিশেষ একটি চরিত্রে অভিনয়ও করবেন গুণী এই শিল্পী। মামুনুর রশীদ বলেন, 'ঈদের দিন নাটক মঞ্চায়ন একটি রেকর্ড এ দেশে। মঞ্চ নাটকের ইতিহাসেও একটি রেকর্ড। কেননা, ঈদের দিন নাটক মঞ্চায়ন এর আগে জামিল আহমেদ করেছিলেন। আর কেউ করেননি। বহু বছর পর আমি করতে যাচ্ছি আজ সন্ধ্যায়।' তিনি আরও বলেন, 'আজ থেকে টানা চারদিন কম্পানি নাটকটির মঞ্চায়ন হবে। প্রথম দিনের বেশিরভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। আশা করছি হাউজফুল যাবে।' তিনি বলেন, 'নাটকে একজন পুঁজিপতির চরিত্রে দর্শকরা আমাকে দেখবেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মঞ্চে অভিনয় করে শান্তি পাই, তৃপ্তি পাই। তাই তো এখনো করে যাচ্ছি অভিনয়।' দর্শকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'দর্শকরাই নাটকের শক্তি। আপনারা মঞ্চ নাটক দেখুন, বাংলাদেশের নাটককে ভালোবাসুন।' ১৯৭২ সালে প্রথম মঞ্চ নাটক পরিচালনা করেন মামুনুর রশীদ। প্রথম পরিচালনা করেন শহীদ মুনীর চৌধুরীর 'কবর'। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নাটকের সঙ্গে মামুনুর রশীদের পথচলা। অসংখ্য নাটক লিখেছেন, পরিচালনা করেছেন। মামুনুর রশীদ বলেন, 'কম্পানি নাটকে বড় একটি মেসেজ আছে। দর্শক সেটা মঞ্চে দেখার সময় অনুভব করবেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি থেকে শুরু করে আজও পর্যন্ত নানা জায়গায় এক ধরণের শোষণ রয়ে গেছে। সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।' তিনি বলেন, 'সবসময় মানুষের কথা, বিশেষ করে সাধারণ ও শোষিত মানুষের কথা নাটকের মধ্য দিয়ে বলবার চেষ্টা করেছি।' 'আজ আমার জন্য অনেক আনন্দের দিন। আজ ঈদের দিন নাটক মঞ্চায়ন হবে, তা-ও নতুন নাটক। দর্শকদের জন্যই নাটক। তাদের ভালোবাসা পেলেই শ্রম সার্থক হবে,' যোগ করেন তিনি। 'কম্পানি' আরণ্যক নাট্যদল প্রযোজিত ৬৫তম নাটক।
একুশে পদক প্রাপ্ত নাট্যকার-অভিনেতা-পরিচালক মামুনুর রশীদের পরিচালনায় আজ বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়ন হবে নতুন নাটক 'কম্পানি'।
চাঁদ রাতে পাভেলের লিভিং রুম সেশানে ইমরান
সংগীত পরিচালক পাভেল আরিনের লিভিং রুম সেশানে হাজির হলেন সংগীতশিল্পী ইমরান। তবে, নিজের ঢংয়ের কোনো গানে নয়, সতীশচন্দ্র গোসাইয়ের কথা ও সুরে লোকগান 'পিরিতি কাঁঠালের আঠা' গানটি নিয়ে। গানটি প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, 'এটি প্রচলিত একটি গান। কিন্তু আমাকে যেভাবে গানটি গাওয়ানো হয়েছে, তা একটু ভিন্ন। যেহেতু এটা আমার জনরা না, আমাকে নতুনভাবে এ জনরায় শ্রোতারা পাবেন।' তিনি বলেন, 'পাভেল ভাই গানটির কম্পোজিশন এত সুন্দর করে করেছেন, যেভাবে শ্রোতারা কখনো শোনেনি।' নতুন গানটি নিয়ে পাভেল আরিন বলেন, 'রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সাধক জালাল খাঁর গানের পর সতীশচন্দ্র গোসাই "পিরিতি কাঁঠালের আঠা" গানের সঠিক সুর অক্ষুণ্ণ রেখে নতুন প্রজন্মের উপযোগী করে এটা তৈরি করেছি।'
সংগীত পরিচালক পাভেল আরিনের লিভিং রুম সেশানে হাজির হলেন সংগীতশিল্পী ইমরান। তবে, নিজের ঢংয়ের কোনো গানে নয়, সতীশচন্দ্র গোসাইয়ের কথা ও সুরে লোকগান 'পিরিতি কাঁঠালের আঠা' গানটি নিয়ে।
ফুয়াদ নাসের বাবুর সুরে ফাহমিদা নবীর দেশের গান
ফাহমিদা নবীর গান মানেই ভিন্ন কিছু। তার রয়েছে আলাদা শ্রোতা। বছর-জুড়ে নতুন নতুন গান নিয়ে উপস্থিত হন তিনি। এবার একটি দেশের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সংগীতশিল্পী। তার গাওয়া দেশের গানটিতে সুর করেছেন ফুয়াদ নাসের বাবু। গানটির গীতিকার দেবাশীষ রায়। এ বিষয়ে ফাহমিদা নবী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গানটির শিরোনাম "তার কি শুধু গল্প বলা"। কথাগুলো খুব সুন্দর। শ্রোতাদেরও মন ভরে যাবে।' তিনি বলেন, 'ফুয়াদ নাসের বাবুর সুরে দেশের গান করে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। অনেক দরদ দিয়ে সুর করেছেন। সবারই ভালো লাগবে।' দেশের গান করা প্রসঙ্গে ফাহমিদা নবী বলেন, 'দেশের গান করতে সবসময়ই ভালো লাগে। দেশের গান করতে মনটাও টানে। এই গানের বেলায়ও তাই হয়েছে।'
ফাহমিদা নবীর গান মানেই ভিন্ন কিছু। তার রয়েছে আলাদা শ্রোতা। বছর-জুড়ে নতুন নতুন গান নিয়ে উপস্থিত হন তিনি। এবার একটি দেশের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সংগীতশিল্পী।
আঁখি আলমগীরের অন্যরকম ভালোবাসার গান
ভালোবাসা এক গভীর অনুভূতির নাম। একই ছাতার তলে পায়ে পা মিলিয়ে চার পায়ে চলার নামই ভালোবাসা। স্নিগ্ধ সকালে কফির পেয়ালায় প্রিয় মানুষটিকে সঙ্গী হিসেবে চাওয়া কিংবা আনমনে বিকেলে তাকে ছুঁয়ে যাওয়ার অনুভূতি তারাই বুঝতে পারবে, যারা প্রেমে ডুবে আছে। সেই আবেদনকে গানে তুলে ধরেছেন আঁখি আলমগীর। গানটিতে তার সঙ্গী হয়েছেন সুরকার শওকত আলী ইমন। প্রায় ২০ বছর পর আবার একসঙ্গে দুজন দ্বৈত গান করলেন। 'কফির পেয়ালা' গানটি লিখেছেন আশিক মাহমুদ। সুর করেছেন আকাশ মাহমুদ। সংগীতায়োজন করেছেন শওকত আলী ইমন। আগামী ৩১ মার্চ ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের ইউটিউব চ্যানেলে আসবে গানটি। আঁখি আলমগীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেক গানের ভিড়ে এই গানটা গাওয়ার সময় অন্য রকম মানসিক প্রশান্তি পেয়েছি। এত সুন্দর রোম্যান্টিক ও আবেগী গান গেয়ে দারুণ খুশি হয়েছি। গানটির জন্য চমৎকার ভিডিও নির্মাণ করা হয়েছে। গানটি সবার ভালো লাগবে, এটা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি।'
ভালোবাসা এক গভীর অনুভূতির নাম। একই ছাতার তলে পায়ে পা মিলিয়ে চার পায়ে চলার নামই ভালোবাসা। স্নিগ্ধ সকালে কফির পেয়ালায় প্রিয় মানুষটিকে সঙ্গী হিসেবে চাওয়া কিংবা আনমনে বিকেলে তাকে ছুঁয়ে যাওয়ার অনুভূতি তারাই বুঝতে পারবে, যারা প্রেমে ডুবে আছে।
১০০ শিশুর সঙ্গে গান গাইবেন রুনা লায়লা
খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা 'বাংলাদেশ' শিরোনামে একটি দেশীয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানটি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পরের দিন ২৭ মার্চ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে পরিবেশন করবেন তিনি। গানটিতে শিল্পীর সঙ্গে অংশ নেবেন ১০০ জন শিশু। আগামী বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে শিশুদের নিয়ে গানটি গাইবেন তিনি। গানটির কথা লিখেছেন আনজীর লিটন, সুর ও সংগীত করেছেন আশরাফ বাবু। রুনা লায়লা বলেন, 'বাংলাদেশ গানটি একটু ভিন্ন রকম হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ১০০ শিশুকে নিয়ে গানটি পরিবেশন করব। গানটি বাংলাদেশ শিশু একাডেমির জন্য করা হয়েছে। শিশুরা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। সব সময় শিশুদের অনুপ্রেরণা দিতে চাই, যেন তারা বড় হয়ে যে যা হতে চায়, তা-ই হতে পারে।'
খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা 'বাংলাদেশ' শিরোনামে একটি দেশীয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানটি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পরের দিন ২৭ মার্চ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে পরিবেশন করবেন তিনি। গানটিতে শিল্পীর সঙ্গে অংশ নেবেন ১০০ জন শিশু।
মেয়ের মুখ প্রকাশ্যে আনলেন আতিফ আসলাম
বলিউডের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আতিফ আসলাম ইনস্টাগ্রামে প্রথমবারের মতো তার মেয়ে হালিমার ছবি পোস্ট করেছেন। মুহূর্তে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। তারপর ভক্তরা সেখানে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন। ছবিতে আতিফ আসলাম ও তার মেয়েকে বেশ সুন্দর লাগছিল। বাবা ও মেয়ে দুজনেই সাদা পোশাক পরেছিল। গত ২৩ মার্চ ছিল হালিমার প্রথম জন্মদিন। একটি ছবিতে আতিফকে তার মেয়েকে কোলে নিয়ে থাকতে দেখা যায়। ভক্তরা বাবা ও মেয়ের ছবি 'ওয়াও' ইমোজিতে ভরিয়ে দেন। তবে, অবাক করার বিষয় হলো- ছবিতে আতিফ আসলামের মেয়েকে রণবীর কাপুর ও আলিয়া ভাটের মেয়ে রাহার মতো দেখাচ্ছিল! এই বিষয়টি সবার নজর কেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে একজন ছবিতে কমেন্ট করেছেন, 'বাহ! বাবা ও মেয়েকে দারুণ লাগছে।' আরেকজন লিখেছেন, 'তার চেহারা হুবহু রাহার মতো, মনে হচ্ছে সে রাহাকে নকল করেছে। চুলের স্টাইল, পোশাকের রঙ... হুবহু এক।' একজন লিখেছেন, 'ও আরাধ্য, ওকে খুব সুন্দর লাগছে!' আতিফ আসলামের বিখ্যাত বলিউড গানগুলোর মধ্যে আছে- লায়লা মজনু থেকে ও মেরি লায়লা, কলিযুগ থেকে আদাত, টাইগার জিন্দা হে থেকে দিল দিয়া গালিয়া, আজব প্রেম কি গজব কাহানি থেকে তু জানে না, বাস এক পাল থেকে তেরে বিন, ফ্লাইং জাট থেকে টুটা জো কাভি তারা, এবং জেহের থেকে ওহ লামহে ওহ বাতে। এছাড়াও বলিউডের অসংখ্য জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আতিফ আসলাম। আতিফ আসলাম সম্প্রতি সঙ্গীত শিল্পে অটো-টিউনারদের নির্ভরতা নিয়ে কথা বলেছেন। কীভাবে গায়করা রাতারাতি সাফল্য পেতে এটি ব্যবহার করছেন তা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। সুফিস্কোরকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে আতিফ স্বীকার করেছেন, অনেক বছর ধরে অটো-টিউনারের ব্যবহার চলে আসছে। এখন গায়করা এটি থেকে বেশি সুবিধা নিচ্ছেন। কারণ তারা দ্রুত সাফল্য অর্জনের জন্য এটির ওপর নির্ভরশীল। একইসঙ্গে তারা তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে চান না। আতিফ বলেন, 'ব্যাপারটা এমন নয় যে, আমাদের সময় অটোটিউনার ছিল না। আমাদের সময়েও ছিল। কিন্তু এখন সবাই রাতারাতি সাফল্য চায়, কেউ পরিশ্রম করতে চায় না। কিন্তু সাফল্য পেতে গেলে কঠোর পরিশ্রম করা দরকার। আর এভাবে জনপ্রিয়তা পাওয়া বা সফলতা পাওয়ার স্থায়ীত্ব কম। তবুও রাতারাতি সাফল্য অর্জনে এটি একটি বড় অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকাল, গায়করা বিখ্যাত হতে চায়, খ্যাতি চায়, কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করতে চায় না।'
বলিউডের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আতিফ আসলাম ইনস্টাগ্রামে প্রথমবারের মতো তার মেয়ে হালিমার ছবি পোস্ট করেছেন। মুহূর্তে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। তারপর ভক্তরা সেখানে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন।
‘দুঃখের গান’ গেয়ে সবার খুব কাছাকাছি খালিদ
শ্রোতাপ্রিয় অনেক কালজয়ী গানের দর্শকনন্দিত কণ্ঠশিল্পী খালিদ। চাইম ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রথম পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন আশির দশকে। পরে তার গাওয়া অন্য গানগুলো অগণিত দর্শকের প্রিয় হয়ে উঠেছিল। সংগীতাঙ্গনে বিষাদ ছড়িয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ৫৯ বছর বয়সে বিদায় নিলেন এই শিল্পী। খালিদের জন্ম ১৯৬৫ সালের ১ আগস্ট গোপালগঞ্জে। মত্যুর পর সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি। আশির দশকে ৮৩ সালে 'চাইম' ব্যান্ডের সাথে পথচলা শুরু খালিদের। প্রথম আ্যলবাম ব্যান্ডের নামে 'চাইম'। সেখানে তার গান ছিল-নাতি খাতি বেলা গেল, তুমি জানো নারে প্রিয়, কীর্তনখোলা নদীরে আমার, এক ঘরেতে বসত কইরা, ওই চোখ, সাতখানি মন বেজেছি আমরা, আমার জন্য রেখো সহ আরও দুটি ইংরেজি গান। অ্যালবামের 'নাতি খাতি' গানটি আশির দশকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। খালিদ উঠে আসেন তরুণদের প্রিয় শিল্পীর তালিকায়। চাইম ব্যান্ডের গান শুধু নয় খালিদের একক গানগুলোও দর্শকনন্দিত হয়েছে। সেই গানগুলো পাড়া-মহল্লার শ্রোতাদের মুখে মুখে থাকত, বাজত বিপণি বিতানসহ দোকানে-দোকানে । তার গাওয়া গানের বেশিরভাগ লিখেছেন ও সুর করেছেন প্রিন্স মাহমুদ। এই জুটির সৃষ্টি অনবদ্য গানগুলো শ্রোতাদের মোহিত করে রাখতো। ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, মাকসুদ, শাফিন আহমদের পাশাপাশি মিক্সড অ্যালবামে খালিদের গান আলাদা একটা ভূমিকা রাখত। শ্রোতারা তার মায়াময় গানের কারণে অ্যালবাম সংগ্রহ করত। খালিদ ও প্রিন্স মাহমুদের অনবদ্য জুটির আবার দেখা হবে এখনই শেষ দেখা নয়, যদি হিমালয় হয়ে কিংবা লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা প্রিন্স মাহমুদের সুরে যতোটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে, হয়নি যাবার বেলা, ঘুমাও গানগুলো শ্রোতারা দীর্ঘকাল মনে রাখবেন। অন্যদের গানের মধ্যে তরুণ মুন্সীর লেখা জুয়েল বাবুর সুরে খালিদের কণ্ঠে  'সরলতার প্রতিমা' কিংবা তানভীর তারেকের সুরে 'আকাশটাকে' বা 'ওগো বৃষ্টি' গানগুলো শ্রোতাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে যুগযুগ ধরে। খালিদের চলে যাওয়া প্রসঙ্গে কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তার চলে যাওয়া বিশ্বাসই করতে পারছিনা। প্রিয় মুখ ভেসে উঠলেই কষ্ট হচ্ছে খুব। আমার সঙ্গে দেখা হলেই অনেক কথা বলত। আমাদের কলাবাগান বাসার পাশেই ছিল তার বাসা। গান নিয়ে আড্ডা হতো। নতুন গানের বিষয়ে মতামত চাইত।' ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, 'বড়দের অনেক সম্মান করতেন খালিদ। দারুণ দারুণ গান গেয়েছে। মায়াভরা গানের গলা। তার সবকটি গানই শ্রোতারা পছন্দ করেছে। গানের মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকবেন তিনি।' খালিদের সহপাঠী ও কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি আর খালিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে একসঙ্গে পড়তাম। গানেও আমাদের পথচলা একইসময়ে। দুজনের বেশ কয়েকটা দ্বৈত গান রয়েছে। গানগুলো শ্রোতারা পছন্দ করেছে। তার মধ্যে প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে 'ঘুমাও তুমি ঘুমাও রে জান', তানভীর তারেকের সুরে 'আকাশটাকে' 'ওগো বৃষ্টি' গান।' তিনি আরও বলেন, 'খালিদ খুব প্রাণবন্ত একজন মানুষ ছিল, কিন্তু গাইত দুঃখের গান। দুঃখের গান দিয়ে খুব সহজেই মানুষের কাছাকাছি যাওয়া যায়। সে কারণে মানুষের খুব কাছাকাছি ছিল খালিদ।' 'খালিদের মৃত্যু আমাদের সংগীতের জন্য বড় ক্ষতি' মন্তব্য করে ফাহমিদা নবী বলেন, 'এটা আমরা পরে বুঝতে পারবে। আমাদের শিল্পীদের বলতে চাই, নিজের যত্ন নিতে হবে, ভালোবাসা লাগবে। সাদি ভাই, খালিদের মৃত্যু আমাকে এটাই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে। তাই ভালো থাকতে, আনন্দে বাঁচতে হবে।' কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী বলেন, 'এখন খালিদের গানগুলো বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। তা না হলে আগামী প্রজন্মের শ্রোতারা ভুলে যাবে। এটা হতে দেওয়া উচিত না। এসব প্রচারে গণমাধ্যমের একটা ভালো ভূমিকা রাখতে হবে। এমন হলে কিছুদিন পর আবার আমরা এমন একজন শিল্পীকে ভুলে যাব। এটা হতে দেওয়া উচিত না। অগণিত গানের মধ্য দিয়ে খালিদ বেঁচে থাকবেন আশা করি।' অবসকিওর ব্যান্ডের টিপু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খালিদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক অনেক স্মৃতি। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি। ১৯৮৪ সালে চাইম ব্যান্ডে আমরা গান করতাম। খালিদ ভাই বাংলা গান গাইতেন, আমি গাইতাম ইংরেজি গান। সেই উত্তাল দিনের কথা বারবার মনে হচ্ছে। আমার যে কজন পছন্দের শিল্পী তাদের মধ্যে প্রথমদিকে থাকবেন তিনি। খুব পছন্দ করতাম তাকে। কিছুদিন আগে বিটিভির একটা গানের অনুষ্ঠানের শুটিংয়ে দেখা, বলেছিলাম খালিদ ভাই আপনার সঙ্গে আমার কোনো ছবি নাই। সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। প্রিয় মানুষের বিদায় মেনে নিতে কষ্ট হয়।'
শ্রোতাপ্রিয় অনেক কালজয়ী গানের দর্শকনন্দিত কণ্ঠশিল্পী খালিদ। চাইম ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রথম পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন আশির দশকে।
চাইমের খালিদ ও খালিদের গান
গতকাল ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় সংগীতাঙ্গনে একরাশ বিষাদ ছড়িয়ে বিদায় নিলেন জীবনের ওপারে। খালিদের চাইম ব্যান্ড ও শ্রোতাপ্রিয় গান নিয়ে এই লেখা। আশির দশকে, অর্থাৎ ১৯৮৩ সালে 'চাইম' ব্যান্ডের সঙ্গে পথচলা শুরু করেন খালিদ। তার জীবনের প্রথম আ্যলবাম ছিল চাইম ব্যান্ডের আ্যলবাম। নাম ছিল 'চাইম'। সেখানে তার গান ছিল-বেকারত্ব, নাতি খাতি বেলা গেল, তুমি জানো নারে প্রিয়, কীর্তনখোলা নদীতে আমার, এক ঘরেতে বসত কইরা, ওই চোখ, প্রেম, সাতখানি মন বেজেছি আমরা এবং আমার জন্য রেখো গানসহ আরও দুটি ইংরেজি গান ছিল। সেই অ্যালবামের 'নাতি খাতি বেলা গেল' গানটি আশির দশকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। খালিদ উঠে আসেন তরুণদের প্রিয় শিল্পীর তালিকায়। চাইম ব্যান্ডের গানের পাশাপাশি খালিদের কণ্ঠের একক অনেক গান দিয়ে বুকের ক্ষত ঢাকতেন অগণিত মানুষ। যার গান একসময় পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন শ্রোতাদের মুখে মুখে থাকত, বাজত বিভিন্ন বিপণি বিতানসহ দোকানে দোকানে। যে গানগুলোর বেশিরভাগ লিখেছেন, সুর করেছেন প্রিন্স মাহমুদ। এই জুটির সৃষ্ট অনবদ্য গানগুলো শ্রোতাদের মোহিত করে রাখত। ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, মাকসুদ ও শাফিন আহমদের পাশাপাশি মিশ্র অ্যালবামে খালিদের গান আলাদা একটা ভূমিকা রাখত। শ্রোতারা তার মায়াময় গানের কারণে অ্যালবাম কিনতেন। সেইসব মিশ্র অ্যালবামে খালিদের কণ্ঠে 'তুমি আকাশের বুকে সরলতার প্রতিমা', 'যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে', 'কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে', 'হয়নি যাবার বেলা', 'যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে', 'তুমি নেই তাই' ও 'আকাশনীলা' গানগুলো এখনো মানুষের কানে কানে বাজে।
গতকাল ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় সংগীতাঙ্গনে একরাশ বিষাদ ছড়িয়ে বিদায় নিলেন জীবনের ওপারে। খালিদের চাইম ব্যান্ড ও শ্রোতাপ্রিয় গান নিয়ে এই লেখা।
হরতাল-অবরোধ বন্ধের আহ্বানে রাজপথে নায়ক-নায়িকা ও শিল্পীরা
দেশে চলমান হরতাল-অবরোধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন শিল্পীরা। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। 'ধ্বংসের বিরুদ্ধে শিল্পী সমাজ' ব্যানার হাতে মানববন্ধনে অংশ নেন শোবিজ অঙ্গনের অভিনেতা, নায়ক-নায়িকা ও কণ্ঠশিল্পী। তাদের মধ্যে ছিলেন নায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস, মাহিয়া মাহি, অভিনেতা তুষার খান, তারিন, শম্পা রেজা, এসডি রুবেল, চিত্রনায়িকা নিপুণসহ অনেকে। চিত্রনায়ক ফেরদৌস বলেন, হরতাল-অবরোধ অভিধান থেকে হারিয়ে গিয়েছিল৷ সেই শব্দগুলো আবার ফিরে এসেছে৷ আমার বাচ্চারা যখন জিজ্ঞাসা করে আমরা শুক্রবার-শনিবার কেন পরীক্ষা দেবো? রোববারে কেন অনলাইন ক্লাস করব? এই শিশুগুলো বেড়ে উঠছে, এতে তারা কী শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠছে! অগ্নি সন্ত্রাস, বর্বরতা! এমনিতেই করোনার দুই বছর আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। একজন মানুষের সঠিক নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে গেছে। আগামীতে আরও এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। নিপুন আক্তার বলেন, শেখ হাসিনাতেই তো আমাদের আস্থা। কারণ আজকে আমি অভিনয় শিল্পী থেকে নারী উদ্যোক্তা হয়েছি একমাত্র তার কারণে। আজকে যারা নারী উদ্যোক্তা হয়েছে তার অন্যতম কারণ শেখ হাসিনা। হরতাল অবরোধের কারণে আমাদের কর্মচারীরা কারখানায় আসতে পারছে না। বাসে উঠতে ভয় পাচ্ছে, এ কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। হরতাল-অবরোধ আমরা চাই না। চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি বলেন, আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি তার একমাত্র লক্ষ্য যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করতে পারি এবং আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটে তাকে জয়যুক্ত করতে পারি। আমরা শিল্পীরা সবাই নিজ নিজ জায়গায় থেকে যা যা করা দরকার, আমরা মাঠে থাকবো। প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমরা চাই না, বিএনপি আবারও দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করুক।
দেশে চলমান হরতাল-অবরোধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন শিল্পীরা।
কেমন আছেন কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড়
কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমার মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দীর্ঘ ১০ মাস ধরে কানাডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রাত দিন সন্তানের পাশেই থাকছেন বাবা কুমার বিশ্বজিৎ। এর মধ্যে এক সপ্তাহের জন্য কানাডা থেকে দেশে এসেছিলেন। কয়েকদিন থেকে আবার কানাডাতে ফিরে গেছেন। একমাত্র ছেলে নিবিড়ের চিকিৎসার জন্যই বর্তমানে কুমার বিশ্বজিৎ ও তার স্ত্রী সেখানে অবস্থান করছেন। নিবিড়ের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে কুমার বিশ্বজিৎ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিবিড় এখন একটু একটু করে সাড়া দিচ্ছে। তার চিকিৎসা চলছে। সবাই তাকে ভালোবাসায় রাখবেন। আমার পুরোটা জীবনজুড়েই আমার সন্তান। সবকিছুই এখন আমার সন্তানকে ঘিরে।' 'একজন বাবা হিসেবে সন্তানের জন্য ভেতর থেকে কী পরিমান যন্ত্রণা হয় সেটা বোঝাতে পারবো না। শুধু একজন বাবাই সেটা অনুভব করতে পারে। নিবিড় আমার সবকিছু তাকে নিয়েই বাকিটা জীবন কাটাতে চাই, বলেন তিনি।
কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমার মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দীর্ঘ ১০ মাস ধরে কানাডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
‘থিয়েটারের কথা শুনে আলী যাকের বলেন, আমি তো মিউজিকে আগ্রহী’
আজ খ্যাতিমান অভিনেতা আলী যাকেরের জন্মদিন। গুণী এই শিল্পী মঞ্চ নাটকের জন্য বিশাল অবদান রেখে গেছেন। তার নির্দেশিত অনেকগুলো মঞ্চ নাটক দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। টেলিভিশন নাটকেও তিনি অসাধারণ অভিনয় দিয়ে মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও সমাদৃত হয়েছেন। আলী যাকেরের জন্মদিনে তাকে স্মরণ করে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, '১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতারে কাজ করতে গিয়ে আলী যাকেরের সঙ্গে পরিচয়। তখন আমরা দুজনেই স্বাধীন বাংলা বেতারের সাথে জড়িত। আলী যাকের স্বাধীন বাংলা বেতারে ইংরেজি সংবাদ পড়তেন। চমৎকার পড়তেন তিনি। এছাড়া কথিকা পড়তেন। তখনই বুঝেছিলাম দারুণ প্রতিভা নিয়ে জন্মেছেন।' 'আমার বিশ্বাস ছিল থিয়েটারের জন্য আলী যাকের ভালো কিছু করতে পারবেন। তাকে নিয়ে থিয়েটারে অনেক কিছু সম্ভব। আমি কলকাতায় বসেই স্বপ্ন দেখেছিলাম একদিন নিউইয়র্কের মতো, বড় বড় দেশের থিয়েটারের মতো দেশে ফিরে নিয়মিত মঞ্চ নাটক করব। তখনই সিদ্বান্ত নিয়েছিলাম কথাটি আলী যাকেরকে বলব। একদিন কলকাতার রাস্তায় ট্রামে করে যাচ্ছিলাম। আলী যাকের আরেকটি ট্রামে করে যাচ্ছিলেন। তারপর নামলাম। দেখা হলো। থিয়েটার নিয়ে আমার স্বপ্নের কথাটা তাকে বললাম,' বলেন তিনি। 'আমার কথা শুনে আলী যাকের বললেন, আমি তো মিউজিকের প্রতি আগ্রহী। আমি তাকে বুঝালাম। একটু বলে রাখি আলী যাকের অসম্ভব ভালো তবলা বাজাতেন। যা-ই হোক তাকে নিয়ে আমি স্বাধীন বাংলা বেতারে মুক্তির ডায়েরি নাটকে অভিনয় করালাম। ভীষণ ভালো অভিনয় করলেন। মনে পড়ে, আলী যাকের পাঞ্জাবি অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এরপর পশ্চিমের সিঁড়ি নাটক করি। এটা কলকাতায়, ১৯৭১ সালে,' মামুনুর রশিদ বলেন। তিনি আরও জানান, 'পশ্চিমের সিঁড়ি নাটকটি আমার ওই বয়সেই লেখা। সেখানে আলী যাকেরকে অভিনয় করতে বললাম এবং তিনি অভিনয় করলেন। তার অভিনয়ে মুগ্ধ হলাম। তারপর দেশ স্বাধীন হলো। আমরা ফিরে এলাম স্বাধীন বাংলাদেশে। কিন্ত মঞ্চ নাটক করব সে কথা ভুলিনি। এরপর আরণ্যক নাট্যদল করলাম। এই দলের প্রথম নাটক করলাম শহীদ মুনীর চৌধুরীর 'কবর'। আমিই নির্দেশনা দিলাম। মাত্র কিছুদিন আগে মুনীর চৌধুরী শহীদ হয়েছেন। তার কথা স্মরণে এলো কবর নাটকটি করতে গিয়ে। আলী যাকের কবর নাটকে অভিনয় করলেন।' সেসময়কার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'এদেশের আরও বেশ কজন বিখ্যাতরা অভিনয় করলেন 'কবর' নাটকে। 'কবর' নাটক প্রশংসিত হলো। আলী যাকের সহ সবার অভিনয় প্রশংসিত হলো। তারপর আলী যাকের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় করলেন। অসাধারণ সব নাটক করলেন তার দলের জন্য। সেইসব নাটক ভীষণ প্রশংসা কুড়াল। মঞ্চে তার অবদান বিশাল। অনেক কিছু দিয়ে গেছেন মঞ্চ নাটকে।' 'আলী যাকের অনেক বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন। তার দেহের ভাষা অন্যরকম ছিল, যা অভিনয় বুঝত। তার কথা বলবার ভঙ্গিটাও মুগ্ধ করত। নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে থিয়েটারে যুক্ত করেন। আমি শ্রেণী সংগ্রামের কথা তুলে ধরতে লাগলাম মঞ্চ নাটকে আর আলী যাকের নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন। তার জন্মদিনে গভীর ভালোবাসা জানাই', মামুনুর রশিদ বলেন।
আজ খ্যাতিমান অভিনেতা আলী যাকেরের জন্মদিন। গুণী এই শিল্পী মঞ্চ নাটকের জন্য বিশাল অবদান রেখে গেছেন। তার নির্দেশিত অনেকগুলো মঞ্চ নাটক দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। টেলিভিশন নাটকেও তিনি অসাধারণ অভিনয় দিয়ে মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও সমাদৃত হয়েছেন।
২ দলের ২ খেলোয়াড় নিয়ে দ্বন্দ্ব, স্থগিত সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের ফাইনাল
আবারও স্থগিত হলো সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল)। এবারের দ্বন্দ্ব রাব্বী ও অন্তু নামে দুই অভিনেতাকে নিয়ে। তবে এবার কোনো মারামারি না হলেও বিশৃঙ্খলার কারণে স্থগিত করতে বাধ্য হন আয়োজকরা। আয়োজকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দুই দলের দুই খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের কারণে এই খেলা শেষ পর্যন্ত মাঠে গড়ায়নি। এদের মধ্যে সালাহউদ্দিন লাভলুর দলের রাব্বী এবং দীপঙ্কর দীপনের দলের অন্তু নামে দুজন খেলোয়াড় রয়েছেন। প্রথমবারের মারামারির সমস্যা কাটিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের খেলা শুরু হয়। চলে পরপর কয়েকটি ম্যাচ। প্রথম সেমিফাইনালে চয়নিকা চৌধুরীর দলকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে দীপঙ্কর দীপনের দল। এই ম্যাচ শেষ হতেই শুরু হয় নতুন নাটকীয়তা। দুই দলের ঝামেলার কারণে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের আগে খেলা প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল। পরে সেই ম্যাচে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের দলকে হারিয়ে বিজয়ী হয় সালাহউদ্দিন লাভলুর দল। গতকাল রাতে ফাইনাল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুই দলের খেলোয়াড় নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে তা আর হয়নি। দুই দলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও সমাধান বের করতে পারেননি আয়োজকরা। তিন ঘণ্টার বেশি সময় নিলেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ফাইনাল ম্যাচ স্থগিত হয়।
আবারও স্থগিত হলো সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল)। এবারের দ্বন্দ্ব রাব্বী ও অন্তু নামে দুই অভিনেতাকে নিয়ে।
কুমিল্লায় আজ থেকে ৩ দিনব্যাপী ‘শচীন মেলা’ শুরু
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ও বহু আধুনিক গানের স্রষ্টা শচীন দেববর্মণ স্মরণে আজ শনিবার থেকে কুমিল্লায় শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী শচীন মেলা। শচীন দেববর্মণের ৪৮তম প্রয়াণ দিবস স্মরণে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। কুমিল্লা নগরীর দক্ষিণ চর্থায় শচীন দেববর্মণের বাড়ির প্রাঙ্গণে এ মেলা চলবে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। ৩ দিনব্যাপী মেলা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান সূচির মধ্যে রয়েছে আজ শনিবার বিকেল ৩টায় শচীন মেলার র‍্যালি ও উদ্বোধন, সোয়া ৩টায় আলোচনা সভা এবং বিকেল সাড়ে ৪টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রোববার সকাল ১০টায় রচনা প্রতিযোগিতা, বিকেল ৩টায় সঙ্গীত প্রতিযোগিতা ও বিকেল ৪টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।   তৃতীয় দিন সোমবার বেলা ৩টায় আলোচনা সভা, বিকেল সাড়ে ৪টায় সমাপনী অনুষ্ঠান এবং বিকেল ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন কুমিল্লার সংস্কৃতিপ্রেমি জনগণ, শিক্ষার্থী ও সব সংস্কৃতিকর্মীদের মেলায় উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ও বহু আধুনিক গানের স্রষ্টা শচীন দেববর্মণ স্মরণে আজ শনিবার থেকে কুমিল্লায় শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী শচীন মেলা।
প্রীতম-শেহতাজের গায়ে-হলুদ আজ, বিয়ে আগামীকাল
অভিনেত্রী শেহতাজ মনিরা হাশেম এবং সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা প্রীতম হাসান বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছেন। প্রীতম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'আগামীকাল শ্রীমঙ্গলের একটি হোটেলে তাদের বিয়ে হবে।' বৃহস্পতিবার ছিল তাদের গায়ে-হলুদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গায়ে-হলুদের ছবি ছড়িয়ে গেলে, এই জুটির বিয়ে নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়। ছবিতে দেখা যায়, প্রীতম একটি সাদা পাঞ্জাবি পরেছিলেন, শেহতাজের পরনে ছিল গোলাপি রঙের ড্রেস। সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা হিসেবে দুই ক্ষেত্রেই সফল ও জনপ্রিয় প্রীতম। জনপ্রিয় অভিনেত্রী শেহতাজ বেশ কিছু টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন। প্রীতমের 'যাদুকর' গানের মিউজিক ভিডিওতেও তিনি ছিলেন।
অভিনেত্রী শেহতাজ মনিরা হাশেম এবং সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা প্রীতম হাসান বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছেন।
জল ও নারীর সম্পর্ক নিয়ে পূজা সেনগুপ্তের ‘ওয়াটারনেস’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের ছায়া অবলম্বনে জল ও নারীর সম্পর্ক নিয়ে তৈরি তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটারের 'ওয়াটারনেস' নৃত্য-নাটক। কাদম্বরী দেবীকে উৎসর্গ করা এই নাটকটি আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে। নাটকটি একসঙ্গে দেখবেন ৮টি দেশের রাষ্ট্রদূত। তুরঙ্গমীর আর্টিস্টিক ডিরেক্টর পূজা সেনগুপ্ত দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন। পূজা সেনগুপ্ত জানান, 'জল ও নারীর সম্পর্ক নিয়ে একটি নীরিক্ষাধর্মী প্রযোজনা এটি। যা ১৮৯০ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনকালের বিভিন্ন রচনা, লেখনী, সাহিত্য, চিঠি, গান, চিত্রকর্ম ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডকে অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে। এ সময়ে কবিগুরুর জীবন ও ভাবনায় জল ও নদী গভীর ছাপ রেখেছিল। গবেষণার মাধ্যমে এই প্রযোজনা সংকলন করার চেষ্টা করেছি আমরা।' 'ওয়াটারনেসের' নৃত্য ও অভিনয়ে অংশ নিয়েছেন পূজা সেনগুপ্ত, আতিক রহমান, ফারিয়া পারভেজ, লোপা অধিকারী, সাথিয়া ইসলাম, তাসনিয়া ইশা, অদৃজা সেনগুপ্ত, শাকিল আহমেদ, প্রান্তিক দেব প্রমুখ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের ছায়া অবলম্বনে জল ও নারীর সম্পর্ক নিয়ে তৈরি তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটারের 'ওয়াটারনেস' নৃত্য-নাটক।
কর্ণাটকের দিভিতা রাই হলেন মিস ডিভা ইউনিভার্স-২০২২
মিস ডিভা ইউনিভার্স-২০২২ হয়েছেন কর্ণাটকের দিভিতা রাই। ২৩ বছর বয়সী এই সুন্দরীর মাথায় মুকুট পরিয়ে দিয়েছেন মিস ইউনিভার্স-২০২১ এর বিজয়ী হারনাজ সিন্ধু। হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার রাতে দিভিতা রাইয়ের মাথায় এই ‍মুকুট ওঠে। মিস ডিভা ইউনিভার্স ২০২২ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন ২০০০ সালের মিস ইউনিভার্স লারা দত্ত, ১৯৬৪ এর মিস ইন্ডিয়া মেহের কাস্টেলিনো, মিস ইন্ডিয়া ১৯৮০ সংগীতা বিজলানি, মিস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স ২০০৪ তনুশ্রী দত্তসহ অনেকেই।
মিস ডিভা ইউনিভার্স-২০২২ হয়েছেন কর্ণাটকের দিভিতা রাই। ২৩ বছর বয়সী এই সুন্দরীর মাথায় মুকুট পরিয়ে দিয়েছেন মিস ইউনিভার্স-২০২১ এর বিজয়ী হারনাজ সিন্ধু।
ববিতা-শাবনূর-পরীমনিসহ যারা ভোট দিলেন
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনেক অভিনয়শিল্পী ভোট দিয়েছেন। ভোট দিয়ে কেউ আড্ডায় মেতেছেন, চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলেছেন। দীর্ঘদিন পর প্রিয় মানুষদের দেখা পেয়ে দিনটি যেন নিজেদের করে নিয়েছিলেন। চলচ্চিত্রের শিল্পীদের অনেকেই ভোট দিয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন-সুচন্দা, ববিতা, চম্পা, আসাদুজ্জামান নূর, শাবনূর, নতুন, ওমর সানী, জাহিদ হাসান, অনন্ত জলিল, সাইমন সাদিক, নীরব, রোশান প্রমুখ। আরও ছিলেন-পরীমনি, মাহিয়া মাহি, ববি, আনোয়ারা। এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৫৭১ জন। সকাল সাড়ে ৯টায় শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৫টায়। শিল্পী সমিতির নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন খোরশেদ আলম খসরু। দুই প্যানেলের একটিতে আছেন অভিনেতা মিশা সওদাগর ও মনোয়ার হোসেন ডিপজল এবং অন্যটিতে মাহমুদ কলি ও চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনেক অভিনয়শিল্পী ভোট দিয়েছেন।
ওটিটিতে ‘গোলাম মামুন’ হয়ে অপূর্ব
'বুকের মধ্যে আগুন' ওয়েব সিরিজের গোলাম মামুন চরিত্রটি নিয়ে নির্মিত হচ্ছে আরেকটি নতুন সিরিজ 'গোলাম মামুন'। এটি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন। সিরিজটির নাম ভূমিকায় থাকছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। এই সিরিজে আরও অভিনয় করেছেন সাবিলা নূর। সম্প্রতি আসন্ন সিরিজগুলোর এক ঝলক শেয়ার করেছে ওটিটি প্লাটফর্ম হইচই। সেখানে 'গোলাম মামুন' এর ফার্স্ট লুকে অপূর্বর সঙ্গে দেখা গেছে এই অভিনেত্রীকে। এই সিরিজের গল্পে দেখা যাবে নিজের আততায়ীকে খুনের দায়ে আটক হয় মামুন, সাথে বন্ধু দম্পতির খুনেও জড়িয়ে যায় তার নাম। আইনরক্ষক মামুনকে আইন ভেঙে পুলিশের হাত থেকে পালাতে হয় নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে। কিন্তু বাইরেও অপেক্ষা করছে আরও বড় বিপদ। সিরিজটি ঈদুল আজহায় মুক্তির কথা রয়েছে।
'বুকের মধ্যে আগুন' ওয়েব সিরিজের গোলাম মামুন চরিত্রটি নিয়ে নির্মিত হচ্ছে আরেকটি নতুন সিরিজ 'গোলাম মামুন'। এটি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন। সিরিজটির নাম ভূমিকায় থাকছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব।
৩৪ বছরে ইয়েনের দাম সর্বনিম্ন
মার্কিন ডলারের বিপরীতে জাপানের মুদ্রা ইয়েনের দাম গত ৩৪ বছরে সর্বনিম্ন। তবে এর প্রভাবে দেশটির পুঁজিবাজারে চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে। আজ বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক ডলারের বিপরীতে ইয়েনের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ১৫১ দশমিক ৯৭। ১৯৯০ সালের পর এটি ইয়েনের সর্বনিম্ন দাম। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইয়েনের এই দরপতনের ফলে গুঞ্জন উঠে যে সরকার মুদ্রার দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পারে। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গত কয়েকদিন ধরে এমন গুঞ্জনের বিরুদ্ধে সতর্ক করছিলেন। দেশটির অর্থমন্ত্রী শুনিচি সুজুকি গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমরা বাজার পরিস্থিতি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজনে যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' তিনি ধীর গতিতে হলেও নীতিমালায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে ইয়েন দুর্বল হওয়ায় জাপানের পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়েছে। পুঁজিবাজারের সূচকগুলো ঊর্ধ্বমুখী। দেশটির রপ্তানিকারকরা এ থেকে উপকৃত হচ্ছেন। গত ১৭ বছরের মধ্যে ব্যাংক অব জাপান গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো সুদের হার বাড়িয়েছে। তারপরও ইয়েনের দাম কমল।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে জাপানের মুদ্রা ইয়েনের দাম গত ৩৪ বছরে সর্বনিম্ন। তবে এর প্রভাবে দেশটির পুঁজিবাজারে চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে।
জাপান সুদহার বাড়ানোর পর দুর্বল হচ্ছে ইয়েন
ব্যাংক অব জাপান ঋণাত্মক সুদহার নীতি প্রত্যাহার করে সুদহার বাড়িয়েছে, এই সিদ্ধান্তের পর জাপানি মুদ্রা ইয়েন দুর্বল হতে শুরু করেছে। আজ বুধবার মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইয়েন চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং ইউরোর বিপরীতে ১৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে বলে নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। নিক্কেই এশিয়া বলছে, ব্যাংক অব জাপান ১৭ বছরের মধ্যে প্রথম নীতি সুদহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আট বছর পর ঋণাত্মক সুদহারের ধারা থেকে বের হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছ, মার্কিন-জাপানি হারের মধ্যে পার্থক্য থাকায় ইয়েনের ওপর চাপ থাকবে, এই চাপ বজায় রেখে আপাতত সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিস্থিতি ধরে রাখার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমটির তথ্য অনুযায়ী, বুধবার প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ১৫১ দশমিক ৩৪ ইয়েন, যা চার মাসের সর্বনিম্ন। ব্যাংক অব জাপান গতকাল সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই এশিয়ান মুদ্রার দর ১ শতাংশ কমেছিল। এদিকে ইউরোর বিপরীতেও দুর্বল হয়েছে ইয়েন, প্রতি ইউরোর দাম ১৬৪ দশমিক ৩৫ ইয়েনে নেমে এসেছে, যা ২০০৮ সালের পর সর্বনিম্ন। অন্যদিকে পাউন্ডের বিপরীতে ইয়েন দুর্বল হয়ে ১৯২ দশমিক ৩৭ এ নেমেছে, যা ২০১৫ সালের পর সর্বনিম্ন। জাপানের বাজার বুধবার ছুটির জন্য বন্ধ থাকে। ওসিবিসির কারেন্সি স্ট্র্যাটেজিস্ট ক্রিস্টোফার ওং বলেন, 'আমি মনে করি ১৫২ এর কাছকাছি নজর আছে। তবে, ডলার বিপরীতে ইয়েনের দামে আরও কিছু জটিলতা দেখা যাবে। কারণ খুব শিগগির ফেডারেল রিজার্ভ সুদহারের সিদ্ধান্ত নেবে।' মঙ্গলবার জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি ঐতিহাসিক সিন্ধান্ত নিয়েছে। তারা আট বছরের ঋণাত্মক সুদহার পরিবর্তন করেছে। ক্যাপিটাল ডট কমের জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক ড্যানিয়েলা হাথর্ন বলেন, বৈঠকের পর ব্যাংক অব জাপানের গভর্নর কাজুও উয়েদার মন্তব্যে জাপানি মুদ্রার ওপর চাপ বৃদ্ধির ইঙ্গিত ছিল। ড্যানিয়েলা হাথর্ন বলেন, 'প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে জাপানি মুদ্রার দরপতন অব্যাহত আছে এবং এটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার মানে, ইয়েন আরও দুর্বল হবে, বিশেষ করে যদি অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার কমাতে দেরি করে।'
ব্যাংক অব জাপান ঋণাত্মক সুদহার নীতি প্রত্যাহার করে সুদহার বাড়িয়েছে, এই সিদ্ধান্তের পর জাপানি মুদ্রা ইয়েন দুর্বল হতে শুরু করেছে। আজ বুধবার মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইয়েন চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং ইউরোর বিপরীতে ১৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে বলে নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ মাসেই বাজারে আসবে শাওমির বৈদ্যুতিক গাড়ি
চীনা প্রতিষ্ঠান শাওমি জানিয়েছে, এ মাসেই তারা প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি এসইউ-সেভেন বাজারে আনবে। এর মাধ্যমে শাওমি বিশ্বের অটো বাজারে প্রবেশ করবে। আজ সকালের লেনদেনে শাওমির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ। আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। চীনের পঞ্চম বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শাওমি ওয়েইবো পোস্টে জানিয়েছে, চীনের ২৯ শহরে তাদের ৫৯টি দোকান আছে, যেখান থেকে অর্ডার নেওয়া হবে। আগামী ২৮ মার্চ একটি লঞ্চ ইভেন্ট নির্ধারণ করে রেখেছে শাওমি, সেদিন নতুন বৈদুত্যিক গাড়ির স্টিকার ট্যাগ ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি বেড়েছে ১৮ শতাংশ, ২০২৩ সালে দেশটির এই খাতে প্রবৃদ্বি ছিল ২১ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে স্পিড আল্ট্রা সেভেন (এসইউ৭) সেডান আনার সময় শাওমির প্রধান নির্বাহী লেই জুন বলেছিলেন, শাওমি বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ গাড়ি নির্মাতার একটি হওয়ার পরিকল্পনা করছে। তিনি আরও বলেছিলেন, তাদের বৈদ্যুতিক গাড়িটিতে 'সুপার বৈদ্যুতিক মোটর' প্রযুক্তি আছে, যা টেসলার চেয়ে দ্রুত গতি সরবরাহ করতে সক্ষম। শাওমির জনপ্রিয় ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত অপারেটিং সিস্টেমের কারণে এসইউ সেভেন গাড়িটি গ্রাহক আকর্ষণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর চালক শাওমির মোবাইল অ্যাপগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন অ্যাক্সেস পাবেন। সাংহাইভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অটোমোবিলিটির সিইও বিল রুশো বলেন, শাওমি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড। তাদের কোটি কোটি গ্রাহক আছে। এসইউ সেভেন দুটি সংস্করণে আসবে। একটির একবার চার্জে ৬৬৮ কিলোমিটার (৪১৫ মাইল) পর্যন্ত ড্রাইভিং রেঞ্জ থাকবে। অন্যটির ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেঞ্জ থাকবে। তবে, এর এখনো দাম ঘোষণা করা হয়নি।
চীনা প্রতিষ্ঠান শাওমি জানিয়েছে, এ মাসেই তারা প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি এসইউ-সেভেন বাজারে আনবে। এর মাধ্যমে শাওমি বিশ্বের অটো বাজারে প্রবেশ করবে। আজ সকালের লেনদেনে শাওমির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ।
হংকংয়ের বিনোদন শিল্পে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে আলিবাবা
টেক হেভিওয়েট আলিবাবা গ্রুপ হোল্ডিং লিমিটেডের ডিজিটাল মিডিয়া ও বিনোদন ইউনিট সোমবার ঘোষণা দিয়েছে, তারা হংকংয়ের সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে আগামী পাঁচ বছরে কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন হংকং ডলার (৬৩৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। চায়না ডেইলি ও নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আলিবাবা গ্রুপ জানিয়েছে, হংকংয়ের টিভি নাটক, সিনেমা, অভিনয় ও তরুণ প্রতিভা খুঁজে বের করতে এই অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। হংকংয়ের একসময়ের সমৃদ্ধ বিনোদন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই বিনিয়োগ করা হচ্ছে। আলিবাবার ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ইউকু টিভিবি, শ ব্রাদার্স পিকচার্স ও মিডিয়া এশিয়া গ্রুপের মতো বেশ কয়েকটি স্থানীয় সংস্থার সঙ্গে টিভি সিরিজ প্রযোজনার কাজ করবে। বেইজিংভিত্তিক আলিবাবা পিকচার্স জানিয়েছে, তাদের দ্বিতীয় সদর দপ্তর হংকংয়ে অবস্থিত হবে। তারা ২০ জন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাকে বৃত্তি দিতে হংকং ব্যাপটিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমি অব ফিল্মের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
টেক হেভিওয়েট আলিবাবা গ্রুপ হোল্ডিং লিমিটেডের ডিজিটাল মিডিয়া ও বিনোদন ইউনিট সোমবার ঘোষণা দিয়েছে, তারা হংকংয়ের সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে আগামী পাঁচ বছরে কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন হংকং ডলার (৬৩৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
অ্যাপলকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করবে ইইউ
অ্যাপলকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আজ রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রয়টার্স বলছে, ফিনান্সিয়াল টাইমস প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে- ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিযোগ, সংগীত পরিষেবা চালু করতে ইইউয়ের আইন ভঙ্গ করছে অ্যাপল। এই জরিমানা আগামী মাসের প্রথম দিকে ঘোষণা করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে, ইউরোপীয় কমিশন গত বছর অ্যাপলকে অ্যাপ স্টোরের মাধ্যমে সংগীত পরিষেবা দিতে নিয়ম ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করেছিল। তবে, এ বিষয়ে এখনো অ্যাপলের মন্তব্য জানা যায়নি।
অ্যাপলকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
তিন দিনের বাজুস ফেয়ার শুরু ৮ ফেব্রুয়ারি
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী বাজুস ফেয়ার-২০২৪। বাজুসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী ৮, ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি) হল চারে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। বাজুস ফেয়ার প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বাজুস ফেয়ারের টিকিট মূল্য হবে ১০০ টাকা। তবে, ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মেলায় প্রবেশে কোনো টিকিট লাগবে না। এবারের বাজুস ফেয়ারে ৪১টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। বাজুস আশা করছে, বাজুস ফেয়ার দেশীয় জুয়েলারি শিল্পকে সমৃদ্ধশালী করার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের নতুন অবস্থান তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দেশের স্বর্ণ শিল্পীদের হাতে গড়া নিত্যনতুন আধুনিক ডিজাইনের অলঙ্কারের পরিচিতি বাড়বে বিশ্ববাজারে।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী বাজুস ফেয়ার-২০২৪।
চূড়ান্ত হলো সুপার লিগের ছয় দল
অবশেষে শেষ হয়েছে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের প্রথম পর্বের খেলা। ১২টি দলের মধ্যে লড়াই শেষে সুপার লিগে উঠেছে ছয়টি দল। প্রথম পর্বের সবকটি ম্যাচ জেতা আবাহনী লিমিটেডের সঙ্গে রয়েছে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব, প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব এবং গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। আসরের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলতে থাকা আবাহনীর পয়েন্ট ১১ ম্যাচে ২২। তাদের পেছনে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে তিনটি দল- শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব। অর্থাৎ সুপার লিগে মাত্র দুটি ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হবে আবাহনী। তবে সুপার লিগের চেয়ে জমেছে রেলিগেশন জোনের লড়াই। যেখানে শেষ দিন পর্যন্ত অবনমনের লড়েছে চার দল -সিটি ক্লাব, রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব, গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমী এবং পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব। প্রত্যেকেরই পয়েন্ট সমান ৪ করে। নিয়ম অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত হেড টু হেডে বাছাই করতে হয়েছে শেষ তিনটি দল। শেষ দিনে রূপগঞ্জ টাইগার্সকে তিন উইকেটের হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগে টিকে গেছে পারটেক্স। চার দলের হেড টু হেড লড়াইয়ে পারটেক্স জিতেছে রুপগঞ্জ টাইগার্স ও গাজী টায়ার্সের বিপক্ষে। অন্যদিকে গাজী টায়ার্সও জিতেছিল দুই ম্যাচে। তাদের জয় রূপগঞ্জ টাইগার্স ও সিটি ক্লাবের বিপক্ষে। কিন্তু পারটেক্সের বিপক্ষে হারই কাল হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য।
অবশেষে শেষ হয়েছে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের প্রথম পর্বের খেলা। ১২টি দলের মধ্যে লড়াই শেষে সুপার লিগে উঠেছে ছয়টি দল। প্রথম পর্বের সবকটি ম্যাচ জেতা আবাহনী লিমিটেডের সঙ্গে রয়েছে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব, প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব এবং গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
দুই হলুদ কার্ড দেখেও কেন বহিষ্কার হননি এমিলিয়ানো
ফরাসি ক্লাব লিলেকে হারিয়ে উয়েফা কনফারেন্স কাপের সেমি-ফাইনালে উঠেছে ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিলা। নাটকীয়তায় ঠাঁসা টাই-ব্রেকারে ভিলার জয়ের নায়ক আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। কিন্তু এই ম্যাচে দুটি হলুদ কার্ড দেখেছিলেন এই গোলরক্ষক। কিন্তু তারপরও বহিষ্কার হতে হয়নি তাকে। এদিন ম্যাচের ৩৯তম মিনিটে সময় নষ্ট করার জন্য প্রথমবার হলুদ কার্ড দেখেন এমিলিয়ানো। তখন তার দল ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল। ঘরের মাঠে প্রথম লেগে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় মূলত তখন ছিল ২-২ ব্যবধানে সমতা। ম্যাচ যে এমিলিয়ানো টাই-ব্রেকারে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তাতেই স্পষ্ট। লিলের অধিনায়ক বেঞ্জামিন আন্দ্রে এরপর লিড দ্বিগুণ করলেও শেষদিকে লেফট-ব্যাক ম্যাটি ক্যাশের দুর্দান্ত গোলে অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে ম্যাচ গড়ায় টাই-ব্রেকারে। সেখানেও একবার হলুদ কার্ড দেখেন এমিলিয়ানো। কিন্তু নিয়মের বেড়াজালে বহিষ্কার হতে হয়নি তাকে। টটেনহ্যামের সাবেক মিডফিল্ডার নাবিল বেনতালেব বল তুলে নেওয়ার পরই মাইন্ড গেম শুরু করেন এই গোলরক্ষক। তখন স্লোভাকিয়ান রেফারি ইভান ক্রুজলিয়াক তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেন। এরপর বেনতালেবের শট ঠেকিয়ে দেওয়ার পর স্থানীয় ভক্তদের চুপ করার প্রয়াসে তার ঠোঁটে আঙুল রেখে উদযাপন করেন এমিলিয়ানো। এদিন পুরো ম্যাচেই তাকে দুয়ো দিয়েছিলেন লিলের সমর্থকরা। তবে তার উদযাপন পছন্দ হয়নি রেফারি ক্রুজলিয়াকের। সতর্ক করার পরও না থামলে দ্বিতীয়বারের মতো তাকে হলুদ কার্ড দেখান, তবে লাল কার্ড দেখাননি। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, মূল ম্যাচের হলুদ কার্ড বিবেচনায় নেওয়া হয় না টাইব্রেকারে। তাই দুটি হলুদ কার্ডেও লাল কার্ড দেখতে হয়নি এমিলিয়ানোকে। তবে এই ম্যাচে লাল কার্ড না দেখলেও দুটি হলুদ কার্ডের কারণে সেমি-ফাইনালে অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে প্রথম লেগের ম্যাচে নিষিদ্ধ থাকবেন এই আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। নিয়মের কারণে বেঁচে যাওয়া এই গোলরক্ষকই শেষ পর্যন্ত ভিলার জয়ের নায়ক। বেনতালেবের শট ঠেকিয়ে দেওয়ার পর লিলের অধিনায়ক আন্দ্রের শটও ঠেকান এই এমিলিয়ানো। এ নিয়ে টানা পাঁচটি টাই-ব্রেকারে জিতলেন তিনি। কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালেও এমিলিয়ানোর বীরত্বে টাই-ব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর্জেন্টিনা।
ফরাসি ক্লাব লিলেকে হারিয়ে উয়েফা কনফারেন্স কাপের সেমি-ফাইনালে উঠেছে ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিলা। নাটকীয়তায় ঠাঁসা টাই-ব্রেকারে ভিলার জয়ের নায়ক আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। কিন্তু এই ম্যাচে দুটি হলুদ কার্ড দেখেছিলেন এই গোলরক্ষক। কিন্তু তারপরও বহিষ্কার হতে হয়নি তাকে।
‘জস ইজ দ্য বস’
নবম উইকেট জুটিতে আবেশ খানকে নিয়ে ১৫ বলে ম্যাচ জেতানো ৩৮ রানের জুটি গড়েন জস বাটলার। ওই ১৫ বলের সবগুলোই খেলেছেন তিনি। টেল এন্ডার আবেশকে আগলে একা বের শেষ করেছেন কাজ। গোটা ইনিংস জুড়েই বাটলারের একা নায়ক হওয়ার গল্প। অবিশ্বাস্য রান তাড়ায় দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে আলোড়ন তোলা ডানহাতি ব্যাটারের জন্য রাজস্থান রয়্যালস অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসনের একটাই কথা, 'জস ইজ দ্য বস।' মঙ্গলবার ইডেন গার্ডেনে আইপিএলের ইতিহাসে যৌথ সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে জিতে রাজস্থান। শেষ বলে মেলায় ২২৪ রানের সমীকরণ। দলের ২২৪ রানের মধ্যে বাটলারের একারই ১০৭। ৬০ বলের ইনিংসে ৬ চারের সঙ্গে ইংল্যান্ড সাদা বলের অধিনায়ক মেরেছেন ৬ ছক্কা। তিনি ছাড়া আর ফিফটিও নাই কারো। রিয়ান পরাগের ১৪ বলে ৩৪, রভম্যান পাওয়েলের ১৩ বলে ২৬ রানের অবদান ছিলো। তবে বাটলার ছিলেন নিজের দিনে অনন্য। পুরো ইনিংসটা যেন এগিয়েছেন হিসেব করে। কখন হাল না ছেড়ে জেতার আশা টিকিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন দলকে। শেষ ৩ ওভার জেতার জন্য ৪৬ রান দরকার ছিল রাজস্থানের। স্বীকৃত ব্যাটার বলতে ছিলেন কেবল তিনি। ওই ৪৬ রানের ৪০ রানই এনেছেন তিনি একা, বাকি ৬ রান অতিরিক্ত থেকে। বাটলারের সঙ্গে নবম উইকেট জুটিতে থাকা আবেশের যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। ম্যাচ শেষে বাটলারকে স্রেফ স্যালুট দিতে থাকলেন তিনি। অধিনায়ক স্যামসনের উচ্ছ্বাস স্বাভাবিকভাবে বেশি। তার মতে বাটলার বস, 'জস যখন ব্যাট করে বোলাররা চাপে থাকে। এই কারণে তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার বলা হয়। জস ইজ দ্য বস।' 'আইপিএল বস। আমি এর বেশি কিছু ব্যাখ্যা করতে পারব না।' ম্যাচ শেষে ডাগআউটে ফেরার পর সতীর্থদের সঙ্গে উদযাপন সেরে বিসিসিআইর ভিডিওতে বাটলার বলেন, কখনোই নেতিবাচক চিন্তা মাথায় ঢুকতে দেননি তিনি,  'আমার মনে হয় রোলারকোস্টারের মতন ছিলো। বিশ্বাসটা ধরে রেখেছি। শেষ ৩ ওভারে নেতিবাচক কোন চিন্তা মাথায় আসতে দেইনি। ভেবেছি আমি আছি, আমি এটা করতে পারব। আইপিএলের এবারের আসরে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করলেন বাটলার। সব মিলিয়ে আইপিএলে তার সেঞ্চুরি সংখ্যা ৭টি। তার উপরে আছেন কেবল বিরাট কোহলি (৮ সেঞ্চুরি)।
নবম উইকেট জুটিতে আবেশ খানকে নিয়ে ১৫ বলে ম্যাচ জেতানো ৩৮ রানের জুটি গড়েন জস বাটলার। ওই ১৫ বলের সবগুলোই খেলেছেন তিনি। টেল এন্ডার আবেশকে আগলে একা বের শেষ করেছেন কাজ। গোটা ইনিংস জুড়েই বাটলারের একা নায়ক হওয়ার গল্প। অবিশ্বাস্য রান তাড়ায় দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে আলোড়ন তোলা ডানহাতি ব্যাটারের জন্য রাজস্থান রয়্যালস অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসনের একটাই কথা, 'জস ইজ দ্য বস।'
স্মৃতি গন্ধমাখা সেইসব খেলা
কানামাছি, গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধা- গ্রামীণ এসব খেলার স্মৃতি হয়ত অনেকের শৈশবের প্রধান ছবি। ডিজিটাল যুগের দাপট, খেলার মাঠের অভাবে শহুরে শিশুদের কাছে এসব খেলা অচেনা হলেও গ্রামীণ জনপদে এখনো তা একবারেই হারিয়ে যায়নি। খুলনার ডুমুরিয়ার পাবলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের এমন কিছু ঐতিহ্যবাহী খেলায় মেতে থাকতে দেখা যায়। সরল জীবন যাপনের রঙিন আবহে মাতোয়ারা শিশুদের ছবি ধারণ করেছেন হাবিবুর রহমান।
কানামাছি, গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধা- গ্রামীণ এসব খেলার স্মৃতি হয়ত অনেকের শৈশবের প্রধান ছবি। ডিজিটাল যুগের দাপট, খেলার মাঠের অভাবে শহুরে শিশুদের কাছে এসব খেলা অচেনা হলেও গ্রামীণ জনপদে এখনো তা একবারেই হারিয়ে যায়নি। খুলনার ডুমুরিয়ার পাবলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের এমন কিছু ঐতিহ্যবাহী খেলায় মেতে থাকতে দেখা যায়। সরল জীবন যাপনের রঙিন আবহে মাতোয়ারা শিশুদের ছবি ধারণ করেছেন হাবিবুর রহমান।
শোয়েবের সঙ্গে কয়েকমাস আগেই বিচ্ছেদ হয়েছে সানিয়ার
শোয়েব মালিক ও সানিয়া মির্জার সম্পর্ক ভেঙে পড়ার গুঞ্জন ছিল বেশ কয়েকমাস ধরে। সেই গুঞ্জনকে সত্যতা দিয়ে আরেক বিয়ের খবর দেন শোয়েব। বিপিএল খেলতে ঢাকায় এসে ইন্সটাগ্রামে নিজের নতুন স্ত্রীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করেন তিনি। তবে এই বিয়ের আগে শোয়েব-সানিয়ার আইনি বিচ্ছেদ হয়েছিলো কিনা তা নিয়ে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। অবশেষে সানিয়ার বক্তব্য প্রকাশ করেছে তার পরিবার। জানা গেছে, দুজনের বিচ্ছেদ হয়েছে কয়েক মাস আগেই। সানিয়ার ছোট বোন বোন আনাম মির্জা ইনস্টাগ্রামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন।  সানিয়ার পরিবার ও টিম সানিয়ার নামে দেওয়া সেই বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, 'সানিয়া বরাবর তার ব্যক্তিজীবন জনসাধারণের থেকে আড়াল রেখেছেন। তবে আজ এটা জানানো প্রয়োজন হয়েছে যে শোয়েব ও সানিয়ার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে কয়েক মাস আগে। সানিয়া শোয়েবের নতুন যাত্রার জন্য শুভকামনা জানিয়েছে।' পরিবারের পক্ষ থেকে সানিয়ার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সম্মানের সঙ্গে দেখার অনুরোধ করা হয়েছে, 'জীবনের স্পর্শকাতর এই সময়ে আমরা চাই সানিয়ার গোপনীয়তার বিষয়টি সম্মানের সঙ্গে দেখে যেন সবাই জল্পনা থেকে বিরত থাকেন।' শনিবার ফরচুন বরিশালের হয়ে মাঠে নামার আগে ইন্সটাগ্রামে পাকিস্তানের টিভি অভিনেত্রী সানা জাভেদের সঙ্গে বিয়ের ছবি প্রকাশ করেন। ছবি ও  ক্যাপশন পড়েই তার নতুন বিয়ের খবর নিশ্চিত হয়ে যান সবাই। ২০১০ সালে ভারতের টেনিস তারকা সানিয়াকে বিয়ে করেন পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা শোয়েব। ২০০২ সালে আয়েশা সিদ্দিকী নামে আরেক নারীকে বিয়ে করেছিলেন বলে জানা গিয়েছিলো। শনিবার ফরচুন বরিশালের হয়ে মাঠে নামার আগে ইন্সটাগ্রামে পাকিস্তানের টিভি অভিনেত্রী সানা জাভেদের সঙ্গে বিয়ের ছবি প্রকাশ করেন। ছবি ও  ক্যাপশন পড়েই তার নতুন বিয়ের খবর নিশ্চিত হয়ে যান সবাই। ২০১০ সালে ভারতের টেনিস তারকা সানিয়াকে বিয়ে করেন পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা শোয়েব। ২০০২ সালে আয়েশা সিদ্দিকী নামে আরেক নারীকে বিয়ে করেছিলেন বলে জানা গিয়েছিলো। ২০১০ সালে ভারতের টেনিস তারকা সানিয়াকে বিয়ে করেন পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা শোয়েব। ২০০২ সালে আয়েশা সিদ্দিকী নামে আরেক নারীকে বিয়ে করেছিলেন বলে জানা গিয়েছিলো।
শোয়েব মালিক ও সানিয়া মির্জার সম্পর্ক ভেঙে পড়ার গুঞ্জন ছিল বেশ কয়েকমাস ধরে। সেই গুঞ্জনকে সত্যতা দিয়ে আরেক বিয়ের খবর দেন শোয়েব। বিপিএল খেলতে ঢাকায় এসে ইন্সটাগ্রামে নিজের নতুন স্ত্রীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করেন তিনি। তবে এই বিয়ের আগে শোয়েব-সানিয়ার আইনি বিচ্ছেদ হয়েছিলো কিনা তা নিয়ে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। অবশেষে সানিয়ার বক্তব্য প্রকাশ করেছে তার পরিবার। জানা গেছে, দুজনের বিচ্ছেদ হয়েছে কয়েক মাস আগেই।
ঘরে বসেই করা যাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা
ঘরে বসেই ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য দেশেই তৈরি হচ্ছে ডেঙ্গু টেস্ট কিট। বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস্-বিআরআইসিএম ডেঙ্গু র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন কিটটি তৈরি করেছে, যা ডেঙ্গুর সব ধরনের সেরোটাইপ শনাক্ত করতে সক্ষম। সংস্থাটি বলেছে, কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে অর্ডার পেলেই তারা কিট উৎপাদন শুরু করতে পারে। গত জানুয়ারিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) কিটটির বাণিজ্যিক উৎপাদনের অনুমোদন দেয়। ডিজিডিএর উপ-পরিচালক মো. আব্দুল মালেক গতকাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সবকিছু যাচাই-বাছাই করার পর, আমরা বিআরআইসিএমকে ড্রাগ লাইসেন্স দিয়েছি এবং এই বছরের ১৫ জানুয়ারি থেকে কিট উৎপাদন শুরু করার অনুমোদন দিয়েছি।' বাংলাদেশ সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক টেস্ট কিট আমদানি করতে হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, যদি সরকারি হাসপাতালগুলো স্থানীয় পরীক্ষার কিট ব্যবহার করে তবে এটি ফরেক্সের ওপর চাপ কমিয়ে দেবে। বিআরআইসিএম-এর মহাপরিচালক মালা খান বলেন, '২০২১ সাল থেকে যখন দেশে ডেঙ্গু বাড়তে শুরু করে তখন থেকে আমরা কিট তৈরির কাজ করি। প্রোটোকলটি তৈরির পর ২০২২ সালের মার্চ মাসে এটি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) এর কাছে জমা দেই। পরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট মধ্যে কিটটির ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়। আমরা যে কিট তৈরি করেছি সব করসহ এর দাম হবে ১২০ টাকা, যা আমদানি করা কিটের চেয়ে সস্তা।' মালা খানের নেতৃত্বে মামুদুল হাসান রাজু, রাইসুল ইসলাম রাব্বি, জাবেদ বিন আহমেদ, খন্দকার শরীফ ইমাম, মো রাহাত, নাফিসা চৌধুরী এবং মো. সোহেলসহ একদল বিজ্ঞানী কিটটি তৈরি করেন। মালা বলেন, 'জিকা, চিকুনগুনিয়া এবং কোভিড-১৯ এর মতো অন্যান্য ধরনের ভাইরাসের সাথে কিটটির কোনো ক্রস-রিয়েকশন নেই। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের সাহায্যে হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু ডেঙ্গু র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন কিটের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ জনবলের সাহায্য ছাড়াই ল্যানসেট ব্যবহার করে ঘরে বসেই আঙুলের ডগায় রক্ত পরীক্ষা করা সম্ভব।' 'কিটটির সংবেদনশীলতা শতভাগ সঠিক বলে প্রমাণিত, এটি আজ পর্যন্ত কোনো ভুল রিপোর্ট দেয়নি। আমাদের কাছে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে এবং আমরা প্রতিদিন ৫০ হাজার কিট তৈরি করতে প্রস্তুত,' বলেন তিনি। বিআরআইসিএম কর্মকর্তারা জানান, গত ২১ জানুয়ারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে এই পরীক্ষার কিটগুলো কেনার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও কোনো অর্ডার পাওয়া যায়নি।' জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, 'এটি খুবই ভালো খবর। যেকোনো পণ্য কেনার জন্য আমাদের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। আমরা আমাদের স্থানীয় পণ্যের প্রচার করতে চাই। সবগুলো মানদণ্ড পূরণ হলে আমরা অবশ্যই কিটটি কিনব।'
ঘরে বসেই ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য দেশেই তৈরি হচ্ছে ডেঙ্গু টেস্ট কিট। বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস্-বিআরআইসিএম ডেঙ্গু র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন কিটটি তৈরি করেছে, যা ডেঙ্গুর সব ধরনের সেরোটাইপ শনাক্ত করতে সক্ষম।
৯ জনের মধ্যে ডাক্তার আছেন ২ জন, পড়ে আছে এক্সরে মেশিন
পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নয়টি চিকিৎসক পদের মধ্যে সাত পদে কেউ নেই। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় জটিল রোগে শহরমুখী হতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। হাসপাতাল সূত্র অনুসারে—একজন সার্জন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ, তিনজন মেডিকেল অফিসার ও দন্ত চিকিৎসকের পদ শূন্য। দুমকী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দাপ্তরিক কাজেও ব্যস্ত থাকেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নয়জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র দুজন। বাকি সাতটি পদ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই খালি। মাঝেমধ্যে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হলেও নিয়োগপ্রাপ্তরা এখানে আসেন না। হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে। তখন এই হাসপাতালে ১৯ জন চিকিৎসক ও সাতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি হবে। বর্তমানে হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে বা ইনডোরে সেবা কার্যক্রম চলমান আছে। তবে চিকিৎসক সংকট থাকায় চিকিৎসা সেবা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রোগীর চাপ সামলাতে আংগারিয়া, মুরাদিয়া ও লেবুখালী ইউনিয়ন থেকে প্রেষণে তিন মেডিকেল কর্মকর্তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। হাসপাতালের রেজিস্টার বলছে, গত দুই মাসে এই হাসপাতালে ২৮টি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। এ ছাড়া, বহির্বিভাগে সাত হাজার ২২ জন, জরুরি বিভাগে ৬৮৮ জন ও আন্তঃবিভাগে ৩২৭ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। ২০০৪ সালের ১৬ জুন ৩১ শয্যা নিয়ে দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু হয়। ধীরে ধীরে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি চিকিৎসা সেবার পরিধি। ১ এপ্রিল হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে দেখা যায়—বকুল লতা (৬০) তার ১১ বছর বয়সী নাতি ইয়াসিনের শয্যার পাশে বসে আছেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সকালে ইয়াসিন মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে এসে স্যালাইন পেয়েছেন, তবে ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। পেট ব্যথার কারণে দুদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আনোয়ার (৪০)। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু ওষুধ কিনতে হয়েছে।' একই কথা জানান ময়তন বিবি (৬৫)। বাইরে থেকে এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষা করাতে তার এক হাজার ৭০০ টাকা খরচ হয়েছে। বেশ কয়েক দিন ধরে ময়তন বিবির পেটে ব্যথা। তার শরীর ফুলে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন স্থাপন করা হলেও এখনো তা চালু হয়নি। দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মীর শহীদুল হাসান শাহীন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আধুনিক এক্স-রে মেশিন পেয়েছি, তবে টেকনিশিয়ান না থাকায় এক্স-রে শুরু করা যাচ্ছে না।' 'রক্তের সব পরীক্ষা এখানে করানো সম্ভব হয় না,' বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, 'হাসপাতালে ওষুধ আছে। যে ওষুধগুলো নেই, সেগুলো বাইরে থেকে কিনতে বলা হয়।' পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন এসএম কবির হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের চিকিৎসক সংকট আছে। চিকিৎসকের জন্য বারবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। আশা করছি, শিগগির কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।'
পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নয়টি চিকিৎসক পদের মধ্যে সাত পদে কেউ নেই। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় জটিল রোগে শহরমুখী হতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সব ধরনের মাংসের দাম
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মাংসের দাম বেড়েছে। সরেজমিনে কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ১০ দিন আগেও ২০০-২১০ টাকা ছিল। একইসঙ্গে বাজারে অন্য সব ধরনের মুরগির দামও বেড়েছে। সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হতো। অন্যদিকে, এক সপ্তাহ আগে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায়। পশ্চিম শেওড়াপাড়া বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা মো. বশির মিয়া জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে গরুর দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে। 'যারা গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি করেন তারা গরুর মাংস পানিতে ভিজিয়ে ওজন বাড়িয়ে দেন। আমি সেটা করি না। সেজন্য আমি ৭৮০ টাকার কমে বিক্রি করতে পারি না,' বলেন তিনি। পাশাপাশি আলুর দামও কিছুটা বেড়েছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়, যা তিন দিন আগেও ৪০ টাকা ছিল। এছাড়া কলার দামও বেড়েছে প্রতি ডজনে ১০ থেকে ২০ টাকা। নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১৫ মার্চ ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, খাসির মাংস, আলুসহ ২৯টি পণ্যের খুচরা দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারের সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এখনও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামেই পণ্য বিক্রি করছে। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর দাম নির্ধারণ করলেও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অভিযানেও তা কার্যকর করা যায়নি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়তে থাকায় সীমিত ও নিম্ন আয়ের পরিবারের লোকজন হিমশিম খাচ্ছেন। কারওয়ান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে এসেছিলেন বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী আজহার মাহমুদ। তিনি বলেন, 'আমি ব্রয়লার মুরগি কিনতে এসেছিলান। একমাত্র এটাই আমার সাধ্যের মধ্যে ছিল। সরকার দাম নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ১৭৫ টাকা। কিন্তু আমি এখানকার কোনো দোকানেই ২৩০ টাকার নিচে মাংস পাচ্ছি না।' 'সরকার যদি কার্যকরই করতে না পারে তাহলে কেন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে?,' ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন তিনি। বীমা কোম্পানির কর্মকর্তা রশিদ মিলন বলেন, 'গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কিছুটা কম। কিন্তু মসুর ডাল, ডিম ও মাংসের বাড়তি দামের কারণে বাজারে স্বস্তি নেই।'
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মাংসের দাম বেড়েছে।
ব্রণ চিকিৎসা সামগ্রীতে ক্যানসারের উপাদান, বাজার থেকে প্রত্যাহারের আহ্বান
ব্রণ বা একনি দূরীকরণ চিকিৎসা সামগ্রীতে উচ্চমাত্রার ক্যানসার-সৃষ্টিকারী রাসায়নিক বেনজিন শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায়। আজ বৃহস্পতিবার রয়টার্স জানায়, এস্টি লডার ক্লিনিক, টার্গেটস আপ অ্যান্ড আপ এবং রেকিট বেনকিজারের মালিকানাধীন ক্লিয়ারসিলসহ একাধিক ব্র্যান্ডের পণ্যসামগ্রীতে বেনজিনের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানিয়েছে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভ্যালিসার। কানেকটিকাট-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এজন্য বাজার থেকে এসব পণ্যসামগ্রী প্রত্যাহারসহ এ বিষয়ে তদন্ত এবং শিল্প নির্দেশিকা সংশোধনের আহ্বান জানিয়ে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) কাছে একটি পিটিশনও দাখিল করেছে তারা। ভ্যালিসার বলছে, এ ঘটনার পর এস্টি লডারের শেয়ার দুই শতাংশ কমে গেছে। প্রোঅ্যাক্টিভ, প্যানঅক্সিল, ওয়ালগ্রিনসের একনি সোপ বার এবং ওয়ালমার্টের ইক্যুয়েট বিউটি একনি ক্রিমেও বেনজিন শনাক্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, প্রেসক্রিপশন এবং ওভার-দ্য-কাউন্টার বেনজয়াইল পারক্সাইড ব্রণ চিকিৎসা সামগ্রীতে 'অগ্রহণযোগ্য উচ্চমাত্রার' রাসায়নিক যৌগ বেনজিন উৎপন্ন হতে পারে। তবে ভ্যালিসারের পিটিশনের এখনো কোনো জবাব দেয়নি মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন। ইতোমধ্যে সানস্ক্রিন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং ড্রাই শ্যাম্পুসহ বেশ কিছু পণ্যে ক্যানসার-সৃষ্টিকারী এই উপাদান পাওয়ায় প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল এবং জনসন অ্যান্ড জনসনসহ বিখ্যাত কিছু কোম্পানির পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তবে ভ্যালিসার জানায়, ব্রণ চিকিৎসা সামগ্রীতে বেনজিনের উপস্থিতির হার অন্যান্য পণ্যের চেয়ে 'একেবারেই আলাদা'।
ব্রণ বা একনি দূরীকরণ চিকিৎসা সামগ্রীতে উচ্চমাত্রার ক্যানসার-সৃষ্টিকারী রাসায়নিক বেনজিন শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায়।
দেশে বাড়ছে ক্যানসার রোগী, ২০৫০ সালে দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা
বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এবং ২০৫০ সালে দেশে ২০২২ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি নতুন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ১৮৫টি দেশ এবং ৩৬ ধরনের ক্যানসারের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিষয়ে বলা হয়েছে, খাদ্যনালী, ঠোঁট, ওরাল ক্যাভিটি এবং ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সাবেক সভাপতি মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভেজাল খাবার ও জাংক ফুডের ব্যবহার, অলস জীবনযাপন, দূষণ এবং তামাক ও অ্যালকোহল ব্যবহার বাংলাদেশে ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ। হাইপার অ্যাসিডিটি পুরুষ এবং নারী উভয়ের মধ্যেই সাধারণ। এ কারণেই খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঘটনা বাড়ছে।' বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেরিতে ক্যানসার শনাক্ত মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। ডব্লিউএইচও আরও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে ২০৫০ সালে সারা বিশ্বে ক্যানসারে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ মিলিয়নে পৌঁছাবে, যা ২০২২ সালের সংখ্যার তুলনায় প্রায় ৭৭ শতাংশ বেশি।ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) একটি সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে সংস্থাটি বলছে, প্রায় পাঁচজনের মধ্যে একজন তাদের জীবদ্দশায় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। তাছাড়া প্রতি নয়জন পুরুষের মধ্যে একজন এবং ১২ জন নারীর মধ্যে একজন ক্যানসারে মারা যায়। গবেষণায় তামাক, অ্যালকোহল, স্থূলতা এবং বায়ু দূষণকে বিশ্বব্যাপী ক্যানসার রোগীর বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের চিকিৎসকরা বলছেন, পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের প্রকোপ বেশি এবং নারীদের মধ্যে স্তন ও জরায়ুর ক্যানসার সবচেয়ে বেশি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আগামীকাল বিশ্ব ক্যানসার দিবস পালন করা হবে। তবে বাংলাদেশে এই রোগের কোনো জাতীয় তথ্য নেই। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক এম নিজামুল হক বলেন, 'দেশে ক্যানসারের পুরো চিত্র পেতে আমাদের শিগগিরই এ সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করতে হবে। আমাদের কাছে হাসপাতাল-ভিত্তিক কিছু তথ্য আছে, কিন্তু তা সম্পূর্ণ নয়।' প্রখ্যাত ক্যানসার এপিডেমিওলজিস্ট হাবিবুল্লাহ রাসকিন বলেন, 'রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা যে বাড়ছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে সঠিক তথ্য ছাড়া এর পরিমাণ বলা কঠিন।' একটি জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশল থাকতে হবে যার অধীনে কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচির বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'সঠিকভাবে ক্যানসার শনাক্ত করা এবং স্ক্রিনিং সিস্টেম ও চিকিত্সা প্রোটোকল অবশ্যই থাকতে হবে। এখনই আমাদের সব ক্যানসার প্রোগ্রামকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার উপযুক্ত সময়, যাতে আমাদের কাছে সঠিক তথ্য থাকতে পারে।' সরকার গত বছর সার্ভিকাল ক্যানসারজনিত মৃত্যু দূর করার জন্য স্কুল-স্তরের এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস) টিকাদান কর্মসূচি চালু করেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'হেপাটাইটিস বি এবং অন্যান্য ভ্যাকসিনগুলোও ক্যানসারজনিত মৃত্যু কমায়।' ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে আনুমানিক ৯.৭ মিলিয়ন মানুষ ক্যানসারে মারা গেছে। ডব্লিউএইচও ১১৫টি দেশের সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা গেছে বেশিরভাগ দেশ সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের অংশ হিসেবে ক্যানসার এবং এর পরিষেবাকে পর্যাপ্তভাবে অর্থায়ন করে না। আইএআরসি এর গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরির নতুন তথ্যে দেখা গেছে যে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী যারা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন ও মারা গেছেন তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ১০ ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। নতুনভাবে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বব্যাপী ২.৫ মিলিয়ন, যা সবচেয়ে বেশি। এরপরে ২.৩ মিলিয়ন স্তন ক্যানসার, ১.৯ মিলিয়ন কোলোরেক্টাল ক্যানসার, ১.৫ মিলিয়ন প্রোস্টেট এবং ৯ লাখ ৭০ হাজার মানুষ পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া ফুসফুসের ক্যানসারে ১.৮ মিলিয়ন, কোলোরেক্টাল ক্যানসারে ৯ লাখ, লিভার ক্যানসারে ৭ লাখ ৬০ হাজার, স্তন ক্যানসারে ৬ লাখ ৭০ হাজার এবং পাকস্থলীর ক্যানসারে ৬ লাখ ৬০ হাজার জন মারা গেছেন।
বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এবং ২০৫০ সালে দেশে ২০২২ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি নতুন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
‘কুষ্ঠ রোগের হার বেশি চা শ্রমিকদের মধ্যেই, বেশি ঝুঁকিতে নারীরা’
রূপম ভূমিজের শরীরের বিভিন্ন স্থানের চামড়া বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। তিনি সেদিকে মনোযোগ দেননি। পরে দেখেন যে তার পায়ের আঙ্গুলে আলসার হয়ে যাচ্ছে এবং চা-পাতা তুলতে চা বাগানে যাওয়ার সময় সমস্যা হচ্ছে। ৫৩ বছর বয়সী রূপম বলেন, 'আমি বুঝতে পারছিলাম না যে কী হচ্ছে।' রূপম যখন চিকিৎসার জন্য গেলেন, ততদিনে বেশ দেরি হয়ে গেছে। তার বাম পা অকেজো হয়ে গেছে, যার চিকিৎসা করানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, 'এলাকায় এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিবেশীরাও আমার সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের সামাজিক বৈষম্য করছে।' রূপম জানান, তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত রয়েছে। ধীরে ধীরে তিনি বাম পায়ে সংবেদন হারিয়ে ফেলেন। রূপম ভূমিজ কোনো ব্যতিক্রম উদাহরণ না। সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কুষ্ঠ রোগের হার চা-শ্রমিকদের মাঝেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সিলেট কুষ্ঠ হাসপাতালে ২ হাজার ৯৫৯ জন কুষ্ঠ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। মৌলভীবাজারে গত বছর নতুন করে ২৫৭ জন কুষ্ঠ আক্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে জেলাটিকে 'রেড জোন' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া সিলেটে ১৮০ জন, হবিগঞ্জে ১১৭ জন এবং সুনামগঞ্জে ১০৩ জন নতুন কুষ্ঠ আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই চা শ্রমিক কিংবা তাদের পরিবারের সদস্য। কুষ্ঠ রোগের ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলো হলো—মৌলভীবাজার, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট ও মেহেরপুর। মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ জানান, জেলায় ৯২টি চা-বাগান রয়েছে। এই চা-বাগানের শ্রমিকরা অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন। এ কারণে তাদের মাঝে কুষ্ঠ রোগের প্রকোপ বেশি। তবে নারী শ্রমিকদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। চা-বাগানে কুষ্ঠ রোগ শনাক্তকরণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এ কারণে রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে। সরকার তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছে। চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ জানান, কুষ্ঠ বংশগত নয়। এটি সংক্রামক। কুষ্ঠ রোগ বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রোগী চিকিৎসার আওতায় এলে জীবাণু ছড়ায় না। চিকিৎসায় দেরি হলে রোগীর হাত, পা ও চোখ বিকৃত হয়ে যায়। হালকা ফ্যাকাশে বা সাদা দাগ, ত্বকে পিণ্ড বা পিম্পল—এগুলো কুষ্ঠ রোগের প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে অন্যতম। তিনি বলেন, 'কুষ্ঠ রোগের কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেলেও মানসিক ও সামাজিক লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার ভয়ে রোগীরা প্রাথমিক পর্যায়ে হাসপাতালে আসেন না। তবে সচেতনতার মাধ্যমে কুষ্ঠ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।' সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসার চৌধুরী বলেন, 'কুষ্ঠ রোগী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ভয়ে আক্রান্ত অনেকে চিকিৎসকের কাছে যান না। অনেকে আবার কবিরাজসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নেন। এসব কারণে সব রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনতে সময় লাগে।' বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সংজ্ঞা অনুসারে, একটি দেশকে 'কুষ্ঠ মুক্ত' ঘোষণা করা যেতে পারে যদি জনসংখ্যার প্রতি ১০ হাজার জনে একজনের কম কুষ্ঠ রোগী থাকে। সে হিসেবে, ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ 'কুষ্ঠ মুক্ত' দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও এখনো প্রতি বছর বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশ চা সংসদের (চা বাগান মালিকদের সংগঠন) সিলেট চ্যাপ্টারের চেয়ারপারসন জিএম শিবলী বলেন, 'সামাজিক অবহেলা ও কুসংস্কারের কারণে চা শ্রমিকরা কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে রোগবালাই।' স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মোহাম্মদ নূরে আলম শামীমও বলেন, চা-বাগানে কুষ্ঠ রোগের সংক্রমণ বেশি। চা শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) গবেষক ও পরিচালক ফিলিপ গাইন বলেন, 'চা-বাগানের শ্রমিকদের অপুষ্টির সমস্যা, ভালো পরিবেশে বসবাস না করা, চা শ্রমিকদের কম মজুরি, বহু প্রজন্ম ধরে কম খাওয়া—এসব কারণে তাদের মধ্যে কুষ্ঠ রোগ হওয়ার হার বেশি। যদিও আমরা এই বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো গবেষণা খুঁজে পাইনি। এর জন্য বিশদ গবেষণা প্রয়োজন।' চা শ্রমিক রূপম ভূমিজ বলেন, 'হীড বাংলাদেশের স্টাফরা দ্য লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অর্থায়নে আমাকে কুষ্ঠ রোগী হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারি চিকিৎসার আওতায় আনে। কিন্তু ততদিনে আমার বাম পায়ে আলসার হয়ে গেছে। এখন দ্য লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহায়তায় চিকিৎসা চলছে এবং আলসার কমাতে বিশেষ জুতা ব্যবহার করছি।' স্ট্যাটিস্টিক্যাল হ্যান্ডবুক অন বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রি ২০১৯ অনুসারে, দেশে ১৬৬টি চা-বাগান রয়েছে, যেখানে মোট এক লাখ ৪০ হাজার ১৬৪ জন চা শ্রমিক নিযুক্ত রয়েছে। সিলেট বিভাগের তিনটি জেলায়,  ১৩৫টি চা-বাগান রয়েছে, যেখানে ৪৬ হাজার ৪৫০ জন নিবন্ধিত নারী শ্রমিক ও ১৫ হাজার ১৫৩ জন নৈমিত্তিক নারী শ্রমিক কাজ করেন। যেখানে আরও পাঁচ লাখ মানুষ এই শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল।
রূপম ভূমিজের শরীরের বিভিন্ন স্থানের চামড়া বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। তিনি সেদিকে মনোযোগ দেননি। পরে দেখেন যে তার পায়ের আঙ্গুলে আলসার হয়ে যাচ্ছে এবং চা-পাতা তুলতে চা বাগানে যাওয়ার সময় সমস্যা হচ্ছে।
সফটওয়্যারের মাধ্যমে সাপ্লাই চেইন মনিটর করা হবে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
সফটওয়্যারের মাধ্যমে সাপ্লাই চেইন মনিটর করার উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি জানান, আগামীকাল এই সফটওয়্যারের উদ্বোধন করা হবে। বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'সবাই ভাবে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তের জন্য সুপার মার্কেট; সুপার মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন কালকে আমাকে চিঠি দিয়েছে যে, রোজার মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোন পণ্য কত দামে বিক্রি করবে। এটা একটা উদাহরণ হতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে হয়তো দুএকজন সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে।' পণ্যের নির্ধারিত দাম গণমাধ্যমে প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'যদি একটা সুপার মার্কেটে ৩০ টাকায় আলু থাকে; অনেকে মনে করে দরদাম করলে বুঝি দুই টাকা সাশ্রয় হবে—এই জন্যই যায় কাঁচাবাজারে। তেল তারা আমাদের নির্ধারিত দামের কমে বিক্রি করছে, অন্যান্য জিনিসও তারা মোটামুটি চেষ্টা করছে।' পাইকারি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'তারা অবশ্যই ভাউচার দেয়, কত দামে খুচরা বিক্রেতার কাছে (পণ্য) দিলো। আমরা যখন যাই, খুচরা বিক্রেতার কাছে জিজ্ঞাসা করি, তারা পায় না। কারণ তারা আড়তদারের কাছ থেকে না, পাইকারি বাজারের রাস্তা থেকে কিনছে।' কনজুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, '১৬১২১ নম্বরে অভিযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং আমাদের ভোক্তা অধিদপ্তর সাপ্লাই চেইন মনিটরিং সিস্টেম শক্তিশালী করছে। আমরা একটি সফটওয়্যার ডেভেলপের চেষ্টা করছি, যাতে সাপ্লাই চেইন মনিটর করতে পারি। আগামীকাল এর উদ্বোধন হবে।' প্রতিমন্ত্রীর নিজ এলাকার কৃষক বেগুনের দর ১০ টাকা পাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'তাহলে চিন্তা করেন ১০ টাকার বেগুনে ঢাকায় বেগুনি খেতে আমাদের কত খরচ করতে হচ্ছে!' চাল নিয়ে বাজারে 'তেমন অস্থিরতা' নেই জানিয়ে তিনি বলেন, 'আপনাদের যেহেতু কোনো নিউজ নেই।' দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিন থেকে আপনি কথা বলছেন, আপনি এখন বাজারেও যাচ্ছেন। আপনি যে পরিমাণ শ্রম দিচ্ছেন, বাজারে কেন সে রকম প্রভাব পড়ছে না; খুচরা বাজার কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না—গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে টিটু বলেন, 'সাপ্লাই চেইন নিয়ে কথা বলি; এটা তো একটা ট্রলের ব্যাপার হয়ে গেছে। যেখানে যেখানে আমাদের সাপোর্ট দরকার; কৃষকের কাছ থেকে ট্রাকে উঠে এসে পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে যাওয়া পর্যন্ত—এই জায়গাটা আমরা এখন পর্যন্ত সিমপ্লিফাই করতে পারছি না। 'আপনারা সাপ্লাই চেইন ফলো করেন, তাহলে বুঝবেন আমার ফেইলিয়র বা শতভাগ সার্থক না হওয়ার কারণটা কী। শসা, লেবু, বেগুন উৎস থেকে কত টাকায় ট্রাকে উঠছে এবং হাত ঘুরে কাঁচাবাজারে কত টাকায় ল্যান্ড করছে নিউজ করেন। তাহলে আমার সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারবেন, কেন আমি শতভাগ সফলতা আনতে পারছি না,' যোগ করেন তিনি। সুপার শপে সব সময় খুচরা বাজারের চেয়ে দাম বেশি থাকে—একজন গণমাধ্যমকর্মী দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ট্যাগের চেয়ে বেশি দাম নেওয়া হলে ভোক্তা অধিকার ব্যবস্থা নেবে। সরকার নির্ধারিত দামের বেশি নিলে গণমাধ্যমকর্মীদের ছবি তুলে পাঠাতে বলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমি কাউকে প্রোমট করছি না। তুলনা করে দেখতে বলছি।'
সফটওয়্যারের মাধ্যমে সাপ্লাই চেইন মনিটর করার উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
কেবল ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে কি বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?
চলতি মাসের শুরুর সপ্তাহেই পবিত্র রমজান মাসে মূল্যবৃদ্ধি রোধে পণ্য মজুতের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাজার মনিটরিং জোরদারের জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকের প্রতি নির্দেশ এসেছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) থেকে। কিন্তু সেই নির্দেশনা কাজে আসেনি। এমনিতেই প্রতিবছর রমজান মাসকে ঘিরে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। কিন্তু এবার আগে থেকেই বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে, যা তেতে থাকা বাজারকে আরও বেশি উত্তপ্ত করে তুলেছে। আর সেই আগুনে পুড়ে চলেছেন সাধারণ ক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার খবর আসছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে—কেবল ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করে কিংবা কারাদণ্ড দিয়ে কি মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব? বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের সঙ্গে। শাহদীন মালিক মনে করেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম হয়তো সাময়িক কিছু সাফল্য আনতে পারে। কিন্তু এভাবে দীর্ঘমেয়াদী কোনো সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব না। এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর ভাষ্য, '(ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে) দীর্ঘমেয়াদে কোনো কিছু হবে না। কারণ এই সংসদের নির্বাচিত ৩০০ সদস্যের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই ব্যবসায়ী। যারা এই বাজারটা নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা সারাজীবন ব্যবসার মাধ্যমে তাদের ‍মুনাফা-আয় বাড়ানোর চেষ্টা করে এসেছেন। এখন তাদের ওপর যদি দায়িত্ব দেওয়া হয় অন্য লোকের আয় ও মুনাফা কমিয়ে আনার, তাহলে তো তা সাংঘর্ষিক হবে।' শাহদীন মালিক বলেন, 'বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় ব্যবসায়ীদের দিয়ে এ জন্যই সংসদ ভরিয়ে ফেলে না। কারণ বাজারটা তখন সরকারের নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছা থাকলেও তা কার্যকর হয় না। এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব চলে আসে। যে মানুষ সারাজীবন তার মুনাফা যতটাসম্ভব বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন তাকে যদি দাম বাড়ানো-কমানোর বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া হয়, সেটা তো কখনোই সম্ভব না।' এখানে কাঠামোগত সমস্যাটিকেই সবচেয়ে বড় করে দেখতে চান এই আইনজীবী। তিনি বলেন, 'এখানে কাঠামোগত সমস্যাটাই সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই কেবল ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম দিয়ে কোনোকিছু তো হবে না। কারণ দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিরাই ব্যবসায়ী।' শাহদীন মালিক আরও বলেন, 'টেলিভিশনে খবর দেখি। যে বিজ্ঞাপনগুলো দেখানো হয় তাতে ঘুরেফিরে দশটা-বিশটা কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রত্যেকটা চ্যানেলে হচ্ছে। পুরো অর্থনীতির ওপর তাদের যে নিয়ন্ত্রণ এটা তারই সূচক। এই নিয়ন্ত্রণটা চ্যানেলগুলোর ওপরেই বটে। এখন যদি কোনো টিভি স্টেশনকে বলা হয় যে তাদের বিজ্ঞাপন দেবে না। তাহলে তো ওই টিভি স্টেশনের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। 'যারা সিন্ডিকেট করে তারাই এখন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী। এই কাঠামোগত সমস্যায় দাম নিয়ন্ত্রণ করা আসলেই সম্ভব হবে না।' এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় কিছু ক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দুর্ব্যাবহার ও 'ক্ষমতা দেখানোর' প্রবণতার বিষয়েও কথা হয় শাহদীন মালিকের সঙ্গে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'ভ্রাম্যামাণ আদালত তো অনেক অভিযান পরিচালনা করছে। অনেক জায়গায় যাচ্ছে। অনেককিছু পরীক্ষা করছে। শাস্তিও দিচ্ছে। এর বিপরীতে বিচ্ছিন্নভাবে বিচারিক নিয়মের লঙ্ঘন যারা করছেন সেটার সংখ্যা তো খুব কম।' 'এক্ষেত্রে প্রশাসনিকভাবে তাদের সতর্ক করাটা বোধহয় ঊর্ধ্বতনদের দায়িত্ব হবে। তারা অভিযুক্তদের কর্তব্য থেকে সরিয়ে নিতে পারে, তা না করলে অন্তত সতর্ক করতে পারে, জনগণের সঙ্গে তাদের আচরণ কেমন হবে সে ব্যাপারে বলতে পারে। ক্ষমতা দেখানো থেকে তারা যাতে নিবৃত্ত থাকে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে পারে।' বিষয়টি নিয়ে আলী ইমাম মজুমদারের বক্তব্যও একই রকম। তিনি বলেন, 'ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম অবশ্যই আইনানুগ হওয়া উচিত। সমাজের প্রয়োজনেই এই ব্যবস্থাটা চালু আছে। এখানে বাড়াবাড়ির সুযোগ কোনো পক্ষেরই নেই। 'আবার মোবাইল কোর্ট কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় আইন প্রয়োগ করেও আক্রান্তও হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তির সমর্থনে এটা ঘটছে। আমি আশা করব সবাই আইন অনুসারে সংযতভাবে কাজ করবেন। আইনানুগ দায়িত্ব পালন করবেন। নাগরিকরা সহায়তা করবেন। অন্য যারা আছেন তারাও সকলে সহায়তা করবেন।' আলী ইমাম মজুমদার আরও বলেন, 'শুধুমাত্র ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে আরও বহুকিছু আছে।' এই সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ভাষ্য, 'মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমরা সবাই সাফারার। আগের কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সাহেব বলেছিলেন, প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২২ থেকে ২৩ টাকা। এখানে এক্সপ্লয়টারদের হাত কতটা দৃঢ় যে, বলা হচ্ছে দাম কমেছে—তাও সেই পেঁয়াজ আমাদের ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এটা তো আমাদের লোকাল প্রোডাক্ট। আমরা ইমপোর্ট করছি না।' তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে 'ক্ষেত্রবিশেষে' ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, 'এখানে মার্কেট মেকানিজম নিয়েও কাজ করতে হবে, পলিসি লেভেল থেকে দেখতে হবে, সেইসঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গীকারও থাকতে হবে।' দেশি কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে সরকারের পক্ষ থেকে কেবল আমদানি সিদ্ধান্ত নিয়ে দায়িত্ব শেষ করলে চলবে না বলেও মন্তব্য করেন আলী ইমাম মজুমদার। বলেন, 'দাম বৃদ্ধির কারণে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করে। বড় রকমের ভূমিকা রাখতে পারে না। কিন্তু ভেজাল খাবার, পঁচা বাসি খাবার- এসব ক্ষেত্রে তারা রিমার্কেবল কাজ করেছে। সবক্ষেত্রে তো তারা পারবেও না।'
চলতি মাসের শুরুর সপ্তাহেই পবিত্র রমজান মাসে মূল্যবৃদ্ধি রোধে পণ্য মজুতের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাজার মনিটরিং জোরদারের জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকের প্রতি নির্দেশ এসেছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) থেকে।
চড়া দামে অস্থির বাজার
রাস্তার পাশের অস্থায়ী ইফতার বিক্রেতা ইদ্রিস মিয়া কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারে গিয়েছিলেন পেঁয়াজুর জন্য খেসারির ডাল কিনতে। 'বাজারের অন্তত ২০টা দোকানে গেছি খেসারির ডালের খোঁজে। মাত্র দুইটা দোকানে পাইলাম। কিন্তু দাম এত বেশি যে কিনতে পারি নাই,' এই প্রতিবেদককে বলছিলেন ইদ্রিস মিয়া। তার দাবির সত্যতা যাচাই করতে কারওয়ান বাজারের অন্তত ৩০টি মুদি দোকান ঘুরে দেখি। এর মধ্যে খেসারি ডাল পাওয়া গেছে মাত্র দুটি দোকানে। বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খেসারি ডালের পাইকারি ব্যবসায়ী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বাজারে এই ডাল পাওয়া যাচ্ছে না, তবে আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে সরবরাহ বাড়বে। কারওয়ান বাজার, কচুক্ষেত, ইব্রাহিমপুর ও মিরপুর-১৪ এর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি, খাসির মাংস, মাছ এবং তরমুজ, কলা, আনারস, পেয়ারা, স্ট্রবেরিসহ বেশ কিছু ফলের দাম ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বেশি থাকলেও আমদানি করা ফল কিনতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০০-২১০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ থেকে ১২০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০০ থেকে ১১৫০ টাকা। স্বল্প আয়ের মানুষের মাংসের প্রধান উৎস হওয়ায় ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেশি। কিন্তু সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী শুক্কুর আলী দাবি করেন, ভালো মানের মাছের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, ইলিশ, রূপচাদা, শোল, কোরাল এবং দেশি কইয়ের দাম কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা বেড়েছে। আমাদের কিছু নির্দিষ্ট 'কাস্টমার' আছে যারা দাম যাই হোক না কেন এগুলো কেনে।' এছাড়া খেজুর, চিনি, মসুর ডাল, আদা, রসুন, আলু, ছোলা ও আটার দাম গত এক মাস ধরেই চড়া। এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সোমবার এক নোটিশে ইফতারের অন্যতম প্রধান খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। সাধারণ মানের খেজুরের দাম প্রতি কেজি ১৫০ টাকা থেকে ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে রাজধানীর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে ২০০ টাকার নিচে কোনো খেজুর পাওয়া যাচ্ছে না, বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা সরকার নির্ধারিত দামে খেজুর কিনতে পারছেন না। ওই দামের মধ্যে খেজুর কিনতে পারলে সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করবে বলে জানান তারা। শুধু পেঁয়াজের দাম কমেছে ৫-১৫ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫-১০০ টাকায়, যা দুই দিন আগে ৯০-১১০ টাকা ছিল। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ইফতার বিক্রির দোকান ঘুরে দেখা যায়, গত বছর ১৫০ থেকে ২২০ টাকা কেজি জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। ইফতার বিক্রেতাদের দাবি, চিনি, ময়দাসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় জিলাপির দাম বেড়েছে।
রাস্তার পাশের অস্থায়ী ইফতার বিক্রেতা ইদ্রিস মিয়া কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারে গিয়েছিলেন পেঁয়াজুর জন্য খেসারির ডাল কিনতে।
ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শেবাচিম হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
মাসিক ভাতা ৩০ হাজার টাকা করার দাবিতে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সোমবার দুপুরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মবিরতির কারণে সমস্যায় পড়েছেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা। এর আগে, গত শনিবার রাত থেকে দাবি আদায়ে কর্মবিরতি শুরু করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। আজকের মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, 'দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে বর্তমানে আমাদের যে সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়, তা খুবই সামান্য। দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানালেও আমাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি হয়নি। তাই বেতন-ভাতা ৩০ হাজার টাকা করার দাবিতে আমাদের এ আন্দোলন।' কর্মবিরতিতে রোগীদের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. আরিফুজ্জামান ইমন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল ইমার্জেন্সি ও অ্যাডমিশন ওয়ার্ডগুলো বাদ রেখে আমরা কর্মবিরতি পালন করেছি। আজ সারা দেশের সঙ্গে আমাদের হাসপাতালের ইন্টার্নরা কর্মবিরতি পালন করছেন।' জানতে চাইলে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কর্মবিরতি সত্ত্বেও হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা যেন বিঘ্নিত না হয়, তার চেষ্টা করা হচ্ছে। হাসপাতালের ডাক্তার, রেজিস্ট্রারসহ সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করছে। জরুরি ক্ষেত্রে ইন্টার্ন ডাক্তারও কাজ করছেন।'
মাসিক ভাতা ৩০ হাজার টাকা করার দাবিতে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
ইবনে সিনায় সিজারের পর নারীর মৃত্যু, অবহেলার অভিযোগ পরিবারের
রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের পর ২৬ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যর ঘটনা ঘটেছে। স্বজনদের দাবি, চিকিৎসকের অবহেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পলি সাহা (২৬) নামে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে এসব অভিযোগ করেন পলি সাহার স্বামী আসিফ রায় ও তার স্বজনরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় কল্যাণপুর ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পলিকে মৃত ঘোষণা করে। স্বজনরা জানায়, গত সোমবার দুপুরে প্রসবজনিত অস্ত্রোপচার করাতে পলি সাহাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করান তার স্বামী। পেশায় ফার্মাসিস্ট আসিফ বলেন, 'সোমবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে পলির সিজারিয়ান অপারেশন হয়। এরপর চিকিৎসক জানান, মা ও নবজাতক উভয়েই ভালো আছে। বিকেল ৫টার দিকে তাকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে নেওয়া হয়। তখনো চিকিৎসকরা জানান, পলি ভালো আছে, তবে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।' 'এরপর বিকেলে চিকিৎসকরা জানান, পলির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তার জরায়ু কেটে ফেলতে হবে। তখন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পলির অবস্থা খুবই খারাপ। সে অক্সিজেন পাচ্ছিল না, তার হার্টবিটও পাওয়া যাচ্ছিল না। সে অবস্থায় আবারও তার করে সার্জারি করা হয়।' তিনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় ধাপে পলির অস্ত্রোপচার করা হয়। সেই অবস্থায় তার হার্ট অ্যাটাক হয়, যেটা চিকিৎসকরা প্রথমে আমাদের জানায়নি। চিকিৎসকরা জানান—রোগীর জরায়ু কাজ করছে না, এজন্য ব্লিডিং হচ্ছে। তাকে বাঁচাতে হলে জরায়ু কেটে ফেলতে হবে। আমি সম্মতি দিলে অস্ত্রোপচার করা হয়। 'সোমবার রাত ৯টার দিকে চিকিৎসকরা জানায়—রোগীর ব্লিডিং কমেছে, কোনো শঙ্কা নেই। তবে ব্লাড প্রেশারটাও অনেক কমছে। দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের পর পলির সঙ্গে যখন আমরা কথা হয়, তখন সে জানায়, তার অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছে, অস্থির লাগছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের এগুলো জানাতেই তারা জানায়, রক্তক্ষরণ কমে গেছে, ব্লাড প্রেশার নিয়ে তারা চিন্তিত। এরপর সোমবার রাতে আমাকে আর পলির সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।' আসিফ বলেন, মঙ্গলবার ভোর চারটায় আমাকে জানানো হয়, পলির অবস্থা খুব খারাপ। তখন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেল চারটায় পলিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। 'মঙ্গলবার সারা দিন চিকিৎসকরা পলির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানায়নি। আমি চিকিৎসককে ২০ বারের বেশি ফোন করেছি। তারা কিছু জানায়নি। দুপুর ১টায় আমাকে জানায়—রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, চিকিৎসকদের আর কিছুই করার নেই।' চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ জানিয়ে আসিফ রায় বলেন, পলির ‍দুটি অস্ত্রোপচারেই প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। চিকিৎসকরা এটা বন্ধে পদক্ষেপ নেয়নি। তার বুকে ব্যথা ছিল, ব্লাড প্রেশার কমে যাচ্ছিল, এগুলোর জন্যও স্টেপ নেয়নি চিকিৎসকরা। প্রত্যেক জায়গায় গাফিলতি ছিল, তারা কেয়ার করেনি। পলির সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করেছিলেন ডা. শারমিন মাহমুদ। বিষয়টি নিয়ে জানতে ডা. শারমিন মাহমুদের নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। মেসেজ পাঠালেও জবাব দেননি। পলির স্বজনদের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ইবনে সিনা ট্রাস্টের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. নূরে আলম সবুজ ডেইলি স্টারকে বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতিতে পলি সাহার জন্য যে ট্রিটমেন্ট প্রসিডিউর মানা হয়েছে, তা তাকে ও পলির স্বজনদের জানিয়েই করা হয়। প্রত্যেক ধাপে রোগী ও স্বজনদের সম্মতি ছিল। নূরে আলম সবুজ জানান, চিকিৎসায় কোনো অবহেলা আছে কি না, তা জানতে ইতোমধ্যেই হাসপাতালের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদি কারও গাফিলতি পাওয়া যায়, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ছাড় দেওয়া হবে না।
রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের পর ২৬ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যর ঘটনা ঘটেছে।
অ্যানেসথেসিওলজিস্ট সংকটে ‘বিপর্যস্ত’ স্বাস্থ্য খাত
শল্যচিকিৎসা ও জরুরি চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে অ্যানেসথেসিওলজিস্টের (অবেদনবিদ) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যানেসথেসিওলজিস্ট না থাকায় সার্বিকভাবে ভুগছে স্বাস্থ্যসেবা খাত। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য চিকিৎসকদের তুলনায় কম বেতন, সার্জনদের চেয়ে কম পরিচিতি ও যথেষ্ট সরকারি চাকরির সুযোগ না থাকায় ডাক্তাররা সাধারণত অ্যানেসথেসিওলজিস্ট হতে চান না। বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও পেইন ফিজিসিয়ানস (বিএসএসিসিপিপি) জানিয়েছে, দেশে প্রায় দুই হাজার ৪০০ জন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট আছেন। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব সোসাইটিজ অব অ্যানেসথেসিওলজিস্টস নামে একটি বৈশ্বিক সংস্থার মতে, প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য অন্তত পাঁচজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে এক লাখ মানুষের জন্য একজনেরও কম অ্যানেসথেসিওলজিস্ট রয়েছে। বিএসএসিসিপিপির মহাসচিব অধ্যাপক কাওসার সর্দার দ্য ডেইলি স্টারকে গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, 'আমাদের দেশে এই খাতকে সব সময়ই অবহেলা করা হয়েছে। সার্জন ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তুলনায় অ্যানেসথেসিওলজিস্টরা খুবই কম উপার্জন করেন। কিন্তু তারা যে কাজটি করেন, তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।' তিনি আরও জানান, উন্নত দেশগুলোতে অ্যানেসথেসিওলজিস্টরা অনেক বেশি বেতন পান। 'ঢাকার বেশিরভাগ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারগুলোতে সুষ্ঠু উপকরণ ও ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে কোনো মানদণ্ডই মেনে চলা হয় না', যোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, 'বেশিরভাগ সার্জারির ক্ষেত্রে একেবারে শেষ মুহূর্তে অ্যানেসথেসিওলজিস্টকে ডাকা হয়। ততক্ষণে রোগীকে অপারেশন টেবিলে নিয়ে আসা হয়েছে।' এ কারণেই অ্যানেসথেসিয়ার ভুল প্রয়োগে মৃত্যুর ঘটনা খুব একটা অস্বাভাবিক নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি জানান, এক্ষেত্রে সাধারণ প্রক্রিয়া হলো—একজন রোগীকে প্রি-অ্যানেসথেসিয়া চেকআপের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যাতে চিকিৎসকরা ঝুঁকি চিহ্নিত করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, অনেক দেশে চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী পেশাদার অ্যানেসথেসিওলজিস্ট গড়ে তোলার প্রথা রয়েছে। সরকার চাইলে একটি কোটা তৈরি করতে পারে, যার মাধ্যমে চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে আনুপাতিক হারে শিক্ষার্থীদের অ্যানেসথেসিওলজিস্ট হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মনে করেন, এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাবে না। তারা ভাবতে পারেন, 'তাদেরকে নিজ ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।' তিনি আরও জানান, মেডিকেল শিক্ষার্থীরা কোন বিষয় নিয়ে পড়বেন, তা নির্ধারণ করার সময় সামাজিক পরিচিতি, আর্থিক সুবিধা ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়গুলো মাথায় রাখে। 'অ্যানেসথেসিওলজিস্টরা যাতে উপযুক্ত সম্মানী পান, তা নিশ্চিত করতে হবে', যোগ করেন খুরশীদ আলম। বিএসএসিসিপিপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পর্যায়ে অ্যানেসথেসিওলজিস্টদের জন্য ২১৩টি সরকারি পদ রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১০৭টি পদ বর্তমানে খালি আছে। অ্যানেসথেসিওলজিস্টরা দাবি করেন, তারা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে বড় আকারে বেতন বৈষম্যের শিকার হন। বেশিরভাগ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে অ্যানেসথেসিওলজিস্টদের অর্থ উপার্জনের জন্য সার্জনদের ওপর নির্ভর করতে হয়। বারডেমের অনারারি কনসালট্যান্ট অধ্যাপক খলিলুর রহমান বলেন, 'কিন্তু কেউ অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকতে চায় না। আমাদের সমাজে সার্জনদের যেভাবে সম্মান করা হয়, একজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট সেই সম্মানটা পান না।' অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
শল্যচিকিৎসা ও জরুরি চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে অ্যানেসথেসিওলজিস্টের (অবেদনবিদ) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যানেসথেসিওলজিস্ট না থাকায় সার্বিকভাবে ভুগছে স্বাস্থ্যসেবা খাত।